এ বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধু ভাবনা
অজয় রায়
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বড় ও বিশ্লেষণমূলক লেখার অবকাশ এই প্রবন্ধে নেই। তাছাড়া যে পরিমাণ মালমশলা ও ঐতিহাসিক তথ্য এর জন্য দরকার তা হাতের কাছে নেই। একটি পত্রিকার কর্তৃপক্ষ স্বল্প নোটিশে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে একবটি লেখা চেয়েছিলেন- তাদের অনুরোধকে মাথায় রেখেই এ প্রবন্ধের অবতারণা। আর এর মধ্যদিয়ে আমি ৩৯তম বিজয় দিবসে আমাদেও স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবকে কৃতজ্ঞ চিত্তে ষ্মরণ করছি, আর স্মরণ করছি স্বাধীনতার শহীদদের, সম্মরণ করছি হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্যদের যারা বাংলাদেশের মুক্তির জন্য শহীদ হয়েছেন একাত্তরের রণাঙ্গনে।
আমার আপশোষ, জীবিতকালে এবং মৃত্যুর পরও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে যে ভাবে সমালোচনা ও ধিক্কার জানানো হয়েছে, আমার মনে হয় না বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক নেতাকে তা সইতে হয়েছে। আবার এও সত্য বাংলার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে ভালবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছেন তিনি পেয়েছেন তা অতুলনীয়। তাই তিনি মানুষের বিচারের মানদণ্পে সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্হালী। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতা ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি যতটা আলোচিত হয়েছেন বা হচ্ছেন তা উপমহাদেশের অনেক অনেক দেশ বরেণ্য নেতাদের ভাগ্যেও ঘটে নি। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে বঙ্গবন্ধু উঠে এসেছেন গান্ধী, নেহেরু, সুভাষ…এঁদের কাতারে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বা বাঙ্গালীত্ব চেতনার গুরু শের-এ-বাংলা ফজলুল হকের ভাগ্যেও এতটা জোটে নি। সেদিক থেকে তিনি অনন্য —তিনি সহস্র বছরের শ্রেষ্ঠতম বাঙালী কিনা তা নিয়ে বুদ্ধিজীবি ও রাজনৈতিক মহলে একাডেমিক মতপার্থক্য থাকতে পারে – কিন্তু শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী ব্যক্তিত্বের সম্মুখ সারিতে যে তাঁর অবস্থান এতে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। কিনতু এই কৃতিত্ব তাকে র্অন করতে হয়েছে নিজের প্রাণ দিয়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধানতম সুহৃদ, সাথী অনুপ্রেরণাদিনী সে সময়কার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী ও বাংলাদেশের সার্বিক মুক্তির চেতনার প্রধান পুরুষ ও ভাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধূ উভয়কেই আততায়ীর হতে প্রাণ দিতে হয়েছে। আমি মনে করি এই অপঘটনা সে সময়কার নিক্সন-হেনরি কিসিংগার-ইয়াহিয়-মুস্তাকসহ সিআইএ চক্রের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফসল। এ ধরনের ঘটনা অবশ্য ইতিহাসে নতুন ঘটনা নয় প্রাণ দিতে হয়েছে আব্রাহাম লিঙ্কনকে, মহাত্মা গাšধীকে।
প্রাচ্য জীবনাদর্শনের একটি দিক হল শয়তান সম ব্যক্তি হলেও মৃত্যুর পর তাঁকে ঘৃণা বা ধিক্কার জানানো একটি মানবতাবিরোধী আচরণ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তাঁর জীবিতকালের সমালোচকরা মৃত্যুর পরও তাঁকে নিয়ে উৎকট ও বিরূপ মন্তব্য ও ঘৃণা উদগিরণ করতে পশ্চাৎপদ হন না। তাঁর প্রতিকৃতিকে অবমাননা করা হয়, তাঁর অবদানকে খাটো করে চিত্রিত করা হয় – তাঁকে অনেকসময় শয়তানরূপেও চিত্রিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর নানা শ্রেণীর শত্র“ ছিল — ১৯৭১ পূর্ব সব ধরনের পাকিস্তানী সরকার ও তাদের পৃষ্ঠপোষক পাকিস্তানী সামরিক জান্তা ছিল তার শত্র“ নম্বর এক। তিনটি উদাহরণ দিই:
আইউব শাহীর সামরিকতন্ত্র কর্তৃক তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা দায়ের যা কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত। এই মামলায় পাক-সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ আনা হয় তা হল
“গোপনসূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের অনুসরণে এমন একটি ষড়যন্ত্র উদঘাটন করা হয় যার মাধ্যমে ভারত কর্ত্তৃক প্রদত্ত অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ ব্যবহার করে পাকিস্তানের একাংশে সামরিক বিদ্রোহের দ্বারা ভারতের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত একটি স্বাধীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকার দায়ে ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে কতিপয় ব্যক্তিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা আইনের আওতায় এবং কতিপয় ব্যক্তিকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে চাকরির সাথে সম্পৃক্ত আইনের আওতায় গ্রেফতার করা হয়।”
অভিযুক্তদের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১নং আসামী এবং কমাণ্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২নং আসামী হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। শেখ সাহেবের পরিচয় হিসেবে লেখা হয়:
মি: শেখ মুজিবুর রহমান পি: মৌ: শেখ লুৎফর রহমান গ্রাম টুঙ্গীপাড়া,গোপালগঞ্জ,ফরিদপুর
২৫শে কালরাত্রির পরদিন ২৬শে মার্চ (১৯৭১) সন্ধ্যেবেলায় পাকিস্তানে বেতারে সামরিক জান্তা প্রধান সেনাপতি ইয়াখানের ঘোষণা ছিল
:
Sheikh Mujibur Rahman’s action of starting non-cooperation movement is an act of reason. He and his parts defied the lawful authorities…have tried to run parallel government….The man and his party are enemies of Pakistan, …he has attacked the soliderity of Pakistan. …this crime will not go unpunished.”
ইয়াহিয়ার সাধ কিন্তু অপূর্ণ থাকেনি। রণক্ষেত্রে বাংলার সৈনিকদের বিজয় ঘটলেও – পাকিস্তানী আদর্শে উজ্জীবিত ও সেনাপতি ইয়াহিয়ার আদর্শিক এতদ্দেশীয় অনুচররা সেই কাজ সমাধা করে ১৫ই আগস্ট (১৯৭৫) সকালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করে। সেদিনও মোস্তাকের সূর্যসন্তানদের এক সন্তান মেজর ডালিম বাংলাদেশ বেতারে ঘোষণা দিয়েছিলেন : “স্বৈরাচারী শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটেছে। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।”
অনেকে বিষয়টির গভীরে না গিয়ে বলে থাকেন শেখ মুজিব ও তাঁর সরকারকে উৎখাত করা হয়েছে অপশাসন ও দুর্নীতির (পড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ) কারণে। কিন্তু তা ঠিক নয়, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তাঁর আদর্শের জন্য যে আদর্শ বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষ [ংবপঁষধৎরংস] এবং উদারনৈতিক গণতন্ত্র (ষরনবৎধষ ফবসড়পৎধপু) কে তুলে ধরেছে। অন্যদিকে তাঁর হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরানো পাকিস্তানী ধ্যানধারণায় প্রবর্তন এবং বাংলাদেশকে একটি ধর্মতাত্ত্বিক স্টেটে রূপান্তরিত করা এবং সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদের স্থলে ‘মুসলিম বাংলা’ নামের আদর্শভিত্তিক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন। স্বঘোষিত হত্যাকারীদের একজন হত্যা ষড়যন্ত্রের মূল নায়ক কর্ণেল ফারুখ একটি সাক্ষাৎকারে স্পষ্টভাবেই বলেছিলেন-
“শেখ মুজিবকে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হত। কারণ ঐ ব্যক্তিটি তার ধর্ম ইসলামের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে — যে বিশ্বাস আমার (ফারুখ) জনগণের ধর্ম…।”(ঞযব ঝঁহফধু ঃরসবং, গধু ৩০, ১৯৭১)। হত্যাকাণ্ডের আর একজন নায়ক মেজর রশীদের ভাষ্যমতে ‘১৯৭৪’ এর গ্রীষ্মকালে ফারুখ ও রশীদ মুজিবকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা শুরু করে — যার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে ধর্মভিত্তিক ‘ইসলামিক রিপাবলিক রাষ্ট্রে পরিণত করা।’
পরবর্তীকালে ৭ই নভেম্বরে (১৯৭৫) ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ১৯৭২ সালের গণতন্ত্রের লিপিবদ্ধ বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যগুলিকে নস্যাৎ করতে। তিনি সামরিক ক্ষমতাবলে জনমত বা গণতান্ত্রিক বিধির তোয়াক্কা না রেখে তাঁর নিজস্ব চারনীতি প্রবর্তন করলেন রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় ১৯৭৬ সালের এক ঘোষণার মাধ্যমে, যেমন :
‘ আল্লাহ’র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, স্বনির্ভরতা, এবং সকল শ্রেণীর মানুষের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত প্রশাসন এবং ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদ। ’
লক্ষ্যণীয় যে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিস্থাপন করলেন ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’, এবং সমাজতন্ত্রের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিলেন ‘অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার’।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিরকাল আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করে এসেছেন। কিন্তু কি তাঁর আদর্শ ছিল ? কয়েকটি বৈশিষ্ট্য অবশ্য সাদা চোখেই চিহ্নিত করা যায়। প্রথমত: জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষা। এই জনগণ ছিল ১৯৪৭ উত্তর পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চল যা তখন পূর্ববাংলা নামে পরিচিত ছিল সেই অঞ্চলের অধিবাসীবৃন্দ। এই জনগণের কথা তিনি প্রায়শ: একটি বাক্যে প্রকাশ করতেন – ‘বিশ্ব আজ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত,- শোষক আর শোষিত; আমি শোষিতের দলে।’ দ্বিতীয়ত: বাঙালী জাতীয়তাবাদ। পূর্ববাংলার অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকেই তাঁর চিন্তাচেতনায় ‘বাঙালী’ জাতীয়তাবাদের ধারণা ক্রমশ: দৃঢ়ভাবে প্রোথিত হয়। আর এ ধারণা থেকেই পূর্বপাকিস্তানকে ষাটের দশক থেকে ‘বাংলা’ বা বাংলাদেশ নামে অভিহিত করতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর একটি ঐতিহাসিক উক্তির কথা আমরা স্মরণ করতে পারি:
“এক সময়ে এদেশের বুক হইতে, মানচিত্রের পৃষ্ঠা হইতে বাংলা কথাটির সর্বশেষ চিহ্নটুকুও চিরতরে মুছিয়া ফেলার চেষ্টা করা হইয়াছে। জনগণের পক্ষ হইতে আমি ঘোষণা করিতেছি — আজ হইতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির নাম ‘পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধুমাত্র বাংলাদেশ (হইবে)।” হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির মৃত্যুবার্ষিকীতে ৫।১২।৬৬ তারিখে প্রদত্ত ভাষণ। দ্রষ্টব্য ‘বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, বঙ্গবন্ধু গবেষণাকেন্দ্র প্রকাশনা, ঢাকা, ১৯৯৩)।
এরও আগে ২৫।৮।৫৫ তারিখে তদকালীন পাকিস্তান গণপরিষদের স্পীকারকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তৃতা করেছিলেন তার ঐতিহাসিকমূল্য আজও নি:শেষ হয়নি। এর অংশবিশেষ হল:
Sir, you will see that they want to place the words ‘East Pakistan’ instead of ‘East Bengal’. We have demanded so many times that you should name it Bengal (Pakistan). The word ‘Bengal’ has a history, has a tradition of its own.
