(পুর্ব প্রকাশিতের পর)

গত সপ্তাহে ,এই প্রবন্ধের পাইলট পর্ব মুক্তমনায় প্রকাশিত হওয়ার পর কতিপয় বাংলা ভাষী ‘মডারেট’ মুসলিম ব্লগ-সাইট সমুহের তীব্র এবং ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রতি আমার দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। আমাদের (বহুবচনের ব্যবহার আক্ষরিকঅর্থে তাৎপর্য পূর্ণ) যেহেতু ত্রিভুবনের সম্পুর্ণ wwwকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখতে হয়, সেহেতু এ সকল বিষয় আমাদের দৃষ্টি গোচর না হওয়ার কোন হেতু নেই। প্রবন্ধের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়ে প্রত্যাবর্তনের প্রাক্কালে এ বিষয়ে আমার মন্তব্য অতীব সংক্ষিপ্ত। অপশিক্ষার অন্ধকারে অর্ধ শিক্ষিত এবং মধ্যযুগীয় মানসিকতার এইসব ‘মডারেট’ মুসলিমদের তুলনা আরেক মধ্যযুগীয় বর্বর ধারণা ‘কুমারীত্বের’ সাথে করা যেতে পারে। একজন নারী হয় কুমারী কিংবা কুমারী নন কিন্তু ‘আংশিক কুমারীত্ব’ বলে কি কিছু ত্রিভুবনে আছে ? যদি থেকে থাকে, তবে এইসব ‘মডারেট’ মুসলিমরা হলেন সেই ‘আংশিক কুমারী’। এবার আসুন আমরা প্রবন্ধের মুখ্য প্রতিপাদ্য বিষয়ে ফিরে যাই।

জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি

“ আমাকে আদেশ করা হয়েছে সমগ্র মানব কুলের বিপক্ষে যুদ্ধ করার , যতক্ষন না তারা সকলে স্বীকার করে যে – ‘আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন ঈশ্বর নেই।”
– নবী মুহাম্মাদ ইব্ন্ আবদুল্লাহ্ , বিদায়ী ভাষণ, মার্চ‍ /৬৩২ খ্রীষ্টাব্দ।”

বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে যারা কিছুটা অবগত আছেন , তাঁরা নিশ্চয় জানেন যে বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী সরকার রাষ্ট্রের জন্য একটি কার্যকর এবং বাস্তবমুখী জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়নের বিষয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন এবং রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুসংহত করার ক্ষেত্রে এর ভুমিকা অনস্বীকার্য । সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ(AFD) ইতিমধ্যেই জাতীয় প্রতিরক্ষা মহাবিদ্যালয়ের (NDC) কারিগরী সহায়তায় জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতির খসরা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে যা পুনর্বিবেচনা , সংযোজন এবং বিয়োজন সাপেক্ষে সরকারী অনুমোদনের অপেক্ষায় রযেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, এই নীতিমালায় প্রাতিষ্ঠানিক গনতন্ত্র তথা রাষ্ট্রের সংবিধানের প্রতি সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্যের ওপর গুরুত্ব আরোপসহ সংশ্লিষ্ট প্রশিক্ষনাদির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা ইদানিং আলোচনা শুরু করেছেন। আমি এ মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই । কিন্তু এরপরও এ মহৎ উদ্যোগের ভবিষ্যত সফলতার ব্যপারে সংগত কারনেই সন্দেহ থেকে যায় । এবার আসুন সে বিষয়ে কিছুটা আলোকপাত করা যাক।
১৯৭৫ সালের ১৫ই অগাস্ট থেকে অপারেশনের Strategic commander জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রে সেনা হস্তক্ষেপের সাথে সাথে শুরু হয় সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমুহের ইসলামীকরন। বিশেষ করে, সশস্ত্র বাহিনীতে অবশিষ্ট ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী শক্তিশালী অংশটিকে আশির দশকের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়। এ কাজে ব্যবহার করা হয় বাধ্যতামুলক অবসর , বিচারিক ও সুপরিকল্পিত হত্যাকান্ডের মত অস্ত্র। এর সর্বশেষ সংযোজন , ফেব্রুয়ারী/২০০৯ এর পিলখানায় সুপরিকল্পিতভাবে তথাকথিত বিডিআর (BDR) বিদ্রোহের ধূম্রজালের আড়ালে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী সেনাকর্মকর্তাদের ওপর পরিচালিত নৃশংস ও বর্বর গণহত্যা।
সেনাবাহিনীতে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদীদের অনুপ্রবেশের ব্যাপকতা অনুধাবন করা একজন বেসামরিক নাগরিকের ( নিহত সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের ভাষায় Bloody Civilian ! ) পক্ষে নিতান্তই কঠিন কাজ , আপনি সে যেই হউন না কেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১শে অগস্ট ২০০৪ এ পল্টনের গ্রেনেড হামলার ব্যপারে এখনও অন্ধকারেই রয়েছেন বা তাকে রাখা হয়েছে যদিও এ হামলার মুল উদ্দেশ্যই ছিল তার প্রাণনাশ। একই বক্তব্য ২রা এপ্রিল ২০০৪ এর ১০ ট্রাক ভর্তি অস্ত্রের ব্যপারেও প্রযোজ্য।
সংবিধানের প্রতি দেশের ইসলামপন্থী সেনাবাহিনীর আনুগত্য প্রসংগে দেশের একজন সাবেক সেনা কর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকের কাছ থেকে আমার নিজের কানে শোনা ( হুবহু) :

“The constitution is subservient to the holy Quran and as a Muslim , I believe that the holy Quran supersedes all other constitution.”

(চলবে)

‘মডারেট’ মুসলিম তত্ত্ব এবং এর অসারতা-১