বুনো গল্প
ক্যাথেরীনা রোজারিও কেয়া
হাসনাইন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ না চুকতেই চারদিকে আবেদন করে রেখেছে, একটা স্কলারশিপ তার চাইই। দেশের বাইরে যে কোন জায়গাতেই হোক না কেনো যত ছোটই হোক না কেনো কোন একটা কোর্সে যেতে তাকে হবেই। এটা ইচ্ছে, শখ, জেদ যাই বলা হোক -হাসনাইন পিছু হটবে না। সারা জীবনের জন্যে অন্যদেশে সে থাকবে না কখনই, কিন্তু পড়তে সে যাবেই, যে কোন মুল্যেই।
লাইব্রেরী সাইন্সে মাস্টার্স শেষ করতেই বিয়ে করেছে হাসনাইন। বউ জিনাত বিএ পাশ। সুন্দরী, গোছানো এবং সংসারী মেয়ে। পঞ্চদশী হতে না হতেই বারান্দায় আর ছাদে চুল খুলে হেটেঁছে, পর্দা সরিয়ে পড়ার ঘরে বসে পড়েছে, এহেন খালাতো মামাতো চাচাতো ফুফাতো ভাই নেই যাকে সে প্রেম পত্র দেয়নি। পাশের বাড়ীর ছেলে, বান্ধবীর ভাই কেউই বাদ পড়েনি। কিন্তু কোন একটা কারনে ব্যাটে বলে এক হয় নি। কেউই আগ্রহ দেখায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে সব কায়দা ই করে দেখেছে। ছেলেদের দিকে চোরাচাউনী দিয়েছে, ডেস্কে বসতে গিয়ে কনুইয়ের ধাক্কা দিয়েছে যেন অনিছাকৃত ভাবে লেগে গেছে, সিড়িতে ভীড় দেখে হাত থেকে বই ফেলে দিয়ে আশা করেছে কেউ এসে উঠিয়ে দেবে। তখন চোখাচোখি হবে। চৈতালী নামের বাসে যাতায়াত করত সে। বাসের হাতলে হাত দিতে গিয়ে ইচ্ছে করে কোন ছেলের হাতের উপর হাত দিয়ে “ইশ সরি” বলে হাত সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কাজে লাগেনি কোনটাই।কেউই আটকায়নি তার জালে। হাসনাইনের খালা বিয়ের প্রস্তাবটা আনতেই এক বাক্যে সবার আগেই জিনাত রাজী হয়ে গেছে।
বিয়ের পরদিনই পুরোদস্তুর গৃহিনী হয়ে গেছে সে। স্বামী কি কাপড় পড়বে, কি বলবে, কি করবে, কি খাবে, কোথায় যাবে সব তার জানা এবং নিয়ন্ত্রণ করা চাই। ঘরে এমন একটা পুতুল থাকতে কে সময় নষ্ট করে? দিনের ২৪ ঘন্টাই সে ব্যবহার করে স্বামীর পছন্দের রান্না রাঁধতে, স্বামীর কাপড় ধুয়ে, শুকিয়ে ইস্ত্রী করতে, জুতোয় কালি দিতে। হাসনাইন বিয়ের পর তো অবাক। কি কান্ড, এ তো প্রেমের অত্যাচার! প্রথম দিকে বন্ধু বন্ধু গলায় বলেছিলো- আরে এসব তোমার কাজ না-রক্তচক্ষু দেখেছে তার বিনিময়ে। পরে মিনমিন করে প্রতিবাদ করেছে কয়েকবার। ‘লাল চেক শার্ট পড়বো না- বিছানার চাদর চাদর মনে হয় অথবা পাঞ্জাবীর সাথে পাজামা না পড়ে-জিন্স পড়ি? কিন্তু কোন লাভ হয় নি। বউ তার আরো বেশী “যত্ন” করেই চলেছে।
মাঝে মাঝে হাসনাইনের মনে হয় জিনাতের অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসর্ডার আছে।একবার মাথায় কিছু এলে যতক্ষণ পর্যন্ত তা’ না করছে ততক্ষণ ওর শান্তি নেই। হাসনাইনের দম বন্ধ হয়ে এলেও জানে জিনাত যা করে তা নির্ভেজাল প্রেম থেকেই করে। মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, মনে হয় জিনাত ওকে বিয়ে না করে বিয়ে করেছে এই সংসারটাকে।
এই উপলব্ধিটা মুখ ফুটে বলতে চেয়েও বলা হয় নি, বলা যায় না। বললেই শুরু হয়ে যায় ‘আমি না থাকলে তো বানের জলে ভেসে যেতে, শিয়াল কুকুরে ছিড়ে খেতো’। সাথে থাকবে থালা বাসনের ঝনঝন শব্দ, ফ্রিজের দরজা খোলার আর বন্ধের দুরুম দুরুম আওয়াজ, সব মিলিয়ে ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। সংসারের কপালে লাথি এবং ঝাঁটা মেরে গ্র্বহত্যাগের সংকল্প জানানোর পর কান্নাকাটি এবং দোষারোপের পর অধিবেশন শেষ হয়। হাসনাইন একে প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই ভাবে না তাই মুখও খোলে না।
যেদিন জিনাত জেনেছে স্বামী বিদেশে পড়তে যাবার স্বপ্ন দেখে, সেদিন থেকে সেটা ওরও স্বপ্ন হয়ে গেছে। যার তার কাছে জানতে চায় এ বিষয়ে, খবরের কাগজ দেখে, ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করে, কোথাও কিছু মেলে কিনা। ও চায় না বুড়ো বয়সে স্বামীর কপালের বলি রেখা জুড়ে ব্যাথর্ততা লেখা থাকুক।
হঠাৎ করেই একটা বিজ্ঞাপন জিনাতের চোখে পড়ে যায়। কুমিল্লার কোন এক মিশনের এক পাদ্রী একজন লাইব্রেরীয়ান খুঁজছেন । জ়িনাত স্বামীকে বোঝালো বিদেশী পাদ্রীদের সাথে কাজ করলে বাইরের যাবার বিষয়টা সহজ হতে পারে। যদিও ঢাকা ছেড়ে কুমিল্লা শহরের বাদুরতলার কোন এক মাত্রী সদনের গলিতে দুখানা কামরার একটা লাইব্রেরী মোটেও টানছিলো না হাসনাইন কে কিন্তু জিনাতের কথায় বরাবরের মত যুক্তি খুজে পেল সে। না পেয়েও উপায় নেই। ও ঠিক করেছে সরাসরি চলে যাবে, কথা বলবে পাদ্রী বাবুর সাথে।
রেজ্যুমি হাতে সত্যিই তারা উপস্থিত হোল। পাদ্রী বাবু মধ্যবয়সী, নিরাসক্ত মুখের মানুষ । প্রথমে অবাক হলেন পরে ডিগ্রী দেখে খুশী হলেন। বললেন, ভাঙ্গা মাস, পরের মাসের প্রথম থেকেই শুরু করা যায়। বাংলায় কথা বলেন পাদ্রী কিন্ত হাসনাইন লক্ষ্য করল তুমি বা আপনি সম্বোধন এড়িয়ে ভাব বাচ্যে কথা বলেন তিনি।
জিনাত আগেই সব ঠিক করে রেখেছিল, ময়নামতি, শালবন বিহার, বার্ডের অফিস সব দেখে ফেরা হল ঢাকায়। এসেই বাক্স প্যাটরা গুছিয়ে লম্বা সময়ের জন্যে কুমিল্লা যাবার প্রস্তুতি শুরু হল। জিনাতের সংসারের সব কিছুর প্রতি দারুণ মায়া। যত্ন করে কাপ পিরিচগুলো আলাদা আলাদা করে খবরের কাগজে প্যাঁচালো। হাড়ি বাসন ঘষে মেজে গুছিয়ে নিলো।
মাস শেষে ওরা কুমিল্লায় এসে ভাড়া বাসায় উঠলো। শহরটা ছোট। লোকজন ও কম আসে লাইব্রেরীতে, ধর্মের বই ছাড়াও অন্য বই আছে। ওখানে কাজ করে হাসনাইন ছাড়া আর একজন দাড়োয়ান , খইনী না খেয়েও সারাদিন ঝিমোয় সে। পাদ্রী বাবুর পোষ্য সে, বহু বছর রয়েছে এই মিশনে।
মাস না যেতেই সুযোগ বুঝে হাসনাইন পাদ্রী বাবুকে গোপন ইচ্ছেটা বলেই ফেললো। অবশ্য জিনাতই বলে দিয়েছিল যে আর দেরী করা যাবে না। আজ না বললে ঘরে তুলকালাম বেঁধে যেতো।পাদ্রী বরাবরের মত নির্মোহ মুখ করে শুনলেন।
জ়িনাত একমাসে এমন করে সংসারটা গোছালো যে আশে পাশের মহিলারা তারিফ না করে পারল না।হাসনাইন আর জিনাত মাঝে মাঝে টমসন রোড ধরে বেবী ট্যাক্সী নিয়ে বেড়িয়ে আসে। ধর্ম সাগরের পাড়ে গিয়ে বসে, মাতৃভান্ডারে বসে রসমালাই খায়, আদি খাদির দোকানে যায় নতুন কি এলো দেখতে। জিনাত স্বামীকে খদ্দরের পাঞ্জাবী, শার্ট, ফতুয়া, সাঞ্জাবী পড়াতেই ব্যাস্ত।
একদিন কোন ভূমিকা ছাড়াই পাদ্রী হাসনাইনের হাতে একটা খাম ধরিয়ে বললেন, নয় মাসের ডিপ্লোমা কোর্স, সিঙ্গাপুরে। বউ এর সাথে আলাপ করে কাল জানিও।
হাসনাইন আবেগে আপ্লুত, পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে গিয়েও পিছিয়ে এলো। বিদেশী পাদ্রী কি না কি ভাববে ।
জিনাত কথাটা শোনার সাথে সাথেই পুর্ণিমা হাসি হেসে বললো, ‘যাক! এতোদিনে!!!’
ওদের পরিকল্পনার শেষ নেই। জিনাত সারাদিন ধরে ভাবে শার্ট প্যান্ট পড়ে , চোখে সানগ্লাস দিয়ে স্বামীর হাত ধরে হাঁটবে , ছবি তুলে হিংসুটে সব খালাতো বোনদের পাঠাবে। স্বামী কি কাপড় পড়ে এয়ারপোর্টে যাবে তাও ঠিক করে ফেলেছে জ়িনাত। সকালে আজকাল স্বামীকে সে নাস্তা করতে ডাকে না, বলে- ব্রেকফ্যাস্ট খেতে এসো, রুটিতে মাখন লাগিয়ে বলে-নাও বাটার লাগিয়ে দিলাম। বলে সল্ট টা এগিয়ে দাও তো।হাসনাইন জিনাতের কান্ড দেখে আর হাসে।
আর মাত্র দুমাস পর ই ওদের ফ্লাইট। কাগজপত্র সব ঠিক, হাসনাইনের অবর্তমানে যে লোকটিকে ঠেকা দেবার জন্যে রাখা হবে, তাকে ট্রেনিং ও দেয়া হয়ে গেছে।
সেদিন ছিলো বুধবার। হাসনাইন সন্ধ্যেবেলা ঘরে ঢুকেই বুঝলো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। বসার ঘরের সোফায় পা তুলে বসে আছে জিনাত। দেখা মাত্রই বলল, আলাপ আছে। হাসনাইন জানে আলাপ না জিনাত বলবে আর ও শুনবে। মনটা প্রস্তুত করে নিলো সে। জিনাত বললো ‘আমাদের বিদেশে যাওয়া হবে না, তোমার ঘরে নতুন মানুষ আসছে। হাসনাইন বুঝলো না এই আনন্দের খবরটা এতো বিষাদক্লিষ্ট হয়ে বলা হচ্ছে কেন। গম্ভীর গলায় জিনাত বললো, কোথায় হাত পা ঝাড়া হয়ে ঘুরে বেড়াবো, ছবি তুলবো, আটঁসাট কাপড় পড়বো -নাহ কি এক যন্ত্রণা বাঁধলো। হাসনাইন অবাক হয়ে শুনছে আর জিনাতের টানাপোড়েন টের পাচ্ছে।
রাত বাড়লো, কারো মুখে কথা নেই। হাসনাইনের খুব কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না। জিনাতও কি জেনো ভাবছে। তিন দিন ঘরে টু শব্দ টি হোল না।
শনিবার সকালে হাসনাইন যখন কম্প্যুটারে কাজ করছিল জিনাত ওর স্যান্ডো গেঞ্জী পড়া পিঠে আঁকিবুকি করতে করতে বললো, পাশের বাসায় এক মহিলা এসেছিল আজ, গাছ গাছড়ার ওষুধ জানে- হাসনাইন বুঝতে পারছে না আলাপ কোন দিকে এগুচ্ছে। জিনাত বলছে -মহিলা বলেছে কঠিন না বিষয়টা, সকালে ওষুধ খেলে দুপুরের ভেতরেই ‘খালাস’। খালাস শব্দটা হাসনাইনের বুকে হাতুড়ির ঘা দিলো যেনো।খালাস? ভ্রুণ হত্যা মানে খালাস? জিনাত বলে যাচ্ছে তোমার কতদিনের শখ, ওখানে আনন্দ করবে নাকি আমার শরীর নিয়ে ভাববে? আর আমি তো তোমায় একা যেতে দিতে পারি না, তাই না? তুমিও তো যাবে না আমাকে ছাড়া। ঠিক কিনা?
হাসনাইন বলতে চেষ্টা করলো, গাছ গাছড়ার ওষুধ সবাই জানে না। কি করে জানলে যে ও সত্যি ওষুধপত্র জানে? কোথাকার কে? তার চেয়ে চল ক্লিনিকে যাই, আলাপ করি, সামনেইতো মাতৃসদন। শোনা মাত্রই ধমকে উঠছে জিনাত। বলেছে, কি জানো তুমি গাছ গাছড়ার? কেটে গেলে গাদা পাতার রস, পেট খারাপে তেলা কচুর পাতা, মাথা ব্যাথায় কপালে নারকোল ফুল বাটার পট্টি, ফোড়াতে হলুদ বাটা, শিমুল কাঁটা বাটা এগুলো দেয় না মানুষ? হাসনাইন বলতে চেষ্টা করেছে, কে দিচ্ছে ওষুধ সেটা দেখবে না? জিনাত রক্তচক্ষু দেখিয়ে বলেছে যা জানো না, তা নিয়ে কথা বলো না। এই ছোট শহরে আমি মাতৃসদনে যাই আর লোকে জেনে যাক যে আমরা কি করছি তাই না? বুদ্ধির ঢেকি একটা। জিনাত আরো বললো, কাল রোববার, মহিলা আসবে। এখনি বেরিয়ে যাও, ঢাকা থেকে তোমার মাকে নিয়ে এসো। যেতে আসতে সব মিলিয়ে বড়জোড় সাত আট ঘন্টাই লাগবে। যাও যাও বসে থাকলে চলবে না, এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ো। হাসনাইন জানে এখন ওকে তাড়িয়ে বেড়াবে যতক্ষণ না ঢাকার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বেরুচ্ছে ও।
জিনাত সকালে উঠেই চান করে লাল পেড়ে সাদা শাড়ী পড়েছে। কেমন স্ফুর্তি স্ফুর্তি ভাব সাথে অস্থিরতা। কোন কিছু পরিকল্পণা করে শেষ না হওয়া পর্যন্ত ও নিজেও শান্তিতে থাকে না, আশে পাশের কাউকে তিষ্টতেও দেয় না।
ন’টা না বাজতেই কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খুলে দিতেই মধ্য বয়সী এক মহিলা চোখে মুখে কিছু একটা লুকোনর ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকলো। চোখের ইশারায় জানতে চাইলো কোন ঘরে। জ়িনাতই তাকে শোবার ঘরে নিয়ে এলো। হাসনাইনের কিছুই ভালো লাগছে না। মা আর সে বারান্দায় চুপ করে বসে রইলো।
ঘন্টা আধেক পর জিনাত ঘর থেকে বেরিয়ে এলো, মহিলা তার কাপড়ের পোটলা নিয়ে চলে গেলেন। জিনাত স্বামীকে বললো গাছ গাছড়ার গুণই আলাদা। হাসনাইন চিন্তাক্লিষ্ট। কিন্তু আবার ভাবছে জিনাত হয়তো ঠিকই করেছে। ওর মা ওদের ব্যাপারে কখনোই কিছু বলেন নি, আজো কিছু বললেন না।
বেলা গড়িয়ে বারোটা বাজলো, জিনাত অন্য ঘরে। হাসনাইন উঠে এসে বললো, ‘কেমন বোধ করছো?’ জিনাত বললো কিছু না-কি জানি কি খেলাম? একটু গরম লাগছে এই যা। ঘন্টা খানেক বাদে জিনাত স্বামীকে ডেকে বললো পাখাটা চালিয়ে দাও তো। অস্থির লাগছে, শরীরের ভেতর জ্বলছে । অসুখের সময় জিনাতের সেবা, পরিচর্যা করছে হাসনাইন, হাত পা টিপে দিয়েছে, জ্বর হলে মাথায় পানি দিয়েছে। মাথা গরম হলে নারকোল তেলে পানি মিশিয়ে তালুতে দিয়েছে, কিন্তু আজ বুঝতে পারছে না এটা অসুখ নাকি এমনি হবার কথা।
জিনাত বিছানার চাদরে পা ঘষ্টাতেঘষ্টাতে শাড়ীটাকে হাঁটুর ওপরে উঠিয়ে এনেছে। হাঁসফাঁস করছে এখন। জিনাতের কাছে যেতে হাসনাইনের কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছে। তবু কাছে এসে দেখল জিনাতের চোখের কোনাগুলো লাল হয়ে ফুলে উঠেছে। গায়ের এখানে ওখানে রক্ত জমাট বাধাঁর মত লাল লাল ছোপ। মাকে ডাকতে ঘর থেকে বাইরে এলো হাসনাইন। মা বারান্দায় নেই। ফিরে এসে হাসনাইন দেখে জিনাতের হাত পা ফুলে উঠেছে। ফ্যাসফেসে গলায় বললো ‘এই পানি আনো তো এক গ্লাস’। পানি হাতে ঘরে এসে হাসনাইন দেখলো জিনাতের গলা দিয়ে ঘরঘর আওয়াজ বেরুচ্ছে। হাত বাড়িয়ে গ্লাসটা নিতেই হাসনাইন লক্ষ্য করলো হাতটা ফুলে সোনার চুড়িটা মাংসের ভেতর কেটে ঢুকে গেছে। চিড়ে রক্ত বেরুবার জোগাড়। এক সময় জিনাতের চুড়ি পড়া হাত দেখলেই হাসনাইন বলতো- সোনার হাতে সোনার কাঁকন, কে কার অলংকার। বলতো চুড়িগুলো ধন্য তুমি ওদের পড়েছো বলে।
আজ ভীষণ বিভৎস লাগছে জিনাতের হাত। চোখ দুটোকুঁচকে এসেছে, নাকের পাটা থরথর করে কাঁপছে। মুখ খুলে পানির গ্লাসটা মুখের কাছে ধরতেই ভক করে একটা মাংস পচাঁ গন্ধ বেড়িয়ে এলো। হাসনাইন দু’পা পিছিয়ে গেলো- জিনাতের শরীরে পচন নাকি?
এর মধ্যে হাসনাইনের মা এসে দাঁড়িয়েছেন। কেউ ই বুঝতে পারছে না কি করা উচিত। এখনতো লোক জানাজানি হবে আরো বেশী। জিনাত – মা মাগো বলে কাৎরাচ্ছে, কোকাঁচ্ছে। পেটিকোট, ব্লাঊজ়ের বাঁধন আলগা করে দিয়েছে। এত কিছুর মধ্যেও স্বামীকে ধমক দিয়ে বললো ‘ও ঘরে যাও না, এখানে সঙ্গের মত দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
হাসনাইন সরে এলো।কিন্তু কিছুতেই স্থির হতে পারছে না। সিদ্ধান্ত না নিতে না নিতে সিধান্ত নেবার যোগ্যতা হারিয়েছে সে। সব কিছুতেই জিনাতের ওপর নির্ভর করতে করতে তার ও যে কিছু বলার বা করার থাকতে পারে সেটাই ভুলে গেছে সে। এমন একটা সময়ে তার সব কিছু ভুলে স্ত্রীকে বাচাঁবার সব্বোর্চ চেষটা করা উচিত। কে কি বললো কে কি ভাবলো তার অনেক উর্ধে উঠে গেছে পরিস্তিতি।কিন্তু বিয়ের পর থেকে জিনাতের কথায় চলতে চলতে কখন যে কি করতে হবে এটাও সে বোঝে না এখন। কি করবে , কি করা উচিত এটা ভাবতে ভাবতে ই প্রচুর সময় নষ্ট হয়ে গেছে এটা উপলব্ধি করতেই হাসনাইন তড়ি ঘড়ি ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো, কোথায় আর কাছে যাবে সে কিছুই জানে না তবু কিছু একটা করতে হবে তাকে। আপাতঃত মাত্রীসদনের দিকে ডাক্তারের খোজে যাওয়াই ঠিক হবে ভাবলো সে। ঘর থেকে বেড়িয়ে একটা রিক্সার জন্যে মিনিট পাচেক দাড়াতেই দেখলো মন্থর গতিতে একটা রিক্স এগিয়ে আসছে, উঠতে যাবে ওমনি পেছন থেকে মায়ের গলা শুনে ঘুরে দাড়ালো হাসনাইন। মা খালি পায়ে রাস্তায় নেমে এসেছে বলছে , ঘরে চল খোকা, সময় নেই।”
হাসনাইন বিয়ের সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলো সব যাত্রায় সঙ্গী হবে জিনাতের আর আজ “শব যাত্রায়” সঙ্গী হতে পারছে না সে। বুঝে গেছে কোন কিছুতেই জিনাতকে ফেরানো যাবে না আর। পাশের ঘর থেকে এখন মাংস পচা গন্ধ বেরুচ্ছে এখন, সাথে পা দাপানোর শব্দ। বিশাল বিকট শব্দ। না পেরে হাসনাইন ছুটে গিয়ে দেখলো- জিনাতের অমন পেলব শরীর টা ফুলে ফেপে বিটকেল বিশাল আকার ধারণ করেছে। ঘরে দম বন্ধকরা বিভৎস গন্ধ। মুখটা আকৃতিহীন লাগছে, চোখগুলো খোলা ছাদের দিকে তাকানো। চোখের মণিমনি দুটো ঠিকরে বেরুচ্ছে, নাক থেকে হলদে মত কি যেন গড়িয়ে পড়ছে। মুখটা হা করে খোলা, দাঁতগুলো ঘোড়ার দাঁতের মত নেমে এসেছে, ঠোঁট দুটো চিড়েছে। এখন রক্তাক্ত। দেহটা দাপাতে দাপাতে কেমন আস্তে আস্তে স্থির হয়ে এলো হাসনাইনের চোখের সামনেই।
হাসনাইন মায়ের মুখের দিকে তাকাতেই মা বললেন, ‘পুলিশ আসবে, যা পাদ্রী বাবুর কাছে যা’। হাসনাইন লাশ ফেলেই হাউমাউ করে কেঁদে পাদ্রীবাবুর কাছে গিয়ে বলতে লাগলো, ‘আমাকে বাঁচান। কি করতে কি হল। আমি বুঝি নি’। পাদ্রী সব শুনে বললেন, পুলিশ আসলে দেহটা ফালা ফালা করে কাটা হবে। সেটা নিশ্চয় চাও না। তিনিই ব্যবস্থা করলেন সব।ততখনে মফস্বল শহরটা ঝিমিয়ে এসেছে, চারদিক শুনশান। শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার একটানা শব্দ। এদিক ওদিক থেকে ভেসে আসছে আতা ফুলের গন্ধ, কালী মন্দির থেকে শোনা যাচ্ছে খঞ্জনীর মৃদু আওয়াজ। সেই পোষ্য দাড়োয়ান ই কবর কাটলো। লাশটার স্নান হোল না, চাটাইয়ে মুড়িয়ে জাম কাঠের একটা বাক্সে টেনে হিচঁড়ে দুর্গন্ধ বিকট নিঃস্পন্দ নিথর দেহটা ঢোকানো হলো। গীর্জার কবরস্থানের পেছনের দিকে জিনাতের শোবার জায়গা হোল।
হাসনাইন এখনো সেই লাইব্রেইরীতে চাকরী করে, সিঙ্গাপুরে যাওয়া হয়নি তার। সেদিনের বিষয় নিয়ে পাদ্রী বাবু, ওর মা এমন কি দারোয়ান কেউ কখনো কিছু বলে নি।
হাসনাইন রোজ কাজ শেষে বাড়ি আসে। বারান্দার আলোটা জ্বালায়, হাত মুখ ধুয়ে একটা থালায় ভাত তরকারী নিয়ে কম্প্যুটারের সামনে এসে বসে। ইদানিং ভাবছে লম্বা কোন কোর্সের চেষ্টা করলে কেমন হয়। জার্মানীর ড্যাড, নেদারল্যান্ডের এনএফপি, জাপানের মনবুশো, চায়নার সিএসসি, অষ্ট্রেলীয়ার এডিএস, ইউডাবলুএ…………।
পায়ে হেঁটেই ঘরে ফেরে হাসনাইন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঘিরে ধরে থাকে আর মজা দেখে, দেখে কি ভাবে বিড় বিড় করতে করতে হাসনাইন পথের ধারের লতা গুল্ম পাতা টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে পা দিয়ে পিষে মাড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে দিতে বলে, ‘আবর্জনা, বুনো আবর্জনা সব’।
এই রকম হাসনাইন সমাজে যতদিন বিচরন করবে, ততদিনে সমাজ বদলের কোন আশা নাই।
@আতিক রাঢ়ী,
হাসনাইন সমাজ বদলে কী বাঁধা দিলো বুঝলাম না। আমার কাছেতো এই গল্পে তাকেই ভিক্টিম মনে হয়েছে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই জিনাত ডমিনেট করেছে তার উপর। আর হাসনাইন তার অযৌক্তিক আচরণগুলোকে মেনে নিয়েছে প্রতিবাদহীনভাবে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ধরে নিয়ে। আমার কাছে হাসনাইনের এই গোবেচারা নিরীহ মেরুদন্ডহীনতাই বরং ভয়ংকর বিরক্তিকর লেগেছে। কিন্তু সমাজের জন্য ক্ষতিকর কোন জীব বলে মনে হয়নি তাকে আমার মোটেই।
গর্ভপাতের সিদ্ধান্তটাও কিন্তু জিনাতই নিয়েছে তার বিদেশ ভ্রমণের তীব্র আকাঙ্খার কারণে। তার শরীর সিদ্ধান্ত সে নিতেই পারে। এতে আমার বলার কিছু নেই। তবে সেক্ষেত্রে সন্তানের বাবার ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্যই থাকবে না কেন সেটা আমার মোটা মাথায় ঢোকে না কিছুতেই। পুরুষরা হয়তো গর্ভে সন্তান ধারণ করে না, কিন্তু তাই বলে গর্ভস্থ সন্তানের প্রতি তাদের কোন মানসিক সংযোগ নেই সেটাই বা বলি কী করে। সিদ্ধান্তটা দুজনে মিলে আলোচনা করে নিলেই মনে হয় অনেক বেশি ভাল হয়।
যাই হোক, শরীর তার, কাজেই জিনাত তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাসনাইনের মতকে উপেক্ষা করে। ভাল, কিন্তু কথা হচ্ছে কোন হাসপাতালে বা মাতৃসদনে না গিয়ে টোটকা চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়াতে বোঝা যায় যে কতখানি কুশিক্ষায় শিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সে। তার করুণ পরিণতি আসলে সে নিজেই ডেকে নিয়ে এনেছে। হাসনাইনের কোন ভূমিকাই নেই এখানে, একমাত্র তার প্রতিবাদহীনতা ছাড়া।
পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার বলে গালি খাবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বলছি এই গল্পে আমার সমবেদনা হাসনাইনের প্রতিই। আমার কাছে সমাজ বদলে যদি কেউ বাঁধা হয়ে থাকে তবে সে হাসনাইন নয়, বরং জিনাতই।
@ফরিদ আহমেদ, নাহ, ফরিদ ভাই, যান, আপনাকে এবার পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতার দায় থেকে মুক্তি দেওয়া গেল। আপনার সাথে আমি মোটামুটি সব বিষয়েই এমকমত, একটা ছোট্ট জায়গা ছাড়া। আমার উপরে বলা মন্তব্যটা বোধ হয় একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। বাবাদের অবশ্যই অধিকার আচ্ছে, এ ব্যাপারে কথা বলার, আলোচনা করার, এমনকি সিদ্ধান্ত গ্রহণে মেয়েদের প্রভাবিত করার। কিন্তু আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, আল্টিমেটলি সর্বশেষ সিদ্ধান্তটা মেয়েদের হাতেই থাকা উচিত। এই পুরো ব্যাপারটাই এবং সিদ্ধান্তটা যে কোন মেয়ের জন্যই অত্যন্ত কষ্টকর একটা বিষয়। তাই প্রয়োজন, মেয়েরা যাতে কুসংস্কার, সামাজিক ভয় ভীতির বাইরে এসে সঠিকভাবে, সবকিছু বিবেচনা করে, সিদ্ধান্তটা নিতে পারে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা ।
@বন্যা আহমেদ,
আমার আবার এই ছোট্ট জায়গাতে কোন দ্বিমত নাই। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
>>>হাসনাইন সমাজ বদলে কী বাঁধা দিলো বুঝলাম না। আমার কাছেতো এই গল্পে তাকেই ভিক্টিম মনে হয়েছে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই জিনাত ডমিনেট করেছে তার উপর। আর হাসনাইন তার অযৌক্তিক আচরণগুলোকে মেনে নিয়েছে প্রতিবাদহীনভাবে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ধরে নিয়ে। আমার কাছে হাসনাইনের এই গোবেচারা নিরীহ মেরুদন্ডহীনতাই বরং ভয়ংকর বিরক্তিকর লেগেছে। কিন্তু সমাজের জন্য ক্ষতিকর কোন জীব বলে মনে হয়নি তাকে আমার মোটেই।>>>
গল্পের যে অংশে হাসনাইনের ভূমিকার প্রতি আমার আপত্তি তা নীচে তুলে দিচ্ছি-
>>>হাসনাইন বলতে চেষ্টা করলো, গাছ গাছড়ার ওষুধ সবাই জানে না। কি করে জানলে যে ও সত্যি ওষুধপত্র জানে? কোথাকার কে? তার চেয়ে চল ক্লিনিকে যাই, আলাপ করি, সামনেইতো মাতৃসদন। >>>
এখানে জিনাত আর হাসনাইনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, হাসনাইন আপেক্ষাকৃ্ত সচেতন। সে তার সচেতনতা নিয়ে কি করলো ? কেন বাঁধা দিতে পারলনা ?এটা কি ধরনের ভালবাসার প্রকাশ হলো ?
একজন অসচেতন, সেটা অবশ্যই অন্যায়। তবে এই অন্যায়ের দায় ভার পরিবার ও সমাজের উভয়ের উপরে সমানভাবে বর্তায়। আর সচেতন হবার পরেও যখন আপনি তা কাজে লাগান না তখন সেই অপরাধ ক্ষমাহীন। যে সমাজ আপনাকে সচেতন হয়ে উঠার সুযোগ করে দিল, এটা সেই সমাজের প্রতিও অন্যায়।
বন্যা,এ নিয়ে নারী সংগঠনগুলো কাজ করে যাচ্ছে। সময়ের দাবী হলেও আমরা — নারীরা তা সব সময়ই সময় খুইয়ে পাই।
শুধু সামাজিকতা আর পরিকল্পনার দোহাই দিয়ে কত জীবনই না অগোচরে ঝরে যায়। আসি আসি করেও তারা আসতে পারে না অপূর্ব সুন্দর এই-পৃথিবীতে।
মায়ের মমতার লোভ সামলাতে পারেনা দেখেই হয়তো মাঝে মাঝে পৃথিবী থেকে যাবার সময় সাথে করে নিয়ে যায় তাদের মা’কেও।
সত্যিই সুন্দর, সুন্দর সত্যিই।
কেয়া, গল্পটি আমাকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়েছে।
নির্মম বাস্তবতার সম্মুখিন করে দিল আপনার অসাধারণ গল্পটি।
আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের টানাপোড়ন, পরিকল্পনাহীনতা, আজন্ম লালিত কুৎসিত মানসিকতা এতে জীবন্ত হয়ে ফুটে উটেছে।
আর নারীজন্ম কি আসলেই আজন্ম পাপ?- প্রশ্নটির উত্তর খুজে পাইনি।
@সৈকত চৌধুরী,
সৈকত, জানি তুমি মেয়েদের প্রতি অনেক সহানুভুতি থেকে কথাটা বলেছ, কিন্তু তোমার সাথে আংশিকভাবে দ্বিমত না করে পারছিনা। এভাবে ঢালাওভাবে মেয়েদের সম্পর্কে কথাটা বলা বোধ হয়,এ যুগে আর ঠিক না। তোমার প্রশ্নের উত্তরটাও কিন্তু আজ আর তেমন ‘অজানা’ নেই। দুঃখজনকভাবে,পৃথিবীর বহু জায়গায়ই তোমার কথাই ঠিক,বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজি্ক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং বিশেষতঃ অর্থনৈতিক কারণে মেয়েরা ভিষণভাবে নির্যাতিত এবং বৈষম্যের স্বীকার। কিন্তু যে সব জায়গায় মেয়েদের সত্যিকার অর্থে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে কিন্তু মেয়েদেরকে দেখলে এত পাপ-টাপের কথা আর মনে আসবে না। অদেরকে কোন অংশেই পুরুষের চেয়ে ছোট বা ‘অভাগা’ বলে মনে হবে না।
@বন্যা আহমেদ,
আপনার সাথে একমত।
দিদি, বাচ্চা ধারণ করা ও জন্ম দেয়া এবং এবরশন এর ঝুঁকি কিন্তু নারীকেই নিতে হয়। তাই আমার মনে হয় সমানাধিকার প্রতিষ্টা করাই যথেষ্ট নয়। নারীদের ন্যায্য অধিকার সমানাধিকারের চেয়ে অনেক বেশি।
কেয়া,
খুব কষ্ট পেলাম আপনার গল্পটা পড়ে, খুব কষ্ট পেলাম।
বুনো গল্প। বুনো মানুষের গল্প। বুনো সমাজ ব্যবস্থার গল্প। এমনি হাজারো নারীর কাহিণী রয়েছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে। কুমারী মায়ের কাহিণী আছে। আছে নারীর অধিক সন্তানের বোঝা থেকে নিজেকে রক্ষা করে ভালভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে মৃত্যুতে বিলীন হবার গাঁথা। আমি একটি নারী সংগঠনের সাথে জড়িত বলে অনেক গোপনীয় ও অপ্রকাশিত ঘটনা জানি। এসব কতকথার ইতিহাস গল্পচ্ছলে হোক আর স্বনামেই হোক লিপিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন এবং এসবের অবসান হওয়া উচিত। নারীর শরীর এবং সেই সিদ্ধান্ত নিবে। কিন্তু তথাকথিত লোকলজ্জার ভয়ে আধুনিক ব্যবস্থা এড়িয়ে জীবনকে বাজি রেখে বুনো ব্যবস্থায় যাবে না। এজন্যে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি।
@গীতা দাস,
আপনার সাথে ১০০% একমত। এক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বার্থপরভাবেই আমি মনে করি, এ সিদ্ধান্ত এক্কেবারেই একটা মেয়ের নিজস্ব হওয়া উচিত। স্বামী, বন্ধু, রাষ্ট্র, সমাজ কারও, তার হয়ে, এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই। এবং নারী যাতে এ সিদ্ধান্ত সামাজিক, মানসিক এবং স্বাস্থ্যগত দিক থেকে নিরাপদভাবে নিতে পারে সেই ব্যাবস্থা করাটাই এখন সময়ের দাবী।
@বন্যা আহমেদ, :clap2: :yes: