গভীর সুনসান রাত। সামনে তাকিয়ে আছে খোকা। বিচিত্র চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
এলোমেলো ভাবনা তার মাথায় কিলবিল করছে।
নাহ! নেশাটা আজ বেশি হয়ে গেছে। বন্ধুদের কথায় আবার মনটা চাঙ্গা হল। কাল ক’টা নতুন জিনিষ আনবে। খোকা জানেনা জিনিষটা কী। নীরার মুখটা মনে পড়ছে থেকে থেকে। শরীরটা বেশি ভালো না ।
ছুটন্ত গাড়িতে বসে খোকা স্থির চিন্তা করতে পারছে না।
“জীবন একটাই-এটাকে উপভোগ কর।“ বন্ধুদের এ কথাই বারবার মাথায় ঘুরছে।
দেখাই যাক ,নতুন আইডিয়াটা মন্দ না। বাইরে তাকিয়ে সিগারেটের শেষ টুকরাটা ছুঁড়ে মারল।
দু’তিনটে মেয়ের জটলা। মুখে বেশ রং চং।
হাহ ! আপন মনেই হাসলো। শালা জীবন কাকে বলে। হেড লাইটের তীব্র আলোয় চোখে পড়ল
ইতি উতি তাকাচ্ছে রাত্রিকালীন পুলিশ। শেয়ালের মত ধূর্ত চোখ। ইশারায় গাড়ি থামাল।
-এতো রাতে কোথায় যাচ্ছেন ?
-বাসায় ফিরছি –
ফাটা ঠোঁটের একজন মুচকি হেসে এগিয়ে এল –
-মুখে তো মালের ভালই গন্ধ পাচ্ছি। হলুদ দাঁতের হাসি। খোকা মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকার ক’টা নোট ধরিয়ে দিল। পাশের জিরাফ মার্কাটা গলা বাড়িয়ে বলে,
-যেতে দে, ফুর্তি করে ফিরছে।
খোকা সোজা হয়ে বসল। এই এক যন্ত্রণা। রাত হলেই নেড়ী কুকুরের সঙ্গম, জটলা মেয়েলোক, পুলিশ , উফফ! অসহ্য!
সোজা পার্কিং এ যাবার আগেই লিফটের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো ।লিফটের দরজা খুলতেই তাল সামলাতে পারল না । দেয়ালটা ধরে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকল। নেশাটা বেশি হয়ে গেছে ভাবলো।
কিছুক্ষণ এ ভাবে থেকে জোর পায়ে হেঁটে গেল।
দরজা খোলা। মানে দরজার লক খোলা। অনেক দিন হলো এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আগে ভাড়া বাসায় থাকতে নীরা তিন’টে গেইট পেরিয়ে তালা খুলে তাকে ধরে নিয়ে আসত।
নতুন ফ্ল্যাটে এসে এই ব্যবস্থা খোকাই করছে। নীরার ঘুম পাতলা। অল্পে জেগে ওঠে।
আস্তে করে জুতোটা রেখে ভেতরের ঘরের দুই দরজায় উঁকি দিল। বিথী তিথী দুই বোন ঘুমাচ্ছে।
নতুন ফ্ল্যাটটা নীরা চমৎকার সাজিয়েছে। ঝকঝকে টয়লেটে গিয়ে খোকা খালাস হয়ে বের হতেই
নীরা উঠে বসল।
-আহা উঠলে কেন? ঘুমাও –
-তুমি এলে আমি কি আর ঘুমাতে পারি? কতো কাজ। খাবে না? খাবার গরম করে দেবো ?
-নাহ খাবো না। পরোটা-গোশত খেয়েছি, খিদে নাই।
নীরা উঠে গিয়ে টেবিল গুছিয়ে সব খাবার ফ্রিজে রেখে দিল। আস্তে করে রান্না ঘরে উঁকি দিল।
আমেনা ঘুমাচ্ছে। আহা ঘুমাক। সারাদিন পরিশ্রম করে। আমেনা অনেক পুরোনো এই সংসারে।
সুখে দুঃখে আজো আছে।
মাথাটা কেমন ব্যথা করছে নীরার। ঘরে ঢুকে দেখল খোকা নাক ডাকছে। কেনো জানিনা মনে হল মানুষটা বদলে যাচ্ছে।
গভীর নিঃশ্বাস ফেলে পাশ ফিরল নীরা।
অনেক রাতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এল। নীরার ঘুম তখনো আসেনি।হাত বাড়িয়ে খোকাকে ছুঁয়ে দেখল। মানুষটা পাশে না থাকলে বড্ড খালি খালি লাগে।
নীরা উঠে বসল। নাহ ঘুমটা আজ বোধকরি চটেই গেছে। জানালায় হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির
জল ছুঁতে গেল। বেশ হতো জলটা ধরতে পারলে। রাত জুড়ে নিকষ কালো অন্ধকারকে
কেমন আধিভৌতিক লাগল।
ক’’দিন ধরেই একটা দু;স্বপ্ন দেখে চলেছে নীরা। যার কোনো মানে নেই।
বিছানায় শুতে গিয়ে কালো দেয়াল ঘড়িটা দেখার চেষ্টা করল। পারলনা । “কী যে ঘড়ি
কিনেছিলাম ,পুরোটাই কালো”- ভাবে নীরা।
আবার তাকিয়ে দেখে ও প্রান্তের মানুষটা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। খোকা বোঝেনা রাতটা তাকে
একান্তই কাছে পেতে চায় নীরা।
আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠল খোকা।ঘড়িতে দেখে বেলা ১১টা।
বাইরে তাকিয়ে দেখল বেশ চড়া রোদ। বাতাসে ঝাঁঝাঁল ভাব। চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে মনে হল ওষুধ খাওয়া হয়নি। চুমুক না দিয়েই কাপ নামিয়ে রাখল।
-আমার ওষুধ কই ? নীরা দ্রুত এসে ক্যাপ্সুল ধরিয়ে দিল।
চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে খোকা বাথরুমে ঢুকল। নীরা লক্ষ্য করল খোকার হাঁটাটা খুঁটিয়ে।
পেটটা দিনদিন বেঢপ হয়ে যাচ্ছে। ভঙ্গিটা ইচ্ছে করেই স্ব-প্রতিভ দেখায় জোর করে।
মাঝে মাঝে মায়া লাগে। কেনো জানিনা কদিন ধরে মনে হচ্ছে সংসারে খুব উদাসীন।
–বিথী তিথী কই? মুখে রুটির টুকরো পুরতে পুরতে খোকা প্রশ্ন করে।
-দু’জনাই চলে গেল না? গালে হাত দিয়ে নীরা আর এক চেয়ারে বসে।
-ওহ বেলা এতো হলো খেয়ালই ছিলনা।
-তোমার কি খেয়াল থাকবে? নীরা পড়া পত্রিকায় আবার চোখ বুলাতে বুলাতে জবাব দিল।
-এতো রাতে এলে –তারপর, একটু থেমে বলে –ঘুমিয়ে গেলে –
-হ্যাঁ কি করি বলো,বন্ধুদের সাথে বসলে তো আর সময়ের হিসাব করিনা। নীরা নিরুত্তর।
জানে মদ্যপানের কথা বললে দপ করে জ্বলে উঠবে। মদের মাত্রা কমাবেনা।
কিছু বলতে গেলে মহা ঝামেলা।অথচ দিনদিন শরীর খারাপ হতেই চলেছে।
বললে ও মানে না, মানবেও না।
খোকা ইদানীং খিটখিট করে। আগেও করত, এতো বেশি না। মাত্রাটা বেড়ে চলেছে।
নীরার মনে আছে প্রথম এই ফ্ল্যাটে ঢুকবার পর নীরার বানানো ফার্নিচার দেখে খোকা রেগে গেছিলো। -এতো টাকা খরচ? কোনো দরকার ছিলনা। বুঝেনা কেন যে নীরা এতো টাকা খরচ করল।
আজকে কি খোকা অফিস যাবে? নীরা জানেনা, প্রশ্ন করলে বিরক্ত হবে। ইচ্ছে হল কোনো দিন অফিসে যায়, আবার কোনদিন যায়না।
শোবার ঘরে ঢুকে নিজের ঘর আর একদফা গোছালো। বিথীর ঘরটা আছে
মোটামুটি, তিথীর ঘরটা অসম্ভব আগোছালো। সব গুছিয়ে যখন রান্না ঘরে গেল ,পুরা্নো মানুষ
আমেনা রান্নার তখন জোগাড়ে ব্যস্ত।
শরীরটা বিশ্রাম দিল ড্রইং রুমে। টিভিতে কি যে চলে আজকাল। বুঝেনা নীরা
এত চ্যানেল ,তার মাঝে গোটা দু’এক ছাড়া সব যেনো কুরুচিপূর্ণ মনে হয়। রিমোট দিয়ে অফ করে আবার চোখ বন্ধ করল। ভাবছে এই খোকাই বলছে এখন – “যা ইচ্ছে তাই করো বাপু বাড়ির ফার্নিচার বদলাও যা খুশি কর –কেবল আমার পেছন ছাড়ো”।
খোকা কি বুঝেও না বুঝার ভান করে? এই বাড়ি, ঘর-সংসার সবই তো দু’জনের মিলে
গড়ে তোলা। কতো স্বপ্ন ছিল দু’জনার।
গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। আমেনাকে আর একদফা চা দিতে বলে
এক চিলতে বারান্দায় দাঁড়ালো। বারান্দায় বাতাসের লেশ নেই। গ্রিলে কপাল ঠেকিয়ে ঠাণ্ডাটা
অনুভব করতে চাইল। নাহ্! ভালো লাগছে না। নীরার কোথায় যেনো একটা অশান্তির ভাব
লাগছে।
নিতান্ত দুঃখী মানুষের মত হাতপা গুটিয়ে বিছানায় এসে বসল। ক’টা বিশ্বাসঘাতক কালো
রঙ জানালা দরজা গলে স্বপ্ন আর জাগরণের মধ্য দিয়ে ঢুকে পড়ছে। অবিরাম থেকে থেকে
নেচে নেচে তাকে ভয় দেখাচ্ছে। পৃথিবীর যাবতীয় রঙ্গের সমাহার সব যেনো ধূসর হয়ে আসছে।
জানেনা বুঝেনা অবসাদ কেন আসে। গভীর বিষাদে চোখ বন্ধ করল নীরা।
পর্ব -২
দ্রুত বেগে গাড়িটা ছুটাতে চাইছে খোকা। কিছুতেই বাগ মানাতে পারছেনা। ঢাকা শহরে বিচ্ছিরি
ট্রাফিক জ্যাম। রিকশা,ঠেলা গাড়ি, মিনিবাস,মেগা বাস, অসহ্য। নিজে এ জন্য গাড়ি
চালাতেই চায়না সে। আজ ইচ্ছে করেই ড্রাইভার আনেনি। কি এক উত্তেজনায় পরপর তিনটে
সিগারেট শেষ করল।
ভুল করে গাড়ি চালাতে গিয়ে পথচারীদের খিস্তি কানে এলো ।বাড়ি থেকে
বের হবার সময় নীরাকে কিছুই বলে আসেনি । হঠাৎ ছোটবেলার স্মৃতি মনে এলো। লুকিয়ে
একজনের কাছে ফটো দেখেছিল। কত বয়স হবে? আন্দাজ করতে চাইল মনেমনে। সবে
গোঁফের রেখা দেখা দিতে শুরু করেছে।কতগুলো নগ্ন মেয়ের ছবি। শরীরটা ঐ সময় শিরশিরিয়ে উঠেছিল। সে এক নতুন অভিজ্ঞতা ,নতুন অনুভূতি। একেই কি যৌবনের প্রথম ধাক্কা বলে ? ঐ
দিন রাতে স্বপ্নের ঘোরে অজানা অনুভূতি জাগলো। দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে পড়েছিল।
লজ্জায় ভয়ে ঐ বয়সে কাউকে কিছু বলেনি। বলতে পারেনি।
প্রচন্ড হর্ণ বাজানোর শব্দে সংবিত ফিরে এলো। ট্রাফিক এর লাল বাতি নিভে সবুজ হয়েছে।
ফরিদের অফিসে এসে গাড়ি পার্কিং এ রেখে চাবি দোলাতে দোলাতে সিঁড়ি দিয়েই তিন তলায়
উঠল খোকা। লিফটে ভয়ংকর লাইন। রেলিং এ হাত দিয়েই সরিয়ে নিল হাত। কে যেনো
থুথু ফেলেছিল তার আঁশটে গন্ধ। গা গুলিয়ে এলো। নাকটা গুঁজে দিল নিজের শার্টের হাতায়।
এই শার্টটাও নীরার দেয়া। আসলে যা কিছু হাতে নেয় খোকা, সবই নীরার দেয়া। কেনাকাটা
খোকার ভিষণ বিরক্ত লাগে। এতো বিরক্তের মাঝেও মনে হল নীরার প্রত্যেকটা পছন্দ বড্ড চমৎকার। এমন কি শার্টটা কিনল সে “আড়ং” থেকে একদম অন্যরকম। নীরা অবশ্য সব কিছুই
তার জমানো টাকা দিয়ে কেনে।
আসবাবপত্র গুলো দেখে প্রথমে রাগ হয়েছিল। বন্ধুদের সবাই “ গৃহ প্রবেশ” উপলক্ষ্যে পার্টিতে এসে
যখন খুব প্রশংসা করল , তখন রাগটা একটু কমে গিয়েছিল। ঝুমকি তো বলেই ফেলল
-তোর ভাগ্য ভালো রে । দেখ ভাবী কষ্ট করে টাকা বাঁচিয়ে কত জিনিসপত্র কিনল।
হাসি হুল্লোড়ে নীরার চোখটা উদ্ভাসিত হয়েছিল।
ফরিদের অফিসের দরজা ঈষৎ ভেজান ছিল। ঠেলে ঢুকে পড়ল
খোকা। ফরিদ আপাদমস্তক একবার খোকাকে দেখে ইশারায় বসতে বলে। বাড়ি থেকে বের হবার
সময় খোকা দু’পেগ মেরে এসেছে। এ সমস্ত বিশেষ আয়োজনে দিনের বেলা থেকেই পেটে কিছু না পড়লে ভাল জমেনা।
পকেট হাতড়াতে হাতড়াতে বলে,
-বাকিরা কই রে?
-এইতো এসে পড়বে ।চশমার ফাঁকে ফরিদের চোখে নাচুনি।
-এতো ব্যস্ত হবার কী আছে? সবে তো দুপুর। পুরো দিন আর গভীর রাত বাকি আছে ।
তন্দ্রায় দুঃস্বপ্ন দেখে উঠে বসে নীরা। ঘড়িতে দেখে তখন বেলা আড়াইটা। তিথীর ক্লাস টেস্ট চলছে। আনতে হবে। ছুটির সময় হয়ে এল। দ্রুত কাপড় বদলে নিল। এক ঝলকে পুরো বাড়িটা চুপচাপ দেখে বুঝে গেল খোকা নেই।
কিছু না বলেই বেরিয়ে গেছে। থাকলে বুঝা যেত। সিগারেটের গন্ধ আর উঁচু ভলিয়ুমের টেলিভিশনের শব্দে।
রিকশায় উঠে দেখল ঝকঝকে শরতের আকাশ। গনগনে তাপ ঢেলে দিচ্ছে যেনো। এই রাস্তাটা নীরার
খুব প্রিয়। তিথীর স্কুলে সোজা না গিয়ে ভেতরের রাস্তা ধরল। আবাসিক এলাকার ভেতরের
গাছগাছালিতে কেমন একটা সোঁদা গন্ধ তাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে।
সেদিন সকালে হাঁটতে গিয়ে কতোগুলো নাম না জানা ফুল দেখে অবাক হয়ে গেল।
পৃথিবীর ক্লেদ যেনো ভুলে গিয়েছিল মূহুর্তে। ভোরে সূর্য ওঠার আগে হাঁটতে গেলে এক আশ্চর্য অনুভুতি হয় । প্রথম বাতাস ,হিম হিম পরশ। ঠিক যেনো শিউলি ফুল-ধরার আগেই ঝরে পড়বে।
ধোঁয়া নেই, ক্লেদাক্ত বাতাস নেই ।
কতগুলো কলকলানো কণ্ঠ শুনে নীরা বাস্তবে ফিরে এল। স্কুলের গেইটে রিকশা থামল।
খোকা ঠোঁটে সিগারেট ঝুলিয়ে জানালার কাছে এল। ব্যস্ততম মতিঝিল
অফিস এলাকা কিছুটা শান্ত হতে চলেছে।
ফরিদের অফিসে বারেক ,মোস্তফা ,আজাদ ,নোমান সবাই হাজির। দাঁড়িয়ে চিন্তা করছে খোকা।
বিচ্ছিন্ন এলোমেলো। সিগারেটে গাঁজার পরিমাণটা বেশি হওয়ায় মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
অবশ্য এই ঝিমুনিটা বেশ লাগে। দুই তিন পেগের পরে একটা কড়া সিগারেট-
-আহঃ নাক দিয়ে ভুস করে ধোঁয়া ছাড়ল।
–কী রে দার্শনিক হয়ে গেলি যে আয় আয় – ঘুরে দেখে বারেকের পিটপিটে চোখ। এক অভ্যাস ,
সব সময় পিঁচুটি লেগেই থাকে চোখের কোনে।
-আয় দেখ কী এনেছি।খোকা শেষ টান দিয়ে সিগারেট ছুঁড়ে দিল।
-খোকা দেখ তোর মন্দ লাগবে না, চেঞ্জ হবে। কালচে ঠোঁট নাড়তে গিয়ে প্রায় ই থুথু বেরিয়ে পড়ে আজাদের। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে খোকার। কেনো যে এদের কাছে আসে বুঝেনা।
-আয় বোস না ,দেখ দেখি।আজাদের ইঙ্গিতপূর্ণ হাঁসি।
-শালা তোরা কী আনবি রে ?তোদের তো যত থার্ড ক্লাস রুচি আমি তা জানি। খোকা কাঁধ
নাচায়।
-নাহ ! দেখনা ,খাসা মাল। পছন্দ না হোক আগে কথা বল,বারেক গা ঘেঁসে ফিসফিসিয়ে বলে।
খোকা হাতে নিয়ে ৮/১০টা ছবি দেখে। পেছনে মোবাইল নং দেয়া। একবার চোখ বুলিয়ে
কার্পেটে পা ছড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসল খোকা। চোখ বন্ধ করল। নিজের ওপর বিরক্ত হয়ে
ঝট করে উঠে দাঁড়াল। হা হা করে উঠল সবাই –
-আরে যাচ্ছিস কই?
– আসি একটূ বাথরুম থেকে।টয়লেটে ঢুকে দরজায় ছিটকিনি দিল। প্যান্টের বোতাম খুলতে গিয়ে
চোখ পড়ল বেসিনের আয়নায়। চোখের নীচে গাঢ় কালো ছাপ।ফুলে ঝুলে গেছে। মদ খাবার
প্রচ্ছন্ন ছাপ। মনে হল নীরা পেছনে। ধুস — কেন যে ভাল লাগছেনা খোকা বুঝেনা।
নাকি নীরার প্রচন্ড ব্যক্তিত্ত্বের কাছে হার মানতে চায়না।
প্যান্টের শেষ বোতামটা লাগিয়ে ফিরে আসে।
ততোক্ষণে আসর জমজমাট। আজ বড়ো দানের খেলা। খোকা জানে জুয়ার ভাগ্য তার কোনদিন ভালো না।
বসে পড়ল খেলার ভিড়ে।রাত বেড়ে চললো। পান করতে গিয়ে হৈ হল্লা, ঝগড়া।
আশ্চর্য পরিবেশ। পাশের রুমে টুং টাং শব্দ, খস খসে আওয়াজে এক সময় এগিয়ে গেল খোকা।
আস্তে করে উঁকি দিল। চেয়ারে বসা একটা মেয়ে তার কোল ঘেঁষে হ্যাংলা পটকা বারেক।
খোকার আওয়াজ পেয়ে চট করে ছিটকে গেল।
-আরে- তুই ,আয় –আয় ,কাছে এসে ফিস ফিসিয়ে বলে দেখ একটা মজার ব্যপার।
-খোকা এই ট্যাবলেট খা তুই, চট করে তার হাতে ধরিয়ে দিল। খোকা কিছু বুঝার আগেই ।
-কী দিলি তুই ? খোকা খিঁচিয়ে ওঠে –
-আরে দেখনা ,খারাপ না ফিকফিকান হাঁসিতে তার বিদঘুটে হলদে দাঁত বেরিয়ে এল। ভায়াগ্রা জাতীয় কিছু ট্যাবলেট।
ঝিম মাথা নিয়ে খোকা বসে পড়ল। টানা দরজার পাশে সোফায় হেলান দিয়ে নিজের মুখটা আড়াল করল।
-আহ নীরার মুখ, নীরা যেনো রাডারের মত লক্ষ্য করছে। চারিদিকে শত কোটি বিকট হায়নার হাসি। আলোছায়ায় অদ্ভুত দৃশ্য দেখল। মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছেনা। থেকে থেকে খিলখিলানো
হাসির আওয়াজ। খোকার মাথাটা শূণ্যে উড়তে লাগল। চতুর্দিকে সাতটা রঙ বদলে যাচ্ছে।
লাল,নীল, হলুদ থেকে পিঙ্গল থেকে ধূসরতা গ্রাস করছে।
উঠতে গিয়ে টলে উঠল। ধপ করে বসে পড়ল। ও পাশের রুম থেকে হাসি , ঝগড়া –আর ধোঁয়ার
শব্দ। এক চিলতে বেলকনিতে খোকা। আর আবছা অন্ধকার ঘরে কী হচ্ছে?
ঠাহর করতে পারছেনা খোকা। মাথাটা উড়তে উড়তে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল।
যেখানে নীরা,বিথী,তিথী সব একাকার হয়ে গেল। অনেকবার মনে করতে চাইল তাদের কোমল মুখ
নীরার চেহারা, কিছুতেই এলনা। জমাট ধূসরতা । বারেক বলেছিল ব্যাংককে এই সব হয়।
তুই ব্যাংককে যাবি কেন? ঢাকাতেই ব্যাংকক আছে। জীবন্ত সব দেখাব।
রাস্তায় নেমে বিরক্ত হল খোকা নিজের উপরে। কেন চলে এলাম? আপন মনেই ভাবতে ভাবতে
গাড়িতে স্টার্ট দিল।
এই প্রথম নিজকে কাপুরুষ মনে হল।
(চলবে)
যতদূর পড়লাম ভালো লেগেছে। পুরোটা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
@প্রদীপ দেব,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হ্যাঁ পুরোটাই দিয়ে দিচ্ছি।
কোন ভুল ভ্রান্তি থাকলে পাঠক কে অনুরোধ, বলে দেবেন। আমার জীবনে প্রথম গল্প এইটাই।