অভিযোগ করা হয় শেখ মুজিব প্রথম জীবনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন, পাকিস্তান-আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন ভারতীয় মুসলিমলীগের ছাত্রকর্মী হিসেবে। তথ্য হিসেবে ঘটনাটি সত্য। কিন্তু এটাও ছিল ব্রিটিশ যুগে অবহেলিত বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কল্যাণচেতনা থেকে উদ্ভূত। অনেকের মতে তখন তাঁরও মনে হয়েছিল পাকিস্তান-প্রতিষ্ঠা হয়তো, বিশেষ করে, পশ্চাৎপদ পূর্ববঙ্গীয় সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। ১৯৪৮ থেকেই গণবিরোধী মুসলিম লীগ শাসকদের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানীদের আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা নিতে থাকেন — সেটি বিস্তৃত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবী আদায়, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, মুসলিম লীগের বিপরীতে জনতার লীগ ‘আওয়ামী মুসলিম’ প্রতিষ্ঠায় তাঁর সক্রিয় ও অগ্রগামী ভূমিকার কথা নতুন করে বলবার প্রয়োজন নেই।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের আর একটি বৈশিষ্ট্য হল তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনা। ছাত্রাবস্থায় মুসলিম ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততা থাকলেও তাঁর রাজনৈতিক চেতনা উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নীত হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগকে আওয়ামী লীগে পরিণত করায় তাঁর ভূমিকা ছিল দৃঢ় ও সক্রিয়। এর ফলে আওয়ামীলীগের দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেল জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল বাঙালীর জন্য। দেশে সেক্যুলার রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাতাবরণ শুরু হল। এরই পথ ধরে জন্ম নিল মৌওলানা ভাসানী মিঞা ইফ্তেকার, সীমান্ত গান্ধী খান আবদুল গাফফার খানের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি প্রভৃতি উদারপন্থী সেক্যুলার রাজনৈতিক দল সমূহ। এর আগে যুবকদের সংগঠন অসাম্প্রদায়িক যুবলীগ এবং পরে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ‘ছাত্র ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। ছাত্রলীগের চরিত্রও বদলে গেল অসাম্প্রদায়িক বাঙালী চেতনায় উদ্বুদ্ধ একটি নতুন দলে রূপান্তরিত হল — যাদের ঠিকানা হয়ে দাড়াল “পদ্মা-মেঘনা-যমুনা”।
শেখ মুজিবের এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল ১৯৬৪ সালে তদকালীন পূর্বপাকিস্তান সরকারের ইঙ্গিতে সৃষ্ট হিন্দু বিরোধী সেই ঐতিহাসিক সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে “পূর্ব বাংলা রুখিয়া দাঁড়াও”।
শেখ মুজিবের জনগণের অধিকার আদায় বিশেষ করে পূর্ববঙ্গবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় স্বাধীকার আন্দোলনের পথ ধরেই এল ঐতিহাসিক ৬ দফার দাবী,—শেখ মুজিব ঘোষণা করেছিলেন ‘আমাদের বাঁচার দাবী। এর চুম্বক কথাগুলো হল পাকিস্তানে ফেডারেল ধাঁচের রাষ্ট্র কাঠামো Ñ এর ভিত্তি হবে জনগণের গণতন্ত্র,— সরকার হবে সংসদীয়, নির্বাচন পদ্ধতি সার্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটার ভিত্তিক; ফেডারেল সরকার কেবল দেখাশুনা করবে ‘প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয়; বাংলাদেশ অঞ্চলে বাঙালীদের নিয়ে গঠিত একটি শক্তিশালী মিলিশিয়া থাকবে যার দায়িত্ব হবে পূর্ববাংলায় প্রতিরক্ষা। কতিপয় বিশেষ মহল ব্যতিরেকে এই দাবী বাঙালীদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যার ফলে আইউব সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু এই কর্মসূচীকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ব্যাপী জনসংযোগ-সভা-সমিতি করেন; তাঁর নিজের ভাষাতেই বলা যায়:“….. চোঙামুখে দিয়ে রাজনীতি করেছি।…বাংলাদেশের এমন কোন থানা নেই যেখানে আমি যাই নি।” আওয়ামীলীগ নেতৃত্ব, বিশেষ করে শেখ মুজিবের ওপর নেমে আসে নানা ধরনের জুলুম ও নিপীড়ন। শঙ্কিত প্রেসিডেন্ট আইউব শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে সতর্কবলী উচ্চারণ করলেন: “…বর্তমান সরকারের আমলে পূর্ব পাকিস্তান পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন ভোগ করিতেছে।…যাহারা প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে চেঁচামেচি করিতেছে তাহারা প্রকৃতপক্ষে দেশের দুইটি অংশের বিচ্ছিন্নতা করিতেছে।”(২৯শে মার্চ,১৯৬৭)
এই ৬ দফা ভিত্তিক সায়ত্তশাসন আন্দোলনের পথ ধরেই এল জনগণের স্বাধিকার আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলন যার চূড়ান্ত পরিণতি বাঙালীর মুক্তিযুদ্ধ। বাঙালীর নিজস্ব রাষ্ট্র – একটি পতাকা। এই অর্জনের পশ্চাতে যার সবচাইতে বড় অবদান তাঁর নাম:বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান — একটি নতুন রাষ্ট্রের স্থপতি – যার নাম ‘বাংলাদেশ’ –একটি নতুন জাতির জনক, যে জাতির নাম ‘বাঙালী’ জাতি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনের আর একটি স্তম্ভ হল পশ্চিমী ধাচের উদারনৈতিক গণতন্ত্র।
সেই সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ বেয়ে রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শনে পরিবর্তন আসে ধাপে ধাপে এরই চূড়ান্ত পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতা থেকে উত্তীর্ণ হলেন বাংলাদেশের অসংবাদিত জাতীয় নেতায়। আবির্ভূত হলেন পরিপূরক রাষ্ট্র নেতায় যে স্তরে অন্যকোন রাজনৈতিক নেতা উঠে আসতে পারেন নি। পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের পৃষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু স্থান করে নিলেন গান্ধী, নেহেরু, মাও সে তুং, সুকর্ণ, হোচি-মিন, নাসের-টিটো, মান্দেলা, ফিডেল ক্যাস্ট্রো প্রমুখ নেতাদের পংক্তিতে। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক দর্শনে শেষ পর্যায়ে, যখন তিনি উন্নীত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবে, যুক্ত হয়েছে ‘সমাজতন্ত্র’। তাঁর এই সমাজতন্ত্র কিন্তু কট্টর মার্কসবাদী সমাজতন্ত্র নয়। এই সমাজতন্ত্র মিশ্র অর্থনৈতিক — এখানে স্থান পাবে রাষ্ট্রিয় আর্থ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান —পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পূরক সহাবস্থান।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সামরিকতন্ত্রের কোন স্থান ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন না বাংলাদেশের মত অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ও অর্থ সম্পদে দুর্বল একটি রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন ব্যয়বহুল শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী। এছাড়া শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী সবসময় দেশের গণতন্ত্রের সুষ্ঠুবিকাশের জন্য, বিশেষ করে, পশ্চাৎপদ উন্নয়নশীল দেশে- সবসময় হুমকি স্বরূপ। তিনি মনে করতেন রাজনৈতিকভাবে সচেতন দেশাত্মবোধে উদ্দীপ্ত জনগণই বাংলাদেশের আসল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা — এছাড়া দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করবে আমাদের সুরক্ষায়। বঙ্গবন্ধু অনেকবার বলেছেন তিনি চান বাংলাদেশকে ইউরোপের ছোট রাষ্ট্র সুইজারল্যাণ্ডের মডেলে গড়ে তুলতে। তার এই আদর্শই ডেকে আনে নিজের সর্বনাশ — সেনাবাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অংশ তার হত্যার সাথে যুক্ত হওয়া কোন আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবনের চরমতম সাফল্য অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিনি স্বাধিকার আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে আসেন বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলন। তাই বাঙালীর দাবী একদফার কেন্দ্রীভূত হল — “বীর বাঙালী অস্ত্র ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর।”
১৯৭১ সালের ১লা মার্চের ইয়াহিয়ার ঘোষণার জবাব দিলেন বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ জনতার সামনে — বাঙালীর অন্তরের কামনাকে ভাষা দিলেন :
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
আমাদের ভবিষ্যত রণসঙ্গীতের বাণী রচিত হয়ে গেল ৭ই মার্চে (১৯৭১) সেদিনের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটির স্মৃতি আজও আমায় রোমাঞ্চিত করে। লক্ষ মানুষের সাথে আমিও অপেক্ষা করছি কখন আসবেন ইতিহাসের মহানায়ক। সেই অপেক্ষার মুহূর্তগুলি কবি নির্মলেন্দু গুনের ভাষায় বলি:
একটি কবিতা লেখা হবে
তার জন্যে অপেক্ষা উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা
বসে আছে
ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে
কখন আসবে কবি।
…. …. ….
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
…. …. ….
গণসূর্যের মঞ্চ কাপিয়ে কবি
শোনালেন তাঁর অমর কবিতাখানি —
“এবারের সংগ্রাম
আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
কিন্তু আমরা অকৃতজ্ঞ বাংলার মানুষ স্বাধীনতার সেই অমর কবিকে হত্যা করলাম ‘নিস্কম্প্র’ হাতে। চাইলাম ‘বঙ্গবন্ধু’-‘বাংলাদেশ’ ‘বাঙালী’ এই শব্দগুলিকে বাংলাদেশের হৃদয় হতে চিরতরে মুছে দিতে। তাই বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতেও স্তব্ধ হলাম না — যেখানেই বঙ্গবন্ধুর নাম, যেখানেই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য —তার নামে প্রতিষ্ঠান সব ভেঙে দিতে চাইলাম উন্মত্ত হয়ে — কুৎসিত পন্থায়। অশালীন অশ্রাব্য ভাষায় তাঁকে অব্যাহতভাবে আক্রমণ করে চলেছে মুস্তাক আহমেদের সূর্যসন্তানের দল আর জিয়ার আদর্শের সৈনিকরা। কিন্তু তবুও কি বাংলাদেশের স্থপতির নাম মুছে ফেলা যাবে — দীর্ঘকায় মানুষটিকে খর্বকায় বামনে রূপান্তর করা যাবে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন বাঙালীর হৃদয়ে — বাংলার সাধারণ মানুষের ভালবাসায়।
আমাদের সেই মর্মবেদনাকেই ভাষা দিয়েছেন প্রয়াত কবি অন্নদাশঙ্কর ঃ
যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
শোকাহত কবি মুহ্যমান বাঙালী সত্ত্বাকে আহ্বান জানিয়েছেন এই বলেঃ
বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো না নীরব দর্শক
ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক।
কিন্তু এত ধিক্কার সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে ক্রন্দনরত আমাদেরই সর্ব্বোচ্চ বিচারালয়ের চার দেওয়ালে আবদ্ধ — বন্দী লাল ফাইলের মধ্যে। ধিক শতধিক আমাদের বিচার ব্যবস্থা!
তবে সান্ত্বনার বিষয় সম্প্রতি দীর্ঘদিন ধরে হলেও এই বিচারকার্য সমাপ্ত হযেছে। শীর্ষ আদারত ঘাতকদের দোষী সাব্যস্ত করে প্রকৃত দোষীদের প্রাণ দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে অ্যামনেস্টি ইস্টারন্যাশনালসহ অনেক মানবাধিকার সংগঠনের সাথে প্রাণ দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে, এ ব্যাপারে সতত ছিলাম উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর খুনীদের জন্য আমার বিন্দুমাত্র অনুকম্পা নেই, তাই দেশবাসীর সাথে আমিও চাই এই দণ্ডাদেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হোক। এই অপরাধীর দল তো শ্রধু ব্যক্তি বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব-শিশু রাসেলসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হত্যা করে নি, তারা আমাদের গণতন্দ্রকে, ধর্মনিরপেক্ষতাকে, মুক্তিযুদ্ধেও চেতনাকে হত্য করেছে। তারা সর্বোপরি আমাদের দেশ ও জাতিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। এই অপরাধের তো ক্ষমা নেই, ক্ষমা হয় না। কৃত কর্মের শাস্তি মুস্তাক-ফারুখ-রশীদ গংদের পেতেই হবে।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক অজয় রায়,
নতুন ইংরেজি বছরে আমার শ্রদ্ধাবনত অভিনন্দন! আপনার ঘটনা বহুল বর্ণীল জীবন সম্পর্কে আমার কিঞ্চিৎ ধারনা আছে, যা অপনার অসংখ্য লেখা থেকেই জানা যায়। যেখান থেকে আমরা আমাদের শেকড়ের সন্ধান পাই। আমাদের দেশে যে ক’জন অগ্রগন্য বিদগ্ধজন সমাজের আলোক বর্তিকা হযে আছেন, আপনি তাঁদের মধ্যেই একজন। আপনাদের প্রত্যক্ষ্য অভিঞ্জতা গুলো এভাবেই একদিন ইতিহাস হবে। আজকের যে প্রবন্ধটি আপনি আমাদের দিয়েছেন, দোদুল্যমান চিন্তা রাশির মাঝেও যেনো একটা পরম্পরা দেখতে পাচ্ছি। একথা ঠিক বলেছেন যে বঙ্গবন্ধুর নানা শ্রেণীর শত্রু ছিলো। বঙ্গবন্ধু নিজেও বোধকরি সেটা জানতেন। কিন্তু ভেবে আশ্চর্য হই একটি জায়গায়, যে ঘাতকেরা তার মুখোমুখী হচ্ছে সেখানে তিনি রীতিমতো বাবা-জেঠাদের মতো করে ঘাতকদের ধমকাচ্ছেন, ” এই তোরা কি চাস? বেয়াদপী করছিস কেনো?” এই বলে! কতোটা স্বচ্ছ এবং বিকশিত হৃদয়ের মানুষ হলে একজন রাজনৈতিক নেতার পক্ষে এরকম অভিভাবক সুলভ ভাবে ঘাতকদের সামনে এসে দাঁড়ানো সম্ভব! ঠিক এরকম আর একটি উদাহরণ আছে বলে আমার জানা নেই! অথচ সেনাবাহিনী প্রধান তাঁকে পেছন দরজা দিয়ে নিরাপদে সরে পরার পরামর্শও নাকি দিয়েছিলন! যতদূর পড়াশুনা করেছি আমার কাছে একটি বিষয় স্পষ্টতর হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ এবং বাঙ্গালীকে প্রচন্ড ভালোবাসতেন। সেই ভালোবাসার ফোকল গলে শত্রুরা তার চার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলো। যথেচ্ছ আখের গুছাবার কাজেই ছিলো তারা ব্যাস্ত! সব দেখে শুনেও কখনো কঠোর হতে পারেননি, হয়তো এই জন্যে যে, ওরা তো যুদ্ধকালীন ন’টি মাস ভুগেছিলো। এটিই ছিলো তার সবচাইতে দুর্বলতম দিক। ফলে বঙ্গবন্ধুর প্রশাসনও হয়ে পড়েছিলো বেশ দুর্বল। যখন তিনি কঠোর হয়ে ঘুড়ে দাঁড়াবার সংকল্প করলেন তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে, ষড়যন্ত্র জাল বিস্তার করেছে অনেক গভীরে। এর পরের সবই কম বেশী আমরা জানি।
একটা সত্য কি, আপনার লেখায় যেটা গভীর ভাবে প্রস্ফূটিত, তা হলো, পৃথিবীর সব দেশের মহানায়কদেরই নানান ত্রুটি-বিচ্যূতি রয়েছে, রয়েছে ভুলের নানান দিক। কিন্তু তার পরেও সমগ্র জাতির জন্যে তাঁদের অবদানকে সেই সেই জাতি কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে শ্রদ্ধাবনত হয়। আপনার এই মন্তব্য যথার্থ যে বঙ্গবন্ধুই এক্ষেত্রে একজন ব্যাতিক্রম। আর তাই হযতো আমাদের মাথার উপড়ে যে অমানিষার অন্ধকার, তা সহজে দূর হবার নয়। যেজাতি এহেনো একজন মানুষকে শ্রদ্ধা জানাতে জানে না সে জাতি সম্ভবতঃ নিজেদেরও শ্রদ্ধা জানাতে পারেনা। থাকেনা আত্মবিশ্বাস আর আস্থার জায়গাটুকুও।
আপনার অভিঞ্জতা সমৃদ্ধ আরোও আরোও লেখা প্রত্যাশা করি।
আমার তো তাই মনে হয়েছে। নইলে উনার মত একজন লোক এমন লিখা কেন লিখবেন? সে যাই হোক এটা আমার ব্যাক্তিগত মত। প্রকৃত তথ্য যেমন আমি জানিনা, তেমনি আপনিও জানেন না। আপনি যা বলেছেন সেটা আপনারও অনুমান।
না আপনি করেননি। কিন্তু অনেকেই দাবী করে ‘যে নেতা, যার জন্ম না হলে………” ইত্যাদি।
আপনি অতিমাত্রায় আবেগপ্রবন হয়ে পরেছেন বোধ হয় । আমি সমস্যার সরূপ নিয়ে আলোচনা করিনি। লেখক বলেছেন যে প্রাচ্যের মরহুমদের মধ্যেই শেখ মুজিবকেই কেবল হেয় করা হয়, আমি বলেছি যে না, শুধু শেখ মুজিবকেই নয়, আরো অনেক ব্যাক্তিকেই একই ভাবে হেয় করা হয়, যেমন………। জিয়াউর রহমান ছিল একটা উদাহরন মাত্র। আর এটা নিয়েই আপনার যত সমস্যা। উনি বলেছেন শুধু ” মুস্তাক আহমেদের সূর্যসন্তানের দল আর জিয়ার আদর্শের সৈনিকরা”-এগুলো করে চলেছে, আমি বলেছি না শুধু তারাই নয়, ‘মুজিব সৈনিকরা’ও একই দোষে দোষী। এখানে আগে না পরে এমন কিছু এনে আপনিই বরংচ এক পক্ষের দোষ লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন, আমিতো ভাবি আপনি এমন করছেন কেন?
আরে ভাই আমার কথাতো সেটাই, আগুনে কার ঘর আগে পুড়ল সেটা কি বিবেচ্য? দেবালয় আগে পুড়ল না লোকালয় আগে পুড়ল তাতে কি আসে যায়, পুড়েই যদি যায়?
@মডারেটর,
আমার মূল মন্তব্যটি আদিল মাহমুদের জবাব হিসাবে করা হয়েছে, যেটি আমি ওখানে নতুন করে করেছি তাই এই মুল থ্রেডটি মুছে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব।
আমি অধ্যাপক রায়ের কাছ থেকে আরো অনেক বেশী বিশ্লেষন আশা করেছিলাম। আসলে শেখ মুজিবের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে নিজে কিছু জানিও না-সেরকম ভাল লেখা চোখেও পড়ে নি। উনি বাঙালী জাতিয়তাবাদ না বাঙালী সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন-সেটাও আমার অজানা। অল্প যেটুকু পড়েছি তাতে বুঝেছি শেষের দিকে বাংলাদেশের অবস্থা এত করুণ ছিল, সাহায্যকারি দেশ যা শর্ত দিত, তাতেই হ্যাঁ করেছেন। সোভিয়েত, ভারত, সৌদি কাওকেই না করেন নি তিনি। হয়ত উপায় ছিল না। আমার ধারনা বাংলাদেশকে ভালোবেসেই তিনি তা করেছেন-এটা ভালোবাসা এবং অদূরদর্শিতা একই সাথে। তবে তিনি যে দক্ষ পরিচালক ছিলেন না-সেটা সবাই মেনে নিয়েছে বোধ হয়।
আর শেখ মুজিবের মতন লোককে শ্রেষ্ঠ বাঙালী ইত্যাদি বলে বিশ্লেষন বা সমালোচনাকে প্রভাবিত করা উচিত না। বর্তমানে অনেক পোলেই স্বামী বিবেকানন্দকে শ্রেষ্ঠ ভারতীয় বলে দাবি করা হয়েছে-সেটা শুনে বিবেকানন্দ কম্যুনিটিতে আমি প্রশ্ন করেছিলাম উনার অবদান টা কি? নতুন কোন দর্শনের জন্ম তিনি দেন নি। হিন্দু ধর্মকে ঘষামাজা করে ভদ্রস্থ করেছেন-তাতে ভারতের প্রতি তার অবদানটা ঠিক কি? মুজিবকে নিয়েও একই প্রশ্ন তোলা যায়। মুজিব না থাকলে কি বাংলাদেশ স্বাধীন হত না? উনি বা আওয়ামী লীগ সময়ের দান। তাছারা ১৯৭০ সালে পাকিস্থান ইলেকশন মেনে নিলে, মুক্তি যুদ্ধ কি হত? মুজিব ত সেটাই চেয়েছিলেন আগে! উনি কোন রাজনৈতিক আদর্শ দিয়ে যেতে পারেন নি-বরং যেটা ছিল সেটাকে রক্ষা করতেও ব্যার্থ হয়েছেন। তাহলে কি কারনে শ্রেষ্ঠ? আমি নিজে মনে করি বাংলার ইতিহাস এবং সমাজকে সব থেকে বেশি ছাপ ফেলেছেন শশাঙ্ক, ধর্মপাল ( বাঙালী সমাজের অনেক প্রবাদ প্রবচন এখনো এদের কাছ থেকেই আসা), হুসেন শাহ, লালন ফকির , রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল। এদের থেকে শেখ সাহেবের অবদান বেশী, জেগে থাকতে মানতে কষ্ট হয়।
স্বাধীন বাংলার প্রতিষ্ঠাতা সেই অর্থে শশাঙ্কই। ৭০০-১০০০ বাংলা পালরাজাদের আমলে স্বাধীনই ছিল। ৪০০ বছরের স্বাধীন বাংলা-সব থেকে বেশীদিনের জন্যে স্বাধীন বাংলা। এর পরে হুসেন সাহর আমলেও বাংলা স্বাধীন ছিল দীর্ঘদিন। এর পরে মুঘল সাম্রাজ্য থেকে
মুক্তি যুদ্ধ পর্যন্ত বাংলার রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব ছিল না। সুতরাং শেখ সাহেব স্বাধীন বাঙালী জাতি প্রতিষ্ঠা করেন সেটাও ভুল-সেই দাবী একমাত্র সম্রাট শশাঙ্কই করতে পারেন। তাহলে তার অবদানটা ঠিক কোথায়?
@বিপ্লব পাল,
উনার নির্বাচন পুর্ববর্তী ছয় দফাই মুলত পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারন করে দিয়েছিল, সেটা হলো প্রথমে আঞ্চলিক স্বাধীনতা যার পরবর্তী ধাপ ছিল পূর্ন স্বাধীনতা।
এই ছয় দফাই মূলত বাঙালির নেতা হিসাবে তার ভাগ্য গড়ে দিয়েছে, তার সাথে আরো যুক্ত হয়েছিল তার ভাবগাম্ভীর্য,উদারতা ও সবাইকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা।
তিনি নির্বাচনে ক্ষমতা চেয়েছিলেন সত্যি, কিন্তু এই ক্ষমতাপ্রাপ্তির পর তার ছয় দফা বাস্তবায়ন হলে তা পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশগুলোকেও প্রলুব্ধ করতো একই ব্যবস্থা নিতে, যার অবশ্যাম্ভবী ফলাফল হতো পাকিস্তানের পশ্চিম অংশের প্রদেশগুলোর ও পরবর্তীতে স্বাধীনতার দাবি। এজন্যই পাকিস্তানীরা তাকে ক্ষমতা দেয় নি (এটা বেনজির ভুট্টোর সাক্ষাৎকার হতে পাওয়া)।
তাই বলতে হয় ঐ ছয় দফাই মূলত তার ভিত শক্ত করে দিয়েছে।
আমি মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটা লেখায় পড়েছিলাম যে উনি আমেরিকার যেখানে পড়াশোনা করেছিলেন (ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যালটেকে) সেখানের তার টিচারদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, “আইনস্টাইন যদি না জন্মাতো তবে কি হতো?” সবাই একই কথা বলেছিলেন যে, বেশি হলে পদার্থ বিজ্ঞান আরো বিশ বছর পিছিয়ে যেত, তবুও এর চেয়ে বেশি তেমন কোন ক্ষতি হত না (!!)।
সে হিসাবে বলতে হয় মুজিব না এলে বাংলাদেশের যুদ্ধটা বা স্বাধীনতার চেতনাটা হয়তো আরো ৫/৬ বছর পিছিয়ে যেত (যদিও তৎকালীন অনেক পাকিস্তানী নীতিনির্ধারকদের পরবর্তিকালীন সাক্ষাৎকারে পড়েছি যে তারা আসলে বাংলাদেশকে ছোবড়া বানিয়ে শেষে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল!! আর যুদ্ধটা ছিল নাকি শুধু উপলক্ষ বা উসিলা মাত্র!!)
@তানভী,
মুজিবের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ত্ব আমার চোখে বাংগালী জাতির মত চরমভাবে সন্দেহপ্রবন একটা জাতিকে এত সুরে সফলভাবে নাচানো। জাতিগত ভাবেই আমাদের জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি খুবই দুর্বল। আমরা নিজেরাই যে দোজ়খে বাংল্গালী থাকবে সে দোজখের কোন পাহারাদার লাগবে না জাতীয় জোক বানাই। সেই বাংগালী জাতিকে যিনি এক সূতোয় গাথতে পেরেছিলেন তার প্রসংশা তো করতেই হবে। এই অভুতপূর্ব জাতীয় ঐক্য ছাড়া স্বাধীনতা কখনোই সম্ভব হত না।
বলা যেতে পারে যে তখন বাংগালী অন্যায় অত্যাচারের কারনে এক হতে পেরেছে। সেটা সত্য, তবে তেমন পরিস্থিতি এরশাদ আমলেও হয়েছে, আন্দোলন হয়েছে কিন্তু এ ধরনের অভূতপূর্ব ঐক্য কখনো দেখা যায়নি।
@আদিল মাহমুদ,
পাকিস্তান যে ধরনের কৃত্রিম রাষ্ট্র ছিল তাতে দুদিন আগে পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হতোই। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ঐতিহাসিক সত্য কিন্তু অপরিহার্য ছিলনা। শেখ মুজিবকে আমার ছোটকরার কোন ইচ্ছা নেই কিন্তু শেখ মুজিবকে ছাড়া বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সম্ভব ছিলনা এসব বললে বাঙ্গালী জাতিকে ছোট করা হয়। এ ব্যাপারে আমি তানভীর সাথে একমত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ছিল সময়ের দাবী। সময় কাউকে না কাউকে খুজে বের করতই নেতা হিসাবে, যদি শেখ মুজিব না থাকত।
@বিপ্লব পাল,
১৯৭১ সালে বাংলার রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব অর্জন তথা বাঙালীর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অস্বীকার করার কোন উপায় নাই।
@বিপ্লব পাল, আমার মনে হয় লেখাটা একটা ফরমায়েশী লেখা যেটা বিশেষ পত্রিকার জন্য যার পাঠককুল এধরনের লেখাই উনার কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন। এ হিসাবে লেখককে খুব বেশী দায়ী করা যায় না।
@শামীম,
“আমার মনে হয় লেখাটা একটা ফরমায়েশী লেখা যেটা বিশেষ পত্রিকার জন্য যার পাঠককুল এধরনের লেখাই উনার কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন।”
– ওনার লেখা এক পেশে হতে পারে, তবে তার মানেই উনি কাউকে খুশী করতে বা কারো ফরমায়েশমত এটা লিখেছেন এমন ভাবা কি ঠিক? উনি এখানে যা লিখেছেন তা একপেশে ঠেকতে পারে ঠিকই, তাই বলে মিথ্যাচার তো নয়। লেখকের স্বাধীনতা আছে তিনি কোন দৃষ্টিতে লেখাটি লিখবেন। একপেশে লেখা লিখতে অমন কোন ব্যাক্তিত্ত্ব লাগে না, দবিড় সবির যে কেউই লিখতে পারে।
“পাকিস্তান যে ধরনের কৃত্রিম রাষ্ট্র ছিল তাতে দুদিন আগে পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হতোই। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ঐতিহাসিক সত্য কিন্তু অপরিহার্য ছিলনা। শেখ মুজিবকে আমার ছোটকরার কোন ইচ্ছা নেই কিন্তু শেখ মুজিবকে ছাড়া বাঙ্গালীর স্বাধীনতা সম্ভব ছিলনা এসব বললে বাঙ্গালী জাতিকে ছোট করা হয়।”
আমি কি দাবী করেছি যে বংগবন্ধু ছাড়া বাংগালী কোনদিন স্বাধীন হতে পারত না? তবে কি হতে পারত, হতে পারত না, না হলে কি হতে পারত এ জাতীয় হাইপোথিটিকাল আলোচনা করে ইতিহাসের কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির অবদান মূল্যায়ন করা হয় না, করা যায় না। যা হয়েছে তা পরিপ্রেক্ষিতেই মূল্যায়ন হয়। ওভাবে দেখতে গেলে জগতের কিছুই কারো জন্য ঠেকে থাকে না, কারোই তেমন কোন বিশেষত্ব নেই। কোন নেতাই তেমন কোন গুরুত্ত্বের দাবীদার নন। জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী, জিন্না এরাও সব নিমিত্ত মাত্র। যা হবার তাতো হতই।
ঈয়াহিয়ার তূলনা ভুল বুঝেছিলাম, ধণ্যবাদ পরিষ্কার করার জন্য।
“কে শুরু করেছিল সেটা আমার বিবেচ্য নয়।”
– বিবেচ্য কেন হবে না? কোন সমস্যার স্বরূপ বর্ননা করবেন, অথচ সে সমস্যা শুরু হল কিভাবে তা বিবেচ্য নয়? নগরে আহুন লাগলে দেবালয়েও কি অক্ষত থাকে?
@আদিল মাহমুদ, আপনার মন্তব্য মডারেশনের জন্য বিবেচনাধীন। মুক্তমনার নীতিমালার সাথে কোন বৈরিতা না থাকলে মডারেশন শেষে এটি উন্মুক্ত করা হবে।
তার মানেই উনি কাউকে খুশী করতে বা কারো ফরমায়েশমত এটা লিখেছেন এমন ভাবা কি ঠিক?
আমার তো তাই মনে হয়েছে। নইলে উনার মত একজন লোক এমন লিখা কেন লিখবেন? সে যাই হোক এটা আমার ব্যাক্তিগত মত। প্রকৃত তথ্য যেমন আমি জানিনা, তেমনি আপনিও জানেন না। আপনি যা বলেছেন সেটা আপনারও অনুমান।
আমি কি দাবী করেছি যে বংগবন্ধু ছাড়া বাংগালী কোনদিন স্বাধীন হতে পারত না?
না আপনি করেননি। কিন্তু অনেকেই দাবী করে ‘যে নেতা, যার জন্ম না হলে………” ইত্যাদি।
বিবেচ্য কেন হবে না? কোন সমস্যার স্বরূপ বর্ননা করবেন, অথচ সে সমস্যা শুরু হল কিভাবে তা বিবেচ্য নয়?
আপনি অতিমাত্রায় আবেগপ্রবন হয়ে পরেছেন বোধ হয় । আমি সমস্যার সরূপ নিয়ে আলোচনা করিনি। লেখক বলেছেন যে প্রাচ্যের মরহুমদের মধ্যেই শেখ মুজিবকেই কেবল হেয় করা হয়, আমি বলেছি যে না, শুধু শেখ মুজিবকেই নয়, আরো অনেক ব্যাক্তিকেই একই ভাবে হেয় করা হয়, যেমন………। জিয়াউর রহমান ছিল একটা উদাহরন মাত্র। আর এটা নিয়েই আপনার যত সমস্যা। উনি বলেছেন শুধু ” মুস্তাক আহমেদের সূর্যসন্তানের দল আর জিয়ার আদর্শের সৈনিকরা”-এগুলো করে চলেছে, আমি বলেছি না শুধু তারাই নয়, ‘মুজিব সৈনিকরা’ও একই দোষে দোষী। এখানে আগে না পরে এমন কিছু এনে আপনিই বরংচ এক পক্ষের দোষ লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছেন, আমিতো ভাবি আপনি এমন করছেন কেন?
নগরে আহুন লাগলে দেবালয়েও কি অক্ষত থাকে?
আরে ভাই আমার কথাতো সেটাই, আগুনে কার ঘর আগে পুড়ল সেটা কি বিবেচ্য? দেবালয় আগে পুড়ল না লোকালয় আগে পুড়ল তাতে কি আসে যায়, পুড়েই যদি যায়?
@বিপ্লব পাল,
“সুতরাং শেখ সাহেব স্বাধীন বাঙালী জাতি প্রতিষ্ঠা করেন সেটাও ভুল-সেই দাবী একমাত্র সম্রাট শশাঙ্কই করতে পারেন। তাহলে তার অবদানটা ঠিক কোথায়?”
শেখ সাহেব স্বাধীন বাঙ্গালী জাতি প্রতিষ্ঠা করেছেন, এ দাবী আপনার কাছে কে করল?। বাঙ্গালী জাতি ত শুধু বাংলাদেশে বাস করে না ভারতেও বাস করে। ভারতের বাঙ্গালীদের স্বাধীন করার দায় ত বঙ্গবন্ধু নেন নাই। বঙ্গবন্ধু দায়িত্ত নিয়েছিলন পুরব পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের বা পুরব পাকিস্তান স্বাধীন করার দায়িত্ত। ৭০০/৮০০ বছর পূর্বে বাঙ্গালী স্বাধীন ছিল মোঘল/ব্রিটিশ এবং ২২ বছরের পাকিস্তানি দের সাথে থাকার পড়ে আমরা পুরব পাকিস্তানের বাঙ্গালিরা ( বা তৎকালীন পাকিস্তানীরা) ভুলেই গিয়েছিলাম,যদিও মাঝখানের মোঘল রা ৫০০/৬০০ বছর শাসন করেছিল যারা আমাদের সংখ্যা গরিষ্ঠের মত মুসলিম ছিল।
“তাছারা ১৯৭০ সালে পাকিস্থান ইলেকশন মেনে নিলে, মুক্তি যুদ্ধ কি হত? মুজিব ত সেটাই চেয়েছিলেন আগে”
ইলেকশান পাকিস্তান মেনে নিয়েছিল। মেনে নেয় নাই বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা। বঙ্গবন্ধু পশ্চিমকে পরিস্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন ,জাতীয় সংসদে তিনি ৬ দফার ভিত্তিতে গঠনতন্ত্র রচনা করবেন। এই ৬ দফার আপোষের চেষ্টা করে পশ্চিম বিফল হয়েই জাতীয় সন্সদের অধিবেশন বাতিল করে দেয় ১৯৭১ এর ৩ ই মার্চ । কারন পশ্চিম এর মত ছিল ৬ দফা বিচ্ছিন্নতার ই নামান্তর। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বলেই দিয়েছিলেন , বাঙ্গালিরা নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিল,মুসল্মান হয়েছে। বাঙ্গালীদের সন্মান করত না পশ্চিম। যে সরহয়ারদি কে প্রধানমন্ত্রী করা হয়েছিল সেই সরহয়ারদি বাংলায় কথাই বলতে পারতেন না উর্দুতে কথা বলতেন ,তারপরেও বঙ্গবন্ধু তাকে রাজনৈতিক গুরুর মর্যাদা দিতেন। পুরব পাকিস্তানের নেতা হিসেবেই সরহয়ারদিকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হলেও কিছুদিনের মধ্যে সরকার ভেঙ্গে দেয় এবং সরহয়ারদিকে গৃহবন্দি করা হয় । অথচ এই সরহয়ারদি বলেছিলেন,আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় পুরব পাকিস্তানের ৯৮ ভাগ দাবি মানা হয়ে গেছে।
“উনি কোন রাজনৈতিক আদর্শ দিয়ে যেতে পারেন নি-বরং যেটা ছিল সেটাকে রক্ষা করতেও ব্যার্থ হয়েছেন। তাহলে কি কারনে শ্রেষ্ঠ?”
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর আওয়ামীলীগের সাথে ছিল মুলত বাম্পন্থিরা যারা সর্বদলীয় সরকার চেয়েছিল। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে সরকার গঠনের মত জটিল কর্মে লিপ্ত না হয়ে বঙ্গবন্ধু বিদ্ধস্ত দেশের মানুষের বাচার তাগিদ আগে অনুভব করেছিলেন। পড়ে সর্বদলীয় দল বাকশাল তিনি ঠিকই করেছিলেন কিন্তু তাকে এর জন্য অপবাদ দেয়া হয় তিনি একদলীয় শাসন এর দিকে গিয়েছিলেন।
“তবে তিনি যে দক্ষ পরিচালক ছিলেন না-সেটা সবাই মেনে নিয়েছে বোধ হয়।”
দেখুন দাদা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি বিংশ শতাব্দির উল্লেখযোগ্য একটি ঘটনা। আমেরিকা যখন সপ্তম নৌবহর পাঠায় , রাশিয়া এর বিপরীতে হুমকি দেয়।(রাশিয়া অস্র বিরতির বিরুদ্ধে তিন বার জাতিসঙ্ঘের সাধারন পরিষদে ভেটো দেয়) তখন সবাই একটি বিশ্ব যুদ্ধের দামামা শুনতে পেয়েছিল। তাজুদ্দিনের নেত্রিত্তে যে প্রবাসি সরকার পরিচালিত হয়েছিল সেই প্রবাসি সরকার কিভাবে কাজ করবে,ভারতে কাদের সাথে যগাজগ করবে সবই বঙ্গবন্ধু ঠিক করে রেখে গিয়েছিলেন। একটি বিশৃঙ্খল, আত্মসম্মন জ্ঞানহীন জাতির অংশের (বাংলাদেশের বাঙ্গালী) যিনি স্বাধীনতা এনে দেন তিনি দক্ষ পরিচালক ছিলেন না,এটা আপনার মত একজন লোকের মুখে শুনে আমি হতাশ হয়েছি।
এখানে এর বেশী আর কি বলার আছে। দেরীতে হলেও অজয় রায়ের লেখাটি পরলাম এবং উপলব্ধি করলাম যার বুঝার সে ঠিকই বুঝে। আমি নিজেও এ বিষয়ে ব্লগ লেখার আশা রাখি মুক্ত-মনায়। আপাতত গল্প/কবিতায় আছি । বাংলা টাইপ ঠিক হোক।
পুনশ্চঃ বঙ্গবন্ধুর ভুলের তালিকা বা কি কি ভুল তিনি করেছিলেন তার তালিকা দিয়ে আমি নিজেই একটি বই লিখতে পারি। কারন আমিও বাঙ্গালী। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করার জন্য এটাই যথেস্ট যে তিনি তৎকালীন বিশ্বের তথাকথিত শক্তিশালী দেশ পাকিস্তানের প্রদান্মন্ত্রি হবার লোভে ৬ দফার বিপরীতে আপোষ করেন নাই। এখানেই তিনি অমর , বাঙ্গালীর পা চাটা, দালালি আর বিশ্বাস ঘাতকতার গ্লানি কিছুটা হলেও মোচন হয়েছিল সাময়িক ভাবে।
‘আমি একজন সংশয়বাদী হিসাবে যেখানে স্রষ্ঠার শেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষন করি সেখানে একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষন করা কোন দোষের দেখিনা।’
একটু ভুল বললেন। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব নয়, স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়।
আগে তো তাকে থাকতে হবে তারপর তো তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন- না কি বলেন?
এখন আবার বলে বসবেন না যে বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব নিয়েই আপনি সংশয় প্রকাশ করেন!!!! :lotpot: :lotpot: :lotpot:
মুক্তমনা হতে চাইলে কখন কোথায় সংশয় প্রকাশ হওয়া দরকার তা বোধ করি শেখা দরকার।
ধন্যবাদ
@মিঠুন,
একমত। একটু অফব্যালান্স হয়ে গিয়েছিলাম।
আপনি কি রাগ কোন কারনে রাগ করে এমনটা লিখেছেন? একটু বেশী কড়া হয়ে গেলনা!
শেখ মুজিবের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন? পাগল হলেন। আমার ঘারে একটাই মাথা!!
আমি একজন সংশয়বাদী হিসাবে যেখানে স্রষ্ঠার শেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষন করি সেখানে একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষন করা কোন দোষের দেখিনা। প্রত্যেকটা লোকের যার যার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অন্যেকে বিচার করে তাই আপনার যেখানে সন্দেহ নাই আমার সেখানেই সন্দেহ হতে পারে। তবে শ্রেষ্ঠতম বলেননি এতেই খুশি।
শেখ মুজিবুর রহমানে হত্যার কয়েকটি কারন উল্লেখ করেছেনঃ
১)”আমি মনে করি এই অপঘটনা সে সময়কার নিক্সন-হেনরি কিসিংগার-ইয়াহিয়-মুস্তাকসহ সিআইএ চক্রের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ফসল”
২) “অন্যদিকে তাঁর হত্যাকারীদের উদ্দেশ্য ছিল এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পুরানো পাকিস্তানী ধ্যানধারণায় প্রবর্তন এবং বাংলাদেশকে একটি ধর্মতাত্ত্বিক স্টেটে রূপান্তরিত করা এবং সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদের স্থলে ‘মুসলিম বাংলা’ নামের আদর্শভিত্তিক ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন”
৩)”বঙ্গবন্ধু অনেকবার বলেছেন তিনি চান বাংলাদেশকে ইউরোপের ছোট রাষ্ট্র সুইজারল্যাণ্ডের মডেলে গড়ে তুলতে। তার এই আদর্শই ডেকে আনে নিজের সর্বনাশ — সেনাবাহিনীর সাথে সংশ্লিষ্ট একটি অংশ তার হত্যার সাথে যুক্ত হওয়া কোন আকস্মিক ঘটনা হতে পারে না”
সুতরাং আপনার মতেই শেখ মুজিবকে হত্যার পিছনে একাধিক কারন নিহিত এবং সেনাবাহিনির প্রতি বিদ্বেষই (৩ নং কারন) অন্যতম কারন (তার এই আদর্শই ডেকে আনে নিজের সর্বনাশ) বলে আপনি মনে করেন। সুতরাং ১ ও ২ নং কারনদুটি অপেক্ষাকৃত গৌন। তাই আপনার কথার সুত্র ধরে বলাচলে সেনাবাহিনির সাথে উনার ক্ষমতার বিরোধ না হলে হয়ত তার সর্বনাশ (হত্যা) হতো না সুতরাং আপনার নিচের উদৃতিকে আমি সঠিক মনে করিনাঃ
———————–
বাঙ্গালীকি পারবে ঘাতক ইয়াহিয়া খানকে কোনদিন শ্রদ্ধা জানাতে? “কিন্তু বঙ্গবন্ধু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম”- মোটেই না। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে অনেক বাঙ্গালী ও ‘প্রাচ্যের নাগরিক’ একই আক্রমনের স্বীকার এবং তথাকথিত ‘মুজিব সৈনিক’-রা কম যায় কিসে? (অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ হয়?)।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি ৭১ পূর্ববর্তি মুজিব আর ৭১ পরবর্তি মূজিব সম্পুর্ন ভিন্ন ব্যাক্তি। নেতা হিসাবে ওনি যতটাই সফল শাষক হিসাবে ততটাই ব্যর্থ। এবং এটাই স্বাভাবিক দোষে গুনে মিলিয়েই মানুষ। তাইবলে আগের সুকাজ পরবর্তিকালের খারাপ কাজের সাফাই হতে পারেনা। অন্যায়কারীর অন্যায়ের জন্যেই তার বিচার হয়। মুজিবের অপকর্মগুলি যেমন সমর্থন করিনা তেমনি তার হত্যাকেউ সমর্থন করিনা।
এই প্রবন্ধটি ভিষনরকমে একপেশে, এই ধরনের লেখা থেকে কোন উপকার আশা করা যায় না।
@শামীম,
‘আমি একজন সংশয়বাদী হিসাবে যেখানে স্রষ্ঠার শেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষন করি সেখানে একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে সন্দেহ পোষন করা কোন দোষের দেখিনা।’
একটু ভুল বললেন। স্রষ্টার শ্রেষ্ঠত্ব নয়, স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়।
আগে তো তাকে থাকতে হবে তারপর তো তার শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন- না কি বলেন?
এখন আবার বলে বসবেন না যে বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব নিয়েই আপনি সংশয় প্রকাশ করেন!!!! Lotpot Lotpot Lotpot
মুক্তমনা হতে চাইলে কখন কোথায় সংশয় প্রকাশ হওয়া দরকার তা বোধ করি শেখা দরকার।
ধন্যবাদ
@মিঠুন, শেখানোর জন্য ধন্যবাদ
@শামীম,
এক্ষেত্রে আমিও আপনার সাথে কিছুটা একমত যুদ্ধের পরের মুজিবের অনেক ভূল ভ্রান্তি ছিল। তার পিছনে কারন হতে পারে যুদ্ধ হতে তার সম্পূর্ন বিচ্ছিন্নতা। তিনি যুদ্ধের ন’মাসই কারাগারে ছিলেন, ফিরে আসার পরও অবিরাম তার কানে কান কথা তোলা হয়েছে, যা তার বিশ্বস্ত সাথীদের সাথে তার দুরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে।
আর যুদ্ধের আগেও তিনি ছিলেন উদার মনা, পরেও সেরকম থাকতে যেয়ে অনেক আজেবাজে লোকদের তিনি প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছেন যাদের চাটুকারিতা আর জঘন্য মিথ্যা তার বিপদ ডেকে এনেছে।
হয়তো যুদ্ধের সময় যুদ্ধটা সামনে থেকে দেখলে তার মন আরো শক্ত ও কঠোর হত,যা পরবর্তীতে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত হীনতার হাত থেকে রক্ষা করত।
আর এই ধরনের লেখা থেকে আর কিছু না হোক এই যে আপনি এত গুলো প্রশ্ন করলেন, আর তার থেকে যে জবাবগুলো আসলো বা আসবে সেগুলোর উপকারীতাও কিন্তু কম না।
@শামীম,
শ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্ন আসলেই বিতর্কিত। এখানে যুক্তির থেকে আবেগই বেশী কাজ করে, তাই এ প্রসংগে কিছু বলতে চাইনা। তবে স্রষ্টার অস্তিত্ত্বে বিশ্বাস করে থাকলে তার শ্রেষ্ঠত্বে সন্দিহান হওয়া যায় না। শ্রেষ্ঠ চিন্তা করা হয় তূলনামূলক বিচারে। স্রষ্টার সাথে তো আর কারো তূলনা চলে না, কাজেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ঠিক যুক্তিভিত্তিক বলা না গেলেও স্রষ্টার উদাহরন মনে হয় খাটে না।
মুজিবের স্বাধীন বাংলাদেশ পরিচালনায় আওনেকটাই একমত হতে হয়। তিনি যত বড় জণনেতা ছিলেন তত বড় রাষ্ট্র পরিচালক বা প্রসাশক ছিলেন না। তখনকার সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অবস্থা যদিও এখকার সাথে তূলনা চলে না তারপরেও বলা চলে যে তার অনেক ব্যাক্তিগত ও প্রাসশনিক দূর্বলতা ছিল যার মাশুল দেশকে দিতে হয়েছে।
কড়া আপত্তি আছে এখানে, “বাঙ্গালীকি পারবে ঘাতক ইয়াহিয়া খানকে কোনদিন শ্রদ্ধা জানাতে? “কিন্তু বঙ্গবন্ধু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম”- মোটেই না। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে অনেক বাঙ্গালী ও ‘প্রাচ্যের নাগরিক’ একই আক্রমনের স্বীকার এবং তথাকথিত ‘মুজিব সৈনিক’-রা কম যায় কিসে? (অন্ধ হলেই কি প্রলয় বন্ধ হয়?)।“
জিয়া না হয় মানা যায়, তাই বলে ইয়াহিয়া? নিশ্চিত না আপনি ইয়াহিয়ার সাথে মুজিবের তূলনা করেছেন কি না।
আর বর্তমান বাংলাদেশে মুজিব ভক্তরা জিয়াকে বিদ্বেষ বা প্রতিশোধমূলকভাবে অযথা গালাগাল করে এটা ঠিক, তবে তার মানে এই না যে সমীকরনটা সমান সমান। নিরপেক্ষ চেহারা বজায় রাখার জন্য এমন ধরনের কথা বলা হবে ভুল। মুজিবকে হেয় করা, আওয়ামী নেতৃত্বের মুক্তিযুদ্ধে অবদান পুরোপুরী অস্বীকার করা, তার ও তার পরিবারের নামে যা তা অপবাদ দেওয়া, সরকারীভাবে মুজিবের নাম নিষিদ্ধ এসব শুরু করেছিল জিয়া এন্ড কোং। সে ধারা পরেও বজায় রেয়েছে, ইতিহাস বিকৃতির ফিরিস্তি দিয়ে আর দীর্ঘ করতে চাই না। কাজেই এই অসূস্থ কালচার শুরু করার দায় তাদের। এরপর একই ধারায় মুজিববাদীরাও প্রতিশোধ স্পৃহায় একই পথ ধরে, যেটা সমর্থনীয় নয় তবে বলা যায় না যে দুদলের দায় সমান।
এ লেখা আসলেও একপেশে হয়েছে। তবে মাঝে মাঝে একপেশে লেখা চলতে পারে, সেটা নির্ভর করে টপিকের ওপর। স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিবের অবদান টপিকের কোণ লেখা হলে বলা যেত যে এটা পুরোপুরিই একপেশে।
@আদিল মাহমুদ,
সহমত।
@আদিল মাহমুদ,
একমত। আমার বলতে একটু ভূল হয়েছে।
এখানে আমি বলতে চেয়েছি ঘাতক ইয়াহিয়াখানকে বাঙ্গালীরা কখোনো ঘৃনাছাড়া শ্রদ্ধা করতে পারবেনা। প্রাচ্যের জীবনাদর্শনের দোহাই দিয়ে লাভ হবেনা। অত্যাচারীকে ঘৃনা করা সহজাত অধিকার। আমি ঘুর্নাক্ষরেও মুজিবকে ইয়াহিয়া খানের সাথে তুলনা করিনি। লেখক বলেছেন প্রাচ্যে কেবল মুজিবকেই ঘৃনা করা হয়, এটা ঠিক নয়। জিয়া থেকে শুরু করে অনেক মৃত ব্যাক্তিকেও অনেকে ঘৃনা ও ধিক্কার জানায়।
কে শুরু করেছিল সেটা আমার বিবেচ্য নয়। এই দুই পক্ষের কোন দিকে যাবার ইচ্ছা নেই। শুধু লেখক এক দিকের ঘটনাই বলেছেন, অন্যদিক চেপে গেছেন সেটাই ধরিয়ে দেয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিল। বাংলাদেশের রাজনীতির দুটি ধারাই একই দোষে দুষ্ট।
আমার মনে হয় লেখাটা একটা ফরমায়েশী লেখা যেটা বিশেষ পত্রিকার জন্য যার পাঠককুল এধরনের লেখাই উনার কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন। এ হিসাবে লেখককে খুব বেশী দায়ী করা যায় না।
@শামীম,
সেটা কোন্ দিক?
কি রকম লেখা হলে লেখাটি একপেশে না হয়ে উপকারি লেখা হতো?
ফরমায়েশ না অনুরুধ? কোন নির্দিষ্ট পত্রিকা, দল গোষ্টি বা ব্যক্তির ফরমায়েশের তাবেদার বা কারো মন যোগানোর প্রয়াসে কিছু লেখার ব্যক্তিত্ব এই লেখক নন, তা তাঁর অনেক প্রবন্ধ পড়ে বুঝতে পেরেছি। অধ্যাপক অজয় রায় একটি জাতীয় দিবসে একজন জাতীয় নেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন, তার নিজস্ব অনুভুতি বা ভাবনাটুকু ব্যক্ত করেছেন, এবং প্রথমেই উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে বড় ও বিশ্লেষণমূলক লেখার অবকাশ এই প্রবন্ধে নেই।
এই প্রবন্ধে সম্ভবত আপনিই সব চেয়ে বেশী মন্তব্য করেছেন, বহুবার শেখ মুজিব বলেছেন কিন্তু একটিবারও বঙ্গবন্ধু শব্দ লিখেন নাই। এরও কি কোন কারণ আছে?
@আকাশ মালিক,
অন্যান্য মানুষের মত শেখ মুজিবও দোষে-গুনে মানুষ। কিছু লোক উনাকে মহামানব বানাতে গিয়ে শুধু স্তুতি গাইতে থাকে। দোষ থাকার পরও কাউকে ভালো লাগতেই পারে কিন্তু একজন বিশ্লেষকের উচিত গুনের পাশাপাশি দোষগুলিকেও তুলে ধরা। এই প্রবন্ধে যেটি করা হয়নি (যেহেতু এটি একটি ফরমায়েশী লেখা বিশ্লেষন নয় সেই চিন্তা করলে ঠিকই আছে)
একটি বিশ্লেষন ধর্মী লেখা। যেখানে মানুষ হিসাবে বাস্তব বিশ্লেষন করা হবে, যেখানে ভালো দিক মন্দ দিক সবই অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সবাই আপনার মতই বুঝবে এটা কেন আশা করেন?
তিনি একজন জাতীয় নেতা নিয়ে তার অনুভূতি ব্যাক্ত করেছেন। আমি তার লেখা নিয়ে আমার অনুভুতি ব্যাক্ত করেছি। সমালোচনা করাতো দোষের কিছু নয়। যেমন আমার সমালোচনা আপনার ভালো লাগেনি তাই আপনি আমার সমালোচনার সমালোচনা করছেন। কই আমিতো বলেনি কেন আমার সমালোচনা করছেন? লেখক যত বিখ্যাত হোন আর যাই লিখুন তা সমালোচনার উর্ধ্বে থাকতে পারেনা।
এটা পড়েই মূলত আমি বুঝেছি এটি একটি ফরমায়েশি লেখা তাই আমি আর খুব বেশী উচ্চবাচ্চ করিনি।
আমি আসলে একটি মন্তব্য করেছি আর বাকিগুলি ছিল আমার মন্তব্যের সমালোচনার জবাব। সে যাই হোক, ‘বঙ্গবন্ধু’ একটি টাইটেল এটি তার নামের কোন অংশ নয়। এটা অনেকেই তাকে ভালবেসে দিয়েছিলেন এবং অনেকেই এই ভাবে তাকে ডাকতে ভালোবাসেন। কিন্তু কেউ যদি ‘বঙ্গবন্ধু’ না বলে তাতে উনার অমর্যাদা হয়না।
যেমন ধার্মিক মুসলমানেরা ভক্তি ও শ্রদ্ধা হিসাবে মুহাম্মদ কে মহানবী বা নামের শেষে (সাঃ) ব্যাবহার করেন। আপনি সম্ভবতঃ মুহাম্মদের আগে পিছে এগুলি ব্যাবহার করেননা কিংবা অনেকেই করেননা।
অনেকেই শেখমুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ না বললে ক্ষিপ্তহয়। এটি একটি অদ্ভুত আবদার। আবার আরেক দল ‘বঙ্গবন্ধু’ বললেই ধরে নেয় কোন বিশেষ দল বা মতবাদের লোক। আমি কাউকে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘শহীদ’, ‘বাংলার বাঘ’ এভাবে বলিনা। আমি যে কাউকে তার প্রকৃত নামে ডাকতেই পছন্দ করি।
শেখ মুজিবের বিষয়ে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল:-
১) তিনি কি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন? আমি শুনেছি তিনি বলে তাঁর বকৃতায় প্রায়ই “ইনশাল্লাহ”, “মাশাল্লাহ” জাতীয় ধর্মীয় শব্দ ব্যবহার করতেন। তিনি আবার “ইসলামী ফাউন্ডেশন” প্রতিষ্ঠা করেছেন। একজন লোকায়ত রাজনীতিবিদ হিসেবে এসব কাজ কি তাঁর করা উচিত ছিল?
২) বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি বলে একটা Orwellian state এর নেতার মতই ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যা করেছেন এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করেছেন। এগুলোকে কি ইনোসেন্ট মিসটেক বলা যায়?
@পৃথিবী,
এগুলো অবশ্যই বংগবন্ধুর ভুল বা দুর্বলতা বলেই ধরে নিতে হবে।
@পৃথিবী,
একজন ব্যাক্তি ধর্মীয় হতেই পারেন এবং ঐসব ধর্মীয় শব্দ ব্যাবহার করতে পারেন এতে রাষ্ট্রের সেক্যুলারিত্বের অবসান ঘটেনা। রাষ্ট্র আর ব্যাক্তি সম্পুর্ন ভিন্ন সত্ত্বা। ব্যাক্তি ধার্মিক হওয়া সত্ত্বেও রাষ্ট্র যদি বিশেষ কোন ধর্মকে অগ্রাধিকার না দেয় তবে সেক্যুলারিজম অর্জিত হয়েছে বলে বলা যায়।
@শামীম,
কিন্তু একটি সেক্যুলার রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান যখন বকৃতা দেন, যদি সেটা রাষ্ট্রের জনগনের উদ্দেশ্যে হয়, তখন সেটা আর ব্যাক্তি পর্যায়ে থাকেনা। সেই ক্ষেত্রে কোন বিশেষ ধর্মীয় শব্দ ব্যাবহার করা কতটা যথাযথ সেটাও বিবেচ্য বিষয়।
@ব্রাইট স্মাইল,
দেখুন কট্টোর মতবাদ সব মতবাদেরই ক্ষতি করে। তেমনি কট্টোর সেকুলারিজম, মূল সেকুলারিজমের ক্ষতি করে। বক্তৃতা আর রাষ্ট্রিয় ফরমান একনয়। একজন ব্যাক্তি যখন বক্তৃতা দেয় তখন তার শ্রোতার আকাঙ্ক্ষাকে তার মুল্যায়ন করতে হয়। ধরা যাক রাষ্ট্রিয় নেতা হিসাবে একজন কোন মুসলিম সম্মেলনে যোগ দিলেন (ধরুন ও আই সি সম্মেলন) সেখানকার অধিকাংশ শ্রোতাই মুসলিম সেখানে একজন (মুসলিম) নেতা হিসাবে ‘ইনশাল্লাহ’ , ‘মাশাল্লাহ’, ‘আস-সালামু আলাইকুম’ বলা দোষের কিছু নয়। একজন ব্যাক্তি সেক্যুলার হলেই অধার্মিক হয়ে যায়না।
বক্তৃতা অনেকটা ব্যাক্তিগত বিষয়, যেখানে একজন ব্যাক্তি তার অভিব্যাক্তি ব্যাখ্যা করে। ঈদের দিন ‘ঈদ মোবারক’ ক্রিসমাসে ‘মেরি ক্রিসমাস’ বললেই সেক্যুলারিজম ক্ষুন্ন হয় না । কিন্তু রাষ্ট্রিয় মূলনীতি যেমন, সংবিধান, রাষ্ট্রিয় ফরমান ইত্যাদি ব্যাক্তি নিরেপেক্ষ সুতরাং এইসব বিষয় “বিসমিল্লাহ” বা ধর্মীয় কোন শব্দ বা প্রভাব মুক্ত থাকলে বলা চলে সেক্যুলারিজম অর্জিত হয়েছে।
মর্মস্পর্শি লেখা। একজন প্রিয় মানুষের লেখায় আরেকজন প্রিয় মানুষ।সম্ভবত স্যারের মত মানুষ আছে বলেই বঙ্গবন্ধু হারিয়ে যায়নি। আমার জন্ম,বেড়ে উঠা জিয়া-এরশাদের অন্ধকার যুগে। এবং আমার শৈশবের বঙ্গবন্ধু ছিল একজন ভিলেন যার ছেলে ব্যাংক ডাকাতি করত,তার দলের লোকেরা সরকারি মাল লুট করত কিন্ত তিনি কেমন ছিলেন তা সম্ভবত কেউ বলতও না বা জানার আগ্রহও দেখাতাম না।
ধন্যবাদ।
এই লেখাটি নিয়ে আমার একটু ক্ষমাপ্রার্থণা করা প্রয়োজন। স্যারের লেখাটি আমাকে অভিজিৎ পাঠিয়েছিল বিজয়ের মাসেই। প্রবন্ধটি যেহেতু বিজয়ে লেখা, অভ্রতে রূপান্তর করার প্রয়োজন ছিল। আজ করি কাল করি করতে করতে ভুলেই গিয়েছিলাম আমি এর কথা। আজকে হঠাৎ করে মনে পড়লো। তাড়াহুড়ো করে পোষ্ট দিলাম। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এই লেখাটি গেলে তা হতো সর্বোত্তম। আমার গাফিলতির কারণে তা না হবার কারণে আমি অসম্ভব লজ্জ্বিত।
আমার এই ক্ষমাহীন অপরাধের জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী স্যারে কাছে।
স্যার, আমাদের কত কত বড় অপরাধইতো ক্ষমা করে দেন হাসিমুখে। এটিকেও না হয় করে দিয়েন সেভাবেই।