(১)
মুক্তমনাতে অবিশ্বাসী বা নাধার্মিকরা নিজেদের বিশ্বাসের বিবর্তন নিয়ে লিখছেন। ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং । সভ্যতা, মানব চেতনা, বুদ্ধি-সব কিছুরই বিবর্তন হয়। তবে ব্যাক্তিগত বিবর্তন একটা ফিকশনাল টাচ।
মানব মনের বিবর্তনের মূলে আছে দ্বন্দ। জিডু কৃষ্ণমূর্তির মতে বিশ্বাসের সাথে অভিজ্ঞতার সংঘাতেই জন্ম নেয় মনের বিবর্তন। যারা কমিনিউস্ট, হিন্দু, মোল্লা ইত্যাদি বিশ্বাসে বিশ্বাসী-এবং ঠিক সেই ভাবেই মারা যায়,তারা প্রতিনিয়ত নিজের মনের এই দ্বন্দকে অস্বীকার করে চলেছে। এতে তাদের কি লাভ হয় আমি জানি না। তবে মানব মন এবং মননের বিবর্তন কচুরী পানার মতন হিন্দুত্ব, কমিনিউস্ট, ইসলামিস্ট ইত্যাদি ঘাটে আটকে যাওয়া সমাজ এবং রাজনীতির জন্যে ক্ষতিকর।
কিভাবে মনের বিবর্তন হয়-সেটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বলি। আমি একদম ছাপোষা মধ্যবিত্ত শিক্ষক পরিবারের সন্তান। যেখানে মদ্যপান ও অশৌচ। বাঙালী মধ্যবিত্ত বামপন্থী পরিবারগুলি কিছু বিশ্বাস এবং মুল্যবোধের গোডাউন। তাই আই আই টিতে যাওয়ার আগে মদ্যপায়ীদের নিয়ে আমার খুব ভাল ধারনা ছিল না। একধরনের বিশ্বাস। মিথ এর একটা উদাহরন । মধ্যবিত্তদের মিথিক্যাল ভালোমানুষদের স্বপ্নের স্বর্গপুরী। সেখানে প্রথমবর্ষে আমি বিয়ার খাওয়া ধরলাম-মালসেবনে আমার গুরুদেব ছিলেন জ্যাকোরিয়া চাকো বলে একজন সিনিয়ার যে এখন কলেজ পার্কে পার্টিকল ফিজিক্সের বিখ্যাত অধ্যাপক। কেন ভাংল এই মিথ? যেখলাম এই দাদাটি আমার থেকেও অনেক বুদ্ধিমান, ‘ভদ্র’ এবং জ্ঞানী-এবং এর পরেও সুরাপায়ী! তাহলে সুরাপান বাজে হতে পারে না!
আরো অনেক মিথের শিকার আমরা। কিছু মিথের সাথে আমরা বড় হই-সেটাই আমাদের ধর্ম হয়ে দাঁড়ায়। আমার ধারনা ছিল যারা কোম্পানীর সি ই ও টাইপের হয়-তারা বোধ হয় খুবই ব্যাবসায়ী বুদ্ধির-ব্যাবসা নিয়েই সারাদিন ভাবে। সাধারন লোকদের সাথে মেশে না। ইটালিতে আমি প্রথম যে চাকরিতে ঢুকি-আমাদের সি ই ও ছিল ডঃ মার্কো বালদাসারি। তার সাথে হঠাৎই ভালো বন্ধুত্ব হল-কারন ইতিহাস। ইতিহাস আমাদের দুজনেরই খুব প্রিয় ছিল। অন্যান্য কোম্পানীতেও দেখেছি সি ই ও যারা হয়, তাদের দর্শন এবং সাহিত্যের ভিত ব্যাবসার মতনই পোক্ত। যেকোন কমিনিউস্টকে জিজ্ঞেস করুন। কোম্পানীর সি ই ও দের নিয়ে তাদের বিশ্বাস এবং ধারনা এর ১৮০ ডিগ্রী বিপরীতে। তাই বলে ভাববেন না আমি ধণতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাইছি। আয়ান র্যান্ডের অবজেক্টিভিজম পড়ে মনে হয়েছিল-তিনিই ঠিক। কর্পরেট এবং ব্যাবসার জীবনে ধনতন্ত্রে ঘানি টানতে গিয়ে অবজেক্টিভিজমের মিথও এখন বাস্প। অভিজ্ঞতা মিথকে ভাঙে।
(২)
ধর্ম বা বিশ্বাস, মিথোলজীর একটা সিস্টেম। সমাজ তার রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের জন্যে কিছু কিছু মিথকে নির্বাচন করেছে-কালক্রমে সেগুলোই ধর্ম। ঈশ্বর এমনই একটি মিথ। সবথেকে শক্তিশালী মিথই বটে। কারন, এই মিথটি ছিল নৃততাত্বিক প্রয়োজন। পশুদের ত আর ঈশ্বর নামক মিথের দরকার নেই। মানব সমাজ জটিল বলেই এই মিথটার জন্ম হল। সামাজিক এবং রাজনৈতিক সেলফ অর্গানাইজেশনের কারনে ( যুথবদ্ধ জীবনের প্রয়োজনে) এই মিথগুলো প্রাক-মিডিয়ার যুগে দরকার ছিল। এই নিয়ে আমার আগের কিছু লেখা আছেঃ
[১] [২]
সুতরাং অবিশ্বাসী কেন হলাম, সেটাকে এই ভাবে লিখি। কিছু মিথের মধ্যে আমরা জন্মে ছিলাম। কিন্ত যেদিন বুঝলাম এই মিথক্রিয়া আসলেই বিষক্রিয়া-পরিত্যাগ করিলাম। পরের প্রশ্ন-কেন এই মিথগুলিকে বর্জন করে চলেছি।
[৩]
আমার কাহিনীটা মোটেও বিশ্বাসী থেকে অবিশ্বাসীতে উত্তরোনের কাহিনী না। আমি বিশ্বাসী কোনদিনই ছিলাম না। কারন ওই মিথগুলো আমার মাথায় কেও ঢোকায় নি। তাই আমাকে নাস্তিক হওয়ার জন্যে কিছুই পড়তে হয় নি। এই অবিশ্বাসীর জীবনটাই আমার কাছে ছিল স্বাভাবিক। বাড়িতে অজস্র বিজ্ঞানের বই ছিল। কিশোর জ্ঞানবিজ্ঞান বলে বাচ্চাদের জন্যে একটা ভাল বিজ্ঞানের ম্যাগাজিন ছিল শৈশবে। ওটা নাস্তিকতা প্রচার করত না বটে-কিন্ত বৈজ্ঞানিক মনের উন্মেষ ঘটাতো। আমার বিচারে নাস্তিকতার চেয়েও দ্বিতীয়টা আরো বেশী দরকার। কমিনিউস্টরাও নাস্তিক-কিন্ত তাদের মধ্যে কোন বিজ্ঞানচেতনা নেই। বিজ্ঞানচেতনাহীন নাস্তিকরা আস্তিকদের চেয়ে আরো বেশী ভয়ংকর। পৃথিবীর বৃহত্তম গণহত্যাগুলি স্টালিন পলপটের মতন অর্ধশিক্ষিত নাস্তিকদের কাজ। তাই নাস্তিক বলে উল্লাসিত হওয়ার কিছু নেই-যদি না তার মধ্যে প্রকৃত বিজ্ঞানচেতনার উন্মেষ না ঘটে থাকে। আমার কাছে বিজ্ঞান চেতনার উন্মেষ-সায়েন্টিফিক এনলাইটমেন্ট আস্তিকতা-নাস্তিকতার থেকেও বেশী দরকার। ভুলভাল আদর্শবাদের পাঁকে এই পৃথিবী ভর্তি-তারা আস্তিক না নাস্তিক তাতে কিছু যায় আসে না। কারন এদের মধ্যে সত্যিকারের কোন বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা নেই।
এই জন্যেই আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বাংলা ভাষাতে বাচ্চাদের জন্যে বিজ্ঞানপত্রিকা চালানোর। ব্যাস্ততার জন্যে আমার মনের খুব প্রিয় এই প্রজেক্টটা পিছিয়ে যাচ্ছে।
[৪]
অবিশ্বাসী জীবন কাটানো আমার জন্যে বেশ সহজ। আমার বন্ধু সার্কলে আস্তিক প্রায় নেই-থাকলেও ধার্মিকত কেওই নেই। বাঙালী হিন্দুদের মধ্যে ধর্ম প্রাবল্য এমনিতেই খুব কম। তাই কে ধার্মিক আর কে না-সেটা নিয়ে আমি মাথা ঘামাই না। প্রয়োজন হয় না। ক্লাশ সেভেনে আমার ঠাকুর্দা মারা যায়। আমাকে মাথা কামাতে বলা হয়েছিল-আমি কামাই নি। ক্লাশ সিক্সেও আমি চ্যালেঞ্জ করে লক্ষীর প্রসাদে পা দিয়েছি। আমি উন্নাসিক-এটা সবাই জানত। বাবা-মায়ের কাছে অনেক অভিযোগও আসত। আমার কিছু যায় আসে নি। আমি সত্যিই আস্তিকদের ব্যাপারে উন্নাসিক ছিলাম । আজও আছি। জ্ঞান-বিজ্ঞান-দর্শন বোঝে না বলে লোকে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে। এই ধারনা আমার ছোটবেলাতেও ছিল। আজ্ও আছে। ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের আমি ইন্টেলেকচুয়ালি ইনফেরিয়র বলেই মনে করি।
পরবর্তীকালে ক্লাশ এইটে বিবেকানন্দ রচনাবলী পড়া শুরু করি। ধর্ম দর্শন নিয়ে সেটাই জানার শুরু। নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ছিলাম উচ্চমাধ্যমিকে। তখন আরো বেশী ধর্ম এবং দর্শন নিজে জানার সুযোগ হয়েছে। ভাল লাইব্রেরী ছিল। সন্নাসীদের মধ্যে কেও কেও অবশ্যই পন্ডিত ছিলেন। কিন্ত ধর্ম নিয়ে আমার পড়াশোনা আমাকে ধার্মিক করে নি-কারন ধর্ম দর্শন নিয়ে আমি যখন পড়াশোনা করছি, তখন বিজ্ঞানের ভিত বেশ দৃঢ় হয়ে গেছে। অধিকাংশ লোক ধর্মদর্শনের শিকার হয়-কারন বিজ্ঞান ঠিক করে বোঝে না। আমি অনেক ধর্মীয় গুরুর সাথে মিশেছি বা মিশি। তাদের যুক্তির দৌড় বোঝার চেষ্টা করি। এখন আর সেটা বিশেষ করি না-কারন এদের সীমাবদ্ধতা, খেলাঘরের গন্ডি আমি ভালো ভাবেই বুঝে গেছি। এই মুহুর্তে ধর্মদর্শনের প্রতিটা দিকই আমার কাছে অতিরিক্ত-আমি মনে করি না এর কোন দরকার আছে। বিজ্ঞান দিয়েই মানব সভ্যতা এবং মানব জীবন দুটোই আরো অনেক ভাল চলে। বিজ্ঞানের দর্শনের চেয়ে শক্তিশালী দর্শন পৃথিবীতে নেই। তাই সেটাই প্রচার করি। এই ব্যাপারে আমাদের আপোসহীন থাকতে হবে সারা জীবন।
নাস্তিক হিন্দু ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘাত আছে-তবে অতটা নয়। হিন্দু ধর্মের নাস্তিক্যদর্শনগুলো আস্তিকতার সাথে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে মোটামুটি একটা যৌত্বিক অবস্থানে এসেছে। বৌদ্ধ ধর্ম সম্পূর্ন নাস্তিক ধর্ম-কিন্ত এদের প্রচারকরা একেও আস্তিক বানিয়েছে। শাক্যমুনি যে জন্যে বৌদ্ধ ধর্ম শুরু করেছিলেন-তার উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যার্থ। একেশ্বরবাদি ধর্মগুলোর সাথে বিজ্ঞানের সংঘাত বেশ তীব্র। কারন ইসলাম বা খৃষ্টধর্ম আরো বেশী ক্যানোনিক্যাল-বা বই ভিত্তিক। আত্মজিজ্ঞাসাভিত্তিক না।
ধর্মের ব্যাপারে আনকম্প্রোমাইজিং থাকা উচিত। বিবেকানন্দ, গৌতম বুদ্ধের ধর্মসংস্কারে নীট ফল শুন্য। জঞ্জাল জঞ্জালই থেকেছে। সেটাকে বিদায় করাই উচিত ঝেঁটিয়ে। নইলে ভারতের বৃহত্তম কমিনিউস্ট পার্টিটির মতন ক্লাস পলিটিক্স ছেড়ে কমিউন্যাল পলিটিক্স করতে হবে। তবে এটাও আমি বারবার বলে এসেছি ধর্ম মানুষের কিছু প্রয়োজন মিটিয়ে থাকে-আত্মজিজ্ঞাসার অনুসন্ধান। সেই জায়গটাকে বিজ্ঞান দিয়ে ভরাট করতে হবে। এই নিয়ে আমাদের আরো বেশী লেখালেখি করা দরকার। এটা না হলে প্রকৃত ধর্ম নিরেপেক্ষ সমাজ আসবে না। ধর্ম থাকবে-আবার সমাজ হবে ধর্মনিরেপেক্ষ এসব হাঁসজারু মার্কা পলিটিক্যালি কারেক্ট চিন্তাধারা ছাড়তে হবে।
অন্যের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করব না-এসব বালখিল্যের মতন কথাবার্ত্তা। কোরানে প্রায় ৫০০ আয়াত আছে প্যাগানদের বিরুদ্ধে। তাহলে, ইসলাম যে পালন করছে, সে প্যাগানিস্ট হিন্দুদের ঘৃণা করতে বা নিদেন পক্ষে হিন্দুধর্মকে ঘৃণা করতে বাধ্য। তবে আমার দেখা মতে অধিকাংশ মুসলমানই এমন নয়। কারন তারাও কোরানে কি আছে সেটা জেনে ইসলাম পালন করে না। সুতরাং সেই ধর্মকে ত্যাগ করা ছাড়া ধর্ম নিরেপেক্ষ রাষ্ট্রের ভিত অসম্ভব। তবে কেও আত্মজিজ্ঞাসার কারনে ধর্মেই আসতেই পারে। সেটাকে আটকানো দরকার। কারন তাহা চোরাবালি।
মোদ্দা কথা ধর্মের ব্যাপারে আমরা পলিটিক্যালি কারেক্ট ব্যাটিং করার চেষ্টা করি। এই মিথ্যাচারে ধর্ম নিরেপেক্ষ রাষ্ট্র এবং সমাজের ভিত আরো দুর্বল হয়।
ইসলামে কত রক্ত-সেটাই বলতে হবে। হিন্দু ধর্মে কোথায় কে হেগে গেছে-সেই নোংরাটা দেখাতে হবে। ধর্ম কত মহান বলে নিজেকে জনপ্রিয়তার সিঁড়ি দিয়ে নামানোটা খুব সহজ-শ্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটাই কিন্ত ‘জীবনের’ স্পন্দন। মৃত্যু যখন অলঙ্ঘ্য নিয়তি-তখন সত্যের জন্যে আপোসহীন সংগ্রামী মৃত্যুই নিজের কাছে আমার একমাত্র প্রত্যাশা।
আমি কৃতজ্ঞ আমার বাপ একসময় বাম আন্দোলন করত, নইলে আজকে আমি পূ্র্বপুরুষদের পদাঙ্ক অনুসরণ কইরা পীর-ফকির হওয়ার দিকে ধাবমান হইতাম। কোন এক অদ্ভুত কারণে আমার বাপ বাম থেকে ডানে ডিগবাজি দেয়নি, আমার পরিবারে মওদুদিবাদের সরব উপস্থিতির কারণেই হয়ত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি তার মোহভঙ্গ হয়েছিল। তবে নামায-কালাম না করলেও ঠিকই নিয়মিত জ্যোতিষশাস্ত্রের বই কিনে………
কয়েকটি নাম প্রস্তাব করি।”আমাদের অবিশ্বাস”/”বিশ্বাসহীনতার বিস্তারিত”/”একদল বিশ্বাসীর মৃত্যু অথবা পুনঃজাগরণ” ইত্যাদি।সবাই কি বলেন?
@পথিক,
নামের একটা তালিকা এখানে দিয়েছিলাম, দেখতে পারেন, এবং আপনার অভিমত জানান।
“অবিশ্বাসী যোদ্ধারা”- কেমন ?
@অভিজিৎ,
কেন আমরা ধর্মবিশ্বাসী নই
খুব পরিস্কার করে বলা হয়, যদিও কাব্যিক নয় কিন্তু আমার ভোট এটাতেই থাকলো।
@অভিজিৎ,
আমার “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী”টাই বেশি পছন্দ। নতুন করে বললে “অবিশ্বাসীর জবানবন্দী” টাতে একটা স্বীকারোক্তিমূলক ভাব আছে, এটাও ভালো।
আর নিজের থেকে বললেঃ-
১- অন্ধকারের অন্তরালে।
২- অন্তর্যামীর অন্তরালে। (সব খালি অন্তরালে বাইর হইতেসে!!! ঘটনা বুঝলাম না!!)
২- আমার আলো।
৩- আমি, আলো, আঁধার।
(হুদাই…… আমার দেয়া নাম আমার নিজেরই পছন্দ হইতেসে না!! সব বাদ!! 😥 )
বিপ্লব পাল,
অসম্ভব সুন্দর লেখা। অভিঞ্জতা গুলো এতো চমৎকার মিলে গোলো কিকরে? একটু আগে আর পরে! তিন নম্বর অনুচ্ছেদ তো একেবারেই যেনো আমার কথা! আপনার মতো আমারো এই ইচ্ছে আছে,
খুব দরকার অনুভব করছি। তথাকথিত বস্তাপচা ধ্যানধারনার আমূল পরিবর্তনে এর কোন বিকল্প নেই। দরকার বিঞ্জানমনস্কতার উপরে জোড় দেবার। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বাভাবিক বিকাশ মুক্তমানুষ হিসেবে গড়ে উঠবার এইটেই হবে প্রকৃত সড়ক। ভালো থাকুন।
@কেশব অধিকারী,
অভিজিত আর বন্যাকে এই ব্যাপারে নেতৃত্ব দিতে হবে। ওরা বৃদ্ধদের জন্যে ডারউইন চর্চা করে বৃথা সময় নষ্ট করছে। বিজ্ঞান চর্চা বাড়ানোর দরকার বাচ্চাদের মধ্যে। আমার মতে এটাই মুক্তমনার মুখ্য প্রজেক্ট হওয়া উচিত। ১৩-১৪ বছর বয়সটা আস্তিকতা-নাস্তিকতার জন্যে খুব ফর্মেটিভ। ওখানে ১ মিনিট সময় খরচ না করলে পরে ১ বছর খরচ করেও কিছু লাভ হয় না।
@বিপ্লব পাল,
সহমত। ফাঁকিবাজি মন্তব্য। খুবই ব্যস্ততার মাঝে আছি 🙁 । নিজের কথাগুলো অন্য ব্লগে মন্তব্য হিসেবে দিয়েছিলাম অল্প কথায়। তবে আলাদা ব্লগ হিসেবে দেওয়ার ইচ্ছে আছে সব সময়। দেখি পরের মাসে।
“অবিশ্বাসের জবানবন্দি” এই জবানবন্দি কথাটি শুনতে নিজেকে কেমন অপরাধী অপরাধী মনে হয়। তার চেয়ে “অবিশ্বাসের সুত্রপাত” বা “অবিশ্বাসের স্মৃতিকথা” বা আরো সুন্দর কোন নাম ট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করছি।
@বিপ্লব পাল,
এখানে একটু দ্বিমত আছে। নিকট ভবিষ্যতে যারা বাবা-মা হবে তাদের বুদ্ধি খোলা দরকার, উদার বাবা-মার সন্তান উদার হতে বাধ্য। অবশ্য আপনি যদি বৃদ্ধ বলতে চল্লিশের কাছাকাছি লোকজনকে বুঝিয়ে থাকেন তাহলে অসুবিধা নাই 😛
এই বক্তব্যটাতে আমার কিঞ্চিত দ্বিমত আছে বিপ্লব দা।
আপনার বক্তব্য অনুযায়ী নাস্তিক তাহলে দু’ধরনের- (১) বিজ্ঞানচেতনাহীন নাস্তিক (২) বিজ্ঞানচেতনা সম্পন্ন নাস্তিক।
আসলে কি তা-ই ? বিজ্ঞানচেতনাই যার নেই, তিনি নাস্তিক হন কী করে ! কোনকিছু না বুঝে তো নাস্তিক হওয়া যায় না ! ড. আহমদ শরীফের বক্তব্যের সুরে বলতে হয়- মানুষ না-বুঝে জন্মসূত্রে আস্তিক হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাস্তবতার পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষণের কারণে সৃষ্ট সন্দেহ, প্রশ্নমুখীনতা, অধ্যবসায়, মেধা-মননের যুক্তিশীল ব্যবহার ও মুক্ত-চিন্তার উন্মেষের মধ্য দিয়ে একজন নাস্তিকের জন্ম হয়। আর বিজ্ঞানচেতনা ছাড়া সেগুলো অর্জন কি সম্ভব ?
বিজ্ঞানচেতনার মধ্য দিয়ে অসংখ্য উদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর পেতে পেতে খুব সচেতনভাবেই একজন যুক্তিবোধসম্পন্ন নাস্তিকের জন্ম হয়। এটা একটা স্থায়ী পরিবর্তন। যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে একজন নাস্তিকের জন্ম না হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি আসলে নাস্তিকই নন। বরং দিশাহীন আস্তিকই বলবো। আস্তিক্য ও নাস্তিক্যের মধ্যবর্তী অবস্থা এটা। এই অস্থির অবস্থায় তিনি পাগলের মতো কিছু প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর খুঁজতে থাকেন। এবং খুব যৌক্তিকভাবেই তিনি তখনো নিজেকে প্রকাশ্যে নাস্তিক বলে প্রচার করেন না। কেননা তার প্রশ্নের আপাত কোন মীমাংসা হয়নি তখনো। এটা তার দ্বিধাগ্রস্ততা এবং একই সাথে সততাও।
আমি বিশ্বাস করি বিজ্ঞানচেতনাহীন নাস্তিক বলতে কিছু নেই। যতক্ষণ না তিনি নাস্তিক, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি দোদুল্যমান বা সন্দেহগ্রস্ত আস্তিক। কিন্তু তার নিজের ধারণায় তিনি নাস্তিক। এই কাঁচা অবস্থাটাই আসলে মারাত্মক, ভয়ঙ্কর। ওই মুহূর্তে তার কোন ভিত থাকে না। এই অবস্থায় তার প্রশ্নমুখীনতা থেমে যাওয়া মানে নিজের জন্য সমাজের জন্য একটা বিপর্যয়কর অবস্থায় থেকে যাওয়া তার। এই ভয়ঙ্কর অবস্থাটাকেই হয়তো আপনি বিজ্ঞানচেতনাহীন নাস্তিক বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি অন্তত ‘নাস্তিক’-এর মতো অত্যন্ত সৎ, পবিত্র ও উঁচুদরের শ্রদ্ধাপূর্ণ শব্দটাকে এই ভুল জায়গায় বসাতে রাজী নই। কেননা বিজ্ঞানচেতনার অনুপস্থিতির কারণে যেকোন সময় তারা টলে যান, পুনর্মুষিকভব হয়ে বেঘোর ও বিপজ্জনক আস্তিক্যে ফিরে যান। তখন তারা নিজেকে এতোটাই মহাপণ্ডিত বলে জাহির করতে থাকেন যে, তাদের গায়ের জোরের কাছে যুক্তি-বুদ্ধিসম্পন্ন নিরীহ মানুষের টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ে।
আমি ‘নাস্তিক’ শব্দের এতোটা অপচয়-বিরোধী।
জানি না আমার বক্তব্যটা পরিষ্কার করতে পারলাম কিনা। আশা করি আমার বক্তব্যের সীমাবদ্ধতাটুকু উপলব্ধি দিয়ে বুঝে নেবেন।
লেখাটা ভালো হয়েছে, তবে লেখার বিস্তৃতিতে আরেকটু সময় দিলে মনে হয় পাঠক হিসেবে অতৃপ্তিবোধ আরেকটু কম হতো। আপনার লেখার আবেদনই অন্যরকম তৃপ্তিদায়ক। পাঠক হিসেবে একটু বেশি পেটুক কিনা তা-ই।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
@রণদীপম বসু,
আমি লিখেছিলাম অভিজ্ঞতা হচ্ছে মিথ বাস্টার।
স্টালিনকে দিয়ে শুরু করি। ওর গণহত্যার পেছনে সোশাল ডারুইনিজমের বিশাল অবদান ছিল। লাইসেঙ্কোর অপবিজ্ঞা্ন স্টালিনিজমের দান-যার জন্যে লাখে লাখে লোক রাশিয়াতে অভুক্ত থেকেছে। সুতরাং নাস্তিক মানে অপবিজ্ঞানে বিশ্বাস করবে না এমন না। আমাদের পশ্চিম বঙ্গের সব নাস্তিকরা কমিনিউস্ট-তারা সেটাকে বৈজ্ঞানিক বলে মনে করে।
শুধু নাস্তিক কমিনিউস্টদের কেন দোষ দিচ্ছি। নাস্তিক ক্যাপিটালিস্টদের কুকীর্তিও বলি।
ডঃ কেনেথ লি। এনরনের সি এই ও। এই নাস্তিকের ধারনা ছিল শুধু যোগ্যরাই টিকে থাকে -তাই এনরনে ‘মরাল কোড’ বলতে কিছু ছিল না-ছিল টার্গেট এবং সে্টাকে যেন তেন প্রকারে-ঘুষ দিয়ে-পাওয়ার প্লান্ট বসিয়ে লোককে লোড শেডিং এ রেখে টাকা বানাতে হবে। সে প্রকাশ্যেই কোম্পানীতে বলত মরাল কোড ঈশ্বর বিশ্বাসীদের জন্যে! তার কোম্পানীর জন্যে না!
এই ইতিহাসগুলো জানতে হবে। নাস্তিকতা জীবনের স্বাভাবিক গতি। কিন্ত মনে রাখতে হবে জার্মানীতে হিটলার এপিসোড আটকাতে স্কুলে ছাত্রদের ধর্ম শিক্ষা দিচ্ছে। এটা কোন নাস্তিকদের দোষে হল? সুতরাং শুধু নাস্তিক হলেই চলবে না-এনলাইটমেন্টও চাই। মানবিকতাও দরকার।
বিপ্লব,
ক্যাটাগরি হিসেবে : দর্শন, ধর্ম এর পাশাপাশি “অবিশ্বাসের জবানবন্দী” টাও সিলেক্ট কর।
এধরণের লেখাগুলো সব একসাথে থাকুক।
চমত্কার লিখেছেন। ধর্মীয় সংস্কারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে মন সদা ব্যাকুল। কিন্তু কি করি বলেন- আমার মা ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি পরম ধার্মিক, দিনকে দিন তা আরও বেড়েই চলেছে। ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বললেই মা কষ্ট পায়। তাই মার সামনে মায়ের বিশ্বাসকে আঘাত করে অন্তত কিছু বলতে পারিনা, কে না চায় মা কে খুশী রাখতে? তবে এই মায়ের কসম বিপ্লব দা, আমার পরবর্তী বংশধররা যেন এই ধর্মের কালো ছোবল মুক্ত হয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে সেই চেষ্টা আমি করব।
@মিঠুন,
আস্তে আস্তে মৃদু ভাবে করতে হবে। কিন্ত আঘাত না করা ছাড়া পথ নেই।
-তুই গরুর মাংস খাস?
-হ্যা খাই। কিন্ত খেলে ক্ষতি কি?
প্রশ্ন কর। নিস্পাপ প্রশ্নটা ছুড়ে দাও। তাকে যুক্তি দিতে দাও।
@বিপ্লব পাল,
ঠিক বলেছেন। সে চেস্টা আমি প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি।
@মিঠুন,
:yes: :yes: :yes:
অসাধারণ, পুরো লেখাটার সাথেই একমত না হয়ে পারছি না।
আপনার এই উক্তিটি আমার ভাল লেগেছে “বিজ্ঞানচেতনাহীন নাস্তিকরা আস্তিকদের চেয়ে আরো বেশী ভয়ংকর”। বাকি অংশ ভাল লাগার কোন কারন নাই। তা ভারতে তো এখনও সুযোগ পাইলে মসুলমানদের তো বাশ দেওয়া হয়, এতে তো বোধ হয় আপনি বেজায় খুশি কারন হাজার হোক “সেটাকে আটকানো দরকার। কারন তাহা চোরাবালি।” তার উপর “নাস্তিক হিন্দু ধর্ম বা বৌদ্ধ ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘাত আছে-তবে অতটা নয়” কিন্তু “একেশ্বরবাদি ধর্মগুলোর সাথে বিজ্ঞানের সংঘাত বেশ তীব্র, কারন ইসলাম বা খৃষ্টধর্ম আরো বেশী ক্যানোনিক্যাল-বা বই ভিত্তিক।”