সান দিয়েগোর জ ক্রে ভেন্টার ইন্সটিউটে বিজ্ঞানীরা ঘটালেন নিশ্চুপ বিপ্লব। কৃত্রিম ডি এন এ তৈরী হল কেমিক্যাল সিন্থেসিস থেকে। এবং দেখা যাচ্ছে, তা ব্যাক্টেরিয়া কোষকে চালনা করতে সমর্থ। এদ্দিন ধরে ধর্মবাদিরা বিবর্তনবাদি দের গাল দিয়েছেন-যদি আমরা সত্যই জীবের জন্ম রহস্য জেনে থাকি কেন ল্যাবেরটরিতে কেমিক্যাল থেকে প্রাণ সঞ্চার করতে পারেন না বিজ্ঞানীরা? আমরা জানতাম এ শুধু সময়ের অপেক্ষা-আর ওই সব কথাবার্ত্তা নির্বোধ ধার্মিকদের হাজার অজ্ঞতার আরো একটি। ভেন্টরের বিজ্ঞানীকূল আজকে সেটাই করে দেখালেন-ল্যাবেরটরীতে প্রাণের সৃষ্টির প্রথম ধাপ। একদম কেমিক্যাল থেকে।
এর ফল হবে সুদূরপ্রসারী। বায়োফুয়েল বা কৃত্রিম খাদ্য উৎপাদনের দিকে একধাপ এগোলো সভ্যতা।
পাশাপাশি আমাদের ভারতে আরো দুটি খন্ডচিত্র। একই দিনের সংবাদ।
এই উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ ইসলামিক পন্ডিতদের প্রতিষ্ঠান দার উলুম দিওবান্দরা ভারতে মুসলমান মেয়েদের ওপর ফতেয়া জারি করেছে। তারা চাকরি করতে পারবে না যেখানে পুরুষেরা চাকরি করে! এর বিরুদ্ধে অনেক বিশিষ্ট মুসলমান এবং মেয়েরা প্রতিবাদ জানিয়েছে-কিন্ত ভারতের ডান বা বাম বা মধ্যম কোন রাজনীতিবিদ টুঁ শব্দটি করে নি। সংখ্যালঘু ভোট হারানোর ভয়ে বাম, ডান মধ্যম-সবাই ভাই ভাই। প্রশ্ন উঠছে ফতেয়া জারি করার মতন ক্রিমিন্যাল এক্টিভিটি করার সাহস হয় কি করে একটা ধর্ম নিরেপেক্ষ দেশে? অপরাধী খুঁজতে গেলে পন্ডিত নেহেরু থেকে রাজীব গান্ধী-অনেকের নামই বলতে হয়। এবং ভারতীয় বামেরাও ভোটের তাগিদে আদর্শবাদে পেচ্ছাপ করে, এইসব মৌলবাদের সেবাদাস হয়ে থাকবে।
উল্লেখ্য এই একই দিনে দেখলাম প্রধানমন্ত্রী এবং সোনিয়া গান্ধী বিবেকানন্দের আদর্শ প্রচার করার জন্যে জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি বানাচ্ছেন। আমি অবশ্যই দিওবান্দের অশিক্ষিত মোল্লাদের সাথে বিবেকানন্দের তুলনা করছি না- বিবেকানন্দ ধর্মশিক্ষার থেকে বিজ্ঞান শিক্ষার ওপরই জোর দিতে বলেছিলেন সে কথা মানতেও বাধা নেই। কিন্ত বাস্তব ত এটাই বিবেকানন্দের আদর্শ অনুসরণ করে এই দেশে কিছু জাতিয়তাবাদি হিন্দুত্বের চাষাবাস হয়েছে। বিবেকানন্দ যতই আধুনিক শিক্ষার কথা মুখে বলে থাকুন না কেন-ভারতে আজকে বিজ্ঞান শিক্ষার স্থপতি জেসি বোস, সিভি