পূর্ব থেকে পশ্চিম
পর্ব–১০
‘নিউইয়র্ক সিটি’। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এটি নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী নয়, তার ধারেকাছের কিছুও নয়। নিউইয়র্ক স্টেটের বর্তমান রাজধানী ‘আলবেনী’। অথচ ১৭৮৫ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত পুরো যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ছিলো এই নিউইয়র্ক শহর। সাধারণের কাছে ‘আলবেনী’ খুব একটা পরিচিত নাম নয়, কিন্তু সারা বিশ্বে একনামে পরিচিত ‘নিউইয়র্ক শহর’। ব্রঙ্কস্, ম্যানহাটন, ক্যুইন্স্, ব্রুক্লিন এবং স্ট্যাটেন আইল্যান্ড এই পাঁচটি প্রশাসনিক এলাকায় বিভক্ত এই শহরের জনসংখ্যার পরিমাণ জানতে কোনো পরিসংখ্যানের দরকার পড়ে না। পাবলিক বাস কিংবা ট্রেনে উঠতে গেলেই টের পেয়ে যাবেন। নানা বর্ণের, নানা গোত্রের, নানা পেশার মানুষের সন্মিলনস্থল এই শহরের নামের আগে কি বিশেষণ দেয়া যায় সেটাই রীতিমত এক ভাবনার বিষয়।অথবা বলতে পারেন ‘নিউইয়র্ক’ শব্দটা নিজেই এখন একটা বিশেষণ।
ইউএসএর অন্য শহরগুলিতে যত ভালো করেই ইংরেজি বলার চেষ্টা করেন না কেন, তাদের বুঝতে একটু না একটু সমস্যা হবেই।কিন্তু এই শহরে যা-কে যা-ই বলেন, দেখবেন সহজে বুঝে ফেলছে। সম্ভবত এদেরকে এত বেশি পরিমাণ উপমহাদেশীয় ইংরেজী শুনতে হয় যে, এরা নিজদের ইংলিশ ভুলে গিয়ে উপমহাদেশীয় ইংলিশে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তবে সে যাই হোক, এখানে এসে সবচেয়ে যেটা ভালো লাগবে, সেটা হলো দেশের মানুষ, বাংলাদেশের মানুষ। প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি এখানে আছে।অনেক বাংলাদেশী তথাকথিত ভদ্রলোককে অনেক সময় বলতে শুনেছি, বাংগালিদের যন্ত্রণায় নিউইয়র্ক শহরে হাঁটাচলায় করা যায় না। কিন্তু মুখে যতই বলুক না কেন, অন্তরের গভীরেতো তাদের সেই বাংলাদেশ আর বাংঙ্গালি। তাই যতই যন্ত্রণাই করুকনা কেন, ঘুরেফিরে সবাই ফিরে ফিরে আসে সেই নিউইয়র্ক শহরেই। জাতীয়তার টান উপেক্ষা করবে, ততটুকু বিবর্তন মনে হয় মানব মনে এখনো ঘটে উঠেনি।
এখানে বাংলা আছে, আছে বাঙ্গালি, আছে সিঙ্গাড়া, সমুচা, বেগুনী, পেয়াজু, ভাত, ডাল, আলুর ভর্তা; আর যেটি না থাকলেই নয়, সবার আগে আছে বিখ্যাত আওয়ামীলীগ-বিএনপি। এদের জীবনধারার সাথে একাকার হয়ে মিশে গেছে হাসিনা-খালেদা। এখানকার সবচেয়ে সাধারণ মানুষটিকেও দেখেছি নিউইয়র্কের মাটিতে বসে নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করে ছাড়ছেন, আবার সবচেয়ে অসাধারণ প্রতিভাবান মানুষটিকে দেখেছি জাতির পিতামাতাদের দেখা স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের পিছনে নিজের জীবন বিলিয়ে দেবার জন্য একপায়ে দাঁড়িয়ে আছেন। সম্ভবত এর নামই গণতন্ত্র। কোন একটা বিষয় নিয়ে মাঠ গরম করে ফেলতে আমাদের তুলনা নেই। তাই পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও নিউইয়র্কের বাঙ্গালিপাড়াগুলো থাকে উত্তপ্ত।
বেশিরভাগ বাংলাদেশি এখানে যে-কাজ করেন সে-কাজ তারা নিজেরাই পছদ করেন না। কষ্টকর কাজ, নিজের অপছন্দে বাধ্য হয়ে করা কাজ। সত্যি বলতে গেলে, একটা কথা অনেককেই বলতে শুনেছি, কিছুটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে সবাই বলছেন, ‘আমাদের আর জীবন।’ নিউইয়র্কের আকাশ্চুম্বী ভবনের দিকে তাকিয়ে আমি ভাবি, ‘হায় জীবন! কোনটা যে জীবন, কি যে সেই জীবনের অর্থ।’ তারা বলে, ‘এখানে ভালো লাগে না, একদম ভালো লাগে না, দেশে ফিরতে ইচ্ছে করে, দেশে গিয়ে কিছু করব, এখানে আর না।’ কপালে অস্বস্তির ছাপ রেখে যখন তারা আরো বলে, ‘আর কতদিন এখানে অর্থহীনভাবে জীবন চালিয়ে যাবো?’ তখন তাদের সাথে আমিও হয়তো ভাবি, ‘এমনটাই যদি হবে, তবে কেন এই জীবন? কেন এখানে পড়ে থাকা?’ উত্তর খুঁজে পেতেও আমার দেরী হয় না।পালানোর কিংবা সান্ত্বনা খুঁজে পাবার সেই পুরোনো অজুহাত। যে-লোকট এতক্ষণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে দেশে ফেরবার কথা বলছিলো, সেই একই লোক এখন কি এক অপূর্ব স্বর্গীয় হাসি হেসে বলছে, বলছে তার আট বছরের সন্তানের কথা, বলছে তার স্কুলে পড়বার কথা।একটু আগের বলা কথা ফিরিয়ে নিয়ে বলছে, ‘না দেশে যাবো না। এখানে যত কষ্টই হোক, অন্তত আমার সন্তানের ভবিষ্যততো অনিশ্চিত না।’ আমি আবারো বুঝতে চেষ্টা করি জীবন আর সেই জীবনের অর্থ?’
নিউইয়র্কের বিখ্যাত সব ভবন আর অফিসগুলো রয়েছে ম্যানহাটনে। ম্যানহাটনের জাতিসংঘের ভবণ প্রাঙ্গণে গিয়ে কিছুটা অস্থির হয়েই খুঁজতে থাকলাম; আর সব পতাকার ভীড়ে খুঁজতে থাকলাম আমার দেশের পতাকা। দেশের রাস্তায়, দোকানে, টি-শার্টের পিছনে কত দেখেছি এই পতাকা। কিন্তু এমনটাতো কখনো মনে হয়নি, এমনটাতো লাগেনি কখনো। বুঝতে পারি, এই পতাকাই কত বড় সম্বল। একটা স্বাধীন দেশ যে কি বিশাল পাওয়া, বুঝতে পারি আবারো। বুঝতে পারি, ‘মাতৃগর্ভে থেকে মা’কে কখনোই চেনা যায় না, মা’কে চিনতে হলে সত্যিই মাতৃগর্ভের বাইরে আসতে হয়।’ রাত-দিন দু’বেলাতে দু’রকম দেখতে এই ম্যানহাটন। দিনের বেলা সুউচ্চ সব ভবনের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে, গভীর রাত্তিরে একটু দূর থেকে ম্যানহাটনের দিকে তাকাতে গেলে মনে হয়, এই বুঝি কোন স্বপ্নের দেশে চলে এলাম, এই বুঝি ঘুম ভেঙ্গে গেলো। মনে হয় কোন সিনেমা হলে ব’সে থ্রি-ডি কিংবা অ্যানিমেশান ম্যুভি দেখছি। যত যান্ত্রিক আর যত কৃত্রিমই হোক না কেন, ম্যানহাটনের চোখ ধাঁধানো এই সব স্থাপত্য আর ঝলমলে সাজ আপনাকে আপ্লুত করবেই।বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে, ভিন গ্রহের কোনো প্রাণি এসে তৈরী করেনি এই শহর। মানুষই তৈরী করেছে, আমরা মানুষরাই নির্মাণ করেছি এই শহর, এই নগর।
এই ছোট্ট পরিসরে নিউইয়র্ক শহরের বর্ণনা দেয়া আসলে বৃথা চেষ্টা। নিউইয়র্ক নিজেই একটা সভ্যতা, তাই সেই সভ্যতার বর্ণনা এখানে দেয়ার চেষ্টা না করাই ভালো। শিকাগো ফেরার দিন বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়ার সময় রাহাত খান বলে যায়, বলে যায় তার জীবনের কথা। বলে যায়, তাঁর ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাংলাদেশে, এখানে তিনি স্থায়ীভাবে থাকবেন না, চলে যাবেন বাংলাদেশে। আমি স্তব্দ হয়ে ভাবতে থাকি, সত্তোরোর্ধ্ব রাহাত খান, আজো তিঁনি করেন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা, ভবিষ্যতে তিনি ফিরে যাবেন দেশে। সত্তর বছর বয়স এখনো একটা মানুষের বর্তমান।আমি জানি রাহাত খানদের সেই ভবিষ্যত কোনো দিনও আসবে না। উন্নত জীবনের লোভও মানুষের একটা বিশেষ লোভ। তাই মানুষ জীবনকে অস্বীকার করে ছুটে চলে, ছুটে যায় আরেক জীবনের কাছে, তথাকথিত উন্নত জীবনের কাছে। যেখান থেকে ফিরে আসা অনেক অনেক কঠিন।
প্লেনের জানালায় তাকিয়ে, আমি দূরে চেয়ে থাকি। এমনি করে একদিন আমি ফিরে যাব আমার নিজের দেশের পথে।যে-দেশকে আমি নিজের বলে ভাবতে পারি, জানতে পারি, মানতে পারি। ফিরে যাবো পদ্মা-মেঘনার কাছে; সাদা বকের কাছে, বাঁশঝাড়, আলু-পটলের খেত, সরিষার মাঠের কাছে; ফিরে যাবো রোদ-বৃষ্টি-মেঘের কাছে, শাপলার শালুকের বাতাবির কাছে; ঝিঙ্গে সীম নারিকেল, পুকুরের কাছে; জোনাকির কাছে, তারা ভরা রাতের কাছে, কোকিলের কাছে, দোয়েলের কাছে, শীত বসন্তের কাছে। কোথা থেকে যেন হঠাৎ কিছু শুনতে পাই, আমি শুনতে পাই, ডাক শুনতে পাই। মনের ভেতর বেজে বেজে উঠে – ‘বুকে তোমার, বুকে তোমার ঘুমিয়ে গেলে, জাগিয়ে দিয়ে নাকো আমায়, জাগিয়ে দিয়ে নাকো, মা’গো, এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো; জন্ম আমার ধন্য হ’লো মা’গো।’
(সমাপ্ত)
*সবাই ভালো থাকুন আর ভালো থাকুক আমার শব্দগুলি; অন্তর্জালের মহাসমুদ্রে আজ থেকে যারা সম্পূর্ণ একা
পরশপাথর
জানুয়ারী ২১, ২০১০
রাজু ভাই, একটানে সব পর্বগুলা পড়লাম ৷ অসাধারন লেখা ৷ ভালো থাকবেন ৷
ফরিদ,
পারিবারিক দায়িত্বের কারনে লেখালেখি আর মন্তব্য থেকে দূরে ছিলাম। ইতোমধ্যে কেয়া আমার খবর নিয়েছে। নীরবতার কারণ জেনেছে। অবাক। মুক্তমনা আমাদের কতো কাছে নেয়ে গেছে। লুনা শিরীন আমার ফোন নম্বর নিয়ে একদিন কানাডা থেকে ঢাকায় আমার সাথে দীর্ঘক্ষণ কথাও বললো।
পরশ পাথর নামাজী না পূজারী এ প্রশ্ন করার পর রাজু তো এ মেইলে তার জীবন বৃত্তান্ত ছবিসহ আমাকে পাঠিয়েছে। আমার ছেলের বয়সী এ ছেলেটির কল্প লোকের গল্প পড়েই কিন্তু আমার মাথায় ধারণা আসে আমার সমৃদ্ধ শৈশব নিয়ে তখন ও এখন লেখার।
যাক। মুক্ত- মনার নেটওয়ার্ক এর বিস্তৃতি আমাদের ব্যক্তি জীবনে ছড়িয়ে পড়ুক — এ প্রত্যাশা রইল।
@গীতা দাস,
গীতা’দি,
কেউ ফোন করে আমার খবর নেয় না। ফরিদ ভাইকে ফোন নাম্বার পাঠিয়েছিলাম।উনি ঈর্ষাপরায়ণ মানুষ, আমার ফোন নাম্বারটা গোপন করে রেখেছেন, প্রকাশ করেন নি। 🙂
যাই হোক, আপনি ভালো থাকুন।
@মইনুল রাজু,
ঠিক না , আমি আপনাকে আমেরিকায় যাওয়ার পর মনে হয় ২ বার ফোন করেছিলাম।কাংগালের কথা কে মনে রাখে ??
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
হা হা হা। মামুন ভাই। আপনি যতবার আমার খোঁজ নিয়েছেন, আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটাও এতবার নেয় নি।
আমার অবশ্যই মনে আছে। কিন্তু বলার জন্য বলা আর কি। 🙂
@মইনুল রাজু,
আমিও মজা করলাম আর কি !!!!! হা হা হা 😀
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
হ কাঙ্গালের তালিকায় আমিও আছি।
আর হ্যা – ভদ্রলোকের নাম যে কাজু বাদাম হতে পারে – তা কিন্তু আমিই জ্যোতিষীদের মত ভবিষ্যদ্বানী করেছিলাম। লোকজন সব ভুলে যায়। 🙂
@অভিজিৎ,
আরে হ্যাঁ, তাইতো। বয়স অভিজিৎদা বুঝলেন, বয়স। বয়স আজ আমার সব স্মৃতিশক্তি কেড়ে নিচ্ছে। অথচ একদিন এক থেকে একশ পর্যন্ত মুখস্ত বলতে পারতাম।
বিবর্তনের ধারায় আজ আমার নাম কাজু থেকে রাজু। ‘বাদাম’তো বিলুপ্তই হয়ে গেল। 🙂
@অভিজিৎ,
লোকজন সব ভুলে যায়। :-/
আজকাল যেভাবে ভূলা রোগের ছড়াছড়ি চারিদিকে শুরু হয়েছে ?? আমাদের হবু ডাক্তার “আগন্তকের” এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
সংসারে কিছু বুড়ো নানা নানী দাদা দাদী থাকে যারা কারো পায়ের আওয়াজ পেলেই “ কে যায়, কে যায় ?”করে আর সর্বক্ষণ পুরোন কথা বলতে থাকে। আমার বয়সের কারণে ইদানীং আমি তাই-ই শুরু করেছি। আপনার লেখাটা পড়েই মনে হোল আজ থেকে ঠিক একবছর আগে আপনি লিখেছিলেন
”নাহ! জীবন আজ আর সেখানে যায়না। যেতে চায়, ফিরে যেতে চায়, কিন্তু যাওয়া হয়না।
পারিনা, ফিরে যেতে পারিনা, নিজের মত করে যাপন করার জন্য একটা জীবন। ফিরে আর যাওয়া হয়না। নিজের কুৎসিত, কপট চরিত্রের কথা ভেবে ঘেন্না ধরে যায়। আরো জাগতিক আরো কর্পোরেট হয়ে উঠি দিনের পর দিন। উপরে উপরে, উপরে ঊঠি; ভিতরে ভিতরে, ডুবে যাই। সান্ত্বনার ভাবনায় ভাবতে থাকি, এইতো আর মাত্র ক’টা দিন, তারপর শেষ হয়ে যাবে আমার এই মরার জীবন
আমি অতি উৎসাহ আমার মন্তব্যে বলেছিলাম———
“ নিঃসন্দেহে ভাল লেগেছে লেখা টি। পরশ পাথর , মামুন এই হৃদয় খুড়েঁ বেদনা জাগানোর গল্প আর নাই বা করলাম। সময়ও তো পাল্টেপালটে গেছে , সেই সব স্মৃতির উঠোনে ফিরে গেলে দেখবেন সময় কেড়ে নিয়েছে তার অনেক কিছুই। দেশে থাকলেও স্মৃতির কাছে ফেরা হতো না। স্মৃতি রোমন্থন করা যায়, স্মৃতিতে বাস করা যায় না।
আমি বলছি না প্রবাসের গড্ডালিকা প্রবাহে মিলতেই হবে । আমরা যখন দেশান্তরি হয়েছি তখন কিন্তু সেটাই ছিল সব চাইতে বড় সত্য আর কাম্য। তাই সেটা ভুল ছিল এটা ভাবা নিজেকে কষট দেয়া।
আসুন না এই না পাওয়ার মধ্যে যতোটুকু পাচ্ছি তা নিয়ে ভাবি।
আমাদের মাচাঁয় পুইঁএর লতা বাইয়ে দিতে পারব না তাই বলে একটা জীবন ভাল ভাবে বাচঁবো না তাও কি হয়? না হয় পড়ে রইল স্মৃতির রোদেলা দুপুর কিন্তু তাই বলে প্রবাসের দুপুরে সকালে বিকেলে গাছে নদীতে আনন্দ খুজেঁ নেব না তাই কি হয়? না হয় আজ ফিরছি না তাই বলে আগামি কাল ফিরব না , এটাই বা বলি কি করে ?
আসলে কি জানেন? যা হারিয়েছি বা হারাচ্ছি তা হল- সময়। একটা টেবিল ঘড়িতে ওকে আটকে আমরা ভাবছি ওকে জয় করেছি। আসলে সময় জয় করে নিচ্ছে আমাদের সব ।
আসুন না সময়কে বশ মানাই। না হয় নটা পাচঁটা ঘড়ির বড় কাটাঁয় ডলার গুলো বাধাঁ রইল তা বলে বাকি কটা ঘন্টার জন্যে নির্মল আনন্দের খোড়াক খুজেঁ পাওয়া কি খুবই দুষ্কর?
দূঃখ ভাগ করতে নেই- আসুন সুখ গুলো ভাগ করে নেই। দূঃখ গুলো চন্দন বাক্সে তুলে রাখি-ওর প্রছছায়া থাকুক-মুখছছবি নয়।
ভাবুন- আমরা মরে যাবো না, আমরা হেরে যাবো না, আমরা ভেসে যাবো না।
ঠিক এক বছর পর , এই নতুন লেখাটায় পড়ে আনন্দ পাচ্ছি এই আপনিই কি দৃঢ় ভাবে বলছেন” প্লেনের জানালায় তাকিয়ে, আমি দূরে চেয়ে থাকি। এমনি করে একদিন আমি ফিরে যাব আমার নিজের দেশের পথে।যে-দেশকে আমি নিজের বলে ভাবতে পারি, জানতে পারি, মানতে পারি”
সত্যি -ই তাই ঘটুক। শুভ কামনা রইলো।
ম্যালা লিখে ফেললাম , এটাও বার্দ্ধক্যের কারণেই।
ভালো কথা, ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন স্টেটে-তো হয়ে যাক না স্টেট গুলো নিয়েই দশ পর্বের আরেকটা লেখা!
@কেয়া রোজারিও,
আপনার মন্তব্যটা পেয়ে খুবই ভালো লাগলো। বিশেষ করে পুরোনো দিনে ফিরিয়ে নেবার জন্য। হঠাৎ মনে হলো, লেখালেখি জিনিসটা খারাপ না। কি সুন্দর পুরোনো সময়কে টেনে আনা যায়। আমিতো আমার সেই লেখার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। নিজের লেখা পড়ে নিজের কাছেই অন্যরকম একটা অনুভূতি হলো। অনেক ধন্যবাদ।
একদিনতো নিজের দেশে ফিরে যাবই; কারণ এখনো রক্তে আমার রসুন বাগান।
শিকাগো ছাড়া আমি আর মাত্র একটা স্টেট (নিউ ইয়র্ক) ঘুরেছি। তাও সেখানে আমাকে লোকজন একশ ডলারের নোট হাতে দিয়ে বলে,’তুমি বিস্কিট খেয়ো’, কেউ বলে ‘চকোলেট খেয়ো’। আমি তাদেরকে কি করে বলি, আমার চকোলেট খাওয়ার বয়স নেই। সেটা নাকি ট্র্যাডিশান। মোট কথা, পুরো নিউ ইয়র্ক ট্যুরই স্পন্সর করা।
পিএইচডি স্টুডেন্ট মানে যে, কম টাকায় সবচেয়ে বেশি খাটিয়ে নেয়া চাকুরে, সেটা আগে বুঝিনি। জানি না কখন আর অর্থ কিংবা সুযোগ হাতে পাবো। তবে যখন যেখানেই যাওয়ার সুযোগ হোকনা কেন মুক্তমনায় শেয়ার করার ইচ্ছে থাকল।
আপনি ভালো থাকবেন।
@মইনুল রাজু,
ভাই রে, আপনাকে চকোলেট বিস্কুট খাবার জন্য ১০০ ডলার দেয় আবার কে না কে ফোন করে না বলে বুক ভাসাচ্ছেন।
আহা রে আমার অমন “ট্র্যাডিশনাল” কাছের লোক কেউ থাকত। প্রায়ই তাদের কাছে গিয়ে হাফ প্যান্ট পরে হাটু গেড়ে বসে থাকতাম।
@আদিল মাহমুদ,
কি যে বিপদ সেটা আর বর্ণনা করলাম না। তাহলে বুঝতেন। হাঁটু গেঁড়ে বসে কান্নাকাটি করেতেন। যেভাবে আছেন ভালো আছেন।
স্বনামে আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে রাজুকে অভিনন্দন। ‘পূর্ব থেকে পশ্চিম’ সিরিজটা খাসা হচ্ছিলো। অনেক বছর আগে আমিও পূব থেকে পশ্চিমে পাড়ি দিয়েছিলাম, আমার অভিজ্ঞতাও অনেকটা রাজুর মতোই, তাই আরো বেশি মজা পাচ্ছিলাম। তবে রাজুর প্রকাশভঙ্গিই আলাদা। হাস্যরস, সাহিত্যরস, গল্পরস, সব রসের (খেজুর রস ছাড়া) সমাহার ঘটিয়েছেন রাজু তাঁর লেখায়।
আরেকটা রসময় সিরিজের অপেক্ষায় রইলাম রাজুর কাছ থেকে।
@ইরতিশাদ,
ইরতিশাদ ভাই, অনেক ধন্যবাদ।
সিরিজ না হলে আমি কেন জানি লিখতে বসতে পারি না। সিরিজ হলে সেটা শেষ করার একটা তাড়না অনুভব করি, তাই কিছুটা হলেও লিখতে বসি। আবার কেন জানি ১০ পর্বের বেশিও লিখতে চাই না। সামনে কোন একটা কিছু মাথায় আসলেই আবার আপনাদেরকে দশ পর্বের একটা অত্যাচার সহ্য করতে হবে।
ভালো থাকবেন।
আমিও লেখার শুরুতে লেখকের নাম দেখে হোচট খেয়েছি একটু। ব্যাপার কি, পাথর ভাই এর লেখা এভাবে কোথাকার কোন এক রাজু এসে ছিনতাই করে নিল। দ্রুত তলে এসে দেখলাম নাহ, আদি অকৃত্রিম পাথর ভাই বলেই তো মনে হচ্ছে।
ওনার জেন্ডার নিয়ে আমার কোনদিনই কোন সন্দেহ ছিল না, যদিও ফরিদ ভাই যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন এই রহস্য আরো উষ্কে দিতে। ব্যার্থ চেষ্টা বলা যায়।
আরেকটি পাথরের মতই কঠিন লেখা।
@আদিল মাহমুদ,
ফরিদ ভাই স্পেশাল কিছু জায়গায় সফল, আর সব-ই ব্যর্থতা।:-D
ধন্যবাদ আপনাকে।
পূর্ব পশ্চিমের সুপরিচিত লেখক পরশপাথরের বদলে ভিন্ন নাম দেখে সবাই শুরুতেই চমকে যাবেন সেটা ধরে নিয়েই নিচের কথাগুলো লিখছি।
পরশপাথর নামের আড়ালের মানুষটিকে নিয়ে মুক্তমনায় যে পরম কৌতুহল তৈরি হয়েছিল সেরকম কৌতুহল মনে হয় না আর কোন ছদ্মনামের প্রতি কেউ দেখিয়েছেন। অনেক আগে অন্তর্জালে সেতারা হাশেম নামের এক ব্যক্তির প্রতিও অনেকেরই এরকম কৌতুহল ছিল। তবে সেটা নিছকই তার জেন্ডার নিয়ে। সেতারা হাশেমের যাবতীয় খিস্তিখেউড় এবং খাইষ্টা ভাষার ব্যবহার দেখে অনেকেরই সন্দেহ হয়েছিল যে এই নরম কোমল রমণীয় নামের আড়ালে আসলে কোন রসকষহীন রগচটা বৃদ্ধ বসে রয়েছে। সে তুলনায় পরশপাথরের বিষয়ে কৌতুহল ছিল বহুমাত্রিক। তিনি কী পুরুষ না রমণী, নবীন নাকি প্রবীন, নামজী না পূজারী, নোয়াখাইল্যা না ঢাকাইয়া, পূবে থাকেন নাকি পশ্চিমে থাকেন ইত্যাকার নানাবিধ কৌতুহলে অনেকেরই ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল। কেউ কেউতো পরশপাথরকে লাস্যময়ী তরুণী ভেবে নিয়ে পুলকিত হৃদয়ে তার পরশ পাবার জন্য পাগলও হয়ে গিয়েছিল। তবে কথা হচ্ছে এইসব বিভ্রান্তি তৈরিতে পরশপাথরের নিজের ভূমিকাও কম নয়। মহা ধূর্ত এই ব্যক্তি লোকজনকে ধন্ধে ফেলার জন্য প্রায়শঃই বিভিন্ন ধরনের ধাঁধা করে ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। সে জন্য তার প্রতি রইলো দ্ব্যর্থহীন ধিক্কার।
কী কারণে যেন এই মহা ধড়িবাজ লোকের স্বনামে আত্মপ্রকাশের খায়েশ হয়েছে। নীরবে নিজের পরিচয়পত্র পাঠিয়েছেন আমাকে। যারা তাকে তরুণী ভেবে তনুমনে শিহরণ অনুভব করতেন তাদের জন্য খুবই খারাপ খবর। মোটেও লাস্যময়ী ললনা তিনি নন। একেবারে বিটকেলে বেটাছেলে।
তার আসল নাম বি, এম, মইনুল হোসেন। ডাক নাম রাজু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিট্যুট অব ইনফরমেশন টেকনোলজীর লেকচারার তিনি। বর্তমানে শিকাগোর ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়ের কম্প্যুটার সায়েন্স বিভাগে পিএইচডি করছেন। মুক্তমনায় মইনুল রাজু নামে এখন থেকে লিখবেন তিনি।
পরিচয়হীনতার পর্দা সরিয়ে পরশপাথরের পূর্ণ প্রকাশে মুক্তমনার পক্ষ থেকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। রাজকীয় হোক রাজুর রাজ্যাভিষেক।
@ফরিদ আহমেদ,
তিনি কী পুরুষ না রমণী, নবীন নাকি প্রবীন, নামজী না পূজারী, নোয়াখাইল্যা না ঢাকাইয়া, পূবে থাকেন নাকি পশ্চিমে থাকেন ইত্যাকার নানাবিধ কৌতুহলে অনেকেরই ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল।:-D
এটা জানতে গত বছর দেশে যাওয়ার আগে ই-মেইলে পরশপাথরের সাথে যোগাযোগ করি।পরের কাহিনীতো আমার দেশ ভ্রমনের উপর লেখায় আজকের রাজু স্বম্নদ্ধে হয়ত অনেকেই তখন জানতে পেরেছিলেন। রাজু যে কেন ছদ্দ নামে লিখত এটা আমারো নিজের কাছেও এক ধাঁধাঁমূলক প্রশ্ন ছিল ? ভয় নাকি নিজের অবস্হাগত তখনকার পরিস্হিতি কে জানে ??
সব কিছুর পরে রাজুর ও আমার মধ্যে এক জায়গায় মিল ছিল আর তাহলো গ্রাম থেকে হয়ত আমাদের উঠে আসা।বিশেষ করে তার লেখায় গ্রাম-বাংলার চিত্র,বর্ননা আমার কাছে এক দূর্বার আকর্ষনীয় মনে হতো।
রাজূ, স্ব-নামে আমাদের মাঝে ফিরে আসায় অনেক অনেক শুভেছছা।বরাবরের মতো আবারো বলছি আপনার প্রানময় সাবলীল লেখা সব সময়ই গ্রোগাসে গিলি।ভালো থাকুন।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
মামুন ভাই, আমি আসলে পরশপাথর নামে বেশ কিছু ফোরামে আগে কিছুটা লেখালেখি করেছিলাম। তার-ই ধারাবাহিকতায় নামটা আর পরিবর্তন করিনি।
আমার সারাজীবনে আমি যদি একটা জিনিস নিয়েও সন্তুষ্ট থাকি, সেটা হলো আমার ছোটবেলা। আমি খুব সুখী যে, আমার ছোটবেলাটা গ্রামে কেটেছে। জীবনকে বুঝতে শেখার এর চেয়ে বড় আর কোন সুযোগ হতে পারে না।অপূর্ব সেই জীবন।
অনেক ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।
@মইনুল রাজু,
জীবনকে বুঝতে শেখার এর চেয়ে বড় আর কোন সুযোগ হতে পারে না।অপূর্ব সেই জীবন। 😀
আহারে রাজু আবার যদি সে-ই মায়াভরা জোস্না রাতের মায়াবী চাঁদের সাথে একা একা কথা বলা,শস্যের ক্ষেতের হলুদ বর্নের মাঠে দৌড়াদৌড়ি করা,আম বাগানের লুকিচুরি খেলা খেলতে ফেরত যেতে পারতাম ? ফেরত আর যাওয়া যায় না বলে মনে হয় আমাদের মনে এতো নষ্টালজিয়া কাজ করে।
আপনার মতো এক সময় আমিও সে-ই সবুজের প্রানে (যদিও এখন আর সে-ই সবুজ নেই) , আমার মায়ের কাছে ফেরত যেতে চাই।দেখা হবে একদিন ।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনিই শুধু লাস্যময়ী তরুণী ভেবেছিলেন, সে-জন্যইতো আপনাকে নিজের পরিচয় পাঠিয়ে দিলাম। 😀
আপনার কষ্টটা আমি বুঝি, কারণ নিজেও যে লাস্যময়ী কিংবা হাস্যময়ী তরুণীই খুঁজে বেড়াচ্ছি।
@মইনুল রাজু,
না রাজু ভাই এই অসময়ে ফরিদ ভাইকে এই কষ্টটা দেয়া টিক হল না। এবার ফরিদ ভাইয়ের ফুরফুরে মেজাজটার কি হবে? 😛
@সৈকত চৌধুরী,
খালি ফরিদ ভাইয়ের দিকটা দেখলেন। আমার দিকটা দেখবেন না? 🙂
@সৈকত চৌধুরী,
ফরিদ ভাই এর এসব ব্যাপারে বহু অভিজ্ঞতা আছে, ওনাকে নিউএ চিন্তিত হবেন না।