একটি ছোট্ট পরিসংখ্যান দেই। ২০০৫ সালে শুধু মাত্র আমেরিকাতে ১২.৮ বিলিয়ন ডলারের উপহার সামগ্রী কেনা হয়েছে ভালবাসা দিবসে। ২০০৭ সালে তা ছিল আগের চেয়ে অন্তত ৭% বেশী। সংখ্যায় যা দাঁড়ায় প্রায় ১৩.৭ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ১৪.৭ বিলিয়ন ডলার। এতো গেল শুধুমাত্র আমেরিকার কথা। যদি সারা বিশ্বের হিসাব তুলি তাহলে তা বোধ করি কয়েকশত ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।
এবারে আরেকটি ছোট্ট পরিসংখ্যান। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ৮৫০ মিলয়ন মানুষ খালি পেটে ঘুম যায়। যা প্রতি বছর ৫ মিলয়ন করে বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা বাড়ার দরুন। প্রতিদিন সারা বিশ্বে ১৮,০০০ শিশু ক্ষুধা এবং অপুষ্টিজনিত কারনে মৃত্যুবরন করে। এটি ২০০৭ সালে জাতিসঙ্ঘ কতৃক প্রকাশিত পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে।
যাই হোক এবার আমরা আমাদের আলোচ্য বিষয়ে ঢুকে যাই। ভালবাসা দিবস। ভালবাসা দিবস আসলে কি? কেন এই ভালবাসা দিবস? আর কেনোইবা এই ভালবাসা দিবস নিয়ে মানুষের এত দাপাদাপি, লাফালাফি?
ভালবাসা দিবসের ইতিহাস যদি খুজতে যাই তাহলে আমরা দেখব যে এর ইতিহাস খুবই
ধোয়াশাপুর্ন। যে সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের কথা বলা হয়, সে কি আসলেই ছিল, থাকলে একজন নাকি একাধিক, তার সাথে ভালবাসা দিবসের সম্পর্ক কি তা কোনো শক্ত তথ্য উপাত্ত দিয়ে প্রমান করা যায় না। ভ্যালেন্টাইনকে নিয়ে যে কাহিনী প্রচলিত আছে তাকে আমরা শুধুমাত্র কল্পকাহিনীই বলতে পারি।
ক্যাথলিক চার্চের মাধ্যমে আমরা তিন জন ভিন্ন ভিন্ন ভ্যালেন্টাইনের কথা জানতে পারি যারা প্রত্যেকেই শহীদ হয়েছিল।
একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী ভ্যালেন্টাইন ছিল একজন খ্রীষ্টান ধর্মযাজক। যখন কিনা রোমান শাসক দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের শাসনামল। অবিবাহিত সৈনিক বিবাহিত সৈনিক হতে বেশি কার্যকর, এই ধারনার বশবর্তি হয়ে তিনি যুবকদের বিয়ে করা অবৈধ ঘোষনা করেন। ভ্যালেন্টাইন এই ঘোষনার বিরোধিতা করে গোপনে যুবক যুবতীর বিয়ে দিতে লাগলেন। স্বাভাবিক ভাবেই কিছু দিন পরে এই কথা রাজার কানে পৌছুল এবং তিনি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিলেন। বলা হয়ে থাকে এই মৃত্যুদন্ড ১৪ ফেব্রুয়ারী কার্যকর হয়।
আরেকটি কিংবদন্তি মতে, ভ্যালেন্টাইন খ্রীষ্টান কয়েদিদের রোমান কারাগার থেকে পালাতে সাহায্য করে, যেখানে তাদের অমানবিক ভাবে অত্যাচার করা হত। এই অভিযোগে তাকে কারাগারে প্রেরন করা হয়। সেখানে সে কারাপ্রধানের অন্ধ তরুনি মেয়েকে অলৌকিক (!) ভাবে সারিয়ে তোলে এবং তার সাথে খুব ভাল একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এখানে একটি কথা বলা দরকার, ক্যাথলিকরা এই সম্পর্ককে প্রেমের সম্পর্ক হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং প্রোট্যাসণ্টরা এটিকে শুধু মাত্র বন্ধুত্বের সম্পর্ক হিসেবে অভিহিত করেছে। যাই হোক কারাগারে অবস্থানকালে ক্লডিয়াস তাকে রোমান দেব দেবীকে মেনে নিয়ে যীশুকে অস্বীকার করতে বললে ভ্যালেন্টাইন তাতে রাজি হয় নি। যার জন্য ২৭০ A.D অন্যমতে ২৮০ A.D সালে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। কথিত আছে দন্ড প্রয়োগের আগ মূহুর্তে সে কারা প্রধানের কাছে কাগজ ও কলম চেয়ে নিয়ে একটি বিদায় সম্ভাষন লিখেছিল তার মেয়ের জন্য। যাতে লেখা ছিল From Your Valentine।
এখন আমরা দেখব কিংবদন্তির সত্যতা। আমরা যদি দ্বিতীয় ক্লডিয়াসের জীবনী আলোচনা করি তাহলে দেখতে পাব ২য় ক্লডিয়াস সর্বসাকুল্যে দুই বছরেরও কম সময় শাসন করতে পেরেছিলেন। আধুনিক ইতিহাসবিদগন কিংবদন্তিতে ক্লডিয়াসেরসের যে চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে তাতে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে কিংবদন্তিতে উল্লেখিত তথ্য সমর্থন করার মত পর্যাপ্ত দলিল ইতিহাসে নেই।
বরঞ্চ ইতিহাসের মাধ্যমে আমরা যা পাই তা হলো, ফেব্রুয়ারী মাসে প্রাচীন রোমে বসন্ত শুরু হত। তারা এই মাসটিকে পবিত্রতা ও শুদ্ধতার মাস মনে করত। ঐ সময়ে তারা ধর্মীয়ভাবে তাদের বাড়ি ঘর পরিষ্কার করত। এই মাসের ১৫ তারিখে তারা লুপারকেলিয়া নামে একটি ভোজের আয়োজন করত যা তাদের কৃষি দেবতা “ ফাউনাস” এবং রোম প্রতিষ্ঠাতা “রমিওলাস” ও “ রেমাস” এর নামে উতসর্গ করা হত। এই ভোজ অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষন ছিল একটি লটারি। এই লটারির মাধ্যমে পরবর্তি বছরের জন্য রোমান যুবকরা তাদের নারীসঙ্গী পেত।
পরবর্তিতে পোপ গেলাসিয়াস এই লটারি প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন এবং এই দিবস কে খ্রীষ্টিয় ফ্লেভার দিতে ভ্যালেন্টাইন ডে নামের মোড়ক দিয়ে আবৃত করেন। মজার কথা হল এই ১৪ শতকের আগেও ভ্যালেন্টাইন দিবসের সাথে ভালবাসার কোন সম্পর্ক ছিল না।
বিখ্যাত ইংরেজ লেখক জেওফ্রে সসার ( Geoffery Chaucer ) তার কবিতা The Parliament Of Fowls – এ পাখিকে প্রেমিক-প্রেমিকা হিসেবে কল্পনা করেছেন। মধ্যযুগে ফ্রান্সে এবং ইংল্যন্ডে বিশ্বাস করা হত যে ফেব্রুয়ারী মাস হল পাখির প্রজনন কাল। সসার তার কবিতায় লিখেছেনঃ
“For this was on St. valentine’s day, when every fowl cometh there to choose his mate.”
বস্তুত সসারের এই কবিতার মাধ্যমেই ভ্যালেন্টাইন ডের মধ্যে ভালবাসা জিনিসটি ঢুকে যায় এবং আস্তে আস্তে ব্যাপকতা লাভ করে। লেখক Henry Ansgar Kelly তার Chaucer and cult of Saint Valentine বইতে এই ব্যপারটি ভাল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
এতক্ষনে আমরা মনে হয় এটুকু বুঝতে পেরেছি যে আজকের ভালবাসা দিবসের উতপত্তি ভালবাসা দিবস হিসেবে হয় নি। কেননা আমরা যদি প্রথম কিংবদন্তিটি আলোচনা করি তাহলে ভ্যালেন্টাইন ডে কে ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করার কোন যুক্তিই নাই। নুন্যতম আমরা যা করতে পারি তাহল ভ্যালেন্টাইনস ডে কে ‘কাজি দিবস” হিসেবে পালন করতে পারি। কারন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন প্রেমের জন্য মারা যান নি। তিনি মারা গেছেন বিয়ে করানোর দায়ে।
আর যদি দ্বিতীয়টি নিয়ে আলোচনা করি তাহলে দেখব সেখানেও ভালবাসার কোন জায়গা নেই। তাকে হত্যা করা হয়েছিল রোমান দেবতা না মানার জন্য।
সব কিছুর পরেও আমরা যদি ভালবাসা দিবসকে মেনে নেই, আমরা কিভাবে মানবো এই দিবসকে কেন্দ্র করে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলারের অপচয়কে, যা কিনা শুধুমাত্র চকলেট, কার্ড, অলংকার আর জন্মনিয়ন্ত্রিকরন সিস্টেম কিনতেই চলে যায়? যখন পৃথিবীর একটি বিরাট সংখ্যক মানুষ না খেয়ে থাকে, যখন আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কান্ডারী শিশুরা ক্ষুধায়, অপুষ্টিতে ভুগে মারা যায়?
শুধু ভ্যালেন্টাইন ডে না, মানব কল্যানে কাজে লাগেনা এমন সব দিবস পালন করাকেই আমি ঘৃনা করি। এই দিবসগুলো আমার বমির উদ্দ্রেক করে। আমরা এইসব ফালতু দিবসে অপচয় করা অর্থগুলোকে যদি মানব কল্যানে কাজে লাগাতে পারি তাহলে এই পৃথিবীর দরিদ্র মানুষের কিছুটা হলেও উপকার হবে আর আমরা আমাদের দায়িত্বের কিছুটা হলেও পুরন করতে পারব। কি বলেন আপনারা ??
সামহোয়ারইনব্লগে এ প্রসঙ্গে আমাদের একটা পোস্ট ছিলো- সেটাই এখানে কপি পেস্ট করে দিচ্ছি ….
শিরোনাম: স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস না ভ্যালেন্টাইনস ডে? – দিবস বাণিজ্যে বিবশ তারুণ্য !
লিংক: http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29096308
১.
ফরাসি বিপ্লবের পর সে দেশের বুদ্ধিজীবিরা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের বদলে একটা নতুন ক্যালেন্ডারের প্রস্তাব করেন যেটাতে ১২ মাসে বছর হবে ঠিকই, তবে প্রতিটি মাস আবার তিনটি দশকে বিভক্ত থাকবে। সেই ক্যালেন্ডারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, প্রতিটি দিনের একটি বিশেষ নাম থাকবে; ফলে ৭ ই আগষ্ট লেখার বদলে শুধু ’বেগুন’ বা ’টমেটো’ লিখলেই চলতো! কারো জন্ম তারিখ ৭ ই আগষ্ট হলে তার জন্মতারিখের জায়গায় লেখা হতো ‘বেগুন’। ব্যাপারটা একটু কেমন যেন তাই না! যাই হোক, ফরাসিরা ১৮০৮ সালে এসে সেই ক্যালেন্ডার বাতিল করে পুরাতন ক্যালেন্ডারে ফিরে আসে। স্বস্তি! স্বস্তি!
না, অত স্বস্তি পাওয়ার কিছু নেই! বোধহয় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এবার কেন্দ্র হলো যুক্তরাষ্ট্র। ক্যালেন্ডারের প্রায় প্রতিটা দিনই এখন একটা ’দিবস’, প্রতিটা দিনই এক একটা নামে পরিচিত। তবে ফরাসি তারিখের নামের সাথে বর্তমানের যুক্তরাষ্ট্রের এই দিবসের নামের একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হলো এই যে, এই দিবসগুলোর উদ্যোক্তা ও পৃষ্ঠপোষক হলো বড় বড় কর্পোরেট কোম্পানি। যেমন: ন্যাশনাল হিস্টরি ডে’র স্পন্সর হলো ’হিস্টরি চ্যানেল’, আমাদের আলোচ্য ’ভ্যালেন্টাইনস ডে’ কিংবা ফ্রেন্ডশিপ ডে’র স্পৃষ্ঠপোষক হলো হলমার্ক, আর্চিস, ডিজনিল্যান্ড ইত্যাদি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।(১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে’র স্বীকৃতি দেয়। এরপর ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ ’উইনি দ্য পুহ’ কে অ্যাম্বাসেডর অব ফ্রেন্ডশিপ ঘোষণা করে। এখানে লক্ষণীয় যে, উইনি দ্য পুহ হলো একটি কার্টুন চারিত্র যেটিকে ওয়াল্ট ডিজনি সাহেব ১৯৫৮ সালে তার ডিজনি ওয়ার্ল্ড এর অন্তর্ভুক্ত করেন।)
’ফারেনহাইট ৯/১১’ খ্যাত পরিচালক মাইকেল মুর তার একটি টিভি শো’তে দেখিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিভাবে কোনো একটি বিশেষ পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কংগ্রেসম্যানদের টাকা খাইয়ে ঐ পণ্যের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন একটা দিবস ঘোষণা করা হয়। আর আমাদের দেশে তো আমরা দেখছি ভালেন্টাইনস ডে কিংবা ফ্রেন্ডশিপ ডে’তে হলমার্ক কিংবা আর্চিস গ্যালারির কার্ড বিক্রি কি পরিমাণ বেড়ে যায়!
২.
১৯১০ সালে জয়েস সি হলমার্ক যখন হলমার্ক নামের দোকান খুলে কার্ড ব্যাবসা শুরু করেন তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে- বদলে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অণু পরিবার। যেখানে পুঁিজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চাপে দু’মুঠো অন্ন যোগাড় করতে গিয়ে মানুষকে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে; রুটি রুজির পেছনে ছুটতে গিয়ে মানুষ এক সময় দেখে যে, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ছেড়ে সে একা। অন্যদিকে যান্ত্রিক জীবন যাপন করতে গিয়ে সে হারিয়ে বসে আছে তার মননশীলতা, কেননা শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির চৌহদ্দি থেকে সে অনেক দূরে। ফলে সে তার নিজের গভীর আবেগ আর আগের মতো প্রকাশ করতে পারছে না। হলমার্ক সাহেব (এবং তার মতো আরো অনেক বুদ্ধিমান ব্যাবসায়ী) ঠিক এই অবস্থাটির সুযোগ নিল। হলমার্কের একটা বিশেষ গুণ ছিল যে, সে আবেগ অনুভুতির ব্যাপারগুলো অল্প কথায় বেশ গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারতো। ফলে দারুণ দারুণ সব ডায়লগ লেখা কার্ডে বাজার ছেয়ে গেল এবং সেই কার্ডগুলো বিক্রয়ের উপলক্ষ তৈরী করতে আবির্ভূত হলো বিভিন্ন দিবস বা হলিডে।
৩.
কোন পণ্যের বিজ্ঞাপণ দুই পদ্ধতিতে দেয়া যায়। একটা পদ্ধতি বেশ সরাসরি- অমরা বেশ পরিস্কার বুঝি যে টিভিতে একটা বিজ্ঞাপন চলছে যখন কোন মিডিয়া স্টার নেচে গেয়ে কোন পণ্যের গুণকীর্তন করে এবং এক সময় বলে ’আমার সাফল্যের গোপন রহস্য’ হলো এই পণ্য কিংবা ’আমার আছে আপনার আছে কি?’ ইত্যাদি। এটাকে বলে ’পুশ’ করা , কোন পণ্যকে ক্রেতার চাহিদার তালিকায় ধাক্কা দিয়ে ঢোকানো।
আরেকটা পদ্ধতি হলো পরোক্ষ পদ্ধতি যেটাকে বলা হয় ’পুল’ করা- ক্রেতাকেই কোন বিশেষ ধরণের পণ্যের দিকে টেনে আনা। এর জন্য প্রয়োজন এমন একটা পরিবেশ তৈরী করা যেন ক্রেতা মনে করে যে ঐ সময়ে ঐ নির্দিষ্ট ধরণের পণ্যের ক্রেতা না হলে যেন তার তারুণ্য বা আধুনিকতা ইত্যাদি ইমেজ গুলো আর থাকে না! বিভিন্ন দিবস ঘোষণা করে এবং এগুলোকে মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণার মধ্যে এনে ঠিক এই কাজটিই করা হয়।
এভাবে দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে, ভ্যালেন্টাইনস ডে কিংবা ফ্রেন্ডশিপ ডে এগুলো আসলে এক একটা গোপন বিজ্ঞাপন!
৪.
এখন প্রশ্ন হলো, এই যে দিবসগুলো যেগুলোর সাথে আমাদের সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনের সাথে কোন সত্যিকারের সম্পর্ক নেই এবং যেগুলো আসলে এক একটা গোপন বিজ্ঞাপন, সেগুলোকে আমরা ঠিক কি ভাবে দেখব? এক্ষেত্রে খুব সহজেই দুটো পক্ষ পাওয়া যায়। এক পক্ষ বলে, প্রেম-ভালোবাসা বা বন্ধুত্ব কি এক দিনের ব্যাপার যে ঘটা করে বছরের একটা দিনে পালন করতে হবে? অপর পক্ষের পাল্টা জবাব, মানলাম, এগুলো একদিনের নয়, বিচ্ছিন্নতার এই যুগে, একটি বিশেষ দিনকে উপলক্ষ করে আমাদের ভালোবাসা বা বন্ধুত্বকে যদি একটু ঝালিয়ে এবং রাঙিয়ে নেয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি?
এ বিষয়ে যেটুকু বলবার, তা হলো: হতে পারে, কোন একটি বিশেষ দিনে আমরা আমাদের বন্ধুত্ব বা ভালোবাসাকে উদযাপন করতে পারি। কিন্তু সেটা কবে করবো, কিভাবে করবো, কি উপহার দেব( বা আদৌ উপহার দেব কি-না- কেননা অনেকেই মনে করতে পারেন টাকা দিয়ে কেনা পণ্যের মাধ্যমে আর যাই হোক সম্পর্ক গভীর হয় না!) উপহারের গায়ে কি লেখা থাকবে, সেটাতো আমরা বন্ধুরা মিলেই ঠিক করতে পারি, সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? সেটা কেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ঘোষণা করবে কিংবা হলমার্ক বা আর্চিস গ্যালারি বলে দেবে? কেন আমরা আমাদের ব্যাক্তিগত আবেগ অনুভূতি নিয়ে কোন ব্যাবসায়িক কর্পোরেশনকে মুনাফা লোটার এবং তার মাধ্যমে আমাদের মানবিক সম্পর্কগুলোকে বাণিজ্যিক সম্পর্কে পরিণত করার সুযোগ করে দেব?
আবার কিছু দিবস আছে যেগুলো ঐতিহাসিক- যেমন: আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটি যৌথভাবে সবাইকে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আরো বেশি করে আত্মনিয়োগ করার সুযোগ এনে দেয়। কিন্তু এ দিবসটিও এখন বহুজাতিক কোম্পানির মুনাফার হাতিয়ার। যেমন: বর্ণবাদি কোম্পানি ইউনি লিভারস আজকে নারী দিবসের অন্যতম স্পন্সর। অথচ আমরা ভালো করেই জানি, নারী-অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নারীর মর্যাদা বিষয়ে এর সামান্য মাথা ব্যথাও নেই, থাকার কথাও নয়- মুনাফার প্রয়োজনে নারীকে পণ্য বানানোর দিকেই এর সমস্ত প্রচেষ্টা( ’সৌন্দর্য্য সাবান’ লাক্স কিংবা ’ফেয়ার এন্ড লাভলি’র বিজ্ঞাপন দেখলেই স্পষ্ট বোঝা যায় নারীর শরীর এবং শরীরি সৌন্দর্য্যকে এরা কিভাবে পণ্য বানাচ্ছে)। ফলে যা হবার তাই হচ্ছে- নারী দিবস ক্রমশই তার ঐতিহাসিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে দূরে এবং বিপরীত দিকে সরে যাচ্ছে।
আবার, কিছু দিবস আছে যেগুলোকে এখনও কর্পোরেট হাউসগুলো মুনাফার হাতিয়ার বানাতে পারেনি যেমন- মে দিবস, হিরোশিমা দিবস ইত্যাদি। দিবসগুলো এমন কিছু ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, এমন সব চেতনা বা সংগ্রামকে সামনে নিয়ে আসে যেগুলো মুনাফালোভীদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি স্বরূপ। কর্পোরেট হাউসগুলো সরাসরি এসব দিবসের বিরোধীতা না করলেও, এদের দ্বারা স্পন্সরড দিবসের প্রচারণার ডামাডোলে পড়ে ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে যেমন: সারা বিশ্বেই ফ্রেন্ডশিপ ডে’র আড়ালে চাপা পড়ে যায় হিরোশিমা দিবস আর আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র আড়ালে চাপ পড়ে যায় ১৪ই ফ্রেব্র“য়ারির স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস- ১৯৮৩ সালের এই দিনে তৎকালিন সামরিক শাসক হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনের অবসান ও গণবিরোধি মজিদ খান শিক্ষাকমিশন বাতিলের দাবিতে তীব্র আন্দোলন রচনা করেছিল তৎকালিন ছাত্রসমাজ। ১৪ই ফেব্র“য়ারি তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের উদ্দেশ্যে সামরিক আইন ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে যাত্রা শুরু করে কার্জন হল ও শিক্ষাভবনের সামনে পৌছানো মাত্রই আর্মি-পুলিশের গুলিতে শহীদ হন জাফর-জয়নাল-দিপালী সাহা। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে সারা দেশেই তীব্র হয়ে উঠে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যার ফলশ্র“তিতে ’৯০ এর গণআন্দোলনের মধ্যদিয়ে সামরিক শাসনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। আজ সামরিক শাসক ক্ষমতায় নেই কিন্তু কর্পোরেট সংস্কৃতির এমনই মহিমা যে, ১৪ই ফেব্র“য়ারি তারিখে যে তারুণ্য একদিন স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস রচনা করেছিল সেই তারুণ্যেরই একটা অংশ এখন চলমান শোষণ নির্যাতন প্রতিরোধের বদলে কর্পোরেট স্পন্সরড ’ভ্যালেন্টাইনস ডে’তে বুঁদ হয়ে থাকে!
আসুন আমরা ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে স্বৈরচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করি।
কমেন্ট নং ৩৬:
পত্রপত্রিকা থেকে ভ্যালেন্টাইনস বাণিজ্যের কিছু আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে-
# আর্চিস ও হলমার্কের মতো কার্ড বিক্রেতারা তারা আজকের দিনে সারা বছরের মোট কার্ড বিক্রির ২০ শতাংশ আজকেই সেরে ফেলবে।গত বছর এদের মোট বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩০ কোটি টাকা। সেই হিসেবে এই একদিনেই বিক্রি হবে ৩০ কোটি টাকার ২০ শতাংশ অর্থাত ৬ কোটি টাকার।
# ভ্যালেন্টাইনস ডে তে Cadbury, Aero, Snickers, Maltesers, Twix, Mars, Ferrero Rocher, Meiji Almond, Black Chocolate, Safari and Toffee Crisp ইত্যাদি ব্র্যান্ডের চকোলেট-ক্যান্ডির বিক্রি হবে এক দিনেই সারা বছরের ১৫ শতাংশ।
# সরাদেশে ফুল বিক্রি হবে প্রায় ৩ কোটি টাকার যার মধ্যে শাহবাগের ফুল বিক্রেতা থেকে শুরু করে গুলশানের ফার্নস এন্ড পেটালের মতো দোকানের ভাগ রয়েছে।থাইল্যান্ড এবং ভারত থেকে আমদানীকরা লিলিয়াম, গাডিওলাস ইত্যাদি থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশে বিভিন্ন ফুল বিক্রি করে ফার্নস এন্ড পেটালস। আজকের দিনের জন্য এরা অ্যাডভান্স অর্ডারই পেয়েছে ২,৫০০ টি।
# পাচ তারা-তিন তারা হোটেল গুলো আজকের দিনের জন্য ক্যান্ডেল লাইট ডিনার, স্পা ডেট, ওয়েলকাম ড্রিংক, লাইভ কনসার্ট ইত্যাদি আয়োজন করেছে। শুধু আজকেই এদের ব্যাবসা হবে ১৫-২০ কোটি টাকা।
যুগলদের খাওয়া-দাওয়ার বিশেষ আয়োজন করে কেএফসি, পিজ্জা হাট, বেল্লা ইটালিয়া, নন্দোস, কফি ওয়ার্ল্ড, ফ্ল্যাম্বি, কাসা-ব্লাংকা, স্পেগেটি জ্যাজ ইত্যাদি রেস্তারাগুলোও ভালো আয়-কামাই করবে।
# আড়ং, কে-ক্র্যাফট, বিবিয়ানা, অন্যমেলা, নিপুন, সাদা-কালো, দেশাল ইত্যাদি বুটিক হাউসগুলো ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে স্পেশাল কালেকশান বের করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন বিউটি পার্লারগুলোও এ উপলক্ষে ভালো ব্যাবসা করবে।
লেখাজোকা শামীম এর প্রশ্ন:
স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের কোন সংঘর্ষ তো দেখি না। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
আর কর্পোরেট সংস্কৃতির বিপক্ষে বলার সাথে সাথে ওদের পণ্য বা ধান্দাবাজির বিজ্ঞাপন বর্জনের দাবিও জানাতে পারেন। কিন্তু বিকল্প পণ্য না পেলে মানুষ ওদের পণ্যই কিনবে।
জবাব:
১৪ ই ফেব্রুয়ারি তারুণ্যের মগজের কোষে কোষে কিসের ভাবনা– যাদের পার্টনার আছে তাদের ভাবনা কিভাবে পার্টনারকে খুশি করা যায়, যাদের পার্টনার নাই তাদের ভাবনা কিভাবে পার্টনার যোগার করা যায়, কিংবা যোগার করা না গেলে তার হতাশা, মিডিয়ায় ভ্যালেন্টাইনস ডে’র বিশেষ নাটক, টকশো, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, পত্রিকার বিশেষ আয়োজন, কনভেশন সেন্টারগুলোতে বিশেষ আয়োজন- “লাইলি মজনু মেলা” ইত্যাদির মধ্যে তারুণ্যর কয় শতাংশ জানে ১৪ই ফেব্রুয়ারি দিনটি যে স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস! এই যে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র ডামাডোলে রাজনৈতিক সংগ্রামের গৌরবগাথার অনুপস্থিতি এর চেয়ে বড় সাংঘর্ষিক দিক আর কি হতে পারে? এই সাংঘর্ষিক দিকটিই প্রতীকি ভাবে মূর্ত হয়ে উঠে যখন টিএসসিতে আজকের তারুণ্য ভালোবাসার দাবীতে মিছিলের শ্লোগান তোলে— “কেউ পাবে তো কেউ পাবেনা, তা হবে না তা হবে না”।
আপনি বোধহয় এ বিষয়গুলো না ভেবেই প্রশ্নগুলো তুলেছেন।
আরেকটা বিষয় হলো, স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবসটির ভ্যালেন্টাইনস ডে’র আড়ালে পড়ে যাওয়ার বিষয়টি ভ্যালেন্টাইনস ডে’র অনেকগুলো নেগেটিভ দিকের একটি- একমাত্র নয়— ভ্যালেন্টাইনস ডে যদি ১৪ ই ফেব্রুয়ারি না হয়ে মামুলি সাধারণ তাতপর্যহীন কোন দিনেও হতো তাহেলও সেটা আজকের মতোই তারুণ্যের উপর নেগেটিভ প্রভাব রাখতো- কেন, সে বিষয়টি নিয়ে কিছু আলোচনা উপরের লেখাতে করেছি।
@দিনমজুর,
চমৎকার বলেছেন। আপনার লেখাটা সামুতে পরেছিলাম আগে।
নাহ উদ্ধৃতি দেয়াটা শিখতেই পারলাম না। 😥
আগের মন্তব্যটা সুধাকে দেয়া
“ভালো থাকুন ( আর ইয়ে একটা প্রেম, ট্রেম করুন !)।”
এই কথার প্রেক্ষিতে।
@সাইফুল ইসলাম,
প্রথমে যে লাইন বা প্যারা উদ্ধৃতি দিতে চান সেটা কপি করে আপনার মন্তব্যের ঘরে পেস্ট করুন।পরে পুরো লাইনে বা প্যারাতে ক্লিক করে নীল রং হলে ” উদ্ধৃতির ঘরে ক্লিক করুন দেখবেন প্যারার প্রথমে এবং শেষে ব্লককোয়াই শব্দ আসবে।
পরে আপনার কমেন্টস করুন।শেষতঃ “মন্তব্য করুন” ঘরে ক্লিক করলেই হয়ে যাবে।
ভালো থাকুন।
@সাইফুল ইসলাম,
সৈকতের পাল্লায় পড়লেই শিখে যাবেন। আমারো এই শিক্ষা মাত্র দুদিন আগে হয়েছে। আগে দুয়েকবার চেষ্টা করেছিলাম আপনার মতই নীলিমায় নীলের রাজত্বে প্রবেশ করেছিলাম।
@আদিল মাহমুদ,
হা হা হা হা
@ সাইফুল ইসলাম
আপনি সম্ভবত এখনও প্রেমে পড়েননি!( 😀 দুঃখিত, একটু ইয়ার্কি মারলাম! )।
প্রেমে প্রথম হাত ধরা দিবস, প্রথম তেড়ে ঝগড়া হয়ে অবশেষে কান্নাকাটি হয়ে মিলঝুল হয়ে যাওয়া দিবস…. ইত্যাদি আরো কত দিবস যে থাকে রে ভাই একদিন জানবেন। এবং এই সমস্ত দিবসের কোন কোনটি এতই ইসপেশাল 🙂 হয়ে যায় যে মনে মনে মনেরাখা, অধীর অপেক্ষা ও কেনাকাটা চলেই। ভালবাসা দিবস সেই লাইনে আরেকটি দিন যোগ করলই বা। অর্থ যার আছে, সদুদ্দেশ্যে ব্যয়ের ইচ্ছে তার না থাকলে সে ভ্যালেনটাইন্ ডে পালন করুক আর না করুক বা ব্যাংকেই টাকা গচ্ছিত রাখুক তাতে গরীবের উপকারটা কি? ব্যয়কৃত অর্থের একটা অংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী(নিম্ন মধ্যবিত্ত) ও রাস্তার ফুলওয়ালা(দারিদ্র সীমার নীচে)) মেয়েটির কাছেও যায়। সেটাই বা কম কিসে? এর তুমুল বাণিজ্যকরন নিয়ে আপত্তি থাকলেও এবং পুরো ব্যাপারটাই বেশ হাস্যকর দাঁড়ালেও আশা করি এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দেবার উদারতা আসবে।
ভালো থাকুন ( আর ইয়ে একটা প্রেম, ট্রেম করুন 😀 !)।
@সুধা,
“All you need is love!”
এক দিক দিয়ে বিচার করলে ভালবাসাই সভ্যতা!
ভালবাসা আছে বলেই পৃথিবীটা এখনও বসবাসযোগ্য।
সহমর্মীতা তো ভালবাসারই অন্যনাম!
বাংলাদেশের মত বদ্ধ রক্ষনশীল সমাজে তরুন-তরুনীরা ভালবাসা দিবসে যদি খোলা হাওয়ায় একটু নাচানাচি করে এর অপকারিতা আমি দেখিনা।
ছাত্রদের সন্ত্রাস মারামারির চেয়ে ভাল।
তবে ব্যাপক অপচয়ের বিপক্ষে, একটা গোলাপ কেনা যায়, রাস্তায় ফুল বিক্রি করা ছোট মেয়াটার হাত থেকে।আমার আপনার কারুরই সমাজব্যবস্থা পালটানোর ক্ষমতা নেই।
কাজ করতে হবে যারা ক্ষমতাধারী তাদের বাধ্য করে!
@লাইজু নাহার,
আপনার সাথে আমিও একমত। ভালবাসা দিবস নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নাই, মাথাব্যাথা এর যত আদিখ্যেতা নিয়ে। আগন্তুকদাকে দেয়া আমার জবাবটা পড়ুন।
অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
ভাল থাকবেন।
সাইফুল ভাইকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। অনেক দিন পর আপনাকে দেখলাম।
আপনার অনুচ্ছেদ দুটির মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাচ্ছি না। মানুষ ভালবাসা দিবসে বা অন্য কোনো বিলাসিতায় খরচ না করলেই গরিবের কি উপকার হবে তা বোধগম্য নয়। বরং ধনীরা বেশি মাত্রায় টাকা-পয়সা খরচ করলে তা গরিবের উপকারে আসে কারণ ক্ষেত্র বিশেষে উহা গরিবের কাছেও আসে বা আসার পথ পরিষ্কার করে। ধনীরা খরচ না করে যদি সঞ্চয় করে তবে তাতে ঐ ধনীরাই আরো ধনী হবে এবং গরিবের কোনো উপকারে আসার সম্ভাবনা নেই। যদি প্রচলিত পুঁজিবাদী সমাজ-ব্যবস্থা বজায় রেখে এর সর্বোচ্চ ফায়দা পেতে হয় তবে ভোগ-বিলাসীতার পথকে উন্মুক্ত রাখতে হবে। পুঁজিবাদের ত্রুটিগুলো দূর করতে হলে সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে, এভাবে খণ্ডিত বিষয় নিয়ে অগ্রসর হয়ে লাভ নেই।
ভালোবাসা দিবসের পেছনে কি মিথ ছিলো এগুলো নিয়ে না ভেবে এর বর্তমান উপযোগ আসলে কি তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে। আমাদের দেশে এটা বরং একটি সেক্যুলার দিবস হিসেবে পালিত হয়। আমরা অহেতুক একে নিয়ে নাক না সিটকালেই কি নয়?
@সৈকত চৌধুরী,
অনেক ধন্যবাদ সৈকত ভাই মন্তব্যের জন্য। আমি কিন্তু বলিনি যে এই দিবসটা পালন করাটা বন্ধ করতে হবে। আদিল ভাইকে দেয়া আমার জবাবটা দেখেন। আপনার আমার সবার যদি পেটে ভাত থাকে তাহলে কিন্তু কারোরই যেকোন দিবস পালনেই কোন বাধা থাকার কথা নয়। আমি যা বলতে চেয়েছি তা হল, আমি একজন নৈতিকতা বোধ সম্পন্ন মানুষ হিসেবে কিভাবে হাজার হাজার টাকা শুধু শুধু খরচ করি যখন আমারই পাশে ফুটপাথে না খেয়ে রয়েছে আমারই মত প্রানী গুলো।
আমার কাছে অভুক্ত মানুষ পাশে রেখে নিজে পেট ভরে খাওয়াটা অমানবিকতার অন্তর্ভুক্ত। ঠিক তেমনি ভাবে ভালবাসা দিবসের মত এরকম আরও অনেক দিবসে ফালতু টাকা খরচ করাটাও আমার কাছে অনৈতিকতারই পরিচয়।
সৈকত ভাই আপনার জন্য শুভ কামনা রইল। 🙂
আমি এই পোষ্টের বক্তব্যের সাথে সম্পুর্ন একমত। বানিজ্যিক উদ্দেশেই যে এই দিবসটিকে ব্যাপক পরিচিতি পাইয়ে দিয়েছে তাতে সন্দেহের অবকাশ কম। তবে একে আরেকটু সম্প্রসারিত করে বড়দিন, ঈদ ইত্যাদিকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। ইউরোপে গত বড়দিনে অনেক বেসরকারী সংস্থাকে দেখেছি বড়দিনের বানিজ্যিকিকরনের বিরুদ্ধে কথা বলতে। তারা ভোক্তাদের অর্থনীতির এই দুর্দিনে যথা সম্ভব উপঢোকনের বাহুল্য বর্জন করে বড়দিনে খৃষ্টের সত্যিকার ভালোবাসার আন্তরিকতার আদর্শের দিকে আহবান জানিয়েছে। কিন্তু যথারীতি বেশীরভাগ ক্রেতাই তা উপেক্ষা করেছেন। তবে আমরা আশা রাখি এই আহবান একদিন উপেক্ষিত রবেনা।
তবে একটি জিজ্ঞাসাঃ
এই পরিমানগত বৃদ্ধিতে ইনফ্লেশনকে বিবেচনায় আনা হয়েছে কিনা? ইনফ্লেশন বিবেচনায় আনলে সম্ভবত বৃদ্ধির পরিমানে তারতম্য হতে পারে (যেমন আভাতারের বানিজ্যিক সাফল্য আপাত দৃষ্টিতে টাইটানিকের চেয়ে বেশী হলেও, ইনফ্লেশন ও থ্রীডি টিকিটের বাড়তি মুল্য বিবেচনা করলে এখোনো টাইটানিক অগ্রগামী)।
@শামীম,
দুঃখিত আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না। জানা মাত্রই জানতে পারবেন।
আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
শুভ কামনা।
লেখাটা ভালো হয়েছে। তবে পুরোপুরি একমত নই। পুঁজিবাদের খুব স্বাভাবিক পরিণতি এসব। এসব দিবসকে ফালতু ঘোষণা দিয়ে বর্জন করেও লাভ নেই। দিনটিতে ভালোবাসা নিয়ে আদিখ্যেতা হয় ঠিকই,কিন্তু খারাপ কিছু তো হয় না! দেশে শিবিরের তাণ্ডবের মাঝেও পয়লা ফাগুন বকুলতলায় উৎসব হয়েছে,পরদিন ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র মাতামাতি হয়েছে। এসব আসলে রবিঠাকুরের সেই গানটাকেই সত্য প্রমাণিত করে,
“আছে দুঃখ,আছে মৃত্যু, বিরহ-দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।”
আপনিই বলুন আপনি কি অভুক্ত লোকগুলোর শোকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেবেন? আমরা সবাই কি সাধ্য অনুযায়ী বিলাসী নই? দারিদ্র্যের নির্মম চেহারা দেখে বহুবার খেতে রুচি হয় নি। কিন্তু কি করতে পেরেছি?
সত্যি বলতে দরিদ্র দেশে যে কোন উৎসবই অর্থের অপচয়। কিন্তু এভাবে ভাবাটা কি বাস্তবসম্মত? বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডে-নাইট ম্যাচ বিদ্যুতের বিশাল অপচয়। কিন্তু তা বন্ধ করলে ব্যবসা লাটে উঠবে। কাজেই মাথা ঠান্ডা করুন এবং চলুন সবাই মিলে দারিদ্র্য দূর করার উপায় খুঁজি। ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ র আদিখ্যেতাকে স্রেফ উপেক্ষা করুন। 🙂
@আগন্তুক,
আসলে আমরা এতটাই ভোগবিলাসে মত্ত হয়ে অন্ধ হয়ে গেছি যে হাজার বল্লেও এসব আজাইরা দিবস যাবে না। এসব বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল বিদ্রোহ। এসব বিলাসী জীবন ত্যাগ করে আর দশজনকে বলা।
@আগন্তুক, সম্পুর্ন সহমত ভাইয়া।
ভালো দিকটা রেখে, মন্দটা বর্জন করাই ভালো।
সব উৎসবেই বাজে খরচ হয়। তাই বলেতো আর উৎসব থেমে থাকবে না।
আর কর্পোরেট বানিজ্যকেও এই বিশ্বায়নের যুগে অস্বীকার করার উপায় নেই, লালন উৎসবে পর্যন্ত কর্পোরেট দল চলে গেছে। ওদের কাজই ব্যবসা করা, ওরা মানুষের আবেগ নিয়ে ব্যবসা করে। আমরাও আমাদের আবেগ বেচে দেই। যেমন কদিন আগে যে লাক্স সুন্দরী গেল, ঐটা নিয়ে তো কম আলোচনা হয়নি!! মেয়েরাই উলটা মেয়েদের বিকিয়ে দিচ্ছে!! ছেলেরা এটা নিয়ে প্রতিবাদ করলে উলটা মেয়েরা ছেলেদের ঝাড়ি দিচ্ছে!!
উৎসবটা থাকুক, কিন্তু ব্যবসাটা চলে যাক। এইটাই শুধু বলব।
@আগন্তুক,
আগন্তুক দা আমি আপনার কথাটা ঠিক বুঝি নাই।
” এসব দিবসকে ফালতু ঘোষণা দিয়ে বর্জন করেও লাভ নেই। দিনটিতে ভালোবাসা নিয়ে আদিখ্যেতা হয় ঠিকই,কিন্তু খারাপ কিছু তো হয় না! ”
অমানবিক কিংবা অনৈতিক কোন কাজকে যদি আমরা খারাপ বলি তাহলে ভালবাসা দিবসের মতন দিবস পালন অবশ্যই খারাপ।
আমি দিবস পালনকে জোড় করে নিষিদ্ধ করতে বলিনি। বলেছি এগুলো পালন শুধুমাত্র অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি আমি যখন এই ব্যাপারটা বুঝতে পারব তখন এই দিবসকে শুধুমাত্র ইতিহাসেই পাওয়া যাবে।
” ভ্যালেন্টাইন’স ডে’ র আদিখ্যেতাকে স্রেফ উপেক্ষা করুন।”
আমি কিন্তু ঠিক এই কথাটাই আমার লেখায় বলতে চেয়েছি। 🙂
অনেক ধন্যবাদ আগুন্তুকদা মন্তব্যের জন্য।
@সাইফুল ইসলাম,
ভাইরে কথা কেমনে বুঝাই!
ভালোবাসা দিবস অমানবিকও নয় অনৈতিকও নয়। এভাবে বলতে গেলে আমরা যে প্রায়ই ভালো-মন্দ খাই পরি, সেটাও অনৈতিক। এই যে ব্লগিং করছি এটাও অমানবিক। দামী দামী বই কিনি সেটাও অনুচিত। কারণ এগুলোর কোনটাই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সাধ্যের ভেতর নেই। পেটে ভাত না থাকলে কাব্য-সঙ্গীতও বিলাসীতা।
ভালোবাসা দিবসের চেয়ে ঢের অমানবিক ঈদ ও পূজো। ওগুলো বন্ধ করতে পারবেন? আমার দাদা বলে পুজোতে অনেক গরীব মানুষ প্রসাদ পায় – এটা নাকি ভালো দিক। দাদা দেখেনি যে মানুষের টাকায় কিভাবে পূজারী আর মহারাজরা বিলাসের সাগরে ভেসে বেড়ান। রামকৃষ্ণ মিশনের মন্দিরের চূড়ায় ২ কোটি টাকা দামের সোনা বসানো হয়েছে। এর উপযোগিতা কি? বায়তুল মুকাররমের পেছনে কত খরচ?
অত কথায় কাজ কি? তাজমহলটাই কি একটা মস্ত অপচয় নয়? আদিখ্যেতা নিয়ে সমালোচনা করুন। কিন্তু ভালোবাসা দিবস পালন মোটেও অমানবিক বা অনৈতিক কোন ব্যাপার নয়। আমি জানি না আপনি আমার চেয়ে বয়সে বড় না ছোট। খুবই ভাল লেখেন। কবি – তাই হয়তো অতি মাত্রায় আবেগতাড়িত। আমার মত প্রতিনিয়ত ঘাতকের সাথে বসবাস করলে আরও বাস্তবসম্মতভাবে চিন্তা করতে শিখবেন। আপনার ভালো হোক।
আগন্তুকের মন্তব্যের সাথে মোটামুটি একমত। এভাবে দেখতে গেলে অনেক কিছুই বাদ দিয়ে দিতে হবে। আবার সাইফুল ভাইও কিছু খুব কঠিন যুক্তি দিয়েছেন। তাই আমি সুবিধাবাদি অবস্থানে থেকে(!) বলি, আসলে দরকার একটা “ব্যালেন্স”, জীবনের সব ক্ষেত্রে ব্যালেন্স খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষের রুচি বোধহয় এখানে নির্নায়ক ভুমিকায় । কিন্তু রুচির পরিবর্তন, সমালোচনার প্রভাবে খুব একটা ঘটেনা , যতনা ঘটে উন্নততর সংস্কৃতির [আপেক্ষিতা বিবেচ্য!] চর্চার মাধ্যমে ।
আমরা নিজেদের যতই হুজুগে বলিনা কেন, এই সংস্কৃতির বিক্ল্প কোনো ধারার অভাব এখনো প্রকট । এছাড়া, এইসব দিবসের অর্থনৈতিক উপযোগীতা এক্কেবারে Dis-economy র আওতায় পরে না। আর সামাজিক উপযোগীতার কথায়, আমি আতিক রাঢ়ীর সংগে ১০০ ভাগ একমত । তাই “ভালোবাসা দিবস” এই যুদ্ধের পৃথিবীতে অমর না হোক, দীর্ঘজীবি হবার কামনা, আমারো ।
প্রথম লেখার জন্য ( কবিতা ছাড়া) অভিনন্দন, সাইফুল ইসলাম। :rose2:
কোন কিছুই শুধু ভাল বা শুধু খারাপ হতে পারেনা। আপনার কথার সাথে একমত আবার সালাম সাহেবের কথার মধ্যেও ভাবনার খোরাক পাচ্ছি। আসলে সালাম সাহেব যেভাবে পুরো ব্যাপারটাকে দেখছেন সেভাবে আগে ভাবিনি। ইন্টারেশটিং। আমদেরমত বদ্ধ সমাজে এর এক ধরনের ইতিবাচক উপযোগীতা আছে বলেই মনে হচ্ছে। আমার অবস্থান পিংপং বলের মত লাফাচ্ছে। দেখি আরো মন্তব্য আসার পরে কোথায় গিয়ে স্থির হয়। চিন্তায় যারা কাঁপন তোলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
যে যত কথাই বলুক না কেন ভ্যলেনটাইন ডে যে দিনে দিনে ভালোবাসা দিবসে বিবর্তিত হয়ে গেছে তা বলাই বাহুল্য।
আসলে আমাদের বদ্ধসমাজে প্রেম ভালোবাসা একটা অসামাজিক ও ইসলাম বিরোধী ব্যাপার। এই দিবসটা ইসলাম বিরোধী বলে সৌদি আরবে দেখেছি ইসলামী পুলিশ লাল হৃদয় আকাঁ সব ভ্যলেনটাইন ডে’র কার্ড ও ফুল বিক্রি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।
পাকিস্তানে মৌলবাদী জামাত-ই- ইসলামী সৌদিকে অনুসরন করে এটা বেন করেছে।
ভারতের হিন্দু মৌলবাদী শিবসেনা সহ সমমনারাও এর তীব্র বিরোধী।
বাংলাদেশের ধর্মীয় মৌলবাদী ও রক্ষণশীলরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
কিন্তু,এখন দেখা যাচ্ছে ভালোবাসা দিবস পুবের দেশের প্রগতিশীল মানুষের কাছে আরও এক কারণে ফালতুঃ সীমাহীন টাকার আপচয়!
ভাই সাইফুল ইসলাম, ভালোবাসার দিনটা কি আর্তমানবতার সেবার জন্যে, মানব কল্যানের জন্যে অর্থ সঞ্চয় বা অর্থ খরচের পথে বাধাঁ?
বলুন,
মানুষকে ভালো না বেসে মানুসষের সেবা কে কারে করেছে কে কবে?!
আর ব্যবসায়ীরা বড় বড় কোন দিবসটায় তারা টাকা বানায় না? এজন্যেইতো,
অনেক মানবপ্রেমিক গুণীজন বলেন,ব্যবসায়ীরা সভ্যতার পতন ঘটায়।
তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটাও একমাত্র মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা দিয়েই ঠেকানো সম্ভব!
তাই আমি বলতে চাইবো, আজকের ”ভালোবাসা দিবস” এই যুদ্ধের পৃথিবীতে অমর হোক।
ধন্যবাদ!
সালাম
@সালাম,
আপনার জবাবটা আমি সন্ধায় এসে দিব। একটু দৌড়ের উপরে আছি। 😀
@সালাম,
” ভালোবাসার দিনটা কি আর্তমানবতার সেবার জন্যে, মানব কল্যানের জন্যে অর্থ সঞ্চয় বা অর্থ খরচের পথে বাধাঁ?”
অবশ্যই বাধা। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে।
“বলুন,
মানুষকে ভালো না বেসে মানুসষের সেবা কে কারে করেছে কে কবে?”
করেনি। কিন্তু ভালবাসা দিবসে ভালবাসা নিয়ে খেলাখেলি করে
সমাজের গরীব দুঃখী মানুষের জন্য কে কবে কি করেছেন একটু জানাবেন ? বান্ধবিকে ফুল কিনে দেয়ার জন্য বাবার পকেট কেটে টাকা অনেক ছেলেরাই মারে কিন্তু একটা গরীব ছেলের গায়ের জামা কিনে দেয়ার জন্য টাকা চুরির ঘটনা কেউ কখনও শুনেছে?
আপনি শুনেছেন?
ভালবাসা দিবসে ভালবাসাবাসির নিট ফলাফল একটা বিরাট গোল্লা। এই দিবসের ভালবাসা কার জন্য? মায়ের জন্য ছেলের? ছেলের জন্য মায়ের? প্রেমিকের জন্য প্রেমিকার, প্রেমিকার জন্য প্রেমিকের? গরীব দঃখী মানুষের জন্য বিত্ত বানের? আপনিই আমাকে বলুন এই ভালবাসার জন্য যদি একটি আলাদা দিবসই ঘোষনা করা হয় তাহলে আজও কেন সমাজে এত দারিদ্রতা? কেন সোমালিয়ার, ইথিওপিয়ার মানুষের কখন জাতিসঙ্ঘের খাবার আসবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়?
মানুষকে ভালবাসার মন্ত্রে উজ্জীবিত করার জন্য যদি একটি গোটা দিবসই পালন করতে হয় তাহলে বলুন কেন “গরীবের জন্য কিছু কর” টাইপের কোন দিবস নেই?
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
সাইফুল ইসলাম ভাই,
আপনার ক্ষোভ ও আবেগকে সন্মান করে
আমি আপনার প্রথম উত্তরের সাথে দ্বিমত পোষণ করছি।
আর দ্বিতীয় উত্তরটা ”করেনি” দিয়েছেন কোন দুঃখে?
কিন্তু’র পর এত প্রলাপ কেনো ভাই!
চিন্তা করি, আপনি কেনো বিষয়টা শুধু একচোখে দেখতেছেন!
চিন্তা করি,আপনি কেনো কী বলতে কী বলতেছেন!
তবু
কবি আপনাকে ভালোবাসা দিবসের অনেক শুভেচ্ছা!!!
@সালাম,
সালাম ভাই আসল কথা হল সবাই সব ব্যাপারে একমত হতে হবে এমন কোন কথা নাই। আপনি যদি ভালবাসা দিবসে ভালবাসা আদান প্রদান করে শান্তি পান তাতে করে আমার কোন ক্ষতি নাই। আমি শুধু বলেছি এইটাকা গুলো ব্যয় করাটা অর্থহীন নয় কি? তার চেয়ে এগুলো কি অন্যকোন ফলপ্রসু কাজে ব্যয় করাটাই কার্যকর না?
আবারও ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
শুভ কামনা রইল।
সাইফুলে সাহেব অবশেষে হাইবারনেশন থেকে বেরিয়ে এসেছেন, একেবারে জম্পেশ একটা লেখা নিয়ে হাজির হয়েছেন।
এই লেখার সাথে কিভাবে যে একমত হওয়া না যায় তা দেখার বিষয় হতে পারে।
এখন আর শুধু পুজিবাদী বিশ্বই নয়, সারা দুনিয়াকেই অত্যন্ত সফলভাবে ভোগবাদ গেলানো হয়েছে। করোপরেট বিশ্ব কি দারুনভাবে হুজুগ তুলে মানুষের মাথা খেতে পারে। নানান রকমের দিবস; ক্রীসমাস, ফাদার্স ডে, মার্দাস ডে এসবের সাথে অতি অবধারিতভাবে গীফট। যে বাবা মাকে সারা বছর চোখেও দেখে না তার জন্য বিশেষ ডে তে গীফট পাঠানোর উদার পরামর্শ।
তবে আমার মনে হয় শুধু এসব দিবস নয়; বিজ্ঞানের অতি অগ্রগতিও কাজে লাগিয়ে কিছু মানুষে চমতকার উপায়ে সাধারন মানুষের পকেট কাটতে পারছে খুবই সহজে। সাধারন মানুষেও হাসি মুখেই তাতে ধরা দিচ্ছে। সেল ফোনের কথাই ধরেন না। এত হরেক রকম নিত্য নুতন মডেল ফীচার। দুদিন পর পরই আপনাকে নুতন মডেল কিনতে অনেকটা বাধ্য করা হবে, নইলে যাতে ওঠা যাবে না। এমনও লোক দেখেছি যিনি দুই বছরে ১২টা ফোন কিনেছেন। আমেরিকানদের গাড়ি প্রীতির কথা তো বলাঈ বাহুল্য। অনেক আমেরিকানে আমি একটা শার্ট যতদিন পরি তার কম সময়ে গাড়ি বদল করে। আসলে পরিবেশটাই এমন বানানো হয়ছে যে বদলাতে হয়, নইলে মনে হয় মান থাকে না।
ভ্যালেন্টাইন্স ডের কথা আমি প্রথম শুনি বেশীদিন আগে নয়, ৯৫ সালে। হঠাত করে শুনলাম ভালবাসা দিবস নামে একখানা দিবস পালন করতে হবে নইলে প্রিয়জনের প্রতি ভালবাসা ঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় না। ব্যাপারটা একটু অদ্ভূত আর বিশেষ করে পাশ্চাত্য বিশ্বের নগ্ন অনুসরন ঠেকায় কোনদিনই এই দিবস পালন করা হয়নি। আমার কোন দিবসই পালন করতে আপত্তি নেই। তবে অর্থহীন হুজুগ খুবই বিরক্তিকর লাগে। পৃথিবীতে তো করার আরো কত কিছু আছে।
তবে বলপূর্বক কোন দিবস পালনে বাধা প্রদানও কেমন যেন পাগলামী ঠেকে। সৌদী আরবে তাই ঘটে মনে হয় প্রতি বছর।
এখানে দেখতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
“তবে বলপূর্বক কোন দিবস পালনে বাধা প্রদানও কেমন যেন পাগলামী ঠেকে। সৌদী আরবে তাই ঘটে মনে হয় প্রতি বছর।”
এটা আসলে জোড়ের ব্যাপার না। আপনি আমি যখন ফালতু দিবস গুলোর অসারতা বুঝব তখন এম্নিতেই এইগুলো ইতিহাস হয়ে যাবে।
জোড় জিনিসটা আমারও পছন্দ না তাতে করে আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।
” আমার কোন দিবসই পালন করতে আপত্তি নেই।”
আপনি মনে হয় আমার কথাটা ধরতে পারেন নি।
আপনার এই কথাটা আমি মানতে পারতাম যদি সবার এই দিবসগুলো পালন করার সামর্থ থাকত। বিরাট সংখ্যক মানুষ যেখানে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে সেখানে আপনি আমি কিভাবে এই প্রয়োজনহীন অপচয়গুলো করি?
তবে আপনার মত মানুষ যদি আমাদের সমাজে বেশি বেশি থাকত তাহলে কোন সমস্যা হত না। আমাদের দুর্ভাগ্য তা হয়নি।
ধন্যবাদ আদিল ভাই মন্তব্যের জন্য।
@সাইফুল ইসলাম,
আপনি দিবস পালনের বিরোধী তা আমি লিনি বা দাবী করিনি। আমি আপনার মত বুঝতে পেরেছি।
আসলে কোন দিবস পালনেই কোন সমস্যা নেই, থাকতে পারে না। তাহলে তো মানুষের জীবনে বিনোদনময় কোন দিবস থাকতে পারে না। এগুলির দরকার অবশ্যই আছে। সাথে সাথে গুরুত্বপূর্ন হল এগুলির নামে ব্যাপক উন্নাসিকতা রোধ করতে হবে।
এইখানেই বাধে গোল। এটা আসলে অনেকটা আপেক্ষিকতার ব্যাপার। আমার আপনার কাছে যা বাজে খরচ বা অপচয় অপরের কাছে হয়ত তা নয়। আমি আপনি ভ্যালেন্টাইন ডের বাজে খরচ দেখালে পালনকারী হয়ত দেখিয়ে দেবে আমরা নিজেরাও অন্য দিকে কত বাজে খরচ করছি, তখন কোথায় থাকে আমাদের বড় বড় কথা, গরীব প্রীতি? আসলে অপচয় বা বাজে খরচের কোন ধরাবাধা তালিকা নেই। আমাদের মানব জীবনের একটা সীমাবদ্ধতা এটা বলেই আমার সবসময় মনে হয়। আমরা অধিকাংশই বুঝতে পারি না আমাদের মাত্রা কোথায়।
মহিলাদের বেশ কিছু ব্যাপার স্যাপার আছে (আশা করি কোন মহিলা পড়ছেন না) দেখলে সারা জীবনই আমার কেমন কেমন লাগে। এক খানা ঠোট রক্তিম করার লিপষ্টিকের মূল্য ৩০ ডলার এটা কিভাবে মানা যায়? পুরুষরাও তেমনি অনেকের ব্র্যান্ডের শার্ট পরতে হয়, মানে হল স্রেফ একখানা তীর মার্কা জাতীয় কিছু লাগিয়ে দিলে একই শার্টের দাম তিন ডবল। কোন মানে হয়? কে কাকে বোঝাবে? কেই বা ঠিক কেই বা বেঠিক?
সুখের কথা, আমাদের দেশে এখনো ভাষা দিবস বা স্বাধীনতা দিবস এসব নিয়ে ব্যাপক বানিজ্যিকিকরন শুরু হয়নি। তবে কোনদিন শুরু হবে না এমনটাও বলা যায় না।
সাইফুল শুধু ভাল কবিতাই লেখে না, এই লেখাটা থেকে বুঝলাম তার গদ্যের হাতও দুর্দান্ত। ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে এমন ভিন্নধর্মী প্রবন্ধ উপহার দেয়ার জন্য সাইফুলকে ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎদা। 🙂
@অভিজিৎ,
সাইফুলের গদ্য-পদ্যের হাত যে ভাল, সে ব্যাপারে দুর্জন কারো কারো হয়তো ক্ষীণ সন্দেহ থাকলেও থাকতে পারে। তবে বানানের হাত যে খুবই খারাপ সে ব্যাপারে মনে হয় না সুজন-দুর্জন কারোরই কোন সন্দেহ আছে।
@ফরিদ আহমেদ,
পুরোদমে চেষ্টা চালাচ্ছি ঠিক রাখার জন্য। 😀
ধন্যবাদ ফরিদ ভাইকে।
আপনার পোষ্টের সাথে পুরো একমত । আমরা জাতি হিসেবে খানিকটা ‘হুজুগে’ ও আছি । বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস নিয়ে এই লাফালাফি সত্যি হাস্যকর লাগে । আর মিডিয়াগুলোর কথা যত কম বলা যায় ততই ভালো । এদের কাণ্ড কারখানা দেখে হাসব নাকি কাঁদব মাঝে-মধ্যে বোঝে উঠতে পারি না !
@নন্দিনী,
আসলেই তাই। সহজ সরল পেয়ে আমাদের গরীব মানুষ গুলোকে চুষে শেষ করছে পুজিবাদীরা।
আপনার সাথে ভীষণভাবে একমত প্রকাশ না করে পারছিনা। ধন্যবাদ আজকের দিনে এরকম একটা লেখা উপহার দেওয়ার জন্য। এই পুরো ব্যাপারটাই পুঁজিবাদের বেনিয়াবাজীর এক চূড়ান্ত প্রমাণ। সব কিছুই যে কিভাবে পণ্যে পরিণত করে ফেলা যায়, এই ভ্যালেন্টাইন ডের বাজারজাতকরণের ইতিহাস থেকে বোঝা যায়।
@বন্যা আহমেদ,
বন্যা আপা চিন্তা করতে পারবেন না আমাদের দেশের গরীব মানুষগুলোর মাথা কিভাবে এই পচা মিডিয়া নষ্ট করে দিচ্ছে। এরা দরকার হলে একমুঠো ভাত কম খাবে কিন্তু হাতে মোবাইলটা থাকতেই হবে, এই সব ফালতু দিবসে ঘুরতে বের হতে হবে।কিভাবে এদের কষ্টার্জিত টাকাগুলো মেরে দেয়া হচ্ছে। ওরা বুঝতেও পারছে না।
এই সব কথা ভাবলে মাথাটা ঘুরে ওঠে।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য বন্যাপা।
সাইফুল ইসলাম,
একমত। :yes: :yes:
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
ধন্যবাদ মামুন ভাই মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকবেন।