খুব ব্যস্ত আছি ইদানিং। তাই নিয়মিত যেগাযোগ থেকে একটু বিচ্ছিন্ন, সাময়িক ভাবে। কিন্তু এ পোষ্টটি একটি তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া আমার। আজ (২৩শে নভেম্বর, ২০০৯) সকালের BD News 24 dot com এর একটা নিউজ আমাকে খুব নাড়া দিলো। সেটি হলো “আ্যমনেষ্টি কি নিহতদের ফিরিয়ে দিতে পারবে?”
গত ১৯ তারিখে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের রায় হলো, চৌত্রিশটা বছর পরে জাতি আজ অভিষাপ মুক্ত হতে চলেছে। এই সেদিনো এই খুনীর দল ব্যারিস্টার তাপসকে হত্যার উদ্যেশ্যে হামলা চালালো। তারপরেও আ্যমনেষ্টি কি করে খুনীদের ফাঁসীর রায় অমানবিক এবং অবমাননাকর বলে আখ্যায়িত করে?
আমার কাছে মনে হযেছে কোন সুস্থ এবং বিবেকবান এই রায়ের কার্যকারীতা ছাড়া ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করতে পারে না। এটাই মানবিক। এর ব্যাতিক্রমটাই এই ক্ষেত্রে অমানবিক বলে আমি মনে করি। ১৯৭৫ এর এই কালো অধ্যায়ের রেশ ধরেই দেশে বিগত ৩৪ বছর ধরে চলছে হত্যা ক্যূ এর ঘৃন্য রাজনীতি। কত শত মুক্তি যোদ্ধাকে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে, বুদ্ধিজীবিকে, ছাত্রনেতাকে, শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষককে, কবিকে, শিল্পীকে, অভিনেতাকে, সৈনিককে, ব্যবসায়ীকে, শ্রমীককে, মজুরকে, আমরা হাড়িয়েছি শুধু মাত্র এই ইস্যূটিকে কেন্দ্রকরে। এসব হত্যাকান্ডের বিচার এই মাটিতেই হতে হবে। হতে হবে বিচারের রায়ের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন। নইলে জাতি হিসেবে আমাদের স্বাধীন অস্তিত্ত্বের অবকাশ কোথায়? এই বিচার এবং রায় কার্যকরের জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত জাতির সামনে থাকতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির আছে বলে আমার জানা নেই যেখানে জাতীয় কোন নেতাকে হত্যা করে মৃত্যুদন্ডের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে হত্যাকারী বা হত্যাকারীরা, কিংবা রায় কার্যকর করা হয় নাই মানবিক বিচারে!
কি হাস্যকর! কি বিভৎস তামাশা! শুধু এই বাঙ্গালী জাতির ক্ষেত্রে! কারা এই মহান মানবিকতা সম্পন্ন ব্যক্তি বিশেষ? অমনেষ্টির এটা কি ধরনের ধৃষ্টতা যে তারা একটা স্বাধীন জাতির অকৃত্রিম মূল্যবোধকে যারা পদদলিত করেছিলো তাদের জন্যে দরদে গলে প্যাঁক? আমারতো মনে হয় আ্যমনেষ্টির এই ধরনের ঘোষনা এজাতির বোধ, বিবেক এবং ঐক্যের অন্তরায়। এবং সম্ভবতঃ আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার মূল লক্ষ্যের প্রতিলক্ষ্যের প্রবক্তা। সম্ভবত পঁচাত্তরের বেনিফিসিয়ারী ছাড়া কারোও পক্ষেই এই হত্যাকারীদের স্বপক্ষে সাফাই গাইবার সুযোগ নেই। সত্যিই এটা ভাবা একেবারেই অসম্ভব যে এতোবড়ো একটি নৃসংশ হত্যাকান্ডের পড়ে স্ব-স্বীকৃত দম্ভোক্তিকার হত্যাকারীদের ন্যায়দন্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে মানবিকতার প্রশ্ন! কিজানি আ্যমনেষ্টির বিঞ্জজনেরা গত চৌত্রিশটা বছর নাকে তেল দিয়ে নিশ্চিন্ত দিনাতিপাত করছিলেন কিনা! কাঁচা ঘুম থেকে জেগেছেন তো, তাই আবোল তাবোল বকছেন মনে হচ্ছে! বিশেষ বিশেষ জায়গায় তাদের মানবাধিকারের বিষয়টি জেগে উঠে! রহস্যটা আসলে কোথায়?
:line:
আপডেটঃ
সবাইকে অনুরোধ করবো যার যার মতো করে আপনার অসেন্তোষের কথা অমনেষ্টিকে জানান (একটি স্যাম্পল চিঠি রাখা আছে এখানে)। এমেনেস্টির সাইটে Contact us নামে একটি লিঙ্ক আছে সেখান থেকে আপনি আপনার বক্তব্য সরাসরি জানাতে পারবেন।
@Mr.Keshab K. Adhikary,
লেকচার আর যুক্তির ফাকেঁ ফাকেঁ আপনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,আপনার মাস্টার্সে পড়াশুনা আমার ভালো লেগেছে। আরও ভালো লেগেছে ২৪এ বক্তৃতার শুরুতেই আপনার এই কথায়!-‘তবে এ সংক্রান্ত বেশী তথ্য পাওয়া যায় প্রবীণ রাজনীতিবিদদের মুখে।’
আবার ২৩এর লেকচারে আপনার হাতের কাছে এ সংক্রান্ত ”তথ্যের কাগজপত্র” না থাকার পর যে সুন্দর বক্তৃতাটা দিলেন,ইহাতে বাঙালি/বাঙলাদেশী চরিত্রের উপর আমার ভালো ধারণা আরও মজবুত হলো!!
বেন্জামিন ফ্রাংলিন সর্বপ্রথম বলেছিলেন- ” ‘কী’ কি নয়, কে শুদ্ধ কে ভুল। যে জানে শুদ্ধ, সে শুদ্ধ,যে জানে ভুল,সে ভুল।”
মনে হয়,আজও আমরা যুক্তির তীর ‘বিষয়ে’ নয়,’ব্যক্তিরে’ মারি।Mr.Adhikary কি বলেন আমার শিক্ষিত বন্ধুবর!?
জনাব ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে যুক্তি তুলে ধরার জন্যে। এ বিতর্কটি অনেক পুরোনো, আপনার মতো আমারও একি ধারনা ছিলো এক সময়। তবে মাষ্টারস এর শেষ দিকে এসে যখন কিছু এলো মেলো বিষয়ে পড়াশুনা করছিলাম তখন চিন্তাটি নতুন করে মাথায় ঢোকে। আমি অনুসন্ধান করি তথ্যের। মজার ব্যাপার হলো, যতো তথ্য পাওয়া যায় এর সমালোচনায়; কোনো এটির প্রয়োজন ছিলো বা বঙ্গবন্ধু কেনো এই সিদ্ধান্তে গিয়েছিলেন তা কদাচিৎ পাওয়া যায়! তবে বেশী পাওয়াযায় প্রবীন রাজনীতিবিদ দের মুখে।
যাইহোক, এবার আপনার কথায় আসি, একেবারে সূচনা প্যারায় আপনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, আওয়ামীলীগ কি বললো বা ভাবলো তা আমার কছে ইমম্যটেরিয়েল! ওরা একটি রাজনৈতিক শক্তি, অযথা বিতর্ক বাড়িয়ে নিজেদের ইমেজ নষ্ট করার মতো বোকামী তারা করবে বলে মনে হয় না। প্রশ্ন হলো আমি সেই বোকামীটা করছি কেনো? আমি কোন রাজনৈতিক শক্তি নই এবং কোন অভিলাষও নেই। শুধু যেটা আছে সেটা হলো, খুঁজে দেখা যে, এ উদ্যোগ তিনি (বঙ্গবন্ধু) নিতে গেলেন কেনো।
আপনার দ্বিতীয় প্যারার জবাব, আমিকি একবারও কোথাও বলেছি যে বাকশাল গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা? তাহলে সাদাকে কোলো কিকরে করলাম? আমার বক্তব্যের মূল সুরটি অনুধাবন নাকরতে পারার দায় হয়তো আমার, তবুও আপনার ঞ্জ্যতার্থে: আমি দুটি বিষয়ের যৌক্তিকতা খুঁজছি,
. বঙ্গবন্ধু বাকশালের কনসেপ্টটি তখন নিলেন কেনো?
. তখন বাকশালের যৌক্তিকতা কতোটা ছিলো বা আদৌ ছিলো কিনা?
আমি তৃতীয় প্যারায় আশা করেছিলাম যে হয়তো একটা যুক্তি খুঁজেপাওয়া যাবে আপনার বক্তব্যে যে, কোন প্রেক্ষিতে এবং কেনো তিনি এই আপাতঃ ভুল সিদ্ধান্ত নিতে গেলেন! কিন্তু কি আশ্চর্য যে আপনি আমার বোকা বোকা (!) তর্কে বিরক্ত হলেন (আপনার বক্তব্যের সুরে মনে হয়েছে) অথচ তথ্যের বদলে আমার জিঞ্জাস্যটিই আবার তুলে ধরলেন,
এই অজানা কারনটি অনুসন্ধানই আমার উদ্যেশ্য। আমার যুক্তি নাহয় আবোল তাবোল (আমার নিজেরই খানিকটা দোদুল্যমানতা আছে!) কিন্তু আপনার কাজের যুক্তিটা অনুপস্থিত কেনো? সেনা শাসকদের ক্ষমতা দখলের অকাট্য যুক্তি সবসময় থাকে না। কখনো কখনো থাকে যখন কোন বৈধ সরকার সুনির্দ্দিষ্ট কারণে সেনা কর্তৃপক্ষের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। তবে সেটি অবশ্যি সাংবিধানিক পদ্ধতিতে হতে হবে, সে সংবিধান লিখিত হতে পারে আবার অলিখিতও হতে পারে। যেমন আমি যে, দক্ষিন কোরিয়ার উদাহরন টেনেছিলাম, সেটিও একটি ১৪ বছর মেয়াদের চুক্তি ছিলো এবং বলবৎ ছিলো ১৯৮০ সাল পর্যন্ত!
চতুর্থ প্যারায় যা বলেছেন, সেটি আমার জানা। কিন্তু সেখানে আমার ঔৎসুক্যের জবাব নেই, আছে সমালোচনা। আমি খুঁজছি তাঁর বাকশালের যৌক্তিকতা। যেহেতু বাকশাল কার্যকর হয়নি কাজেই তখনো বঙ্গবন্ধু স্বৈরশাসক হন নি। দেশী-বিদেশী চক্রান্ত মোকাবেলায় তখন তিনি অস্থির! যেমন আমেরিকার খাদ্যবাহী জাহাজের করাচী পৌঁছানো, নক্শালীদের প্রতিবিপ্লবী চক্রান্ত, দেশীয় মীরজাফরদের দৌরাত্ম! আমেরিকা-পাকিস্তান-সৌদি ষড়যন্ত্র ইত্যাদি আরকি। হয়তো আপনিই ঠিক আমিই ভুল; তবুও আমি অনুসন্ধানে রইলাম, কারন পুরো ব্যাপারটিই আমার কাছে রহস্যজনক! ধন্যবাদ।
জনাব আদিল মাহমুদ,
আপনার চমৎকার বিশ্লেষনের জন্যে ধন্যবাদ খুব ভাল লেগেছে এই কারনে যে একটি নির্মোহ দৃষ্টি কোন থেকে বিষয়টি বিবেচনার এবং চিন্তার অবকাশ এখনো এখানে রয়েছে। আর আপনাকে ভুল বোঝার অবকাশই বা কোথায়? আপনার লেখার সাথে তো বেশ কিছুদিনের পরিচয়! বিতর্ক চলছে, মাঝে মাঝে খোঁচা দিচ্ছি বটে খানিক বেশী কিছুর প্রত্যাশায়। যাইহোক, তবুও আমি দু-চারটি বিষয় নিয়ে আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই, নিছক আমার সীমাবদ্ধতার কপাটখানাকে একটু আলগা করে খুলে দেবার জন্যে। আপনি বলেছেন,
জনাব মাহমুদ, এর উপড়ের দুটি অনুচ্ছেদ সহ এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বলছি, আমার কিন্তু এখানে খানিকটা আপত্তি আছে। আপত্তিটা দুটি ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গী থেকে।
প্রথমতঃ রাজনৈতিক দল এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।
আর দ্বিতীয়টি হলো ব্যক্তির শাসন এবং দলীয় শাসন।
এবার আসি প্রথম বিষয়টিতে। তিনি (বঙ্গবন্ধু) সম্ভবতঃ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গঠন করতে চেয়েছিলেন বাকশাল। নানা মত ও পথের ধারনা নিয়ে সবাই সামিল হবে এখানে। জাতীয় নীতি নির্ধারনী বিষয় গুলোর চুলচেরা বিচার বিশ্লেষনের পরে তা যাবে ইমপ্লিমেন্টেশনে। নীতি নির্ধারনী ফোরামের সদস্যরাই কাজটি বাস্তবায়ন করবে বিধায় এখানে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন হেরফেরের সম্ভাবনা থাকবে না। সবচেয়ে বড়কথা যারা প্রকল্প প্রনয়ক তারাই বাস্তবায়ক বিধায় কাজের মধ্যে সর্ব্বচ্চো স্বদেশ প্রমের এবং আন্তরিকতার ছোঁয়া আশাকরা যায়। আমার হাতের কাছে রেফারেন্স সমূহ নেই বলে স্মৃতি নির্ভর হয়ে লিখছি। তবে প্রাসঙ্গিক ভাবে একটা কথা এখানে উল্লেখ জরুরী, সেটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন প্রবীন কমিউনিষ্টদের এক আড্ডায় তৎকালীন রংপুরের কমিউনিষ্ট নেতা কমরেড আব্দুল বারী ব্যাপারটা আমাকে অনেকটা এরকম ভাবেই বুঝিয়েছিলেন। পরে অবশ্য ঘেটে ঘুটে এই সিদ্ধান্তেই পৌঁছেছি।
তিনি আরোও বলেছিলেন, দেশে তো নানা ধরনের স্যাবোটাজ চলছিলো, তাই বহুদলীয় কোন্দলে না জড়িয়ে একই ফোরামে সব ভিন্নমতাবলম্বীদের মতামতকে সন্নিবেশ করা সহজ। যেহেতু ডেস্টিনেশন অনেকটা ঠিক করাই হয়েছিলো কাজেই কাজের সমন্বয়, সিকোয়েন্স এবং ইম্লিমেন্টেশনটাই জরুরী। তিনি সম্ভবতঃ তৎকালীন সোভিয়েত মডেলের উৎপাদন ব্যাবস্থায় যেতে চেয়েছিলেন তবে অর্থনৈতিক কৌশল সম্ভবতঃ রেখেছিলেন পশ্চিমী ধাঁচের সাথে সঙ্গতি রেখে। অন্য রাজনৈতিক দল বজায় রেখে এই জন্যে হতো না যে, এক এক রাজনৈতিক দল সমাজের এক এক অংশের স্বার্থ রক্ষায় পরিচালিত বা পরিপোষক বা প্রতিনিধিত্ব করে, তাতে মূল কাজটিই পন্ড হতো, নানা বিরোধীতায় হরতালে, আন্দোলনে ইত্যাদি। আর এই পরিস্থিতি নিশ্চই সদ্যস্বাধীন একটি দেশের বিদ্ধস্ত ইনফ্রাস্ট্রাক্চার পুনর্গঠনের সময় কাম্য হতে পারে না।
অন্যদিকে একক রাজনৈতিক দল, একটি ব্যাপক সর্বনেশে ব্যাপার বলেই আমার কাছে মনে হয়। বঙ্গবন্ধুর তেমন সদিচ্ছা থাকলে তো বাকশালের দরকার হতো না। উনি তখন দেশের প্রেসিডেন্ট! জাষ্ট একটি কলমের খোঁচায় গনেশ উল্টেদিয়ে সব রাজ নৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একমাত্র আওয়ামীলীগ দিয়েই বাকশালের কাজ করতে পারতেন, কিংবা স্বৈরশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ন হতে পারতেন, নয়কি? সুতরাং তাঁর বাকশাল গঠনের বা কনসেপ্ট টি নেবার পেছনে কিছু বিশেষ কারণ আছে এটি কি স্পষ্ট নয়? আজ যেমন ধরুন বহুদলের রাজনীতি চলছে, সংসদে আনেক রানৈতিক দলের নেতারা আছেন! অথচ বাস্তবে দেখুন, কোথায় প্রকৃত গনতন্ত্র? এটাকে কি গনতন্ত্র বলে আপনি হ্যাপী কিনা জানিনা আমি নই। বস্তুতঃ এতো একদলীয় শাসন! যদি বিরোধীদল সংসদে থাকতো তবুও। এমনকি এক ব্যাক্তির শাসন! কারন আমাদের সংবিধান মতেই সরকারী দলের সাংসদ বৃন্দ সরকারী দল কতৃক উত্থাপিত বিলের বিরোধীতায় যেতে পারবেন না! তাহলে গনতন্ত্র কোথায়? আমিতো দেখি এ পদ্ধতি বাকশালের চাইতেও ভয়ঙকর! নয়কি? আপনি যাদের সামান্য গনতন্ত্রে ঞ্জ্যানধারী বলছেন তারা ওতে (বাকশালে) না আঁৎকে বরং যেকোন সচেতন মানুষেরই বর্ত্তমানের পদ্ধতিতে আঁৎকে উঠার কথা! একটু তলিয়ে ভাবুন এবং বাস্তবের সাথে মিলিয়ে নিন দেখবেন আপনিও বুঝতে পারবেন।
আসলে গনতান্ত্রিক চর্চা তো আমরা দেখিনাই তাই বুঝতে হয়তো বিষম লাগে! একই ফোরামে দাঁড়িয়ে যদি ভিন্নমত পোষন করা যায় তবে একি রাজৈতিক দলে কেনো করা যাবে না? যাবে, যদি নাই যাবে তবে রাজ নৈতিক দল গুলোতে এতো উপদল প্রতিদল হয় কেনো? নিশ্চই যাবে, তবে সেখানে ঐযে বললাম পরস্পরকে গুরুত্ত্ব দেবার মানসিকতাও থাকতে হবে। থাকতে হবে প্রকৃত গনতান্ত্রিকতা চর্চার রেওয়াজ।
দেখুন আমি তাঁর সব সিদ্ধান্তকে ১০০ ভাগ খাঁটি একথা বলিনাই। কারন আমি পাঁড় আওয়ামিলীগার নই এবং বঙ্গবন্ধুর অন্ধভক্ত নই। আমি আমার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীদিয়ে ব্যপারটা দেখতে চেষ্টা করেছি মাত্র। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে বিতর্ক থাকতেই পারে। সময় এবং পরিবেশ যেটাকে আনুমোদন দেবে সেটাই হবে বাস্তবায়িত বা গৃহীত। যাই হোক আপনার কাছে তাঁর বাকশাল গঠনের সিদ্ধান্ত ভুল মনে হলেও আমি মনে করি ওটা ভুল ছিলো না। বরং একটা তথ্য দেই, ১৯৭৪-এ দক্ষিন কোরিয়ার অর্থনীতি ছিলো আমাদের পেছনে।যেখানে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি রেট ছিলো ৯.৫৯% ওয়ার্লড র্যঙ্ক ছিলো ১৮; সেখানে দক্ষিন কোরিয়ার ছিলো যথাক্রমে ৭.১৮% এবং ৩৪। শিক্ষিতের হার প্রায় আমাদের কাছাকাছি ছিলো। তখন তাদের ওখানে ছিলো ২৭.৭% আর আমাদের ছিলো ২৫.৮%। আমাদের দেশে তখন বঙ্গবন্ধু দেশ গড়তে ব্যাস্ত আর দক্ষিন কোরিয়াতে সেনা শাসক পার্ক ছুং হি অতীতের সব বুনিয়াদী ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে চুড়ে নতুন করে গড়তে ব্যাস্ত। আমি সেনা শাসনের পক্ষে সাফাই গাইছিনা, এটি ওদেশের ক্ষেত্রে একটি ব্যাতিক্রম। যাই হোক আমরা আমাদের জাতির পিতাকে হত্যাকরে পেছাতে পেছাতে আজকের অবস্থানে, আর ওরা এগিয়ে এসে এখন খোদ জাপানের ইকোনোমির সাথে পাল্লা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে। আমরা আজ অনেকেই বলছি বাকশাল গনতন্ত্র বহির্ভূত কাজেই বঙ্গবন্ধু ভুল করেছিলেন, আর ওরা তখন সেনা শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আজ বলছে সেই সেনা নায়কই মূখ্যতঃ তাদের যুগসন্ধিক্ষনের দিগন্তপারে ঠেলে দিয়েছিলেন! ওরা জাতি হিসেবে তার কাছে আজ কৃতঞ্জ আর আমরা আমাদের বঙ্গবন্ধুকে তাঁর প্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে নাদিয়েও হাওয়ায় নৃত্যকরে তাঁর বাকশালের পিন্ডি চটকাচ্ছি। যাই হোক বঙ্গবন্ধু গনতন্ত্র হরণ করে মহা অপরাধ করেছিলেন, পরবর্তী সেনাশাসকের দল তো বহুদলীয় গনতন্ত্র দিয়েছিলেন! (দক্ষিন কোরিয়ার সেনা শাসক দেন নি) তবে আমাদের এমন বেহাল দশা কেনো? কারন ওদের সেনা শাসক গনতন্ত্র হরণ করেও দেশ কে একটি পর্যায়ে উন্নীত করে গনতান্ত্রিক নিয়মানুবর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন! আর আমাদের গুলা আখের গুছালেও আমাদের অনেক অনেক গনতন্ত্রমনাদের কাছে তারা গনতন্ত্রী! চমৎকার যুক্তি! সেই কারনেই আপনি বলেছেন বাকশালের জন্যে বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা হলে তাতে যুক্তি আছে, নিশ্চই আছে, কখন জানেন? যখন গনতন্ত্র, যেক্ষেত্রে তা এপ্লাই করবেন সেই ক্ষেত্র এবং সময়কে অগ্রাহ্য করবেন তখন।
বাকশালে যোগ দেওয়াকে আপনি বলেছেন অন্যের প্রেসক্রাইব্ড দলে যোগ দেওয়ার সামিল, সেটি আসলে ব্যাক্তিত্বহীন ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে ঘটে। যেসব কমিউনিষ্ট, গনতন্ত্রী, ব্যাবসায়ী, সেনাকর্মকর্তা, মৌলানা, শিক্ষক সেখানে যোগ দিয়েছিলেন তারা সবাই কি তাদের নিজ নিজ চরিত্র হাড়িয়েছিলেন? বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগেতো তিনি নিজেই খানিকটা যেন বাম ধারার প্রতি দুর্বল ছিলেন বলে প্রতীয়মান হয়, অথচ তাঁর আওয়ামীলীগতো একটা দক্ষিন পন্থী দল। একি দলে ভিন্নমত থাকতে পারেনা এটি আপনি কিকরে বলেন? ছাত্র ইউনিয়ন তো বাম ধারার ছাত্রসংগঠন, অথচ মেনন সাহেব এবং বেগম মতিয়া তো এসংগঠনের প্রোডাক্ট। একজন প্রবল বাম তো অন্যজন প্রবল ডান! তাছাড়াও নানান মতের সমাবেশ হবে বলেই বাকশাল, নইলে তো আওয়ামীলীগই থাকতো।
হ্যাঁ হয়তো কিছুটা বাড়তি স্বাধীনতা সময়ের প্রেক্ষিতে কোন কোন ক্ষেত্রে ভোগ করছে, কিন্তু আসলে করছে না। বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্বাবধায়কের আমলই উদাহরণ! তার আগের বিএনপি জামানা উদাহরণ! তার আগের আওয়মী শাসন উদাহরণ, তার আগের বি এন পি আমল উদাহরণ, তার আগের এরশাদীয় আমল সব সব …..। এমনকি এখনো অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীন নয়, যেমন ক্রশফায়ারের নিউজ গুলো কি ঠিক মতো বেরোয়? আওয়ামী সনত্রাসীদের নিউজ গুলো? ব্যাবসায়ীদের সাথে প্রনোদনা সংক্রান্ত ইস্যূ গুলো? বিভিন্ন উপজেলার উন্নয়ন বরাদ্দের যৌক্তিকতা সংক্রান্ত? আরোও অসংখ্য ইস্যূ আছে একটু দেখুন আপনিই পাবেন।
আলবৎ তখন কোন অনুভব যোগ্য পাথর্ক্য হতো না, পত্রিকা গুলো সম্ভবতঃ প্রনোদনা মূলক খবর বেশী ছাপতো তাতে জনতা উৎসাহী হয়ে দেশ গঠনের কাজে নিয়েজিত থাকতো, অযাচিত হরতাল চাঞ্চল্য, অস্থিরতা কমে যেতো, সরকার নির্ভিঘ্নে এগিয়ে যেতে পারতো সু নির্দ্দিষ্ট গঠন মূলক ইস্যূ নিয়ে। তবে এখন এটি প্রযোজ্য নয়। আরেকটি যৌক্তিক কারন ছিলো তখনকার বাসন্তী কান্ডের মতো গল্প ফাঁদিয়ে সরকারকে বিব্রত করার প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিহত করা। যেটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি। জনগন সমালোচনা করবে কিকরে, জনগনের অংশগ্রহনেই তো সিদ্ধান্ত হতো, আপনি বাকশালের রূপরেখাটি দেখুন তাহলেই বুঝতে পারবেন। এই মুহুর্তে আমার কাছে এ সংক্রান্ত কাগজ পত্র নেই তবে খুঁজে পেলে পরবর্তীতে জানাবো। আর বঙ্গবন্ধু যদি তথ্যের গলা টিপে ধরার মতো মানসিকতা রাখতেন, তাহলে সোভিয়েতের প্রাভদার মতো একটি মাত্র সরকারী সংবাদপত্র রেখে দিলেই পারতেন, ৪টার দরকার তো ছিলোনা। এই ৪টি আবার হতো, তখনকার দেশের সেরা ৪টি সংস্থা এমনই শুনেছিলাম। কাজেই যে ৪টি হতো তারা যে সরকারী তা তো নয়, সরকার তাদের নিয়ন্ত্রন করতো এমন ভাবে যেনো দেশের মানুষ হতাশ নাহয়ে পড়ে এবং স্যাবোটাজের মতো কোন ঘটনা নাঘটে। তখন এর বিরোধিতা মূলতঃ করেছিলেন পত্রিকা মালিকেরা তাদের ব্যবসা বন্ধ হবে এই কারনে। জনগন এবং অধিকাংশ নতা-নেত্রীবৃন্দ বরং একে স্বাগতঃই জানিয়েছিলেন, এবং সমভাব্য সমস্যার মুখে বঙ্গবন্ধু নিজেও বলেছিলেন এব্যবস্থা সাময়িক। এমনটিই আমি দেখেছি তথ্যে। আরোও দেখবো।
যাই হোক আপনার যুক্তি আলোচনা আমার ভালো লেগেছে পরবর্তীতে সুযোগ হলে আলোচনা করা যাবে। ভালো থাকুন।
@Keshab K. Adhikary,
ভাই, আপনি যেভাবে বাকশালের পক্ষে যুক্তি দিয়ে যাচ্ছেন তাতে আমি রীতিমত মুগ্ধ। খোদ আওয়ামী লীগও মনে হয় না এখন আর বাকশালকে এমনভাবে ডিফেন্ড করে।
হাজার যুক্তি দিলেও যেমন কালোকে সাদা বানানো যায় না, তেমনি হাজার যুক্তি দিয়েও বাকশালকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বানানো যাবে না। শেখ মুজিব বাঙালি জাতিকে একটা দেশ দিয়ে গেছেন, কিন্তু তার মানেই এই না যে তার কোন ভুল ত্রুটি থাকবে না। আর সেইসব ভুলের জন্য তার একাত্তরের এবং তার আগের ভূমিকা খাটো হয় না একবিন্দুও।
সারাজীবন গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে গেছেন যেই ব্যক্তি, সেই ব্যক্তিই আবার বাকশালের মাধ্যমে গণতন্ত্রকেও কবর দিয়ে গেছেন। স্বাধীন দেশে ক্ষমতায় পুষ্ট হয়ে, অজানা কোন কারণে হয়ে উঠেছিলেন একজন স্বৈরাচারী। কোন পরিস্থিতিতে হয়েছিলেন এই সব আবোলতাবোল যুক্তি দিয়ে একে জায়েজ করা যায় না কিছুতেই। সেনাশাসকদেরও ক্ষমতা দখল করার অকাট্য যুক্তি থাকে। তাতে করে কোন সেনাশাসনই বৈধ হয়ে যায় না। আমি বাকশাল নিয়ে, সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে মাত্র চারটি পত্রিকা রাখা বা শেখ মুজিবকে সারাজীবনের জন্য প্রেসিডেন্ট করা ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত যাবো না। কারণ আমার বক্তব্য উপরে আদিল মাহমুদের বক্তব্যের হুবহুই হবে।কাজেই বৃথা সময় নষ্ট করার কোন মানে নেই।
শেখ মুজিব কীভাবে স্বৈরাচারে পরিণত হচ্ছিলেন তার একটি চমৎকার বিশ্লেষন পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালের ২৭ শে জানুয়ারী লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লেখা পিটার জিলের একটি আর্টিকেলে। আমি মূল আর্টিকেলটি পেলাম না। সেলিম সি এটিকে অনুবাদ করেছেন। সেই অনুবাদটিই এখানে তুলে দিলাম।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলী টেলিগ্রাফ এর ১৯৭৫ সালের ২৭শে জানুয়ারী সংখ্যায় পিটার গিল ‘মুজিব একনায়কত্ব কায়েম করেছেন’ শিরোনামে লেখেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান তার দেশে পার্লামেন্টারী গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু লাথি মেরে ফেলে দিয়েছেন। গত শনিবার ঢাকায় পার্লামেন্টের এক ঘন্টা স্থায়ী অধিবেশনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেছে এবং একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে ক্ষমতা অর্পন করেছে। অনেকটা নিঃসন্দেহে বলা চলে গণতন্ত্রের কবর দেয়া হয়েছে। বিরোধী দল দাবি করেছিল যে, এ ধরণের ব্যাপক শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের ব্যাপারে আলোচনার জন্য তিন দিন সময় দেয়া উচিত। জবাবে সরকার প্রস্তাব পাশ করল যে এ ব্যাপারে কোন বিতর্ক চলবে না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাস গৃহযুদ্ধের পর বিধ্বস্ত কিন্তু গর্বিত স্বাধীন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব এমপিদের বলেছেন যে, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র ছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অবদান। কিন্তু বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র প্রণয়নে বৃটিশ বিশেষজ্ঞরাই সাহায্য করেছিলেন। তিনি দেশের স্বাধীন আদালতকে ঔপনিবেশিক ও দ্রুত বিচার ব্যাহতকারী বলে অভিযুক্ত করেন। প্রেসিডেন্ট খেয়ালখুশি মত বিচারক বরখাস্ত করতে পারবেন। নাগরিক অধিকার বিন্দুমাত্রও যদি প্রয়োগ করা হয় তা প্রয়োগ করবে নতুন পার্লামেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত স্পেশাল আদালত। এক্সিকিউটিভ অর্ডারের মাধ্যমে একটি জাতীয় দল প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন শাসনতন্ত্র মুজিবকে ক্ষমতা প্রদান করেছে। তার গঠিত দলই হবে দেশের একমাত্র বৈধ দল। যদি কোন এমপি যোগদান করতে নারাজ হন অথবা এর বিরুদ্ধে ভোট দেন, তবে তার সদস্যপদ নাকচ হয়ে যাবে।
এহেন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঢাকায় সমালোচনা বোধগম্য কারণেই চাপা রয়েছে। কিন্তু ৩১৫ সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ৮জন বিরোধী দলীয় সদস্যের ৫জনই এর প্রতিবাদে সভাকক্ষ ত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের ১১জন সদস্য ভোট দিতে আসেননি। তাদের মধ্যে ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশ গেরিলা বাহিনীর নায়ক ও প্রাক্তন মন্ত্রী জেনারেল এম এ জি ওসমানী। শেখ মুজিব ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে শাসন করতে পারবেন। নতুন শাসনতন্ত্র ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত জাতীয় পার্লামেন্টের মেয়াদও ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে পার্লামেন্ট বছরে মাত্র দু’বার অল্প সময়ের জন্য বসবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও কাউন্সিল অফ মিনিষ্টারস এর মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হবে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং মনসুর আলীকে যথাক্রমে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট।
বাংলাদেশের ঘনায়মান আর্থিক ও সামাজিক সংকটে বিদেশী পর্যবেক্ষকগণ সন্দেহ করছেন যে, দেশে একনায়কত্বের প্রয়োজন আছে কিংবা শেখ মুজিবের আরো ক্ষমতার প্রয়োজন আছে।প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশে যে নিশ্চিত দুর্ভিক্ষ ও অরাজকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ মুজিবের নতুন ম্যান্ডেট তাতে তেমন কোন তারতম্য ঘটাতে পারবে কিনা? এক মাস আগে শেখ মুজিব জরুরী অবস্থা ঘোষণা করেছেন। অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বামপন্থী গেরিলা নেতা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করা হয়েছে।কিন্তু ইতিমধ্যেই সন্দেহ দেখা দিয়েছে যে, জরুরী আইন প্রয়োগে বিন্দুমাত্র সুশাসন (বর্তমানে সুশাসন বলতে কিছু নেই) পুনঃপ্রতিষ্ঠা আদৌ সম্ভব কিনা? নতুন প্রেসিডেন্টের যে আদৌও প্রশাসনিক দক্ষতা নেই তা গত বছরেই প্রমাণিত হয়েছে। তার ষ্টাইল হচ্ছে ডিকটেটরের স্টাইল। তিনি গুরুত্বহীন বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান এবং গুটিকয়েক আমলার প্রমোশনে ও তাদের অভিমতকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেন কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রায়ই ফেলে রাখেন। একদলীয় শাসন সৃষ্টির ফলে র্দুনীতি দূর না হয়ে বরং বাড়তে থাকবে।
@Keshab K. Adhikary,
আমি মোটামুটিভাবে নির্মোহভাবেই রাজনীতি দেখার চেষ্টা করি। আমার মতে আমাদের রাজনীতির এই ভয়বাহ অবস্থার একটা বড় কারন হল অন্ধ সমর্থন ও অন্ধ ঘৃণা। যার ভাল তার সবই ভাল, আর যার খারাপ তার সবই খারাপ। আমি নিরপেক্ষভাবে লেখার চেষ্টা করলেও বংগবন্ধুর প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ত্ব আছে।
বাকশাল রাজনীতির পক্ষে এবার আপনি যে যে বলেছেন তাতে কিছুটা হলেও যুক্তির ছাপ দেখছি। তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে গোড়াতেই যে গলদ সে ফাক কোনমতেই মেটানো যাবে না। একটু প্রসেস বা সিষ্টেম যখন আমরা বিচার করি তখন সেটাকে সিষ্টেম হিসেবেই বিচার করতে হবে। হতে পারে বংগবন্ধুর বদমতলব ছিল না, তিনি চিরস্থায়ীভাবে দেশের যায়গীর নিতে চাননি, বাকশাল তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাময়িক ব্যাবস্থাই ছিল। যদিও এখানেই ফাক আছে, কতদিনের সাময়িক ব্যাবস্থা তা ষ্পষ্ট করে বলেননি। কি করে বুঝব যে তিনি তার কথা রাখতেন? কথা না রাখলে তাকে চ্যালেনজ় জানাবারই বা থাকত টা আর কে? দেশে তো আর কোন দলই নেই, সরকারী নিয়ন্ত্রনের বাইরে কোন মিডিয়া নেই।
তার চেয়ে বড় কথা যা বলতে চাচ্ছিলাম, ধরে নিলাম বংগবন্ধুর এহেন কোনই বদমতলব ছিল না। কিন্তু তিনি তো আর চিরজীবি ছিলেন না। তারপর কাউকে না কাউকে সেই একদলীয় বাকশালের অসীম ক্ষমতাময় পদে বসতে হত। সেই নুতন বান্দা যে তার এই অসীম ক্ষমতার দুধ মধু ষোল আনায় আদায় করে ছাড়তেন না তা আমি কিভাবে বলি? তাই একদলীয় বা সামরিক শাসন ব্যাবস্থাও কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তির কারনে কখনো কখনো সফল হলেও সামগ্রিকভাবে সিষ্টেম হিসেবে এর বড় দুর্বলতা থেকেই যায়। তাই একে সিষ্টেম হিসেবে কখনোই সমর্থন করা যায় না। দক্ষিন কোরিয়ার এক সামরিক শাসক সফল হয়েছিল বলে আমরা নিশ্চয়ই সামরিক শাসনের সাফাই গাইবো না।
গত জোট সরকার যদি ব্রুট মেজরিটির জোরে বাকশাল জাতীয় কিছু করে বসত তাহলে কোন দৃষ্টিতে দেখতেন? এইরকম যুক্তি সাজাতেন যে তাদের উদ্দেশ্য আসলে কত মহত, নাকি প্রথমেই বলে বসতেন যে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার তাল করেছে? বংগবন্ধু করলেই শুধু ভাল হবে আর খালেদা জিয়া একই জিনিস করলে শুদ্ধ হয়ে যাবে তাতো হতে পারে না। এখন হয়ত বলার চেষ্টা করবেন যে বংগবন্ধুর অতীত অবদানের সাথে খালেদার অতীত তূলনা করে পার্থক্য বুঝতে হবে। বংগবন্ধুর ধারে কাছে না হলেও খালেদারও কিন্তু অতীতে গনতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রামের ভাল রেকর্ড আছে। ৮৬ সালে আওয়ামী লীগ এরশাদের পাতানো নির্বাচনে যোগ দেওয়ায় তিনি আসলেই আপোষহীন ভাবেই আন্দোলনের মাঠে থেকেছেন। আজ তার ইমেজ দুর্ণীতি আর নানান অপকর্মে যাই হোক না কেন। এখন বিএনপি ওয়ালারাও তো তার সেই সব উদাহরন টেনে একইভাবে সাফাই গাইতে পারে।
“দেশে তো নানা ধরনের স্যাবোটাজ চলছিলো, তাই বহুদলীয় কোন্দলে না জড়িয়ে একই ফোরামে সব ভিন্নমতাবলম্বীদের মতামতকে সন্নিবেশ করা সহজ। ”
এটা অত্যন্ত গোলমেলে কথা মনে হয়। ধরা যাক, ভাষানী। তিনি নিজের দল অক্ষুন্ন রেখে দেশের স্বার্থে ঐক্য ফোরামে যোগ দিতে পারতেন না, তাকে যোগ দিতে হলে নিজের আজন্ম করা দল বাদ দিয়ে বাকশালে যোগ দিতে হত। এর কোন মানে আছে? ভিন্ন মতাম্বলীদের মতামত সন্নিবেস করার জন্য কেন তাদের নিজ দল ত্যাগ করে আরেক দলে যোগ দিতে হবে এটাই আমি বুঝি না। ভাষানী বাকশালে যোগ দিলেই তার রাজনৈতিক আদর্শ বদলে ফেলতে পারতেন? কিংবা তোয়াহা, আব্দুল হক, মোজাফফর ন্যাপ?
তবে এবার একটা সত্য বলেছেন যা আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানেও সত্য মনে হয়। বাকশাল হবার পর শুনেছি দল বেধে মানুষে যোগ দিতে যেত। টিভিতে নাকি তখন দেখানো হত লাইন ধরে বিশিষ্ট সব নাগরিকের যোগদান। এটা আসলে আমাদের টিপিকাল বাংগালী চরিত্র, সবসময় ক্ষমতাবানদের তোয়াজ করা। নিঃসন্দেহে পরে এনাদেরই অনেকে বাকশালের কড়া সমালোচক হয়েছেন। শুনতে পাই, এই বাকশালের ৪র্থ সংশোধনী পাস হতে সংসদে লেগেছিল নাকি মোটে ৪ মিনিট। এ থেকে কি বোঝা যায় না তখনকার সংসদ কিভাবে চলছিল? গনতন্ত্রের কি চর্চা হচ্ছিল?
পত্রিকার ব্যাপারেও অনেকটা একই কথাই খাটে। অন্য যেকেউই একই কাজ করলে কি তাকে সাধুবাদ জানাতেন নাকি প্রথম প্রশ্নই মনে আসত যে কন্ঠ রুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে? কিছু বানোয়াট উদ্দেশ্যমূলক খবর সব সরকারের আমলেই কিছু কিছু হয়। সব সরকারই দাবী করে যে তাদের বিরুদ্ধে “কিছু” দলীয় পত্রিকা বানোয়াট খবর ছাপছে, আসলে তেমন কিছুই দেশে হচ্ছে না। তার মানেই ৪টা পত্রিকা সরকারী নিয়ন্ত্রনে রেখে (সোজা মানে তারা সরকারের মর্জির বিরুদ্ধে কিছু লিখতে পারে না) বাকিগুলি বন্ধ করে দিতে হবে? গত জোট সরকারের আমলে সাংবাদিকদের উপর চরম নির্যাতন হয়েছে, তারপরেও সরকারের যাবতীয় কুকর্ম ঠিকই অনেক পত্রিকাই বের করেছে। তার আগের আওয়ামী সরকারের আমলেও একই হয়েছে। ডাক্তার ঈকবালের গুলি করার দৃশ্য, হাজারীর সন্ত্রাস এ জাতীয় অনেক খবর ছবি আমরা পত্রিকায় দেখতে পেরেছি যা সরকারী নিয়ন্ত্রনে পত্রিকা থাকলে দেখা যেত না। জনগন এবং অধিকাংশ নেতা নেত্রী ৭৫ এ একে স্বাগত জানিয়েছিলেন কিনা আমার জানা নেই। বানোয়াট খবর ছাপা হলে প্রেস এক্টে মামলা করা যায়, মানহানির মামলাও করা যায়। তাই বলে বন্ধই করে দিতে হবে?
আমার কথা যদি শোনেন তো বলব, জণতা এত গর্দভ নয় যে তাদের বানোয়াট খবর যাই দেওয়া হোক তারা সব বিশ্বাস করে। বাস্তবের সাথে না মিললে কেউই বিশ্বাস করে না। আজকের দৈনিক সংগ্রাম, দিনকালের খবর কয়জনে বিশ্বাস করে? নিজামী খালেদা নিজেরাও মনে হয় বিশ্বাস করবেন না। তাই বলে এগুলিও বন্ধ করে দিতে হবে? সাধারনতঃ কোন পত্রিকা অপ্রিয় সত্য বললেই বন্ধ করা হয়, মিথ্যা বললে নয়।
সোভিয়েত কায়দায় ১ টি না রেখে ৪টি রাখা খুব বড় কোন যুক্তি নয়। সোভিয়েতের মত কমিউনিজমের পথে তো তখনো বাংলাদেশ যায়নি। আর কিছুদিন পর যে ১ টিতেই নামত না তারই বা গ্যারান্টি দেওয়া যেত কি করে?
আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না যে গণতন্ত্রই সব সমস্যা সমাধান। আমি বিশ্বাস করি কোন সিষ্টেম সফল হবে কিনা তা নির্ভর করে যারা সেই সিষ্টেম চালাচ্ছে তারা কেমন মানুষ তার ওপর। আমার সাদামাটা ও সরল সামগ্রিক বিচারে আমরা বাংগালীরা লোক হিসেবে তেমন সুবিধের নই, তাই কোন সিষ্টেমই সহজে কাজ করছে না। গণতন্ত্রে উত্তরনের পর ৯০ এর র থেকে কিছুটা উন্নতি শুরু হলেও হার মোটেই আশাব্যাঞ্জক কিছু নয়। তবে তাই বলে অবস্থা আরো খারাপ হোক এমন কিছু আমরা কোনমতেই করব না। আমি এতে কোনভাবেই হ্যাপি নই, এমন কোন আশাও দেখি না যে খুব উন্নতিও হচ্ছে। দলগুলির নিজেদের মাঝেই গনতন্ত্রের কোন চর্চা নেই, সংসদে সরকারী দল যা ইচ্ছে তাই করতে পারে। বিরোধী দল বড়জোর গলাবাজি করতে পারে, তার বেশী কিছু নয়। তবে অন্তত এইটুকু তো পারে। আমি বুঝি যে একদলীয় বাকশাল জাতীয় কিছু হলে অবস্থা আরো অনেক খারাপ হবে।
আমি আপনি যতই বলি, বাকশালের মূল্যায়ন কিন্তু নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সূত্রগুলি ফরিদ ভাইর দেওয়া রেফারেন্সের মতই করবে।
৭৫-৮১ তে সেনাবাহিনীতে সংঘটিত ক্যু/হত্যাকান্ডের পর ৪ই ডিভিডির একটি সেট পেয়েছি যা থেকে তাহেরের বিচারের প্রহসন, ৭৭ এর বিমান সেনাদের ক্যু ও গণফাসি, জিয়া/মঞ্জুর হত্যা ও জিয়া হত্যার বিচার নিয়ে বেশ কিছু বিরল আলোচনা/সাক্ষাতকার আছে। ইচ্ছে আছে এগুলি নিয়ে একটা সিরিজ লেখার।
“মৃত্যুদন্ড” হলো বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এবং ননসেটেল্ড ইস্যু । এই প্রসঙ্গ এখানে নিয়ে আসার মানে হল পরম বিতর্কের সুচনা করা। তবে এটা ভেবে আমরা সবাই খুশি যে একজন অপরাধী তার অপরাধের জন্য চিহ্নিত হয়েছে এবং শাস্তি দেয়া হয়েছে। হতে পারে তাদের মৃত্য দন্ড না দিয়ে অন্য কোন দন্ডে দন্ডিত করা যেতে পারে। কিন্ত এটাতো ঠিক যে তারা দন্ডিত। জাতির কলঙ্কের কালিমা মোচনের জন্য, এতটুকুইতো যথেষ্ঠ।
@ব্রাইট স্মাইল,
সঠিক কথা বলেছেন,আমাদের নাই,তাদের আছে,তাই তারা যা পেরেছে,আমরা তা পরি না।কিন্ত্ত, তাদেরওতো একদিন কিছু ছিলো না,তাই না?
যাক,হয়তো কোনদিন আমরাও পেরে উঠতে পারি।এতোটুকু স্বপ্নদেখাও কি মানা,বন্ধু!
আজও আমাদের মনবতা নাই,অন্যরে মানুষ ভাবার মন নাই, ধন নাই,বিদ্যা নাই,বুদ্ধি নাই, ক্ষমতা নাই, গণতণ্ত্র নাই।আছে শুধু শরীরের উর্বরতা! এখন
এসব নিয়ে আমরা আত্মবিশ্লেষণ করি,কেনো এমন হলো! তারা বলে,ধার্মিকদের মতই বাঙালী কখনোই আত্মবিশ্লেষণ সহ্য করে না।আত্মসালোচনা বাঙালীর বিষ, পরম শত্রু।কারণ,বাঙালী পরিচয়খানা মানুষ হয়ে যদি হারায়,তবে সে বাচঁবে কি করে! ।পশ্চিমে গিয়ে তারাঁই কিন্তু মানুষ পান,গণতণ্ত্রের ছোঁয়া পান,নিজেও মানুষের মতো বাচাঁর উপায় খুজে পান আপন যোগ্যতায়।আর পিছনে ফেলে যাওয়া স্বদেশের মায়ায় দূর থেকে মনে মনে কাদেঁন,বুকে গর্ববোধ করেন,দেশের জন্য প্রয়োজনে এগিয়ে আসেন।
আমরা যারা দেশে আছি,মানুষ যা করে রেহাই পেতে পারে না,তা সব করি,সব খাই, খালের পারের চা এর দোকান থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত।এ কারণেই তারাঁ বলে,শুরু থেকেই বাঙলাদেশের জাতীয় সংসদ খালের পারের চা’র দোকান।দুইতীরের অধিবাসীদের নতুন পুরাতন সব ভেসে থাকা ভেসে যাওয়া জলের উপরই চায়ের দোকানী ব্যচারার নির্ভরশীলতা।
বন্ধু আপনি সহজ ভাবে কঠিন কথাটা বলে দিয়েছেন,
‘কিন্তু বাঙলাদেশের প্রেক্ষাপটে এরকম কোন গ্যরান্টি নেই।’
তবুতো জানেন, প্রেক্ষাপট ধ্রুব নয়। মানেন কিনা?
আর আমার মনে হয়, মুক্তমনার উদেশ্যও তাই-আমাদের, ছয়হাজার বছরের তৈরী,আবেগ নির্ভর বৈরী সমাজ নয়,যুক্তিনির্ভর,বিজ্ঞানমনস্ক,গণতাণ্ত্রিক সমাজ বিনির্মান যেখানে মানুষ মাত্রই ফিরে পাবে বেচেঁ থাকার
তারঁ জন্মগত অধিকার।কোন ঈশ্বর নয়,মানুষ প্রধান।
হাঁ ভাই,আমার দেশটা এখনও পশ্চিমের মধ্যযোগ!
পরিবার কর্তা থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত সর্বত্রই সামন্তপ্রভু!
বাঙলাদেশ কখনোই এই প্রভুদের ধর্ষণমুক্ত হতে পারে নি।আজকেও দেখুন, এ মাটির সোনার সন্তানেরা যে যেভাবে পারে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ডা ইন্জি গভেষক অধ্যাপক লেখক দলে দলে দেশান্তর হয়ে যাচ্ছে লন্ডন আমেরিকা কানাডা অস্ট্রেলিয়ায়,তারা আর ফেরে না,ফিরবে নাকি কখনও এই নরকে! যদি বলা হয়, আজ থেকে বিনা বাধায় বাঙলাদেশের যে কেউ আমেরিকা লন্ডন কানডা চলে যেতে পারবে,আমারতো মনে হয় কোটি মানুষ এক মুহুর্তেই হুমরি খেয়ে পড়বে,আর কত সবল ও দুর্বল মানুষ গেইট দিয়ে বের হবার অকল্পনীয় প্রতিযোগিতায় পদপৃষ্ট! সাংবাদিকরা ঠেলাঠেলিতে না থাকলেতো ছবি তুলতেন! তখন দেখা যেতো আমার নিজেরও দেশ প্রেমের পরিচয়!
