সংক্ষেপে, ঘটনাগুলো এভাবে ঘটেছে। গত বছর ১৩ই মার্চ ছাত্রলীগ-শিবিরের সংঘর্ষে খুন হয় রাবি-শিবিরের জি-এস শরীফুজ্জামান নোমানী। তখন রাবি’র বিজ্ঞান অনুষদের ডীন ও জামাত নেতা অধ্যাপক আবুল হাশেম কয়েকশ’ শিবির-সদস্যকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছিলেন ‘‘লাশের বদলে লাশ’’(‘‘অধ্যাপক’’ বটে!)। এরই জের ধরে ৮ই ফেব্রুয়ারী ২০১০-এ ভয়াবহ তাণ্ডবে শিবিরের দল খুন করেছে লীগকর্মী ফারুক হোসেনকে আর হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে আরো চারজনের। এবং এরই জের ধরে দেশজুড়ে শিবিরের মিছিল-মিটিং অফিস ও বাড়ীঘরের ওপরে সরকারের নির্দেশে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার অসংখ্য, আরো খুন, দেশে বয়ে যাচ্ছে সংঘাতের ঝড়। রাজশাহী-শিবিরের একাংশ ‘‘সেভ শিবির’’ নামে জামাতের আমীর নিজামীর কাছে দাবী করেছে, কেন্দ্রীয় নেতা প্রাক্তন মন্ত্রী মুজাহিদী ও রাবি’র প্রাক্তন শিবির সভাপতিত্রয় রফিকুল, বুলবুল ও রেজাউলই রাবি’র খুনের জন্য দায়ী। তারা সরকারের কাছেও দাবী করেছে সাধারণ শিবির-সদস্যদের ওপর অত্যাচার না করে ওই চারজনের মোবাইল জব্দ করে তদন্ত করতে।
আমরাও শিবির উচ্ছেদ চাই কিন্তু প্রতিপক্ষের সাময়িক পরাজয়ে উল্লাসের মতো কৈশোর-অ্যাডভেঞ্চারিজম্ এটা নয়, এটা হল একটা ধর্মভীরু জাতির ধীর ও বহুমাত্রিক ধর্মীয়-সামাজিক বিবর্তন। গ্রেপ্তারকৃত প্রায় সবাই ছাড়া পাবেই এবং শিগগীরই ছাড়া পাবে। এ সরকারও চিরদিন থাকবে না। তাহলে লাভ কি হল? এ সংঘর্ষের দুটো দিক খেয়াল করা দরকার। প্রথমতঃ, দেশে হরহামেশা খুন হয়, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের হাতেও হয়নি এমন নয় কিন্তু শিবিরের খুনের সাথে সেসবের আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। সন্ত্রাসী ছাত্রদল-ছাত্রলীগেরা মনে মনে ঠিকই জানে ওরা ক্রাইম করছে, পুলিশী বা আইনি শক্তিতে সেটা পরাস্ত করা সম্ভব। কিন্তু শিবিরের ড্রাইভিং ফোর্স হল ধর্মবিশ্বাস – ওদের উদ্দেশ্যসাধনের পথে যে কোনো বাধাকে যে কোনভাবে অপসারিত করা ওদের ইবাদত। তাই ওদের সন্ত্রাসকে ওরা ক্রাইম বলে মনেই করে না। এই ভয়ংকর মানসিকতাকে শুধুমাত্র দৈহিক শক্তিপ্রয়োগে উচ্ছেদ করা যায় না। দ্বিতিয়তঃ, যতদিন জামাত থাকবে ততদিন শিবির থাকবে এবং জামাত থাকবে ততদিন, যতদিন ইসলামের শান্িতময় ব্যাখ্যা দিয়ে মওদুদিবাদকে পরাজিত না যায়। জামাতের অপতত্ত্বের বিরুদ্ধে আইন ও পুলিশী শক্তিপ্রয়োগ দরকার কিন্তু তার আগে যদি ওদের অধর্মতত্ত্বকে পরাজিত না করা হয় তাহলে ওরা সাময়িক পরাজিত হলেও বারবার ফিরে আসবে।
ছাত্রলীগের সবাই যেমন ধোয়া তুলসিপাতা নয় তেমনি ওদেরও সবাই হিংস্র নয়, খুনী নয়। সাধারণভাবে ওদের সবাইকে হ্যানস্থা করলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী। সরকারের শক্তির পেছনে শুভদর্শন না থাকলে সেটা অপশক্তিতে পরিণত হয়। ওরা শিবির হয় কেন সেই ধর্মীয়-সামাজিক মেকানিজ্ম উপেক্ষা করে কোনদিনই এগোন যাবে না। শিবিরেরা বয়সে তরুণ। ওদের বিশ্বাস ওরা সেবা করছে ইসলামের, দেশ ও জাতির। কিন্তু ওরা জানেনা ওদের পথে চলে অন্যান্য জাতির কি সর্বনাশ হয়েছে। ওরা জানেনা জামাতি বইপত্রগুলো কোরাণ-রসুল-মানবতা-নারী ও ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে কি ভয়াবহ ঠকবাজীতে ভরা, জানেনা কিভাবে অতিত-বর্তমানের মৌদুদি গং কোরাণ-রসুলের অপব্যখ্যা করেছে, কিভাবে ইসলামের ওই বিকৃত ও বিক্রীত রূপ প্ল্যান করে ওদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। দলিল-প্রমাণ দিয়ে এসব না জানানো পর্য্যন্ত নুতন নুতন শিবির হতেই থাকবে।
আমার সঙ্গে থাকুন।
আমাকে সঙ্গে রাখুন।
১৩ ফেব্রুয়ারী ৪০ মুক্তিসন (২০১০)
[email protected]
এর কি কোন সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স আছে?
Jonokontho – 10 February.
আগন্তুক, Please email me – [email protected]
জামাত-শিবিরের প্রতি সহানুভুতির প্রশ্নই আসে না। কিন্তু ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের কামড় খেতে হয় এটা ইতিহাসেরই শিক্ষা। মিসরে, আলজিরিয়ায়, টার্কি ইত্যাদি দেশেও সরকারী শক্তিপ্রয়োগে ওদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা হয়েছইল। ফলে কি হয়েছে? কোনই লাভ হয়নি – ভিন্ন নামে-রূপে আবার ফিরে এসেছে ওরা। কারণ কোরাণ-রসুল-মানবতার সাথে ওদের ধর্মবিশ্বাস কোথায় কোথায় কতটা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সে দলিলগুলো সম্পর্কে জাতিকে সচেতন করা হয়নি। যেসব দেশে তা হয়েছে সেখানে পুলিশী শক্তির দরকার হয়নি, জনগণই ওদের উচ্ছেদ করেছে যেমন তাতারস্থান ইত্যাদি। এই উদাহরণ থেকে কি আমরা কোনই শিক্ষা নেব না ?
আমাদের সমস্যাসংকুল ষড়যন্ত্রময় গরীব দেশ – কোন সরকারই বেশীদিন ক্ষমতায় থাকবে না। আবার ওরা ক্ষমতায় এলে যে হিংস্রতা করবে তা অতিতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। সেজন্যই, ব্যাপারটা যখন শুরু হয়েছে তখন এখনই ওদের উচ্ছেদ করা গত যে কোন সময়ের চেয়ে বেশী দরকার। অথচ সরকারের পদক্ষেপ অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী – এ ব্যাপারে সরকারের দিকনির্দেশনা, চুড়ান্ত লক্ষ্য এবং সেখানে পৌঁছবার রোডম্যাপ নেই। ফলে আমাদের যতই ইচ্ছে হোক, যা-ই আমরা বলি না কেন শিবিরের ওপর কিছুদিন অত্যাচার হবে, এর বেশী কিছুই নয়।
@হাসান মাহমুদ (ফতেমোল্লা),
আপনার কথা নৈরাশ্যজনক হলেও সত্যি, নির্মম সত্যি।
অত্যন্ত বিচক্ষণ প্রবন্ধ। এ ভাবে শিবির-দলন সম্ভব নয়। আগে সর্ষে থেকে ভূত তাড়াতে হবে। শিবিরকে সত্যিই থামাতে হলে ‘রেটিনা’ নামের কোচিংটি নিষিদ্ধ করতে হবে। এই রেটিনা প্রতি বছর প্রায় ৭০ লাখ টাকা লাভ করে যা অস্ত্র কেনায় ব্যয় হয়। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে অনেক ধর্মান্ধ আওয়ামি লীগারেরও সমস্যা রয়েছে। আন্তর্জাতিক গণহত্যা আইনে গোলাম আযম, নিজামি, মুজাহিদদের ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলাতে হবে কিংবা ফায়ারিং স্কোয়াডে গুলি করতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিসের রহস্যজনক ভূমিকার মূলে রয়েছে ঘুষ। অভিযুক্ত অফিসারদের চাকরী থেকে বহিষ্কার এবং জেল-জরিমানা করা প্রয়োজন। যে পুলিসটি আশ্রয় নেয়া ছাত্রটিকে পা ঝেড়ে ফেলে দেয় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়া উচিত। কিন্তু এসব হবে না। কাজেই এই বালাই থেকে নিস্তার নেই!
লেখক নোমানীকে ‘খুন’ করার কথা লিখেছেন। আপনি কি জানেন সেদিন নোমানী তলোয়ার হাতে খুন করতে গিয়েই খুন হয়? আপনি কি জানেন সেদিন শিবির মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও হানা দিয়েছিল? আপনি কি জানেন সেদিন স্বাধীন বাংলায় আত্মরক্ষা করার জন্য আমরা মেডিকেলের আহত ছাত্রদের নিয়ে পাঁচটি গ্রাম পাড়ি দিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছিলাম? যদি শিবির সন্ত্রাসীদের থেকে বাঁচতে গিয়ে পালটা আঘাত হানার ফলে কেউ নিহত হয় এবং সেটাকে যদি খুন বলা হয়, তবে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারাও খুনী বনে যান। ফারুক-বকর-মহিউদ্দীনের হত্যাকাণ্ড আর নোমানীর নিহত হবার ঘটনা এক নয়। চোখের সামনে নাঙ্গা তরবারী উদ্যত দেখলে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ সব কিছুই করে। সেদিন শিবির পরিকল্পিতভাবে প্রথমে মেডিকেলে এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা চালায়। রাজশাহী সেদিন ছিল রণক্ষেত্র। কিন্তু বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগায় মিডিয়া এ ব্যাপারে কম গুরুত্ব দেয়। মেডিকেলে সেদিন শিবির কোণঠাসা হয়ে পড়াতে পুলিস বর্বর আক্রমণ চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ ছাত্রদেরও মারাত্মকভাবে আহত করে। তাদের মধ্যে একজন এ,এস,পি-র ছেলেও ছিল। সেই ন্যাক্কারজনক ঘটনার হোতা ওসি আনিসুর এবং এসি হুমায়ুন। ওসি আনিসুর ৯৬ এ আওয়ামি লীগ আমলে চাকরি হারায়। আবার তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিমই টাকা খেয়ে তাকে দায়িত্বে বসায়। পুলিসের একটা বড় অংশই শিবিরকর্মী ছিল। সেদিন আমাদের এক বড় ভাই রেহাই পান ঠিক এভাবে -“দাড়ি আছে। তার মানে এই ভাই শিবির করে। একে ছেড়ে দে।” আমি রেহাই পেয়েছিলাম ছ ইঞ্চির জন্য!
আমাদের হাতে অস্ত্র তোলাও নিষেধ। আবার এদের বিচারও এভাবে সম্ভব নয়। তাই চলুন আমরা সবাই শাড়ি পড়ে আঙুল চুষি!
@আগন্তুক,
রাজশাহীতে ঝামেলার পর পরই বন্যা আর আমি দুজনেই তোমার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেম। না পেয়ে ব্লগেও মন্তব্য করেছিলাম রাহাত খানের পোস্টে। দেখো – এখানে এবং এখানে
তুমি ঠিক ঠাক আছ, এটাই আমাদের জন্য পরম স্বস্তির। ভালো থেকো।
@অভিদা,
ক’দিন ঠিক থাকবো জানি না। শিবির ফার্স্ট ইয়ারেই আমাকে খুন করে আমার নামে গ্যালারী করার ঘোষণা দিয়েছিল। আজ খবর পেলাম হিটলিস্টে আছি। এ যুগে তো আত্মরক্ষার্থে অস্ত্র-ধারণও পাপ। তাই নিরস্ত্র অবস্থায় আক্রান্ত হবার অপেক্ষা করছি। যেকোন সময় যেকোন কিছু হতে পারে। তাই লিখে যাচ্ছি।
মনে হয় এই যে “অধিকারের” প্রশ্ন মনে জাগে তার নামই রাজনীতি।ব্যক্তি যেহেতু সমাজ ও রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন নয় বা থাকতে পারে না তখন সে নিজের শ্রেনী অবস্হান অনুযায়ী শোষিত হয় বা শোষন করে।শ্রেনীবৈষম্য সমাজ মানেই তো এক শ্রেনী থেকে আরেক শ্রেনীতে অথর্নীতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এক আকাশের মতো বিশাল ভেদাভেদ যা আমাদের দেশ থেকে শুরু করে মানুষের সব সমাজে বিদ্যমান।তাই নিরাপদ আমরা যারযার অবস্হান কেউ নই।নিরাপদ যেহেতু আমরা কেউ নই তাই সুষ্ট ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সারাক্ষন ভাবায়।আর এই ভাবনার নাম-ই আমার কাছে মনে হয় রাজনীতি।
রাজনীতি খুব একটা বুঝিনা, শুধু নিরাপদে ভার্সিটি থেকে ভালো ফলাফল করে বের হতে চাই। সাধারণ ছাত্রদের কথা ভাবার মত কেও আছে কি? অনেক স্বপ্ন নিয়ে লেখাপড়া করছি, আমার স্বপ্ন নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার কারও নেই।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
আমার স্বপ্ন নিয়ে ছেলেখেলা করার অধিকার কারও নেই।
মনে হয় এই যে “অধিকারের” প্রশ্ন মনে জাগে তার নামই রাজনীতি।ব্যক্তি যেহেতু সমাজ ও রাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন নয় বা থাকতে পারে না তখন সে নিজের শ্রেনী অবস্হান অনুযায়ী শোষিত হয় বা শোষন করে।শ্রেনীবৈষম্য সমাজ মানেই তো এক শ্রেনী থেকে আরেক শ্রেনীতে অথর্নীতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এক আকাশের মতো বিশাল ভেদাভেদ যা আমাদের দেশ থেকে শুরু করে মানুষের সব সমাজে বিদ্যমান।তাই নিরাপদ আমরা যারযার অবস্হান কেউ নই।নিরাপদ যেহেতু আমরা কেউ নই তাই সুষ্ট ও সবলভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সারাক্ষন ভাবায়।আর এই ভাবনার নাম-ই আমার কাছে মনে হয় রাজনীতি।
UA:A [1.4.6_730]
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
বলছিতো এতো কিছু বুঝিনা, শুধু চাই নিরাপদে ভালো ফলাফল করে বের হতে। আচ্ছা শোষনও করেনা, শোষিতও হয়না এমন অবস্থান কি নেই?
@রামগড়ুড়ের ছানা,
@রামগড়ুড়ের ছানা,
নারে ভাই, যত দিন মানুষের আমিত্ব যাবেনা, ততদিন শোষন শাষন চলবেই। আর আমিত্ব ছাড়া মানুষ!!! কল্পনার বাইরে !! সবাইরে গৌতম বুদ্ধ নাইলে মহাত্মা গান্ধী হয়া যাইতে হবে। আর সেটা তোমার আমার মত মানুষদের পক্ষে এত সহজ না।
আর সব রাজনৈতিক ব্যবস্থারই ত্রুটি আছে, কোনটাই চুড়ান্ত সমাধান দিতে পারে না। আবার রাজনীতি ছাড়া গঠনমূলক কাজ করারো অন্য কোন উপায়ও নেই।
@তানভী,
আমার একদম মনের কথা বলেছেন।
তবে আমিত্ব ছাড়া যে খুবই কশHটকর তা কিন্তু নয়। আমরা যদি একটু দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে চেশHটা করি তাহলে সম্ভব। তবে সেক্ষেত্রে অনেক কশHট স্বীকার, ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
@মুহাইমীন,
ভাই বলে ফেলেছি খুব সহজে, তাই আবার স্বীকারও করে নিয়েছি যে পারবো না। যদি মানুষ এতই অন্যের কথা ভাবতো ,তবে দুনিয়াতে মহাত্মা গান্ধী বা মার্টিন লুথার কিংদের সংখ্যা এত হাতে গোনা হত না।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
একশোভাগ একমত।
সমস্যা একটাই, এরা ভোল পাল্টাতে সময় নেয় না। যেই কাজই করতে চেষ্টা করা হবে এদের বিরুদ্ধে, তখনই এরা ভোল পালটে সাধারন মানুষের সাথে মিশে একাকার হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে যে এদের মারতে গিয়া ভালো মানুষ মারা যাচ্ছে।
জনাব হাসান মাহমুদ,
আমিও প্রায় একই রকম ভাবছি। তবে মনে হয় সরকারের উচিৎ সময় ক্ষেপন নাকরে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে বাহাত্তরের সংবিধানে এখনি ফিরে যাওয়া এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা। কারন বিরোধী জামাত সহ অন্যান্যদের কাছে আওয়ামিলীগ বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে গেলেও বাকশালী, না গেলেও। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি রোহিত হলেও ইসলাম বিরোধী, না হলেও। নারী অধিকার, প্রযুক্তি উন্নয়নে, ব্যবসা এবং অর্থনীতি, যোগাযোগ উন্নয়নে কিংবা শক্তিক্ষেত্রের যেকোন পর্যায়ের সমোঝোতায় পার্শ্ববর্তী দেশসহ পূর্ব এশিয়ার দিকে ঝুকলেই এ ঝুঁকি নিতে হবেই তাকে। এক্ষেত্রে সম্ভবতঃ সরকার আন্তর্জাতিক শক্তিকেই গুরুত্ত্ব দিচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা। তবে দেশের জনগন সুফল ভোগ করলে আভ্যন্তরীন সমস্যা কম বলেই আমার ধারনা। আভ্যন্তরীন সমস্যা শুধু একটি জায়গায় রয়েছে আর সেটা হলো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা অশুভ শক্তি। বর্তমানের ধারাবাহিকতায় মনে হয় না যে এদের চিহ্নিত করা সম্ভব। তবে উল্লেখিত পরিবর্তনে এরা সহজে চিহ্নিত হয়ে পড়বে বলে আমার ধারনা, আর তখনি কঠোর পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব।
আন্তর্জাতিক ভাবে সৌদি-পাকিস্তান ব্লক বিরোধীতা সহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হবে জানাকথাই, সে এখনো আছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের দিকে তাকালে তা সহজেই অনুমেয়। বাদবাকী বিশ্বের প্রতিবন্ধকতা সম্ভবতঃ নেই। এর কারন আমাদের ষোলকোটি জনঅধ্যুসিত মার্কেট। বিশ্ব তাকিয়ে আছে এই মার্কেটটির দিকে। অপর্যাপ্ত ক্রয় ক্ষমতাই মার্কেটটির গুরুত্ত্ব হাড়ানোর পেছনের প্রধান কারন। আর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাই মার্কেটটি গড়ে উঠার পেছনের প্রধান বাধা। সেখানে নতুন করে উত্তেজনা ছড়ানো নিশ্চই কারো কাম্য নয়।
সুতরাং আমার মনে হয় এই সব জামাত-শিবিরের তান্ডব প্রশমিত করা এবং চিরতরে নির্মুলের একমাত্র উপায় হলো ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কঠোর ভাবে এখনি নিষিদ্ধ ঘোষনা করা। সেই সাথে সংবিধান এর কপাল থেকে “বিসমিল্লাহ……..” অবলোপন করা উচিৎ। নইলে যা হবে, তা হলো এতো কিছুর পরেও জাতি শুধুমাত্র ধর্মীয় কারনে দ্বিধা বিভক্ত থাকবে, যা সুস্থ কারো কাম্য হতে পারেনা।
খবর শুনে আপাত দৃষ্টিতে খুশী খুশীই লাগে যে যাক, এতদিনে এদের উপর অন্তত কোন সরকার আঘাত হানার সাহস করেছে।
তবে এটাও সত্য যে সমাধান এভাবে আসবে না। এত শত কর্মীকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বেশীদিন আটকে রাখা যাবে না।
সরকারের উচিত এদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনের ধারায় মামলা করা। জামাত শিবিরের আসল যা শক্তি েই মধ্যপ্রাচ্যীয় ফান্ড নিয়ন্ত্রন করা। এছাড়া প্রশাসনে গেড়ে বসা জামাত শিবিরের লোকজন দ্রুত বিদায় করা।
– এর কি কোন সুনির্দিষ্ট রেফারেন্স আছে?
ব্যাপারটা কি এত সোজা? এর পিছনে যে শক্তিগুলো জড়িত, তারা অনেক শক্তিশালী এবং সংঘবদ্ধ, এদের হাত অনেক লম্বা। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন সরকারই যেতে চায় কিনা সেটাই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয়। আর যাবেই বা কেন? জামাতের সাথে শুধু বিএনপি কেন আওয়ামী লীগও আঁতাত করতে দ্বিধা করেনা রাজনৈতিক কারণে। এবার সরাসরি ছাত্রলীগের সাথে গন্ডগোল হচ্ছে দেখে, না হলে তো মনে হয় না এসবের কোন কিছুই ঘটতো। জানি কথাটা অনেকেরই পছন্দ হবে না, কিন্তু আদর্শগত দিক থেকে আসলেই কি এদের মধ্যে খুব বেশী পার্থক্য আছে? শিবির ধর্মকে ব্যাবহার করে হলে রুম দখল, টেন্ডারবাজী করে, আর ছাত্রলীগ, ছাত্রদল করাজনীতির নামে করে।
আমার মনে হয় শিবিরের বিরূদ্ধে এই অভিযান জরুরী। কারন এর ফলে যেমন তাদের পরিকল্পিত নৈরাজ্য তৈরীর নকশা তছনছ হবে, তেমনি তাদের সন্ত্রাসীরাও হয় গ্রেফতার হবে, না হয় আত্মগোপন করবে। একই সাথে জামাতী যুদ্ধাপরাধীদের বিরূদ্ধে বিচার কার্য শুরু করা উচিত।
এক যোগে সব ফ্রন্ট থেকে এই পশু দের ঘিরে না ফেললে এরা পদে পদে বিচার বাধাগ্রস্ত করবে। এ কথা ভাবা বোকামী হবে যে তারা মরন কামড় দেবে না। কিন্তু কামড়এর তীব্রতা minimize করাটাই লক্ষ হওয়া দরকার।
মাহমুদ ভাই, পাইকারি হারে শিবির ধরার সংবাদে আমিও ভেবেছি এতে আদৌ সুফল আসবে কিনা। আবার এদের মাঝে হত্যা-রগ কাটায় অবিশ্বাসী কেউ আছে তেমনটাও খুব শুনি না। সমস্যাটি খুবই জটিল। আমা্রো মনে হয় জামাত-শিবির যেমন সুদূর প্রসারী চিন্তা মাথায় নিয়ে মাঠে নেমেছে, সাময়িক ধরপাকড়ে এদের প্রতিহত করা যাবে না। আপনার লেখাটি তাই আমাদের সবারই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিৎ। আরেকটি ব্যাপার চিন্তা করা উচিতঃ দারিদ্র্যই অধিকাংশ ছাত্রকে মাদ্রাসা মু্খী করে, আর শিবির তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে সংবাদ পত্রে পড়েছি। গ্রাম-মফসল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা অসচ্ছল ছাত্রছাত্রী দের সাহায্যেও নিজেদের দল ভারি করতেই এরা এগিয়ে আসে। ছাত্রলীগ বা বাম্পন্থি ছাত্র দলগুলি যদি আমাদের এসব দরিদ্র ছাত্রদের বন্ধু হয়ে এগিয়ে না আসে, শিবিরের শক্তি কমার আমি কোন লক্ষন দেখি না।