মুক্তমনা সদস্যদের জনপ্রিয় দাবীতে সাড়া দিয়ে বিবর্তনের আর্কাইভ এর কাজে হাত দেওয়া হল। প্রাথমিকভাবে এই সাইটে একটা প্রশ্নোত্তর এর লিষ্ট দাঁড় করিয়েছি (এছাড়াও আছে বিবর্তনের অন্যান্য প্রবন্ধ, ই-বুক এবং বাইরের বিভিন্ন সাইটের লিঙ্ক)। এখন পর্যন্ত দু’একটা প্রশ্নের উত্তর লেখা হয়েছে নমুনা হিসেবে, সবাই মিলে এই লিষ্টটাতে আরও প্রশ্ন যোগ করতে থাকলে কাজটা অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। এখানে মুক্তমনার বিভিন্ন লেখা (ইরতিশাদ, অভিজিৎ, পৃথিবী, তানভী, শিক্ষানবিস, অপার্থিব, রায়হান, ধ্রুব, পথিক এবং আমি সহ যারা বিবর্তন নিয়ে লেখালিখি এবং মন্তব্য করেন তাদের উপকরণ থেকে নেওয়া) থেকে এই প্রশ্নগুলো জোগাড় করার চেষ্টা করেছি । বাংলায় বিবর্তনের কোন ভাল আর্কাইভ নেই যেখানে এক সাথে সব কিছুর উত্তর পাওয়া যেতে পারে। আশা করছি ভবিষ্যতে এই আর্কাইভটাকে একটা পূর্ণাংগ রূপ দেওয়া যাবে।
প্রশ্নগুলোর একটি প্রাথমিক তালিকা রাখা হয়েছে এখানে –
http://www.mukto-mona.com/evolution/
এর বাইরেও আরও অনেক প্রশ্ন আছে, মুক্তমনার সকল আগ্রহী পাঠক, লেখকদের অনুরোধ করছি তালিকায় রাখা প্রশ্নগুলোতে চোখ বুলাতে,এবং আর কি কি প্রশ্ন এখানে সংযোজন করা যায় তা জানাতে। আপনারা মন্তব্য সেকশানে প্রশ্নগুলো দিতে থাকলে আমরা সেটা মূল পোষ্টে জুড়ে দিব। আর কেউ যদি উত্তর লিখে পাঠাতে চান তাহলে প্রথম উত্তরটার ফরম্যাটে লিখে পাঠাতে অনুরোধ করছি। অনেকগুলো উত্তর আসলে মুক্তমনা সাইটেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কোন কোন প্রশ্নের উত্তর হয়তো একাধিকবার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেয়া হয়েছে। সেগুলো ঠিকঠাক মত গুছিয়ে( রেফারেন্সসহ) আর্কাইভ আকারে রাখা প্রয়োজন। মূলতঃ সেই প্রচেষ্টা থেকেই প্রাথমিকভাবে রায়হান, তানভী, অভিজিৎ আর আমি মিলে এই কাজে হাত দিয়েছি।
এর বাইরে যারা এর সাথে যুক্ত হতে চান দয়া করে আমার সাথে ইমেইলে ([email protected]) যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া সার্বিকভাবে পৃষ্ঠাটির লে-আউট , ডিজাইন ইত্যাদি নিয়েও পাঠকদের অভিমত প্রার্থনা করছি। খুব সাদামাটা একটা ব্যানার করলাম আপাতত যাতে পৃষ্ঠাটি লোড করতে কোনরকম পারফরম্যান্সজনিত সমস্যা না হয়।
টক অরিজিন এ একটা বিশাল লিষ্ট আছে, সেগুলো আস্তে আস্তে এখানে দেওয়াই যাবে, তবে শুনেছি দেশে নাকি হারুন ইয়াহার বিবর্তন বিরোধী বিভিন্ন কথাবার্তা বেশ জোরেসোরে প্রচার করা হয়। পিসটিভিতে (আর দিগন্ত বলেও একটা ইসলামিক চ্যানেল আছে মনে হয়) নাকি বিবর্তন বিরোধী অনেক কিছু দেখানো হয়, শিবিরেরও নাকি একটা বিবর্তন বিরোধী প্রশ্নের লিষ্ট আছে। দেশের থেকে কেউ যদি তাদের প্রশ্নগুলো পাঠাতে পারেন তাহলে দেশের মানুষের মন-মানসিকতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করে প্রশ্নোত্তরগুলো তৈরি করা যাবে।
সবাইকে ধন্যবাদ এই কাজটাতে আগ্রহ দেখানোর জন্য। দেখুন তাহলে পৃষ্ঠাটি –
বিবর্তন নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলোর উত্তর
বিঃ দ্রঃ পৃথিবী, আপনি সহযোগিতা করতে চেয়েছিলেন, আপনার সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবো জানাবেন। ইচ্ছা করলে আমাকে ই-মেইল করতে পারেন। আপনি এই পৃষ্ঠার সম্পাদনা দলের সাথে যোগ দিলে খুশী হব।
ডারউইন যখন প্রথম তার থিওরী প্রদান করেন তখন তার থেকে শতগুনে যোগ্য একজন সমসাময়িক প্যালেওন্টোলজিস্ট লাওইস আগাসিজ ফসিল রেকর্ডের আলোকে ডারউইনের হাইপোথিসিসকে বাতিল করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ডারউইন যেহেতু তার তত্ত্বের আলোকে জীবের উৎপত্তির একটি বস্তুবাদী ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছিলেন এবং যেহেতু পশ্চিমা বিশ্বে চার্চের সাথে বিজ্ঞানের যুদ্ধ চলছিল, ডারউইনের এই মতবাদ পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ-ভিত্তিক না হয়েও পরবর্তীতে গ্রহণযোগ্যতা পায়।
ডারউইন কৃত্রিম সংকরায়ণের উপর পর্যবেক্ষণ করে বলেছিলেন প্রজাতিতে যে ভ্যারিয়েশন হয় সেগুলো প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হতে পারে এবং যথেষ্ট সময় দিলে তা নতুন প্রজাতিতে পরিণত হতে পারে। তার এই প্রকল্পের বিপরীতে তিনি ফসিল রেকর্ডকেও দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ফসিল রেকর্ডে দুটো সমস্যা তার দৃষ্টিতেই বাঁধা মনে হচ্ছিল:
১. ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোসন, এবং
২. গ্র্যাজুয়্যাল ইভলিউশনের জন্য ফসিল রেকর্ডে গ্র্যাজুয়্যাল ফসিল এভিডেন্সের অভাব।
তিনি এ দুটো ব্যাখ্যার অপূর্ণতার জন্য দায়ী করেছিলেন তৎকালীন ফসিল রেকর্ডের অপূর্ণতাকে। কিন্তু গত ১৫০ বছরের ফসিল অভিযান এই অপূর্ণতাকে সমাধান করেনি বরং আরও তীব্র করেছে।
ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোসন হল জিওলজিকাল টাইম স্কেলে খুব ক্ষুদ্র একটি সময় (৫৩০ মিলিয়ন বছর থেকে ৫২০ মিলিয়ন বছর পূর্বে) যখন ভূস্তরে প্রাণীজগতের প্রায় ২০টি পর্বের (Phylum) একত্রে আগমন ঘটে। লক্ষ্যণীয় প্রাণীজগতের শ্রেণীবিন্যাসের যে ছয়টি স্তর আছে তার মধ্যে Phylum বা পর্ব হল উপরে। এরপর যথাক্রমে Class, Order, Family, Genus, Species. একটি স্পিসিসের সাথে আরেকটি স্পিসিসে গাঠনিক পার্থক্য খুবই কম। এমনকি শুধু রঙের পার্থক্য ও রিপ্রোডাকটিভ আইসোলেসনের কারণে একটি স্পিসিস আরেক স্পিসিস থেকে ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু শ্রেণীবিন্যাসের ক্রমে যত উপরের দিকে উঠা যায় ততই প্রাণীদের গাঠনিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। বিশেষ করে পর্ব ও শ্রেণী পর্যায়ে প্রাণীদের স্পষ্টভাবে আলাদা করা যায়। পর্বগুলোর পার্থক্য হলো তাদের সম্পূর্ণ পৃথক ‘Body Plan’। ডারউইনিয়ান পদ্ধতি সঠিক হলে ক্যামব্রিয়ান এক্সপ্লোসনের আগে প্রি-ক্যামব্রিয়ান পিরিয়ডে (এডিয়াকারান পিরিয়ড) পর্যায়ক্রমিক জটিলতর ‘বডি প্ল্যানের’ অনেক ফসিল পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রিক্যামব্রিয়ান স্তরে এ ধরণের ফসিল এভিডেন্স নেই। আছে শুধু এককোষী জীব এবং স্পঞ্জ জাতীয় প্রাণীর ফসিল।
ক্যামব্রিয়ান নিয়ে ডারউইনের এই সন্দেহ গত ১৫০ বছরের ফসিল রেকর্ডের আবিস্কার, প্রি-ক্যামব্রিয়ান ফসিল না থাকার বিভিন্ন ব্যাখ্যার (যেমন: আর্টিফ্যাক্ট হাইপোথিসিস) ব্যর্থতা এবং জেনেটিক্স ও মলিকিউলার বায়োলজির বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির আলোকে আরো প্রকট হয়ে ডারউইনবাদের জন্য ‘সন্দেহ’ থেকে ‘বিপরীত’ এভিডেন্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কেন এবং কীভাবে তা হলো সেটা নিয়েই, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি থেকে ফিলোসফি অব সায়েন্সে ডক্টরেট স্টিফেন সি. মায়ার তার বই ‘Darwin’s Doubt’ লিখেছেন।
বইটিতে একদিকে যেমন ডারউইনবাদের সাথে ফসিল এভিডেন্সের অসংলগ্নতা নিয়ে তথ্য-ভিত্তিক আলোচনা আছে, তেমনি জেনেটিক্সের সাথে ডারউইনবাদের আধুনিক সংকরণ নিও-ডারউইনিজমের ব্যর্থতা নিয়েও আলোচনা আছে।
প্রসঙ্গত, ডারউইন যখন প্রথম মতবাদ দেন, তখন তিনি জিন ব্যাপটিস্ট লামার্কের তত্ত্ব থেকে কিছু ধারণা তার চিন্তায় ঢুকিয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল প্রজাতিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজনে বৈশিষ্ট্যে কিছু বংশানুক্রমে সঞ্চালনযোগ্য (হেরিটেবল) পরিবর্তন সূচিত হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে তা নির্বাচিত হয়ে ধীরে ধীরে প্রজাতিতে পরিবর্তন আসে। কিন্ত গ্রেগ্রর জোহানস মেন্ডেল যখন দেখালেন জীবের ভিতর জীবের বৈশিষ্ট্যগুলো জিন হিসেবে থাকে এবং বিভিন্ন জিন থাকার কারণে বৈশিষ্ট্যের বিভিন্নতা তৈরী হয়। তখনও মিউটেশন আবিস্কার হয়নি। ফলে ডারউইনবাদ প্রাথমিকভাবে সমস্যায় পড়ে যায়। কিন্তু যখন মিউটেশন আবিস্কার হয় এবং দেখা যায় মিউটেশন প্রজাতির জিনে ক্ষতি সাধন করতে পারে তখন ডারউইনবাদকে জেনেটিক্সের সাথে মিশিয়ে নতুন সিনথেসিস করা হয় ১৯৪২ সালে, যার নাম নিও-ডারউইনিজম। এতে নেতৃত্ব দেন আর্নেস্ট মায়ার, থিওডসিয়াস ডবঝানস্কি, থমাস হাক্সলি প্রমুখ। নিও-ডারউইনিজমের মূল কথা- র্যাণ্ডম মিউটেশনের মধ্য দিয়ে প্রজাতিতে ভ্যারিয়েশন তৈরী হয় এবং ন্যাচারাল সিলেকশনের মধ্য দিয়ে ফেবরেবল ভ্যারিয়েশন বাছাই হয়। এভাবে মিলিয়ন বছরের ব্যবধানে একটি প্রজাতি আরেকটি প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়।
এরপর ১৯৫৩ সালে ফ্রান্সিস ক্রিক এবং জেমস ওয়াটসন আবিস্কার করেন- ডিএনএ। আবিস্কার হয় কম্পিউটার যেমন বাইনারী নাম্বারে কোড ধারণ করে, ঠিক তেমনি ডিএনএ প্রোটিন গঠনের তথ্য কোড হিসেবে ধারণ করে। এডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিন ও থায়ামিন এই চার ধরণের নাইট্রোজেন বেজ দিয়ে গঠিত হয় ডিএনএ কোড। প্রতি তিনটি নিউক্লিওটাইড একটি এমাইনো এসিডকে কোড করে। জীবে প্রাপ্ত প্রোটিন গঠিত হয় ২০ ধরণের এমাইনো এসিড দিয়ে। অন্যদিকে ৪টি নিউক্লিওটাইড ৩টি পজিশনে মোট ৪^৩ তথা ৬৪ রকমে বসতে পারে। সুতরাং দেখা গেল, একেকটি এমাইনো এসিড একাধিক নিউক্লিউটাইড কম্বিনেশন দিয়ে কোড হতে পারে।
সময়ের সাথে সাথে জানা যায় মিউটেশন হলো নিউক্লিওটাইড সাবস্টিটিউশন, ইনসারশন, ডিলেশন ইত্যাদি ধরণের। মিউটেশনের মধ্য দিয়ে যদি এমন একটি নিউক্লিওটাইড সাবস্টিটিউশন হয় যে এমাইনো এসিড অপরিবর্তিত থাকে তাহলে প্রোটিনের গঠনে কোন পরিবর্তন হবে না। এ কারণে একই কাজ সম্পাদনকারী প্রোটিনের জেনেটিক কোডে পার্থক্য থাকতে পারে। এবং প্রজাতিভেদে ব্যাপারটা এরকমই পাওয়া যায়। এই বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে ‘মলিকিউলার ক্লক’ বা ‘ফাইলোজেনেটিক স্টাডি’। অর্থাৎ একটি প্রোটিন যা একটি নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করে, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে উক্ত প্রোটিনটির জেনেটিক কোডে ভিন্নতা ও মিল হিসেব করা হয়। এরপর মিউটেশনের হার ইত্যাদির আলোকে দেখা হয় যে দুটো সমজাতীয় প্রজাতির কত বছর আগে পরস্পর থেকে পৃথক হয়েছে। (বিস্তারিত বইটিতে আছে।)
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো যদি বিবর্তনের মাধ্যমে প্রজাতি এসে থাকে তাহলে বিভিন্ন জিন নিয়ে ফাইলোজেনেটিক স্টাডি করলে সমজাতীয় মলিকিউলার ট্রি পাওয়ার কথা, অথচ বিভিন্ন মলিকিউলার ইভোলিউশনারী বায়োলজিস্ট বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন প্রোটিন, বিভিন্ন পর্বের একই ধরণের জিন নিয়ে গবেষণা করে যে ‘ট্রি’গুলো দাঁড় করিয়েছেন তাতে ইভোলিউশনারী টাইমিং-এর কোন কনগ্রুয়েন্ট পিকচার নেই। এই বিষয়টি খুব সুন্দর চিত্রের আলোকে Darwin’s Doubt বইটিতে লেখক দেখিয়েছেন।
প্রোটিন গঠিত হয় ২০ ধরণের এমাইনো এসিড দিয়ে এবং প্রোটিনের গঠন খুবই স্পেসিফিক। ধরা যাক, দুটো এমাইনো এসিড পরস্পর পেপটাইড বণ্ড দিয়ে যুক্ত হবে। তাহলে সম্ভাব্য সমাবেশ হতে পারে, ২০x২০ তথা ৪০০ ধরণের। তিনটি হলে ২০x২০x২০ তথা ৮০০০ ধরণের, ৪টি হলে ২০^৪ = ১৬০০০০ ধরণের। অথচ, কোষের ভিতর ছোট আকৃতির একটি কার্যকরী (ফাংশনাল) প্রোটিন গড়ে ১৫০টি এমাইনো এসিডের সমন্বয়ে তৈরী হয়। সুতরাং ১৫০ ঘরে বিন্যাস হবে ২০^১৫০ তথা ১০^১৯৫ ধরণের। যার মধ্যে খুব অল্প সংখ্যক বিন্যাসই কার্যকরী প্রোটিন গঠন করতে পারে। এই সংখ্যাটা কত বড় তা বুঝানোর জন্য বলা যায়, আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বে ১০^৮০টি মৌলিক কণা আছে এবং আমাদের মহাবিশ্বের বয়স ১০^১৬ সেকেণ্ড। সুতরাং র্যাণ্ডম মিউটেশনের মধ্য দিয়ে কি প্রোটিন আসা সম্ভব?