যাহোক,বন্ধু, আমি আশায় বুক বাধি,স্বপ্ন দেখি- আমাদের সন্তানেরা যেন বড় হয় একবিংশ শতাব্দীর যোগ্য আলোয়,ফিরে পায় যেন ঐসব গ্যরান্টি!
জনাব আদিল মাহমুদ,
হ্যাঁ যদি আক্ষরিক অর্থেই ধরি তাহলে বাকশাল নিশ্চই গনতান্ত্রীক ব্যবস্থার কথা বলে না। সেই কারনেই আমি কিন্তু মাছের উপমা টেনেছিলাম কারণ বঙ্গবন্ধুর হাতে আমি গনতন্ত্র নিহত হবার শঙকা করিনা, একদমই না। আমাকে বুঝতে হবে তাঁর উদ্দ্যেশ্যটা কি ছিলো। আজ কাল আনেককেই চড়া গলায় বলতে শুনি যে পচাত্তরের নির্মম হত্যাকান্ডের পরে পরবর্ত্তী সরকার গুলো বহুদলীয় গনতন্ত্র এনেদিয়ে আমাদের উদ্ধার করে ছেড়েছে! কি সেই গনতন্ত্র? আদৌ দেশে কোন গনতন্ত্র কি ছিলো? এখনো কি আছে? সেই গনতন্ত্র দিয়ে যে গোটা রাজনীতিটা কলুশিত করা হয়েছে সেদিক থেকে আপনাদের নজর এড়িয়ে যাচ্ছে কেনো? আজ কারা দেশে রাজনীতি করছে? এদেরকে আপনি সুস্থ, সুবিবেচক এবং দেশপ্রেমীক বলবেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের কতোজন মেধাবী এখন সক্রিয় রাজনীতিতে ভেরেন? দেশে এতো গনতন্ত্র এলো অথচ মুক্তমনার অধিকাংশ তাদের মনের কথা প্রকাশ্যে নিজ ভূমে বলতে পারেন না! দেশে হাহাকার, অসাধু ব্যবসায়ী দের টিকিটাও ছোঁয়া যায় না! চতুর্দিকে দুর্নীতিতে ছেয়ে গেলো! খুনের পর খুন হচ্ছে মানুষ! বিচারের রায় নির্ভতে কাঁদে! কোন একটা যায়গায় কি সুস্থিরতা আছে? আপনি নির্ভয়ে পথে চলতে পারেন? কেউ আমাকে হত্যা করলে তার সুবিচার পাবার আশা কি আমার আত্মিয়স্বজন করতে পারে? আপনি আপনার কার্যালয়ে কোন অন্যায় কিংবা কোন অসৌজন্যমূলক ঘটনার যৌক্তিক প্রতিকার আশাকরতে পারেন? রাস্তায় ঘাটে ট্যক্সিওয়ালা, বাস কন্ডাকটর বেশী ভাড়া আদায় করলে নাগরিক হিসেবে এর কোন প্রতিবিধান আছে? বাজারে গিয়ে কোন পণ্যের দাম রাতারাতি দুই থেকে বিশটাকা বেড়ে গেলে আপনার প্রতিবাদকারার এবং ন্যায্য মূল্যের নিশ্চয়তা আছে? আরোও আছে জায়গা বাড়িয়ে তো লাভ নেই কারণ জানি এসবের কোন একটিরও উত্তর ইতিবাচক নয়। তাহলে কোথায় গনতন্ত্র? গনতন্ত্র মানে কি একটি ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন দিয়ে কিছু চোর বাটপার নির্বাচিত করা? সেখানে অনেক দল থাকবে আর প্রতি দলে বিশেষ বিশেষনে ভূষিত মহামান্য চোরেরা থাকবেন আর আমি গিয়ে ভোট দিয়ে তাদের ডাকাতি করার লাইসেন্স দিয়ে আসবো! কি আমরা বিশেষ পেয়েছি বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকরে তথাকথিত গনতন্ত্র দিয়ে? আপনারা কি এমন গনতন্ত্রের স্বাদ পেয়েছেন জানিনা কিন্তু আমার কাছেতো মনে হয়েছে গোটা দেশটাই একটা পঙ্কিলতায় ডুবে আছে, চতুর্দিকে জানালা গুলো বন্ধ! আমি বিদেশে এসে বিদেশী হিসেবে যে মুক্তি এবং গনতন্ত্রের স্বাদ পাই নিজের দেশে অনুভব করি ঠিক এর উল্টোটি! আপনাদের উপলব্ধি কি? তাহলে কোথায় গনতন্ত্র?
সমস্বরে বাকশালের সমালোচনা করেন, বাকশালতো বাস্তবে আসেনি! তা সেই পচাত্তর পরবর্তী বহুদলীয় গনতনত্রের সুবাতাসের সাথে যে আপদ এসে জুটেছে কবে, সেই আপদের তোড়েইতো আমরা এখন অস্তির! হ্যাঁ অনেক বড় মাপের মানুয়েরা প্রমাদ গুনছিলেন যে ভালো কিছু করতে গিয়ে অনেক খারাপ কিছু ঘটেযেতে পারে! জনগনের ভালো চাইতে গিয়ে খারাপ কিছু হলে অনুতাপের সীমা পরিসীমা থাকবে না! আবার অনেক সুযোগ সন্ধানী এখান হতে আখের গুছানের পাঁয়তারা করতে পারে, এসব আশংকা থেকেই তাজুদ্দীন, এমনকি পরমানু বিঞ্জানী ডঃ ওয়াজেদ মিয়া পর্যন্ত আশঙকা প্রকাশ করেছিলেন, এবং বঙ্গবন্ধু এ আশংকার কথা জানতেন, সচেতন ছিলেন। অতএব আমি মনে করিনা যে বঙ্গবন্ধু অন্ধ ভাবে অসচেতন ভাবে কিংবা কাউকে খুশি করতে অথবা নিজের নেতৃত্ত্বকে চিরস্থায়ী করতে প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। কারন এটি তাঁর প্রয়োজন ছিলোনা, তাঁর কোন বিকল্প ছিলোনা। তাঁকে যদি সুযোগ দেওয়া হতো এবং তিনি তা করতেন তখন আমি বলতাম। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে এখন এটি আমি পারিনা, কারন তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) অতীত রেকর্ড তা বলে না। আমি মনে করিনা যে বাকশালের প্রস্তাবই তাঁর কাল হয়েছিলো। কারণ ওটিতো বাস্তবের মুখ-ই দেখেনি! আপনারা যারা বাকশাল বাকশাল করছেন মনে হয় প্রভাবিত হয়ে শূণ্যে তরবারী ঘোড়াচ্ছেন। এটি ছিলো পরাজিত শক্তির দীর্ঘকালীন পরিকল্পনা যা তখন বাস্তবায়ীত হয়েছিলো। সম্প্রতি BD News 24 dot com-এর মতামত বিশ্লেষন-এ এসংক্রান্ত আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর একটি বিশ্লেষন পড়েছিলাম, আপনারাও দেখতে পারেন।
আর বাকশাল গঠন হলে যে গনতন্ত্র কুক্ষিগত হতো তা আমি মনে করিনা, কারণ খুব স্পষ্ট! আমাদের মুক্তমনায় আপনাদের কি মনে হয় গনতান্ত্রিক চর্চা নেই? এখানে তো তেমন কোন নেতাই নেই! প্রত্যেকে আমরা আমাদের যেমন খুশি মতামত দিচ্ছি, শুনছি নিজেকে শুধরাচ্ছি, আরোও গভীরে ভাবার অবকাশ পাচ্ছি! এখানে তো বহুদল নেই, আছে বহু চিন্তার সুসভ্য মানুষের সম্মিলন। এখানে যারা আছেন পাচ্ছেন না গনতন্ত্রের স্বাদ? আমি গনতন্ত্র বলতে এমনই একটি পরিবেশকে ভাবতে চেষ্টা করি। সেটি হবে কল্যানকর, সেখানে থাকবে সহমর্মীতা, মানবতার ছাঁয়া, মানুষ থাকবে সবচেয়ে উপড়ে, অনেক দূর দেখবো। তবেই না শান্তি। বঙ্গবন্ধু বাকশালের মধ্যদিয়ে সেই নানান মত গুলোকে, মেধা গুলোকে একখানে জড়ো করতে চেয়েছিলেন, কল্যানকর ভাবে সেই মেধা গুলোকে কাজে লাগাবার জন্যে। বঙালীর মাথা আসলে মোটা না, সূক্ষ্ম! কারো ঘাড়ে দুটি মাথা নেই বলে চুপ করে ছিলো ভাবলেন কি করে? বঙ্গবন্ধু কাঁধে ক’টা রাইফেল নিয়ে ঘুড়ে বেড়াতেন, যে আপনি কিছু বললে আপনার মুন্ডুপাত করতেন? তিনি সেরকম লোকই ছিলেন না। ওরকম হলে তিনি সাড়ে সাত কোটি মানুয়ের নেতা হতে পারতেন না। তাঁর উত্তর সূরী এই মহান মহান গনতন্ত্রীরা কজন মানুষের নেতা হতে পেরেছিলেন? আমার ভুল হতে পারে, আপনার হতে পারে, দেশের সাড়ে সাতকোটি মানুষ একযোগে ভুল করতে পারেনা। যারা রাইফেল কাঁধে নিয়ে আপনাকে মাথা হেট করে হাটতে শেখালো তারাই হয়ে গেলো বড় গনতন্ত্রী! আর যে মানুষটি তাঁর সারাটা জীবন গনতনত্রের জন্যে বাঙালীর জন্যে সিঁড়িতে লুটীয়ে পড়ে রক্তে ভাসতে ভাসতে বলে গেলেন যে ‘হে আল্লাহ তুমি বাঙলাদেশকে রক্ষা করো’, তিনি হয়ে গেলেন অগনতান্ত্রীক! আজব! তিনি কতোটা গনতান্ত্রীক ছিলেন সেটি আমার বা আপনার বিশ্লেষনের অনেক অনেক আগেই তাঁর জীবৎ কালেই দেশ কালের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো। তাঁর সম্পর্কে তৎকালীন খ্যাতিমান বিশ্ব রাজনীতিকদের মন্তব্য গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন। হ্যাঁ অনেকেই তাঁর বিশাল ব্যক্তিত্তবের কাছে অসহায় হয়ে পড়তেন। আপনার কি মনে হয় অমন বিশাল ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ তাঁর দেশের এবং দেশের মানুষের অকল্যান চিন্তা করতে পারে? যেদেশটি তিনি নিজ হাতে ছিনিয়ে আনলেন কুচক্রীদের মুঠো হতে।
বরঙ আমার কাছে এটিই মনে হয় যে তিনিই রচনা করতে চেয়েছিলেন এক চিরকল্যানময় গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা এদেশে যা যুগ যুগ ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বইতে থাকবে। বাকশাল ছিলো তারই এক্সপেরিমেন্টাল ডিজাইন। কিন্তু সেই এক্সপেরিমেন্ট তিনি করে যেতে পারেন নি। এবং বাকশাল কোন চিরস্থায়ী পদ্ধতিও ছিলোনা।
৪টি পত্রিকা ছাড়া সব বন্ধ হয়ে যাবে ভেবে আঁৎকে উঠছেন! আজ দেশে হাজারো পত্রিকা, কিন্তু তথ্যপ্রকাশে স্বাধীনতা কি আছে? কি মনে হয় আপনাদের? সরকার তথ্য কনট্রোল করে না? করতে পারে না? তো এই যদি হয় বাস্তবতা তাহলে ৪টাতেই কি আর চার হাজারটাতেই কি! সেই কারনে আমি প্রভাবিত হযে কথা বলতে চাই না আমি যা বলেছি তা আমার নিজস্ব আত্মবিশ্লেশন। আমি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেখেছি, কাল-পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে তাঁর গৃহীত সিদ্ধান্তে কোন ত্রুটি ছিলো না। হ্যাঁ একটি বিষয়ে আমি বলবো যে তিনি হয়তো আর একটু ভেবে এই সিদ্ধান্তটি নিতে পারতেন, সেটি হলো যুদ্ধাপরাধীদের সাধারন ক্ষমা। এই ক্ষমা ঘোষনায় অনেক যুদ্ধাপরাধী পরবর্তীতে ষড়যন্ত্রে সামীল হবার সুযোগ হয়তো পেয়েছিলো। যেটি তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকে আরোও শক্তিশালী করেছিলো। আর তার ফলাফল তো বাসন্তী কান্ডে অমর হয়ে থাকবে!
অতএব আপনারা যে যুক্তির ভিতের উপড়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে দায়ী করছেন, মনে হচ্ছে এই গুলোকে আরোও খানিকটা রিভিউ করা দরকার, দরকার খুটিনাটি বিষয় গুলোরও চুল চেড়া বিশ্লেষন। তবেই সত্যটা বেড়িয়ে আসবে।
@Keshab K. Adhikary,
ধণ্যবাদ আপনার বিশাল জবাবের জন্য।
আপনি আমাকে ভুল বুঝেছেন, আমি বংগবন্ধুর সামগ্রিক অবদানকে কোনভাবেই ছোট বা হেয় করতে চাইনি, ইচ্ছেও নেই। আমি যেহেতু স্বাধীন বাংলার অস্তিত্ত্বে বিশ্বাসী সেহেতু আমিও বংগবন্ধুর অবদানকে কোনভাবেই ছোট করতে পারি না। তবে তার মানেই এই না যে তার সব কর্মকাণ্ডের প্রতি অন্ধ সমর্থন জানাতে হবে। তিনি যেভাবে ৭ কোটি বাঙ্গালীকে এক সূত্রে বাধতে পেরেছিলেন তাতেই প্রমান হয় যে জণনেতা হিসেবে তিনি অতুলনীয়। এ কাজ ভবিষ্যতে আর কেউ পারবে বলে আমি মনে করি না। তবে তিনিও দোষে গুনে মানুষ, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক ভুল ত্রুটি তারও কম বেশী হয়েছে। তাই তার সমালোচনায় কোন সমস্যা দেখি না।
বাকশাল করে আসলে কতটা ভাল হত নাকি খারাপ হত সে প্রশ্ন আসলে হাইপোথটিক্যাল। এক একজনার এক এক মত হবে। তবে আপনি নিজেও স্বীকার করেছেন যে এটা গনতন্ত্রের কোন মডেলে পড়ে না। সব ভিন্ন মতাদর্শি লোকজনকে এক মঞ্চে আনার জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল বাদ দিয়ে শুধু বাকশাল থাকবে এটা গনতন্ত্র সম্পর্কে যার সামান্যতম জ্ঞান আছে সেও শুনলে আতকে উঠবে। ভিন্ন মতের লোকজনের বক্তব্য কি দেশের সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করে করা যেত না? কাজেই এক দলীয় বাকশাল করার জন্য বংগবন্ধুর সমালোচনা হয় তবে তাতে নিশ্চয়ই ভাল যুক্তি আছে। নিজের রাজনৈতিক মতবাদ বাদ দিয়ে আরেকজনের প্রেসক্রাইবড দলে যোগ দেওয়ার মাঝে ভিন্ন মত শ্রদ্ধার ব্যাপার আছে?
হতে পারে তার মনে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করনের কোন বদমতলব ছিল না (আমি সেটাই বিশ্বাস করি), তবে মনে করি যে এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে সঠিক ছিল না। ৭১ এর বংগবন্ধুর ইমেজ আর ৭৫ এর ইমেজে অনেক পার্থক্য আছে বলেই মনে হয়। আমি ৭৫ এ নেহায়েতই দুগ্ধপোষ্য শিশু, তবে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে মনে হয় ৭৫ এ তিনি অন্তত সাড়ে সাত কোটি মানূষের অন্ধ সমর্থন আর পেতেন না, তার বিপুল জনপ্রিয়তায় ভাল রকম চিড় ধরেছিল। কেন ধরেছিল সে প্রসংগে এখানে যাচ্ছি না।
আজো বহুদলীয় গনতন্ত্র নামে থাকলেও বাস্তবে নেই, খুব সত্য কথা। তাই বলে একদলীয় শাসন ব্যাবস্থা থাকলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হতে পারত না এটা বুঝতে কি খুব বেশী তর্ক লাগে?
বংবন্ধু ঘাড়ে বন্দুক নিয়ে ঘুরতেন না, তবে আমাদের দেশের কালচারে সংসদে সরকার দলীয় কোন নেতা কোন বিল তুললে দলীয় সাংসদদের থেকে তার সমালোচনার নজির অত্যন্ত ক্ষীন। এ ধারা আজো আছে, অতীতেও ছিল। সিরাজ শিকদারের বিপ্লবের নামে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সমর্থন করা যায় না, তাই বলে তাকে পুলিশ কাষ্টডিতে মেরে ( আমি ক্রশ ফায়ারের তীব্র বিরোধী, তাই আমাকে অ লাইনে আক্রমন করবেন না) সংসদে দাড়িয়ে “কোথায় আজ সিরাজ শিকদার” বাগাড়াম্বড় করাকে কি কোনভাবে সমর্থন করা চলে? সেদিন কয়জন আওয়ামী সাংসদ বংগবন্ধুর এই উক্তির প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আমি জানি না।
আমি বংগবন্ধুকে কোনভাবেই অগণতান্ত্রিক জাতীয় কিছু বলিনি, শুধু তার বাকশাল গঠনের সিদ্ধান্তকে ভুল বলেছি। আপনি একটু আবেগপূর্ন কথাবার্তা বলে ফেলেছেন। তিনি সজ্ঞানে অকল্যান চিন্তা না করা বা কোন বিশ্বের আর কোন বড় নেতা তাকে কি সার্টিফিকেট দিলেন মানেই যে তার সব সিদ্ধান্ত ১০০% ঠিক এমন গ্যারান্টি কি দেওয়া যায়?
আপনি হয়ত একমত হবেন না, তবে আমি দৃড্রভাবে বিশ্বাস করি যে সংবাদপত্রসহ দেশের সামগ্রিকভাবে মিডিয়া জগত এখন অতীতের থেকে অনেক অনেক বেশী স্বাধীনতা ভোগ করছে। ২০ বছর আগেও এতটা স্বধীনতা চিন্তা করা যেত না। সরকারের নিয়ন্ত্রন এখনো আছে, ঠিক। তাই বলে সরকারী মালিকানাধীন ৪টা পত্রিকা রেখে আর সব বন্ধ করে দিলেও পরিস্থিতির কোন অনুভবযোগ্য পরিবর্তন হবে না বলতে চান? স্বাধীন সংবাদপত্র মিডিয়াও গনতন্ত্রের খুব বড় উপাদান। আপনি সব পত্রিকা বন্ধ করায় তেমন পার্থক্য দেখছেন না, কিন্তু এর যৌক্তিকতা কি ছিল তা কিন্তু বলেননি। বিরোধীরা যদি বলে যে ভিন্নমত বা সমালোচনার মূখ বন্ধ করার জন্যই এই ব্যাবস্থা তাহলে আমি কোন যুক্তিতে তাদের ধরাশায়ী করতে পারি?
যুদ্ধপরাধীদের বিচার প্রসংগ এখানে আলোচ্য নয় বলে আমি ও নিয়ে কিছু বলছি না।
Mr.Kasheb K. Adhikary,
I do apologize about that!
দয়া করে দেখবেন প্রিয় বন্ধুবর, ৯ নং মন্তব্যে উল্লেখ আছে “ভবিষ্যতে” ।
এবং,১৭তে স্পষ্টাক্ষরে বলা আছে “অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে”।
শেষের বাক্যের প্রত্যাশিত শব্দগুচ্ছটা হচ্ছে “পাঠক সচেতনতায় আনা”
সরকারের কাছে/প্রসঙ্গ নয়, পাঠকের কাছে,এবং সেই কঙকালের কথা বলেছিলাম!
মূলকথা:আপনার এই দেশপ্রেমের টুটাল বক্তব্যের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দু’টিই আছে।
আমিও বলি একদিন আমার বাঙলাদেশ হোক মানুষের যোগ্য বাসভূমি:নরকের অনন্ত ঋতু যেন আর ঘুরেফিরে না আসে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সালাম
জনাব সালাম,
আপনার মুক্তমনা আ্যডমিনের কাছে পেশকৃত প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আমার সামান্য কিছু বলার আছে। আপনি যদি একথা বলে থাকেন যে মৃত্যুদন্ডাঞ্জা রোহিত করার প্রশ্নে আমার প্রস্তাবিত ৪টি পয়েন্টের মান অর্জন করতে ২০০ বছরেরো বেশী লেগে যাবে, তাহলে আমি বলবো আপনার এ দাবী এ সময়ে উথ্থাপন ভয়ানক বিপজ্জনক। তবে আমার মনে হয় ১ম এবং ৪র্থ বিষয় দুটি সহনীয় হলেই অন্য দুটি সয়ংক্রিয় ভাবে প্রভাবিত হবে।
আপনি মুক্তমনা আ্যডমিন কে এই একি ফরিয়াদ আরোও একবার উপরে জানিয়েছেন। এই পোষ্টেরর বিপরীতে আপনার এই পীড়াপীড়ি আমার কাছে খানিক বেসুরো মনে হয়েছে। আমি যদি আপনাকে ভুল ইন্টারপ্রিট করে থাকি তাহলে আগেই ক্ষমা চাইছি। কিন্তু, আপনার কাছে আমার একটি জিঞ্জাস্য আছে। ঠিক এই মুহূর্তে আপনি কোনটি বেশী জরুরী মনে করেন? ঘৃন্য আসামীদের প্রতি দেয় আদালতের রায় কার্যকর করার দাবী নাকি সরকারের কাছে নতুন বিচারিক আইন প্রনয়নের দাবী যেখানে মৃত্যুদন্ড রহিত করা হবে এই ঘৃন্য পিশাচদের দন্ড কার্যকরের আগে?
@ মুক্তমনা এডমিন,
আপনারা জানেন যে, এ পর্যন্ত ১৩৭ দেশে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করা হয়েছে। আমি চাই আমার বাঙলাদেশেও মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত হউক। কিন্তু Mr.Keshab K. Adhikary’র চার বিষয়ে প্রবেশ করে বের হতে পারলেতো, উহা বিলুপ্ত করলেও করা যেতে পারে। মনে হয় আরো শদুয়েক বছর লাগলেও লাগতে পারে,হয়তোবা তারচেয়েও বেশী।অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে, আমার প্রিয় মুক্তমনার বলার সম্ভাবন আছে কি, আমরা এখন থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিলুপ্তি চাই,এর যৌক্তিক অবসান চাই। প্রায় অর্ধকোটি বছর আগের কঙকাল দিয়ে পাঠকের বিবর্তন সচেতনতা যেখানে বাড়ানো যায়, আজকের দুনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ইসুটি পঠক সচেতনতায় আনা অসম্ভব কি?
@সালাম,
আমি মনে করি যে সব দেশে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্ত করে যাবজ্জীবন দেয়া হয় সে সব দেশে আইনের শাসন আছে। সুতরাং কোনো অবস্তাতেই তারা জেল থেকে ছাড়া পাবেনা অথবা জেল থেকে কোন রকম ষঢ়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারবেনা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এরকম কোন গ্যরেন্টি নেই।
ডঃ পাল,
হ্যাঁ আমি এতথ্য জানি। তাহলে দেখুন বঙ্গবন্ধু যে বিষয়টি জানতেন বা জানবেন তাও কিন্তু কিলারদের মাথায় ছিলো, এরপরেও তারা মিশন সফল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো। আমি তাই শ্যান দৃষ্টি রাখছি মার্কিনীদের ভূমিকার উপরে ওদের সব তথ্য এখনো আমরা জানিনা। তবে আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এটি আরো পরিষ্কার হবে। পরিষ্কার হবে যে এরা এদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি পেয়েছিলো। এপর্যায়ে মেজর জিয়া এবং তৎকালীন জাসদের আভ্যন্তরীন কার্যকলাপের সঠিক তথ্য দরকার। আর বঙ্গবন্ধুর মহত্ত্বটি এখানেই যে তিনি বাঙালীকে দারুন ভালবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। তিনি মনে করতেন যে অন্ততঃ বাঙালী কোন দিন তার প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করবে না। তবে এরা নিছকই ছিঁচকে, কোন বীরত্ত্ব আমি ওখানে দেখিনা, দেখি মীর জাফরের ছাঁয়া। নইলে দেখুন, তারা এক দশ বছরের বালকের ভয়েও ভীত ছিলো, ভীত ছিলো সেই শিশুটিকেও, যে তখনো পৃথিবীর আলো দেখেনি! ওরা ব্রেইন ওয়াসড ইসলামিস্ট এবং ভারত বিরোধী তো বটেই, কর্নেল তাহেরের জাসদের ভূমিকা নিয়েও আমার সন্দেহ আছে, ওরা যদিও বলবে যে, যে ওরা সমাজতন্ত্রী ছিলো। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে বিশেষ করে ভারত বিরোধীতার পেছনে সামাজিক ইসরামাইজেশনের একটা পরোক্ষ সম্পর্ক থাকতেই হবে। কারণ প্রকৃত সম্রাজ্যবাদের বিরোধীতার বদলে যদি স্বাধীনতা উত্তরকালে তৎকালীন সোভিয়েত ব্লক ভূক্ত ভারতের বিরোধীতায় নামে কেউ, তাকে কি ভাবে র্যাশনালাইজড করা যাবে? উর্বর মস্তিস্কের চিন্তা যাই থাকুক না কেনো, মাঠ পর্যায়ের বিশ্বাস এখানেই সীমাবদ্ধ থাকার কথা। আর ওটাই হবে মূল চালিকা শক্তি!
যাই হোক আপনার অন্য একটি মন্তব্যে আপনি বলেছেন,
এখানেও আমার কিঞ্চিৎ আপত্তি আছে। সেটি আপনার শেষ বাক্যের ব্যপারে। আমার কাছে কিন্তু ব্যপারটা উল্টো মনে হয়। কারন হলো, ১৯৭৫ সালে আমি যতদূর জানি বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগে নেতার অভাব ছিলো না। দেশ চালাতে তিনি নিজেই যথেষ্ট ছিলেন। আওয়ামীলীগ ভেঙ্গেদিয়ে বাকশাল গঠনের দরকার ছিলোনা। তাঁর আওয়ামীলীগ দিয়েই একদলীয় শাসন কায়েম তিনি করতে পারতেন। অযথা সমাজের সব হাবিজাবি টেনে নিয়ে বাকশাল গঠন করার দরকার কি ছিলো? ছিলো না। কিন্তু তিনি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কেনো? যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ টাকে একটি জাতীয় দেশ প্রেমীক সরকার দিয়ে কিছুসময়ের জন্যে পুনর্গঠনের কাজ ত্বরান্বিত করা। এখানে তিনি যদু মধু সবাইকেই বুকে টেনে নিয়েছিলেন। কই ক্ষমতার আস্ফালনতো করতে দেখিনাই! আর আমিতো মনে করি সময়ের প্রেক্ষিতে তার উপলব্ধি এবং দেশ গঠনের অভিপ্রায় শতভাগ খাঁটি ছিলো। মিশনটি কতোটা সফল হতো তা নির্ভর করতো যারা সেখানে কাজ করতো তাদের আন্তরিকতার উপরে। আর এটিও বলা নিশ্চই ঠিক নয় যে তা আমাদের জন্যে খারাপ হতো, কারন তার কোন অভিঞ্জতা আমাদের নেই। তাহলে যে মন্তব্যটি করলেন তার যথার্থতা কোথায়? যে নেতা আমাদের একটি স্বাধীন ভূখন্ড দিলেন তার এই উদ্যোগকেই আপনারা বলছেন ক্ষমতা লিপ্সা বা গনতান্ত্রিকতাহীনতা? তিনিতো গনতন্ত্রের জন্যেই ১৯৭১ সালে লড়লেন খোদ পাকিস্তানী হায়েনাদের বিরুদ্ধে! আর তাঁকেই বললেন এই কথা? শুনেছি মাছ তাদের পাড়া ডিম খেয়ে ফেলে, কিন্তু মানুষ যে তার আপন সন্তানের দেহ ভক্ষন করে এই প্রথম আপনার কাছে শুনলাম! মেজর জিয়া বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনা পুনর্বার পাঠ করেছিলেন বলে যদি তাকে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠক বলতে হয় (যা মতান্তরে সত্য নয়) সেখানে বঙ্গবন্ধুর মাঝে জাতির পিতা হিসেবে যদি কিছুমাত্র অহঙকার হয়েও থাকে তা কি স্বাভাবিক নয়? আমার ধারনা ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট নেতা বা ব্যক্তির অভিব্যক্তি সমসাময়িক পরিস্থিতির মিথষ্কৃয়া না ঘটালে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়না। আমার মনে হয় এখানে আমাদের আরোও তথ্য এবং চিন্তা দরকার একেবারে যুক্তি নির্ভর সাজুয্যপূর্ণ ভাবে।
@Keshab K. Adhikary,
এটা খুবই সত্য যে বংগবন্ধু সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। তবে ৭৫ এ একদলীয় বাকশাল গঠনকে কি গনতন্ত্রের কোন সংজ্ঞায় ফেলা যায়? দেশে আর কোন দল থাকবে না শুধু একদল বাকশাল থাকবে এটা কেমন হল? ৪ টি সংবাদপত্র বাদে আর সব বন্ধ ঘোষনা কি গনতন্ত্রের পূর্বশর্ত বাক স্বাধীনতায় কঠোর হস্তক্ষেপ নয়?
বাকশাল কে বংগবন্ধুর সবচেয়ে বিচক্ষন নেতা তাজউদ্দিন মূল্যায়ন করেছিলেন বংগবন্ধু এবং তাদের বাকি সবার মৃত্যু পরোয়ানা হিসেবে, যা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায়।
আর কোন গনতান্ত্রিক দেশে এমন নজির আছে? কারন বা উদ্দেশ্য যাই হোক সেটা পরের কথা। গনতন্ত্র ছাড়াও উন্নতির উদাহরন অবশ্যই আছে। সে প্রসংগ ভিন্ন।
@আদিল মাহমুদ,
আমি যতদুর জানি (আসলে শুনেছি) বংগবন্ধুর একক সিদ্ধান্তে বাকশাল গঠন হয়নি। সংসদে প্রস্তাব পাশ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। একদলীয় শাসন, বাকশাল গঠনের উদ্দেশ্য মোটেই ছিলনা। সেদিন জাসদ জাতীয় একদল তরুণ বাকশালের অপব্যাখা করেছিল।
@আকাশ মালিক,
হ্যা, সংসদেই পাশ করে আইন জারি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সে সংসদের (মনে হয় ১০/১২ জন শুধু নন-আওয়ামী ছিল) কার ঘাড়ে কয়টা মাথা ছিল যে একমত না হয়ে প্রতিবাদ করবে?
৪ টি বাদে সব পত্রিকা বন্ধ কোনভাবেই গণতন্ত্রের সহায়ক নয়।
আমার যতটুকূ মনে হয়; ওই সময়ে বংগবন্ধু নানান চাপে অনেকটা দিশেহারা হয়ে গেছিলেন, তাজউদ্দিনের মত বিচক্ষন বিশ্বস্ত লোকদের ফেলে মোশতাকের মত কুচক্রিদের কাছে টেনেছেন, যার মূল্য এই এক বাকশাল, অতঃপর ৭৫ এর ট্র্যাজেডি, পাকি ভুতের চিরস্থায়ী আসর।
আমি আরেকটি ইমেইল পেয়েছি আমাদের মুক্তমনা সুহৃৎ এর কাছ থেকে, যিনি এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে তার বক্তব্য জানিয়েছেন এভাবে –
আপনারাও আপনাদের বক্তব্য এমেনেস্টিকে জানান।
মৃত্যুদন্ডের আমিও বিরোধি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে মুশকিল হলো যে সরকার বদল হলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা বের হয়ে এসে তাদের কার্য্যকলাপ আবার পুর্নদ্যমে আরম্ভ করবে।
বিপ্লব পাল,
আমি নিজেও মৃত্যুদন্ডকে অমানবিক মনে করি। কিন্তু এই দন্ডাদেশ রহিত করার জন্যে আন্তর্জাতিক ভাবে কনভেনশনের মাধ্যমেই চূড়ান্ত করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। কারণ গুলো একে একে বলার চেষ্টা করছি।
আজকের বিশ্ব কিন্তু একক এবং ইউনিপোলার বলা হলেও বস্তুতঃ আদর্শিক ভাবে একক নয়। আরোও বড় কথা হলো আজকের বিশ্ব যতটানা আদর্শিক ভাবে বিভক্ত তার চেয়ে বেশী অর্থনৈতিক গতিপ্রকৃতির উপড়ে নির্ভরশীল।
অর্থাৎ, ভাবতে হবে ১. দ্বন্দ্বটি আদর্শিক কিনা।
২. দ্বন্দ্বটি বস্তুগত বিষয় কেন্দ্রিক কিনা। বাদী-বিবাদীর মধ্যে।
এই রকম একটা পরিস্থিতিতে বিশ্বের অধুনা প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো অপেক্ষাকৃত দরীদ্র রাষ্ট্রগুলোকে নানা ভাবে নিয়ন্ত্রনের দ্বারা পদানত রাখছে। ফলে বিশ্বব্যাপী যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে তার মূলে রয়েছে কিন্তু এরা, মানে অর্থনৈতিক ভাবে প্রভাবশালী রাষ্ট্র গুলো। এরা এদের নিজেদের স্বার্থে তৃতীয়বিশ্বের কতিপয় পদস্খলিত দুবৃত্তপরায়নকে ক্ষমতায়নের দ্বারা যে পরিবেশ পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে তাতে করে আভ্যন্তরীন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ভাবেও অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হচ্ছে। মোড়লেরা বস্তুগত কারণে যেমন করে তাদের লেলিয়ে দেয়া লেঠেল দিয়ে নিরীহ গ্রাম বাসীকে পর্যুদস্ত করতো আজকের আন্তর্জাতিক মোড়লেরা বিশ্বের তাবৎ গ্রামবাসীকে ঠিক সেটাই করছে। অর্থাৎ, দ্বন্দ্বটি বস্তুগত। কিন্তু যেহেতু আন্তর্জাতিক ভিলেজ পলিটিক্স এখানে ক্রিয়াশীল সুতরাং কিছুটা আদর্শিক দ্বন্দ্বের রং এখানে লেপটানো থাকে।
আদর্শিক দ্বন্দ্ব যদি হয়, আর আদর্শগত কারনে যদি অপরাধী আসামী হয় তাহলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে কি সংশোধন যোগ্য কিংবা তথ্য নিকেশের কাজ সম্ভব? আমি কিন্তু তা মনে করিনা। চেষ্টা করা যেতে পারে তবে তা মনে হয় অসম্ভব। কারণ অপরাধী এই ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে বলীয়ান থাকে। সেই বল আদর্শগত বা জাত।
আবার অপরাধী যদি বস্তু গত স্বার্থে অপরাধী সাব্যস্ত হয়, তখন হয় উল্টো। কারণ মানসিক ভাবে সে থাকে দুর্বল, অতএব অপেক্ষাকৃত স্বল্প চেষ্টাতেই রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব। কিন্তু এখানে একটি বিষয় এভাবে আসে যে এই ধরনের অপরাধীরা সম্ভবত অন্তিম বিচারে কম বিপজ্জনক এবং কোন না কোন প্রত্যাশায় সে অপরাধে জড়িত। আর প্রত্যাশা তো থাকতেই পারে যেকোন মানুষের। কারন মানুষ উচ্চাকাঙ্খী হতেই পারে। আর তার উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়নে সে অপরাধ বেছে নিতে পারে। সমাজের ক্ষমতা ধরেরা এই ধরনের অপরাধে বেশী জড়িত থাকে।
আবার আজকের পৃথিবীতে দেশ গুলোতো যোগাযোগের দ্বারা প্রায় একি গাঁয়ের ঘর। সুতরাং এই ঘরে অঘটন ঘটিয়ে পাশের ঘরে যদি ঘাপটি মেরে থাকে আর পাশের ঘরে যদি আপনার প্রবেশাধিকার নাথাকে, তাহলে এই পিশাচ গুলোকে আপনি রুখবেন কি করে? তাই দরকার আন্তর্জাতিক কনভেনশন। সেকি বাস্তব সম্মত এখন? পাশাপাশি এপ্রশ্নটিও বোধ হয় এখানে অবান্তর নয় যে, বাংলাদেশের জাতির পিতার খুনীদের এখনো সবাইকে কারাগারে ঢুকানো গেলো না কেনো?
এখন প্রশ্ন হলো সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ড থাকবে কিনা। বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতিতে আমরা কি সর্ব্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদন্ডকে বাতিল করতে পারি কিনা। এই সিদ্ধান্তটি নির্ভর করছে আমার মতে নিম্ন লিখিত ৪টি বিষয়ের উপড়।
. স্থানীয় জনগনের শিক্ষার মান এবং আত্মসম্মানবোধের মাপকাঠি
. স্থানীয় পর্যায়ের অর্থনৈতিক অবকাঠামো
. স্থানীয় পর্যায়ের সামাজিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্য এবং এর গতিপ্রকৃতি।
. স্থানীয় ক্ষেত্রের ওপড় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রভাব এবং তার গতিপ্রকৃতি।
এবার আসুন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টিকে দেখি। উপড়ের ৪টি অবস্থার কোনটি কি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিক এবং সহনীয় মাত্রায় আছে? পরিসংখ্যান আমার কাছে নেই, তবে খোলা চোখে যা দেখি তাতে নেতিবাচক রায় আসতে বাধ্য। এমতাবস্থায় সম্ভবতঃ রাষ্ট্র তার জনগনের নিরাপত্তা বিধানের নিরীখে মৃত্যুদন্ডকে সর্ব্বোচ্চ শাস্তির বিধান থেকে রহিত করতে পারবে না।
এবার আসা যাক আমাদের আলোচিত প্রসঙ্গে। ঘটনা ঘটেছিলো আজ হতে ৩৪ বছর আগে। আত্মস্বীকৃত খুনীদের মৃত্যুদন্ড এই কারনে প্রযোজ্য যে,
১। এরা বাঙালী জাতির পিতাকে হত্যাকরেছিলো, যিনি তখনো এজাতির অবিসংবাদী নেতা ছিলেন এবং তাঁর কোন বিকল্প ছিলোনা। শেষ চেষ্টা করতে পারতেন এমন ৪জন তাঁর সহযোগী নেতাকেও কারাগারে বন্দী অবস্থায় নির্মম ভাবে বেওনেটে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়।
২। তাদের এই নির্মম হত্যাকান্ডের মূখ্য উদ্দ্যেশ্য ছিলো এজাতিকে কান্ডারী বিহীন করে আদর্শচ্যূত করা।
৩। ঐ আদর্শের স্বার্থক ধারক, আদর্শের প্রতি অবিচল বিশ্বাস এবং তার বাস্তবায়ক ছিলেন (অর্থাৎ যাঁর মাধ্যমে এই চাড়াটি লালিত এবং প্রতিপালিত হবে শৈশবে) এক মাত্র তিনি, অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু।
৪। এই উপরোল্লিখিত বিষয়টি তৎকালীন জনসাধারন এবং হত্যাকারীরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতো।
৫। অতএব, এমাটি হতে সেই শ্বাশত আদর্শকে উপড়ে ফেলতে হলে ২টি কাজ করতে হবে: (ক) আদর্শের কান্ডারীকে সমূলে ধ্বংস করতে হবে (খ) এজাতির মগজ ধোলাই করতে হবে।
৬। প্রথম কাজটি সম্পন্ন করেছিলো ১৯৭৫ এর ১৫ই আগাষ্ট ভোরে। আর ২য় কাজটি সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর দ্বারা, যা বিগত নির্বাচন পর্যন্ত তো বলবৎ ছিলোই এমনকি এখনো এর রাশ পুরোপুরি টেনে ধরা যায়নি।
৭। বিগত নির্বাচনের ফলাফলে এই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির যাত্রাপথে কাঁটা পড়ে! ফলে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। যার ধারাবাহিকতা আমরা দেখেছি, বিডিআর-এ, ব্যারিস্টার তাপসের উপরে হামলায়, কিছুদিন আগের মার্কীন এবং ভারতীয় দূতাবাসে হামলা পরিকল্পনায়, সরকারী কাগজের গুদামের আগুনে, মাঝে মধ্যেই প্রশাসনের উল্টা-পাল্টা কামে! এমনকি পুলিশ এবং RAB-র বীনা বিচার হত্যা কান্ডে।
৮। এতক্ষনে নিশ্চই অনুমিত হচ্চে যে সেই ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের ষড়যন্ত্র এবং এর ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান।
৯। এবার ৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের হিসেব কি দরকার? একটা অনুমান নিশ্চই আছে! আর এই সব লাশেদের সারি দীর্ঘ হতে দীর্ঘতর হচ্ছে কিন্তু এদের (খুনীদের) বন্দীদশায় নতুবা পলাতক অবস্থায়। মৃত্যুদন্ড হয়েছে তো মাত্র ১২ জনের! আপনারা কি এদেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের আরোও আরোও মৃতের সারি দেখতে চান? দেখতে কি চান আরোও কবি হুমায়ুন আজাদের লাশ? তাহলে আর দেরী নাকরে এদের সাজা মৌকুফের আন্দোলনে নেমে যেতে পারেন! এ সবই একি সুতোয় গাঁথা।
১০। আর এরা সবাই আত্মগ্লানীহীন, অনুশোচনাহীন এবং ভয়ঙ্কর প্রতিহিংসা পরায়ন আত্মস্বীকৃত খুনী। প্রচলিত আইনে এদের এই শাস্তির কোন বিকল্প নেই। এদের পেছনে কিছু আন্তর্জাতিক শক্তিও ক্রিয়াশীল, যাদের মধ্যে, পাকিস্তান, সৌদিআরব আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম (অন্তত পক্ষে বিগত দিনের প্রকাশিত তথ্য তাই বলে)।
আমাদের জাতির পিতার হত্যাকান্ডে আন্তর্জাতিক মোড়লেরা কি করে কলকাঠি নেড়েছে আশাকরি পত্রপত্রিকায় তা দেখেছেন। তারা নিজ হাতে কিছু করেনি কিন্তু কিছু মাফিয়াদের ব্যবহার করেছে স্থানীয় লেঠেল হিসেবে। এখন আমাদের, আমাদের কি করনীয়? মোড়লের ছাঁয়াও তো স্পর্শযোগ্য আমরা নই, কৈফিয়ৎ তলবতো দূরের কথা। কাজেই মাফিয়া ঠেকাও। তাও আন্তর্জাতিক নয়, স্থানীয়। এমন ভাবে যেনো স্থানীয় নতুন মাফিয়া চক্র গড়ে না উঠতে পারে অথবা সাহসী নাহয়, বা হলেও মনোবল থাকে অতি দুর্বল। সতরাং এধরনের অপরাধে মৃত্যুদন্ডই হচ্ছে একমাত্র অস্ত্র তবে অবশ্যই বিচার বিভাগকে সচেতন, স্বাধীন এবং সর্ব্বোচ্চ দায়িত্ত্বশীল হতে হবে।
এবার আসুন আপনার প্রশ্নের উত্তরে আসি।
আপনার ১ম যুক্তি ছিলো,
আর যদি আসামী সংশোধিত হতে না চায়, (কারণ তারা আদর্শের প্রতিস্থাপন চেয়েছিলো) সে ক্ষেত্রে কি হবে বলেন নি। ঘটনার ধারাবাহিকতা বলে আলোচিত জাতির পিতার খুনীরা এই পর্যায় ভূক্তছিলো।
আপনার ২য় যুক্তি ছিলো,
আপনার এই কথাটি বেদ-গীতার কথার মতো শোনাচ্ছে! গীতা অনুযায়ী তাই, কিন্তু আমি মনে করি বেঁচে থাকাতেই স্বার্থকতা। আমি বেঁচে থাকব সবাই বেঁচে থাকবে, আমরা একে অপরকে অনুভব করবো এটিই কিন্তু মানবতা বা মানব জীবনের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা। সৃষ্টিতেই আনন্দ এবং সৃষ্টির জন্যেই, জীবনের জন্যেই এবং মানব জীবনকে সৃষ্টিশীল করে তুলবার জন্যেই বেঁচে থাকতে হবে। বিঞ্জান তাই জীবনকে দীর্ঘতর করতে আর অমরত্ত্বের সন্ধানে ব্যস্ত! আলোচ্য খুনীদের সৃষ্টির আর কোন ক্ষমতা নেই ওরা এখন ধ্বংসের প্রতীক মাত্র, মৃত্যুর ছাঁয়ার মতো! মানব জাতির অগ্রযাতাকে অপ্রতিহত রাখতে তাই এদের এই বিভৎস ছাঁয়ার অপসারন জরুরী।
আপনার ৩য় যুক্তি ছিলো,
শাস্তির উদ্যেশ্য অপরাধ আটকানো, বিগত ৩৪ বছর কি অপরাধ আটকে ছিলো? এদেশে লাশের সারি এতো দীর্ঘ কেনো হলো বলবেন কি? তাদের মৃত্যুদন্ডাঞ্জা তো হলো এই গত ১৯ শে নভেম্বর ২০০৯-এ। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে কারাগারে আটকে রেখেও অপরাধ বা তার ধারাবাহিকতা ঠেকানো যায় না বরং বাড়ে এবং ক্ষেত্র বিশেষে বেড়ে যাবার আশংকা থাকে। এরা কাজটি করেছিলো আদর্শিক কারনে, এটি ছিলো ষড়যন্ত্র। এখানে আন্তর্জাতিক মাফিয়ারা যুক্ত ছিলো। এদের জীবনের নিশ্চয়তা ছিলো। দেশী-বিদেশী কুচক্রীরা মিলেই কাজটি করেছে। এদের গায়ে ফুলের টোকাটি পড়বেনা এই নিশ্চয়তায়ই তারা কাজটি করেছে, নইলে করতো না। এদেরকে আপনি এতোবড় বীর ভাবছেন কেনো? এখানে পাকিস্তান, সৌদীআরব আর খোদ আমেরিকার হাত ছিলো, প্রকাশিত তথ্যেতো স্পষ্ট দেখাই যাচ্ছে! এরা গত কয়েক বছর ধরে তো কারাগারে আছেই, তথ্য কয়টা বেড়িয়েছে? এরা তো জামাই আদরে ছিলো! পত্রিকায় দেখেছি এরা ২১শে আগষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যাকরে কারাগার হতে বেড় হয়ে যেতো। বাংলাদেশ হতো পাকিস্তানের কনফেডারেশন! আর আত্মসমালোচনা? আমি ফাঁসীর রায় কার্যকর পর্যন্ত অপেক্ষাকরে দেখবো (যদি ইতোমধ্যে কথিত লাশের সারিতে আমি নিজেই যুক্ত হয়ে নাপরি!) কি আত্মসমালোচনা ওরা করে! আশা করি বুঝতে পারছেন আমি আবেগী কোন যুক্তি তুলে ধরিনি। বাস্তবতা।
অতএব, মহামান্য আদালত যা দিয়েছে রায় আমি তার ১০০ভাগ বাস্তবায়ন চাই। পিছিয়ে থাকার আর সময় নেই। এবার এগুবার পালা।
@Keshab K. Adhikary,
আমি মহিউদ্দিন নামে এক খুনীর সাক্ষাতকার পড়ে বুঝেছিলাম এটা খুনীদের মাথায় ছিল, ব্যার্থ হলে তাদেরকেই খুন করা হবে। আর সফল হলে, তারা সেফ প্যাসেজ পাবে। মনে রাখবেন র এই চক্রান্ত ভাল করেই জানত-মুজিবকে বারবার জানিয়েছে। শেষ মেশ র এর কর্নাধার পর্যন্ত ঢাকায় এসে মুজিবকে এই চক্রান্ত বোঝানোর চেষ্টা করেন। ইন্দিরা শেষ চেষ্টা করেন র এর এক অফিসার যিনি কাদের সিদ্দিকির ঘনিষ্ট ছিলেন, তার মাধ্যমে মুজিবকে সাবধান করতে। মুজিব কিছুই শোনেন নি। সুতরাং সিয়া বা আই এস আই যতই পেছনে থাক বিদ্রোহীরা জানত র সব খবরই রাখছে। শুধ একবার শেখ সাহেব তা্দের কথা শুনলেই তারা ধরা পড়বে। তাই রিস্ক ত ছিলই-ভীষন ভাবেই নিয়েছিল খুনীরা। কিন্ত তাদের সাক্ষাতকার পরে আমার মনে হয়েছে এরা ব্রেইন ওয়াশড ইসলামিস্ট এবং ভারত বিরোধি। সেটাই মূল কারন। নইলে এত বড় রিস্ক কেও নেবে না।
@বিপ্লব পাল,
আমারো বেশ ভালভাবেই মনে হয় যে ৭৫ এর খুনীদের নৃংশংসতার পেছনে কোনরকম ফ্যানাটিসিজম আছে। ধর্মীয় হওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশী। আন্তর্জাতিক মাফিয়া সি আই এ এসব তত্ত্বের থেকে আমার মনে হয় খুণিদের মূল ড্রাইভিং ফোর্স ছিল এখানে। তবে এই সত্য দূঃখজনকভাবে আমাদের আরেকটি তিক্ত দিক তুলে ধরে যা আমরা কেউ আলোচনা করতে চাই না।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে অংশগহন তখন করে থাকলেও পরবর্তিতে কিছু মানুষের মনে নিশ্চিতভাবে মোসলমান পাকিস্তান ভাঙ্গার অনুশোচনা এসেছে। দেশের একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষই একই অনুভূতি পোষন করে বলে আমি মনে করি। এদের সরাসরি বোঝা যায় না কারন এরা সরাসরি রাজাকার মার্কা কথাবার্তা বলে না।
৭৫ এর অধিকাংশ খুনীই পদক পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিল। কিন্তু মূল নেতা ফারুক রশীদের ব্যাকগ্রাউন্ড বাংগালী থেকে পাকিস্তানী বেশী। ফারুক বাংলা লিখতে পড়তে জানে না বলে শুনেছি, তার কথ্য বাংলাতেই উর্দু এসে পড়ে। ৭৫ এ বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে তাদের লিবিয়ায় আশ্রয় নেওয়া তো নেহায়েত কাকতালীয় না। ১৫ই আগষ্ট ভোর থেকেই রেডিও বাংলাদেশে উর্দু গান বাজানো শুরু হয়েছিল এদের সাথেই। এক ফাসীর আসামী কর্নেল শাহরিয়ার রশীদের ছোট এক ভাইকে আমি কবার দেখেছি, তাদের বাসাতেও গেছি। তারা বাড়িতে সবাই উর্দু বলে।
এদের মৃত্যুদন্ডের আরেকটি কারন হল এরা যে শুধু ৭৫ এর জন্যই দায়ী তা না, এর পরেও এরা বহুবার দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, এমনকি গডফাদার জিয়ার বিরুদ্ধেও ফারুক কু করেছে, বজলুল হুদাও করেছে। জিয়ার গুহ্য কথা এরা জানে বলে জিয়া অত্যন্ত নিষ্ঠুর হলেও ফারুককে কিছুই বলেনি। শুধু দেশের বাইরে বের করেছে।
শুধু তাই না, জেলের ভেতরে থেকেও এরা নানান রকমের ষড়যন্ত্র, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায় তা বিশ্বাস করার যথেষট কারন আছে।
এদেরকে যাবজ্জীবন দিয়ে জেলে রেখে দিলে তাও হবে বিপদজনক।
@আদিল মাহমুদ,
ঠিক তাই। ইন্টারভিউ এবং ইতিহাস পড়ে আমি এটাই বুঝেছি। সুতরাং মৃত্যদন্ডাজ্ঞা দরকার ছিল সেই ধর্মীয় আদর্শবাদের। সেই ত আসল কিলার। এটা বলার সাহস বোধ হয় বাংলাদেশে কারুর নেই। আমি ত বলব খুনী নিজেই একজন সেই খুনে আদর্শবাদের ভিক্টিম। সেই শাস্তি কে দেবে? আজ ইসলামিক ভাতৃত্বের রস আছে বলেই না এই লোক গুলোকে শূলে চড়াতে এত বছর লাগল?
আমি শুনেছি, কোথায় মনে নেই- একজনকে খৃস্টান হতে গেলে এই বশ্বাস নাকি জরুরী যে যীশু, মানব জাতি সমস্ত অপরধের শাস্তি নিজ কধে তুলে নিয়েছিলেন। যেমন, মুসলমানদের কে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হয় সে, আল্লাহ এক এবং মূহাম্মদ তার প্রেরিত পুরুষ।
এখন নৈতিক বা যৌক্তিক যে ভাবেই দেখেন একজন খৃস্টান ধর্মে বিশ্বাসী ব্যাক্তির জন্য অপরাধিকে শাস্তিদেয়া তার অবস্থানের বিরোধী হয়ে যায়।
জেল-জরিমানাকে যদিও অপরাধীদের সংশোধন করছি বলে চালিয়ে দেয়া যায় কিন্তু মুসকিলটা হচ্চে মৃত্যুদন্ডের ক্ষেত্রে।
মৃত্যুদন্ডকে অমনাবিকতা ভাবার সুত্রপাত আসলে খৃস্ট ধর্মের গোজামিল পুর্ন মহিমাকে আরো উপরে তুলে ধরার জন্য। বাকিদের জন্য( যারা খৃস্ট ধর্ম বশ্বাসী নন) এটা মানবিকতা চর্চার হাল ফ্যাসন।
অপরের জীবন প্রবাহ অন্যায় ভাবে রোধ করার শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদন্ডে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কোন অমানবিকতা দেখিনা। বেঁচে থাকাটাই আনন্দের।
তাইতো অন্ধ, পঙ্গু, দরিদ্র সবাই বেঁচে থাকতে চায়। জেল খানায় বেঁচে থেকে, প্রতিশোধের অংক কষা বা জিয়ার মত কেউ এসে ওদের মুক্তকরবে এই প্রতিক্ষার সুখ স্বপ্ন ওদের অপরধের তুলনায় কোন শাস্তিই হতে পারে না।
@আতিক রাঢ়ী,
আবেগপূর্ণ কথা হল। আমি যুক্তি দিয়েছিলাম কেন মৃত্যুদন্ড না। এর মধ্যে কোন ফ্যাশন বা খৃষ্ট ধর্ম নেই। শ্রেফ যুক্তি দিয়েই আমি দেখিয়েছি কেন মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা না।
@বিপ্লব পাল,
মানুষের জীবনে কি আবেগের কোনই মূল্য নেই? শুধুই যুক্তি? আমি মানি যে মৃত্যুদন্ড দিলেই অপরাধ কমে যাবে এ ধারনা সত্য নয়। আমেরিকার মৃত্যুদন্ডওয়ালা টেক্সাস ফ্লোরিডা থেকে মৃত্যুদন্ডহীন কানাডায় ভায়োলেন্ট ক্রাইম অনেক কম।
আমার মনে হয় মৃত্যুদন্ড অমানবিক জাতীয় কথাবার্তা বলা যতটা সহজ তেমনি নিজের কোন প্রিয়জনের নৃশংস খুনীকে মহাপুরুষ সূলভ ঔদার্যে মৃত্যুদন্ড মৌকুফ করে দেওয়াটা ততটাই কঠিন।
মৃত্যুর চেয়ে আজীবন জেল বড় শাস্তি মনে হয় ঠিক না। মকনে হয় অধিকাংশ মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী অন্তত শেষ পর্যন্ত আবেদন করে যায় যাতে দন্ড কমিয়ে অন্তত যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়, জীবনটা তো অন্তত রক্ষা পায়।
@আদিল মাহমুদ,
বন্ধুকে সবাই ক্ষমা করতে পারে। শত্রুকে ক্ষমার করাই প্রকৃত মহত্ত্ব। শেখ সাহেব সেটাই করেছিলেন। কিন্ত শেষ রক্ষা করতে পারেন নি নিজের অগনতান্ত্রিক মনোভাবের জন্যে।
এই যুক্তিও ঠিক না। আসামী যদি মৃত্যু দন্ডাজ্ঞার বিরুদ্ধে আবেদন করে-তাহলে মৃত্যুদন্ডের গুরুত্ব আরো হ্রাস পাচ্ছে। কোরান, গীতা এবং আমার নিজের মতও হল- মানুষ মানুষের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়, হিংসা করে-এর একটা বড় কারন ( একমাত্র না), আমরা সবাই ভুলে যায় মৃত্যুই আমাদের পরম নিয়তি। এই অনিবার্য্য পরিণতিকে মন থেকে মেনে নিলে অর্থ যশ তথা যাবতীয় চাহিদার র্যাশানালাইজেশন ঘটে। আসামী যদি মৃত্যুকে তখনো জীবনের পরম পরিণতি বলে না মানতে পারে-তার মানে তার মনে হিংসা-দ্বেশগুলো সব রয়ে গেছে। তাহলে আর কি শাস্তি হল? নিজের ভুলের আত্মপোলদ্ধি না হলে শাস্তি দিয়ে কিছুই ঠেকানো যায় না। এবং সেই আত্মোপলদ্ধিটাও সবার জানা দরকার।
@বিপ্লব পাল,
আমার ধারনা ছিলো বা এখন ও আছে যে আমার বক্তব্য যুক্তিপূর্ন। আপনি রায় দিলেন যে আমার বক্তব্য আবেগপূর্ন হয়ে গেছে। কিন্তু কেন সেটা আবেগপূর্ন হয়েছে তা বলার প্রয়োজন মনে করেন নি।
আপনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন ঠিক আছে, কিন্তু তার মানে এই না যে সাথে সাথে সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। পালটা যুক্তি থাকতে পারে যা আরো শক্তিশালীও হতে পারে।
আপনার প্রথম পয়েন্ট ছিলোঃ
>>(১) এই ‘আমি’ বস্তুটি বিরর্তনশীল। কালকের খুনী, আজকের মহৎ ব্যাক্তি হতেই পারে। খুন করার পরে কেও যদি ভুল বুঝে সামাজিক এবং আত্মিক উন্নতির পথে প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই-তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে কি কোন সামাজিক উপকার সাধিত হয়?>>
যিনি খুন হয়েছেন তিনিও একটি বিরর্তনশীল বস্তু ছিলেন। তিনি কি কি হতে পারতেন তা কিন্তু আর জানা হবেনা। আর হত্যা এমন একটি কাজ যার প্রতিকার হিসাবে মৃত ব্যক্তিকে জিবীত করা সম্ভব না। মানে কেউ যখন হত্যা করে, তখন সে একটা সম্ভাবনাকে হত্যা করে। এটা এমন একটা মাত্রার ভুল যার প্রতিকার অপরাধীর হাতে থাকেনা। আপনি যদি কারো অঙ্গহানি করেন তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাক্তি কোন একটা অর্থ দন্ড মাধ্যমে হয়তো আপনাকে ক্ষমা করে দিতে পারে। কিন্তু মৃত ব্যাক্তির ক্ষেত্রে সে সুযোগ থাকছেনা।
আপনি আরো বলেছেন, খুন করার পরে কেউ যদি ভুল বুঝতে পেরে—– আপনার কাছেই আমার প্রশ্ন–সে যদি তার ভুল বুঝতে না পারে ? আর সে যে ভুল বুঝতে পেরেছে তা নির্নয় করার উপায় কি ?
>>(২) মৃত্যু সবার নিয়তি। মৃত্যু দন্ডাজ্ঞা দিয়ে তাই কাওকে কোন দন্ড দেওয়াই হয় না। জেলে বাকি জীবন কাটানো অনেক বড় শাস্তি। মৃত্যু দন্ডাজ্ঞা আদতেই কোন শাস্তি না-বরং তাকে পরম মুক্তি দান করা।>>
আপনার উপরের যুক্তি শুনে আমার এখনি কিন্তু মরে যেতে ইচ্ছা করছে না। পরম মুক্তির এমন লোভ দেখাবার পরেও। আমার ধারনা অন্যরাও আমার মত নিশ্চিন্ত হতে পারেনি আপনার এই মুক্তির আশ্বাসে। আপনি নিজেও না। কারন আমরা বেঁচে থাকতে চাই। যত দিন সম্ভব। জীবনের প্রতি এই যে ভালবাসা, একে কেড়ে নেয়াই যৌক্তিক শাস্তি।
অন্যথায় যার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে তার প্রতি তার পরিবারের প্রতি, সর্বপরি মানবতার প্রতি অন্যায় করা হয়।
>>৩)এই খুনীরা কি কোন বস্তুবাদি স্বার্থে এই কাজ করেচ্ছিল? তারা জানত এই কাজ করার পথে একটু এদিক থেকে ওদিক হলে, সেই দিনই প্রাণ হারাতে পারে। আদর্শগত জায়গা থেকেই ওরা খুন করেছিল>>
আপনার এই তিন নম্বর যুক্তিটা বেশ অভিনব। কারন তাদের এই কাজের পিছনে কোন আদর্শ ছিলো না, ছিলো বস্তুবাদী স্বার্থ। এটা ভারতের স্বাধীনতা দিবসে( ১৫ই আগস্ট) পাকিস্থানের উপহার ছিলো। যারা কাজটা করেছে, করেছে টাকার জন্য।
@আতিক রাঢ়ী,
হত্যাকারিদের দুজনের সাক্ষাতকার পড়েছি। টাকার জন্যে ্কেও এত বড় রিস্ক নেই নি। ইসলামি আর ভারত বিরোধি চেতনা, এদের মাথা বিগড়েছিল।
@আতিক রাঢ়ী,
প্রবল ভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা যেমন জরুরী-তেমন ই এই ইচ্ছার মধ্যেই মানব শত্রুতার বীজ নিহিত। মৃত্যু নিয়তি এটা জেনেও বেঁচে থাকা যায় আবার এটা মাথায় না রেখেও বেঁচে থাকা যায়। পার্থক্য হচ্ছে প্রথমটার ক্ষেত্রে জীবন এতটা সাংঘার্ষিক হয় না। বৃহত্তর এবং অন্তিম পরিণতির দিকে চোখ থাকলে অনেক ক্ষুদ্র পার্থক্য এবং শত্রুতা ভুলে বাঁচা যায়।
মুজীব হত্যার খুনীদের প্রথম থেকেই দেশ এবং জাতির শত্রু বানিয়ে দেওয়া হল-কারন তারা তাই। কিন্ত আসল খেলোয়াড়রা ছিল নেপথ্যে। তাই তাদের ভালোবাসা বা মুক্তির আশ্বাস দিয়ে নেপথ্যের কাহিনীটা জানা ছিল অনেক বেশী জরুরী। জানা দরকারছি্ল কিভাবে সাম্রাজ্যবাদি গুপ্তচররা তৃতীয় বিশ্বে কলকাঠি নাড়ে। তারা নিজেদের দোষ স্বীকার করে, বাকী শত্রুদের চিনিয়ে দিলেই, ভবিশ্যত হত বেশী সুরক্ষিত।
@বিপ্লব পাল,
>>> কোরান, গীতা এবং আমার নিজের মতও হল- মানুষ মানুষের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হয়, হিংসা করে-এর একটা বড় কারন ( একমাত্র না), আমরা সবাই ভুলে যায় মৃত্যুই আমাদের পরম নিয়তি। এই অনিবার্য্য পরিণতিকে মন থেকে মেনে নিলে অর্থ যশ তথা যাবতীয় চাহিদার র্যাশানালাইজেশন ঘটে। আসামী যদি মৃত্যুকে তখনো জীবনের পরম পরিণতি বলে না মানতে পারে-তার মানে তার মনে হিংসা-দ্বেশগুলো সব রয়ে গেছে। তাহলে আর কি শাস্তি হল? নিজের ভুলের আত্মপোলদ্ধি না হলে শাস্তি দিয়ে কিছুই ঠেকানো যায় না। এবং সেই আত্মোপলদ্ধিটাও সবার জানা দরকার। >>>
আদিল ভাইকে দেয়া আপনার উপরের উত্তরের ব্যাপারে আমার কিছু বক্তব্য আছে, যা আশাকরি অপ্রাসঙ্গিক হবে না।
আপনি বলেছেন, মৃত্যুই মানুষের পরম নিয়তি। পরম আর নিয়তি শব্দ দুটির সবচেয়ে বস্তুবাদী অর্থ ধরলে যা দাঁড়ায় তা হচ্ছে – প্রধান অবসম্ভাবী ঘটনা। এটা অবসম্ভাবী ঘটনা, তবে প্রধান কিনা তা কিভাবে নশ্চিৎ হওয়া গেল ? প্রতিটা বস্তুই একদিন ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। এই ধ্বংস প্রাপ্তি ঐ বস্তুর ক্ষেত্রে প্রধান ঘটনা হয় কি ভাবে ? ধরুন একটা গাছ মারা গেল, এটাকি গাছের ক্ষেত্রে প্রধান ঘটনা? নাকি ফল দেয়াটা প্রধান ঘটনা ? নাকি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন আর অক্সিজেন ত্যাগ করা প্রধান ঘটনা ? নাকি পাখিদের আশ্রয় দেয়াটা প্রধান ঘটনা ?
ধরা যাক গরুর কথা। মৃত্যুর মাধ্যমে এর জীবনে কি ঘটে যাকে এর জীবনের প্রধান ঘটনা বলা যায় ? নাকি বংশ বিস্তার করা এর জীবনের প্রধান ঘটনা ? নাকি দুধ, চামড়া, মাংস উৎপাদন ? নাকি হাল টানা ?
নক্ষত্রের ক্ষেত্রে আলো ছড়ানো এর প্রধান অবসম্ভাবী ঘটনা নাকি নিভে যাওয়া ?
এখন আমাদেরকে হিংসা শূন্য পৃ্থিবীর জন্য মৃত্যুকে স্বরন করতে বলছেন।
স্কুলের ভাল ছাত্রের প্রতি হিংসা না থাকলে ভাল ছাত্র হবার প্রেরনা আসবে কথা থেকে ? হিংসা নেতিবাচক দিকের পশাপশি এর ইতিবাচক দিকের কথা ভুলে গেলে পৃ্থিবীর দৈনন্দিন জীবন প্রবাহ থেমে যাবে। হিংসার ইতিবাচক দিক আমাদের কে আরো বাশী উৎকর্ষতা অর্যনের জন্য প্ররোচিত করে। যা জীবন -চক্রের গতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।
সবাই মিলে মৃত্যুর বন্দনা শুরু করলে জীবন থেমে যাবে।
মুসলমান সমাজে বহুল প্রচলিত একটা দার্শনিক গল্প আছে যা সাধারনত
পুরোহীত শ্রেনী ওয়াজ- মাহফিলে ব্যাবহার করে- গল্পটা এরকম- একবার ফেরেস্তাদের ফরিয়াদের ভিত্তিতে শয়তানকে বন্ধী করা হলো, যেহেতু সে সব অনিষ্টের কারন। কিছুক্ষনের মধ্যে দেখা গেল প্রত্যেক মানুষ যার যার নিজের কবর খুড়ছে, খোড়া হয়ে গেলে, কবরের পাশে বসে অপেক্ষা করছে কখন তারা মারা যাবে। যে দর্শন ভাববাদিরাই বাতিল করেছে বহু আগে তাই আপনি আজো লালন করছেন।
অস্তিকরা, নাস্তিকদের নিয়া সবচেয়ে অবজ্ঞাসূচক যে ভবষ্যৎবানী করে তা হলো – শেষ বয়সে কত বাঘা বঘা নাস্তি্ক অস্তিক হয়ে উঠে। বহুত দেখা হ্যায়।
এটা খারাপ কি ভাল সে বিচারে যাচ্ছি না। তবে আপনার মধ্যে অস্তিতার বৃক্ষ কুড়ি মেলছে। ভাবলাম আপনাকে সাবধান করা দরকার। কারন পরে লোকে যখন বলবে – সেই তো রাধা নাচলি, তবে কেন লোক হাসালি ? শুনতে আমাদেরও ভাল লাগবেনা।
@আতিক রাঢ়ী,
পরম নিয়তি মানে ফাইনাল ডেস্টিনেশন। মূল ধর্ম বা মূল উদ্দেশ্য মোটেও না। সেটাত আমি আগেই ক্লিয়ার করেছি। বাংলা ভুল বুঝে এত বড় পোষ্ট কি ঠিক হল?
আর আস্তিক-নাস্তিক এই ব্যাপার গুলো সব ফালতু। আসল কথাটা হচ্ছে আত্ম জিজ্ঞাসা এবং তা অভিজ্ঞতাবাদ বা বিজ্ঞানের ভিত্তিতে হওয়া চাই। যাতে মানুষের আত্মজিজ্ঞাসার পথে সংঘর্ষ না আসে।
আমি ব্যক্তিগত জীবনে সম্পূর্ণ হিংসা, ঈর্ষা, প্রতিযোগিতা পরিহার করে চলি[ যতটা সম্ভব-বিতর্কে যুক্তি দেওয়া অবশ্য এর মধ্যে পড়ে না]। কারন এতে স্বাস্থ্য, দৈহিক ও মানসিক ভাল থাকে। একে আস্তিকতা বললে আর কি করা যাবে! সুস্থ থাকাত আস্তিকতা বা নাস্তিকতার ওপরে বলেই আমার মনে হয়! আমি আমার ছেলেকে বা ভবিষ্যত প্রজন্মকে কখনোই প্রতিযোগিতার স্বার্থে ঈর্ষাপরায়ন হতে বলব না।
@বিপ্লব পাল
আচ্ছা আপনার কথাই ধরি। মূল উদ্দেশ্য না মূল পরিনতি বা মূল গন্তব্য বললেও তর্কটা থেকেই যাচ্চে যে এটাই মূল কিনা।
আস্তিক-নাস্তিক ব্যাপারগুলো আমার কাছেও ফালতু। তবে জীবনে দর্শনের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী হতে চাই।
>>>আমি ব্যক্তিগত জীবনে সম্পূর্ণ হিংসা, ঈর্ষা, প্রতিযোগিতা পরিহার করে চলি[ যতটা সম্ভব-বিতর্কে যুক্তি দেওয়া অবশ্য এর মধ্যে পড়ে না]। কারন এতে স্বাস্থ্য, দৈহিক ও মানসিক ভাল থাকে। একে আস্তিকতা বললে আর কি করা যাবে! সুস্থ থাকাত আস্তিকতা বা নাস্তিকতার ওপরে বলেই আমার মনে হয়! আমি আমার ছেলেকে বা ভবিষ্যত প্রজন্মকে কখনোই প্রতিযোগিতার স্বার্থে ঈর্ষাপরায়ন হতে বলব না।>>>
দেখুন আপনার উপরের বক্তব্য পরস্পর বিরোধী।বিতর্কে যুক্তি দেওয়া কিন্তু ব্যাক্তি জীবনেরি অংশ।
হিংসা, ঈর্ষা, প্রতিযোগীতা পরিহার করার চেষ্টা থাকা উচিৎ। তবে সম্পূর্ন পরিহার করা সম্ভব না। এটা অবাস্তব।
আপনি চান বা না চান ভবিষ্যত প্রজন্ম সংগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা করবেই। কারন মানুষ পানী জগতের বাইরের কছু না।
মুক্তমনা এডমিন,
ধন্যবাদ পোষ্টটি আপডেট করে দেবার জন্যে।
আত্মরক্ষার জন্যে কাওকে হত্যা করার মধ্যে ক্ষতি নেই-কিন্ত দন্ডাজ্ঞা হিসাবে মৃত্যুদন্ডের আমি বিরোধি। এর অনেক কারন আছে
(১) এই ‘আমি’ বস্তুটি বিরর্তনশীল। কালকের খুনী, আজকের মহৎ ব্যাক্তি হতেই পারে। খুন করার পরে কেও যদি ভুল বুঝে সামাজিক এবং আত্মিক উন্নতির পথে প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই-তাকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে কি কোন সামাজিক উপকার সাধিত হয়?
(২) মৃত্যু সবার নিয়তি। মৃত্যু দন্ডাজ্ঞা দিয়ে তাই কাওকে কোন দন্ড দেওয়াই হয় না। জেলে বাকি জীবন কাটানো অনেক বড় শাস্তি। মৃত্যু দন্ডাজ্ঞা আদতেই কোন শাস্তি না-বরং তাকে পরম মুক্তি দান করা।
(৩) শাস্তির উদ্দেশ্য কি? অপরাধ আটকানো? তাই না?
এই খুনীরা কি কোন বস্তুবাদি স্বার্থে এই কাজ করেচ্ছিল? তারা জানত এই কাজ করার পথে একটু এদিক থেকে ওদিক হলে, সেই দিনই প্রাণ হারাতে পারে। আদর্শগত জায়গা থেকেই ওরা খুন করেছিল। মৃত্যুভয় কিন্ত খুনী দের ছিল না। তাই মৃত্যুদন্ডাজ্ঞা দিয়ে এই ধরনের খুন ভবিষ্যতে আটকানো যাবে না কেন না, খুনীরা মৃত্যুর পরোয়া করে না। এই ধরনের নরমেধ যজ্ঞ আটকানোর জন্যে এদেরই পালটা ব্যাবহার করা যেত। জেলে এদের প্রকৃত প্রায়শ্চিত্ত এনং আত্মসমালোচনার মধ্যে দিয়েই এই ধরনের হত্যাকান্ড মুকাবিলা করা বেশী যুক্তিযুক্ত।
মুক্তমনার সদস্যদের কাছ থেক যুক্তি আশা করছি। আবেগ না।
@বিপ্লব পাল,
সহমত। বিদ্যুতের চেয়ারে বসিয়ে, গলা কেটে, ফায়ার স্কোয়াডে কিংবা ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড আমি সমর্থন করিনা। আদালতে হয়তো এরা বহু সত্য কথা, বহু তথ্য গোপন করেছি্ল, মৃত্যুদন্ড দেয়ার পরে এদের কাছ থেকে আর জানার বা শেখার কিছু রইলোনা। ইসলামী জিহাদীদের ফাঁসি না দিলে আরো অনেক কিছু এরা বলে দিত। সে সুযোগ তাদেরকে দেয়া হলোনা। তবে এ জাতীয় অপরাধের শাস্তি, আমি যাবদজীবন কারাদন্ডে বিশ্বাস করি।
@মুক্তমনা এডমিন,
এখনও তাহলে “মুক্তমনা এডমিন” মানুষের মৃত্যুদণ্ডে বিশ্বাসী।
ধর্মে বা ঈশ্বরে আবার অবিশ্বাসী।
‘শুনহ মানুষভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ এ কথায় আবার পরিপূর্ণ বিশ্বাসী।
যাহোক, ভবিষ্যতে মৃত্যুদণ্ডের বিপক্ষে মুক্তমনার আবস্থান আশা করতে পারি কি?
ধন্যবাদ।
সালাম
অভিজিৎদা,
ধন্যবাদ আপনাকেও Amnesty-র লিঙ্কটা দেবার জন্যে। নিশ্চই আমাদের উষ্মা, অনুযোগ জানানো উচিৎ ওদের এধরনের সিদ্ধান্তের বিপরীতে। আমিও আপনার মতো সবাইকে অনুরোধ করবো যার যার মতো করে ওদের কাছে আপনার অসেন্তোষের কথা জানান।
@Keshab K. Adhikary,
আপনার সুচিন্তিত আহবানটি আপনার মুল পোস্টেও আপডেট হিসেবে যোগ করে দেয়া হল।
ধন্যবাদ।
:yes: :yes:
কেশব অধিকারীকে ধন্যবাদ।
আসলে শুধু এখানে আমাদের উষ্মা প্রকাশ করার পাশাপাশি আমি পাঠকদের অনুরোধ করছি এমেনেস্টিকেও আমাদের উষ্মার ব্যাপারটি জানানো হোক। আমাদের একজন মুক্তমনা সদস্য নীচের বক্তব্যটি এমেনেস্টিকে প্রেরণ করেছে –
আপনারাও আপনাদের প্রতিবাদ এমেনেস্টিকে জানান। এমেনেস্টির সাইটে Contact us বলে একটি লিঙ্ক আছে সেখান থেকে আপনি আপনার বক্তব্য জানাতে পারবেন।
কাজটি শুরু করুন এখনই।
ফরিদ আহমেদ,
লিঙ্কটা দিয়ে দিলাম। আমি নিজেও মনে করি মৃত্যুদন্ড অমানবিক। কিন্তু যে হত্যাকান্ড আসলে একজন ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বা ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে জাতীয় আদর্শে গিয়ে পৌঁছোয় তখন এর গুরুত্ত্বের মাত্রাও বেড়ে যায় অনেক; এক্ষেত্রে বরং এটি গোটা জাতির আদর্শের সর্বনাশ ঘটায় এবং এর ক্ষতি পুষিয়ে নেবার আর কিছুই থাকে না অবশিষ্ট। এই যে গোটা জাতি আজ যে আমরা ধুকছি, এর শুরুই হয়েছিলো ওখানে। এ হত্যাকান্ড ক্ষমাহীন। আজো যদি জাতিকে কোনও কারণে পিছিয়ে আসতে হয়, আমাদের এই হতাশার দিন হয়তো আর কোনও দিন ফুরোবে না।
বিডি নিউজ এর লিংকটা দিলে সুবিধা হতো। আমি বিডি নিউজে ঢুকে এ্যামনেস্টি সংক্রান্ত কিছুই খুঁজে পেলাম না।
এ্যামনেস্টি মনে হয় ক্যাপিটাল পানিশমেন্টকেই অমানবিক বলে মনে করে। ফলে এটাকেই হয়তো তারা অমানবিক বলেছে, পুরো বিচার প্রক্রিয়া বা রায়কে নয়। পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্যাপিটাল পানিশমেন্টকে অমানবিক বিবেচনা করে তুলে দেয়া হয়েছে। আমেরিকার অনেক স্টেটেই এখন আর মৃত্যুদন্ড দেয়া হয় না।
ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও মৃত্যুদন্ডকে অমানবিক প্রথা বলে মনে করি।
শেখ মুজিব এবং তার পরিবার পরিজনদের নৃশংস হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে, এতে করে অনেকের মতই আমিও প্রচন্ড খুশি। আসলেই দায়মুক্তি ঘটেছে জাতির। কারণ, খুনিরা শুধু শেখ পরিবার এবং জাতীয় নেতাদেরই খুন করেনি, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটিকেও তারা খুন করেছিল শিশু অবস্থাতেই।
তারপরেও মৃত্যুদন্ডকে মেনে নিতে কষ্ট হয় আমার।
দয়া করে আমার এই বক্তব্যকে কেউ এই বলে ভেবে নেবেন না যে আমি খুনিদের পক্ষাবলম্বন করছি।
@ফরিদ আহমেদ,
আমি নিজেও মৃত্যুদন্ড পছন্দ করি না তবে অস্বীকার করার উপায় নেই যে কিছু ক্ষেত্রে ন্যায় বিচারের স্বার্থেই মনে হয় দরকার।
এমনেষ্টি তেমন নীতিতে বিশ্বাস করতেই পারে, দাবীও জানাতে পারে।
তবে এমনেষ্টির আচরন দৃষ্টিকটু লাগে যখন তারা সরব হয় শুধুমাত্র হাই প্রোফাইল খুনীদের ফাসীর সময় তখন। রহিম করিমের ফাসীতে তাদের সরব হয় কিনা আমি জানি না। এতে লবিং রাজনীতির নোংরা গন্ধ পাওয়া যায়।
গাল কাটা কামাল, এরশাদ শিকদার, বাংলা ভাই এরাই বা কি দোষ করল?
@আদিল মাহমুদ,
একমত। 🙂
আমিও না।
আ্যমনেষ্টি হল ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার। তাদের কথায় কেউ এ ধারনের দন্ডাদেশ রহিত করেছে তেমন নজির আছে কিনা এ মুহুর্তে জানি না। তারা অতীতে মনির হোসেন (৮৯ সালের সাড়া জাগানো রীমা হত্যার আসামী, ডঃ মেহেরুন্নেসার ছেলে) এর ফাসিও বাতিলের দাবী করেছিল।
তবে আদর্শিকভাবে তাদের উচিত ক্রশফায়ার, সংখ্যালঘু নির্যাতন এ ধরনের বিষয়ে সরব হওয়া। যে বিচার দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী হয়েছে, আসামী পক্ষকে পূর্নাংগ সুযোগ দোয়া হয়েছে সেখানে তাদের কিসের মাথা ব্যাথা? এই বিচার তো এসব সমস্যার কথা চিন্তা করেই অনেকের দাদী সত্ত্বেও বিশেষ ট্রাইবুনালের করা হয়নি যাতে কোন কথা না উঠে। গর জোট সরকারের আমলে যখন ইচ্ছাকৃতভাবে এই মামলার বিচারকে বার বার পেচ্ছানো হয়েছে তখন তাদের কি ভূমিকা ছিল জানি না। নাকি তারা সব আসামীকেই ক্ষমা বা মুক্তি দেবার নীতিতে বিশ্বাসী?
আ্যমনেষ্টি এ ধরনের পরিষ্কার বিচারে অযাচিত দাবী তুলে তাদের আসল উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। এ ধরনের অবাস্তব দাবী দাওয়ার জন্যই অনেকে এসব মানবাধিকার সংস্থাকে পাত্তা দেয় না।
ফাসি না দি য়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃতু্ কাযকর কর লে বেটার হয় ।
ত বে বিজ্ঞ আদাল তের রায় ই চুড়ান্ত। আ মি ভীষন খুশী এই
রা য়ে।
একমত। অমানবিক মানুষদের সাথে মানবিক ব্যবহার করলে সেটা তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার মতই হয়ে যায়। ভবিষ্যতে যাতে এরকম পৈশাচিক হত্যাকান্ড না ঘটে, সে লক্ষ্যে আমাদের মাঝে মাঝে “অমানবিক” হতেই হবে।
@পৃথিবী,
একমত হতে পারলাম না। আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে মানবিকতার পরিচয় দিতে হবে;সেটা বিচারের ক্ষেত্রেও। মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে বিচার করলেই একমাত্র ন্যায়বিচার করা সম্ভব।
আর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ডই একমাত্র মানবিকতার প্রকাশ। এই রায়ই যথার্থ রায়। নইলে হত্যা কারীরা হত্যার লাইসেন্স পেয়ে যাবে।
@মুহাইমীন,
ঠিক।
এমন নয় যে কিছু দেশের মত বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে মৃত্যুদন্ড নেই। তাহলে নাহয় কথা ছিল। মৃত্যুদন্ড যে শুধু এই খূনীদের জন্য করা হয়েছে তা নয়।
বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত ফাসী হয়েছে বহু লোকের, আরো হবে। তাহলে বাকিরা কি দোষ করল যে তারা এমনেষ্টির এই কৃপা দৃষ্টি লাভ করছে না? বংগবন্ধুর হত্যাকারীদের মধ্যে এমন কি মহামানবীয় গুনাবলী তারা আবিষ্কার করেছে যা অন্য ফাসীর আসামী থেকে তাদের পৃথক করে?