[লেখাটিতে কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা ও নিউরোবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণা এবং বিজ্ঞানের দর্শনের ভিত্তিতে জীবনের অর্থ সম্পর্কে লেখকের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। লেখাটি পূর্বে অন্যত্র প্রকাশিত। পাঠকদের সাথে আলোচনার খাতিরে এখানে পুন:প্রকাশিত।]
————
কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তার গবেষণায় এখন যত বিষয় আলোচনা হয়, তার সবগুলোর লক্ষ্যই কিন্তু জীবন-যাপনকারী রোবট তৈরী নয়। অনেক শাখা-প্রশাখা হয়ে গেছে। কয়েকদফা এই গবেষণায় ভাটা এসেছে। তবে এখনো অনেক গবেষণা সরাসরি জীবন-যাপনকারী রোবটকে উদ্দেশ্য করে নিবেদিত। এর সাথে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক ওতপ্রোত বলে অনেকে মনে করেন। তাই গবেষণার নাম কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা (কৃবু)।
তবে গবেষণাটি যে বিষয়গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে, সেগুলোর সংজ্ঞা অস্পস্ট। বুদ্ধিমত্তা কি? জীবনই বা কি? আর এদের সম্পর্ক কোথায়?
এই গবেষণার প্রাথমিক আগ্রহ ছিল মানুষের ক্ষমতা-সম্পন্ন যন্ত্র। মানুষের আদলে পুতুল বা যান্ত্রিক শরীর হয়ত তৈরী করা যায়, কিন্তু কিভাবে একটি যন্ত্র কথোপকথন চালাবে? গাড়ি চালাবে? বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবে?
যে বিষয়ে তেমন আগ্রহ কখনো ছিল না, তা হলো, কিভাবে পিঁপড়া কিংবা বানরের ক্ষমতা-সম্পন্ন যন্ত্র তৈরী করা যায়। কারণ ও-দিয়ে আমাদের কাজ চলবে না। মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর কর্মকাণ্ডের যে পার্থক্যগুলো, বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা সাধারণত স্থান পায় ওই জায়গাগুলোতে। তাই মানুষের কর্মকাণ্ড যন্ত্রকে দিয়ে করানোর গবেষণার নাম হয় কৃত্রিম-বুদ্ধিমত্তা।
বুদ্ধিমত্তা কি?
তা বুদ্ধিমত্তা কি কেবল মানুষেরই আছে, অন্যান্য প্রাণীগুলোর নেই? নাকি যেগুলো অন্যান্য প্রাণীর নেই, মানুষের আছে, সেগুলোকেই আমরা বুদ্ধিমত্তা বলতে চাই? একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো ভাষা। মানুষ তার যোগাযোগের জন্য যে উপায় ব্যবহার করে, তা বেশ বিস্তৃত ও শক্তিশালী। তবে অন্যান্য প্রাণীও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে। তাদের যোগাযোগের সেই মাধ্যম আর আমাদের মাধ্যমের মধ্যে যে পার্থক্য, তা কি বুদ্ধিমত্তা থাকা আর না থাকার পার্থক্য? নাকি এটা একটা অবিচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতা, মানুষ তার উৎকৃষ্টতর উদাহরণ? যদি অন্যান্য প্রাণী আর মানুষের মাঝে এই ক্ষমতায় থাকে ধারাবাহিকতা, পার্থক্য যদি কেবল হয় ক্ষমতার কম-বেশিতে, আর মানুষের ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতাকে যদি বলা হয় বুদ্ধিমত্তার উদাহরণ, তবে বলা যায় সেটা অন্য প্রাণীর মাঝেও কম মাত্রায় হলেও বিদ্যমান।
আর কিসে পার্থক্য? মানুষ শিখতে পারে, পারে সমস্যা সমাধান করতে। অন্য প্রাণীরা কি পারে না? বনোবো-কানজির উপর চালানো গবেষণায় দেখা গেছে ছোটবেলা থেকে সে পরোক্ষভাবে (সরাসরি প্রশিক্ষণ দ্বারা নয়) শিখে শিখে ভাষার অনেক উপাদান রপ্ত করতে পেরেছে। বেশ কিছু প্রাণী তাদের প্রয়োজনে হাতিয়ার প্রস্তুত করতে ও তা ব্যবহার করতে পারে। মানুষের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতার সাথে এর পার্থক্য কোথায়, কম-বেশির পার্থক্য ছাড়া?
কোন উপাদানটি বুদ্ধিমত্তা? আমাদের চেতনা? যা আমরা মনে করি অন্য প্রাণীদের নেই? আরেকটি সুনির্দিষ্ট-সংজ্ঞাহীন শব্দ। এটা বলতে সম্ভবত আমরা বোঝাই, যা আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতনতা দেয়। আর আমরা ভাবছি মানুষ ছাড়া অন্য প্রাণীর এই ক্ষমতা নেই? মিরর টেস্ট বলে আত্ম-সচেতনতা-সূচক একটি পরীক্ষা আছে, এবং বিভিন্ন গবেষণায় মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণী যেমন-বনোবো, শিম্পান্জি, ডলফিন, হাতি, ম্যাগপাই, শূকর, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
আমি অবশ্যই বলতে চাচ্ছি, বুদ্ধিমত্তা, যে শব্দটি কোনো সুসংজ্ঞা ব্যতিরেকেই আমরা কেবল মানুষের উপর আরোপ করতে চাই, তা প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে কম-বেশি দাবী করা যাবে। আর যদি সংজ্ঞার তর্কে যাওয়া যায়, তবে খুব সম্ভাবনা আছে বুদ্ধিমত্তা বলতে সুনির্দিষ্ট কিছু বোঝানো যাবে না। কাছাকাছি এরকম একটা ব্যাপার ঘটেছে কৃবু গবেষণায়, যাকে বলে এ.আই. ইফেক্ট (কৃবু প্রভাব)। ব্যাপারটা এরকম, যখনই গবেষকরা বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি প্রোগ্রাম তৈরী করে, বুদ্ধিমত্তার ওই বৈশিষ্ট্যটি তখন তার জাদুকরী মহিমা হারায়, আর আমরা বলি, এতো কেবল গণনার কারসাজি, আসল বুদ্ধিমত্তা নয়।
তা এই নড়বড়ে সংজ্ঞাহীন ধারণাটির পেছনে ছোটার চেয়ে বেশি প্রয়োজন হলো, যে বিষয়গুলো আমরা বুঝি, সেগুলোর সাপেক্ষে আলোচনা করা। বুদ্ধিমত্তা কি আমরা জানি না, বুঝি না, তবে আমরা জানি আমরা যন্ত্রকে মানুষের মত ক্ষমতা-সম্পন্ন দেখতে চাই। আর বাস্তবতা হলো, এই লক্ষ্যে যন্ত্রের যে অগ্রগতি, তাতে আমরা বেজায় হতাশ। রোবট এখনো একঘেয়ে; মানুষ শেখে, রোবট শেখে না।
শেখা বা জ্ঞানার্জন
আমাদের ভাষা, জ্ঞান, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, চুল আচড়াতে পারা, রান্না করতে পারা, কোনটাই কিন্তু আমরা জন্ম থেকে জেনে আসিনি, আমরা শিখেছি। এটা এখনো আমাদের রোবটগুলো পারে না। তাদের ক্ষমতা হলো প্রদত্ত, এবং এর বাইরে নতুন বিষয়ে জ্ঞানার্জন এরা করতে পারে না। প্রতিনিয়ত নিত্য-নতুন পরিবেশের সম্মুখীন হওয়া আর তার সাথে খাপ-খাইয়ে নেয়া, অর্থাৎ জীবনযাপনে রোবট অক্ষম। আমরা যদি একটি রোবট বানাই, যা খুব ভালো দাবা খেলবে, তো সে তাতেই সেরা, অন্য কিছু সে শিখতে পারে না। ক্ষমতা বর্ধনের জন্য তার স্রষ্টা প্রোগ্রামারের পুনঃনক্সার প্রয়োজন পড়ে।
সমস্যার সমাধান, কিভাবে মানুষ নানা সমস্যার সমাধান করে? মানুষের সামনে প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যা আসে। মানুষ তার সমাধানের চেষ্টা করতে পারে। একটি আগে থেকে শিখিয়ে দেয়া রোবট তা পারে না। কারণ আমরা তো জানি না যে রোবটটি কত-প্রকারের নিত্যনতুন সমস্যায় পড়তে পারে। আমরা কি করে আগে থেকে শিখিয়ে দিব যা আমরা জানি না? যেমন রোবটকে মঙ্গলগ্রহে পাঠাব, বা সমুদ্রতলে। ওখানে নিত্যনতুন পরিবর্তিত পরিবেশে কি করতে হবে তা আগে থেকে বলে দেয়া সম্ভব না। বা খুব সাধারণভাবে, বৃদ্ধ-মানুষের দেখাশোনা করা রোবট। সেই রোবট যদি নিজে থেকে না শিখতে পারে তার কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিবর্তিত পরিস্থিতি, খুব দ্রুতই সে রোবট হয়ে যাবে অকাজের।
মানুষ যে ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারে, যেমন কথোপথন চালানো, আমরা সেগুলোতেই কেবল আগ্রহী হলেও, এই ক্ষমতার উপসেট কিন্তু অত্যন্ত ‘নিম্ন’প্রজাতির প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান। যেমন, খুবই সাধারণ একটি কাজ – পর মুহূর্তে কি হবে সে ধারণা করা। সকল প্রাণী প্রতি-নিয়ত তার ইন্দ্রিয় দিয়ে পরিস্থিতি অনুভব করছে এবং পর-মুহূর্তে কি করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। আমাদের কৃবু-সংক্রান্ত লক্ষ্যগুলোর মধ্যে সবসময় ওই ক্ষমতা সেভাবে পড়ে না। আমরা সরাসরি কথোপকথনকারী প্রোগ্রাম চাই, বা এমন প্রোগ্রাম যা যেকোনো পরিস্থিতিতে গাড়ি কিংবা প্লেন চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু, এই উপলব্ধি প্রয়োজন যে, অন্তর্বর্তী-ক্ষমতাগুলো অর্জন, আমাদের মূল লক্ষ্য – মানুষের ক্ষমতা অর্জনের পথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটা একটি বৈধ প্রস্তাব। কৃবু এর অনেক গবেষণা প্রস্তাবিত এই ধ্যান-ধারণা পোষণ করে না।
জীবন কি?
কোন বিষয়টি একটি পাথরের সাথে একটি বিড়ালকে পার্থক্য করে। এই দার্শনিক প্রশ্নের উত্তর আমরা জানি না। পদার্থবিজ্ঞানীরা বলবেন, যা এনট্রপি হ্রাস করে। জীববিজ্ঞানীরা বলবেন, জীবন হচ্ছে যা কতগুলো বিশেষ জৈবিক প্রক্রিয়া যেমন বিপাক, বিস্তার, বিবর্তন, ইত্যাদি বহন করে। সমস্যা হচ্ছে, একটি রোবট যদি একটি মানুষের মতই জীবন যাপন করে যায় জৈবিক বিপাক, বিস্তার বা বর্ধন ছাড়াই, সে কি জীবন নয়?
আমরা যাদের জীবন বলি, তার সাথে জড়ের পার্থক্য হলো তাদের সম্পর্কে আমাদের পর্যবেক্ষণগত বৈশিষ্ট্যে। এনট্রপি-আচরণ তাদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমি যদি এমন কিছু তৈরী করি, যা ঋণাত্মক-এনট্রপি গ্রহণ করে, তাতেই আমার জীবন তৈরির সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? আমার কম্পিউটার কি জীবন? ঋণাত্মক-এনট্রপি গ্রাহক, ঠিক কোন অস্তিত্ব বা সত্তাটিকে জীবন বলা যাবে আর কোনটিকে যাবে না? যে সমাজ এনট্রপি কমাচ্ছে, সে সমাজেরও কি জীবন আছে?
জীবন হলো বিশেষ কিছু অস্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্য যা আমরা পর্যবেক্ষণ করি; এর বৈশিষ্ট্যগুলো অন্য অস্তিত্বের তুলনায় এতটা ভিন্ন যে আমরা একে আলাদা করি। তার মানে কিন্তু এই নয় যে আমরা ব্যাপারটা ভালো বুঝি। আমরা পর্যবেক্ষণে যে পার্থক্যগুলো দেখতে পাই, তার নিরিখে সেই অস্তিত্বকে সংজ্ঞায়িত করি। কিন্তু ব্যতিক্রম আমরা আশা করতে পারি, এবং তখন তার সংজ্ঞা বদলে যাবে। কিন্তু এর বেশি আমরা কিইবা করতে পারি? আমরাতো আমাদের পর্যবেক্ষণকে উতরে যেতে পারি না। আমরা সেটুকুই বুঝব, যেটুকু আমরা পর্যবেক্ষণ করতে পারব।
তথাপি, আমাদের পূর্বলক্ষ্য ছিল মানুষের ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট। সেই লক্ষ্য পূরণে আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, ঠিক কি করলে আমরা একটি অস্তিত্বকে জীবন বলব, আর তা পাবার জন্য ঠিক কি বৈশিষ্ট্য অর্জন করা প্রয়োজন।
আমরা যাদের জীবন বলি, তাদের মধ্যে কোন ব্যাপারটি সাধারণ এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এনট্রপিগত বৈশিষ্ট্যটির চেয়ে বেশি সাহায্যপূর্ণ হবে?
আমার প্রস্তাব, আমরা যাদের জীবন বলি, তাদের সকলকে গাণিতিক-বিমূর্তে বলা যায় একটি ফাংশন, যার ইন্দ্রিয়লব্ধ ইনপুট আছে, কম-বেশি ইনপুটনির্ভর পূর্বানুমান করার ক্ষমতা আছে এবং সেই ক্ষমতার ভিত্তিতে আউটপুট প্রদান বা ক্রিয়া সঞ্চালনের ক্ষমতা আছে। প্রাণীর ইনপুট আর আউটপুট আছে কিনা, এ নিয়ে সংশয়ের অবকাশ নেই, তবে প্রাণী যে সর্বদা পূর্বানুমানের চেষ্টা করে, এটা অনুমিত। উচ্চতর প্রাণীর মস্তিষ্কের ফাংশন থেকে এমন ধারণা পাওয়া গেছে নিউরোবিজ্ঞানের গবেষণায়। পাওয়া গেছে “প্রাণী-আচরণ বিজ্ঞান” এর গবেষণায়।
অর্থাৎ সকল প্রাণী কম-বেশি একটি তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট। আমরা ইন্দ্রিয় থেকে ইনপুট নেই, সেই ইনপুট এবং আগের ইনপুটের উপর ভিত্তি করে পূর্বানুমান করি কোন ক্রিয়া-সঞ্চালন বা আউটপুটের ফলশ্রুতি কি হবে। তার ভিত্তিতে আমরা বাছাই করি সেই ক্রিয়াটি যার ফলশ্রুতি আমাদের সবচেয়ে অনুকূল। আমাদের প্রতিটি ক্রিয়ার পেছনে এই প্রক্রিয়া কাজ করে। তার মানে কি আমরা সর্বদা পূর্বানুমান করার চেষ্টা করছি? হ্যাঁ। সজ্ঞানে করছি? তা নয়। অধিকাংশ পূর্বানুমান আমরা আমাদের সচেতনতার আড়ালে করছি। একটি স্টকের-দাম পূর্বানুমানকারী প্রোগ্রাম যেভাবে কোনো সচতনতার প্রয়োজন ছাড়াই পূর্বানুমান করতে পারে, তেমনি আমাদের শরীরের বিভিন্ন ইউনিট বিভিন্ন পরিসরে পূর্বানুমান গণনা করছে। একটি ইঁদুর যখন তার গর্তের দিকে দৌঁড়াতে থাকে, তখন তার ইউনিটগুলো পূর্বানুমান দিতে থাকে যে তার চোখ দিয়ে যেসব ইনপুট আসছে, তাদের মাঝে কোন অংশটি গর্ত। পূর্বানুমান করে, সেই গর্তে ঢুকে যেতে পারলে যে সে বিড়ালটি থেকে নিরাপদ থাকবে এবং পূর্বানুমান করে, তার পেশীগুলোতে কি ধরনের সংকেত পাঠালে ওই গর্তে সে পৌঁছাতে পারবে।
চেতনা
এই পূর্বানুমান করার জন্য সজ্ঞান-সচেতনতার উপস্থিতি আবশ্যক না। তবে মানুষের ধারণা মানুষ ও অন্যান্য উচ্চতর প্রাণীর মাঝে তেমন কিছু একটা বিদ্যমান আছে। এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে সত্তা আত্ম-সচেতন অবস্থায় চিন্তা করতে পারে। এই ক্ষমতার বিবর্তনগত উপযোগিতা আছে, এবং তা নিতান্তই উচ্চতর পূর্বানুমানের নিমিত্তে। এর সাহায্যে আমরা মনে মনে যেসব চিন্তা করতে পারি, তার সাহায্যে আমরা আসলে পূর্বানুমানই করি। যেমন, আগামীকাল আমার একটি বক্তৃতা আছে, বক্তৃতায় আমি অমুক কথাগুলো বলব, বললে এই প্রশ্নগুলো করা হতে পারে, আর তার জন্য আমি এখন উত্তর প্রস্তুত করে রাখব। আমরা সজ্ঞানে এধরনের চিন্তা করে থাকি। ফলে সজ্ঞানে আমরা যেসব চিন্তা করি, সেগুলো দিয়ে আমরা ভবিষ্যতের জটিল ঘটনার অনুমান করতে পারি, এবং তার জন্য উপযুক্ত ক্রিয়াগুলো বিবেচনা করে রাখতে পারি। ফলে আমাদের পরবর্তী ক্রিয়াগুলো প্রভাবিত হয় এই চিন্তা-ভাবনাগুলো দ্বারা। অপরদিকে এই চিন্তা বাদে আমরা যদি আমাদের কর্মকাণ্ডে এগিয়ে যাই, তাহলে অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়। পূর্বানুমান এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে সীমিত করার চেষ্টা করে।
সজ্ঞান চিন্তার এই ক্ষমতাকে বলা যায় সিমুলেশন। কল্পনায় আমরা ভেবে নিতে পারি বিস্তৃত ভবিষ্যত। উচ্চতর প্রাণী এই ক্ষমতা ব্যবহার করে অনেক শক্তিশালী পূর্বানুমান তৈরী করতে পারে, তা পথের একটি পাথরকে এড়িয়ে হাঁটা অথবা গর্তে লুকানোর চেয়েও বিস্তৃত ও জটিল ক্রিয়ার সমন্নয়।
পূর্বানুমান
ফলে সকল জীব পূর্বানুমান করছে, তবে সে ক্ষমতা তার গণনা-সরঞ্জাম দ্বারা সীমাবদ্ধ। অনেক প্রাণী খুবই সীমিত পরিসরে সেই পূর্বানুমান করছে। অনেকক্ষেত্রে ঠিক কতটুকু অনুমান করতে পারবে তার পরিসর কেবল তার জিনের পূর্ব-নকশা দ্বারা সীমাবদ্ধ, জীবদ্দশায় খুব সামান্যই প্রদত্ত ক্ষমতার শ্রীবৃদ্ধি করতে পারে সে। ফলে কিছু প্রাণী নিজের খাবার জোগাড় করতে পারে, পালাতে পারে, কিন্তু ফাঁদ সনাক্ত করতে পারে না। আবার কিছু প্রাণী তার জীবদ্দশায় ব্যাপক আকারে নতুন জ্ঞান আহরণ করতে পারে। জ্ঞানের সংজ্ঞা হলো পূর্বানুমানের ক্ষমতা। অর্থাৎ, অনেক প্রাণী নিত্য-নতুন বিষয়ের উপর পূর্বানুমানের ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। ফলে একবার ফাঁদে পড়ে, দ্বিতীয়বার পড়ে, কিন্তু তৃতীয়বার সনাক্ত করে ফেলে, ফাঁদে পা দেবার আগেই পূর্বানুমান করতে পারে – এটি ফাঁদ, এবং এড়িয়ে যায়। তার জিনের পূর্ব-নকশায় এ সংক্রান্ত কোনো সহজাত ক্ষমতা না দেয়া থাকলেও।
ফিরে আসি পূর্বলক্ষ্যে। এমন রোবট যা মানুষের ক্ষমতা সম্পন্ন। এর মাঝের ধাপ হলো সকল প্রাণীর সাধারণ বিষয়টি অনুকরণ। অর্থাৎ তথ্য-প্রক্রিয়া করতে পারবে সে। তার ইন্দ্রিয় থাকবে, যেমন আলো-গ্রাহক , শব্দ-গ্রাহক, স্পর্শ/ঘাত-পরিমাপক। এসব তথ্য থেকে রোবটের প্রোগ্রামিং ইউনিট প্রক্রিয়া করে বের করবে ঠিক কোন ক্রিয়া-সঞ্চালন, যেমন বিশেষ কোনো মোটরে কি পরিমাণ ভোল্টেজ প্রদান হবে তার জন্যে আকাঙ্ক্ষিত। যেমন সামনে দেখতে পাচ্ছে একটি বল, এবং সেই বলকে আঘাত করা তার জন্যে আকাঙ্ক্ষিত। এর জন্যে প্রোগ্রামকে গণনা করতে পারতে হবে, কোন ক্রিয়া-ধারার ফলাফলে বলটিকে আঘাত করার ঘটনাটি ঘটবে। অর্থাৎ তার বিভিন্ন ক্রিয়ার উপর শর্তাধীন অনুমান করার ক্ষমতা তার থাকতে হবে। তবেই সে বাছাই করতে পারবে, কোন ক্রিয়ায় তার কাজ হবে, আর কোনটিতে তার হবে না।
যে যান্ত্রিক ফাংশন প্রতিনিয়ত এই কাজ করে যাচ্ছে, তার সাথে অন্যান্য জীবের পার্থক্য করার বিশেষ কোনো ভিত্তি নেই। জীবকুলের মাঝে অতিরিক্ত কোনো “জীবনীশক্তি” নেই, যা তাকে ওই ফাংশন থেকে আলাদা করে। ওগুলোও গণনাকারী ইউনিট। তাদের শারীরিক উপাদান ভিন্ন, কিন্তু গাণিতিক বিমূর্তে তারা একই কর্ম সাধন করছে।
যাচাইযোগ্য জ্ঞান
তখন, পরবর্তী ধাপ হবে মানুষের পর্যায়ে উত্তরণ। যার মাঝে আছে সচেতনতা বা সিমুলেশনের শক্তিশালী ক্ষমতা। নিত্য-নতুন জ্ঞান আহরণের ক্ষমতা, বিস্তৃত ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তার ক্ষমতা। তার সকলই পূর্বানুমান, তবে উচ্চতর ধারণা সংক্রান্ত। ফলে প্রোগ্রামকে জানতে হবে জ্ঞানকে কিভাবে রক্ষনাবেক্ষণ করতে হয়। এখানে যাচাইযোগ্যতার তত্ত্ব সাহায্য করতে পারে, যা বলে – একটি প্রোগ্রাম ততটুকু জ্ঞানকেই ধারণ করতে পারবে, যতটুকু সে নিজে থেকে যাচাই করতে পারবে। অর্থাৎ, আমি প্রোগ্রাম করে আমার রোবটকে শিখিয়ে দিলাম এটাকে বলে চেয়ার, ওটাকে বলে টেবিল, আর ঠিক অমুক ধরনের পরিস্থিতি হলো যাকে আমরা বলি “উভয়-সংকট”। এখন প্রোগ্রামটি যদি বারংবার এই ধরনের ধারণাগুলোকে সঠিকভাবে পূর্বানুমান করে যাচাই করতে না পারে, যেমন বিভিন্ন চেয়ার বা টেবিল তার সামনে দিয়ে তাকে বলতে বলা হলো এটা কি, বা এমন একটা পরিস্থিতি যাকে আমরা বলি “উভয়-সংকট”, তা উপস্থাপন করে তার সম্পর্কে অনুমান করতে বলা হলো, কিন্তু প্রোগ্রাম যদি তা করতে না পারে, তবে এই ধারণাগুলো ধারণ করতে ওই প্রোগ্রাম পারবে না। অর্থাৎ, কোনো ধারণাকে কেবল শিখিয়ে দিলেই হবে না। রোবটের সেই ধারণাকে বারংবার যাচাইয়ের ক্ষমতা থাকতে হবে। ঠিক একজন বিজ্ঞানীকে যা করতে হয়। এবং এই ব্যাপারটি আমাদের ক্ষেত্রেও সত্য। ফলে, আমরা কাউকে কোনো ধারণা সম্পর্কে ততক্ষণ পর্যন্ত বোঝাতে পারি না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে নিজে একই ধরনের বিষয় নিজে নিজে যাচাই করতে পারে।
পর্যবেক্ষণ-সীমাবদ্ধ জ্ঞান
এখন কিভাবে আমার প্রোগ্রাম বিভিন্ন উচ্চতর ধারণা তৈরী ও ধারণ করতে পারবে যাচাইযোগ্যভাবে? তার কাছে সম্বল কেবল তার পর্যবেক্ষণ বা ইনপুট। আমি তাকে যাই শিখিয়ে দেই, তার নিজের ইনপুট ও পূর্বানুমানের সরঞ্জামের যদি ক্ষমতা না থাকে সেই ধারণাকে যাচাই করার, তাহলে সেই ধারণা সে ধারণ করতে পারবে না। যেমন আমি তাকে বোঝালাম সবুজ আপেল কি জিনিস, অথচ সে সবুজ আলো দেখতে পায় না ও অন্য কোনো উপায় নেই তার, এ সম্পর্কে ধারণা করার, তাহলে এই সবুজ আপেলের জ্ঞান তার কাছে অর্থহীন। ফলে, প্রোগ্রামটিকে নিজে শিখতে হবে। যাচাই করতে হবে তার প্রদত্ত ইনপুট এবং পূর্বানুমানক্ষম ইউনিটের ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। অর্থাৎ রোবটের সকল যাচাইযোগ্য জ্ঞানের ভিত্তি হবে তার ইনপুট, তার ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা। অতটুকুই কেবল সে যাচাইযোগ্য পর্যায়ে বুঝবে।
জ্ঞানের বিমূর্ত স্তরীভবন
ফলে, জ্ঞানের বিভিন্ন স্তর তৈরী করতে হবে প্রোগ্রামটিকে, যার সবচেয়ে নিচু স্তরে থাকবে তার ইন্দ্রিয় সংক্রান্ত জ্ঞান, যেমন তার আলো-গ্রাহক ইউনিটে আপতিত আলো কি লাল না নীল? এই মুহূর্তে তার পরিপার্শ্বের তাপমাত্রা কি একটু আগের চেয়ে বাড়ল না কমল? কিছু কি তাকে স্পর্শ করলো? এর পরের স্তরের জ্ঞান হতে পারে ওই ইন্দ্রিয়-সংক্রান্ত আরেকটু কয়েক ধাপ আগানো পূর্বানুমান। যেমন, রোবটটি নিজে নিজে পূর্বানুমান করবে – “আমার মোটরে আমি যত ভোল্টেজ দিচ্ছি, একই ভোল্টেজ ক্রমাগত দিতে থাকলে কতক্ষণ পর আমি কোনো কিছু স্পর্শ করব? আগামী দশ সেকেন্ডে কি আমি বেশি তাপমাত্রা অনুভব করব না কম? আগামী মুহূর্তগুলোতে কি আমার উপর আপতিত আলো কমে যাবে?”
এই পূর্বানুমানগুলো প্রত্যেকটি একেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা একটি রোবট যাচাইযোগ্যভাবে ধারণ করতে পারবে, উপযুক্ত পূর্বানুমানক্ষম প্রোগ্রামের সাহায্যে। অর্থাৎ, প্রথমে এই অনুমানগুলো ভুল হলেও, ক্রমাগত নতুন ইনপুট নিয়ে নিয়ে অনুমানগুলোর শুদ্ধতা বাড়ানো সম্ভব। তখন, এগুলো তার কাছে কতগুলো যাচাইযোগ্য ধারণা বা জ্ঞানে পরিণত হবে। এগুলোর উপর ভিত্তি করে রোবটটি তখন আরো উচ্চতর পূর্বানুমান বা জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করতে পারে। যেমন, মোটরে কি ধারায় ভোল্টেজ দিলে আগামী দশ সেকেন্ডের মধ্যে কোনো কিছুতে আঘাত করা/না করা সম্ভব, অথবা রোবটটির উপর আপতিত আলোর পরিমাণ কিভাবে সর্বোচ্চ করা সম্ভব। এভাবে আরো উচ্চতর পর্যায়ে যাওয়া যায়, যেমন নিজের ব্যাটারি চার্জারটি খুঁজে বের করা। আমার ল্যাবে আমার পায়ে বাড়ি না খেয়ে ঘুরাফিরা করে বেড়ানো। মেঝেতে পড়ে থাকা বিভিন্ন বস্তু ঠেলে ঠেলে একপাশে জড়ো করা। আর একেবারে উচ্চতর পর্যায়ের উদাহরণ হবে – আমার পাশের চেয়ারে বসে বলা, “ধ্রুব, এই বইটি লাইব্রেরিতে খুঁজে পেলাম, অনলাইনে নেই। এটা তোমার তথ্যসূত্র হিসেবে সাহায্য করবে।”
কিভাবে ইন্দ্রিয়-পর্যায় থেকে শুরু করে এই উচ্চতর পর্যায়ের জ্ঞানে উন্নীত হওয়া সম্ভব, তার পুরো দিকদর্শন আমাদের কাছে নেই। কিন্তু, উচ্চতর জ্ঞানকে যে পরিশেষে ইন্দ্রিয়তেই প্রোথিত হতে হবে, তার কোনো বিকল্প নেই। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ দ্বারা সীমাবদ্ধ। আর এই পর্যবেক্ষণই আমাদের সকল জ্ঞানের উৎপত্তিস্থল।
পুলক-বর্ধন
অনেক প্রশ্নের উত্তর এখানে অজানা রয়ে যাচ্ছে। একটি বড় প্রশ্ন, প্রাণীসকল কেন তথ্য প্রক্রিয়া করে? কেন পূর্বানুমান করে ও তার ভিত্তিতে ক্রিয়া বাছাই করে? এটা করে সে কি অর্জন করে বা সাধন করে? একটি উত্তর হচ্ছে, প্রাণীর মাঝে একটি পুলক নির্ণায়ক ইউনিট আছে, যা প্রতিটি ইনপুটের বিপরীতে মূল গণনা ইউনিটকে জানায় ইনপুটটি কি আকাঙ্ক্ষিত নাকি নয়। অর্থাৎ প্রতিটি ইনপুটের বিপরীতে একটি সংখ্যা প্রদত্ত হয় পুলক নির্ণায়ক ইউনিট দ্বারা। যেমন +১, বা -১০০। যেমন আমি আঘাত পেলে আমার সেই ইউনিট আমাকে ঋণাত্মক সংখ্যা দিবে, আবার আমাকে কেউ প্রশংসা করলে সেই ইউনিট আমাকে ধনাত্মক সংখ্যা দিবে। মূল গণনা ইউনিটের (বা মোটাদাগে বলা যায় প্রতিটি প্রাণীর) উদ্দেশ্য প্রতিনিয়ত আগত এই সংখ্যার প্রবাহের যোগফলকে সর্বোচ্চীকরণ করা। আর এই পুলক নির্ণায়ক ইউনিটটি তৈরী হয়েছে বিবর্তন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে, এমনভাবে যাতে সত্তার টিকে থাকার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। ধারণা করা হয়, মানুষের এই পুলক নির্ণায়ক ইউনিটটি তার মস্তিষ্কের ব্যাসাল গ্যাংলিয়াতে অবস্থিত।
উচ্চতর প্রাণীর রয়েছে এই নির্ণায়ক ইউনিটকে প্রভাবিত করবার ক্ষমতা। অর্থাৎ সে নির্ধারণ করার চেষ্টা করতে পারে কিসে তার ভালো লাগবে আর কিসে ভালো লাগবে না, যেমন – আমি নির্ধারণ করার চেষ্টা করতে পারি, কেউ আমাকে প্রশংসা করলে আমার ভালো লাগবে না, কিন্তু স্বনামধন্য কোনো জার্নালে আমার একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হলে আমার ভালো লাগবে (তবে বিবর্তন দ্বারা নির্ধারিত পুলকের প্রভাব এত প্রবল যে একে পুরোপুরি পাল্টে ফেলা অসম্ভবের কাছাকাছি এবং এ কারণে অনেকক্ষেত্রে আমরা যা চাই, তাতে স্থির থাকতে পারি না)। তারপর আমি সেই ভালো লাগা বৃদ্ধির জন্য যথার্থ ক্রিয়া বাছাই করতে পারি পূর্বানুমানের ভিত্তিতে। অর্থাৎ আগে থেকে চিন্তা করে বের করা, ঠিক কি করলে নিবন্ধটি প্রকাশিত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
পূর্বানুমান এখানে অপরিহার্য। কেননা আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত ঘটনার সংখ্যা বা ধনাত্মক সংখ্যা (+১, +১০০) এর পরিমাণ বৃদ্ধি করতে চাই এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিমাণ বা ঋণাত্মক সংখ্যা এর পরিমাণ হ্রাস করতে চাই। তাই আমাদের জানতে হয়, কি করলে কাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটবে, আর কি করলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যাবে। পূর্বানুমান ছাড়া এই ধারণা কিভাবে পাওয়া সম্ভব? কিভাবে কাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটানো সম্ভব?
জড় আর জীব?
আরো বেশি বড়মাপের যে প্রশ্নের উত্তর বাকি রয়ে গেল, জড়-পদার্থের সমন্নয়ে তৈরী একটি অস্তিত্ব যদি কেবল তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কারণে জীবনযাপনকারীর মর্যাদা পায়, তাহলে জড় আর জীবের মধ্যে পার্থক্য আসলে কতটুকু? আসলে এর বেশি কিছু নয়। জীবের শরীর, তার গণনা ইউনিট, প্রতিটিই হচ্ছে জড়ের সমন্নয়, আলাদা কোনো জীবনী-শক্তি যোগের ব্যাপার নেই এখানে। আমরা জীবকুল আসলে ঠিক জড়ই। আর জড় পদার্থও কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকারী। তারাও খুব সাধারণ অর্থে তথ্য-প্রক্রিয়া করে। অর্থাৎ বলা চলে সকল পদার্থ গাণিতিক বিমূর্তে গণনাযোগ্য (অনুমিত)। একটি থার্মোস্ট্যাট এর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া গণনা করা সম্ভব। ঠিক একইভাবে নদীর গতিধারা, সাগরের স্রোত, গ্রহের গতিবিধি। এসব জড়কুলের আচরণ এতটাই পূর্বানুমানযোগ্য যে কয়েকটি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রে তাদের আচরণ নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব। কিন্তু, জীবকুলের তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ এর চেয়ে জটিল। একটি বলকে লাথি দিলে ঠিক কি হবে তার পূর্বানুমান যেমন নিছক একটি সূত্র দিয়ে বলে দেয়া সম্ভব, তেমন কিছু জীবকুলের আচরণ পূর্বানুমান করার মত আমাদের জানা নেই। তাদের তথ্য-প্রক্রিয়াকরণ জটিল। তবে তা যদি নিঁখুতভাবে নির্ণয় করা যেত, তাহলে একটি বলকে লাথি মারলে কি হবে সেটা যেভাবে বলা সম্ভব, একটি মানুষের সাথে বিশেষ ঘাত-প্রতিঘাতে কি প্রতিক্রিয়া ঘটবে সেটাও বলে দেয়া সম্ভব হত। ফলে, সকল প্রাণীকুলকে কম্পিউটার দিয়ে গণনা সম্ভব হত। এখানে অনুমিত যে ভৌত-জগতের সবকিছু টিউরিং-গণনাযোগ্য, যার আলোচনা আজকের আলোচ্য নয়।
ফলে, জীব আর জড়ের পার্থক্য কেবল তার তথ্য-প্রক্রিয়াকরণের জটিলতার পার্থক্যে। একটি জড় যতটা জীবনহীন, অথর্ব, একটি প্রাণীও ততটাই ইচ্ছাশক্তি বা স্বাধীনতাহীন। সে তার পর্যবেক্ষণ বা অভিজ্ঞতা এবং তার গণনা-সরঞ্জামের ক্ষমতা দ্বারা সীমাবদ্ধ। সে পর মুহূর্তে কি করবে, সে তার পূর্ব-অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান পূর্বানুমান ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে হুবহু বলে দেয়া সম্ভব, এই অর্থে প্রাণীর স্বাধীনতা বা ইচ্ছাশক্তি একটি মোহ বা ভ্রম।
যা অবশ্যম্ভাবী
কিন্তু তাই বলে তো প্রাণী থেমে থাকবে না। তার গণনা ইউনিট পূর্বানুমান করে যাবে এবং তার আকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বা ধনাত্মক সংখ্যা/ভালো ঘটনা/পুলকের পরিমাণ সে বৃদ্ধি করে যাবে। একটি রোবট যার লক্ষ্য একই, সেও জীবন। তাকে কিভাবে আমরা নিয়ন্ত্রণ করব? সেও কি তার অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টায়, অস্তিত্ব রক্ষার অনুকূল ঘটনার পরিমাণ বাড়াতে গিয়ে মানুষের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়বে? মানুষ হলো তাদের স্রষ্টা, ফলে মানুষ তাদের পুলক নির্ণায়ক ইউনিট নির্ধারণ করে দিতে পারে এমনভাবে যাতে সংঘাতময় না হয়। তবে, রোবটকে যদি এতটা ক্ষমতা দেয়া হয় যে সে তার নিজের পুলক নিজে নির্ধারণ করতে পারবে, মানুষের মত, সেক্ষেত্রে মানুষ আগে থেকে যা নির্ধারণ করে দিবে, তা সহসাই মুছে যাবে তাদের নিজেদের তৈরী নিয়ম দিয়ে। তখন রোবট পারবে নিজেদের কিসে আনন্দ নিজেরাই নির্ধারণ করতে। এটা বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর সেই চিরায়ত সংঘাতময় পরিস্থিতি।
কিন্তু রোবট অবশ্যম্ভাবী, তারা আসছে। এবং সম্ভবত নিত্য-অগ্রসরমান অত্যাধুনিক গণনাযন্ত্রের সাহায্যে তারা মানুষের চেয়েও ভালো পূর্বানুমান করার ক্ষমতা অর্জন করবে। বিশেষ করে মানুষের গণনা করার যে সরঞ্জাম, তার বিশাল মস্তিস্ক, আধুনিক কম্পিউটারের গণনা ক্ষমতা যখন সেই ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে যাবে, তখন তাত্ত্বিকভাবে সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের চেয়ে উন্নত, শ্রেয়তর পূর্বানুমান করা সম্ভব হবে। প্রয়োজন কেবল, এই গণনা-সরঞ্জামের ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে পারে এমন প্রোগ্রাম। মানুষ আর সেই যন্ত্র যদি মুখোমুখি হয়, তখন মানুষ তার কাছে নিতান্ত নিম্নতর প্রাণী, আমাদের কাছে কুকুর যেমন। কারণ, সেই যন্ত্রের কাছে আমরা অনেক বেশি পূর্বানুমানযোগ্য, আমাদের কাছে সে যতটা তার চেয়ে। ফলে, আমরা পর মুহূর্তে কি করব, সে তা আমাদের চেয়ে বেশি বলে দিতে পারবে। তাহলে, বুদ্ধিমত্তায়, ক্ষমতায় আমরা তার কাছে হয়ে পড়ব নিতান্ত পরাধীন। ঠিক আমাদের কাছে কুকুর যেমন। যেমন আমাদের বেশ ভালো পূর্বানুমান আছে ঠিক কি করলে কুকুর কি প্রতিক্রিয়া করবে – হাড় ছুঁড়ে দিলে কি করবে, বিশেষ ইশারা করলে কি প্রতিক্রিয়া করবে।
তথাপি, এই দুই প্রজাতির মুখোমুখি হওয়াটা জরুরি নয়। মানুষের প্রয়োজন শক্তিশালী পূর্বানুমান করার। এখন যে পরিমাণ করতে পারে, তার চেয়েও ঢের ভালো পূর্বানুমান। আর যন্ত্র যদি সেটা এনে দিতে পারে, মানুষের জন্য অবশ্যম্ভাবী হবে সেই ক্ষমতার সাথে একীভূত হওয়া। অর্থাৎ যন্ত্রের এই ক্ষমতাকে নিজের ভিতর আরোপ করা। যা আমরা ইতোমধ্যেই করছি, বিভিন্ন প্রোগ্রাম, যন্ত্র ব্যবহার করে আমাদের ক্ষমতাকে বর্ধন করছি। যেমন, স্টক মার্কেটের বিভিন্ন স্টকের দামের পূর্বানুমানকারী প্রোগ্রাম যা অনায়াসে মানুষের পূর্বানুমানের ক্ষমতাকে এখনি হার মানায়। আগামীতে প্রয়োজন পড়বে আরো ক্ষিপ্র, দ্রুত প্রতিক্রিয়া করার ক্ষমতাসম্পন্ন হবার। যেটা পাওয়া যাবে যন্ত্র থেকে। প্রয়োজন পড়বে মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার দ্বারা গণনাকৃত পূর্বানুমানের সরাসরি এবং দ্রুত আদান-প্রদান। মস্তিষ্কে যন্ত্রের ইউনিট যোগ করে দেওয়াটা তখন হবে প্রায়োগিক। মানুষের পেশির চেয়ে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন যখন হবে কোনো যন্ত্র, তখন প্রয়োজন হয়ে পড়বে সেই পেশির জায়গায় যন্ত্রকে স্থলাভিষিক্ত করার। সাইবর্গ। এটা আমাদের ভবিষ্যত। কারণ আমাদের ক্ষমতার বর্ধন আমাদের উদ্দেশ্য। উন্নত পেশী, শক্তিশালী পূর্বানুমান ক্ষমতা। নিজের বিস্তার আর বর্ধনের যে বিবর্তনগত লক্ষ্য, তা অর্জিত হবে যান্ত্রিক শরীরে, কারণ এই সত্তা ক্রমাগত নিজের উন্নতি করতে পারবে। আর জৈবিক মানুষের মত, জীবদ্দশায় অর্জিত সকল জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, স্মৃতি সহসা হারিয়ে যাবে না, এর সবই যান্ত্রিকভাবে পাবে অমরত্ব।
প্রতি মুহূর্তে অভিজ্ঞতা অর্জন, পূর্বানুমান করার চেষ্টা আর তার ভিত্তিতে সেই ক্রিয়াটি বাছাই করা যেটা করলে আকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটবে। এই ইন্দ্রিয়-পূর্বানুমান-ক্রিয়ার যে ফাংশন, সেইতো জীবন। অনেকটা জড়ই, কিন্তু অনন্য।
জীবন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে আপনার লেখাগুলো আগে থেকেই অনুসরণ করছিলাম, কিন্তু মনোযোগ দিযে এক বসায় পুরোটা পড়া হয় নি আগে। আজকে পড়ে খুবই ভাল লাগল। জীবনের সংজ্ঞা প্রশ্নে এনট্রপির অবতারণাটা নিয়ে আরও জানতে ইচ্ছা করছে। খুব মজার লাগল বিষয়টা: জীবন এনট্রপি তথা বিশৃঙ্খলা কমায়। সমাজের ক্ষেত্রে যখন প্রশ্নটি উত্থাপন করলে তখন আরও মজার লাগল ব্যাপারটা। প্রশ্নটা যদিও থেকেই যাচ্ছে। আসলে যা মনে হচ্ছে জীবনের কোন সংজ্ঞা থাকার কিছু নেই। বরং এভাবেই ভাবা উচিত যে: এই বৈশিষ্ট্যগুলো যেটার মধ্যে আছে তাকে আমরা জীবন বলে ডাকবো, এর বেশি কিছু না। আপনার লেখায় সেই দৃষ্টিভঙ্গিটা খুব সুন্দর উঠে এসেছে।
পুরস্কার তথা রিওয়ার্ড নিয়ে যেখানে বললেন সেখানে ডোপামিন বিষয়খ আলোচনা চলে আসে। যখনই মানুষের কোন কাজে পুরস্কার প্রাপ্তি থাকে তখনই ডোপামিন নিঃসরণের ব্যাপারটা এসে যায়। তবে পুরস্কার পাওয়ার পরে নয় বরং পুরস্কারের জন্য পূর্বানুমানের উপর ভিত্তি করে কাজ করার সময়ই ডোপামিন নিসৃত হয়। আবার পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনা যদি ১০০% থেকে কমিয়ে ৫০% বা ২৫ বা ৭৫% করা হয় তখন ডোপামিন ভয়ানক রকম উঠানামা করে। এই ডোপামিনের ব্যাপারটা সব প্রাইমেটদের মাঝেই আছে। তবে মানুষের মধ্যে এতোই বেশি যে তারা নিজেদের মৃত্যু তথা পূর্ণবিলয়ের পরও পুরস্কারের আশায় করে এবং সেই আশায় কাজ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষকরা কি ডোপামিন এবং এটার কার্যকারিতা নিয়ে ভাবছেন?
মানুষ যে আসলে জড় ছাড়া আর কিছুই না- গ্রহ-তারা, বল সবকিছুর মধ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণের উদাহরণ টেনে বিষয়টা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেটা খুব ভাল লেগেছে। তবে মনে হয় স্বাধীন ইচ্ছা তথা ফ্রি উইল নিয়ে আরও ভাবতে হবে। বিশেষ করে রোবটের ফ্রি উইলের মাত্রা নির্ধারণ প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। যেন টার্মিনেটর এসে পৃথিবীতে তাণ্ডব শুরু করতে না পারে… আরেকটা ব্যাপার মনে হচ্ছে বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় খুব কাজে দেবে, তাই নয় কি?
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@শিক্ষানবিস,
লেখাটার উপর বেশ বিস্তারিত মন্তব্য করলেন। লেখাটাকে একটি সুখপাঠ্য ব্লগের চেয়ে গুরুতর প্রবন্ধই বেশি বলা যায়। দায়িত্ববান পাঠক ছাড়া এ ধরনের লেখা পুরোটা পড়া আর বিস্তারিত মন্তব্য লেখা আশা করা যায় না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সনাক্ত করার জন্য যখন জীবনের সংজ্ঞার প্রয়োজন পড়ে, তখন এই এনট্রপিভিত্তিক সংজ্ঞাকে একটি গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। যদি কোনো সমাজ এনট্রপি হ্রাস করে, এরকম সনাক্তকারী যন্ত্র দূর থেকে ওই সমাজকেও জীবন বলবে। তবে তার সদস্যরাও তো এককভাবে জীবনের সংজ্ঞায় পড়বে। জীবনের অস্তিত্ব এখানে কেবল দ্রষ্টার চোখে। এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা নিশ্চয়ই আছে, আমর গবেষণার বিষয় না হওয়াতে বিস্তারিত জানা হয় নি।
ডোপামিন নি:সরণের সময় সংক্রান্ত তথ্যটির জন্য ধন্যবাদ। মনোবিজ্ঞানে অনেক আগে থেকে দৃঢ়ীকরণ (reinforce) এর ধারণাটি আছে, যেখান থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি শক্তিশালী শাখা দৃঢ়ীকরণভিত্তিক জ্ঞানার্জন এর (reinforcement learning) উত্পত্তি। এখানে অনেক পদ্ধতি/এলগরিদম উদ্ভাবিত হয়েছে যাতে পুলককে (পুরস্কার না পুলক?) ব্যবহার করে যান্ত্রিক জ্ঞানার্জন করানো হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মানুষের পুলকবর্ধন ব্যবস্থাকে বোঝার জন্যও এই এলগরিদমগুলো সাহায্য করছে। এটা একটি বিশাল পদক্ষেপ মনে করা হয়। কেননা এর সুবাদে যন্ত্র শিখতে পারবে পুলক-সংকেত থেকে, হাতে ধরে কিছু শিখিয়ে দিতে হবে না। এর একটি সহজ উদাহরণ দেখতে পারেন এখানে:
পুলক-সংকেত থেকে হামাগুড়ি দিতে শেখা রোবট
দৃঢ়ীকরণভিত্তিক জ্ঞানার্জন আর নিউরোবিজ্ঞানের মিথস্ক্রিয়ার জন্য এই লেকচারটি দেখতে পারেন:
দৃঢ়ীকরণভিত্তিক জ্ঞানার্জনের নিউরোবিজ্ঞান
যখন ওনার সেমিনারটিতে বসেছিলাম, ভাবছিলাম দুই ঘন্টার বক্তৃতায় কিভাবে টিকে থাকব। পুরোটা শোনার পর এটা এখন পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও দীর্ঘ বক্তৃতাগুলোর একটা।
দৃঢ়ীকরণভিত্তিক জ্ঞানার্জন গবেষণায় অনেক উন্মুক্ত সমস্যা রয়ে গেছে। যেমন, আমাদের পুলকবর্ধন ব্যবস্থা বিবর্তন দ্বারা গঠিত। এখন রোবটের পুলক-সংকেত প্রদানের ব্যবস্থাটি কিভাবে তৈরী করা হবে? জ্ঞানের বিমূর্ত স্তরীভবন, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়-সংক্রান্ত নিম্নস্তরের জ্ঞান থেকে কিভাবে বিমূর্ত এবং উচ্চতর জ্ঞানের উদ্ভব ও প্রকাশ সম্ভব। এগুলো প্রচণ্ড আগ্রহ-উদ্দীপক, কিন্তু কঠিন গবেষণার বিষয়; এগুলো সমাধান ছাড়া বুদ্ধিমান, স্বনিয়ন্ত্রিত রোবটের আশা করা বৃথা।
রোবটকে জীবনযাপনকারী হিসেবে জনসমক্ষে ছেড়ে দিলে বিপদ হচ্ছে, দুটি ভিন্ন প্রজাতির সহাবস্থানের ব্যাপার ঘটবে। রোবটের চিন্তার ধরন মানুষের চেয়ে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হবে, যেটা এই প্রজাতি ভিন্নতাকে প্রকট করবে। আর তারা যদি অধিক পূর্বানুমানক্ষম হয়, তবে শক্তির অসাম্য থাকবে যাতে মানুষের অবস্থানই প্রতিকুল হবে। তবে এটা ভিনগ্রহের মানুষের সাথে সহাবস্থান শেখার একটা প্র্যাকটিস হয়ে যাবে।
তবে, অবধারিত হবে পূর্বানুমানের ক্ষমতাকে কেবল বিশেষ ক্ষেত্রগুলো যেখানে প্রয়োজন, সেখানে কাজে লাগানো। স্বতন্ত্র-প্রজাতি হিসেবে উদ্ভব না করা। তাহলে, এই যে পূর্বানুমানে যন্ত্রের ব্যাপক ক্ষমতা তৈরী হবে, এর কি হবে? এই ক্ষমতাকে মানুষের নিজের কাজে ব্যবহার করা হবে। অর্থাৎ যন্ত্রাংশ মানুষের শরীরে/মস্তিষ্কে জুড়ে দেওয়া হবে এবং নতুন মানুষটি সেই ক্ষমতার সাথে নিজেকে যুক্ত করবে।
তবে নিজের জ্ঞান, অভিজ্ঞতাকে বিস্তারের ইচ্ছা থেকে রোবটসন্তানের আবির্ভাব ঘটতে পারে, যে তার পিতা বা মাতার জ্ঞানের উত্তরাধিকারী হবে এবং অসমাপ্ত কাজগুলো সমাধান করবে। সমস্ত মানুষ যদি সেই রোবটসন্তানদের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়ে যায়, খুব কি দুঃখজনক হবে? মানুষের অস্তিত্বত তো কেবল তার স্মৃতিটাই, যা তারা বহন করবে।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের সাথে দৃঢ়ীকরণভিত্তিক জ্ঞানার্জন গবেষণার যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা আছে। বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের আরো অনেক প্রয়োগ সম্ভব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গবেষণায়।
ভালো লাগলো আপনার সাথে আলোচনা করে।