এই ‘কম্বিনেটরিয়াল ইনফ্লেশন’ নিয়ে প্রথম আগ্রহী হন MIT-র প্রফেসর অব ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স মুরে এডেন, ১৯৬০ সালে। ১৯৬৬ সালে তিনিসহ আরো কয়েকজন ম্যাথমেটিসিয়ান, ইঞ্জিনিয়ার এবং বিজ্ঞানী উইসটার ইন্সটিউট অব ফিলাডেলফিয়ায় একত্রিত হন। তারা প্রোটিনের গঠনের এই কম্বিনেটরিয়াল ইনফ্লেশনকে বিবেচনায় এনে নিও-ডারউইনিজমের সীমাব্ধতাগুলো তুলে ধরেন। তারা দেখান যে র্যাণ্ডম মিউটেশনের মধ্য দিয়ে একটি প্রোটিনও আসা সম্ভব নয়, সময় এবং রিসোর্সের সীমাব্ধতার কারণে। তবে কনফারেন্সে এই তথ্যটাও উঠে আসে যে প্রোটিনের এই সিকোয়েন্স স্পেসে প্রোটিনগুলোর গঠন যদি কাছাকাছি থাকে তাহলে হয়তো একটি সম্ভাবনা আছে যে নিও-ডারউইনিজম র্যাণ্ডম মিউটেশন দিয়ে প্রোটিনের বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে পারে। যদিও মুরে এডেন নিজেই এই সম্ভাবনায় বিশ্বাস করেননি। কারণ, একটি ভাষায় থাকে সিনটেক্স, গ্রামার, কনটেক্সট ইত্যাদি। ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান জেনেটিসিস্টি মাইকেল ডেনটন দেখান, ইংরেজীতে একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের বাক্যে বর্ণের সম্ভাব্য সকল কম্বিনেশনের মধ্যে অর্থযুক্ত বাক্যের (তথা সিকোয়েন্সের) সংখ্যা খুবই কম এবং দৈর্ঘ্য যত বড় হয় সংখ্যা ততই কমে যেতে থাকে। তিনি হিসেব করে দেখান ১২টি বর্ণের বাক্যে অর্থযুক্ত শব্দের সম্ভাব্যতা ১০^১৪ এর মধ্যে ১ বার। এভাবে ১০০টি বর্ণের বাক্যে ১০^১০০ এর মধ্যে একবার।
নিও-ডারউইনিস্টরা অবশ্য এ সুযোগটি গ্রহণ করে এবং আশাবাদী থাকে যে সিকোয়েন্সে স্পেসে প্রোটিনের অবস্থান কাছাকাছি হবে। ক্যালিফর্নিয়া ইন্সটিউট অব টেকনোলজি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পিএইচডি করার সময় ডগলাস এক্স এ বিষয়টি পরীক্ষামূলক ভাবে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির ল্যাবরেটরী অব মলিকিউলার বায়োলজিতে এলান ফার্স্ট এর অধীনে রিসার্চের সুযোগ পেয়ে যান। তিনি ও তার সহযোগিরা ১৫০ এমাইনো এসিডের সম্ভাব্য সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
প্রসঙ্গত প্রোটিন শুধু মাত্র এমাইনো এসিডের চেইন হিসেবে থাকে না। প্রোটিন তিনটি ধাপে ভাঁজ (ফোল্ড) হয়। এদেরকে প্রাইমারী, সেকেণ্ডারী এবং টারশিয়ারী স্ট্রাকচার বলে। প্রোটিনের ত্রিমাত্রিক ফোল্ড সঠিক হওয়ার উপরই এর ফাংশন নির্ভর করে। সকল এমাইনো এসিড সিকোয়েন্স-এ যেমন ত্রিমাত্রিক ফোল্ড হয় না আবার সকল ত্রিমাত্রিক ফোল্ড ফাংশনাল হয় না। ডগলাস এক্স প্রাথমিক ভাবে দেখতে পান যেই সংখ্যক সিকোয়েন্স ফাংশনাল ফোল্ড গঠন করে তাদের সম্ভাব্যতা ১০^৭৪ এর মধ্যে ১ বার। (মহাবিশ্বের বয়স ১০^১৬ এবং মিল্কি ওয়েতে পরমাণু সংখ্যা ১০^৬৫) এর মধ্যে যেই ফোল্ডগুলো কার্যকরী তাদেরকে হিসেবে নিলে সম্ভাব্যতা দাঁড়ায় ১০^৭৭। ডগলাস এক্স দেখেন যে আমাদের পৃথিবীতে প্রাণের ৩.৪ বিলিয়ন বছরের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা ১০^৪০। তিনি ধরে নেন যে প্রতিটি ব্যাকটেরিয়াতেই যদি একটি করে নিউক্লিওটাইড সাবস্টিটিউশন হয় (যা কখনোই হয় না) তাহলেও একটি ১৫০ এমাইনো এসিডের চেইনের প্রোটিন আসতে পারবে না। তবে, একটি বিদ্যমান প্রোটিনকে আরেকটি ফাংশনাল প্রোটিনে পরিণত করতে হলে র্যাণ্ডম মিউটেশনের জন্য কাজ কমে যায়। তখন শুধু একটি প্রোটিনকে আরেকটি প্রোটিনে পরিণত করতে কয়টি মিউটেশন লাগবে তা হিসেব করলেই হয়।
পাঠক লক্ষ্য করে থাকবেন এখানে মূল সমস্যাটি হল ডিএনএতে তথ্য যুক্ত করার সমস্যা। নিও-ডারউইনিস্টরা পপুলেশন জেনেটিক্স নামক ডিসিপ্লিন দিয়ে মিউটেশনের মাধ্যমে প্রজাতির জিনে নতুন ইনফরমেশন যুক্ত হওয়ার বিভিন্ন হিসেব নিকেষ কষে থাকেন। লেহাই ইউনিভার্সিটির বায়োকেমিস্ট্রির প্রফেসর মাইকেল বিহে এবং ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের ফিজিসিস্ট ডেভিড স্নোক পপুলেশন জেনেটিক্সের উপর ভিত্তি করে একটি প্রোটিনকে আরেকটি ন্যাচারালী সিলেকটেবল প্রোটিনে পরিণত করার জন্য প্রয়োজনীয় মিউটেশন এবং তা আসতে প্রয়োজনীয় সময় হিসেব করেন। তারা দেখেন যে একটি প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইট থেকে আরেকটি প্রোটিন-প্রোটিন ইন্টারেকশন সাইট আসতে হলে একই সাথে কয়েকটি স্পেসিফিক মিউটেশন লাগবে (কমপ্লেক্স এডাপটেশন) এবং তারা হিসেব করে দেখান যে এর জন্য কমপক্ষে দুই বা ততোধিক মিউটেশন একই সাথে স্পেসিফিক সাইটে হতে হবে। বিহে এবং স্নোক বাস্তবিক উদাহরণের উপর ভিত্তি করে দেখান যে, পৃথিবীর বয়স সীমায় দুটি মিউটেশন একসাথে হতে পারে যদি স্পিসিসের পপুলেশন সাইজ অনেক বড় হয়। কিন্তু দুইয়ের অধিক মিউটেশন একসাথে প্রয়োজন হলে তা পৃথিবীর বয়স সীমাকে ছাড়িয়ে যায়। অথচ, ডগলাক্স এক্স মলিকিউলার বায়োলজিস্ট এনে গজারকে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে, একটি প্রোটিন আরেকটি ভিন্ন ফাংশনের প্রোটিনে পরিণত করতে নূন্যতম ৫ বা তার বেশী সাইমালটেনিয়াস মিউটেশন তথা নিউক্লিউটাইড সাবস্টিটিউশন লাগবে।
র্যাণ্ডম মিউটেশনের এই সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে নিও-ডারউইনিস্ট বিজ্ঞানীরা জিনোম ভ্যারিয়েশন তৈরীর অন্যান্য মেকানিজম প্রস্তাব করেছেন। যেমন: জেনেটিক রিকম্বিনেশন, এক্সন শাফলিং, জিন ডুপ্লিকেশন, ইনভারশন, ট্রান্সলোকেশন, ট্রান্সপজিশন ইত্যাদি। স্টিফেন সি. মায়ার তার বইতে প্রত্যেকটি মেকানিজমের সীমাবদ্ধতা নিয়ে পৃথকভাবে আলোচনা করেছেন।
লক্ষ্যণীয়, কোষের ভিতর একটি প্রোটিন একা কাজ করে না। বরং কয়েকটি পরস্পর অন্তঃনির্ভরশীল প্রোটিনের নেটওয়ার্ক হিসেবে কাজ করে। আবার ডিএনএতে প্রোটিনের প্রাথমিক গঠনের তথ্য ধারণ করলেও, প্রোটিনগুলো কিভাবে কোষের ভিতর এরেঞ্জ হবে সেই তথ্য কিন্তু ধারণ করে না। এককোষী জীব থেকে বিভিন্ন উচ্চতর প্রাণীর পর্বগুলোকে কীভাবে ভাগ করা করা হয়? উত্তর: কোষের প্রকারের উপর ভিত্তি করে। বহুকোষী জীব অনেক ধরণের কোষ নিয়ে গঠিত হয়। মজার ব্যাপার হলো প্রতিটি কোষই কিন্তু শরীরের পুরো জেনেটিক তথ্য ধারণ করে বলে আমরা এখন পর্যন্ত জানি। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে প্রতিটি কোষের একটি নির্দিষ্ট অংশ সাইলেন্সিং করা থাকে। সাইলেন্সিং-এর কাজ কীভাবে হয়?
এ বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করতে করতেই নতুন একটি শাখা খুলে গেছে যার নাম এপিজেনেটিক্স। এপিজেনেটিক্সের মধ্য দিয়ে দেখা যাচ্ছে, কোষ যে শুধু ডিএনএ তথ্য ধারণ করে তা-ই নয় বরং কোষের ঝিল্লীর যে সুগার মলিকিউল আছে সেগুলোর পজিশনও খুব স্পেসিফিক। একে বলা হচ্ছে সুগার কোড। সুগার কোড নির্ধারণ করে একটি প্রোটিন তৈরী হওয়ার পর কোষের কোন্ অংশে সে যাবে। একই জীবদেহের কোষগুলোতে এই সুগার কোডটি কপি হয় রিপ্রোডাকর্টিভ সেল উওসাইট থেকে। এটি ডিএনএতে কোড করা থাকে না। আবার মাইক্রোটিউবিউল নামক কোষের ভিতরের যে পরিবহন নেটওয়ার্ক সেটার পরিজশনও ডিএনতে কোড করা থাকে না। সুতরাং একটি বহুকোষী প্রাণীর কোষ ডিফারেনসিয়েশনে এই সুগার কোডও গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ শুধু ডিএনএ মিউটেশন দিয়ে এটি ব্যাখ্যা করা যাবে না। অন্যদিকে, জিন সাইলেন্সিং এর কাজটিও হয় ননকোডিং রিজিওনের বিভিন্ন তথ্য এবং হিস্টোন মিথাইলেশন, এসিটাইলেশন ও নিওক্লিওটাইড মিথাইলেশন ইত্যাদির মাধ্যমে। এপিজেনেটিক এই বিষয়গুলো কীভাবে নিও-ডারউইনিজমের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে ড. মায়ার খুব সুন্দর ভাবে একটি চ্যাপ্টারে তা আলোচনা করেছেন।
একটি পুংজনন কোষ একটি স্ত্রীজনন কোষকে যখন নিষিক্ত করে তখন জাইগোট গঠিত হয়। এর পর জাইগোটটি বিভাজিত হতে শুরু করে। অনেকগুলো কোষের একটি গুচ্ছ তৈরী করার পর এটি পর্যায়ক্রমিকভাবে বিভিন্ন কোষে বিভাজিত হতে থাকে এবং কোষগুলোর সঠিক অবস্থানে, সঠিক সময়ে সুগঠিতভাবে এরেঞ্জ করার কাজটি চলতে থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে পরিনত হয়। একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায় বিষয়টি কতটা জটিল এবং সুনিয়ন্ত্রিত। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিউট অব টেকনোলজির এরিক ডেভিডসন তার পুরো ক্যারিয়ারকে ব্যয় করেছেন এই ডেভেলপমেন্টাল জিন রেগুলেশনকে বের করতে। তিনি পর্যায়ক্রমিক জেনেটিক নিয়ন্ত্রণের এই হায়ারার্কির নাম দেন ডেভেলপমেন্টাল জিন রেগুলেশন নেটওয়ার্ক। তিনি তার গবেষণায় এও দেখান যে ডেভেলপমেন্টের বিভিন্ন পর্যায়ের মিউটেশনের ফলে কী ভয়াবহ পরিণতি হয়। অথচ কোন হেরিটেবল ভ্যারিয়েশন তৈরী হতে হলে রিপ্রোডাকটিভ কোষেই মিউটেশন হতে হবে।
নিও-ডারউইনিজমের এই সীমাবদ্ধতাগুলো দেখতে পেয়ে অনেক বিজ্ঞানীই নতুন নতুন ইভলিউশনের মডেল দিতে শুরু করেছেন। ফসিল রেকর্ডের সীমাবদ্ধতাকে কেন্দ্র করে যেমন নাইলস এলড্রেজ এবং স্টিফেন জে গোল্ড ‘পাঙ্কচুয়েটেড ইকুইলিব্রিয়াম’ দাঁড় করিয়েছিলেন, তেমনি ‘পোস্ট-ডারউইনিয়ান ওয়ার্ল্ডে’ অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও অন্যান্য ইভলিউশনারী মডেল প্রস্তাব করেছেন: এভো-ডেভো, সেল্ফঅর্গ্যানাইজেশন মডেল, এপিজেনেটিক ইনহেরিটেন্স, ন্যাচারাল জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি। ড. মায়ার দুটো চ্যাপ্টারে এই মডেলগুলোর সাফল্য ও সীমাবদ্ধতা দুটো নিয়েই আলোচনা করেছেন।
আমরা যখন কোন সফটওয়্যার দেখি এর পিছনে একজন প্রোগ্রামারের কথা চিন্তা করি, যখন কোন গাড়ি দেখি এর পেছনে একজন বুদ্ধিমান গাড়ি তৈরীকারীর কথা ভাবি। ঠিক তেমনি যখন আমরা বায়োলজিক্যাল সিস্টেমে ডিজাইন দেখতে পাই, স্বাভাবিক ভাবেই একজন ডিজাইনারের কথা মাথায় আসে। সায়েন্টিফিক মেথডলজিতে ‘এবডাকটিভ ইনফারেন্স’ বলে একটি কথা আছে। বায়োলজিক্যাল বিঙ এর ডিজাইনে এই মেথডের প্রয়োগ আমাদের ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের কথাই বলে। কিন্তু ডারউইনিয়ান ওয়ার্ল্ডে কোন্ জিনিসটি এই হাইপোথিসিসকে গ্রহণযোগ্যতা দিচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে পাওয়া যায় ‘মেথডলিজক্যাল ন্যাচারালিজম’, যা সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে একটি অঘোষিত নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। কিন্তু মেথডলজিক্যাল ন্যাচারালিজমকে ইউনিফর্মিটারিয়ান রুল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে নেয়ার সুযোগ আছে কি?
স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিউটের ডাইরেক্টর রিচার্ড স্টার্নবার্গ যিনি ইভলিউশনারী বায়োলজি ও সিস্টেমিক বায়োলজিতে দুটো পিএইচডিধারী যখন স্টিফেন সি. মায়ারের ক্যামব্রিয়ান ইনফরমেশন এক্সপ্লোশন সংক্রান্ত একটি আর্টিকল ওয়াশিংটন বায়োলজি জার্নালে প্রকাশের সুযোগ করে দেন তখন নিও-ডারউইনিস্টরা তাকে ডিফেম করা শুরু করে, তার উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়, তার বিরুদ্ধে মিস-ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন চালানো হয়, যতক্ষণ না তাকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। অথচ তখনও পর্যন্ত ড. মায়ারের আর্টিকলের যৌক্তিক সমালোচনা করে কোন আর্টিকেল জার্নালে ছাপানো হয়নি। এটাকেকি বিজ্ঞান বলে?
ড. স্টিফেন সি. মায়ার তার বইয়ের শেষের দিকে এই বিষয়গুলোকে অ্যাড্রেস করে ‘ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন’কে প্রজাতির উৎপত্তির একটি মডেল হিসেবে কেন বিবেচনা করা যায় তার যুক্তিগুলো উপস্থাপন করার পাশাপাশি, নিও-ডারউইনিস্টদের সমালোচনাগুলোর জবাব দিয়েছেন।
লক্ষ্যণীয়, আমেরিকাতে গভার্নমেন্টের সমালোচনা করা গেলেও ডারউইনিজমের সমালোচনা করা যায় না, ঠিক যেমন আমাদের দেশে ডারউইনিজমের সমালোচনা করা গেলেও গভার্নমেন্টের সমালোচনা করা যায় না।
ইসলামের ইতিহাসে সবসময়ই বিজ্ঞানচর্চার সাথে ধর্ম কেন হারমোনি বজায় রেখেছে তা এই বইটি পড়লে আরো স্পষ্ট হয়ে যায়।
বানর,ওরাংওটাং,শিম্পাঞ্জী সহ বেশ কয়েকটি ছবি দেখলাম। কিন্তু মানুষ আর এসব প্রানীদের মাঝামাঝি কোনো প্রানীর অস্তিত্ আছে কি?
আমি অনেক দিন ধরে বিবর্তনবাদ পরছি। মানুষের পরিবর্তন অন্য প্রাণীদের এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতি তে পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া। খুবই কৌতূহলদীপ্ত । আমার পড়তে খুবই ভাল লাগে। কিন্তু সব গুলো বই/লেখাতেই প্রানের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্তত। ভবিষ্যৎ এর কথা কিছু পাই না। এসব জানা আর ইতিহাস পড়া একই। তেমন কোন প্রয়োগিক কিছু আমি পাই না। হয়তো আছে। মাইক্র বায়োলজী যারা পড়ে তারা প্রয়োগ করে। আমার মত ম্যাংগ পিপল এর এর জন্য কিছু তো পাই না!! কেউ কি আমাকে বলতে পারে মানুষ প্রজাতি পরিবর্তিত হয়ে কি হবে? আমি সেই দিকে যেতাম। আমার DNA সেই দিকে ট্রান্সফার করতাম। কেউ কি আছেন আই লাইনে এক্সপার্ট ? আওাজ দেন!!
বিবর্তন আর্কাইভ একটিঅসাধারন কাজ ৷ প্রায়ই ঢুকে একবার করে দেখি ৷ বিবর্তন নিয়ে এত তথ্য আগে কোথাও পাইনি ৷ এই আর্কাইভের সঙ্গে জড়িত সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ৷
বিবর্তন আর্কাইভে প্রাণের উৎপত্তি এবং এবায়োজেনেসিস সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর আপলোড করা হয়েছে এখানে:
http://www.mukto-mona.com/evolution/index.htm#abiogenesis
ধন্যবাদ।
আমার এই প্রশ্নটি সোস্যাল ডারউইনিজমের সাথে সম্পর্কিত। এটি নিয়ে এর মধ্যেই আদিল মাহমুদ বলেছেন কিছুটা। প্রশ্নটির শুরু হল যে প্রানী গোষ্ঠীর যেমন এক প্রজাতির সাথে অন্য প্রজাতির মাঝে লড়াই করে টিকে থাকতে হয় তেমনি নিজেদের মাঝেও সেই টিকে থাকার লড়াই চলে। এখন প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলে যোগ্যরাই টিকে থাকে। এই ধারণাকে কি মানব সমাজের মাঝেও টেনে আনা যায়? নাকি সেটা ভুল হবে? আমার ধারণা অনেক বিবর্তিনবাদীও বিবর্তনকে মানব সমাজে দেখতে পছন্দ করেন না অহেতুক বিতর্ক এড়ানোর জন্য। কিন্ত নির্মম হলেও এটাই কি বাস্তবতা নয় যে আমরা মানুষও এক অন্যের সাথে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছি, টিকে থাকার জন্য লড়াই করছি? আজকের সকল যুদ্ধ কি এর কারণেই? এটাই কি সোস্যাল ডারউইনিজম এর মূল কথা? নাকি আমার কোথাও ভুল হচ্ছে? অগ্রিম ধন্যবাদ জবাবের জন্য।
দারুণ কাজ। চলুক। আমি নানা কারণে একটু ব্যস্ত আছি, পরে এসে অবশ্যি হাত লাগাব।
এখন কয়েকটা চিন্তা মাথায় আছে বলিঃ
১।আপাতত সাইট ডিজাইন এমন ই থাক। সহজে লোড হচ্ছে।
২।ভাল ডকু গুলার নাম দেয়া যেতে পারে।
৩।রেফারেন্স কালেকশন নামে আমার যে পোস্ট টা ছিল ওখান থেকে অন্তত বাংলা বই এর নাম ও বর্ণনা দেয়া যেতে পারে।
৪।বংলাদেশে বাজারে থাকা ক্রিয়েশনিস্ট বইগুলোর জবাব দেয়া জেতে পারে।
৫।intelligent design:A war on science এই ডকুটার ইউটিউব লিঙ্ক দেয়া যায়।
৬।সবচেয়ে ভাল হয় অন্য ডোমেইন নেম নিয়ে বিবর্তন নিয়ে পূর্ণাংগ একটা সাইট করা।যার মধ্য এরি বিভাগটাও থাকবে। মুক্তমনা নাম শুনেই অনেকে এটা আর দেখবে বা। (বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেই বললাম।)
।বাংলাদেশের একাডেমিয়ার কারো প্রবন্ধ দরকার।
আপাতত এইটুকুই মাথায় আসছে। পরে সময় পেলে এবং সমস্যা থেকে মুক্তি পেলে বিস্তারিত দেয়ার চেষ্টা করব।
বিবর্তনের পেজটা মনে হয় দিনে দিনে উন্নত হচ্ছে।
তবে “প্রাণের উৎপত্তি এবং অজৈবজনি” – এই প্যারাটায় মনে হচ্ছে বানান বিভ্রাট ঘটেছে, আশা করি কেউ শুধরে দেবেন।
সোশাল ডারউইনিজম সম্পর্কে কিছু মনে হয় যোগ করা দরকার। বিবর্তন বিরোধীদের এটাও একটা প্রিয় বিষয়। বিবর্তনবাদের কারনেই নাকি হিটলার জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব ভুগে ম্যাসাকার করেছিল এই জাতীয় উন্মাদীয় কথাবার্তা প্রায়ই চোখে পড়ে।
@আদিল মাহমুদ,
কোন কোন বানান ভুল চোখে পড়ছে তা একটু বিস্তারিত বললে ভাল হয়। অজৈবজনি হচ্ছে abiogenesis এর বাংলা। এই শব্দটিতে কি? এটা ডঃ আখতারুজ্জামানের বইইয়ে এই বানানেই আছে।
হ্যা সোশাল ডারউইনিজম নিয়ে প্রশ্নগুলো সন্নিবেশিত করতে হবে।
আপনি তো আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। কিছু কাজ অনুবাদ করে হেল্প করবেন নাকি? আপনি তো বরাবরই বিবর্তনের ব্যবহারিক প্রয়োগ নিয়ে উৎসাহী।
আমাদের বিবর্তন আর্কাইভের ২য় সেকশনে একটি প্রশ্ন রাখা আছে – ‘বিবর্তন তত্ত্বের কোন ব্যবহারিক প্রয়োগ নেই’।
এটার উত্তর একটু লিখবেন নাকি? এখান থেকে সাহায্য পেতে পারেন। এ ছাড়া দেখতে পারেন এখানে, এবং এখানে।
লিখে আমাদের কাছে ওয়ার্ড ডকুমেন্টে পাঠাতে পারেন। রেফারেন্সগুলো দেবেন ফুটনোট আকারে।
@অভিজিৎ,
“অজৈবজনি” শব্দটাতেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছিলাম। এটা আমার কাছে একদমই নুতন, তাই ধরে নিয়েছিলাম কোন একটা সমস্যা আছে।
অনুবাদে আছি, শুরু করে দেব।
@আদিল মাহমুদ, আপনি বানান নিয়ে ধরতে শুরু করেছেন দেখে খুশী হব না দুঃখ পাবো বুঝতে পারছিলাম না 🙂 । এটাকে মুক্তমনার জন্য একটা ভালো ‘সাইন’ বলেই ধরে নেওয়া যায় বোধ হয়!
@রাহাত খান,
বুঝতে পারছি না আপনার মন্তব্য ঠিক কমপ্লিমেন্ট হিসেবে নেব কিনা???
তবে দেখতেই পারছেন এত কাঠ খড় পোড়ানো পরিশ্রম জলে গেল!
আরো একটি প্রশ্ন যুক্ত করি। আসলে আগের মন্তব্যে যেমন বলেছি, নিজের জানার জন্যই প্রশ্নগুলো। তাই এই উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাই আবারো।
প্রশ্নটি মুলত সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে যায়। এই বিশ্বভ্রম্মাণ্ড পদার্থ বিজ্ঞানের সুত্র মেনে চলে। অনেক সুত্র আমরা এর মাঝে পেয়েছি আবার অনেক এখনো অজানা রয়ে গেছে। গবেষনা চলছে। কথা হল যে, সুত্র আমরা আবিষ্কার না করলেও সুত্র রয়েছে এবং সেই সুত্র মোতাবেক বিশ্ব চলছে। এই সুত্রের (law) এর উৎপত্তি কোথায়? আদৌ কি এর উৎপত্তি আছে? নাকি বিগ ব্যাং এর মুহুর্ত হতেই এর শুরু? এই বিষয়ে বিজ্ঞান কি বলে? অভিজিৎ’দা বা যে কেউ জবাবটি দিতে পারেন, এবং প্রশ্ন ও উত্তরটি আর্কাইভে যুক্ত করতে পারেন।
@স্বাধীন,
আমার মনে হয় আসলে কোন কিছুই সূত্র অনুযায়ী চলছে না। যে অনুযায়ী চলছে আমরা সে অনুযায়ী সূত্র তৈরি করে নিচ্ছি। অর্থাৎ ব্যপারটা অনেকটা এরকম যে ,ধরুন শরতের আকাশে অনেক মেঘ উড়ছে। এখন কেউ কেউ সেই মেঘে বিভিন্ন অবয়ব দেখে আর কেউ কিছুই দেখে না। আবার ধরুন আমাদের দেশের কথা, এখানে অনিয়ম গুলোই নিয়মে পরিনত হয়েছে! অর্থাৎ আমি বোঝাতে চাচ্ছি যে কোন কিছুই সুত্র অনুযায়ী চলে না। মূলত আমরাই আমাদের সুবিধার জন্য সবকিছুর উপর সুত্র আরোপ করে নেই।
কে জানে, কি বোঝাতে পারলাম! আমার নিজেরই ঘাপলা লাগছে!
@স্বাধীন,
এ ব্যাপারটি পদার্থবিজ্ঞানের প্রান্তিক সমস্যাগুলোর একটি। পদার্থবিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ আছে, এই পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর বিভিন্ন ব্যাখ্যা থাকলেও কেউই এটাকে ‘অলৌকিক’ বলে মনে করেন না বা ধরেই নেন না যে একজন ঐশ্বরিক সত্ত্বা সেগুলো বানিয়েছেন। বরং তারা বৈজ্ঞানিকভাবেই এর উৎসের অনুসন্ধান করেন।
একটি ব্যাখ্যা হছে, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো রাষ্ট্রের আইন বা মূলনীতিগুলোর মতো কোন নিয়ম নয় যে রাষ্ট্রের কর্ণধরেরা বানাবেন, রাষ্ট্র পরিচালিত হবে সেই আইনের নিরিখে। কিংবা প্রাকৃতিক নিয়ম গুলো কোন সামাজিক নিয়মও নয় যে, ট্রাফিকের নিয়ম লঙ্ঘন করলে আমরা কোন টিকেট পাব। পদার্থবিদদের একটা অংশ মনে করেন যে, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো আসলে পদার্থের ব্যবহারজনিত কোন নিষেধাজ্ঞা তৈরি করে না, বরং পদার্থবিদরা কিভাবে তাদের মডেল তৈরি করবেন তার নিষেধাজ্ঞা তৈরি করে এই প্রাকৃতিক সূত্রগুলো। ব্যাপারটা সাধারণভাবে একটু কফিউজিং মনে হতে পারে। কারণ এই ব্যাখ্যা হিসেবে এই প্রাকৃতিক সূত্রগুলো আসলে মানব নির্দেশিত সংজ্ঞা ছাড়া আর কিছু নয়। কিছু সহজ উদাহরণ দেই। আমরা নিউটনের মাধ্যাকর্ষণসূত্রকে প্রাকৃতিক সূত্র মনে করলেও এটা আসলে জড়জগতের জন্য ‘আপেল মাটিতে পড়ে কেন?’ – এ ধরনের বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করার এক ধরনের মডেল। কিন্তু এক সময় দেখা গেল অন্তিম কিছু পরিস্থিতিতে (যেমন বস্তু যখন ছুটতে থাকে আলোর বেগের কাছাকাছি ) নিউটনের মডেল কাজ করে না। আমরা স্মরণাপন্ন হলাম আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব থেকে পাওয়া মডেলের। আবার আইনস্টাইনের মডেলও প্লাঙ্ক স্কেলের চেয়ে ছোট জায়গায় কাজ করে না, আমরা স্মরণাপন্ন হই, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার কিছু সূত্রের। কাজেই দেখা যাচ্ছে আমাদের ‘ইন্টারপ্রিটেশন’ বদলে যাচ্ছে। অর্থাৎ, সূত্রগুলো আমাদের মডেলের রেস্ট্রিকশন তৈরি করছে, পদার্থের নয়। অধ্যাপক ভিক্টর স্টেংগর ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করে একটি বই লিখেছেন ‘The Comprehensible Cosmos: Where Do the Laws of Physics Come From?’ সেটা পড়া যেতে পারে। তার সাইটে একটি পেপার আছে (সতর্কতা গাণিতিক সূত্র সম্বলিত) : Where Do the Laws Of Physics Come From? অথবা দেখা যেতে পারে পাওয়ার পয়েন্টে এই স্লাইড শোটি।
পাশাপাশি আমি ভিক্টর স্টেঙ্গরের পরবর্তী গ্রন্থ ‘গড – দ্য ফেইল্ড হাইপোথিসিস’ থেকে উদ্ধৃত করি –
“So where did the laws of physics come from? The came from nothing! Most are statements composed by humans that follow from the symmetries of the void out of which universe spontaneously arose. Rather than being handed down from above, like the Ten Commandments, they look exactly as they should look if they are not handed down from anywhere” (page 131)
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা বিস্তারিত জবাবের জন্য। কিছুটা পরিষ্কার হল। স্টেংগের বইটি পড়ার আশা রাখি। রেফারেন্সটির জন্যও ধন্যবাদ।
উপরে আরেকটি প্রশ্ন রেখেছিলাম, জবাব পেলে খুশি হব। প্রশ্নটি ছিল নিম্নবুদ্ধি সম্পন্ন প্রানী গোষ্ঠীর মাঝে অনৈতকতা বা ঈশ্বরের ধারণা আছে কিনা? নাকি এগুলো শুধু আমাদের মানুষের মাঝেই? মানুষের সবচেয়ে কাছাকাছি শিম্পাঞ্জি, বা বানর এদের মাঝে কি এই ধারণাগুলো বিদ্যমান? এই ব্যাপারে কোন গবেষনা কি আছে?
আরেকটি প্রশ্ন দিয়ে যাই। যে কেউ উত্তর দিতে পারেন। আমি আসলে নিজের কিছু অজানাকে ঝালিয়ে নিচ্ছি এই ফাঁকে।
এই প্রশ্নটিও নৈতিকতা নিয়ে। আমরা দেখি যে অনেক নিম্নবুদ্ধি সম্পন্ন প্রানী গোষ্ঠীর মাঝেও নৈতিকতা/পরোপকারিতা দেখা যায়। উদাহরন হিসেবেঃ বাদুর, পাখি, ইত্যাদি। এখন আমার প্রশ্ন হল নিম্নবুদ্ধি সম্পন্ন প্রানী গোষ্ঠীর মাঝে কি অনৈতকতাও দেখা যায়? অনৈতিকতা বলিতে একজন থেকে কোন সুবিধে/উপকার গ্রহন করে সেই উপকারের বিপরীতে প্রতি উপকার না করা। নাকি অনৈতিকতা শুধু মানুষের মাঝেই আছে? আরেকটু বলিলে যেমন ঈশ্বরের চিন্তা বা ধারণা কি অন্যান্য প্রানীর আছে নাকি সেটা শুধু মানুষের মাঝেই? এই ব্যাপারে কেউ কিছু জেনে থাকলে জানালে খুশি হব। অগ্রীম ধন্যবাদ রইল।
@স্বাধীন,
আমার এই প্রশ্নটির জবাব যদি কারোর কাছে পেতাম ভালো লাগতো 🙂 ।
@স্বাধীন,
হ্যা দেখা যায় (যদি নৈতিকতা বলতে আমি আপনার দেয়া মানবীয় সংজ্ঞা গোনায় ধরি)। প্রানিজগতে ক্যানিবলিজম আছে, আছে, ধর্ষণ হত্যাও। কিছু পাখি, মাছ এবং বহু প্রানী ক্যানিবলিজম তো করেই, এমনকি নিজের বাচ্চাকেও খেয়ে ফেলে। পৃথিবী আমাকে ইমেইল করে প্রাণিজগতের চরম নিষ্ঠুরতার একটা উদাহরণ হাজির করেছিলেন। সেটা ডকিন্সের ব্লাইন্ড ওয়াচমেকার বইয়ে পাওয়া যাবে মনে হয়। আমি সেটাই আপনার জন্য উল্লেখ করি –
Ichneumon প্রজাতির একধরণের ভিমরুল আছে। এরা তাদের শিকারকে হত্যা না করে দৈহিকভাবে অবস করে দিয়ে সেই শিকারের দেহের ভেতরে ডিম পাড়ে। এই ডিম ফুটে যে শূককীট(larva) বের হয়, তা শিকারের দেহের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ খেয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। স্ত্রী ভিমরুলগুলো তার শিকারের প্রত্যেকটি স্নায়ুগ্রন্থি সতর্কতার সাথে নষ্ট করে দেয় যাতে তাদের শিকার পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তারা তাদের শিকারকে একারণে বাঁচিয়ে রাখে যাতে বাড়ন্ত শূককীটগুলো সুস্থ বিকাশের জন্য টাটকা মাংস পায়। শূককীটগুলোও বিচক্ষণতার সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো একটা নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে ভক্ষণ করে চলে। চিন্তা করুন, কি অনৈতিক মনে হবে ব্যাপারটা মানবীয় দৃষ্টিকোন থেকে।
এগুলো সবই প্রকৃতিতে দেদারসে ঘটে চলছে, আমি আপনি না চাইলেও।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা ধৈর্য সহকারে আমার একের পর এক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য। আশা করি এগুলো বিবর্তনের আর্কাইভ গঠনে সাহায্য করবে। আপাতত আরেকটি প্রশ্ন নিচে দিয়ে গেলাম। তাড়াহুড়া নেই। সময় পেলে জবাব দিয়েন।
দু’টো প্রশ্ন দিয়ে যাইঃ
প্রথম প্রশ্নটি নৈতিকতার সাথে জড়িত, তাই সেখানেই উত্তর চলে আসবে। তারপরেও আমার প্রশ্নটুকু/চিন্তাটুকু বলছি। বিবর্তনের আলোকে নৈতিকতা নিয়ে পার্থিব জামানের লেখা এবং অভিজিৎ’দার লেখা পড়েই জ্ঞান, তাই বালখিল্য প্রশ্ন হয়ে গেলে আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে একটি প্রানী গোষ্ঠীতে যদি সবাই অহিংস হয় তবে সেই গোষ্ঠি প্রাকৃতিক নির্বাচনে টিকে থাকবে না। আবার গোষ্ঠীর সকলে যদি সহিংস হয় তবেও গোষ্ঠীটি টিকে থাকার মত যোগ্য হবে না। তাই আমরা দেখি একটি গোষ্ঠি বা সমাজে অল্প কিছু সংখক লোক বেশি আহিংস কিংবা বেশি পরোপকারী এবং অল্প সংখক লোক বেশি উগ্র অথবা বেশি স্বার্থপর। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই সহিংস/অহিংস মিশ্রিত সাধারণ মানুষ অথবা কিছুটা স্বার্থপর কিছুটা পরোপকারী চরিত্রের মানুষ।
এখন নৈতিকতাকেও কি আমি এভাবে দেখতে পারি, যে পুরোপুরি নৈতিক হলে আমি সমাজে টিকে থাকতে পারবো না। কিছুটা অনৈতিকতা আমাকে সমাজে টিকে থাকতে সাহায্য করে? সাম্প্রতিক একটি ছবি “The invention of lying” দেখে বেশ ভাল লেগেছে, কিছুটা এ রকমই চিত্র তুলে ধরেছে। এখন একটি সমাজে যদি সকলেই অনৈতিক হয় তবে সেই গোষ্ঠী টিকে থাকবে না। তাহলে বিবর্তনের দৃষ্টিতে কিছুটা অনৈতিক, কিছুটা নৈতিক চরিত্রের মানুষই কি হওয়া উচিত?
প্রশ্নটি আসলে দর্শনের সাথে সম্পৃক্ত বেশি। তারপরেও উত্তরটি বিবর্তনের দৃষ্টিতে জানা প্রয়োজন। ধর্ম নৈতিকতা সৃষ্টি না করলেও মানুষকে নৈতিকতার মাঝে বাঁধার জন্যে ধর্ম এসেছিল। মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে ধরে রাখার জন্য নৈতিকতার প্রয়োজন অনুভব করে প্রায় সকল দার্শনিকই। তাই প্রচলিত ধর্মের অসারত্ব বোঝার পরেও কল্পিত ঈশ্বরের খোঁজে নুতন ধারণা নিয়ে সামনে আসে। আর এটা করে মুলত কোন না কোন ভাবে নৈতিকতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। এ কারণে বিবর্তনের বিরুদ্ধে আমার মতে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন আসে বিবর্তন কিভাবে নৈতিকতাকে বাঁচিয়ে রাখবে? অথবা আদৌ নৈতিকতাকে বাঁচিয়ে রাখাটি কি জরুরী? নাকি এটা স্বীকার করে নেওয়া ভাল যে নৈতিকতা/অনৈতিকতার মিশ্রনেই মানুষ হবে, এটাই স্বাভাবিক।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ সন্তানের সাথে বাবা এবং মায়ের জিনপুলের সম্পর্ক আধাআধি। সে ক্ষেত্রে সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের স্নেহ বা জিনপুলকে টিকিয়ে রাখার যে জৈবিক তাড়না তা সমান হওয়া উচিত। কিন্তু সর্ব ক্ষেত্রে সেটি হয় না। আমরা এমন দেখি যে অনেক ক্ষেত্রে মার টানটি বাবার তুলনায় বেশি থাকে। এই পার্থক্যটি কেন হয় বা কিভাবে হল?
আপাতত এই, পরে আর কিছু মনে আসলে জানাবো।
@স্বাধীন,
আপাতত এখানেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। বাবা ও মায়ের অপত্যস্নেহের যে হালকা পার্থক্য দেখা যায় তার কারণ হল পুরুষ একই সময়ে একসাথে অনেকগুলো নারীর সাথে সঙ্গম করে তার জিন ছড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু নারী একটা সময়ে শুধু একবারই অন্তঃসত্ত্বা হতে পারে। বলাই বাহুল্য, এই সন্তানটাই নারীর জিনের একমাত্র বাহন হওয়ার কারণে সন্তানটিকে ভালমত বড় করার ঠেকাটা তারই বেশি।
এরপরও কিন্তু আদিম মানবসমাজে স্বতঃস্ফূর্ত কারণেই হোক বা ধর্মীয় কারণেই হোক, একগামীতার উৎপত্তি ঘটেছিল। এখানে সমীকরণটা একটু জটিল হয়ে যায়, তাই একগামীতার rationale প্রশ্নোত্তর পৃষ্ঠাতে আলোচনা করলেই বোধহয় ভাল হবে।
@স্বাধীন,
আপনার প্রশ্নদুটিই চমৎকার। তবে প্রশ্ন দুটির উত্তর শুধু বেসিক বিবর্তনে নয়, বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানেও খুঁজতে হবে।
বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকর উদ্ভব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে আমাদের আর্কাইভে এখানে। আপনি ঠিকই বলেছেন পুরো অনৈতিক সমাজ যেমন হতে পারে না, ঠিক তেমনি পুরোপুরি একশতভাগ নৈতিক সমাজও পাওয়া যাবে না। এর কারণ বিবর্তনীয় গেম থিওরীর মাধ্যমে ঘটা স্থিতিশীল কৌশল রাজত্ব করার কারণে। একটা চমৎকার উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বঝানো যেতে পারে (দিগন্ত সরকার একটি লেখায় এ রকম একটি উদাহরণ হাজির করেছিলেন)। আমি একটু লিখি এ নিয়ে। ব্যাপারটা খুবই মজাদার।
ধরা যাক মুক্তমনায় পৃথিবী আর রায়হান দুই প্রতযোগী সদস্য। তারা আবার একই সাথে আমার প্রতিযোগীও। সাদা চোখে মনে হতে পারে যে, আমি রায়হানের মুখোমুখি হলেই তাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হব, কারণ রায়হান মরলেই প্রতিযোগিতায় আমার লাভ। কিন্তু আবার প্রথমেই বলা হয়েছে রায়হান কিন্তু পৃথিবীরও প্রতিযোগী, তাহলে আমি রায়হানকে মেরে ফেললে আদপে পৃথিবীর সুবিধা হয়ে যাবে। তাহলে আমি যদি খুব চালাক হই, তবে আমার সমর-কৌশল কিন্তু সবসময় রায়হানকে দেখলেই মেরে ফেলা হবে না। বরং আমি দেখবো, পৃথিবী আর রায়হানের মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হলেই আমার লাভ বেশী (মানে দুই ব্যাটা মারামারি করে মরুক, আমি মজা দেখি)। এবার ব্যাপারটা খুব বড় স্কেলে চিন্তা করুন। কেবল মার মার কাট করে এক প্রতিযোগিকে সরিয়ে দিয়ে জেতার পদ্ধতিটা খুব একটা ভাল কৌশল নাও হতে পারে সব সময়। ব্যাপারটার জটিলতা জীববিজ্ঞানীদের শুধু নয়, প্রাচীনকালে দার্শনিকদেরও আকৃষ্ট করেছিলো এক সময়। তারা এ সংক্রান্ত ধাঁধার নাম দিয়েছিলেন আসামীর সংকট (Prisoner’s dilemma)। ব্যাপারটা একটু দেখি –
ধরা যাক একজন পুলিশ একটি হত্যা মামলায় দুই জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ খুবই অপ্রতুল। ফলে পুলিশ কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না। এখন আসামী দুজন অপরাধ করেছে কিনা তা নির্ধারণ করতে নীচের শর্তগুলো আসামীদের সামনে হাজির করা হল –
১) একজন আসামী যদি বলে যে অপর জন অপরাধী (বিশ্বাসঘাতকতা), আর অপর জন যদি নিশ্চুপ থাকে (সহযোগিতা), তাহলে প্রথম জন মুক্তি পাবে, এবং দ্বিতীয়জন ৫ বছরের কারাদন্ড পাবে।
২) উভয়েই যদি নিশ্চুপ থাকে (দুজনের মধ্যে সহযোগিতা) তাহলে উভয়েরই ২ বছরের কারাদন্ড হবে
৩) উভয়েই যদি একে অপরকে দোষারোপ করে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করে (দুইজনের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা), তবে তাদের ৪ বছরের কারাদন্ড হবে।
এখন তাহলে আসামীরা কি করবে? তারা খুঁজতে চেষ্টা করবে, কি করে নিজের সর্বোচ্চ লাভ হবে কিংবা নিজের সর্বোচ্চ ক্ষতি এড়ানো যাবে। প্রথমে হয়তো এক আসামী ভাববে, আমি যদি অপরককে দোষী বানাতে পারি, তাহলে আমি মুক্তি পাব। সুতরাং সে অপরজনকে দোষারোপ করবে। এখন দ্বিতীয়জন যদি নিশ্চুপ থাকতো তাহলে প্রথমজন মুক্তি পেত ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয়জনও যদি প্রথমজনের মতই দোষারোপের কৌশল নেয়, তাহলেই হবে সমস্যা। দুইজনেরই সর্বোচ্চ ৪ বছর করে কারাদন্ড হবে। দেখা যাচ্ছে, দুজন দুজনকে দোষারোপ করতে করতে নিজেরা সর্বোচ্চ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, তারচেয়ে বরং দুইজনই যদি নিশ্চুপ থাকত, হয়তো শাস্তিরমাত্রা কমে আসতো। এই পুরো খেলাটা একাধিকবার পরিচালনা করা হলে হয়তো কারাবন্দিদের মধ্যে একটা সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে, ফলে তারা নিজেদের মধ্যে বোঝাপরা করে গেম থিওরীর মাধ্যমে ঘটা স্থিতিশীল কৌশল আয়ত্ব করে নেবে। সেজন্যই আমরা দেখি দাগী ভঙ্কর সব আসামীদের মধ্যেও কিংবা মাফিয়া চক্রের মধ্যেও এক ধরণের সহযোগিতার সম্পর্ক থাকে। তারা পারতপক্ষে একে অপরকে ধরিয়ে দেয় না। প্রিজনার্স ডিলেমার মতই আধুনিক গেম থিওরীর উল্লেখ পাওয়া যায় ডগ্লাস হফস্টারের আবিস্কৃত ‘উলফ ডিলেমা’ তেও।
জীবজগতের বিবর্তন ভারসাম্যও অনেকটা এভাবেই কাজ করে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে কাজ করে বিবর্তন আদিমকালের মানুষের মধ্যে বহু সংঘর্ষ, সহাবস্থান, পারষ্পরিক যোগাযোগ, প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক লাভ ক্ষতির হিসেবে থেকে এক ধরণের নৈতিক চেতনার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটিয়েছে। আসলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার ফলশ্রুতিতে অর্থাৎ গেম থিওরীর মাধ্যমে পরার্থতার উদ্ভবের ব্যাপারটি প্রথম তুলে ধরেন বিজ্ঞানী উইলিয়াম হ্যামিলটন।পরবর্তীতে ধারনাটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন স্বনামখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স তার ‘সেলফিশ জিন’ বইয়ের মাধ্যমে। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী মেনার্ড স্মিথও গানিতিক মডেলের সাহায্যে দেখিয়েছেন, শুধু প্রতিযোগিতা কিংবা বিবাদ করলে জীনপুলকে সর্বোচ্চ দক্ষতায় বাঁচিয়ে রাখা যায় না, সাথে আনতে হয় সহযোগিতা এবং পরার্থতার কৌশলও। স্মিথ একটি সরল খেলায় দেখিয়েছেন, বিবাদী আর আগ্রাসী অনুপাত ৫:৭ অনুপাতে পৌঁছলে স্থিতিশীলতা লাভ করে। রিচার্ড ডকিন্সও তার সেলফিশ জিন বইয়ের ‘ব্যাটেল অব সেক্স’ বইয়ে নারীপুরুষের মধ্যে প্রতারণা এবং বিশ্বস্ততা নিয়ে একটি সরল ‘গেম থিওরীর’ অবতারণা করে দেখিয়েছেন যে, সেখানেও দড়িটানানাটানির একটা খেলা চলে, ফলে পূর্ণ বিশ্বস্ত নারী-পুরুষে ভর্তি সমাজ যেমন আমরা পাইনা, তেমনি এমনো পাইনা সবাই অবিশ্বস্ত। বরং বিশ্বস্ততা এবং প্রতারণা রাজত্ব করে একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে যা শেষ পর্যন্ত বিবর্তনীয় স্থিতিশীল কৌশল বা Evolutionary stable strategy তৈরি করে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পৃথিবী ইতোমধ্যেই কিছু দিয়েছে। আমিও আগে কিছু আলোচনা করেছিলাম বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে। আসলে বায়োলজিকালি ডিম্বানু এবং শুক্রানু আলাদা। পুরুষের স্পার্ম বা শুক্রাণু উৎপন্ন হয় হাজার হাজার, আর সেতুলনায় ডিম্বানু উৎপন্ন হয় কম। ডিম্বানুর আকার শুক্রানুর চেয়ে বড় হয় অনেক। অর্থাৎ, বায়োলজিকালি চিন্তা করলে ’sperm is cheap’ আর ‘egg is valuable’। স্পার্ম চিপ বলেই (সাধারণভাবে) পুরুষদের একটা প্রবণতা থাকে বহু সংখ্যক জায়গায় তার প্রতিলিপি ছড়ানোর। সেজন্য তথাকথিত আধুনিক ‘মনোগোমাস’ সমাজেও দেখা যায় পুরুষেরাই বেশি প্রতারণা করে সম্পর্কে, আর আগেকার সময়ে রাজা বাদশাহদের হারেম রাখার কিংবা শক্তিশালী সেনাপতিদের যুদ্ধ জয়ের পর নারী অধিকারের উদাহরণগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। পর দিকে এগ ভালুয়েবল বলেই প্রকৃতিতে women are choosy, তারা নিশ্চিত করতে চায় কেবল উৎকৃষ্ট জিনের দ্বারাই যেন তার ডিম্বানুর নিষেক ঘটে। সেজন্যই দেখা যায়, পুরুষ ময়ুর পেখম তুলে দাঁড়িয়ে থাকে, ‘খুতখুতে’ ময়ূরী নির্বাচন করে যোগ্যতম ময়ূরকেই তার সৌন্দর্যের ভত্তিতেই।
সাধারণভাবে বললে, একজন পুরুষ তার সারা জীবনে অসংখ্য নারীর গর্ভে সন্তানের জন্ম দিতে পারে, কুখ্যাত চেংগিস খানের মত কেউ কেউ সেটা করে দেখিয়েছিলোও। (ইতিহাসে একজন পুরুষের সবচেয়ে বেশি সংখক সন্তানের হিসেব পাওয়া যায় – ব্লাড থার্স্টি মোলে ইসমাইল-এর – ১০৪২ জন সন্তান) । তাত্ত্বিকভাবে সে করতে পারে প্রতি মিনিটেই। অপরদিকে একজন নারী বছরে কেবল একটি সন্তানেরই জন্ম দিতে পারে। সে হিসেবে সাড়া জীবনে তার সন্তান সর্বোচ্চ ২০-২২টির বেশি হবার কথা নয় (যমজ সন্তানের কথা গোনায় না আনলে)। বিবর্তনীয় পটভুমিকায় দেখা গেছে নারীরা যদি ক্রমাগত পার্টনার বদল করলে তা কোন ‘রেপ্রোডাক্টিভ বেনিফিট’ প্রদান করে না। তার চেয়ে বরং সন্তানের দেখাশোনায় সক্তি বেশি নিয়োজিত করলেই বরং ভবিষ্যৎ জীন টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। সম্ভবত এই কারণেই মার সাথে সন্তানের যোগাযোগের পরিসর বেশি। আর সামাজিক আর অন্যান্য কারণ তো আছেই।
@অভিজিৎ, ও পৃথিবী
ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা এবং পৃথিবী। আমার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি। তবে প্রথম প্রশ্নটির উত্তরে যা বলেছেন সেগুলো আমি এর মধ্যে পড়েছিলাম আপনার ও দিগন্তের লেখায়। তাই প্রথম প্রশ্নটি এবার আরেকটু এগিয়ে নিয়ে বলি। প্রশ্নটি এবার কিছুটা ব্যক্তিগত হয়ে যেতে পারে, তাই জবাব না দিলেও আপত্তি থাকবে না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে সমাজে পুরোপুরি নৈতিকতা এক প্রকার দুর্বলতা হিসেবেই দেখা দেয়। উদাহরণ হিসেবে আমি দেখাতে পারি যে একটি অফিসে সবচেয়ে নৈতিক ব্যক্তিটি পিছিয়ে থাকে সর্বক্ষেত্রে। এখন সমস্যা হচ্ছে আমি ব্যক্তিগতভাবে নৈতিকতার পক্ষে। আমি সব সময় নৈতিক হিসেবেই থাকতে চাই। কিন্তু এটাও দেখি যে কিছুটা অনৈতিকতা আমাকে টিকে থাকতে, অন্যভাবে দেখলে উন্নতি করতে সাহায্য করে। আমি এটা বুঝি যে পুরোপুরি অনৈতিকতা আমার জন্য ক্ষতি হিসেবে দেখা দেয়। এখন আমি যদি একজন বুদ্ধিমান হই তবে আমার বেশিরভাগ সময় নৈতিক থাকা উচিত আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনৈতিক হওয়া উচিত। এই অনৈতিকতাটুকু মেনে নিতে পারছি না। তাই দ্বন্দ্বটি সেখানে। এই দ্বন্দ্বটি কিভাবে অন্যান্য মুক্তমনারা নিরসন করেন আমি জানতে আগ্রহী।
এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করি। অনৈতিকতা বলতে আমি বুঝি মুলত যে কাজ অন্যের ক্ষতি করে। তাঁর ফলে আমার সুবিধে হতেও পারে কিংবা নাও হতে পারে। যে মিথ্যে অন্যের ভালোর জন্য বলা হয় সেটাকে আমি ছদ্ম-অনৈতিকতা বলবো। যেমনঃ আমার একটি খারাপ খবর যদি বাবা/মা কে দিলে সেটাতে তাঁদের ক্ষতি হবে বলে জানি তখন আমরা খবরটি লুকিয়ে রাখি কিংবা মিথ্যে বলি। এটাও এক ধরণের অনৈতিকতা, কিন্তু উদ্দেশ্য ভাল, তাই আমি এটাকে বাহিরে রাখছি।
সুতরাং অনৈতিকতা হিসেবে আমি সেটাকেই চিহ্নিত করছি যা আমাকে সুবিধে দিতে পারে কিন্তু তাতে অন্যের ক্ষতি হয়। এখন এই অনৈতিকতাকে কি আমি কোনভাবে হালাল বলতে পারি? সকলের মতামত জানতে আগ্রহী।
@স্বাধীন,
আমি মনে করি নৈতিকতা দেশ-কাল-পাত্র, পরিবেশ, পরিস্থিতি, ব্যাক্তিত্ব ইত্যাদি বহুবিধ কারনের জন্য বিভিন্নভাবে চিহ্নিত হতে পারে। একজনের কাছে বা একসময়ে যেটা নৈতিক, অন্যের কাছে বা অন্য সময়ে সেটা অনৈতিক হয়ে যেতে পারে।
আমার কাছে মনে হয় আমাদের কাজগুলোর নৈতিকতা/অনৈতিকতা নির্ভর করে কনসিকোয়েন্স বা ফলাফলের উপর। নৈতিকতা/অনৈতিকতার ব্যাপারটাতে কোন রিজিডিটির (হারাম, হালাল)অবকাশ আছে বলে আমার মনে হয়না।
@স্বাধীন,
ঠিক কোন সেন্সে পিছিয়ে থাকেন? সেই ব্যক্তি কি তাঁর বেতনের বাইরে বেশি টাকা উপার্জন করতে ব্যর্থ হোন নাকি ফুড চেইনে তিনি সবচেয়ে নিচের স্তরে অবস্থান করেন? আমি মনে করি সাফল্য জিনিসটা খুবই ব্যক্তিনিষ্ঠ। আমার কাছে দু’ হাতে টাকা কামানোটা সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে, আবার আপনার কাছে নৈতিকতা ধারণ করে জীবনযাপন করা সাফল্যের মাপকাঠি হতে পারে। আপনার বর্ণিত দৃশ্যকল্পের ব্যক্তিটি যেহেতু সবকিছু জেনে বুঝেই নীতি মেনে চলছেন, তার মানে তিনি হয়ত অর্থ বা ক্ষমতাকে সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরেন না। সেক্ষেত্রে আমি তাকে ব্যর্থ মনে করলেও তিনি হয়ত নিজেকে সফল হিসেবেই গণ্য করেন।
@স্বাধীন,
আসেন লালনে যাই, 😀
” পাপ পূন্যের কথা আমি কারে বা শুধাই,
এই দেশে যা পাপ গন্য, অন্য দেশে পূন্য তাই।
তিব্বত নিয়ম অনুসারে, এক নারী বহু পতি ধরে
এই দেশে তা হলে পরে’ ও তা ব্যাভিচারই গন্য হয়।
শুকর গরু দুটি পশু, খাইতে বলেছেন যিশু
তবে কেন মুসলিম হিন্দু তারে পিছেতে হঠায়!!?
দেশ সমস্যা অনুসারে, ভিন্ন বিধান হইতে পারে
সুক্ষ জ্ঞানের বিচার করলে, হেথা পাপ পূন্যের নাই বালাই
পাপ হইলে ভবে আসি, পূন্য হলে স্বর্গবাসী
লালন বলে নাম উর্বশী, নিত্য নিত্য প্রমাণ পাই!!
পাপ পূন্যের কথা আমি, কাহারে শুধাই!!”
নৈতিকতার রীতি নীতিও স্থান কাল ভেদে পালটায়। এখন সততাও মানুষ ভেদে পরিবর্তিত হয়~!! তাই এগুলো নিয়ে বিবর্তনকে টেনে লাভ নাই। আবার কখনো কখনো এক নীতি বাঁচাতে গিয়ে অন্য নীতি ভাংতে হয়।
যেমন ধরেন, আপ্নের নীতি আপনি মানুষ মারবেন না, কিন্তু আপনাকে আক্রমন করলে বা আপনার দেশ আক্রান্ত হলে তখন কি আপনি আপনার নীতি ধুইয়া পানি খাবেন!! :guli:
page টা simple করার জন্য আরো একবার ধন্যবাদ। খুব তাড়াতাড়ি চলে আসতাছে। আসলে মুক্তমনা ব্লগের একটা page open করতে আমার অনেকক্ষেত্রেই ৫-৬ বার try করতে হয় (যখন মন্তব্যের ফলে page এর size বিশাল হয়ে যায়)। page খুললে দেখা যায় কিছু অংশ আসার পর বাকিটুক আর আসতেছে না। এই ব্যাপারটার দিকে লক্ষ্য করার জন্য মুক্তমনা admin এর দৃষ্টি আকর্ষন করছি।(মুক্তমনা admin না অভিজিৎদার দৃষ্টি আকর্ষন করতে হবে তা বুঝতেছি না)
প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরের পরে মন্তব্য লেখার ব্যবস্থা থাকলে মনে হয় ভাল হত। কারন, অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতেও কিছু প্রশ্ন চলে আসে যা মন্তব্য অংশে আলোচনা করা যাবে।
এরকম একটা চমৎকার উদ্যোগের জন্য বন্যাপু, অভিজিৎদা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অশেষ ধন্যবাদ। আসলে বিভিন্ন সাইট ঘুরে বিবর্তন সম্পর্কে জানা খুবই মুশকিল ব্যাপার। এইখানে একটা সাইটে ঢুকেই বিবর্তন সম্পর্কে পুরা ধারণা নেয়া যাবে যা আমার মতো যারা বিবর্তনে নভিস্ তাদের জন্য সত্যিই অসাধারণ একটা ব্যাপার।
আর একটা কথা,
যদিও এই সাইটটা মূলত বিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়ার জন্যই রাখা উচিত, ধর্মগ্রন্থে কি বলা হয়েছে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত নয় বলেই আমি মনে করি। তবে আমাদের চারপাশের পরিবেশটাও বিবেচনায় আনতে হবে। সেইজন্য কিছু প্রভাবশালী বক্তাদের (বিশেষ করে জাকির নায়েক, হারুন ইয়াহিয়ার মত বক্তাদের) বক্তব্যগুলো একটা অংশে দিয়ে তা খন্ডন করার ব্যবস্থা করা উচিত।
এখানে আরেকটা ব্যপার বিবেচনায় রাখা উচিত বলে আমি মনে করি। কিছু হিন্দু পন্ডিত বিবর্তনকে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে খুজে পেয়েছেন। বিশেষ করে, জন্মান্তরে যে আত্মার ক্রমবিকাশ হয়, দশাবতার(মৎস্য, কূর্ম…….মনুষ্য অবতার) এগুলোকে তারা বিবর্তনবাদের সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। সেগুলোকেও একটু রাখা উচিত বলে মনে করি যাতে মানুষ সচেতন হয়।
যদিও কালের স্রোতে এইসব কুসংস্কার হারিয়ে যাবে, কিন্তু বর্তমানে অনেকের সাথে বিবর্তন নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রশ্নের উত্তর আগে থেকে জানা থাকলে সুবিধা হবে। হয়ত কোন প্রশ্নের উত্তর আমি একটু ভাবলেই দিতে পারব। কিন্তু কোন আলোচনায় অনেক ক্ষেত্রে সেই ভাবার সুযোগটা পাওয়া যায় না।
@রনবীর,
আপনার সাজেশনগুলি বেশ ভাল মনে হচ্ছে। প্রশ্নোত্তরে আলোচনা থাকা খুবই দরকার, যদিও এতে বাড়তি চাপ পড়বে, অন্তত কিছুদিন পর সাইট গোছানোর মূল কাজ শেষ করার পর মনে হয় শুরু করা যায়।
ধর্ম না গুলানোর কথা আমিও বলেছি, যদিও আইডি জাতীয় তত্ত্বের বিরোধীতা করতেই হবে। সেটা সরাসরি ধর্মের সাথে যুদ্ধ নয়, বিবর্তনের বিকল্প হিসেবে আরেকটি তত্ত্ব খন্ডন হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
বিবর্তনের সাথে হিন্দু ধর্মের জন্মান্তরবাদের সম্পর্ক আমার মাথাতেও এসেছিল 🙂 ।
@ রণবীর এবং আদিল মাহমুদ,
ধর্মগ্রন্থে কি আছে আর না আছে, সেটাকে মূল ফোকাস করে বিবর্তনের পৃষ্ঠাটি তৈরি করা হবে না। তবে বিবর্তনের অপব্যাখ্যা করে জাকির নায়েক, হারুন-ইয়াহিয়া, আনসারিং জেনেসিস যেগুলো যুক্তি দেন সেগুলো তো খন্ডন করতেই হবে। সে হিসেবে ধর্মগ্রন্থ কিংবা ধর্মের কথা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে আসতে পারে। প্রাসঙ্গিকভাবেই আসবে ডিজাইন আর্গুমেন্ট বাতিল নিয়ে আলোচনাও। হিন্দু ধর্মের জন্মান্তরের সাথে বিবর্তন গোলানোর ব্যাপারটাও ইন্টারেস্টিং। তবে সব কিছু আমাদের হাতে ছেড়ে না দিয়ে আপনারা নিজেরাও প্রশ্নোত্তর রেডি করতে পারেন (অবশ্যই উপযুক্ত রেফারেন্স ইত্যাদি দিয়ে) কিন্তু। আমরা বিশ্লেষণের পরে সেটা আপ্লোড করে দিতে পারি।
আর আর্কাইভে মতামত দেয়ার ব্যবস্থা না থাকলেও এখানেই আপনাদের মন্তব্য দিতে পারেন। কোন প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এখানেও আলোচনা চলতে পারে।
@অভিজিৎ,
– এটা অবশ্যই পূর্ন সমর্থনীয়। জাকির নায়েক, হারুন ইয়াহিয়া বা আর যে কেউই বিবর্তনের পালটা যুক্তি দেন তাদের যুক্তি খন্ডন খুবই দরকারী। তারা ধর্মগ্রন্থের দোহাই পাড়লে ধর্মগ্রন্থের প্রসংগ আনতেই হবে। সেক্ষেত্রে ধর্মগ্রন্থ টানার মূল দায় তাদের।
অনুবাদ জাতীয় কোন কাজ থাকলে বলতে পারেন, করে দিতে পারি।
প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তরের পরে মন্তব্য লেখার ব্যবস্থা থাকলে মনে হয় ভাল হত। কারন, অনেক ক্ষেত্রে একটি প্রশ্নের উত্তরের প্রেক্ষিতেও কিছু প্রশ্ন চলে আসে যা মন্তব্য অংশে আলোচনা করা যাবে।
এরকম একটা চমৎকার উদ্যোগের জন্য বন্যাপু, অভিজিৎদা সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অশেষ ধন্যবাদ। আসলে বিভিন্ন সাইট ঘুরে বিবর্তন সম্পর্কে জানা খুবই মুশকিল ব্যাপার। এইখানে একটা সাইটে ঢুকেই বিবর্তন সম্পর্কে পুরা ধারণা নেয়া যাবে যা আমার মতো যারা বিবর্তনে নভিস্ তাদের জন্য সত্যিই অসাধারণ একটা ব্যাপার।
চমৎকার উদ্যোগ এবং এর প্রয়োজন আছে। শুধু যে বিবর্তনবিরোধী তাদেরই নয় যারা বিবর্তন সম্পর্কে জানা মাত্র শুরু করেছে তাঁদের জন্যও এই প্রশ্নোত্তর বিভাগ কাজ দিবে। নিজেরও প্রশ্ন কিছু আছে, সময় করে লিখবো। আপাতত গ্যালারীতে আছি, নিজের কাজের ব্যস্ততায়।
এরকম একটি বিপুল এবং বিশাল কাজ করার জন্য বন্যা বিবর্তনিয়া এবং তার বিদ্বজ্জন বান্ধবেরা যে এই বসুন্ধরায় বন্দনীয় হয়ে থাকবেন সে বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই।
বিমুগ্ধচিত্তের বিবর্তনীয় শুভেচ্ছা ও বিশুদ্ধ বিরল বরমাল্য রইলো বিবর্তনিয়া এবং তার বন্ধুদের বরাবরে। :rose2:
দেখ স্নিগ্ধা, যে কোন একটা বিষয় নিয়ে তুই আর আমি যে ঠিক উল্টাটা ভাববো সেটা তো আর নতুন কিছু না। আমার কাছে এই কাজটাই সবচেয়ে বড় ‘আজাইরা কাজ’, সারা উইকেন্ডটা নষ্ট করে এই পেজের কাজ করতে করতে ভাব্লাম কেন যে আমি অযথা ‘বোনের মোষ তাড়াইতেছি’ কে জানে! আর তুই কিনা ঝাপায় পড়ে বলে দিলি এটাই নাকি আমার ‘নন-আজাইরা’ কাজ!
পাঠকের সংজ্ঞা কি রে? আমার ধারণা ছিল যে কোন বিষয়ের ‘পাঠক’ বলতে বুঝায় সে ওই জিনিসটা ‘পাঠ’ কররে। তুই যে বিবর্তনের মত ‘ফালতু’ একটা বিষয়ের পাঠক এটাই তো জানতাম না :laugh: । তুই না বিবর্তনের নাম শুনলেই ক্ষেপে উঠতি? কয়দিন আগেও না তোকে যখন আমি তোকে মানুষ (বিশেষ করে মেয়েরা) কেন তার রিপ্রোডাক্টিভ এজ শেষ হওয়ার পড়েও এতদিন বেঁচে থাকে তার বিবর্তনীয় ব্যখ্যা দিতে গেলাম তুই না খ্যাক করে উঠলি?
@বন্যা আহমেদ,
আমি ভাবছি ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে একটা ওয়েব পেজ বানিয়ে তাতে ঘটা করে প্রচার করতে শুরু করব যে বিবর্তন একটা ফালতু বিষয়।লিখব ” …… বিবর্তন নিয়ে যারা লিখেন যেমন :বিবর্তনের পথ ধরে, বন্যা আহমেদ পর্যন্ত বিবর্তনকে ফালতু মনে করেন।সত্য কখনোই লুকিয়ে রাখা যায় না …… ।”
সৃষ্টিবাদীরা মনে হয় তাদের পক্ষে বলেছি এই নিয়েই খুশি হয়ে পড়বে কারন সত্য মিথ্যা যাচাই করার সময়তো তাদের নাই বলেই মনে হয়।আর কিছু লাভ হোক আর না হোক একজন নায়ক হলেও হয়ে যাইতে পারি। 😀
আল্লাহ আমার সহায় হও যাতে ঝড়ে বক মরে আর আমার …….
তুই তাইলে আজাইরা কাজ ছাড়াও কিছু করিস টরিস!!!!
আচ্ছা, জনস্বার্থে প্রশ্নোত্তরের লিস্টি বানালি, কিন্তু আমি বিবর্তন নিয়ে কোন প্রশ্ন করলেই এরকম খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠিস কেন?! আমি কিন্তু যে কোনদিন ইনটেলিজেন্ট ডিজাইনের হয়ে লড়তে শুরু করবো এবং তার জন্য দায়ি থাকবি তুই!
জোকস এসাইড – কাজটা আসলেই ভালো হইসে, বিশেষ করে আমার মতো পাঠকদের জন্য 🙂
আর কিছু তো করতে পারব না, তবে বানান ভুলগুলো ঠিক করার দায়িত্ব দিলে রাজি আছি।
আর আমার প্রশ্নগুলো তো প্রায় সবই আছে দেখি, কিছু মনে পড়লে পরে জানাব।
হ্যাপি বাস্টিং অব বিবর্তনবিরোধিতা। :clap2:
@ব্লাডি সিভিলিয়ান,
অনেক ধন্যবাদ। আমাদের আসলে আপনার মতো একজন বানানের পুলিশ লাগবে। আসলেই!
এখন বলেন, কিভাবে আপনি বানান শুদ্ধ করার ব্যাপারে হেল্প করতে পারবেন। মানে আমি জানতে চাচ্ছি প্রক্রিয়াটা কি রকম হতে পারে। আপনি কি প্রশ্নগুলোর উত্তর ধরে ধরে ভুল বানানের সংশোধন এখানেই দেবেন, নাকি ওয়ার্ড ডকুমেন্টে আমাদের ইমেইল করে পাঠাবেন?
বন্যাপু, আমি অবশ্যই এই পৃষ্ঠার সম্পাদনার দলে যোগ দিতে রাজি আছি। আমার ইমেইল মনে হয় আপনার কাছে আছে, মুক্তমনায় প্রথম লেখালেখি শুরু করার পর আপনি আমাকে মেইল করেছিলেন।
@ তানভী ভাই- আসলে পরীক্ষার সময়ে কোন কাজকাম ছিল না, তাই এইদিকে মন পড়ে থাকত। এখন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর আমারে আলস্য গ্রাস করেছে।
@ আদিল ভাই- দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিবর্তন নিয়ে লেখালেখি করতে গেলে সৃষ্টিকর্তা্কে টেনে নিয়ে আসতে হবে, এর জন্য আমাদের zeitgeist দায়ী। আপনি বিজ্ঞান সাময়িকীগুলো ঘাটলে দেখবেন যে এসব প্রেসটিজিয়াস সাময়িকীগুলোর সম্পাদকরাও ডিজাইন আর্গুমেন্টের সমালোচনা করতে বাধ্য হন। আমার সর্বশেষ লেখাটা সায়েন্টিফিক আমেরিকানের সম্পাদকের প্রবন্ধের অনুবাদ ছিল, নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে সেখানে “ডিজাইনারের ডিজাইনার কে?” মার্কা কথাবার্তা ছিল। তু্র্কীতে হারুন ইয়াহিয়াদের কীর্তিকলাপ নিয়ে নেচার ম্যাগাজিনের এই প্রবন্ধটি দেখুন। ওখানে একটা হাস্যকর উক্তি আছে, “পৃথিবীর কোন ধর্মই তাদের অনুসারীদের সৃষ্টিবাদী হতে বলে না”। এরকম উক্তি নিঃসন্দেহে পলিটিকাল কারেক্টনেসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ, তবে আমেরিকার ধার্মিক পাবলিকের কাছ থেকে ফান্ডিং পেতে চাইলে একটু রয়েসয়ে চলতে হবেই। ধর্ম আর বিজ্ঞান নিয়ে নেচারের আরেকটা পলিটিকালি কারেক্ট লেখা দেখুন । এই দু’টো প্রবন্ধে যে বক্তব্য পেশ করা হয়েছে, তা আমাদের বক্তব্য থেকে খুব একটা আলাদা না। আমাদের ফান্ডিংয়ের চিন্তা না থাকায় আমরা নির্ভয়ে যে কথা বলতে পারি, এই প্রখ্যাত সাময়িকীগুলো সেটাই আরেকটু ঘুরিয়ে পেচিয়ে বলে। বিজ্ঞান এখন এত এগিয়ে গিয়েছে যে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা এবং সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। তবে আলোচনাগুলো ব্যক্তি আক্রমন ও ফালতু বিশেষণ বিবর্জিত হোক(মুক্তমনায় মাঝে মাঝে জাকির নায়েক কিংবা হারুন ইয়াহিয়ার প্রসঙ্গ আসলে কেউ কেউ “ছাগল”, “ভন্ড” জাতীয় বিশেষণ ব্যবহার করেন যা মোটেই কাম্য না) , এটাই আমাদের কামনা।
বিবর্তনের পৃষ্ঠাটি ভালই হয়েছে। ব্যাকগ্রাউন্ডে ডারউইন, ফ্রান্সিস ক্রিক, জেমস ওয়াটসন এবং মেন্ডেলের ছবিকে ওয়ালপেপার হিসেবে ব্যবহার করলে ভাল হয়। সেটা যদি সম্ভব না হয়, তবে ব্যাকগ্রাউন্ডের সাদা অংশকে ধূসর রঙ দিয়ে প্রতিস্থাপন করলে খারাপ হবে না।
শুধু ব্লগ লিখেই বিবর্তন ছড়াবে না। বিবর্তন বিজ্ঞান একটি দৃষ্টিভংগী-হিন্দুত্ব , ইসলামিস্ট এবং কমিনিউস্টদের যেমন একটি নিজস্ব জগৎ দর্শন আছে-বিবর্তনের জগৎ দর্শনও সেই জীবন ধারার সমান্তরাল। যেকোন ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে একজন মার্ক্সবাদি যেমন শ্রেনীতত্ত্বকে খোঁজেন-তেমন সমাজ ও নৃতত্ত্ববিজ্ঞানের গভীরে আছে বিবর্তনের চালিকা শক্তি-সেই যুক্তি আর তথ্যকে নিয়েই আমাদের সর্বত্র বিশ্লেষন দিতে হবে। তবেই মার্ক্স-মহম্মদ-মনু জর্জরিত বাংলা সমাজে দখিনা দুয়ার খোলা নব জ্ঞান-বিজ্ঞানের বাতাস আমাদের মন্থিত করবে।
ধন্যবাদ সবাইকে যারা এই প্রকল্পের সাথে আছেন।এই ধরণের একটা আর্কাইভ আমার মত দরিদ্র পাঠকদের যে কি উপকার করবে তা বলে বোঝান যাবেনা
বাংলা এবং ইংরেজী ব্লগের পাশাপাশি নতুন ব্লগের শুরু হল। এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
ধর্মীয় কোপমন্ডকতার হাত থেকে মানবের মুক্তির দূত মুক্তমনা। প্রতিটি ব্লগার কোন না কোন ভাবে ধর্মবিষয়ক আলোচনায় অংশ নিচ্ছে্ন। বিবর্তন আত্মস্থ না করতে পারলে মানুষ ধর্ম থেকে নির্বাণ লাভ করতে পারবে না।
নতুন ব্লগ সূচনা করার জন্য বন্যা আহমেদ ও সহযোদ্ধাদেরকে সাধুবাদ জানাই। :rose: :rose2: :yes:
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দারুণ একটা কথা বলেছন। ধর্ম থেকে নির্বাণ…অনেকদিন মনে থাকবে এই কথাটা! বিজ্ঞানে অগ্রগতি শুধু নতুন ধারণার জন্ম দেয় না, পুরনো ধারণার মৃত্যুও ঘটায়, এ সত্যটাকে অনেক সময় আমরা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করি না।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আসলে নতুন কোন ব্লগ তৈরি করা হয়নি কিন্তু, কেবল বিবর্তনের প্রশ্নোত্তর এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে একটা আর্কাইভের মতো তৈরি করা হয়েছে।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
একদম ঠিক কথা। পৃথিবীতে ধর্মগুলো কত যে অসার সেটা প্রমান করার জন্যই আমার কাছে বিবর্তন জানা গুরুত্বপুর্ন। মুক্তমনার বিবর্তনের প্রশ্নোত্তর নিয়ে এই আর্কাইভে ধর্মের প্রসংগ নিসন্দেহে একটি গুরুত্বপুর্ন ফেক্টর।
আমার আপাতত একটি প্রশ্নঃ
বিবর্তনের ধারায় নারী এবং পুরুষ লিংগান্তর ঘটল কিভাবে? দুই এর বেশী বা কম হল না কেন?
সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ এমন একটি ব্যাপক ও অতি প্রয়োযনীয় কাজ শুরু করার জন্য।
বন্যার মত আমারো মনে হয়েছে যে প্রাথমিক পর্যায়ে না হলেও অন্তত কিছুদিন পর প্রশ্নত্তোরগুলিকে উপ-বিভাগ হিসেবে ভাগ করা যেতে পারে। যেমন, বিবর্তনবাদের ইতিহাস বা ক্রম বিকাশ (মানুষ কবে থেকে ভাবতে শিখল, ল্যামার্কইজম থেকে ডারউইনবাদ এইসব)। কিছু প্রয়োযনীয় মৌলিক বায়োলজির জ্ঞান (সাধারন কোষবিদ্যা, ডিএনএ/আরএনএ এর গঠন, ক্রোমোজ়ম, মিউটেশন, প্রজাতি এসব। ডারউইনের মতবাদ। আধুনিক বিবর্তনের ধারা; কিছু উদাহরন। মানব বিবর্তন। বিবর্তনবাদের বিরোধীতা। বিবর্তনীয় মনোবিদ্যা এমন ধরনের উপবিভাগ।
আমার চোখে সরল হিসেবে পৃষ্ঠার লুক খারাপ নয়, বিশেষ করে যখন স্লো আপলোডের কথা চিন্তা করতেই হচ্ছে। প্রাথমিক হিসেবে চলার পর উন্নয়নের চিন্তা করা যেতে পারে। পরে বিভাগ অনুযায়ী সাজালে বিভাগানুযায়ী ভিন্ন কালার ব্যাবহার করা যেতে পারে।
এটা আরেকটু আগে করলে ভাল হত। যায়হোক, এখন পাওয়া যাচ্ছে এটাই সব থেকে বড় কথা। আমি আমাদের ফেসবুক গ্রুপে পেজটাকে পোষ্ট করে দিলাম।
http://www.facebook.com/#!/group.php?gid=454031185407&v=wall
পশ্চিম বঙ্গের পাঠকদের জন্যে ভিন এন এন এ লিংক করলাম।
http://www.vnnbangla.com/newsreader.aspx?id=3235
ফেসবুকের গ্রুপ ওয়াল পোষ্টিংটার লিংক ঠিক করে দিলামঃ
নতুন নতুন প্রশ্ন দেওয়ার পাশাপাশি নীচের বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত মন্তব্য বা ফিডব্যাক দিতে অনুরোধ করছি সবাইকে। তাহলে পৃষ্ঠাটার সামগ্রিক মান উন্নয়নে সুবিধা হবে।
– প্রশ্নগুলো কি ক্যাটাগরি অনুযায়ী ভাগ করা উচিত? এখন কিন্তু খুব স্থুলভাবে প্রশ্নগুলো আলাদা করা আছে (বিবর্তন সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন, ফসিল, প্রাকৃতিক নির্বাচন, মিউটেশন, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন, ইত্যাদি, কিন্তু ক্যাটাগরির নাম দেওয়া নেই)
– পৃষ্ঠাটার গঠন, দেখতে কেমন লাগছে, দেখতে বেশী আতেলীয় হয়ে গেল কিনা, আরেকটু হাল্কা ‘লুক এন্ড ফিল’ হলে ভালো লাগবে কিনা, কিছু কার্টুন যোগ
– উত্তরের ফরম্যাটটা ঠিক আছে কিনা, ইত্যাদি……
@বন্যা আহমেদ,
পৃষ্ঠাটার গঠন, দেখতে কেমন লাগছে, দেখতে বেশী আতেলীয় হয়ে গেল কিনা, আরেকটু হাল্কা ‘লুক এন্ড ফিল’ হলে ভালো লাগবে কিনা, কিছু কার্টুন যোগ
>>>>
ব্যাকগ্রাউন্ড ডিজাইন পছন্দ হল না। আর্কাইভিং এর কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়েও একটু ভাবতে হবে।
@বিপ্লব, এটা তো মহা ফাঁকিবাজি কথা হলো, ‘পছন্দ হল না’ বলে চলে গেলে তো হবে না। সমালোচনা করলে সামাধানও দিতে হবে একটা 🙂 । তোমার সাজেশানটা দিলে না হয় ভেবে দেখতাম কতটুকু বদলানো সম্ভব। খুব সিম্পল ডিজাইনে, খুব কম সময়ে এর চেয়ে বেশী কিছু করা যাচ্ছিল না, এর চেয়ে বেশী ফ্যান্সি কিছু করতে গেলে কাজটা করাই হতো না। বাংলাদেশে স্পিড একটা বড় সমস্যা, তাই যাই করি না কেন খুব সহজে যেন লোড হয় সেটা মাথায় রাখতে হবে।
আর একটা কথা, এই http://www.mukto-mona.com/evolution/ লিঙ্কটাকে নীড়পাতায় একটা আইকন করা রাখা যেতে পারে, কি বলেন?
বিবর্তন নিয়ে কোর লেখা গুরুত্বপূর্ন সন্দেহ নেই তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মগজ ধোলাইয়ের পার্টটা। আমাদের মগজ বিবর্তন করে সত্য হিসেবে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। এই কারণেই বিবর্তন কে এড়িয়ে যাবার জন্য আমরা কমফোর্টিং কিছু প্রশ্ন খুঁজি এবং মনকে স্বান্তনা দেই যেহেতু, বিবর্তন এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছেনা, সুতরাং এই জিনিস নিয়ে আপাতত ভাবার কিছু নেই।
এই কারণেই গত এক বছরের বিবর্তন নিয়ে অল্পকিছু লেখার অভিজ্ঞতায় বুঝতে পারি, সবার আগে সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া দরকার। একটা সময় যখন মানুষ কনভিন্সড হবে, আরে তাই তো প্রশ্নগুলোর উত্তর তো বেশ লজিক্যাল তখন সে অটো পড়ালেখা করবে বেসিক বিবর্তন সম্পর্কে।
সেই হিসেবে এটা একটা মাইলফলক প্রজেক্ট। আমি খেয়াল করেছি বিবর্তন নিয়ে যারা নিয়মিত লিখেন তাদের লেখার মন্তব্য বক্সে মূল কনটেণ্টের বদলে গৎবাধা কিছু প্রশ্ন নিয়ে বেশি আলোচনা হয়। একজনকে হাজারবার একই কথা বলতে হয়। এই প্রজেক্টটা শেষ হলে চট করে লিংক ফেলে দেওয়া যাবে- ভাবতেই ভালো লাগছে।
বন্যাপা, আর অভিদা দারুন একটা ধন্যবাদ পাবে। ক্ষুদ্রজীবনটা তাঁরা অলরেডি বহু মেষ তাড়িয়েছেন আশাকরি আরও তাড়াবেন।
মূল পাতাটা সিম্পল হয়েছে, যেটা দরকার ছিল। এবং সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশ থেকে পাতাটা দ্রুত লোড হয়। তবে হেডিং এ আমার একটা ছোট সাজেশন আছে। “ভুল ধারণা” নামক নেগেটিভ শব্দ ব্যবহার না করে আমরা “বিবর্তন নিয়ে প্রশ্নত্তোর” বাক্যটা ব্যবহার করতে পারি।
এই উদ্যোগটা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল। বন্যা এবং তাঁর সহযোগীদের ধন্যবাদ।
বিবর্তন সম্পর্কে ভুল ধারণাজনিত প্রশ্নমালা সম্পূর্ণই হয়েছে বলা যায়। তবে আমি আরো একটা যোগ করছি —
“বিবর্তন মেনে নিলে নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিতে হয়, কারণ বিবর্তন তত্ত্ব মানুষ আর পশুতে পার্থক্য করে না। বিবর্তন তত্ত্ব মতে মানুষ আর পশু কি এক?”
আরো প্রশ্ন মাথায় এলে জানাবো।
@ইরতিশাদভাই আর তানভী,
বিবর্তনের দৃষ্টিতে নৈতিকতার উদ্ভবের একটি প্রশ্ন (দাবী) ইতোমধ্যেই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে –
বিবর্তন মানব-সমাজে নৈতিকতার উদ্ভবকে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
এর উত্তর দেওয়া হয়েছে এখানে।
অন্যগুলো সন্নিবেশিত করা হবে শিগগীরই।
ফীডব্যাকের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
প্রথমেই আমি বন্যপুর অনুমতি সাপেক্ষে এই পোস্টে বাগড়া দিলাম। 😀
বিবর্তন নিয়ে পুরাতন পোস্টগুলো ঘাটতে ঘাটতে আমার মাথায়ও বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে আসে। এখানে আমি প্রশ্ন গুলো দিয়ে দিচ্ছি। আমার এসব প্রশ্নের লিস্ট আরো বাড়তে থাকবে। কোন কিছু শিখতে না পারি, অসুবিধা নাই! কিন্তু আবজাব প্রশ্ন করার বেলায় আমি একপায়ে খাড়া!!
১-বিবর্তন কিভাবে নৈতিকতাকে ব্যখ্যা করে? অথবা বিবর্তনের ফলে কিভাবে নৈতিকতার মত বিষয়ের উদ্ভব ঘটল?
২-প্রকৃতিতে সব কিছুর মধ্যেযে আনুপাতিক মিল লক্ষ্য করা যায়(গোল্ডেন রেশিও) তার ব্যখ্যা কি? বিবর্তনের ফলে উৎপত্তি হলে সকল প্রাণীর মধ্যে এই অনুপাত পাওয়া যাবে কেন?
৩- বিবর্তনবাদকে কেন এখন একটি নির্দিষ্ট ফরম্যাটে ফেলা সম্ভব হয় নি? অর্থাৎ পদার্থ বিজ্ঞান বা রসায়ন বিজ্ঞানের সূত্রের মত বিবর্তনের নির্দিষ্ট কোন পথ বা সূত্র নাই কেন?
৪-আমাদের কাজের সুবিধার্থে হাত-পা এর বৈবর্তনিক উন্নতি হয়েছে? নাকি বৈবর্তনিক কারনে হাত-পা এর উন্নতি ঘটায় আমাদের কাজের সুবিধা হয়েছে?
৫-বিবর্তনের ফলে কেন শুধুমাত্র মানুষেরই বুদ্ধিমত্তা ও কার্যক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নিত হল? মানুষের পাশাপাশি অন্য আর কোন প্রাণীতে কেন বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন ঘটল না, বা সভ্যতা গড়ে উঠল না?
৬-বিবর্তনের ফলে শরীরের অভ্যন্তরে এতসব জটিল ও সুবিন্যস্ত তন্ত্র গড়ে উঠার পেছনে কারন কি? যদি বিবর্তনের ফলেই উদ্ভব হবে, তাহলে তন্ত্র গুলো কি আরো সরল হওয়া উচিৎ ছিল না? এতে কি একজন দক্ষ সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি অনুমান করা যায় না?
আপাতত এই কয়েকটা। এগুলোর উত্তর হয়ত পুরাতন কোন পোস্টেই লুকিয়ে আছে, কিন্তু আমার চোখের সামনে পরে নি। তাই দিয়ে দিলাম।
আর যারা আমাদের এই কর্মকান্ডে যেকোন ভাবে সাহায্য করতে আগ্রহী, তারা প্লিজ বন্যাপুর সাথে মেইলে যোগাযোগ করেন। অথবা (tanvy158@gmail) এইটাতে করলে আমাকে পাবেন। যেকোন প্রকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত থাকলাম। 🙂
@পৃথিবী……… আশ্বাস দিয়ে ফাঁকি মারার জন্য তোমার জন্য উপযুক্ত শাস্তি বরাদ্দ হল! পরীক্ষার সময় ডেইলি নতুন কমেন্ট দেখা যাইতো!! পরীক্ষা শেষে কই উড়াল দিলা!! :guli:
@তানভী,
কাজে হাত দিলা খুব ভাল কথা। তবে আমার মনে হয় প্রশ্নত্তোর পর্বকে ধর্মের সাথে বেহুদা সংঘর্ষে না জড়ানোই ভাল। বিজ্ঞান বিষয়ক বিষয়ে আলোচনা হবে পুরো বিজ্ঞানের ভিত্তিতে। যেমন, তোমার ৬ নং প্রশ্নের উত্তর দিতে কাউকে এখন বাধ্য হয়েই ইশ্বর বিষয়ক কথাবার্তা বলতে হবে। তার কি দরকার? তার থেকে জটিল তন্ত্রগুলি কিভাবে বিবর্তিত হল আমাদের এই প্রশ্নের জবাব জানতে পারলেই তো হয়।
তবে কেউ স্পেসিফিক্যালী আইডি বা বিবর্তনবাদের সাথে আইডির সংঘাত বা সম্পর্ক এমন ধরনের প্রশ্ন করলে তার সরাসরি জবাব হতে পারে।
@আদিল মাহমুদ, আমার চোখে কিন্তু তানভীর প্রশ্নটা বেহুদ্দা ধর্মের সাথে গুতাগুতি বলে মনে হয়নি। আমার কাছে সৃষ্টকর্তা আর ধর্ম ( বা অরগানাইজড রিলিজিয়ন এর দৃষ্টিভঙ্গী থেকে) দু’টো আলাদা কথা। কিন্তু আমি বা তানভীই ঠিক এমন কোন কথা তো নেই। আপনাকে রিফিউট করার জন্য না, বরং আপনার কথাটা ঠিক করে বোঝার জন্য একটা প্রশ্ন করি, আমাদের লিষ্টে আরেকটা প্রশ্ন আছে,
“ঘড়ির যেমন কারিগর লাগে, তেমনি জটিল জীবজগত তৈরির পেছনেও কারিগর লাগবে”
এর সাথে তানভীর প্রশ্নটার পার্থক্য কোথায়? আপনার মতে এই দু’টো প্রশ্নই করা ঠিক নয় নাকি পরেরটা ঠিক আছে তানভীরটা নেই? তাই যদি হয়, তাহলে কেন?
যতদুর মনে পড়ে, এই প্রশ্নোত্তরের আইডিয়াটা প্রথম আপনার মাথা থেকেই এসেছিল, আর সেকারণেই আমরা সারা উইকেন্ড বসে এই আকাজ করতেসি। আপনি আরও কিছু প্রচলিত ভুল ধারণা বা প্রশ্ন পাঠিয়ে বা প্রশ্নের উত্তর লিখে মাঠে নেমে পড়বেন নাকি গ্যালারীতে বসে শুধু তানভীরে বকাবকি করবেন 🙂 ।
( আপনার সাজেশনটা কিন্তু গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে )
@বন্যা আহমেদ,
ঘড়ির কারিগর সম্পর্কিত এই প্রশ্ন সাধারনত ইশ্বর আছে কি নেই এ বিতর্কে হরদম দেখা যায়। সেসব বিতর্কের আমি কোনই মানে দেখি না।
বিবর্তনবাদ কি এখন পর্যন্ত প্রানের উন্মেষ কিভাবে হল তার সঠিক জবাব নিশ্চয়তাসহ দিতে পেরেছে? আমার জানা মতে দিতে পারেনি। বড়জোর ধারনা দিতে পারে। ভুল হলে শুধরে দিবেন। কাজেই যা বৈজ্ঞানিকভাবে এখনো প্রমানিত হয়নি তা নিয়ে অনর্থক মাথা ঘামানোর দরকার আমি অন্তত দেখি না।
আমার কাছে বিবর্তনবাদ প্রানের উন্মেষ কিভাবে হল তার জবাব কনক্লুসিভলী দিতে পারেনি। সেক্ষেত্রে একদম শূন্য থেকে কিভাবে মৌল উপাদান সৃষ্টি হল, তার থেকে কিভাবেই বা প্রান নামক তি জটিল স্বত্তার উন্মেষ ঘটল তার সুনিশ্চিত জবাব দিতে হবে। তবে প্রজাতির থেকে প্রজাতির বিবর্তন কিভাবে হয় তার জবাব সফল ভাবে দিতে পেরেছে।
এ সম্পর্কে আমি ইশ্বর টানাটানি পছন্দ করি না এই কারনে যে তাতে মূল আলোচনা বিজ্ঞান থেকে সহজেই ঘুরে ঈশ্বর আছে কি নেই সে তর্কের মধ্যে চলে যায়। দরকার কি তার? বিজ্ঞানের দিক থেকেই যা প্রমান হয়েছে তাই আলোচনা করে যাই না, সে থেকে ঈশ্বর আছে কি নেই তা যার যার মতের উপর ছেড়ে দিলে হয়। বিজ্ঞানীরা তো আর বিবর্তন নিয়ে গবেষনা ঈশ্বর আছে কি নেই সে প্রশ্নের জবাবের জন্য করছেন না। যদিও বিবর্তনবাদের সমালোচকরা তেমনই দাবী করেন। তবে বিজ্ঞানীদের তেমন কোন প্রতিষ্ঠিত গবেষনা থাকলে তা আলোচনা অবশ্যই করা যেতে পারে।
আলোচনা বিজ্ঞান থেকে ঈশ্বর আছে কি নেই এই অর্থহীন দিকে মোড় দিলে অনেকেই, বিশেষ করে বাংলাদেশের সাধারন পাঠকরা দ্রুত উতসাহ হারাবেন বলেই আমি মনে করি। তাই তানভীকে বকাবকি করেছি ঠিক নয়, বরং বলা যায় যে প্রথম রাতেই বেড়াল মারার চেষ্টা করেছি। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে বিবর্তনের চমতকার সব বৈজ্ঞানিক বিষয় থেকে বিতর্ক অতি দ্রুতই ইশ্বর আছে কি নেই সেদিকে ধাবিত হয়।
প্রশ্ন কিন্তু পাঠিয়েছি। যেদিন এই প্রশ্নোত্তর পর্বের প্রাথমিক আলোচনা হয় সেদিন কিন্তু ডারউইনের দৃষ্টিতে অরিজিন অফ লাইফ কি জানতে চেয়েছিলাম। তানভীর ৫ নং টার উত্তর দেখার আশায় আছি আমিও। বিবর্তনের ফলে মানুষ নামক অতি বুদ্ধিমান প্রজাতির উদ্ভব কিভাবে কেন ঘটল তা জানার কৌতুহল আমারো আছে। মানুষের সাথে সাদা চোখে আর সব প্রানীর বুদ্ধিমত্তার পার্থক্য অত্যন্ত প্রকট।
আমার সাজেশন ছিল, সেজন্য বিনয়ের খাতিরে সরাসরি কিছু না বললেও মনে মনে বেশ গৌরবান্বিত বোধ করছি, যদিও আমার সাজেশনের আগেই কাজ শুরু হয়ে গেছিল সেটাও সত্য।
@আদিল মাহমুদ, বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করতে হলে সব ধর্মের ডিজাইন আর্গুমেন্ট কে রিফিউট করতেই হবে। এটা না করে কোনভাবেই বিবর্তনের আলোচনা হতে পারে না। আর কারিগরের প্রশ্নটা বিবর্তনবাদীরা করে না, এটা সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আপনি জানেন কিনা জানি না, ডারউইন তার অরিজিন অফ স্পেশিজ এর বিভিন্ন জায়গায় প্যলের এই ডিজাইন আর্গুমেন্টের রেফারেন্স দিয়েছেন এবং তা কেন ভুল তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আর আমার খুবই সন্দেহ হচ্ছে, আপনি না বুঝেই, প্রাণের উৎপত্তি এবং প্রজাতির উদ্ভব মিলিয়ে ফেলছেন। বিবর্তনবাদ তো প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে কাজ করে না, আমার বইতে এটা প্রথমেই উল্লেখ করেছিলেন। এ দু’টোর খুব পরিষ্কার পার্থক্য করতে পারতে হবে। কিন্তু বিবর্তনবাদ যেটা করে তা হল, পৃথিবীতে সরল এককোষী প্রাণী থেকে প্রজাতির উদ্ভব কিভাবে হয়েছে তা ব্যাখ্যা করে প্রমাণিতভাবেই। আর এখানেই সব প্রচলিত ধর্মের সাথে বিবর্তনবাদের পরিষ্কার দ্বন্দ্ব এসে পড়ে। মোটামুটি প্রত্যেকটা ধর্মে আদম ইভের গল্প আছে, প্রত্যেক জীবকে সৃষ্টিকর্তা হাতে বানিয়ে পাঠানোর গল্প আছে, আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে নুহের গল্প আছে। বিবর্তন এর প্রত্যেকটাকে খন্ডন করেছে। আর সৃষ্টিতত্ত্ববাদীরা বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই এই প্রসংগগুলো খুব জোরেসোরে নিয়ে আসেন ( যেমন ধরুন, চোখের মত জটিল অংগের উৎপত্তি হতে সৃষ্টকর্তা লাগবে)। তাদের এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিব কিভাবে? চোখের উৎপত্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন নেই এটা তো বলতেই হবে, আপনি এই প্রচলিত ধারণাগুলো ভাঙ্গবেন কিভাবে সেগুলো আলোচনা না করে। তবে সেই আদিতে সরল এককোষী সাধারণ পূর্বপুরুষ তৈরিতে সৃষ্টিকর্তার কোন হাত ছিল কিনা সেটা নিয়ে বিবর্তনবাদ কোন ঘাটাঘাটি করবে না, সেটা ঠিক।
আমাদের এই প্রশ্নোত্তরগুলোর উদ্দেশ্য তো বিবর্তনের মৌলিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা দেওয়া নয়, সাধারণত বিবর্তনবিরোধীরা ( যাদের মধ্যে ধর্মীয় সৃষ্টিতত্ববাদীরাই প্রধাণ) যে সব প্রশ্ন তোলেন সেগুলোর উত্তর দেওয়া। বিবর্তনের তত্ত্বীয় ব্যখ্যা যদি কেউ পড়তে চান তাহলে তাকে আর্কাইভে রাখা প্রবন্ধগুলো পড়তে হবে, প্রশ্নোত্তরে আসার প্রয়োজন নেই। কোন সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই এ নিয়ে অযথা গুতোগুতি করার দরকার নেই এটা মেনে নিয়েই বলছি, সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের ছড়ানো বিভিন্ন ভুল ধারণাগুলোর উত্তর দিতে হলে প্রচলিত ধর্মের ডিজাইন আর্গুমেন্টকে ভুল বলতেই হবে, এছাড়া কোন গতি নেই। সাপও মারবো কিন্তু লাঠিও ভাঙ্গবো না সেটা বোধ হয় সবসময় সম্ভব হয় না।
ভালোই হল, এখন মনে হচ্ছে, এ প্রসংগটাও প্রশ্নোত্তরের মধ্যে রাখা উচিত। যতদুর মনে পড়ে, ফুয়াদও এ ধরণের কি যেন একটা প্রশ্ন করেছিল।
@বন্যা আহমেদ,
– সেটা আমি জানি। জানি বলেই বিবর্তনে বিশ্বাসী কারো কাছে এই ধরনের প্রশ্ন আশা করি না। এই প্রশ্নের উত্তর রাখা যেতে পারে বিবর্তবিরোধীতা বিভাগে। বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিবর্তন নিয়ে আলোচনায় ঈশ্বরের রেফারেন্স কোন তরফ থেকেই কাম্য নয়। বিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বকে খন্ডন করতে হলে বিজ্ঞানের ভাষায় জবাব দিতে হবে। ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্সে নয়।
ডারউইন সাহেব প্যালের ডিজাইন আর্গুমেন্টের কি ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আমি জানি না, জানার আশা রাখি।
– আপনার সন্দেহ নিতান্তই অমূলক। আমারো সেটাই ধারনা ছিল যা নিশ্চিত করতে চাইছিলাম। দেখুন, আগেই বলেছিলাম যে বিবর্তনবাদ প্রজাতির থেকে প্রজাতির বিবর্তনের সফল ব্যাখ্যা দেয়, কিভাবে নিম্ন শ্রেনীর জীব থেকে উচ্চ শ্রেনীর হল তার ব্যাখ্যা দেয়। তবে প্রানের উন্মেষ এর আওতার বাইরে। কাজেই বিবর্তন বিষয়ক আলোচনায় কেউ প্রানের সৃষ্টি কিভাবে হল, তার জন্য গডের দরকার আছে কিনা এই জাতীয় আলোচনা তুলতে কি তা নিতান্তই মূল্যহীন না? সরাসরি বলে দেওয়া ভাল যে এ বিষয়ে বিবর্তনবাদ কিছু বলেনি। তুমি গড মানো বা না মানো তা তোমার নিজের ব্যাপার। আপনিই তো বললেন যে আদিতে এককোষী জীব সৃষ্টিতে ঈশ্বরের হাত ছিল কিনা তা নিয়ে বিবর্তনবাদ ঘাটাঘাটি করবে না। আমিও একই কথাই বলি। চোখের বিবর্তন আপনি ব্যাখ্যা করলেন। এর সাথে কি দরকার আমার গডের প্রয়োযন আছে কি নেই তেমন দার্শনিক দিক চিন্তা করার?
– এ বিষয়ে আমার দ্বি-মত আছে। এই প্রশ্নোত্তর পর্ব কোন বিশেষ গ্রুপের জন্য ডিজাইন করা ঠিক নয়। এই পর্ব চলবে সবার সব ধরনের প্রশ্নের জন্যই। বিবর্তনে বিশ্বাসীরাও অনেক মৌলিক প্রশ্নের জবাবও এখনো পরিষ্কার জানেন না, এটা তো পরিষ্কার। এই উদ্যোগকে সবাই স্বাগত জানিয়েছেন। তবে বিরোধী পার্টির জনপ্রিয় আর্গুমেন্টগুলি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ন বিভাগ অতি অবশ্যই থাকতে হবে। তাতে তাদের সবার না হলেও কারো কারো উপকার হবে, আমাদেরও দূর্বলতা কেটে যাবে। আর্কাইভে রাখা তত্ত্বীয় প্রবন্ধগুলি পড়ে কিন্তু সবসময় সাব বিষয়ের পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না, এটা লেখকদের দোষ নয়। দোষ আমাদের জীববিজ্ঞানের ব্যাকগ্রাউন্ডের অভাব, এছাড়া ধারাবাহিকভাবে প্রবন্ধগুলির বিন্যাসের অভাব (মৌলঙ্ক থেকে এডভান্সড এভাবে বিন্যস্ত করা গেলে ভাল হয়)।
তবে সৃষ্টিবাদীরা বিবর্তনবাদ খন্ডন করতে বিজ্ঞান না টেনে তাদের ডিজাইন আর্গুমেন্ট দিয়ে দায় সারতে চাইলে তার জবাব বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দিতেই হবে। এতে কোন ভুল নেই। সেটা আমিও মানি। শুধ
@আদিল মাহমুদ, আপনার সাথে আর বিতর্ক বাড়াবো না, এটাই আমার শেষ উত্তর। খালি কতগুলো কনফিউশনের উত্তর দিচ্ছি, না হলে আমার বা আপনার কথাগুলো পরিষ্কার হয় না। আপনার এই মন্তব্যটা কিন্তু কোনভাবেই প্রমাণ করে না যে আপনি বিবর্তনবাদ এবং প্রাণের উন্মেষকে পার্থক্য করেছিলেন প্রথমে। করলে বিবর্তনবাদের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চাইতেন না, যারা বিবর্তন ঠিকমত বোঝে তারা কখনই প্রাণের উন্মেষ এর কথা এর মধ্যে টানবেন না।
আপনি বলেছেন,
এ কথা তো আপনি তুললেন, বিবর্তন যারা বোঝে তারা তো তুলছে না, আমি তো প্রথমেই বলেছিলাম আমার বইতে এটা পরিষ্কারভাবে লিখেছি। তানভীওতো শুধু জটিল অঙ্গের কথা বলেছে, প্রাণের উন্মেষ নিয়ে তো কিছু বলেনি। প্রাকৃতিক উপায়ে জটিল অঙ্গের উদ্ভবের জন্য ইশ্বরের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই আর ইশ্বরের আস্তিত্ব আছে কি নেই এই দু’টো সম্পূর্ণ ভিন্ন আলোচনা। আপনি কিন্তু এদু’টোর মধ্যে পার্থক্য করছেন না।
তাহলে কারিগরের প্রশ্নটা কিংবা তানভীর প্রশ্নটা এখানে থাকবে, থাকলেই হল, কোথায় থাকবে সেটা প্রশ্ন নয়, এখনও যেহেতু ভাগগুলো করা হয়নি, এই সব প্রশ্নগুলো একসাথেই আছে। হয়েলের বোয়িং নিয়ে করা প্রশ্নটাও তো একই ধরণের প্রশ্ন। এই প্রশ্নগুলো ছাড়া বিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত প্রশ্ন এবং ভুল ধারণাগুলোর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আপনি ইংরেজীতে লেখা বিবর্তনের যে কোন টেক্সট বুক খুলে দেখুন, ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন এবং সৃষ্টিতত্ত্ববাদীদের খন্ডন করা হয়েচ্ছে তাতে।
আপনার সাথে এই প্রশ্নোত্তর অংশে বেসিক বায়োলজীর আলোচনার প্রসঙ্গ নিয়ে তীব্র দ্বিমত পোষণ করছি। বেসিক বায়োলজী পড়ার হোমওয়ার্কটা করে নেওয়ার দায়িত্ব বিবর্তনের পাঠকের, এই অংশের লেখকদের নয়। বাংলায় ভুরি ভুরি টেক্সটবুক আছে এসব নিয়ে। বিবর্তনের অনেক বইতেও বা লেখাতেও এ নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা করা হয়। কষ্ট করে কেউ যদি এই বেসিক ব্যাপারগুলো পড়ে না নেয় তাহলে তার জন্য বিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরগুলো বোঝা তো একটু কঠিন হবেই।
ভালো থাকবেন। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
বিবর্তনতত্ত্ব নিয়ে আলোচনায় সৃষ্টিবাদ আসবে কি আসবে না তা নির্ভর করছে আলোচনার উদ্দেশ্য কি বা আলোচনা কার উদ্দেশ্যে তার ওপর। বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে মুক্তমনায় যে পাতাটা সৃষ্টি করা হয়েছে, এর উদ্দেশ্য কিন্তু ভুল ধারণার খন্ডন, আর পাতাটা যাদের মধ্যে ভুল ধারণা আছে মূলতঃ তাদের উদ্দেশ্যে। এই আলোচনায় সৃষ্টিবাদ আর আই, ডি –র প্রসঙ্গ আসতে বাধ্য। কারণ, বেশির ভাগ ভুল ধারণার উৎস হচ্ছে সৃষ্টিবাদ বা আই,ডি – যা ধর্মীয় ধারণা থেকে উদ্ভুত।
আর একটা কথা, বাংলাদেশের মানুষেরা ধর্ম নিয়ে কোন আলোচনা থাকলে তা আর পড়বেন না, এই ভয়টাও আমার মনে হয় অমূলক। তা হলে মুক্তমনায় এতো পাঠক আসতেন না। ধর্মের প্রসঙ্গ অযৌক্তিক ভাবে এড়িয়ে বিবর্তন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করা, বিশেষ করে ভুল ধারণা নিয়ে, একধরনের অসততা মনে হয় আমার কাছে।
আর বিবর্তন তত্ত্বের আলোচনায় প্রাণের উৎপত্তি কিভাবে হলো তা নিয়ে কিছু বলা যাবে না এই দিব্যি কেউ দেয় নি। আসলে এই ব্যাপারটাকে বিবর্তন বিরোধীরাই অপ্রাসঙ্গিক ভাবে টেনে আনে এই বলে যে, “মানলাম বিবর্তন তত্ত্ব ঠিক, কিন্তু বিবর্তন তত্ত্বতো প্রাণ কিভাবে পৃথিবীতে আসলো তা বলতে পারে না”। ভাবখানা এমন যে, যেহেতু বিবর্তন তত্ত্ব এ নিয়ে কিছু বলবেনা বলে ঠিক করেছে, সেহেতু ঈশ্বরের অস্তিত্ব আর প্রাণ তারই সৃষ্টি তা অটোমেটিক্যালি প্রমাণিত হয়ে গেল। ব্যাপারটা কিন্তু তা নয় মোটেও। বিজ্ঞানের আরেক শাখায় প্রাণের উৎপত্তি নিয়ে কাজ চলছে এবং সৃষ্টিবাদীদের জন্য মনস্তাপের কারণ হলেও, এই কাজের পেছনে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অনুকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। প্রাণের উৎপত্তির তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা তর্কবিতর্ক আছে কিন্তু ঈস্বরের অস্তিত্বকে একটা সম্ভাব্য কারণ কেউ মনে করেন না। আর বিজ্ঞান কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারে নি বলে ঈশ্বরের ধারণাকে মেনে নিতে হবে এটা কোন যুক্তি নয়। তাহলে তো বায়োলজির সাথে সাথে সৃষ্টিবাদ পড়ানোর অযৈক্তিক আর উদ্ভট দাবীও মেনে নিতে হয়। এই দাবী যে, আজকাল আর হালে পানি পাচ্ছে না এতো জানা কথা। (কোন কিছু নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছে গেছেন এ দাবী সাধারণতঃ বিজ্ঞানীরা করেন না।)
জেরি কোয়েন তাঁর বইয়ের শেষের দিকে ‘নোটস’ সেকশনে প্রাণের উৎপত্তি সম্পর্কে বলেছেন,
“Opponents of evolution often claim that the theory of evolution must also explain how life originated, and that Darwinism fails because we don’t yet have the answer. This objection is misguided. Evolutionary theory deals only with what happens after life (which I’ll define as self- reproducing organisms or molecules) came into being. The origin of life itself is the remit not of evolutionary biology, but of abiogenesis, a scientific field that encompasses chemistry, geology, and molecular biology. Because this field is in its infancy, and has yet given few answers, I’ve omitted from this book any discussion of how life on earth began. For an overview of the many competing theories, see Robert Hazen’s Gen*e*sis: The Scientific Quest for Life’s Origin.”
Coyne, J. Why Evolution is True, Viking, 2009, p. 236.
@ইরতিশাদ,
:yes: চমৎকার উত্তর ইরতিশাদ ভাই। আসলে জীববিজ্ঞানের যে কোন পাঠ্যপুস্তকেই এখন বিবর্তন যে সৃষ্টির ডিজাইন আর্গুমেন্টকে বাতিল করে দেয় তা খুব পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা হয়। যেমন, মার্ক প্যালেনের ‘রাফ গাইড টু ইভলুশন’ নামে একটা বই আছে আমার হাতের কাছেই। সেখানে একটা সেকশনই আছে – ‘natural slection: Freedom from cosmic watchmaker’. । বাংলায় এই ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করতে হলে কারিগরের কথা আনতেই হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া আসলেই দ্বিচারিতা।
আর প্রাণের উৎপত্তির যে সামান্য কিছু অন্তিম রহস্য আছে তা বিজ্ঞানীরা বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেই সমাধান করছেন এবং করবেন, কোন অলৌকিক ব্যাখ্যা হাজির করে নয়।
@বন্যা আহমেদ এবং আদিল মাহমুদ,
পার্থক্য নিয়ে আমার মনে প্রশ্ন নেই। তারপরও বিবর্তনের নতুন ছাত্র হিসেবে আমি দুটোকে এক সাথেই দেখতে চাই শুরুতে। স্কুলের প্রথম পদার্থ বিজ্ঞানের বইতে সব অধ্যায়ই আমার চাই। যখন Honor ক্লাশে উঠব আলোক, চুম্বক, বেগ ইত্যাদির আলাদা অধ্যায় হলে আসুবিধা নেই। বিবর্তন পদ্ধতি বুঝতে গেলেই মনে প্রশ্ন আকুলি-বিকুলি করবে,
যদি হয়,
টা কিভাবে হল?
জানি এটা বিবর্তনের মত এখনও পরিষ্কার নয়। তবু কোন গবেষনা পত্র জানা থাকলে তা এখানে নিশ্চয়ই কেউ নিয়ে আসবেন।
আমার বিক্ষিপ্ত ভাবনা
কোন এক অতীত কালে বিস্তর সময় নিয়ে বিশ্ব সৃষ্টি হল। সৃষ্টির আদিতে ১০২টি মৌলিক উপাদান ছিল। তার মধ্যে কার্বন, অক্সিজেন আর হাইড্রোজেনই জীবের প্রধান উপাদান। সরল এককোষী প্রাণীতেও তাই ছিল। মূলতঃ তিনটি আলাদা উপাদান মিশে কিভাবে এককোষী প্রাণী হল?
nano, femto এমনকি yocto সাইজে উপাদান গুলোকে ভাবি। এই তিনের সাথে আরো অন্য উপাদান কণার মধ্যে ধীরে – অতি ধীরে রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া (বিস্ফোরণ নয়) ঘটতে থাকল এবং কণাগুলো নিজেদের মধ্যে সবিন্যস্ত হতে থাকল হাজার-লক্ষ বছর ধরে। আবার হাজার-লক্ষ বছর ধরেই এরা এক ধাপ থেকে আর এক ধাপে রূ্পান্তরিত হতে থাকল। ডারউইন দাঁড় করলেন বিবর্তন তত্ব।
আমি এককোষী প্রাণী সমন্ধে এভাবেই বিক্ষিপ্ত ভাবতে শুরু করেছি। :-X
@নৃপেন্দ্র সরকার,
দিলেন তো বিপদে ফালায়া!! এই প্রশ্নের উত্তর লেখার দায়িত্ব পড়েছিল আমার ঘাড়ে। কিন্তু এই দায়িত্ব ঘাড়ে নেবার পর থেকে আমার পেছনে গ্যঞ্জাম লেগেই আছে। এখনো পুরো পুরি গুছিয়ে উঠতে পারি নাই।
আপনাকে কিছুটা সাহায্য করা যেতে পারে। আপনি,
মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে এই ই-বুক এর ৪ এবং ৫ নম্বর অধ্যায় পড়ে নিতে পারেন। তাহলে অনেক কিছু পরিস্কার হবে। যদিও এগুলো এখনো পুরোপুরি প্রমানিত না, শুধুমাত্র তত্ত্ব। তবে এগুলো প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব।
@তানভী,
বিপদে ফেলতে পারি নাই। সঠিক উত্তরের জন্য ধন্যবাদ। বইটি আমার অনেক আগেই পড়া উচিত ছিল। এবারে পড়া হবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
ও আরেকটা কথা বাদ পরে গেছে। সেটা হল প্রাণের উৎপত্তির তত্ত্ব আর বিবর্তন তত্ত্ব কিন্তু দুটি আলাদা আলাদা তত্ত্ব। এদুটোর মাঝে সেতুবন্ধন আরোপ করা হয়েছে বা সেতু দেয়ার চেষ্টা চলছে। এখন আপনি যদি বলে বসেন যে, বিবর্তন তত্ত্বই কি প্রাণের উৎপত্তি ব্যখ্যা করতে পারে কিনা বা বিবর্তন তত্ত্বের দ্বারা প্রাণের উৎপত্তি ব্যখ্যা করা যায় কিনা, তাহলে বলতে হয় যে – না, বিবর্তন তত্ত্ব এখনো সে পর্যায়ে পৌছে নি।
আসলে আমার মতে বিবর্তন তত্ত্ব আসলে যেমন কোন ভবিষ্যৎবানী করতে পারে না, তেমনি এটা অতীত ব্যখ্যা করে না। এটা শুধু পথটা দেখিয়ে দেয়। এই পথ ধরে যেতে যেতে ভবিষ্যৎ কি হবে বা অতীতে কি ছিল তা ব্যখ্যা করার দায়িত্ব বিবর্তনের ঘাড়ে পরে না। প্রাণের উৎপত্তি আর এর পরবর্তী অনুষঙ্গ, যেগুলোর মাঝে একটা গ্যপ বা ফাঁকা যায়গা রয়ে গেছে তারা ভবিষ্যতে ভরে যাবে এবং আমাদের সংশয় গুলোর অবসান ঘটাবে সেই আশাই রাখা যায়।
@তানভী,
বিবর্তন ভবিষ্যতের খুঁটিনাটি অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে না পারলেও বিবর্তন কিন্তু বড় স্কেলের অনেক ভবিষ্যৎবানীই করতে পারে। আর অতীত এবং বর্তমানকে তো ব্যাখ্যা করতে পারেই। এ নিয়ে আমার বিবর্তনের পথ ধরে বইটাতে অনেক কিছুই লিখেছিলাম। আমাদের এই বিবর্তনের আর্কাইভেই এই নিয়ে একটা প্রচলিত ভূল ধারণা বা প্রশ্ন আছে। দুই জায়গায় একই কথা লিখতে ইচ্ছে করছে না, ওইখানে উত্তরটা লিখে এখানে লিঙ্ক দিয়ে দিব। আজকেই মনে হয় অভি এই প্রশ্নটার উত্তর লিখে ফেলবে।
বিবর্তন কখনো বৈজ্ঞানিক ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে না – এই দাবীর উত্তর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এখানে।
মতামত জানালে বাধিত হব।
@অভিজিৎ,
ভাইয়া এবার পরিস্কার হল।
তবে আমি আসলে যেই বোধ থেকে এই কথা বলেছিলাম সেটা ছিল সরল ভবিষ্যৎ বানীর বোধ। অর্থাৎ প্রাণী জগতের ভবিষ্যৎ বলে দেয়া, বর্তমানের প্রাণীজগৎ ভবিষ্যতে কি রূপ নেবে বা কিভাবে বিবর্তিত হবে সেটা বলা। আর অতীতের ব্যপারেও যেটা বুঝাতে চেয়েছি তা হল বিবর্তন অতীতের সময়ের বিভিন্ন পরিস্থিতি ব্যখ্যা করতে পারে না। অর্থাৎ কোন পরিস্থিতি তে কোন প্রাণীর উদ্ভব হয়েছিল অথবা সুনির্দিষ্ট কোন কারনে কোনো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়েছিল অথবা কিভাবে কোন মিউটেশনের কারনে প্রজাতি পরিবর্তিত হল তার ব্যখ্যা।
যাই হোক, আমার কথাটা আসলেই একটু বোকার মত শোনাচ্ছে, কারন আমার দাবী মত এরকম পরিস্কার করে ভবিষ্যতের কথা বা অতীতের কথা বলা বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব বা সুত্রের পক্ষে সম্ভব বলে মনে হয় না। সাধারন সময়ের ইতিহাসই সঠিক ভাবে অতীতকে ব্যখ্যা করে না! আর এখানে এই কাহিনীতো অনন্ত সময়ের হালচাল! 😛
@তানভী,
এর সঠিক উত্তর Nano Chemistry একদিন দেবে। সেদিন সৃষ্টিতত্ত্বের বিনাশ হবে।
অবশ্য আমি সঠিক করে বলতে পারব না। বন্যা আহমেদ এবং অভিজিতের বই গুলো আগে শেষ করতে হবে।
তানভী, ধন্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ,
মামু, আমার প্রশ্ন নিয়েই যেহেতু গ্যঞ্জামের সূচনা। তাই উত্তরটাও আমিই দেই। অন্যদের গুলো হজম কইরেন না। দরকার নাই।
ধর্মের সাথে বিতর্কে জড়ানো আসলে আমার কাছেও পছন্দ না। কারন এটা সম্পুর্ন অহেতুক বিতর্ক। তাই আমিও চাই না যে এটাইপের প্রশ্ন গুলা আসুক এবং আমরা বারবার সেই বৃত্তাকার পথে পাক খেতে থাকি। আসলে এই প্রশ্নগুলো দেবার পেছনে আমার একটা উদ্দেশ্য আছে।
সেটা হল, এই ভার্চুয়াল জগত ছেড়ে বাস্তব জীবনে যখন আমি বন্ধুদের সাথে মিশব চলাফেরা করব,তখন ধর্ম সংক্রান্ত ব্যপারগুলো আমার চারপাশে ঘুরঘুর করবে। আমি বলতে গেলে খুব চুপচাপ টাইপের একটা ছেলে, সহজে কারো সাথে বিবাদে যাই না। কিন্তু একটা সময়ে হয়তো বিবাদে যেতেই হবে। তখন এই প্রশ্নগুলো আমাকে জর্জরিত করার কাজে ব্যবহৃত হবে। তখন যদি আমি এগুলোর উত্তর না জানি, তাহলে আমার মুখ বন্ধ হয়ে যাবে এবং এর সুযোগ অন্যরা নেবে। তাই এগুলো আগাম প্রস্তুতিও বলতে পারেন। তাই আমিও খুঁজে খুঁজে এটাইপের প্রশ্নগুলোই দিতে চেষ্টা করব,যাতে করে পরবর্তিতে কারো সামনে আমাকে ঠেকে না যেতে হয়।
এরপরও আবার ধরেন আমাদের মতই কাউকে কাউন্সিলিং করতে, যারা কিনা সামাজিক কারন সহ অন্যান্য অনাচারের কারনে ধর্ম ছেড়েছে কিন্তু বিজ্ঞান সম্পর্কে জানে না বলে খুঁটি নড়তে সময় লাগবে না তাদের জন্যও এই প্রশ্নগুলো জরুরী।
আর আমাদের দেশে বিবর্তনতত্ত্ব আসলে এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে তাকে চারপাশ থেকে ধর্মের রশিগুলো পাকিয়ে একদম বেধে দলা বানিয়ে রেখেছে। তাই ঐ রশি না কেটে তো বের হবার উপায় নেই!! হাতের বাঁধন খুলতে হলে রশি কাটতেই হবে!
আর সমস্য হচ্ছে, বিবর্তন তত্ত্ব কোন ধর্মের সাথে বিরোধে যায় না! সে একেবারে ঈশ্বরের কান ধরে টান মারে! ঈশ্বর থাকুক বা নাই থাকুক-ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনার যে কেউ নাই সেইটাই বিবর্তন প্রমাণ করে। হয়ত ঈশ্বর আছেন!! তিনি আন্ধা কালা বোবা সেজে ঘাপটি মেরে আছেন!! তার হাত ঠ্যাং পাও কিচ্ছু নাই!! এরকম হইলে ওক্কে, আমরা রাজি!! 😀
আর এধরনের প্রশ্ন আসলে খুব বেশি নেই। যে কয়টা আছে, সেকয়টাই ঘুরে ফিরে আসে। তাই একয়টা শেষ হয়ে গেলে,তখন আর আমাদের এসব নিয়ে মাথাব্যথা করতে হবে না। তখন আমরা আরো গভীরে আপনাআপনিই চলে যেতে পারব। তখন আরো জটিল জটিল সব প্রশ্ন আসবে। তাই প্রথমে তো কিছু ধাক্কা সইতেই হবে। 🙂 :rose2:
@তানভী,
কথা সত্য, আমি তোমার কথা ছাড়া অন্যদের কথায় তেমন কান দেই না 😀 ।
তোমার কথায় যুক্তি আছে। তবে মামু, আমার কাছে কেউ বিবর্তনের আর্গুমেন্টের কাউন্টার হিসেবে ধর্ম নিয়া টানাটানি করলে প্রথমেই আমি বলি যে ধর্মে কি বলল না বলল তা আমি বিজ্ঞানে জানি না, জানতে চাই ও না। বিজ্ঞানে যা প্রমানিত আমি সেটাই বুঝি। থিয়োরী অফ রিলেটিভিটি কি খুব সহজ বিষয়? সেইটা ব্যাখায় কেন তাহলে বিজ্ঞানের শরনাপন্ন হতে হয়? ধর্ম দিয়া কেন ব্যাখ্যা করা হয় না? বোরাকের কাহিনীর সাথে টাইম ডাইলেশন মিলায় ঝুলায় তো একটা ধর্মীয় সহজ ব্যাখ্যা দাঁড় করায় ফেলাই যায়। এইরকম বিজ্ঞানের সব তত্ত্ব তালাশই তো আর কষ্ট করে গবেষনায় না গিয়ে আল্লাহ চান তাই হয় এ জাতীয় ব্যাখ্যা দিয়ে সমাধান দেওয়া যায়। সেটা কেন করা হয় না? বিজ্ঞানের কাছে তো কোন তত্ত্বই ব্যাখ্যা করার জন্য গডের শরনাপন্ন হতে হয় না, আজ পর্যন্ত হয়েছে বলে জানি না। তো এখানেই বা ব্যাতিক্রম কেন হতে যাবে? বিবর্তন তর্কে গড টান দিলে এই কথা বলে দিবা।
আমি সোজা কথায় বুঝি, প্রকৃতির অগুনতি রহস্য আছে। বিজ্ঞানের কাজ সেই রহস্যগুলি কোন নিয়মে চলে সেই নিয়মটা মাথা খাটায় বাইর করা। এখন এই সব রহস্য কে সৃষ্টি করে দিয়ে গেছে বা আদৌ কেউ দিছে নাকি তা নিয়ে বিজ্ঞান মাথা ঘামাইতে যায় না, সেইটা নিয়া ধর্ম লাফালাফি করতে পারে। তবে সেই সব রহস্য ভেদ করে নিয়মটা বের করা ধর্মের আওতায় না, বিজ্ঞানের আওতায়।
বিবর্তনের সাথে ধর্মের সংঘাত অনিবার্য, এড়ানো খুব কঠিন এইটা বুঝি। কিন্তু তাই বলে নিজেরা আক্রান্ত না হলে ধর্মের উপর এটাকিং মুড এ যাওয়া উচিত না, এইটাই আমি মনে করি। আমি নিজে আল্লাহয় বিশ্বাস করি বলে বলছি তা না। বেহুদা বিতর্ক সমালোচনা এড়ানোর জন্যই এই নীতির পক্ষপাতি। আমি চাই না মুক্তমনার বিজ্ঞান চর্চার ফালতু সমালোচনা শুনতে। মুক্তমনারা বিজ্ঞানের ছদ্মবেশে নাস্তিকতার চর্চা করছে, প্রচার করছে। যদিও আমার তাতে আপত্তি নাই, কেউ বিজ্ঞান ব্যাবহার করে ধর্ম ডিফেন্ড করতে চাইলে উল্টাটাও করা যেতেই পারে। তবে সেইটার বিভাগ হওয়া উচিত ভিন্ন, বিজ্ঞান বিভাগ না।
আমি দেখতে পাচ্ছি এই বিভাগ অচিরেই প্রবল জনপ্রিয় হবে, দেশেরও মিডিয়াতে ধীরে ধীরে হলেও এর কথা উঠবে। তাই আজেবাজে সমালোচনার ব্যাপারে অগ্রিম সতর্ক থাকা উচিত বলেই মনে করি।
@আদিল মাহমুদ,
ধুরো। আসেন এই বাহাস বন্ধ কইরা নতুন প্রশ্ন খুঁজি। আমারে উত্তর লেখার দ্বায়িত্ব দিলো, আর আমার মাথায় খালি প্রশ্ন আসে!! উত্তর লেখা শুরু করলেই কারেন্ট যায়গা!! 🙁
যা হোক, উত্তর লিখতে গিয়েই আরো কয়টা প্রশ্ন মাথায় আসল। একই টাইপের প্রশ্ন মনে হতে পারে। তবুও দিয়ে দেই।
৭- বিবর্তনের ফলেই যদি সব প্রানীর উদ্ভব তবে তাদের খাদ্য গ্রহনে এত ভ্যারিয়েশন সৃষ্টি হল কেন? একেক প্রাণীর খাদ্য একেক রকমের কেন?
৮-আমরা কেন বেঁচে থাকার জন্য উদ্ভিদ প্রজাতির উপর নির্ভরশীল হলাম? বা, প্রাণী জগৎ কেন বিবর্তনের ফলে নিজের খাদ্য নিজে উৎপাদনের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হল?
৯-বিবর্তনের ফলেই যদি এককোষী থেকে বহুকোষী প্রাণীর সৃষ্টি হয়ে থাকবে, তবে অতি সরল এক কোষী থেকে সরল বহুকোষী না হয়ে অতি জটিল বহুকোষীতে বিবর্তিত হল কেন? অর্থাৎ এত জটিলতা কিভাবে আসল?
১০- ডিএনএ, জিন এসব জটিল গঠনের কি দরকার ছিল? কেনইবা এগুলো আসল? এবং কিভাবে?
১১-একই প্রজাতির ভেতরেও বিভিন্ন অনেক সুক্ষ সুক্ষ বিষয়ে পার্থক্য সৃষ্টি হল কেন? অর্থাৎ মানুষের আঙুলের ছাপ, চোখের স্ক্যান এসব বিষয়ে পার্থক্য আসার কারন ও প্রয়োজনীয়তা গুলো কী?
খালি গিয়াঞ্জাম লাগাই!! 😛
অসাধারন একটা কাজ হয়েছে নিঃসন্দেহে। যতটুকু পারি সাহায্য করব কথা দিচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ এই চমৎকার একটা উদ্যোগের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। আমার মনে হয় এটাই হবে বাংলা ভাষায় প্রথম বিবর্তনের জন্যে তৈরী কোন ব্লগ।