কথার কথা:
ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কার বা মুক্তচিন্তা বিষয়ে যাঁদের সংবেদনশীলতা রয়েছে,
তাঁদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।
[জবাবদিহি: অন্তর্জালের অন্য ফোরামে প্রতি পোস্টে দশটা দশটা করে একটা উৎবচন সিরিজ প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলোরই একটা সমন্বিত রূপ হলো এই উৎবচন শতক সিরিজ, যা মুক্তমনার পাঠকদের জন্য একত্র সংকলিত করে প্রকাশ করা হলো। আগামীতে মলাটবন্দী হবার আগে এগুলোর সম্ভাব্য একটা পরিশীলিত রূপ দেয়ার চেষ্টা থাকবে নিশ্চয়ই। তাই পাঠকের যেকোন মতামত এক্ষেত্রে অবশ্যই ভাবনার রসদ হিসেবে বিবেচিত হবে। সবাইকে স্বাগতম।]
…
(০১)
যুবতী মেয়েদের চুলের দৈর্ঘ্য নির্দেশ করে
তার সংস্কারের শিকড় কতোটা গভীরে প্রোথিত,
আর কথায় কথায় স্রষ্টাকে উদ্ধৃত করার সংখ্যা দিয়ে মাপা যায়
পুরুষের ভণ্ডামির বিস্তার।
(০২)
শিল্পের ঘাড়ে কাপড় তুলে দিয়ে
অশ্লীলতার বৈধ বিপণনকারীর তালিকায়
সর্বাগ্রে আসে স্বঘোষিত কবিদের নাম।
(০৩)
নিচের কাপড় তুলে মুখ ঢেকে যারা লজ্জানিবারণ করে,
তাদের লজ্জাস্থানই উন্মুক্ত হয়।
তা দেখে লজ্জা পায় অন্যেরা,
আর কেউ কেউ মজা পায়।
(০৪)
কখনো কখনো নির্দোষ হলেও
ভণ্ডামির উৎকৃষ্ট উপায়ই হলো সবকিছু স্রষ্টার নামে সঁপে দেয়া।
(০৫)
নিজেকে গোপন করতে মানুষ অন্যকে উদ্ধৃত করে, আর
অন্যকে আড়াল করতে নিজেকে নিয়ে বদমায়েশি করে।
.
(০৬)
মানুষ যতক্ষণ পশু থাকে
ততক্ষণ সে নিজেকে মানুষ বলে প্রচার করে।
(০৭)
এখন বৃষ্টি হলে আমার পিতা যা করতেন
আমিও তা-ই করি, নিজেকে রক্ষা করি। আর আমার সন্তান
বৃষ্টিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কৈশোরে আমি যা করতাম।
ব্যক্তি বদলে যায়, মানুষ বদলায় না।
(০৮)
আগে ছোট অফিসের বড় কর্মকর্তা হয়ে অধঃস্তনকে নিয়ে
যেরকম ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, এখন বড় অফিসের ছোট কর্মকর্তা আমাকে নিয়ে
আমার বসও সেরকম ব্যতিব্যস্ত থাকেন।
দায়িত্বহীন মানুষ আর ভারহীন গাধায় কোনো পার্থক্য নেই।
(০৯)
মানুষের লেজ দৃশ্যমান নয় বলে
লেজেগোবরে শব্দটি মানুষ অন্যায়ভাবে লেজযুক্ত পশুদের ঘাড়ে চাপিয়ে
অনৈতিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছে।
(১০)
মোবাইল ফোন হচ্ছে সেই যন্ত্র, যা দিয়ে মানুষের
ভণ্ডামি রেকর্ড হয়, আর নষ্টামি আড়ালে থাকে।
(১১)
অধিকাংশ প্রাণীর শব্দ বিক্ষেপণের দুটো মুখ থাকে-
একটা সামনে বা উপরে, অন্যটা নিচে বা পেছনে।
এই দুটো মুখের বিভেদ ঘুচাতে জানেন যিনি,
আজকাল তাকেই সফল মানুষ বলে।
(১২)
অফিস হচ্ছে সেই খোঁয়াড় যেখানে
নতুন কোন সৃজন হয় না,
যা আছে তা ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ছাড়া।
(১৩)
মানুষের ব্যক্তিত্ব তাঁর চেহারায় নয়,
হাঁটার স্টাইলেই আঁকা থাকে।
(১৪)
‘না’ বলতে জানে না যে, তাঁর ‘হাঁ’ বলাটাই ভণ্ডামি।
(১৫)
অংক শেখার প্রথম পাঠই হচ্ছে অংক ভুলে যাওয়া,
ভুলতে না পারলে বিসর্জনের শুদ্ধতা আসে না।
(১৬)
কম্পিউটার বানায় যে, ততক্ষণই সে কম্পিউটার চালায়।
আর যে কম্পিউটার চালায়, আসলে কম্পিউটার তাকে চালায়।
(১৭)
শ্রাদ্ধের নামে মৃতের কোন শেষকৃত্য হয় না,
প্রকৃতপক্ষে জীবিতরা নিজেদেরই শ্রাদ্ধ করে।
(১৮)
আহার সংযমে দৈহিক ওজন বাড়ানোয় কোন অলৌকিকতা নেই,
রয়েছে বস্তুগত চাতুর্য্য।
(১৯)
গাম্ভীর্য একধরনের স্বার্থপর অক্ষমতা,
যা মানুষকে প্রকাশিত হতে দেয় না।
(২০)
মেরুদণ্ডের অবস্থান মানুষের হাড়বাঁধানো শিরদাঁড়ায় নয়,
যৌবনে থাকে জননযন্ত্রে, বার্ধক্যে ব্যাংক-ব্যালেন্সে।
(২১)
আফসোস হচ্ছে সেই ধুর্ততা,
সময়কে ধরতে না পেরে কপট ও মূর্খরা যা করে থাকে।
(২২)
মানুষকে পশু বানানোই মানুষের শ্রেষ্ঠ বিনোদন,
পশুরা তা জানলে তাদের নিজস্ব সমাজে
জঘণ্য গালিটা হবে ‘মানুষ’।
(২৩)
যার রক্ত দাসত্ব মুছতে পারে না
তার অনুরোধ হয় নির্দেশের স্বরে,
একজন স্বাধীন প্রভু নির্দেশ করে অনুরোধের সুরে।
(২৪)
যে নিজেকে ফাঁকি দেয়, সে অন্যকেও ফাঁকি দেয়;
যখন সে অন্যকে ফাঁকি দেয়,
আসলে সে নিজেকেই প্রতারিত করে।
(২৫)
যে পুরুষ নারীকে অবজ্ঞা করে, সে ধ্বংসকে আমন্ত্রণ জানায়;
নারীর প্রতি অনুগত যে, সে স্ত্রৈণ;
যে বিশ্বস্ত থাকে, আজীবন অন্ধত্বই নিয়তি তার।
সৃষ্টিশীল পুরুষেরা নতুন অপশনের খোঁজে জীবনটাই ব্যয় করে দেয়।
(২৬)
যে নারী পুরুষকে বিশ্বাস করে, সে বোকা;
যে অবিশ্বাস করে, সে নির্বোধ;
যে নির্ভর করে, সে অকর্মণ্য।
অথচ এর বাইরে নারীর জন্য কোনো অপশন রাখেনি পুরুষ।
(২৭)
অহঙ্কার সেই জ্বলজ্বলে বই, যার পাতায় পাতায়
অশ্লীল শব্দ আর অর্থহীন বাক্যের সমাহার।
(২৮)
মুদ্রাদোষ মানুষের একমাত্র স্মারক, যা তার পরিচয় বহন করে।
অসভ্য মানুষ এটাকে দোষ বলে প্রচার করেছে।
(২৯)
মানুষের ক্ষমতা তার স্বপ্নের চেয়ে বড় হয় না।
ক্ষমতা একরৈখিক, সীমাবদ্ধ; স্বপ্ন বহুমাত্রিক, অসীম।
স্বপ্নের দুর্বলতা হলো, তাকে টেনে নিচে নামানো যায় না।
(৩০)
উইগ, মাথার টাক ঢাকার সাথে সাথে মানুষের গুণগুলোও ঢেকে ফেলে।
ভণ্ড-ধার্মিকের মতো মানুষকে অভিনয়বাজ শয়তানে পরিণত করে।
(৩১)
মৃত্যু হিসাব-নিকাশহীন এক কাল্পনিক যাত্রা
যার কোনো শুরু নেই, শেষও নেই;
যেখানে কোন ধর্মগ্রন্থ নেই।
(৩২)
শুচিবাই কোন পরিচ্ছন্নতা নয়,
মনের কোণায় লুকিয়ে থাকা নিজস্ব নোংরামির বহিঃপ্রকাশ;
যেখানে রুগ্নতার চেয়ে বেশি থাকে অসভ্যতা।
(৩৩)
ব্যাঙের বের হবার সাধ্য নাই বলে তাকে কূপমণ্ডুক হয়েই জীবন কাটাতে হয়।
কিন্তু মানুষের সাধ্য অসীম,
তবু বাঙালির শখ কূপমণ্ডুক থাকাতেই ;
এজন্যে বাঙালি মানুষ হয না, হতে পারে না।
(৩৪)
মানুষই সবচেয়ে অসভ্য প্রাণী, কারণ
সে কেবল নিজের অনুকূলেই নিজের মতো করে সভ্যতা নির্মাণ করেছে।
তাই মানুষের সভ্যতা প্রকৃতির অনুকূল নয়।
(৩৫)
সু-স্বাস্থ্য মানে নিরোগ থাকা নয়।
এই বিশাল ও ভয়ঙ্কর জীবাণুমণ্ডলে ডুবে থেকে
রোগ-জীবাণু মুক্ত থাকার কথা কেবল নির্বোধরাই ভাবতে পারে।
সুস্থ থাকার সামর্থই হচ্ছে স্বাস্থ্য।
(৩৬)
আবেগ হচ্ছে প্রাকৃতিক অসভ্য অবস্থা ;
মানুষ যতক্ষণ আবেগহীন থাকে, ততক্ষণ সে দিগম্বর হয় না।
(৩৭)
মুদ্রা বা অর্থের শক্তি তার লেনদেনের মধ্যে,
প্রতিটা লেনদেন মানুষের ভেতরটাকে একটানে বাইরে নিয়ে আসে।
(৩৮)
যা বাস্তব তা-ই সত্য, তাই
বাস্তবতাকে স্বীকার না-করার অর্থ
নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা।
(৩৯)
প্রকৃতির সৌন্দর্য্য তার নগ্নতায়।
মানুষ যতক্ষণ প্রকৃতির অনুকূলে থাকে, তার নগ্নতা সৌন্দর্য্য ছড়ায়;
প্রকৃতির প্রতিকূলে মানুষই হয়ে উঠে সবচেয়ে অশ্লীল।
(৪০)
পিতা আর জন্মদাতা এক নয়।
জননযন্ত্র সক্রিয় হলেই জন্ম দেয়া যায়,
পিতা হতে দরকার হয় বাৎসল্যের।
(৪১)
কবি হবার প্রথম শর্তই হলো নির্লজ্জ হওয়া ;
লজ্জা নিয়ে কোন জননক্রিয়া হয় না।
(৪২)
কাউকে চিনতে হলে, তাকে বিপজ্জনকভাবে রাগিয়ে দাও ;
জিহ্বায় তার যেটুকু পোশাক অবশিষ্ট থাকবে, সেটুকুই সভ্য সে।
(৪৩)
শিক্ষা সেই মুখোশ, যা পরে মানুষ
সামাজিকতার ভাঁড়ামি আর নিখুঁত ভণ্ডামি করে।
(৪৪)
স্তনপিণ্ডে পাথরের আগ্রহ থাকে না;
কারণ সে নিজেকেও প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে।
(৪৫)
একটা অশ্লীল ও হাস্যকর রণক্ষেত্রকে সবাই ঠাট্টা করে দাম্পত্য বলে, যেখানে
দু’পক্ষেই অপেক্ষা করে নোংরা পরাজয়।
(৪৬)
জগতের জটিলতম কূহকের নাম- সন্তানের চোখ;
শেষপর্যন্ত যার পাঠোদ্ধার হয় না।
(৪৭)
চরিত্র হলো স্বভাবের শৃঙ্খলে বাঁধা নিজস্ব কারাগার;
এ থেকে মুক্তি পায় না কেউ, শৃঙ্খলের ধরন পাল্টায় কেবল।
(৪৮)
মানুষের যে আদিম প্রহসনটি আশ্চর্যজনকভাবে টিকে আছে এখনো,
তা হলো ‘নাম’-পরিচয়। অথচ নাম কোন পরিচয়ই বহন করে না। আর
মানুষের অদ্ভুত রসবোধের উৎকৃষ্ট ঠাট্টাটি হচ্ছে ‘নামকরণ’।
(৪৯)
নারী এক অদ্ভুত যন্ত্র,
সহজ বিষয়কে যে অনায়াসে জটিল বস্তুতে প্রক্রিয়াজাত করে।
(৫০)
পুরুষ হচ্ছে লোকাল বাস,
কখনোই যাত্রীক্ষুধা মেটে না।
(৫১)
যে রোগে কেবল রোগীই টের পায় না কিছু, ভোগে অন্যরা,
তা হলো পাগলামী।
(৫২)
তাঁরাই ধড়িবাজ,
সর্বাবস্থায় যাঁরা হাসিটাকে ধরে রাখে, মুছে না কখনো।
(৫৩)
সংস্কারমুক্তির প্রথম পাঠোত্তীর্ণে
তথাকথিত যে আস্তিক লোকটি আমাকে সর্বাগ্রে অভিনন্দন জানালো,
ভণ্ডের তালিকায় তাঁকেই আমি টুকে নিলাম সর্বাগ্রে।
(৫৪)
সম্রাট শাজাহানকে কৃতিত্ব দেয় সবাই, অথচ
রাষ্ট্রের কোষাগার নিঙড়ে নির্মিত তাজমহল হলো
মানবিক নিঃস্বতার এক মহার্ঘ স্মারক।
(৫৫)
পায়ের গঠন স্বপ্নকে সুগঠিত করে;
পা-হীন মানুষের স্বপ্নও পঙ্গু হয়ে যায়।
(৫৬)
সভ্যতা হলো চশমার মতো,
দৃষ্টিহীন চোখে তা অশ্লীল ও মূর্খ ফ্যাশন।
(৫৭)
মানুষের শ্রেষ্ঠ গুণ হলো চাইলেই সে গুণশূন্য হতে পারে,
অন্য প্রাণীরা তা পারে না।
(৫৮)
বুড়ো আঙুল সবকিছুকে ওকে করে দেখানোয় পারঙ্গম হলেও
গোল বাঁধাতেও ওস্তাদ সে,
এজন্যেই বুড়ো আঙুলকে টিপসই ছাপে আটকে রাখা হয়।
(৫৯)
সবকিছু খেতে পারা ছাগলের দোষ নয়, অনেক বড় গুণ;
মানুষের হীনমন্যতার নিকৃষ্ট নমুনা হলো ছাগলকে ছাগল বানিয়ে রাখা।
(৬০)
একটি অক্ষরকে ধারণ করার আগের ও পরের মানুষটি ভিন্ন হয়ে যায়,
এখানেই অক্ষরের অসীম ক্ষমতা।
শাসক যতো শক্তিধরই হোক, একটা অক্ষরের ক্ষমতাও রাখে না।
(৬১)
প্রশংসা বহুল চর্চিত একটি লেনদেন মাত্র,
যা খরচ করে মানুষ তার চেয়ে বেশি লাভ করতে চায়।
(৬২)
ক্ষমতার ব্যবহার ক্ষমতাকে অন্ধ করে।
অন্ধ সিংহের চাইতে দৃষ্টিবান গাধাও কার্যকর।
(৬৩)
বিয়ে হলো সংশোধনের অযোগ্য ভুল,
যা করে গবেটরা বীরত্ব দেখায়
আর বীরেরা বুদ্ধু সাজে।
(৬৪)
টক-শো আর চিড়িয়াখানায় একটাই তফাৎ;
টক-শো’তে কিছু মানুষ প্রদর্শন করানো হয়
আর চিড়িয়াখানায় পশু।
(৬৫)
সবচেয়ে পরাধীন সে-ই, যার আত্মহত্যার অধিকার নেই।
(৬৬)
অনিয়ন্ত্রিত ক্রুদ্ধতা জলাতঙ্কে আক্রান্ত একটা উন্মাদগ্রস্ত কুকুর।
(৬৭)
ধর্মগ্রন্থ এক অলৌকিক তাবিজ, যার ক্ষমতা কেবল কল্পনায়।
মূর্খ-সমাজে কল্পনার ক্ষমতা অসীম।
(৬৮)
আশ্চর্য হওয়ার ক্ষমতা মানুষকে স্বপ্নবান করে।
স্বপ্নবান মূর্খ স্বপ্নহীন জ্ঞানীর চেয়ে উত্তম।
(৬৯)
অশ্লীলতার জন্ম অবদমিত কামনায়, যা
লালিত ও পরিপুষ্ট হয় ভদ্রলোকালয়ে।
(৭০)
বেঁচেথাকার আশ্চর্য প্রেরণা হচ্ছে মৃত্যুচিন্তা।
(৭১)
যে সমাজে গাধার শ্রেষ্ঠ গুণ হলো সে গাধা
আর মানুষের নিকৃষ্ট অপরাধ হচ্ছে সে মানুষ,
সে সমাজ বাঙালির।
(৭২)
প্রকৃতির সবুজ ছোঁয়া থেকে যে যতো দূরবর্তী
সে ততো সভ্য,
বহুতলশীর্ষ ফ্যাটে হয় সভ্যতম মানুষটির বসবাস।
(৭৩)
আজকাল কোন অফিসে ঢুকলে মনে হয়
ভুল করে বুঝি মসজিদেই ঢুকে গেলাম,
জরুরি ফাইলের চাইতে জায়নামাজই অধিক মূল্যবান সেখানে।
(৭৪)
পুলিশের আচরণই বলে দেয় রাষ্ট্রের মানসিক স্বাস্থ্য কেমন।
(৭৫)
যতদিন চাকুরে থাকে ততদিন সে দাস;
অবসরে গেলেই তৎক্ষণাৎ সে পেনশনভোগী এক ব্যবহারযোগ্য দাসীতে পরিণত হয়।
(৭৬)
সেবার সাথে মুনাফার যোগসূত্র মানে-
ধর্ষণের মাধ্যমে ধর্ষিতাকে যৌনসুখ দেয়ার মহত্ত্ব !
(৭৭)
একান্ত সেবক মানে, হয় সে ভণ্ড নয় স্বার্থপর।
(৭৮)
ঝুলন্ত ব্রা’কে পুরুষ দেখে স্তন, নারী ভাবে আব্রু।
(৭৯)
ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবার পথ-খরচা না রেখে নিজের জন্য ঔষধ কিনে বোকারা;
অর্থহীন দীর্ঘ জীবনের চাইতে অর্থময় স্বল্প জীবন অনেক বেশি তাৎপর্যময়।
(৮০)
সবাই নিজে নিজে একেকজন সাংঘাতিক নীতিবান মানুষ;
নিজের সাথে বনে না এমন সব নীতিই হয় অনীতি বা দুর্নীতি।
(৮১)
ভুল হচ্ছে সেই শুদ্ধতম সম্ভাবনা
যা মানুষের পছন্দের তালিকায় আসে না কখনোই।
(৮২)
‘তেল দেয়া’ বিস্ময়কর এক প্রায়োগিক আর্ট,
সঠিকভাবে দিতে জানলে তা দাতাকেই তেল-চকচকে করে তুলে।
(৮৩)
ভুলে যাওয়া কঠিনতম কাজ;
চেষ্টা করে হয়তো কোনকিছু মনে করা যায়,
কিন্তু চেষ্টা করে ভুলে যাওয়া যায় না।
(৮৪)
কৈশোর আর বয়স্কের তফাৎ বয়সে নয়,
অনিশ্চয়তায় আর মৃত্যুচিন্তায়; যা কৈশোরে থাকে না।
অনিশ্চয়তা আর মৃত্যুচিন্তার ক্রমবর্ধমান তীব্রতা নিয়েই
মানুষ ক্রমান্বয়ে বয়স্ক হতে থাকে।
(৮৫)
বৈশ্যবৃত্তি আর বেশ্যাবৃত্তির মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য,
বানানের দুয়েকটা ‘কার’-চিহ্ণের ভিন্নতা ছাড়া;
উভয় বৃত্তির মৌল শব্দই ‘বশ’।
(৮৬)
মনুষ্যসমাজে শুকরের আধিক্য মানুষের নোংরামিকেই চিহ্ণিত করে;
যত্রতত্র বিষ্ঠা ছড়ালে বরাহ-দর্শন তো হবেই !
(৮৭)
মেরুদণ্ডী প্রাণীর পায়ের আধিক্য মেরুদণ্ডের অবনমনই নির্দেশ করে;
দুপেয়ে প্রাণীর উল্লম্ব ও ঋজু মেরুদণ্ড চতুষ্পদীতে আনুভূমিক হয়ে যায়।
(৮৮)
সৌন্দর্যবোধ হচ্ছে সেই নান্দনিক উপলব্ধি,
ভিন্ন আঙ্গিকে যা মানুষকে যৌন পরিতৃপ্তি দেয।
(৮৯)
জগতের যেকোন বস্তু বা প্রাণীকে ব্যবচ্ছেদ করলে
কার্যকর কিছু ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য বেরিয়ে আসে;
মানুষের আচরিত ধর্মকে ব্যবচ্ছেদ করে তেমন কিছুই পাওয়া যায় না,
উদ্ভট কিছু গোঁড়ামি আর ভণ্ডামি ছাড়া !
(৯০)
না-জানার মধ্যে মূর্খতা নেই, জানার চেষ্টা না-করাটাই মূর্খতা;
আর মূর্খতার পরিচায়ক হচ্ছে গোঁয়ার্তুমি।
চিন্তক-অঙ্গে বৈকল্য আসলেই মানুষ গোঁয়ার্তুমিতে আক্রান্ত হয়।
(৯১)
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম সংস্কৃতি হচ্ছে সেক্স বা জননক্রিয়া,
সভ্য মানুষের চোখে যা অশ্লীল।
(৯২)
মানুষের সার্বভৌমত্ব হচ্ছে- মানুষ হতে কোন ঈশ্বরের প্রয়োজন হয় না;
আর ঈশ্বরের অসহায়ত্ব হলো- মানুষ না থাকলে যার কোন অস্তিত্বই থাকে না।
(৯৩)
ধর্মের অক্ষমতা হলো- নিজেকেই ধারণ করতে অক্ষম সে;
স্রষ্টার অক্ষমতা- সৃষ্টের দাক্ষিণ্য ছাড়া তিনি অচল।
(৯৪)
ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছেন এটা কাহিনী;
সত্য হলো, মানুষই ঈশ্বরের স্রষ্টা।
(৯৫)
উদ্বৃত্ত শরীর, একমাত্র দুঃসহ বোঝা
যা চাইলেই মানুষ ফেলে দিতে পারে না।
(৯৬)
সময়ের ভার মানুষকে কুকুর বানিয়ে ফেলে;
আগেভাগে তাই সৃজন ও মননের ভেক্সিন নিতে হয়।
(৯৭)
রাজনীতি কি নীতির রাজা, না কি রাজার নীতি
সে বিতর্কে না গিয়েও বলা যায়- যখন বৈশ্যবৃত্তি ঠাঁই গাড়ে
সেটা আর রাজনীতি থাকে না, নতুন এক বেশ্যাবৃত্তিতে পরিণত হয়।
(৯৮)
লেখক-চরিত্র সবচাইতে ভঙ্গুর পদার্থ,
কলমের এক খোঁচাতেই যা গুঁড়ো হয়ে যায়।
(৯৯)
জগতের একমাত্র নিঃস্ব প্রাণী মানুষ,
সকল প্রাণীকে সে নিঃস্ব করতে ভালোবাসে।
(১০০)
স্বাভাবিক আয়ুগ্রস্ত মানুষের শতায়ু হওয়া অভিশাপ;
দেয়া এবং নেয়া উভয়টাতেই অক্ষম সে।
…
[*] [১০১-২০০]
…………………..
আপাতত দ্রুত চোখ বুলিয়ে গেলাম।কয়েকটা বুঝতে পারি নাই,পরে এ নিয়ে পরে প্রশ্ন করব।চুপিচুপি বলে রাখি,আমিও এককালে প্রবচন লেখা শুরু করেছিলাম।আমার বেশিরভাগ লেখার মত ওটাও কোন সমাপ্তি পায় নাই!অসমাপ্ত খসড়া থেকে দু-একটা উদাহরণ দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি নাঃ
১।এককালে বিজ্ঞানীকে দাবি করতে হত তার গ্রন্থভুক্ত সকল বিষয় ধর্মগ্রন্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সাদৃশ্যপূর্ণ আর এযুগে ধর্মপ্রচারকদের দাবি করতে হয় তাদের অনুসৃত ধর্মগ্রন্থের সবকিছু বিজ্ঞানগ্রন্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সাদৃশ্যপূর্ণ!
২।জাকির নায়েকের চিকিৎসাবিজ্ঞানের সূত্রমতে,বরাহ মাংস ভক্ষণে মানুষ বরাহের মত আচরণ করে।এ সূত্র থেকে অনুসিদ্ধান্ত টানতে পারি যে জাকিরের উচিত মনুষ্যত্ব অর্জনে নরখাদক গোষ্ঠিভুক্ত হওয়া।
@পথিক,
বাহ! আপনার প্রবচন দুইটাই আমার খুব ভাল লাগলো। আপনার উচিৎ সিরিজ আকারে মুক্তমনায় ছাড়া!!
কথা দু’টোর একটাও কিন্তু আজকের বিশ্বের প্রেক্ষাপটে সঠিক বলে মনে করতে পারলাম না। মেয়েরা যখন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয় তার চুল কত বড় রাখবে সেটা থেকে তার সংস্কারের কিছু বোঝা যায় না। বরং, তা সে কি ধরণের ফ্যাশান বা স্টাইলের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে চায় তার নিদর্শন হলেও হতে পারে। আর ‘স্রষ্টাকে উদ্ধৃত করার’ ব্যাপারটা ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আবার একথাটা এরকম ঢালাওভাবে হয়তো বলাও ঠিক নয়, আমাদের দেশের বহু গরীব এবং অশিক্ষিত মানুষই অসহায়ের সহায় মনে করে স্রষ্টার নাম নেয়, ভন্ডামীর জন্য নয়।
বেশ কয়েকটা উৎবচনই ভালো লাগলো ( কয়েকটা আবার বুঝলাম না) তার মধ্যে এটা একটা,
@রাহাত খান,
খুব সম্ভবত শ্রাদ্ধের মত অপ্রয়োজনীয় একটা বিষয় নিয়ে মানুষের আস্ফালনকে খোটা দেওয়া হয়েছে।
@রাহাত খান,
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ রাহাত ভাই।
মেয়েদের স্টাইল বা ফ্যাশন সম্পর্কিত বর্তমান যে ধারণা উক্ত করেছেন, আসলেই কি তাই ? ভাবনার গভীরে একটু ডুব দিয়ে দেখুন তো, যখনি স্টাইলের বিষয়টা মাথায় আসে তখন কি মেয়েরা চিন্তার শুরু ছোট চুল থেকে শুরু করে, না কি বড় চুল থেকে শুরু করে? সংস্কারের গভীরে কি দীর্ঘকেশী রমণীয় চেহারাটা প্রথমে ভাবনায় আসে না ? মূলত ওই আর্কিটাইপটাই যে যত ভাঙে সে তত সংস্কার ভাঙায় এগিয়ে যায়। তার পর আসে সৌন্দর্যবোধের বিষয়টা।
আসলে অল্প কথায় বুঝাতে আমি সক্ষম হলে হয়তো তা উৎবচন হিসেবে উদ্ধৃত করতে হতো না। তবে দ্বিমত করার সম্পূর্ণ অধিকার আপনি সংরক্ষণ করেন নিশ্চয়ই। মূলত উৎবচনকে আমি কবিতা-চরিত্রের বলে মনে করি। তাই রচয়িতাকে নিজের রচনা ব্যাখ্যা করার বিরুদ্ধ অবস্থানে আমি। কেননা পাঠক-কল্পনা ও নিজস্ব স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করার পক্ষপাতী আমি নই। অতএব পাঠক ভেদে অনুভূতি ও মতের ভিন্নতা বিষয়কে বৈচিত্র্যময় করবে বলেই আমার বিশ্বাস।