অপেক্ষার প্রহর বুঝি শেষ হবার নয়। Large Hadron Collider-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিঞ্জানীরা উঠে পড়ে লেগেছেন প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষন এবং অজানা রহস্যের দ্বার উন্মোচনে! আর আমার মতো উৎসুক্য নিয়ে যারা বসে আছি, আমাদের অপেক্ষার পালা যে কবে শেষ হবে সেই শংকাতে গালে হাত তুলে দিন গুজরান ছাড়া কিইবা আর করার আছে! তৃপ্তিতো মিটবার নয়! পদার্থের গভীরতম দেশে রহস্যের যে অপার দিগন্ত তার পরোক্ষ রসাস্বাদনেই আমাদের অপেক্ষা! বিঞ্জান আজ কোথায় পৌঁছেছে! খুউব শিগ্‌গিরই হয়তো প্রমানীত হতে যাচ্ছে ভরের রহস্যটা কি? তার সাথে আরোও অনেক উপপাদ্য! মায়কি সৃষ্টিরহস্যের বিতর্কেরও একটা কিনারা হয়তো খুঁজেপাওয়া যাবে। কণা পদার্থবিদ্যার এ এক সুবর্ণ সুযোগ! আর আমাদেরও এই অধীর আগ্রহী অপেক্ষার পালা হয়তো শেষ হবে এক আলোকোজ্জ্বল মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম সকালের সূর্যদয়ের সাথে।

ইতোমধ্যে যতদূর শুনেছি যে Large Hadron Collider-এর প্রথম পর্যায়ের প্রোটন সংঘর্ষের ফলাফল বিঞ্জানীদের হাতে। আর রীতিমতো চলছে যার যার ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের পর্যালোচনা এবং সিদ্ধান্তের কষ্টিপাথরে যাচাই। ইতোমধ্যে জর্নাল গুলো পেতে শুরু করেছে পরীক্ষালব্ধ প্রাথমিক ফলাফলের বিশ্লেষন মূলক প্রবন্ধ। অপেক্ষা প্রকাশের।

গত ২৩শে নভেম্বর ২০০৯ প্রথম পর্যায়ের প্রোটন সংঘর্ষ ঘটানো হয়েছে, সুইস-ফ্রান্স বর্ডারের মাটির গভীরে জেনেভা শহরের অদূরেই CERN-এর LHC-তে। দিনটি ছিলো সোমবার, পরবর্তী শনিবারেই দেখাগেলো Arxiv Server-এ প্রাথমিক ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিতব্য প্রবন্ধের প্রকাশপূর্ব সংস্করণ! প্রবন্ধটি গ্রহন করেছে ইউরোপীয়ান জার্নাল অব ফিজিক্স। বিঞ্জানীরা ঊৎফুল্ল! দীর্ঘ মেরামতের পরে শুরু হয়েছে কর্মযঞ্জ। বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা পদার্থবিদ ডেভিড ইভান্স সম্ভবতঃ প্রথম প্রবন্ধটির লেখক, ইউরোপীয়ান টীমের নেতৃত্ত্ব দিচ্ছেন তিনি। উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলেন, “হ্যাঁ, এই ব্যাপক কর্মযঞ্জের কেন্দ্রে যে অনুকল্প নিয়ে যাত্রা আমরা করছি, বোধ হয় সেখান হতে খুব দূরে নই আমরা। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পাশাপাশি পাচ্ছি আরোও সহ অনুকল্পের সত্যতার আঁচ! তা কি চেপে রাখা যায়?”

যাকে ঘিরে কণা পদার্থবিদদের আজকের এই মহাকর্মযঞ্জ সেই এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা পদার্থবিদ্যার তত্ত্বীয় পদার্থবিদ পিটার হিগ্‌সের (Peter Higgs) কথায় এবার আসা যাক।

এই ক’দিন আগেই তিনি এসেছিলেন আর্মষ্টারডামের ডাচ্ ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ সেন্টারে। তাঁর উদ্দ্যেশ্য একটি ডকুমেন্টারির প্রিমিয়ার শো-তে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি এসেছিলেন। ডকুমেন্টারির শিরঃনাম ছিলো “Higgs, Into the Heart of the Imagination”।

বিক্ষ্যাত হলেন হিগ্‌স কেননা তাঁর হিসেব মতোই একটি আন্তঃপারমানবিক কণার অস্তিত্ত্বের সন্ধানে আজ বিশ্বের প্রথিতযশা পদার্থ বিঞ্জানীরা। কণাটির নামের সাথেও ইতোমধ্যেই জড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। যার নাম হিগ্‌স বোসন। ধারনা করা হচ্ছে বস্তুর ভর গঠনে এর কারসাজি রয়েছে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাহুগুলোর ভাঁজে ভাঁজে যে কৃষ্ঞ এলাকা দেখা যায় সেখানে কি সত্যিই এই কণা বা কণাজাত কৃষ্ঞ বস্তুর অস্তিত্ত্ব রয়েছে? শুধু আমাদের মিল্কিওয়ে নয় আন্যান্য গ্যালাক্সিতেও রয়েছে সম্ভবতঃ এর অস্তিত্ত্ব। সেরকম প্রমান-ই বিশেষঞ্জবৃন্দ পেয়েছেন। আশাকরা যাচ্ছে এর উত্তরও সহসাই আমরা পেতে যাচ্ছি। জেনেভাস্থ ইউরোপীয়ান অর্গানাইজেশন অব নিউক্লিয়ার রিসার্চ (সার্ন) (CERN) এ সহস্রাধিক পদার্থ বিঞ্জানী সম্মিলিত ভাবে প্রাপ্ত কণার হিসেব মেলাতে ব্যস্ত, যে কণাগুলো আহরিত হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ পার্টিক্যাল স্ম্যাসার বা কণা এক্সিলারেটর হতে (LHC)। আর এই দানবীয় যন্ত্রটি তৈরীতে খরচ হয়েছিলো ছয় বিলিয়ন ইউরোরও বেশী!

মজার ব্যপার হলো এই হিগ্‌স বোসনের ধারনাটি অধ্যাপক পিটার হিগ্‌সের মাথায় হঠাৎ করেই আসেনি। সেই ১৯৬৪ সালের কথা তখন থেকেই একটু একটু করে এই ভারী কিংবা ভরহীন কণা সৃষ্টির রহস্য দোলা দিতে থাকে তাঁকে। দোলা দিতে থাকে ভরের রহস্য!

স্কটিশ পর্বতে আনন্দ ভ্রমনে যাবার সময় গ্রুপকে নির্দ্দেশ দিতে ভুলে গিয়েছিলেন সাথে তাঁবু নিতে। অগত্যা তাই প্রত্যাবর্তন আকষ্মিক বেরসিক টিপিক্যাল বৃষ্টির তাড়ায়। এডিনবার্গের নিজের ছোট্ট অফিস ঘরে ফিরে এসে হাঁফ ছাড়লেন তিনি! খুশীও হলেন খুব, কারন মাথার ভবনা রাশির তো একটা পরম্পরা দরকার, দরকার তো এক অবয়ব সৃষ্টির। চিন্তা-ইটের শক্ত গাঁথুনী, যা কিনা বিল্ডিং ব্লক, সবই আছে, শুধু দরকার একটা যুতসই যোগসূত্র! তত্ত্বটা মাথাতেই ছিলো অবয়বটা পায়নি তখনো। কয়েক দিনের টানা লেখা, কফির কাপের ধোঁয়া আর তার সাথে তত্ত্বীয় গনিতের অকাট্য যুক্তির সিমেন্টিং-এ দাঁড়িয়ে গেলো প্রাকৃতিক রহস্যভেদের এক এক অবিস্মরনীয় রূপরেখা। আলো দেখলেন তিনি। লিখিত বৈঞ্জানিক প্রবন্ধে প্রস্তাব করলেন গড্স পার্টিক্যালের। এতোটা সফলতায়ও ইউরেকা ইউরেকা বলে ছুটে বেড়োতে পারেননি। কারন অনেকটাই যে তখনো বাকী! বাকী হলো কণাটির প্রকৃতি, এর উৎস আর এর সম্ভব্যতা।

ইদানিং কণা পদার্থবিদগন জোড়েশোড়েই বলে থাকেন হিগ্‌স পার্টিক্যালের কথা, যার প্রচলিত নাম গড্‌স পর্টিক্যাল, যা এই কণাটিকে দিয়েছে সর্বোচ্চ পরিচিতি, করে তুলেছে অতীব গুরুত্ত্ব পূর্ন। বিভিন্ন কণার সমন্বয়ে পদার্থের আভ্যন্তরীন গঠনের যে আদর্শিক মডেল সেখানে এই কণাটি সবিশেষ গুরুত্ত্বের সাথেই বিবেচিত হচ্ছে। শুন্য হতে বা ভ্যাকুওম হতে যে বস্তু জগতের সৃষ্টি হতে পারে বোধ করি তার নিশ্চয়তার বিধান এ কণাটির অস্তিত্বের সাথেই অনেকটা মিশে আছে। মডেলটি এমন একটি প্রাথমিক বিশেষ কণাময় বিগব্যাং অব্যবহিত পরের মহাবিশ্বকে উপস্থাপিত করছে যে পরবর্তী শতকোটি বছরে এই কণার সমন্বয়েই সৃষ্টি হয়েছিলো যাবতীয় বস্তু জগৎ, এই তারকারাজী, গ্যালাক্সি, ধুমকেতূ, গ্রহপূঞ্জ, মানবজাতি এবং অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনু-পরমাণু সমেত সমগ্র বিশ্বভ্রম্মান্ড।

কেনো এই কণাটি নিয়ে আজকের দিনের হৈ চৈ? শক্তি আর বস্তুর নিগূঢ়তম সম্পর্কতো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব কালেই। কণারাও তখন থেকেই বিভাজিত দুইটি শিবিরে। এক শিবিরে ওজনহীন মহাশক্তিধর কণারাশির বহর তো অন্য শিবিরে তুলনামূলক শক্তিহীন ওজনদারদের দাপট! কিন্তু কণাসৃষ্টির এহেনো বিচিত্রতার ব্যাক্ষ্যা কি? এই শংকটে কেটে গেছে বেশ কয়েকটি দশক। আজ এই হিগ্‌স পার্টিক্যালই কার্যতঃ সফল ব্যাক্ষ্যাকারী এই সব শিহরণ জাগানো প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক এবং নির্ভরযোগ্য সমাধানের নির্গলিতার্থে। কজেই আজ কণা পদার্থবিদগন জানেন কেনো এই অজস্র কণারাশির যথাযথ ভর বিদ্যমান এবং এরা বস্তু জগতের অন্তর্ভূক্ত সদস্য, যাদের রয়েছে সীমিত গতি প্রকৃতি কিংবা পরষ্পরের প্রতি আকৃষ্ট হবার অভাবনীয় প্রবনতা; আবার অন্যদিকে রয়েছে ভিন্ন প্রকৃতির কণারাশির জগৎ যাদের ভর শুন্য কিংবা প্রায় শূন্যের কোঠায় যেমন আলোর ফোটন কণা কিংবা ইলেকট্রন। ফোটন কণার গতি বেগ সর্বজনবিদিত, প্রচন্ড গতিতে ছোটা অতি ক্ষীনকায় গঠনের এই কণাটির অবয়ব অস্পষ্ট।

অতি জটীল হিগ্‌স তত্ত্বটি মূলতঃ কিছু অনুকল্পের সমন্বয় যা অধ্যাপক হিগ্‌সের জটীল অথচ সূক্ষ্ম সফল চিন্তাক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এই প্রকারের চিন্তার জগতে তাকে প্রবেশ করতে হয়েছিলো মূলতঃ এই সব কেনো-র সফল জবাব এবং কার্যকর বিশ্লেষনের তাগিদে। কতকগুলো অনুকল্পের সাহায্যবিনা একে ধাতস্থ করা বেশ দূরহ। তাৎক্ষনিক ভাবে কণার প্রতিসাম্যতার স্বতস্ফূর্ত অবক্ষয়ের নীতির কথা মনে পড়ছে। একে তুলনা করা চলে কাঠের ভেতরের পেঁচিয়ে ঘুড়িয়ে ছড়িয়ে থাকা অপ্রতিসম তন্তু এবং অসংখ্য শিরা-উপশিরার সাথে। কণা গুলো যদি শিরা উপশিরার সমান্তরালে একটি ঋজু পথে চলে তবে বাঁধাহীন অথবা প্রায় বাঁধাহীন ভাবে ছুটে চলে যেতে পরে। কিন্তু যদি একে চলতে হয় কোন বিশেষ কোণে তাহলেই এর চলার গতিপথে সম্ভাব্য সৃষ্ট বাঁধা এর গতিকে করে শ্লথ, ফলাফলে কণাটির উপড়ে ভর আরোপিত হয়। অর্থাৎ ভর সম্পন্ন কণার উৎপত্তির কারণটি নিহিত এখানেই। তার মানে দাঁড়ালো কনাটি বস্তু জগতের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়ে। এভাবেই এই ভর সম্পন্ন কণাদের দ্বারাই সৃষ্টি হয়েছে বস্তু জগৎ, তারকারাজী, মানুষ জীব-জগৎ সহ সব।

আর একটি বিশেষ অনুসিদ্ধান্ত এখানে খুউবই গুরুত্ত্বপূর্ণ যে, মহাবিশ্বের সৃষ্টিমুহূর্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বিশেষ কণাটির অস্তিত্ত্বই আসলে বস্তু সৃষ্টির পেছনের রহস্য। কি সেই রহস্য? প্রাথমিক পর্যায়ের প্লাজমা অবস্থায় এই অজানা কণা গুলো ছড়িয়ে পড়ার পরেই দ্রুত শক্তি হাড়িয়ে কিছুটা ভরগ্রস্থ হয়ে পড়ে স্ব স্ব অবস্থানে এদের অনেকেই। ফলশ্রিতিতে সম্ভবতঃ ডার্ক পার্টিক্যালের উদ্ভব। এরা স্থির নয় তো বটেই তবে মহাবিশ্বে ঘন সন্নিবিষ্ট অবস্থানই বস্তু সৃষ্টির পেছনের রহস্য বলে আজ কণা পদার্থ বিদ্যার গবেষনায় অনুমিত হচ্ছে। এদেরই বলা হচ্ছে হিগ্‌স পার্টিক্যাল।

এদিকে এতদ্‌সংক্রান্ত অপর একটি অনুসিদ্ধান্ত হলো যে, প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর আগে একটি প্রিময়ডাল ডট হতে যে মহাজাগতিক বিস্ফোরণের মতো ঘটনাটি ঘটলো তার ফলশ্রুতিতেই সৃষ্ট আজকের এই কসমস জগৎ; যার শুরু হয়েছিলো এক বিষ্ময়কর শূন্য হতে। যা কিনা ছিলো এক প্রকৃত অর্থেই শূন্য, মানে ভ্যাকুয়ম! শুনতে আশ্চর্য্য শোনালেও কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার জটিল হিসাব নিকাশের বিন্যাস আমাদের নিয়ে পৌঁছিয়েছে ঠিক সেইরকম একটি জায়গায়। এখন দেখা যাক, মহাবিস্ফোরণের ঠিক পরের ঘটনা গুলো ছিলো আসলে কি? ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার প্রক্ষ্যাত কণা পদার্থবিদ কিম গ্রিয়েস্ট তাঁর “The mystery of Empty Space” বক্তৃতায় বলতে চেষ্টা করেছেন সেই অভাবনীয় পর্যায়ের কথা। তাঁর ভাষ্যমতে, বিগব্যাঙ্গ ঘটনাটি ঘটার অব্যবহিত পরেই অর্থাৎ শূন্য সময়ের পরবর্তীতে মহাবিশ্ব ছিলো প্রকৃত অর্থেই সীমিত একটি শূন্যস্থান বা ভ্যাকুয়ম। অর্থাৎ কোন পদার্থের আস্তিত্ত্ব তখনো ছিলোনা। থাকবে কি করে জন্মইতো হয়নি! তাহলে ওখানে ছিলো কি? জন্ম হয়েছিলো কেবল কিছু মহা শক্তিধর কণার (Supper Energetic Particles)। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬টি বিভিন্ন মহা শক্তিধর কণার অস্তিত্ত্ব সম্পর্কে জানা গেছে। ইলেক্ট্রন, মিউওন, জি, ডব্লিউ এবং টপ-কোয়ার্ক এদের অন্যতম। বিগব্যাঙ্গ এর পর পরই এই স্ফূরণমুখ শক্তিকেন্দ্রটি বেলুনের মতো ধীরে ধীরে ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে। এ অবস্থাটিকেই বলা হয় কসমস। এক সময় কসমস বেলুনটা হঠাৎ বিশাল আকার নিয়ে চতুর্দ্দিকে ছড়িয়ে পরে। এসময় পার্টিক্যাল গুলো তাদের শক্তি হাড়াতে থাকে। শক্তি হাড়াবার ফলে যে নতুন আশ্চর্য গুনটির উন্মেষ ঘটে তার নামই হলো ভর, এবং প্রকৃয়াটি আজো অব্যাহত আছে। এদিকে মহাবিশ্ব বিকশিত হতে থাকে বিপুল বিক্রমে। যা ছিলো এক বিপুল শক্তির আধার। এ অবস্থাটিকেই গ্রীয়েস্ট ব্যাক্ষ্যা করেছেন কসমিক স্যূপ হিসেবে। এই মহা বিস্ফোরনের প্রথম সেকেন্ডের এক ট্রিলিয়ন ভাগের প্রথম মুহূর্তে ঘটে আরেক বিষ্ময়কর ঘটনা! জল যেমন হঠাৎ ঠান্ডায় জমে বরফে পরিনত হয়, শক্তির অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ পরিমান তারতম্যের কারনে কসমোজাল মহাবিশ্বে ঘটে শক্তি-ঘনত্বের তারতম্য; আর তাতে কসমিক স্যুপেও তেমনি ধরনের এক অভাবনীয় কান্ডে এর দশার (Phase) পরিবর্তন ঘটায়। এই নতুন দশা গ্রস্থ মহাবিশ্বকে বলা হয় হিগ্‌স ফিল্ড। এ সময় এর কিছু অংশ বস্তুতায়িত (Materialized) হতে শুরু করে। এই যে আমাদের মহাবিশ্বটি বস্তুতায়িত হতে শুরু করলো, সেই প্রক্রিয়াই আজও অব্যাহত আছে বলে বিঞ্জানীরা মনে করেন। আর এটিই হলো এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রাথমিক পর্যায়! যার স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমানও রয়েছে।

গ্রিয়েস্ট মহাবিশ্বের এই প্রাথমিক পর্যায়টিকে আক্ষ্যায়িত করেছেন কোয়ান্টাম ফিল্ড হিসেবে। কিংবা পিটার হিগ্‌সের মতে এটি একটি স্বতঃস্ফূর্ত, সর্ব্বব্যাপী, চিরন্তন শক্তিক্ষেত্র। কারণ, আইনষ্টাইনের মতে শক্তি এবং ভর পরষ্পর একটি আন্তঃরূপান্তর প্রকৃয়া। এই হিগ্‌স ফিল্ডটি কতগুলো সূক্ষ্ম বিভিন্ন আকৃতির স্ট্রিং দিয়ে তৈরী। এই অস্থিতিশীল দশ বা এগারো মাত্রিক কণাগুলোর সাথে মহাবিস্ফোরণকালীন সৃষ্ট অপরাপর কণাগুলোর প্রতিক্রিয়ায় ভরের উন্মেষ ঘটে বলে ধারনা করা হয়। বলে নেয়া ভালো যে, এই বহুমাত্রিক কণা গুলোকেই আবার বলা হয় মেসেঞ্জার পার্টিক্যাল বা হিগ্‌স বোসন। যেমন, ইলেকট্রন যখন এই ফিল্ডের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে তখন হিগ্‌স পার্টিক্যালের সাথে উল্লেখ যোগ্য কোন সংঘর্ষ না ঘটিয়েই স্লিপ করে প্রায় আলোর গতিতেই চলতে পারে, ফলে ইলেকট্রনের বস্তু ধর্মীতা গুনের অবকাশ নেই, মিউওন কণা গুলো অতি সামান্য বাঁধা পায় বলে এর গতি প্রকৃতির যৎসামান্য পরিবর্তন ঘটে, ফলে এই কণাটি মূলতঃ শক্তি-কণা হলেও এর বস্তু ধর্মীতাও যৎসামান্য বিদ্যমান। ডব্লিউ পার্টিক্যাল একি কারণে বেশী বস্তুধর্মীতা প্রকাশ করে। এদিকে টপ কোয়ার্ক গুলো এই হিগ্‌স ফিল্ডে প্রায় সম্পূর্ন গতি শক্তিই হাড়িয়ে ফেলে উল্লেখযোগ্য সাংঘর্ষিক প্রতিক্রিয়ায়। ফলে কোয়ার্ক গুলো মূলতঃ মৌলিক বস্তুকণার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। আর এই কোয়ার্ক কণা গুলোর সমন্বয়েই আমাদের চারপাশের বস্তুজগৎ! এখন সংশ্লিষ্ট সার্ন এর পদার্থবিদগন বলছেন, যেহেতু হিগ্‌স বোসনের মিথষ্ক্রিয়ায় বস্তুকণার উদ্ভব, সুতরাং এই হিগ্‌স পার্টিক্যাল যেমন সৃষ্টি করা সম্ভব তেমনি এর বিলুপ্তিসাধনও সম্ভব। পিটার হিগ্‌স এর মতে বস্তুর গতিবেগ কে আলোর গতিতে উন্নীত করা গেলে এই হিগ্‌স বোসনের দেখা মিললেও মিলতে পারে। কনা গুলোকে চিহ্নিত করা ছাড়াও তাঁরা আরোও কিছু সম্ভাব্য কণার সন্ধানেও রয়েছেন সদা তৎপর। সার্ন-এ কর্মরত পদার্থবিদগন অত্যন্ত আশাবাদী যে তাঁরা এই কনাটিকে হাতে প্রায় পেয়েইছেন!

সুতরাং কয়েক বিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে ফ্রান্স – সুইস বর্ডারের মাটির প্রায় ১০০ মিটার গভীরে বিঞ্জানীরা গড়ে তুলেছেন Large Hadron Collider (LHC), দানব আকৃতির এক পার্টিক্যাল স্ম্যাসার। কণা-পদার্থবিদদের কাছে এক তীর্থস্থানে পরিনত হয়েছে আজ এই জেনেভার অদূরবর্তী CERN। সার্ন আশা করছে সহসাই তারা হিগ্‌স বোসনের অস্তিত্ত্বের মীমাংশা করতে পারবে। তাতে করে জগৎ সৃষ্টির পেছনে কার্যকারীতাও নির্নীত হবে। নতুন রহস্যের দিকে মোড় না নিলে তথাকথিত ব্যক্তি ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব হয়তো শেষ পর্যন্ত এই পার্টিক্যালে এসেই পৌঁছুবে। সেই জন্যেই হয়তো হিগ্‌স বোসনের ঠিকুজিতে এর পরিচয় দেয়া হয়েছিলো গড্‌স পার্টিক্যাল হিসেবে।

ডাচ্ ইনস্টিটিউটের ক্যাফেটোরিয়ায় (NIKHEF) আলোচনা প্রসঙ্গে পিটার হিগ্‌স আরেক মজার ঘটনা বলছিলেন। নির্ভেজাল গানিতিক যুক্তিতে গড্‌স পর্টিক্যালের ধারনা সমেত তাঁর বিক্ষ্যাত প্রবন্ধটি যখন তিনি প্রকাশের জন্যে পাঠান, তখন সার্ন কর্তৃক প্রকাশিত বিক্ষ্যাত Physics Letters ১৯৬৪ সালে প্রবন্ধটি প্রকাশের অযোগ্য বিবেচনা করে বাতিল করে! এর অনেক পরে তাঁরই এক প্রাক্তন রুমমেট এডিনবার্গ এর অধ্যাপক তাঁকে জানিয়েছিলেন যে, প্রবন্ধটি তখন বাতিল হওয়ার পেছনে মূল কারন ছিলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সম্পাদকের সীমিত ধারনা। তিনি প্রবন্ধের মূল বিষয়টি অনুধাবনই করতে পারেননি। সম্পাদক প্রবন্ধটি বাতিলের খবর দিয়ে যে প্রত্যুত্তরটি পাঠিয়েছিলেন সেখানে বলেছিলেন, “পদার্থবিদ্যায় এই কাজের কোন সন্তোষজনক সম্পর্ক আমি দেখতে পাচ্ছিনা।“ উপরন্তু অত্যন্ত অমায়িক উপদেশ দিয়েছিলেন এই বলে যে, “আপনার মূল্যবান পান্ডুলিপিটি অন্যত্র প্রকাশের জন্যে অনুরোধ করছি যেমন, Nuovo Cimento। প্রবন্ধটি এর জন্যে বিশেষ ভাবে প্রযোজ্য বলে মনে করি।“ অধ্যাপক পিটার হিগ্‌স তখন যথার্থই মনে করেছিলেন যে ভাষা যতোই অমায়িক হোকনা কেন, প্রস্তাবটি মোটেও অমায়িক বলে মনে করা যায় না। কারণ, Nuovo Cemento তখন প্রবন্ধের মান নির্বিশেষে সব ধরনের প্রবন্ধই প্রায় প্রকাশ করতো এবং জার্নালটি প্রকৃত অর্থে অত্যন্ত সূক্ষ্ম গবেষনামূলক বৈঞ্জানিক প্রবন্ধের জন্যে নয়।

এমতাবস্থায় পিটার হিগ্‌স অন্যউপায়ে হাত দিলেন। তিনি তাঁর প্রবন্ধে একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজন করলেন যেখানে তিনি এক নতুন সংঘটন পদ্ধতির (Mechanism) বিস্তারিত বর্ননা দিলেন যাতে বিদ্ধৃত হলো শক্তি কণা কি করে ভরগ্রস্থ কণায় রুপান্তরিত হতে পারে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ বিক্ষ্যাত পদার্থবিদ নিঃসংকোচে আরোও জানালেন যে, এ সময়ে তাঁর চিন্তাটি একটি আপাতঃ ত্রুটিপূর্ণ পথেই পরিচালিত হচ্ছিলো। তিনি প্রকৃতপক্ষে কণার সংঘর্ষের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন এবং ভর সৃষ্টির জন্যে সংঘর্ষকেই মূলতঃ দায়ী করতে যাচ্ছিলেন। ভরের কারণ হিসেবে প্রাকৃতিক চারটি মৌলিক বলের একটির সঙ্গে কণার মিথষ্কৃয়াকে কারণ হিসেবে সামনে টেনে এনেছিলেন পরে। বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কের সূচনা করলে তৎকালীন কণা পদার্থবিদগন নতুন করে এতদ্‌সংক্রান্ত গবেষনায় মনোনিবেশ করেন। যার ফলে বিগত কয়েক দশকে এসংক্রান্ত গবেষনায় তৎকালীন ধারনার আমূল পরিবর্তন ঘটে এবং শেষে আজকের হিগ্‌স ফিল্ডের ভিতটি রচিত হয়। পিটার হিগ্‌সের সেই প্রবন্ধে উক্ত প্যারাগ্রাফটি আজো সংযোজিত রয়েছে। এ ব্যাপারে হিগ্‌স বলেন, উক্ত অনুচ্ছেদটির আসলে একটি বিশেষত্ত্ব ছিলো। যার কারণে আমেরিকার জার্নাল, দ্য জার্নাল অব ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার অত্যন্ত আগ্রহের সাথে প্রবন্ধটি গ্রহন করে এবং দ্রুত তা প্রকাশের ব্যবস্থাও করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই মহাকর্মযঞ্জ, যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে সার্ন-এ।

৮০ বছর বয়ষ্ক এই বরেন্য বিঞ্জানী NIKHEF এর বৈঞ্জানিক আড্ডায় স্মিত হেসে অবলীলায় স্বীকার করে নিলেন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিঞ্জানীদের অবদান তাঁর এই অভাবনীয় উদ্ভাবনীতে! অশেষ কৃতঞ্জতা ঞ্জ্যাপন করলেন তাঁদের যাঁদের মেধায়, মননে এবং নৈপূন্যে আজ মানব জাতি দেখতে যাচ্ছে দিব্য দৃষ্টিতে এই সৃষ্টি জগতের বিষ্ময়কর একটি রূপ! এই দিগন্ত উন্মোচনকারী আজকের বিশ্বব্যপী আলোচিত পদার্থবিদ একই ভাবে কৃতঞ্জতা জানালেন সেই সব কুশিলবদের যাঁদের শ্রমে, ঘামে এবং মেধায় গড়ে উঠেছে লার্জ হেড্রন কলাইডার, সংশোধিত হয়েছে তত্ত্বের অনেক খুঁটিনাটি দিক। ধন্যবাদের উৎসারিত ধারায় সিক্ত করেছেন অসংখ্য উৎসাহী মানুষকে; নোবেল বিজয়ী যাঁরা তাঁকে প্রত্যক্ষ্য এবং পরোক্ষ সমর্থন এবং উৎসাহ যুগিয়েছেন এগিয়ে যাবার দৃঢ়প্রত্যয়টি ধরে রাখার মানসে। অবশিষ্ট যাঁরা আছেন, তাঁরা আসলে তাঁদের কাজ দিয়ে রচনা করেছিলেন অধ্যাপক পিটার হিগ্‌স এর ভিত। অন্তরিক বিশেষ অভিনন্দনে যাঁদের অভিসিক্ত করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতমেরা হলেন, জাপানী বংশদ্ভূত আমেরিকান বৈঞ্জানিক ইয়োইশিরো নামবু; বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য এই জন্যে যে, তিনি এই তত্ত্বটিকে আশ্রয় করে সুপার কন্ডাক্টর গবেষনায় সতঃস্ফূর্ত প্রতিসাম্যতার বিপন্নতা ব্যাক্ষ্যা করেছিলেন। উল্লেখ করা যেতে পারে ফিল আ্যান্ডারসন এঁর কথা, যিনি তাঁর গবেষনায় অধ্যাপক হিগ্‌স এর প্রায় কাছাকাছি সিদ্ধান্তে এসেছিলেন কিন্তু ব্যাক্ষ্যায় বিস্তর ব্যাবধান ছিলো উভয়ের। অথবা বলা যেতে পারে সেলডন গ্লাসগোর কথা কিংবা আব্দুস সালাম এবং স্টিভেন ওয়াইনবার্গ যাঁরা একটি বিশেষায়িত পদ্ধতিতে তড়িৎ চুম্বকীয় বল এবং দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের মধ্যে সমন্বয়সাধন করেছিলেন। ডাচ বিঞ্জানী গেরারর্ট হফ্‌ট এবং মার্কিন পদার্থবিদ মার্টিন ভেল্টম্যানের কথাও স্মরন করলেন তিনি যাঁরা তাঁদের দুর্বল তড়িৎবলের তত্তীয় ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন চিরকাল।

প্রকৃতপক্ষে দুর্বল তড়িৎবলের অস্তিত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা এবং প্রমান করতে অধ্যাপক পিটার হিগ্‌স এর এই হিগ্‌স ফিল্ডের মেকানিজমটির সবিশেষ গুরুত্ত্ব রয়েছে। এই তত্ত্বটিই আসলে ভরহীন কণা সমুহের (যেমন, দুর্বল তড়িৎ বলের ফোটন কণা) সাথে ভারী পদার্থ কণার (যেমন, দুর্বল নিউক্লিয়ার বলের w এবং z কণা) মিথষ্কৃয়াকে সফলভাবে ব্যাক্ষ্যা করতে সক্ষম। এমনকি অপ্রতিসম ভর সমূহের ব্যাক্ষ্যাও কিন্তু একমাত্র এই হিগ্‌স মেকানিজম থেকেই পাওয়া যায়, যেখানে হিগ্‌স পার্টিক্যাল বা হিগ্‌স বোসনের উপস্থিতিই এই অপ্রতিসাম্যতাকে নিখুঁত রূপ প্রদানে সক্ষম। ১৯৭২ সালের কংগ্রেসে পিটার হিগ্‌স এই মতটিই তুলে ধরেন সফলতার সাথে।

পদার্থবিদদের নিরন্তর গবেষনায় এই তত্ত্বটিই আজ এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে আজ তাঁরা প্রকৃত অর্থেই বিশ্বাস করেন যে এই হিগ্‌স বোসন কার্যকর ভাবে অনুধাবন যোগ্য এবং এর উপস্থিতি প্রায় নিশ্চিত। যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মিল্যাবে এবং সার্নের কয়েকটি পরোক্ষ গবেষনার লব্ধ ফলাফলে বিষয়টি স্পষ্টভাবে পদার্থবিদদের কাছে প্রতিভাত সম্প্রতি। কিভাবে সেই কণার বাস্তব অস্তিত্ত্বকে প্রমাণীত করা সম্ভব সে বিষয়েও চলে নিরন্তর গবেষনা। অবশেষে সব কিছুই স্ফটিক স্বচ্ছ হয়ে উঠে পদার্থবিদদের কাছে।

ভাবাবেগে উদ্বেলিত পিটার হিগ্‌স বলেন, “আজ আমার জীবন সায়াহ্নেই সেই কণার অস্তিত্ত্ব হয়তো আমি নিজেই দেখে যেতে পারবো”। এই সৌভাগ্য খুউব কম সংখ্যক পদার্থবিদের ভাগ্যেই জুটেছিলো! এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, ১৯৬৪ সালের ৩১শে অগাষ্ট যখন অধ্যাপক পিটার হিগ্‌সের প্রবন্ধটির পান্ডুলিপি ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস-এ এসে পৌঁছোয় তখন বেলজিয়ান পদার্থবিদ ফ্রাঙ্কোইস ইংলার্ট এবং রবার্ট ব্রুট এর অপর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। অবশ্যই ভিন্ন একটি গবেষনার ফলাফল ছিলো এটি। কিন্তু লেখকদ্বয় ভিন্ন একটি বিশ্লেষন থেকে পৌঁছেছিলেন প্রায় কাছাকাছি একই ধরনের একটি উপসংহারে। এখানে উল্লেখ্য যে তাঁদের গবেষনার পদ্ধতিটি ছিলো জটিল এবং উপস্থাপিত অনুসিদ্ধান্তটি ছিলো একটি অনিশ্চিত ফলাফল। সম্ভবতঃ এই কারনেই তাঁরা তাঁদের অনুসিদ্ধান্তটি কণা পদার্থবিদদের বিশ্লেষনের জন্যে উপস্থাপন করেছিলেন।

অথচ এতোবড় একটি অর্জন হাতে পেয়েও আর এগুবার উৎসাহটির অনুপস্থিতি জনিত কারনেই হয়তো ইংলার্ট ফিল্ড অথবা ব্রুট বোসন পায়নি কোন পরিচিতি! এই কারনেই হয়তো ব্রুট অনেকটা পরাজিত সৈনিকের মতোই চুপিসারে বলেছিলেন তাঁর নামটিওতো ছিলো পাঁচটি অক্ষরের! যদিও সহ গোবেষকবৃন্দের অক্লান্ত শ্রমে কিছুটা সমন্বিত তত্ত্ব হিসেবে হিগ্‌স ফিল্ডের প্রতিষ্ঠা হয়েছে তবুও পিটার হিগ্‌সের অক্লান্ত শ্রম, মেধা ও মননে আবিষ্কৃত বোসন কণাটির সঙ্গে সঙ্গত কারণেই তাঁর নামটি চিরকালের জন্যে জড়িয়ে থেকে অমরত্ব পেতে যাচ্ছে!

এখন প্রশ্ন হলো, যদি সাম্প্রতিক গবেষনায় হঠাৎ করে শেষ অবধি হিগ্‌স কণার অস্তিত্ত্ব না মেলে? অনেকটাই নিশ্চিত ভাবেই পিটার হিগ্‌স এর জবাবে বলেছেন,”তাহলে শৈশবের আন্ডারগ্রাজুয়েটের দিন গুলোতে পদার্থবিদ্যা যা জেনেছি তার কিছুই বুঝিনি ধরে নিতে হবে, যে প্রশ্নের উত্তর আমি আমার সেই সব দিন গুলোতেও খুঁজেছি, আমাকে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে পদার্থবিদ্যার এই জায়গাটি”। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরোও বললেন, “আমার মনে হয় অন্ততঃ একটি জিনিস আমরা পরিষ্কার ভাবে বুঝেছি যে তড়িৎচুম্বকীয় প্রতিক্রিয়াটি কি এবং কিকরে তা দুর্বল তড়িৎবলের তত্ত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত”।

এইযে বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে খোঁজা হচ্ছে একটি মাত্র ক্ষুদ্র অদৃশ্য কণা, যার নাম হিগ্‌স বোসন, এটি কি যথেষ্ট আশ্চর্য ব্যাপার নয় যে, কণাটি আদৌ সেখানে আছে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা ছাড়া? সাংবাদিকবৃন্দের এরকম একটি প্রশ্নের জবাবে অনেকটা প্রবল আত্মবিশ্বাসের ভঙ্গীতে সমগ্র দেহাত্মার দ্বৈত আন্দোলনে যা বললেন তা তাঁর নিজের ভাষাতেই দেখুন,

“If physicist were looking for a different particle they would have constructed an accelerator just as strong and experiments just as complex.”