এক হেমন্তের বিকালে সূর্য যখন পশ্চিমে হেলে পড়ে অস্তমিত হবার প্রস্ততি নিচ্ছে এমনি এক সময়ে অনেক দিন পর ভাবলেশহীন কিংবা আনমনা হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে আবির। আজ অনেক দিন পর বিকালে তার কাজ নেই মানে টিউশনী নেই।ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ০ পয়েন্টের দিকে হাটতে থাকে।মনটা আজ তার ভাল নেই। কেন ভাল নেই ?নিজেকে জিজ্ঞেস করে সে।আমি কি নিসঙ্গতায় ভুগছি ভাবে সে।হয়তো হ্যা কিংবা না জবাব আসে।এ কেমন উত্তর! বিস্মিত হয় সে।নিজের কনফিউজড অবস্থা দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়।নিজেকে বড় একা মনে হয়।মনে ভেসে আসে ওর কয়েক টা লাইন, Alone ,alone, in the road of life I am alone here.None to feel me.None to love me.None to think me.None to guide me.Alone ,alone, in the road of life I am alone here.
নিজেকে এভাবে একাকী আবিস্কার করে মনটা আরও খারাপ হয়ে যায় ওর। এই ভয়াবহ একাকীত্ব থেকে মুক্তির পথ খোঁজে সে।উপায় একটা পেয়ে যায় ।হ্যা প্রেমই ,ভালবাসাই দিতে পারে তাকে মুক্তি।কিন্তু অতীতের কথা ,জীবনের গরল অভিজ্ঞতা গুলোর গুলো মনে পরে যায়। না না আর প্রেম নয় ,নষ্ট পুজিবাদী সমাজে কোন প্রেম নয় ।এখানে ভালবাসা বিনিময় হয় টাকায়,মনের কোন মূল্য নেই।সে ভালবাসত।অনেক বেশি ভালবাসত।এখন ভালবাসা তার কাছ মূল্যহীন।যেখানে বেচে থাকাই অর্থহীন, মৃত্যুর চেয়েও আরও ভয়াবহ যন্র্রনাময় সেখানে সম্পর্ক নামের মিথ্যে অভিনয় করে নিজের মাঝে আরও যাতনা সৃষ্টি করে কি লাভ। তার চাইতে বরং……।
চিন্তাটা মাথায় আসতেই আতঁকে ওঠে সে।এভাবে চিন্তার দোলাচলে দুলতে সে নিজেকে ০ পয়েন্টের পুকুরের পাড়ে নিজেকে আবিস্কার করে।পুকুরের পানিতে সূর্যের লাল রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে এক সুন্দর আভা সৃষ্টি করেছে।একটু দুরে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাত ধরাধরি করে বসে গল্প করছে।ওদের দিকে একবার তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয় সে।আবিরের কাছে অসহ্য মনে হয়। কেন ? তুমি কি ওদের ঈর্ষা করছো?না না মোটেই না। তাহলে অন্যের আনন্দে তোমার ভিতরে অসহ্য বোধ কেন?কারনটা খুজতে গিয়ে অকারনে সময় নষ্ট না করে সে আবার পুকুরের দিকে তাকায় সে।রোদের আলো ছায়ায় কয়েকটা হাস সাতার কাটছে পুকুরে।হাসগুলোর অবাধ সাতারের দিকে তাকিয়ে থাকে সে।সে শুধু তাকিয়ে থাকে ,তাকিয়ে থাকে।এভাবে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর সে টের পায় সূর্য ডুবে যাচ্ছে।রাতের অন্ধকার নেমে আসছে।সে টের পায় সূর্য ডুবে যাচ্ছে।রাতের অন্ধকার নেমে আসছে। একদিন পর আবির আবার হাটছে।দিনে নয় রাতে,গভীর রাতে। রাতের অন্ধকার দর্শন ওর খুব প্রিয়।রাত রহস্যময় ,রাত ভীতিকর মৃত্যু চেতনার মত।সিগারেট ধরিয়ে ০ পয়েন্টের দিকে হাটতে থাকে সে।একা ,হ্যা আজ ও সে একা ।হাটছে একাকী।হাটছে ০ পয়েন্টের উদ্দেশ্যে ।আজ সে জীবনের মানে খুজতে চায়।কেন এই বেচে থাকা ?কেন এই অর্থহীন পথচলা।কেন ই বা জীবন ধারন করা ?কেনই বা মরে যাওয়া?কেনই বা জীবন মৃত্যুর মাঝে অর্থহীন সময় কাটানো?তার চেয়ে বরং…..।
আবার বুকটা ধক করে ওঠে।আতংক গ্রাস করে তাকে।নিজেকে ০ পয়েন্টে আবিস্কার করে আবির এবার পুকুরের পাড়ে নয় মাঠের পাশে।হাটতে হাটতে মাঠের মাঝখানে চলে যায় সে।চারপাশে শুধু নির্জন অন্ধকার।উপরে নক্ষত্র খচিত নীলাকাশ।মাঠের মাঝখানে গিয়ে সে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।চারদিকে কেউ নেই।সে একা শুধু একা। আকাশের দিকে তাকায় সে।নীলাকাশ ,অজস্র তারা এবং সে।তারাগুলো মিটমিট করে জ্বলছে।সে তাকিয়ে থাকে শুধু তাকিয়ে থাকে।তারার মাঝে যেন আত্নহারা সে।কিন্তু ভাবলেশহীন মন কোন শান্তনা খুজে পায় না । সে তাকিয়ে থাকে শুধু তাকিয়ে থাকে। অন্ধকার দর্শণ খুজতে গিয়ে আলোক দর্শনে তাকিয়ে থাকা। হঠাৎ বিষয় টা বুঝতে পেরে নিজের উপর বিরক্ত হয় সে। তারচেয়ে বরং…….।
আবার আতংক গ্রাস করে তাকে ।আতংকে সে নড়াচড়ার শক্তিটুকুও সে হারিয়ে ফেলে যখন সে নিজের শরীরের উপরে একটা ফণাতোলা সাপের উপস্থিতি টের পায়।হ্যা সাপ।সত্যিই একটা সাপ ফণা তুলে তার বুকের উপরে।ক্রুর চোখে তাকিয়ে।ছোবল দেবে তাকে। ছোবল দেবে ।আতংকে নিস্তেজ তার শরীর।ভয়ের শিহরন মনে।কেন ভয় কেন।কিসের ভীতি।মৃত্যুই তো তুমি চেয়েছো।আত্নহত্যা করে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরন করার চিন্তায় যে তাড়িত সে কেন সাপের ছোবলের ভয়ে আতংকিত হবে।কিন্তু আতংক তাকে ত্যাগ করে না।মৃত্যু ভয় তাকে গ্রাস করে। সে বুঝতে পারে বেচে থাকা যতই অর্থহীন হোক মরে যাওয়ার ইচ্ছে এই মূহুর্তে নেই।সে অসহায় দৃষ্টিতে সাপটির চোখের দিকে তাকায়।সাপটি যেন ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারে।তরতর করে নেমে যায় ওর শরীর থেকে।সাপটি চলে যায়।স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আবির।আবার আকাশের দিকে তাকায় সে।তারাদের দিকে।তারাগুলো যেন মিটমিট করে হাসছে ।আবিরের অবস্হা দেখে।আত্নহত্যাকারীর মৃত্যু ভয় দেখে!আবির বুঝতে পারে নিজের দ্বৈততা ও অসহায়ত্ব।কিন্তু অযুত তারাদের বিদ্রুপাত্নক চাহনি তার কাছে অসহ্য মনে হয়।সে তারাদের উদ্দেশ্যে একটা গালি দিয়ে গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ায়।সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে ০ পয়েন্টের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে সে।হাটতে হাটতে আবার সেই পুকুরের পাড়।পুকুরের পাড়ে দাড়িয়ে পুকুরের দিকে তাকায় সে ।তারাগুলো সেখানও!পুকুরের স্বচ্ছ পানির ভিতর দিয়ে তারাগুলো আবিরের দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের হাসি হাসছে।আবির হিতাহিতবোধ হারিয়ে ফেলে।তারাগুলোর উদ্দেশ্যে গালি দিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে পুকুরে।সে তারাদের ছুতে চায়।সে তারাদের ছুতে চায়।সে চলে যায় পুকুরের তলদেশে ।একমুঠো ভরে নিয়ে দ্রুত উপরে উঠে এসে হাতের মধ্যে একমুঠো কাদা ছাড়া আর কিছু পায় না সে।
তারপর সে বসে থাকে।একাকী।০পয়েন্টের পাশে।চারদিকে অন্ধকার।সে বসে আছে।সে অপেক্ষা করছে।সে অপেক্ষা করছে কখন সকাল হবে।কখন সূর্য উঠবে ।কখন কাটবে আধাঁর।
আপনার নাম দেখে প্রখ্যাত লেখক হুমায়ুন আহমেদ এর “হিমু ” চরিত্র টা মানষ পটে ভেসে উঠল ।
এইবার আসি লেখার প্রসঙ্গে এই টা কি আপনার প্রথম লেখা ? যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে মন্দ না ।
কিন্তু , গল্প লিখতে হলে আরো বই পড়তে হবে । ভাল লাগল মোটামুটি , তবে
আরো ভালো আরও নিখুঁত লিখতে চেষ্টা করুন । শুভেচ্ছা ।
মুক্তমনায় স্বাগতম।আচ্ছা আপনি ই কি সচলের “গোয়েন্দা ঝাকানাকা” খ্যাত হিমু?
প্রেম মানুষকে কিভাবে নাচায় দেখলে অবাক হই!
মুক্তমনায় স্বাগতম হিমু ব্রাউন। পুরো লেখাটা এক প্যারাগ্রাফে না লিখে ছোট ছোট প্যারাগ্রাফ করে ব্লগে দিলে পড়তে আরাম হয়। 🙂 লেখার জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ, ধন্যবাদ আপনার সুপরামর্শের জন্য।আশা করছি সামনে মান সম্পন্ন লেখা দিতে পারব।আর মুক্ত মনা সদস্য পদ দেয়ায় আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আমি খুব নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।