হাসানআল আব্দুল্লাহ
বেদখলে ‘স্বতন্ত্র সনেট’
দখলদারিত্বের চেহারা এতোটা বদলে গেছে যে এখন আমরা যে যেভাবে সম্ভব চারপাশের সমস্তটা আপন গণ্ডিতে নিয়ে নিজের বলে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছি। এর ভয়াবহতা নিরুপণে কিছুদিন আগে আমি একটি কবিতায় কবর দখলের কথা লিখেছিলাম। কবিতাটি রাজশাহী থেকে প্রকাশিত ও মোজাফফর হোসেন সম্পাদিত ‘শাশ্বতিকী’ পত্রিকায় ছাপা হয়। এবার বইমেলায় সম্পাদক ও তাঁর বন্ধুদের সাথে আলাপ পরিচয় হওয়ার সাথে সাথে সুদৃশ্য এই পত্রিকাটিও হাতে এলো। আরো যে কতো কি পেলাম বইমেলায়! পরিচয় হলো সৌমিত্র দেব-এর সদ্য পরিণিতা স্ত্রী, আমাদের হাসিখুশী নতুন বউদি, পলা দেবের সাথে; পেলাম কক্সবাজার থেকে ছুটে আসা অমিত চৌধুরীর আয়োজন শিবনারায়ণ রায়কে নিয়ে তাঁর পত্রিকায় ‘মূল্যায়ন’-এর বিশেষ সংখ্যা; পেলাম রহমান হেনরীর ছোটো ছেলের যত্মে দেয়া অমূল্য উপহার দশ টাকার একটি নোট, সৈয়দ শামসুল হকের আত্মজীবনী মূলক গ্রন্থ ‘প্রণীত জীবন’, বায়তুল্লাহ্ কাদেরীর ‘কবিতাসমগ্র’, জাকির তালুকদারের ‘গল্পসমগ্র’ আর আমার ‘নির্বাচিত কবিতা’। সাথে সাথে এ-ও জানলাম যে আমার কবিতা, বিশেষত ‘স্বতন্ত্র সনেট’-এর কিছু পঙক্তি দখল করে নিয়েছেন আমারই স্নেহভাজন শূন্য দশকের এক তরুণ কবি। নাম মিজান রহমান। ‘স্বতন্ত্র সনেট’ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ২০০৪) প্রকাশনা উৎসবের দু’দিন আগে আজিজ মার্কেটে তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা। পরিচয় পর্বে বললাম, “আমি হাসান আব্দুল্লাহ।” তৎক্ষণাৎ তিনি জানান যে, “হাসানআল আব্দুল্লাহ নামে একজন কবি আছেন!” আমি হেসে উত্তর দেই, “জ্বী, আমিই হাসানআল আব্দুল্লাহ।” পরে তাঁর সম্পাদিত ‘কর্ষণ’ পত্রিকায় ওই বইয়ের একটি আলোচনাও করেন তিনি। আস্তে আস্তে এইভাবে ভদ্র, মিষ্টভাষী, হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণ আমার প্রীতিভাজনদের তালিকায় উঠে আসেন।
এবছর (২০১০) মেলা থেকে ফেরার দিন আরেক তরুণ বন্ধু জামসেদ ওয়াজেদকে নিয়ে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে যখন সর্বশেষ প্রকাশিত বইগুলো সংগ্রহে ব্যস্ত, ঠিক সেই মুহূর্তে দেখা হয় মিজান রহমানের সাথে। তিনি এখন কথা প্রকাশ-এর পরিচালক। আমি ওই প্রকাশনা থেকে কয়েকটি বই নিয়ে তড়িঘড়ি দাম রেখে ব্যাগে পুরে দিতে বললে মিজান তাঁর কর্মচারীদের আমার জন্যে সর্বোচ্চ ডিসকাউন্ট রাখার নির্দেশ দিলেন এবং সাথে সাথে আমার দিকে আরো একটি বই এগিয়ে দিয়ে বললেন, “হাসান ভাই, এই বইটি একটু দেখুন, আমার নতুন কবিতার বই।” মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে আমি বলি, “এখন আর দেখাদেখির সময় নেই, ব্যাগে ঢুকিয়ে বিল করে দিতে বলো।”
নিউইয়র্কে ফিরে বরাবরের মতো সদ্য কেনা নতুন বইগুলো উল্টেপাল্টে দেখতে গিয়ে হাতে উঠে এলো মিজানের সেই বই, ‘মাড়াই ধানের ঘ্রাণ।’ চমৎকার একটি প্রচ্ছদ এঁকেছেন সব্যসাচী হাজরা, আর বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে আমার আরেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব, কবি আবু হাসান শাহরিয়ারকে। কিন্তু বইটির যতোই পাতা উল্টাতে থাকি, ততোই শিহরিত হই, ভেতরে ভেতরে আঁৎকে উঠি, আর ভাবি এ-ওকি সম্ভব! অনেকগুলো পঙক্তিই আমার পরিচিত; নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে রাতের ঘুম হারাম করা, মাথার ঘাম ও রক্ত পায়ে পড়া সেইসব দিনের এইসব পঙক্তিকে আমি তো এতো সহজে ভুলে যেতে পারি না। একি করেছে মিজান! আমার ‘স্বতন্ত্র সনেট’-এর অনেকগুলো লাইন হুবহু নিজের করে লিখে ফেলেছে তাঁর কবিতায়! বেশ কয়েকটি কবিতার থিমও ওই গ্রন্থের সনেটগুলো থেকে নেয়া। কিন্তু থিম না হয় মেনে নিলাম, কবিতার লাইনগুলো–রক্ত ঘাম একসাথে মিশিয়ে বানানো হৃদয় নিংড়ানো চিত্রকল্পগুলো–কি করে নিজের নামে বসিয়ে দিলেন মিজান রহমান! ইংরেজীতে তো একে বলে প্লেজারিজম। আর বাংলায়! কি বলবো একে? দখলদারিত্ব!
মিজান লিখেছেন:
সময়ের নির্বাক জমিনে/ শব্দহীন হেঁটে যায় সভ্যতা অস্পষ্ট কুয়াশা ভরা চোখে…।
(মৃত রাত)
অথচ স্বতন্ত্র সনেটে আছে:
শব্দহীন হেঁটে যাবো সময়ের নির্বাক জমিনে
(স্বতন্ত্র সনেট ১১)
একই কবিতার শুরু করেছেন তিনি এভাবে:
হয়তো মৃত্যুর মাঝে–মৃত রাত থাকে;
(মৃত রাত)
১২১ নম্বর সনেটটি শুরু হয়েছে:
হয়তো মৃত্যুও মাঝে মাঝে ভয়াবহ রাত জেগে/
থাকে;
(স্বতন্ত্র সনেট-১২১)
তাঁর বইয়ের প্রথম কবিতায় লিখেছেন:
…কর্মব্যস্ত রাত।
ইতোমধ্যে মৃতদের সাথে অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছি
…
বালিশের নিচে কিম্বা মশারির ভাঁজে ভাঁজে…
(সারারাত মৃতদের সাথে)
অথচ ৬১ নম্বর সনেট শুরু হয়:
অনেকগুলো রাতও আমি ইতিমধ্যে না ঘুমিয়ে/
কাটিয়ে দিয়েছি একা একা;
…দৃঢ় কর্মব্যস্ত রাত।
(স্বতন্ত্র সনেট-৬১)
তাছাড়া ৮৭ নম্বর সনেট:
জীবন খুঁজেছি আমি বহুবার বালিশের নিচে
খাটের তলায় আর বহুরূপী মশারীর ভাঁজে…
(স্বতন্ত্র সনেট ৮৭)
ওদিকে আমার ৩ নম্বর সনেটটির দু’টি পঙক্তি:
শ্রাবণী চাঁদের সাথে সারসের সামান্য মিলন
কক্ষপথে যদি আনে শুদ্ধির বাতাস, নেই তাতে
কোনো ক্ষতি;
(স্বতন্ত্র সনেট-৩)
মিজান রহমান তুলে আনলেন এতোটুকু কষ্ট না করে:
শ্রাবণী চাঁদের সাথে কক্ষপথ হেঁটে হেঁটে
(অপেক্ষমান সম্ভাব্য নতুন রোদ্দুরের জন্য)
একই কবিতায় মিজান কি অনায়াসে তুলে দিলেন:
সাতশ বছর পর যে-পাখি চোখ রাখে
সুবিন্যস্ত সৃষ্টির দর্পণে…
সম্ভাব্য নতুন রোদ্দুরের জন্য অপেক্ষমাণ।
(ঐ)
অথচ, তাঁকে একটুও আটকালো না নিচের পঙক্তিগুলো:
সাতশ বছর পরে পেয়ে যাই আরেক পানীয়,
…
সুস্থ সুবিন্যস্ত সৃষ্টির দর্পণে।
… নতুন রোদ্দুর
আর আমাদের সন্তানেরা ফসল নির্ঘাত পাবে।
(স্বতন্ত্র সনেট-২)
আবার ৪৬ নম্বর সনেট শুরু হয়:
অতোটা কাঙ্গাল নই, শেষে তুমি যতোটা ভেবেছো।
(স্বতন্ত্র সনেট-৪৬)
মিজান রহমান লেখেন:
অতটা ক্ষুধার্ত নও–যতটা ভেবেছ
(ক্ষুধার দহন)
আরেকটি সনেট:
এখানে দুরন্ত অবসর নেই; নেই মধুমতি;
…
হাড্ডিসার রাস্তাগুলো শহরের নাভিমূল সেঁটে
নিরন্তর দৌড়ায় সম্মুখে,
…এখানে ইটের ঘর রতি-
ক্রিয়া করে ঘনঘন। প্রজনন কমানোর বড়ি
আছে ঢের…
(স্বতন্ত্র সনেট-৬)
মিজান রহমান আমার এই লাইনগুলো অনায়াসে দখলে নিয়ে যান:
এখানে দুরন্ত যৌবন নেই, নেই সান্ধনদী…
এখানে হাড্ডিসার রাস্তাগুলো নাভি তুলে দাঁড়িয়ে থাকে ইটপাথরের
সাথে রতিক্রিয়ার উন্মত্ত আবেগে।
…ওঠে প্রজনন কমানোর প্রতিযোগিতা।…
(দাঁড়কাকের ডাকে মিশে যায় গাঢ় অন্ধকার)
কী অনায়াসে তিনি ‘অবসর’ শব্দটি তুলে বসিয়ে দিলেন ‘যৌবন’ আর ‘মধুমতি’র জায়গায় বসালেন ‘সান্ধনদী’। আবার যেখানে ‘হাড্ডিসার রাস্তাগুলো শহরের নাভিমূল সেঁটে’ রয়েছে সেখানে ‘নাভি তুলে’ দিলেন তিনি। কি চমৎকার! এই সাহস এই তরুণ কবিকে কে দিলেন! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে অন্যের কবিতার লাইনগুলো এইভাবে দখলে আনা যায় কিনা।
কিছুদিন আগে এক সমালোচক আমার কবিতাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেছিলেন। আদতেই, মৃত কবিতার হাড়মাস তুলে নিলে কবিতা কি কখনো প্রতিবাদ করতে পারে! আজ হয়তো সেই সমালোচক এবং তাঁর অন্যান্য ভক্তবৃন্দ হেসে কুটিকুটি হবেন এই ভেবে যে একজন তরুণ কয়েকটি কবিতার লাইন নিয়েছেইবা, তাতে কি আর মহাভারত অশুদ্ধ হলো! অথবা ভাববেন যে, মিজান রহমান তাঁর মাত্র একদশকের অগ্রজ হাসানআল আব্দুল্লাহ নামের এক ‘মৃত কবি’র সনেটগুলো তাঁর কবিতায় তুলে দিয়ে ওই সনেটগুলোকে অবধারিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দিলেন! আমি কিন্তু এই দখলদারিত্ব মেনে নেবো না, অনাদি কালের কোনো পাঠকতো নয়ই।
মম দৃষ্টি ওগো পড়ল তব মনে
আমি কোথায় যাই, কিভাবে-কার সনে?
মোর অন্তরাত্মা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে
কেন দৃষ্টি বুলায় তব বৃন্দাবনে?
দেখেছিনু ঐহে বনে ভেবেছিনু মনে মনে
দৃষ্ট সোনা কোন হে ক্ষণে
বসাইব এই তাম্রাসনে
তাম্র পাইয়া স্বর্ণছোঁয়া
ভাবে মনে মনে
হেরিয়াছি স্বর্ণ এবার
জানিবে কয়জনে ?
বৃন্দাবনে গিয়াছিনু স্বর্ণ আনার লাগি
হেরিয়া ধন সাধু এ জন
বৃহৎ সে বন ভাগি
বৃন্দাবনের সোনা যখন গেল হারায়ে
খেয়াপারে দাঁড়াইয়া সে দুহাত বাড়ায়ে
শুধায় সোনা -“ওহে মনা,
সোনা হইতে চাও
তবে কেন আমা হইতে লুন্ঠে তুমি নাও?
তাম্র সেতো হয় যে সোনা
আশীর্বাদের জোরে
তবে কেন চোর হইয়া
ঢুকিলে মোর ঘরে?
স্বর্ণ কভু হওনি তুমি,
হবার সেতো নয়
হইবে সোনা তখন তুমি
জাগিলে মনে ভয় .
প্রাপ্য সোনা তুমি মোরে করো দান
তবেই তুমি পাইবে স্বর্ণের সম্মান.”
দাঁড়াইয়া নদীর কূলে
গেলাম আমি সবি ভুলে
চাহিয়া মম ছিন্নুমূলে
ভাবিলাম সবি
নারী-বাড়ি পাওয়া যায়
ভালো খাবার খাওয়া যায়
চুরি করিয়া ধনী হইলেও
হওয়া যায় না কভু কবি.
:rose2:
ভদ্রলোক ২০০৮ সালেও এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। নিসর্গ’ থেকে সম্পাদক এবং লেখকদের অনুমতি ছাড়াই অনেকগুলো লেখা নিয়ে আলোচিত ‘কবি’ নিজের সম্পাদনায় একটি বই বের করেছিলেন। এর জল অনেকদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিলো।
What can I say? This is a shameless effort. If it was done in any country in the western hemisphere, there will be serious consequences both for the writer and publisher. Unfortunately, Bangladesh is a country where many people don’t know exactly how to separate uniqueness from influence, talent from plagiarism, and so on. In many/most western countries education system provide a site for the teachers to detect any plagiarism in students’ work as they have zero tolerance for it. So, from an early age, students become aware of this high proficiency word, ‘Plagiarism’.
Probably, by now, we became an accepting nation who can endure everything—from copying someone’s lines to changing our history to continuing the savage act to torture, kill, mutilate people’s body for the sake of religion to see flags waving from war criminals’ cars. So, it’s not a wonder that we will have to tolerate this ‘cut and paste’ method.
Now, the question remains if this really is plagiarism. Let’s glance at the definition of this word: “Plagiarism is the act of taking the writings of another person and passing them off as one’s own. The fraudulence is closely related to forgery and piracy-practices generally in violation of copyright laws”. According to this definition, the above poet should be convicted for plagiarism for sure though the enforcement of law is awaited to be seen. However, it would be nicer if both the poet and publisher come forward at least to apologize. This way, there name could be enlisted on Guinness Book of Bangladesh (lol) for apologizing in public, and honesty as well since we lack such practice as a nation. Thus, they could be role models for others.
One crucial thing to mention here is that Mizan Rahman is not the only poet who had copied Hassanal’s lines. I’ve seen them before in some other poets’ writings in a lesser extent; especially, some have copied lines from his Swatantra Sonnet and his epic, Nakhkotra O Manusher Prochhad. And, they are very significant poets. I like to clarify the fact that those lines were not influenced by his themes or style, but literally copying, and thus, plagiarizing. Since the longitudes of those copied lines are not as large as the above poet, and we are not talking about them here, I restrict myself from mentioning their names.
I’m surprised to see that plagiarism is becoming a contagious disease in our society and the people who have engrained this lowest quality within themselves in a novice way as Albert Einstein said: “The secret to creativity is knowing how to hide your sources” are trying to be creative people. And, when someone steals line after line from someone or even the entire book compiled by someone, what really can we say about these immoral acts except only that we are threatened by such moral degradation?
Again, it’s well accepted trying to write like others, working on the same thematic base, setting up the same tone, using same type of images, and so on in literature. However, it’s unfathomable when cut and paste, or stealing someone’s entire work occurs. It really hurts when “The seed ye sow, another reaps; The wealth ye find, another keeps; The robes ye weave, another wears; The arms ye forge, another bears” as Percy Bysshe Shelly said. It hurts the same way when a mother has to let her precious child call someone else ‘mother’. It bleeds profoundly from the mother’s heart and soul. And, what else is art to its creator than his/her own flesh and blood?
Thank you everyone for your comments on this issue. Also, many of my poet friends sent their concern through e-mails. I would like to thank them. Some poets also came forward at facebook.com and express their thoughts about the issue. I would like to thank them too. ‘Provab’ or influence of someone’s poetry is widely seen throughout the history in all over the world. But, directly copying someone, which happened in this case, and not mentioning the source is not acceptable. Mainly, that is why I wrote the article. I will also keep myself open for the legal action, unless the publisher/writer comes forward with compensations and withdraw the book from the market.
হাসানভাই
রাগতেছেন ক্যান? মিজান ভাই এর লাইন গুলো অনুপ্রেরিত-পৃথিবীর কোনদেশের কপিরাইটা আইন তিনি ভাঙেন নি। আপনার ভাবের ঘরে চুরি করেছেন মাত্র। আপনার ত মশাই খুশি হওয়া উচিত যে আপনার চিন্তা এবং ভাব ছড়িয়ে যাচ্ছে চারিদিকে-তবে হ্যাঁ-আপনাকে স্বীকার না করে লেখাটা উনার ঠিক হয় নি। তবে মিজান এর শব্দ চয়ন আমার বেশ ভালোই লেগেছে।
@বিপ্লব পাল,
হুবহু তুলে দেয়া আর ভাবের ঘরের চুরি এক কথা নয়। অনুগ্রহ করে পৃথিবীর দু’একটি দেশের কপি রাইট আইন তুলে দিয়ে আমাকে আলোকিত করুন। আপনি লিখেছেন,
আমার লেখায় যদি মনি হয় যে আমি রাগান্বিত তবে দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি শুধু একটি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছি যথাযথ তথ্য তুলে ধরে।
ঊঠতি কবির এই ধরণের কাজের তীব্র নিন্দা জানাই।(মিজান রহমানকে ধন্যবাদ(!) বন্যা আপার বই থেকে কিভাবে কাট-পেস্ট করে বিবর্তন নিয়ে বই লেখা যায় বুদ্ধিটা দিয়ে দিলেন)।তবে অন্যের কবিতা চুরি করে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া বোধহয় জায়েজ।আকাশ মালিক ভাই কি বলেন? 🙂
I want to add a title to Mr. Mizan……… DIRTY CHORA MIZAN….
Need to hear Chora Mizan’s comments on this immoral act….
বেদখল শব্দটা মনে হয় অনেক কম হয়ে যায় অপরাধের তূলনায়।
তবে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভদ্রলোকের চোরাই বুদ্ধির প্রসংশা করতে হয়। আদালতে গেলে কি হবে বুঝতে পারছি না, কারন থিম, শব্দ গঠন দেখে সন্দেহের অবকাশ না থাকলেও চোর সাহেব হুবহু বসাননি। আমি অবশ্য জানি না আদালতে এসব কেস কিভাবে হ্যান্ডল করা হয়।
তবে এনার সাহসও আছে বলতে হবে, খোদ কবির কাছেই চোরাই প্রোডাক্ট যেচে যেচে গছানো?
ডঃ এমাজুদ্দিনের নামে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে আমিও অবাক হয়েছিলাম। তবে অবিশ্বাসই বা করি কিভাবে। বহু বছর আগে দবির-সবির খ্যাত আইন আদালতের ডঃ গাজী শামসুর রহমানের নামেও আইনের বিদেশী কোন বই হুবহু চোথা মারার দায়ে মামলা হয়েছিল।
খুবই বিরক্তিকর একটা ঘটনা, আপত্তিকর তো বটেই!! আপনি কি এখানে, মানে মুক্তমনায় ছাড়া, আর কোথাও কোনরকম প্রতিবাদ বা ওরকম কিছু লিখেছেন? আমি আরো একটা ব্যাপারে একটু অবাক হয়েছি, মিজান রহমান তো নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে আপনাকে তার বইটা দিলেন! উনি কি বোঝেনওনি যে উনি আপনার কবিতা্র প্রভাব শুধু অনুসরণ করা পর্যন্ত আর থেমে নেই, প্রায় হুবহু অনুকরণ করে ফেলেছেন?!
@স্নিগ্ধা,
জ্বী ফেসবুক ছাড়াও আমার ই-মেল লিস্ট থেকে বেশ কয়েকজনকে লেখাটা মেল করা হয়েছে। একটা কপি ওই বইয়ের প্রকাশকের বরাবরে পাঠিয়েছি। দেখা যাক কি উত্তর আসে। …বইটা তিনি আমাকে নিজেই দিয়েছিলেন সম্ভবত এই ভেবে যে আমি ধরতে পারবো না। কি জানি কার মনে কি আছে! সারা জীবন তো কারো একটি ‘শব্দবন্ধ’ও নিজের লেখায় ঢোকার চেষ্টা করলে বাঁকা হয়ে ওটাকে বন্ধ করার চেষ্টা করে আসছি। তবে হ্যাঁ, স্বতন্ত্র সনেট বইটা যেভাবে বাংলাদেশে পরিচিতি পেয়েছে; প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ দুটোই শেষ, প্রতিনিয়ত বইমেলায় বা অন্যান্য আলোচনায় এই সনেটগুলোর কথাও উঠছে; তাতে এই বইয়ের কবিতা দ্বারা তরুণরা আকৃষ্ট হবেন সেটা স্বাভাবিক। এমনকি এই নতুন ধারায় (শেক্সপীয়রিয়ান ও পেট্রারকান ধারা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা) যদি কেউ কবিতা লেখেন মানে আঙ্গিকটা গ্রহণ করেন তাতে আমি খুশী, কিন্তু হুবহু আমার শব্দমালা নকল করার অধিকার কারো নেই। শুধু আমার কেনো কারো শব্দমালাই নকল করার অধিকার অন্যকারো নেই। মনে পড়ছে তরুণ বয়সে রুদ্র মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ্ আল মাহমুদের একটি লাইন বসিয়েছিলেন তাঁর কবিতায়, কিন্তু যথাযথ ভাবে ইটালিকে লাইনটি লিখে পাদটিকায় আল মাহমুদকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিলো। এটাইতো নিয়ম।
অসততা আর কাকে বলে।আমার আমাদের মৌলিকত্ত যে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এটি তার একটি বড় উদাহরন। :-/
মানুষ নীজেকে কিভাবে ঠকায়, কিভাবে ণীজেকে এতটা ছোট করে ?
এদের জন্য করুনা ছাড়া আর কিবা করার আছে ?
আমি জানি না যারা অন্যের মৌলিকত্বকে নিজের বলে চালিয়ে দেয় তারা কোন স্তরের মানুষ। তবে এদের জন্য আমার করুণা হয়। সাহিত্যে থীম অনুকরন করা কোন বিরল ঘটনা নয় বা আমি এমন কি একে কোন খারাপ কাজ ও বিবেচনা করি না। কোন কোন ক্ষেত্রে এটি অনিচ্ছা বা অবচেতন ভাবেই হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের প্রিয় কবি হাসান আল আব্দুল্লাহ’র ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা সহ্য করা অসম্ভব। তীব্র নিন্দা জ্ঞ্যাপন করছি এই অপকর্মের।
সচলে সম্প্রতি এক অধ্যাপক বর্তমানে দেশে মিডিওকারদের জয়জয়কার নিয়ে একটা লেখা দিয়েছিলেন, এই লেখাটা পড়ে এতদিনে তার মর্ম বুঝলাম।
হাসান,
আপনার মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। সত্যিই খারাপ লাগলো খবরটা শুনে। কবিতা কম বুঝি, তারপরেও মিজান সাহেবের কবিতাগুলো পড়ে মনে হল আপনার কবিতার ‘অসামান্য প্রভাব’! আগে ছোট বেলায় যখন সেবা প্রকাশনীর বই পড়তাম তখন ওয়েস্টার্ণ বইগুলোর কোন কোনটার মলাটে লেখা থাকতো – ‘বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে’। মিজান সাহেব সেরকম মলাটে লিখে দিলে পারতেন – “এক প্রবাসী কবির কবিতার ছায়া অবলম্বনে।” 🙂
চৌর্যবৃত্তি আসলে মহামারী আকার ধারণ করেছে সাম্প্রতিক সময়ে। কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করি, যা সম্প্রতি আমার নজরে এসেছে।
১) দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের রূপ, রস ও সুন্দর : নন্দনতত্ত্বের ভূমিকা নামে একটি বই আছে। জুলফিকার নিউটন নামে এক “গবেষণাধর্মী লেখক”, যার পরিচয় ফ্ল্যাপে দেয়া আছে এই বলে – “বাংলা ভাষায় মুষ্টিমেয় যে কজন প্রত্যয়ী লেখক ও গবেষক আছেন, তাদের মধ্যে জুলফিকার নিউটন অন্যতম” – আদ্যোপান্ত মেরে দিয়ে একটি বই লিখেছেন – শিল্পের নন্দনতত্ত্ব । এ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম সুমন লিখেছেন – ”
নিউটের চৌর্যবৃত্তির নমুনা জানতে পড়ুন এখানে, এবং এখানে।
২) রোকেয়া কবীর ও কবি মুজিব মেহদী (যিনি মুক্তমনায়ও লিখে থাকেন মাঝে সাঝে) `মুক্তিযুদ্ধে নারী’ নামে একটি বইয়ের পান্ডুলিপি তৈরি করেন। ২০০০ সালে বইটির পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমীতে জমা দেয়া হয়। পরে বিশেষজ্ঞ কমিটির (আনিসুজ্জামান, সেলিনা হোসেন প্রমুখের সমন্বয়ে গঠিত) সুপারিশসহ দ্রুত জমা দিতে হবে শর্তে ফেরত দিলে সে অনুযায়ী সংশোধন করে ২০০১-এ আবার বাংলা একাডেমীর যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২০০১-এ জোট সরকার এসে বাংলা একাডেমীর ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ : দলিল ও ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ প্রকল্প’ স্থগিত করে, এবং কোন একটা মন্ত্রনালয়কে দায়িত্ব দেয়। অনেক দিন পরেও গ্রন্থটি প্রকাশের কোনো উদ্যোগ না দেখে তাঁরা মন্ত্রণালয় থেকে পাণ্ডুলিপি প্রত্যাহার করে নেবার আগ্রহের কথা জানান। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সাড়া তারা পানিনি।
কিন্তু হঠাৎ দেখা গেলো ২০০৮ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধে নারী’ নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে এশিয়া পাবলিকেশন্স থেকে। বইটিতে সম্পাদক হিসাবে নাম রয়েছে দেশের দুজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি জসিম উদ্দীন আহমদের। আর লেখক হিসাবে মেহেদী হাসান পলাশের নামে দৈনিক ইনকিলাবের স্টাফ রিপোর্টারের। কি মজা, কষ্ট করলেন রোকেয়া কবীর ও কবি মুজিব মেহদী, আর মলাটবদ্ধ হল মেহেদী হাসান পলাশের নামে। এ নিয়ে মুজিব মেহেদীর প্রতিক্রিয়া দেখুন এখানে। হাসান মোর্শেদের একটা লেখা এখানে।
৩) ইউনিকোড আসার পর ব্যাপারটা আরো প্রকট। কিছুদিন আগে মুক্তমনায় ফরিদ আহমেদ ‘আমাদের বীরাঙ্গনা নারী এবং যুদ্ধ শিশুরাঃ পাপমোচনের সময় এখনই’ নামে একটি তথ্যপূর্ণ লেখা লিখেছিলেন। এরপর দিন থেকে দেখি এক ব্লগার প্রথম-আলো ব্লগে লেখাটা একটু রদবদল করে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ শুরু করেছেন। আমি ব্যাপারটা দেখে প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ করেন মুক্তমনার আরো কয়েকজন। শেষ মেষ লেখক তার শেষপর্বে গিয়ে ফরিদের নাম উল্লেখ করে ‘কৃতজ্ঞতা’ প্রকাশ করেন। আমার চোখে না পড়লে হয়ত তিনি সেটাও করতেন না।
আমার লেখা নিয়েও একই অভিজ্ঞতা আছে আমার, যদিও আমার লেখার ক্ষেত্রে আমি প্রতিবাদ করিনি। একদিন আমার একটা লেখার অংশবিশেষ উদ্ধৃত করে গুগলে সার্চ দেই। দেখি আসিফএম নামে এক “লেখক” যৌবন যাত্রা আর কোথায় কোথায় আমার বিভিন্ন লেখা হুবহু কপি করে করে আর্টিকেল লিখছেন আর ‘আঁতেল’ সেজে বিতর্ক চালাচ্ছেন। এখন যৌবন যাত্রায় গিয়ে প্রতিবাদ করার রুচি আমার হয়নি, ইচ্ছাও নয়। গুগলে সার্চ না করলে ব্যাপারটা আমি জানতামও না। আমি নিশ্চিত এ ধরণের ঘটনা আরো অনেকেরই আছে।
সাহিত্যের যাবতীয় কুম্ভীলকদের শাস্তি কামনা করছি।
@অভিজিৎ রায়,
‘এক প্রবাসী কবির কবিতার ছায়া অবলম্বনে।’
কবি তো কবিই; তিনি আমেরিকায় বসবাস করুন বা চাঁদে থাকুন। তাহলে ‘একজন প্রবাসী কবির কবিতার ছায়া’ কেনো! মিজান যেভাবে আমার কবিতা ব্যবহার করেছেন তাতে তাঁর প্রতিটি কবিতায় পাদটিকা দেয়া উচিৎ ছিলো যথাযথ ভাবে কবির নাম উল্লেখ করে। আপনার লেখা একজন কপি করে যদি লিখতো ‘একজন প্রবাসী বিজ্ঞানীর লেখা থেকে’ সম্ভবত আপনি প্রীত হতেন না; বরং অপমানিতই হতেন।
তবে লেখাটি পড়ে তা নিয়ে আলোকপাত করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথের অনেক লাইনই দেখেছি কবিদের কপি করতে; কিন্তু ওইসব প্রতিষ্ঠিত শব্দমালা কপি করলে সবাই বুঝতে পারেন কোথা থেকে কপি করা হলো; যদিও আমি মনে করি তারপরেও সূত্র উল্লেখ একান্ত প্রয়োজন। আজ মিজানের এই কপি করার প্রতিবাদ না করলে, দুদিন পরে হয়তো মিজানই বলতে থাকবেন যে আমি তার থেকে কপি করেছি। অবস্থাটা বুঝুন! যে দেশে স্বাধীনতার ঘোষক পর্যন্ত পাল্টে যায়, সেদেশে কটি কবিতার লাইন আরেকজন দখলে নিয়ে নিতে তেমন বাধার সৃষ্টি হবে বলে মনে হয় না। তাই এই প্রতিবাদ।
@হাসানআল আব্দুল্লাহ,
‘একজন প্রবাসী কবির কবিতার ছায়া অবলম্বনে’ বলে আমি আসলে রসিকতা করেছিলাম। সেজন্য প্যারার পরে স্মাইলী সাইন দিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পারছি স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে এ ধরনের রসিকতা করা উচিৎ হয়নি। এখন তা হলে পরিস্কার করে বলি- মিজান সাহেব যা করেছেন – তা তিনি ছায়া লিখুক আর কায়াই লিখুক – সেটা গ্রহণযোগ্য হত না। নকলবাজ আসলে নকল্বাজই। আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম – ছোট বেলা থেকেই এই ‘ছায়া অবলম্বনে’ মার্কা নকল বই পড়ে মানস জগৎ গড়ে উঠলে সেই জেনারেশন থেকে খুব বেশি কিছু আশা করা বৃথা। পুরো জাতিই ছায়ার পিছনে ঘুর ঘুর করতে করতে স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে ফেলেছে।
আপনি মিজানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা ভাবছেন?
@অভিজিৎ রায়,
ধন্যবাদ। আমি এ ব্যাপারে আমার ঢাকাস্থ প্রতিনিধিকে খোঁজ-খরব নিতে বলেছি। বাংলাদেশে কপিরাইট আইন নাকি এখন জোরালো হয়েছে; বইমেলায় অন্য প্রসঙ্গে একথা বলেছিলেন ঢাকার এক বড়ো প্রকাশক। দেখা যাক কি করা যায়।
“ছোট বেলা থেকেই এই ‘ছায়া অবলম্বনে’ মার্কা নকল বই পড়ে মানস জগৎ গড়ে উঠলে সেই জেনারেশন থেকে খুব বেশি কিছু আশা করা বৃথা।” খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তাই আমাদের মৌলিকত্বের বড়ো অভাব। কপি করে দিলে যখন ছাপার অক্ষরে বেরিয়ে যায়, এবং তা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাও হয়, তখন কষ্ট করে আর নতুন ভাবে চিন্তার দারকার পড়ে না!
@অভিজিৎ,
নিউটনের অনুবাদ মোটামুটি অখাদ্য। জোর করেও গেলা যায় না। :-X দুইটা বই কিনে আমার শিক্ষা হয়া গেছে। পুরাই লোকসান।
কত যে বিশেষন দিয়ে তার নামের আগায় পাছায় ভরায়া দিলো!! আমি ভাবলাম কি না কি!!! পয়সা নষ্ট!! :-Y
@তানভী,
আমি মূল বিষয় নিয়ে জুড়ালো আলোচনা চলছে, চলুক।
আমি দেখছি অন্য কিছু। তানভীর স্মাইলী বাছাই অসাধারণ । দারুণ যুতসই হয়েছে টপিকের সাথে।