কোথায় আমাদের ঘৃণার উৎস?
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামীদের ফাঁসি হলো। সংবাদপত্রগুলো পারলো না শুধু দিনে দুটো করে এডিশান বের করে, সেই মহা আনন্দের সংবাদ তারায় তারায় রটিয়ে দিতে। আকাশে বাতাসে শুধু আনন্দ, বাংলার ঘরে ঘরে আনন্দ।বিভিন্ন দলের নেতা কর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করে উৎসব করলো। কিশোর-যুবক-তরুণ-বৃদ্ধ সবাই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো, যেন তাদের বুকের উপর থেকে বিশাল এক পাথর সরে গেল। তাহলে এতদিন কি বিশাল সেই যন্ত্রণার পাথর বুকে চেপে ধরে তারা জীবন-যাপন করছিলো? সত্যিই কি তাই? না-কি রাজনীতি আর ইতিহাসের তীব্র খেলায় পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করে যাওয়া জনগন নামের সস্তা অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয়ে যাচ্ছে নির্দেশকের নির্দেশে? না-কি আমাদের আবেগ-অনুভূতি আমাদের অজান্তেই নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে রঙ্গমঞ্চের পরিচালক-পরিচালিকাদের ইচ্ছায়?
অপরাধের শাস্তি হবে, যে-কোন সভ্য সমাজেই সেটা হয়ে থাকে।কিন্তু যে উচ্ছ্বাস আমরা প্রকাশ করছি সেটা কি আমাদের ভেতর থেকে আসছে? না-কি আর সবার মত উচ্ছ্বসিত হবে বলে, টিভি চ্যানেলের গৃহপালিত লোকগুলো, যারা আলোচনা অনুষ্ঠান করে থাকে, তাদেরকে উচ্ছ্বসিত দেখে আমরাও উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়বো? আমরা কি একবারও ঘুমিয়ে পড়বার আগে ধীরে-সুস্থে চিন্তা করে দেখেছি, আমরা কি চাই? বৃদ্ধ লোকগুলোকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফাঁসির মঞ্চে, দেয়া হচ্ছে ফাঁসি, তাতে কি আমাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করা উচিৎ? প্রচলিত বিচার-বিধান অনুযায়ী তাদের ফাঁসি হবে, আপত্তি নেই, কিন্তু তারা কি একটুও সমবেদনা পেতে পারতোনা আমাদের কাছ থেকে। তাহলে কি অর্থ রইল বঙ্কিমের সেই বাক্যে “তুমি অধম, তাই বলিইয়া আমি উত্তম হইবো না কেন?” “দণ্ডিতের সাথে দণ্ডদাতা কাঁদে, সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।”- কি অর্থ রইলো এই বাক্যের।
আমরা কি নিজেদের জিজ্ঞেস করে দেখেছি, আমরা কি সত্যিই তাদেরকে ঘৃণা করতাম? নাকি আমরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে গিয়েছিলাম, মুখস্ত করে রেখেছিলাম, ‘আমরা তোমাদের ঘৃণা করি।’ আজকাল মিডিয়া আমাদের জীবনকে এত বেশি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে ফেলেছে যে, আমাদের আবেগ-অনুভূতি-ঘৃণা-ভালোবাসা কবে হবে কোথায় হবে, ১৪ই ফেব্রুয়ারী না ১৫ই আগস্ট হবে, সেটাও তারা ঠিক করে দেয়। প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় খবর আসছে বখাটেদের অত্যাচারে আত্মহত্যা করেছে স্কুলছাত্রী। একের পর এক। আমাদের এত এত মেজর, কর্নেল, এসপি, সাদা-কালো পুলিশ, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট, সুশাসনকামী নাগরিক কেউই কি কিছু করতে পারছেন না। কিছু মানুষের ফাঁসির জন্য আমাদের বুকে ঘৃণার পাথর জমে উঠেছিলো, তাদের ফাঁসি হবার পর সেই পাথর সরে গেলে আমরা উল্লাস করেছি, সোল্লাসে গর্জে উঠেছি, আমাদের অবুঝ শিশুরা আমাদের জিজ্ঞেস করেছে, ‘কেন তোমরা উল্লাস করছো?’ আমরা বলেছি, ‘ওদের ফাঁসি হয়েছে তাই।’ তার পর অবুঝ শিশু জিজ্ঞেস করেছে, ‘ফাঁসি কি?’ আমরা আর বলতে পারি নি। সেই অবুঝ শিশুর কাছ থেকে হঠাৎ কি একটু লজ্জাও পাইনি আমরা? বখাটেদের অত্যাচারে নিতান্তই অর্থহীণভাবে যখন কিশোরী মেয়েগুলো একের পর এক আত্মহত্যা করে যাচ্ছে, তখন কতটুকু ঘৃণার সঞ্চার হচ্ছে আমাদের ভিতর? নাকি এখনো আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আমাদের নেতা-নেত্রীদের জন্য, তাদের মনে ঘৃণার উদ্ভব ঘটলে তারপর আমরাও ঘৃণা করতে শুরু করবো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিবাহিতা ছাত্রী, প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে, বিশ্ববিদ্যালইয়ের মূল ফটকে সবার সামনে প্রকাশ্যে, এক ছাত্রলীগ কর্মী চুলের মুঠি ধরে তাকে চড়, থাপ্পড় মারে (প্রথম আলো, এপ্রিল ০৪, ২০১০)। শুধু এই ঘটনার জন্যই বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় এক সাথে বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। তারেক জিয়ার মুক্তির দাবীতে যদি দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলতে পারে, তবে এই ঘটনায় কেন পারবেনা? পারবেনা, জানি পারবেনা। কারণ তারেক জিয়া কিংবা জয় মামার কিছু হলে আমাদের ঘরে ঘরে আগুন জ্বলে, আমাদের গায়ে জ্বালা ধরে যায়, ঘেন্না ধরে যায় দেশের প্রতি, মানুষের প্রতি, সমাজের প্রতি। কিন্তু একটা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ের চুলের মুঠি ধরে চড়, থাপ্পড় মারলে কি এমন ক্ষতি হয় রাষ্ট্রের কিংবা সমাজের? বড় জোর ‘কাজটা ঠিক হয়নি’ এরকম একটা মত প্রকাশ করেই আমরা দায়িত্ব শেষ করি।
যুদ্ধাপরাধী! ব্যাক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, কিছু কিছু যুদ্ধাপরাধীদেকে মানুষ ঘৃণা করে না, ঈর্ষা করে। তাদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ যুদ্ধাপরাধের জন্য নয়, বরং এই জন্য যে, তারা ভালো অবস্থানে আছে, এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত আছে। বস্তুতঃ, এই যুদ্ধাপরাধীরা যদি অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন তথা দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করত, তাহলে তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া যেত। কিন্তু যেহেতু তার বহাল তবিয়তে আছে , সেহেতু তাদেরকে ক্ষমা করা যায় না, ক্ষমা করার যে আর কোন উপায় নেই, তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। আপনি যুদ্ধের সময় অপরাধও করবেন, আবার সুখেও থাকবেন তা-তো হবে না। ‘জিততে যদিও না পারি, তবু আমরা হারবো না।’ তাই তাদের প্রতি ঘৃণায় আমাদের নাওয়া-খাওয়া হারাম হয়ে গেছে। মনে রাখবেন, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করে বেড়ালেও আমাদের অনুভূতির কোন পরিবর্তন হয় না; আমাদের অনুভূতির সাইক্লোন শুরু হয় যুদ্ধাপরাধীদের টয়োটা গাড়িতে চড়তে কিংবা সুখের সংসার করতে দেখলে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী হত্যার ঘটনায় সমস্ত দেশে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। কারণে-অকারণে ছাত্রশিবির এবং জামায়াত নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হতে থাকলো; কোন রকমের বাচ-বিচার ছাড়াই। এটা সম্ভব হলো তারা অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল বলে। ছাত্রদলের কেউ যদি একই ঘটনা ঘটাতো তাহলে রাষ্ট্রের বাবারও ক্ষমতা ছিলো না এভাবে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার কিংবা হয়রানি করবার। যে বা যারা খুনি, তাদেরতো দল নেই, থাকতে পারে না। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও খুন করছে, ছাত্রদলের নেতা কর্মীরাও করছে, ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাও করছে। কিন্তু খুন করবার পর তাদের সবাই একই গোত্রের। তাদের পরিচয় খুনী। কোন দলের মূলনীতিতেতো মানুষ খুন করবার কথা লেখা থাকে না। খুনীদের কর্মের জন্য একটা দলকে দায়ী করা যায় কি করে? দলের প্রধান জড়িত থাকলেও দলকেতো দায়ী করা যায় না, দলের প্রধানকে দায়ী করা যায়। যদি দায়ী করা যায়, তাহলে একইভাবে বি,এন,পি কিংবা আওয়ামীলীগকেও দায়ী করা যাবে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে, সেটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে, সমস্ত দেশে অভিযান চালিয়ে হয়রানি করাটা নিশ্চিত করে অন্যায়। কোনো একটি দল বা গোত্র যদি বুঝতে পারে তাদের উপর অন্যায় করা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, তারা যদি বুঝতে পারে তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করা হচ্ছে; তাহলে তাদের হিংস্র হয়ে উঠবার সম্ভাবনা থাকে, যেটা রাষ্ট্র সমাজ জনগণ কারো জন্যই শুভকর নয়।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি! আমি যতদূর বুঝতে পারি, কিছু ধর্মে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইঙ্গিত দেয়া আছে। অতএব, সে-ধর্ম পালনকারীদের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা অযৌক্তিক কিছু নয়। সমস্যাটা রাজনীতিতে নয়, সমস্যাটা হয়তো ধর্ম জিনিসটার মধ্যে। তাই নিষিদ্ধ কোনটা হওয়া উচিৎ সেটা বুঝবার জন্য মহাজ্ঞানী হবার প্রয়োজন নেই।আপনি যদি বলেন ‘ধর্ম থাকুক, কিন্তু ধর্মভিত্তিক রীতিনীতি না থাকুক’ সেটা খানিকটা ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম থাকুক, কিন্তু ক্রিকেট খেলাটা না থাকুক’ এরকম হয়ে যায়। তবে ধর্ম থাকবে কি থাকবে না সেটা যদি খানিকের তরে আমরা ভুলে যাই, তাহলে যে-কোন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকই চাইবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক। ধর্মের রাজনীতি দিয়ে রাষ্ট্র চলতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নির্মূল করার জন্য যদি অসভ্য পন্থা অবলম্বন করতে হয়, তবে কি হবে আপনার অবস্থান?
April 06, 2010
খু্বই শক্তিশালী ভাষায় নিজের মত প্রকাশ করেছেন। লেখাটি চিন্তার খোরাক জোগাবে।
@শাফায়েত,
অনেক ধন্যবাদ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেক বাঙ্গালি উতসব পালন করেছিল। তাঁর ঘাতকদের মনে একটুমাত্র অনুকম্পা হয়নি যখন তাঁর দুধের ছেলে রাসেল তার প্রাণভিক্ষা চাইছিল।
বঙ্গবুন্ধুর হত্যা্কারীদেরকে আইন আনুযায়ী যখন ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলানো হল, তখন চলল আনন্দের জোয়ার। হত্যাকারীদের প্রানভিক্ষার কাকুতি মিনতিতে আমাদের ্রাষ্ট্রপতির মনে বিন্দুমাত্র অনুকম্পা হয়নি।
আমার মনে হয় রাস্ট্রপতি ওদেরকে একটু দয়া করতে পারতেন। হয়তোবা চিরজীবনের জন্যে জেলে পচতে দিতে পারতেন। প্রাকৃতিক কারনে ঐ বৃদ্ধ খুনীরা শিঘ্রই মরতো।
কিন্তু আমাদের মনে নেই কোন মায়া মমতা, নেই কোন অনুকম্পা, নেই কোন সহ্র্রঅদয়তা।
সেই জন্যেই কি সেক্সপিয়ার লিখেছিলেন–
The Quality of Mercy is not Strained
@আবুল কাশেম,
” আমার মনে হয় রাস্ট্রপতি ওদেরকে একটু দয়া করতে পারতেন। হয়তোবা চিরজীবনের জন্যে জেলে পচতে দিতে পারতেন। প্রাকৃতিক কারনে ঐ বৃদ্ধ খুনীরা শিঘ্রই মরতো।
কিন্তু আমাদের মনে নেই কোন মায়া মমতা, নেই কোন অনুকম্পা, নেই কোন সহ্র্রঅদয়তা।”
আপনার বক্তব্যের পুর্ণ সমর্থণ জানাচ্ছি। তবে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মৃত্যু দন্ডকে ঘৃণা করি ।
এই অপরাধীদের কে অন্য শাস্তি দেয়া যেত ,কেননা তাদের বয়স হয়েছিল । এমনেই তারা মৃ্ত্যূর দিনের
অপেক্ষায় ছিলেন । ভাল একটা লেখা উপহার দেবার জন্য লেখক কে ধন্যবাদ।
@আবুল কাশেম,
হ্যা, কথাটা নির্মম হলেও কখনো কখনো সত্যি।
@আবুল কাশেম,
তারা আজীবন জেলে পচত নিশ্চয়তা দিতে পারেন?
আমি তো লিখে দিতে পারি যে পরবর্তিতে বিএনপি সরকার গঠন করলে ৭৫ এর খুনীদের “বর্ষিয়ান বীর মুক্তিযোদ্ধা” হিসেবে তাদের রাষ্ট্রপতি আবার ক্ষমা ঘোষনা করে বেকসুর ছেড়ে দিতেন। চাই কি পদক ফদক ও কিছু দিয়ে দিতে পারেন।
আমাদের গোটা ব্যাবস্থাই অত্যন্ত গোলমেলে, অস্বাভাবিক। এখানে শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নভাবে কেউ স্বাভাবিক আচরন করলে তাতে ভালর থেকে মন্দ হবার সম্ভাবনাই প্রবল।
@আদিল মাহমুদ,
এটাও ঠিক।
আমি নিজেও পুরো ব্যাপারগুলো নিয়ে সন্দিহান। আমি খুঁজতে চেষ্টা করছি আমার বা আমাদের আবেগ অনুভূতিগুলো সবসময় কি আমাদের ভেতর থেকে আসে, না-কি আমাদের অজান্তেই তারা পক্ষপাতদোষে দুষ্ট। তবে এইটুকু নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জিনিসগুলো অনেক বেশি গোলমেলে, সমীকরণগুলো খুব একটা সহজ নয়। অন্তত ইতিহাস সেরকমটাই বলে, যেমনটা আপনারাও ব্যাখ্যা করে বলছেন।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার কথা মেনে নিচ্ছি। এটাই বোধ করি আমাদের জাতীয় বিবেক। আইনের প্রতি আমাদের একটুকুও শ্রদ্ধা নাই।
তাই বলে কি আমরা আমাদের মন থেকে করুনা, দয়া মমতা—এসব কিছু মুছে ফেলব?
এখানে আমি আরো বলতে চাই শেখ হাসিনা ঢাকা বিমান বন্দরের নাম থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলে ভুল করেছেন। জিয়া নামটা থাকলে কি-ই বা আশুদ্ধ হোত। কিন্তু ্নামটি রেখে দিলে শেখ হাসিনা তাঁর ঔদার্যেরই পরিচয দিতেন।
হাঁ, আপনার কথা ধরেই বলতে হ্য়, খালেদা যদি আবার ক্ষমাতায আসে তবে সেখ মুজিবের নাম চিরতরে মুছে ফেলবে সর্ব স্থান থেকে। সব জাগতেই দেখব জিয়া, জিয়া আর জিয়া। হয়ত বা নিজামীর নামও থকবে অনেক স্থানে।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নির্মূল করার জন্যে অসভ্য পন্থা অবলম্বন বলতে কী বোঝালেন?
এইখানে আইসা তব্দা খায়া গেলাম।
ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্যে ধর্ম নিষিদ্ধ করতে হবে, কথাটা তো সামান্য কথা না। এই কথা যে-সে বলতে পারে না।
ল্যাঞ্জাডা দেহায়া ফেললেন নাহি? 🙁
রাজাকার দের প্রতি আমাদের ঘৃণার উৎস তাদের ১৯৭১ সালের কর্মকান্ড। পাকিস্তানি বাহিনির বর্বরদের সাথে হাত মিলিয়ে দেশের মানুষ ও বুদ্ধিজীবিদের নির্যাতন ও হত্যার নায়ক এই সকল যুদ্ধাপরাধীর প্রতি সম্মিলিত ঘৃণাকে কেবলমাত্র ঈর্ষা দিয়ে ব্যখ্যা করাটা নিতান্তই হাস্যকর। আর বাংলাদেশ বিরোধী জামাত শিবিরের পরিকল্পিত রগ কাটার রাজনীতি আর ছাত্রলীগ বা দলের বর্তমান টেন্ডারবাজির রাজনীতিকে এক করে দেখা নির্বুদ্ধিতা।
মুজিব হত্যাকারীদের বিষয়টি আলাদা। হত্যাকারীরা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশ্যে আস্ফালন করেছে, বার বার পুরষ্কৃত হয়েছে আর এই দেশের সামরিক সরকারগুলো তাদের রক্ষা করেছে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের বর্মে। কিন্তু মুজিব হত্যার বিচারের দাবী কখনোই অস্তমিত হয়নি। যাদের তথাকথিত বিপ্লবের টার্গেট নিরীহ শিশু আর গর্ভবতী মহিলা, তাদের মৃত্যুতে আনন্দিত হওয়াটা হয়তো সুশীল কোমল মনে বর্বরতার বহিঃ প্রকাশ , কিন্তু আপামর কুশীল জনসাধারনের জন্য স্বাভাবিক অভিব্যক্তি।
@FZ,
যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি ঘৃণাকে শুধুমাত্র ঈর্ষা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, ঈর্ষা একটা কারণ হতে পারে, কিন্তু একমাত্র কারণ হতে পারে না, একমত আপনার সাথে।
জামাত-শিবির শুধুই রগ কাটে, আর ছাত্রলীগ আর ছাত্রদল টেন্ডারবাজির মধ্যে সীমাবদ্ধ–এটা মনে হয় পুরোপুরি সঠিক নয়।
শুধু মুজিব কেন? বস্তির ছেলে বাসু কিংবা রাস্তার ছেলে হাসুর হত্যাকারীদের বিচারের দাবীও অস্তমিত হওয়া উচিৎ নয়।
আপামর জনসাধারণের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি নিয়ে যদি প্রশ্ন না তুলেন, তাহলে কিছু বলার নেই। সেক্ষেত্রে, এই আপামর জনসাধারণের ভোটেই যে তথাকথিত যুদ্ধাপরাধীরা সংসদে বসেছে, মন্ত্রী হয়েছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলা উচিৎ না; অবাক হয়ে ভাবা উচিৎ না, যুদ্ধাপরাধীরা এদেশে মন্ত্রী হলো কি করে। কারণ সেটাও আপামর জনসাধারণের স্বাভাবিক রায়েই হয়েছে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
:yes:
:yes:
@ব্রাইট স্মাইল্,
ধন্যবাদ।
ভাল লাহগল, বেশ কিছু নির্জলা সত্য ভাষন আছে।
আমার জ্ঞান বুদ্ধি হবার পর থেকেই নানান কারনে মনে হয়েছে যে আমাদের দেশের গোটা আবহটাই স্বাভাবিক নয়। যাবতীয় অস্বাভাবিক ব্যাপার স্যাপারই এখানে স্বাভাবিক।
বংগবন্ধু হত্যায় মানূষের উল্লাস, মৃতদেহ বহনকারী গাড়িতে জুতা থুথু নিক্ষেপ কোন সভ্য দেশে হতে পারে? ভিডিও তে দেখলাম গভীর রাতে ফাঁসীর মূহুর্তে জেলগেটে শত শত উল্লাসরত মানুষ, একজনের কোলে আবার ৩ বছরের শিশু, এই ফাঁসিতে সেও উল্লসিত। দেখে হতবাক হয়েছি, এই দুধের শিশু কিসের শিক্ষা পাচ্ছে? ন্যায় বিচার, নাকি জিঘাংসা?
তবে এই লোকেরা কেউই সমাজের বাইরে নয়। এরা এমন এক সমাজের বাসিন্দা যে সমাজে রাষ্ট্র ক্রশফায়ারে যে কাউকে মেরে ফেলতে পারে, শদুহু তাই নয়, তারপর সরকারী উদ্যোগে মিষ্টি বিতরন, আনন্দ মিছিল। মৃতদেহে থুতু লাথি মারার আয়োজনও করতে পারে। কাজেই বংগবন্ধুর মত একজন জনপ্রিয় বড় মাপের নেতা, যার বিচার অনেক বছর একটি চক্র হতে দেয়নি তার হত্যাকারীদের সাজা হওয়ায় এমন প্রতিক্রিয়াই এ সমাজে স্বাভাবিক।
সরকারী দল হলে খুব সিদ্ধ্ আর শিবির হলেই খারাপ এ ধারনাও ঠিক নয়। শিবিরের লোকেরা আজকাল নানান ফোরামে চোখে আংগুল দিয়ে দেখায় ছাত্রলীগে কি কি অপকর্ম করেছে আর তারা কি কি করেছে তার তূলনা। নিজেরা ভাল না হয়ে যাবতীয় অনাচার করতে থাকলে আর খালি জামাত শিবির রাজাকার বাংলা ছাড় শ্লোগান দিলে উলটা ফলই হবে।
@আদিল মাহমুদ,
ধন্যবাদ।
আমি আসলে নিজেও কিছুটা বিভ্রান্ত, কিসের জন্য মানুষ কি করছে বুঝতে পারছি না। আমার নিজের সমস্যাটা আসলে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করছি। এত মানুষ একসাথেতো ভুল করবার সম্ভাবনা কম, তাহলে ভুলটা নিশ্চয় আমার বা আমাদের মধ্যে, সেটাই বের করতে চেষ্টা করছি।
ভালো থাকবেন।
প্রেম এবং ঘৃণার উৎস কখনই জ্ঞান নয় , অনুরাগ ও বিরাগ থেকেই প্রেম এবং ঘৃণার সৃষ্টি। সুতরাং , শুধু ঘৃণার উৎসকেই প্রশ্নবিদ্ধ করলে চলবে না , প্রেমের উৎসকেও সামনে আনতে হবে যদি সাম্যতা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। এ ছাড়া আপনার Locus standi এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন আপনার বক্তব্যকে ভিত্তি দেয়ার জন্য। আপনি বলেননি , আপনি ১৫-০৮-১৯৭৫ অথবা ১৯৭১ এর-শহীদ পরিবারের সদস্য কিনা কিংবা একজন যুদ্ধ শিশু ইত্যাদি।
বাঙালীর প্রেম এবং ঘৃণার উৎস জানতে চাইলে ঋণের প্রশ্ন কিছুটা এসে যায় বৈকি । শুভ কামনা রইল।
@বিজয়,
প্রেমের উৎস যে প্রশ্নবিদ্ধ না, সেটা কিন্তু না। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের প্রতিইতো আমাদের প্রেম-ভালোবাসাতো উথলে পড়ছে। সেটা এবং অন্য অনেক প্রেমই প্রশ্নবিদ্ধ।
হয়ত আপনি ঠিকই বলেছেন, প্রেম এবং ঘৃণার উৎস কখনই জ্ঞান নয়, অনুরাগ কিংবা বিরাগ। কিন্তু কথা হচ্ছে, কোন কিছুর প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগ জন্মানোর জন্য সে-জিনিসটা সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে, বুঝতে হবে; সেটাই কি জ্ঞান নয়? তারপরইতো অনুরাগ বিরাগ।
আমি কোন বিশেষ পরিবারের সদস্য নয়। ইতিহাসের সমস্ত ঘটনায় কারো যদি ভেতর থেকে ঘৃণা জন্মে, সেটা নিয়ে আমার আপত্তি নেই, জন্মানোটা অযৌক্তিকও হয়তো না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই ঘৃণা কি বিশেষ কোন কারণে জন্মাচ্ছে, সেটার সাথে কি আমাদের অজান্তেই আমাদের কোন বিশেষ স্বার্থ বা হীনমন্যতা জড়িয়ে আছে? অন্য প্রেক্ষাপটে একই ধরণের ঘটনায় আমাদের মনে কি একই ধরণের ক্ষোভ বা ঘৃণার জন্ম হয়ে থাকে?
আরেকটা বিষয়, যারা ঘটনার ভুক্তভোগী, তাদের অনুভূতির সাথে আমাদের অনুভূতির কখনো এক করা যাবে না, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা থাকলো। আমার লেখাটা সাধারণদের নিয়ে, যারা সরাসরি ঘটনার সাথে জড়িত নয়, তাদের অনুভূতি নিয়ে।