দৈনিক সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত ‘যুক্তি’ ম্যাগাজিন(সংখ্যা ৩)-এর রিভিউ এখানে তুলে দেয়া হল। লিংক
শনিবার | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ১ ফাল্গুন ১৪১৬
বিজ্ঞান প্রকাশনায় বিবর্তনবাদ
ব্রিটিশ লেখক ম্যাথু আর্নল্ড বলেছিলেন, ‘এক যুগের মুক্তচিন্তা আরেক যুগে কাণ্ডজ্ঞান বা সাধারণজ্ঞানে পরিণত হয়।’ ব্রিটিশ চিন্তক স্যামুয়েল জনসন বলেন, ‘প্রতিটি যুগেই নতুন নতুন ভুল দেখা যায়, আর দেখা যায় নতুন নতুন সংস্কার।’ ‘গোরা’ উপন্যাসে রবীন্দ্রনাথ উল্লেখ করেন, ‘মতকে মত দিয়ে, যুক্তিকে যুক্তি দিয়ে বাধা দেওয়া চলে, কিন্তু বুদ্ধির বিষয়কে ক্রোধ দিয়ে দমন করা বর্বরতা।’ অপরদিকে কথাসাহিত্যিক আবুল বাশারের মতে, ‘যুক্তির জোরেই মুক্তির আলো। সেই আলো মানুষকেই জ্বালাতে হয়।’ তেমনই একজন মুক্তচেতনায় ঋদ্ধ, প্রগতিশীল যুক্তিবাদী সাহসী মানুষ অনন্ত বিজয় দাশ। তার সম্পাদনায় ‘যুক্তি’ পত্রিকাটি অনন্যসাধারণ এক শানিত যুক্তি ও মুক্তচেতনার পথে এক প্রয়াস। ডারউইনের জন্মের দ্বিশত বার্ষিকীতে বের হওয়া যুক্তির বিশেষ সংখ্যার সম্পাদকীয়তে সম্পাদক তার চেতনাগত স্বপ্ন, লক্ষ্য ও দর্শন স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছেন, ‘আমরা চাই চিন্তার চর্চা ও প্রকাশের স্বাধীনতা। ঘটাতে চাই মুক্তচিন্তার বিপ্লব; সাংস্কৃতিক বিপ্লব। আমাদের দর্শনে বিজ্ঞানমনস্কতা আর যুক্তিবাদিতা। অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার আর চিরাচরিত প্রথার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্যই মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান অন্তরায়। আরও মনে করি, এই প্রশ্নহীন, যুক্তিহীন বিশ্বাস আর সংস্কারাবদ্ধ জীবনাচরণ কাটিয়ে ওঠার একমাত্র পথ হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদের প্রসার।’ ‘যুক্তি’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয় সিলেট থেকে। এর সদ্য প্রকাশিত সংকলনটিতে (সংখ্যা ৩; জানুয়ারি ২০১০) আছে মুক্তচেতনাভিত্তিক নানা প্রবন্ধ। এবারের সংস্করণটি সাজানো হয়েছে মূলত চার্লস ডারউইন ও তার বিবর্তনবাদকে কেন্দ্র করে। যেমন : দ্বিজেন শর্মা লিখেছেন, ‘শেষ-অধিনায়ক : চার্লস ডারউইন; শহিদুল ইসলাম ‘বিবর্তনতত্ত্বের দর্শন; আসিফ ‘সুদূর অতীতে গেলে আমরা একই পূর্বপুরুষ দেখব; অভিজিৎ রায় ‘বিবর্তনের সহজ পাঠ’, বিরঞ্জন রায় ‘বিবর্তনতত্ত্ব গ্রহণে বাধা কোথায়; বন্যা আহমেদের রচনা ‘আর্ডি-আমাদের ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিল; দিগন্ত সরকারের রচনা ‘ডারউইন থেকে ডাবল হেলিক্স’; শিক্ষানবিসের রচনা ‘প্রসঙ্গ বিবর্তন’ : জাকির নায়েকের মিথ্যাচার’ ইত্যাকার লেখা বিবর্তনবাদকে পাঠকের কাছে সহজভাবে উপস্থাপন করেছে। আছে আমেরিকার উইসকন্সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান এবং বংশগতিবিদ্যার অধ্যাপক সন বি. ক্যারল ও ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক প্রবীর ঘোষের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ওপর দুটি সুদীর্ঘ সাক্ষাৎকার। অনুবাদিত হয়েছে চার্লস সুলি্লভান ও ক্যামেরন ম্যাকফেরসন স্মিথের ‘বিবর্তন নিয়ে চারটি ভ্রান্ত ধারণা ও ড্যান বার্কারের ‘ঈশ্বরবাদ খণ্ডন’ নামে অসাধারণ দুটি প্রবন্ধ। ২৩৩ পৃষ্ঠার এমন জ্ঞানগর্ভ সংকলনটি পাঠ করে পাঠকমাত্রই তাদের প্রচলিত নানা কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা থেকে মুক্তি পাবেন। মূল্য ১২০ টাকা। যোগাযোগ ০১৭১২৯৬৬৮১৩। এ রকম একটি পত্রিকার জন্য সম্পাদক অনন্ত বিজয় দাশকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
অনন্ত বিজয় দাশ যে কী দুর্দান্ত কাজটা করে যাচ্ছে তা ভাবলেই এই দুঃসহ কালেও মনটা ভালো হয়ে যায়, আমরা আশাবাদী হয়ে উঠি ! অনেক অনেক অভিনন্দন তাঁকে।
কোনভাবেই যুক্তি’র প্রথম সংখ্যাটা সংগ্রহ করতে পারিনি বলে একটা অতৃপ্তিবোধকে কোনভাবেই সরাতে পারিনা মন থেকে। অন্তর্জালে তা আছে জানি। কিন্তু ধরা যায় ছোঁয়া যায় এরকম একটা ম্যাগাজিন বুকের কাছে ধরে রাখার মজমাই আলাদা !
বইমেলায় আমি তো পরিচিতদেরকে ধরে ধরে নিয়ে যাই লিটল-ম্যাগাজিন চত্বরে ‘যুক্তি’ ধরিয়ে দেয়ার জন্য। আপনাদের যাদের সুযোগ আছে তারাও তা করতে পারেন। সমাজের ভালো, মানুষের ভালো চাইলে তা হয়তো আমাদের করা উচিত। এই ম্যাগাজিনগুলো আরো অনেক বেশি করে ছাপানোর মতো পরিবেশ তৈরি করায় আমাদের সমন্বিত সহায়তা থাকা দরকার বলে মনে করি।
:yes: