১। আমার নকশালাইট বাবা আজিজ মেহেরের কাছে শুনেছি চিকা মারার (দেয়াল লিখন) ইতিকথা। ‘৭০ সালে কমরেড মনি সিং যখন পাকিস্তান সামরিক জান্তার কারাগার বন্দি হন, তখন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকার কালো রাজপথে সাদা চুন দিয়ে লিখেছিলেন:
কমরেড মনি সিং এর মুক্তি চাই!
তবে চিকা মারা নাকি শুরু হয়েছিলো ‘৬৯ এর গণ অভ্যূত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে সময় ছাত্ররা জিগা গাছের ডালের এক মাথা থেঁতো করে বানাতো ব্রাশ। আর আলকাতরা দিয়ে দেয়ালে লেখা হতো স্বাধীনতাকামী নানা শ্লোগান। তো সেই সময় গ্রেফতার এড়াতে এ সবই করা হতো রাতের বেলা টর্চ জ্বালিয়ে।
হঠাৎ রাস্তার টহল পুলিশ দেখলে ছাত্ররা নাকি আলকাতরার টিন লুকিয়ে ফেলে জিগার সেই সব ডাল লাঠি বানিয়ে ঝোপে – ঝাঁড়ে এলোপাতাড়ি বাড়ি দেওয়ার ভান করতো। ‘এতো রাতে বাইরে কেনো’– পুলিশী এই জেরার সরল জবাব আগেই থেকেই তৈরি, ‘আমাদের হলে চিকার (ছুঁচো) খুব উৎপাত। এ জন্য আমরা চিকা মারতে বের হয়েছি।…’ এ ভাবেই নাকি দেয়াল লিখনের নাম হয়ে যায় — চিকা মারা।
‘৭০ এর সাধারণ নির্বাচনের সময় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পাটি চিকা মেরেছিলো:
ভোটের আগে ভাত চাই! ভোটের বাক্সে লাথি মারো, সমাজতন্ত্র কায়েম করো!
‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ওপর ফটো সাংবাদিক রশিদ তালুকদারের অ্যালবাম দেখে চমকিত হই। সেখানেও দেখি ঢাকার দেয়ালে আকাবাঁকা হরফে পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির চিকা:
জনগণ অস্র হাতে তুলে নিন! সাম্রাজ্যবাদ ও তার সমস্ত পদলেহী কুকুরদের পরাজিত করুন!
বাবার কাছেই শুনেছি, স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বহারা পার্টি নাকি প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর হরতাল আহ্বান করতো। তারা বিজয় দিবসকে বলতো ‘ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীর কাছে পূর্ব বাংলার আত্নসমর্পণ দিবস!’ তখন কোথাও হরতাল না হোক, সর্বহারা পার্টির সদর দপ্তর বৃহত্তর বরিশালে পালিত হতো কড়া হরতাল। সেখানে বড় রাস্তার দেয়ালে দু- একটা চিকা মারলে বা কয়েক রাউন্ড কাটা রাইফেলের গুলি ফুটালেই নাকি হরতাল হয়ে যেতো।
২। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জেনারেল এরশাদ সামরিক শাসন জারী করে ক্ষমতা দখল করলে সে সময় স্কুলের দেয়ালে চিকা পড়তে দেখেছি:
বন্যেরা বনে সুন্দর, সৈন্যরা ব্যারাকে।
১৯৮৩-৮৪ সালে এরশাদ বিরোধী মিছিলে পুলিশের ট্রাক চাপায় সেলিম – দেলোয়ার শহীদ হলে আবারও স্কুলের দেয়ালে চিকা পড়ে:
ট্রাক চাপা দিয়েছো, আন্দোলন থামেনি। ট্যাঙ্ক চাপা দিলেও আন্দোলন থামবে না।
তখন এ সব চিকা মারা হতো বেনামে।
আরো পরে ১৯৮৬ সালে শ্রমিক নেতা তাজুল ইসলাম শহীদ হলে জাসদ স্কুলের দেয়ালে চিকা মেরেছিলো:
বিপ্লবের লাল ফুল, শহীদ কমরেড তাজুল।
কলেজে উঠে আমি নিজেও জড়িয়ে পড়ি এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। ‘৮৮ সালের মহাপ্লাবনের সময় এই অধম নিজেই বিশ্রী হাতের লেখায় ঢাকার দেয়ালে চিকা মেরেছিলো:
বানের জলে ভাসছে মানুষ, সেই মানুষের খাদ্য চাই।
সে সময় আমরা চিকা মরতাম বেশ সহজ উপায়ে। আরামবাগের প্রেসগুলো থেকে কেনা হতো ছাপার কালো কালি। সেই ঘন কালিতে তারপিন তেল মিশিয়ে তরল করা হতো। তারপর আসবাব রং করার ব্রাশ দিয়ে লেখা হতো চিকা। মোটা হরফের জন্য ব্যবহার করা হতো জুতার ব্রাশ।
সুন্দর হাতের লেখার জন্য কদর ছিলো মনিরুল ইসলাম কচির। সিলেট মেডিকেল কলেজের ছাত্র কচি ভাই ছুটিতে ঢাকায় এলে তাকে নিয়ে চিকা লেখার ধুম পড়ে যেতো। ঢাকার দেয়ালগুলো অলংকৃত করা শেষে কচি ভাইকে নিয়ে আমরা ছুটে যেতাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা — আরিচা মহাসড়কের দেয়ালেও চিকা মারা চলতো দেদার।
ডাকসু কি জাকসু নির্বাচনের সময় পোস্টারিং এর পাশাপাশি আমরা চানখাঁর পুল থেকে ‘রূপবান’ টিনে ডিমাই সাইজের স্টেনসিল কেটে ভোটের চিকা মারতাম।
১৯৮৮ কি ১৯৮৯ সালের এক রাতে কার্জন হলের দেয়ালে কয়েকজন চিকা মরছি। হঠাৎ দেখি কক্ষচ্যূত মেধাবী কবি সফতার সিদ্দিকী বারান্দার এক কোনে মোমবাতি জ্বালিয়ে বই পড়ছেন। আমি তখন লিখছি:
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, ধ্বংস হোক – নিপাত যাক!…
আমাদের মধ্যে একজন দুষ্টুমী করে কবিকে জিগেষ করে, ‘আচ্ছা ভাই, ধ্বংস বানান কি তালেবশ্য শ’ না দন্তস্য?’
কবিও পাল্টা দুষ্টুমী করে জবাব দেন, ‘ধ্বংস নেতি বলে দন্তস্য। তবে অংশ ইতি বলে তালেবশ্য শ’!’
৩। এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির দেয়ালে অলংকরণসহ ছাত্র ইউনিয়নের এক বিশাল চিকা দেখে আমরা হাসাহাসি করতাম এর বয়ান দেখে। সেখানে লেখা হয়েছিলো:
আমরা সশস্ত্র হবো, অজস্ত্র মৃত্যূতে।…
আহা, যেনো মৃত্যূ কতো শস্তা জিনিষ!!
তখন সবচেয়ে প্রশংসিত ছিলো ছাত্র ফ্রন্টের চিকা। সুন্দর হরফে লাল কালিতে তারা চিকা মারতো। তাদের একটা চিকা এখনো আমার চোখে ভাসে:
শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার।
ঢাকার বাইরে গেলেই রেল স্টেশনগুলোতে দেখতাম তাদের পত্রিকা পড়ার আহ্বান জানিয়ে চিকা:
ভ্যানগার্ড পড়ুন।
ছাত্র ফ্রন্টের চিকাও নিয়েও আমাদের হাসাহাসি ছিলো খুব। আমাদের মুখে মুখে ফিরতো একটা মজার বুলি:
তুমি ছাত্র ফ্রন্টের চিকার মতোই সুন্দর,
সরকারি প্রেসনোটের মতোন মিথ্যে তোমার ভাষণ!
ছাত্র রাজনীতি শেষে ১৯৯৩ সালে সাংবাদিকতার পেশাগত কাজে টেকনাফে গিয়েছি। একজন সহকর্মি দেখালেন চট্টগ্রামের আঞ্চলিক উচ্চারণে আর কাকের ঠ্যাঙ – বকের ঠ্যাঙ মার্কা হাতের লেখায় এক চিকা। খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে লেখা সেই চিকায় লেখা ছিলো:
‘৭১ এর পামিলা, আর করিস না জামিলা।…
৪। অশান্ত পাবর্ত্য চট্টগ্রামের বেশ কিছু চিকার কথা প্রায়ই মনে পড়ে। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ১৯৯২ – ৯৩ সালে চিকা মেরেছিলো:
জেলা পরিষদের সমীরণ (সমীরণ দেওয়ান; এখন শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান), পাহাড়িদের দুশমন ।
আরেকটি:
জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির নেতা এমএন লারমা, লও লও লাল সালাম!
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বাঙালি সেটলারদের ভূঁইফোড় সংগঠন প্রথমে ‘পার্বত্য গণ পরিষদ’, পরে ‘সম অধিকার আন্দোলন’ পাহাড়ে প্রচুর চিকা মারে:
বাঙালি গণহত্যাকারী সন্তু লারমার ফাঁসি চাই।
পার্বত্য কালো চুক্তি মানি না, বাতিল করো।
আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয় জ্বালিয়ে দাও, পুড়িয়ে দাও।…
ইসলামী ছাত্র শিবিরের মতো কটকটে নীল কালিতে লেখা ‘কষ্টে আছে আইজুদ্দীন’ – চিকাটি অনেকেই অনেকদিন মনে রাখবেন।
এই সেদিন জে. মইন-ফখরুদ্দীনের এক-এগারোর সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক সরকারের সময় চালের দাম যখন রাতারাতি কেজিতে ২০ টাকা+ থেকে ৪০ টাকা+ এ দাঁড়ালো, তখন প্রেসক্লাবের দেয়ালে রঙিন চক দিয়ে লেখা একটি চিকা দেখে চমকে উঠেছিলেন অনেকেই:
মর বাঙালি না খেয়ে ভাত, ফখরুদ্দীনের আশির্বাদ!
সবাই জানেন দেশ জুড়ে চিকা মারার মহোৎসব শুরু হয় ভোটের সময়। তবে এবার নির্বাচন কমিশন আইন করেছে, রাজনীতি এবং নির্বাচনী সব ধরণের কাজে দেয়াল লিখন করা যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মততিতে এটি প্রথমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও পরে আইনে পরিনত হয়। তাই গত স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনের সময় যেমন কৃচ্ছতার হাঁড়িকাঠে এক কোপে বাদ দেওয়া হয় রং-বেরং এর চোখ ধাঁধানো সব চিকা।
এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছাড়া তেমনভাবে আর চিকার দৌড়াত্ব চোখে পড়ে না। এর বাইরে আছে কোচিং সেন্টার, অর্শ-গেজ-ভেগন্দর-পাইলস চিকৎসাসহ আরো নানান সব বিচিত্র বিজ্ঞাপনী চিকা।
তো আইন হয়ে কী শেষমেষ হারিয়েই যাবে আমাদের চিকা সংস্কৃতি?…
—
ছবি: জে. মইনের পদত্যাগ দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ২১ আগস্ট ২০০৭, বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম।
লেখাটা পড়ে একগাদা স্মৃতি এসে জড়ো হলো। মনে আছে একবার বান্দরবানের গন্দুমে UNHCR এর একটা consultancy করতে গিয়ে দেখেছিলাম রোহিঙ্গা দের একটা দেয়াল লেখন
“ খালেদা জিয়া আঁরার মা , ন যাইয়ুম বর্মা”
বুঝেছিলাম বাংলাদেশ সরকার যখন রহিঙ্গা দের মায়ানমারে ফিরিয়ে দিয়ে আসতে চাইছিলো তখন ই এটা লেখা হয়েছে ।
আমি কোলকাতায় অবাক বিস্ময়ে দেখেছি কি চমৎকার করে দেয়ালে রঙ্গীন কালি তে লেখা সব শ্লোগান। ওগুলো সব কিছু ছাপিয়ে শিল্পের কাছাকাছি যেন এসে দাঁড়িয়েছে।
এদেশে এসে সমপরিমাণ আগ্রহ নিয়ে আমি নিউ ইয়র্কের দেয়ালে লেখা দেখার জন্যে রাস্তায় দাড়িঁয়ে পড়েছি। দেখলাম আশে পাশের মানুষের চোখে মুখে অস্বস্তি , জানলাম ওগুলো গ্র্যাফিটি । সাধারনতঃ গ্যাং রা লিখে থাকে , দূর্বোধ্য ভাষা, রঙ্গীন কালিতে লেখা । জানলাম রাস্তার ইলেকট্রিক তারে ঝোলানো স্নিকারস এরো একটা অর্থ আছে। ওটা ওই গ্যাঙ্গের আধিপত্যের সীমানা নির্ধারন করছে, আর আশে পাশের দেয়ালে লেখা গুলো ওই গ্যাং এর লেখা।
কেনো জানি না মিছিলের শ্লোগান, দেয়ালের লেখন এগুলোতে আমি সব সময় একটা জাগরণের ইঙ্গীত পেতাম। এখানে আমার নতুন পাঠ শুরূ হলো। এতদিনের সব রেফারেন্স পয়েন্ট গুলো এলো মেলো হয়ে গেলো।
@কেয়া রোজারিও,
আপনার প্রতিক্রিয়া পেয়ে ভালো লাগলো। :rose:
এ মুহূর্তে ফেনিতে দেখা বিএনপির একটি চিকার কথা মনে পড়ছে:
হুমম…কোলকাতার সচিত্র দেয়াল লিখনগুলো সত্যিই খুব চমৎকার। বিশেষ করে ভোটের সময় নেতা-নেত্রী আবক্ষ চিত্র, দলের নির্বাচনী প্রতীক বা চিহ্নসহ বহু বর্ণের চিকাগুলো সত্যিই খুব আকর্ষনীয়।
শিয়ালদহ রেল স্টেশনের পাশের দেয়ালের এই চিকাটির কথা প্রায়ই মনে পড়ে:
চিকাটির পাশেই মার্কিন পতাকায় মোড়া একটি হিংস্র শকুনের থাবার নীচে অসহায় জনগণের ছবি আঁকা হয়েছিল।
নিউ ইয়র্কের গ্যাংস্টারদের দেয়াল লিখন সর্ম্পকে প্রায়ই হলিউডি ছবিগুলোতে আভাষ পাওয়া যায়। আপনাকে বিনীত অনুরোধ জানাই, এ সম্পর্কে ছবিসহ মুক্তমনায় একটি লেখা দেওয়ার। :yes:
ভালো লাগলো চিকার ইতিহাস জেনে।আমরাতো অনেক ছোট তাই এরশাদ এর সময়ের চিকা মারা দেখিনি সত্য কিন্তু আমি যখন প্রাইমারী পড়ি তখন চট্রগ্রাম সিটি বিদ্যালয় এর সামনে রাজাকার নিপাত যাক আর পাশে এক রাক্ষশ রাজাকার এর চিকা ছবি ছিল।তা এখনো মনে দাগ কাটে।ঘ্রিণা টা মনে হই তার থেকেই জন্ম নিয়েছিল।
@আনোয়ার রানা,
বাহ্, চমৎকার কথা মনে করিয়েছেন তো! অনেক চিকার সঙ্গেই চিত্রণ যুক্ত করা হতো। লেখাটি পুনর্লিখনের সময় এ কথাটিও মুল লেখায় যুক্ত করতে হবে। :yes:
😀 😀
দু বছরের কলেজ জীবনে ছাত্রফ্রন্টের কর্মী ছিলাম। তখন আমরা চিকা মারতে যেতাম। এক রাতে এক নতুন বাড়ির সাদা দেয়াল দেখে লোভ সামলাতে পারলাম না। দিলাম চিকা মেরে।
সকাল বেলায় বাড়িওয়ালার সে কি গালাগালি। আমরা ভালো মানুষটি সেজে তার সাথে সুর মিলিয়ে ছাত্রফ্রন্টের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগলাম। কি দিন ছিল সে সব! যখন আমরা ভাবতাম দুনিয়া তৈরিই হয়েছিল আমরা জন্মাবো বলে। এখন দেখি দুনিয়ার আরো অনেক প্লেয়ার আছে।
@বকলম,
হাসতে হাসতে….পড়ে গেলো।
অসাধারণ!
একটা অণুগল্প হতে পারে কিন্তু এই লাইন ক’টার আগে আরো কিছু জুড়ে দিলে। দেখবেন নাকি?
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
অনুগল্প? বকলম ভাইকে খানিকটা সাহায্য করা যেতে পারে। আমার তো গল্প-কবিতা একেবারেই আসে না…আপনি ট্রাই মারবেন নাকি ভ্রাতা? 😉
@বকলম,
আবার জিগস? 😛
চিকা মারার প্রসংগে মনে পড়ল; আমরা যে মাঝে মাঝে হলের উপরের তলার দেওয়ালে চিকা দেখি সেগুলির নীচে দাঁড়িয়ে লেখার যায়গা অনেক সময় থাকে না। সেগুলি নাকি ছাঁদ থেকেই দাড়িয়ে উলটা হয়ে লেখা হয়। কেউ আলোকপাত করতে পারেন?
রিক্সা বেবির পেছনে যে চিত্রকর্ম দেখা যেত তাও আমার খুব প্রিয় ছিল। কত বিচিত্র শিল্পকর্মই না দেখা যেত।
@আদিল মাহমুদ,
আপনি ঠিকই জেনেছেন। এটি খুবই মুন্সিয়ানার কাজ। সব চিকা-লেখক এটি পারেন না, কেউ কেউ পারেন।
তবে এখন তো পুরো সংস্কৃতিটাই বিলুপ্ত হতে বসেছে। :deadrose:
@বিপ্লব রহমান,
আসলেই এটা বিরাট শিল্প কর্ম। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। আমি তো টেবিলে চেয়ারে বসে কাগজ কলমে সাধারন লেখাও লিখলে নিজেই অনেক সময় কিছুদিন পরে পড়তে পারি না, সেখানে ৭ তলার ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে ১৮০ ডিগ্রী ঝুকে পেইন্ট করে নিখুত সুন্দর লেখা!
কনফার্ম করার জন্য ধন্যবাদ।
রিক্সা বেবীর পেছনের চিত্রকর্ম নিয়েও কিছু লেখেন 🙂 । এসব বিলুপ্তপ্রায় শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।
@আদিল মাহমুদ,
রিকশা পেইন্টিং নিয়ে অনেকে কাজ করছেন। এমনকি ঢাকার আড়ং-সহ বেশ কিছু দোকানে রিকশা পেইন্টিং বিক্রিও হচ্ছে।
আমি চিন্তায় আছি আমাদের ঐতিহ্যবাহী চিকা সংস্কৃতি নিয়ে। বিলুপ্ত এই শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সাবেক চিকা লেখক, বর্তমানে চিকিৎক এবং ‘জৈববিবর্তনঃ দেড়শ’ বছরের দ্বন্দ বিরোধ’সহ আরো বেশকিছু বিজ্ঞানমনস্ক বইয়ের লেখক — কমরেড মনিরুল ইসলাম কচির সঙ্গে শলা-পরামর্শ করে দেখি… কোনো উপায় বের করা যায় কী না। :-/
নইলে ভভিষ্যত প্রজন্ম এক সময় গুগল/ইয়াহু ঘেঁটেও চিকা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতে পারবে না। উফ…কি ভয়ংকর…ভাবতেই আমার গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। 😥
চমৎকার লাগল পড়ে । চিকা মারার ইতিহাসও জানলাম । 🙂
@নন্দিনী, :yes:
লেখাটা ভাল লাগল!
কারমাইকেল কলেজে পড়ার সময় রিক্সায় করে ফেরার সময় সাদা দেয়ালে
কালো অক্ষরে একটা লেখা চোখে পড়ত-
“মাও, ভূট্টো,নিক্সন
বাংলাদেশের দুশমন”
@লাইজু নাহার,
ভুট্টো-নিক্সন’এর সঙ্গে মাওসেতুং-কে একই কাতারে দাঁড় করানো? উর্বর মস্তিক বটে! এ যেনো সেই নির্মলেন্দু গুনের কবিতার শিরোনাম:
:laugh:
@বিপ্লব রহমান,
আমার মনে হয় এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল।
এজন্যই এই চিকা!
@লাইজু নাহার,
আমারও তাই মনে হয়। তাই যখন হাফেজ্জি হুজুরের খেলাফত আন্দোলন চিকা মারে :
তখন কষে এদের রাম ধোলাই দেওয়ার বদলে কেনো জানি অট্টহাসি এসে যায়। খিকজ! 😉
হাহ হা, এটা জানতাম না। কচি ভাই যিনি ‘জৈববিবর্তনঃ দেড়শ’ বছরের দ্বন্দ বিরোধ’ বইটির লেখক তাই না? আচ্ছা, ঐ বইটি বা এর কিছু অধ্যায় যদি মুক্তমনায় রাখা যেত।
আপনি চিকা মারার উপর কোনো ডিগ্রী নিয়েছেন কিনা জানিনা তবে দারুন লেখেছেন নিঃসন্দেহে।
@সৈকত চৌধুরী,
প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী না নিলে কি হবে, আমরা সম্মানসূচক ডক্টরেট দিতে পারি।
@আদিল মাহমুদ,
এই সব উস্কানিমূলক প্রস্তাবনার বিরুদ্ধে মুক্তমনার দেয়াল চিকা মেরে ছয়লাব করে ফেলবো কিন্তু…হুমম। 😉
@সৈকত চৌধুরী,
ঠিকই ধরেছেন ভ্রাতা। কচি ভাই আমার ছাত্র জীবনের আর্দশ। ছাত্র রাজনীতি, পড়াশুনা, জীবন গঠন– সবদিক থেকেই ওনার কাছে আমার অশেষ ঋণ।
ই-বুক বিষয়ক আপনার প্রস্তাবটি ওনাকে ভেবে দেখতে অনুরোধ করবো।
কস্কী মমিন? 😀
সদ্য আমি নেপাল থেকে ঘুরে এলাম। সেখানেও দেখলাম পাহাড়ী রাস্তার পাশে পাহাড়ের কালো পাথরের ওপর লাল সাদায় লেখা স্লোগান। স্থানীয় যেহেতু হরফে হিন্দির সাথে বেশ মিল আছে। তাই বেশ বুঝতে পারছিলাম ওখানের জনআন্দোলনের তীব্রতা।
আমাদের দেশে সিপিএমের এখন কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স। তাই ওরা অফসেটে ছাপানো পোস্টার বেশি পছন্দ। আর এছাড়া ভোটের আগেই কেবলমাত্র দেওয়াল লিখন দেখা যায়, যা অন্য পার্টির নেতাদের কুৎসা করার কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়।
জনগনতান্ত্রিক বিপ্লব টিপ্লব এখন উবে গেছে।
@বিপ্লব দাস,
কিছুদিন আগে তাঁরা টিভি চ্যানেলের একটি সাক্ষাৎকারে একজন মাওবাদী নেতার চমৎকার মন্তব্য শুনেছিলাম। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, সিপিএম-ও বামপন্থী দল, আপনারাও তাই। তাহলে এই দুদলের মধ্যে বিরোধটা কোথায়? জবাবে তিনি বলেছিলেন, দেখুন, সিপিএম হচ্ছে মূলা-কমিউনিস্টদের পার্টি। এই পার্টির বাইরের দিকটা লাল, ভেতরের দিকটা সাদা! 😀
চিকামারার ইতিহাস জেনে ভাওল লাগল।
৮০ এর দশকে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয় এলাকায় ছাত্র শিবিরের একটা চিকামারা হে তরুণ এসো সত্যের পথে, এসো কোরানের পথে। আমার কিন্তু তাদের রাজনৈতিক দর্শন বিবেচনায় না এনে পুরো দেয়াল জুড়ে চমৎকার হস্তাক্ষরে কড়া নীল রঙে লেখাটি এখনো মনে গেঁথে আছে।
@গীতা দাস,
হুমম।…
এই লেখাতেও ছাত্র শিবিরের কটকটে নীল কালিতে লেখা চিকার কথা উল্লেখ আছে। এ মুহূর্তে ছাত্র শিবিরের যে চিকাটি মনে পড়ছে, সেটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের দেয়ালে ইংরেজীতে লেখা হয়েছিল:
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। :rose:
@বিপ্লব রহমান,
হ্যাঁ, আপনার ছাত্র শিবিরের কটকটে নীল কালিতে লেখা চিকার কথা উল্লেখ পড়েই তো আবার মনে পড়ে গেল ।
আর বন্যেরা বনে সুন্দর, সৈন্যরা ব্যারাকে চিকামারা পড়েছিলাম ঢাকা কলেজের দেয়ালে।
@গীতা দাস,
এরশাদ আমলে এটা দেখেছি।
@গীতা দাস, @ আদিল মাহমুদ,
ঠিক তাই, তখন আমি স্কুলের নীচু ক্লাসের ছাত্র। আর পুলিশের গুলিতে প্রায়ই ছাত্র হত্যার বর্বরতা নিয়ে বাড়িতে আলোচনা শুনতাম।…
পরে আমি নিজেই যখন যুক্ত হই এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে…তখন চোখের সামনে ঝরে যেতে দেখেছি, কতো তাজা প্রাণ! সে সব কথা মনে পড়লে এখনো চোখ ছল ছল করে ওঠে।… :brokenheart:
ভাবছি, এ নিয়েও মুক্তমনায় একটি লেখা লিখবো।
চিকা কাহিনী বড়ই চমকপ্রদ। তবে নিজের বাড়ির পরিষ্কার দেওয়ালে বিনা নোটিসে সকাল বেলা উঠে চিকা মারা দেখলে এই সুন্দর সাহিত্য ও চিত্র কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা না এসে উল্টাটাই আসে। এখানেও নিশ্চয়ই অনেক ভুক্তভোগী আছেন।
@আদিল মাহমুদ,
ঞঁ !! 😛
ভালো লাগলো চিকার ইতিহাস জেনে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂
দারুণ লাগলো। এরকম জীবন্ত বর্ণনা আরো চাই। রিপোর্টারের ডায়েরির পাতা শুধু পাহাড়ে আটকে থাকলে চলবে?
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
অনেক ধন্যবাদ। :yes: