ঈশ্বরের ভাষা। আকাশ মালিক।

“The mind of a bigot is like the pupil of the eye; the more light you pour upon it, the more it will contract.”- Oliver Wendell Holmes

কোরান অথবা নবি মুহাম্মদের পারিবারিক, রাজনৈতিক জীবন নিয়ে এখন কিছু লিখতে গেলে যে, চর্বিত চর্বণ হবে তার কারণ, মুক্তমনায় এ নিয়ে প্রচুর তথ্য রেফারেন্স সহ বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ লেখা আছে, নতুন করে হয়তো এমন কিছু বলার নেই, যা ইতিমধ্যে এখানে বলা হয় নাই। এক বন্ধুর পরামর্শে মনঃস্থির করেছিলাম ধর্ম বাদ দিয়ে এবার অন্য কিছু শেখার, জানার, লেখার চেষ্টা করবো। কিন্তু ইদানিং দুটো প্রবন্ধ নিয়ে মুক্তমনায় যে ঝড়ো-হাওয়া বয়ে গেল, তার ধাক্কা আমার গায়েও এসে লেগেছে। সে যেন কানেকানে বলে গেল, শেষ কিছু কথা এখনও বলার বাকি রয়ে গেছে। এই লেখা লিখতে বসে আমি নিজের কাছেই নিজে প্রার্থনা করেছি, আর যেন কোনোদিন ধর্ম নিয়ে আমাকে লিখতে হয়না। নতুন প্রজন্মের লেখকগণ তাদের শক্তিশালী হাতের লেখনী দিয়ে ধর্মের মুখোশ উম্মোচন করবেন, আমরা তা পড়বো। পাঠকদের কাছ থেকেও আমি এই দোয়া কামনা করি।

আল্লাহর বাণী বলে মুহাম্মদ কোরানে যা কিছু বলেছেন, তার সর্বপ্রথম বাক্যটি ছিল কোরানের ৯৬ নম্বর সুরা আলাক এর প্রথম বাক্য- ‘পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন’।  আর সর্বশেষ বাক্য ছিল ৫ নম্বর সুরা মায়েদা এর ৩ নম্বর বাক্য- ‘আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম’।  এই প্রথম ও শেষ সুরা, প্রথম বাক্য ও শেষ বাক্য নিয়েও তাফসিরকারকদের মধ্যে প্রচুর মতভেদ মতানৈক্য আছে। প্রথম সুরা ‘আলাক’ কী ভাবে কোরানের ৯৬ নম্বর সুরা হলো, আর ৫ নম্বর সুরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতের পরে কোরানে এত সুরা এত বাক্য আসলো কোত্থেকে সে প্রশ্ন তো আছেই। আরাফাতের ময়দানে শেষ বাক্যগুলো উচ্চারণের পর মুহাম্মদ যে সময়টুকু বেঁচে ছিলেন, সেই সময়ে কোরান সংকলন করা তার পক্ষে মোটেই সম্ভব ছিলনা। তিনি তা কল্পনাও করেন নি।

সুরা আলাকের প্রথম বাক্যের পর বলা হয়েছে- ‘সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না। সত্যি সত্যি মানুষ সীমালংঘন করে, এ কারণে যে, সে নিজেকে অভাবমুক্ত মনে করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার দিকেই প্রত্যাবর্তন হবে’।   এ পর্যন্ত বাক্যগুলো পড়ে স্পষ্টই বুঝা যায়, এখানে বক্তা জিব্রাইল। সম্পূর্ণ সুরায় আল্লাহ সব সময়ই থার্ড পার্সন, (তিনি, যিনি, তোমার পালনকর্তা)। আর ‘আমরা’ বলতে জিব্রাইল না আল্লাহ, না উভয় তা’ও বুঝা মুশকিল।

বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর, উপরোল্লিখিত আটটি আয়াত নিয়ে মুহাম্মদ মক্কার কা’বা ঘরে ঢুকলেন। কোরায়েশ নেতা আবু জেহেল, মুহাম্মদকে বললেন যে, কা’বা ঘর ভন্ডামীর জায়গা নয়। এর পর আবু জেহেলকে উদ্দেশ্য করে মুহাম্মদ আবৃতি করলেন এই সুরার পরবর্তি বাক্যগুলো- ‘আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে নিষেধ করে, এক বান্দাকে যখন সে প্রার্থনা করে? আপনি কি দেখেছেন যদি সে সৎপথে থাকে। অথবা খোদাভীতি শিক্ষা দেয়। আপনি কি দেখেছেন, যদি সে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়। সে কি জানে না যে, আল্লাহ দেখেন? কখনই নয়, যদি সে বিরত না হয়, তবে আমরা তাকে মস্তকের সামনের কেশগুচ্ছ ধরে হেঁচড়াব, মিথ্যাচারী, পাপীর কেশগুচ্ছ। অতএব, সে তার সভাসদদেরকে আহবান করুক। আমরাও আহবান করব জাহান্নামের প্রহরীদেরকে। কখনই নয়, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। আপনি সেজদা করুন ও নৈকট্য অর্জন করুন’।

কা’বা ঘরে ৩৬০ দেবতার উপস্থিতিতে মুহাম্মদ কী ভাবে, কার প্রার্থনা করেন? কেউ কেউ বলেন মুহাম্মদ সেখানে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। কিসের নামাজ, কোরান নেই, আলহামদু নেই, সুরা নেই, কী দিয়ে, কী ভাবে তিনি নামাজ পড়লেন? আবু জেহেল মুহাম্মদকে নিষেধ করার পর, কা’বা ঘরের ভিতরে মুহাম্মদের সাথে যে ঘটনা ঘটেছিল, যে ঘটনায় মুহাম্মদ জড়িত ছিলেন, তাকে আবার আল্লাহ কেন জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি তাকে দেখেছেন, যে নিষেধ করে, এক বান্দাকে যখন সে প্রার্থনা করে? আপনি কি দেখেছেন যদি সে সৎপথে থাকে, অথবা খোদাভীতি শিক্ষা দেয়। আপনি কি দেখেছেন, যদি সে মিথ্যারোপ করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়?  আল্লাহ বা জিব্রাইল কেন মানুষের মত ধমক দেন, চ্যালেঞ্জ করেন,কেন আল্লাহ মানুষের মত চুল ছিড়াছিড়ি করতে চান?  বদর যুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ফিরে এসে সেই যুদ্ধের ফিডব্যাক করা হলো, বলা হলো- ‘আমার ইচ্ছা ছিল তোমরা জয়ী হবে’।  আবু জেহেলের নেতৃত্বে কোরায়েশগণ, আবু সুফিয়ানের বণিকদলকে উদ্ধার করতে যদি বদরের মাঠে না আসতেন, সুরা আনফাল কি লেখা হতো?  আর যদি এ যুদ্ধের ঘটনা আগে থেকেই লাওহে মাহফুজে লেখা থাকে, তাহলে কোরায়েশদের দোষটা কোথায়?  সমস্ত কোরান জুড়ে কেন, কোনো ঘটনা ঘটার পরে, ঘটনার ফলাফল জেনে, সেই অনুযায়ী বাক্য বসানো হলো? 

আমাদের হাতের কাছে কোরান নামক বইখানি যে, মানুষের হাতের লেখা তা বিশ্বাস না করার কোন উপায় নেই। আমরা জানি, জিব্রাইল স্বর্গ থেকে আল্লাহর হাতের লেখা কোরানের পৃষ্ঠা ছিড়েছিড়ে এনে মুহাম্মদের হাতে তুলে দিতেন না। মুহাম্মদের চোখের সামনে যখন কোনো ঘটনা ঘটেছে, সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মুহাম্মদ ঘটনা সাজাতেন। পূর্বে লিখিত লাওহে মাহফুজে রাখা কোরান থেকে কোনো বাণী আল্লাহ জিব্রাইলকে মুখস্ত করায়ে পৃথিবীতে পাঠাতেন না। মুহাম্মদ তাতক্ষণিকভাবে তার নিজের বানানো গল্প মানুষকে শুনাতেন আর মানুষ যে যেভাবে শুনতেন, বুঝতেন ঘটনা সেই ভাবে লিখে রাখতেন, পাতলা পাথরে, বৃক্ষের ছালায়, খেজুর পাতায় কিংবা পশুর চামড়ায়। সুতরাং বুঝা গেল মানুষের হাত ছাড়া কোরান লেখা হয় নাই। কী আশ্চর্য, একশো পার্সেন্ট গ্যারান্টি দিয়ে বলা হয়, এই কোরানে কোনো ভুল থাকতে পারেনা। মানূষ তো ফেরেস্তা নয়, শয়তান নয়, আল্লাহও নয় যে তাদের ভুল হবেনা। যে সকল মানুষের জন্মই হয়নি, যে সকল ঘটনা তখনও ঘটেনি, তা কী ভাবে সেই মানুষের জন্মের পূর্বে, সেই ঘটনা ঘটার পূর্বে লিখে রাখা হলো? যেমন আয়েশার উপর অসতীর অপবাদ, জয়নাবের ঘরে মধু কেলেংকারী, হাফসার ঘরে মুহাম্মদ ও ম্যারিয়ার নারী কেলেংকারী ঘটনা, বদরের যুদ্ধ, হোনায়েনের যুদ্ধ, তাবুকের যুদ্ধ ইত্যাদি যদি হাজার বছর আগেই আল্লাহ কোরানে লিখে রাখেন, তাহলে বলতে হবে জগতের সকল অমঙ্গল, অশুভ কাজ আল্লাহর ইচ্ছায়ই হয়েছে, এখানে মানুষের কোনো দায়ভার নেই। কারণ ঐ সমস্ত অশুভ, অঘটন না ঘটলে আল্লাহর কোরান লেখা মিথ্যে হয়ে যেত। তাহলে যাদের দ্বারা জগতে অশুভ ঘটনা ঘটলো তাদের দোষটা কোথায়? আল্লাহ সরাসরি কোরানে সমসাময়িক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেছেন, ধমক দিয়েছেন, ‘বর্তমান কাল’ এর বাক্য ব্যবহার করে। আয়েশার উপর লোকে যখন অসতীর অপবাদ দিল, আল্লাহ বললেন, ‘হে মুমিনগণ তোমরা কেন বললে না, এ ঢাহা মিথ্যা’?  কিংবা, আবু লাহাব যখন বললেন, ‘মুহাম্মদ তুমি উচ্ছন্নে যাও’ আর মুহাম্মদ বললেন ‘তাব্বাত ইয়াদা আবি লাহাব— আবু লাহাব তুমি ধ্বংস হও’; এরকম ‘বর্তমান কাল’ ব্যবহার করে বাক্য আগে থেকে লাওহে মাহফুজে লিখে রাখা সম্ভব নয়। কোরান বলছে, আল্লাহ যখন বলেন ‘হও’ তখনই তা ঘটে যায় বা হয়ে যায়। আল্লাহ বললেন ‘আবু লাহাব তুমি ধ্বংস হও’ তখন তাতক্ষণিকভাবে আবু লাহাবের মৃত্যু হলোনা কেন? আবু লাহাব যদি মুহাম্মদকে বলতেন না, ‘মুহাম্মদ তুমি উচ্ছন্নে যাও’ তাহলে কি সুরা লাহাব লেখা হতো?  এ সকল প্রশ্নের একটাই উত্তর, আর তা হলো, কোরানে যা বলা হয়েছে সবই মুহাম্মদের মুখের কথা। আর সেই কারণে পৃথিবীর অন্যান্য সব বই নিয়ে যেমন আলোচনা সমালোচনা করা যায়, কোরানের সত্যতা, এর ভাষাগত শুদ্ধতা, ব্যাকরণগত মান, ও জাগতিক ব্যাপারে কোরানের বক্তব্য নিয়ে গঠনমূলক যৌক্তিক আলোচনা সমালোচনা করাও অবশ্যই অন্যায় কিছু হতে পারেনা।

জীবনের শেষ ২২ বৎসর ৫ মাস ১৪ দিনে মুহাম্মদ যে কথাগুলো বিভিন্ন সময়ে, সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিক, রাজনৈ্তিক পরিবেশের মুখোমূখী হয়ে, আল্লাহর বাণী বলে মানুষকে বিশ্বাস করতে বলেছিলেন, সেগুলো মুহাম্মদের জীবদ্দশায় সংগ্রহ করা আদৌ সম্ভব ছিলনা। প্রথম শাসনকর্তা আবু বকর থেকে ওমর, উসমান, আলী হয়ে মুয়াবিয়ার শাসনকাল পর্যন্ত সময়ে, ধাপে ধাপে কোরান সংকলন কমিটি করে, যথেষ্ঠ সময় ও অর্থ ব্যয় করে, সীমাহীন মতানৈক্য, ঝগড়া-বিবাদ, তর্কবিতর্কের মাধ্যমে, যথাসম্ভব ব্যাকরণগত ভুলসমুহ সংশোধন করে, প্রচুর দাড়ি, কমা, অক্ষর, শব্দ ও বাক্য বিলুপ্ত ও সংযোজন করে, কোরানকে বর্তমান রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতো কিছুর পরেও ব্যাকরণগত ভুল, বস্তুজগতের স্বাভাবিক নিয়মের পরিপন্থী, পদার্থ বিজ্ঞানের সাথে সাংঘর্ষিক অনেক কিছুই কোরানে রয়ে গেছে। এ নিয়ে মুক্তমনায় বেশ কিছু লেখা বাংলা ও ইংরেজিতে দেয়া আছে।

আমি এই প্রবন্ধে সংক্ষিপ্তাকারে কোরানের কিছু ব্যাকরণগত ভুলসমুহ তুলে ধরবো।

ব্যাকরণগত ১ম ভুল-

(আরবি আয়াতের বোল্ড করা শব্দ লক্ষণীয়)

কোরানের ৫ নং সুরা মায়েদার ৬৯ নং আয়াত-

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالصَّابِؤُونَ وَالنَّصَارَى مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وعَمِلَ صَالِحًا فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ

‘নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, সাবেয়ী, খৃষ্টান, তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহর প্রতি, কিয়ামতের প্রতি এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে না’। (সুরা ৫ মায়েদাহ, আয়াত ৬৯)

এবার নীচের বাক্যটি দেখুন-

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالصَّابِئِينَ وَالنَّصَارَى وَالْمَجُوسَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا إِنَّ اللَّهَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ

‘নিশ্চয় যারা মুসলমান, যারা ইহুদী, সাবেয়ী, খৃষ্টান, অগ্নিপুজক এবং যারা মুশরেক, কেয়ামতের দিন আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন। সবকিছুই আল্লাহর দৃষ্টির সামনে’।  (সুরা ২২ হাজ্জ্, আয়াত ১৭)

হুবহু আরেকটি আয়াত হলো ২নং সুরা বাকারার ৬২ নং আয়াত। সেখানেও وَالصَّابِئِين শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, এবং উভয় জায়গায় শুদ্ধভাবেই বলা হয়েছে। কিন্তু ব্যাকরণের ক্রীয়াপদ, ক্রীয়াপদের ধাতুরূপ (To conjugate a verb) আর (nominative বা indicative) কর্তৃকারক, কর্মকারক (accusative বা subjunctive)  শব্দের শুদ্ধ ব্যবহার পদ্ধতি না জানার কারণে মুহাম্মদ, ৫ নং সুরা মায়েদার ৬৯ নং বাক্যে وَالصَّابِؤُونَ ‘সাবীয়ূন’ বলে যে ভুল করেছেন, ঠিক তার উল্টা দ্বিতীয় ভুলটি করেছেন এখানে-

لَّـكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُونَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَالْمُقِيمِينَ الصَّلاَةَ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أُوْلَـئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا

কিন্তু যারা তাদের মধ্যে জ্ঞানপক্ক ও ঈমানদার, তারা তাও মান্য করে যা আপনার উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আপনার পূর্বে। আর যারা নামাযে অনুবর্তিতা পালনকারী, যারা যাকাত দানকারী এবং যারা আল্লাহ ও কেয়ামতে আস্থাশীল। বস্তুতঃ এমন লোকদেরকে আমি দান করবো মহাপুণ্য’।  (সুরা ৪ নিসা, আয়াত ১৬২) 

ব্যাকরণ অনুযায়ী এখানে ‘ওয়ালমুকিমীনা’ শব্দটি ‘ওয়ালমুকিমুনা’ হবে, হওয়া উচিৎ। সুরা মায়েদায় ‘ওয়াও’ বর্ণ ব্যবহার করে ‘সাবীয়ূন’ বলে যে ভুল করেছিলেন, এখানে ‘ওয়াও’ ব্যবহার না করে ‘ওয়ালমুকিমীনা’ বলে একই ভুল করলেন।

৩য় ভুল-

قَالُوا إِنْ هَذَانِ لَسَاحِرَانِ يُرِيدَانِ أَن يُخْرِجَاكُم مِّنْ أَرْضِكُم بِسِحْرِهِمَا وَيَذْهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ الْمُثْلَى

তারা বললঃ এই দুইজন নিশ্চিতই যাদুকর, তারা তাদের যাদু দ্বারা তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বহিস্কার করতে চায় এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থা রহিত করতে চায়’।  (সুরা ২০ তোয়া-হা, আয়াত ৬৩)

এখানে ঠিক আগের (nominal Sentence)  বাক্যগুলোর মত ‘হাজানি’ শব্দের আগে ‘ইন্না’ ব্যবহার করার কারণে (nominal sign ) ‘ইয়া’ বসায়ে শুদ্ধ শব্দটি হবে ‘হাজাইন’। বাক্যটি ‘কালু ইন্না হাজানি লাসা-হিরান’ না হয়ে শুদ্ধ বাক্যটি হবে ‘কালু ইন্না হাজাইনি লাসা-হিরান’।

জালালাইন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন-

They said, to each other, ‘These two men (hādhān, হাজান this [form] concords with the forms used by those [grammarians] who use the alif [ending] for all three cases of the dual person; Abū ‘Amr has [the variant reading] hādhayn হাজাইন ) are indeed sorcerers who intend to expel you from your land by their sorcery, and do away with your excellent traditions (muthlā, the feminine form of amthal, meaning ‘the noblest’) in other words, [they will do away with the loyalty of] the noblemen among you, because these [latter] will prefer the two of them [Moses and Aaron] on account of their triumph.

৪র্থ ভুল-

لَّيْسَ الْبِرَّ أَن تُوَلُّواْ وُجُوهَكُمْ قِبَل َ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِوَالْمَلآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِوَالسَّآئِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلاةَ وَآتَى الزَّكَاة َ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُواْ وَالصَّابِرِينَ فِيالْبَأْسَاء والضَّرَّاء وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَـئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

‘সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার’।  (সুরা ২ বাকারা, আয়াত ১৭৭)

এখানে মোট পাঁচটি ব্যাকরণগত ভুল আছে। চারটিতে ক্রীয়াপদে ভুল Tense (কাল) ব্যবহার করা হয়েছে। বাক্যটি শুরু হয়েছে ‘তুয়াল্লু’ (মুখ করো) Present Tense  (বর্তমান কাল দিয়ে),  অথচ পরবর্তি চারটি ক্রীয়াপদে Past Tense  (অতীত কাল) ব্যবহার করা হয়েছে। উপরের আরবী বাক্য যেভাবে বলা হয়েছে, যদি হুবহু তার ইংরেজি অনুবাদ করা হয় তাহলে বাক্যটি দাঁড়ায় এ রকম-

"It is not righteousness that ye turn your faces to the East and the West; but righteousness is he who believed in Allah and the Last day and the angels and the Book and the Prophets; and gave his wealth, … and performed prayer and paid the alms."

অনুবাদকগণ ভুল টের পেয়েই Tense পরিবর্তন করে believed, gave , performed এবং paid না লিখে Present Tense দিয়ে অনুবাদ করেছেন। শুদ্ধ আরবী ব্যাকরণে-

মান আ-মানা বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খেরি –

এখানে সঠিক বাক্য হবে- মান তু’-মিনু বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আ-খেরি—

 ওয়া আ-তাল মা-লা আ’লা- হুব্বিহি

এখানে সঠিক বাক্য হবে- ওয়া তু’-তুল মা’-লা আ’লা-হুব্বিহি—

 ওয়া আকা-মাস সালা-ত

এখানে সঠিক বাক্য হবে- ওয়া তু’-কিমুস সালাত—

 ওয়া আ-তাজ জাকাত

এখানে সঠিক বাক্য হবে- ওয়া তা’-তুজ জাকাত—

 

উপরোক্ত বাক্যের শেষের দিকে ওয়াসসা’-বিরি-না শব্দটি হবে ওয়াসসা’-বিরু-না, যেমন প্রথম শব্দ, ওয়াল মু-ফু-না দিয়ে শেষের লাইন শুরু হয়েছে। অর্থাৎ ‘ওয়াল মু-ফু-না বিআহদিহিম ইজা আ-হাদু ওয়াস সা-বিরিন’ না হয়ে, শুদ্ধ বাক্যটি হবে- ‘ওয়াল মু-ফু-না বিআহদিহিম ইজা আ-হাদু ওয়াস সা-বিরুন’।

এবার সুরা বাকারার ২৮৫ নং বাক্যটি দেখুন-  আ’-মানা ররাসু-লু বিমা- উনজিলা ইলাইহি– –

The Messenger has believed in what was revealed to—

লক্ষ্য করুন, ইংরেজি অনুবাদে Past Tense দিয়ে অনুবাদ করা হয়েছে। অথচ এই সুরার ১৭৭ নং আয়াত মান আ-মানা বিল্লাহি – আয়াতের ইংরেজি অনুবাদে Present Tense ব্যবহার করা হয়েছে।

৫ম ভুল-

إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللّهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثِمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে আদমেরই মতো। তাকে মাটি দিয়ে তৈরী করেছিলেন এবং তারপর তাকে বলেছিলেন হয়ে যাও, সঙ্গে সঙ্গে হয়ে গেলেন। (সুরা ৩ ইমরান, আয়াত ৫৯)

"The likeness of Jesus, in God's sight, is as Adam's likeness; He created him of dust, then said He unto him, 'Be,' and he was."  একমাত্র Pickthall তার অনুবাদে লিখেছেন, ‘He created him of dust, then He said to him 'Be,' and he is’.

আরবী বাক্যটি যেভাবে কোরানে লেখা হয়েছে, সেই অনুসারে Pickthall এর অনুবাদটাই সঠিক। ‘ইয়াকুন’ present tense ইংরেজিতে “is”, আর ‘কা-না’ past tense ইংরেজিতে "was"

এবার নীচের আয়াতটি দেখুন-

إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ

তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়। (সুরা ৩৬ ইয়াসীন, আয়াত ৮৩)

Verily, His Command, when He intends a thing, is only that He says to it, ”Be!” and it is!  এখানে He says to it, ”Be!” and it is!  ইংরেজি অনুবাদ ঠিকই আছে। কিন্তু উভয় জায়গায় (সুরা ইমরান, আয়াত ৫৯ এবং সুরা ইয়াসীন, আয়াত ৮৩) ফায়াকুন শব্দের কোন পরিবর্তন নাই। একই শব্দের ইংরেজি অনুবাদে এক জায়গায় “Is” আর এক জায়গায় “Was” লিখা হয়েছে।

৬ষ্ঠ ভুল-

 هَذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوا فِي رَبِّهِمْ

These two opponents (believers and disbelievers) dispute with each other about their Lord——

এই দুই বাদী বিবাদী, তারা তাদের পালনকর্তা সম্পর্কে বিতর্ক করে। অতএব যারা কাফের, তাদের জন্যে আগুনের পোশাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। (সুরা ২২ হাজ্ব, আয়াত ১৯)

আরবীতে বচন তিন প্রকার, যথা- একবচন, দ্বৈত বা যুগ্ম-বচন ও বহুবচন, singular, dual, আর plural 

এখানে দুই বাদী বিবাদী বলতে দুই ব্যক্তি নয় বরং দুই দল বাদী বিবাদী বুঝানো হয়েছে, একদল বিশ্বাসী আর একদল কাফির। সেই অনুসারে ইখতাসামু- শব্দটি ইখতাসামা- হবে।

৭ম ভুল-

وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ

আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। (সুরা ৬৩ মুনাফিকুন, আয়াত ১০)

এখানে ওয়া আকুম মিনাস সা-লিহি-ন এর ‘আকুম’ ক্রীয়াপদটি subjunctive  তাই নিয়মানুসারে শব্দের শেষ ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বর বর্ণ থাকতে হয়। যেমন বাক্যের ফা-আসাদ্দাকা (আ) । ওয়া আকুম এর ‘আকুম’ ক্রীয়াপদ এর শেষ ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে স্বর বর্ণ (আ) যুক্ত করে এভাবে বলা উচিৎ ছিল- ফা-আসাদ্দাকা ওয়া আ-আকুনা (আ) মিনাস সা-লিহিন। উল্লেখ্য এখানে 'আকুম' শব্দটি আসলে 'আকুন' থেকে এসেছে।

৮ম ভুল-

وَالسَّمَاء وَمَا بَنَاهَا "

By the heaven and that which built it."

কসম আকাশের এবং যিনি তা নির্মাণ করেছেন, তাঁর। (সুরা ৯১ আশ-শামস, আয়াত ৫)

এখানে مَا (মা) এবং مَن (মান) শব্দ দুটো নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন বোধ করি। مَا (মা) এর অর্থ হলো, ‘কী’, ‘ওটা’, ‘ইহা’ ‘যা’, বা ‘যাহা’ (What, That, Which) আর مَن (মান) এর অর্থ হলো, ‘যিনি’, ‘যে’ (Who, Him) এবার ১০১ নং সুরা আল-কারিয়াহ এবং ৯১ নং সুরা আশ-শামস ভালভাবে লক্ষ্য করুন। উল্লেখিত শব্দদ্বয় উভয় সুরাতে বহুবার ব্যবহার করা হয়েছে। مَا (মা) এর অর্থ ‘যে’ ‘যিনি’ (Who) নয়, তা বুঝেই ইংরেজী অনুবাদকগণ বেশ তালগোল পাকিয়েছেন। ৯১ নং সুরা আশ-শামস এর ৫, ৬, এবং ৭ নং বাক্যে। এই তিনটি বাক্যের ইংরেজী অনুবাদ দেখুন-

আয়াত ৫-

Yusuf Ali

By the Firmament and its (wonderful) structure;

Shakir

And the heaven and Him Who made it,

আয়াত ৬-

Yusuf Ali

By the Earth and its (wide) expanse:

Shakir

And the earth and Him Who extended it,

আয়াত ৭-

Yusuf Ali

By the Soul, and the proportion and order given to it;

Shakir

And the soul and Him Who made it perfect

যে সকল অনুবাদকগণ এই তিনটি বাক্যে مَا (মা) এর অর্থ ‘যিনি’ (Who) করেছেন তারা সকলেই অন্য সব যায়গায় مَا (মা) এর অর্থ ‘কী’, ‘যা’, ‘ইহা’, ‘তাহা’, ‘It’, ‘Which’, ‘That’ করেছেন। মুহাম্মদের ভুলটাকে ঢাকতে গিয়ে বাধ্য হয়ে দুই জালাল (জালালাইন) জোড়াতালি মার্কা একটি ব্যাখ্যা এখানে দিয়েছেন-

and [by] the soul, that is to say, [by] all souls, and the One Who proportioned it, in its created form (mā مَا (মা) in all three instances relates to the verbal action, or functions as man مَن(মান), ‘the one who’)

এবার নীচের বাক্যটি দেখুন-

وَمَا خَلَقَ الذَّكَرَ وَالْأُنثَى

এবং (কসম) তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। (৯২ নং সুরা আল-লাইল, আয়াত ৩) আল্লাহ নিজের নামে কসম খাচ্ছেন!

এবার ইংরেজী অনুবাদটা লক্ষ্য করুন-

Pickthall

And Him Who hath created male and female,

Yusuf Ali

By (the mystery of) the creation of male and female

জালালাইন এসে মুহাম্মদকে উদ্ধার করার চেষ্টা করলেন এভাবে-

Tafsir al-Jalalayn and [by] the One Who (‘mā’ either functions as ‘man’ مَن(মান), ‘the One Who’, or it is related to a verbal action) created the male and the female, Adam and Eve, or every male and female — the hermaphrodite, although problematic for us, is [in fact] either male or female according to God, and therefore a person [actually] commits perjury if he speaks with one [thinking that] because he has sworn not to speak with a male or a female; [he may do so with a hermaphrodite].

তদ্রূপ আরেকটি বাক্য যেমন-

إِنَّمَا تُوعَدُونَ لَصَادِقٌ 

তোমাদের প্রদত্ত ওয়াদা অবশ্যই সত্য। (সুরা ৫১ আজ-জারিয়াহ, আয়াত ৫)

ইংরাজি অনুবাদে (mā مَا (মা) এর অর্থ দেখুন।

Yusuf Ali

Verily that which ye are promised is true;

Shakir

What you are threatened with is most surely true,

(এবার এর সাথে তুলনা করুন সুরা ৯১ আশ-শামস এর ৫নং আয়াত)  এই ‘মা’ এর ভুল ব্যবহার জেনেই জালালাইন সব সময় ব্র্যাকেটে ব্যখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছেন-

Tafsir al-Jalalayn-

assuredly what you are promised (mā, ‘what’, relates to the verbal action), in other words, the promise given to them of resurrection and other matters, is true, is indeed a true promise,

প্রাসঙ্গীক বিধায় এখানে و ‘ওয়াও’ বর্ণ নিয়ে কিছু কথা বলে নেয়া ভাল। তার আগে পাঠকবৃন্দকে অনুরোধ করবো, কোরানে ব্যবহৃত و ‘ওয়াও’, مَن(মান), مَا (মা) এগুলোর অর্থ জানার জন্যে, ব্যবহার দেখার জন্যে ৯১ নং সুরা আশ-শামস, ৯২ নং সুরা আল-লাইল এবং ১০১ নং সুরা আল-কারিয়াহ দেখে নেয়ার জন্যে। অনেকে বলে থাকেন, কোরানের কোন নির্দিষ্ট বাক্য আলাদা করে তর্জমা করা যায় না, কারণ প্রত্যেকটা বাক্য নাকি একটা আরেকটার সম্পূরক, আর এর প্রমাণ হিসেবে তারা বাক্যের প্রথমে و ‘ওয়াও’ দেখান। و ‘ওয়াও’ এর অর্থ হলো, ‘এবং’, ‘আর’, ‘শপথ’, ‘কসম’। উপররোক্ত তিনটি সুরায় এর প্রচুর ব্যবহার, আর আল্লাহ (না মুহাম্মদ) শুধুমাত্র এই সুরাগুলোতেই কতবার যে কতপ্রকার বস্তুর কসম খেয়েছেন তা দেখতে পাবেন। ইহজগতের মেঘ, নৌকা, আকাশ, বাতাস ইত্যাদি তুচ্ছ বস্তু ও নিজের নামে কসম খাওয়ার হয়তো মুহাম্মদের প্রয়োজন থাকতে পারে, আল্লহর নিশ্চয়ই ছিল না। আল্লাহ কি নিজেকে মিথ্যাবাদী নয় প্রমাণ করার জন্যে এতবার কসম খেলেন?

৯২ নং সুরা আল-লাইল, ৯৩ নং সুরা ‘আদ-দোহা’ শুরু হয়েছে و ‘ওয়াও’ দিয়ে। ‘কসম রাত্রির-’। ‘কসম মধ্যদিনের’, সুতরাং و ‘ওয়াও’ এর অর্থ শুধু ‘আর’ এবং ‘অতঃপর’ নয়, و ‘ওয়াও’ এর অর্থ শপথ, কসমও। উল্লেখ্য ৯৩ নং সুরা ‘আদ-দোহা’ এর সব বাক্যে স্পষ্টই বক্তা জিব্রাইল অথবা মুহাম্মদ, আর আল্লাহ সব সময়ই থার্ড পার্সন।

৯ম ভুল-

ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعًا أَوْ كَرْهًا قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِينَ

অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম। (সুরা ৪১ হা-মীম, আয়াত ১১) 

এবার প্রথমেই জালালাইনের বক্তব্য দেখে নিই- Then He turned to the heaven when it was smoke, [consisting of] rising vapours, and He said to it and to the earth, “Come both of you, to what I desire from you, willingly, or unwillingly!” (taw‘an aw karhan, their [syntactical] locus is that of a circumstantial qualifier, in other words, ‘[Come] being obedient or coerced’). They said, “We come, together with all those inhabiting us, willingly!” (tā’i‘īna mainly indicates masculine rational beings; it may also be that they are referred to in this way because they are being addressed thus).

শাকির ও ইউসুফ আলীর অনুবাদ-

Yusuf Ali

Moreover He comprehended in His design the sky, and it had been (as) smoke: He said to it and to the earth: "Come ye together, willingly or unwillingly." They said: "We do come (together), in willing obedience."

Shakir

Then He directed Himself to the heaven and it is a vapor, so He said to it and to the earth: Come both, willingly or unwillingly. They both said: We come willingly.

মাটির ভাঙ্গা কলসি জোড়া লাগাতে জালালাইন কিছু অতিরিক্ত মসলা এখানে যোগ করলেন- They said, “We come, together with all those inhabiting us, willingly!”

আরবীতে আকাশ এবং পৃথিবী উভয়ই স্ত্রীলিঙ্গ, এবং একত্রে দ্বৈত বা যুগ্মবচন, (বহুবচন নয়)। এমতাবস্থায় قَالَتَا (কা-লাতা They said) ঠিকই আছে, কিন্তু বাক্যের শেষ শব্দ طَائِعِين (তা-ইয়িন) বিশেষণ adjective পুংলিঙ্গ এবং বহুবচন। সুতরাং বাক্যের বিশেষ্য পদ, বচন, ও লিঙ্গের সাথে বিশেষণের মিল করে, ব্যাকরণ অনুযায়ী আয়াতের শেষ শব্দটি ‘তা-ইতায়ীন’ হওয়া উচিৎ।

১০ম ভুল-

وَقَطَّعْنَاهُمُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًا وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى

আর আমি পৃথক পৃথক করে দিয়েছি তাদের বার জন পিতামহের সন্তানদেরকে বিরাট বিরাট দলে, এবং নির্দেশ দিয়েছি মুসাকে—-

এখানে ‘আসবা-তান’ শব্দটি আরবী ব্যাকরণানুযায়ী ভুল। আরবীতে দশ সংখ্যার উপরে নামবাচক শব্দ একবচনে লেখা হয়। শুদ্ধ শব্দ হবে ‘ আশারাতা সিবতান’। কোরানের অন্যান্য আয়াতে এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়েছে,  যেমন- ৭-১৪২, ২-৬০, ৫-১২, ৯-৩৬, ১২-৪।

আমরা প্রবন্ধ দীর্ঘায়িত করবোনা। এ ছিল কোরানে শতাধিক ব্যাকরণগত ভুলের কিছু উদাহরণ মাত্র। কোরানে বিদেশি শব্দের অনুপ্রবেশ এর ব্যাপারে শুধু বলবো, Al Suyuti কোরানে ১০৭ টি এবং Arthur Jeffery ২৭৫টি বিদেশি শব্দ খুঁজে পেয়েছেন। উৎসাহী পাঠক নীচের ইন্টারনেট লিংকসমুহ থেকে আরো বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।

এখন কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করা যাক।

এ ভুল কার?

এ প্রশ্নের শুধুমাত্র দুটো উত্তরই হতে পারে।

(১)  কোরান ভুল ভাবেই লেখা ছিল লাওহে মাহফুজে।

(২)  মানুষ কোরান লেখার  সময় ভুল ভাবে লিখেছিল।

প্রথম উত্তর কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা। আর দ্বিতীয় উত্তর যুক্তিসঙ্গত হলেও প্রমাণ করে যে, বর্তমানে আমাদের হাতের কাছে কোরান ত্রুটিমুক্ত বিশুদ্ধ নয়।

ততকালীন আরবের বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদগণ কি কোরানের এ ভুল সম্মন্ধে অবগত ছিলেন না?

অবশ্যই ছিলেন। প্রথম অবস্থায় কেউ তা কানেই তুলেন নি। সে যুগে হীরা পাহাড়ের ঝোপে ঝাড়ে, মাঝে মধ্যে মুহাম্মদের মত ঘর ত্যাগী এমন সন্যাসীর আবির্ভাব স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার শিকার, সমাজ বঞ্ছিত, হাতাশাগ্রস্থ যারা অন্ধভাবে মুহাম্মদের কথা আল্লাহর বাণী বলে বিশ্বাস করেছিলেন, তারা কোরানের ভাষার দিকে তাকিয়ে নয়, মুহাম্মদের নবুওত পূর্ব জীবনের দিকে তাকিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিলেন। আর যারা ভুল ধরার ক্ষমতা রাখতেন বা চেষ্টা করেছেন, মুহাম্মদ তাদেরকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলেন।

খলিফা উসমানের আমলে কোরান সংকলন কমিটি ভুল সংশোধন করলেন না কেন?

অনেক ভুল সংশোধন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত উসমান যখন টের পেলেন, লোম খুটতে খুটতে কম্বল খালি হয়ে যাবে, নিষেধ করে দিলেন, আর যেন পরিবর্তন করা না হয়। তবুও এর পরে পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়েছে, যখন জের, জবর, পেশ, নোখতা, তাশদিদ ইত্যাদি যোগ করা হয়।

পনেরো শো বৎসর যাবত এত ভুল মানুষের চোখে পড়েনা কেন, মানুষ এ ভুল মেনে নেয় কেন?

কারণ কোরানকে যারা বিনা প্রশ্নে আল্লাহর বাণী বলে মেনে নিয়েছেন, তারা আল্লাহর ভুলকে ভুল বলা পাপ মনে করেন। তাই আল্লাহ যদি বলেন-‘বালকটি বল খেলিতেছে’, আর ‘তাহারা বল খেলিতেছিল’ বাক্যদ্বয় সমান অর্থ বুঝায়, অথবা আল্লাহ যদি বলেন- "I am going to eat" এবং " I am going to will eat কিংবা "I did go to ate" .তাহলে মেনে নিতে হবে বাক্যসমুহ ব্যাকরণগতভাবে শুদ্ধ। আল্লাহর সৃষ্ট ভাষা আল্লাহ যেভাবে মন চায় ব্যবহার করবেন, তাতে ভুল ধরা পাপ।

সহায়ক তথ্যাবলী-

http://www.answering-islam.org/Books/Jeffery/Vocabulary/index.htm

বিজ্ঞানময় কিতাব অভজিৎ রায়

Who Authored the Qur’an? Abul Kasem

বোকার স্বর্গ আকাশ মালিক

আল্লাহ, মুহম্মদ সাঃ এবং আল-কোরআন বিষয়ক কিছু আলোচনার জবাবে.. নাস্তিকের ধর্মকথা