রামন বা মেঘনাদ সাহা। মেঘনাদ সাহার বিজ্ঞানমুখী জন উন্নয়ন বা বিজ্ঞান চেতনার সার্বিক প্রসারের দায়িত্ব কেন সরকার নেবে না? স্যার সিভি রামন বরাবর চেয়েছেন বিজ্ঞানকে ভারতের সমস্যা গুলির সমাধানের জন্যে ব্যাবহার করতে। আজকে ভারতে যেটুকু বিজ্ঞান শিক্ষা এবং চেতনার প্রচার হয়েছে তার সবটাই তাদের জন্যে-এবং আমাদের মহান বিজ্ঞানীদের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দেওয়া বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেকানন্দের চেয়ে অনেক বেশী জরুরী ছিল। বিবেকানন্দের “মানুষ গড়ার” শিক্ষা নিয়ে সরকার পদক্ষেপ নিলে আমি সাধুবাদই জানাবো-কিন্ত এর পাশাপাশি যদি ছাত্রদের মনে বিজ্ঞান চেতনার উন্মেষ না হয়-মানুষ গড়তে গিয়ে বানর তৈরী হবে। মানুষ তৈরী করাটা কোন শিক্ষা দিয়ে হয় না-মানব চেতনার উন্মেষই তার শ্রেষ্ঠ পথ। সাহিত্য, গান, বিজ্ঞান, বাস্তব অভিজ্ঞতা-ইত্যাদি নানান মিশ্রনে মানব মনের সুষ্ঠ বিবর্তন থেকেই তৈরী হয় উন্নততর মানুষ। ধর্ম শিক্ষা দিয়ে বাঁদর তৈরী করার অনেক নমুনা আমি দেখেছি-একটাও মানুষ সেখান থেকে তৈরী হয় বলে আমার জানা নেই। আর তাছারা বিবেকানন্দ নিজের রচনাবলীতেই মানুষ হওয়ার জন্যে মনের এই প্রসারতা এবং চর্চার কথা বলে গেছেন। সুতরাং বিবেকানন্দ চর্চা করে ভারতীয় ছাত্ররা মানুষ হবে-এই ধরনের উন্মাদগামী চিন্তা আশু বর্জনীয়।
@ বিপ্লব পাল, একথা ঠিক যে দেওবন্দ মাদ্রাসার দায়িত্ব নয় নারীদের পোষাক অথবা কাজের ক্ষেত্র নির্বাচন করা, তবে আমাদের এই উপমহাদেশের অনেক “মুসলিম” পরিবার জীবন যাপনের দিকনির্দেশনার জন্য দেওবন্দ এর মত মাদ্রাসার দারস্থ হয়ে আসছে ১৮৬৬ থেকে এই ২০১০ সাল পর্যন্ত !!! উপমহাদেশের অনেকেই নিজ নিজ ধর্মের বা গোষ্ঠীর “কতৃপক্ষের” কাছে প্রাত্যহিক জীবন যাপনের আদর্শ জানতে চায়। নিজেদের বোধ অথবা জ্ঞান ব্যাব্হার করে না। নিঃসন্দেহে “কতৃপক্ষ” গুলোকে তারা ” হনুমান ” জ্ঞান করে না বরং “পরমজ্ঞান” করে। আমি দেওবন্দের পক্ষে বলছিনা, তবে তাদের ” হনুমান ” না বলে যারা তাদের উপর ফতোয়া দেওয়ার দায়িত্ব দেয় তাদেরকে প্রশ্নবিধ্ব করা সমর্থন করব। আমরা নিশ্চই অস্বীকার করব না যে “দেওবন্দ” রা একটি বিরাট এবং মুলধারার জনসমর্থন পেয়ে আসছে আমাদের এই উপমহাদেশে।
মানুষ তৈরীর প্রয়োজনটা কি?
