মন রেখেছি আমি
বাল্যকালে বাংলা সিনেমার বেজায় ভক্ত ছিলাম আমি। বুড়োকালে এসেও যে সেই বদ অভ্যাস বন্ধ হয়েছে সেটা বুকে হাত দিয়ে বলা যাবে না কিছুতেই। বাল্য বয়সে যেখানে বাহাদুর, বেদ্বীন, বানজারান, নওজোয়ান, বাগদাদের চোর, তুফান, হুর এ আরব ধরনের আকর্ষনীয় বহুবর্ণের সিনেমা দেখতাম, এখন তার বদলে সত্যজিত, অপর্ণা, বুদ্ধদেব বা ঋতুপর্ণ-র দুই একটা বিবর্ণ এবং বিরস সিনেমা দেখে রাখতে হয় ভদ্র সমাজে নিজেকে সমঝদার প্রমাণের জন্য। গোপনে গোপনে অবশ্য আকণ্ঠ ভালবাসা পড়ে আছে সেই সব খাসা খাসা সিনেমার জন্য।
সেই পিচ্চি বয়সে আমার প্রিয় নায়ক ছিল ওয়াসিম। শুধু আমার একার নয়। আমার সব বন্ধুদেরও প্রিয় নায়ক ছিল ওয়াসিম। ওয়াসিমের অষ্টাশি কেজি ওজনের ওজনদার শরীর আর বিয়াল্লিশ ইঞ্চি ব্যাসের বুক দেখে মেয়েরা কী প্রেমে পড়বে, আমরা গুড়োগাড়ারাই তাকে নিয়ে গুনগুন গুঞ্জন করতাম গলাগলি করে। যদিও আমাদের সকলেরই স্বাস্থ্য তখন ইথিওপিয়ার দুর্ভিক্ষ পীড়িত লোকজনের মত, তবুও আমরা সবাই ফুসফুসে যতখানি বাতাস ঢোকানো সম্ভব ততখানি ঢুকিয়ে সিনা উঁচু করে হাটার চেষ্টা করতাম ওয়াসিমের মত।তার অনুকরণে বুকের বোতাম খুলে দিতাম একটা দুটো যাতে করে মেয়েরা আকৃষ্ট হয়। সব সিনেমাতেই ভূড়িওয়ালা ভিলেন জসিম আর তার জ্যাম্বস গ্রুপের ষন্ডা পান্ডাদের জন্মের মত সিধে করে দিত সে খালি হাতে পেদিয়ে। অবশ্য ওরাও কেন যেন একসাথে সবাই ওয়াসিমকে আক্রমণ করতো না। বোকার মত এক একজন করে আসতো আর মার খেয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তো। কেউ কেউ আবার এমনি বোকা ছিল যে, ওয়াসিম যখন ঘুষি চালাতো সেই ঘুষি খাবার জন্য দুই হাত দুইপাশে ছড়িয়ে দিয়ে মুখটাকে এগিয়ে দিত। তারপর ঘুষি খেয়ে একেবারে শুন্যে উড়ে দশহাত দূরে গিয়ে পড়তো। ওদের বস বিটকেলে জসিম ছিল আরো বেয়াক্কেল। তার সাগরেদরা যখন সাগু হয়ে যাচ্ছে মার খেয়ে কোথায় তাদের সাহায্যে আসবে। তা না সে বেটা দেখতাম ওই সময় বড় বেশি ব্যস্ত থাকতো নায়িকার সাথে ওড়না কাড়াকাড়ির খেলায়। মুশকো বেটা মেয়েদের ওড়না দিয়ে কী করবে কে জানে?
ওয়াসিমের ভক্ত হিসাবে কত কষ্টই না করেছি আমরা তার সিনেমা দেখার জন্য। আমাদের পিচ্চিকালে দোস্ত দুশমন নামের একটা সুপারহিট সিনেমা বানানো হয়েছিল। ছবিটা ছিল বোম্বাইয়া ছবি শোলের নকল। তখন অবশ্য এত কিছু জানতাম না। আমরা সব বন্ধুরা মিলে সেই খিলগাঁও থেকে হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছিলাম জোনাকী সিনেমা হলে তা দেখার জন্য। কালোবাজারীতে থার্ড ক্লাসের টিকেট কিনতে পেরে বিশ্বজয়ের যে আনন্দ পেয়েছিলাম সেই আনন্দ আর পাইনি কখনো এই জীবনে।
আমার সবচেয়ে পছন্দের নায়িকা ছিল মনমাতানো মনলোভা অতুলনীয়া অলিভিয়া। অলিভিয়া কেন এত পছন্দের ছিল সেকথা বলা যাবে না এখানে। শুধু এটুকু বলছি, আমরা বাচ্চাদের মাসুম চেহারা আর নিষ্পাপ চোখ দেখে যতখানি অপাপবিদ্ধ তাদেরকে মনে করি ততখানি অপাপবিদ্ধ তারা নয়। ওই আপাত নিষ্পাপ চোখের আড়ালে কত যে পাপ লুকিয়ে আছে তা নিজে ছোট না থাকলে কোনদিন জানতেও পারতাম না। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়েই এক কচি কন্যার প্রেমে দিওয়ানা হয়ে গিয়েছিলাম আমি। সেই প্রেম অবশ্য একতরফা ছিল। এক অনুষ্ঠানে আমি যখন বুকের বোতাম খুলে সিনা উঁচিয়ে সেই কন্যার দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণে ব্যস্ত, তিনি তখন তার সখিদের সাথে হেসে কুটিকুটি হচ্ছেন। আমার দিকে ফিরে তাকানোর সময়ও তার নেই। জীবনের প্রথম প্রেম আমার অংকুরেই বিনষ্ট হয়েছিল বিপরীতপক্ষের চরম ঔদাসিন্যে। সকালটা দেখলেই যেমন আন্দাজ করা যায় দিনটা কেমন যাবে। প্রথম ঔদাসিন্যের রেশ আর কাটেনি আমার কখনো। সেই ঔদাসিন্য বিপরীত পক্ষীয়রা প্রেমহীন নির্মমতায় লালন করে গেছেন আমার সাথে আজীবন।
দোস্ত দুশমন ছবিতে অলিভিয়া না থাকায় নিদারুণ দুঃখ পেয়েছিলাম আমরা। কচি মনের সেই কষ্ট এখনো ভুলতে পারি না আমি। অলিভিয়ার বদলে ওই ছবিতে শাবানা ছিল। কী কারণে যেন আমরা কেউ-ই শাবানা ম্যাডামকে দুই চোখে দেখতে পারতাম না তখন। বড় বেশি ছিচকাঁদুনে ছিলেন এই ভদ্রমহিলা। সামান্য কিছুতেই কেঁদে কেটে একেবারে চোখের জলের বন্যা বইয়ে দিতে পারতেন তিনি। রূপালী পর্দা অতিক্রম করে সেই বন্যা হলের মধ্যেও চলে আসতো। মহিলা দর্শকদের দেখতাম শাবানার সাথে পাল্লা দিয়ে কেঁদে বুক ভাসাতে। কান্নাকাটির চেয়েও আমরা অবশ্য তাকে অপছন্দ করতাম অন্য কারণে। আমাদের সবারই কেন যেন বদ্ধমূল ধারনা ছিল যে, এই মহিলা নায়িকা না হয়ে নায়িকার মা হলেই মানাতো বেশি।
