মার্চের মাঝামাঝি দেশে যাবার প্ল্যান করছিলাম। দেশে যাওয়া মানে গুচ্ছের কেনাকাটা, কার জন্যে কি কিনবো; কার আবার কোনটা পছন্দ হবে না সেই নিয়ে চিন্তা! কাজের বাইরে সারাটা সময়ই বাজারঘাটে কাটিয়ে দেই। ক্লান্ত লাগে, আবার আনন্দেও মন ভরে থাকে। অন্যদিকে খেয়াল করার সময় পাওয়া যায় না।
এরকম এক সকালে বাড়ি থেকে বেরুবো, হঠাৎ করে পাশের ঘরে গোঙানীর মতন তীব্র আওয়াজ কিছুক্ষণ, তার পরে ধাম করে কোনকিছুর পতনের শব্দ! আমি বলি,’কি হলো, যাবো নাকি, দেখে আসবো নাকি?’ আমার বর বলে,’তোমার দরকার কি উটকো উপযাজক হয়ে খবর নেবার?’ আমি চুপ করে থাকি। পরের দিনও ওই একই ব্যপার। আমি তার কথায় কান না দিয়ে তাসনিমের ঘরের বেল বাজাই। বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। কেউ দরজা খোলে না। দরজায় ধাক্কা দিই এবার কি মনে করে। দরজা খোলা, দরজার পাশে রান্না ঘরের সিঙ্কের সামনে মেঝেতে শুয়ে আছেন ভদ্রমহিলা। কাছে গিয়ে বোঝা গেল জ্ঞান নেই। ঘরে আর কাউকে খুঁজে না পাওয়া গেলে আমরা সুপারকে ফোন করে ডাকি, তিনজন মিলে হাসপাতালে নিয়ে যাই ওকে। পথেই জ্ঞান ফেরে তাসনিমের। কিছুটা লজ্জিত ভঙ্গীতে ফিসফিস করে আমায় বলে,’আমার আসলে কিছু হয়নি, বাসায় নিয়ে চল ।’ কিন্তু এম্বুলেন্সের লোকজন তা শুনবে কেন, হাসপাতালে যেতে হয়। আমরা হাসপাতালের ইনফর্মেশানে বসে শুনি যে ভয়ের কিছু নেই, সে প্রেগন্যান্ট! অতিরিক্ত পরিমান মর্নিং সিকনেসের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
বাসায় এসে আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম, কি খেলে বমি হবে না বলে মনে হয়, তাসনিম?’ খুবই সংকোচিত হয়ে বলে,’ ঋণ বাড়াতে ভাল লাগে না, তবে মনে হয় স্যুপ জাতীয় কিছু খেলে বমি হবে না।’ আমি সিদ্দিকা কবীরের বই দেখে দেখে যথাসাধ্য স্যুপ বানিয়ে আনি। তাসনিমের স্বামী তখন সেমিনারে আমেরিকায়, বাড়িতেও কেউ জানেনা। জানলেও আসা সম্ভব নয় এত অল্প নোটিশে। তাকে প্রচন্ড অসহায় দেখতে লাগে।
ঘরে ফিরলে আমার বর বলে,’যাও কাজকর্ম ফেলে রোগী সেবার দায়িত্ব নাও!’ ইচছা অনিচছার বাইরের একটি জানালা খুলে তাসনিমের সাথে আমার যাওয়া আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এক উৎফুল্ল বিকেলে সে আমায় নিজের বাড়ির কথা বলে। ও একটি মুক্তমনের মুসলিম পরিবারের মেয়ে। বাড়িতে মেয়েদের লেখাপড়ায় কখনো কোন বাঁধ ছিলো না। বরং, ওর দুই ভাই এর মতন সমান উৎসাহে ওকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যদিও পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়েছে তার। বিয়ের পরে যাতে পড়া বনধ না হয় তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়িতে গান বাজনাও অচ্ছুৎ ছিলো না। গজল শোনা হতো। একবার আবিদা খানম এসেছিলেন ওদের করাচীর বাসায়। আধুনিকতার সাথে ধর্ম পালনের যে কোন বিরোধ নেই সেটা ওর পরিবার দেখলেই বোঝা যাবে। আধুনিকতা মানে তো আর উশৃংখলতা হতে পারে না, ইত্যাদি! একসময় সে আমাকে বলেঃ
-তুমি আমার জন্যে যা করলে তা আপন বোনও করে না! কওমের মানুষ ছাড়া ভাবা যায় এই সাহায্য!
আমি বলি,’ যে কারো জন্য যে কারোরই সাহায্য করার সময় এটা। আজ আমি তোমার প্রতিবেশী না হয়ে একটি জাপানীজ, বা একজন নেপালী মেয়ে হলেও, আমার বিশ্বাস নিজের মত করে হেল্প করত।’
-তারপরও। পাকিস্তানে বাঙালীদের সবসময় আমরা গাদ্দার বলি, কেউ কেউ নিশ্চই গাদ্দার, তোমরা সেই দলে পড়না।
-তাসনিম, বাঙালীরা তো শখ করে যুদ্ধ করেনি তোমাদের সাথে, তোমরা চাপিয়ে দিয়েছো। তোমার কি ধারণা আছে কত
লক্ষ নির্দোষ বাঙালীকে খুন করেছে তোমাদের আর্মি?
-নির্দোষ বলছ? তারা ষড়যন্ত্রকারী ছিল, না হলে ছিল হিন্দু, কোন নির্দোষ মানুষকে পা-কিস্তানের মুসলমান আর্মি মারতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করিনা। ইসলাম এটা সমথন করে না।
-কেন,হিন্দু হলেই তাকে হত্যা করার অধিকার তোমাদের কে দিেচছে?
-হিন্দুরই তো আসল গাদ্দার! আমি ভাবতে থাকি, এই তিমিরে থাকা মানব প্রজাতিটিকে কি বলা মানায় আমার!
– ইসলাম কি কুমারী মেয়েকে গণধর্ষণ সমথন করে? আমি জানতে চাই। তাসনিম শূন্য চোখে তাকিয়ে বলে;
-যদি শত্রুপক্ষের মেয়ে হয় তাহলে হালাল…।
– তুমি কি জান কত নির্দোষ মেয়েকে তোমাদের আর্মি রেপ করেছে ৭১ এ?
-দু একটা ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, তার দায়িত্ব ব্যক্তি নেবে, আমি নিশ্চিৎ তাদের শাস্তি দিতে সরকার কার্পণ্য করেনি!
এবার আমার প্রচন্ড বিরক্ত লাগে। ভেতরের আমি কে চেপে রাখা দায় হয়ে যায়। আমি বলি, ‘তোমার অজ্ঞানতাকে আমি করুণা করি তাসনিম, যা জাননা তা জাননা বলে একটুও লজ্জাবোধ নেই তোমার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ্ব সম্পর্ক না জেনে
এরকম মন্তব্য করা তোমার অপরাধ!’
“মুসলমানদের জন্যে শত্রুপক্ষের নির্দোষ মেয়েদেরকে রেইপ করা হালাল”
আমার মতে, এটা শুধু অজ্ঞতা আর আবেগ নয়, এটা তাদের বিশ্বাস।
@ব্রাইট স্মাইল,
অবশ্যই। আর বিশ্বাসের ওপর নাম ঈমান। পাকিস্তানী মেয়েটি তার ঈমানী দায়ীত্ব থেকেই বলেছে- “মুসলমানদের জন্যে শত্রুপক্ষের নির্দোষ মেয়েদেরকে রেইপ করা হালাল” -আমার মনে হয়না ইসলাম কি কুমারী মেয়েকে গণধর্ষণ সমর্থন করে প্রবন্ধে উল্লেখিত প্রশ্নটি একজন বাংলাদেশী রাজাকারকে করলে, এর উত্তর ভিন্ন কিছু হতো। এই ঈমানী দায়ীত্ববোধ থেকেই, এমন গণহত্যা-গণধর্ষণ জেনেও কিছু মুসলিম রাস্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে রাজী ছিলনা।
@আকাশ মালিক,
এরকম একটি সুন্দর গল্পে ধর্মের আলচনা সমালচনা হোক সেটা লক্ষ্য ছিল না। আমার মন্তব্যে আবেগ আর অজ্ঞতা অন্য অর্থে বলেছি, ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতা পাকিস্তানিদের ক্ষেত্রে যেমন সত্য আমাদের ক্ষেত্রেও অনেকাংশে সত্য। এ থেকে পাকিস্তানীদের জন্য সংকুচিত মানচিত্র আর বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে মুস্লিম ভাতৃবোধ কাজ করে, শুধু মাদ্রাসার হুজুর নয়, খেলা থেকে নিয়ে অসংখ্য বিষয়ে এর প্রতিফলন দেখবেন, ভারতের পারমানবিক বোমাতে এ দেশের মানুষ তেমন খুশি হতে পারেনি যতটা না পাকিস্তানীদের ক্ষেত্রে হয়েছে।
আমার পুরো মাদ্রাসা জীবনে আমি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়িনি, স্কুলের কাউকে পড়াতে গিয়েও পক্ষপাত মুক্ত ও যুদ্ধের যে বোধ, যে চেতনা, তার প্রতিফলন কোন প্রবন্ধে চোখে পড়েনি, যদি থাকেও, শিক্ষকেরা সেটা তেমনভাবে পৌছে দিতে পারছে বলে আমার মনে হয়না, আর ইংলিশ মিডিয়ামে কিছু কি পড়ানো হয়? এরকম অজ্ঞতার কথাই বলেছিলাম।
স্বাধীনতার চেতনা ধর্ম নিরপেক্ষতা বনাম ধর্ম রক্ষায় আমরা বিভক্ত, অথচ দেশপ্রেম ও অন্যায়ের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হবার সুযোগটি দু পক্ষই এড়িয়ে যাচ্ছে আর জাতীকে বিভক্ত রেখে লুটে পুটে খাচ্ছে।
@আনাস,
আপনার লেখা চরম সত্য। এ দায় মুক্তিযুদ্ধের পরের বিভ্রান্ত সময়ের,এ দায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী মানুষদের, এ দায় একদিক থেকে বাংলার মাটিরও বটে- কারন সে যুদ্ধ পরবর্তি সময় হতে এখন পর্যন্ত কোন যোগ্য নেতা আমাদের দেয় নি, যে আমাদের দেশটাকে একটা লাইনে দাড়া করিয়ে দেবে। স্বাধীনতা যদি একটা মুক্ত ট্রেন ইঞ্জিন হয়,তবে নেতাকেই সেই ইঞ্জিনের লাইন তৈরি করে ইঞ্জিনকে লাইনে তুলে দিতে হবে।
যাই হোক, আমি চরম আশাবাদী। এই প্রজন্মের অবস্থা পূর্বের অন্য সময়ের চেয়ে কিছুটা ভালো। দেখা যাক প্রতি মুহুর্তের বর্তমান আমাদের কোন ভবিষ্যতে নিয়ে যায়।
বলতে চেয়েছিলাম, ঐ পাকিস্তানী মেয়েটি কেন বল্লো- মুসলমানদের জন্যে শত্রুপক্ষের নির্দোষ মেয়েদেরকে রেইপ করা হালাল, তা একটু ব্যাখ্যা করবো। মাঝপথে আনাস আর আদিল মাহমুদের দুটি মন্তব্যে বিষয়টা অন্যদিকে মোড় নিতে চলেছে। অজ্ঞতা আর আবেগ শব্দদ্বয়ের ব্যাখ্যা অনেক। যে আবেগের বশবর্তি হয়ে বাঙলাদেশের একজন মানুষ পাকিস্তান ভেঙ্গে যাওয়ায়, পারমানবিক বোমা তৈরি না করতে পারার জন্যে আক্ষেপ করে, আর একজন পাকিস্তানী মহিলা, নির্দোষ নারী ধর্ষণে উল্লাস প্রকাশ করে, তার মধ্যে অবশ্যই একটা বিনি সুতার বন্ধন, এক অদৃশ্য সম্পর্ক আছে। আমার মাদ্রাসার দশজন ওস্তাদের মধ্যে দশজনই রাজাকার ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমার সমবয়সী ছাত্র রাজাকারদেরকে প্রশ্ন করেছি এ ব্যাপারে। একটাই সুনির্দিষ্ট উত্তর ছিল- ইসলাম। এখানে অজ্ঞতা আনতে পারেণ সেটা ভিন্ন কথা, তবে এটাই ছিল বাস্তব সত্য। শত শত রাজাকারকে ব্যক্তিগত ভাবে চিনি, স্বাধীনতার এত বছর পরেও একটা রাজাকারকে বলতে শুনিনি যে, তাদের সিদ্ধান্ত ভুল বা অন্যায় ছিল। অথচ ইংল্যান্ডে একজন পাকিস্তানীকে পেয়েছি, যিনি পাকিস্তানের সেই সময়ের সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেণ এবং মনে প্রাণে বাংগালীদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেণ। উনি তখনকার সময়ে ইরানে পাকিস্থান দুতাবাসের একজন কর্মচারী ছিলেন। সুতরাং আমার ধারনা অজ্ঞতা আর আবেগ থেকে এরকম হতে পারে আনাসের এই কথার সাথে দ্বীমত পোষন করতে পারিনা। যারা পাকিস্থানের সাথে পুনরায় সখ্যতা গড়ে তোলতে চান, তারা মুক্তিযোদ্ধে পাকিস্থানের অপকর্মের অপরাধবোধ থেকে এ কথা বলেন না, বরং সেই ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে বলেন। বাংগালীরা তা কোনদিনই মেনে নেবেনা।
আচ্ছা,এই ব্লগে তো অনেক প্রবাসী ব্লগার আছেন(বলতে গেলে বেশিরভাগই) তাদের কাছে আমার প্রশ্ন,আমি বিদেশ ফেরত বা বেড়াতে আসা বেশ কয়েকজন প্রবাসী বাঙ্গালীদের থেকেই শুনেছি যে বিদেশে নাকি পাকিস্তানীদের বিশ্বাসঘাতক খেতাব রয়েছে? তারা নাকি খুব সহজেই বিশ্বাস নষ্ট করে? এরপরের সিরিয়ালে নাকি আরবরা? ব্যপারটা কতটুকু সত্য?
@তানভী,
অতটা মনে হয় না। তবে কিছুটা হলেও সত্যতা আছে।
প্রধান করান বিদেশীরা (ধরে নিচ্ছি বিদেশী মানে ইউরোপ, আমেরিকার পাশ্চাত্য বিশ্ব) আমাদের মত জাতি ধরে মানুষ বিচার করে না। তারা একটু ব্যক্তিগত সম্পর্ক না হলে কে পাকিস্তানী নাকি ভারতীয় এই জাতীয় প্রশ্ন করবে না।
তবে পাকিস্তানীদের অপরাধপ্রবন, দুই নম্বরীতে পাকা বলে কিছু খেতাব আছে। এফবিয়াই এর মোষ্ট ওয়ান্টেড লিষ্টে মাঝে মাঝেই তাদের দেখা যায়। এইগুলি ৯১১ এর আগে থেকেই ছিল। আগে শুনেছি পাকিস্তানী শুনলে কারো কারো বাড়ি ভাড়া পেতেও সমস্যা হয়েছে। এর সাথে ধর্মীয় উগ্রতার লিংক তো ৯১১ এর পর থেকেই ফুলে ফেপে উঠছে।
আরবদের আগে থেকেই বদ্ধমনা ও অনুদার হিসেবে কিছুটা বদনাম ছিল, এখনো আছে।
অনেকেই খারাপ ভাবতে পারেন আমাকে কিন্তু পাকিস্তানীদের সম্পর্কে উদার হওয়া আমার পক্ষে কখনোই সম্ভব হবেনা মনে হয়। আমার কাছে পাকিস্তানী মানেই উদ্ভট কিছু। তবে একটা ভিন্ন অভিঞ্জতাও আছে।
তিন দিনের জন্য আবুধাবীতে গিয়েছিলাম একটা কনফারেন্স এ। সেখানে পাকিস্তান, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশ সহ অনেক দেশের লোকজন আছে। ফারাজ উসমানী করাচির ছেলে। শুরু থেকেই দেখছি পাকিস্তানী এবং ইন্ডিয়ান প্রতিনিধিদ্বয় পরস্পরের সাথে একটা দূরত্ব বজায় রাখছে। কাজেই কাছাকাছি দেশ হিসাবে সে আমার সাথে ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করল।
অবধারিতভাবেই মুক্তিযুদ্ধের প্রসংগ এলো। ফারাজ বললো, তারা ছাত্র জীবনে এ ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেনি পাঠ্য পুস্তক থেকে। বরং উল্টোটা শুনেছে সরকারী প্রচার ব্যবস্থায়। কিন্তু ফারাজের এক চাচা ছিল তৎকালীন পাকিস্তানী আর্মিতে। উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পদত্যাগ করেছিলেন যুদ্ধ করতে অস্বীকার করে। ফলে তাকে অনেকভাবে হয়রানী ও সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ফারাজ বলছিল, এর কোন সমাধান হতে পারে কিনা? আমরা আবার স্বাভাবিক সম্পর্কে ফিরে যেতে পারি কিনা? এখনো আমরা সে সব মনে রেখেছি কিনা? আমি বললাম, অবশ্যই মনে রেখেছি এবং মনে হয়না এ ব্যাপারে কোন সমাধান হতে পারে।
@বকলম,
আমি কিছুটা দ্বি-মত পোষন করি। প্রথমতঃ; মানুষ তো মানুষই। সে পাকিস্তানী, ভারতীয় বা বাংলাদেশীই হোক। কাজেই আজকের যেকোন পাকিস্তানীকেই ৭১ এর পাক আর্মির পাল্লায় প্রথমেই মেপে ফেললে ভুল হবে। বিশেষ করে সেসব পাকিস্তানী যারা তাদের ভুল স্বীকার করেন তাদের তো কোনভাবেই দোষারপ করা যাবে না। এমন পাকিস্তানীও অনেক আছেন। কিছুদিন আগেই একটা ছবি দেখেছিলাম খোদ পাকিস্তানের রাজপথে কিছু মানবাধিরকার কর্মী মনে হয় ৭১ পাকিস্তানের ভুল স্বীকার করে প্ল্যাকার্ড ধরে আছেন।
আমরা ভুলে যাব তা কোনদিন হতে পারে না, ইতিহাস কি ভুলে যাওয়ার জিনিস নাকি ভোলার কোন অপশন থাকে? আমার মতে তাদের সাথে অবশ্যই সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে তবে তাদেরকে অত অবশ্যই তাদের ভুল স্বীকার করতে হবে, এটা প্রথম করতে হবে সরকারী পর্যায়ে।
একসাথে তিনটি পর্বই পড়ে নিলাম দিদি।
সত্যি করুণাই হয় ওদের প্রতি।
কি বিস্ময়কর ফাঁকা যুক্তি দাঁড় করায় ওরা।
@জুয়েইরিযাহ মউ,
ওরা যা বলে তা কি আসলেই যুক্তির পর্যায়ে পড়ে, মউ?
আদিল ভাই, আপনার কথায় একমত হতে পারলাম না, শুধু পাকিস্তানিরা ইন্টারেস্টিং তা না, আমরাও মনে হয় কিছুটা ইন্টারেস্টিং, স্বাধীনতা(!) আছে আমাদের, কিন্তু দেশপ্রেম?
আমার ধারনা অজ্ঞতা আর আবেগ থেকে এরকম হতে পারে, একটা ঘটনার কথা বলি, দাখিল পরীক্ষা দেয়ার সময় এক পরীক্ষার্থীর সাথে কথা হয়েছিল, তার অনেক আফসোস আজ যদি বাংলাদেশ না হত, তাহলে আমরাও পারমানবিক বোমার অধিকারী হতাম। সে আমাকে বলেছিল যে বাংলাদেশ আর পাকিস্তান দুই ভাই এর মতন ছিল, বড় ভাই এর সাথে ঝগড়া হলে আলাদা হয়ে যাওয়া কি ভাল! আমি তাকে বলেছিলাম পাকিস্তানীরা তখন অনেক অন্যায় করেছিল আমাদের সাথে, এবং যুদ্ধের সময় তারা যা করেছে তা কেউ ছোট ভাই এর সাথে করতে পারে না। তার উত্তর ছিল সব নাকি প্রপাগান্ডা! তার আত্মীয়রা নাকি ভাল-ই ছিল। আবার অনেকে উদাহরণ দিত যে এদেশের কোন অংশ যদি আলাদা হয়ে যায়, তখন আমাদের কাছে যেমন লাগবে তারা অনেকটা এই কারনে আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ে। যাই হোক, অমন মানসিকতা দেখে তার সাথে কথা বলার ইচ্ছা হয়নি আর, শুধু বলেছিলাম আমি ছোট ভাই হতে যাব কেন? সে বলেছিল আচ্ছা ঠিক আছে জমজ ভাই!
@anas,
আপনার কথা এক অর্থে ঠিক। প্রতিটা জাতিরই কিছু নিজস্ব ইউনিকনেস থাকে, তাতে দোষের কিছুই নেই। সেতাই তো জাতিস্বত্ত্বার ধারক বাহক। সে হিসেবে প্রতিটাই জাতিই ইন্টারেষ্টিং।
আমাদের বাঙ্গালীদের খারাপ কিছুই নেই, সবই ভাল এহেন দাবীও হবে অত্যন্ত মিথ্যা। নাহলে আর আমরা এতগুলি উচ্চ শিক্ষিত বাঙ্গালী দেশের বাইরে বসে আর গলাবাজি করি কেন?
আপনার সেই দাখিল পরীক্ষার্থীর সাথে এর সম্পর্ক নেই। ওটা অন্য কেস। তার হয়ত জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশে হয়েছে কিন্তু বেচারার মনপ্রান পড়ে আছে “মুসলিম” পাকিস্তানে। । পারমানবিক বোমার মালিক হবার কি স্বার্থকতা? তা আমার প্রতিদিনের কোন কাজে আসছে? পাকিস্তানের দরিদ্র মানুষ পারমানবিক বোমা ভেঙ্গে দুধমধু খাচ্ছে?
অমন বেকুবী কথাবার্তা আমি আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ লোকজনের থেকে ছোট থেকেই শুনে বড় হয়েছি। পাকিস্তান আমল নাকি কত ভাল ছিল। ৮৪ সালে একবার ট্রেনে যাচ্ছিলাম, আমাদের স্বাভাবমত একজন সহযাত্রী সেদিনের এই নীরিহ বালককে ইতিহাসের জ্ঞান দেওয়া শুরু করলেন। ঘটনার শুরু বাংলাদেশের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যাবস্থা নিয়ে। পাকিস্তান আমলে নাকি চট্টগ্রাম থেকে করাচী মাত্র ৪৯ টাকায় জাহাজে যাওয়া যেত। তার উজ্জ্বল চোখমুখ এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে, সাথে “Including All Food”.
এনারা সেই ৬০ দশকের পাকিস্তানেই পড়ে আছেন, আজকের পাকিস্তানের খবর রাখেন না। বাংলাদেশ পাকিস্তানের থেকে গরীব হলেও কেউ পাকিস্তানের মত বিপদজনক বা ব্যার্থ রাষ্ট্রের তালিকায় রাখে না। পাকিস্তানকে রাখে। বিশ্ব সন্ত্রাসের ধারক বাহক হিসেবেও কেউ আমাদের গালি দেয় না, ওদের দেয়। আমার তো আল্লাহর কাছে হাজার শোকর করা উচিত মনে হয় যে পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমন করতে হয় না।
@আদিল মাহমুদ,
আমার এক পাঁড় ধার্মিক বন্ধু(কিন্তু আগে থেকেই উন্মুক্ত মানসিকতার অধিকারী।গনিত অলিম্পিয়াডে দুবার সেরাদের সেরা।) আগে রেগুলার জামাতে নামাজ পড়ত,রেগুলার হুজুরের ওয়াজ শুনতো,এমনকি মসজিদে সে এত রেগুলার ছিল যে মসজিদে নতুন কেউ আসলে বা পুরান কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাও তার চোখ এড়াতো না। কিন্তু তার উন্মুক্ত মন তাকে চিন্তা করাতে শেখালো, সে ধর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজে নিজে চিন্তা করতে থাকল। ফলাফল সে এখন পরিপূর্ন নাস্তিক!! (আমরা অনেকেই তো বই পড়ে,বা ইন্টারনেট ঘেটে বিভিন্ন বিষয়ে মাথায় গুঁতো খাবার পরে নাস্তিক হয়েছি, সে নিজে থেকেই পাঁড় ধার্মিক থেকে সরাসরি নাস্তিক!!)
আসল ব্যপার সেটা না, আসল ব্যপার হল যে সে একদিন আমাকে তার এই নাস্তিক হবার ঘটনা রাস্তা দিয়ে হেটে যেতে যেতে বলছিল।আমি তাকে বললাম যে সে আমাকে বলেছে তাতে অসুবিধা নেই,কিন্তু অন্য কাউকে বলার সময়ে যেন মানুষ বুঝে তারপর বলে, নাহলে হয়তো তার বিপদ হতে পারে( সে এম্নিতেই ইক্টু গোঁয়াড় গোবিন্দ টাইপের,সহজে কাউকে ভয় পায় না)। আমি ঐ কথা বলার পর সে বলল “আমাদের দেশের মানুষ এখনো এত উগ্র হয়নি যে তাদের এসব বলতে ভয় পেতে হবে। ভাগ্য ভালো যে আমরা পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে পেরেছিলাম নাহলে আমাদের দেশের মানুষের অবস্থাও ঐ পাকিস্তানিদের মত হত যারা এখন শুধু সভ্যতার নিচের দিকেই নামছে।”
তারপর আমি আবারো আশাবাদী হলাম!!
@তানভী,
ম্নে হচ্ছে একসময় আমিও আপনার বন্ধুর মতই ছিলাম, তবে হুজুর বুজুর্গ লোকের ওয়াজ শুনতে যেতাম না কখনোই।
পাকিস্তানে আসলে বেশ কয়েকতা খারাপ উপাদানের চমতকার সন্নিবেশ হয়েছে বলেই সমস্যা এতটা প্রকট। আমারা সেদিক থেকে অনেক ভাগ্যবান। আর সংস্কৃতিগতভাবে আমাদের বেশ কিছু সুবিধে আছে যা একটা বড় কারন।
@anas,
এদের মতন মানুষ আমাদের দেশে অপ্রতুল নয়!
এজন্যই সৈকত ভাইকে বলেছিলাম যে পাকিস্তানীদের সাথে এ ধরনের কথাবার্তা বেশীক্ষন চালানো যায় না।
পরিনতি হতে পারে ভয়াবহ। 🙂
জাতি হিসেবে কারো সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক না, তবে পাকিস্তানীরা খুবই ইন্টারেষ্টিং জাতি বলতেই হবে।
আমি শুধু একটা কথাই বলি; “এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা করো, এরা না বুঝে……..”
@আদিল মাহমুদ,
“আমি শুধু একটা কথাই বলি; “এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা করো, এরা না বুঝে……..” ”
আমিও!
@মণিকা রশিদ, আমিও তাই বলি
@মণিকা রশিদ/তানবীরা,
মুশকিল হল আমাদের প্রার্থনায় তেমন কাজ হচ্ছে এখনো তার তেমন কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।