ন’ সাঙ যেবার এই জাগান ছাড়ি/ইদু আগং মুই জনমান ধরি/এই জাগান রইয়েদে মর মনান জুড়ি…চাকমা গান…এই জায়গা ছেড়ে আমি যাব না/এখানেই জন্ম-জন্মান্তর থেকে আমি আছি/এই জায়গা আমার মন জুড়ে রয়েছে।…
১। কিছুদিন আগে বান্দরবানের দুর্গম নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি গর্ব করে নিজ পরিচয় দিয়ে বললেন, আমার বাড়ি চট্টগ্রামে। বেশ কয়েক বছর আগে আমি ব্যবসায়িক কাজে নাইক্ষ্যংছড়িতে এসে আর ফিরে যাইনি। সেখানেই বসতি গড়েছি, বিপুল ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছি। এর আগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানও হয়েছিলাম। ইনশাল্লাহ, আমার এলাকায় আগামী পাঁচ-ছয় বছরে সব কয়টি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পদে বাঙালিরাই নির্বাচিত হবেন, কোনো পাহাড়ি নন। এলাকায় বাঙালি ভোটারের সংখ্যাও বাড়ছে।
তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল পার্বত্য শান্তিচুক্তির কথা। ত্রিশোর্ধ্ব তোফায়েল আহমেদ জানালেন, এটি তিনি পড়েননি। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল’ হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার কথাও তাঁর জানা নেই। এমন কথা তিনি বিশ্বাসও করেন না। বললেন, আরে রাখুন আপনার শান্তিচুক্তি! সন্তু লারমার মহাফেজখানাতেই চুক্তির দলিল এখন ইঁদুরে কাটছে। কোনো সরকারই এই চুক্তি এখন আর মানে না!
চট্টগ্রামের সাবেক বাসিন্দা, নাইক্ষ্যংছড়ির বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কাম সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ নিজের অজান্তেই বলেছেন পার্বত্য রাজনীতির দিক-দর্শনের গূঢ় কথা। গত সপ্তাহে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে জায়গা-জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া পাহাড়ি-বাঙালির রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং এর জের ধরে খাগড়াছড়ি সহিংতার কারণ যাঁরাই জানতে চেয়েছেন, তাঁদের বিনীতভাবে বলা হয়েছে ওই জনপ্রতিনিধির বয়ান।
১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি, এ-সংক্রান্ত নানা গেজেট ও আইন এবং শান্তিচুক্তিতে উলি্লখিত আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল-চিরচেনা পাহাড়, অরণ্য, ঝরনাধারায় নয়নাভিরাম পার্বত্য চট্টগ্রামে একই দখলদারিত্বের মানসিকতায় দিনের পর দিন দখল বাড়ে। শান্তিচুক্তির আগে ও পরে সেনা বাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে পাহাড়ে নতুন বসতিস্থাপনকারী (সেটেলার) বাঙালিদের হিংসার কোপানলে প্রাণ হারান নাম জানা বা অজানা কত শত পাহাড়ি নারী-পুরুষ। জমির দখলকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি সহিংসতায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তের ধারা মিশে যায় কাচালং, চেঙ্গি, শঙ্খ, মাইনি, মাতামুহুরী নদীতে। উন্নয়নের নামে ছয়ের দশকে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ বাঁধ নিমেষেই তলিয়ে দেয় প্রায় ৫৪ হাজার একর জমি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২-এর আদি সংবিধানে উপেক্ষিত হয় পাহাড়ের সাংসদ এম এন লারমার ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি’র দাবি। সবুজ ছেলেরা অস্ত্র হাতে ফেরে শান্তিবাহিনী গেরিলা গ্রুপের নামে। আটের দশকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের পাহাড়কে সামরিকায়ন ও উগ্র জাতীয়তাবাদী বাঙালীকরণের ধারাবাহিকতায় দেশের এক-দশমাংশ পাহাড়ে গড়ে ওঠে ছয়-ছয়টি সেনানিবাস, সাড়ে ৫০০ অস্থায়ী সেনাছাউনি। বিডিআর, ড়্যাব, পুলিশ, আনসার, বনরক্ষীদের শত শত নিবাস ও ছাউনির কথা না হয় বাদই থাক।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহ দমনের সময় ১৯৭৯ থেকে শুরু করে ১৯৮২ সালে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সমতল এলাকা থেকে বাঙালিদের নিয়ে গিয়ে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার ৮৮টি গ্রামে ৩১ হাজার ৬২০ পরিবারের এক লাখ ৩৬ হাজার ২৫৭ জন সেটেলার বাঙালিকে পাহাড়ে অভিবাসিত করা হয় । এ ছাড়া ১৯৮০ থেকে ১৯৮৩ সালের দিকেও সমতল থেকে কয়েক হাজার বাঙালিকে সরকারি উদ্যোগে পাহাড়ে দেওয়া হয় অভিবাসন। ১৯৮৬ সালের দিকে সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের দেওয়া হয় খাস জমি হিসেবে পাহাড় ও টিলা। এসব সেটেলারের প্রায় সবাই ছিলেন নদীভাঙা এলাকার এবং হতদরিদ্র।
পরে সেনাবাহিনীর সঙ্গে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র বন্দুকযুদ্ধের কবল থেকে সেটেলারদের সেনাছাউনির আশপাশে গুচ্ছগ্রামে ব্যারাক তৈরি করে দেওয়া হতে থাকে রেশন। তখন থেকেই তালিকাভুক্ত সেটেলাররা সরকারি রেশন হিসেবে পরিবারপ্রতি মাসে পাচ্ছেন ৮৫ কেজি চাল। জানা যায়, গুচ্ছগ্রামবাসীর জন্য সরকার প্রদত্ত খয়রাতি রেশনের মাসিক বরাদ্দ ২২৩০ দশমিক ৫৮৬ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য। এ খাতে প্রতিবছর সরকারের ব্যয় প্রায় ৩৬ কোটি টাকা।
ইতিহাস সাক্ষী, সেনা বাহিনীর নেতৃত্বে শান্তিচুক্তির আগে পাহাড়ে লোগাং, নানিয়ারচর, লংগদু, কাউখালী, বরকল, পানছড়ি, দীঘিনালা গণহত্যা হয়েছে। সেই সময় একের পর এক উজাড় হয়েছে আদিবাসী গ্রাম। ৭০ হাজার আদিবাসী শুধু জীবনটুকু সম্বল করে ত্রিপুরার শরণার্থী শিবিরে কাটিয়েছেন একযুগের গ্লানিময় জীবন। আর বরাবরই প্রতক্ষ্য সেনা মদদে পাহাড়ি গণহত্যা, গণধর্ষণ ও লুটপাটে ধারালো অস্ত্র নিয়ে সরাসরি অংশ নিয়েছেন সেটেলাররাই। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমার বাঘাইছড়ির নিজ গ্রাম নিউ লাইল্ল্যাঘোনা থেকে অপহৃত ও নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা এরই রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা মাত্র।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রত্যাগত শরণার্থীদের অধিকাংশই বসতভিটাটুকু বাদে চাষবাসের জমি ফেরত পাননি। উপরন্তু গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর অবসান হওয়ায় পাহাড়ে চলাচল হয়েছে অবাধ। এ সুযোগে সেখানে গড়ে উঠেছে আরো অসংখ্য নতুন বাঙালি বসতি। জমির দখলকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি বনাম সেটেলার বাঙালিদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত তথা পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস রয়েই গেছে। শুধু গত ১৯-২০ ফেব্রুয়ারি বাঘাইছড়ি ও ২২-২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির সহিংস ঘটনাই শান্তিচুক্তির পরের প্রথম সংঘাত নয়।
৪। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত মোট ১১টি সংহিস ঘটনা ঘটেছে পাহাড়ে। পাহাড়ি-বাঙালি সশস্ত্র সংঘাতে আদিবাসী পাহাড়িরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত সাত পাহাড়ি, নিখোঁজ হয়েছেন চার, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ১৬ আদিবাসী নারী, পাহাড়ি ও বাঙালির ৮০০রও বেশি ঘরবাড়ি হিংসার লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আহত ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে অসংখ্য।
এর আগে এ বছর ২৫ জানুয়ারি বাঘাইছড়ির সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাটে নতুন করে বসতিস্থাপনকারী বাঙালিদের সহিংসতার জের ধরে পরদিন সেখানে বাঙালিদের সাতটি বাড়িতে অগি্নসংযোগ করা হয়। হামলার আশঙ্কায় ভাইভাইছড়া, এমএসপাড়া ও হাজাছড়া নামক তিনটি পাহাড়ি গ্রাম জনশূন্য হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালের ২০ এপ্রিলও অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসীরা একই এলাকার গঙ্গারাম মুখের বাঘাইহাট নার্সারি এলাকায় সাতটি গ্রামে আগুন দিয়ে ১৩২টি বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এতে ধ্বংস হয় বাঙালিদের ৭৯টি এবং পাহাড়িদের ৫৩টি ঘরবাড়ি। ২০০৬ সালের ৩ এপ্রিল মাইসছড়িতে প্রায় ১০০ পাহাড়ির বাড়িঘর তছনছ ও লুটপাট হয়। ২০০৩ সালের ২৬ আগস্ট মহালছড়িতে সংঘাতে নিহত হন দুই পাহাড়ি, ধর্ষিত ও যৌন হয়রানির শিকার হন ১০ আদিবাসী নারী। আহত হন প্রায় ৫০ জন।
এ ছাড়া ২০০৩ সালের ১৯ এপ্রিল ভুয়াছড়া, ২০০২ সালের ১০ অক্টোবর রাজভিলা, ২০০১ সালের ১৮ মে বোয়ালখালী ও মেরুং; একই বছর ২৫ জুন রামগড়, ১৯৯৯ সালের ১৬ অক্টোবর বাবুছড়া, ১৯৯৯ সালের ৪ এপ্রিল বাঘাইহাটে সহিংসতা হয়েছে। এর মধ্যে বাবুছড়ার সহিংসতায় তিন পাহাড়ি নিহত হন, ধর্ষিত হন এক আদিবাসী নারী।
পাহাড়ের একাধিক সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি-বাঙালিদের জায়গা-জমির বিরোধ মেটানোর কথা পার্বত্য ভূমি কমিশনের। শান্তিচুক্তির ৫ নম্বর শর্ত অনুযায়ী এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে চেয়ারম্যান করে ২০০১ সালে গঠন করা হয় ৯ সদস্যের পার্বত্য ভূমি কমিশন। কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন : চাকমা, বোমাং ও মং সার্কেল চিফ (রাজা), পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান অথবা তাঁর একজন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অথবা একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের তিন চেয়ারম্যান। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ কমিশন আইনি সীমাবদ্ধতা, অর্থ ও লোকবল সংকটের কারণে ৯ বছরে কাজই শুরু করতে পারেনি। দফায় দফায় কমিশনের কাঠামোর রদবদল হয়েছে মাত্র। এক-এগারোর পরে সর্বশেষ বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে গঠিত হয় নতুন ভূমি কমিশন। খাগড়াছড়িতে এর সদর দপ্তর এখনো নির্মাণাধীন। অন্য দুই জেলা_রাঙামাটি ও বান্দরবানে এর সাব-অফিসের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই।
৫। পার্বত্য ভূমি কমিশন প্রতিষ্ঠার ৯ বছরেও সক্রিয় না হওয়ায় পাহাড়ে ভূমি সমস্যা জটিল হওয়ার পাশাপাশি সেখানে বেআইনিভাবে ভূমির ইজারা ও বন্দোবস্ত দেওয়ার অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। গত বছর আগস্টেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাহাড়ে প্রায় ১২ হাজার একর জমি বেআইনিভাবে ইজারা ও বন্দোবস্ত দেওয়ার ঘটনা শনাক্ত করে। গত সেপ্টেম্বরে বান্দরবানে প্রায় সাড়ে আট হাজার একর এ ধরনের জমির ইজারা ও বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। আদিবাসী পাহাড়িদের এসব জমি সমতল থেকে পাহাড়ে যাওয়া প্রভাবশালী বিভিন্ন বাঙালির নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
পাহাড়ের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, পার্বত্য বিশ্লেষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত, শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্ত বাস্তবায়ন তথা পার্বত্য ভূমি কমিশনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই পাহাড়ে জমির বিরোধ নিষ্পত্তির যৌক্তিক সমাধান খুঁজতে হবে। এ লেখকের সঙ্গে আলাপচারিতায় সেসব কথাই বলেন তাঁরা।
ভূমি কমিশনের সদস্য ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা মারমা বলেন, কমিশনের যথাযথ আইনি ক্ষমতা ও লোকবল না থাকায় এটি এখনো পাহাড়ি-বাঙালিদের ভূমির বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারছে না।
ভূমি গবেষক, জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা মঙ্গলকুমারের মতে, ভূমি কমিশন আইনের সঙ্গে শান্তিচুক্তির ১১টি বিরোধাত্নক বিষয় রয়েছে। এর মধ্যে কমিশনের সীমিত কার্যপরিধি ও কমিশন চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতা অন্যতম। ভূমি কমিশন সক্রিয় না হওয়ার ফলে পাহাড়ে দিন দিন জমির বিরোধ বাড়ছে। পাহাড়ে নতুন করে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের সঙ্গে আদিবাসী পাহাড়িদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগেই আছে। আটের দশকে সরকারি উদ্যোগে পাহাড়ে বসতিস্থাপনকারী বাঙালি সেটেলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতল ভূমিতে সন্মানজনক পুনর্বাসন করা যায়। এ-সংক্রান্ত ইউরোপিয়ান কমিশনের আর্থিক সাহায্য করার প্রস্তাবনাটি সরকারের বিবেচনায় আনা উচিত।
মঙ্গলকুমার চাকমা বলেন, শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্তসমূহ যথাযথ বাস্তবায়ন করলেই ভূমি কমিশন ও শরণার্থী পুনর্বাসনবিষয়ক টাস্কফোর্স সক্রিয় করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
আদিবাসীবিষয়ক গবেষক ও তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিমের মতে, শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্তই হচ্ছে পার্বত্য ভূমি সমস্যার সমাধান। শান্তিচুক্তির এই শর্তটি মেনে ভূমি কমিশনকে কার্যকর করা হচ্ছে না বলে পাহাড়ে জমির বিরোধ বেড়েই চলেছে। ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধি এবং ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল বলা হলেও নতুন করে বসতি স্থাপনকারী বাঙালিদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকায় সেখানে পাহাড়িদের সঙ্গে বাঙালিদের জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
বিশিষ্ট আদিবাসী লেখক সঞ্জিব দ্রং বলেন, সরকারের উদাসীনতার কারণে এত বছরেও পাহাড়ে ভূমি কমিশন সক্রিয় হয়নি। ফলে জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে পাহাড়ে নানা অশান্তি লেগেই আছে। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি ভূমি কমিশন ও আঞ্চলিক পরিষদকে শক্তিশালী করার কথাও বলেন তিনি।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রামের আয়তন বাংলাদেশের ১০ ভাগের এক ভাগ। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান — এই তিন পার্বত্য জেলা নিয়ে বিন্যস্ত পাঁচ হাজার ৯৩ বর্গমাইল এলাকার পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালি মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ লোক বাস করেন। ১৯৮১ সালে পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ির সংখ্যা ছিল ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বাঙালি ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সেখানে ৫১ শতাংশ বাঙালি ও ৪৯ শতাংশ পাহাড়ির বসবাস। সর্বশেষ ২০০১ সালের হিসাবে ৫৯ শতাংশ বাঙালি ও ৪১ শতাংশ পাহাড়ি সেখানকার বাসিন্দা।
—
ছবি: ১। বাঘাইছড়ির পোড়া ভিটায় সতর্ক সেনা প্রহরা, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০, ২। খাগড়াছড়িতে লোগাং গণহত্যার প্রতিবাদ, ১৩ মে, ১৯৯২, ফাইল ছবি, ৩। বাঘাইছড়িতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারের সামনে দেবন্দ্র চাকমার লাশ নিয়ে পাহাড়িদের বিক্ষোভ, দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১০।
—
আরো পড়ুন: লেখকের ই-বুক: রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে।
[…] যৌথ আক্রমনে অন্তত ১৩টি গণহত্যা। চুক্তির পরেও পাহাড়ের এইসব হর্তাকর্ত… বাঘাইছড়ি সহিংসতায় গৃহহীন একজন […]
[…] যৌথ আক্রমনে অন্তত ১৩টি গণহত্যা। চুক্তির পরেও পাহাড়ের এইসব হর্তাকর্ত… বাঘাইছড়ি সহিংসতায় গৃহহীন একজন […]
অভিজিত রায়, বন্যা আহমেদ, উনাদের দুজনের আমি একজন ভক্ত, বিশেH করে মুক্তমনার।মুক্তমনার লেখাগুলো আমার অনেক প্রিয়।অনেক দিন ধরে অনেক article পড়ছি,এক কথায় অসাধারন।যাই হোক, আমি অনেক কৃতজ্ঞ বিপ্লব uncle এর কাছে, বলার ভাষা আমার নেই, দীর্ঘদিন ধরে লেখা লিখে যাচ্ছেন পাহাড়ের অসহায় মানুষদের জন্যে, মুক্তির জন্য,না জানা অনেক লুকায়িত বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরার জন্যে।বিশেষ ধন্যবাদ এবং শ্রদ্ধা জানাতে চাই মুক্তমনায় লেখার মাধ্যমে পাহাড়ের মানুষদের কথা তুলে ধরার জন্য এবং আল জাজিরায় প্রতিবেদনতির জন্যে।ধন্যবাদ আবারো বিপ্লব আঙ্কেল, অভিজিত রায়, বন্যা আহমেদ এবং আমার প্রিয় মুক্তমনাকে। (F)
@সুকুমার সাংমা,
দুঃখিত। অনেক দেরীতে বলছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
লেখাটির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ । আপনার লেখার আমি অন্ধ ভক্ত । আপনার এই শক্তিশালি লেখনী আমার মধ্যে যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে তার ফসল হিসেবে বাংলাদেশের আদিবাসীদেরকে নিয়ে প্রথম বাংলা ব্লগ http://w4study.com/ tতৈরি করতে পেরেছি । সেজন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আশা করব সেখানেও আপনার ধারালো লেখা সেখানে শোভা পাবে । ওয়েবসাইটে আপনার লেখার অপেক্ষায় রইলাম ।
@সমর সরেন,
অনেক দেরিতে বলছি, আমরা তো এখন একই পথের যোদ্ধা, নাকি?
ধন্যবাদ সমর। (Y)
Thank you all for discussing with CHT issue.I think it is very important for us in order to know the actual fact.
with thanks
tuklu
@Tuklu,
অনেক দেরীতে বলছি: দিদি, আপনারা পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য সবিশেষ কৃতজ্ঞতা। :rose:
বিপ্লব রহমান, আপনার চমৎকার বিশ্লেষণ মূলক লেখাটার জন্য ধন্যবাদ । পাকিস্থানীদের আমরা কথায় কথায় গাল দেই, দেওয়ারই কথা । কিন্তু আমরা বাঙালিরা সংখ্যাগুরুর দম্ভ নিয়ে পাহাড়িদের প্রতি যে নির্লজ্জ আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছি তা কি পাকিস্থানীদের থেকে ভিন্ন কিছু !? তীব্র ধিক্কার আর ঘৃণা জানাই পাহাড়িদের উপর বাঙালির এই নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে ।
@নন্দিনী, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। :yes:
পাহাড়ীদের উপর ম্যাসাকারের আরো কিছু প্রমান দেখতে পারেন।
এখানে কয়েকটি ভিডিও আছে।
এখানে আর একটিঃ
httpv://www.youtube.com/watch?v=nzhPbXH42kg
@আদিল মাহমুদ, যে লোগাং গণহত্যার কথা বলা আছে এই ভিডিও চিত্রে, এরই ওপর সে সময় একটি সরেজমিন প্রতিবেদন করেছিলাম (আমার ই-বুকে এ সংক্রান্ত একটি লেখাও আছে– একটি রোমহর্ষক গণহত্যার কাহিনী), ভিডিও চিত্রে প্রদর্শিত লোগাং পদযাত্রায় (২৫কি.মি) আমিও অংশ নিয়েছিলাম! অনেক বেদনাবহুল কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে সবিশেষ কৃতজ্ঞতা। :rose:
পাহাড়ে কেন এত সহিংসতা?
কর্ণফুলীর কান্না যারা দেখেন নাই তাদের জন্যে-
httpv://www.youtube.com/watch?v=m8mhw3GX0fc1
httpv://www.youtube.com/watch?v=uD5F7pqsoPA&feature=related2
httpv://www.youtube.com/watch?v=pcSz8V93wiM&feature=related3
httpv://www.youtube.com/watch?v=8_5LkFsIDFU&feature=related4
httpv://www.youtube.com/watch?v=1bcMeC5cz8o&feature=related5
httpv://www.youtube.com/watch?v=7GtfGtXRtKk&feature=related6
httpv://www.youtube.com/watch?v=DwQ01h9fg7s&feature=related7
@আকাশ মালিক,
গুরুত্বপূর্ণ এই ভিডিওগুলো সংযোজনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সবারই উচিৎ ভিডিওগুলো একটু মন দিয়ে দেখা। এরকম একটা ভিডিও যে ইউটিউবে আছে তাই জানা ছিলো না। ডকুমেন্ট্রিটি কি তানভীর মোকাম্মেলের করা? নেপথ্য কন্ঠ শুনে মনে হল – শাইখ সিরাজের। ডকুটির পেছনে কারা যুক্ত ছিল এ সম্পর্কে বিষদ তথ্য পেলে ভাল হয়।
@অভিজিৎ দা, এই অসামান্য প্রামান্যচিত্রটি তানভীর মোকাম্মেলেরই। বিএনপি সরকার এটিকে নিষিদ্ধ করেছিল। পরে এক-এগারোর সরকার এটিকে আবার প্রচার করার অনুমতি দেয়। পাহাড়ের সব দুঃখগাঁথা এই একটি ছোট্ট প্রামাণ্যচিত্রে কি অসামান্যভাবেই না প্রকাশ করা হয়েছে!
আকাশ মল্লিককে অসংখ্য ধন্যবাদ। :rose:
শিক্ষা এবং চাকরিক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা আদিবাসিদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোটা প্রথা চালু আছে। কিন্ত আমি অন্তত এগ্রিকালচারে কোটায় সুযোগ পাওয়া ছাত্রদের প্রায়ই দেখতাম বাংগালি।এমনকি আমার ব্যাচের দুটো কোটাতেই এসেছিল বাংগালি স্যাটেলার।সবথেকে আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে তাদের দুজনেরই চট্রগামে এখনও আদিবাড়ি আছে। আমার মনে আছে অরিয়েন্টেশনের দিন,ভর্তি পরিক্ষায় কম নম্বর পাওয়ায় কোটাতে সুযোগ না পাওয়া আদিবাসি বেশ কিছু ছেলে নেতাদের অনুরুধ করছে কিছু করা যায় কিনা কিন্ত কাজ হয়নি।
তাহলে কোটা প্রথাটি কার জন্য করা হল এবং যেসব আদিবাসি রাঙ্গামাটি, খাগরাছড়ি এবং বান্দরবান এলাকায় বাস করেনা ,তারাইবা কেন বঞ্চিত হবে?
@হেলাল, আপনার পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
donnyobad Biplob da. Pahare gatona neye lekar jonnyo. kinto bastob hosse ekono eye buni Sommosya somadaner jonnyo karjokor kono uddog nei.
gatokal digantha tv te ex. bagaihat sena commander boleshen r o 10(dosh) lac Setler okane neye gele tarpor sustainable peace hobe. tahole deken tader ki Manosikota. ……
@Hiran Chakma, দিগন্ত মিডিয়ার কথা আর বলবেন না, এটা হল গিয়ে জামায়াতের অপপ্রচার যন্ত্র। তবে মূলধারার মিডিয়াগুলো তেমন একটা ভূমিকা রাখছে না, যা খুবই দুঃখজনক।
আমাদের সেনাবাহিনীর কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করাও আসলে একটা বড় ধরণের ভুল, দুঃখজনক হলেও সত্য এই বাহিনীটা ট্রাবলমেকারে ভর্তি। সরকার তো এখন জয়কে নিয়েই ব্যস্ত, আমাদের একমাত্র আশা এখন সেসব মানবাধিকার সংগঠণ যারা প্রতিবাদ সমাবেশ করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
@পৃথিবী, :yes: :yes:
@Hiran Chakma,
আপনি সহ অন্যন্য সংখ্যালঘু (এই শব্দটিকে এতো ঘৃণা করার পরেও এড়ানো যাচ্ছে না) সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের নিবেদন রইলো- আপনাদের কথা নির্ভয়ে আমাদের মুক্তমনা ব্লগে পেশ করুন। আপনার সতীর্থদেরও বলুন।
@অভিজিৎ, :yes:
@ হিরণ, এখানে আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগলো। অভিজিৎদার সঙ্গে আমিও অনুরোধ জানাই, আপনাদের কথাগুলো নির্দ্বিধায় মুক্তমনা’য় লেখার জন্য। :yes:
@Hiran Chakma,
আপনি নিচের ঠিকানাতে ইমেল পাঠান। HRCBM ওদের (CHT-এর মানুশদের) ইনটারভিউ নিতে পারে এবং আন্তরজাতিকভাবে শহায়তা করতে পারবে। আমি ভাল বাংলা লিখতে পারি না। আপনি দয়া করে এটা করেন।
USA International HQ:
Human Rights Congress for Bangladesh Minorities (HRCBM)
P.O. Box 5493
Santa Clara
CA 95056-5493, USA
Ph: 212-592-3627 (NY)
Fax: 619-330-0662
email: [email protected]
এই website দেখুন।
http://hrcbm.org/
http://apps.facebook.com/causes/313616
http://www.facebook.com/hrcbm
@Truthseeker, :-/
বাঙালিদের ওপর পাঞ্জাবীদের অত্যাচার ছিল সংখ্যাগুরুর ওপর সংখ্যালঘু অস্ত্রধারীদের অত্যাচার। আর পাহাড়িদের ওপর বাঙালিদের অত্যাচার সংখ্যালঘুর ওপর সংখ্যাগুরুর অত্যাচার। এ লেখায় দেখলাম কিভাবে বাঙালিরা পার্বত্য এলাকায় জমি জবরদখল করেছে। ৭২ এ বঙ্গবন্ধুর “তোরা সব বাঙ্গালি হইয়া যা” -কথাটির অনেক মানে হতে পারে। কিন্তু একটি অর্থ এমনও হয় যে, পাহাড়িদের ওপর বাঙালি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়া। তবে জিন্নাহর সাথে পার্থক্য এই যে, পাকিস্তানে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ আর বাংলাদেশে পাহাড়িরা সংখ্যালঘু। বঙ্গবন্ধু কি বাঙালি-পাহাড়ি সম্প্রীতি অর্জনের লক্ষ্যে কথাটা বলেছিলেন নাকি এটা সংখ্যালঘুদের ওপর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ছিল? জানার ইচ্ছে… 😕 😕 😕
@আগন্তুক,
শাহরিয়ায় কবিরের একটু চমতকার কিশোর উপন্যাস আছে, “সীমান্তে সঙ্ঘাত”, খুব সম্ভবত অবসর থেকে ৮৬ সালে বের হয়। দারুন একটা বই, এতে পার্বত্য সমস্যার কিছুটা বাস্তব রুপ দারুনভাবে দেখানো হয়েছে।
সে বইতে শাহরিয়ায় কবির শান্তি বাহিনীর একজন কাল্পনিক মেজরের মুখ দিইয়ে বংগবন্ধুর সেই কথাকে আগ্রাসন অর্থে বুঝিয়ে সমালোচনা করেছেন।
@আগন্তুক,
না এটা বোধ হয় ঠিক নয়। সেটেলার বাঙ্গালিরা ঘাটি গাড়ার আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িরাই ছিলো সংখ্যাগুরু, বাঙালিরা নয়। পাহাড়িরা বরাবরই ভিন্ন জাতিগোষ্ঠির অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় তাদের সমাজ সংস্কৃতি সবকিছুই ছিলো আলাদা। তারা এই স্বকীয় বৈশিষ্ট নিয়েই বহু বছর বহু যুগ ধরে জীবন অতিবাহিত করেছে। এমনকি ব্রিটিশ শাসনের সময়েও তাদের জন্য ভিন্ন আইন, ভিন্ন নীতিমালা ছিলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তাদের এই স্বকীয়তার ব্যাপারটি বাংলাদেশের সংবিধানে পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য – পাকিন্তানের সাথে বৈষম্যগুলো উল্লেখ করার সময় আমরা খুব বড় গলায় বলি যে, পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের ভাষা কিংবা সংস্কৃতিগত কোন মিল কখনোই ছিলো না – জোর করে আমাদের পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো ইত্যাদি। সেই কথা কিন্তু পাগাড়িদের জন্যও খাটে। তাদের সংস্কৃতির সাথে আসলে আসাম, মিজোরাম, ত্রিপুরা রাজ্যের সাথেই মিল বেশি, অথচ জোর করে তাদের বাংলাদেশের সাথে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যখন নারায়ন লারমা ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সহাবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় পার্বত্যঅঞ্চলের স্বায়ত্বশাসন, সংবিধানে ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আইনের স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বহিরাগতদের আবাস গড়া রোধের নিশ্চয়তা ইত্যাদি দাবী নিয়ে আলোচনার জন্য গিয়েছিলেন – তখন মুজিব তো তার কথা শোনেনইনি, শোনা যায়, তাদের স্মারকলিপি তাদের মুখের উপর ছুঁড়ে মেরেছিলেন। এই প্রেক্ষিতেই তিনি বলেছিলেন – তোরা সব বাঙালি হইয়া যা। যেই ঔপবেশিক শাসন আর সাম্রাজ্যবাদী শোষন ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের মত ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছি, সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বলে বসলেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের বাংগালিপনায় বিলীন হয়ে যাবার জন্য। কি অদ্ভুত শাসকগোষ্ঠির মন মানসিকতা। তবে এটা ঠিক সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করে সেনাপ্রধান জিয়া লাখ খানেক বাংঙালি সেটেলারদের পার্বত্যচট্টগ্রামে নিয়ে আসেন এবং পরোক্ষভাবে ইন্ধন জোগান পাহাড়িদের জমিজমা আত্মস্যাৎ করতে। যে ঔপনিবেশিক মন মানসিকতার জন্য আমরা উঠতে বসতে ব্রিটিশ আর পাকিস্তানীদের গাল পাড়ি, সেই একই মনমানসিকতা আমরাও দেখিয়েছি পাহাড়িদের প্রতি, নয় কি?
আরো একটা ব্যাপার, পাহাড়িরা যদি সংখ্যালঘু হয়ও, তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি কিংবা স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে সংখ্যাগুরুদের সাথে মিশে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। বাংলাদেশে তো হিন্দুরাও মুসলিমদের চেয়ে সংখ্যায় কম। তা বলে কেউ যদি সংখ্যাগরিষ্ঠদের সাথে মিশে যেতে বলেন কিংবা জোর করেন, সেটা কি গ্রহণযোগ্য হবে? নিশ্চয় নয়। সংখ্যাগুরুদের আগ্রাসী মনোভাব এভাবেই বহু জায়গাতেই উৎকটভাবে প্রকটিত হয়ে উঠে। অনেক সময় সংখ্যাগুরু অংশের প্রতিনিধিত্ব করায় সেগুলো আমরা বুঝতেও পারি না। বুঝতে পারি তখনই যখন কখনো সখনো সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসেবে আক্রান্ত হই।
@অভিদা,
আপনি বোধহয় একটু ভুল বুঝেছেন। পাকিস্তানে বাঙালিরাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ, শুধু পূর্বপাকিস্তানে নয়। বাংলাদেশে পাহাড়িরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না, শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।
আমার প্রথম লেখার কিছু মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আপনি পরবর্তীতে এক জায়গায় বলেছিলেন যে আমি বিবেকানন্দ সম্পর্কে আমি গদগদ ছিলাম। বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গেও হয়তো একই ধারণা করেছেন। আসলে আমি বিবেকানন্দের কিছু ব্যাপার নিয়ে মুগ্ধ, তেমনি বঙ্গবন্ধুরও। কিন্তু এদের কারও সব কথাই আমি ঠিক মনে করি না। বিবেকানন্দের যৌনতা নিয়ে ছুৎমার্গের সমালোচনা আমি ওই থ্রেডেই করেছিলাম। আপনি হয়তো লক্ষ্য করেননি। বঙ্গবন্ধুর বিতর্কিত কাজগুলোও আমার ভালো লাগে না। এ ব্যাপারটা আপনি জানালেন। জানার পর ওনার এই আচরণ আমি সমর্থন করতে পারছিনা।
ওফ! অভিদা, আপনি কি করে ভাবলেন যে পাহাড়িদের ওপর এই বর্বর আক্রমণ আমি কোনভাবেই সমর্থন করছি? এর চেয়ে বরং আমাকে ওঠবস করাতেন। :-Y আমি শুধু অত্যাচারের ধরণের পার্থক্যটা বলেছি। পাহাড়িদের ওপর বাঙালিদের আগ্রাসন সংখ্যালঘু নির্যাতনের এক নির্লজ্জ নিদর্শন। আমারই লেখার দুর্বলতা যে আমি মূল কথাটা আপনাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।
@আগন্তুক,
হুমম… বুঝতে পেরেছি। আসলে সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু প্রশ্নে ভুল বোঝাবুঝি যাতে না হয় সেজন্যই আমি উত্তর দিয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম তোমার স্ট্যান্ড কি। ভুল বুঝিনি। তোমার উত্তরের পরে তো আর বলার কিছু নেই, আরো ভাল ভাবেই স্পষ্ট হয়েছে। খুব ঠিক কথাই বলেছ- পাহাড়িদের ওপর বাঙালিদের আগ্রাসন সংখ্যালঘু নির্যাতনের এক নির্লজ্জ নিদর্শন। কাজেই আমাদের দেখতে হবে আমাদের কোন মন্তব্যে কিংবা বক্তব্যে সেই ব্যাপারটা যেন চাপা পড়ে না যায়। আমার যদি কখনো ভুল হয়, সেটা যেমন দেখার দায়িত্ব তোমার, তেমনি উল্টোটাও। এভাবেই আমরা এগুবো সামনের দিকে। ভাল লাগলো তোমার সাথে আলোচনা করে।
@আগন্তুক @অভিজিৎ দা,
আমার বিস্ময় লাগে, যে বাঙালি জাতি রক্তদিয়ে জাতিগত নিপীড়নের কবল থেকে মুক্তি পেলো, তারাই কি ভাবে স্বাধীনতার পর পরই পার্বত্য চট্টগ্রামে একই কায়দায় জাতিগত নিপীড়ন শুরু করে!
এমন কি ১৯৭১ সালে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায় রাঙামাটিতে পাকিস্তানী পতাকা ওড়ানোর দায়ে রাজাকার নিধনের নামে ১৯৭২ সালে মুক্তিবাহিনী অন্যান্য নিরাপত্তাবাহিনীসহ খাগড়ছড়ির রামগড়ে পাহাড়ি আদিবাসী গ্রামে গণহত্যা-গণধর্ষণ পর্যন্ত চালিয়েছে! (এ বিষয়ে দলিলসহ মুক্ত-মনায় একটি আলাদা লেখা দেওয়ার ইচ্ছে আছে)। …বঙ্গবন্ধুর (?) ওই দম্ভক্তি এরই ধারাবাহিকতা মাত্র। …
১৯৭২ এর প্রস্তাবিত সংবিধানে বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র — এই চারমূলনীতির কথা বলা হয়েছিল। সংবিধানটি পাশ হওয়ার সময় সাংসদ (পরে জনসংহতি সমিতি ও এর গেরিলা গ্রুপ শান্তিবাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা) এমএন লারমা এতে আপত্তি জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেছিলেন, মাননীয় স্পিকার, একজন বাঙালি যেভাবে চাকমা হতে পারেন না, একজন চাকমাও সেভাবে বাঙালি হতে পারেন না। …
অনেক ধন্যবাদ। :yes:
@অভিজিৎ,
(Y) (Y) (Y) (Y)
@অভিজিৎ,
(Y) (Y) (Y)
@বিপ্লব, অনেক কিছু জানলাম লেখাটা পড়ে। আচ্ছা, আপনি কি জানেন, এই পাহাড়িরা কবে এসেছিল ভারতবর্ষে? ব্রিটিশদের সময়, ১৯০০ সালের আগে, এদের উপর কি ভারত সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল? আমাদের দেশের বর্ডারের ওপারেও কি ইন্ডিয়া বা বার্মায় একই গোষ্ঠির পাহাড়িরা বাস করে? অনেকগুলো প্রশ্ন করে বিরক্ত করলাম, আপনার লেখাটা পড়ে মাথায় এই প্রশ্নগুলো ঘুরছিল, আশা করি কিছু মনে করবেন না।
@ বন্যাদি, আপনার আগ্রহের জবাবে খুব সংক্ষেপে বলছি:
১৮৮৬ সালের দিকে লেখা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রথম গ্রন্থ ‘আ ফ্লাই অন আ হুইল’ এ লে. কর্নেল লুইন জানাচ্ছেন, মুঘল আমলের আগে থেকেই সেখানে পাহাড়িদের বসবাস। কর দিতে অস্বীকার করায় মুঘলদের সঙ্গে পাহাড়িদের যুদ্ধ-বিগ্রহও হয়েছে। …
কর্নেল লুইনের তথ্য অনুসারে সে সময় ব্রিটিশ সরকার রাঙামাটিকে জেলা, কাপ্তাই ও রামগড়কে মহকুমা ঘোষণা করে তা চট্টগ্রাম বিভাগের অর্ন্তভূক্ত করে গেজেট নোটিফিকেশন করে। ১৯০০ সালের বিশেষ শাসনবিধিতে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘোষণা করে ‘আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল’। এই শাসনবিধিতে জুম চাষ, সার্কেল প্রধান (রাজা), করবারি (গ্রাম প্রধান), হেডম্যান (মৌজা প্রধান) — ইত্যাদি ঐতিহ্যগত রীতিনীতি ও প্রথাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ১৯০০ সালের শাসনবিধিটি পাহাড়ে এখনো সক্রিয়।
ভারতের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত আসাম, মেঘালয় ও মনিপুর সীমান্তের দুদিকে বাংলাদেশের আদিবাসী (পার্বত্যাঞ্চলের বাইরে) গারো, হাজাং, খাসি বা খাসিয়া, মনিপুর জনজাতির বংশ পরম্পরায় বসবাস। একইভাবে অরুনাচল, মিজোরাম, নাগাল্যাল্ড ও ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তের দুদিকে পার্বত্য আদিবাসী গোষ্ঠির মধ্যে চাকমা, বম, পাংখো, ম্রো, ত্রিপুরা ইত্যাদি নৃ গোষ্ঠির বাস। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্পের কারণে কয়েক লাখ পাহাড়ি উদ্বাস্ত হয়ে এ সব রাজ্যে পাড়ি জমায়। তারা এখন ভারতের নাগরিক হিসেবে সেখানেই বসবাস করছেন। এর বাইরে মিয়ানমার সীমান্তের দুপাড়ে কক্সবাজারের রাখাইন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা জনজাতির বসবাস। ভারত-বাংলাদেশ ও মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমানা পাড়ের আদিবাসীদের মধ্যে নৃতত্ব, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ভাষাগত খুব বেশী পার্থক্য নেই। …
ইচ্ছে আছে, প্রয়োজনীয় নথি-পত্রসহ এ নিয়ে আগামীতে ‘মুক্তমনা’য় একটি আলাদা লেখা লেখার। চলুক। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আশা করছি, এ বিষয়ের ওপর আপনার আরো তথ্যসমৃদ্ধ লেখা পড়তে পাবো, মুক্তমনায়।
@ইরতিশাদ, চেষ্টা করবো ভ্রাতা। :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আপনার এই লেখাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি লিখেছেন, “পাহাড়ের শীর্ষ রাজনীতিবিদ, পার্বত্য বিশ্লেষকসহ সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত, শান্তিচুক্তির মৌলিক শর্ত বাস্তবায়ন তথা পার্বত্য ভূমি কমিশনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমেই পাহাড়ে জমির বিরোধ নিষ্পত্তির যৌক্তিক সমাধান খুঁজতে হবে।” তাছাড়া আমার মনে হয়, সত্বর সেনাবাহিনী প্রত্যাহারও জরুরী। আমরা মাত্র দু’বছর জরুরী অবস্থার ভেতরে থেকে অতিষ্ট হয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয় এইসব আদিবাসিরা যুগ যুগ ধরে ‘জরুরী অবস্থা’ বরণ করে বসবাস করছেন। একই দেশে দুই নীতি চলতে পারে না বলেই ধারনা করি। আপনাকে ধন্যবাদ।
@হাসানআল আব্দুল্লাহ, একমত। সামরিকায়ন ও ভূমি দখণ — পার্বত্য চট্টগ্রামকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। অনেক ধন্যবাদ।
মুক্তমনায় স্বাগতম বিপ্লব রহমান। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে বিপ্লবের কিছু লেখা আমাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হলেও ব্লগে তার লেখা এই প্রথম। আমি দীর্ঘদিন ধরেই বিপ্লবের পাহাড়িদের নিয়ে তথ্যবহুল লেখালিখির সাথে পরিচিত। ইন্টারনেটে খুব কম লেখকই আছেন যারা বিপ্লবের মত আদিবাসীদের কাছ থেকে দেখেছেন, তাদের ব্যাথা বেদনাগুলো বোঝার চেষ্টা করেছেন এবং সেগুলো নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখছেন, এবং সর্বোপরি মানুষের ভুল ধারনগুলো ভেঙ্গেছেন। মুক্তমনায় আমরা বিপ্লবকে পেয়ে আনন্দিত। আশা করি উনি তার তীক্ষ্ণ লেখা দিয়ে আলোকিত করেচলবেন।
সেই সাথে বিপ্লব রহমানের ই-বুক – রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে – আমরা মুক্তমনায় রখাতে আগ্রহী। তিনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের মুক্ত-মনা ইবুক আর্কাইভে রাখতে পারি।
বিপ্লব রহমান, আপনার লেখা আগে এখানে সেখানে দেখেছি, খুবই ভালো লাগলো মুক্তমনায় আপনার লেখা দেখে। আমরা অনেকেই হয়তো আবেগ দিয়ে পাহাড়ি জনগণের জন্য ভাবি, খবরের কাগজে তাদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলো দেখে মন খারাপ করি।
কিন্তু আমাদের মধ্যে খুব কম মানুষই আছেন যারা তাদের উপর শতবর্ষ ধরে চলে আসা নির্যাতনের এই ইতিহাসের ধারাবাহিকতা সম্পর্কে পরিষ্কার কোন ধারণা রাখেন। আপনার লেখাগুলো আমাদেরকে সেই ইতিহাসটা বুঝতেই সাহায্য করবে। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটার জন্য।
@রাহাত খান, আপনার পাঠ ও প্রতিক্রিয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা।
@ অভিজিৎ দা, আপনার বিনয় সম্ভাষণের জবাবে ঠিক কি বলবো, ভেবে পাচ্ছি না।…আপনি যেমনটি বলছেন, আমি সত্যিই তেমন কেউকেটা গোছের কেউ নই; নিতান্তই এক অক্ষর-জীবী মাত্র। তবে চেষ্টা করছি, আমার সমস্ত শুভ চিন্তাসমূহ অক্ষরের প্রকাশ করার। 🙂
—
‘মুক্ত-মনা ইবুক আর্কাইভ’ এ আমার লেখা! এটি তো খুবই আনন্দের কথা। বিশেষ অনুগ্রহ করে আমার ই-বুক ‘রিপোর্টারের ডায়েরি: পাহাড়ের পথে পথে’ – সেখানে যোগ করে দিন না! :clap2:
ধন্যবাদ বিপ্লব দা আপনার চমৎকার বিশ্লেষণের জন্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আমি অবশ্যই নাইভ এবং স্বীকার করে নিচ্ছি আমার লেখাটাও ভুল ভ্রান্তি ছড়াতে পারে।
আপনার ই-বইটি আমার কাছে। সময় করে পড়ে মতামত জানাবো।
@রায়হান আবীর, আপনার মতামত ও আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই। :yes: