বিগত কিছুদিনের ছাত্র সংঘর্ষে সবার সামনে আবারো ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা/অপ্রয়োজনীয়তার প্রশ্নটি চলে এসেছে।মানুষ পক্ষ এবং বিপক্ষ এই দু’দলে বিভক্ত, কিন্তু আপাত সহজ কোন সমাধান কারোর কাছেই নেই। দু’পক্ষরই উদ্দেশ্য বর্তমান ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত মুক্ত করা, শুধু তাঁদের পন্থা ভিন্ন। যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে তাঁদের যুক্তি হল বর্তমান ছাত্র রাজনীতির দৈন্যদশাঃ দলীয় কোন্দল, চাঁদাবাজি, হল দখল, সংঘর্ষ, মৃত্যু। তাই তাঁরা এই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পক্ষে। অন্য পক্ষ যারা ছাত্র রাজনীতি বলবৎ রাখার পক্ষে তাঁরাও এই দৈন্যদশার অবসান যে চান না তা নয়, কিন্তু এ জন্য তাঁরা সরাসরি ছাত্র রাজনীতিকে দায়ী করতে রাজী নন। বরং ছাত্র রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সত্যিকার ভাবে দায়ি যে কারণ গুলো তা খুঁজে বের করার পক্ষপাতি, যদিও সমস্যার মূলে খুব কম মানুষই যায়। একটি কথা বারংবার আলোচনায় উঠে আসে তা হল দলীয় লেজুড়ভিক্তিক ছাত্র রাজনীতির কারণেই আজ এই দশা, কিন্তু এর সহজ কোন সমাধান কেউ বলতে পারেন না। কিভাবে বর্তমান অবস্থায় ছাত্র রাজীতিকে দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখা সম্ভব সেটা নিয়ে কেউ আলোচনা করেন না। এ কারণে সহজ সমাধান হিসেবে আমরা পাই ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করাকে।
মূল আলোচনায় প্রবেশের আগে একটি বিষয়ে আলোকপাত করা জরুরী বলে মনে করি। প্রশ্ন হল রাজনীতি বলতে আমরা কি বুঝি? রাষ্ট্রের বা সরকারের বা জনগণের বিভিন্ন সমস্যা, সুযোগ সুবিধে, ভাল মন্দ নিয়ে কথা বলা বা সমালোচনা করা কি রাজনীতি? বর্তমানে পাহাড়ের অস্থিতিশীলতা নিয়ে কথা বলা বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথা বলা কি রাজনীতি? নাকি এই সব বিষয়ে ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসাবিদ, প্রকৌশলীবিদ, সামরিকবিদ বা সরকারী চাকুরীজীবি বা খেটে খাওয়া মানুষের কথা বলা অনুচিত? ছাত্রদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা বা শিক্ষকদের নিজেদের সমস্যা নিয়ে বা শ্রমজীবি মানুষের নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলা কি রাজনীতি? তাহলে রাজনীতি কি শুধু নির্বাচনে প্রতিদন্দ্বীতা করা আর না করার মাঝেই সীমাবদ্ধ? নাকি চাঁদাবাজি, হল-দখল, জমি-দখল, খাল-দখল, সন্ত্রাস এই সব হল রাজনীতি।
আমার মনে হয় না রাজনীতির মাঝে এই সব সন্ত্রাস কেউ চাইবে বা এগুলোকে নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে কেউ থাকবে। তাহলে বাকি রইল দেশ ও দেশের মানুষের বা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলা। এখন প্রশ্ন আসতে পারে এর কি প্রয়োজন আছে বা ছাত্রদের, শিক্ষকদের, বিভিন্ন পেশাজীবিদের বা শ্রমজীবি মানুষের কি দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে? আপনার কি মনে হয়? আর দেশের কথা যদি এই সকল শ্রেনীর মানুষেরা চিন্তা না করে তবে কারা তাঁদের পক্ষে চিন্তা করবেঃ কর্পোরেট ব্যবসায়ীবৃন্দ আর বিদেশী কূটনীতিকবৃন্দ?
যদিও লেখাটির মূল আলোচনা ছাত্র রাজনীতি নিয়ে কিন্তু আমার মতে ছাত্র রাজনীতি পৃথক কোন বিষয় নয়। এর সাথে শিক্ষক রাজনীতি , বিভিন্ন পেশাজীবিদের রাজনীতি বা শ্রমজীবি সংগঠনের বিষয়গুলো সম্পৃক্ত। কোনটিকে অন্যটির থেকে পৃথক করে দেখার অবকাশ নেই। দলীয় লেজুরভিক্তিক ছাত্র সংগঠন বা শিক্ষক সংগঠন বা পেশাজীবি বা শ্রমজীবি সংগঠনের বিরোধিতা আমিও করি কিন্তু সেই সঙ্গে এও বলতে চাই যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই সব সংগঠনের প্রয়োজনীয়তাও অপরিসীম। প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি প্রাপ্ত বয়স্কের অধিকার রয়েছে এবং উচিতও প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে সজাগ থাকা এবং সে আলোকে নিজের মতামত প্রদান করা। কোন আইন করে নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয় যদি না সে গোষ্ঠী বা সংগঠন আদর্শগত ভাবে হিংসাত্বক বা ধ্বংসাত্বক কাজে যুক্ত থাকে। তাই আইন করে ছাত্র বা শিক্ষক বা কোন পেশাজীবি বা শ্রমজীবি সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা সম্ভবপর নয় বা করাও উচিত নয় বলে আমার মনে হয় । তাহলে এই গোলক ধাঁধার কি কোন সমাধান নেই? দলীয় লেজুড়বৃত্তি ব্যতীত সংগঠন কি সম্ভবপর নয়? সবাই দলীয় লেজুড়বৃত্তি মুক্ত সংগঠন কামনা করেন কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব সেটা নিয়ে কেউ আলোকপাত করেন না। আমি এখানে একটি সম্ভাব্য কারণ নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
আমার মতে এর একটি মূল কারণ হচ্ছে আমাদের বর্তমান গণতান্ত্রিক পদ্ধতির একটি বড় দুর্বলতা এবং তা হল সঠিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের অক্ষমতা। আঞ্চলিক ভেদে জনসংখ্যার অনুপাতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠির প্রকৃত চিত্র চিত্রিত করে না। বর্তমান জনপ্রতিনিধি নির্বাচন পদ্ধতি পুরোপুরি দলীয় নির্ভর নির্বাচন পদ্ধতি। এখানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত না হয়ে দলীয় প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। বাস্তবতায় জনগণও ব্যক্তিকে ভোট না দিয়ে একটি দলকেই ভোট দেয়। এই চিত্রটি যে শুধু আমাদের দেশেই তা নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অগ্রসর দেশেগুলোতেও জনগণ দলকেই নির্বাচন করে। এ কারণে সে সব দেশেও ঘুরে ফিরে একেক বার একেক দল সরকার গঠণ করে। দলীয় ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি খুব কমই দলীয় আনুগত্যের বাহিরে যেতে পারেন। তাই এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কখনই জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংসদে গমণ করেন না। এই চিত্রটি করুণ আকার ধারণ করে উন্নয়শীল বা অনুন্নত দেশগুলোতে যেখানে শিক্ষার হার অনেক কম এবং দারিদ্রের হার অনেক বেশি। দলীয় আনুগত্য তখন সকল প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করে এবং সেটারই বহিঃপ্রকাশ দেখি দলীয় লেজুরভিক্তিক সংগঠন গুলোতে।
তবে আনুগত্য শুধু দলের প্রতি সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়। বর্তমান পদ্ধতিতে যেহেতু ছাত্র বা শিক্ষক বা শ্রমিক বা পেশাজীবিদের সরাসরি আইন প্রণয়নে কোন ভুমিকা থাকে না তাই তাঁদের যে কোন কিছুর জন্য আঞ্চলিক জনপ্রতিনিধির পেছনেই অবস্থান নিতে হয়। এভাবেই জনপ্রতিনিধিরা হয়ে উঠেন ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে, এবং এভাবেই তাঁরা বিভিন্ন পেশাজীবিদের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠে আর এভাবেই শুরু হয় দলের ভেতরেও উপদল। দলীয় লেজুরভিক্তিকতার পাশাপাশি এই ব্যক্তিনির্ভরতাও দায়ী পেশাজীবি ও শ্রমজীবি সংগঠন গুলোর মাঝে সন্ত্রাসের বিষ ছড়াতে। তাই আমাদের প্রয়োজন এই পেশাজীবিদের সরাসরি সরকার ব্যবস্থায় প্রবেশ করানো যেন তাঁদের অন্যদের উপর নির্ভর না করতে হয়।
এ কারণে আমি মনে করি প্রকৃত রিপ্রজেন্টেটিভ বা জনপ্রতিনিধি শুধু অঞ্চলভেদে নির্বাচন না করে জনগণের মাঝে যত প্রকার বৈচিত্র রয়েছে সব ক্ষেত্র হতেই স্যাম্পল আসা উচিত। তাই অঞ্চলভেদে প্রতিনিধির পাশাপাশি প্রতিনিধি আসা উচিত বয়স অনুপাতে, ধর্মীয় বিশ্বাস অনুপাতে, বিভিন্ন পেশাজীবিঃ ছাত্র, শিক্ষক, চিকিতসা, প্রকৌশলী অনুপাতে,, বিভিন্ন শ্রমজীবি পেশা অনুপাতে, লিঙ্গ অনুপাতে। অর্থাৎ প্রতিটি বিভাগ হতেই প্রতিনিধি নির্বাচন করে যে সরকার ব্যবস্থা গঠিত হবে সেখানে সকল মানুষের মনোভাব উঠে আসবে। অন্যথায় জনগণ এর চিন্তার সাথে সরকারের চিন্তার মাঝে পার্থক্য রয়ে যাবে।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে এভাবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা কতটা বাস্তব সম্মত। যদি শুধু মাত্র ছাত্র প্রতিনিধির কথাই উদাহরণ হিসেবে বলি তবে প্রতিটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল একটি মাত্র ছাত্র সংসদ থাকবে যারা নির্বাচিত হবে সরাসরি ছাত্রদের ভোটের মাধ্যমে। এভাবে প্রতিটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত সংসদ নির্বাচন করবে তাঁদের কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী পরিষদ ও সভাপতি। নির্বাচিত সভপতি একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য (দু’বছর) সংসদে উক্ত সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন। এভাবে প্রতিটি পেশাজীবি বা ধর্মীয় গোত্র বা আদিবাসী সহ সকল শ্রেনীর মানুষ তাঁদের নিজ নিজ সংগঠনের মাধ্যমে তাঁদের প্রতিনিধি পাঠাবেন সংসদে। এই প্রক্রিয়া আরো সহজতর করা সম্ভম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে। প্রতিটি প্রাপ্তবয়ষ্ক নাগরিক যখন ভোটার হবেন তখন তিনি তাঁর বয়স, ধর্ম, পেশা, অঞ্চল এগুলো উল্লেখ করবেন। পরবর্তীতে নির্বাচনের সময় তিনি তাঁর ক্যাটাগরি অনুসারে ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে একই ব্যক্তি একই সংসদে নিজ নিজ বয়স, ধর্ম, পেশা ও অঞ্চলভেদে বিভিন্ন প্রতিনিধি প্রেরণের মাধ্যমের সংসদকে আরো প্রতিনিধিমুলক করবেন।
