শব্দগুচ্ছ কবিতা পুরস্কার ২০০৯ পেলেন বাংলাদেশের কবি রহমান হেনরী। তিনি নব্বই দশকের একজন উজ্জ্বল কবি। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ সংখ্যা ১০। তাছাড়া ২০০৮ সালে বেরিয়েছে শ্রেষ্ঠ কবিতা। ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস সন্ধ্যায় নিউইয়র্কস্থ শব্দগুচ্ছ অফিসে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশিষ্ট গবেষক, নিউস্কুল ইউনিভার্সিটির ইংরেজী বিভাগের প্রফেসর, ড. নিকোলাস বার্নস এ পুরস্কার ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, “রহমান হেনরীর কবিতার সাথে আমি পরিচিত, তিনি উত্তরাধুনিক কবিতায় একজন গুরুত্বপূর্ণ কণ্ঠ।” পুরস্কার ঘোষণার আগে শব্দগুচ্ছ সম্পাদক হাসানআল আব্দুল্লাহ বলেন, “সুস্থ কবিতার ধারা তৈরীর লক্ষ্যে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে।” এ বছরের পাঁচ নমিনির সংক্ষিত পরিচিতি তুলে ধরার পাশাপাশি ভবিষ্যতে পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদেরও পুরস্কৃত করার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মূলত পুরস্কার ঘোষণা ও ৩৮তম বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কবিতাপাঠ, সঙ্গীত ও বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় আরো অংশ নেন নাজনীন সীমন, আব্দুল ফাত্তাহ, আনিসুর রহমান অপু ও আবু রায়হান। ২০১০ এর ফেব্র“য়ারীতে ঢাকায় বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রহমান হেনরীর হাতে পুরস্কারের ২০০ ডলার ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হবে।
উল্লেখ্য শব্দগুচ্ছ কবিতা পত্রিকা কর্তৃক এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয় ২০০১ সালে। তখন থেকে প্রতি দু’বছর পরপর পত্রিকায় প্রকাশিত কবিদের ভেতর থেকে প্রথমে পাঁচজনকে নমিনি করে সেখান থেকে বিচারকদের ভোটে একজনকে এ পুরস্কার দেয়া হয়। এ বছর নমিনি ছিলেন অনুরাধা মহাপাত্র (ভারত), আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহ (অস্ট্রেলিয়া), জাহানারা পারভীন (বাংলাদেশ), রহমান হেনরী (বাংলাদেশ) ও শম্ভু রক্ষিত (ভারত)। ইতিপূর্বে যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন তাঁরা হলেন রুকসানা রূপা (২০০১), বায়তুল্লাহ্ কাদেরী (২০০৩), প্রবীর দাস (২০০৫) ও নাজনীন সীমন (২০০৭)। এ বছর নমিনি নির্বাচন ও পুরস্কার চূড়ান্ত করার বিভিন্ন পর্যায়ে যারা সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন, বিশেষ করে শব্দগুচ্ছের নিয়মিত গ্রাহক, সম্পাদক মণ্ডলী ও বিচারক পর্যায়ে আমন্ত্রিত কবি-লেখক, তাদের সবাইকে শব্দগুচ্ছ’র পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানানো হয়েছে।
অনেক কিছু শিখলাম
যেভাবে ব্লগ উত্তপ্ত হয়ে যাচ্ছে, তাতে তো নিজের মতামত প্রকাশই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে মনে হয় ! তবু সাহস করে নিজের অজ্ঞতাটা প্রকাশ করেই ফেলি ! যদিও অনেকদিন পর পোস্টটা চোখে পড়লো।
সেই ১৯৯৪ সালে কবি এজাজ ইউসুফী’র ‘স্বপ্নাদ্য পদাবলী’ কাব্যগ্রন্থটা হাতে পেয়েছিলাম এবং পড়ে প্রথমেই টাস্কি খেয়েছি কবিতায় অদ্ভুত পঙক্তিবুনন দেখে। সেখান থেকে কৌতুহল, এইগুলা আবার কেমন কবিতা ! ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গায় অনেক জল গড়িয়ে গেছে।
পরবর্তীতে এই উত্তরাধুনিকতা নিয়ে কিছু পেলে পড়ার চেষ্টা করে গেছি, তবে বুঝতে পেরেছি কিনা তা বুঝি নি। এমনকি এজাজ ইউসুফী’র সম্পাদিত লিটল ম্যাগ সমৃদ্ধ ‘লিরিক’ সংখ্যাটাও সংগ্রহ করেছি। আমার অসংখ্য সীমাবদ্ধতার মধ্যে এটাও একটা যে আমি উত্তরাধুনিক ধারণাটাকে আসলেই বোঝার আয়ত্তে নিতে পারি নি। বিশেষ করে যখন এটা জানলাম যে উত্তরাধুনিকতার ধারণার মধ্যেও তিন ধরনের উপাদান রয়েছে- উত্তর আধুনিক, উত্তর-আধুনিক, উত্তরাধুনিক। এগুলোর আদর্শিক দর্শনও ভিন্ন ভিন্ন। যেহেতু বিষয়গুলো আমি নিজেই আয়ত্তে নিতে পারি নি, তাই এ সম্পর্কে আমি বুঝাতেও পারবো না।
কিন্তু কৌতুহল নিবৃত্তি হবে কী করে ? শেষে নিজে নিজেই একটা ধারণা তৈরি করে নিলাম, যা ভুল না শুদ্ধ তা নিরূপণ করাও আমার দ্বারা সম্ভব নয়। কেননা বিষয়টা একান্তই স্বকৃত।
আমার ধারণায় আধুনিক কবিতা যেমন একটা উপলব্ধির বিষয়, উত্তরাধুনিক কবিতা হচ্ছে উপলব্ধিশূণ্যতার বিষয়। অর্থাৎ প্রকৃতই আধুনিক কবিতা যেমন সৃষ্ট চিত্রকল্পের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট কোন অর্থ নয়, একটা উপলব্ধিকে পাঠকমনে চারিয়ে দেয়, অন্যদিকে উত্তরাধুনিক কবিতা প্রচলিত ফর্ম ভেঙেচুরে পাঠকমনের পূর্বলব্ধ কোন উপলব্ধিকে গুঁড়িয়ে উপলব্ধিশূন্যতার অনুভূতি তৈরি করে দেয়। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, উপলব্ধিশূণ্যতার উপলব্ধি তৈরি করাই উত্তরাধুনিকতাবাদী কবিতার লক্ষ্য। আবারো বলে রাখি, পাঠক হিসেবে এ আমার একান্তই নিজস্ব উপলব্ধি। একটা উদাহরণ দিলে হয়তো আমার ব্যাখ্যাটা আরেকটু খোলাশা করতে পারবো।
যেমন মনে করি, চমৎকার শিল্পশৈলিতে গড়া একটা নান্দনিক ভবন, যা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায় বা মনে দারুণ ভালো লাগার একটা অনুভূতির জন্ম হয়। চাইলে চেয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে, আহা যদি ভবনটার ভেতরে একবার ঢু মেরে আসা যেতো। না পারলেও ক্ষতি নেই, একটা কাল্পনিক ভ্রমণের মাধ্যমেই ভবনটির স্বপ্নগভীরে ঢুকে যেতে পারি আমরা, যাতে ভালো লাগায় নিজের মতো করে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা যায়। এটাকে যদি আধুনিক কবিতার রূপক হিসেবে ধরে নেই, তাহলে উত্তরাধুনিক কবিতা হবে ওই ভবনেরই ভগ্নদশাপ্রাপ্ত এমন এক অবস্থা যার দিকে তাকালেই দেখা যাবে নির্দয় আঘাতে আঘাতে একটা করুন ইমারতের এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছেঁড়া-ভাঙা টুকরো সব। ভবনটির হা হয়ে থাকা ইট-কাঠ-সিমেন্ট-বালি-রডের ভয়ঙ্কর নগ্নতা নিমেষেই দর্শককে এমন এক উপলব্ধিহীন দশায় নিক্ষিপ্ত করবে, তার বোধ হয়তো এটা বুঝবে যে ভবনের সবগুলো উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু বুঝার উপায় নেই কোথায় কোনটা কিভাবে জুড়ে ছিলো বা ভবনটি আসলে দেখতে কেমন ছিলো। এই তছনছ অবস্থায় পাঠকের সাধ্য নেই উপাদানগুলো জোড়া লাগিয়ে কোন প্রতিরূপ তৈরি করার। হয়তো অক্ষম কল্পনায় সে একটা কাল্পনিক ভবনের চিত্র তৈরি করতে চাইবে। কিন্তু দৃশ্যের রূঢ়তায় তার অক্ষমতার যন্ত্রনা তাকে এমন এক উপলব্ধিহীন বাস্তবতায় নিক্ষিপ্ত করবে যে সে একটা উপলব্ধিশূণ্যতায় আক্রান্ত হবে।
অনেকটা আমার এই অক্ষম প্রচেষ্টার মতোই, বুঝাতে চাইলাম কিছু, কিন্তু অসংলগ্নভাবে কিছুই বুঝানো গেলো না ! অর্থাৎ কেবলই শূণ্যতা !
আধুনিক কবিতায় যেমন ভাব বা বিষয়ের একটা কেন্দ্র থাকে, উত্তরাধুনিক কবিতা সেই কেন্দ্রটাকে ভেঙে বা বিলুপ্ত করে অনেকগুলো কেন্দ্র তৈরি করে দেয়। ফলে পাঠক আর প্রচলিত পন্থায় কবিতা থেকে কোন একটি ভাব মিশ্রিত যে এককেন্দ্রিক রস আহরণ করবেন তার উপায় থাকে না। তিনি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। স্বাভাবিকভাবে আধুনিক কবিতার বিষয়ের কেন্দ্রে থাকে মানুষ। কিন্তু উত্তরাধুনিক কবিতা সেই মানুষকে অস্বীকার করে সেখানে অনেকগুলো বিষয়কে নিয়ে একটা ঘুটা দিয়ে দেয়। এখানে কবির যেমন দায় পড়েনি কিছু বুঝানো বা কোন ম্যাসেজ সঞ্চালন করার, তেমনি পাঠকেরও দায় থাকে না কোন কিছু উপলব্ধি করার। নিটোল উপলব্ধিময় আধুনিকতার বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহী ভয়ঙ্কর উপলব্ধিশূণ্যতাই উত্তরাধুনিকতা। কোন তত্ত্বকথা ছাড়া এটাই হচ্ছে আমার উত্তরাধুনিকতাবোধ। এক্ষেত্রে কেউ একমত হলেও যেমন আমি কোন দায় নিতে রাজী নই, তেমনি কেউ ভিন্নমত পোষণ করলেও আমার কোন আপত্তি নেই। মোদ্দাকথা এ ব্যাপারে এটাই আমার অজ্ঞতা।
ধন্যবাদ সবাইকে।
@কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ,
আপনার সুন্দর জবাব আমার মনে থাকবে। খুবই খাটিঁ কথা বলেছেন,আগে কবিতা বুঝতে হবে।
তাহলে কবিতা আসলে বিশুদ্ধ উপলব্ধির বিষয় নয়!?
আপনার ”ধারণা” আমি এমনকি আধুনিক কবিতাও বুঝিনা;আপনার নাতিদীর্ঘ শুদ্ধ জবাবের শেষ বাক্যের আগের বাক্যে ”আমি জানি” উল্লেখ করায় এই ”ধারণা”
স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার জ্ঞানের প্রতিফলন প্রমাণিত হয়েছে। যাক বেচেঁ গেলাম আমি। আমার কলম আর একবারও ভাঙতে হচ্ছে না।আমি গরীবের একটি মাত্র কলম!
”বাংলা শুদ্ধ করে লেখা শেখেননি এখনো।”
খুবই অপ্রিয় সত্য কথাটা অবলীলায় বলতে পেরেছেন!
কবিদের সাহস এমনি হতে হয়।তাই আপনি আমার পরম বন্ধু!যাক,আমি শেখার চেষ্টা করবো।আর শেখারইবা কি শেষ আছে!
এই যে আপনি নিজের খেয়ে আমারে শুদ্ধ করে দিলেন,আমার উপকার করলেন,আপনিতো শুধু উত্তরাধুনিক কবি না,উত্তরাধুনিক শিক্ষকও বটে!
আমারে লিখে দিয়েছেন,”উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে” না, ”উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে”আবার ”শুনা যায়”না,”শোনা যায়”।
ভাষা বিজ্ঞানের ক্ষুদে পাঠক হিসেবে,আমাকে বলতেই হবে, ভাষা আমার কথায় চলে না।
কবি হাসান সাহেব,আপনার কি কখনোই মনে হয়নি যে ”উঠে/ওঠে” এবং ”শুনা/শোনা” দু’ভাবেই সঠিক!?
এবং শুদ্ধ!?
ড.আহমদ শরীফের সম্পাদনায় বাংলা একাডেমীর বাংলা অভিধান নামক বইয়ে জেনেছি বললে কি এবার আপনি এই বলে নিন্দা করবেন,একখানা বাংলা বইয়ের নাম জানলেই পৃথিবীর সবকিছু জানা হয়ে যায় না।?
যার এতো ভূল তার কি কখনো কোন জ্ঞান আছে?
প্রিয় কবি আমি জানি যে আমি একজন অজ্ঞ মানুষ।
তাই জ্ঞান দান অকল্পনীয়!ধারণাতীত!
তবে বোকার মত জ্ঞানবৃক্ষের ফল দেখলে জিবে জল এসে যায়।এখনো শুধু খাওয়ার লোভই জাগে! দেখলেন কি স্বার্থপর আমি!
জনাব হাসান এবার আমার একখানা অজ্ঞ প্রশ্ন, আপনার উদার জবাবের এই ”বোঝেন” বানান কি শুদ্ধ?
বুঝেন এবার আমি আপনাকে এ জাতীয় প্রশ্ন করলাম কেনো।
এই ‘বোঝা-বুঝি’ ঠোকাঠুকির ভেতর দিয়েই আমার বাঙলা ভাষা,আমার বাঙলা সাহিত্য কালের কড়া পাহারা আতিক্রম করে যাচ্ছে।
কবি হাসান আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
@কবি হাসানআল আব্দুল্লাহ
এগুলো আসলে উত্তরাধুনিক কবিতা কিনা চিন্তার বিষয়।বিশ্বব্যংক,স্যটালাইট,ইন্টারনেট,মোবালই ফোন ও বিশ্বায়নের রোষে কবলিত গরীব,অস্হীর বাঙালি সমাজচিত্র; এসবের কাব্যিক প্রকাশকে উত্তরাধুনিকতার মার্কা মারা যায় কি?
এই পৃথিবী জুড়ে অন্তর্জালের(internet) বিস্তারে পশ্চীমের লেখকরা কবেই উত্তরাধুনিকতার মৃত্যু ঘোষণা করেছে মূলতঃএই ইন্টারনেট,ডিজিটাল টেকনলজির ফলেই বলা যায়।
এখন পশ্চীমে দেখা যাচ্ছে Altermodernity,hypermodernity,digimodernity নামে নতুন যোগের হাওয়া বইছে। Death of postmodernism এর বই পুস্তকও বাজারে বেরিয়েছে।(এ বিষয়ে Dr.Alan Kirby সাহেব সবচে উল্লেখযোগ্য মনে হয়।)
আর বাংলায় তখন উত্তরাধুনিকতা উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে,বিকশিত হয় ইত্যাদি শুনা যায়।তাহলে, ডিজিটাল যোগের ধাক্কায় পশ্চীমে যেখানে উত্তরাধুনিকতার মৃত্যু,পূর্বদেশে তাহার জন্ম! আসলে কি বাংলা কবিতায় কোন উত্তরাধুনিকতার রঙ লেগেছিলো? বা লাগছে?
কবিতা দুর্বোধ্য হলেই কি উত্তরাধুনিক?