ওই সময়ে একদিন মুক্তি পায় শিশুতোষ গোয়েন্দা ছবি এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী। এই ছবির মূল চরিত্র এমিল হিসাবে অভিনয় করেছিল পার্থ। পার্থ পরে নটরডেম কলেজে আমার সহপাঠী ছিল। এরকম একটি এডভেঞ্চারাস ছবি দেখবো না তা কি করে হয়। তাই একদিন হাফপ্যান্ট পরা বয়সে স্কুল ফাঁকি দিয়ে রওনা দেই গুলিস্তানের দিকে। স্কুল পালানো আমার কাছে তখন পানিভাতের মত ছিল। সিদ্ধেশরী থেকে হেটে প্রথমে মৌচাক আসি। তারপর মুড়ির টিনে করে গুলিস্তান এসে নামি। গুলিস্তান সিনেমা হলের উপরেই নাজ সিনেমা হল। টিকেট কাটতে গিয়ে দেখি পকেটে পর্যাপ্ত পয়সা নেই। মন খারাপ করে হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় লুঙ্গিপরা এক লোক এসে বললো, সিনেমা দেখবা? আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম, করুণ গলায় বললাম। দেখতেতো চাই। কিন্তু টাকা কম আছে। তিনি হেসে বললেন, ট্যাকা নিয়া চিন্তা কইরো না। এরপর সেই লোক কালোবাজারীর কাছে থেকে দুটো টিকেট কিনলো। আমাকে বললো বাস ভাড়ার পয়সা রেখে বাকীটা দিতে। টিকেট কেটে দুইজনেই গিয়ে বসলাম সিনেমা হলে। সিনেমা শুরু হতেই অবাক হয়ে দেখলাম এমিলের গোয়ন্দা বাহিনী নয়, এপার ওপার ছবি হচ্ছে। আমিই ভুল করে ভুল সিনেমা হলে চলে এসেছি। একটু মন খারাপ হলেও বেশিক্ষণ তা থাকেনি। কারণ এপার ওপারও দুর্দান্ত মারপিটের ছবি। তার উপর আবার একটু বড়দের ইয়ে টিয়েও ছিল। আজ এতদিন পর এসে যখন ওই ছবিটা আবার দেখি তখন একটা জিনিষ আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। পঞ্চাশ ষাট বা সত্তরের দশকের বাংলা সিনেমার প্রেম মানেই প্লেটোনিক প্রেম। নায়ক নায়িকা মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে, পার্কে একজন আরেকজনের পিছনে ছাগ শিশুর মত একটু ছুটোছুটি করবে আর বড়জোর নায়িকা লাজুক লাজুক নয়নে নায়কের শরীর থেকে তিনহাত দূরে দাঁড়িয়ে মাথাটা আলতো করে তার বুকে ছোঁয়াবে। এর বাইরে প্রেমে যে আর কিছু থাকতে পারে তার কোন ধারনাই পাবেন না আপনি। এপার ওপার সিনেমাটাই খুব সম্ভবত প্রথম বাংলা সিনেমার এই পুতুপুতু প্লেটোনিক প্রেমের যে ব্যাপার স্যাপার ছিল তা ভেঙ্গে দিয়েছিল।
গভীর মনযোগ দিয়ে সিনেমা দেখছি আমি। একটা দৃশ্য, একটা ডায়ালগ যেন মিস না হয়ে যায়। কারণ এই সিনেমার গল্প আমার বন্ধুদেরকে বলতে হবে। আমরা বন্ধুরা যে যেখানেই যে সিনেমা দেখি না কেন তার বিস্তারিত গল্প অন্যদেরকে বলতাম। এমনকি মারপিটের দৃশ্যগুলোও আমরা রিমেক করে দেখাতাম। এতে করে পয়সার অভাবে সিনেমা না দেখার দুঃখ কিছুটা হলেও ঘুচতো। হঠাৎ করেই টের পেলাম একটা হাত আমার নগ্ন উরুর উপর দিয়ে খেলে বেড়াচ্ছে। চমকে তাকিয়ে দেখি সেই লুঙ্গি পরা ভদ্রলোক গভীর আনন্দে আমার উরুতে হাত বুলিয়ে যাচ্ছেন। আমি হাত দিয়ে সরিয়ে দেই তার হাত। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসেন। কোন কিছুর ধারনা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে কীভাবে যেন ভোজবাজির মত বিষয়টা বুঝে যাই আমি। আতংক চেপে ধরে আমাকে। মনের মধ্যে খুঁচখুঁচানি নিয়ে বাকী সিনেমা দেখতে থাকি। অভির আর্টিকেল পড়া ছিল না তখন। কাজেই জানতাম না যে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জিনের দোষে ওই লোক এমন করছে। কিছুক্ষণ পর আবারো সেই লোমশ কুৎসিত হাতের স্পর্শ পাই আমি। এবার সজোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই সেই হাত। তার কাছ থেকে দূরে সরে বসি। এভাবেই ছবি দেখা চলে আমার। কিছুক্ষণ পর পর অনাহুত হামলা আর সেই হামলা প্রতিহত করা। আমার উপর অনাহুত হামলার সেটাই প্রথম এবং শেষ হামলা। আর কোনদিনই কোন অনাহুত বা কোন আহুত হামলার স্বীকার হইনি আমি। আগে যেখানে সিনেমা শেষ হবার পরে সমাপ্ত লেখা না দেখা পর্যন্ত উঠতাম না, সেই আমিই সিনেমা শেষ হচ্ছে হচ্ছে এমন সময়ে দ্রুতগতিতে সিনেমা হল থেকে বের হয়ে আসি।
সিনেমা নিয়ে এত কথা বলছি কেন? আমার গত লেখা কনওয়ে টুইটিঃ একটু গান হলে কী ক্ষতি? যারা পড়েছেন বা যারা আমাকে একটু চেনেন তারা ঠিকই আমার মতলব ধরে ফেলেছেন। জ্বী আপনাদের অনুমান সম্পূর্ণ নির্ভুল। আজও একটা গান শোনাবো আপনাদের। হ্যাঁ, এপার ওপার ছবির গান। আরো ধরে ফেলেছেন, ভালবাসার মূল্য কত গানটা, তাই না? জ্বী না, এবারে আপনাদের অনুমান পুরোপুরি ভুল। এটাও প্রেমের গান, তবে অন্য গান। সূর্যের প্রখর কিরণে যেমন চন্দ্র ঢাকা পড়ে থাকে তার শুচিস্নিগ্ধ সৌন্দর্য নিয়ে, তেমনি ভালবাসার মূল্য কত গানের আড়ালে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল এই গানটা। অথচ আমার মতে এটি বাংলা সিনেমার অন্যতম সেরা একটি প্রেমের গান। দুধের সর নাকি সবসময় উপরেই ভেসে উঠে। কথাটা কিন্তু ঠিক না। লিওনার্দোর কত কত ভাল কাজের কথা কেউ জানে না, কিন্তু তার মাঝারি মানের কাজ মোনালিসা দেখার জন্য সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। চুমকি চলেছে একা পথে-র মত একটা চটুল গান সবার মুখে মুখে, অথচ অসাধারণ এই গানটা হারিয়ে গেছে সবার স্মৃতি থেকে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=Mb0gpipx5fY
আাপনার লেখা খুব ভালো লাগলো। আমার জীবনে কেউই আসেননি, যাকেই ভালো লেগেছে, তারা সবাই আপনার মতো… “সেই ঔদাসিন্য বিপরীত পক্ষীয়রা প্রেমহীন নির্মমতায় লালন করে গেছেন আমার সাথে আজীবন”
ভালো থাকবেন। (Y)
অলিভিয়াকে আমারও খুব ভালো লাগতো, লেখকের মতো একই কারণে এখানে বলা যাবে না কেন ভালো লাগতো, তবে আমি ভেবেছিলাম মনে হয় শুধু আমারই ঐ ব্য়সে নারী শরীরের প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয়েছিল, এখন দেখছি আমি একা নই।
@তুর্য্য,
একে বলে ইঁচড়ে পাকা, আপনি এবং আমি দুজনেই। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,”একে বলে ইঁচড়ে পাকা” খুব ভালো লাগলো। শত ভাগ একমত।
অলিভিয়ার কিছু তথ্য এখানে
http://immortalfame.blogspot.com/2010/08/blog-post_23.html
আমাদের বাড়ি এবং সিনেমা হল একসাথে লাগোয়া। বাড়ির ছাদের কার্ণিশে বসে সিনেমা হলের দেয়ালে ঠেশ দিয়ে বসে থাকতাম বিকাল বেলায়। হলটির নাম রূপাঞ্জলী হল।
জন্মকাল থেকে হল থেকে ভেসে আসা সিনেমার ডায়োলগ গান শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। প্রতি সপ্তাহে নতুন নতুন ছবি আসতো। কোন কোন ছবি দুই তিন সপ্তাহ পর্যন্ত চলতো। ছবি দেখতে আমাদের কোন টিকিট কাটতে হতো না। পাশ নিয়েই দেখতাম।
আমি এখন ছবির কোন কাহিনী গান বা গল্প কোনকিছুই বলবো না। বলবো অন্য একটি বিষয় নিয়ে-
রমজান মাসে মূল ছবি দেখানোর আগে হজের ভিডিও চিত্র দেখানো হতো। ঐ হজ দেখার জন্য হলে ঢুকেছি। হলের পাশে বড় বড় ড্রাম ভর্তি পানি। ঐ পানি রাখা হয়েছে অজু করার জন্য। পবিত্র হজ দেখার জন্য এই ব্যবস্থা।
একটু ভাবুন- হজ দেখার জন্য সিনেমা হলে ঢুকতে হবে অজু করে। ছোটবেলায় দেখা সেই চিত্র আজ ভেসে উঠছে মনের পর্দায়।
আইচ্ছা একটা কথা,মুহাইমীন ভাই আর ফুয়াদ ভাই(যদিও উনারা এখনও উনাদের মূল্যবান সময় এইসব হালকা পাতলা বিষয়ে কিছু লিখেন নাই)..
এই সব সিনেমা দেইখ্যা বা গান বাজনা শুইন্যা আমরা দো জাহানে কত পাপের ভাগি হইচ্ছি?
ফরিদ,
আপনার এই লেখাটি পড়ে কত যে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে গেল । শাবানা, ববিতাকে নিয়ে দুই বোনের মধ্যে সারাক্ষণ মারামারি লেগে থাকত । আমি ছিলাম ববিতার ভক্ত, শাবানাকে দুই চোখে দেখতে পারতাম না । এখন মনে পড়লে খারাপই লাগে, আমার ছোট বোনের জমানো শাবানার ছবি গুলো আমি লুকিয়ে ছিঁড়ে ফেলতাম । 🙁
বেচারা কান্না কান্না মুখ করে কত যে খুঁজত আর ওদিকে আমি দূরে দাঁড়িয়ে শয়তানি হাসি হাসতাম । সে আমাকে সন্দেহ করলেও কোন প্রমাণ না থাকায় কিছু বলতেও পারত না । অদ্ভুত কথা হলো নায়ক নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা কিন্তু ছিল না, যত মারামারি সব নায়িকাদের নিয়ে।আবাহনী, মোহামেডানের ভক্ত সমর্থকরা সারাক্ষণ যেরকম উত্তপ্ত অবস্থায় থাকত, আমরা দুই বোন ও তেমনি শাবানা ববিতা কে নিয়ে একজন আরেকজনকে সারাক্ষণ খোঁচাতাম ।
আর হ্যাঁ আপনি লেখায় ছোট্ট একটা ভুল করেছেন, দোস্ত-দুষমন ছবিতে কিন্তু শাবানা নয়,ববিতা ছিলেন । 🙂
@নন্দিনী,
ওইসব সিনেমা দেখে দেখেইতো জীবন পার করলাম। এতো ছোটখাটো ভুল করলে চলে নাকি? 😀 জ্বী না, ববিতা নয়, শাবানাই ছিল ওই ছবিতে। এই যে প্রমাণ দেখুন,
httpv://www.youtube.com/watch?v=bksASAF5jK0
পড়ছিলাম আর ভয়ে ভয়ে ভাবছিলাম ওয়াসিমের মতোই কাউকে দুই একটা ঘুসি লাগিয়ে দেবেন। আশ্চর্য আপনি উল্টোপথে আমাদের একেবারে প্রেমের দেশে নিয়ে ছাড়লেন! লেখাটি খুব উপভোগ করলাম, ধন্যবাদ।
একজন নির্ধর্মী,
আমারো মিডিয়া প্লেয়ারে চলেনি, তবে রিয়েল প্লেয়ারে বেশ চমতকার চলে। আমি ওউইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার থেকে রিয়েল প্লেয়ার প্রেফার করি এসব কারনেই।
আমি রাতে ওটা আবার রেকর্ড করে আপনাকে পাঠাবো।
@আদিল মাহমুদ,
কী আর বলবো, ভাই! টানা শুনছি। রেকর্ডিংও অতীব চমৎকার।
অনিঃশেষ ধন্যবাদ। নিশ্চয়ই আপনি অশেষ নেকি হাসিল করতে পরেছেন পরোপকারী এই কাজের মাধ্যমে 😀
সৈয়দ আব্দুল হাদীর ব্যাপারে বিশেষ মুগ্ধতা কখনওই ছিলো না। তবে আইয়ুব বাচ্চুর উপস্থাপনায় এক টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর লাইভ গান শুনে ভক্ত হয়ে পড়ি। তাঁর ব্যক্তিত্বও মুগ্ধ করে আমাকে: হাস্যমুখ, নিরহংকারী, অন্যের প্রশংসায় অকুণ্ঠ। অনুষ্ঠানটির ভিডিও রেখে দিয়েছি; ভিডিওর মান খুব ভালো না হওয়া সত্ত্বেও। কেউ চাইলে জায়গায় বসে আওয়াজ দিন। কোনও ফাইল হোস্টিং সাইটে আপলোড করে দেবো। নেকি কামানোর প্রয়োজন আমারও আছে 😛
@একজন নির্ধর্মী,
নেকি হবে নাকি গুনাহ হবে এটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। কারন বেশীরভাগ আলেমের মতেই গান বাজনা সম্পুর্ণ নিষিদ্ধ। সেই হিসেবে আমার খবরই আছে।
আবার আরেকদিকে কোন আদম সন্তানের মনে খানিকটা হলেও আনন্দ দেওয়া গেল, তার বিনিময়ে কিছুটা নেকি আশা করা যেতেই পারে। খুবই কনফিউজিং সিনারীও। ধর্ম বিষয়ে যেহেতু কোন বিতর্করেই মীমাংসা হবে না তাই এই বিতর্কও তুলে রাখাই ভাল।
আব্দুল হাদীর “আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিষ্টার” গানটা আমার অন্যতম প্রিয় গান। শুরুতেই কি নিদারুন টানটা দিয়েছিলেন বলেন তো! উনি আসলেই খুব লো প্রোফাইলে চলাফেরা করতে পছন্দ করেন শুনেছি। সরকারী চাকরি করেন কি করতেন। উনি গাইতেনও মনে হয় একটু সিলেক্টিভ, খুরশীদ আলম টাইপের গণ নয়।
এত আলোচনার ভীড়ে দুটি ছবির কথা বলতেই হবে। একটি হল জহির রায়হানের জীবন থেকে নেওয়া। এই ছবিটির সিন তো বটেই এমনকি ডায়ালগ শুদ্ধ মুখস্ত হয়ে গিয়েছিল বিটিভির কল্যানে। ভাষা আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে হওয়ায় এতে মুক্তিযুদ্ধ, বংগবন্ধু, জয় বাংলা এসব জিনিস একটু কম ছিল। তাই ৯০ এর দশক পর্যন্ত শাসকগোষ্ঠি এটি দেখাতে নিরাপদ বা স্বস্তি বোধ করত। ফলে প্রত্যেক বিজয় দিবস বা এরকম দিবসে এই ছবিটি ছিল অবধারিত। তবে বার বার দেখতে খুব একটা খারাপ লাগত না।
আরেকটি ছবি হল বেদের মেয়ে জোৎস্না। বাংলা ছবির জগতে সম্ভবত প্রথম মেগা হিট। অঞ্জু ঘোষ আর ইলিয়াস কাঞ্চন। মনে আছে রোজার দিনে চুপি চুপি হলে বসে ছবিটি আমরা দেখেছিলাম। হলের ভেতরে খাওয়াও যেত আর রোজার দিনে সময়ও কাটানো যেত এসব ছবি দেখে। পরে শুনলাম কলকাতায়ও এর একটি সংস্করণ বেরিয়েছিল। “বেদের মেয়ে জোৎস্না আমায় কথা দিয়েছে, আসি আসি বলে জোৎস্না ফাঁকি দিয়েছে” তখন বাংলার জলে স্থলে অন্তরীক্ষে বাজছিল।
পুরুনো গানের স্মৃতি নিয়ে আলোচনা বেশ উপভোগ্য হচ্চ্ছে। দয়া করে চালিয়ে যান। আদিল মাহমুদের দেয়া লিঙ্কগুলোও বেশ কাজে লাগছে, এই জন্য তাকে ধন্যবাদ।
@ব্রাইট স্মাইল,
আলোচনা চালাতে গেলে সবারই অংশগ্রহণ লাগে। তাতে আলোচনা জমে ভাল। আপনিও কিছু আলোচনা করুন, আমরা শুনি।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনাদের সবাইর সুন্দর লেখা এবং আলোচনা পড়ে পড়েই আমার সময় কেটে যায়, আর পড়েই বেশী আনন্দ পাই। আমি লেখালেখিতে খুব একটা পারদর্শী না এবং আপনাদের মতো মনের কথা গুছিয়ে লেখাতেও অভ্যস্ত্ না। তাছাড়া লেখালেখির কাজটাতো আর সবার জন্য না। কথাতে হয়ত অংশগ্রহন করা যায়, কিন্তু লিখাতে অসম্ভব। মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।
কি এখনও আশির দশকেই আছেন? আহা!! ষাটের দশকের সেই সব লাহোরি উর্দু ছবি, নিলো,জেবা, সেইসব ঝাকুনি নৃত্য, রঙ্গিলার কৌতুক আমাদের বু্ঁদ করে রেখেছিল। তারপর এলো ফোক ছবির জোয়ার। “রুপবান”,”সাত ভাই চম্পা” “বেহুলা”।নায়িকার দুঃখে কতদিন সার্ট ভিজিয়ে বাসায় ফিরেছি। আরেক নিসিদ্ব আকর্ষন ছিল, মর্নিং শো, স্কুল পালিয়ে ইংরেজী ছবি দেখার কি যে আকর্ষন, তা এখন বর্ননাতীত।আইয়ুব খান ছাত্রদেরকে আন্দোলন থেকে দুরে রাখার জন্য সিনেমায় হাফ টিকেট করে দিলেন।আমরা সিনেমা হলে হুমড়ি খেয়ে পড়লাম।কাজী জহির বাংগালী সেন্টিমেন্ট বুঝে ছবি বানালেন,”ময়নামতি”।শুরু হলো আরেক জোয়ার।রাজ্জাক,কবরী,আজিম,সুজাতা,সুচন্দা,তখন আমাদের আইডল।জহির রায়হান তার “জীবন থেকে নেয়া” ছবির মাধ্যমে আমাদের হুশ ফেরালেন,
আমরা আমাদের শিকড় খুজে পেলাম। সেই শিকড় খোজার জোয়ারে আমরা ফিরে পেলাম “স্বাধীনতা”।
@ফরহাদ,
৬০ দশকের কিছু দেখেছি, খুব কম নিশ্চয়ই, জন্মই তো হয়নি তখন।
তবে মা এর কাছে চান্দা ছবিটার নাম এখনো শুনি। নাদিম শাবানা জুটি বেশ ভাল ছিল। ওনাদের বিয়ের কথাও নাকি হচ্ছিল।
আজ থেকে ৩০/৪০ বছর পর হয়ত এরকম লেখা আর পাওয়া যাবে না। আমার প্রজন্মের লোকজন টিভি/বাংলা সিনেমা দেখে না 🙂
বহু-বহু বছর আগে বিটিভি’র “শায়া-ছন্দ” অনুষ্ঠানে গানটি প্রথমবার দেখা-শোনা করেই (মানে, দেখে এবং শুনে) মুগ্ধ হয়ে পড়ি। এমন অসাধারণ সুর, চমৎকার গায়কী আর অতি রুচিশীল কথার সমন্বয় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে সত্যিই অসুলভ। তবে বাঙালি জাতির, মনে হয়, প্রকাশ্য বিরহের গানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব আছে। নইলে কেন “ভালোবাসার মূল্য কতো”-র জনপ্রিয়তার কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে এই গান?
আরেকটি গানের কথা মনে পড়ছে। খুব সম্ভব, “চরিত্রহীন” ছবির। সৈয়দ আব্দুল হাদীর গাওয়া। “চক্ষের নজর এমনি কইরা একদিন ক্ষইয়া যাবে” নামের গানটির খোঁজ দিতে পারবেন কেউ?
@একজন নির্ধর্মী,
এখানে ডাইনলোড করতে পারেন।
দুই নম্বরী ভার্ষনও পাওয়া গেছে।
http://www.youtube.com/watch?v=734TsZCQ7Mg
@আদিল মাহমুদ,
অজস্র ধন্যবাদ। তবে দুঃখের কথা এই যে, গানটা সাইটেও বাজানো গেল না, এমনকি ডাউনলোড করার পরও কোনওভাবেই কোনও আওয়াজ বেরলো না ফাইল থেকে :-Y
কী সমস্যা, ঠাওর করতে পারলাম না 🙁
@একজন নির্ধর্মী,
আমি সাইট থেকে বাজাতে পারিনি, তবে ডাউন লোড করে রিয়েল প্লেয়ায়ে বাজিয়ে দেখেছি কোন সমস্যা নেই।
আপনার ই-মেইল দিতে পারেন, পাঠিয়ে দিব। ছোট ফাইল বেশী বড় না।
@আদিল মাহমুদ,
এমপি৩ বাজাতে কখনও কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি। এই প্রথম। আমার পিসি-তে রিয়েল প্লেয়ার নেই অবশ্য, তবে winamp, aimp, xmplay দিয়ে চেষ্টা করে ফল পাইনি।
এই ঠিকানায় গানটি পাঠালে প্রীত হবো: [email protected]
@একজন নির্ধর্মী,
আপনাকে মেইল করেছি গানটা আবার রেকর্ড করে। মীডিয়া প্লেয়ারেও বাজছে শুনলাম।
@একজন নির্ধর্মী,
ভালবাসার মূল্য গানটাও খুব সুন্দর, কিন্তু উঁচু লয়ে গাওয়া। কিন্তু, এই গানটার যে স্নিগ্ধতা, যে মৃদুমন্দতা, যে মায়াময়তা, যে ছন্দময়তা, যে কাব্যিকতা, যে আবেগী প্রকাশ, যে আকুলতা, যে রোমান্টিকতা তার কোন তুলনা নেই। চোখ বন্ধ করে শুনতে থাকলে অনায়াসে এর সাথে মিশে যেতে পারবেন। আমার আগে ধারনা ছিল যে রোমান্টিক গানে মাহমুদুন্নবী অতুলনীয়। আর আব্দুল জব্বার হচ্ছেন শোক, দুঃখ, হতাশা বা সংগ্রামের গানের একচ্ছত্র অধিপতি। কিন্তু এই গান শোনার পর মনে হয়েছে যে আব্দুল জব্বারকে আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারিনি। এরকম ভরাট, আবেগী গলা ব্যবহার করে কত সুন্দর সুন্দর রোমান্টিক গানই না সৃষ্টি করা যেতো। আমার দুঃখ যে পুরো গানটা দিতে পারলাম না।
এই সুযোগে ভালবাসার মূল্য কত গানটাও জুড়ে দিলাম এখানে।
httpv://www.youtube.com/watch?v=jfta1QDUU_0
ফরিদ ভাই,
লম্বা বকবকানিতে জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছি; এপার ওপারে খলিল শেষ সিনে তার নিজের মেয়েকে গুলি করে মেরে ফেলে না?
@আদিল মাহমুদ,
না, বিয়ের অনুষ্ঠানে সোমা হীরের আংটি চুষে আত্মহত্যা করে। ওর লাশ নিয়ে সোহেল রানা যখন ফিরে যাচ্ছিল, খলিল তখন পিছন থেকে ওকে গুলি করে মেরে ফেলে।
@ফরিদ আহমেদ,
ওহ হো। মনে আছে খলিলের গুলি করার কথা। কে মরেছিল ভুলে গেছিলাম। খলিল কিন্তু বেশ জবরদস্ত ভিলেন ছিলেন যৌবনকালে।
ভালবাসার মূল্য কত গানটা আজাদ রহমানের না?
আচ্ছা, এই গানটার সন্ধান দিতে পারেন কেউ?
জাগো রাতি.. খোলো আখি…।বহে ভোরের বাতাস (এই গানটা পাকিস্তান আমলে শহীদ আজাদদের বাসায় শুটিং হয়েছিল, আনিসুল হকের মা বইতে আছে). লিরিক মনে হয় ঠিকমত লিখতে পারলাম না। আশা করি বুঝবেন।
আলী আহসান সিডনী বেশী সিনেমা করেননি, তবে আমার ধারনা করলে উনি অনেকের চেয়ে অনেক ভাল করতেন। চেনা চেনা লাগে গানটা যে ওনার ভিডীও দেখার আগে জানতাম না। অসম্ভব সুন্দর চিরসবুজ একটা গান।
http://www.youtube.com/user/PAULLOBIAN#p/u/45/yqcwTqU0FVY
@আদিল মাহমুদ,
কথাটা বোধহয় এরকম- ডাকে পাখি, খোল আখি, দেখ সোনালী আকাশ, বহে ভোরেরও বাতাস”– হৈমন্তী শুক্লার গাওয়া। অতীব স্পর্শকারী (টাচিং এর বাংলা?) গান
ফরিদ ভাই, গান সংক্রান্ত যে কোন পোস্টে আপনাকে সাধুবাদ/প্রশংসা/পাঁচতারা ইত্যাদি ইত্যাদি দিয়ে রাখলাম – এমনকি যেগুলো এখনও লিখে উঠতে পারেন নি সেগুলোতেও 😀
@স্নিগ্ধা,
আপনি যেভাবে আগাম সাধুবাদ/প্রশংসা/পাঁচ তারা দিয়ে রাখলেন, তাতেতো বিপদেই পড়ে গেলাম। বাধ্য হয়েই এখন আমাকে এই সব ছাইপাশ লিখতে হবে। 🙁
@ফরিদ ভাই,
শুনেছি কেউ কেউ ছাই মুঠো করে ধরলে তা সোনা হয়ে যায়। আক্ষরিক অর্থে তা সত্য না হলেও প্রায়োগিক অর্থে যে সত্য তা আপনার লেখা পড়ে (এবং দেখে ও শুনে) বুঝতে পারছি। আপনাকে অভিনন্দন।
সিনেমার ব্যাপারে আমি কিন্তু অমনিভোরাস। যা পাই তাই দেখি। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বাংলাদেশে যত ছবি মুক্তি পেয়েছে তার বেশির ভাগই সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি তখন। চট্টগ্রামে সিনেমা হলে ছাত্রদের আলাদা টিকেট কাউন্টার ছিল তখন। জসিম যখন ভিলেন থেকে নায়ক হয়ে গেল হঠাৎ – খুব মজা পেয়েছিলাম। এবং নায়ক হিসেবে জসিমকে ভালোও লেগেছিল। সুভাষ দত্তের সবুজ সাথী, সকাল সন্ধ্যা সিনেমায় জসিমের অভিনয় কত্তো ভালো লেগেছিল।
@প্রদীপ দেব,
বাহ! চট্টগ্রামে ছাত্রদের আলাদা কাউন্টার ছিল, তার মানে স্বল্পমূল্যে টিকেট কেনারও সুযোগ ছিল। ইশশ! ঢাকায় যদি এমন হতো, কি ভালোটাই না হতো। বাজার থেকে কম পয়সা মারলেও চলতো সিনেমা দেখার জন্য। 😀
আমি ছাই ধরলে যদি সোনা হয়, তবে আপনি ধরলে তা হীরে হয়। আপনার যে স্মরণ শক্তি, ওই সময়কার সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লিখলে দুর্দান্ত জিনিস বের হবে এ ব্যাপারে আমি নিঃসন্দেহ।
@প্রদীপ দেব,
“নায়ক হিসেবে জসিমকে ভালোও লেগেছিল।”
৮৭ সালে জ়সিমের “বনের রাজা” নামে একটা ছবি বের হয়; টারজানের বাংলা ভার্ষন। ওটায় জসিম হাতির পিঠে চড়ে টার্জান গিরি চালাতেন।
কেমন যেন বেখাপ্পা লাগছিল, কারন হাতির পা আর ওনার পা এর ব্যাসার্ধ প্রায় কাছাকাছি ঠেকছিল। এর পর থেকে নায়ক হিসেবে ওনার প্রতি শ্রদ্বাবোধ চলে গেছিল।
মৃত মানুষের নামে মন্দ কথা বলতে নেই এই নিয়ম ভেঙ্গে ফেললাম, তবে বলার লোভ সামলাতে পারলাম না।
@প্রদীপ দেব,
আলমাস সিনেমার কথা কি ভোলা যায়!
শুনেছি ওটা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে???
কত ছবি যে ওখানে শিশুকালে দেখেছি।
ডঃ ইন নষ্টালজিয়া আবার স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছেন। এক্কেবারে মোক্ষম যায়গায় হানা দিয়েছেন কোন সন্দেহ নেই।
আমাদফের ছোটবলেয়ায় আসলেই টিভি আর সাপ্তাহিক পত্রিকা বা গল্পের বই ছাড়া বিনোদনের কোন উপায় ছিল না। বাংলা ছবির বাজার ছিল দুর্দান্ত, মারদাঙ্গা কমার্শিয়াল ছবির সাথে সাথে ভাল ছবিও কিছু হত।
অবশ্য বড়দের কাছে ভাল ছবি মানে আমাদের ছোটদের জগতে তার বাজার নাই। বকলমের কথায় মারপিটের কথা মনে পড়ে গেল। মারপিট ছাড়া আবার সিনেমা কিসের? ছোটবেলায় শীতকালে জয়দেবপুরে পিকনিকে যেতাম, সেখান থেকে সবাই ফেরার সময় শাল গজারির লাঠি তলোয়ার কিনে আনতাম। সেগুলি দিয়ে চলত হাত মকশো করা। এছাড়া স্কুলে সবার হলুদ রং এর স্কেল থাকত, সেগুলি কোমরে ঝুলিয়ে টিফিন টাইমে সবাই ঘুরে বেড়াতাম, জুতমত কাউকে পেলেই শুরু হয়ে যেত তলোয়ার ফাইট। বিভিন্ন গ্রুপও আবার গঠন করা হত। কেউ রাজ্জাকের দল, কেউ সোহেল রানার দল। অনেকেই নিজেদের কাউকে রাজ্জাক, কাউকে সোহেল রানা, ওয়াসীম, রুবেল এগুলি দাবী করত। নামের মালিকানা নিয়েও আবার অনেক সময় ভয়াবহ যুদ্ধ বেধে যেত। তুই কেমনে ওয়াসীম, ওয়াসীম তো আমিই!
এছাড়া প্রতিদিন রেডিওতে সিনেমার কমার্শিয়ালগুলিও মনে রাখার মতন। অলস দুপুরে এগুলি শোনাও কেউ মিস করত না। যেভাবে ঘটনার বর্ণনা গান, মারপিটের শব্দসমেত শোনানো হত। আবেগময় গুরুগম্ভীর কণ্ঠে ধারাবর্ণনাকারীর “মহিউদ্দিন নিবেদিত” এখনো কানে বাজে। সব মেগাষ্টারদের আবার নিক নেম ছিল; নায়করাজ রাজ্জাক, বিউটি কুইন শাবানা, ফাইটার জসিম, ড্যাশিং ওয়াসীম এ জাতীয়।
বাংলা সিনেমায় কান্নাকাটি অতি অবধারিতভাবে আসত। আমরা যেমন মারপিট দেখতে চাইতাম মহিলারা মনে হয় তেমনি কান্নাকাটি দেখতে চাইতেন। বিউটি কুইন শাবানা নি:সন্দেহে কান্নাকাটিরও কুইন ছিলেন। ওনার আরো একটি বিশেষ গুন মনে পড়ে; প্রায়ই তিনি স্বামীদের পায়ে ধরে সালাম করতেন। এটা অবশ্য সেসময়কার প্রায় বিয়েতেই দেখা যেত। কান্নাকাটি বিষয়ে রোজির পারফর্মেন্সও বেশ প্রসংশার দাবী রাখে।
তবে ফরিদ ভাই এর কায়দায় কোনদিন পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাইনি, আমার বাবা একদম পছন্দ করতেন না। তবে টিভিতে সবাইকে নিয়ে দেখতে খুব পছন্দ করতেন। আম্মা ছিলেন ফিল্ম পাগল, পাকিস্তান আমল থেকেই অন্ধ ভক্ত। বাবা ৭৬ এ বিদেশে একবার ৬ মাসের ট্রেনিং এ যান, তখন আম্মা মনের সাধ মিটিয়ে বন্ধু বান্ধব সমেত প্রতি সপ্তাহে সিনেমা দেখতে যেতেন। আমার হলে বসে সিনেমা দেখার প্রথম স্রৃতি তখনকারই; “সীমানা পেরিয়ে”, চিটাগাং এর বিখ্যাত আলমাস সিনেমায়। এটা তখন কিছুই না বুঝলেও এখনো খুব ভাল লাগে। তখন আমি সিনেমা দেখতে গেলে প্রথম আধা ঘন্টার মধ্যেই চিপস চকোটেট এগুলির জন্য ঘ্যান ঘ্যান করে ঘুমিয়ে যেতাম, তারপর ক্লাইমেক্সের দিকে ঘুম ভেঙ্গে যেত, তখন কান্নাকাটি দেখে আমিও তাতে খোলামনে যোগ দিতাম। সীমানা পেরিয়ে জয়শ্রী কবির যখন পথ হারালেন তখনও কেদে দিয়েছিলাম মনে আছে।
সূর্যকন্যা, এপার ওপার, মাসুদ রানা, এগুলি তখনকার সুপারহিট মনে আছে। এরপরে সারেং বঊ, ডুমুরের ফুল, গোলাপী এখন ট্রেনে। অনেকেই এগুলি ১২/১৫ বার করে দেখে ফেলতেন।
এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী ছিল আসলেই আমাদের ছবির জগতে একটি বিপ্লব। বাদল রহমান কেন যেন আর তেমন ছবি উপহার দেননি। ওটা মনে হয় ৮১ সালে ঢাকায় কোন একটা চলচিত্র উতসব উপলক্ষে টিভিতে প্রথম দেখানো হয়। বিদেশের মত আমাদের দেশে শিশু কিশোরদের জন্য ছবি আগেও হত না, এখনো মনে হয় না হয় বলে।
রুবেলের কথায় মনে পড়ে একবার কোন একটি সিনেমার ট্রেলারে টিভিতে দেখেছিলাম উনি দৌড়ের মাঝে এক লাফে লাথি মেরে দুপাশের ৭ দুগনে ১৪টি হাড়ি ভাংগলেন। এমনই ড্যাশিং হিরো।
পুরনো দিনের সব হানের কথাই মনে পড়ে। পরে যোগাড়ও করেছি বেশ কিছু। আর এখন ইউটিঊবেও পাওয়া যায় অনেক। বেশ কিছু গান আছে আগে শুনলে মনে হত এগুলি রাস্তার পাশের চায়ের দোকান বাদে আর কেউ শুনবে না। অবাক বিস্ময়ে দেখি আমি নিজেই এখন সেগুলি পাহলের মত শুনি। গত সপ্তাহে এমনি হঠাত করে পেয়ে গেলাম “রুপ দেখে বলব কি, ভাষা খুজে পাই না”। অবিশ্বাস্য হলেও সেটা আমি দিনে মনে হয় ২/৩ ঘন্টা করে কন্টিনিঊয়াস শুনে যাচ্ছি।
ফরিদ ভাইএর গানটা খুব সুন্দর। আমিও এই সুযোগে আমার প্রিয় একটা দিলাম।
httpv://www.youtube.com/watch?v=4pPA5PvuexI
যাদের আমাদের মত রোগ আছে তারা এসব যায়গায় ঘোরাঘুরি করলে অনেক হারানো রত্ন খুজে পাবেন।
http://www.youtube.com/user/PAULLOBIAN
http://www.youtube.com/user/alom24usa
http://www.youtube.com/user/tito1021982
@আদিল ভাই,
আরেকটা ব্যপার, দেশে থাকতে এই গানগুলি ততটা মিস ও করিনি বা তেমন শুনিনিও। দেশ থেকে একটু বাইরে আসার পরেই দেখি এসব তথাকথিত অচ্ছুত বিষয় বেশি বেশি মনে পড়ে। দূরত্বের একটা আলাদা ব্যপার আছে মনে হয়।
@বকলম,
কথা সত্য। যেমন বিদেশে আসলে যিনি দেশে পাঞ্জাবী পায়জ়ামা কোনদিন পরতেন না তাকেও দেখা যায় পরতে। ধর্ম কর্মের প্রতিও মানুষ একইভাবে মনোযোগী হন।
তবে আমার একটা অদ্ভুত সাইকোলজি আছে; খালি মনে হয় পুরনো সব কিছুই ভাল ছিল। নুতন কিছুই ভাল না। নাটক দেখতে গেলেও এখনকার গাদা গাদা ষ্টারদের মাঝে সেই ছোটবেলার ফরিদী, সূবর্ণা, আফজাল, আসাদ এদের ছিটেফোটাও পাই নাই। সবগুলোকে মনে হয় অভিনয়ের বদলে ভাড়ামি করছে, নিজেও জানি এই ভাবনা ঠিক নয়। আশা করি এসব ব্যাস্ত ষ্টার কারো মুক্তমনায় ঢোকার সময় নেই। নইলে এক ঈদে শখানেক নাটক নামবে কিভাবে?
গানের ক্ষেত্রেও একই। ব্যান্ড গান সেই ৮০র দশক নিয়েই পড়ে থাকি। তপন শেখ ইশতিয়াক এদের নিয়েই দিন কাটে, যাবতীয় হাসান, আয়ুব বাচ্চু জেমস এদের শোনার আগেই বাতিলের খাতায়।
একটা মন্তব্য করলাম লগ ইন করেই। কিন্তু বলছে মডুর বিবেচনাধীন। কেন? আমি অবশ্য মন্তব্য করে একটা শব্দ এডিট করেছিলাম। এ জন্য কি?
@বকলম,
হ্যা, এডিট করলে ওটা মডারেশন এর আওতায় চলে যায়।
আহা, চমৎকার।এই নায়কতো মনে হচ্ছে সোহেল রানা, ওয়াসিম নয়? আমাদের সময়ে আমরা এ ধরনের এডভেঞ্চার থেকে বঞ্চিত। (ওই অযাচিত আক্রমনটি রেফার করছিনা)। এখন কেবল টিভি, সিডি-ডিভিডি, পেনড্রাইভ, ডাউনলোড এসব এসে সেই সব রোমান্টিক এডভেঞ্চার থেকে আমাদের বিরতই রেখেছে। তবুও এই এডভেঞ্চারের শেষ সময়ের আমরা কিছু স্বাদ পেয়েছিলাম।
গ্রামে সব বাড়িতে টিভি ছিলনা। যে বাড়িতে টিভি থাকত সেখানে সবাই সিনেমার সময় হাজির হত। সেই টিভিওয়ালা বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মুখ তখন মহারানী ভিক্টোরিয়ার মত গৌরবান্বিত।তার সাথে আমরা ছবির কুটনী শ্বাশুড়ির মিল পেতাম। আমরা পোলাপাইনের দল বিকালে থান্ডার ক্যাটস আর রাতে ম্যাক গাইভার নিয়ে রোমাঞ্চিত থাকতাম।বাঁশ দিয়ে থান্ডার ক্যাটস এর তলোয়ার বানিয়ে কোমরে ঝুলিয়ে হাটতাম আর পকেটে একটা ছুরি নিয়ে ম্যাক গাইভারগিরি। সম্ভবত বৃহস্পতিবার রাত দশটা থেকে একটা বাংলা ছবি দেখানো হত। বয়সে বড় চাচাতো, ফুফাতো বোনেরা সে সব ছবি দেখার জন্য রাত বিরাতে, পুকুর-জলা ডিঙিয়ে অন্য বাড়িতে যেতে হত। যত ছোটই হইনা কেন, পুরুষ বলে কথা 🙂 । তাদের গার্জিয়ান/বডি গার্ড হয়ে আমাদেরও যেতে হত সেসব ছবি দেখার জন্য। তাদের কান্না অনেক সময় মাতমের পর্যায়ে পৌঁচতেও দেখেছি। তাদের বড় সুলভ আড্ডায় আমরা ছোটরা অনেক সময় এক্সেস পেতাম। সেখানে তারা বিভিন্ন নায়কের দখলদারিত্ব নিয়ে বচসায় লিপ্ত হত।
আমরা যখন ক্লাস ফাইভ বা সিক্সে পড়ি তখন বাংলা ছবির জগতে এক ধূমকেতুর আবির্ভাব ঘটে। তার নাম রুবেল। দেখতে কাঠালের মত হলেও মার্শাল আর্টের কারিশমায় সে তখন তরুণ সমাজের হিরো। লড়াকু নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে তার এবং পুরো এলাকা জুড়ে সে ছবির বন্দনা চলছে। আমাদের কিশোর মন যার পরনাই আন্দোলিত হচ্ছে সেটা দেখার আকাঙক্ষায়। ফুফাতো বোনের জ্যামিতি বক্স থেকে বিশ টাকা চুরি করে সেই অবিশ্বাস্য, দূর্লভ মুহূর্তে আমরা দেখলাম এক অকল্পনীয় রঙীণ ছবে লড়াকু। কিছুই তেমন মনে নেই, শুধু মনে পড়ছে এক বিশাল কালোমত ষন্ডামার্কা লোক কিছু লোককে পিটিয়ে ছাতু বানিয়ে ফেলছে।
পরে আমার টাকা চুরি ধরা পড়ে যাওয়াতে আমার মা ই লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। দুঃখের গল্প আর নাই বা করলাম।
@বকলম,
লড়াকু ছবির নায়িকা কবিতা খিলগাঁও থাকতেন। তখনো লড়াকু মুক্তি পায়নি। টুকটাক দুই একটা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। আমার বড় ভাইয়ের কাছে প্রায়ই আসতেন। একদিন বড় ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে আমি আধাঘন্টা গালগল্প করেছিলাম তার সাথে। 😀 লড়াকু দেখতে যাবার পিছনে রুবেলের চেয়ে তার অবদানই বেশি। 😉
@ফরিদ আহমেদ,
আহা, আমরা তো দেখিনা কাদিলে কোঁকালে। এমন রাজ কপাইল্যা কয় জন হয়।
বন্ধু কি শুনাইলা, নিশি রাইতে একলা পাইয়া………
কঠিন !
ফরিদ ভাই, সব মনে পইরা যাইতাছে।
চাক ভুম, চাক ভুম………বেদম ! আহারে দিন, সেই স্কুল ফাঁকি, আহারে সোহেল রানা, ববিতা ( আমায় ছেড়ে কথায় যাবি মুছুয়া।)
শরীলে বিট আইয়া পরতাছে। এখন থামি, নাইলে কি থিকা কি লেইখা ফালাই কওয়া যায় না।
@আতিক রাঢ়ী,
httpv://www.youtube.com/watch?v=0CLJ3EsX6qk
@ফরিদ আহমেদ,
হা হা হা।
উক্ত পংক্তিতে কবে বা গীতিকার মছুয়া বলতে কি মোচ ওয়ালা বোঝাচ্ছেন? না কি এটি কোন বিশেষ শব্দ?
@বকলম,
মোচই বোঝাচ্ছে। সোহেল রানার সৌন্দর্যে মোচের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। মোচবিহীন সোহেল রানাকে একবার চিন্তা করে দেখুনতো।