সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্বিক অনুসন্ধান

আজ শুদ্ধস্বরের প্রতিষ্ঠাতা এবং আমার নতুন বইয়ের প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী (টুটুল) এর ফোন থেকে জানলাম যে, আমার এই বইটি আজকে বেরিয়ে গেছে এবং শুদ্ধস্বরের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে। মুক্তমনার পাঠক এবং শুভান্যুধায়ীদের যারা এই বইটির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে শুদ্ধস্বরে গিয়ে বইটি সংগ্রহ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

“সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” – অভিজিৎ রায়
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুইয়ারী, ২০১০
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৬৪
প্রকাশক: শুদ্ধস্বর (আহমেদুর রশীদ চৌধুরী)
৯১ আজিজ সুপার মার্কেট (৩য় তলা) শাহবাগ, ঢাকা।
ফোন: ০১৭১৬৫২৫৯৩৯
ই-মেইল: shuddhashar AT gmail.com (AT এর বদলে @ বসিয়ে নেবেন, এবং আগে পরে স্পেসগুলো ডিলিট করে দেবেন)

বইটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে এখানে

দেশের বাইরে শুধু নয়, অর্ধ গোলার্ধ দূরত্বে অবস্থানের একটি বড় কুফল হল – বইমেলার কোন তথ্যই আমি ঠিকমতো পাইনা। এমনকি বইটা দেখতে কেমন হয়েছে, বাঁধাই কেমন হয়েছে – এগুলোও আমার পক্ষে জানা সম্ভব হচ্ছে না। আমার নির্ভর করতে হয় দেশে অবস্থিত মুক্তমনা লেখক এবং পাঠকদের উপর। যদি মেলাগত কোন শুভানুধ্যায়ী পাঠক বইটির ব্যাপারে অভিমত জানান, তবে  আমি কৃতজ্ঞ থাকবো এবং আনুষঙ্গিক তথ্য এই থ্রেডে আপডেট করে রাখা হবে।

এমনিতে আমি প্রকাশকের তরফ শুনেছি – বইটিকে ঘিরে আগ্রহ তৈরী হয়েছে। অনেকেই নাকি ফোন করে বইটির ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েছেন। আহমেদুর রশীদ টুটুল বইটির বিজ্ঞাপনও নাকি দিয়েছেন বেশ কিছু জায়গায়। আজ ফোনে জানালেন তিনি বইটির মোড়ক উন্মোচন পর্বও করতে চান কাল / পরশুর মধ্যেই। মুক্তমনার সুহৃৎ এবং শুভানুধ্যায়ীদের যারা মোড়ক উন্মোচন পর্বে থাকতে আগ্রহী তারা টুটুলের সাথে একটু যোগাযোগ করে সঠিক দিন এবং সময় জেনে নেবেন।

আমি বইটির সাথে সম্পর্কিত সবাইকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

নীচে বইটির ভুমিকা পাঠকদের জন্য দেয়া হল –

:line:

“এখানে ছাড়তে হবে সকল অবিশ্বাস
এখানে ধ্বংস হবে সকল ভীরু হতাশ্বাস।”

–দান্তের ডিভাইন কমেডিতে বর্ণিত নরকের প্রবেশদ্বারে উৎকীর্ণ পদাবলী, যা পরবর্তীতে মনীষী কার্ল মার্কস বিজ্ঞানের প্রবেশদ্বারে খোদিত করে রাখতে চেয়েছিলেন আজীবন

উৎসর্গ

সারা বিশ্বের অগনিত সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির মানুষদের মুক্তিসংগ্রামে যারা নির্ভয়ে আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের পুরোধা আমেরিকার গ্রীনউইচ গ্রামের স্টোনওয়াল ইন-এর সংগ্রামী মজদুরদের

এবং

বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক চিন্তার প্রসারে, মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং মননের বিকাশে আত্মনিবেদিত সকল লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজকর্মীদের উদ্দেশ্যে

:line:

ভূমিকা

সময় পাল্টাচ্ছে। নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পাল্টাচ্ছে আমাদের সনাতন মন মানসিকতা। খসে পড়ছে দীর্ঘদিনের নীতি নৈতিকতার কালো চাদরে ঢাকা মলিন আবরণগুলো। ভেঙ্গে পড়ছে শতাব্দীর ঘুনে ধরা সমাজের প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক মূল্যবোধের অচলায়তন। শুরুটা হয়েছিলো পশ্চিমে অনেক আগেই, এর ঢেউ এখন আছড়ে পড়তে শুরু করেছে পূবের উপকূলেও। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সম্প্রতি নয়াদিল্লির হাইকোর্ট সমকামিতা অপরাধ নয় বলে রায় দিয়েছে (জুলাই, ২০০৯) । ১৪৮ বছরের পুরোনো ঔপনিবেশিক আইনে সমকামিতাকে যেভাবে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনতা’ হিসেবে গণ্য করে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিলো – এ রায়ের মধ্য দিয়ে সেটির অবসান ঘটল। সমকামিতা নামক যৌনপ্রবৃত্তিটি ভারতের মত দেশে প্রথম বারের মত পেল কোন ধরণের আইনী স্বীকৃতি। দিল্লি হাইকোর্ট সমকামিতা নিষিদ্ধ আইনকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়েছে, সুস্পষ্টভাবে একে মানুষের ‘মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন’ বলে রায় দিয়েছে।

