কমিনিউজম নিয়ে কমিনিউস্ট এবং এন্টি-কমিনিউস্টদের ভুল ধারনা সর্ববিদিত। নানান ফোরামেই আমরা বাঙালী কমিনিউস্টদের দেখা পাব যাদের অধিকাংশের পড়াশোনা বেশ সীমিত। আবার যারা কমিনিউস্টদের গালাগাল দেন, তাদের লেখাপড়া আরো বেশী সীমাবদ্ধ। তাই বাঙালী কমিনিউস্ট এবং তার বিরোধিদের ভুল ধারনার একটা তথ্য তালিকা তৈরী করলাম। ভুল ধারনার জন্মসূত্র অবশ্যই কমিনিউজম নিয়ে বলশেভিকদের ভুল প্রচার। লেনিনিজম কত ভ্রান্ত, সেটা বুঝতে মার্ক্সের প্রতিটা লেখা বুঝতে হবে এবং তার সাথে ১৯০০-১৯৫০ সালের মধ্যে আমেরিকান এবং বৃটিশ বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে লেনিনবাদ বনাম মার্ক্সবাদ নিয়ে যে বিস্তর গবেশণা হয়েছে, সেগুলি দেখা দরকার। সোভিয়েতের পতনের সাথে সাথে, রাশিয়ান ঐতিহাসিকরা স্বাধীনতা পেয়েছেন এবং আরো অনেক নথিপত্র তাদের হাতে এসেছে-যার ভিত্তিতে বলশেভিক বিপ্লবের ইতিহাস ও রাশিয়াতে নতুন করে লিখতে হচ্ছে। ১৯৫০ সালের পর এবং অধুনা কম্প্যুটার সিম্যুলেশনের উন্নতিতে স্যোশাল ফিল্ড থিওরী, সোশাল থার্মোডাইনামিক্স, ইত্যাদি নব নব সমাজবিজ্ঞানের গবেষনায় এবং গবেষনায় নতুন নতুন পদ্ধতির আবিষ্কারে, সামাজিক বিবর্তন আরো ভাল ভাবে বোঝার চেষ্টা চলছে। পরিশেষে ডারুইনিয়ান ঐতিহাসিক বস্তুবাদ বলে সমাজ বিজ্ঞানে একটি নতুন শাখার জন্মে হয়েছে যা মার্ক্সীয় ঐতিহাসিক বস্তুবাদকে প্রতিস্থাপিত করতে উৎসাহী। এতকিছু লেখা একটা ব্লগে সম্ভব না। এই ব্লগ শুধু একটা সংক্ষিপ্ত সামারী।
(১) কমিনিউজম, মার্ক্সিজম, লেনিনিজম, সমাজতন্ত্র সব এক। বাস্তব হচ্ছে, এদের মধ্যে পার্থক্য- আপেল বলাম ওরেঞ্জ। কমিনিউজম বলতে আমরা মূলত লেনিনিস্ট কমিনিউজমকে বুঝি কিন্তু ধর্মীয় কমিনিউজমের অস্তিত্ব বিংশ শতকে বিস্তর ছিল। আমেরিকা আইন করে তাদের বন্ধ করে। নানান ধর্মীয় আন্দোলন মানুষকে কমিউন করে থাকতে উৎসাহিত করেছে। বাস্তবে এগুলি সবই ধণতন্ত্র যে ভাবে মানুষের মধ্যে ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদকে প্রশয় দিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদি আন্দোলন।
(২) বস্তুবাদি সমাজতন্ত্র বনাম আদর্শবাদি সমাজতন্ত্রঃ মার্ক্স যদিও এই ভাবেই ভাগ করতেন-আদতে মার্ক্সিস্ট সমাজতন্ত্রও সেই হিন্দু বা ইসলামিক সমাজতন্ত্রের মতনই গাড্ডায় আছে। দায়ী লেনিন। মোটামুটি ১৮৭০ সাল থেকেই মার্ক্সবাদ আস্তে আস্তে বৈজ্ঞানিক পথ ছেড়ে, আদর্শবাদি পথে সরে আসতে থাকে। সেই পতন তরান্বিত করেন লেনিন।
(৩) মার্ক্সিজম এবং সমাজতন্ত্র এক, মার্ক্সিজম মানেই কমিনিউজম ঃ বিজ্ঞানে নিউটনিস্ট বা আইনস্টানিস্ট হয় না। দুর্ভাগ্য বশত মার্ক্সিজমে হয়! মার্ক্সিজম আদৌ কোন আদর্শবাদকে নির্দেশ করে না। এটি আদি সমাজ বিজ্ঞানের পদ্ধতি-বা ঐতিহাসিক বিবর্তনকে বস্তুবাদ দিয়ে বোঝার চেষ্টা। কমিনিউজম সমাজের বিবর্তনের শেষ ধাপ। বস্তুত এটাই সত্য মার্ক্স কোন আদর্শবাদের নির্দেশ দিয়ে যান নি-দিয়ে গেছেন একটা পদ্ধতি। সেটাকেই ইসলাম বা খ্রীষ্টানদের মতন আদর্শবাদি তত্ত্বে পরিণত করেন লেনিন।
(৪) মার্ক্সিজমই একমাত্র বলে সমাজ বিবর্তনের শেষ ধাপ কমিনিউজম। ঠিক না। সমাজ বিজ্ঞানের যাবতীয় উল্লেখযোগ্য তত্ত্বই বলে সমাজ বিবর্তনের শেষ ধাপ কমিনিউজম। তবে লেনিনের মতন মারধোর চোট্টামি করে না। সোশ্যাল থার্মডাইনামিক্স বলে একটা সাবজেক্ট আছে। সেখানে যেখা যায়, সব সিস্টেম ক্যাওস কমিয়ে ক্রিষ্টালাইজ করতে থাকে-এবং মোটামুটি এটা নিশ্চিত কমিনিউজম মানব বিবর্তনের শেষ ধাপ। তবে এই সব কমিনিউস্টদের বিপ্লব করে কমিনিউজম আনার রোম্যান্টিসিজম বেঢপ ঢপবাজি। এগুলোর সাথে মোল্লাদের বিশুদ্ধ ইসলামিক রাষ্ট্রের ধারনার কোন পার্থক্য নেই। সমাজের যেভাবে বিবর্তন হচ্ছে, যেভাবে প্রযুক্তি এগোবে, তাতে স্যোশালিজম থেকে কমিনিউজম এমনিতেই আসবে।
বর্তমান পৃথিবীকে একটা আনস্টেবল স্টেট ধরা যেতে পারে-যখন জল থেকে বরফ হচ্ছে-কিছু কিছু বরফ খন্ড-তার মধ্যে মধ্যে জল। বরফ গুলোকে ধরা যেতে পারে স্টেট। তারপরে সেই স্টেট গুলো একসাথে জমাট বেঁধে সব বরফ হল-মানে রাষ্ট্রের পতন হল। পৃথিবীর যে সমস্যাগুলোর সমাধান না করলে, আমরা সবাই মারা যাব বা প্রযুক্তি লুপ্তহবে-তা একা কোন রাষ্ট্রের পক্ষে করা আর সম্ভব হচ্ছে না। রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বেশ দ্রুত লুপ্ত হবে।
যেটা আমাদের কমি বন্ধুরা বুঝতে চাইছে না-একদেশে কমিনিউজম বা সমাজতন্ত্রও করা সম্ভব না। সামান্য তাত্ত্বিক জ্ঞান থাকলেই বোঝা যায়।
বিপ্লব করেও কমিনিউজম আসবে না। কমিনিউজম আসবে শুধু মাত্র উন্নত, আরো অনেক অনেক উন্নত উৎপাদন শীল সমাজের মধ্যে দিয়ে। এই ধরনের নিম্ন উৎপাদনশীল সমাজে কমিনিউস্ট বিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা ব্যার্থ ত হবেই-শুধু শুধু অসংখ্য লোক মারা যাবে। অধিকতর উন্নত উৎপাদন শীলতার ডিমান্ডই উৎপাদনের ওপর শ্রমিকের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করবে-যা সফটঅয়ার বা অত্যাধুনিক টেলিকম বা বায়োটেক শিল্পে আস্তে আস্তে আসছে। এগুলো জ়োর করে লাঠি মেরে করতে গেলে, হিতে বিপরীত হবে। যা এদ্দিনে হয়েছে।
(৫) মার্ক্সই প্রথম শোষন এবং ধনের অসাম্যের বিরুদ্ধে সমাজতন্ত্রের কথা বলেন-ডাঁহা ভুল। সব ধর্মীয় আন্দোলনই ( ক্রীষ্ঠান, ইসলাম, বৈষ্ণব) একধরনের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন -শোষন এবং অসাম্যের বিরুদ্ধে। সেকালে বস্তুবাদ জানাছিল না। তাই ধনের অসাম্যের বিরুদ্ধে সব ধর্মীয় আন্দোলনই সোচ্চার হয়েছে। এই লেখাটা দেখা যেতে পারে।
(৬) মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদ এক-লেনিনবাদ মার্ক্সবাদের এক্সটেনশনঃ এটাও মস্ত ভুল বহুদিন ধরে বলশেভিকরা রটিয়ে আসছে। বাস্তব হচ্ছে লেনিনই মার্ক্সবাদের সর্বাধিক ক্ষতি করেছেন। বুঝে এবং না বুঝে। এই নিয়ে অনেক লেখা আছে। লেনিনের কাছে মার্ক্সের মুস্টিমেয় লেখা ছিল।কারন সেযুগে মার্ক্সের লেখা সহজলভ্য ছিল না। লেনিনঞ্ছিলেন জার্মানীতে-সেখানেও মার্ক্সের সব লেখা পাওয়া যেত না।
দ্বান্দিক বস্তুবাদের টেকনিকগুলো একটু রপ্ত করলেই দেখা যাবে, মার্ক্সের লেখায় ডায়ালেক্টিক্স প্রচুর-লেনিনের লেখায় তা অনুপস্থিত। এই সব কারনে মার্ক্স কমিনিউজম এবং কমিনিউস্ট বলতে ঠিক যা যা বলতে চেয়েছিলেন-তার সবটাই লেনিন ভুল ব্যাখ্যা করেছেন।
লেনিনিজম মার্ক্সিজম থেকে সম্পূর্ন আলাদা। ইসলামি সমাজতন্ত্রের সাথে মার্ক্সিজমের যতটা যোগসুত্র-লেনিনিজমের সাথে মার্ক্সিজমের যোগ ঠিক ততটাই। প্রায় অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয়-আন্তর্জাতিকতা, জাতীয়তাবাদ, পুঁজির বিবর্তন-ইত্যাদি নিয়ে মার্ক্স এবং লেনিনের ধারনা ১৮০ ডিগ্রি বিরোধি।
(৬) ১৯১৭ সালে রাশিয়াতে অক্টবর বিপ্লব সাধিত হয়! সত্য আসলে এটাই, নির্বাচনে সমাজতন্ত্রীদের কাছে হেরে, লেনিনের দলবল রেড আর্মি দিয়ে বিরোধিদের মেরে ধরে কনস্টিটুয়েন্ট এসেম্বলী ভেঙে দেন এবং এক দলীয় শাসন চালু করেন। শুধ তাই নয় এটাও রটানো হয়, রাশিয়া ছিল সেই সময় অনুন্নত কৃষিপ্রধান দেশ। বাস্তবে শিপ্লু উৎপাদনে সেই সময় রাশিয়া ছিল পঞ্চম-এবং দ্রুতহারে বাকি ইউরোপের সাথে তাল মিলিয়ে সেখানে শিল্পোন্নয়ন হচ্ছিল। বলশেভিকদের বেসও ছিল শ্রমিকদের মধ্যে, কৃষকদের মধ্যে না। বেসিক্যালি ওটা ছিল গনতন্ত্র ধ্বংশ করার বিপ্লব।
(৭) কমিনিউজমে সবাই খেতে পাবে-লক্ক্যনীয়-এখানে কমিনিজম বলতে আমি জোর করে চাপানো লেনিনিজম বলছি-যা ফ্যাসিজমের আরেকটা ভ্যারিয়েশন। বাস্তব এটাই পৃথিবীর সব থেকে বড় দুর্ভিক্ষ গুলি, লেনিনিস্ট কমিনিউস্ট জমানাগুলোতেই হয়েছে।
(৮) কমিনিজম এলে সবাই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা পাবে। এটা ঠিক। কিন্ত সেই সুরক্ষা মুসলোলিনীর ইটালি বা হিটলার ও দিত। আরো ভাল ভাবেই দিত। যেকোন ফ্যাসিস্ট এবং আইডিওলজ্যিক্যাল অটোক্রাটিক শাসকরা ( আদর্শবাদি স্বৈরাচারিরা- সবার কথা-আদিল আমিন বা এরশাদের কথা বলছি না) শিক্ষা ক্ষেত্রে সব থেকে ভাল কাজ করে। যেমন এখন ইরান করেছে। এর সাথে কমিনিউজমের যোগ নেই-ন্যাশানাল সোশ্যালিস্টরা [ এবং তাদের ভ্যারিয়ান্টরা ] সবাই এই কাজে সফল হয়েছে। কিন্ত ব্যাক্তি স্বাধীনতা বর্জন করে-এই ধরনের উন্নতি কাম্য না। জাপান বা যেকোন স্ক্যন্ডেনেভিয়ান দেশই ১০০% সাক্ষর বা শিক্ষার মান ওখানেও অনেক উঁচু-তাদের এই ধরনের স্বৈরাচারের সাহায্য নিতে হয় নি কিন্ত।
(৯) কমিনিউজম মানে অগনতান্ত্রিক স্বৈরাচার।
সঠিক বাক্য হবে লেনিনিজম মানে অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচার।
মার্ক্স কমিনিউজিম এর ব্যাখ্যায়, ডিক্টেটর অব প্রলেতারিয়েত মানে এক দলীয় শাসন হবে-গণতন্ত্র ধ্বংশ করতে হবে-বিরোধিদের শুলে চড়াতে হবে-এটা কোথাও বলেন নি।
ক্ষমতা দখলের জন্যে স্বৈরাচারী কমিনিউজমের সম্পূর্ন দায়ভার লেনিনের। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার ঢপবাজিও আর এক দলীয় স্বৈরতন্ত্র ও তার নিজস্ব আবিস্কার। বস্তুত মার্ক্সবাদ নামক দুধে যত জল ঢালা আছে, তার সব জলই এই মহান তাত্ত্বিক ধাপ্পাবাজটির।
(১০) পুজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর সাম্রাজ্যবাদ-এটি লেনিনিজম। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে মার্ক্স কখনো সাম্রাজ্যবাদ হিসাবে দেখেন নি-দেখেছেন সমাজ বিবর্তনের গুরুত্বপূর্ন ধাপ হিসাবে যাতে আন্তর্জাতিকতার শুরু হতে পারে। সাম্রাজ্যবাদ এই জন্যেই ধাপ্পাবাজি যে রাষ্ট্রের উৎপত্তির মধ্যেই এর বীজ রয়েছে-এবং আন্তর্জাতিকতা না এলে তা যাবে না-এবং সেই আন্তর্জাতিকতার আগমনের জন্যে আন্তর্জাতিক বানিজ্য হচ্ছে সর্বাধিক গুরত্বপূর্ন ক্যাটালিস্ট-যার মাধ্যমে পৃথিবীর সকল দেশের শ্রমজীবি মানুষ একত্রিত হওয়ার সুযোগ পাবে-কারন রাষ্ট্রের বাউন্ডারী শিথিল হবে।
সেখানে লেনিনের তত্ত্ব হচ্ছে আন্তর্জাতিক বানিজ্য হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদ । আর আন্তর্জাতিকতা হচ্ছে- সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর সকল শ্রমজীবি মানুষ একত্রিত হও! এটা হচ্ছে লেনিনিস্ট আন্তর্জাতিকতা-যা ঘোড়ার গু এবং গরুর গবর ছাড়া কিছু না। কেন না, রাষ্ট্রের সীমানা শিথিল না হলে, সমস্ত দেশের শ্রমজীবি মানুষ একত্রিত হতে পারে না-এসব তাত্বিক কল্পনা প্রসূত শ্লোগান। আন্তর্জাতিকতা নিয়ে মার্ক্সীয় ভাবনায় জল কম-কারন তা আমদের চোখের সামনে দেখছি-একবিংশ শতাব্দিতে। কিন্ত লেনিনিস্ট আন্তর্জাতিকতা-“সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক”- কোলকাতার লেনিন সরনির ব দ্ধ নর্দমার জল।
(১১) কমিনিউস্ট বিপ্লব এলেই নারী মুক্তি আসবে-নারী পুরুষ সমান হবেঃ
কমিনিউস্টরা দাবি করে, একমাত্র সমাজতন্ত্রের পথেই নারী মুক্তি সম্ভব-ধনতন্ত্রে তা সম্ভব না। বুর্জোয়া ফেমিনিজম শ্রেনী দ্বন্দের বিকৃত রূপ।
এবার আসুন আমরা আমাদের কমি বন্ধুদের ইতিহাস থেকে কিছু প্রশ্ন করিঃ
(১) কমিনিউজমের ইতিহাসে কোন দেশে-কোন কালে কোন মহিলা কি জেনারেল সেক্রেটারী হতে পেরেছেন?
(২) কমিনিউমের ইতিহাসে কোন গঠিত পলিটবুরোতে-কোন দিন কি পাঁচ জন মহিলা ( পলিটবুরোর ৩০%) থাকতে পেরেছেন ? ( ভারতের পলিটবুরোতে একমাত্র বৃন্দা কারাত আছেন। তাও তাকে রাখা হয়েছিল না। পলিটবুরোতে কেন মহিলা নেই, সেই নিয়ে তিনি কান্নাকাটি শুরু করলে তাকে শান্তনা পুরস্কার দেওয়া হয়)।
(৩) কমিনিউমের ইতিহাসে কোন সেন্ট্রাল কমিটিতে কোনদিন কি ২৫% এর বেশী মহিলা মেম্বার ছিল?
বন্ধুগন-সোভিয়েত, চিন, ভারত, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, কিউবা-সর্বত্র এই প্রশ্ন গুলি খুঁজতে থাকুন। দেখবেন-কমিনিউজম আসলেই পুরুষতন্ত্রের বস্তুবাদি রূপ। গোল্ডবার্গ তার বইতে ( Why Men Rule)যে লিখেছিলেন-যে রাজনৈতিক ক্ষমতা চিরকালই পুরুষের হাতে ছিল-কমিনিউজমে তার ব্যাতিক্রম হয় নি।
উপসংহারে কিছু বলা উচিত। কমিনিউস্ট এবং কমিনিউস্ট বিরোধিরা আসলেই না বুঝে একটা ভুল রাজ়নৈতিক দিশা দিচ্ছেন জনগনকে। জনগন বাঁচতে চাইছে-চাইছে তাদের সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। সেটা বাজার অর্থনীতি বা কমিনিউস্ট বিপ্লব দিয়ে হবে না -তা আমরা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি। বাজার অর্থনীতি যাও বা কিছুটা সফল-কমিনিউস্ট বিপ্লব সর্বত ভাবেই ব্যার্থ। দরকার নতুন রাজনৈতিক পথের। যা উৎপাদন ব্যাবস্থাকে আরো বেশী মজবুত করবে। এবং তা সম্ভব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ওপর রাষ্ট্রীয় এবং বেসরকারি বিনিয়োগ অনেক অনেক বেশী বৃদ্ধি করে।
আপনার এই “তত্ত্বটির” ভিত্তি ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রমাণ আছে কি? না থাকলে এমন সরলীকরণ এড়িয়ে যাওয়াই কি উচিত নয়?
@একজন নির্ধর্মী,
আমি একবার ‘মার্কসবাদ কি বিজ্ঞান?’ নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলাম। সমসাময়িক একটি বাংলা ব্লগে এটা দেওয়ার পর লেখাটি নিয়ে নানা ধরণের আলোচনা এবং তর্ক-বিতর্কের পরিবেশ তৈরী হয়। এমনি একটা পর্যায়ে আমার প্রবন্ধটি পড়ে সেসময় ’সংসারে এক সন্ন্যাসী’ নামে এক পছন্দের ব্লগার কতকগুলো মজার সোভিয়েত কৌতুক পরিবেশন করেছিলেন। কৌতুকগুলো এখানে তুলে দেয়ার লোভ সামলাতে পারছি না। 😉
০১.
– দর্শন, মার্কসীয় দর্শন এবং মার্কসীয়-লেনিনীয় দর্শন বলতে কী বোঝায়?
– দর্শন হলো অন্ধকার ঘরে বেড়াল ধরা। মার্কসীয় দর্শন হলো বেড়ালহীন অন্ধকার ঘরে বেড়াল ধরা। আর মার্কসীয়-লেনিনীয় দর্শনের বৈশিষ্ট্য হলো বেড়ালহীন অন্ধকার ঘরে বেড়াল ধরেছে বলে বেড়াল-শিকারীর সার্বক্ষণিক চিত্কার।
০২.
– মার্কসের কাছ থেকে জার্মানি কী পেয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে?
– পূর্ব জার্মানি পেয়েছে “কমিউনিস্ট পার্টির ইস্তেহার”, আর পশ্চিম জার্মানি পেয়েছে “ক্যাপিট্যাল”।
০৩.
– সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কী?
– সাধারণ চেয়ার আর বৈদ্যুতিক চেয়ারের মধ্যে যে-পার্থক্য।
০৪.
– কমিউনিস্ট আখ্যা দেয়া যায় কাকে?
– মার্কসবাদ-লেনিনবাদের ক্ল্যাসিকগুলো যে পড়ে।
– আর অ্যান্টি-কমিউনিস্ট কে?
– লেখাগুলো পড়ে যে বুঝতে পারে।
@অভিজিৎ,
পুজিবাদে মানুষ শোষণ করে মানুষকে আর সমাজতন্ত্রে ঘটে এর বিপরীত
বিপ্লব পাল,পদার্থ বিজ্ঞানের থার্মোডাইনামিক্স(তাপগতি বিদ্যা) সম্বন্ধে কিঞ্চিত জানা আছে।কিন্তু সোস্যাল থার্মোডাইনামিক্স(Social Thermodynamics) নতুন শুনলাম,ইহা কি জিনিস ভাই?
@al murshed,
এটি সমাজবিজ্ঞানের আধুনিক তম বিভাগ।
একটা পেপার দিচ্ছি-শুধু প্রথম দুটো পেজ পড়ে নিন।
বিপ্লব পাল,আপনার লেখাটি একটি লম্বা এপোলজির(Apology) মতো, একজন স্বপ্ন ভংগ হওয়া,কমিউনিষ্ট বা সমাজতন্ত্রীর -সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যা ছিল মুখ বাঁচানোর একটি কমন স্ট্র্যাটেজি।ব্রিটেনের লেবার পার্টির ডেডিকেটেড সমাজতন্ত্রী অংশের(যাদের এখোন খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর) একজনকে ”কমিউনিজমের পতন হোল কেন?”-এ প্রশ্ন করাতে সে ও এ ধরনের উত্তর দিয়ে বলেছিল যে,ওটা আসলে কমিউনিজম ছিল না ইত্যাদি ইত্যাদি।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন না হলে এ কথা এরা বলতেন কি না তাতে ঘোরতর সন্দেহ আছে।এও বাতাসের দিক বুঝে ছাতা ধরা নয় কি ?
@al murshed,
না। আমি মার্ক্সের লেখা পড়েই এসব সিদ্ধান্তে এসেছি।
আপনি সাইরিল স্মিথের লেখাও পড়ে নিন।
In the case of Karl Marx, the obstacles preventing us from appreciating his thought are reinforced with several extra protective layers. ‘Marxism’ is not just a doctrine, but a tradition, not just a set of theoretical notions, but the life activity of large numbers of people. These men and women have invested their entire lives in fighting for what they thought were the theories of Marx, convinced they were struggling for the emancipation of humanity from exploitation and oppression. Their theory was an attempt to give a coherent account of what was happening in the world, including their own activity. It is a very painful business for them to cut a path through the misconceptions on which they had based their efforts. Not surprisingly, many find it much easier to ditch the whole thing.
মূল সমস্যা হচ্ছে পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে মুক্তভাবে মার্ক্সের চর্চা কেও করে নি। ফলে, গারবেজের ওপর গারবেজ তৈরী হয়েছে।
সমাজ তন্ত্রের সংজ্ঞা হচ্ছে এক জন মানুষ সমাজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করবে এবং সমাজ থেকে তার ‘উপযুক্ত’ পারিশ্রামিক পাবে। কমিনিউজমের ক্ষেত্রে দ্বিতীয়টা হচ্ছে, সেই ব্যাক্তি, তার নিজের প্রয়োজন অনুযায়ি পারিশ্রামিক পাবে-কাজ অনুযায়ী না। আর প্রথম কথাটি ব্যাখ্যায় মার্ক্স বলেছেন, যদি, কোথাও রাস্তা কাটার জন্যে শ্রমিকের শর্টেজ হয়, তাহলে শিক্ষক বা ইঞ্জিনিয়ারদের সেই শ্রমিকের কাজ করতে হবে।
অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক মানুষ সমাজের প্রয়োজন অনুযায়ী কাজ করে।
ধর্ম এবং রাজনীতি আলাদা হতে পারে না-কারন ধর্মের ভিত্তিও সেই সমাজ। ব্যাক্তিস্বতন্ত্রবাদ বর্জন করে সামাজিক কর্তব্যপালনের নির্দেশই গীতা এবং কোরান দিয়ে থাকে-যা মার্ক্সের সমাজতান্ত্রিক মানুষের সংজ্ঞার অনূরূপ। কিন্ত তার মানে কি মার্ক্সীয় সমাজতন্ত্র আর ধর্মীয় সমাজতন্ত্র এক হয়ে গেল? অবশ্যই না। ঠিক সেই কারনে লেনিনিস্ট সমাজতন্ত্র আর মার্ক্সিস্ট সমাজতন্ত্রও এক না, যদিও সমাজতান্ত্রিক মানুষের সংজ্ঞাটা ঠিক একই থাকে।
লেনিন পরীক্ষা করে ব্যার্থ হয়েছেন-এমন যদি সবাই আপনার মতন ভাবত, তাহলে কি আর আমাকে কলম ধরতে হত? আপনাদের দিকে নবী মহম্মদের যা স্টাটাস-আমাদের দিকের বস্তুবাদি নবী হচ্ছ লেনিন। কত মেধাবি ছাত্র তাদের ক্যারিয়ার শেষ করে লেনিনবাদ পূজ়া করছে-তারহিসাব নেই। ভারতের ১৩০ টি জেলা এখন মাওবাদিদের দখলে-যারা নিজেদের লেনিনবাদি বলে।
বিপ্লব পাল,
এবার আসি আপনার ২ এবং ৩ নম্বর পয়েন্টে। ২ নম্বরের উপসংহারে আমার তেমন আপত্তি নেই তবে সূচনায় সংঘর্ষ হচ্ছে। আপনি মার্ক্সিস্ট সমাজতন্ত্রকে হিন্দু বা ইসলামিষ্ট সমাজতন্ত্রের সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন, যদিও হিন্দুত্ববাদী বা ইসলামিস্ট সমাজতন্ত্র সম্পর্কে আমার কোন ধারনা নেই, আদৌ তার অস্তিত্ত্ব আছে কিনা জানিনা। তবে এই টুকু জানি কট্টর হিন্দুত্ববাদীই বলুন বা ইসলামিস্টই বলুন এরা সমাজতন্ত্র থেকে যোজন যোজন দূরেই অবস্থান করে বলে জানি।
যাকগে, অন্য কথায় আসি, মার্কসের সামাজিক বিবর্তনীয় তত্ত্ব কে দু ভাবেই দেখা হয়, ঠিকই আছে আপনার ভাষ্য মতে, বস্তুবাদের দৃষ্টিতে অর্থাৎ বস্তুর প্রাকৃতিক বিবর্তনের নিরীখে আবার আদর্শবাদের দৃষ্টিতে অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিবর্তনের সাথে সাথে যখন সামাজিক এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীগত বিবর্তন সাধিত হয়। আপনি হযতো যথার্থই বলেছেন যে দায়ী লেনিন। তবে আমি ব্যপারটাকে বিশ্লেষন করি একজন এক্সপেরিমেন্টালিস্টের চোখ দিয়ে। তাতে সত্যতার তেমন হের ফের না হলেও লেনিনের ওপড় থেকে দায়টা বোধ হয় খানিক কমে। যেমন আমরা যখন কোন এক্সপেরিমেন্ট করি আবশ্যই কোন প্রাকৃতিক ঘটনাকে যুক্তিগ্রাহ্য তত্বের আলোকে বিচার বিশ্লেষনের নিমিত্ত্বে। তাতে প্রকৃতিকে উপলব্ধি এবং কখনো কখনো সম্ভাব্য আক্রোশকে প্রতিহত করার সুযোগও মেলে। লেনিন মার্ক্সীয় তত্ত্বকেই সামাজিক ভিত্তির উপড়ে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন, একটু ঘুড়িয়ে বললে, চলমান সামাজিক বিবর্তনের স্রোতের মাঝেই মার্ক্সীয় তত্ত্বের এক্সপেরিমেন্ট চালানো। আমরা যখন কোন এক্সপেরিমেন্ট করি তখন প্রাকৃতিক ঘটনার বিশ্লেষনের নিমিত্ত্বে একটি ডামী বা মডেল বেছে নেই বা তৈরী করি, যাকে বলা চলে সিস্টেম। সারাউন্ডিংস থেকে সিস্টেমকে সংগত কারনেই রাখতে হয় পৃথক, নয়তো প্রতিকুল সারাউন্ডিংসের প্রভাবে সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিংবা ভন্ডুল হয় এক্সপেরিমেন্ট। লেনিনের ক্ষেত্রেও ঘটনাটি তাই ঘটেছিলো। মার্ক্সের তত্ত্বকে মডেলের উপড়ে আরোপ করতে গিয়ে তিনি সিস্টেম কে সারাউন্ডিংস থেকে পৃথক করার প্রয়াস পেয়েছিলেন। একটা উদাহরন দিই। ধরুন একটা এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে, সমুদ্রের ৫০০০ ফুট নীচের অন্ধকারের প্রাণীদের ছবি তুলে আনতে হবে। একটি প্রোব ক্যমেরা সুদ্ধ তৈরীকরা হলো। যন্ত্রটি নিশ্ছিদ্র আছে কিনা দেখা হলো, হিসেব মতো এর ভেতরের চাপ ঠিক রাখারও ব্যবস্থা করা হলো। কোন ত্রুটি নেই, এবং এবারে তা পাঠানো হলো। ৩০০০ ফুট গভীরে জলের চাপে এর কোন দুর্বল অংশে চিড়ধরে প্রোবটি বিদ্ধস্ত হলো। এখন আমরা কি বলবো যে জলের চাপ ও ঘনত্ব সংক্রান্ত টেরিসলীয় বা আর্কিমিডিসীয় তত্ত্বটি এর বৈঞ্জানিক গুন হাড়িয়ে এক্সপেরিমেন্টালিস্টের আদর্শবাদীতার পথে হাঁটা দিয়েছে? বিষয়টিকে আপনি এভাবেও দেখতে পারেন আবার আপনি সোজা সাপটা ব্যক্তি আদর্শের মোড়কেও দেখতে পারেন। তাহলে হ্যাঁ, প্রশ্ন ওঠে যে, তাহলে কি আপনার ভাষ্যমতে মার্ক্স তত্ত্ব বৈঞ্জানিক পথ ছেড়ে আদর্শবাদের পথে পা বাড়ায়নি? হ্যাঁ বাড়িয়েছে, কিভাবে? আমার ধারনা এবিষয়টিকে আমরা প্রাযশঃই অগ্রাহ্য করি। সেটা হলো সিস্টেমের আভ্যন্তরীন ক্যায়স। মানব সমাজে তার মানসিক বিক্ষিপ্ততা এই ক্যায়সকে আরোও বাড়িয়ে তুলে। বস্তু জগতে বস্তু বস্তুর উপড়ে একি প্রতিক্রিয়া দেখালেও মানব সমাজে তার ইগোর প্রভাব সমগ্র সমাজে পরিব্যাপ্ত হয়। এই ইগো নিয়ন্ত্রিত হয় মানব সভ্যতার বিবর্তনের সাথে সাথে আর সভ্যতা প্রভাবিত হয় সামাজিক বিবর্তনের নিরীখে। যেখানে উৎপাদন এবং বন্টন ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
আর সেই সামাজিক সিস্টেমের ক্যায়স থেকে উপজাত হিসেবে যা বেড়িয়ে আসে সেটা হলো ইজ্ম। আপনি যেমন মার্ক্সিজম বা লেনিনীজমের কথা বলেছেন।
এই ইজ্মটাকেই অনেকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রের উপড়ে তা আ্যপ্লাই করতে সচেষ্ট হয়, গোলটা বাধে তখন। কারন এটিতো সিস্টেমের ক্যায়স থেকে উদ্ভূত আর সিস্টেমটি একটি ডামী! বুঝুন ঠেলা। কোথায় পরে রইলো মার্কস এর সামাজিক বিবর্তনীয় তত্ত্ব আর কোথায় লেনিনের সোভিয়েত! পুরো বিষয়টিই একটি সভ্যতা সঞ্জাত ইগো। আর হবে নাইবা কেনো, এটিতো সময় এবং সামাজিক বিবর্তনের যাত্রাপথের যুগসন্ধিক্ষন বলে কথা! যুগের সন্ধি সেখানে হোক বা না হোক! এই কারনেই বিঞ্জানে নিউটনিষ্ট কিংবা আইনষ্টাইনিষ্ট হয়না কিন্তু সামাজিক বিবর্তনের তত্ত্বে অনেক ক্ষেত্রেই তা হয়। তাই আমি সামাজিক বিবর্তনবাদী তত্ত্বকে বৈঞ্জানিক তন্ত্র বলতে নারাজ। আর লেনিন কে দায়ী বলবো এই জন্যে যে, তিনি সিস্টেমের ক্যায়স দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তবে সোভিয়েত ভেঙ্গেপড়ার জন্যে যতটানা লেনিন দায়ী তার চেয়ে বেশী উপসর্গ সম্ভবতঃ যুক্ত হয়েছিলো সিস্টেমের ক্যায়স এবং সারাউন্ডিংস এর প্রভাব থেকে। সুতরাং সোভিযেত ভেঙ্গেপড়াটা এক ধরনের অবশ্যম্ভাবী নিয়তিই ছিলো। যতটানা লেনিনিজম দায়ী। জানিনা ঠিক কতোটা বুঝাতে পারলাম।
দেখুন, সৃষ্টিবাদিরা আরো অনেক কিছুই দাবী করে-তারা কি করে, সেটা দেখে কি আমাদের বুঝতে হবে কোনটা ঠিক বা কোনটা ভুল? তারা ইনফর্মেশন তত্ত্বও ব্যাবহার করে-তার মানে ইনর্ফমেটিক্স ভুল?
আসলে এগুলো হিউরিস্টিক গণিতিক মডেল ছাড়া ত কিছু না। রেজাল্ট মেলাতে হচ্ছে ত শেষে-যদি জল থাকে সেখানেই ধরা পরবে।
তাছাড়া, আপনি যা বললেন, তাতে এটা বিশ্বাস করতে হয়-বিবর্তন শুধু প্রানী জগতেই ক্রীয়াশীল-সংস্কৃতি বা রাজনীতির ওপর এই ‘গণিতিক’ মডেল চলে না। সেটা ত ঠিক না। মেমেটিক্স এর এই ভাবেই জন্ম হয়েছে।
প্রাকৃতিক বিজ্ঞান থেকে সমাজবিজ্ঞান তৈরির চেষ্টাটার আমার কাছে মনে হয় এখনও কিছুটা প্রিমেচিউর এবং এর উপর মনে হয় খুব একটা ভরষা করা যায়না। এমনকি পদার্থবিজ্ঞানের মডেল জীববিজ্ঞানে প্রয়োগ করতে গিয়ে মুশকিল হতে পারে। আপনি হয়ত জানেন থার্মোডাইনামিক্সএর ২য় সূত্র ধরে কেউ কেউ দাবি করেছেন যে বিবর্তনবাদ ভূল কারন সরল লাইফ ফরম থেকে জটিল লাইফ ফরমে বিবর্তন হলে তাতে অর্ডার বেড়ে যায় (এন্ট্রপি কমে যায়)। এই যুক্তিটার মধ্যে ভূল আছে আশা করি বুঝতে পারছেন।
নোবেল অর্থনীতিবিদ পল স্যামু্যেলসন (১৯৭০) বলেছেন,
“the sign of a half-baked speculator in the social sciences is his search for something in the social system that corresponds to the physicist’s notion of entropy.”
উল্লেখ করতে হয় যে স্যামু্যেলসন নিজেই সোশাল থার্মোডাইনামিক্স নিয়ে অনেক কাজ করেছেন।
আমার মনে হয় আমেরিকার অজ্ঞ রক্ষনশীল কিছু লোক ছাড়া রাজনৈতিক দর্শন সম্বন্ধে যাদের কিছু মাত্র জ্ঞ্যান আছে তারা ঠিক এরকম মনে করবেনা। তবে কমিনিউজম আর মার্ক্সিজম এক এটা প্রায় সবাই মনে করে। আর মনে রাখতে হবে মার্ক্স নিজেই কমিনিউজম শব্দটা ব্যাবহার করেছেন। আর আমার যদ্দুর জানা আছে কমিউন শব্দটার সাথে কমিনিউজম শব্দটার সম্পর্ক হয় মার্ক্সের সময়ের পরে।
সহমত।
এদের মধ্যে পার্থক্য এপেল বনাম ওরেঞ্জের-এটাই ত লিখলাম। অনেকেই এগুলো সব এক করে দেখেন। সেটাই ভুল।
না। এক হবে না। কমিনিউজমের বাংলা আছে বলে জানা নেই। কমিনিউজমের বাংলা সমাজতন্ত্র না।
ঊঁহু। এটা ঠিক না। আমিশ কমিউনিটিতে ব্যাক্তি মালিকানা ছিল না-নাব্রাস্কাতে এই কমিউনের ১০,০০০ ধর্মীয় লোক ছিল। কোন ব্যাক্তিমালিকানা ছিল না। আমেরিকা আইন করে কমিউনিটি মালিকানা তুলে দেয় ১৯২০ সালে। কিন্ত এরাও কমিনিউস্ট-কারন আমিশ কমিনিউটিতেও ব্যাক্তিমালিকানা ছিল না। এমন কি মাইনাও ছিল না ( যা সোভিয়েত ইউনিয়ানে ছিল)। একদম বিশুদ্ধ কমিনিউজমে যা হওয়া উচিত-কোন ব্যাক্তি মালিকানা নেই-কোন মাইনে নেই-কমিউনের জন্যে খাট-এবং কমিউন তোমাকে দেখবে-সেই ব্যাপার ছিল-যা কোন কমিনিউস্ট দেশেও সম্ভব হয় নি। যাইহোক ১৯২০ সালে আমেরিকা আইন করে এই ধরনের কমিউন বানানো নিশিদ্ধ করে।
হুঁ। এই কথার ওপর কিন্ত আপনার পেটেন্ট নেই-মার্ক্স সাহেবের আছে। উনিই বলে গিয়েছিলেন উৎপাদন ব্যাবস্থার পরিবর্তনেই একমাত্র সামাজিক পরিবর্তন হয়।
বিপ্লব পাল,
আপনার লেখাটি সত্যিই আমার কাছে হৃদয় গ্রাহ্য, বিস্তর আলোচনার থাকলেও সময়াভাবে পারছিনা। যাইহোক যতক্ষন সুযোগ হয় এক একটি পয়েন্ট ধরে কথা বলি তাতে আমার বোঝার কাজটা আর একটু শক্ত হবে মনে হয়। আপনার প্রথম পয়েন্টেই একটি বিষয়ে ধাক্কা খেয়েছি, সেটা হলো-
প্রথমতঃ অরেঞ্জ – আপেলে কিন্তু অনেক ব্যবধান! মার্ক্সিজম এবং লেনিনিজম ব্যক্তির টানা সামাজ বিবর্তনীয় তত্ত্বের একটা আপাতঃ উপসংহার হতে পারে। সেটা সঠিক কি বেঠিক তা নির্ভর করে বিবর্তনীয় সেই সমাজের গুনগত দিকটির উপাত্য বিশ্লেষনে। এমন উদাহরণ আদিম সমাজ কাঠামের ব্যতিরেকে নেই। সেটা আদিমতম সাম্যবাদ হিসেবেই বিবেচিত। অপরটি হলো আরোপিত। অর্থাৎ প্রাকৃতিক বিবর্তনের সাথে সাথে সমাজিক বিবর্তনীয় ধারায় তার কোন অস্তিত্ত্ব আদৌ নেই। কিন্তু অনুকল্প আকারে আজকের সমাজে তার একটা প্রতিবিম্ব সমাজের প্রতিষ্ঠা! কিন্তু এটি আসলেই দূরহ ব্যপার। কারন বস্তু জগতে এ ধরনের এক্সপেরিমেন্ট হয়তো অনেকাংশে ল্যবরেটরীতে সম্ভব কিন্তু সমাজের ক্ষেত্রে, যেখানে মানবিক বিবর্তনীয় বিকাশের একটি যৌক্তিক পর্যায় জরুরী, সেখানে এর প্রতিবিম্ব সামাজিক অবকাঠামো গড়ে তোলা বোধ হয় অতো সহজ নয়। আমার ধারনা মার্ক্স এবং এঙ্গেলস এর এই প্রতিপাদ্যের উপড়ে ভিত্তি করে লেনিন একটি প্রতিবিম্ব রচনা করতে চেয়েছিলেন, যেটা আদৌ একটা অসম্ভব ব্যপার ছিলো। তবে এটা সেই সমাজের বাইরে থেকে খানিকটা বোঝা গেলেও ভেতর থেকে বোঝা ততধিক কঠিন হবার কথা। সেই কারনেই সোভিয়েত যুগে বিশ্বব্যপী যে সমাজতন্ত্রের জোয়ারের ধাক্কা এসেছিলো তা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার ছিলো। আবার দেখুন ব্যাপারটি অসম্ভব বিধায় সোভিয়েত সিস্টেমটি আপনাথেকেই ধসে পড়েছে! অর্থাৎ এক্সপেরিমেন্টটি কলাপ্স করেছে। তাই বলেতো তত্ত্বটি মিথ্যে প্রতিপন্ন হচ্ছে না। এই কারনে কি কমিনিউজম, মার্ক্সিজম, লেনিনিজম, সমাজতন্ত্র সব এক এই কথাটি বলা যুক্তি সঙ্গত হবে? তদুপরি সমাজতন্ত্র (socialism) এবং কমিউনিজম (communism) বাংলায় সাম্যবাদ কি এক হবে? লেনিনীয় কমিউনিজম তো আমার মনে হয় সেই কারনেই একটি ফরম অব একসপেরিমেন্ট। যা অসফল। অন্যদিকে যে ধর্মীয় কমিউনের কথা বললেন, আদর্শগত ভাবে সেটাতো কোন মতেই এক হবার কথা নয় এই জন্যে যে, কোন ধর্মীয় বিধানেই ব্যক্তিমালিকানার রহিতকরনের ব্যপারনেই। সম্পদ বিভাজনের কথা হয়তো আছে, কিন্তু সেটি আপাতঃ সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি মানবিক উৎকর্ষতার পর্যায়, কোন চিরন্তন বিধিবিধান নয়। সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদকে কখনো কখনো বৈঞ্জানিক বলাহয় (আমি ব্যক্তিগত ভাবে দ্বিমত পোষন করি) সম্ভবত এই কারনে যে সমাজ বিবর্তনীয় ধারায় অর্থাৎ অন্যত্র আপনার কথামতোই গনতান্ত্রিকতার পর্যায়ক্রমিক উত্তরনের এক পর্যায়ে সামাজিক সাম্যবাদী সমাজের অবয়বের দেখা মিলবে। তবে তার ফর্মটা ঠিক কি হবে এটা বোধ হয় এখনি ধারনা করা বেশ জটিল।
ভেবে দেখুন খুব বেশী হয়তো দূরে নয় যখন এক দেশ এক বিশ্বের মতো সামাজিক পরিস্থিতির জন্ম হবে, বিঞ্জান এগিয়ে যাবে এমন একটা জায়গায় যেখানে মানুষে মানুষে ব্যবধানটাই আর থাকবে না, সেই ষাথে যদি বহির্বিশ্বের সাথে কোন ধরনের যোগাযোগ স্থাপিত হয় তো পোয়া বারো আরকি! ধর্মীয় কালাকানুনের কোন অর্থই হয়তো সেখানে খুঁজে পাওয়া যাবেনা এক-একটি মানুষ হয়তো কোননা কোন ভাবে এক-একটি সতন্ত্র রোবটে পরিনত হবে, এগুলো সবই আমার কল্পনা, কিন্তু অসম্ভব কি? কিন্তু সামাজিক দিক থেকে সমাজ কাঠামোটি কিন্তু বিবর্তিত হয়ে এক অত্যাধুনীক কারিগরী কৌশল নির্ভর ভিন্ন ডাইমেনশনের সাম্য সমাজে পরিবর্তিত হবে। কল্পনা করলে আরো দূরে যাওয়া যায়। মূল কথা হচ্ছে উৎপাদন এবং বন্টন ব্যবস্থার বিবর্তনটির স্বরূপ। কিন্তু চলমান ব্যবস্থায় যে অব্যবস্থা বা বৈষম্য তা কিন্তু যন্ত্র-নির্ভর। যখনি এই উৎপাদন যন্ত্রের বৈশিষ্ঠ্যগত বিবতর্ন ঘটবে তখনি কিন্তু সামাজিক বিবর্তনে, মানবিক বিকাশে এবং অর্থব্যবস্থায় তার প্রভাব পড়বে লক্ষ্যনীয় ভাবে। আর সেটিই বিবেচিত হবে সামাজিক বিবর্তনের এক একটি ধাপ হিসেবে। আমার তো এরকমই মনে হয়।
অনেক তথ্য অজানাই ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে। আমার জানার আগ্রহ :yes: এব্যাপারে জোরদার হবে বলে আশা করছি।
উপসংহারে আপনার সাথে এক মত হতে পারলাম না। মনে হল শেষ পর্যন্ত আপনিও নিজের মত কে লেনিনিষ্ট এর মতো চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন।
@ashraf,
গণতন্ত্রে নিজের মত থাকতেই হবে। তার মানে কি সেটা চাপিয়ে দেওয়া? আমার হাতে কি লেনিনের মতন রেড আর্মি আছে?
@বিপ্লব পাল,
হতে পারে আপনার কাছে রেড আর্মির নাই । থাকলে কি গনতন্ত্র চপিয়ে দিত না। আমেরিকা যেমন …….