আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করতে চাই। এটা সম্ভবত আমাদের সবচেয়ে স্বাভাবিক চাওয়াগুলির একটি। কিন্তু এর আগমন বেজায় বিলম্বিত। এ নিয়ে আমরা কল্পকাহিনীর পর কল্পকাহিনী লিখে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন জীবন সৃষ্টির কাছাকাছি যেতে পারি নি। পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার বর্তমান অর্জন সম্পর্ক ঠাট্টা করে বলেছেন, আমাদের সবচেয়ে আধুনিক রোবটটির বুদ্ধিমত্তা এখনো একটি নির্বোধ তেলাপোকার সমান।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের পুরোধা, ব্রিটিশ গণিতবিদ অ্যালান টুরিং ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ২০০০ সালের মধ্যে এমন কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি হবে যা পর্দার আড়ালে থেকে আলাপচারিতার মাধ্যমে অন্তত ত্রিশ শতাংশ মানব বিচারককে এই বলে ধোঁকা দিতে সক্ষম হবে যে সে আসলে রোবট নয়, মানুষ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিমাপক এই পরীক্ষাটিকে টুরিং টেস্ট বলে। বলাই বাহুল্য, মহামতি টুরিং এ ব্যাপারে নেহায়েত ভুল ছিলেন। সে হিসেবে খেলার ছলে হলেও মিচিও কাকু বরং অনেক গ্রহণযোগ্য একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে ব্যাপকভাবে ছাড়িয়ে যাবে এমন রোবটের আগমন তিনি আগামী পঞ্চাশ কি একশ বছরেও দেখতে পাচ্ছেন না।
এই গবেষণার একটি বড় সমস্যা, একে সংজ্ঞায়িত করার সমস্যা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে মোটা দাগে টুরিং টেস্ট দিয়ে ব্যাখ্যা করাটা এই গবেষণার অনেক বড় দুর্বলতা। এটি গবেষকদের সরাসরি মানবগুণাবলী নকল করা প্রোগ্রাম তৈরি করতে উদ্যত করে। যেমন চ্যাটবোট (উদাহরণ, অ্যালিস) বা কতগুলো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যেগুলো গণনাগতভাবে ভাষা বিশ্লেষণ করে মানুষের মত আলাপ করার চেষ্টা করে। কিন্তু বুদ্ধিমত্তা একটি বিচ্ছিন্ন গুণ নয়। একটি শিম্পাঞ্জি আলাপচারিতা দিয়ে নিজেকে মানুষ বলে ঠকাতে পারে না, কিন্তু তার বুদ্ধিমত্তা নেই, সেটাও বলা যাবে না। বুদ্ধিমত্তা মানুষের চেয়ে কম এবং ভিন্ন হয়তো বলা যাবে।
অর্থাৎ বুদ্ধিমত্তার মাত্রা আছে। ফলে, যেখানে এখনো একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম একটি শিম্পাঞ্জির মত আচরণই করতে পারে না, সেখানে মানুষের অত্যন্ত উঁচুমানের বুদ্ধিমত্তার নমুনাকে আলাদা করে গবেষণার প্রচেষ্টা আমার মতে অফলপ্রসূ। আমি বলছি না যে ভাষার গণনাগত বিশ্লেষণ অসম্ভব, কিন্তু আলাপচারিতার সম্পর্ক কেবল ভাষার সাথে নয়, আচরণ এবং অভিপ্রায়ও এর সাথে জড়িত। মানুষের মত চ্যাট করা প্রোগ্রাম আবিষ্কার হয়ে গেছে অথচ শিম্পাঞ্জির মত হাতিয়ার তৈরি করে নিজে নিজে তার নানা ব্যবহার বের করা প্রোগ্রাম এখনো তৈরি হয় নি, এমন অদ্ভুত সময়ের কথা কল্পনা করতে আমি পারি না। ব্যর্থতাটা হচ্ছে ভাষা দিয়ে আলাপচারিতা চালানোর বুদ্ধিমত্তা আর শিম্পাঞ্জি বা এমনকি পোকামাকড়ের অনাকর্ষণীয় বুদ্ধিমত্তার মাঝে যোগসূত্র খুঁজে না পাবার ব্যর্থতা।
যোগসূত্র আছে। তাই একলাফে মানুষের বুদ্ধিমত্তার নমুনা নকল করার চেয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণার লক্ষ্য হওয়া উচিত ইঁদুর বা পিঁপড়ার আচরণের নমুনাকে কম্পিউটার দিয়ে অনুকরণ করা। আর এদের সবার মাঝে যে যোগসূত্র, সেখানে রয়েছে জীবনের সংজ্ঞা, জীবনের মানে।
বিজ্ঞানের সংজ্ঞা
জীবনের কোন আধিভৌতিক ব্যাখ্যা আমি দিতে চাই না। তার কারণ – “পর্যবেক্ষণ অসাধ্য তত্ত্ব অর্থহীন”। অর্থাৎ যে তত্ত্বের অস্তিত্ব কেবল মুখে মুখে, পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যাকে সিদ্ধ করা যায় না, তা নিয়ে তর্কের অর্থ নেই। বিজ্ঞানের সংজ্ঞার এটি একটি সরল তাৎপর্য। বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় যাওয়া যায়।
বিজ্ঞানের সহজতম সংজ্ঞা হল, এটি ভবিষ্যত-অনুমানের প্রণালীবদ্ধ চর্চা। এই সংজ্ঞাটি আমরা আরো নানাভাবে জানি। যেমন, বিজ্ঞান হল জ্ঞান আহরণের পদ্ধতিগত উপায়। বা “ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান”। প্রথম ও দ্বিতীয় সংজ্ঞাটির সুবিধা হল ভৌত বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করতে হচ্ছে না। তৃতীয় সংজ্ঞায় ভৌত বিশ্বের উপস্থিতি কেবল ভৌত বিশ্বকে সংজ্ঞায়িত করার প্রয়োজনই তৈরি করে না, বরং এমন ইঙ্গিত দেয় যেন ভৌত বিশ্বের বাইরেও কোন আধিভৌতিক জগতের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তখন সেই জগতের “যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা”কে বিজ্ঞান বলা যাবে কিনা তা নিয়ে তর্কের সুযোগ থাকে। আমি বরং প্রথম আর দ্বিতীয় সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করছি। আমি বলছি, দুটি একই অর্থ বহন করে। আমি বলছি কেন।
পর্যবেক্ষণ, জ্ঞান ও ভবিষ্যত-অনুমান
দ্বিতীয় সংজ্ঞাটি বলছে – বিজ্ঞান হল জ্ঞান আহরণের পদ্ধতিগত উপায়। জ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়ে বিস্তর তর্ক আছে। নানাজন নানানভাবে সংজ্ঞায়িত করেন। অধিকাংশ সংজ্ঞাই আমার কাছে অস্পষ্ট এবং অন্য অনেক বিষয়ের সংজ্ঞার উপর নির্ভরশীল মনে হয়। আমি সব সংজ্ঞার তুলনামূলক আলোচনা এখানে করছি না। বরং একটি সংজ্ঞা উল্লেখ করছি, যেটাকে আমি গ্রহণ করি। আর তার আগে আমার সংজ্ঞার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিকে একটু ব্যাখ্যা করে নিচ্ছি।
কোন সংজ্ঞা আমার কাছে সুসংজ্ঞা নয়, যখন তা স্বনির্দেশক অর্থাৎ ঘুরে ফিরে সংজ্ঞায় নিজেকেই ব্যবহার করে। এর চেয়েও অসঙ্গতিপূর্ণ হলো সেসমস্ত সংজ্ঞা যা অন্য বিষয়কে ব্যবহার করে থাকে, যেগুলোকে সংজ্ঞায়িত করতে আবার প্রথমটির উল্লেখ প্রয়োজন। সুসংজ্ঞায় কেবলমাত্র ব্যবহার করা উচিত অন্য সুসংজ্ঞায়িত বিষয়। এবং একটি বিষয়ের সংজ্ঞায় অন্য যতগুলো সুসংজ্ঞায়িত বিষয় আসে, সেগুলোকে ধরে এভাবে গভীরে যেতে থাকলে এক পর্যায়ে এমন বিষয়ে উপনীত হতে পারা উচিত, যার সংজ্ঞায়নের জন্য অন্য বিষয়ের সংজ্ঞা অবতারণার আর প্রয়োজন হবে না অথবা অবতারণা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ তা হবে মৌলিক ভিত্তি, যা নিজের পরিচয়ে অস্তিস্ত্বমান, বা যার অস্তিত্ব নিয়ে সবাই একমত।
কি সে বিষয়, কোন বিষয়টি অবিসংবাদিতভাবে অস্তিত্বমান, যার উপর ভিত্তি করে আমি অন্য সবকিছু সংজ্ঞায়িত করব? আমার এই সোফা? বিছানা? এই বিশ্ব? আমি? প্রশ্ন আসে, সোফা কি? বিছানা কি? বিশ্ব কি? আমি কি?
সোফার সংজ্ঞা কি? কি দিয়ে একে সর্বসম্মতভাবে সংজ্ঞায়িত করব? গরুকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে? চারটি পা ও দুটি শিং আছে, গৃহপালিত পশু, দুধ দেয়, ঘাস খায়? নাকি অভিধানের মত স্বনির্দেশকভাবে – গরু মানে গোজাতি? এর কোন সংজ্ঞাটি গরুকে অন্য প্রাণী থেকে নির্দিষ্ট করতে পারছে? নাকি রসায়ন বা পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে সংজ্ঞায়িত করব, ভাঙতে ভাঙতে ইলেক্ট্রন প্রোটনে চলে যাব? ইলেক্ট্রনই কি সুসংজ্ঞায়িত, সবচেয়ে মৌলিকভাবে বিরাজমান অস্তিত্ব? নাকি তারও আরো ভাঙন আছে?
গরুর বিভিন্ন সংজ্ঞায় ভিন্নতা আছে, তবে সকলটাতেই কিন্তু একটি সাধারণ ব্যাপার আছে। আর তা হল আমরা সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করছি যা আমরা পর্যবেক্ষণ করি তার ভিত্তিতে। যা কিছু আমরা সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করি, তার সবকিছুই কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণ। এটাকে আমরা অনুভূতি বা ইনপুট বলতে পারি। এই সোফা, এই জানালা, এই আকাশ কতটা বাস্তব আমি জানি না, তবে আমি জানি যে আমরা এগুলো পর্যবেক্ষণ করি। দূরের ওই গাছটি কতটুকু সত্য তাও আমি জানি না, তবে বলতে পারি, আমি তা পর্যবেক্ষণ করছি। বলতে পারি, অন্যরাও স্বীকার করবে গাছটি তারা পর্যবেক্ষণ করছে।
পর্যবেক্ষণই সংজ্ঞায়নের মৌলিক ভিত্তি। এ কারণে পর্যবেক্ষণ দিয়ে কোন বস্তুকে সংজ্ঞায়ন এত সহজ। আমরা যখন বলি ওটা হল গাছ, অন্যরাও তখন বলে, হ্যাঁ হ্যাঁ, ওটা গাছ, কিন্তু যখন বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে তার সংজ্ঞা দিতে যাই, তখনই শুরু হয় দ্বিমত। নানান জনের কাছে নানান বৈশিষ্ট্য ধরা দেয়। তবে আমি এধরনের সংজ্ঞায়নকে উড়িয়ে দিচ্ছি না। সংজ্ঞায়ন কঠিন কাজ, কখনো কখনো অসম্ভবের কাছাকাছি এবং আমরা সচরাচর যেভাবে সংজ্ঞায়িত করে থাকি সবকিছুকে, তার চেয়ে বেশি কার্যকরভাবে করাও হয়তো প্রায়োগিকভাবে সম্ভব নয়।
তথাপি, আমি সংজ্ঞায়নের অন্তত একটি মৌলিক বিষয়কে নির্দিষ্ট করার চেষ্টা করলাম, কারণ অন্তত একটি মৌলিক ভিত্তিকে সনাক্ত করতে পারাটা একটি বড় প্রাপ্তি। এটা আমাদের চিন্তার উপায়কে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করতে পারে। ইলেক্ট্রন অথবা কোয়ার্ক বা কোয়ান্টাকে মৌলিক ধারণা না ধরে পর্যবেক্ষণকে মৌলিক ধারণা হিসেবে নেয়া, যার গভীরে নিশ্চিতভাবে আর যাওয়া যায় না। যে কোনকিছু যাচাইয়ের একমাত্র উপায় পর্যবেক্ষণ, তাই ‘পর্যবেক্ষণ’ এর যাচাই হয় না।
এবার জ্ঞানের সংজ্ঞাটি দেই। জ্ঞান হচ্ছে কোন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ভবিষ্যত-অনুমান বা ভবিষ্যদ্বাণী করার ক্ষমতা। আমরা জ্ঞান বলতে যা কিছু বুঝি, তার প্রতিটির ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য। জ্ঞানের অন্য কোন সংজ্ঞা এভাবে সমভাবে প্রযোজ্য কিনা আমার জানা নেই।
“আমি জানি আমার পকেটে একটি মুদ্রা আছে”, এই কথাটির অর্থ কি? আমার এই বিশেষ জ্ঞানটি কি বোঝায়? এর অর্থ হল, আমি আমার পকেটে হাত দিলে একটি মুদ্রা পাবো। অর্থাৎ আমি ভবিষ্যতের একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে অনুমান করছি। ইতিহাস সম্পর্কে আমার অনেক জ্ঞান আছে, এ কথাটির অর্থ কি? আমি এভাবে বলতে পারি, এই কথার অর্থ এই যে ইতিহাস নিয়ে আমাকে কিছু প্রশ্ন করলে আমি তার উত্তর দিতে পারব, ইতিহাসের কোন বিষয় নিয়ে আমি লিখতে পারব, বলতে পারব। অর্থাৎ এমন কিছু যা পর্যবেক্ষণ করা যাবে। কি কি পর্যবেক্ষণ করা যাবে তার একটা ধারণা দিচ্ছি, বা ভবিষ্যদ্বাণী করছি।
কোন কিছু সম্পর্কে জ্ঞান থাকা বলতে আসলে কিছু বিশেষ পর্যবেক্ষণের অনুমান করতে পারাকে বোঝায়। আমরা যা কিছু জানি বলে দাবী করি, আমরা আসলে তা সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর দাবী করি। “আমি জানি আজ আকাশে মেঘ” বলতে বোঝাই যে, কেউ আকাশের দিকে তাকালে আজ মেঘ দেখতে পাবে। এমনিভাবে সকল জ্ঞানে এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য।
ভবিষ্যতের পর্যবেক্ষণকে অনুমান করার ক্ষমতা হল জ্ঞান। জ্ঞান আর ভবিষ্যত-অনুমান ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আমরা যখন বলি বিজ্ঞান হল জ্ঞানার্জনের পদ্ধতিগত উপায়, তখন আমরা আসলে বলি, বিজ্ঞান হল ভবিষ্যত-অনুমানের প্রণালীবদ্ধ চর্চা। অর্থাৎ বিজ্ঞানের প্রথম ও দ্বিতীয় সংজ্ঞা আসলে একই। আর প্রণালী এমন হবে যে অনুমানটি যাচাইযোগ্য এবং পুনর্নির্মাণযোগ্য হবে।
ফলে আমি যখন প্রণালীবদ্ধভাবে কোন ভবিষ্যত-অনুমান করার চেষ্টা করি, তখন বলা যাবে যে আমি বিজ্ঞান চর্চা করি। যেমন পৃথিবী-সাপেক্ষে উচ্চতার ভিত্তিতে কোন বস্তুর ওজন কেমন হবে তার আমি কিছু ভবিষ্যৎ-অনুমান করতে পারি সেটা সংক্রান্ত একটি সূত্র বের করে। সূত্রটির নির্ভরযোগ্যতা যাচাইযোগ্য, কেননা পৃথিবীর সাপেক্ষে বিভিন্ন উচ্চতায় উঠে বা নিচে (অভ্যন্তরে) নেমে আমি কোন বস্তুর ওজন পর্যবেক্ষণ করতে পারি এবং আমার অনুমানের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারি। এবং এটি পুনর্নির্মাণযোগ্যও বটে।
অথবা আমি একটি সূত্র দিতে পারি E=mc^2। কিন্তু সেটা কি অর্থ বহন করে? আমি গাণিতিকভাবে তা প্রতিপাদন করতে পারি, কিন্তু তা কি সবার সম্মতির জন্য যথেষ্ট? সকল গাণিতিক ব্যাখ্যার পরেও আমাকে একটি পরীক্ষা তৈরি করতে হবে যেখানে কোন প্রক্রিয়ার বা বস্তুত নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ার মাধ্যমে সিস্টেমের উপাদানগুলোর সামষ্টিক ভর হ্রাস পাবে এবং আমি ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারব যে সিস্টেমটি যে শক্তি উৎপন্ন করবে তার পরিমাণ সূত্রটি দ্বারা নির্ধারিত। এরপর এই পরীক্ষাটি সত্যি সত্যি করে যখন আমার অনুমানের সত্যতা পাওয়া যাবে, তখন আমার সূত্রটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
একইভাবে আমি বিগ ব্যাং, ব্ল্যাক হোল, ইত্যাদি নানা তত্ত্ব দিতে পারি। প্রণালীবদ্ধভাবে যদি তা করা হয় এবং তা যদি কোন ভবিষ্যত-অনুমান করতে পারে, তবে তা হবে বিজ্ঞানের চর্চা। কিন্তু পর্যবেক্ষণ দ্বারা সিদ্ধ হবার আগ পর্যন্ত তা প্রতিষ্ঠিত হবে না। আর পর্যবেক্ষণ অসাধ্য হলে তো তা হবে অর্থহীন। ঐ তত্ত্ব তখন আর বিজ্ঞান নয়। কারণ ঐ তত্ত্ব আসলে এমন কোন অনুমান করতে পারছে না, যা কখনো পর্যবেক্ষণ দ্বারা সিদ্ধ করা যাবে।
এমন অজস্র উদাহরণ দেয়া যাবে। বা বলা যাবে, আমরা যখন বিজ্ঞানের চর্চা করি, তখন আসলে পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ভবিষ্যত-অনুমানের চেষ্টা করি। আমার একটি সেমিনার বক্তৃতায় আমাকে এর প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, কোন কিছুর পরিসংখ্যানগত মূল্যায়ন, যেমন – খুব সাধারণভাবে, কোন নমুনার গড় ও ভেদাংক বের করা কি কোন রকমের ভবিষ্যত-অনুমান কিনা। আমি বলেছিলাম, এর উত্তরে আমি বলতে পারি, হ্যাঁ। আমি বলতে পারি, ওই নমুনা থেকে দৈবভাবে একটি উপাত্ত নির্বাচন করলে তা কোন মানের কতটা কাছাকাছি কত সম্ভাবনায় থাকতে পারে, পরিসংখ্যানগত মূল্যায়নটি তার একটি অনুমান দেবার চেষ্টা করে। বিজ্ঞানের সকল চর্চাই এভাবে অনুমানের চেষ্টা করছে।
পর্বের সমাপ্তি
জীবনের সংজ্ঞা দিতে চেয়েছি। এবং তা দেয়ার চেষ্টাটা পদ্ধতিগতভাবে করতে চেয়েছি। এর সংজ্ঞায়নের আগে এ নিয়ে আলোচনায় কতটুকু আমাদের সীমাবদ্ধতা, তা নির্ধারণের চেষ্টা করেছি। আর এ জন্যই আজকের পর্বের অবতারণা। বৈজ্ঞানিক আলোচনার পূর্বে বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করতে চেয়েছি। আগামীতে ফলে জীবনকে সংজ্ঞায়িত করার মত কঠিন কাজটা কিছুটা হলেও সহজ হতে পারে।
আমরা বুঝেছি, আমরা সীমাবদ্ধ আমাদের পর্যবেক্ষণ দ্বারা। জগত সম্পর্কে আমাদের যত ধারণা, তার সবই এই পর্যবেক্ষণ দ্বারা সীমাবদ্ধ। তবে এটা দুর্বলতা অর্থে সীমাবদ্ধতা নয়। বরং আমরা বলতে পারি, জগত ধ্রুব কি না তা আমরা জানি না, কিন্তু তার যে পর্যবেক্ষণ, তাকে আমরা ধ্রুব বলতে পারি। তার সংজ্ঞা আপেক্ষিক নয়। আমরা আমাদের সকল ইন্দ্রিয় দিয়ে যে অনুভূতিগুলো পাই, তাই আমাদের কাছে সত্যি, কেননা ইন্দ্রিয়কে এড়িয়ে কোন কিছু সম্পর্কে ধারণা করা সম্ভব নয়।
এটা বরং সীমাবদ্ধতার উপলব্ধি নয়, সত্যের উপলব্ধি। একে ছাপিয়ে উঠতে আমরা পারি না। অন্য সকল কিছু প্রতিষ্ঠা পায় এর ভিত্তিতে। যা ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করা যায় না, তা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব হয় না। তার বাস বড়জোর কল্পনায়।
যে জীবনের সংজ্ঞা দেবার জন্য বিজ্ঞানের দর্শনালোচনা করা, সেটা এ পর্বে অনুপস্থিত থাকলেও এই দর্শনালোচনার নিজস্ব গুরুত্ব কিন্তু অশেষ। এই দর্শনালোচনা ছাড়াও বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব। কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে পদ্ধতিগত চর্চাটির ‘পদ্ধতি’তে এবং অনুমানে প্রমাদ সৃষ্টি হতে পারে। মূল এই চেতনা ধারণ না করে আগালে সহসাই পদ্ধতিগত ভুল করা সম্ভব। তার পরেও তা হয়তো হবে বিজ্ঞান চর্চা, কিন্তু তা হবে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে করা চর্চা। আমাদের ভাষাভাষীরা, আমরা যদি কখনো আমাদের বর্তমান এবং অতীতের দিকে তাকিয়ে আমাদের মাঝে বিজ্ঞানের রেনেসাঁর অনুপস্থিতি অনুভব করি, তখন আমরা হয়তো একটু এটাও ঘেঁটে দেখতে পারি যে বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে আমরা কোন কালে অতটুকুও আলোচনা করেছি কিনা।
আপনার এ লেখাটা আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিলো। খুবই চমৎকার ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা যা আপনি দক্ষতার সাথেই করতে পেরেছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আমি নিজেই যথেষ্ট কাঁটা-ছেড়া করছি বলে অনেক বেশী আগ্রহ নিয়ে আপনার লেখাটা উপভোগ করলাম।
আরও ভালো লাগল আপনার এই মন্তব্যে পড়ে যে,
আপাতত মানব মস্তিষ্কের কগনিটিভ অংশের পেছনে বেশী না ছুটে , লজিকাল অংশের গবেষণায় মনযোগ দেয়াই উত্তম বলে আমি মনে করি।
@সংশপ্তক,
কিংবা রিয়াক্টিভ বিহেভিয়ার নিয়ে? লজিক তো কনশাস মাইন্ডের তৈরী বলে আমার মনে হয়। আমাদের ফর্মাল লজিক সাব-কনশাস মাইন্ড মেনে চলে কি?
আপনি এ আই এর ঠিক কোন ক্ষেত্র নিয়ে গবেষণা করছেন? কষ্ট করে পরের লেখাটা (জীবনের অর্থ) পড়ে দেখতে পারেন। ওখানে রিয়াক্টিভ বিহেভিয়ারের মডেল কিছুটা বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি।
@ধ্রুব,
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান মস্তিষ্কের ভুমিকা সম্পর্কে সাধারণভাবে প্রচলিত ধারনা সম্পূর্ন বদলে দিয়েছে। সাধারন নিউরোলজি এবং ক্লাসিকাল মনোবিজ্ঞানে যেখানে জীন ও ক্রোমোজমের গুরুত্ব অবজ্ঞার পর্যায়ই ফেলা হয় , বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে জীন ও ক্রোমোজোমকে দেখা হয় মস্তিষ্কের অপারেটিং প্লাটফর্ম হিসেবে যা বিভিন্ন মডিউল নিয়ে গঠিত। এসব মডিউলের সব কটাই জন্মগত নয় যার মাঝে কিছু সংখ্যক মডিউল জন্মপরবর্তিকালে তৈরী হয় । এছাড়া প্রচলিত কনশাস কিংবা সাব-কনশাস মাইন্ড ধারনার সাথে আমি একমত প্রকাশ করি না। এসব ধারনার জন্ম এমন সময়ে যখন জীন সংক্রান্ত আধুনিক গবেষণার অস্তিত্ব ছিলনা।
আমার মতে , একটা কার্যকর প্রোগ্রাম যেহেতু হার্ডওয়ার-সফটওয়ার আন্ত:ক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল , সেখানে প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা কৃত্রিমভাবে ডেভেলপ শুধু সফটওয়ার দিয়ে সম্ভব নয়। আমাদের এক্ষেত্রে, মস্তিষ্কের অনুরূপ ভৌতিক হার্ডওয়ার প্রয়োজন। একটা ওরাংওটান বা বিড়ালের হার্ডওয়ারকে কাজে লাগিয়ে সামনে অগ্রসর হলে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকাংশে বেশী।
@সংশপ্তক,
ডিজিটাল ফিজিক্স হাইপোথিসিস অনুযায়ী সকল ভৌত পদার্থ কম্পিউটারে সিমুলেট করা সম্ভব।
আমি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের যেসব বই পরেছি, সেখানে কিন্তু কনশাসনেস সব-কনশাসনেস নিয়ে কথা চলেই আসতে দেখেছি, বাতিল হতে দেখি নি।
http://en.wikipedia.org/wiki/Consciousness#Evolutionary_psychology
কন্শাস্নেসকে একটা বাড়তি ভূত হিসাবে না দেখে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ ধরনের ফাংশন হিসেবে দেখা হয়, যা বিবর্তিত হয়েছে।
ওরাংওটান বা বিড়াল দিয়ে শুরু করা ঠিক আছে, বা আরো নিচে। কিন্তু ওরা কি ফর্মাল লজিক ব্যবহার করে?
এনিমেল বিহেভিয়ার লার্নিংয়ে যেভাবে প্রাণীর আচরণকে মডেল করা হত, তার ভিত্তিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একটি বিশেষ শাখা তৈরী হয়, এবং এই শাখায় কতগুলো মডেল তৈরী করা হয়। পরবর্তীতে নিউরো বিজ্ঞান-এর গবেষণায় তদ্রুপ মডেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে মস্তিষ্কে। বিবর্তনীয় ব্যাখ্যাগুলোও ওই মডেলের সাথে কম্প্যাটিবল।
ওই মডেলগুলো মূলত রিয়াক্টিভ বিহেভিয়ার নিয়ে। আমার মনে হয় এগুলোকে সফলভাবে রোবোতে চড়াতে পারলে অন্তত একটা কুকুরের আচরণ পাওয়া যাবে।
@ধ্রুব,
ডিজিটাল ফিজিক্স হাইপোথিসিস অনুযায়ী সকল ভৌত পদার্থ কম্পিউটারে সিমুলেট করা সম্ভব। তবে , মস্তিষ্কের সম্পূর্ন ‘অপারেশনাল ম্যাপিং’ এখনও পরিস্কার না হওয়ায় এ ব্যপারে সমস্যা আছে। মস্তিষ্ক সম্পর্কে এই সীমিত তথ্য দিয়ে মস্তিষ্ক সিমুলেট করার চেষ্টা করলে তা বাস্তবে অন্য কিছুতে রূপ নেবে।
বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানে কনশাসনেস সব-কনশাসনেসকে অনেকে যেভাবে ফাংশন হিসেবে ব্যাখ্যা করছে , তা প্রচলিত কনশাসনেস সব-কনশাসনেস থেকে অবশ্যই ভিন্ন। শরীরের কোন একটা কোষের যে কোন একটা নির্বাহী আদেশ ও তার কার্যকরীকরনকে ফরমাল অথবা ইনফরমালে বিভক্ত করা সঙ্গত কিনা – এ ব্যপারেও আমি নিশ্চিত নই। একটা বাকটেরিউম কোন রকম মস্তিষ্ক ছাড়াই তার কমান্ড-কন্ট্রোল পরিচালনা করছে ডিএনএ কোডিং এর সাহায্যে । উপরের দিকে আমরা মেরুদণ্ডী স্তন্যপায়ী হলেও ক্ষুদ্রতর একক পর্যায়ে বাকটেরিয়ার মত আমরাও তো এককোষী আর বাকটেরিয়ারা আমাদের থেকে কয়েক বিলিয়ন বছরের পুরোনো।
@সংশপ্তক,
আপনি যখন লজিকের কথা বলেছিলেন, আমি তখন মনে করেছি এ আই তে যে ফর্মাল লজিকের গবেষণা হয়, সেটার নির্দেশ করেছেন। যাহোক, আপনার এই ব্যাকটেরিয়াকেও এ আই গবেষণার জন্য আলোচনা মনে করতে পারাটা খুবই ইন্টারেস্টিং। কারণ আমিও গুণগতভাবে বিভিন্ন স্তরের প্রাণীকে পার্থক্য করি না। এবং আমার কাছে এই ভিউটিই গ্রহণযোগ্য।
আমার এপ্রোচটা কানেকশনিস্ট। মস্তিষ্কের সকল ফাংশন আবিষ্কার হওয়া পর্যন্ত কিন্তু বসে থাকা উচিত না। বরং দেখা গেছে কানেকশনিস্ট এপ্রোচের বিভিন্ন এলগরিদমিক মডেল পরবর্তীতে মস্তিষ্কের ফাংশন আবিষ্কারে সাহায্য করেছে। মানে উল্টোটাও হচ্ছে।
কিন্তু মানব-মস্তিস্কের রহস্য উন্মোচন করার আগে কি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করা সম্ভব?
@পৃথিবী,মনে হয় সম্ভব।ইলেক্ট্রন এর কথা না জেনেই কিন্তু এডিসন আশ্চর্য সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র বানিয়ে ছিলেন।সুতরাং আশা করতে দোষ কি?
@পৃথিবী,
অনেক কৃবু গবেষক মনে করেন সম্ভব। এ ব্যাপারে সংক্ষেপে এখানে লিখেছিলাম।
জীবনের উৎপত্তি, কৃত্রিম জীবন ইত্যাদি নিয়ে আমার আগ্রহ অনেকদিনের। আমি আমার চিন্তাধারা গুছিয়ে ক’ বছর আগে একটা বইয়ের আকারে রূপ দিয়েছিলাম, মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে
এবারের ডিস্কভারে জেনেটিসিস্ট ক্রেগ ভেন্টরের “সিন্থেটিক লাইফ'” নিয়ে একটা সাক্ষাৎকার বেশ লাগলো। কৃত্রিম জীবন তৈরির একেবারে দ্বারপ্রান্তে আছেন বিজ্ঞানীরা। রসায়নাগারে কৃত্রিমভাবে ভাইরাস তৈরী করার প্রচেষ্টা সফল হয়েছে অনেক দিন হল; ২০০৩ সালে প্রথম সিন্থেটিক ভাইরাস তৈরী করা হয়েছিল – এবং তা ১০০% নিখুঁত। পোলিও ভাইরাস সহ দশ হাজার প্রজাতির ভাইরাস তৈরী করা গেছে ভাইরাসের জিনোম পর্যবেক্ষন করে এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সাহায্যে। এক ব্যাক্টেরিয়া থেকে অন্য ব্যাক্টেরিয়াতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াও সফল হয়েছে। শুধু তাই নয়, সেই তৈরির পথে পাওয়া গেছে এমন কিছু তথ্য যা আমাদের চিকিৎসা-শাস্ত্রে রীতিমত বিপ্লব এনেছে। ক্রেগ ভেন্টর সহ অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন আর আগামী দুই বছরের মধ্যেই আদি কোষ বা প্রোক্যারিওট আর দশ বছরের মধ্যে প্রকৃত কোষ বা ইউক্যারিওট বানানো সম্ভব হবে। সিথেটিক লাইফের গবেষণা অদূর ভবিষ্যতে “মলিকিউলার বায়োলজি”কে প্রতিস্থাপন করতে চলেছে বলে ভেন্টর মনে করেন।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। আরো বেশি করে মুক্তমনায় লিখুন, এবং নতুন লেখা দিন।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিলেন।
আমি অবশ্য আপাতত নিজে নিঁখুত চিন্তা দিয়ে এগোনোর চেষ্টা করছি। যেমন এখানে বিজ্ঞানের দর্শন সম্পর্ক আমার মতামত তুলে ধরলাম। এটা নিয়ে আলোচনা করা গেল মন্দ হত না। আশা করি মুক্তমনায় আরো আরো আলোচনা হবে আর উত্সাহীদের প্রশ্ন মেটানোর জন্য নতুন লেখা দেবার উপকরণ পাব।
ধন্যবাদ।
চমৎকার সুচনা! পরের পর্বগুলোর জন্য অপেক্ষা করছি।
এভাবে কখনও ভেবে দেখিনি, কিন্তু লাইনটা পড়ার সংগে সংগে মনে হলো – “আরে, তাই তো!”
এই উপলব্ধি আনন্দের হবার কথা। 🙂
ধন্যবাদ।