দিল্লী হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর সমকামী অধিকার কর্মীদের উল্লাস
চিত্রঃ দিল্লী হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ের পর সমকামী অধিকার কর্মীদের উল্লাস (সৌজন্য – নিউইয়র্ক টাইমস)

নিঃসন্দেহে এ এক ঐতিহাসিক যাত্রা, শুধু সমকামীদের জন্য নয়, সার্বিকভাবে মানবাধিকারের জন্যও। কৃষি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় যৌনতার বিপ্লব সূচিত হয়েছিল বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে – সেই নবজাগরণের যে ঢেউ আজ ভারতে এসে পড়েছে, কিন্তু তার ছোয়া বাংলাদেশে এখনো তেমনভাবে দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশের সমকামী যৌনতা আজ এক অনিশ্চিত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। দেশের প্রধান প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো কিংবা সচেতন বুদ্ধিজীবী সমাজ নারী অধিকার, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান কিংবা বড়জোর পাহাড়ি কিংবা আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে আজ কিছুটা সচেতনতা দেখালেও তারা এখনো যৌনতার স্বাধীনতা কিংবা সমকামীদের অধিকার নিয়ে একদমই ভাবিত নয়। প্রকাশ্যে কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেও দেখা যায় না ইস্যুটি নিয়ে কাজ করতে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে তাদের জন্য এ ধরণের আন্দোলন বা সচেতনতা তৈরীর প্রয়াস নেয়া যে কষ্ঠসাধ্য, তা সহজেই অনুমেয়। সমকামিতা অস্বীকৃত শুধু নয়, অনেক জায়গায় আবার এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এখানে সমকামীদের হয় লুকিয়ে থাকতে হয়, কিংবা অভ্যস্ত হতে হয় ‘ক্লোসেটেড গে’ হয়ে ‘বিবাহিত’ জীবন যাপনে। তাদের অধিকার হয় পদে পদে লঙ্ঘিত। এর সুযোগ নিয়ে অনেক সময় খুব কাছের বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ঘটে আক্রমণ আর নানা পদের হেনস্থা। ‘সনাতন বাঙ্গালী কিংবা ধর্মীয় সংস্কৃতি’র ধারক এবং বাহকের দল আর অন্যদিকে ‘অপসংস্কৃতি’র বিরুদ্ধে সদা-সোচ্চার স্বঘোষিত অভিভাবকবৃন্দ; কারো কাছ থেকেই সমকামীরা বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রত্যাশা করতে পারে না। আসলে সমকামীদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির একটা বড় কারণ আমাদের বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব। আর এ কথা বলে দেয়া নিষ্প্রয়োজন যে – সব পুরোন সংস্কৃতির মতই আমাদের সংস্কৃতিরও অনেকটা জুড়েই বিছানো আছে অজ্ঞতার পুরু চাদর। আমাদের সংস্কৃতিতে গুরুভক্তি যেমন প্রবল তেমনি লক্ষ্যনীয় ‘মান্য করে ধন্য হয়ে যাবার’ অন্তহীন প্রবণতা। আমরা গুরুজনদের বহু ব্যবহারে জীর্ণ আদর্শের বাণী আর অভিভাবকদের শেখানো বুলি তোতাপাখির মত আজীবন আউরে যেতে ভালবাসি। আমাদের ভয় অনেক। সীমাহীন স্ববিরোধ আর বংশপরম্পরায় চলে আসা প্রথা মান্য করে যাওয়াকেই আমাদের সমাজে ‘আদর্শ’ বলে চিহ্নিত করা হয়। এর বাইরে পা ফেললেই বিপদ। কিন্তু তারপরও কাউকে না কাউকে তো ‘বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার’ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতেই হবে। এই বইয়ের মাধ্যমে প্রথম বারের মত বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য অজ্ঞতার চাদর সরানোর প্রয়াস নেয়া হয়েছে, সর্বাধুনিক বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ হাজির করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে, সমকামিতা কোন বিকৃতি বা মনোরোগ নয়, এটি যৌনতারই আরেকটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। প্রাণীজগতে এখন পর্যন্ত পনেরশ’র বেশী প্রজাতিতে বিজ্ঞানীরা সমকামিতার সন্ধান পেয়েছেন। তার আংশিক তালিকা এ বইয়ে লিপিবদ্ধ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস খুঁজে দেখানো হয়েছে সমকামিতাকে যতই ‘অপসংস্কৃতি’ কিংবা ‘পশ্চিমা বিকৃতি’ বলে চিহ্নিত করা হোক না কেন, এর প্রকাশ প্রাচীনকাল থেকেই আছে আমাদের সংস্কৃতিতেও – অত্যন্ত প্রবলভাবেই।

এ দিকে, বহুদিন হতে চললো, জেন্ডার সচেতন প্রগতিশীল সমাজব্যবস্থায় সমকামিতাকে মনোরোগ কিংবা বিকৃতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। পশ্চিমের আধুনিক চিকিৎসকেরা এবং মনোবিজ্ঞানীরা এখন সমকামিতাকে একটি স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তিই মনে করেন। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর American Psychiatric Association বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association-ও একইরকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলো। তারপরেও যে সমকামীদের জীবন কুসুমাস্তীর্ণ হয়ে গেছে বলা যাবে না। আমেরিকার স্কুলগুলোতে একটু মেয়েলী গোছের ছেলেদের ‘গে’ প্রতিপন্ন করে আত্মহননের পথে ঠেলে দেয়া হয়েছে – এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়ার আলোয় উঠে এসেছে। শুধু সমকামী হবার কারণেই হত্যা করা হয়েছে ওয়াইয়োমিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথু শেফার্ডের মত মেধাবী ছাত্রকে। আমেরিকায় এখনো গে এবং লেসবিয়ানরা সামাজিক স্বীকৃতি ও আইনগত বৈধতার জন্য আন্দোলন করছেন, অংশ নিচ্ছেন ‘গে-প্রাইড’ মার্চে। তাদের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে আমেরিকার বেশ কয়েকটি রাজ্যে সমকামী বিয়ে আজ স্বীকৃত। ব্রিটেনেও বিগত টনি ব্লেয়ারের সরকার কয়েক বছর আগে প্রথম সমকামী যুগলদের স্বীকৃতি দিয়েছে। কানাডায় আজ সমকামী, রূপান্তরকামী, উভকামী এবং উভলিঙ্গ মানবেরা সেখানকার অন্যান্য নাগরিকদের মতই সমান সুবিধা ভোগ করে থাকে, এমনকি তাদের মধ্যকার বিয়েও ‘সিভিল ম্যারেজ’ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত। পশ্চিমে সমকামী-অধিকার আন্দোলনের সাফল্য এখন উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার কয়েকটি প্রধান দেশও তাদের আইন সংস্কারে এগিয়ে এসেছে। চীনে আগে মাও সে তুংয়ের আমলে মনে করা হতো, সমকামিতা হচ্ছে ‘পুঁজিবাদের বিকৃতি’। কিন্তু আশির দশক থেকে তাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে। নেলসন ম্যানডেলার নেতৃত্বে সাউথ আফ্রিকায় বর্ণবাদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর যে নতুন সংবিধান হয় তাতে শুধু ধর্মই নয়, যৌনতা বিষয়ে কোনো বৈষম্য করা হবে না এমন ধারা সংযোজিত হয়। পাকিস্তানের মত রক্ষণশীল রাষ্ট্রেও উভলিঙ্গ মানবদের জন্য সমানাধিকারের আইন পাশ করা হয়েছে । আমরা আশা করব, যুগের দাবীর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও একটা সময় সমকামিতা এবং অন্যান্য যৌনপ্রবৃত্তির প্রতি সহিষ্ণু মনোভাব গড়ে উঠবে, একটা সময় পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ ষাঁড়দের যাতাকলে নিয়ত পিষ্ট সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির মানুষগুলোর আইনী অধিকার স্বীকৃত হবে। আর সেজন্য দরকার আমাদের সবার বিজ্ঞানমনস্ক উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি।

এ বইটির প্রথম দিককার কিছু অংশ সিরিজ আকারে মুক্তমনা এবং সচলায়তন ব্লগে প্রকাশের সময় পাঠকদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সাড়া পেয়েছি। সে সময় বহু পাঠক তাদের মূল্যবান মতামত দিয়ে ধারাবাহিক সিরিজটির মানোন্নয়নে সহায়তা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে আমাকে বিতর্কেও জড়াতে হয়েছে। বলা বাহুল্য, সে সমস্ত বিতর্কের ফলশ্রুতিতে যে সমস্ত নতুন নতুন তথ্যের সমন্বয় আমার বইয়ে ঘটেছে তার জন্যও সংশ্লিষ্ট পাঠক এবং ব্লগারদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ব্লগে প্রবন্ধটি প্রকাশের আগে ইন্টারনেটে সমকামিতার উপর বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে কোন গঠনমূলক আলোচনা সমৃদ্ধ রসদ বাংলায় ছিলো না। বহু পাঠক আমাকে ইমেইল করে জানিয়েছেন যে, সিরিজটি তাদের সমকামিতা সম্বন্ধে চিন্তাভাবনা আমূল বদলে দিতে সাহায্য করেছে। লেখক হিসেবে নিঃসন্দেহে এটি আমার এক বিরাট প্রাপ্তি। ২০০৭ সালে সচলায়তন ব্লগে পাঠকদের ভোটে এই সিরিজটি অন্যতম বর্ষসেরা লেখা হিসেবে তালিকায় স্থান পেয়েছিলো। এ ছাড়া আমেরিকার সিলিকন ভ্যালি থেকে প্রকাশিত মাসিক পড়শী পত্রিকায় আমার সিরিজের কিছু অংশ প্রকাশিত হয়েছিলো ‘সমকামিতা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ?’ শিরোনামে। মুক্তমনার অন্যতম সুহৃৎ কানাডার অটোয়ায় বসবাসরত কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতের এমিরিটাস অধ্যাপক এবং সুলেখক ড. মীজান রহমান আমার পান্ডুলিপিটি আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন এবং সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। তাঁর অত্যন্ত তথ্যবহুল মতামত ‘বিকৃতি না প্রকৃতি’ শিরোনামে বইয়ের শেষে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডিরত স্নিগ্ধা আলি নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে একটি ব্যক্তিগত মতামত দিয়েছেন। স্নিগ্ধার লেখাটিও তার অনুমতি নিয়ে গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে। ফ্লোরিডা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইরতিশাদ আহমদ পান্ডুলিপিটি আদ্যোপান্ত পাঠ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন, যা পান্ডুলিপিটির মানোন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। সুইডেন নিবাসী মুক্তমনা সদস্য এবং মানবাধিকারকর্মী মাহবুব সাঈদ সমকামিতার উপর বেশ কিছু কেস স্টাডি সংগ্রহ করে এই বইয়ের জন্য দিয়েছেন। বইটির শেষ পর্যায়ে এসে আলী ইশতিয়াকের সাহায্য এবং সহযোগিতা আমাকে দারুণভাবে উপকৃত করেছে। এদের সকলের কাছে আমি ঋণী।

আমার জীবনসঙ্গিনী বন্যা (যিনি নিজেও একজন জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক) তার শত ব্যস্ততার মধ্যেও পান্ডুলিপির প্রতিটি অধ্যায় পড়ে তার সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন। যেখানে যেখানে পছন্দ হয়নি সেসমস্ত জায়গায় স্কুল শিক্ষিকাদের মতই লাল কালি দিয়ে দাগিয়ে সংশোধনে বাধ্য করেছেন। তার মতামত আমার পান্ডুলিপি পরিমার্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে – তা বলাই বাহুল্য। প্রুফ রীডার হিসেবে অঞ্জন আচার্য্যের অবদান সত্যই আমাকে বিস্মিত করেছে। জেন্ডার বিষয়ক তার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী আমার পান্ডুলিপির শুধু শ্রীবৃদ্ধিই করেনি, আমার নিজের মানসজগৎকেও ঋদ্ধ করেছে পুরোমাত্রায়। সব্যসাচী হাজরার চমৎকার প্রচ্ছদটি বইটিকে দিয়েছে নতুন মাত্রা। সবশেষে শুদ্ধস্বরের আহমেদুর রশীদের প্রেরণা এবং তাগাদা ছাড়া এ বই আলোর মুখ দেখতো না কখনোই। কাজেই এই বই পাঠকদের ভাল লাগলে সেই কৃতিত্বের সিংহভাগই বাংলাদেশের এই তরুণ এবং উদ্যমী প্রকাশকের প্রাপ্য।

আমি মনে করি আমার এ বইটি বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনস্ক উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে আর এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা পালন করবে।

বইটির আনুষঙ্গিক কিছু তথ্য এবং স্যাম্পল অধ্যায় পড়া যাবে এখান থেকে

:line:

বইমেলার ছবি সংযোজন (কৃতজ্ঞতা রণদীপম বসু) :

রণদীপম বসুর ক্যামেরায় তোলা শুদ্ধস্বর স্টলের কিছু ছবি পাঠকদের জন্য দেয়া হল-

চিত্রঃ শুদ্ধ্বস্বরের নতুন বইগুলোর ভীরে আমার নতুন বইটি

চিত্রঃ বইটিকে ঘিরে পাঠকদের আগ্রহ? (মনে মনে ভাবিতেছি – কী যে ধরা খাইলাম!)

চিত্রঃ চশমা খুলিয়া চিন্তা – কি কিনিলাম, কেনই যে কিনিলাম!

ছবিগুলো মুক্তমনায় পাঠানোর জন্য রণদীপম বসুকে অসংখ্য ধন্যবাদ!

বইটি সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য আছে এখানে