কনফিউজড এক জাতির গল্প
পৃথিবীতে আমরাই বোধহয় একমাত্র জাতি যাদেরকে বলা যেতে পারে সবচেয়ে কনফিউজড জাতি। আমরা নিজেরাই জানি না যে আমরা কে। আত্ম-পরিচয়ের সন্ধানেই কেটে যাচ্ছে আমাদের সারাটা জীবন। বাংলাদেশের জন্মের এতো বছর পরেও আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে পারি নাই যে আমাদের জাতিসত্তা আসলে কি। আমরা কি ধর্ম নিরপেক্ষ বাঙালি, নাকি মুসলিম বাংলাদেশি। আমাদের এক অংশ লোকজ ঐতিহ্যের প্রতি গভীরভাবে শ্রদ্ধাবনত, বাংলার কোমল মাটি থেকে উঠে আসা হাজার বছরের সংস্কৃতিকে আপন ভেবে বুকে টেনে নিতে চায়। আরেক অংশ একে হিন্দুয়ানী বলে ছুড়ে ফেলে দিতে চায় আস্তাকুড়ে। তাদের কাছে দূর কোন অচেনা আরবদেশের শুষ্ক মরুর সংস্কৃতিকেই মনে হয় অনেক বেশি চেনা, অনেক বেশি আপন। আম, জাম, লিচুর চেয়ে খোরমা, খেজুরকেই মনে হয় অনেক বেশি রসালো। শ্যামল গায়ের কাঁঠাল গাছের ছায়ার চেয়ে মরুদ্যানের খেজুর পাতার ছায়াকে মনে হয় অনেক বেশি আরামদায়ক । পদ্মার স্ফটিকের মত স্বচ্ছ পানির চেয়ে জমজমের ঘোলা পানিকেই মনে হয় অনেক বেশি উপাদেয়। দূর কোন দেশের অজানা অচেনা মুসলমানকে যেখানে মনে হয় একই মায়ের পেটের ভাই, সেখানে একই ভাষায় কথা বলা, একই মাটির সন্তান ঘরের পাশের হিন্দু খ্রীস্টান বা বৌদ্ধকে মনে হয় বিজাতীয় কোন ঘৃন্য পশু। কোথাকার কোন বাবরি মসজিদ ভাঙার ক্রোধ এবং প্রতিহিংসায় আমরা নির্দ্বিধায় ছুরি চালিয়ে দেই প্রতিবেশী হিন্দুর গলায়। জিহাদি জোশে ধর্ষণ করি তাদের বুড়ি থেকে ছুড়ি সব মেয়েদের।
আমাদের এই কনফিউশন কিন্তু আজকে থেকে নয়। সেই সুদূর কাল থেকেই চলে আসছে আমাদের এই বিভ্রম বা মতিভ্রম। আমাদের এক অংশ নিজেদেরকে মুসলমান ভেবে সরিয়ে রেখেছে অন্য অংশের কাছ থেকে। তাদের কাছে আরব দেশের সামান্যতম সংযোগই ছিল শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি। আনন্দ এবং গর্বের চরম উৎস। এই দেশে থেকেও এদেশের কোন কিছুর সাথেই নিজেদেরকে আপন করে নিতে পারে নি তারা। সে কারনেই আমরা দেখি আমাদের এক শ্রেণীর মুসলমানদেরকে আরব দেশ থেকে হিজরত করা সৈয়দ বা খোন্দকার বলে গর্ব এবং অহংকারের সাথে নিজেদের পরিচয় দিতে। বাঙালিত্ব তাদের কাছে নিদারুন অনাদর ও অবহেলার পাত্র, ক্ষেত্র বিশেষে চরম ঘৃণারও বিষয়। এদের মধ্যে অনেকেই হিন্দুয়ানী বাংলায় কথা বলতেও লজ্জ্বা বা ঘৃণাবোধ করতেন। আরবী, ফার্সি বা উর্দুর মত মুসলমানি ভাষাতে কথা বলেই দিলের সুখ মিটাতেন তারা। শত শত বছর বাংলায় বসবাস করেও নিজেদেরকে কখনোই বাঙালি মনে করেননি তারা।
এরই ফলশ্রুতিতে সাতচল্লিশে ভারত বিভাগের সময় এই বাংলায় আমরা দেখি চরম বিশৃঙ্খলা। একদল নিজেদেরকে বাঙালি বলছেতো, আরেকদল নিজেদেরকে পরিচয় দিচ্ছে মুসলমান বলে । বাঙালি আর মুসলমানের এই ঘোরতর দড়ি টানাটানিতে বেচারা বাঙালিরা খুব সুবিধা করতে পারে নাই তখন। নাকে খত দিয়ে মুসলমান হয়ে লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান বলে পাকি ভাইদের সাথে গলায় গলায় এক হয়ে সাচ্চা মুসলমানদের এক দেশ গড়ে তোলে তারা। তবে আরবের মরুভুমিতে বালি ঝড় হলে এই খানে এই বাংলাদেশে কাদামাটিতে উটের মত মাথা গুজলেও বাঙালি মুসলমানদের মুসলমানিত্ব নিয়ে পাকি ভাইদের যথেষ্টই সন্দেহ ছিল শুরু থেকেই। তাইতো পাক ভাইয়েরা বুড়াকালে খৎনা করার মত বাঙালি মুসলমানদের নাপাক অপ্রয়োজনীয় বাড়তি জিনিষপত্র কেটে বাদ দিতে চেয়েছিল। হিন্দুয়ানী ভাষা বাংলায় কথা বলা যাবে না, মুসলমানদের দিয়ে রবীন্দ্র সংগীত লেখাতে হবে এই সব বাহানা নিয়ে একের পর এক হাজির হয় তারা। খৎনা করার ভয়েই কিনা কে জানে কিছু লোকের মধ্যে হঠাৎ করেই বাঙালিত্ব জেগে ঊঠে আবার। শুরু হয় নিজেদের বাঙালি প্রমানের সব ধরনের প্রচেষ্টা। ভাষার জন্য রক্ত দেয়া থেকে হেন কোন কাজ নাই যা তারা করেনি বাঙালি হওয়ার জন্য। শেষমেষ বেশ বড় সড় একটা যুদ্ধও করে ফেলে তারা পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে। সেই যুদ্ধ শুধুমাত্র পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধেই ছিল না। এদেশের জল হাওয়ায় বড় হওয়া কিন্তু মনে-প্রাণে পাকিস্তানী একদল লোকের বিরুদ্ধেও করতে হয়েছিল। অবশেষে অসংখ্য মানুষের প্রাণ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালী পেয়েছিল তার নিজস্ব দেশ।
কিন্তু স্বাধীন দেশ পাওয়ার মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের বাঙালি হওয়ার খায়েশ মিটে গেল চিরতরে। যে পাকিস্তানীরা তাদের সর্বশক্তি দিয়েও আমাদের খৎনা করতে পারে নাই, সেই আমরাই এবার নিজেরাই হাজামের কাছে গিয়ে স্বেচ্ছায় লুঙ্গি উচিয়ে ধরে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে নিয়েছি। বিসমিল্লাহ বলে হিন্দুয়ানী বাঙালিত্বকে বিসর্জন দিয়ে মুসলমান বাংলাদেশী হয়ে গিয়েছি পাকাপাকিভাবে।
বাংলাদেশী হওয়ার পর থেকে আমাদের অবশ্য আর কোন সমস্যা নেই, ইনশা আল্লাহ। ঈমানের জোর বেড়ে গেছে অনেক বেশি আমাদের এখন। আমাদের যে সব ভাইয়েরা একাত্তর সালে মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় দালাল বুদ্ধিজীবিদের ধরে ধরে আল্লাহ আকবর বলে জবাই করতেন তারা আবার সগর্বে ফিরে এসেছেন। দেশ স্বাধীনের পর তারা সাময়িকভাবে কিছুটা বিপদে পড়েছিলেন। বিচ্ছুদের ভয়ে ইঁদুরের মত গর্তে লুকাতে হয়েছিল কিছু দিনের জন্য। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে তারা আবার বীর বিক্রমে ফিরে এসেছেন। সরকারের মন্ত্রী মিনিষ্টার হচ্ছেন তারা, দামী দামী গাড়িতে চড়ছেন। যে পতাকাকে আতুড় ঘরে মারতে চেয়েছিলেন সেই পতাকাওয়ালা গাড়িতে চড়েই সবার সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। এই যে নতুন জলপাই সরকার, যাদের দাপটে বাঘে ছাগলে সব এক ঘাটে পানি খাচ্ছে। তারেক জিয়ার মতো মহাচোর ছিচকে চোরের সাথে একই রুমে ঘুমাচ্ছে। হুদা মিয়া, ফালু মিয়ারা মালির কাজ করছে। চির বৈরি হাসিনা-খালেদা এক হাড়ির খাবার খাচ্ছে। সেই সরকারও তেনাদেরকে সৎ বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন। কাজেই আর পায় কে তেনাদের। সেই সাহসে বলিয়ান হয়েই তেনাদের কেউ কেউ এখন দাবী করছেন যে একাত্তর সালে কোন যুদ্ধপরাধীই ছিল না। যুদ্ধাপরাধী থাকবেই বা কিভাবে? সাধারনত যে কোন যুদ্ধেরই পরাজিত অংশের মধ্য থেকেই যুদ্ধাপরাধী বেছে নেওয়া হয়। একাত্তর সালের যুদ্ধের বিজয়ী পক্ষ যে পালটে গেছে এটা এখনো কিছু লোকের মাথায় ঢোকেনি ঠিকমত। তাইতো তারা এখনো এই সব ঈমানদার ভাইদেরকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে বিবেচনা করছে। দিনকাল যে পালটে গেছে তা তো আর তারা জানে না। রিমান্ডে নিয়ে একটু দলাই মলাই করে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রফেসর আনোয়ারের মত বাপ বাপ করে মাফ চেয়ে কুল পাবে না বেটারা।
কনফিউশনের সব উপাদানই বাংলাদেশে ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে আছে আমাদের চারপাশে। দেখুন আমাদের ইতিহাস বই। সূর্যসেন, প্রীতিলতার নাম গন্ধও খুঁজে পাবেন না সেখানে। মালাউনরা হবে আমাদের জাতীয় বীর। তওবা, তওবা, নাউজুবিল্লাহ। তাই বলে কি আমাদের কোন জাতীয় বীর নেই। নিশ্চয়ই আছে। আমাদের জাতীয় বীর হচ্ছেন ইখতিয়ার উদ্দীন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজি নামের এক ভিনদেশি তস্কর। ঘোড়ায় চড়ে নাঙ্গা তলোয়ার হাতে মানুষের মুন্ডু কেটে কেটে হিন্দু রাজা লক্ষ্মন সেনকে চোরের মত খিড়কি দিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল সে। এই রকম গ্লামারাস বীর থাকতে আর কাউকে লাগে নাকি। এতো গেলো অনেক আগের ইতিহাস। সাম্প্রতিক ইতিহাসও দেখুন। শেখ মুজিব কে? ভারতের দালাল। দেশটাকে ভারতের কাছে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল। কি সর্বনাশের কথা। শহীদ জিয়া কে? স্বাধীনতার ঘোষক, দেশের রক্ষাকর্তা, বাংলাদেশী জাতির জনক। চট্টগ্রামে তেলের ড্রামের উপর দাঁড়িয়ে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন। আহা! কি সৌন্দর্য।
ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়ে পুরোদস্তুর মুসলমান বনে যাই আমরা প্রায়শই। পাকি ভাইদের জন্য জানপ্রাণ ফাটিয়ে ফেলি তখন। পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে উথাল পাথাল নাচানাচি শুরু করে দেই। কেউ প্রশ্ন তুললে বলে দেই মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই, তাইতো আমাদের এই হইচই। তবে কানে কানে বলে রাখি, অন্য কোন মুসলিম দেশ হলে অবশ্য এতো মাতামাতি করি না আমরা। পাকিস্তান হলেই শুধু এই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট দেই। এই যেমন কোন পাকি ভাইকে দেখলেই বিগলিত হয়ে যাই আমরা। কোলাকুলি করার জন্য আনচান করে উঠে বুকটা। উর্দুতে কথা বলার জন্য মনটা আকুলি বিকুলি করতে থাকে আমাদের।
যারা আজকে মুজাহিদ বা শাহ হান্নানের কথা শুনে প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন তাদের জন্য বলছি, এই ধরনের কথা শুধুমাত্র এই দু’জনই বলেন না। এই পরবাসে একসময় অনেক পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়েছি আমি। সেখানে দেখেছি অনেক লোকই নিজামী মুজাহিদ গংদের চেয়েও মারাত্মক সব কথাবার্তা বলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে। সেই সব অনুষ্ঠানে খুব কম লোককেই আমি দেখেছি সেগুলোর প্রতিবাদ করতে। বরং বেশিরভাগ লোককেই মাথা দুলিয়ে তাদের কথাকে সমর্থন করতেই দেখেছি। এই সব লোকেরাই যদি আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অত্যন্ত অসম্মানজনক কথা বলতে পারে তাহলে নিজামী মুজাহিদের মত কুখ্যাত আলবদর আল শামসরা যে এগুলো বলবে এটাইতো স্বাভাবিক।
সত্যি কথা বলতে কি জাতি হিসাবে আমাদের কোন মর্যাদাবোধই নেই। ছিলও না বোধহয় কোনকালে। বাঙালি হিসাবে আমরা কখনোই নিজেদেরকে গর্বিত ভাবি নি। আদৌ বাঙালি ভাবি কিনা সেটা নিয়েই আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। নিজেদের নিয়ে সবসময় অদ্ভুত এক হীনমন্যতায় ভুগি আমরা । আত্ম-পরিচয়ের গভীর সঙ্কটে ভুগছি আমরা অনেক অনেক যুগ ধরে। কোনটা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আর কোনটা উড়ে এসে জুড়ে বসা তার পার্থক্য করতেও অক্ষম আমরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উড়ে এসে জুড়ে বসাটাকেই নিজের বলে ভেবে নেই। অন্যেরাতো আমাদের সম্পর্কে অপমানসূচক কথাবার্তা বলেই, আমরা নিজেরাও কম বলি না নিজেদের সম্পর্কে। যতদিন পর্যন্ত না আমাদের আত্ম-পরিচয়ের এই সংকট কাটবে ততদিন পর্যন্ত নিজামী-মুজাহিদদের মত খুনি, ধর্ষক, যুদ্ধাপরাধীরা যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে এই দেশে, যা খুশি তাই করে যাবে এই মাটিতে। আঙুল চোষা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না আমাদের।
ছাগলের ৩ নাম্বার বাচ্ছা ও বাঙালীর ভাগ্য
কনফিউজড জাতি ফরিদ আহমেদ সত্যই বলেছেন।
যে জাতি ঐতিহাসিক ভুল করে তারতো ভাই ধংবস হয়ে যাওয়ার কথা। ৪৭ সনে কি এক আত্নগাতী সিদ্বান্ত বাঙালী নিয়েছিল? পাকি ইজম কি এক ভ্রান্ত ধারনা, খোদ ফাকিস্তানীরা পর্যন্ত পছতাইতেছে অথছ বাংলাদেশী পাকিদের আজ পর্যন্ত ঘোর কাটল না। সত্যই কনফিউজড জাতি!!!!!!
জিন্নাহর মত মনে প্রানে একজন নন-মুসলীমের হাত ধরে মুসলমানের দেশ বানানোর স্বপ্প বেকুব কি আর গাছে ধরে, না “ব” নামক দেশেই পাওয়া যায়? দেশ ভাগ হল- ভারত ফাকিস্তান নামে ইহাতে বাংগালীর কি বেনীফিট, এতোটুকু ভাবনার মত আমাদের নেতাদের দৃরদর্শীতা হলনা। শুধু ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্ছার মত লাফায়েছিল লরকে লেঙ্গে ফাকিস্তান। ট্রেজারির অর্থ-সম্পদ ভাগাভাগি করলো পাকি-ইন্দো আর বেকুব বাঙ্গালী পেল ২৪ বছরের বর্ধিত গোলামী। ২০০ বছরের ইংরেজী গোলামীতেও স্বাদ মেটেনী। কনফিউজড নয় আমরা আন্তগাতী জাতি, ছি আমরা আন্তগাতী জাতি ।:-Y :-Y :-Y :-Y
অনেক দিন আগে একটা কবিতা লিখেছিলাম, এখানে সংযোজন করার লোভ সামলাতে পারলামনা ।
ব নামা
তোমাতে আমাতে পাঠানো হয়েছে, ব নামাক্ক এই দ্বীপে
নিশ্চয়ই কোন উদ্দেশ্য সাথে নিয়ে।।
দেহের গড়নে আঁচার আচরণের আবরণে মুড়ে
পাঠানো হয়েছে ব নামাক্ক এই দ্বীপে
সত্যিই অনেক উদ্দেশ্য সাথে নিয়ে।।
ঊনবিংশ শতকের রবীন্দ্র নজরুল
বঙ্গবন্ধু আর নেতাজীর এই দেশে।
একবিংশে এসে বেদা বেদের মোহে
কারা আজ পিসে কোন সেই উদ্দেশ্য সাথে নিয়ে
ব নামাক্ক এই দ্বীপে।।
গঙ্গাকে সাথে নিয়ে সেন মুখারজিরা আজ
আছেন যে বেশ নিজ অস্তিত্ব ভুলে
পদ্মাকে মিত করে মিয়া উদ্দিনরা যে গেছেন ফেসে
সিডর নারগিস্রা আজ সদা তাড়া করে ফেরে
হা হা কোন সেই উদ্দেশ্যের ভুলে।
মৌলবাদকে পুঁজি করে স্বার্থ সিদ্বির
আখের গোছায়ে বর্তমানকে আজ করছ্ কল্নকীত।
তোমাতে আমাতে ভুলের খেসারত দিতে
অনাগত ভবিষ্যত যে শুধু করবে হাহাকার
কোন সেই উদ্দেশ্যের ভুলে ব নামাক্ক এই দ্বীপে।।
কনফিউশনের একটা ছবি দেই:
আজকে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল আই ক্ষুদে গানরাজের একটা বিশেষ পর্ব প্রচার করল। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জমজমাট আনন্দানুষ্ঠান। ঢুলিরা ঢোল বাজাচ্ছে, মেয়েরা সবাই বৈশাখী সাজে সেজেছে, ছেলেরা বাঙালি কেতায় ভাব ধরেছে, নামকরা গায়েন বায়েন দর্শক সবাই আনন্দে টাগ ডুমা ডুম ডুম। বিচারকরাও গান করে উঠল। তালি চলছে……………
……………বিচারক ফেরদৌস আরা মহানন্দে বাংলা নববর্ষের বৈশাখী গান গেয়ে উঠলঃ
………… মোমের পুতুল মমির দেশের মেয়ে নেচে যায়………সাহারা মরুর পাড়ে………খজ্জুর বীথির ছায়ে……ইত্যাদি ইত্যাদি।
এই গান টুটুল, সামিনা, দর্শক, উপস্থাপক শুনে সবাই সেই গান দুলে দুলে শুনে সে কি হাততালি…………… :-Y
@কাজী রহমান,
এতে সমস্যাটি কি? মিশরের ইমাজেরির প্রশংসা মানেই এই নয় যে তারা আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়েছে। গানটি কার লেখা, নিশ্চয়ই জানেন।
@রৌরব,
অনুষ্ঠানটি হচ্ছিল বাংলা নববর্ষ বরণের, বৈশাখের। আপন দেশের বা জাতির প্রশংসা করতে বিষয়ের কি এতই অভাব পড়ে গেল? নজরুলের লেখার ব্যাপারে কিছু বলা হইনি, বলেছি বিষয় উপযুক্ত গান নির্বাচন নিয়ে।
খুবি সত্যি কথা। আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমনের পরের ঘটানা। আমরা কয়েকজন মিলে কাপ্তাই গিয়েছিলাম অনেকটা পিকনিকের মত করেই। আমাদের সাথে কিছু মেয়েও ছিল। তার মধ্যে ছিল কয়েকটা হিন্দু মেয়ে।কাপ্তাই থেকে ফেরার পথেই আমাদের বাস টা অনেকটা পথ পার হয়ে এসে আটকে যায়।ব্যাপার কি বুঝার জন্য অতি উৎসাহে জানলা দিয়ে মাথাটা গলিয়ে বের করে দেখার চেষ্টা করি ঘটনা কি। এর পর যা দেখলাম ও শুনলাম তাতে আমি প্রচন্ড ভীত হয়ে পড়ি অবশ্য নিজের জন্য নয় হিন্দু মেয়ে গুলার জন্য। দেখলাম মাদ্রাসা ছাত্রদের বিশাল মিছিল মুখে ফেনা তুলে এগিয়ে আসছে-“আমরা সবাই তালেবান বাংলা হবে আফগান” “ধর ধর কাফের ধর”- এই স্লোগানে। মিছিল টা যখন আমাদের বাসের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিল তখন হঠাৎ মিছিল থেকে রব উঠল-“বাসে কোন হিন্দু মেয়ে আছে কি না দেখ” বলে।
তখন হিন্দু মেয়েগুলার মানসিক আবস্থ কি হয়েছিল তা আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। বাসের কন্ট্রাক টার দ্রুত বাসের দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় সে যাত্রায় কোন অঘটন ঘটার সুযোগ হয় নি।
আপনার এই লেখাটি খুবি চমৎকার বাস্তব সম্মত যুগ উপযোগী লেখা।
@রাজেশ তালুকদার,
বাংলাকে আফগান বানানোর সুযোগ না দিয়ে, এগুলোকে বরং ধরে ধরে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া যেতে পারে। তারাও সুখে থাকলো তাদের প্রিয়দেশে গিয়ে, আমরাও শান্তিতে থাকলাম এইসব উৎকটদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে।
ভাল লাগল সমকালীন বিষয়ের ওপর লেখাটা!
আমার মনে হয় এখন বাঙালি আর কনফিউজড নয়!
আমার অভিজ্ঞতা বলি, অনেকে আগে (২০/৩০বছর) বলত আমার
পূর্বপুরুষ বাগদাদ, ইরান থেকে এসেছে এখন বলেনা।
অপমানিত হওয়ার ভয়ে।
আগে বাঙালি তাদের ইতিহাস নিয়ে মাথা ঘামাত না জানতও না।
তবে ইদানীং কিছু গবেষক(গোলাম মুরশিদ, মুস্তফা নূরউল ইসলাম সম্পাদিত,
সুকুমার সেন রা) এ বিষয়ে লেখার ফলে সচেতন বাঙালিরা তাদের উৎস জানছে।আর ক’জনই বা এসব বই কিনে পড়ে!
আমি জাতি হিসেবে বাঙালিত্ব নিয়ে আশাবাদী!
বাংলাদেশের সবখানে অসাম্প্রদায়িক বৈশাখ পালন বিপুল সমারোহে বাড়ছে।
দেশে সবাই নিজেদের বাঙালি ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিতই মনে হয়!
যেটা আগে চোখে পরত না।
টি সার্টে বাংলা কবিতা। প্রতি ঋতুতে আলাদা শাড়ী ও জামা কাপড় বাংলার ঐতিহ্যই তুলে ধরছে।আমাদের শেকড় নিয়ে সব জায়গাতেই কাজ হচ্ছে।
এসব মনে অনেক আশা ভরসা বয়ে আনার মতই !
@লাইজু নাহার,
এই অংশটাকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই অংশের বাইরে বিরাট একটা অংশ আছে যারা পুরোপুরি সাম্প্রদায়িক। ধর্মীয় জাতীয়তাবোধকে প্রাধান্য দেয়, ভাষাভিত্তিক জাতীয়তার উপরে। এদের কাছে বাঙালিত্ব মোটেও আদরণীয় কিছু নয়। সে কারণেই এরা কপালে, কপোলে পাকিস্তানের পতাকা এঁকে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যায় তাদের পাক-সাফ মুসলমান ভাইদের।
যেই জন বঙ্গে জন্মে হিংসে বঙ্গ বাণী
সেই জন কাহার জন্ম নির্নয় না জানি।
(আব্দুল হাকিম)
হবেই না কেন! কাঁঠাল গাছে কি আর পাতা আছে? কবেই খেয়ে শেষ করে ফেলেছে। ছায়া আসবে কোথেকে!
@শ্রাবণ আকাশ,
শ্মশ্রুমণ্ডিত চারপেয়েদের নিয়ে বড়ই বিপদে আছি আমরা।
কথাগুলো লজ্জাজনক কিন্তু অতীব সত্যি কথা।বাঙালি কঠিন কনফিউজড!!! :-X
আশেপাশে তাকালে হতাশ লাগে। আমার চারপাশে জামাতী এনভাইরনমেন্ট। আমিও ছোটবেলায় মুসলিম দেশ হিসেবে পাকিস্তান ভালবাসতাম, তবে বাংলাদেশের উপরে নয়। একটু বড় হওয়ার পর থেকে খেলা দেখে টীম সাপোর্ট করা শুরু করি, তাই প্রিয়র তালিকায় পারফর্মেন্স অনুসারে পাকিস্তানও ছিল তবে সাথে ছিল অন্যান্য ভাল দলগুলোও। কিন্তু দেখলাম পরিবারের মধ্যে খালি আমারই এদিক থেকে উন্নতি (বা ঈমানের অবনতি) হয়েছে। এই বিশ্বকাপে যারা “আমরা একসময় পাকিস্তানের অংশ ছিলাম, পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বলে মনে হচ্ছে আমরাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছি, এত আনন্দ লাগছে” বলে লাফালাফি করছিল তাদেরকে গালি দিচ্ছিলাম তখন বাসার সবাই বিস্ফোরিত চোখে বলল “তুমি পাকিস্তান না?” :-Y
কি আর বলব, তাও ভাল বাংলাদেশের খেলা হইলে অন্তত অন্য দেশ সাপোর্ট করেনা, মনে হয় পাকিস্তানের সাথে খেলা হলেও বাংলাদেশই সাপোর্ট করবে, বাসার কাছ থেকে এই পাওয়াটুকুই অনেক :-s
প্রিয়তে নিলাম আর শেয়ার দিলাম
@লীনা রহমান,
মনটাই ভাল হয়ে গেল। 🙂
আবার সেই বাঙালিই
কিন্তু এমন হলো কেন??? :-X
@ব্রাইট স্মাইল্,
মিলিওন ডলার প্রশ্ন! 🙂
@ব্রাইট স্মাইল্,
পরে মনে হয় বাঙালী বেশী বুঝে ফেলেছে। আর তাই এখন বাংলা সিনেমার নায়িকাদের মত করে বলে- “ছেড়ে দে নাস্তিক, ছেড়ে দে…জাত দেবো তবু ধর্ম দেবো না!”
@শ্রাবণ আকাশ,
:lotpot:
লেখাটি ১ বছর আগের,এটায় কোনো মন্তব্য নেই কেন?? এই লেখাটি নিয়ে সুন্দর আলোচনা হতে পারে যা পড়ে অনেক কিছু জানা যেত। আসরাফ ভাইয়ের সাথে আমি একমত,লেখাটি রিপোস্ট করলে কেমন হয়?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আলোচনাতো হচ্ছেই। আবার পোস্ট করার দরকারটা কী? এই লেখাটা যখন লিখেছিলাম তখন জামাতপন্থী প্রাক্তন সচিব শাহ আব্দুল হান্নান এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ বলেছিলেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় এই লেখা।
শাহ হান্নান যে এক সময় মুক্তমনার আলোচনায় নিয়মিত অংশ নিতেন এটা কি জানো? 🙂 এখন যারা ফারুকের কারণে এডমিনের ছাল তুলে নিতে চায়, তাঁরা তখন মুক্তমনায় থাকলে এডমিনের যে কী দশা করতো কে জানে? 😛
@ফরিদ আহমেদ,
তিনি শুধু ইংরেজিতে লিখতেন, তাই না? মাঝে মাঝে এন এফ বি তে বোধ হয় দেখেছি।
এই লেখাটা ১৭ জন পড়েছেন। এবং কোন কমেন্ট করেন নাই।
আমার একটি মতামত এটা কি আবার এই সময়ে নতুন করে পোষ্ট করা যায়না? (Y)
@আসরাফ,
এই লেখাটি প্রায় চার বছর আগের। তখন মুক্তমনা ব্লগ হয় নি। পরে অভ্রতে কনভার্ট করে আমার ব্যক্তিগত ব্লগে রেখে দিয়েছিলাম। সে কারণেই এর পাঠক সংখ্যা এত কম, মন্তব্যও নেই কোনো।
পড়া এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@ফরিদ আহমেদ,
এমন কত রত্ন আছে তোমার ভান্ডারে?বের করতে কার্পণ্য কেন? আর
যুদ্ধপরাধীদের বিচার যে গতিতে এগুচ্ছে আতে আবার আঙ্গুল চোষাই না সার হয়!