দেওবন্দ মাদ্রাসা এই ফতয়া অসিকার করেছে। মাদ্রাসা থেকে বলা হয় যে , কাজের জায়্গায় নারীদের শালীন পোষাক পরা উচিত। খবরের কাগজে ভূল উপস্থাপন করার একদিন পর তারা এই কথা বলে।
@Oni, গালাগাল খাওয়ার পরে পিছু হটে এখন বলছে আমরা শালীন পোষাক পড়ার কথা বলেছিলাম। কিন্ত ওখানেও একটা লাইন ছিল-মেয়েদের এই কাজ ওই কাজ করা উচিত না। প্রশ্ন হচ্ছে নরনারী কি করবে, সেটা ঠিক করার দ্বায়িত্ব ওই হনুমানগুলোকে কে দিয়েছে?
আরে বিপ্লবদা, বিজ্ঞানের এই নবতম সাফল্য টি আমাদের যারা ফিল্ডে কাজ করে তাদের কি যে উপকার করবে বলে বোঝানো যায় না। বিশেষ করে যারা স্কুল-কলেজ-ক্লাব-মেলা তে কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান করে তাদের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়। সেই জবাবদিহিতে সুবিধে হবে।
চ র ম স হ ম ত।। :yes:
বিপ্লব পাল,
সত্যিই এক জ্বলজ্বলে শিরঃনাম! যথার্থ!
তাহারাতো এগুচ্ছেন! সে যে দ্রুতিতেই হোক। কিন্তু রণদীপম বসুর ভাষায় আমরা চলেছি ভূতের মতো পেছনে পা করে কোথায়! আমাদের রাজনীতিবিদেরা বুঝবেন কবে? সান দিয়েগোর জ ক্রে ভেন্টার ইন্সটিউটের বিজ্ঞানীদের ঘটানো নিশ্চুপ বিপ্লবের জবাবে ধর্মবাদীরা এখন কি বলে সে তো বটেই, তার চেয়েও গুরুত্ত্বপূর্ণ মনে হয় সমাজের তথাকথিত উচ্চ ডিগ্রীধারীরা পরতে পরতে যে হারে ধুতি, টুপি আর বোরকা চাপাচ্ছেন, বেশী দেরী হবে না সভ্য বিশ্ব থেকে বৃন্তচ্যূত হয়ে মহাকালের গর্ভে লীন হয়ে যেতে। কাজেই বিজ্ঞান আর নির্ভীক মুক্তবুদ্ধিচর্চার বিকল্প বোধহয় নেই।
@কেশব অধিকারী,
একদম ঠিক বলেছেন।
বিজ্ঞানের আবিস্কারের সাথে সাথে ধর্মের লোকেরা পিচু হটবে এমনটা ভাবা ভুল। বিস্বাস ব্যাপারটা ধর্মের ভিত্তি না-ধর্মের ভিত্তি সামাজিক পরিচিতি-এবং তার থেকে উদ্ভুত সামাজিক আইনের প্রয়োজনীযতা যা সমাজের রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেস বজায় রাখে। এই প্রশ্নগুলো করলে ব্যাপারটা পরিস্কার হবে
[১] যদি কেও অমরত্ব পায়, সে ধার্মিক হবে? কেন হবে?
[২] রাস্ট্র যদি খাদ্য চাকরি শিক্ষা সেক্স নিরাপত্তা দিতে পারে-লোকে কবি বা গায়ক হবে-কেন ধার্মিক হবে যদি জীবনে অনিশ্চয়তা না থাকে?
[৩] রাস্ট্র যদি ছেলে মেয়ে মানুষ করার এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়-তাদের খাদ্য-শিক্ষা-বাসস্থানের নিরাপত্তা দেয়-অনেকটা ইউটোপিয়ান কমিনিউস্ট সমাজ যেখানে ব্যাক্তি সম্পত্তির প্রয়োজন সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়েছে-সেখানে কি করে ধর্ম থাকবে? কারন সেখানে সামাজিক পরিচিতির ইউটিলিটি ভ্যালু নেই। “ধার্মিক” দের আমাদের সমাজে একটা ইউটিলিটি মূল্য আছে-হিন্দু না হলে ভারতে কেও বাড়ি ভাড়া দেবে না-বাংলাদেশে মুসলিম না হলে জমি জায়গা হারানো খুবই স্বাভাবিক।
ধর্ম তথ ঈশ্বরের সপক্ষে সব যুক্তিই অজ্ঞতা ছাড়া কিছু না-সেটা এই আবিস্কারের ফলে আরো বেশী অজ্ঞ হবে, এমন ভাবার কোন কারন নেই। কুযুক্তির কোন শেষ নাই-তাই কুযুক্তিকে ভুল প্রমান করার চেষ্টা বৃথা। ধর্মের আসল রসদ সমাজে-সেটাকে না বদলালে, কুযুক্তি বেড়েই চলবে।
উন্নত ও সভ্য দেশগুলোর বিজ্ঞানচর্চা ও এই ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার এক সুস্পষ্ট প্রতিফলন পাওয়া যায় আপনার এই পোস্টে।
সান দিয়েগোর জ ক্রে ভেন্টার ইন্সটিউটের বিজ্ঞানীদের ঘটানো নিশ্চুপ বিপ্লবের জবাবে ধর্মবাদীরা এখন কি বলে তা জানার তর সইছে না।
লেখাটি ভালো। তবে ভারতে science চরচার প্রসংগে Dr. Mahendralal Sarkar-এর উল্লেখ J.C. Bose-এর আগে হওয়া উচিত।
ধর্মনিরপেক্ষতার আড়ালে হিন্দু-বর্ণবাদের প্রতিনিধিত্বকারী ভারতীয় কংগ্রেসের দ্বারা এটাই তো স্বাভাবিক ! নইলে দলিত পুরুষ বাবাসাহেব আম্বেদকরকে কেন লক্ষ লক্ষ অনুগামী নিয়ে নিজেদের অচ্ছ্যুৎ অবস্থার প্রতিকার হিসেবে একসময় হিন্দু ধর্ম বর্জন করতে হয় ?
মানুষ তৈরি হলে এসব তথাকথিত রাজনৈতিক গোষ্ঠিগুলোর জন্য সমস্যা আছে। তারচেয়ে বাঁদর তৈরি অনেক বেশি নিরাপদ। এই যুগে এসে বিজ্ঞান-শিক্ষাকে অবজ্ঞা করে আশ্রম-বাসী দৃষ্টি মানেই তো ভূতের মতো পেছন হাঁটা।
@রণদীপম বসু,
“মানুষ তৈরি হলে এসব তথাকথিত রাজনৈতিক গোষ্ঠিগুলোর জন্য সমস্যা আছে। তারচেয়ে বাঁদর তৈরি অনেক বেশি নিরাপদ।
:clap2: :guli:
বিবেকানন্দের প্রসঙ্গে প্রবীর ঘোষের “অলৌকিক নয় লৌকিক” বইএর ৪র্থ খন্ডের একটা উদ্ধৃতি দিতে হয়। ঐ বইএর ১৯-২০ পৃঃ এ প্রবীর নবপত্র প্রকাশিত বিবেকানন্দ রচন সমগ্রের ২৬৪ পৃঃ দেয়া বিবেকানন্দের একটা উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। বিবেকানন্দ বলেছিলেনঃ “মন ও বস্তু একই। একটা আরেকটায় পরিবর্তনীয়, কম্পাঙ্কের উপর নির্ভর করে। একটা ইস্পাতের টুকরোকে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তি দেয়া হলে তা প্রথমে একটা গুনগুন শব্দ করবে, আরও শক্তি দেয়া হলে তা আলো বিকিরণ করে জ্বলবে। আরো বেশী শক্তি দিলে সেটা অদৃশ্য হয়ে গিয়ে মনে রূপান্তরিত হয়ে যাবে।”
@অপার্থিব,
এরকম মণিমুক্তা আরো আছে উনার লেখাতে। কিছু কাজের জিনিস ও আছে। কিন্ত সেই একই কথা-বিজ্ঞান চেতনা না ছড়িয়ে বিবেকানন্দের আদর্শ ছড়ানো ক্ষতিকর।