গল্পের শিরোনাম দেখেই অনেকের হয়ত একটু কেমন কেমন মনে হবে। কেউ বা আবার ভাববেন গল্পের আদলে আবার বুঝি সেই ধর্ম বিষয়ক কোন পুরনো কচকচানি। এটাকে আসলে গল্প না বলে অনুলিখন বলাটা মনে হয় ভাল। কারন এতে লেখকের কোন কৃতিত্ত্ব নেই, কারন এটি একটি সত্য ঘটনা। আমি শুধু এখানে তুলে ধরার কাজটাই করছি। আমি জানি না ইসলাম ধর্মমতে বিধর্মী কাউকে শহীদ বলা যায় কিনা, জানার কোন দরকারও দেখি না। তবে আমাদের গল্পের তরুন অরুনকে শহীদ উপাধিতে ভূষিত করেছিল তারই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুসলমান অফিসার।
ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) এম এল ক্ষেত্রপাল, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত অফিসার, জন্ম বর্তমান পাকিস্তানভুক্ত পাঞ্জাবে্র সারগোদায়। ৭১ এর যুদ্ধে এক ছেলে অরুন ক্ষেত্রপালকে তিনি হারিয়েছেন এক সম্মুখ সমরে। ৪৭ এর দেশভাগের পর আরো অনেকের মতই তাকেও চলে যেতে হয় ভারতে। বৃদ্ধ বয়সে তার খুব ইচ্ছে হল তার প্রিয় জন্মস্থানকে আবার একবার চোখের দেখা দেখার। কিন্তু ভারত পাকিস্তান তিক্ত সম্পর্কের কারনে তার এই শখ বহুদিন পুরন হতে পারেনি। ২০০১ সালের কোন একদিনে অবশেষে তার সেই স্বপ্ন বাস্তবের মুখ দেখল। ৮১ বছর বয়সে তিনি পাঞ্জাবের সারগোদায় তার জন্মভূমি দর্শনে গেলেন। নামলেন লাহোর এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্টে লাউঞ্জে বেরিয়ে দেখলেন তাকে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবেই অভ্যার্থনা জানাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ব্রিগেডীয়ার খাজা মোহাম্মদ নাসের এসেছে। এই অপ্রত্যাশিত অভ্যার্থনায় বেশ অবাক হলেও নামটি তার কাছে একেবারে অপরিচিত নয়। পাকিস্তানী এই ব্রিগেডিয়ার তার সাথে বেশ কয়েকবার চিঠিতে যোগাযোগ করেছেন তার সাক্ষাত লাভের জন্য। অপরিচিত পাকিস্তানী অফিসারের সাথে সাক্ষাতে ক্ষেত্রপাল তেমন আগ্রহ বোধ করেননি। তবে এবার সামনাসামনি সাক্ষাতে অনুরোধ আর ঠেলতে পারলেন না। কথা দিলেন জন্মস্থান দর্শন শেষ করে তিনি এই পাকিস্তানী ভদ্রোলোকের বাড়িতে তিন দিনের আতিথ্য গ্রহন করবেন।
যথারীতি তাই হল, সারগোদায় নিজের জন্মস্থান দর্শন সেরে এমএল ক্ষেত্রপাল লাহোরে ব্রিগেডিয়ার খাজা নাসেরের বাড়িতে মেহমান হয়ে এলেন। তিনটি দিন কেটে গেল খুবই চমতকার, পাকিস্তানী এই পরিবারের আতিথ্যে মুগ্ধ ক্ষেত্রপাল। খাজা নাসেরের সাথে তার গড়ে উঠল নিবিড় অকৃত্রিক বন্ধুত্ত্ব। খুবই ভাল সময় কাটল, যদিও তার কাছে মনে হচ্ছিল যে কোথাও কিছু একটা আছে যা তিনি জানেন না।
অবশেষে তার ভারত ফেরার আগের রাতে খাজা নাসের তাকে বললেন; স্যার আপনাকে আমার কিছু বলার আছে যা অনেক বছর ধরে আমি বলতে পারিনি, অবশেষে ভাগ্য আপনাকে আমার সম্মানিত মেহমান করে পাঠিয়েছে। এ কয়দিনে আমাদের সম্পর্ক এত গাঢ্র হয়েছে যে আমার বলার কাজটা এখন আরো কঠিন। ঘটনাটা আপনার ছেলে অরুন ক্ষেত্রপাল বিষয়ে। ৭১ এর সেই ভয়াল দিনে আপনার ছেলে অরুন ও আমি দেশের প্রতি কর্তব্যের খাতিরে মুখোমুখি লড়াই করি। ভাগ্যের ফেরে সেদিন আমার হাতেই আপনার ছেলের বীরের মত মৃত্যু হয়। তরুন অরুন সেদিন ছিল অপ্রতিরোধ্য, নিজের নিরাপত্তার বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে সে নির্ভীকভাবে আমাদের ডিফেন্স লাইনে ঢুকে পড়ে। দুপক্ষেই চরম ক্ষয়ক্ষতি হয়, এক পর্যায়ে অরুন ও আমি ট্যাংক নিয়ে মুখোমুখি হয়ে যাই। দুজনেই একসাথে গোলা ছুড়ি, আমার গোলাই তাকে আঘাত হানে। এই বীরের পরিচয় আমি যুদ্ধের পর জানতে পারি, জানতে পারি সে কত অল্প বয়ষ্ক ছিল। আমরা সেনাবাহিনীতে নির্দয়ভাবে শত্রুকে হত্যার প্রশিক্ষন পাই, তবে আমরাও মানুষ, তাই কখনো কখনো এমন ঘটনা আমাদের বিবেককেও নাড়া দিয়ে যায়।