@সালাম,
আগে কবিতা বোঝার চেষ্টা করুন, তারপর বড়ো বড়ো কথা বলুন। আমার ধারণা এমনকি আধুনিক কবিতাও বোঝেন না আপনি। বাংলা শুদ্ধ করে লেখা শেখেননি এখনো। “উদ্দীপ্ত হয়ে উঠে” না, হবে “উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে”; আবার “শুনা যায়” না, হবে “শোনা যায়”। একখানা ইংরেজী বইয়ের নাম জানলেই পৃথিবীর সবকিছু জানা হয়ে যায় না। পাঁচজন আধুনিক কবির নাম জানতে চাইলে আমি জানি আপনার কলম পাঁচবার ভাঙবে। অতএব প্লিস, জ্ঞান দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
কয়েকটি উত্তরাধুনিক কবিতা
বায়তুল্লাহ্ কাদেরী (১৯৬৮ – )
রাজা
তাহলে বলতে পারি আজ রাতে আমাদের রাজা তোমাদের রাজার সমান
হবেন গোপনে, শঙ্খ বাজবে, জ্বলবে আতসের আলো পাহাড়ের চাঁদে দাঁড়াবে ব্রহ্মের পুত্র
নিরিবিলি, আজ রাতে আমাদের রাজা তোমাদের রাজাকে গোপনে ডিঙিয়ে যাবেন
রাজ্যে রাজ্যে চরবে গরু অথবা ট্রাজিক ছাগল
মঞ্চে হবেন করুণতর, হাত করতে হলেই এসো ধরে রাখি জ্যোৎস্নার বল্লরি
পাখির ডিমের মধ্যে ছদ্মবেশী ব্রহ্ম তৃণের জীবনী নিয়ে কৌতূহলী;
এসো তার কাছে যাই, এসো তাকে বলি ত্রিণাচিকেতের ছন্দে:
আগুন নাচাতে পারি আমি, আগুন পোড়াতে পারি আমি রাজার মতন অশ্বমেধলিঙ্গে
চন্দনেসুবাসেস্তবে চিদানন্দ পরম রাজাই আমি, কেননা এখনি এই রাতে আমাদের রাজা
তোমাদের রাজার সমান হয়ে উঠবেন। সমিধের ধূম্র দেখে
বিষণ্ন কুণ্ডলী দেখে অথবা ওঙ্কার দেখে আমরাও রাজা হয়ে যাই;
আমরাও রাজা হয়ে যাই পাথরে রাজার মুখ স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখে।
সানাই
জীবনের কাছে লাল-নীল-বাদামি-হলুদ-সফেদ-সবুজ ইত্যকার আগুনের মতো
দৃঢ় শালগাছের ছায়ায় দীর্ঘ হতচকিত হরিণভীতির মতন স্তব্ধ ব্যবহারে
থমকে যেতে যেতে কুণ্ঠিত আলোকে একদিন চোখে পড়বে যে,
ব্রহ্মের নিবিড় পরমেশ্বর আছেন চিদানন্দ কুয়াশায়, তার
নৈঃসঙ্গ্যের বীজ পুরুষের মতো
বলিষ্ঠ অথচ খলখলে খসখসে সংকীর্ণ শীতকে পায়ে মাড়িয়ে মাড়িয়ে চলে
আমরাও বুঝি সারারাত ট্রাকের বিশাল নৈঃসঙ্গ্যের যাত্রা
দর্শনের জন্ম দেয়, ট্রাকের হর্নের শব্দ সার্চ-লাইটের তীব্র আলোক-প্রক্ষেপে
জীবনকে তুচ্ছ পাতার মতন ভেবে নিতে বোধ হয়, জ্ঞানের আগুন
পুড়তে পুড়তে মাঠের জ্যোৎস্নায় বহুলোকের আগুন
পোহাবার রীতি তৈরী হয়ে যায়
ঘুরে-ফিরে একই ঋতু ও রীতির দেশে মেয়েদের নিঃসঙ্গ পুরুষ আর
পুরুষের নিঃসঙ্গ মেয়েরা আবোলতাবোল সর্প নাচায়; সর্পের জগন্নাথ
মন্দিরের বানরকে দিয়ে দেয় ধ্বন্বন্তরী কলা, কে বুঝের আর কে অবুঝ সেটি
ট্রাক-ভর্তি লাশের কম্পনে মোটেও যায় না জানা─
ঝুপঝুপঝুপঝুপঝুপঝুপ করে লাশ পড়ে
লাশ পড়ে খাদে, গাছের গুঁড়ির মধ্যে, ঝুপঝুপঝুপঝুপঝুপঝুপ করে লাশ পড়ে
একটি একটি লাশ একেকটি পিঁপড়ের কুণ্ঠিত ইচ্ছাকে নিয়ে বেঁচে থাকে নিজের প্রকোষ্ঠে
বিদৃতিদ্বারের উপকণ্ঠে পৌঁছে গিয়ে সমস্বরে গায় উদগীথ
থালায় আচ্ছন্ন রশ্মিময় অস্তিত্বের কাছে সে শব্দকে মনে হয়
সৌখিন সানাই।
রহমান হেনরী (১৯৭০ – )
গরু চুরি
একদিন আমাদের ভজহরি স্ট্রিটের বিকেলে
বদরগঞ্জ থেকে কয়েকজন লোক এসে বলে যে,
গরু কোনঠে? এ্যালায়, চুরি করিব্যান্নাগে যে!
আমরা বলি, বদরগঞ্জ কোথায়?
তারা আমাদের ভূগোলজ্ঞানে মুগ্ধ হাসে আর
বলে যে, সিড্যা তো হামাগেরে ওম্পুর বাহে!
এই কথায় আমরা লজ্জিত হই, বলি, দ্যাশের মানুষ;
তারা আমাদের ড্রয়িংরুমে বসে পড়ে, হাসে, আর
সেই হাসিতে আন্তরিক কুটুম্বভাব ঝরে পড়লে
আমাদের ড্রয়িংরুমটা বড় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে; দেখে
আমার বউ খুবই সংকোচ করে, বলে যে,
গরু তো নাই─চা করি?
তাদের সর্দারকে আমার এতটাই চেনা ঠেকে যে, মনে হয়,
অন-এয়ারে তাকে আমরা বহুবার দেখে থাকবো, বলে─
চা কী দরকার? এ্যালায় গোয়াল ঘরখান ঘুরি দেখান!
চুরির স্বার্থে অতিরিক্ত গরু কেনা তো দূরে থাক, আমরা
দুধের জন্য একটা গাই কেনারও সমর্থ হই না─
এই কথা কী ভাবে যে বলি! তারা সংকোচ-সংকেত বোঝে,
বলে যে, নাই─এই তো! এ্যালায়
ফির কবে আসিম ঝটপট কন কেইনে বাহে!
আমার বউ বলে যে, সামর্থ্য নাই; তারা আবারও হাসে, বলে─
সাহস করিলেই সামর্থ্য আইসে! তখন আশ্চর্য যে,
সত্যি সত্যিই আমাদেরও সাহস হয়, বলি─
দুই বচ্ছর পরে আইসেন কেইনে!
তারা আমাদের সাহস দেখে এতটাই আনন্দিত হয় যে,
বোঝাই যায়, গরু চুরির কথা আর মনেই রাখে না; ফলে
এই প্রথম আমাদের সন্দেহ হয়, তারা গবাদিপালন উদ্বুদ্ধকরণে
এনজিও কর্মী কিনা; হয়তো বিশ্বব্যাংকের ফাইন্যান্সে
গরু চুরির এমন অজুহাত করে!
যেমন ঝিনুকগুলি
পার্শ্বদৃশ্যে সে ছিল শায়িতা…আর আমি
এই সন্ধ্যা রচনা করেছি যেন জমাট রক্তের মধ্যে
ব্যক্তিগত ছায়া প্রক্ষেপণে; যেমন পাখির ঘুম।
দৃশ্য থেকে, রক্ত থেকে, পাখি থেকে…অথচ দূরত্ব
বেড়ে যায়; কিন্তু আমার জননী ছিল মৃত্তিকার আদি সহোদরা,
ফলে, তাকে জন্মেরও অনেক আগে একবার
কোথায় যে দেখিয়াছি…অচেনা জলের দেশে…
সেই গল্প ক্ষীয়মাণ, নেপথ্যে বিলীন।
পার্শ্বস্বপ্নে সে ছিল জাগ্রত…আর এত গান!
এ রকম একবার কখনও কি শোনা গিয়েছিল?
আমার জননী তো সেই স্মৃতি স্মরণে রাখেনি!
ফলে, এই স্মরণিকা রচনা করেছি যেন
অন্তত ঘুমের মধ্যে, বিস্মৃতির ধূসর ডানায়…
যেমন নদীরা কোনও পূর্বস্মৃতি স্মরণে রাখে না।
তবে আজ কী কী কথা মনে পড়ে আর কী কী
মনেই পড়ে না…সেই দুঃখ স্মরণবাহুল্য;
প্রাগুক্ত বিষয় নিয়ে আমার মায়ের সাথে
বহুকাল কথা তো হলো না! সে ছিলো ভ্রমণশীলা, মেঘে
পার্শ্বদৃশ্যে সে ছিল শায়িতা…আর আমি
এই দুঃখ রচনা করেছি যেন সংগুপ্ত প্রাণের মধ্যে
কাহাদের উপস্থিতি ভ্রমে; যেমন ঝিনুকগুলি।
ফলে আজ কান্নাও অধিক জানে ফলনের
কৃষিসংস্কৃতি; যেমন আমার মা, ফসলের প্রকৃত অগ্রজা।
হাসানআল আব্দুল্লাহ (১৯৬৭ – )
নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ
৩৪
ক.
শূন্যতায় আবর্তিত ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে সতত সজাগ পাশাপাশি
জোড়াবদ্ধ ব্লাকহোল মহাবিশ্বের তাবদ খেদ ক্লেশ বিরহযন্ত্রণাগুলো
সুড়সুড় টেনে নিয়ে যায় আপন বিবরে…পেটে পিঠে হৃদয় তন্ত্রীতে
আস্তে আস্তে জমা হয় কষ্টের তামাম নথিপত্রগুলো…ধুলো বালি,
গাড়ির নিকষ কালি থেকে শুরু করে মরা মানুষের পেট পাকস্থলী,
হাড় মাথার খুলির পাশে লেগে থাকা দাগ…আর জীবিতের অস্থি
মজ্জায় জমানো সকল আবেগ টেনেটুনে চুষে নিয়ে ব্ল¬াকহোল বেঁচে
থাকে জোড়ায় জোড়ায়…দূর থেকে স্যাটেলাইট সঙ্গমে উপগত হয়…
আপাত সৌখিন, ক্ষয়হীন শান্ত স্বভাবের ঝড় ওঠে ইভেন্ট হরাইজনে…
খ.
সেই ঝড় আরো পরে ভয়াবহ মাতাল, উন্মাদ…সেই ঝড়ে পার হয়ে
যায় কোটি কোটি আলোক বছর…মরে যায় তারার গোলক…মরে যায়
আলো…অন্ধকার ফুঁড়ে সেই রাতের আকাশে পুষে রাখা সেইসব
যন্ত্রণার খরা বিকিরণ─প্রাণের অস্তিত্বহীন নতুন বিশ্বের কাছে ব্লাকহোল
একমাত্র আলোর নিয়তি…দূর কোনো সময়ের পারে…দূর কোনো
নাক্ষত্রিক দিবসের শেষে…ভয়ঙ্কর শীত আর নেচে ওঠা গাঢ় অন্ধকারে…
৪৩
ক.
যন্ত্রণায় ভস্ম হতে হতে নক্ষত্রমণ্ডল একত্রিত যন্ত্রণাকে বন্ধ করে চলে…
পুড়তে ও সোৎসাহে তখন পোড়াতে ভালবাসে সময়ের আনাচে কানাচে
জমে থাকা কর্তব্যের ধার…নক্ষত্রগুলো আলোর আকর হয়ে
নিজেরা সতত থেকে যায় ভয়াবহ স্বৈরাচারী…আকাশের অধীশ্বর…
নিজস্ব মণ্ডলে বিভাদীপ্ত যদিও সর্বদা একেকটি সোনার ফলক,
কিন্তু স্বৈরাচারী সারাটা প্রহর…কাছাকাছি যতোকিছু আছে সব
আগুনের নিয়ত খাবার…হাতের থাবা! ভেতরে যা কিছু আসে
পারমাণবিক বিষ্ফোরণে তেজস্ক্রিয় হয়ে ওঠে সহসা সবল…দূরে
দূরে বহুদূরে যদিও তাদের আলো কার্যকরী…এগোবার একান্ত সড়ক…
খ.
অতিরিক্ত আলো আর ঘুটঘুটি অন্ধকারে কোনো ফারাক থাকে না…
তেজস্ক্রিয় সর্বনাশ থেকে খাঁ খাঁ শূন্যতাও ঢের বেশী দামি…নক্ষত্রের
আলো যদি সরাসরি চোখে দেয় হানা, তীর্যক রেখায় পড়ে খোলা
দৃষ্টির উপরে…পারমাণবিক বোমার থেকেও ভয়ঙ্কর তার রশ্মিরা তখন
চরাচরে গড়ে তোলে সমূহ বিপদ…আমরাও তার রোষে মরে পড়ে
থাকি…আমরাও তার রোষে পচে গলে দুর্গন্ধময় ভাগাড় হয়ে যাই …
স্নিগ্ধার মত আমিও আসলে বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছি। আমারো ধারনা ছিল যে উত্তরাধুনিক কবিতা আধুনিকতা প্যারাডাইমকে চ্যালেঞ্জ বা অস্বীকার করে গড়ে উঠেছে। পোষ্ট মডার্ন স্কুল অফ থটের দার্শনিকতার সাথেই এর সম্পর্ক। পাশ্চাত্যের উত্তরাধুনিক কবিতা ষাট দশক থেকে তাই করে আসছে। কিন্তু হাসান সাহেবের কথা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে বাংলা উত্তরাধুনিক কবিতায় তা ঘটেনি। তিনি পরিষ্কার করেই বলছেন যে,
এক্ষেত্রে স্নিগ্ধার সুরে সুর মিলিয়ে আমিও বলছি নামের কি এতই আকাল পড়েছিল যে এই কবিতাগুলোকে এরকম চরম বিভ্রান্তিকর নাম নিতে হয়েছিল। ‘আধুনিক উত্তর’ না হয়েও উত্তরাধুনিক এই বাহারী নাম বেছে নেয়াটা কতখানি যৌক্তিক কাজ হয়েছে বলে উত্তরাধুনিক কবিরা মনে করে থাকেন?
বিভ্রান্তি অবশ্য আমার শুধু এখানেই না। হাসান তার প্রবন্ধ থেকে যে উদ্ধৃতিগুলো দিয়েছেন সেগুলোও দ্ব্যর্থবোধক। দুই একটা বিষয়তো আমি বুঝি-ই নাই ঠিকমত। যেমন তিনি বলেছেন,
এর মানে কী? উত্তরাধুনিক কবিতা কী তবে বিশাল কোন হতাশার নাম। স্বপ্নহীন কোন ভাবনা, উদ্দিষ্টবিহীন নেই রাজ্যের কোন বাসিন্দা?
হাসান একদিকে বলছেন উত্তরাধুনিক আধুনিক উত্তর নয়, উত্তরাধুনিকেরা অস্বীকার করেনি আধুনিকতাকে। তার ভাষ্য অনুযায়ী-ই-
আবার সেই তিনিই বলছেন,
এখন পাঠক হিসাবে আমরা কোনটাকে বিশ্বাস করবো?
এতো গেলো ভিন্ন ভিন্ন প্যারার কথা। পাশাপাশি দু’টো লাইনেও চরম বৈপরিত্য দেখি আমরা।
কোথায় আধুনিকতার চিন্তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া আর কোথায় কিছুটা আলাদা হয়ে যাওয়া। দু’টো কী এক হলো?
বুঝলাম বাংলা কবিতা ভিন্নভাবে লেখা হচ্ছে। ভাল কথা। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই ভিন্নতা কতটুকু ভিন্ন? আধুনিক কবিতার সাথে সামান্য মনমালিন্য করে একই ছাদের নিচে থাকার মত ভিন্নতা, নাকি ঝগড়া করে আলাদা ঘরে গিয়ে আলাদা নাম নিয়ে থাকার মত ভিন্নতা?
তবে, এই ভিন্নতা যে বেশ ভাল রকমেরই ভিন্নতা ছিল, পুরোপুরি মোড় ঘোরানো ছিল, সেটা হাসানের লেখা থেকেই বোঝা যায়। তিনি লিখেছেন,
বাংলা উত্তরাধুনিক কবিতার সূত্রপাত কাদের হাতে হয়েছিল, কারা এর দিকপাল ছিল বা আছে, কারা এটাকে বিকশিত করেছে সেই তথ্যও তিনি দিয়েছেন।
দেশের বাইরে বেশিদিন থাকার হ্যাপা অনেক। তার মধ্যে একটা হচ্ছে অনেকদিন পরে এমন একটা কিছু জানবেন যাতে আপনি একেবারেই চমকে উঠবেন। না জানার কারণে লজ্জিত হবেন। এইতো কিছুদিন আগেই সচলায়তনে দেখছিলাম যে, সুমন্ত আসলাম নাকি এখন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। লোকজন লাইন ধরে নাকি তার অটোগ্রাফ নেয়। সুমন্ত আসলামের এখানে ওখানে ছিটেফোঁটা কিছু লেখা পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এই নিদারুণ সংবাদে তাই হতবাক হতে খুব বেশি সময় লাগেনি আমার।
বিপুল শক্তি দিয়ে পঞ্চাশের দশকের কবিতা থেকে আলাদা কবিতা লিখে যারা উত্তরাধুনিক কবিতা নামে একটা নতুন ধারার জন্ম দিল তাদের কাউকে না চিনে আমিও লজ্জিত হলাম খুব। অন্তর্জালে অনুসন্ধান চালিয়ে বায়তুল্লাহ কাদেরী সম্পর্কে তেমন কিছু পেলাম না বা তার কোন কবিতারও হদিস পেলাম না। রহমান হেনরীর আরো গোটা দুয়েক কবিতা দেখলাম। সেই একই অবস্থা হলো আমার। মাথার উপর দিয়ে চলে গেলো এ দু’টোও। তবে সবচেয়ে মজা পেলাম টোকন ঠাকুর নামের দিকপালের কবিতা পড়ে। দুই একটা আপনাদের জন্য না দিলে আসলেই অন্যায় হবে।
আমি রিলেটিভ, মেসো
……………
যমুনা বলিতে পারিত, ‘আবার আসবেন’
কিন্তু যমুনা কহিল, ‘… এসো’
আমি নির্বাক, আমি কবিযশোপ্রার্থী
আমি রিলেটিভ, আমি যমুনার মেসো
যমুনা বলিতে পারিত, ‘ব্যাগটা একটু ধরেন’
যমুনা শুধু বলিল, ‘মেসো, ধরেন’
ধপ করে কারেন্ট চলে গেল, ধব ধব
ঢিব ঢিব… বুকের মধ্যে শব্দ হচ্ছিল ধুব ধুব
মনেই ছিল না যে, আমি কে? আমার নাম কি হরেন
না নরেন?
আমি যমুনার মেসো হই, যথেষ্ট ডিস্টেন্স
ডিস্টেন্স ঘুচাল কে? আমি, না যমুনা?
যমুনা বলতে পারত, ‘ব্যাগটা আবার ধরেন’
কিন্তু বলল, ‘ধরেন’
বললাম, ‘কি?’
বলল, ‘কমু না’
বিদায়লগ্নে, ‘আবার আসবেন’ না বলিয়া কহিল, ‘… এসো’
সঙ্গত ধাক্কা খাই, ধাক্কায় ধাক্কায় উঠে দাঁড়াই, দাঁড়াতে হবেই
কারণ, আমি রিলেটিভ, আমি যমুনার মেসো
চালচিত্র
….
চন্দ্রের প্রভাব…
লঘু বাক্যে গুরু গুরু ভাব
বস্তুত, মূলত, ফলত, প্রসঙ্গত
তো তো তো
ঢাকার রাস্তায়, শপিংমলে, দলে দলে যতই দেখা যাক
বাসাতেই প্রচণ্ড নারীর অভাব
যদি বা প্রসঙ্গ চেঞ্জ: বাড়ি বাড়ি, বাসায় বাসায়
আজিকার যত নারিকেল
একদিন ছিল ডাব
লঘু বাক্যে গুরু গুরু ভাব
বাড়িতেছে সূর্যের প্রভাব…
মে মাসের রোদ মেরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, খুঁজে বেড়াচ্ছি
আজিকার যত ডাব
যত যত ডাব…
০২/০৪/২০০৯
আসলেই নতুন ধারা, তাই না? এক্কেবারে উত্তরাধুনিক। কী বলেন আপনারা? :laugh:
কেউ যেন আবার বলে না বসেন যে, এই দু’টোই আধুনিক কবিতার বাঁক ঘুরিয়ে দেয়া এই উত্তরাধুনিক কবির শ্রেষ্ঠ কবিতা। 😛
@ফরিদ আহমেদ, :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh: :laugh:
@ফরিদ আহমেদ,
চমৎকার বিশ্লেষণ মূলক মন্তব্য। :yes:
কবি যখন বলেন, উত্তরাধুনিকেরা অস্বীকার করেনি আধুনিকতাকে, আবার সে কবিই যখন বলেন উত্তরাধুনিকেরা অস্বীকার করেন আধুনিকতার রেখাঙ্কিত পথে চলতে, তখন আমার মত সাহিত্যে উজবুক প্রানীটিও স্ববিরোধিতা খুঁজে পায়। কখনো কবি ‘আধুনিকতার চিন্তাকেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়া‘র কথা বয়ান করেন, আবার সেই একই প্যারাগ্রাফে দাবী করেন, ‘অস্বীকার নয়, কেবল সময় ও পারিপার্শ্বিকতার হাত ধরে কিছুটা আলাদা‘ হয়ে যাওয়া, তখন আমি আসলেই হতবাক হয়ে ভাবি – আমি কি সাহিত্য বুঝি? যেটুকু বুঝেছি, সাহিত্য আমার দ্বারা হবে না, সেজন্য বিজ্ঞানের লেখালিখিই সই! 😀 চিন্তা করুন, বিজ্ঞানের কোন টার্ম সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে যদি আমি ক্রমাগত এরকম দ্ব্যর্থবধক, নৈর্বক্তিক এবং স্ববিরোধী সংজ্ঞা হাজির করতাম, তাহলে কি দশা হত আমার। আমাকে চিবিয়ে খাওয়ার পালা চলতো। সম্ভবতঃ সাহিত্যের ব্যাপারগুলো বিজ্ঞানের সাদা-কালো এই চরম সীমায় বিচরণ করে না এর বিচরণ এই দুই চরমসীমার মধ্যবর্তী ধূসর এলাকা জুড়ে। সেখানেই চলে নির্মাণ, ধ্বংস আর প্রতিনির্মাণের নানা বর্ণালী খেলা, কখনো এর রঙ বদলে যায় ব্যক্তিবিশেষের ‘চেতনার রং-এ’। কখনো চেতনার রঙ-এ পান্না হয় সবুজ, কখনও বা লাল। চুনি উঠে রাঙা হয়ে। আর আমরা অবুঝেরা ব্যর্থ মনে মাথার চুল ছিড়ি। :-X
সুন্দর আলোচনার জন্য স্নিগ্ধা, বকলম, ফরিদ এবং হাসানকে ধন্যবাদ।
প্রিয় স্নিগ্ধা,
আপনার সাথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একমত হয়েও আবার একমত নই। এবং একটি আন্দোলন যা কালখণ্ডের বিভিন্ন পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কি তা আমি কোনো অবস্থায় দুই এক কথায় বোঝাতে পারবো বলে মনে হয় না। ফলত ফরিদ আহমেদের চিঠির জবাবে আমি কিছু বইপত্রের কথা তুলে ধরেছিলাম। যাহোক আপনাদের কৌতূহলের সাথে আমার কৌতূহলও যেহেতু একাত্মতা ঘোষণা করে, তাই উল্লিখিত প্রবন্ধ থেকে আবারো উদ্ধৃতি দিতে চাই।
“আধুনিকতা সর্বভুক, সবগ্রাসী–তার হাত প্রসারিত মানুষের অস্তিত্বের ভেতর বাহির থেকে সময় ও সময়হীনতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে, আর ইতিহাসের বিশাল পাটাতন থেকে নৈর্ব্যক্তিকতার দৃঢ় ভিত্তিমূলে। তাহলে কীভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় উত্তরাধুনিকেরা অস্বীকার করেন আধুনিকতাকে?…
ঠিক অস্বীকার নয়, সময় ও পারিপার্শ্বিকতার হাত ধরে কিছুটা আলাদা হয়ে যাওয়া। এক অর্থে আধুনিকতার চিন্তাকেই ছুঁড়ে ফেলে দেয়া। এবং সেটাও সাধিত হয় আধুনিকতার বুকের উপর দাঁড়িয়ে–যেমন আধুনিকতার চিন্তা দানা বেঁধেছিলো রোমান্টিকতার শরীরে ভর দিয়ে যা তিরিশের কবিদের প্রথম কাব্যগ্রন্থগুলোর দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে যায় (উত্তরাধুনিক কবিতা: প্রচ্ছদে দুই বাংলা)।”
আর প্রিয় বকলম [অন্য একটি নাম নিন না ভাই!], প্রেক্ষাপট তো থাকবেই। অন্ধকার না হলে আলো আসার প্রত্যাশা থাকে না। আবার সকালের পর দুপুর ও তারপর আবার রাতের দিকে ধাবিত হওয়াই বাস্তবতা। আমাদের কবিতার ক্ষেত্রে আমি যে বাস্তবাতার কথা প্রায়ই বলে থাকি, তাহলো, পঞ্চশের উৎকৃষ্টতার পর ষাটে যদিও সামান্য আলো ফুটেছিলো, স্বাধীনতা উত্তর সময়ে সেই ধারাটি বজায় থাকেনি। উচ্চকিত ভাবনা, শ্লোগান সর্বস্বতা, প্রকাশের জন্যে দোড়ঝাপ, জাতীয় জীবনে স্বৈরাচারী যাঁতাকল ইত্যাদি সত্তর ও আশির কবিদের বিকশিত হতে দেয়নি। বরং একটি অন্ধকার বলয় তৈরী করে দিয়েছিলো তাদের অক্ষর ভাষা ও বুননের পরতে পরতে। এ ব্যাপারে আমার নিজের লেখা আরেকটি প্রবন্ধের উদ্ধৃতি দিতে চাই। “স্বীকৃতি পাগল পঞ্চাশ বুদ্ধদেব বসুর ছায়ায় নিজেদের পুষ্ট করার রসদ পেয়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পত্রিকা সম্পাদনার কাজে হাত দেন না; বরং অসংখ্য বাজে বইয়ের ফ্ল্যাপ লিখে কবি ও অকবির ভেতরের দূরত্ব কমিয়ে দিতে থাকেন। ফলত বিপুল সংখ্যক অকবির সাথে উচ্চারিত হতে থাকে দু’একজন কবির নাম; ওঁদের আলাদা করার তাগিদ অতোটা জোরালো হয়ে ওঠে না।
আশিতে সামরিক জান্তার করালে কবিতা আরো দুরূহ হয়ে পড়ে; যদিও ইনিয়ে বিনিয়ে এসময়ের কিছু কবি আলাদা হওয়ার চেষ্টা চালান, তথাপি উপযুক্ত চর্চা ও মেধা-শূন্যতার কারণে তারাও হাঁপিয়ে ওঠেন। ফলতঃ একটি বা দু’টি কবিতা ফুটে উঠলেই তৃপ্তির ঠেকুর তুলতে থাকেন; যদিও এইসব কবিদের হাতে উত্তরাধুনিকতার ধারাটি লালিত হওয়ার যথার্থ সুযোগ এসেছিলো। শতাব্দীর শেষ দশকে, যখন পৃথিবী জুড়ে অন্তর্জালের বিস্তার; বইছে উদার নৈতিক হাওয়া─ঢাকা-নিউইয়র্কের দূরত্ব যখন মাউসের একটি ক্লিকে এসে ঠেকেছে, মানবেতিহাসের বিপুল ভাণ্ডার হয়েছে সকলের জন্যে উন্মুক্ত─তখনই একঝাঁক কবি বিপুল শক্তি দিয়ে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হন বাংলা কবিতার ঐতিহ্যিক ধারা─বাঁক বদল হয়─ বিকশিত হয় উত্তরাধুনিকতা(বাংলা কবিতার বিশশতক)।”
এটিকে ‘উত্তরাধুনিকতা’ না বলে ‘বিকাশমানতা’ বললেও কোনো ক্ষতি হতো না। তাই বলছিলাম “উত্তরাধুনিক শব্দটি কিন্তু ‘আধুনিক উত্তর’ নয়।” আবার এ-ও জানি, এইসব খণ্ড খণ্ড উদাহরণ ও উদ্ধৃতি টেনে পুরো ‘উত্তরাধুনিকতা’র প্রেক্ষাপট বা সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। তারপরও আপনাদের সাথে আমার নিজের কৌতূহল আরেকটু বাড়িয়ে দিলাম। উভয়কে ধন্যবাদ।
অধীর হয়ে অপেক্ষা করছি আব্দুল্লাহ ভাইয়ের প্রবন্ধটির জন্য। উত্তরাধুনিক শব্দটি এবং এর কবিতা সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমারো বহুদিনের। তবে এটি শুধুমাত্র কবিতার আংগিক পরিবর্তন বা শব্দ ব্যবহারের পরিবর্তন নয় নিশ্চয়ই। শিল্পের অন্যান্য ক্ষেত্রেও এর নিশ্চয়ই প্রভাব আছে। একটি নতুন ধরনের শিল্প আংগিকের যখন শুরু হয় তখন অন্যান্য শিল্পেও তার ছাপ থাকে, বিশেষ করে চিত্রকলায়। সেকারনেই কবিতা এবং চিত্রকলা তাত্বিক দিক থেকে অনেক সময়ই কাছাকাছি থাকে। সেটা আমরা আধুনিক শিল্প আন্দোলন বা তারো পূর্বে রোমান্টিসিজম, নিও রোমান্টিসিজম (কবিতায় ওয়ার্ডসওয়ার্থ প্রমুখ এবং চিত্রশিল্পে উইলিয়াম ব্লেক প্রমুখ), ক্লাসিকাল, স্যুর রিয়ালিসম, রিয়ালিজম, এক্সপ্রেশনিজম বা দাদাইজম ইত্যাদি পর্যায়ে দেখি। আব্দুল্লাহ ভাইয়ের কাছে অনুরোধ থাকবে সামগ্রিকভাবে পোস্ট মর্ডানিজম এর উপর যদি একটু আলোচনা করেন।
আরেকটি বিষয়ও আলোচনা করা জরুরী। একটি ‘ইজম’ এর নাম যাই হোক না কেন সেটি তো শুধু শুধু তৈরি হয়না। তার পেছনে একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থাকে। তখন শিল্প একটি নতুন বাঁক নেয়। সেই নতুন বাঁকটিকে আমরা একটি নাম দেই। কাজেই সেই নামের চেয়েও তার পেছনের প্রেক্ষাপট জানাটা জরুরী। উদাহরন হিসাবে যদি আমরা রেনেসাঁ পরবর্তী রোমান্টিসিজম এর দিকে তাকাই তা হলে দেখব রাজনীতি তে রানী ভিক্টোরিয়ার ক্ষমতা গ্রহন এবং যুদ্ধে স্প্যানিশ আর্মাডার পতন, অর্থনীতি তে ইংল্যান্ড এর সাম্রাজ্য বিস্তার, ছাপাখানার আবিস্কার, মার্টিন লুথারের ধর্ম সংস্কার, বিঞ্জানে ফ্রান্সিস বেকনের গবেষণা ইত্যকার নানাবিধ প্রভাবের কারনে ঐ সময়টাতেই রোমান্টিসিজম বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ ছিল।
আধুনিক শিল্পের পরে উত্তরাধুনিকতার বিকাশে কী কী ফ্যাক্টর কাজ করেছে সেটা জানলে উত্তরাধুনিকতা বুঝতেও আমাদের সুবিধা হবে আশা করি।
সবশেষে, রহমান হেনরীকে অভিনন্দন :rose2:
হাসান, ফরিদ ভাইয়ের মত ‘বোকা বোকা’ প্রশ্নগুলো আমারো।
বইয়ের রেফারেন্স উল্লেখের পাশাপাশি আপনার যদি সময় থাকে তবে এখানে উত্তরাধুনিক কবিতা কী এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো কী – এগুলো যদি আরো একটু বিশ্লেষণ করেন তবে উপকৃত হতাম। অনেক সময় দেশের বাইরে থেকে এ ধরণের বই সংগ্রহ করা দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। আর আমি মনে করি বইয়ের পাশাপাশি এখন নেটেও ভাল রেফারেন্স থাকা জরুরী। এ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা চাই।
আর প্রয়োজন মনে করলে আমাদের সাইটের জন্য উত্তরাধুনিক কবিতা নিয়ে আপনার কোন পূর্ণাঙ্গ লেখা দিতে পারেন। এতে উপকৃত হবে সবাই।
প্রিয় অভিজিৎ রায়,
উল্লিখিত আমার দু’টি প্রবন্ধই ম্যাকিনটশ কম্পিউটারে বিজয় ব্যবহারে টাইপ করা। ইউনিকোড বা আইবিএম ফরমেটে পরিবর্তন করার উপায় জানা নেই। আপনার জানা থাকলে বলবেন। দু’টি প্রবন্ধই মুক্তমনার জন্যে তুলে দেয়া যাবে। তবে, সময় সাপেক্ষ হলেও মুক্তমানার জন্যে উত্তরাধুনিক কবিতা বিষয়ে একটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধ লেখার অঙ্গিকার করছি।
‘উত্তরাধুনিক কবিতা: প্রচ্ছদে দুই বাংলা’ থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি: “…’নাই’ বা শূন্য যার মূল। আবার কিছু নয় উদ্দিষ্ট তার। ফলতঃ ভাষার বুনন হয় কিছুটা ভিন্নতর। বাংলা কবিতায় আশির দশকের শেষের দিক থেকে এ সব প্রবণতা স্পষ্ট হতে থাকে। শতাব্দীর শেষ দশকে লক্ষণগুলো আরো বেশী উজ্জ্বল, আরো বেশী ধারালো। উত্তরাধুনিকেরা অস্বীকার করেন আধুনিকতার রেখাঙ্কিত পথে চলতে। তাই তাদের উপমা উঠে আসে উৎপেক্ষার কাছাকাছি। কবিতা হয়ে পড়ে আরো বেশী শব্দ নির্ভর। পরিবর্তন হয় আঙ্গিকের।”
সহজ কথায় বুঝি যে বাংলা কবিতা এখন একটু ভিন্ন ভাবে লেখা হচ্ছে। এই ভিন্নতাই উত্তরাধুনিকতা। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেমন ল্যান্ডফোন থেকে সেলফোন, টাইপরাইটার থেকে কম্পিউটার, এবং ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি; কবিতার ক্ষেত্রেও তেমনি একটি ভাষাগত, উপমানির্মাণের কৌশলগত, শব্দব্যবহারের চিন্তাগত একটি পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এটি কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে উপলদ্ধির ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের রোমান্টিক কবিতার থেকে জীবনানন্দ দাশ বা বুদ্ধদেব বসুর আধুনিক কবিতা আলাদা; তিরিশের কবিতারও যে অংশটি রোমান্টিকতা ঘেঁষা ভাষা বিন্যাসে জড়িয়ে ছিলো তাও মুক্ত করে দেন পঞ্চাশের শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী। আবার পঞ্চাশের কবিতা থেকে বায়তুল্লাহ কাদেরী, রহমান হেনরী, টোকন ঠাকুর প্রমুখ কবিরা আলাদা কবিতা লেখেন। এই নতুন কবিতার নামই ‘উত্তরাধুনিক কবিতা’। উত্তরাধুনিক শব্দটি কিন্তু ‘আধুনিক উত্তর’ নয়। এটি একটি কালখণ্ডের কবিতার নাম।
তবে আপনাদের প্রশ্নগুলো কিন্তু একেবারেই ‘বোকা বোকা’ নয়। আপাত ভাবে সহজ হলেও এ সবের উত্তর বেশ জটিল; নিরূপণ করা হবে কালখণ্ডের ধারাবাহিকতায়। একজন কবির থেকে একজন তাত্ত্বিকই এগুলোর ভালো জবাব দিতে পারবেন। এখানে বরং আমার উত্তরগুলোকে ‘বোকা বোকা’ মনে করার কারণ রয়েছে।
@অভিজিৎ, পোস্টমডার্নিজম নিয়ে যতটুকু যা জানি, আমারও সেকারণেই ‘উত্তরাধুনিক কবিতা’ নিয়ে জানার কৌতূহল প্রবল!
হাসান আল আব্দুল্লাহ তোমার মন্তব্যের উত্তরে যেটা বললেন –
তাতে আমি খানিকটা কনফিউজড! উত্তরাধুনিক কবিতা সম্পর্কে কিছুই জানি না, কিন্তু উত্তরাধুনিক যে স্কুল অফ থট, সেটা কিন্তু খুব
স্পষ্ট করেই আধুনিক উত্তর! মডার্নিজম নামক প্যারাডাইমটাকে চ্যালেঞ্জ করে, একটা বিকল্প, সাবঅলটার্ন চিন্তার ক্ষেত্র তৈরী করতেই এটার আবির্ভাব। এই ‘আধুনিক উত্তর’ মতাদর্শ যদি নাইই মানা হবে, তাহলে সেক্ষেত্রে এদের উত্তরাধুনিক কবিতা কেন বলা হচ্ছে?
হাসানআল আব্দুল্লাহ – আপনি এ ব্যাপারে কিছু বললে ভালো হতো 🙂
আমার কিছু বোকা বোকা প্রশ্ন ছিল। আশা করি রাগ না করে কেউ একজন এর উত্তরগুলো দেবেন।
১। উত্তরাধুনিক কবিতা কী?
২। এর বৈশিষ্ট্যগুলো কী? আধুনিক কবিতার সাথে এর পার্থক্য কোথায়? কীভাবে বুঝবো কোনটা আধুনিক কবিতা আর কোনটা উত্তরাধুনিক কবিতা? সীমারেখাটা কোথায়?
৩। কোন কারণে বা আধুনিক কবিতার কোন ব্যার্থতার জন্য এর জন্ম?
৪। কবে থেকে এই ধারার শুরু পাশ্চাত্যে এবং প্রাচ্যে? বাংলাতেই বা কবে থেকে উত্তরাধুনিক কবিতা লেখা হচ্ছে?
৫। এর পরের ধাপ কী হবে? উত্তর উত্তরাধুনিক কবিতা?
৬। বাংলা উত্তরাধুনিক কবিতা শুরু করেছেন কারা? কারা এর দিকপাল?
৭। উত্তরাধুনিক কবিতার প্রতি পাঠকের প্রতিক্রিয়া কী? পাঠক কীভাবে নিয়েছে এই কবিতাকে?
৮। এই কবিতা কি দুর্বোধ্য? কোন বিশেষ ধরনের দর্শন কী এর সাথে জড়িত? বোঝার জন্য পাঠককে কী বিশেষভাবে প্রস্তুত হতে হয়? রহমান হেনরীর কবিতা দু’টোর কিছুই আমি বুঝলাম না। এটা কী আমার সীমাবদ্ধতা? নাকি আসলেই কবিতা দুটো দুর্বোধ্য? আমি রবীন্দ্রনাথ বুঝি, নজরুল বুঝি, জীবনানন্দ বুঝি, শামসুর রাহমান বুঝি, আবুল হাসান বুঝি, রুদ্র বুঝি, অচিন্ত্য সেনগুপ্ত বুঝি, শক্তি বুঝি, সুভাষ বুঝি, সুনীল বুঝি, নির্মলেন্দু গুণ বুঝি, এমনকি মাইকেল পর্যন্ত বুঝি, কিন্তু এই কবিতা দু’টো সত্যিই আমি বুঝি নাই।
৯। যদি সত্যি সত্যিই দুর্বোধ্য হয়, তবে কথা হচ্ছে এত দুর্বোধ্য কবিতা লেখার উদ্দেশ্য কী? এরকম দুর্বোধ্য কবিতাতো দ্বিতীয়বার পাঠক আর পড়তে চাইবে না।
১০। নাকি পাঠক এখানে গৌণ? কবি কবিতা লিখেই খালাস। পাঠককেই নিজ দায়িত্বে বুঝে নিতে হবে তার কবিতা?
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে এই পুরষ্কার নিয়ে। পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা দেখে কবিদের নমিনেশন দেয়া হয় বলছেন। কোন কোন পত্রিকাকে আপনারা বিবেচনায় আনেন এ ব্যাপারে? নাকি পত্রিকা বলতে শুধু শব্দগুচ্ছকে বোঝাচ্ছেন?
উত্তরাধুনিক কবিতা নিয়ে একটি প্রবন্ধ কী লেখা যায় যাতে করে আমরা সহজে বুঝতে পারি যে এই কবিতাগুলো কী জিনিষ?
আর ও হ্যাঁ। শব্দগুচ্ছ উত্তরাধুনিক কবিতা পুরষ্কার পাবার জন্য রহমান হেনরীর জন্য রইলো অফুরন্ত শুভেচ্ছা। :rose2:
প্রিয় ফরিদ আহমেদ,
আপনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন এবং নানা লেখক নানা ভাবে ইতিপূর্বে এর উত্তরও দিয়েছেন।পশ্চিমে লয়টার, ইহাব হাসান, এ্যাডওয়ার্ড সাঈদ প্রমুখ এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি করেছেন। পুবেও যে কম হয়েছে তা নয়। যেমন রুদ্র কিংশুক, ইজাজ ইউসুফী প্রমুখ লেখকের গদ্যের বই এবং কলকতা থেকে প্রকাশিত ‘পোস্টমডার্ন বাংলা কবিতা’ নামে প্রভাত চৌধুরী ও নিতাই জানা সম্পাদিত পৃথক দু’টি কবিতা সংকলন; যদিও এই সংকলনে বাংলাদেশ অনুপস্থিত। আবার যেহেতু সংকলকদ্বয় ও লেখকদের সাথে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমি নিজে একমত নই; তাই বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি আমার নিজের লেখা ‘কবিতার জন্মদাগ’ (মাওলা, ২০০৮) গ্রন্থখানার দু’টি প্রবন্ধ ‘উত্তরাধুনিক কবিতা: প্রচ্ছদে দুইবাংলা’ ও ‘আমাদের উত্তরাধুনিকতা’ দেখে নিতে। সম্ভবত আপনার অধিকাংশ প্রশ্নের জবাব ওখানে পাওয়া যাবে। তবে ‘এর পরের ধাপ কী হবে? উত্তর উত্তরাধুনিক কবিতা?’ এই প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই যেমন রোমান্টিক কবিরা ‘আধুনিক’ কবিতার কিম্বা আধুনিক কবিরা জানতেন না ‘উত্তরাধুনিক’ কবিতার কথা।
‘পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতা দেখে কবিদের নমিনেশন দেয়া হয় বলছেন। কোন কোন পত্রিকাকে আপনারা বিবেচনায় আনেন এ ব্যাপারে? নাকি পত্রিকা বলতে শুধু শব্দগুচ্ছকে বোঝাচ্ছেন?’ –শব্দগুচ্ছ পুরস্কারের জন্যে কেবল ‘শব্দগুচ্ছ’ পত্রিকায় প্রকাশিত কবিদের বিবেচনা করা হয়। এ বছরের নামিনেশন প্রসেস নিন্মরূপ ছিলো: (শব্দগুচ্ছ ওয়েব সাইট থেকে হুবহু তুলে দেয়া হলো)
Every alternative year, the Shabdaguchha Poetry Award is announced. Prior to the announcement of the award, five nominees will be selected. This is the first time, Shabdaguchha is requesting for open nominations. Anyone can nominate up to three poets published in Shabdaguchha for the last two years.
Nomination Process
Nominate up to three poets published in Shabdaguchha from January 2007 to January 2009.
Poets should be nominated from the following issues: Issue no 35/36 (double issue), Issue no. 37, Issue no. 38, Issue no. 39, Issue no. 40 and Issue no. 41/42 (double issue).
No one is allowed to nominate his/her own name and the editor of the magazine.
Nominations will be accepted from January 1, 2009 to April 1, 2009.
a. Electronic nominations are preferable: E-mail
b. Otherwise, postal mail should be sent at: Shabdaguchha, 85-22 85th Street, Woodhaven, NY 11421, USA
Only five nominees (the ones appear the most) will be announced on April 14, 2009 as the nominees of the 2009 Shabdaguchha Poetry Award.
The winner will be announced on December 16, 2009
The winner will receive $200 and a crest from Shabdaguchha.
আপনাকে ধন্যবাদ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
@rahman henry,
মুক্তমনার পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের সাইটে নিয়মিত লিখতে পারেন। ভবিষ্যতে এখানে আপনার অংশগ্রহণ কামনা করছি।
Thank yOu Hassanal !
অনেক অনেক ধন্যবাদ !
প্রিয় মাহবুব সাঈদ মামুন ও সাইফুল ইসলাম, আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। রহমান হেনরীর দু’টি কবিতা যা শব্দগুচ্ছ পত্রিকায় প্রকাশিত এবং ইতিপূর্বে মুক্তমনায় পোস্ট করা হয়েছিলো এখানে আবারো তুলে দিচ্ছি। তাছাড়া shabdaguchha.com ওয়েবসাইটেও এই কবির দু’চারটি কবিতা পাওয়া যাবে।
———————————
রহমান হেনরী/Rahman Henry
গাঢ়, ব্যক্তিগত
রূপসীর নির্ধারিত বয়স থাকে না; শুধু তার ত্বকের লাবণ্য ফুঁড়ে
ছুটে আসে হীরকদ্যুতির বিচ্ছুরণ—আমাদের ব্যক্তিগত চোখে; আর থাকে
অসম্ভব নির্লিপ্ত ভঙ্গিমা তার চোখের মণিতে—তাকে এক সহজাত
অহমিকা ভেবে, যন্ত্রণায়—নিরিবিলি বিষন্নতা—নষ্ট হলো অনেক
কবিতামগ্ন স্বপ্নপ্রহর; নষ্ট হলো কবিতার দিন। জীবিতের সাথে
বহু গল্প হলো মৃতদের নিয়ে—গামর ধানের ক্ষেতে কতো কতো
ব্যাঙডাকা ভোর—প্রাথমিক বিদ্যালয় পার হলে নিয়মিত আখবন,
তারপাশে সারিসারি অই তো কবর! কবরে কবরে জাগে ঘাস—
কবরে কবরে জাগে জীবনের স্মৃতি…এইসব মিহিকথা, কোনও দিনও
রূপসীর কানে কানে বলাই হলো না—শুধু তার ত্বকের লাবণ্য থেকে
ঠিকরে বেরিয়ে এলো বিদ্যুতের লোভ বিচ্ছুরণ; আর আমাদের
শহরে স্থাপিত এই গ্রামময় চোখগুলো—হারালো সাবেক মসৃণতা—
রূপসীর বাস্তবিকই বয়স থাকে না; ফলে, বয়স ও গঠনশৈলিভেদ
নির্লিপ্ত মার্বেল চোখে হেঁটে গেল সারিবদ্ধ, কবরের পাশ দিয়ে
মুখর সন্ধ্যায়; জীবনের গল্প তাতে দীর্ঘ হলো, সমগ্রতা পেল—
শুধু এক ব্যক্তিগত কবরের পাশে আজও শ্বেতকাঞ্চনের গাছ;
ফুটে থাকা নৈঃশব্দ্যে—গাঢ় হলো অন্তর্গত অশ্রুর আওয়াজ—
বখতিয়ারের ঘোড়ার খুরের শব্দে
দীর্ঘ ঘুমের পর—ঘোড়ার খুরের শব্দে কেঁপে উঠছে
চল্লিশেই পরাজিত পুরনো কবর; কেঁপে উঠছে ঘুমন্ত শিশুরা—
সকালে, দুপুরে, রাত্রিকালে—ভেঙে যাচ্ছে পাখিদের
নিভৃত সংসার…ঘুঘুদের, বুলবুলির, ডাহুকের গ্রামে
লেপ্টে যাচ্ছে খাখা শূন্যতার মোম—ঘোড়ার খুরের শব্দে স্বপ্নবনে
অজন্মার গ্রাস; শব্দশাসিত ঢেউয়ে, রেশন-বাতাসে, এহেন শরতে—
শাপলা-ফোটার দিন নিখোঁজ সংবাদে সমাহিত; অথচ
আশ্চর্য কথা! দাপানো ঘোটকদৃশ্য শিশুদের প্রিয় অভিলাষ—
তারা অই বহুবর্ণ ঘোড়ার কেশর ছুঁয়ে বড় হতে চায়;
একদিন নিজেরাও বর্ণিল ঘোড়া হতে চায়—ফুটন্ত যৌবনে—
ঘোড়া এলো—পঞ্চম বারের মতো; আস্তাবল ফেলে—
এতো ঘোড়া কোথা থেকে আসে? ঘোড়ার খুরের শব্দে
মৃতদের নিদ্রাভঙ্গ হলে—অনিচ্ছায়, আড়মোড়া ভেঙে—
চল্লিশের পুরনো কবর ভাবে—এই কথা; পাখিরাও ভাবে—
রাজাদের এতো এতো ঘোড়া? নাকি অই ঘোড়ারাই রাজা?
@ প্রিয় হাসানআল আব্দুল্লাহ,
আগে কবিতা ২টি পড়া হয় নি,এখন পড়লাম।এক কথায় গুনমুগ্ধকর উচ্চমার্গীয়।
“রূপসীর বাস্তবিকই বয়স থাকে না; ফলে, বয়স ও গঠনশৈলিভেদ
নির্লিপ্ত মার্বেল চোখে হেঁটে গেল সারিবদ্ধ, কবরের পাশ দিয়ে
মুখর সন্ধ্যায়; জীবনের গল্প তাতে দীর্ঘ হলো, সমগ্রতা পেল—— :rose2: :rose2: :rose2: :rose2: :rose2:
শব্দগুচ্ছ কবিতা পত্রিকা কর্তৃকপক্ষকে অনেক ধন্যবাদ বিজয় দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশের উত্তরাধুনিক কবি রহমান হেনরীকে পুরস্কার প্রদান করার জন্য।
হাসানআল আব্দুল্লাহ,কবির কি কবিতার কোনো লিংক মুক্ত-মনায় প্রকাশ করা যায় না ?
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ রলো।
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
মামুন ভাইয়ের সাথে সম্পুর্ন একমত। :yes: