মহুয়া আজ গাইবে না ঠিক করেছে। যত সাধাসাধিই করা হোক না কেন, সে আজ গাইবেই না। অন্তত আজকের দিনটা সে নিজের ইচ্ছেমত কাটাতে চায়। ভোরবেলায় ছাদে উঠে চুপিচুপি খালিগলায় অনেকক্ষণ গান গেয়েছে সে।গান তার কাছে একান্ত নিজস্ব ভাললাগার ব্যাপার। ঠিক তেমনি কবিতাও। নিজের কবিতার ডায়রীটা তাই খুব যত্ন করে রাখে সে, অনেকটা আড়াল করেই, তার ড্রয়ারে তালাবন্দী করে। তবু এতকিছুর পরও নিস্তার নেই, কিভাবে যেন একবার ছোটভাইটার হাতে সে ডায়রী চলে যায়, তারপর এই নিয়ে কত হাসি ঠাট্টা! কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, পাত্রপক্ষের কাছে তার এই গুণের তালিকা ঠিকই তুলে ধরা হচ্ছে! অন্যসময় তার লেখালেখি নিয়ে রীতিমত পরিহাস চলে, আর গান নিয়েও কড়াকড়ি, ‘খবরদার,বাইরে কোনো উপলক্ষে গান গাওয়া চলবে না ।’
কিন্তু কি বিরক্তিকর ঘটনা হচ্ছে কিছুদিন ধরে! আজ বিকেলেও সেরকম কিছুই হবে হয়ত। ক্লান্ত বোধ করে মহুয়া। সাজগোজ করে পাত্রপক্ষের সামনে গিয়ে বসতে হবে, মুখে একটা মৃদু হাসি ধরে রাখতে হবে, যখন গাইতে বলা হবে তখন গাইতে হবে, দরকার হলে কবিতা পড়ে শোনাতে হবে! আর কত!
নাহ, আজ অন্যরকম একটা দিন কাটাবে মহুয়া। যেদিন কেউ দেখতে আসে সেদিন ওকে মা বাইরে যেতে দিতে চান না, ভার্সিটিতেও না। কিন্তু আজতো অন্যদিনের মত নয়। আজ তার জন্মদিন, আজ যা ইচ্ছে তাই করবে সে! ভাল করে চুল বাঁধলো, কপালে ছোট্ট একটা টিপ।
মা রান্নাঘরে বেশ ব্যস্ত সকাল থেকেই, বিকেলের আয়োজন ।
মহুয়া আস্তে করে বলল- আমি ভার্র্সিটি যাচ্ছি মা…
মা ব্যস্ত খুব, খেয়ালই করলেন না।
ফোনটা সাথে নেয় নি ও, কেউ আজ তাকে বিরক্তও করতে পারবে না।
গলির মোড়ে দুটো বখাটে দাঁড়িয়ে, আজকে সে আর মাথা নিচু করল না। কিন্তু ছেলেগুলো অন্যদিনের মতই গান গেয়ে উঠলো। মহুয়া তাকালো তাদের চোখের দিকে, শান্ত, স্থির দৃষ্টিতে। ছেলে দুটো এখন অন্যদিকে তাকিয়ে ,তাদের বেসুরো গান বন্ধ হয়ে গেছে !
ক্যাম্পাসে পৌঁছুতেই বান্ধবী শিলার সাথে দেখা।
-হ্যাপী বার্থডে মহুয়া, তোকে বেশ লাগছে! ক্লাশ করবি তো ?
-থ্যাঙ্কস । ক্লাশটা হবে কিনা জানিস ?
শিলা বলল-জানি না রে, আমি একটু ঘুরে আসি, তুই থাক তাহলে ।
চলে গেল শিলা, কোথায় কে জানে! হয়ত প্রেমিকের সাথে।মহুয়া খোঁজ রাখে না, কারো সাতে পাঁচে নেই ও। হাতে গোনা কজন বন্ধু তার । মাঝে মাঝে খুব একাকীত্বে ভোগে। আবার এই একাকীত্বও বেশ লাগে তার ।
ক্যাম্পাসটা দারুন , ওর ভালই লাগছে একা একা হাঁটতে। বাঁধানো চত্বরে বসে পড়ল মহুয়া। একটু পর শিহাব এল, চারুকলার ছাত্র। ওরা বেশ ভাল বন্ধু, সময় পেলে প্রায়ই ছেলেটা ওদের সাথে আড্ডা দিয়ে যায় । শিহাব মহুয়ার কবিতার ভক্ত । তবে তার প্রতি ছেলেটার অন্যরকম ভাললাগা যে আছে সেটা মহুয়া বেশ টের পায় , ওর চোখ দেখলেই তা বোঝা যায় !
-নতুন কিছু লিখেছিস নাকি ?
মহুয়া হাসছে, বলল- না,তুই কি ভাবিস বলতো? আমি প্রতিদিন লিখি নাকি?
-কেন লিখিস না? আচ্ছা আজকে নাহয় গান শুনিয়ে দে।
-ইচ্ছে করছে না রে। তোর আঁকাআঁকির খবর বল…
-তেমন কিছু করছি না। এই তুই সামনের প্রোগ্রামে গাইছিস না শুনলাম, কেন বল তো ? গতবার তো মাতিয়ে দিয়েছিলি
-ওমা! আরো কত গাইয়ে আছে। প্রতিবার কি গাইতে হবে নাকি?
-তোর গান শুনতেই তো আসি প্রোগ্রামে, নিরাশ করলি ।
-তুই আবার কবে থেকে আমার গানের ভক্ত হয়েছিস ?
-প্রথম থেকেই । তুই জানিস না তুই কত ভাল গাইতে জানিস !
মহুয়া আবারো হেসে ফেলল ।-হুম জানি । কত ভাল লিখি তাও জানি। আমার গান আর কবিতার একজন মাত্র ভক্ত। সবেধন নীলমণি !
-কচু আর ঘেচু জানিস !
শিহাবও হাসছে।
-জানিস শিহাব আরো একটা ব্যাপার জানি মনে হচ্ছে !
-বলে ফেল, তোর জ্ঞানের পরিধি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে, সন্দেহ দূর হোক, বল তো…
-অভয় দিচ্ছিস তো ? পরে আবার…
-আরে কি বলবি হাতি ঘোড়া, বল না! শিহাবের চোখে মুখে অস্থিরতা ।
মহুয়া বলে উঠলো-আমার জন্য তোর একটা দুর্বলতা কাজ করে। ভুল বললাম নাকি? আমাকে ভালবাসিস না ?
শিহাব গম্ভীর হয়ে গেল। মহুয়া কখনো ভাবেনি এব্যাপারে ওকে প্রশ্ন করবে। আজ কি যে হল, জিজ্ঞেস করেই ফেলল। কাজটা ঠিক হল কিনা বুঝতে পারছে না। দুজনেই চুপ করে বসে আছে ।
-আমিতো গাইতে পারি না, পারলে তোর জন্য গাইতাম আর নাহয় কবিতাই লিখে ফেলতাম। শিহাব বলে উঠল ।
-সহজ কথাটা বলে ফেললেই পারতি।
-সহজ কথা কি সহজে বলা যায়! আর আমাদের রাস্তাও তো আলাদা…
-মনের কথা জানাতে এত ভয় কেন? রাস্তা আলাদা মানে কি ?তুই ধর্মের কথা বলছিস ?
দীর্ঘশ্বাসটা লুকোতে পারল না শিহাব।বলল-হ্যাঁ, আমাদের পরিবার, সমাজ সবই তো বাধা…
মহুয়া ভাবছে, গভীর করে ভাবতে চেষ্টা করছে ।
-শিহাব, তোকে ভালোবাসি কিনা জানি না, কখনো বাসব কিনা তাও জানি না, তবে একটা ভাললাগা তো আছেই। তোর মত আরেকটা ভাল বন্ধুও নেই আমার…
আবার ভাবনায় ডুবে গেল সে। মাঝেমাঝে এইসব বাধা ভেঙ্গে ফেলতে খুব ইচ্ছে করে ওর। মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করে রাখার এ কোন নিয়ম! মানুষ নিয়মের জন্য নাকি নিয়ম মানুষের জন্য? কি লাভ এইসব নিয়ম মেনে যা শুধু দুর্ভোগ বাড়ায়, একের কাছ থেকে অন্যকে দূরে সরিয়ে রাখে !
বিকেলের রোদ আর ছায়া খেলা করছে সবুজ ঘাসের বুকে। ওরা এখনো বসে আছে, পাশাপাশি , দুজনেই ভাবছে।
শিহাব ভাবছে মহুয়া তার ডাকে সাড়া দেবে কিনা।
আর মহুয়া ভাবছে আরো গভীর ভাবনা…সব নিয়ম একদিন ভেঙ্গে দেবে, নিজের মত করে বাঁচবে ।
“আমি গাইবো, লিখবো…একটাই জীবন, তাই যতভাবে বাঁচা যায় বাঁচব…ভীষনভাবে বাঁচব…
আমার ভীষন গাইতে ইচ্ছে করছে রে, তুই শুনবি ?’
মহুয়া গাইছে, খোলা গলায়…বাঁধভাঙ্গা গান !
ভালো লাগলো গলপো টা পড়ে কিন্তু আরো কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে শেষ কোরলে ভালো হোত
@সুকনয়া(sukanya),
ধন্যবাদ 🙂
@অভিজিৎদা,
পুলিশ বললেন?যাই হোক,পুলিশ কি ভুল করতে পারে না?!! 🙁
@নিবেদিতা,
পুলিসের কাজ পুলিস করেছে…… :laugh:
পুলিস কি কোন কাজ আদৌ করতে পারে?
আগন্তুকের সাথে একদমই একমত না। নিবেদিতার মত বানানের পুলিশ আমাদের সাইটের জন্য অনেক বেশি বেশি দরকার। বানানের জন্য সাইটের মান নেমে যাচ্ছে বলে অনেকেই অভিযোগ করছেন।
শুধু নিবেদিতা নয়, আগন্তুককেও পুলিশ হিসেবে চাই। আর রাহাত খান তো ইতিমধ্যেই বানানের পুলিশ নয়, একেবারে র্যাব হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন বলে মনে হচ্ছে। সবাইকেই অনেক ধন্যবাদ। বোঝা যাচ্ছে, তারা মান নিয়ে যথেষ্টই ভাবছেন। এটা আমাদের জন্য আশার কথা।
মানুষ হিসেবে যতদিন না মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, ততদিন ধর্মীয়, সামাজিক অবস্থান, অর্থ সম্পদ, সৌ্ন্দর্য এসব বিষয় বাধা হয়ে দাড়াবেই, আমার এক পরিচিতের গল্প অনেকটা এরকম, ইন্টারনেটে পরিচয়, কথা বলতে বলতেই মন দেয়া নেয়া, ছবি দেখার পুর্বেই মাকে জানিয়েছিল সে, মা অমত করেননি, মেয়েটি ছবি দিতে চায়নি, ছেলেটিও চাপাচাপি করেনি, তিন বছর পর প্রথম সাক্ষাতে তোলা কিছু ছবি মাকে দেখানো্র পর শুরু হল সমস্যা, মা কিছুতেই অমন অসুন্দর বউ মানবে না, সে তার আত্মীদের বউ দেখাতে পারবে না। এদের গল্পগুল তেমন একটা চোখে পড়েনা। প্রত্যেক অসম সম্পর্ক কিছু না কিছু বাধার সম্মুখীন হয়, আর এ অসম ধারনাটি মানুষ হিসেবে মানুষকে না চেনার কারণেই আসে।
@পৃথিবী,
অনেকটা শেষ হইয়াও হইল না শেষের মত?!
বাহ তবে কি স্বার্থক ছোট গল্পই হয়ে গেল নাকি! কি আনন্দ! 😀
ধন্যবাদ
ভাল লাগল। কিছু বঝে উঠার আগেই দেখি গল্প শেষ, এত অল্প কথায় এত বড় বক্তব্য আসলেই মন ছুয়ে গেল।
i asked a qust yesterday. but deleted. am i wrong? abaro boli. sultana bonna and ferdousi~ era keu hindu hoyni. but shila ke muslim hote hoyese. amar prosno abul momen to ek hinduke musalman banalen (like molla). to tini ki kore humanist holen? kindly amake bisoyti bujhiye deben.
প্রত্যেকটা যতি চিহ্নের পরে একটা করে স্পেস দেন আর প্রত্যেকেটা প্যারার পরে যদি আরেকটি লাইন গ্যাপ দেন তবে মনে হয় লেখাটা পড়তে আরো আরাম লাগবে। লেখার গুণগত মান যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর অঙ্গসজ্জ্বাও খুবই প্রয়োজনীয়। অন্তত প্রাথমিকভাবে পাঠককে ধরে রাখার অত্যাবশ্যকীয় উপাদানতো বটেই।
গল্প ভাল হয়েছে। নিয়মিত আরো অন্যান্য বিষয় নিয়ে লিখবেন সেই প্রত্যাশা রইলো।
@ফরিদ আহমেদ,
এডিট করে দিলাম , এবার বোধ হয় কিছুটা আরামে পড়া যাচ্ছে 🙂
কবিতা লিখতে গিয়ে কিছুটা স্বস্তিকর বলে মনে হয় , যদিও সেগুলো কোনো ‘বৃত্ত’ এর মধ্যে ফেলা যায় না !:-D আর গল্প লেখার তো সাহসই হয় না ! কিন্তু খুব কাছ থেকে দেখা রিসেন্ট একটা ব্যাপার এত ভাবালো যে লিখেই ফেললাম,প্রথম গল্প।তবু আপনার ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগছে 🙂
@নিবেদিতা,
জ্বী না। আরামে পড়া যাচ্ছে না। আপনাকে বলেছিলাম যতি চিহ্নের পরে স্পেস দিতে। আপনি আগে পিছে দুই দিকেই স্পেস দিয়ে দিয়েছেন দেখছি। :-X
আর প্যারাগুলোকে আলাদা করার জন্য লাইন স্পেস দেননি। জড়াজড়ি করে আছে সেগুলো এখনো।
@ফরিদ আহমেদ,
🙁
যাক, অনেকদিন পরে নিবেদিতার দেখা মিললো। ব্লগে লেখা এবং মন্তব্য করার হার কমে যাওয়ার কারণ কি?
এই কথাগুলোই লেখাটার মূল বক্তব্য। একদিন হয়তো শিহাব মহুয়ারা সামাজিক এই বাধাগুলো ডিঙ্গাতে পারবে। বাধা যে কেউ ডিঙ্গাননা তা নয়। আমি আমার একটি লেখায় তাহমিনা আর সুকুমারের ঘটনা বলেছিলাম (সত্যিকারের ঘটনা, গল্প নয়) সেটা পাওয়া যাবে এখানে (তাহমিনার ঘটনা জানতে প্রবন্ধটির শেষ দিকে দেখুন)।
আর আমার কথা না হয় এখানে নাই বা বললাম।
শিহাব -মহুয়ারা একদিন সুকুমার তাহমিনাদের মত শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাবে, এই কামনা করি সবসময়।
সুকুমার তাহমিনার ঘটনা নিয়ে ইন্টারনেট থেকেও একটা নিউজ দিলাম।
আরেকটি নিউজ টেলিগ্রাফ থেকে ছাপা হয়েছিলো অনেক আগে মুক্তমনা ফোরামে।
@অভিজিৎদা,
হ্যা,এবার অনেকদিন পর লিখলাম,কি করি!কত ব্যস্ততা,আলস্য আমাকে দেয় না অবসর! 🙂 তাছাড়া কী লিখব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
গত ক’দিনে খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করা ঘটনা থেকেই এটা লিখলাম।খুব নাড়া দিয়েছে আমাকে,অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমরা মুখে অনেক বড় বড় উদারতার কথা বলি কিন্তু মনকে তেমন উদার করতে পারে কজন।সবই কপটতা!
এই বাঁধাগুলো যত দ্রুত দূর করা যায় ততই মঙ্গল ,বাঁধা বলে যেন কিছু না থাকে।
@নিবেদিতা,
‘বানানের পুলিশ নিবেদিতা’র একটা বানানের ভুল ধরার লোভ সামলাতে পারছি না।
বাঁধায় চন্দ্রবিন্দু থাকলে সেটা হচ্ছে fasten or fastening। যেমন, আটঘাট বাঁধা, কোমর বাঁধা , আটকে বাঁধা, গাঁটছড়া বাঁধা ইত্যাদি।
আর আমি যেটা বাধা হিসেবে ব্যবহার করেছি (চন্দ্রবিন্দু ছাড়া) সেটা হল barrier। দুর্লঙ্ঘ বাধা 🙂
@অভিজিৎদা,
পড়ে দেখলাম ।ক্ষোভ হয় খুব ।
জানি পরিবর্তন আসছে ,কিন্তু এত ধীরে যে কতটুকু আমরা দেখে যেতে পারব জানি না
@অভিজিৎদা,
এই পরিবর্তন দেখে যেতে পারলে ভালো লাগবে।কিন্তু জীবিত দশায় দেখে যেতে পারব -এমন আশা করি না।আর মৃত্যুর পর বিশ্বে যেসব পরিবর্তন হবে সেসব আমার কাছে অর্থহীন।কারণ ‘আমি’ই নেই সেখানে।তখন হলেই কি না হলেই কি?এটাই বোধহয় সংশয়ীদের একমাত্র হতাশা।যাই বলেন ধর্মের গাল-গপ্পগুলোর মধ্যে অন্তত চিরন্তন জীবনের প্রতিশ্রুতিটা সত্য হলে মন্দ হত না।জৈব-জীবনে সেটা অসম্ভব কেননা,অমরত্ব ইকোসিস্টেম ধ্বংস করে ।তবে কোনভাবে চেতনার অস্তিত্ব থেকে গেলে ভালোই হত।এর থেকেও মনে হচ্ছে যে ঈশ্বর নেই।নইলে ধ্বংস করার জন্য এই বিচিত্র বিশ্ব কে গড়ে।আমার আঁকা একটা ছবির ফ্রেমে ঘুণ ধরেছিল,আমার মনে হল -আমার অসুখ করেছে।আমি ছোট স্রষ্টা।জয়নুল আবেদীন,ভিঞ্চি বা রেমব্রাঁর মত মহান স্রষ্টারা কি কম ভালোবাসতেন তাঁদের সৃষ্টিকে?তবে ?সবচেয়ে বড় স্রষ্টা যিনি তার ভালোবাসাও তো সবচেয়ে বেশি হবার কথা!!
জীবন একটা হঠাৎ ফোটা বুনো ফুল,একটা আকস্মিক ঘটনা,এয়ার ব্রাশে আঁকা স্বেচ্ছাচারী ছবি।এর মধ্যেও প্রচণ্ডভাবে জীবিত থাকতে হয়।মরে গেলে কিছুদিন নাম থাকে,তাও সে রকম কিছু করতে পারলে।ধ্বংসই নিয়তি।
অন্যদিকে চলে গেলাম।এ বিষয়ে আমি এত খারাপ সব দৃষ্টান্ত দেখেছি যে,জীবদ্দশায় এর কোন পরিবর্তন আমি আশা করতে ভয় পাই।
@আগন্তুক,
তাইতো হবার কথা,কিন্তু এ ব্যাপারে প্রায়ইতো খটকা লাগে!
সেই সাথে আমাদের বেঁচে থাকার যে আকুতি তার তীব্রতাও কি কমিয়ে দেবে না?
আমরা বরং এই ছোট্ট সময়টা ভীষনভাবে বাঁচার চেষ্টা করি,সব বাঁধা ঘুচিয়ে দিয়ে,মানুষের প্রকৃত ধর্ম অবলম্বন করে।
@নিবেদিতা,
জাফর ইকবাল স্যারের একটা সুন্দর সায়ন্স ফিকশন আছে এ বিষয়ে।হ্যাঁ পুরোপুরি একমত।
“উপরন্তু ‘প্রথম আলো’ তে এক বিটকেলে উকিলের লেখায় পড়েছিলাম বাংলাদেশের আইনে কোন ভাবেই মুসলিম মেয়ে অন্য ধর্মাবলম্বী কাউকে বিয়ে করতে পারবে না, ”
বাংলাদেশে মুসলিম এবং খৃষ্টান দের বিয়ে হয়। “কিতাবী বিবাহ” বলা হয়।
@অভিজিৎ, নিবেদিতার গল্পের মহুয়া আর শিহাবের মনে যে দ্বিধা – তা স্বাভাবিক। এটার আপাত কারণ সামাজিক ধর্মের বাধা। গল্পের চরিত্রগুলো যদিও বাস্তব থেকে উঠে আসে – বাস্তব চরিত্রগুলো নিয়ে কিন্তু আমরা সেরকম ভাবে বিশ্লেষণ এখনো করি না বা করতে চাই না। রামেন্দু মজুমদার – ফেরদৌসি মজুমদার, সুলতানা কামাল – সুপ্রিয় চক্রবর্তী, আবুল মোমেন – শীলা মোমেন, অভিজৎ রায় – বন্যা আহমেদ এবং এদের মত আরো অনেক সাহসী দম্পতির সামাজিক সংগ্রামের কথা আমরা খুব বেশি জানি না। জানলে অনেকেরই সাহস বাড়তো, দ্বিধা কমতো।
@প্রদীপ দেব,
হ্যা,আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত যে নেই তা কিন্তু নয় । তাতে কি ! আমরা তো চোখ বুজে থাকতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি , সহজাত বোধশক্তিকে শিকল পরিয়ে রাখি ,নতুন কিছুকে গ্রহন করতে আমাদের যত ভয় , হোক না তা মঙ্গলজনক !
@প্রদীপ দেব,
হাঃ হাঃ বিদগ্ধজনদের লিস্টে আমাদের নাম দেখে অভিভূত হলাম :)। না রে ভাই – আমার বেশি স্ট্রাগল করতে হয় নাই। বিবর্তন সম্বন্ধে দুই চারটা ভালভাল কথা বলছিলাম মনে হয় … তাতেই কম্ম সাবার 😀 :laugh: (বন্যা আশে পাশে নাই তো?)
আসল সত্যটা হল – ধর্ম ব্যাপারটা আমাদের জীবনে এতোটাই অপ্রয়োজনীয় ছিল (শুরু থেকেই), এটা নিয়ে আলাদা করে কোন কিছু ভাবারই অবকাশ পাই নি। 🙂
@অভিদা,
এই বিষয়টা আমাদের পরিবারে একটা জ্বলন্ত দুর্গ্রহ হয়ে এসেছিল।আমার একান্ত আপনজনদের উগ্রতায় আমার আরেক আত্মীয়ের জীবনটাই রীতিমত তছনছ হয়ে গেল।
আপনার বোধহয় খুব সমস্যা হয়নি।কারণ একটা মুক্তমনা পরিবারে জন্মানোর সৌভাগ্য আপনার হয়েছে।এটা আমাদের সমাজে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার…এখনো।
ভারতে যে যার ধর্ম ও নাম বহাল রেখে আন্তঃধর্ম বিবাহ করতে পারে।আমাদের দেশেও নাকি এ আইন আছে।কিন্তু কার্যকর খুব কমই হয়।উপরন্তু ‘প্রথম আলো’ তে এক বিটকেলে উকিলের লেখায় পড়েছিলাম বাংলাদেশের আইনে কোন ভাবেই মুসলিম মেয়ে অন্য ধর্মাবলম্বী কাউকে বিয়ে করতে পারবে না।এ ব্যাপারে সত্যি তথ্যটা জানতে চাই।মানে রেফারেন্স সহ।যদিও একান্তই ব্যক্তিগত তবুও উদাহরণ হিসেবে আপনার আর বন্যাদির বিয়ে কি করে হয়েছিল বলবেন কি?
এ জন্য দেখা যায় প্রায় সবাই মুসলিম হয়ে বিয়ে করে।রামেন্দু বাবু ফরহাদ নাম নিয়ে বিয়ে করেছিলেন।তাছাড়া ধর্মীয় নিয়ম ছাড়া বিয়ে তো সম্ভব।সমাজে সেসব আদৌ চালু হবে কি?মনে তো হয় না।অবিশ্বাসীরাও ধর্মীয় মতে বিয়ে করে বলে ,এটা সংস্কৃতি।আর তখন বিশ্বাসীরা ভণ্ডামির অভিযোগে তাদের দিকে আঙুল তোলে।এমন ব্যাপারও আমার পরিবারে হয়েছে।সংশয়বাদীতা ততক্ষণ পর্যন্তই গ্রহণযোগ্য,যতক্ষণ না তুমি প্রকাশ্যে বিদ্রোহ করছ।মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়ে ব্যাপারটা এত কৃত্রিম হলে এর দরকারটা কি?বিয়ের চাইতে লিভ-ইন অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর বলে মনে হয়।
@প্রদীপ দেব,
অভি বলেছে,
ধর্ম ব্যাপারটা নিজেদের কাছে অপ্রয়োজনীয় হয়তো অনেকের কাছেই, তবে সমস্যাটা তো শুধুই ব্যক্তিগত নয়, বরং সামাজিক। নিজেদের মধ্যে সমস্যা না থাকেলও সমাজ বাইরে থেকে বিভিন্ন রকমের বাধা সৃষ্টি করতে থাকে। আমরা মনে হয় বেঁচে গেছি দেশে থাকি না দেখে, সিভিল ম্যারেজ করেছি আমরা, যেখানে ধর্মের কোন জায়গাই নেই ( আগুন্তক, বিস্তারিত জানি না, তবে একটু ঝামেলা পোহাতে হলেও দেশেও সিভিল ম্যারেজ করা যায়, এটা জানি)। আর তারপরও যতটুকু সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল তাকে কোনভাবেই পাত্তা দেওয়া হয়নি। সমাজকে এক্কেবারে তুড়ি মেরে ব্যক্তিগত জীবন থেকে বের করে দেওয়ার মত ক্ষমতা বা অবস্থা আমাদের মত সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থায় কতটূকু সম্ভব হত তা বলা মুষ্কিল। যদিও লিবারেল ফ্যামিলি তে বড় হওয়ার কারণে আমাকে বা অভিকে তেমনভাবে সমাজের দায়বদ্ধতা মেনে চলতে হয়নি কখনই, কিন্তু দেশে থাকলে ব্যাপারটা যে এতটা সোজা হত না তা বোধ হয় চোখ বন্ধ করেই বলা যায়।
@বন্যাদি,
পুরোপুরি একমত। সিভিল ম্যারেজ বাংলাদেশে থাকলেও অধিকাংশ আইনজীবি এটা করতে চান না। কেউ কেউ ধর্মভীরুতার জন্য,কেউ কেউ মার খাওয়ার ভয়ে। গায়িকা মিতালি মুখার্জী আমাদের পাড়াতে থাকতেন।ওঁর বড় ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে এমনই ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল যেটা আমাদের বাসায় এ ব্যাপারে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। আমাদের বাসায় মুসলিম বিয়ে করার অর্থ প্রাণ হারানো নয়তো চাকরী-বাকরীর ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হওয়া। কেউ কেউ আবার এমনিতেই উগ্র। আমার অজ্ঞেয়বাদী মাসতুতো দাদা ধর্মীয় নিয়মে বিয়ে করার পর আমার বড়দা স্বয়ং ভণ্ডামির অভিযোগ তুলেছে। আমাদের পরিবারে বর্তমান প্রজন্মের প্রায় সবাই সংশয়বাদী এবং একজন দিদি পুরোপুরি নাস্তিক। তারপরও এদের বিয়েও ধর্মীয় নিয়মেই হচ্ছে!!!বায়োডাটায় ধর্মের জায়গায় “agnostic” লেখা দেখে আমার কাজিনের ইঞ্জিনিয়ার শ্যালক তাকে প্রায় দেড় ঘণ্টা জেরা করে। “গোমাংস খেলে এলার্জি আর কোলন-ক্যান্সার ছাড়া অন্য কোন সমস্যা নেই”- বলাতে বৌদি রীতিমত সিরাজদৌলার ভূমিকায় আনোয়ার হোসেনের মত চোখ করে আমার দিকে তাকালো।আরেকটু হলে ভস্মই করে ফেলে আর কি!!! :-Y