এরপর নাসের আরো যোগ করলেন যে এতগুলি বছর ধরে ভেবেছিলেন যে অরুনের পিতার কাছে তিনি ক্ষমা চাইবেন, কিন্তু এখন তার কাছে মনে হচ্ছে যে ক্ষমা করার ক্ষমতা এই পুত্রহারা বৃদ্ধের নেই। তাই আজ তিনি শুধুই এই পিতাকে অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাতে পারেন যিনি এমন বীর সন্তানকে জন্ম ও লালন পালন করেছেন।
এখন আমাদের ফিরে যেতে হবে এ গল্পের শুরু যেখানে হয়েছিল সেখানে। ১৯৭১ সাল, ৩রা ডিসেম্বর থেকে ভারত পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় সে যুদ্ধ আর শুধু বাংলাদেশেই সীমিত নেই, ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের পশ্চীম সীমান্তেও। পাক-ভারতের সীমান্তবর্তী একটি ছোট এলাকা বাসান্তার, বাসান্তার নামেরই একটি ছোট নদীর ধারে। যায়গাটি আপাত গুরুত্ত্বহীন হলেও সামরিক দিক দিয়ে এর গুরুত্ত্ব অসীম। এলাকাটি রাজনৈতিকভাবে পাকিস্তানের হলেও এটি মূলত ভারতীয় এলাকার ভেতর পড়ে, অনেকটা আমাদের বাংলাদেশের মতই। এলাকাটি ভারতের জম্মু ও হিমাচল প্রদেশে যাতায়াতের একটি শর্ট প্যাসেজ, যার নিয়ন্ত্রন যে পক্ষের হাতে থাকবে সে পশ্চীম রনাংগনের যুদ্ধে অনেক এগিয়ে থাকবে। তাই এর নিয়ন্ত্রন দখলে দুপক্ষই মরিয়া।
কাকতালীয়ভাবে দিনটি আমাদের স্বাধীনতার দিন, ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১, সকাল ৮ টা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৪৭তম পদাতিক ব্রিগেডের সদস্যরা বাসান্তার নদীর উপর একটি সেতু নির্মান সম্পন্ন করেছে তার আগের রাতেই। এলাকাটি ভারতের নিয়ন্ত্রনে তখনো থাকলেও পাকিস্তানীদের আগে পেতে রাখা জালের মত মাইন ফীল্ডের কারনে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মূল অংশ তাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাংক নিয়ে এই দলকে তেমন কাভার দিতে পারছে না। ভারতীয় সেনাসদস্যরা লক্ষ্য করল যে পাকিস্তানী বাহিনী বিপুল পরিমান ট্যাংক ও ভারী অস্ত্রসমেত তাদের অবস্থানের দিকে রওনা হয়েছে। শক্তির বিচারে অগ্রসরমান পাক বাহিনীর তূলনায় তারা খড়কুটোর মতই। ভারতীয় বাহিনীর অধিনায়াক জরুরী ভিত্তিতে ব্যাক আপ চাইলেন। কিন্তু বিপদের কথা হল ভারতীয় বাহিনী এক্ষেত্রে অনেকটা অসহায়। পাক বাহিনী নিজেদের পাতা মাইন ফীল্ড চিনে ঠিকই আসতে পারবে, ভারতীয় বাহিনী যা পারবে না। ভারতীয় পদাতিক বাহিনী এগুতে পারে কিন্তু এক্ষেত্রে পাক ট্যাংক বাহিনীর সাথে তারা কিছুতেই এটে উঠতে পারবে না।
এরকম অসম্ভব একটা অবস্থায় এগিয়ে এলেন ভারতীয় ট্যাংক বাহিনীর ১৭তম পুনা হর্স ইউনিটের একজন তরুন সেকেন্ড ল্যাফটেন্যান্ট, অরুন ক্ষেত্রপাল, যিনি মাত্র ছ্মাস আগে সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়েছেন, অসীম সাহসিকতার সাথে তিনি তার অধীনস্থ মাত্র দুটি ট্যাঙ্ক ও অল্প কিছু পদাতিক সৈন্য নিয়ে অগ্রসরমান পাক বাহিনীর মুখোমুখী হলেন। শক্তির বিচারে পাক বাহিনী তখনো বহু এগিয়ে। কিন্তু এ যুদ্ধে সেদিন সব শক্তির হিসেব নিকেশ উলটে দেয় অরুন। সে যে শুধু পাক বাহিনীর অগ্রযাত্রা রুখে দেয় তা না, উলটো তাদের ধাওয়া করে ঢুকে পড়ে পাক বাহিনীর সুরক্ষিত ডিফেন্স লাইনে। সেদিন অরুনের বাহিনীর হাতে ১০ টি পাকিস্তানী ট্যাংক ঘায়েল হয়। অরুন নিজেই ঘায়েল করে ৪ টি। বন্দী ও দখল করে বেশ কিছু পাক সেনা ও অস্ত্রপাতি। কিন্তু ছত্রভংগ পাকিস্থানীরা নিজেদের ডিফেন্স লাইনের ভেতর আবার জোট বাধে ও পালটা আঘাত হানে। অরুনের দ্বিতীয় ট্যাংকের কমান্ডার নিহত হয়, ট্যাংকটিও হয়ে যায় অচল, অরুনও হয় গুরুতর আহত। এখন শত্রু এলাকায় গুরুতর আহত অরুন একা মাত্র একটি ট্যাংক নিয়ে। এসময় অরুনের কমান্ডার রেডিওতে তাকে নির্দেশ দেন ট্যাংক ফেলে রেখে নিজের জীবন বাচাতে যা তখনো খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু অরুন ঠিকই বুঝেছিলেন যে তিনি এ অবস্থায় পিছু হঠে গেলে এত সাধ্য সাধনার ফসল সেই ব্রীজ চুড়ান্তভাবে পাক দখলেই চলে যাবে। তাই তিনি কঠোর সামরিক নীতি ভংগ করে কমান্ডারের নির্দেশ অমান্য করে ট্যাংকেই রয়ে গেলেন। কমান্ডারকে তিনি তার শেষ ম্যাসেজে বললেন, ” না স্যার, আমি ট্যাংক ছাড়ছি না, আমার কামান এখনো কাজ করছে, এ বেজন্মাদের শেষ দেখতে চাই”। এর পর তিনি মাত্র ১০০ গজ দূর থেকে আরেকটি পাক ট্যাংক ঘায়েল করে দেন। অসীম বিক্রমে একাই তিনি লড়ে ঠেকিয়ে দিলেন নিশ্চিত পাক অগ্রযাত্রা, কিন্তু শেষে তার ট্যাংকে দ্বিতীয় আরেকটি গোলা লাগে, অবসান হয় এ অসামান্য বীরের জীবনের।
সেদিন তার এই বীরত্বে প্রতিপক্ষ পাক কমান্ডারও হয়েছিলেন চরমভাবে মুগ্ধ, তিনিও পরে খবর নিয়ে জেনেছিলেন কে এই বীর। ভারত সরকার তাকে পরম বীর চক্রে ভূষিত করে।
আবার আমরা ফিরে আসি ২০০১ সালের লাহোরে। অভাবিত সত্যের মুখোমুখি হয়ে সেদিন অরুনের পিতা নির্বাক হয়ে গেলেন। একদিকে তার সন্তানের প্রত্যক্ষ হত্যাকারী তার সামনে উপস্থিত যার উষ্ম আতিথিয়েতা তিনি গ্রহন করেছেন গত তিনটি দিন, আবার অন্যদিকে ব্যক্তিগত আবেগের উর্ধ্বে পেশাদার সৈনিক হিসেবে সেই হত্যার যৌক্তিকতা উপলব্ধি এই দুয়ের টানাপোড়েনে তিনি সেরাতে আর কোন কথাই বলতে পারলেন না। তবে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন খাজা নাসেরের অকৃত্রিম আবেগ। এটা সত্য ঘটনা না হয়ে কোন কাল্পনিক গল্প হলে মনে হয় এখানে তার কোন অনুভূতি বর্ণনা করা যেত। কিন্তু বস্তুত এ গল্পের এখানেই শেষ।
পরের দিন এম এল ক্ষেত্রপাল খাজা নাসেরের সাথে ছবি তুলে দিল্লী ফিরে যান। পরে খাজা নাসের তাকে সেই ছবি একটি নোটসহ পাঠান যাতে তিনি আবার অরুন ক্ষেত্রপালের বীরত্বের কথা স্মরন করে ও তাকে সম্মান করে শহীদ অরুন ক্ষেত্রপাল বলে সম্বোধন করেন।
সূত্রঃ http://en.wikipedia.org/wiki/Indo-Pakistani_War_of_1971
@raiat khan
You are absolutely right!!
That is my experience too.
আদিল মাহমুদ,
আপনাকে আনেক আনেক ধন্যবাদ ইতিহাসের এই আলোকিত অথচ রুদ্ধ কক্ষটির দরজায় আঘাত করার জন্য। এই শহীদদের কথা আমাদের জানানো হয়নি, জানতে দেয়া হয় নি বা বলা যায় আমাদের কে এমন ভাবে গড়া হয়েছে যাতে আমরা কখনো এই ইতিহাস জানতেও না চাই।
শহীদ অরুন ক্ষেত্রপাল ও নাম না জানা আরো যারা আছেন, হাসি মুখে দিয়ে গেছে প্রান তাদের সবার প্রতি হাজার সালাম।
আর আদিল ভাইয়ের জন্য :rose2:
@আতিক রাঢ়ী,
৭১ এ ২০০০ ভারতীয় সৈন্য আমাদের দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রান দিয়েছে। প্রান তো দিয়েছে, রাজনীতি বা উদ্দেশ্য নিয়ে যতই পানি ঘোলা করে হোক। তাদের স্মৃতিতে আমরা দেশে একটাই স্তম্ভ, মিনার, বা স্মারক কিছু করতে পারলাম না? এমন নয় যে ভারতের সাথে আমাদের ইসরাইলের মতন কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই তাহলেও নাহয় কিছূটা হলেও বোঝা যেত।
আপনাকেও :deadrose: (দেরীতে পড়ার জন্য!)
আকাশ মালিক,আপনার কথায় মনে হচ্ছে আমি হিন্দু হলে বা একটি হিন্দু ছদ্মনাম ব্যবহার করলে আপনি মাইন্ড করতেন না, এ মনোভাব থেকেই আপনার নাস্তিকতার ছদ্ম আবরণের ভেতর হতে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিটি বেরিয়ে এসেছে।আপনার মতো তথাকথিত ছদ্ম নাস্তিক-প্রগতিশীল ব্যক্তিদের জন্য-ই এক সময়ের বাংলাদেশের তরুণদের জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক এবং প্রতিভাবান তরুণ লেখক মিনার মাহমুদকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল এবং সেই সাথে এই ক্ষুরধার লেখকের লেখক সত্বার অপমৃত্যু হয়েছে।আপনার বাকী বিশেষণ এবং মন্তব্য আপনার মস্তিষ্ক প্রসূত এবং অবান্তর বিধায় উত্তর দেয়া অনাবশ্যক মনে করছি।
@al murshed,
আমি এমনিতে কৌতুক টৌতুকের ব্যাপারে খুব উদার মানুষ, আদি রসাত্মক কৌতুকের ব্যাপারেও আমার ছুত-মার্গ নেই। কিন্তু তারপরেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, হঠাৎ করেই বকলম কিংবা সৈকতের নির্মল সমস্ত কৌতুকের মাঝে আপনার এ ধরণের ছন্ন ছাড়া কৌতুকগুলো বড়ই বেমানান ছিলো। আমি ভেবেছিলাম শুধু আমারই বুঝি এরকম লেগেছে, আর আমার মতামতই যেহেতু চূড়ান্ত কিছু বলে আমি মনে করিনি, সেজন্য আমি অপেক্ষা করে থেকেছি অন্য পাঠকেরা কি বলে। আমি গতকাল বেশ কয়েকটি ইমেইল পেয়েছি আপনার কৌতুকগুলোতে আপত্তি উল্লেখ করে। অনেকের কাছেই মনে হয়েছে ইসলামের বিরুদ্ধে কৌতুক দেয়া হচ্ছে, তাই আপনার হিন্দুদের বিরুদ্ধেকিছু একটা লিখে দিতে হবে – এই প্রতিক্রিয়া থেকেই কৌতুকগুলো লিখেছেন, মানের দিকে মোটেও নজর দেননি। আপনি হিন্দু না বৌদ্ধ কার ব্যাপারে কৌতুক করছেন সেটাতে আমার আপত্তি নেই, কিন্তু ওই ব্লগে আলোচিত অন্যান্য কৌতুকগুলোর সাথে তুলনা করলেই আপনি বুঝতেন যে, আপনার গুলো মানে অতি নিকৃষ্ট ছিলো, কুরুচির কথা না হয় বাদই দিলাম। কাজেই শুধু আকাশ মালিককে দোষারোপ করে লাভ নেই, আপনি উপরে আদিল মাহমুদের মন্তব্যটিও পড়ে দেখুন – আপনার কৌতুকগুলো আসলেই ছন্দপতন ঘটিয়েছিলো। মুক্তমনা লেখকের স্বাধীনতার পাশাপাশি মান এবং রুচি ধরে রাখতে উৎসুক। আশা করি আপনি এটা বুঝতে পেরেছেন।
“শহীদ” অরুন ক্ষেত্রপালকে নিয়ে আদিলের এই চমৎকার প্রবন্ধটি যেন আপনার ওই কৌতুকগুলো নিয়ে অযথা আলোচনায় নষ্ট হয়ে না যায়, সে ব্যাপারটা মাথায় রেখে এ ব্যাপারে আর অযথা কথা না বাড়ালেই মনে হয় আমাদের জন্য ভাল হবে।
@অভিজিৎ,আপনার সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ।নেতিবাচক সমালোচনাও এক ধরণের ‘ফিড-ব্যাক’-তাই গ্রহণে বাধা নেই।আমি জাতি,ধর্ম,বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের সম্প্রীতি এবং ঐক্যে বিশ্বাসী।কলেজে আমাদের তিন বন্ধুকে অনেকে ঠাট্টা করে ‘ত্রিরত্ন’ বলতো যার অন্যতম সদস্য ছিলো এক হিন্দু বন্ধু, যাকে ছাড়া আমাদের আড্ডা জমতো না।
মুক্তমনা এডমিন/ফরিদ আহমেদ,আমার ধারণা ছিল মুক্তমনার পাঠকেরা educated,intelligent,enlightened ,adult and smart enough to appreciate my jokes.আমার কৌতুকগুলিতে কীভাবে একটি ধর্ম এবং নারী জাতিকে অবমাননা করা হয়েছে তা কেউ একটি একটি করে(ধর্ম বিষয়ে একজন হিন্দু ভাই এবং নারী বিষয়ে একজন বোন) ধরিয়ে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করলে বাধিত হতাম।ধর্ম এবং নারী অবমাননার এই অভিযোগ জীবনে এই প্রথম শুনলাম।শিল্প,সাহিত্য,সংগীত,ভাস্কর্য ইত্যাদি সব কিছুতেই সকল রসের সেরা রস আদিরস বিশেষতঃ কৌতুকের বেলায়।পৃথিবীর সেরা কৌতুকগুলো সাধারণতঃ আদি রসাত্মক হয়ে থাকে।এ ধরণের আদি রসাত্মক কৌতুক আমাদের দেশের বিখ্যাত কবি সাহিত্যিক যেমন,শামসুর রাহমান(একটি মাতোয়ালা রাইত),সৈয়দ শামসুল হক(খেলারাম খেলে যা এবং অন্যান্য),হুমায়ূন আজাদ(প্রবচনগুচ্ছ এবং অন্যান্য),শওকত আলী (প্রদোষে প্রাকৃতজন) প্রমুখের লেখায় আছে।এছাড়া বাংলাদেশের এক সময়ের অগ্রসর ,প্রগতিশীল পাঠকদের পত্রিকা সাপ্তাহিক যায় যায় দিনে আদিরসাত্মক কৌতুক (যা অনেকের কাছেই কুরুচিকর মনে হতে পারে) নিয়মিত ছাপা হোত,কিন্তু তার বিরুদ্ধে কুরুচির অভিযোগ কেউ এনেছে বলে শুনিনি।আন্তর্জাতিক মানে আমার পোস্ট করা কৌতুকগুলো কীভাবে অশ্লীল,কুরুচিপূর্ণ হয়েছে তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।একটু আদি রসের ছোঁয়া থাকলেই কি কুরুচিপূর্ণ হয়ে যায়।আমি রসের ধারাটিকে বৈচিত্র্যময় করতে চেয়েছিলাম।তবে মনে হচ্ছে রসের ধারাটির বাধ্য-বাধকতা এবং স্কেলটি বুঝতে ভুল হয়েছিল।যাহোক আমার কৌতুকে কোনো ধার্মিক ভাই বোন আহত বোধ করলে আমি দুঃখিত।পরিশেষে,মুক্তিযুদ্ধে শহীদ অরুন ক্ষেত্রপাল এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং মুক্তযুদ্ধ সময়ের একটি অমর সংগীত স্মরণ করে শেষ করছি।
”বাংলার হিন্দু,বাংলার বৌদ্ধ,বাংলার খ্রিস্টান,বাংলার মুসলমান,আমরা সবাই বাংগালি,”।
@al murshed,
আমার মনে হয় ফোরাম জিনিসটা সাপ্তাহিক পত্রিকা বা কথ্য উপন্যাস থেকে বেশ আলাদা। সাপ্তাহিক পত্রিকায় আলোচানার ব্যাপার নেই। এখানে সবাই এসে আলোচনা করেন, তার মধ্যে বেশ কিছু মহিলাও আসেন। বলতে বাধা নেই আপনার কৌতূকগুলি হাস্যরস উদ্রেককারি, বহু লোককে হাসাবে, সে হিসেবে কৌতুকগুলি স্বার্থক হতে পারে। কিন্তু সাথে সাথে চিন্তা করতে হবে যে এখানে মহিলা সদস্য যারা আসেন তারা নিশ্চিতভাবেই বিব্রতবোধ করবেন। একই কারনেই এ জাতীয় আদি রসাত্মক কৌতূক টিভি অনুষ্ঠানে কেউ বলবেন না কারন সে অনুষ্ঠানও মানুষে পরিবার নিয়ে এক সংগে দেখে। আদিরসাত্মক না হলে যে ভাল কৌতূক হবে না এমন কোন কথা নেই, এখানে আদি বা নুতন কোনরকম রসের কথা ছাড়াই বেশ চমতকার চলছিল, তাই না?
কুরুচির কথা যদি বলেন ত বলব যায় যায় দিনে ছাপা হলেই যে কুরুচিপুর্ণ হবে না এমন তো কথা নেই। মুক্তমনার লেখা (ধর্ম সংক্রান্ত লেখাগুলি নিশ্চিতভাবেই সাধারন বিচারে বিতর্কিত হবে, তবে কুরুচিপূর্ণ বলা যায় না) এমনকি যারা নিয়মিত কমেন্টস লেখেন তাদের সবাই কিন্তু লিখিত নিয়মের পাশাপাশি কিছু অলিখিত নিয়মও পালন করেন যার জন্যই এ ফোরামের বিশিষ্টতা। অন্য বাংলা ফোরামে হীট এর থেকে বেশী হয় কিন্তু মানের দিকে আমার মনে হয় না কোনটা এর কাছাকাছিও। তাই আপনার কৌতুকগুলি নিশ্চিতভাবেই এখানে বেশ ছন্দপতন ঘটিয়েছিল বলে আমি মনে করি, হতে পারে আপনি নারীদের অপমান করতে কিছু বলেননি, অন্তত জ্ঞানত বলেননি বলেই আমি বিশ্বাস করি।
আশা করি বুঝতে পারবেন।
@আদিল মাহমুদ,আপনার গঠনমূলক সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ।আপনার সহজ,উদার দৃষ্টি ভঙ্গি আমাকে স্পর্শ করে।মুক্তমনা’র মানের বিষয়ে আমি আপনার সাথে অনেকটাই একমত।বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখা-লেখি বা আলাপ-আলোচনার জন্য আর কোনো বাংলা ওয়েব সাইট আছে বলে জানা নেই।
@al murshed,
আপনার কৌতুকের আগা মাথা আমি কিছু বুঝি নাই । কি আবল তাবল লিখছিলেন । হাসি আসা তো দূরের কথা ।
নাস্তিকদের কাউন্টারে আমিও কৌ্তুক দিতে পারি
ধন্যবাদ ।
@ফুয়াদ,
এটা ভাল নির্মল কৌতূক, যদিও অনেক আগে শুনেছিলাম।
কৌতুক কৌতুকই, কুরুচীপুর্ন না হলে তাতে আস্তিক নাস্তিক কোন ব্যাপার নেই। আর সেই কৌতূকের পোষ্টটা বিশিষ্টতা পাচ্ছিল কারন সেখানে কিছু রিয়েল লাইফ সত্য ঘটনাই কৌতুকের আকারে আসছিল বলে।
@ফুয়াদ, আসলেই তো, এভাবে তো কোনদিন ভাবিনি। ব্যাপারটা ভেবে কিন্তু খুবই হাসি পেল।
অফটপিকঃ কিন্তু কেউ যদি আমেরিকা থেকে ঘুরে যান, বিশেষ করে বাইবেল বেল্ট বলে পরিচিত আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের মত জায়গাগুলোর অবস্থা দেখেন তাহলে পাশ্চাত্যের ধর্মবিমুখতা নিয়ে যত কথা বলা হয় সব ভুল মনে হবে। অনেক সময় মনে হয় এরকম মাথা মোটা ধার্মিক লোকজন বোধ হয় আমাদের দেশেও নাই।
@রাহাত খান,
ধন্যবাদ, এট লিস্ট আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর আপনার কাছে আমার একটি কমেন্ট ভাল লাগল । আপনাকে ধন্যবাদ ।
@ফুয়াদ,না বুঝে ভালই হয়েছে।সম্ভবতঃ আরেকটি কুরুচির অভিযোগ থেকে বাঁচা গেছে।আপনার কৌতুকটি পড়ে মজা লাগলো।আগে শুনি নি।আচ্ছা,ফুয়াদ,নিজেকে পশু(Animal) বা নরবানর(Ape) এর বংশধর এবং বস্তু(Matter) মনে করলে রুচি,অরুচি,কুরুচি,অশ্লীলতা ইত্যাদি বিষয়গুলি কীভাবে আসে ?
@al murshed,
আপনার কৌতুকগুলো কীভাবে অশ্লীল এবং কুরুচিপূর্ণ হয়েছে সেটা যদি এখনো বুঝে না থাকেন তবে আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয় আপনাকে তা বোঝানো।
নাহ, আদিরসের ছোঁয়া থাকলেই কৌতুক কুরুচিপূর্ন হয় না, হয় কুরুচিপূর্ণভাবে তা উপস্থাপনা করলে। যেটা আপনি করেছেন মুক্তমনায়।
মুক্তমনার স্কেল ধরতে আসলেই ভুল হয়েছে আপনার। মুক্তমনা শফিক রেহমানের পঁচেগলে যাওয়া দুর্গন্ধযুক্ত যায়যায়দিন নয়।
কোন মন্তব্য করার সময় খেয়াল রখবেন কোথায় তা করা হচ্ছে। প্রাসঙ্গিক জায়গাতেই প্রাসঙ্গিক আলোচনা করা উচিত। এই আলোচনা চলছিল নাস্তিকের ধর্মকথার লেখায়। আপনি হুট করে আদিল মাহমুদের আর্টিকেলের মধ্যে বিষয়টা টেনে নিয়ে এসেছেন। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে আদিলের। তার লেখায় ছন্দপতন ঘটছে অহেতুক।
@ফরিদ আহমেদ, মূল লেখায়-ই উত্তর দিতে চেয়েছিলাম,এই থ্রেডে নয়।কিন্তু মন্তব্য বক্সটি না পেয়ে আদিল সাহেবের এ লেখার মধ্যে এসেছিলাম।মনে হয় আমার কম্পিউটারে সমস্যা হয়েছে।
আরেকটি অজানা কাহিনীঃ
আমি কিছুদিন আগে একজন ‘৭১ এর যুদ্ধে রত একজন ভারতীয় অফিসারের সাথে কথা বলছিলাম যিনি ট্যাঙ্গাইলের প্যারাট্রুপার ড্রপের নেতৃত্বে ছিলেন। আসলে পাকিস্থানি সৈনিকরাও জানত ওরা অনৈতিক যুদ্ধ লড়ছে-তাই মনোবল কিছুই ছিল না ওদের। তবে একটা ব্যাপারে বেশ দুঃখ পেলাম। ১৪ ডিসেম্বরে শুরু হওয়া বুদ্ধিজীবি গণহত্যার খবর সঙ্গে সঙ্গেই র এর কাছে পৌছে যায়-কিন্ত্ সেটা ঠেকানোর দুটো উপায় ছিল-এক, ্ঢাকাতে ব্যাপক বম্বিং শুরু করা-যাতে প্রচুর সাধারন লোকও প্রাণ হারাত। ফলে জনসাধারনকে বাঁচাতে গিয়ে জয়েন্ট কমান্ড বুদ্ধিজীবিদের ঘাতকদের হাতে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ইন্টালিজেন্স থাকা সত্ত্বেও বুদ্ধিজীবিদের বাঁচানো যায় নি। আমার অফিসার বন্ধুটি এই নিয়ে খুব দুঃখ করছিলেন কারন, উনি চাইছিলেন, খোদ ঢাকার বুকেই ২০০০ পারাট্রুপার নামিয়ে বুদ্ধজীবি হত্যা ঠেকানো। এটা ছিল দ্বিতীয় উপায়। কিন্ত নিশ্চিত বিজয়ের সামনে আর ক্ষতি বাড়াতে চাই নি জয়েন্ট কমান্ড-তাই অফিসারটির প্রস্তাব বাতিল হয়। ভারতীয় বাহিনীর সেনারা কিন্ত বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের বাঁচাতে নিজেদের প্রান বিসর্জন দিতে এগিয়েই এসেছিল।
@বিপ্লব পাল,
আমিও এমন কথা শুনেছি। তবে অবস্থা আরো খারাপ হতে পারত।
তাজউদ্দিন কন্যা সিমিন হোসেন রিমির লেখা বই হতে জেনেছি যে পাকিস্তানীরা বুদ্দিজীবি হত্যার একটা মাষ্টার প্ল্যান নিয়েছিল। তারা ততকালীন গভর্নর হাউজে সব বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিকে মত বিনিময়ের নামে দাওয়াত দিয়ে সেখানে পাইকারি হত্যার নীল নকশা একেছিল। ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স এই প্ল্যান জেনে ফলার পর পরই গভর্ণর হাউজ় বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়, গভর্ণর মালেক এরপর রেডক্রশ নিরপেক্ষ জোনে আশ্রয় নেয়।
@আদিল মাহমুদ,
ইতিহাসের পাতাথেকে কুড়ে আনার জন্য ধন্যবাদ! অনেকদিন দিন আগে কোথায় যে পড়েছিলাম মনে নেই,আমাদের মুক্তিযুদ্ধে
একজন তরুন পোলিশ বৈমানিকও নাকি বীরের মত যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছেন।জানিনা কোন বাংলাদেশ সরকার তাদের খোঁজ নিয়েছেন কিনা
বা শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন কিনা!
@লাইজু নাহার,
ঘটনাটা আমি শুনিনি, আরেকটু ডিটেলস জোগাড় করে লিখে ফেলেন।
আসলে এরকম এত কাহিনী আছে যে এগুলো বলে শেষ করা যাবে না। মেজর কামরূল হাসান ভূইয়ার “জন যুদ্ধের গনযোদ্ধা” বইয়ে তিনি যে মেঘ সিং এর কাহিনী, ওউডারল্যন্ডের কাহিনী দিয়েছেন
তা পড়ে আমি কেঁদেছিলাম অনেক্ষন। তাদের দেশ না,তাদের জাতিও না,তারা কিভাবে এরকম আত্নত্যাগ করে ভাবলেই অবাক লাগে। আর আজ দেশের মানুষ সুযোগ পেলেই ইন্ডিয়াকে গালি মারে। তারা নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেছে, আমাদের সাহায্য করেছিল! ভালো কথা যে রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকবে,কিন্তু সাধারন জনতা আর এই সব বীর সেনানী যে আমাদের যুদ্ধে স্বার্থত্যাগ করে জীবন দিল,আশ্রয় দিল তার পেছনে কি কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল? একথা আমি অনেক কেই বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি।
হায়রে আজব দেশ!!……
@তানভী,
আমার কাছেও ওই বইটি আছে। ও বইতেই মনে হয় এক ব্যাতিক্রমী পাকিস্তানী সৈনিকের কথাও আছে যে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ক্ষোভে নিজের দলের সবাইকে ব্রাশ ফায়ারে মেরে ফেলে।
ভারতীয়দের প্রতি কি করেছি সে তো দুরের কথা; নিজেদের বীর প্রতীক তারামন বিবি ২৫ বছর পর জানতে পেরেছিলেন যে তিনি একজন রাষ্ট্রীয় খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা।
যারা ওসব যুক্তি দেয় তারা মুখে স্বাধীনতা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে গেলেও এদের মন আসলে পাকিস্তানের জন্য আজো কাদে। মোসলমান পাকিস্থান ভাঙ্গার ক্ষোভ রাগ বেচারারা সোজাসুজি বলতে পারে না এই আরকি।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা আছে, সে আর আরেক বাঙ্গালী যোদ্ধা তাগড়া মল্ল যুদ্ধে নেমেছিল।কিন্তু পাকিস্তানি পক্ষের কিছু কাপুরুষ সৈনিক তাগড়াকে গুলি করে মেরে ফেলে। এটা দেখে ঐ পাকিস্তানি সেনা তার নিজের লোকেদের কাছে ফেরত যেয়ে অপরাধী সৈন্য ও আরো কিছু নিজ পক্ষের সৈন্যকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলে!!
তার জন্য ভালোবাসা :rose2:
@তানভী,
হ্যা, সেই ঘটনার কথাই বলছি। পাক সেনাদের সম্পর্কে আমাদের ধারনা এরা পশুরও অধম, সত্যতা যথার্থ। তবে দৈত্যকুলে প্রহ্লাদের মত অল্প দুয়েকজন ভাল মানুষ পাক বাহিনীতেও ছিল। তাদের কথাও আমাদের স্মরন করা উচিত। আমি আরেকজনের ব্যক্তিগত জবানবন্দী পড়েছিলাম যিনি আশুগঞ্জ সার কারখানাও গণহত্যার হাত থেকে বেচে যান। তাকেও এক খুব অল্প বয়সী পাক সেনা নিজে কিছুটা ঝুকি নিয়ে কেন যেন বাচিয়ে দেয়।
তবে কয়জন বাংলাদেশী জানে মেঘ সিং এর কথা? যিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে চেয়েছিলেন কোর্ট মার্শালের ঝুকি নিয়ে? এদের শুধু ভারতীয়/পাকিস্তানী বা বাংলাদেশী পরিচয়ে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। এদের সবচেয়ে বড় পরিচয়; এরা প্রকৃত মানুষ।
:guru:
@বকলম,
আপনার ইমেইল একাউণ্টে লগ ইন তথ্য পাঠানো হয়েছে। পেয়েছেন কিনা এবং তা ঠিকমত কাজ করছে কিনা জানাবেন।
@মুক্তমনা এডমিন,
আরে ব্বাহ। ইউজার নেইম হলো, পাসওয়ার্ড হলো– এমনকি সেগুলো কাজ ও করছে!!!!
তবে প্রবলেম হল, আমি আসলেই বকলম। এই জ্ঞাণী গুনীদের ভীড়ে লিখতে প্রথমে কইলজা পরে হাত (ব্লগ এর বেলায় আংগুল) কাঁপবে। আগডুম বাগডুম ছাড়া তো মনে কিছু আসেনা। কী করি?
লগ ইন নামক দিল্লীকা লাড্ডুটি না পেয়ে পস্তাতাম এখন পেয়ে পস্তাচ্ছি। :-X
@বকলম,
আমারো এই ভয় কাটতে বহুদিন লেগেছে 😀
@বকলম,
ধণ্যবাদ, আপনার মন্তব্যও কিন্তু “অদ্ভূদ, অসম্ভব, অসাধারণ”।
অদ্ভূদ, অসম্ভব, অসাধারণ।
দেশপ্রেম ও মানবিকতাবোধে সমুজ্জ্বল এ কাহিনী। বাস্তবতা যে গল্পকেও হার মানায় এর জ্বলন্ত উদাহরণ। মহান তিনটি চরিত্র। কাহিনীর তরুন অরুন সাহসী এক দেশপ্রেমিক। ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) এম এল ক্ষেত্রপাল, আরেক জন্মস্থান প্রেমিক, পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নিজের ছেলে শহীদ হবার পরও জন্ম স্থান দেখার আগ্রহে যাঁর ভাটা পড়েনি। ব্রিগেডীয়ার খাজা মোহাম্মদ নাসের, শত্রুদেশের দেশপ্রেমিকের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত।
মনটা ভরে গেছে এ কাহিনীটি পড়ে। ধন্যবাদ আদিল মাহমুদকে।
@গীতা দাস,
আপনাকেও ধণ্যবাদ গীতাদি।
এ কাহিনী পড়ার সময় আমার মনে হয় যে এখানে একক হীরো মনে হয় কেউ না। অরুনের বীরত্বের প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা রেখেও বলা যায় যে বীরত্বের এরকম কাহিনী একদম বিরল নয়। তবে পাকিস্তানী খাজা নাসের যেভাবে এই বীরের স্মৃতি সারা জীবনে ধারন করে যাচ্ছেন এবং অরুনের বাবাকে অসীম শ্রদ্ধা ভালবাসা জানিয়েছেন তা সত্যই অতূলনীয়।
মানদ জাতির ইতিহাসে যুদ্ধ নামক কিছু দানব আসে, তবে তারপরেও এমন ঘটনাগুলি আমাদের মানবিক দিকগুলিকে ফুটিয়ে তুলুক, প্রাজিত করুক দানবদের।
:rose2:
শঠে শঠ্যাং।
:clap2: :yes:
দুর্দান্ত একটা লেখা। এই বীরের প্রতি রইলো সশ্রদ্ধ প্রণতি।
ট্যাগে গল্প দিলেন কেন সেটা বুঝলাম না।
@ফরিদ আহমেদ,
ধণ্যবাদ ফরিদ ভাই। আমি নিজেও কনফিউজ ছিলাম ট্যাগ এ গল্প দেব কিনা, শুরু করতে চেয়েছিলাম গল্প হিসেবে, পরে ভাবলাম ইতিহাসকে গল্প বানানো ঠিক নয়, তাই দুয়ের মাঝামাঝি কিছু লিখতে চাইলাম। যদিও মনে হচ্ছে এন্ড প্রোডাক্টটা গল্প না হয়ে ইতিহাসের দিকেই গেছে বেশী।
৭১ এর ভারতীয় বীরদের প্রতি আমরা যথাযোগ্য সম্মান খোলামনে কখোনই দেখাতে পারিনি বলে আমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে। এর কারন হিসেবে রাজনীতি সাম্প্রদায়িকতা বহু কিছু আসবে। তবে পারিনি সেটাই সত্য। এই বোধ থেকেই মাঝে মাঝে ভারতীয়দের লেখা খুজে খুজে পড়ি, এভাবেই এই বীরের কথা পেয়েছিলাম।
দারুন লিখান , চালিয়ে যান । অগে কেন আরটিক্যল লিখান নাই ?
@ফুয়াদ,
সবই তো চোথা মারা রে ভাই। আবার এইরকম জম্পেশ জিনিস পেলেই মেরে দিব। আগে না পেলে লিখব কেমনে বলেন?
ধণ্যবাদ।
@আদিল মাহমুদ, :rose2: :guli:
@আদিল মাহমুদ,
দেরীতে মন্তব্য করার কৈফিয়ৎটা আগে দিয়ে দেই। মানুষরূপী একটি অমানুষ মনটা খারাপ করে দিয়েছে তাই। তবে তা নিয়ে এখানে নয় অন্যদিন অন্যখানে কথা হবে।
আপনার প্রবন্ধ অসাধারণ। নতশীরে প্রণাম জানাই সেই সকল অমর শহীদদের, যারা ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দিয়ে গেছেন।
@আকাশ মালিক,
আজকে তো আপনার মনটা আরো লাখো বাংগালীর মত ভালই ছিল। খারাপ স্মৃতি চাগিয়ে তুলতে চাই না, তবে যা মনে হয় বিষয়টা আমাদের মুক্তমণার আলোচনার সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে, তাই ভবিষ্যতে জানাতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
যে বয়সের শিশু রাসেলকে ঘাতকরা খুন করেছে, ঠিক সেই বয়সের আমার একটি ছেলে আছে। আজ আমি বারেবারে তার দিকে তাঁকিয়ে দেখেছি। আমার ছেলের চেহারায় রাসেলকে কল্পনা করেছি। যখনই রাসেলের শেষ কথাগুলো মনে পড়ে- ভাইয়া ওরা আমাকে তো মারবেনা, আমি মায়ের কাছে যাবো, আমি পানি খাবো, তখন ঐ খুনীদের সাথে আরো একটি কুৎসিত চেহারা আমার মানসপটে ভেসে উঠে। দিলোয়ার হুসেন সাঈদী। সম্ভবত ১৯৮০ সালের কথা, আমি তখন দেশে। সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা প্রাংগনে সাঈদীর তিন দিনের তাফসির মহফিল। আমিও সেখানে টেইপ রেকর্ডার নিয়ে উপস্থিত ছিলাম। সে দৃঢ় বজ্রকণ্ঠে বলছিল- আল্লাহর রাস্ট্রে যে রাস্ট্রপ্রধান আল্লাহর আইন কায়েম করতে চায় না, তার জন-বাচ্চা সহ আল্লাহ দুনিয়া থেকে ধ্বংস করে দেন। আমি সেদিন কাছে থেকে লক্ষ্য করেছি, তার ঠোটে তখন ছিল এক বিদ্রোপের হাসি।
@আকাশ মালিক,
আবদুর রব সেরনিয়াবতের বাসায় ৪ বছরের দুধের বাচ্চাকেও ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়। রেহাই পাননি বেগম আরজু মণি ও তার পেটের সন্তান। সেনাবাহিনীতে ট্রেনিং দেওয়া হয় ওপরয়ালার নির্দেশ রোবটের মত পালন করতে। আমি ভাবতে চেষ্টা করি আমি সে ভোরে সেই ঘাতক দলের একজন সদস্য। আমাকে খুণী মেজররা নির্দেশ দিল একে এর মায়ের কাছে পাঠিয়ে দাও। আমি কি করব? সেদিন সেই নির্দেশদাতা খুনীদের মনে কোন দানব জেগেছিল?
সাঈদী হুজুর তো শুনেছি আপনাদের দেশে বিপুল জনপ্রিয়। তার লেকচার শুনতে এসে লোকে নাকি বালতি ভরে টাকা দিয়ে যায়। সেদিন এখানকার বাংলা বই এর দোকানে গেছিলাম, দেখি ওনার অনেক লেকচারের ডিভিডি পাওয়া যাচ্ছে। সাঈদীদের দোষ যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশী দোষ অন্ধ ভক্তদের, বিশেষ করে শিক্ষিতদের। ধর্মের নামে এ ধরনের লেকচার বিনা আপত্তিতে ভীড় করে শুনলে এরা তো বলবেই।