বিশেষ নাগরিক সুবিধা ও এন.আর.বি. এ্যাপ্লিক্যান্ট্‌স্‌

আব্দুর রহমান আবিদ

 

[ব্যাকগ্রাউন্ডঃ রেমিটেন্স প্রেরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের যারা ২০০৭-২০০৮ অর্থ বছরে ন্যুনতম ৫,০০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা বৈধভাবে বাংলাদেশে প্রেরণ করেছিলেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বিশেষ নাগরিক সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে আগ্রহী প্রবাসীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহবান করা হয় ২০০৮-এর জুন মাসে। দুই ভাগে ভাগ করা হয় এন.আর.বি. (নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশী) এ্যাপ্লিক্যান্টদের-

i) শ্রেণী- ১০০,০০১ বা তদুর্ধ্ব মার্কিন ডলার বা সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী

ii) শ্রেণী- ৫,০০০~১০০,০০০ মার্কিন ডলার বা সমপরিমান বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী

আবেদনকারী সেদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ কনসুলেট অফিস থেকে আবেদনপত্র সংগ্রহ করে অথবা ইন্টারনেট থেকে আবেদনপত্র ডাউনলোড করে তা যথারীতি পূরণ করে একগাদা নোটারাইজ্‌ড্‌ কাগজপত্রসহ এবং সাথে নিজের ও নমিনীর ছবিসহ সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ কনসুলেট অফিসে জমা দেবেন। নির্বাচিত প্রবাসীদেরকে সংশ্লিষ্ট দেশের কনসুলেট অফিস থেকে বিশেষ এক ধরনের আই.ডি. কার্ড পাঠানো হবে যা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে দেখালে দেশে প্লট/ফ্ল্যাট পাওয়া থেকে শুরু করে দেশে ভ্রমনকালে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ এমব্যাসীতে সার্ভিস পাওয়ার ক্ষেত্রে শ্রেণী অনুযায়ী তারা বিশেষ অগ্রাধিকার পাবেন। বলাবাহুল্য, ন্যুনতম যোগ্যতাবলে কোনোরকমে আমি শ্রেণীতে আবেদন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম এবং ক্যালিফোর্নিয়ার লস এ্যান্‌জেলেস্‌-এ অবস্থিত বাংলাদেশ কনসুলেট অফিসে যথাসময়ে আবেদনপত্র পাঠিয়েছিলাম। ২০০৯ পেরিয়ে এটা ২০১০। আই.ডি.-ফাই.ডি. আজ পর্যন্ত কিচ্ছু পাইনি। কেউ আদোতেই কিছু পেয়েছেন কিনা জানিনা। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাষায় তাই বলতে হয়- কেউ কথা রাখেনি……]

 

(ছড়াটা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জনকারী সমস্ত প্রবাসী বাংলাদেশীর প্রতি উৎসর্গকৃত)

 

শর্তাবলীর সংখ্যা অতি, চাইলে করতে পূরণ-

ছবি তোলো গোটা দুই

পরে স্যুট, টাই-টুই;

সাথে তোলো নমিনীর

খুব সম্ভব গৃহিনীর;

বিশেষ কোটার ফায়দা পেতে এন.আর.বি. এ্যাপ্লিকেইশন।

 

পাঠাও যদি এক বছরে লক্ষ মার্কিন ডলার,

তবে তুমি শ্রেণী;

লাভ কি কি শোনোনি?

প্লট/ফ্ল্যাট, বিমানে,

কাষ্টম্‌স্‌, ইমিগ্রেশনে,

শেষ নেই যে তালিকার…… পেতে পারো অগ্রাধিকার।

 

আর আমার মত বিদেশকারী দরিদ্রটি যারা?

পাঠাও অন্তত পাঁচ হাজার

টাকাতে নয়, মার্কিন ডলার;

তোমায় দেবো শ্রেণী,

ভেবো না একে সন্মানহানী।

পুরো না পাক, ছিঁটেফোঁটাও ফায়দা পাবে তারা।

 

বছর দুয়েক পেরিয়ে গেছে দরখাস্তের পর।

আজো কিছু শুনিনি

না আমি, না নমিনী।

রা কিছু পেল কি?

বাদ পড়লো রা কি?

বলতে পারেন আর কেউ না, কেবল কনসুলার।

 

এর মধ্যেই দেশে গেছি, অন্তত বার দুই

প্লট দিল রাজউকে,

এঁকে-ওঁকে আর তাকে;

পুর্বাচল আর উত্তরায়

পেলটা কে, তা জানা নাই।

মন্দ কপাল, মামা-চাচা গাঁয়ে চষে ভূঁই

 

নাইবা পেলাম প্লট/ফ্ল্যাট, আফসোসটি নেই।

কিন্তু বিমানবন্দরে

ভেতরে আর বাইরে,

ইমিগ্রেশন, কাষ্টম্‌স্‌-এ

নন-স্টপ, হরদমছে

টানা-হ্যাঁচড়া, হয়রানিতে হারিয়ে ফেলেছি খেঁই।

 

ক, খ, গ, ঘ,… যা ভাগ করো, কি আসে যায় কার?

দিলেই নাহয় অগ্রাধিকার কাউকে কারো পর।

লক্ষ মানুষ বিদেশ বসে ফেলছে মাথার ঘাম;

সামান্য যা-ই জমছে দেশে করছে মানিগ্রাম।

কি হয়েছে পাঠায়নি তো শতেক, হাজার ডলার?

কে চেয়েছে তোমার কাছে বাড়তি অগ্রাধিকার?

সবকিছুতে ন্যায্য দাবী, সুষম বিচার-আচার

দেশের কাছে পাওনা সবার, নাগরিক অধিকার।।

 

রচনাকালঃ ফেব্রুয়ারী, ২০১০