এই ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় চলে আসে। এক কক্ষ বিশিষ্ট বনাম দু’কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে দু’কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের পক্ষপাতি। বিভিন্ন পেশা, ধর্ম, বয়স এবং অঞ্চল অনুপাতে যে সংসদ গঠিত হবে সেটাকে আমি যেহেতু প্রকৃত প্রতিনিধিমুলক বলে মনে করি তাই এই সংসদকে আমি রাখতে চাই উচ্চ কক্ষে যাঁদের কাজ হবে কেবল আইন প্রণয়ন বা বিভিন্ন জাতীয় নীতি প্রণয়ন বা সংবিধান পর্যালোচনা করা। শুধু মাত্র অঞ্চলভেদে একটি সংসদ (বর্তমান সংসদ) হতে পারে যাঁদের কাজ হবে দেশ পরিচালনা করা এবং জনগণের করের অর্থের যথার্থ ব্যবহার করা সংবিধান অনুসারে। নিম্ন কক্ষ হবে দেশের নির্বাহী বিভাগ এবং উচ্চ কক্ষ হবে আইন প্রণয়নকারী বিভাগ এবং বিচার বিভাগ হবে আইন প্রয়োগকারী বিভাগ। আবার শুধু মাত্র একটি সংসদ দিয়েও দেশ পরিচালনা সম্ভবপর হবে যদি সেই সংসদে সকল শ্রেনীর জনগণের প্রতিনিধির উপস্থিতি থাকে। সে ক্ষেত্রে সংসদ হবে সকল ক্ষমতার উৎস এবং সরকার হবে সংসদের একটি ক্ষুদ্র অংশ। কিন্তু বর্তমান সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদ এবং সরকার একই প্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারের বা সংসদের জবাবদীহিতার কোন উপায় নেই। ভোটাধিকার প্রয়োগ হচ্ছে জনগণের ক্ষমতার উৎস এবং সেই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যখন জনগণের চিন্তার প্রতিফলন ঘটাতে বারংবার ব্যর্থ হয় তখনই জনগণ অসিহুষ্ণ হয়ে ধ্বংসাত্বক পথ অবলম্বন করে। তাই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে জনগণের অবস্থান নিশ্চিত করার জন্যই প্রয়োজন সংসদে সকল শ্রেনীর প্রতিনিধি প্রেরণ।
রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমার দেশের সমস্যা এবং সরকারের ভাল মন্দ নিয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে। তেমনি অধিকার রয়েছে যে কোন সংগঠনে জড়িত হবার হোক না তা বিজ্ঞান ভিক্তিক কিংবা সাংস্কৃতিক ভিক্তিক বা ধর্ম ভিক্তিক বা রাজনীতি ভিক্তিক। নিজে ছাত্র বা শিক্ষক হয়েও যদি নিজের শিক্ষা কার্যক্রমকে ব্যহত না করে দেশ গঠনে বা সমাজ গঠনে কোন ভুমিকা রাখতে পারি তবে তা কেন করবো না। কিন্তু আজ কোন আইন করে যদি বলা হয় যে ছাত্রত্ব/শিক্ষকতা অথবা দেশ গঠনের মাঝে কেবল একটিকেই বেছে নিতে হবে তাহলে তা কতটা যুক্তিযুক্ত? কিছু ছাত্র বা শিক্ষক ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে রাজনীতিতে যুক্ত হয় যাঁদের মাঝে নৈতিকতার কোন চিহ্ন নেই। তাঁদেরকে শাস্তি প্রদানের জন্য যদি সকল ছাত্র বা শিক্ষক সমাজের উপর আঘাত আনি সেটা কতটা যুক্তিযুক্ত? শিক্ষক সমাজকে আমি মনে করি একটি জাতির চক্ষু স্বরুপ এবং একজন শিক্ষককের হওয়া উচিত একজন দার্শনিকের মত। তিনি শুধু পাঠ্যবই থেকেই শিক্ষা দিবেন না তিনি সেই শিক্ষাকে নিজের মাঝে ধারণ করবেন যা থেকে ছাত্ররা বা সমাজের অন্য ব্যক্তিরা শিক্ষা লাভ করতে পারে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে আজ সেই শিক্ষক সমাজ নেই। সমাজের অবক্ষয়ের এটাও একটি কারণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমরা প্রবেশ করেছি এটা সত্য , কিন্তু সেই সাথে উপেক্ষা করেছি শিক্ষক সমাজকে আর মাথায় তুলে নিয়েছি জনপ্রতিনিধিদের। একজন জনপ্রতিনিধি কেবল দেশকে শাসন করতে পারে, কিন্তু একজন শিক্ষক দেশকে বা সমাজকে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই প্রয়োজন উন্নত চরিত্রের মানুষদের শিক্ষকতার পেশায় আসা এবং সাথে সাথে রাজনীতিতেও আসা।
আলোচনাটা যেহেতু হাইপোথিতিকাল(কারণ আমি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখি না) তাহলে আমিও একটু হাইপোথেসাইজ করি- আমি আগন্তুক ভাইয়ার পয়েন্টটা ছাড়া ছাত্র রাজনীতির পক্ষে তেমন কোন ভাল যুক্তি দেখছি না। তো সরকার যদি ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে এবং দেশ থেকে জামায়াত-শিবির-ইসলামী দলগুলো যদি চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় তাহলে নিশ্চয়ই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধকরণে কোন সমস্যা নেই?
ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আমার আপত্তির কারণটা পয়েন্ট আকারে দেই:-
১) ছাত্র রাজনীতি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হল জ্ঞানচর্চার সর্বোচ্চ স্থান। জ্ঞানচর্চার জন্য গবেষণা অপরিহার্য আর গবেষণার জন্য স্থিতিশীল পরিবেশের কোন বিকল্প নাই। ছাত্র রাজনীতি, তা সুস্থ হোক আর অসুস্থই হোক, কোনমতেই এই স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে পারবে না।
২) ছাত্র রাজনীতি্র পড়াশুনা থেকে ছাত্রদের মনযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আমাদের দেশে রাজনীতি হল শর্টকাটে বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান হওয়ার সর্বোৎকৃষ্ট রাস্তা। ছাত্ররা এই রাস্তায় হাটা ধরবে না এমন নিশ্চয়তা তো নেই।
৩) ছাত্র রাজনীতিকে দলীয় লেজুড়বৃত্তি থেকে পৃথক রাখা এক রকম অসম্ভব বলেই মনে করি। ছাত্ররা রাজনীতিতে ঢুকবে আর রাজনৈতিক দলগুলো তাদের উপর প্রভাব খাটাবার চেষ্টা করবে না ভাবতে কষ্ট হয়।
যে কোন ছাত্র সংগঠণের সাথে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের এফিলিয়েশন বা লায়াসন যদি অবৈধ করা যায়, তবেই আমার মনে হয় “অরাজনৈতিক” ছাত্র সংগঠণ গঠণ করা সম্ভব। তাছাড়া ছাত্র সংগঠণ ছাড়া আমি অন্যসব অঙ্গসংগঠণের গঠণেরও বিপক্ষে(বিশেষ করে শিক্ষকদের, বিশ্বের কোন দেশে শিক্ষকরা সক্রিয় রাজনীতি করে বলে আমার জানা নেই)। শ্রমিকদের যদি দল থাকতে পারে, ব্যবসায়ীদের যদি দল থাকতে পারে, তবে চাকরীজীবিদের দল থাকতে সমস্যা কি? সমাজের প্রত্যেকটি শ্রেণীর সদস্যরা যদি অঙ্গ সংগঠণ খুলে বসে তবে মূল দলের ভূমিকা কি বাকি থাকল?
@পৃথিবী,
ধণ্যবাদ আমার কথাগুলি পয়েন্ট করে বর্ননা করায়।
আমি এও বুঝি না যে আমরা ধরেই নিচ্ছি কেন যে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। একদিকে ধরে নিচ্ছি বা আশাবাদী হচ্ছি যে মূলধারার রাজনীতি একদিন কোন এক যাদুমন্ত্রবলে সংশোধিত হয়ে যাবে, তবে আশাবাদী হতে পারছি না ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা যাবে বলে? কেমন যেন শোনায়।
আমরা সবাই মিলিত ভাবে বন্ধ করার চাপ প্রয়োগ করলে বন্ধ হবার সম্ভাবনাই বেশী। হাসিনা তার গত সরকারের আমলে কিন্তু একবার ঘোষনা দিয়েছিলেন যে তিনি লীগ বন্ধ করতে রাজী যদি অন্যরাও সাড়া দেয়। অন্যরা স্বভাবতই রাজী হয়নি কারন তারা তখন বিরোধী দলে। এমন সুযোগেরই সদ্যব্যাবহার করতে হবে। এ ওকে দেখিয়ে যাতে পার না পেতে পারে সেজন্য সব দলের সমর্থকদেরই সরব হতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
হাসিনা কিন্তু হরতাল না করার ব্যাপারেও এই শর্তটাই দিয়েছিলো। কেমন অদ্ভূৎ মিল না তাই না। আসলে আমাদের রাজনীতিবিদরা আমদেরি মত। তারা জানে আমদেরকে বোকা বানানো কত সহজ।
পানি উপর থেকে নীচে গড়ায়। মূল রাজনীতির গুনগত মানের উন্নতি ছাড়া ছাত্র রাজনীতিতে এটা সম্ভব না। বিচ্ছিন্নভাবে শুধু ছাত্র রাজনীতির উন্নয়ন অসম্ভব। বিষয়টা সামগ্রিক। আর বন্ধ করাতো অসম্ভব একটা ব্যাপার। শিক্ষকদের সাদা, নীল প্যানেলতো বড় উদাহরন। আজকে লেজুড় ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন বন্ধ করলে আগামিকাল লাল,নীল, সবুজ প্যানেলে ভাগ হয়ে অবির্ভুত হবে নতুন বোতলে পুরন মদ।
অত্যন্ত ভয়াবহ ও প্রতারনাপূর্ন এক গনতান্ত্রিক ব্যাবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। মূলত পাঁচ বছর পর পর ভোট দেয়া ছাড়া অন্য সকল সাংবিধানিক অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত।
এটা এখন নির্বাচনে বিজয়ী দলের এমি দের স্বৈরতন্ত্র। দেখুন স্থানীয় সরকার কে শক্তিশালী না করার প্রশ্নে সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা অভূতপূর্ব ভাবে একমত। আমরা এদের মর্জির কছে এক কথায় জিম্মি। এমন এক নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তারা ভোগ করছে যা জনগনের জন্য ভয়াবহ।
প্রফেসর আনু মোহাম্মদকে রাস্তায় ফেলে যে ধোলাইটা করা হলো এর মধ্যে একটা মেসেজ আছে সবার জন্য। যারাই জনগনের সার্থে কথা বলবে তাদেরকে পিট্টি দেয়া হবে। আমদেরকে বিপল্প রাজনীতি খুঁজতে হবে। কারন শাষক দল দুটির মধ্যে এক ধরনের সমোঝতা আছে।
তারা পরস্পরের দূর্নীতি নিয়ে বেশী একটা ঘাটাঘাটি করেনা কেবল মাত্র কৌশলগত প্রচা্র ছাড়া। এই স্বর্গী্য ব্যাবস্থার একচুল পরিবর্তন এদের দ্বারা শুভ বুদ্ধির অনুপ্রেরনায় বা সেচ্ছায়
হবার কোন সম্ভাবনা আমি দেখিনা।
আলোচনা শুধু মাত্র ছাত্র সংগঠনের উপর না হয়ে সার্বিক ভাবে সকল সংগঠন নিয়ে হতে পারে। আমি যেমন বলেছি এর সাথে শিক্ষক, পেশাজীবি, শ্রমিজীবি, কৃষিজীবি সহ যে কোন সংগঠন জড়িত। দলীয় লেজুড়বৃত্তির জন্য শুধু মাত্র কেন ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধ হবে? কেন অন্যান্য সংগঠন নয়। আর সন্ত্রাস লালনের জন্য তো সবার প্রথমে মূল দলগুলোকেই নিষিদ্ধ করতে হয় যদি কাউকে নিষিদ্ধ করতেই হয়।
আসুন আমরা বরং একটু ফোকাস্ড হই। আলোচনা করি কিভাবে ছাত্র সংগঠন রেখেও এর উপর দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখা সম্ভব বা আদৌ সেটা কি সম্ভব? আমি যেমন বলেছি যে যদি ছাত্র বা অন্যান্য সংগঠন গুলোকে সরাসরি সংসদে প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য ব্যবহার করা হলে এক পর্যায়ে দলীয় নির্ভরতা কমে যেতে পারে। এর পক্ষে বা বিপক্ষে বলতে পারেন। অথবা নিজে কোন সমাধানের কথা বলতে পারেন। যেমন কারোর অভিমত হল সাময়িক ভাবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা গেলে দলীয় প্রভাব মুক্ত হতে পারেঃ এর পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দিন। কিংবা নুতন কিছু সমাধান দিন।
আমাদের মূল সমস্যা কিন্তু ছাত্র বা যে কোন সংগঠনে দলীয় প্রভাব। সে প্রভাব কিভাবে কমানো বা নিয়ন্ত্রন সম্ভব এই ব্যাপারে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখি।
@স্বাধীন,
অবশ্যই, ভাল টপিক।
তবে প্রথমেই বলে রাখি যে আপনি যদি ক্যাম্পাসে দলীয় সংগঠন, মানে এখনকার মত লীগ দল বা শিবির বজায় রেখেই তাদের মূল দলের প্রভাবমুক্ত করার স্বপ্ন দেখেন তাহলে মনে হয় বড় ধরনের ভুল করবেন। আমার কাছে অন্তত এমন ধারনা অসম্ভবই মনে হয়।
আমি অবশ্যই ছাত্র সংগঠনের পক্ষে, তবে তা হতে হবে অরাজনৈতিক। অরাজনৈতিক সংসদও ছাত্রদের প্রত্যক্ষ ভোটেই নির্বাচন খুবই সম্ভব। তারাই হবে ছাত্র প্রতিনিধি। বিশ্বের উন্নত সব দেশে তাই হয়। তবে কঠোর নীতি থাকতে হবে যে ক্যাম্পাসে দলীয় কোন সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেলেই সদস্যপদ বাতিল।
ছাত্র সংগঠনগুলি কে সরাসরি সংসদে পাঠানোও মনে হয় না খুব বাস্তব সমাধান। দেশে কয় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, সংসদের পক্ষে কতজনের কথা শোনা সম্ভব?
সাময়িকভাবে বন্ধ করা আমার মতে কোন সমাধান নয়। একমাত্র অরাজনৈতিক সংগঠনই সমাধান। দেশের মূলধারার রাজনীতির সংস্কার কবে হবে কেউ বলতে পারেন? সে অপেক্ষায় থেকে আমরা কেন জেনে শুনে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও তাদের বিষ্ঠার গন্ধ ছড়াতে দেব? আবু বকর মাসুমের মত গরীব অসহায় পরিবার যারা সর্বস্ব বেচে ধার করে কত আশায় বুক বেধে ছেলেকে মানুষ করতে পাঠায় তাদের আমরা বলব যে, অপেক্ষা করুন, সুদিন আসছে, রাজনীতিবিদদের টাইট করে দিচ্ছি সহসাই, দূঃখিত হবার কিছুই নেই? রাজশাহীর নিহত মাসুম দেখেছি হাল চাষ করেছে, তার বাবা হাল চাষ করে ছেলেকে পড়িয়েছেন। এদেরকে এসব ত্তত্বীয় সংস্কার অপেক্ষার কথা বলে বুঝ দেওয়া যাবে?
@আদিল মাহমুদ,
আমিও সেটা অসম্ভব মনে করি।
কিন্তু সেই সাথে এটাও চিন্তা করছি অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনও কি আসলে সম্ভব? নাকি সেটাও একটি ধাঁধা?
ধরুন দলীয় সংশ্লিষ্টতা নিষিদ্ধ করা হল। এখন কেউ তবলিগের নামে করে তাঁদের কার্যক্রম ঠিকই চালিয়ে গেল। সরাসরি দলীয় নাম ব্যবহার করে না। শিবির কি সরাসরি জামাতের ছাত্র সংগঠন এমন প্রমান কি আছে? ধরুন ছাত্র লীগ তাঁদের নাম পরিবর্তন করলো, তাতেই কি দলীয় সংশ্লিষ্টতা দূর হয়ে গেল? কিংবা দলীয় সংশ্লিষ্টতার প্রমানই বা কিভাবে করা সম্ভব।
তাই আমার প্রশ্ন হল দলীয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেই কি দলীয় সংশ্লিষ্টতা বন্ধ হবে যদি না মূল কারণ চিহ্নিত করতে পারি।
@স্বাধীন,
– খুবই ভ্যালিড পয়েন্ট। আগামী মাস থেকে যদি দলীয় ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে নির্দলীয় ছাত্র সংগঠন শুরু করা হয় আমার ধারনা তাতে নুতন বোতলে পুরনো মদই ঢালা হবে। তবে বেশ কিছু সময় গ্যাপ দিলে কাজ হবার সম্ভাবনা বেশী।
এক্ষেত্রে আগন্তুকের পয়েন্ট আসলেই চিন্তা করার মত হবে, শিবির এ দিক দিয়ে অনেক স্মার্ট। তাদের বিবিধ অরাজনৈতিক সংগঠন আছে।
তবে উপযুক্ত ব্যাবস্থাও নেওয়া যায় এর বিরুদ্ধে।
@আদিল মাহমুদ,
ছাত্র সংগঠগুলোকে সংসদে পাঠানোর কথা আমি বলিনি। বলেছি সংসদে তাঁদের একজন বা একাধিক প্রতিনিধি পাঠানোর কথা, যারা বর্তমান সাংসদদের মত জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হবেন। এভাবে সংসদে ছাত্র প্রতিনিধি, শিক্ষক প্রতিনিধি, শ্রমিক প্রতিনিধি বা কৃষক প্রতিনিধি সকলের প্রতিনিধি থাকার কথা বলেছিলাম মূল লেখায়।
@স্বাধীন,
দূঃখিত, বুঝতে ভুল করেছিলাম। হ্যা, এটা আসলেই ভাল পয়েন্ট। তবে আপাতত শিক্ষা মন্ত্রী উপমন্ত্রীর দায়িত্ব কিছুটা হলেও এর মধ্যে পড়ে, তারা কতটা পালন করেন বা করতে পারেন তা ভিন্ন কথা।
তবে তাও যত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাতে বেশ কজন প্রতিনিধিই লাগবে। আরো ভালভাবে চিন্তা করতে হবে। তবে আমার মনে হয় এই প্রতিনিধিদের কিছু বিন্যাস দরকার। যেমন সংসদে কয়েকজন থাকবে, তবে স্থানীয় পর্যায়েও থাকা দরকার।
@আদিল মাহমুদ,
এই অরাজনৈতিক সংগঠন এর রুপ কি রকম হবে বা কিভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব তা সময় নিয়ে একটু বিস্তারিত লেখার অনুরোধ রইল। এর মাধ্যমে হয়তো নুতন চিন্তার খোরাক হবে। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
@স্বাধীন এবং আদিল ভাই,
আমাদের তিনজনের মিল এই যে, তিনজনই আমরা স্বাপ্নিক।
আসলে আমাদের মূল পয়েন্ট শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস দূর করা বা নিদেনপক্ষে কমানো।
নির্দলীয় ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে সংসদ নির্বাচন হলেও হানাহানির পরিমাণ কমবে কিন্তু নির্মূল হবে না। কারণ সংগঠনগুলোর মধ্যে ভাবাদর্শগত দ্বন্দ্ব থেকেই যাবে।
আসলে এই শান্তির একমাত্র উপায় জেনেটিক ইঞ্জনিয়ারিং করে বিদ্বেষের জিন নির্মূল করা।
হানাহানির সম্ভাবনা কমানো এবং অসৎ মনোবৃত্তি কমানোর প্রথম পদক্ষেপ হওয়া উচিত নেতৃত্ব থেকে অছাত্রদের সরানো। আকাশকুসুম কল্পনা করে আসলে লাভ নেই। ধাপে ধাপে এগুতে হবে। রাজনৈতিক নোংরামি না থাকলেও প্রশাসনিক নোংরামি থাকবে। একমাত্র উপায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করা। তা আমাদের দেশের আইনের অপপ্রয়োগ সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবিদদের রক্ষাকবচই হয়ে উঠেছে!
দলীয় ছাত্রসংগঠন এই মুহূর্তে বন্ধ করলে শিবির এবং কেবলমাত্র শিবিরই হবে একমাত্র লাভবান। উন্নত দেশগুলোর ছাত্রসংগঠন সম্পর্কে জানার ইচ্ছে রইল।
@আগন্তুক,
আপনার জীনগত তত্ত্বের সাথে আমি একমত। একটি কথা সবসময়ই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে শুধু সিষ্টেম; সে যতই উন্নত হোক না কেন তার সফলতা নির্ভর করে যারা ব্যাবহার করে তাদের উপর। গাড়ি যতই ভাল হোক না কেন ড্রাইভার যদি খারাপ হয় তো সেই গাড়ী বেপথে চলতে বাধ্য। গনতন্ত্র, এক নায়কত্ব, রাজতন্ত্র যে কোন তন্ত্রের জন্যই এটা খাটে।
রাজনীতির ক্ষেত্রেও এটা যে সত্য তা আমাদের দেশে ষোল আনা প্রমানিত। কত সাধ্য সাধনা আত্মত্যাগের স্বাধীনতা, গনতন্ত্র। অথচ তার ফল পাচ্ছি কই? কেন পাচ্ছি না? এর দোষ কার? গনতন্ত্রের তো দোষ নয় নিশ্চয়ই, দোষ আমাদের।
কাজেই আমরা যে পদ্ধুতি, সংস্কার বের করি না কেন যারা আসল কালপ্রিট তারা কলকাঠি নেড়ে গেলে কিছুতেই কিছু হবে না। নির্দলীয় বা এমনকি ছাত্রসংগঠনিই গনহারে বাতিল করে দিলেও সমস্যা পাকাতেই পারে।
সব দেশের কথা জানি না, তবে আমেরিকায় ছাত্র সংগঠন বা রাজনীতির নামে ডেমোক্রেটিক ছাত্রদল বা রিপাকলিকান ছাত্রলীগ বলে কোন বস্তু নাই। কানাডাতেও নেই। দুই দেশেই আমি পড়াশুনা করেছি, ছাত্র সংগঠন গুলার সাথে কোন রাজনৈতিক দলের দুরতম সম্পর্কও কোথাও নেই। ইংল্যান্ডেও আছে বলে শুনিনি। অন্য দেশেগুলোর ব্যাপারে জানি না, তবে নেই বলেই ধারনা করা যায়। গনতন্ত্রের এসব বড় বড় প্র্যাকটিশনাররা দলীয় ছাত্র সংগঠনের প্রয়োযন বোধ করে না। যেটা যে যায়গায় মানায় না সেটা সে যায়গায় না টানাই স্বাভাবিক। বিদেশের সব অফিসেই অলিখিত নিয়ম থাকে যে কোনরকম রাজনৈতিক আলাপ চালানো যাবে না। এত মুক্তকন্ঠের দেশে এসব নিয়ম যখেন করা হয়েছে তখন নিশ্চয়ই কারন আছে।
আমাদের দেশের লোকের ধৈর্য্য আরো অনেক কম সাধারনভাবে। রাজনীতির নামে উত্তেজিত হতে মুহুর্ত মাত্রও লাগে না। বিশেষ করে ছাত্র বয়সে এর মাত্রা আরো বেশী। যে কোন ব্লগে যান, দেখেন উচ্চশিক্ষিত ছেলেপিলে রাজনীতির নামে কেমন অন্ধ হতে পারে, কিভাবে অশ্রায্য গালিগালাজ করতে পারে। সামনাসামনি পেলে খুনাখুনী যে অনেক ঘটত তাতে কোনই সন্দেহ নেই। সরকারী কর্মচারীদের কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত হওয়া আইনন নিষিদ্ধ। শুনলে কেমন অগনতান্ত্রিক লাগে, তবে কারন আছে নিশ্চয়ই। এক সময় প্রায়ই হোটেল রেষ্টুরেন্টে দেখতাম সতর্কবানী লেখা থাকত; কোনরকম রাজনৈতিল আলোচনা নিষিদ্ধ। এর কারন আছে নিশ্চয়ই। শিক্ষাংগনে দলীয় রাজনীতি চলতে দিলে গোলযোগ ঘটবেই।
বলতে পারেন এটা তো কন্ঠরোধ করার নীতি আলোচনা না হলে বিকাশ ঘটবে কিভাবে। তা আমিও বুঝি, তবে শুধু এই বলব যে আলোচনা যে যায়গায় করা মানায় না, ঐ যায়গার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করে সে যায়গায় সেই আলোচনা টেনে গোলযোগ বাধাবার কোন প্রযোযন নেই।
@আদিল মাহমুদ,
একটি বিষয় আপনি বাদ দিচ্ছেন। আমেরিকা কানাডায় দলীয় লেজুরবৃত্তিতা কেন নেই? কারণ দলীয় লেজুরবৃত্তিতা থেকে কিছু পাবার নেই, তাই। ছাত্ররা তাই বলে রিপাব্লিকান বা ডেমক্রেটদের পক্ষে হয়ে কাজ করেছে না তা তো নয়। এমনকি কানাডা থেকেও ওবামার পক্ষে কাজ করার জন্য অনেকে বাসে করে নিউইয়র্ক গিয়েছে খবরে দেখেছি। এর মাঝে বেশির ভাগই কিন্তু ছাত্ররাই। আবার বেশিরভাগই স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করতে গিয়েছে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কেউ রাজনৈতিক সংগঠন করে না সত্য। কিন্তু সেটাও কেন। কারণ অধিকাংশই সরকার হতে লোন করে পড়ে। টিউশন ফি দিয়ে, খেয়ে পরে পড়ালেখা করে তাড়াতাড়ি বের হওয়াই উদ্দেশ্য থাকে। নিজের কাঁধে যখন বিশাল লোনের বোঝা থাকে তখন স্বাভাবিক ভাবেই সময় নষ্ট করার মত সময় কারোর নেই। তাই নেই। আর এখন আমাদের দেশের চিত্র দেখেন। রাজনীতিতে তারাই আছে, যাদের দলীয় যোগাযোগ কোন না কোনভাবে তাকে আর্থিক বা হলের সীট পেতে সাহায্য করে। আর যেহেতু ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য কিছুওই করতে হয় না তখন সারাজীবন ছাত্র থাকলেও ক্ষতি কি যদি চাঁদাবাজি করেই জীবন চলে যায়।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে টিউশন ফি বাড়ানো কি সমাধান হতে পারে? সেটা হতে পারে। তবে সে ক্ষেত্রে গরীব মেধাবী ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সীট এবং শিক্ষা বৃত্তির নিশ্চয়তা করতে হবে। বুয়েটে যেমন ছাত্র রাজনীতির তেমন খুব বেশি সমস্যা নেই। কিন্তু সেখানে ছেলেরা নিজেরাই নিজেদের শিক্ষা বছর বাড়ায় প্রতিবার পরীক্ষা পেছানোর জন্য আন্দোলন করে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আসলে টিউশন ফি বাড়ানো উচিত। সেখান হতে বাড়তি আয় বিশ্ববিদ্যলয়ের উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত।
@স্বাধীন,
আমি কিন্তু কোনদিন বলিলি যে ছাত্রদের রাজনীতি করার কোনই অধিকার থাকতে পারে না। সেটা তো হবে চরমপন্থা। তা কেন বলতে যাব? ছাত্র, শিক্ষক গনতান্ত্রিক দেশে যে কেউই রাজনীতি করতে পারে। তবে তা হতে হবে ক্যাম্পাসের বাইরে।
আমার নিজের ভাগ্নে কানাডায় থাকে, সেও ওবামার জন্য যথেষ্ট কাজ করেছে। তাই বলে সে কাজে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন ছাপ ফেলেনি। ক্লাস বাদ দিয়ে মিটিং মিছিল এসব করে বেড়ায়নি। নিজের ব্যাক্তিগত সময়ে এসব করেছে। তাতে তো কোন দোষ নেই। একে লেজুরবৃত্তি বললে মনে হয় কেমন যেন শোনায়। গনতন্ত্রে প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষকে তো রাজনীতি সচেতন হতেই হবে। লেজুড়বৃত্তি বলতে হবে সেটাকে যেটা নিজের ব্যাক্তি স্বার্থে কোন দলের পক্ষে অন্ধভাবে বিবেক বিবেচনার বাইরে জড়িয়ে যায়।
সরকারী কর্মচারী বা শিক্ষকেরাও রাজনৈতিক দলের সমাবেশে জান না, নিজের ত দিন ক্ষতি কি? শুধু সেটার জের হিসেবে ক্যাম্পাসে লাল নীল দল বা অফিসে ইউনিয়নবাজী করা শুরু করলেই তো সমস্যা।
তবে আপনি একটি তিক্ত সত্য বলে ফেলেছেন যা আমিও দৃঢ়ভাবেই বিশ্বাস করি।
– তাহলে দেখা যাচ্ছে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করাটাকে আপনি সময় নষ্ট বলেই বিবেচনা করছেন। যাতে কোন উপকার হয় না, কেবল ক্ষতির মাত্রাই বাড়ে তাকে অবশ্যই সময় নষ্ট করাই বলতে হবে।
টিউশন ফী আসলেই সরকারী ইনষ্টিটিঊট গুলিতে বাড়ানো উচিত, এটা কাজ করবে। ভারতের ইনস্টিটিউতগুলিতে ছেলেপিলেরা ক্লাস ফাকি পরীক্ষা পেছানো এসব করে না তার একটা বড় কারন শুনেছি এটা।
বুয়েটে এক রুমে দল, লীগ, শিবির, ইউনিয়ম সব দলের ছেলে থাকতে পারে। সেটা একটা ব্যাতিক্রম। এটা মনে হয় না আর কোথাও সম্ভব বলে। শুধু যে তারা মেধাবী বা গুডি বয় বলতে যা বোঝায় সেজন্য এটা সম্ভব তা নয়। সে হিসেবে মেডিকেলে তেমন অবস্থা কেন চিন্তা করা যায় না? বুয়েটের সামগ্রিক পরিবেশ, বিশেষ করে শিক্ষকদের কঠোর নিয়মতান্ত্রিকতা ও নিরপেক্ষতা এই পরিবেশ তিল তিল করে গড়ে তুলেছে।
আমিও অভিজিত বাবুর সঙ্গে সুর মিলিয়ে এ কথাই বলব যে প্রশ্ন আকারে উত্থাপিত হলেও বিষয় হিসাবে এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ শুধু ছাত্র রাজনীতিই নয়, নিঃরাজনীতি করনের একটা চেষ্টা স্বাধীন বাংলাদেশের যারা প্রভু (একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে একবুক কষ্ট নিয়ে সচেতনভাবেই বলছি) তাদের তরফ থেকে অনেকদিন ধরেই চলছে। এখানে স্মর্তব্য যে কিছুদিন পূর্বে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস কর্তৃক কথিত রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটিয়ে তথা আক্ষরিক অর্থেই রাজনীতিহীন ব্যক্তিগণ কর্তৃক রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে একটা হাতে কলমে শিক্ষা বাংলাদেশের জনগণকে দিয়েছেন।
বস্তুত রাজা যে নীতিতে রাজ্য চালান বা শাসন করেন সেই রাজার + নীতি রাজনীতি; এই রাজনীতিই এখন দেশে বিরাজমান আছে। আমার ধারণামতে হওয়া উচিত নীতিতে যেটা সর্বোৎকৃষ্ট বা নীতির রাজা যে রাজনীতি তা। অর্থাৎ যে নীতির কারণে মানুষের মধ্যে ভেদ বৈষম্য তৈরী হয় তা সেটা ধর্মের নামে, জাতির নামে, লিঙ্গীয় কারণে বা অর্থনৈতিক কারণে, তা সে যে কারণেই হউক তা বর্জন করে মানুষের মধ্যে সাম্যের, মৈত্রীর সম্পর্ক তৈরী করার জন্য যে আদর্শ বা নীতি গ্রহন করতে হয় সেটিই করা উচিত যদি আমরা জ্ঞানভিত্তিক সাম্যের সমাজ চাই। সকল ধরনের বৈষম্যকে দূর করে সাম্য আনতে পারে যে দর্শন, যে অর্থনীতি – অর্থব্যবস্থা, যে শিক্ষানীতি – শিক্ষা ব্যবস্থা, যে সমাজনীতি – সমাজ ব্যবস্থা, তার পুরোটাকেই খোল নলচে ধরে টান দিতে হবে। নারী নির্যাতন, ধর্মীয় সহিংসতা, জাতিগত নিপীড়ন, শ্রমিক বা গরীব মানুষদের বস্তী পুড়িয়ে দেয়া, বা নিঃরাজনীতিকরন কোনটাকেই বিচ্ছিন্ন করে দেখা ঠিক হবে না। কারণ এসবের প্রতিটি ঘটনার গভীরে গেলেই দেখা যাবে যে একটার সঙ্গে আরেকটার কেমন যোগসূত্র বিদ্যমান। এবং সব কিছুর মূল যেয়ে ঠেকেছে অর্থনৈতিক শোষণ বঞ্চণা প্রতারণার সঙ্গে। কাজেই সাম্যের আদর্শের ভিত্তিতেই সকল নীতি নির্দ্ধারন করতে হবে।
আজকের শিক্ষানীতি শিক্ষাব্যস্থা নির্দ্ধারিত হচ্ছে বাজার চাহিদার উপর নির্ভর করে। এইজন্যই সবচেয়ে মেধাবী ছাত্ররাও আজ আর শিক্ষকতা বা রাজনীতিতে আগ্রাহান্বিত হচ্ছেন না, বরং তাদের চোখ থাকে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর মোটা বেতনের একটা চাকুরী। এবং রাজনীতিবিদদেরও কর্মকান্ড পরিচালিত হয় আরও টাকা ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা; এসবই একটা আরেকটার পরিপূরক হিসাবেই কাজ করে।
ধন্যবাদ স্বাধীনকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য।
@আব্দুল হক,
মূল সমস্যা আমার মতে এটাই।
শিক্ষিত মানুষ না করছে শিক্ষকতা, না করছে রাজনীতি।
@আশিকুর রহমান,
আমার মনে হয় ভার্সিটির শিক্ষকরা ঠিক আছেন।
তবে রাজনীতিবিদরের জ্ঞান ও শিক্ষাগত যোগ্যতা (মুষ্টিমেয় কয়জনছাড়া)সত্যিই আশাজাগানিয়া
নয়!অথচ আমাদের মত সমস্যাভরা দেশে মাহাথিরের মত একজনের দরকার। যিনি দেশটার আপাদমস্তক চিকিৎসা করে রোগ সারাবেন।
পত্রিকা খুললেই একজন বলেন দেশগেলো, আরেকজন অপ্রয়োজনীয় নামবদলানোর অপব্যায় করছেন। যে দেশের প্রায় অর্ধেক লোক দারিদ্রসীমার নীচে বাস তাদের করের টাকায়!
এটা কেবল বাংলাদেশেই সম্ভব! যেহেতু তারা অশিক্ষিত,প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই।
সেজন্যই পারছেন।এটাইকি দিনবদল আর ডিজিটাল বাংলাদেশের পথের অগ্রযাত্রা!
@আব্দুল হক,
আপনার কথা সত্য, কিন্ত যেভাবে দেখছেন আমি সেভাবে দেখছি না। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ নয় সব সময়ই বাজ্র চাহিদা নির্ভর ছিল এবং থাকবে। আগে যখন ভাল ভাল ছাত্ররা আইন পেশায়, বা বিসিএস এর সরকারি চাকুরী কিংবা আর্মিতেই যেত সেটাও বাজার চাহিদাই নির্ধারণ করে দিত। আগে সে চাকুরীগুলো লোভনীয় ছিল বলে সবাই সেদিকেই গিয়েছি, সেখানে দেশ প্রেম ছিল কমই। তাই সমস্যার মূলে হল, বর্তমান সরকারী ব্যবস্থাকে বেসরকারী ব্যবস্থার সাথে প্রতিযোগীতা করেই টিকে থাকতে হবে। সেই টিকে থাকার জন্য যে ধরণের চিন্তা ভাবনার দরকার সেটাই অনুপস্থিত। দরকার সরকাড়ি চাকুরীগুলোতে আরো প্রফেসানীলিজম, উন্নত বেতন, কর্ম দক্ষতা বাড়ানো এবং জনবল কমানো। উন্নত দেশে কিন্তু সরকারী চাকুরে বা বেসরকারী চাকুরীর মাঝে তফাৎ কমই। অথচ এখানে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবেন কোন মত ২৫ হাজার আর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবেন এক লাখের উপর। এই রকম বিভাজন যে কোন সমাজের জন্যই ক্ষতিকারক। এই ব্যবধান কমাতেই হবে। সর্ব ক্ষেত্রেই এর কম ব্যবধান। মানুষ দুর্নীতি কেন করবে না বা বেসরকারী চাকুরী কেন করবে না তাহলে।
আমরা সবাই টিকে থাকতে চাই, বেঁচে থাকতে চাই। নিজের জিনকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই। তাই চাহিদা যেখানে বেশি থাকবে সেখানে প্রতিযোগীতাও বেশি হবে এবং প্রতিযোগিতার রকমও ভিন্ন হবে। যদি কোন সমাধান খুঁজতেই হয় তবে এখানেও আমাদের ডারাউইন বাবাজির সাহায্যই নিতে হবে।
ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হবে না। পুলিশ, নীম্ন আদালত দূর্নীতি মুক্ত হবে না। কারন এগুলো পাক-পবিত্র হয়ে গেলে সমস্যা তাদের জন্য, যারা সম্পদ বিদেশে পাচার করে, যারা জমি, বাড়ী, প্রতিষ্ঠান দখল করে। যারা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ী কেনে। জাতীর বিবেক গুলোকে ভোঁতা করে না রাখলে এগুলো বিনা চ্যালেজ্ঞে করা সম্ভব না। আমদের মূল রাজনৈ্তিক দল দুটির ইতিহাস খেয়াল করলে দেখা যাবে, এগুলি জাতীয়তাবাদী কোন উৎপাদক শ্রেনীর সমন্নয়ে গঠিত হয়নি।
ফলে এদের মধ্যে উৎপাদনের পরিবর্তে সরকারি সমত্তি মেরে দিয়ে দ্রুত বড় লোক হবার প্রবনতা স্বাধীনতার পর থেকেই দেখা গেছে। এই শ্রেনীর প্রতি জনমনে যে ঘৃ্নার বোধ ছিলো তার সমাপ্তি ঘটে এরশাদের আমলের সাথে সাথে। আমরা এই প্রথম একদল বাবা পেলাম সমাজে, যারা মেয়ের বিয়ে দেয়ার সময় ছেলের উপরি কামাই আছে কিনা তা যাচাই করে পাত্র নির্বাচন করছে। এই প্রবনতা এখন ব্যাপক বিস্তৃত।
জাতীয়তাবাদী পুঁজির বিকাশ যেখানে ঘটে আর্ন্তজাতিক পুঁজির সাথে তার দ্বন্দ্ব অনিবার্য। যেটা আমরা মালয়েশিয়াতে দেখেছি। আমেদের এখানে বিকশ লাভ করেছে লুটেরা পুঁজির। ফলে নমিনেশন পেরার ভাল দামে বিক্রী হয়। এই লগ্নি ৫ বছরের মধ্যে বহুগুন লাভ সহ তুলে নেয়াটা খুবই লাভ জনক ব্যাবসা হিসাবে প্রমানিত। ফলে সংসদ কক্ষ দিনে দিনে কোটি পতিদের ক্লাবে পরিনত হচ্ছে। এই শ্রেনী ছাত্র রাজনীতি বন্ধের মত আত্মঘাতী কাজ কখনই করবেনা। কারন ছাত্ররা দেশপ্রেমে উদ্বু্দ্ধ হয়ে উন্নত মানুষ হলে এই লুটেরা শ্রনীর জন্য সর্বনাশ। বরং ভাল, কিছু পাচাটা অছাত্রকে ছাত্রদের নেতা বানিয়ে পুরো ছাত্র সমাজকে জিম্মি করা। আর সেটাই তারা করছে, ফলে আমি সহসা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের কোন কারন দেখছিনা।
@আতিক ভাই,
নির্মম বাস্তব।
খুবই সুচিন্তিত প্রবন্ধ। রাজনৈতিক জটিলতাগুলো অল্প কথায় সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন। সামগ্রিক সংস্কারের ব্যাপারটা সময়সাপেক্ষ কিন্তু আপনার সুদূরপ্রসারী চিন্তা থেকে হয়তো ভালো কিছু আসতেও পারে।
এটা সহজ সমাধান আপাতদৃষ্টিতে। কিন্তু আদৌ এটা কোন সমাধান নয়।
প্রথমত, প্রক্রিয়াটি অগণতান্ত্রিক।
দ্বিতীয়ত, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলে সবচেয়ে লাভবান হবে জামাত-শিবির চক্র। কারণ যত অন্তর্কোন্দলই থাক ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রমৈত্রী ইত্যাদি সংগঠন আছে বলেই শিবির যা ইচ্ছে তাই করতে পারে না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে শিবিরের আপাতত পোয়াবড়! কারণ শিবিরই একমাত্র ছাত্রসংগঠন যাদের আছে আরব্য ও পাকিস্তানি পিতাদের পাঠানো অঢেল অর্থ আর অস্ত্র। কাজেই ক্লাব ও কোচিং সেন্টারগুলোর রমরমা ব্যবসা দিয়ে শিবির তাদের কার্যক্রম চালিয়েই যাবে। প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠনগুলোর কোন অর্থবলই নেই। সংগঠনগুলো ভেঙে দিলে তা হয়ত ঢাকা বিভাগে বড় কোন নাশকতা বয়ে আনবে না ,কিন্তু রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট বা খুলনা অঞ্চলে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে। শিবিরের গুপ্ত ঘাতকদের হাতে এসব অঞ্চলের ছাত্ররাজনীতিবিদ এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা বিপুল হারে নিহত হওয়া শুরু করবে।
শিবির এখন চাইছেই যাতে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তারা আক্রমণ শুরু করেছে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে। এতেই কি অনেকটা পরিস্কার হয়ে যায় না? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপিং এর কারন ছাত্রলীগে শিবিরের অনুপ্রবেশ। রাজশাহী মেডিকেল কলেজে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছেন একজন প্রাক্তন অসৎ নেতা বিপুল অর্থের বিনিময়ে শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডারদের গণহারে ছাত্রলীগে ঢুকিয়ে। এ তো নিজের চোখেই দেখলাম। নির্বাচনের পর ছাত্রলীগে যোগ দিয়ে কয়েকজন নেতা হয়ে গেল যারা পুরোটা সময় শিবির করে এসেছে। রাজশাহী পলিটেকনিক ছাত্রলীগের খোদ সভাপতিই শিবির। আর এ কারণেই ছাত্রমৈত্রীর সেক্যুলার কর্মীকে খুন হতে হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের সমস্যা প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ধর্মীয় উগ্রতার প্রশ্নে মুসলমানেরা হিন্দু-বৌদ্ধ তো বটেই, সম্ভবত ইহুদী-ক্রিশ্চানদেরও টেক্কা দিয়েছে! ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যাওয়া হবে। কিন্তু বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্মের ব্যাপারে সকল কবিই নীরব। আমি বলি তবে এই প্রহসন মূলক ধর্মনিরপেক্ষতার ভেক ধরে তবে কি লাভ? ধর্মের লেবাস না লাগালে নাকি জনসমর্থন মেলে না। বাস্তবিকই তাই। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের প্রায় সবাই ধর্মের প্রশ্নে আপোসহীন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম না রাখলে নাকি তারা নিজেরাই লীগকে আর সাপোর্ট করবে না এবং বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নাকি বিলুপ্ত হয়ে যাবে! বিপ্লবদা বোধহয় ঠিকই বলেছিলেন আমাকে -অন্যান্য ধর্মের বিষদাঁত ভেঙে গেছে,কিন্তু ইসলামের যায় নি। সংশয়বাদী বন্ধুদের মধ্যে মুসলমান বন্ধুদের সংখ্যা কেন এত কম – এটা আমি বুঝি না।
কাজেই অন্ততঃ জঙ্গীবাদ নির্মূলের জন্যও যদি সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত রূপে যেতে না পারে তবে কোন কিছু দিয়েই এ দেশের সর্বনাশ ঠেকানো যাবে না। ছাত্ররাজনীতিতে গ্রুপিং আছে,খুন আছে,টেন্ডারবাজি ও সবরকম দুনম্বরী আছে। এগুলো তো মূল রাজনীতিতে আরো বেশি আছে। তাহলে তো রাজনীতিই বন্ধ করে দেয়া সহজতম সমাধান! বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হয়ে গেলে শিবির শুরু করবে গণগুপ্তহত্যা। কাজেই আমি ছাত্ররাজনীতির সংস্কারের পক্ষে। যদি ইসলামিক জঙ্গীসংগঠনগুলো না থাকতো এবং আপনার পরামর্শ অনুযায়ী গণপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হোত তবে নিষিদ্ধ করার পক্ষে বলতাম। :yes:
@আগন্তুক,
যখন স্বাধীন সাহেবকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার কুফল কী হতে পারে, ব্যাখ্যার জন্যে অনুরুধ করে মন্তব্য করবো ভেবেছি, ঠিক তখনই আপনার বিশ্লেষণটা পেলাম। এই দিকটা আগে মাথায় আসেনি। আমার ধারণার পুরোপুরি ইউ-টার্ণ করে নিলাম। শিবির সহ সকল ইসলামী দল ৫৬হাজার বর্গ মাইলের প্রতি ইঞ্চি যায়গায় রাজনীতি করতে পারে বিনা বাধায়। সংক্ষেপে এক কথায় বলতে গেলে বলবো, এই অবক্ষয়ের মূলে রয়েছে নতুন আওয়ামী লীগারদের ধর্মীয় অনুভুতি ও ক্ষমতার লোভ। নিরুপায়ের একমাত্র অবলম্বন হিসেবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে আসছি সেই ছাত্র জামানা থেকে, কিন্তু বিসমিল্লাহ আর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম নিয়ে তাদের সাথে রাতদিন ঝগড়া ঝাটি হয়। অনেক সময় তারা যা বলে, তা যে কোন ইসলামী দল বা শিবিরেরই কথা।
এটাই আসল কথা। যে দিন সরকার ধর্মনিরপেক্ষতার প্রকৃত রূপে, অর্থাৎ ৭২ এর সংবিধানে পুরোপুরি ফিরে যেতে পারবে, ছাত্র রাজনীতির তখন আর প্রয়োজন হবেনা।
@আগন্তুক,
সবই বুঝলাম। শিবিরকে ঠেকাতে অন্য ছাত্র সংগঠন দরকার। তবে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলে তো শিবির, লীগ দল কেউই থাকছে না, তাই না? সেখানে আর ঠেকাবার তো তেমন কোন প্রশ্ন থাকছে না।
নাকি আপনি বলতে চাচ্ছেন যে অন্য সব দল ক্যাম্পাস থেকে বাদ হয়ে গেলেও শিবির ঠিক ই থাকবে?
যদি বলেন যে মূল দল জামাত কে ঠেকাতে ছাত্রলীগ দরকার, তবে সেখানে বলতে হবে ছাত্রলীগের পারফর্মেন্স গোল্লা। এমনকি যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীতে তারা বা আর কোন ছাত্র সংগঠন কি করেছে? ছাত্রলীগ তো নিজেদের ভেতর হালুয়া রুটির ভাগাভাগি নিয়ে খুনাখুনিতে ব্যাস্ত। এমন কোন দিন এখন মনে হয় না বাদ যায় এসব কিছু কাগজে দেখতে হয়। এতে দারুন ভাবে লাভবান হচ্ছে বিরোধী দল। মানুষ সরকারী দলের উপর বিরক হচ্ছে। অনেকে আরো চোখে আংগুল দিয়ে পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে শিবিরের থেকে ছাত্রলীগের মারামারি খুনাখুনির রেকর্ড বেশী। এগুলি ট্যাকল করতে খুব ভাল যুক্তি দরকার।
আমি এখনো ছাত্র রাজনীতি চালু রাখার স্বপক্ষে শক্ত যুক্তি দেখছি না।
আমাদের রাজনীতি আসলেই পুরো দুষিত, আসলেই আমি সারাবার কোন উপায় দেখি না। কিছুটা আশাবাদী হয়েছিলাম জেনারেল মঈন এর গনহারে চোর নেতাদের ধরে বিচার করা শুরু হওয়ায়, সংস্কারের একটা আবহ দেখায়। এখন কোথায় সংস্কার কোথায় কি। ঊল্টা সংস্কার ওয়ালাদের হতে হয়েছে অপাংক্তেয়। তারাও যে নেহায়ের সাধু তাও নয়, এদের অনেকেই নাকি ডিজিএফাই এর দালালী করে সংস্কারবাদী হয়েছে। যাক, সে অন্য প্রসংগ। আমরা সফল ভাবে প্রমান করতে সমর্থ হয়েছি চোর ছ্যাচ্ছড় নেতারা আমাদের নয়নের মণি।
রাজণীতির পংকিলতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শখ করে দুধ কলা দিয়ে পুষে ক্ষতির পরিমান আরো কইয়েক গুন বাড়াতে হবে কেন তা আরো ভালভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
সবই বোঝার পর কেন প্রশ্ন করলেন এটাই বুঝলাম না। শিবিরের এত অঢেল অর্থ আছে যে তাদের কার্যক্রম চালু রাখার জন্য শিবিরের ব্যানারের কোন প্রয়োজন নেই।
রাজনীতিটাই বন্ধ করে সামরিক শাসনের কথাই বা কেন তবে বলছেন না? আপনার কি মনে হয় না বাংলাদেশের গনতন্ত্র আর্মি আর ব্যবসায়ীরা চালায়? আর্মিরাও কি খুব ভালো? জাতীয় মূল্যবোধের উন্নতি না হলে আসলে কিছুই হবে না। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করাটা একটা অসাংবিধানিক এবং অগনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া।
আর আরো ভালোভাবে বুঝতে চাইলে বাংলাদেশে আসুন। কয়েকটা দিন আমার সাথে থেকে যান। কোন রকম রাজনৈতিক উত্তেজনা না থাকার পরও চোখের সামনে চাইনিজ কুড়াল আর রডের ঝনঝনানি এবং নারায়ে তাকবীর না শুনলে ঠিক বুঝবেন না।
ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল লজ্জাজনক। কিন্তু এই অন্তর্কোন্দলের মূল কি? কেন ছাত্রনেতারা টেন্ডারবাজি করছে? ৩৫-৪০ বছরের বুড়ো হাবড়ারা ছাত্রনেতা হলে তারা তো ব্যবসাই করবে। ছাত্রলীগের গ্রুপিং এর মূল কারণ প্রথমত, ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের অনুপ্রবেশ এবং দ্বিতীয়ত রাঘববোয়ালদের ক্ষমতার লড়াই। কুমিল্লা মেডিকেল এ সরাসরি রাজনীতি নেই। সম্প্রতি ক্লাবকে কেন্দ্র করে সেখানে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। রাজনীতির অনুপস্থিতি সংঘর্ষের সম্ভাবনাকে নির্মূল করতে পারে না।
ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার আগে ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত করুন কিংবা যে কারণে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলছেন একই কারণে ধেড়ে রাজনীতি বন্ধ করার কথাও বলুন। ছাত্ররাজনীতি না থাকার কি ক্ষতি – সেটা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের ক্ষতি যার হয়েছে দুর্বৃত্ত শিক্ষকদের জন্য – এ ব্যথা শুধু সেই বুঝবে।
@আগন্তুক,
সবইন বুঝেছি বলতে বুঝিয়েছিলাম যে আপনার শিবির ঠেকানো থিয়োরী বুঝতে পেরেছিলাম সেটা। তবে এই থিয়োরীর যথার্থতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। কারন আপনার এই থিয়োরী একটা এজাম্পশনের উপর আছে। আপনি ধরে নিয়েছেন যে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দিলে আর সব দলের চোটপাট বন্ধ হয়ে যাবে কিন্তু শিবিরের তেমন কিছুই হবে না। তারা তাদের টাকার জোরেই শিবির গিরি দিব্ব্যি চালিয়ে নিতে পারবে। আমি জানি না এটা কতটা যুক্তিসংগত। কারন এমন পরিস্থিতি অনেকটাই হাইপোথিটিক্যাল। শুধুমাত্র এই ধারনার উপর সিদ্ধান্ত টানা যায় কিনা জানি না।
আপনি হয়ত মাঠে আছেন ভাল বলতে পারেন তবে আমার মনে হয়নি যে ছাত্রলীগ শিবিরের এমন কিছু ক্ষতি করতে পারছে বলে। আর অন্তর্দ্বন্দ্ব, লুটপাট খুনাখুনি শুধু ছাত্রলীগের নয়, প্রতিটা বড় সংগঠনেরই ট্রেডমার্ক। আজ বিএনপি সরকারে নেই বলে ছাত্রদলেরটা চোখে পড়ছে না। সত্য কথা বলতে এসব দিক দিয়ে শিবিরের বদনাম বরং অনেক কম। তারা ঠাণ্ডা মাথায় বিপক্ষ দলীয় লোকদের মারতে পারে, তবে জনগনের উপর চাদাবাজী, টেন্ডারবাজী, অন্তর্কলহে খুনাখুনি এসবের রেকর্ড আসলেই তাদের দল বা লীগ থেকে অনেক কম।
ধেড়ে রাজনীতি আর যাই হোক, সামরিক শাসনের থেকে ভাল। তাই ওটা বন্ধ করা কোন কাজের কথা নয়। তাই বলে ছাত্ররাজনীতিও লালন পালন করে ক্ষতি কয়েক গুন বাড়ানোর কোন মানে দেখি না। যদি ৫০/৬০ দশকের ছাত্র রাজনীতি ফেরত আনতে পারেন তবে আমার কোন আপত্তি নেই। সেটা আর কোনদিন মনে হয় না সম্ভব। ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারের; ছাত্রসংগঠনের নয়। এই দুই প্রতিষ্ঠান ঠিক থাকলে ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমস্যা থাকার কথা নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেকোন ব্যাপার থেকে মূল ধারার দলগুলিকে বাইরে রাখতে হবে। দেশের কয়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠন গুলি সাধারন ছাত্র ছাত্রীদের সমস্যা সমাধানে সাম্প্রতিক সময়ে এগিয়ে এসেছে তার হিসেব থাকলে হয়ত বোঝা যাবে। আমার তো ধারনা পুরো উলটা। সংবাদপত্র শুধুই তাদের খারাপ খবর দেয়, ভাল খবর চেপে যায়?
আপনার শিক্ষাকালে ছাত্ররাজনীতি কবে বন্ধ ছিল না জানি না; আমার জানামতে ছাত্র রাজনীতি শুধু গত কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া গত অনেক বছর ধরেই চালু আছে। আপনি শিবিরের তোপে অনেকদিন থেকে আছেন জানি, ছাত্ররাজনীতি বহাল আছে তাও তাতে এমন কিছু কাজে আসছে না। আর ঐদিকে ছাত্ররাজনীতির কোপে পড়ে কত নিরীহ ছেলের জীবন নষ্ট হয়েছে, প্রান হারিয়েছে তার হিসেব কে রাখে?
তবে শুধু ছাত্র নয়, শিক্ষক, কর্মচারী সবারই প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্র রাজনীতি করার যায়গা নয়। রাজণীতির যায়গা হওয়া উচিত বাইরে।
আপনার কুমিল্লা মেডিকেলের সম্পর্কে আমি জানি না, তবে এইটুকুই বলতে পারি যে পরিবেশের প্রভাব হয়ত পড়েছে। দেশের বাকি ১০০ যায়গায় রাজনীতির নামে কাটাকাটি চললে তার প্রভাব সব যায়গাতেই পড়ার সম্ভাবনা আছে। অরাজনৈতিক সংগঠনেও পড়তেই পারে। নটরডেম কলেজেও বহু বছর ধরেই নানান রকমের সুক্লুমারবৃত্তি বিকাশের ক্লাব আছে। সেগুলোতে কোনদিন রক্তক্ষয়ী মারামারি হয়েছে বলে শুনিনি।
@আদিল মাহমুদ,
জ্বী না! হাইপোথিটিক্যাল কথা আমি বলছি না। আমি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ কথা বলছি। শিবিরের উদ্দেশ্যই আপাতত ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে দেয়া। এটুকু না বুঝলে বোঝানোর সাধ্যি আমার নেই। আপনি বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। রাজনীতি নিয়ে আপনার ভাবনা আরো বহুদিকদর্শী হওয়া উচিত বলে আশা করি। আমি কোন ধারণার কথা বলছি না। নগ্ন সত্য কথা বলছি। রেটিনা,সাক্সেস,কন্টেস্ট,ফুল-কুঁড়ির আসর ,হ্যান-ত্যান থাকতে রাজনীতি বন্ধ করায় শিবিরের কোন ক্ষতিই হবে না। বরং তারা আরো গুছিয়ে নেবে।
মাঠে নেই বলেই বোধহয় আপনি বুঝতে পারছেন না। হ্যাঁ শিবিরের কম। ছাত্রলীগের নেতাদের ব্যবসার প্রশংসা আমি করিনি। কিন্তু এর সংস্কার হতে পারে।
সম্পূর্ণ ভুল এবং খণ্ডিত ধারণা। বরং ধেড়েদের কিছু করতে পারবেন না বলেই ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে গলা ফাটিয়ে নিজেকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে আমাকে বেশি বলতে অনুরোধ করবেন না। বুঝে নিন। ছাত্ররা ক্রীড়নক মাত্র। নিশ্চিত হচ্ছেন কি করে ৫০/৬০ এর রাজনীতি ফিরবে না? সমাজে কখনো ভালো বা মন্দ কোনটাই একচেটিয়াভাবে থাকে না। যদি আশাই ছেড়ে দেন তবে নৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্তে আসা উচিত
১। সব রাজনীতি বন্ধ।
২। যেহেতু সেনাশাসকরাও বদ কাজেই নৈরাজ্য।
ছাত্ররাজনীতির চেয়ে বহুগুণ বেশি খুনাখুনি হয় মূল রাজনীতিতে, চুরি-বাটপাড়ি অনেক বেশি হয়। কাজেই সেক্ষেত্রে যদি রাজনীতি বন্ধের কথা না বলেন,তাহলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে কথা বলার নৈতিক অধিকার আপনার থাকে না। কাগজের কথা বলছেন?হা হা হা! সংবাদপত্রের ঘটনা কতটা সত্যি আর কতটা মিশেল -তা অন্তত আমার জানা আছে।
এ ধরনের বালখিল্য উক্তি বর্ষীয়ান ব্যক্তির মুখে মানায় না। ছাত্রংগঠন পৃথিবীর অধিকাংশ জায়গায় আছে। তাদের কাজ ছাত্রদের দাবী-দাওয়া আদায় করা। মূল লক্ষ্যে ফিরে যেতে হবে এবং লেজুড়বৃত্তি কমাতে হবে। আর আশা না থাকলে কোন কাজ করারই মানে হয় না। আর স্বাধীন ভাই কিন্তু লিখেছেন যে, জনগনের প্রতিটি স্তরের দাবী নিশ্চিত করতে প্রতিটি স্তর থেকেই প্রতিনিধি নির্বাচন করতে হবে। সংসদে ছাত্রদের প্রতিনিধি না থাকলে সরকার ছাত্রদের দাবীদাওয়া পূরণ করবে -এমন আশা করাটা খুবই বাস্তবতাবর্জিত একটা চিন্তা।
ব্রেইন টিউমার হলে ব্রেইনটাকেই কেটে ফেললে মানুষ বাঁচে কি? কাজেই আশা ছাড়বেন না। মাঠে নামুন। দেশের জন্য যদি সত্যিই কিছু করতে চান, দেশে আসুন। রাজনীতির নোংরা জলে নামুন। এ জল সাফ করুন। সামরিক শাসন যেহেতু অকল্যাণকর কাজেই কোন রাজনীতিই বন্ধ না করে সংস্কারে নেমে পড়ুন। ব্লগিং্যের পাশাপাশি নেমে আসুন রাজপথে। তাহলেই হবে ভালো কিছু, কল্যাণকর কিছু। :rose2:
@আগন্তুক,
:yes: :yes: :yes:
@আগন্তুক,
ছাত্র সংগঠন থাকা আর ছাত্র রাজনীতি থাকা এক কথা নয়। ছাত্র সংগঠন আর দলীয় ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। ছাত্র সংগঠন কেন থাকবে না? পৃথিবীর সব দেশেই ছাত্র সংগঠন আছে, বেশীরভাগ দেশেই নির্দলীয়, তাদের সাথে কোন দলের সম্পর্ক নেই। তারাই ছাত্রদের প্রয়োযন নিয়ে কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা চালাতে পারে, নানান সুকুমার বৃত্তির চর্চা করে। আমেরিকার সব স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়তেই ছাত্র সংগঠন আছে। তবে সেখানে ডেমোক্রেটিক লীগ বা রিপাব্লিকান দল এমন কোন দলীয় ছাত্র সংগঠন আছে বলে আমার জানা নেই। হয়ত বলতে পারেন আমেরিকা আর আমাদের দেশের তূলনা চলে না। আসলেই চলে না, তবে বলতে পারি যে সেখানেও দলীয় পরিচয়ের ছাত্র রাজনীতির চর্চা শুরু হলে কিছু গোলযোগ শুরু হতে বাধ্য। হয়ত এত মারাত্মক হবে না। দলীয় ছাত্র রাজনীতি এতই দরকারী হলে কেন বিশ্বের সব দেশে নেই? ভারতে যদিও আছে, তবে এর মাত্রা প্রায় ধর্তব্যের বাইরে বলে জানি।
যদি আশা করেন যে ক্যাম্পাসে দল, লীগ, শিবির এসব চলতে দেবেন আর তারা অন্য দলের সাথে গোলমাল না করে নিজ নিজ দলীয় রাজনীতি করে যাবে তবে বলতেই হবে যে আপনি হয়ত প্রত্যক্ষদর্শী তবে বাংগালী জাতির মাইন্ডসেট বোঝেন না। যেকোন বাংলা ব্লগে যান, দেখবেন রাজনীতি অন্যতম প্রিয় একটি বিষয়। এবং এই বিষয়ে কেউই আপোষে রাজী নন, অতি সহজেই খিস্তি খেউড় গালিগালাজ, যুক্তির নেই কোন বালাই। এই প্রবনতা ভারতীয়দের মাঝেও দেখবেন না। সেজন্যই তাদের দেশে দলীয় ছাত্র রাজনীতি নাম খাওয়াস্তে চালু থাকলেও এর মাত্রা এত মারাত্মক নয়। আর তাদের ওভারঅল রাজনৈতিক পরিবেশও অনেক ভাল।
রাজনীতি আর ধর্ম এই দুই ব্যাপারে খুব বেশী যুক্তি চলে না। আমাদের বাংগালী স্বভাব এই ব্যাপারে আরো অনেক বাড়া। সহনশীলতা বলতে গেলে কিছুই নেই। কোন দল ১৫ ই আগষ্ট শোক দিবস পালন করবে, আর অন্য দল সেই দিবসের হাতিয়ার গর্জে উঠুক বলে শ্লোগান দেবে; এই পরিস্থিতিতে গোলমাল হবে না তো আর কি হবে? কাজেই দু পক্ষের উচিত শিক্ষাংগনে তাদের দলীয় বোঝাপড়া করে পরিবেশ নষ্ট না করে বাইরে গিয়ে করা। এই কারনেই আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি যে ছাত্রদের রাজনীতি করার অধিকার অবশ্যই আছে, তবে তা হতে হবে ক্যাম্পাসের বাইরে। এতেই সব কুল রক্ষা পায়।
আবারো বলতে পারেন যে সেই ধেড়ে গুলির তাহলে রাজনীতি বাদ দেওয়া উচিত। লিভার সিরোসিস বা তেমন জটিল কোন রোগে আক্রান্ত কেউ যদি দেখে যে তার একটা হাত কেউ কেটে নেবার জন্য ছুরি শানাচ্ছে তাহলে কি উদাসভাবে সে বলবে, আমার বাবা এমনিই জটিল রোগ, সারার সম্ভাবনা প্রায় নেই, একটা হাত কেটে নিলেই কি আর না নিলেই বা কি?
আপনার এই ধেড়েদের যুক্তিতে আরেকটা কথা মনে পড়ল। মাদ্রাসা শিক্ষা বন্ধ করার কথা বললেও অনেকে অনুরূপ একটা যুক্তি দেন। তারা প্রশ্ন করেন যে যদি জিহাদী তৈরী বা সন্ত্রাস পয়দা করার প্রতিষেধক হিসেবে মাদ্রাসা নিষিদ্ধ করতে হয় তবে তো সেই যুক্তিতে সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে আগে। কারন সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস গোলযোগ হয় আরো অনেক বেশী। সাধারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করার আগে কেন মাদ্রাসা নিষিদ্ধ করা?
আবারো বলব যে রাজণীতি তো পুরো বাদ দেওয়া যায় না। হয় গনতন্ত্র নয়ত সামরিক বা অন্য কোন তন্ত্র। বাকি সব তন্ত্র থেকে গনতন্ত্রই ভাল বলতে হবে, কাজেই রাজনীতিকে পুরো বন্ধ করা যাবে না। তবে রাজনিতি বাধ্য হয়েই চালু রাখতে হবে তার মানেই এই না যে এর নোরাংমীর জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেনে সেখানকার পরিবেশও খারাপ করতে হবে, বহু ছেলের জীবন হানি ও শিক্ষা জীবন বরবাদ করতে হবে।
সব গনতান্ত্রিক দেশেই রাজনীতির চর্চা চলে, তবে ছাত্ররাজনীতি মনে হয় না খুব বেশী দেশে আছে বলে। রাজনীতি চর্চা করতে হলেই দলীয় ছাত্ররাজনীতি করতে হবে এমন কোন কথা নেই। যার লাভ থেকে ক্ষতির মাত্রা অনেক বেশী বলেই দেখা যায় তা জিইয়ে রাখার খুব মানে থাকে না। আপনি হয়ত একমত হবেন না তবে আমি নিশ্চিত যে দেশের বেশীরভাগ মানূষই এখন তেমনই ভাবে। তবে শিবির ঠেকাবার জন্য ছাত্র রাজনীতির দরকার আছে এই যুক্তি এখনো আর কারো থেকে শুনিনি, যদিও এই ইস্যুতে বহু লেখাই পড়েছি। যারা চালু রাখার কথা বলেন তাদের কথায় আবেগের থেকে যুক্তি তেমন একটা পাইনি।
আর আমি সামগ্রিকভাবে দেশের অবস্থা নিয়ে মোটেই আশাবাদী নই, কোনদিন ছিলামও না। সেজন্যই বিদেশে থাকব এমন মানসিক প্রস্তুতি অনেক আগেই নিয়েছিলাম। তবে জাফর ইকবাল স্যারের মত যদি মনে করেন যে বিদেশে থাকলেই দেশ নিয়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না তবে তাতেও আমি একমত নই। ধেড়েদের সংস্কারের যে কথা বলছেন তাও আসলে মোটেই সহজ নয়। ধেড়েরা কেউ মংগলগ্রহ বা অন্য দেশ থেকে আসেনি। তারাও আমাদেরই দেশের লোক। যে জাতি যেমন তারা তেমনই নেতা পায় বলে ইংরেজীতে একটা কথা আছে। আমাদের নৈতিকতার অবক্ষয়ের পরিনতি হল এই চরম দূর্ণীতিপরায়ণ রাজনীতি। নিজেদের স্বভাব বদল না করলে শুধু কয়টা ধেড়ে কোনদিন ভাল হবে না। হয়ত নুতুন ধেড়ে আসবে। দূঃখের সাথে বলতে হবে যে শুধু আশাবাদে কিছু হবে না।
ব্রেন টিউমারের যুক্তি যদি দেন তো বলি। অনেকের মতে ধর্মের কোনই দরকার নেই, আপত কিছু ভাল দিক থাকলেও (যদিও অনেকের মতে আবার কোনই ভাল দিক নেই, তাদের কথা বলছি না) ক্ষতির দিকই অনেক বেশী। তাই ধর্ম পুরোপুরি বাদ দেওয়া উচিত। তাদের তো তাহলে চিন্তা করা উচিত যে মাথা পুরো কেটে না ফেলে তার চিকিতসা করাই উত্তম। তখন কেন ব্রেইন টিউমারের যুক্তি ওনারা চিন্তা করেন না? কেন বলেন না যে পুরো ধর্ম বাদ দেবার থেকে আসুন সংস্কার করি (কিভাবে করা হবে বা করা যাবে কিনা সেটা এখানে বিবেচ্য না)?
রাজনৈতিক সংস্কার খুবই দরকার, তবে তাই বলে ছাত্ররাজনীতি কেন দরকার তা পরিষ্কার নয়। বিশেষ করে ছাত্র প্রতিনিধি যখন গনতান্ত্রিকভাবে কিন্তু নির্দলীয়ভাবেই নির্বাচন করা যায়, যেভাবে বিশ্বের বেশীরবাহগ দেশেই হয় সেখানে ক্যাম্পাসে কেন দলীয় রাজনীতি টানতে হবে তার ভাল ব্যাখ্যা দরকার।
@আদিল মাহমুদ বা আগুন্তক
আমার লেখার অবতারণা কিন্তু ঠিক এ কারণেই যে কারণটি নিয়ে আপনাদের তর্কের পর তর্ক হচ্ছে কিন্তু কোন সমাধান নেই। আদিল ভাইও শুরুতে বলছেন যে ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজন আছে, কিন্তু দলীয় রাজনীতির প্রয়োজন নেই। আগুন্তক ভাইও ভিন্ন তেমন কিছু বলছেন না কিন্তু, ছাত্র সংগঠনের প্রয়োজনীয়তার কথাই বলছেন।
আসুন আমরা বরং একটু ফোকাস্ড হই। আলোচনা শুরু করেন কিভাবে ছাত্র সংগঠন রেখেও এর উপর দলীয় প্রভাব মুক্ত রাখা সম্ভব? আমি যেমন বলেছি যে যদি ছাত্র বা অন্যান্য সংগঠন গুলোকে সরাসরি সংসদে প্রতিনিধি প্রেরণের জন্য ব্যবহার করা হলে এক পর্যায়ে দলীয় নির্ভরতা কমে যেতে পারে। এর পক্ষে বা বিপক্ষে বলতে পারেন। অথবা নিজে কোন সমাধানের কথা বলতে পারেন। যেমন কারোর অভিমত হল সাময়িক ভাবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা গেলে দলীয় প্রভাব মুক্ত হতে পারেঃ এর পক্ষে বা বিপক্ষে যুক্তি দিন। কিংবা নুতন কিছু সমাধান দিন।
আমাদের মূল সমস্যা কিন্তু ছাত্র বা যে কোন সংগঠনে দলীয় প্রভাব। সে প্রভাব কিভাবে কমানো বা নিয়ন্ত্রন সম্ভব এই ব্যাপারে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখি। এই মন্তব্যটি এক দম নীচে আবার দিছি যেন আলোচনা সেখানে শুরু করতে পারি।
@আদিল মাহমুদ,
দেখুন আপনি যথেষ্ট পরিমানে ভুল বুঝেছেন।
উপরের দুটি উক্তিই কিন্তু আপনার। প্রথমটা কি বাতিল করতে চাইছেন? ওখানে কিন্তু আপনি ছাত্রসংগঠনের অপ্রয়োজনীয়তার কথাই বলেছেন!
নির্দলীয় ছাত্রসংগঠনই আমি সমর্থন করি। বিদেশের ছাত্রসংগঠন সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই। কিন্তু বাংলাদেশে নির্দলীয়ভাবে ছাত্রসংগঠন চালানোর মত অর্থবল শুধু শিবিরেরই আছে – এই সাদামাটা সত্যটা আপনাকে বোঝাতে পারছি না!
অত্যন্ত হাস্যকর তুলনা। রাজনীতি ব্রেইনের সাথে তূল্য, ধর্ম নয়। ধর্ম ছাড়া রাষ্ট্র চলে, রাজনীতি ছাড়া নয়। ধর্মকে তাই কোন ভাইটাল অর্গানের সাথে তুলনা করাটা যৌক্তিকভাবেই ভুল। ধর্মকে বড়জোর একটা হাত বলতে পারেন।
আপনি বারবার দলীয় রাজনীতির দায়ভার আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছেন। দলীয় রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে হওয়া উচিত নয়, কিন্তু রাতারাতি কিছুই বদলাতে পারবেন না। আর বিশ্বছাত্ররাজনীতির ব্যাপারে আপনি কোন রেফারেন্স দিলে আমার জন্য ভালো হয়।
আমি আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম বড় অপরাধ দেখে চুপ করে ছোট অপরাধ নিয়ে আস্ফালন করাটা অনৈতিক। বাহ! এ যেন খুনের শাস্তি জরিমানা আর চুরির শাস্তি ফাঁসি!
এই জঘন্য নোংরা রাজনীতিও অনেক শিক্ষার্থীর অধিকার আদায় করে। অনেক রাজনীতিবিহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কথাই জানি যেখানে শিক্ষকেরা মালিক শিক্ষার্থীরা গোলাম। উদাহরণ এখানে নয়।
যখন আপনার জবাব দিচ্ছি, তখন আমি নিজেই নোংরা রাজনীতির শিকার। আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত জুনিয়র বলে যাকে ভাবতাম- সেই ছেলেটিই না জানি কিসের লোভে সভাপতির কাছে আমার কথা ফাঁস করেছে। আমার অপরাধ? আমি তাদের অবৈধ ,মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের কথা বলেছি। ই,সি মিটিং কল করে আমাকে বলা হল, তাদের গ্রীন সিগ্ন্যাল না পেয়ে এ কাজ করে নাকি আমি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাদের মর্জিমাফিক যা খুশি তাই করবে।
আমার দ্বিতীয় অপরাধ, সভাপতি-সেক্রেটারী জুনিয়র ছেলেদের হাত করার জন্য তাদের ঢালাও মদ খাওয়ানোর প্রতিবাদে আমি বলেছি যে এর পেছনে দূরভিসন্ধি আছে। আমার এত সাহস হল কি করে? সভাপতি-সেক্রেটারী বললেন, তাদের মুখের কথাই সংবিধান! নোংরামির প্রতিবাদ করে নাকি আমি নোংরামি করেছি! বুঝুন তাহলে আমাদের ছেলেরা কাদের জিম্মি।
তবু হাল ছাড়িনি। কেন জানেন? রাজনীতি না থাকলে শিক্ষকরা যে কোন ছাত্রের ক্যারিয়ারকে জিম্মি করতে পারেন। রাজনীতি বলতে আমি যোগ্য নেতৃত্বের ছাত্রসংগঠনকেই বুঝি।
@আগন্তুক,
এই মুহুর্তে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা আর হুদাইবিয়ার সন্ধি করা একই কথা। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবেন বাংলাদেশের পতাকায় চাঁদ-তারা আঁকা হয়ে গেছে। ইউনিভার্সিটির সিলেবাসে কবি আল মাহমুদ, হারুন ইয়াহিয়া, জাকির নায়ক, ও মওদুদীর বই ছাড়া আর কোন বই নেই।
আমার কাছে মনে হয় ছাত্র রাজনিতীর বর্তমান যে রুপ তা বন্ধ করে দিলেই ভাল। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর কোন অন্যায় হয়েছে তখন সকল ক্লাবের প্রধানদের নিয়ে আমরা তা প্রতিবাদ করেছি। সেসব প্রতিবাদ অনেক সুশৃংখল ও শান্তিপুর্ণ ছিল। এভাবে বিভিন্ন রকম ক্লাবের মাধ্যমে নেতৃ্ত্ব তৈরী সম্ভব এবং সময় অসময় এরাই সমন্বিত ভাবে সব কিছু দায়িত্বশীলদের কাছে তুলে ধরবে।
ক্লাবের মাধ্যমে ছাত্রদের নেতৃত্বশীল করে তুললে শিক্ষাঙ্গনে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন সম্ভব। এতে করে নির্বাচিত হবার প্রত্যাশায় ছাত্রদের মাঝে গ্রুপ গড়ে উঠলেও তা সামগ্রিকভাবে শিক্ষাঙ্গনে প্রভাব ফেলতে পারবে না। ফলে ব্যাক্তি বা দলগত স্বার্থে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়া কমে আসবে। বাংলাদেশের বর্তমান গনতান্ত্রিক পরিস্থিতিতে এর চেয়ে ভাল কোন উপায় দেখছি না। বর্তমান সিস্টেম পরিবর্তন হলে আপনার মডেলে সাথে আমিও একমত।
@আনাস,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আরেকটা ভাল লেখা, স্বাধীন।
ধর্মীয় পোস্টের ডামাডোলের ভীরে এ লেখাগুলোয় কমেন্ট কম পড়লেও গুরুত্ব বিচারে আমার মতে এগুলোই থাকবে সামনের সারিতে।
@অভিজিৎ’দা,
ধন্যবাদ আপনার এমনতর প্রশংসার জন্য, যার যোগ্য আমি কিনা আমি সন্দিহান।
আপনার সাথে একমত এ ব্যাপারে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা এখানে কোন সমাধান নয়। এটাও ঠিক যে, আমরা আমাদের ছাত্র রাজনীতি তে যা দেখছি সেটা আমাদের মূল ধারার রাজনীতিরই প্রসারিত রূপ ছাড়া আর কিছু নয়। তবে আপনি মূল রাজনৈতিক গঠনের পরিবর্তনের ব্যাপারে যা বললেন সেগুলো কি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আদৌ সম্ভব? আমার তো মনে হয় ছাত্র রাজনীতির ব্যাপারটাকেই যতদুর সম্ভব ঠিক করতে হবে নিজেদের ভিতর থেকেই (সেটা কিভাবে সম্ভব তা অবশ্য জানি না 🙂 ) । দেশের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের যে অবস্থা, তাদের দিয়ে কোন আশা আছে বলে তো মন হয় না। খুব অসহায় মনে হয় নিজেদের জাতি হিসেবে ………
@বন্যা আহমেদ,
এ কারণেই এই লেখার অবতারণা। আমার মনে হয় না যে বর্তমান পরিস্থিতিতে ছাত্র রাজনীতিতে সংস্কার করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ছাত্র রাজনীতি সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া সহজ সমাধান। কিন্তু যদি ছাত্র বা শিক্ষক সংগঠনগুলোকে রেখেও বর্তমান রাজনীতিতে গুণগত মানের পরিবর্তন আনতে চাই তবে আমার পদ্ধতি হতে পারে একটি বাস্তব সমাধান।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য বন্যা’দি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এ বিষয়টি নিয়ে এত বিস্তারিত লেখার জন্য। আপনি অনেকগুলো রাজনৈতিক এবং গঠণতান্ত্রিক নতুন পদ্ধতির কথা বলেছেন যা সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। আর তাছাড়া, আমার মনে হয় না এগুলো আমাদের দেশে এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে আপনার সাথে একমত যে, ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া কোনভাবেই কোন গনতান্ত্রিক সমাধান বলে বিবেচিত হতে পারে না।
@রাহাত খান,
আমার চিন্তাগুলো এখনকার বিবেচনায় বাস্তব সম্মত নয় সেটা আমিও স্বীকার করি। আর ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়াটা সহজ সমাধান কিন্ত সেটাই সর্বোত্তম সমাধান নয় সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
:yes: :yes: :yes:
@আশিকুর রহমান,
ধন্যবাদ।