আমার এক নতুন খ্যাপা প্রকাশকের পাল্লায় পড়ে মানুষের যৌনপ্রবৃত্তি এবং জেন্ডার ইস্যু নিয়ে একটি বই লেখায় হাত দিয়েছি। তার ধারাবাহিকতায় এটি মুক্তমনায় পোস্ট করা হল। এই পোস্টের আয়তন দেখে আমি নিজেই ভরকে গিয়েছি। কাজেই পাঠকদেরও ধৈর্যচ্যুতি ঘটার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এই ‘হাতী মার্কা’ পোস্টের জন্য আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আরো ভয়ের কথা এই যে, (‘সবে তো কলির সন্ধ্যে’ প্রবাদটিকে সার্থকতা দিতে গিয়ে) সামনে একই বিষয়ের উপর আরো কিছু পোস্ট আসছে!
রয়, সিলো আর ট্যাংগো – তিনে মিলে ছিলো এক পেঙ্গুইন পরিবার

রয়, সিলো আর ট্যাঙ্গো
ম্যানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কের চিড়িয়াখানা। সেখানে এক পেঙ্গুইন দম্পতির বাস। একেবারে প্রেমিক দম্পতি যাকে বলে। ছ’বছর ধরে তারা একসাথে আছে। তাদের আলাদা করাই মুশকিল। এরা একে অন্যের গলা জড়িয়ে ধরে রাখে। এক সাথে গলা ছেড়ে ডেকে উঠে। আর শারীরিক যৌনসম্পর্ক তো আছেই। একটি দিকেই কেবল ব্যতিক্রম- এই পেঙ্গুইন দম্পতির দুজনেই পুরুষ। চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে যখন বুঝলেন তখন তো তাদের আক্কেল গুরুম। কার ভুলে প্রথম থেকেই এই পুরুষ পেঙ্গুইন দুটোকে এক সাথে রাখা হয়েছিল কে জানে। তবে এই ‘অস্বাভাবিক’ সম্পর্ক তো আর বেশী দিন চলতে দেয়া যায় না। কাজেই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ ঠিক করলেন, তাদের খাঁচায় কিছু নারী পেঙ্গুইন ছেড়ে দেয়া হবে। তারা ভাবলেন, নারী সংগ পেয়ে নিশ্চয় তারা এই ‘বেলাল্লাপনা’ ত্যাগ করবে। কিন্তু রয় আর সিলো খাচাঁর নতুন মেয়েদের দিকে ভালমত তাকিয়ে দেখলোই না, সম্পর্ক তৈরি করা তো দূর কি বাত! তারা নিজেদের প্রেমে নিজেরাই মশগুল। কর্তৃপক্ষই আর কি বা করবেন ।
এর মধ্য আরেক ঘটনা ঘটলো। রয় সিলো দম্পতি তাদের বাসার পাশে পড়ে থাকা একটি বড় পাথরের টুকরো তাদের বাসায় নিয়ে এসে নিয়ম করে তা দিতে শুরু করলো। এটা দেখে বোধ হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের মনে একটু দয়া হলো। তারা আরেক ‘হেটারোসেক্সুয়াল’ পেঙ্গুইন দম্পতির কাছ থেকে একটি ডিম ধার করে নিয়ে এসে রয় আর সিলোর বাসায় রেখে দিলো। সেই ডিমে মাস খানেক ধরে নিয়ম করে তা দিয়ে রয় আর সিলো বাচ্চা ফুটালো। জন্ম হল এক ফুটফুটে মেয়ে পেঙ্গুইন শিশুর – ট্যাংগো। তারা সেই বাচ্চাকে নিজদের বাচ্চা হিসবেই আদর যত্ন করে বড় করে তুললো। বড় হয়ে ট্যাংগো নিজেও সমকামী পেঙ্গুইন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং ‘তানুজি’ নামে আরেক নারী পেঙ্গুইনের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে।
রয়-সিলো-ট্যাংগোর এই ‘ব্যতিক্রমধর্মী’ ঘটনা নিয়ে ২০০৫ সালে আমেরিকায় প্রথম বাচ্চাদের জন্য একটি বই প্রকাশিত হয় And Tango Makes Three নামে [1] । আমেরিকায় শিশু সাহিত্যের ইতিহাসে সমকামিতাকে গঠনমূলকভাবে উপস্থাপনার প্রথম দৃষ্টান্ত এটি। কিন্তু আমেরিকার রক্ষণশীল মহল এতে খুশি হননি। তারা বইটিকে ‘শিশুদের জন্য ক্ষতিকর’ হিসেবে আখ্যায়িত করে স্কুলের লাইব্রেরীগুলোতে এই বইয়ের অনুপ্রবেশ নিষিদ্ধ করতে চান। কিন্তু আমেরিকার আদালতের রায়ে সেটা আর সম্ভব হয়নি।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র
রয়, সিলো আর ট্যাঙ্গোই একমাত্র উদাহরণ নয়। প্রকৃতিতে এ ধরণের উদাহরণ আছে অজস্র। ভেড়ার জীবন যাত্রা খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা সমকামী প্রবণতার প্রচুর আলামত লক্ষ্য করেছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বের করার বহু আগে থেকেই মেষপালকেরা ভেড়ার এই প্রবণতার কথা জানতেন। এই ধরনের ভেড়ার পাল সবসময়ই মেষপালকদের জন্য হতাশা। কারণ এরা বংশবিস্তারে কোন সাহায্য করে না। তারা প্রথম থেকেই ভেড়ীদের প্রতি থাকে একেবারেই অনাগ্রহী। এদের আগ্রহের পুরোটা জুড়েই থাকে আরেকটি পুরুষ ভেড়া বা মেষ। অরেগন হেলথ এন্ড সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস রসেলির মতে শতকরা ৮ ভাগ ভেড়া এরকম সমকামী প্রবৃত্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে [2] । এই ধরণের সমকামী ভেড়া সঙ্গমের সময় আরেকটি পুরুষ ভেড়ার দিকে অগ্রসর হয় তাদের আদর সোহাগ জানাতে থাকে আর যৌনাঙ্গ শুঁকতে থাকে। অবশেষে পেছন দিক থেকে ভেড়ার উপর আরোহন করে ভেড়ার উলের উপর বীর্জ নিক্ষেপ করে (এরা কখনোই পায়ুকামে প্রবৃত্ত হয় না)। চার্লস রসেলি এ সমস্ত ভেড়ার মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করে দেখান যে এদের মস্তিস্কের কিছু অংশের আকার ‘স্বাভাবিক’ ভেড়াদের থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। তিনি ‘সেক্সুয়ালি ডাইমরফিক নিউক্লিয়াস’ বলে মাথার হাইপোথ্যালমাসের একটা অংশে উল্লেখ করার মত পার্থক্য পান [3] । একই ধরনের পার্থক্য আরেক গবেষক সিমন লেভি লক্ষ্য করেছেন সমকামী মানুষের মস্তিস্কেও (সিমন লেভির গবেষণা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে একটু পরে) ।
ভেড়া ছাড়াও সমকামী আচরণ লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য। পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাঁস, কানাডা পাতিহাঁস, কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভৃতিতে। সমকামিতার অস্তিত্ব আছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, স্যালাম্যান্ডারের মত উভচর এবং বিভিন্ন মাছেও। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন প্রাইমেট বর্গের মধ্যে সাধারণ শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে প্রজননহীন যৌনতা (non-reproductive sex) খুবই প্রকট। মানুষের মতই তারা কেবল ‘জিন সঞ্চালনের’ জন্য সঙ্গম করে না, সঙ্গম করে আনন্দের জন্যও। শিম্পাঞ্জীদের আরেকটি প্রজাতি বনোবো শিম্পাঞ্জী (আগেকার প্রচলিত নাম ছিলো পিগমী শিম্পাঞ্জী)দের মধ্যে সমকামী প্রবণতা এতই বেশি যে, ব্যাগমিল তার বিখ্যাত ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : ‘এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইয়ে বলেন [4], এই প্রজাতিটির ক্ষেত্রে ‘সমকামী যৌনসংসর্গ, বিষমকামিতার মতই স্বাভাবিক। একেকটি গোত্রে এমনকি শতকরা ৩০ ভাগ সদস্য সমকামিতা এবং উভকামিতার সাথে যুক্ত থাকে এবং দেখা গেছে ৭৫ ভাগ যৌনসংসর্গই প্রজননহীন। এদের মধ্যে প্রবলভাবে আছে নারী সমকামিতাও। । বিভিন্ন রকমের সমকামী এবং উভকামী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে গরিলা, ওরাং-ওটান, গিবন, সিয়ামাং, লঙ্গুর হনুমান, নীলগিরি লঙ্গুর, স্বর্ণ হনুমান, প্রবোসিক্স মাঙ্কি, সাভানা বেবুন ইত্যাদি প্রাইমেটদের মধ্যেও।

বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামি প্রবণতা খুবই বেশি। বিজ্ঞানীরা এরকম ৪৫০টিরও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন।
১৯৭২ সালে লিন্ডা উলফি নামের এর তরুন গবেষক ল্যাবরেটরীতে জাপানী ম্যাকুয়ি নামের একধরণের প্রাইমেট নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন, তাদের মধ্যে নারী সমকামিতার ব্যাপারটি প্রকটভাবে দৃশ্যমান। লিন্ডা ভাবলেন নিশ্চয়ই ল্যাবরেটরীর বন্দি পরিবেশে থাকার ফলে তাদের যৌনতার পরিবর্তন ঘটেছে (জেলখানায় থাকার ফলে আসামীদের মধ্যে যে ধরণের সমকামী মনোবৃত্তি জেগে উঠে অনেকটা সেরকম)। তিনি আসল ব্যাপারটি বুঝতে জাপানে গিয়ে বন্য পরিবেশে ম্যাকুয়ি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। গিয়ে তিনি কি দেখলেন? হ্যা, যা ভেবেছেন সেটাই – সেখানেও নারী সমকামিতা দেদারসে রাজত্ব করে চলেছে। শুধু লিন্ডা উলফি নয় পল ভ্যাসি নামে আরেক গবেষকও জাপানী ম্যাকুয়িদের উপর দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনিও ম্যাকুয়িদের মধ্যকার সমকামী প্রবণতা অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন এবং বিস্তৃতভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। অনেক গবেষক আগে ভেবেছিলেন, ম্যাকুয়ি সমাজে নারীতে নারীতে প্রেম আসলে পুরুষদের আকর্ষণের জন্য। নিশ্চয়ই চোখের সামনে এই ‘লেসবিয়ন পর্ণ’ দেখে পুরুষ ম্যাকুয়িরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং নারী ম্যাকুয়িদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। কিন্তু পল ভ্যাসি তার গবেষণায় পরিস্কার ভাবেই দেখালেন নারী ম্যাকুয়িরা যখন সমকামে মত্ত থাকে তখন তারা কোন পুরুষ ম্যাকুয়ির প্রতি কোন রকম আগ্রহই দেখায় না। তাদের জন্য সমকামিতার ব্যাপারটি ‘হট বাথ’ নেওয়ার মতন কেবলই আনন্দের। ২০০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা প্রানীজগতে ১৫০০‘রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার সন্ধান পেয়েছেন [5] । আর মেরুদন্ডী প্রাণীর তিনশ’রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব খুব ভালভাবেই নথিবদ্ধ । সংখ্যাগুলো কিন্তু প্রতিদিনই বাড়ছে। উইকিপিডিয়ায় সমকামিতার আংশিক তালিকা পাওয়া যাবে এখানে। তালিকায় স্তন্যপায়ী প্রানী থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উওভচর, কীটপতঙ্গ সবই আছে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন, পৃথিবীতে আসলে এমন কোন প্রজাতি নেই যেখানে সমকামিতা দেখা যায় না। এ প্রসংগে জীববিজ্ঞানী পিটার বকম্যানের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য –
“No species has been found in which homosexual behavior has not been shown to exist, with the exception of species that never have sex at all, such as sea urchins and aphids. Moreover, a part of the animal kingdom is hermaphroditic, truly bisexual. For them, homosexuality is not an issue.”
ন্যাশনাল জিওগ্রাগিক চ্যানেলে সম্প্রতি ‘Out in Nature: Homosexual Behavior in the Animal Kingdom’ নামের একটি ডকুমেন্ট্রিতে প্রানীজগতের অসংখ্য সমকামিতার উদাহরণ তুলে ধরা হয় । ইউটিউবে ভিডিওটি ছয় পর্বে রাখা আছে। পাঠকদের জন্য ভিডিওটির প্রথম পর্বটি নীচে দেয়া হল –
httpv://www.youtube.com/watch?v=LFeXwKnCUNI
বাকী পর্বগুলো দেখা যাবে এখান থেকে ( পর্ব-২ | পর্ব-৩ | পর্ব -৪ | পর্ব -৫ | পর্ব -৬ )
ব্রুস ব্যাগমিল এবং জোয়ান রাফগার্ডেনের কাজের উপর ভিত্তি করে অসলোর ন্যাচারাল হিস্ট্রি যাদুঘরে ‘এগেইনস্ট নেচার?’ নামে একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রদর্শনীটি ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়ে আগাস্টের ২০০৭ সাল পর্যন্ত চলে। এতে জীবজগতের সমকামিতা, উভকামিতা সহ প্রকৃতির নানা ধরণের বৈচিত্রময় উদাহরণ হাজির করা হয়েছিলো। প্রদর্শনীটি সাড়া বছর জুড়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য দর্শকের আগ্রহ এবং মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয় । মুক্তমনাতেও জৈববৈচিত্র তুলে ধরে অধ্যাপক মীজান রহমানের একটি চমৎকার পোস্ট আছে – বিকৃতি না প্রকৃতি শিরোনামে।

নরওয়ের অসলো ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউসিয়ামে ‘এগেইনস্ট নেচার?’ নামে প্রদর্শনীটি দর্শকদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করে।
ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব কি সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করতে পারে?
বহু বিজ্ঞানীই প্রানীজগতের মাঝে বিদ্যমান সমকামিতাকে প্রথমদিকে তেমন গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করেননি। তারা যে প্রকৃতিতে সমকামিতা দেখেননি তা নয়, অনেকবারই দেখেছেন – কিন্তু অবধারিতভাবে ভেবে নিয়েছিলেন এটি বিবর্তনের বিচ্যুতি, এ নিয়ে গবেষণার কোন দরকার নেই। যেমন, ভ্যালেরিয়াস গিস্ট (Valerius Geist) নামের এক বিজ্ঞানী ক্যানাডিয়ান রকি পর্বতমালায় পাহাড়ী মেষদের মধ্যকার সমকামিতা পর্যবেক্ষণ করেও সেটা গুরুত্ব দিয়ে গবেষণায় লিপিবদ্ধ করেননি। আজ তিনি সেই ‘ব্যর্থতার’ জন্য প্রকাশ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেন। আসলে কিন্তু ব্রুস ব্যাগমিলের ‘বায়োলজিকাল এক্সুবেরেন্স’ বইটি প্রকাশিত হবার পর বিজ্ঞানীদের চিন্তাভাবনা অনেকটাই বদলে গেছে। তারা এখন সমকামিতাকে গুরুত্ব দিয়েই জীববিজ্ঞানে গবেষণার দৃষ্টিকোন থেকে বিবেচনা করেন। ব্রুস ব্যাগমিলের গবেষনার পর অন্যান্য গবেষকেরাও গবেষণা চালিয়ে গেছেন বিষয়টি নিয়ে।
আসলে ডারউইনীয় বিবর্তনের দিক থেকে চিন্তা করলে সমকামিতার ব্যাপারটি জীববিজ্ঞানীদের জন্য সব সময়ই একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কারণ ‘ওটা বায়োলজিকাল ডেড এন্ড’ – অন্ততঃ এভাবেই ভাবা হত কিছুদিন আগেও। বিবর্তনের কথা ভাবলে প্রথমেই প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তারের কথাটিই মাথায় সবার আগে চলে আসে। সে দিক দিয়ে চিন্তা করলে সমকামিতার লক্ষ্য যে বংশবিস্তার নয় – তা যে কেউ বুঝবে। তাহলে জৈববৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে সমকামিতার উদ্দেশ্য কি? আগে এমনকি জীববিজ্ঞানীদের মধ্যেও সমকামিতাকে ঢালাওভাবে ‘অস্বাভাবিকতা’ কিংবা ‘ব্যতিক্রম’ ভেবে নেওয়াটাই ছিলো ট্রেন্ড, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই ধ্যান ধারনা অনেকটা বদলেছে।
প্রথম কথা হচ্ছে, সমকামিতার ব্যাপারটি কিন্তু নিখাঁদ বাস্তবতা। শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, পুরো প্রানীজগতের ক্ষেত্রেই। জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিল তার ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইয়ে প্রায় পাঁচশ প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্বের উদাহরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। আর আগেই বলা হয়েছে যে, সামগ্রিকভাবে জীবজগতে ১৫০০’রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মানুষের মধ্যে শতকরা প্রায় ৫ ভাগ থেকে ১২ ভাগ সমকামিতার সাথে যুক্ত বলে পরিসংখ্যানে পাওয়া গেছে। কাজেই সমকামিতার এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করার চেষ্টা বোকামি। এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হল, সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করার সঠিক বৈজ্ঞানিক মডেল জীববিজ্ঞানে আছে কিনা, নাকি কেবল ‘সমাকামিতা অস্বাভাবিক’ কিংবা ‘ব্যতিক্রম’ ইত্যাদি বলেই ছেড়ে দেয়া হবে? এ প্রসঙ্গে জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক জোয়ান রাফগার্ডেনের উক্তিটি খুবই প্রাসঙ্গিক –
‘My discipline teaches that homosexuality is some sort of anomaly. But if the purpose of sexual contact is just reproduction, then why do all these gay people exist? A lot of biologists assume that they are somehow defective, that some development error or environment influence has misdirected their sexual orientation If so, gay and lesbian people are mistake that should have been corrected a long time ago (thru Natural selection), but this hasn’t happened. That’s when I had my epiphany. When a scientific theory says something wrong with so many people, perhaps the theory is wrong, not the people’.
সমকামিতাকে যদি বাস্তবতা হিসেবে মেনে নেয়া হয়, তবে আমাদের বের করতে হবে – ডারউইনীয় দৃষ্টিকোন থেকে এর উপযোগিতা কি। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে কঠিন। তবে কঠিন বলে কেউ হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিদিনই। কিছু যোগসুত্র পাওয়া গেছে প্রাণী জগতে ‘স্টেরাইল ওয়ার্কার’ বা ‘বন্ধ্যা সৈন্যের’ -এর উদাহরণ থেকে। পিঁপড়ে, মৌমাছি, উই পোকা কিংবা বোলতার মত প্রজাতিতে এই ধরণের ‘বন্ধ্যা সৈন্যের’ উপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয়। এরা বংশবৃদ্ধিতে কোন ভুমিকা রাখে না। কিন্তু নিজেদের গোত্রকে বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষা করে জনপুঞ্জ টিকিয়ে রাখে। মানুষের জন্যও কি এটা খাটে? বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার আলোকে একটু চিন্তা করা যাক। এমন কি হতে পারে যে, সমকামী পুরুষেরা আমাদের পূর্বপুরুষদের সেই আদিম শিকারী-সংগ্রাহক সমাজে (hunter gatherer societies) বাচ্চা লালন পালনে কোন বিশেষ ভুমিকা রেখেছিলো? নিজেদের মধ্যে মারামারি না করে যখন একাধিক পুরুষ দলবদ্ধ হয়ে গোত্রের দায়িত্ব নিতো আর শিকারের সন্ধান করত, সেই গোত্র হয়ত অনেক বেশী খাবারের যোগান পেত, কিংবা হয়ত বহিঃশত্রুর হাত থেকেও রক্ষা পেত অন্যদের চেয়ে বেশী। ফলে টিকে থাকার প্রেরণাতেই হয়ত কোন কোন ক্ষেত্রে পুরুষে পুরুষে সম্পর্ক তৈরী হয়েছিলো –যা গোত্রে এনে দিয়েছিলো বাড়তি নিরাপত্তা। কিংবা হয়ত এমনও হতে পারে – যখন শক্তিশালী পুরুষ শিকারে যেত, হয়ত সেই গোত্রের কোন ‘গে চাচা’ রক্ষা করার দায়িত্ব নিত ছোট ছোট ছেলেপিলেদের। আর পুরুষটিও শিকারে বের হয়ে স্ত্রীর ‘পরকীয়া’র আশঙ্কায় ভাবিত থাকতো না! ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায়, বহু রাজা বাদশাহরা তাদের হারেম সুরক্ষিত রাখতে ‘খোঁজা প্রহরী’দের নিয়োগ দিতো। আরো সমীক্ষায় দেখা গেছে পশ্চিমে মেয়েরা অফিসে সমকামী পুরুষদের সাথে কাজ করতে অনেক নিরাপত্তা অনুভব করে। এটার কারণও অবোধ্য নয়। হয়ত জিন সঞ্চালন ছাড়াও অন্যান্য কিছু ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আমাদের প্রজাতিটিকে টিকেয়ে রাখতে সমকামী সদস্যদের একটা ভূমিকা ছিলো। সেজন্য এডয়ার্ড ও উইলসন ‘কিন সিলেকশন’-এর মাধ্যমে হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন সেই ১৯৭৮ সালেই ।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক চিন্তা করা যেতে পারে। সমকামী প্রবৃত্তিটি হয়ত বিবর্তন প্রক্রিয়ার উপজাত বা সাইড ইফেক্ট। বিবর্তনের অনেক কিছুর কথাই আমরা জানি যেগুলো কোন বাড়তি উপযোগিতা তৈরি করে না। কিন্তু এগুলো উৎপন্ন হয়েছে বিবর্তনের উপজাত হিসবে। এই বৈশিষ্টগুলো যদি টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি কোন অসুবিধা তৈরি না করে তাহলে তারা উপজাত হিসেবে রয়ে যেতে পারে বংশ পরম্পরায়। বিজ্ঞানী স্টিফেন যে গুল্ড উপজাতের ব্যাপারটা বোঝাতে আমাদের বাড়ির উদাহরণ হাজির করতেন। যে কোন বড় বাড়ি কিংবা ইমারতের দিকে দেখলে দেখা যাবে – এর ধনুকাকৃতির দু’টি খিলানের মাঝে স্থান করে নিয়েছে ইংরেজি ‘ভি’ আকৃতির স্প্যান্ড্রেল বা মাঝখানের একটা খোলা জায়গা। বাড়ীর ইমারত বানাতে খিলান থাকা অত্যাবশক, কিন্তু খিলান বানাতে গেলে বাড়তি উপজাত হিসবে স্প্যান্ড্রেল এমনিতেই তৈরী হয়ে যায়, যা ইমারতটির ভিত্তির জন্য অত্যাবশকীয় কোন কিছু হয়ত নয়, কিন্তু এটি এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে আমাদের শরীরের হাড্ডির সাদা রঙের কথা ধরা যেতে পারে। এই সাদা রঙ বিবর্তনে কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয় না। এই সাদা রঙ তৈরি হয়েছে হাড়ে ক্যালসিয়াম থাকার উপজাত হিসেবে। তেমনি কারো কারো চোখের নীল কিংবা বাদামী রঙও হয়ত কোন বাড়তি উপযোগিতা দেয়া না – এটা প্রকৃতিতে আছে বিবর্তনের সাইড ইফেক্ট হিসবে। সমাকামিতাও বিবর্তনের সেরকম কোন উপজাত হতে পারে। ইংল্যান্ডের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রবিন ডানবার সেজন্যই মনে করেন, মানুষের মধ্যে সম্ভবত বিবর্তনের বাই-প্রোডাক্ট। তিনি বলেন, ‘homosexuality doesn’t necessarily have to have a function. It could be a spin-off or by-product of something else and in itself carries no evolutionary weight’।
ইতালীর একটি সমীক্ষায় (২০০৪) দেখা গেছে, যে পরিবারে সমকামী পুরুষ আছে সে সমস্ত পরিবারে মেয়েদের উর্বরতা (fertility) বিষমকামী পরিবারের চেয়ে বেশি থাকে । আন্দ্রিয়া ক্যাম্পেরিও-সিয়ানির ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, বিষমকামী পরিবারে যেখানে গড় সন্তান সন্ততির সংখ্যা ২.৩ সেখানে গে সন্তানবিশিষ্ট পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ২.৭। তার মানে যে জেনেটিক প্রভাব মেয়েদের উর্বরা শক্তি বাড়ায় – সেই একই জিন আবার হয়ত ছেলেদের মধ্যে সমকামী প্রবণতা ছড়িয়ে দেয় – বিবর্তনের উপজাত হিসেবে। সেজন্যই ডঃ ক্যাম্পেরিও ক্যানি বলেন –
“We have finally solved the paradox … the same factor that influence sexual orientation in males promotes higher fecundity in females’
বিজ্ঞানী ডীন হ্যামারও প্রায় একই কথা বলেছেন একটু অন্যভাবে –
‘The answer is remarkably simple : the same gene that causes men to like men, also causes women to like men, and as a result to have more children’
বিবর্তন তত্ত্বের প্রেক্ষাপটে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে সামাজিক নির্বাচন। আমরা দেখেছি প্রানীজগতে সমকামিতার প্রবৃত্তি একটি বাস্তবতা। শুধু মানুষের ক্ষেত্রে সমকামিতা নেই, ছড়িয়ে আছে প্রাণিজগতের সকল প্রজাতির মধ্যেই। আসলে প্রকৃতিতে সবসময়ই খুব ছোট হলেও একটা অংশ ছিল এবং থাকবে যারা যৌনপ্রবৃত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের চেয়ে ভিন্ন। কিন্তু কেন এই ভিন্নতা? এর একটি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় ইকোলজিস্ট জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসবর্গ তার “Evolution’s Rainbow: Diversity, Gender and Sexuality in Nature and People.” বইয়ে [6] । তিনি বলেন, যৌনতার উদ্দেশ্য সনাতনভাবে যে কেবল ‘জিন সঞ্চালন করে বংশ টিকিয়ে রাখা’ বলে ভাবা হয়, তা ঠিক নয়। যৌনতার উদ্দেশ্য হতে পারে যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরন। তিনি বলেন :
‘যদি আপনি সেক্স বা যৌনতাকে যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাহলে আপানার কাছে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে, যেমন সমকামিতার মত ব্যাপার স্যাপারগুলো – যা জীব বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছর ধরে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামী সংশ্রব বিষমকামীদের মতই দেদারসে ঘটতে দেখা যায়। আর বনোবোরা কিন্তু প্রকটভাবেই যৌনাভিলাসী। তাদের কাছে যৌনসংযোগের (Genital contact) ব্যাপারটা আমাদের ‘হ্যালো’ বলার মতই সাধারণ। এভাবেই তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এটি শুধু দলগতভাবে তাদের নিরাপত্তাই দেয় না, সেই সাথে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আহরণ এবং সন্তানদের লালন পালনও সহজ করে তুলে’।
শুধু বনোবো শিম্পাঞ্জীদের কথাই বা বলি কেন, বাংলাদেশেই আমরা যেভাবে বড় হয়েছি সেখানে ছেলেদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হলে একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে, হাতে হাত ধরে কিংবা ঘারে হাত দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ঝগড়া-ঝাটি হলে বুকে জড়িয়ে ধরে আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করে। মেয়েরাও তাই। এই আচরণ একটু প্যাসিভ তবে এ ধরনের প্রেরনা কিন্তু মনের ভেতর থেকেই আসে। বলা বাহুল্য, এই প্রেরণার মধ্যে কোন জিন সঞ্চালনজনিত কোন উদ্দেশ্য নেই, পুরোটাই যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরনের প্রকাশ।
যোগাযোগ আর সামাজিকরণের কথা মাথায় রেখেই জোয়ান রাফগার্ডেন তার বিবর্তনবিদ্যা সংক্রান্ত ‘ইভ্যলুশনস রেইনবো’ (উপরে উল্লিখিত) বইয়ে ‘যৌনতার নির্বাচন’ (sexual selection)-এর বদলে ‘সামাজিক নির্বাচন’ (social selection) – এর প্রচলন ঘটানোর প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, প্রানীজগতের সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে তাদের খাবার, সঙ্গী প্রভৃতির সঠিক নির্বাচনের উপর। প্রাণিজগতের এই নির্বাচনই কখনো রূপ নেয় সহযোগিতায়, কখনো বা প্রতিযোগিতায়। এবং এটাই শেষ পর্যন্ত সমস্ত পারিবারিক বিবিধ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে। কোন কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্ক একগামিতা বা মনোগামিতে রূপ নিতে পারে (মানুষ ছাড়াও কিছু রাজহাঁস, খেঁকশিয়াল, কিছু পাখির মধ্যে একগামী সম্পর্ক আছে), কখনো বা রূপ নেয় বহু(স্ত্রী)গামিতা বা পলিগামিতা (সিংহ, বহু প্রজাতির বনের মধ্যে এরকম হারেম তৈরি করে ঘোরার প্রবণতা আছে), কখনোবা বহু(পুরুষ)গামিতা বা পলিঅ্যান্ড্রি (কিছু সিংহ, হরিণ এবং প্রাইমেটদের মধ্যে)তে। এমনকি অনেকসময় দলে একাধিক ‘জেন্ডারের’ মধ্যেও সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যেমন, ব্লু গ্রীন সানফিশ নামের একপ্রজাতির মাছ আছে যেখানে এক একটি ঝাঁকে দুই পুরুষ মাছের মধ্যে সমধর্মীযৌনতার বন্ধন (same-sex courtship) গড়ে উঠে। এখানে মুখ্য পুরুষ মাছটি (এদের ‘আলফা মেল’ বলা হয়) একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে আর তারপর অপর পুরুষ মাছটিকে সাথে নিয়ে তাদের যৌথ সাম্রাজ্যে স্ত্রীমাছগুলোকে ডিম পাড়তে আমন্ত্রণ জানায়। অনেকসময় দ্বিতীয় পুরুষ মাছটি স্ত্রী মাছের অনুকরণ করে স্ত্রী মাছের ঝাকের সাথে মিশে যায় – যা অনেকটা আমাদের সমাজে বিদ্যমান ক্রস-জেন্ডার প্রতিনিধিদের মতই। ড. রাফগার্ডেনের মতে, যৌন-প্রকারণ এবং সমধর্মী যৌনতা এভাবে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে, যা অনেক সময়ই মোটা দাগে কেবল শুক্রানুর স্থানান্তর নয়। সামাজিক নির্বাচন হচ্ছে সেই বিবর্তন যা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখে। ড. রাফগার্ডেনের মত সামাজিক নির্বাচনের ধারণাকে সমর্থন করেন ব্রুস ব্যাগমিল এবং পল ভ্যাসি সহ অনেক বিজ্ঞানীই।
তবে বেশিরভাগ জীববিজ্ঞানীই এখনই ‘যৌনতার নির্বাচনকে’ সরিয়ে দিয়ে ‘সামাজিক নির্বাচন’কে গ্রহণ করার পক্ষপাতি নন, কারণ প্রকৃতিজগতের বেশিরভাগ ঘটনাকেই ‘যৌনতার নির্বাচন’ দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। নেচার পত্রিকায় রাফগার্ডেনের বইটির ভুয়সী প্রসংশা করার পরও তার ‘সামাজিক নির্বাচন’ তত্ত্বের সমালোচনা করে নৃতত্ত্ববিদ সারাহ হর্ডি বলেন – ‘(তার) এ (উদাহরণ) গুলো যৌনতার নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য উপযুক্ত কারণ নয়, বরং এগুলো হতে পারে জীব-বৈচিত্রকে (সামাজিকভাবে) গ্রহণযোগ্য করার অনুপ্রেরণা’। এর কারণ আছে। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমেই হোমসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সমকামিতার জিন (যদি থেকে থাকে) যোগাযোগ ও সামাজিকতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে উপযোগী তা বনোবো শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। মানুষের ক্ষেত্রেও এটি সত্য হতেই পারে । আবার এমনো হতে পারে মানুষের মধ্যে ‘গে জিন’-এর ভূমিকা পুরুষ এবং স্ত্রীতে ভিন্ন হয়। ইতালীর একটি সমীক্ষার (২০০৪) কথা আমরা আগেই জেনেছি – যা থেকে বেরিয়ে এসেছে, যে প্রকরণটি পুরুষদের মধ্যে সমকামিতা ছড়াচ্ছে সেটাই মেয়েদের ক্ষেত্রে আবার উর্বরাশক্তি বাড়াচ্ছে। এছাড়া ‘কিন সিলেকশন’-তত্ত্বের সাহায্যেও সমকামিতাকে বিবর্তনীয় দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব বলে অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন। ইন্টারনেটের বহুল-প্রচারিত টক-অরিজিনের একটি লিঙ্কেও বিবর্তনের আধুনিক তত্ত্বের মাধ্যমে সমকামিতার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কাজেই যে কারনেই সমাজে হোমোসেক্সুয়ালিটির অস্তিত্ব থাকুক না কেন, এবং সেগুলোকে উপস্থাপনের সঠিক মডেল নিয়ে বিবর্তনবাদীদের মধ্যে যত বিতর্কই থাকুক না কেন (বলা বাহুল্য, বিজ্ঞানে এধরনের বিতর্ক খুবই স্বাভাবিক), এটি এখন মোটামুটি সবাই স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সমকামিতার মত যৌন-প্রবৃত্তিগুলো ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ নয়, বরং বৈজ্ঞানিক উপাত্ত ও তত্ত্বের সাহায্যেই এই ধরনের যৌন-প্রবৃত্তিগুলোকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে; জীববিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা কিন্তু সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। আজ আমি যখন এ লেখাটি লিখছি তখন সারা পৃথিবী জুড়ে চারশ’রও বেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ‘গে জিন’ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। কাজেই সমকামিতার ব্যাপারটি এখনো জীববিজ্ঞানীদের কাছে গবেষণার সজীব একটি বিষয় – যে কোন সম্ভাবনার এক অবারিত দুয়ার!
মস্তিস্কের যৌনতাঃ নারী ও পুরুষ
সমকামীদের যৌনপ্রবৃত্তি আমাদের পরিচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিষমকামী লোকজনের থেকে আলাদা, এটা আমরা জানি। কারণ তারা বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে আকর্ষণ অনুভব করে সমলিঙ্গের প্রতি। যেহেতু বিজ্ঞানের কাজই হচ্ছে প্রতিটি ঘটনার পেছনে যুক্তিনিষ্ঠ কারণ অনুসন্ধাণ, তাই বৈজ্ঞানিক পেশায় নিয়োজত অনেক গবেষকই অনুমান করলেন সমকামিতার পেছনেও নিশ্চয় কোন বৈজ্ঞানিক কারণ থাকতে হবে। কিন্তু কারণের উৎসটা কোথায়? তাদের মস্তিস্কের আকার, আকৃতি বা গঠন কি সাধারণদের থেকে একটু আলাদা? এ ব্যাপারটি বিজ্ঞানীদের ভাবিয়েছে পুরোমাত্রায়। ভাবনার কারণ আছে। কারণ যৌন-প্রবৃত্তির কেন্দ্রীয় উৎস হল মস্তিস্ক। মস্তিস্কই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের নানা পছন্দ, অপছন্দ, ঘৃণা, অভিরুচি আর ফ্যান্টাসি। মস্তিস্কই জীবনের বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিদ্ধান্তে আসে আমাদের ঐশ্বরিয়াকে ভাল লাগতে হবে, নাকি শাহরুখকে। মস্তিস্কই সিদ্ধান্ত নেয় এই মুহূর্তে আমাদের ভুতের গল্প ভাল লাগবে, নাকি আবেগময় রোমান্টিক উপন্যাস। কাজেই যৌনপ্রবৃত্তি তৈরীতে মস্তিস্কের ভূমিকাটা কি সেটা বিজ্ঞানীদের জন্য খুব ভাল করে বোঝা চাই। কিন্তু সমকামী মস্তিস্ক বিশ্লেষণের আগে বিজ্ঞানীরা আরেকটি জিনিস খুব গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্য করেছেন। সেটা হচ্ছে নারী পুরুষের মস্তিস্ক আর অর্জিত ব্যবহারে পার্থক্য। বিজ্ঞানীরা প্রথম এধরণের গবেষণা শুরু করেছিলেন ল্যাবরেটরিতে ইঁদুরদের মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করে। ১৯৭৮ সালে ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রজার গোর্কি ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখেন ছেলে ইঁদুরের মস্তিস্কের হাইপোথ্যালমাস (hypothalamus) নামের প্রত্যঙ্গটি মেয়ে ইঁদুরের থেকে তিনগুন বড়। ঠিক একই ধরণের পার্থক্য বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে পেলেন মানুষের মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করেও। পুরুষ মস্তিস্কের সুপ্রাকিয়াস্মিক নিউক্লিয়াসের (suprachiasmatic nucleus) আকার মেয়েদের চেয়ে প্রায় ২.৫ গুন বড় হয়। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে কর্পাস কালোসাম (corpus callosum) এবং এন্টিরিয়র কমিসুরের (anterior commissure) নামে দুইটি প্রত্যঙ্গের আকার পুরুষদের প্রত্যঙ্গগুলোর তুলনায় বিবর্ধিত পাওয়া গেছে। কিন্তু এগুলোর কোন প্রভাব কি প্রাত্যহিক জীবন যাত্রায় আছে? এক কথায় জবাব দেয়া মুশকিল। তবে বহু বিজ্ঞানীই মনে করেন, ডারউইনের ‘যৌনতার নির্বাচন’ (Sexual selection) বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মূল ভূমিকা রেখে থাকে তবে এর একটি প্রভাব আমাদের দীর্ঘদিনের মানসপট তৈরিতেও পড়বে। যৌনতার উদ্ভবের কারণে সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে নারী-পুরুষ একই মানব প্রকৃতির অংশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়ছে এক ধরণের মনোদৈহিক পার্থক্য – জৈববৈজ্ঞানিক পথেই। জীববিজ্ঞানীরা যেমন পুরুষ-নারীর মস্তিস্কের আকার আয়তন আর গঠন নিয়ে গবেষণা করেছেন, তেমনি তাদের অর্জিত ব্যবহার নিয়ে নানা ধরণের কৌতুহলোদ্দীপক কাজ করে চলেছেন বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানীরা। তার কিছু সাম্প্রতিক ফলাফল আমি লিপিবদ্ধ করেছিলাম আমার ‘মানব প্রকৃতির জৈববিজ্ঞানীয় ভাবনা’ ই-বইটিতে। বইটির প্রাসঙ্গিক নারী পুরুষের শরীরবৃত্তীয় এবং ব্যবহারগত পার্থক্যসূচক দিকগুলোর কৌতুহলোদ্দীপক কিছু আলোচনা আছে এখানে।
গে মস্তিষ্কের খোঁজে
বিজ্ঞানীরা ইঁদুর আর বানর নিয়ে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখেছেন, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে হাইপোথ্যালমাসের মধ্যে ‘মেডিয়াল প্রিঅপ্টিক’ বলে যে এলাকাটা (medial preoptic area) আছে, সেটা কোন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে যৌনতার পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে ছেলে ইঁদুরেরা মেয়ে ইঁদুরের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। বানর নিয়ে গবেষণা করেও বিজ্ঞানীরা একই ধরণের ফল পেয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত হাইপোথ্যালমাস-বিশিষ্ট বানরদের আচরণ হয়ে থাকে অনেকটা ‘যৌন-প্রতিবন্ধী’র মত। মেয়ে বানরদের প্রতি তাদের কোন আকর্ষণই থাকে না। এ থেকে যৌনপ্রবৃত্তি নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাইপোথ্যালমাসের গুরুত্ব বোঝা যাচ্ছে। মানুষের ক্ষেত্রেও হাইপোথ্যালমাস নামের গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গটির সাথে যৌনপ্রবৃত্তির সরাসরি সম্পর্ক আছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তারা হাইপোথ্যালমাসের এলাকাকে অভিহিত করেন ইন্টারস্টিয়াল নিউক্লি অব দ্য এন্টেরিয়র হাইপোথ্যালমাস (INAH) নামের এক বিদ্ঘুটে নাম দিয়ে। প্রতিটি নিউক্লিয়াসকে আবার তারা বিভিন্ন নম্বর দিয়ে – INAH1, INAH2, INAH3, INAH4,। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রজার গোর্কি এবং তার এক ছাত্রী লরা এলেন আশির দশকে মানুষের মস্তিস্ক বিশ্লেষণ করে দেখলেন ছেলেদের মস্তিস্কের তৃতীয় ইন্টারস্টিয়াল নিউক্লি অব দ্য এন্টেরিয়র হাইপোথ্যালমাস (INAH3)এর আকার মেয়েদের থেকে অন্ততঃ তিনগুন বড় পাওয়া যাচ্ছে।
১৯৯০ সালে সিমন লেভি নামের এক আমেরিকান প্রখ্যাত স্নায়ুবিজ্ঞানী চিন্তা করলেন নারী পুরুষের হাইপোথ্যালমাস নিয়ে যখন এত কথা হচ্ছে, সেক্ষেত্রে সমকামী ব্যক্তিদের হাইপোথ্যালমাসের কি অবস্থা সেটা একটু মেপে জোখে দেখা দরকার। তিনি ১৬ জন সমকামী পুরুষের এবং ছয় জন সমকামী মহিলার হাইপোথ্যালমাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালালেন। তিনি দেখলেন, গোর্কির মতই তিনিও ছেলেদের INAH3-এর আকার মেয়েদের চেয়ে আকারে দু’গুন বড় পাচ্ছেন। কিন্তু সেই সাথে আরো একটা জিনিস পেলেন। সেটা হল – INAH3-এর আকার বিষমকামীদের পুরুষদের চেয়ে সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে দু থেকে তিনগুন ছোট [7]। অর্থাৎ, সমকামী পুরুষদের নিউক্লি অব দ্য এন্টেরিয়র হাইপোথ্যালমাস এর আকার মেয়েদের INAH3-এর সমান! লেভি পরবর্তীতে একটি হাসপাতালের ৪১ জন রোগীর উপর একই পরীক্ষা করেন। সেখানেও তিনি একই ফলাফল পেয়েছিলেন। লেভির এই পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি পরবর্তীতে উইলিয়াম বাইন নামের আরেকজন বিজ্ঞানী করেছিলেন । তিনিও একই ফলাফল পেয়েছেন, অর্থাৎ, সমকামী পুরুষদের নিউক্লি অব দ্য এন্টেরিয়র হাইপোথ্যালমাসটি আকারে বিষমকামী পুরুষদের চেয়ে ছোট, এবং অনেকটা মেয়েদের সমান।
চিত্রঃ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মস্তিস্কের তৃতীয় ইন্টারস্টিয়াল নিউক্লি অব দ্য এন্টেরিয়র হাইপোথ্যালমাস (INAH3)এর আকার বিষমকামীদের পুরুষদের চেয়ে সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে দু থেকে তিনগুন ছোট হয়। (ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
তার মানে কি? এর মানে কি এই যে সমকামী পুরুষদের মস্তিস্ক অনেকটা নারীসুলভ? বলা মুশকিল। বিজ্ঞানীরা এই অনুকল্পটিকে আরেকটু বিস্তৃতভাবে পরীক্ষা করার চেষ্টা করলেন। তারা জানেন, শুধু INAH3-এর আকারেই নয়, মস্তিস্কের আরো অন্যান্য প্রত্যঙ্গের আকারেও পার্থক্য পাওয়া গেছে। যেমন, মেয়েদের ভাষগত দক্ষতা যেহেতু ছেলেদের চেয়ে বেশি এবং একটু ভিন্নভাবে কাজ করে, তাদের কর্পাস কালোসাম (corpus callosum) এবং এন্টিরিয়র কমিসুর (anterior commissure) নামে দুইটি প্রত্যঙ্গের আকার পুরুষদের তুলনায় বড়। তাহলে সমকামীদের ক্ষেত্রে কি অবস্থা? হ্যা, আপনি যা সন্দেহ করেছেন তাই – সমকামী ব্যক্তিদের কর্পাস কালোসাম এবং এন্টিরিয়র কমিসুরের আকার বিষমকামী পুরুষদের চেয়ে আকারে বড় হয়, এবং মেয়েদের আকারের সাথে মিলে যায়। ১৯৯২ সালে লরা এলেন এবং রজার গোর্কি এন্টিরিয়র কমিসুর নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, সমকামীদের ক্ষেত্রে প্রত্যঙ্গটির আকার বিষমকামীদের চেয়ে বড় । আবার কর্পাস কালোসাম নিয়ে পরীক্ষা করে আরেকদল বিজ্ঞানী দেখেছেন, সমকামীদের ক্ষেত্রে এই প্রত্যঙ্গটির আকার বিষমকামীদের থেকে প্রায় শতকরা ১৩ ভাগ বেশী ।
তাহলে কি দাঁড়ালো? একসময় উলরিচস (হেনরিক উলরিচস জার্মান মনো বিজ্ঞানী, এবং সমকামী আন্দোলনের পথিকৃৎ) যেমনটি ভেবেছিলেন – ‘সমকামী পুরুষেরা আসলে পুরুষ দেহে বন্দি নারী আত্মার অতৃপ্ত প্রকাশ’ – সেটাই কি তবে ঠিক?। অনেক বিজ্ঞানী পূর্বেকার সীমিত পরীক্ষা থেকে পাওয়া সিদ্ধান্তে তাই ভেবে নিয়েছিলেন। ঢালাও ভাবে ভেবে নেয়া হয়েছিল- সমকামিতার প্রকাশ মানে ‘A female spirit in a male body’। সামাজিক ভাবেও আমরা দেখি সমকামী ছেলেদের ‘মেয়েলী’ বলে খোঁটা দেয়া হয়। তা হলে সত্যিই কি এই ‘স্টেরিওটাইপিং’ গুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে? কিন্তু এখানে এসেই দাবার ছক আবারো উলটে গেলো। মানুষের মস্তিস্কের হাইপোথ্যালমাসে সুপ্রাকিয়াস্মিক নিউক্লিয়াস (VIP SCN nucleus) নামের যে এলাকাটি আছে, যেটার আকার ছেলেদের ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়ে বড় থাকে। তাহলে সমকামীদের ক্ষেত্রে এই প্রত্যঙ্গটির আকার কিরকম হবার কথা? নিশ্চয় ছোট এবং মেয়েদেরটার সমান তাই না? না, মোটেই তা নয় – সমকামীদের ক্ষেত্রে VIP SCN nucleus এর আকার পাওয়া গেল অনেক বড়, ছেলে মেয়ে দু দলের চেয়েই । সে জন্যই জোয়ান রাফগার্ডেন তার ‘ইভল্যুশন রেইনবো’ বইয়ে শ্লেষের সাথে লিখেছেন –‘ So much for the belief that gay man have female brains!’ তবে এ ব্যাপারে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি, হয়তো ভবিষ্যৎ গবেষণা এ ব্যাপারে আরো ভালভাবে পথ দেখাবে। আরো একটি ব্যাপারও এই সাথে লক্ষ্যনীয়। নারী সমকামীদের মস্তিস্কে এ ধরণের কোন প্যাটার্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সমকামী পারিবারিক ধারার খোঁজে
আমার বাবা ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করতেন। আমিও ছোটবেলায় তাই খেলতাম। এ ধরণের অনেক বৈশিষ্ট্যই আমরা ঐতিহ্য হিসেবে বয়ে নিয়ে যাই, পারিবারিক পরিবেশ থেকে শিখে নিয়ে। মা ভাল রান্না করলে মেয়েকেও সেই গুণ পেতে সাহায্য করেন। আবার কিছু জিনিস না চাইলেও আমাদের বহন করতে হয় জেনেটিক তথ্য হিসেবে বংশ পরম্পরায়। চোখের এবং চুলের রঙ, নাকের গঠন, শরীর স্বাস্থ্য, হৃদরোগের ঝুঁকি সহ অনেক কিছুই। সমকামিতার ব্যাপারটিও আমরা পরিবারে বাহিত হতে দেখি। কিন্তু এটা কি জেনেটিক তথ্য হিসেবে পরিবারের ধারায় বয়ে চলে, নাকি পরিবেশ থেকে শেখা বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ?
বিজ্ঞানীরা এর উত্তর খুঁজতে প্রতিনিয়ত গবেষণা করে চলেছেন। তারা ইতোমধ্যেই দেখেছেন একটি জনসমষ্টিতে কোন ভাই বিষমকামী হলেও অন্ততঃ শতকরা ৪ ভাগ সম্ভাবনা থাকে তার পরবর্তী ভাইয়ের সমকামী হয়ে জন্মাবার। কিন্তু পরিবারের একভাই সমকামী হলে অন্ততঃ ২২ ভাগ সম্ভাবনা তৈরী হয় অপর ভাইও সমকামী হবার। অর্থাৎ পরিবারে সমকামী ভাই থাকলে পরিবারে সমকামী ধারা তৈরী হবার সম্ভাবনা অন্ততঃ চারগুন বেড়ে যায় [8]। কিন্তু ভাই সমকামী হলে বোন লেসবিয়ান নাকি স্ট্রেট হবে কিনা – এ সংক্রান্ত কোন সম্ভাবনার ঝোঁক পাওয়া যায়নি । কোন পরিবারে বোন সমকামী (লেসবিয়ান) হলে, অপর বোনেরও সমকামী হবার প্রবণতা দ্বিগুন বেড়ে যায়, কিন্তু ভাইয়ের উপর এর কোন সম্ভাব্যতার প্রভাব জানা যায়নি ।
যমজদের নিয়ে পরীক্ষা করেও কৌতুহলোদ্দীপক ফলাফল পাওয়া গেছে। ১৯৮৫ সালে রিচার্ড সি পিল্লার্ড এবং জেমস ডি ওয়েইনরিচ তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন সমকামিতার ধারাটি সম্ভবতঃ জেনেটিক তথ্য হিসেবে প্রবাহিত হয়। তারা দেখালেন যে, সদৃশ যমজদের (identical twins) ক্ষেত্রে এক ভাই সমকামী হলে অন্ততঃ পঞ্চাশ ভাগ সম্ভাবনা থাকে অপর ভাইও সমকামী হবার। আর অসদৃশ যমজদের (fraternal twins) ক্ষেত্রে এর সম্ভাবনা থাকে চব্বিশ ভাগের মত। এরপর থেকে অন্ততঃ পাঁচটি যমজদের নিয়ে যৌন-প্রবৃত্তি সংক্রান্ত গবেষণার খবর লিপিবদ্ধ হয়েছে । ১৯৯১ সালে তাদের একটি গবেষণা থেকে জানা যায় সমকামী প্রবণতা সদৃশ যমজ দের মধ্যে ৫৭ ভাগ, অসদৃশ যমজ দের মধ্যে ২৪ ভাগ, এবং অযমজদের মধ্যে ১৩ ভাগ সমকামীভাবাপন্ন হয়ে থাকে । একইভাবে মেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে নারী সমকামিতার প্রবণতা সদৃশ যমজে থাকে শতকরা ৫০ ভাগ, অসদৃশ যমজে থাকে ১৬ ভাগ, এবং অন্যান্যদের ক্ষেত্রে থাকে ১৩ ভাগ। ১৯৯৩ সালে এ ধরণের আরেকটি গবেষণা থেকে পাওয়া যায়, ছেলেদের সদৃশ যমজদের মধ্যে শতকরা ৬৫ ভাগ সমকামী প্রবৃত্তিসম্পন্ন হয়ে থাকে আর অসদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে সেটা ২৯ ভাগ । একইভাবে নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, সদৃশ যমজের ক্ষেত্রে শতকরা ৪৮ ভাগ সমকামী হয়, আর অসদৃশ যমজের ক্ষেত্রে সেটা মাত্র ৬ ভাগ ।
উপরের জরিপ গুলো সবই ছিল আমেরিকার। ১৯৯২ সালে ইংল্যান্ডে এই ধরণের একটি জরিপ চালানো হয়। সেখানকার জরিপেও প্রায় একই ধরণের ফলাফল বেরিয়ে আসে, যদিও সংখ্যাটা অনেক কম। সদৃশ যমজদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ এবং অসদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে মাত্র ২.৫ ভাগ সমকামী পাওয়া গেছে । অস্ট্রেলিয়ায় একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে জরিপ চালানো হয়েছে। সেখানে অন্যান্য পদ্ধতির মত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে যমজ সহোদর বাছাই করা হয়নি, বরং বাছাই করা হয়েছে নির্বাচনের ভিত্তিতে। তাদের জরিপ থেকে যে ফলাফল এসেছে তা হল – সেখানে সদৃশ যমজদের মধ্যে শতকরা ২০ ভাগ এবং অসদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে মাত্র ০ ভাগ সমকামী পাওয়া গেছে; সদৃশ মেয়ে যমজদের শতকরা ২৪ ভাগ লেসবিয়ান হয় এবং অসদৃশ যমজদের ক্ষেত্রে সেটা প্রায় ১১ ভাগ ।
উপরের পরীক্ষাগুলোর শানে নজুল কি দাঁড়ালো তা হলে? পরীক্ষাগুলো থেকে একটি জিনিস স্পষ্ট ; সদৃশ যমজে দুই ভাইই সমকামী হবার সম্ভাবনা অসদৃশ যমজের দ্বিগুন পাওয়া যাচ্ছে। পরীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে সদৃশ যমজে দুই ভাইয়ের দুজনেই সমকামী হবার সম্ভাবনা শতকরা ২৫ থেকে ৫০, এই ফলাফল নির্ভর করে কিভাবে বা কোথায় পরীক্ষা করা হচ্ছে তার উপর। তার মানে জেনেটিক ফ্যাক্টর যদি আমরা ২৫ থেকে ৫০ বলে রায় দেই, তবে পরিবেশ এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরের প্রভাব ৫০ থেকে ৭৫ ভাগ থেকেই যাচ্ছে।
এমনকি সদৃশ যমজদের দুই ভাইয়ের মধ্যেই সমকামিতা পাওয়ার যে ব্যাপারটিকে পুরোপুরি ‘জেনেটিক’ বলে ভাবা হচ্ছে, সেই দাবীও কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটাও খোলা মনে বিশ্লেষণের দাবী রাখে। দুই সদৃশ যমজ ভাই সাধারণতঃ একই পরিবেশে একই ভাবে বড় হয়, এবং একজনের পছন্দ, অপছন্দ অভিরুচি অনেক সময় অপরজনকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করে। কাজেই, যে কেউ দাবী করতেই পারে যে, সদৃশ যমজে অসদৃশ যমজদের চেয়ে অধিক হারে সমকামী ভাতৃযুগল পাওয়া যাচ্ছে, এর কারণ ‘অভিন্ন জিন’ নয়, বরং তাদের বেড়ে উঠার ‘অভিন্ন পরিবেশ’। থিওডোর লিজ নামে এক মনোবিজ্ঞানী এই ব্যাপারটি উল্লেখ করে তার প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছিলেন একটি জার্নালে । এ উদাহরণটি আমাদের সামনে এ ধরণের পরীক্ষার জটিলতা স্পষ্ট করে তুলে। মুক্তমনাতেও ড. বিপ্লব পালের একটি চমৎকার প্রবন্ধ আছে এ ধরণের পরীক্ষার জটিলতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতা তুলে ধরে (সমকামিতার কি কোন জৈবিক ভিত্তি আছে?) । ফ্রয়েড যে কথাটা অনেক আগেই বলেছিলেন একটু অন্য ভাবে, সে কথাটাই হয়ত সত্য হয়ে ফিরে আসছে –
‘সমকামিতার ক্ষেত্রে সমস্যাটা আরো গভীর। … কারণ [সদৃশ] যমজেরা যেন আয়নার প্রতিবিম্ব হিসেবে বেড়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যকার স্বকাম (narcissism) আরো বিবর্ধিত করে তুলে’।
তবে এই সমস্যার সমাধানের জন্য আরেক ধরণের পরীক্ষা করা যেতে পারে। যদি কোন সদৃশ যমজ জন্মের সময়েই আলাদা হয়ে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়, এবং সেই উপাত্ত যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তবে হয়ত ‘অভিন্ন’ পরিবেশের ফ্যাক্টরটি বাদ দিয়ে শুধু জেনেটিক ফ্যাক্টর আলোচনায় আনতে পারব, এবং বলতে পারবো সমকামী প্রবৃত্তি সত্যই জেনেটিক কিনা।
১৯৮৬ সালে এ ধরণের একটি পরীক্ষার কথা জানা যায় । ছয়টি সদৃশ যুগলের (চারটি ভগ্নি যুগল, এবং দুটি ভাতৃযুগল) সন্ধান পাওয়া যায় যারা আলাদা আলাদা পরিবেশে বড় হয়েছিলো, এবং যুগলদের মধ্যে একজন অন্ততঃ সমকামী। চারটি ভগ্নি যুগলের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন সদস্য ছিলেন বিষমকামী, এবং অন্যজন সমকামী। একটি ভাতৃযুগলের ক্ষেত্রে দুই ভাইই ছিলেন সমকামী। একটি ‘গে বার’ এ পরিচয় হবার আগ পর্যন্ত এমনকি তারা একে অপরকে চিনতেনও না। আরেকটি ভাতৃযুগলের ক্ষেত্রে, দুই ভাই জন্মের পরেই বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদা আলাদা পরিবেশে বড় হয়েছিলেন। এক ভাই ১৯ বছর পর্যন্ত উভকামী হিসেবে জীবন যাপন করেছিলেন, এবং তারপর পরিপূর্ণ সমকামী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। আর অন্য ভাই পনের থেকে আঠারো বয়স পর্যন্ত সমকামী ছিলেন, তারপর বিয়ে করে নিজেকে বিষমকামী হিসেবে সমাজে পরিচিত করেন। এই ক্ষেত্রে, অন্ততঃ সীমিত সময়ের জন্য হলেও উভয় সদস্যই সমকামিতার প্রবৃত্তি প্রদর্শন করেছিলো।
কাজেই উপরের পরীক্ষা থেকে একটি জিনিস বুঝা যাচ্ছে যে, জন্মের সময় বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং ভিন্ন পরিবেশে বড় হওয়া ভাতৃযুগলে সমকামিতার উন্মেষের পেছনে জেনেটিক উপাদান থাকতে পারে, কিন্তু এই জেনেটিক প্রভাব ভগ্নিযুগলে পাওয়া গেছে অনেক কম।
কিন্তু এই পরীক্ষাই শেষ কথা নয়। সমকামিতার উপর পরিবেশের প্রভাব আদৌ আছে কিনা, আর থাকলে কতটুকু – সেটা জানার জন্য আরেক ধরণের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। বেইলি এবং পিল্লার্ডের ১৯৯১ সালের সেই পরীক্ষায় (আগে উল্লিখিত) দত্তক নেয়া সদৃশ যমজ সন্তানদের উপর জরিপ চালানো হয়। দেখা গেছে কোন সমকামী পরিবার বা ব্যক্তি দত্তক নিলে সেই ভাইয়ের সমকামী হিসেবে বেড়ে উঠার সম্ভাবনা (১১%) অনেক বেশি থাকে বিষমকামী পরিবার দত্তক নেয়ের চেয়ে (৫%)। কাজেই এ সমস্ত পরীক্ষা থেকে বোঝা যাচ্ছে, জেনেটিক ফ্যাকটরের পাশাপাশি পরিবেশের প্রভাবটিও থেকে যাচ্ছে পুরোমাত্রায়। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে মুখ্য কারণ হিসেবে প্রতিপন্ন করাটা এই মুহূর্তে আসলে সরলীকরণই হবে ।
গে জিনের খোঁজে
১৯৯৩ সালে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের সমকামী বিজ্ঞানী ডিন হ্যামার এবং এঙ্গেলা প্যাতাউচির একটি যৌথ গবেষনাপত্র বিজ্ঞানের সম্ভ্রান্ত জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত হয় [9]। ডিন হ্যামারের সেই গবেষণাপত্রে শুধু সমকামী ধারাই নয়, সেই সাথে সমকামিতার উৎস হিসেবে ক্রোমোজমের মধ্যকার জেনেটিক একটি মার্কারের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে প্রকাশিত হয়। এই ব্যাপারটিকে পরবর্তীতে কিছু পত্রপত্রিকা এবং মিডিয়া ‘গে জিন’ বলে প্রচার শুরু করে, এবং এর ফলশ্রুতিতে পক্ষে বিপক্ষে নানা ধরনের বিতর্ক শুরু হয়। এই গবেষণাপত্রটি তাই খুব সতর্কভাবে পর্যালোচনার দাবী রাখে।
ডিন হ্যামেরের আলোচিত গবেষণাতেও আগের অন্যান্য গবেষকদের মতই পরিবারের মধ্যে সমকামী ধারা খোঁজার একটি চেষ্টা করা হয়েছে; এবং এ গবেষণা থেকেও সেই একই উপসংহার বেরিয়ে আসে – পরিবারে সমকামী ভাই থাকলে সমকামী ধারা তৈরি হবার প্রবণতা বেড়ে যায় । হ্যামার তার গবেষণা থেকে যে ফলাফল পেলেন তা হল – যদি এক ভাই সমকামী হয়, তাহলে ১৪ ভাগ সম্ভাবনা থাকে অন্য ভাইয়েরও সমকামী হবার, আর ভাই সমকামী না হলে সমকামী হবার সম্ভাবনা থাকে শতকরা মাত্র ২ ভাগ। কিন্তু হ্যামার এ পর্যন্ত গিয়েই থেমে গেলেন না। তিনি সমকামী পরিবারের দূরবর্তী আত্মীয় স্বজনদের পারিবারিক ধারাও বিশ্লেষণে আনলেন। আর এটা করতে গিয়েই বেরিয়ে এলো অজানা এক নতুন একটি দিক। তিনি দেখলেন, সমকামী ছেলের মামাদের মধ্যে শতকরা ৭ ভাগ এবং ফুতাতো ভাইদের মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ সমকামী প্রবণতা সম্পন্ন পাওয়া ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাবার দিকে অর্থাৎ চাচা কিংবা চাচাতো ভাইদের মধ্যে সেরকম কোন প্যাটার্ণ পাওয়া গেল না।
চিত্রঃ সমকামী পরিবারের দূরবর্তী আত্মীয় স্বজনদের পারিবারিক ধারা বিশ্লেষণ করে ডিন হ্যামার দেখলেন, সমকামী ছেলের মামাদের মধ্যে শতকরা ৭ ভাগ এবং ফুফাতো ভাইদের মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ সমকামী প্রবণতা সম্পন্ন পাওয়া ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি ধারণা করলেন সমকামী প্রবণতা মায়ের দিক থেকেই জেনেটিক ভাবে প্রবাহিত হয়। (ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
তাহলে এর ব্যাখ্যা কি? সমকামী প্রবণতা কি তাহলে মায়ের দিক থেকেই জেনেটিক ভাবে প্রবাহিত হয়? ডিন হ্যামারের গবেষণা সে দিকেই ইঙ্গিত করে। আমরা জানি একটি ছেলের দেহে দু ধরণের ক্রোমোজম থাকে। একটি হল Y যা সে বাবার কাছ থেকে সরাসরি পায়, আর অন্যটি X ক্রোমোজম -যা সে পায় মায়ের দিক থেকে। কাজেই জেনেটিক প্রবণতা মায়ের দিক থেকে পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হবার অর্থ হচ্ছে X ক্রোমোজমে তার ছাপ থাকা। হ্যামার এবং তার গবেষক-দল জানালেন X ক্রোমোজমের একদম প্রান্তসীমার একটি এলাকা – যাকে Xq28 হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, এটাই সমকামী প্রবণতা তৈরির জন্য দায়ী। হ্যামার ৪০ জন সমকামী ভাতৃযুগলের উপর পরীক্ষা করে দেখলেন তাদের মধ্যে ৩৩ টি যুগলের মধ্যে এই Xq28 মার্কারের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে। ৭ টিতে পাওয়া যায় নি (বিষমকামীদের ক্ষেত্রে এই মার্কারটি ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত থাকে)। বলা হল যদিও নমুনাক্ষেত্র খুব একটা বড় ছিলো না, তদুপরি ৪০ জনের মধ্যে ৩৩ জনে মার্কার খুঁজে পাওয়াটা আসলেই ‘স্ট্যাটিস্টিকালি সিগনিফিকেন্ট’ । এইটাই হল ডিনহ্যামারের সমকামিতা নিয়ে মাইলফলক গবেষনার সারসংক্ষেপ। তার পরীক্ষায় পাওয়া এই Xq28 মার্কারটি ‘গে জিন’ হিসেবে ‘প্রচারের আলোয় উঠে আসে। আর অনেকেই ডিন হ্যামারের কাজকে এভাবে ব্যাখ্যা করে দিলেন যে, ‘ক্রোমোজমের Xq28 এলাকায় একটি জিন পাওয়া গেছে যা সমকামিতাকে ত্বরান্বিত করে’।
চিত্রঃ ডিন হ্যামারের হ্যামার ৪০ জন সমকামী ভাতৃযুগলের উপর পরীক্ষা করে X ক্রোমোজমের একদম প্রান্তসীমার একটি এলাকা – যাকে Xq28 হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, সমকামী প্রবণতার উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। (ছবিতে ক্লিক করে বড় করে দেখুন)
কিন্তু ব্যাপারটি মোটেই এত সহজ সরল নয়। এই ফলাফল খুব নিবিড়ভাবে বিশ্লেষণের দাবী রাখে। প্রথম কথা হল ৪০ টি যুগলের মধ্যে ৭ টি যুগলে এই Xq28 মার্কারটি পাওয়া যায়নি। সমকামিতার প্রবৃত্তি তৈরিতে যদি Xq28 মার্কার থাকা ‘অত্যাবশকীয় নিয়ামক’ হতো, তাহলে ৪০ টি যুগলের স্যাম্পলের সবগুলোতেই এটি পাওয়া যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেটা হয়নি। যদি ৪০টি স্যাম্পলের মধ্যে মোটামুটি ২০টিতে পাওয়া যেত, আর বাকি ২০ টিতে না পাওয়া যেত, তবে আমরা বলতে পারতাম সমকামিতার প্রবৃত্তির সাথে এই মার্কারের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু সেটাও হয়নি। মার্কার পাওয়া গেছে চার-পঞ্চমাংশ ক্ষেত্রে। ৪০টি স্যাম্পলের মধ্যে ৩৩টিতে মার্কার পাওয়ার ক্ষেত্রটি নিঃসন্দেহে ফলাফলের পারিসাংখ্যিক গুরুত্বকে তুলে ধরে। ডিন হ্যামার হিসাব করে দেখিয়েছেন শুধুমাত্র সম্ভাবনার নিরিখে হিসেব করলে এমনি এমনি (নির্বিচারে) এটা ঘটার সম্ভাবনা ২০০ ভাগের মধ্যে ১ ভাগেরও কম। সে হিসেবে জেনেটিক প্রভাব থাকার প্রবণতাটাকে অস্বীকার করা হয়তো যাচ্ছে না, কিন্তু এটা কখনোই শেষ কথা বলার নিশ্চয়তাও দিয়ে দিচ্ছে না। মোটা দাগে বললে, যেহেতু যমজ ভাতৃযুগলের দুজনই সব সময় সমকামী ভাবাপন্ন হয় না, সেহেতু মার্কার থাকলেই সমকামী হবে – এটা হলফ করে বলা যাচ্ছে না। আবার উল্টো দিক থেকে দেখলে, কোন মার্কার না থাকা সত্ত্বেও ৭ টি ভাতৃযুগলে সমকামী প্রভাব পাওয়া গেছে। তার মানে, মার্কারের সাথে কিংবা জিনের সাথে সমকামী প্রবৃত্তির সরাসরি সম্পর্ক শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
আর তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই মার্কারের সাথে জেনেটিক একটা প্রভাব আছেই, তবুও সেটি একটিমাত্র জিনের সাথে কখনোই নয়। ডিন হ্যামার নিজেই সে কথা বলেছেন এভাবে –
‘কোন একটি জিনকে (এ পরীক্ষায়) পৃথক করা যায়নি। পরীক্ষার মাধ্যমে যা করা হয়েছে তা হল – ক্রোমোজমের একটি অংশ সনাক্ত করা, যে অংশটি দৈর্ঘ্যে চার মিলিয়ন বেস যুগলের সমান। এই অংশটি সমগ্র মানব জিনোমের শতকরা ০.২ ভাগেরও ছোট, কিন্তু তারপরেও এই অংশটিতে অবলীলায় কয়েকশত জিন এঁটে যেতে পারে। এই এলাকায় নিয়ামক জিনটি খুঁজে বের করা অনেকটা খড়ের গাদায় সূঁচ খোঁজার মতই। সূঁচ পেতে হলে হয় আমাদের হয় আরো অনেক বেশী পরিবার দরকার হবে, অথবা সম্ভ্যাব্য সকল এলাকার ডি.এন.এ-র অনুক্রমের সম্পূর্ণ তথ্য জানা চাই’।
হ্যামার নিজে ১৯৯৫ সালে পরীক্ষাটি পুনর্বার পরিচালনা করেন হু, পাত্তাউচি এবং অন্যান্যদের সাথে মিলে। এই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হয় ৩২ টি স্যাম্পল নিয়ে, এবং এর মধ্যে ২২ টি ক্ষেত্রে তিনি আগের পরীক্ষার মতই Xq28 মার্কার খুঁজে পেলেন । অর্থাৎ, শতকরা প্রায় ৬৮ ভাগ ক্ষেত্রে তিনি নিশ্চয়তা দিয়ে বলতে পারলেন যে, মার্কারের সাথে সমকামিতার একটা প্রচ্ছন্ন সম্পর্ক আছে। এ ছাড়া স্যান্ডার এবং প্রমুখের ১৯৯৮ সালের গবেষনায়ও ৫৪টি স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করা হয়, এবং এর মধ্যে শতকরা ৬৬ ভাগ ক্ষেত্রে সমকামিতার সাথে Xq28 মার্কারের সম্পর্ক পাওয়া যায় ।
১৯৯৯ সালে ক্যানাডায় জর্জ রাইসের নেতৃত্বে গবেষকের একটি দল ডিন হ্যামারের পরীক্ষাটিই করার চেষ্টা করলেন নমুনা ক্ষেত্র আরো বাড়িয়ে দিয়ে। এই পরীক্ষায় সমকামী ভাতৃযুগল সংগ্রহ করার জন্য কানাডার গে ম্যাগাজিন Xtraতে বিশাল বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, শেষ পর্যন্ত ৪৬ টি যুগল নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। এই যুগলগুলো নির্বাচিত হয় ‘সমকামী সাক্ষাৎকারগ্রহণকারী’ (gay interviewer) দের মাধ্যমে।
এই পরীক্ষায় ৪৬ টি যুগলের মধ্যে মাত্র ২০টি যুগলে মার্কার পাওয়া গেল , পারিসাংখ্যিক হিসেবে যা অর্ধেকেরও কম। যদি সমকামিতার সাথে মার্কারের নিশ্চিত সম্পর্ক থাকতো তবে ৪৬টির মধ্যে ৪৬টিতেই মার্কার পাওয়া যেত। তা তো হয়ইনি, বরং যদি হ্যামারের মত ‘স্ট্যাটিস্টিকালি সিগনিফিকেন্ট’ ৬৮% ফলাফলেরও পুনরাবৃত্তির কথা বিবেচনা করি, তবে মার্কার পাওয়া যাওয়ার কথা ছিলো অন্তত ৩২ টি। যদি এলোপাথাড়ি ভাবে ঘটা সম্ভাবনার হার শতকরা পঞ্চাশভাগের কথাও চিন্তা করি, তাহলেও মার্কারের সংখ্যা আসা উচিৎ ছিলো ২৩টি। কিন্তু ২০টি মাত্র মার্কার পাওয়াকে কোনভাবেই কোন ধরণের সম্পর্কে ফেলা যায় না। কাজেই অনেক বিশেষজ্ঞই মনে করেন এই পরীক্ষাটি Xq28 মার্কারের সাথে ‘গে জিন’ পাওয়ার আগের দাবীগুলোকে ভুল প্রমাণ করে দেয় । ক্যানাডিয়ান গবেষকেরা তার ফলাফল সম্বন্ধে উপসংহার টেনে বলেন,
আমাদের ফলাফল হ্যামারের মূল পরীক্ষার ফলের সাথে এত পা্থ্ক্য কেন তৈরি করলো তা পরিস্কার নয়। … সে যাই হোক, আমাদের এই পরীক্ষার উপাত্ত যৌনপ্রবৃত্তির উপর Xq28 এলাকায় অবস্থিত একটি জিনের প্রভাব থাকার দাবীকে সমর্থন করে না। … (যদিও) এই ফলাফল জিনোমের অন্য কোন জায়গায় সমকামিতার উপর জিনের প্রভাবকে বাতিল করে দেয় না।
এই ‘গে জিন’ পাওয়ার সাম্প্রতিক এই পরীক্ষাগত ব্যর্থতা অবশ্যই একটি ময়নাতদন্ত দাবী করে। সারা মিডিয়া জুড়ে ‘গে জিন’ নিয়ে এত হৈ চৈ হল, অথচ দুইটি বড় পরীক্ষায় দুই রকম ফলাফল বেরিয়ে এলো কেন? তবে কি হ্যামার পরীক্ষায় কোন বড় ভুল করেছিলেন, কিংবা ভাল ফলাফল পেতে ডেটা পরিবর্তন করেছিলেন? নাকি ক্যানাডিয়ান গবেষকেরা সমকামী যুগল নির্বাচনের সময় সনাক্তকরণে ভুল করেছিলেন? এই শেষ বিচারের ফয়সলা এখনো হয়নি। হ্যামার অবশ্য ক্যানাডিয়ীয় গবেষকদের ফলাফল প্রত্যাখান করেছেন এই বলে –
‘তারা (ক্যানাডীয় গবেষকেরা) প্রথমেই ধরে নিয়েছিলেন গে জিন বলে কিছু নেই, এবং তাদের পরীক্ষা ছিলো পক্ষপাত দুষ্ট, কারণ পরীক্ষকের একজন প্রথম থেকেই ‘গে জিন বলে কিছু নেই’ – সেটা প্রমাণেই তৎপর ছিলেন। তাদের সেই (সমকামবিদ্বেষী) মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে তাদের পরীক্ষায়’।
তবে হ্যামার যাই বলুক না কেন গে-জিন নিয়ে পরীক্ষার ফলাফল একটা বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে আছে সাধারণ মানুষ এবং নিরপেক্ষ গবেষকদের কাছে। তাদের কাছে বিষয়টি এখনো ‘অমীমাংসিত মামলা’ই।
তবে ‘অমীমাংসিত’ বলে ব্যাপারটিকে এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। এ সংক্রান্ত গবেষণা কিন্তু থেমে নেই। জিনের পথ ধরে সমাধানের পথ খুঁজতে এবারে এগিয়ে এসেছে এপিজেনেটিক্স । এই এপিজেনেটিক্স উপরের সমস্যার একটা আকর্ষণীয় সমাধান হাজির করছে, যা ক্রমশঃ বিজ্ঞানীদের কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। তারা দেখেছেন, জিন কেবল একা একা কাজ করতে পারে না, কাজ করে পরিবেশ থেকে পাওয়া সংকেতের মিথস্ক্রিয়ায়। বৈদ্যুতিক বাতির সুইচের যেমন টার্ণ অন বা অফ করা যায়, ঠিক তেমনি পরিবেশ থেকে পাওয়া সংকেতের প্রভাবে জিনের সক্রিয়করণ (activation) বা নিষ্ক্রিয়করণ (deactivation) ঘটে । বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন মিথাইলেশন। দেখা গেছে আমাদের চারপাশের বহু কিছুই -পরিবেশ, খাদ্যাভাস, পানীয় বা ধূমপানে আসক্তি, মানসিক পীড়নসহ বহুকিছুতেই এই প্রক্রিয়াটি প্রভাবিত হয়। এই মিথাইলেশন হয় বলেই সদৃশ যমজ ভাতৃযুগলে জেনেটিক কোডে শতভাগ মিল থাকলেও তাদের আচরণে, মন মানসিকতায় কিংবা কাজকর্মে বিস্তর পার্থক্য থাকে অনেক সময়ই। মিথাইলেশনের প্রভাবে জেনেটিক কোডের একাংশ বা একাধিক অংশ টার্ণ অফ হয়ে যেতে পারে। কাজেই একই জেনেটিক কোড থাকা সত্ত্বেও জেনেটিক সুইচের টার্ণ অন বা অফের কারণে একভাই বিষমকামী, আরেকভাই হয়ত সমকামী ভাবাপন্ন হয়ে উঠতে পারে। এ শুধু তত্ত্ব কথা নয়, এই ধারণার স্বপক্ষে কিছুটা প্রমাণ পাওয়া গেছে সভেন বকল্যান্ডের গবেষণায়। তিনি যমজ ভাইয়ের ঠিক কোন জায়গায় জিন টার্ণ অন বা অফের কারণে প্রবৃত্তির পরিবর্তন ঘটে তার হদিস এখনো না পেলেও সাম্প্রতিক একটি গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, সমকামী ছেলের জন্ম দেয়া মায়ের এক্স ক্রোমোজমের সক্রিয়তা অন্য মায়েদের চেয়ে ভিন্ন হয়।
কিন্তু কিভাবে একটি জিন পরিবেশের প্রভাবে সক্রিয় বা অক্রিয় হয়ে যায়? একটি ভাল উদাহরণ হতে পারে স্ট্রেস হরমোন করটিসোল। ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কর্টিসোল স্থায়ীভাবে জিনের একাংশকে নিষ্ক্রিয় (turn off) করে দিতে পারে, এবং এর ফলে ইঁদুরের স্বভাবে পরিবর্তন ঘটে। মানুষের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা একই রকম ফলাফল লক্ষ্য করেছেন। তারা দেখেছেন, মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে মানবদেহে এই হরমোনের আধিক্য বৃদ্ধি পায়। চাপময় পরিবেশে বেশি দিন কাটালে দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায় – ফলে দেহ সহজেই সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয় সে সময়। কিন্তু ‘ধান ভানতে শীবের গীতের মত’ এই কর্টিসোল নিয়ে পড়ে যাওয়া হল কেন? এই স্ট্রেস হরমোনের সাথে সমকামিতার কি কোন সরাসরি সম্পর্ক আছে? বিজ্ঞানীরা বলেন, থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। জার্মান ডাক্তার গান্টার ডর্নারের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চাপময় পরিবেশে যে সমস্ত মা গর্ভবতী হয়েছিলেন, তাদের সন্তানদের একটা বড় অংশ নাকি সমকামী হিসেবে গড়ে উঠেছিলো ইতিহাসের অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি । এমনকি ইঁদুর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েও বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যে সমস্ত ইঁদুরেরা গর্ভের সময় চাপময় পরিবেশে দিন কাটায়, তাদের সন্তানের মধ্যে পরবর্তীতে সমকামিতার আধিক্য তুলনামূলকভাবে বেশি থাকে। অনেক সময় আবার বিভিন্ন এলার্জিক প্রতিক্রিয়ায় দেহে টেস্টোসটেরোন হরমোনের (পুরুষ হরমোন) প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। যে সমস্ত মায়েরা সারা জীবনে অধিক সংখ্যক সন্তানের জন্ম দেয়, তাদের ক্ষেত্রে শেষের দিককার সন্তানদের জন্মের সময় এ ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বলে জানা গেছে। রে ব্ল্যানচার্ডের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কোন পরিবারে বড় ভাই থাকলে তার পরের ভাইদের সমকামী যৌনপ্রবৃত্তি তৈরী করার সম্ভাবনাকে শতকরা ২৮ থেকে ৪৮ ভাগ বাড়িয়ে দেয় । অর্থাৎ, একটি পরিবারে বড় ভাইদের সংখ্যা যত বেশী হবে, তত বেশি হবে পরবর্তী সন্তানের সমকামী হবার সম্ভাবনা (একে জনপ্রিয়ভাবে ‘ওল্ডার ব্রাদার ইফেক্ট’ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়)। কারণ দেখা গেছে, যত বেশি সন্তানের জন্ম হয়, তত বেশি মায়ের টেস্টোসটেরোন হরমোনের প্রতি এলার্জিক প্রতিক্রিয়াও বাড়তে থাকে। হরমোন নিয়ে এই সাম্প্রতিক পরীক্ষাগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও কোন কিছুই আসলে নিশ্চিত নয়। বহু মহিলাই আসলে বিভিন্ন সময়ে চাপযুক্ত পরিবেশে সন্তান জন্ম দিয়ে থাকেন, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাদের সবার সন্তান বড় হয়ে সমকামী হয়। আমার নিজের জন্মও হয়েছিলো একাত্তরের দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে,আমার বাবা যখন দেশের সীমান্তে ছিলেন যুদ্ধরত। এমন পরিস্থিতিতে জন্ম নিয়েও কিন্তু আমি সমকামী হিসেবে বেড়ে উঠিনি। কিংবা আমার জন্মের কারণে কোন ‘ওল্ডার ব্রাদার ইফেক্ট’ আমার ছোট ভাইয়ের উপরও পড়েনি । এমন উদাহরণ চারপাশে অজস্রই আছে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় সমকামী সন্তানের জন্মদেয়া মায়েদের নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তাদের প্রশ্ন করা হয়েছে যে, বিষমকামী সন্তানের জন্ম দেয়ার তুলনায় সমকামী সন্তানের জন্ম দেয়ার সময়টিতে কি তারা অধিক চাপযুক্ত পরিস্থিতিতে ছিলেন কিনা। তাদের মতামত থেকে এমন কোন আলামত পাওয়া যায়নি যে,সমকামী সন্তানের জন্মের সময় কোন চাপময় পরিস্থিতি তারা অতিবাহিত করেছিলেন ।কাজেই মায়ের মানসিক চাপের সাথে সন্তানের সমকামিতার কোন প্রত্যক্ষ যোগসূত্র আসলে প্রতিষ্ঠিতই হয়নি। এ ছাড়া, গান্টার ডর্নারের মূল পরীক্ষার ‘উদ্দেশ্য’ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন মহলে। গান্টার তার গবেষণাপত্রে সমকামিতাকে ‘মানসিক প্রতিবন্ধিত্ব’ (psychic disability) হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘অদূরভবিষ্যতে সমকামিতার বিস্তার রোধ করা সম্ভব হবে’।তার এই মনোভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলেই তুমুল প্রতিবাদ হয়েছে, তার সমকামিতার প্রতি বিদ্বেষমূলক মনমানসিকতাকে ইতিহাসের কলঙ্কজনক ইউজিনিক্সের (eugenics) সাথেও তুলনা করা হয়েছে [10]।
গে জিন নিয়ে মিডিয়ায় এত ঔতসুক্যই বা কেন?
বৈজ্ঞানিক গবেষণার বাইরেও রাজনৈতিক একটা মতাদর্শগত লড়াই যে চলছে তার প্রভাব কিছুটা হলেও বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রগুলোতেও পড়ছে। রক্ষণশীল সমাজের চাপে সাড়া দুনিয়া জুড়েই সমকামীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়তে হচ্ছে। এই সমকামী অধিকার কর্মীদের অনেকেই ভাবেন, যদি কখনো প্রমাণ পাওয়া যায় যে সমকামী প্রবণতা জৈবিকভাবে অঙ্কুরিত হয় –সেটা সমকামীদের দাবী আদায়ের জন্য অনেক উপকারে আসবে। কারণ, তারা তখন আরো বলিষ্ঠভাবে মানুষজনকে বোঝাতে পারবেন যে, ‘সমকামীরা জন্মগতভাবেই সমকামীপ্রবণতা নিয়ে জন্মায়’, এতে তাদের কোন ‘দোষ’ নেই। ‘এডভোকেট’ নামে একটি মার্কিন গে এবং লেসবিয়নদের পত্রিকায় এ নিয়ে ১৯৯৬ সালে একটি জরিপ চালান হয়, সেখানকার শতকরা ৬১ ভাগ পাঠক মত দিয়েছিলো যে, ‘যদি সমকামিতার পেছনে কোন জেনেটিক কারণ আছে বলে জানা যায়, সেটা তাদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করবে’ ।
তবে এই দলের মধ্যে বিপরীত মতও আছে। যদি সমকামী প্রবণতা ‘জেনেটিক’ বলে প্রমাণিত হয়, তবে একে ‘জেনেটিক রোগ’ হিসেবে চিহ্নিত করে দেবার প্রবণতাও হয়তো বৃদ্ধি পাবে। এ ধরণের ভয় থেকে অনেকে আবার জিনের সাথে সম্পর্ক না পাওয়া গেলেই বরং ভাল বলে মনে করেন। তারা আশঙ্কা করেন আগে ডাক্তারেরা যেভাবে সমকামিতাকে ‘মানসিক ব্যাধি’ হিসেবে চিহ্নিত করে নানা উপায়ে রোগমুক্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছেন, সেরমকম প্রবণতা হয়তো জেনেটিস্টদের মধ্যেও ভবিষ্যতে দেখা যাবে; তারা হয়ত হান্টিংটন ডিজিজ, আলসাইমার্স, মাইগ্রেন, সিকেল সেল এনিমিয়ার মত সমকামিতাকেও জেনেটিক রোগ হিসেবে দেখিয়ে তার চিকিৎসার দাওয়াই তখন বাৎলে দিতে চাইবেন। Xq28 এলাকার ঠিক পাশেই ক্রোমোজমের ভিন্নতার কারণে অকুলার এলবেনিজম এবং মেনকিস ডিজিস নামে দুটি দুর্লভ জেনেটিক রোগ তৈরি হয় বলে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। সমকামিতাও কি সে ধরণের কোন জেনেটিক রোগ? এর জবাব আমরা খুঁজতে চেষ্টা করবো এ নিয়ে পরবর্তী একটি লেখায়।
আগের কিছু প্রাসঙ্গিক পোস্ট
- সমকামিতা কি প্রকৃতিবিরুদ্ধ? ( ১ম | ২য় | ৩য় এবং ৪র্থ পর্ব)
- চাই নারী-পুরুষ ছাড়াও অন্যান্য লিঙ্গের সামাজিক স্বীকৃতি
______________________________
তথ্যসূত্রঃ
[1] And Tango Makes Three, Peter Parnell and Justin Richardson, Simon & Schuster Children’s Publishing, April 26, 2005
[2] John Schwartz, Of Gay Sheep, Modern Science and Bad Publicity, NY Times, January 25, 2007
[3] Roselli C, Stadelman H, Reeve R, Bishop C, Stormshak F (2007). “The ovine sexually dimorphic nucleus of the medial preoptic area is organized prenatally by testosterone”. Endocrinology 148 (9): 4450–4457; এছাড়া দেখুন, Faye Flam, The Score: How The Quest For Sex Has Shaped The Modern Man, Avery, 2008
[4] Bruce Bagemihl, Biological Exuberance: Animal Homosexuality and Natural Diversity, Stonewall Inn Editions, 2000
[5] 1500 animal species practice homosexuality, www.news-medical.net/news/2006/10/23/20718.aspx
[6] Joan Roughgarden, Evolution’s Rainbow: Diversity, Gender, and Sexuality in Nature and People, University of California Press, May 17, 2004।
[7] LeVay S (August 1991). “A difference in hypothalamic structure between heterosexual and homosexual men” (PDF). Science (journal) 253 (5023): 1034–7.
[8] Pillard RC, Weinrich JD., Evidence of familial nature of male homosexuality, Arch Gen Psychiatry. 1986 Aug;43(8):808-12.
[9] Hamer DH, Hu S, Magnuson VL, Hu N, Pattatucci AM (July 1993). “A linkage between DNA markers on the X chromosome and male sexual orientation”. Science, 261 (5119): 321–7
[10] Francis Mark Mondimore, A Natural History of Homosexuality, The Johns Hopkins University Press, 1996
কোনো সমকামিকে কি এই অভ্যাস হতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ? কিভাবে সম্ভব ?
ইউ টিউব থেক দুটো লিঙ্ক দিলাম। লিঙ্কগুলো শুধুমাত্র সমকামিতা বিরোধী ধর্মবাদীদের জন্যে। একটি বাংলাদেশের ওপরটি ইংল্যান্ডের। ইংল্যান্ডের ছবিটি ছয় পর্বের, আগ্রহী দর্শক বাকিগুলো খোঁজে বের করে নিবেন।
httpv://www.youtube.com/watch?v=E6YTVQmK4WU&videos=DxtWEfrcRrQ
@আকাশ মালিক,
দয়া করে অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও এ লেখায় প্রকাশ করবেন না। এটা একটা বিজ্ঞান-ভিত্তিক লেখা। আমি বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেখতে এখানে আগ্রহী। ফুয়াদ সাহেবকে যে কথাটা বলেছি, সেটা আসলে অন্য সবার জন্যই প্রযোজ্য। আপনার দ্বিতীয় ভিডিওটির সাথে আমার লেখার কোন প্রসাঙ্গিকতা খুঁজে পেলাম না, বিধায় এটি তুলে নেয়া হল।
ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে পরে একটি পর্ব লিখার ইচ্ছে আছে, তখন সেখানে এগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেই বরং ভাল হবে। ততক্ষণ একটু ধৈর্য রাখুন।
আসলে এই থ্রেডে প্রায় সব কিছুই বলা হয়ে গেছে। যারা আলোচনা করে পোস্টটিকে সমৃদ্ধ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আসুন, আমরা মুক্তমনার অন্যান্য পোস্টগুলোর প্রতি দৃষ্টি যেই।
সবার স্পীচ অফ ফ্রীডমকে সম্মান করা উচিত। সাথে সাথে এও মনে রাখা উচিত যে ধর্ম বেইজড ফিলোসপিকে সব কিছুর মাঝে টেনে আনা শুধু বেহুদা তর্কে সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছু না। বিশেষ করে ১০০% বিজ্ঞান সম্মত লেখায় ধর্মের ফিলোসপির কি সম্পর্ক? যেখানে লেখক নিজেই অনুরোধ করেছিলেন, তিনি এও বলেছেন যে তিনি পরে এ বিষয়ে ধার্মিক ফিলোসপির সম্পর্ক মিলিয়ে পূর্নাংগ লেখা লিখবেন। সেখানে যত খুশী ধর্ম আলোচনা হতে পারে।
আল মুর্শেদ সাহেবও এখানে বিতর্কে অংশ নিয়েছেন, তিনি সমকামিতার বিরোধীতা করেছেন তবে কোরান হাদীস বা কোন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব টেনে আনেননি। তিনি বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেই সমকামিতা খারাপ প্রমানের চেষ্টা চালিয়েছেন। এখানে থেকে কিছু শেখা যায়।
মুক্তমণাকে এমন সাইট বানানো যাবে না যেখানে বিবর্তনবাদের অসারতা প্রমানের লেখাকে নাস্তিকতাবাদের অসারতা বিষয়ক রাবিশ লেখায় পরিণত করা যাবে। ধর্ম থাকবে ধর্মের যায়গায়, বিজ্ঞান বিজ্ঞানের যায়গায়। দুয়ের সম্পর্ক বা সঙ্ঘাত শুধুমাত্র প্রযোজ্য বিষয়ভুক্ত টপিকেই করা উচিত।
এটাকেঈ ধর্মীয় অস্তিত্বতাবাদ বলে যাতে অধিকাংশ ধার্মিক প্রকৃতির লোকেরা ভোগেন। সেটার কিছু লক্ষন আছে। ওরা লিখলেই ত আমাদের দেখাতে শুরু হয়। আফটার অল ওদের জ্ঞানের দৌড়ত আমরা জানি-পাঠশালাও ক্রস করে নি। তাই প্রত্যাশাও নেই কিছু। সেই জন্যে বলতে দিলেই ভাল। ফুয়াদ ভাই খুব খারাপ কিছু লেখে না (উনার দৃষ্টিভংগী থেকে)। বাংলা ভাষার দুর্বলতা আছে-সোশ্যাল মিডিয়াতে ওসব চলে যায়।
@বিপ্লব পাল, কার জ্ঞান কোন লেভেলের এটা নিয়ে কথা হচ্ছে না, কিংবা ভাষার দৌড় নিয়েও আমি কিছু বলিনি এখানে। তোমার যদি ভালো লাগে তাহলে তোমার ব্লগে যত ইচ্ছা এসব তর্ক বিতর্ক কর, কেউ তো বাঁধা দিচ্ছে না, অন্যদের ব্লগে ঢালাওভাবে এসব বলার তো কোন দরকার নেই, বিশেষত যারা এসবে আনন্দ পায় না, তাদেরকে মাফ করে দিলেই তো হয়।মুক্তমনা যাতে শুধুই এসব বিতর্কের ফোরাম না হয়ে দাঁড়ায় সেটাতে নজর রাখতে অনুরোধ করবো মডারেটরদেরকে। এখানে সুস্থ, যুক্তি, মেধা এবং বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার পরিবেশ তৈরি হোক সেটাই কাম্য, যেটা বাংলা আর কোন ব্লগেই নেই বললেই চলে। এটুকু করতে না পারলে মুক্তমনার দরকার কি, হাজারটা বাংলা ব্লগ আছে, সেখানে গেলেই তো হয়।
@বন্যা আহমেদ,
আপনাদের কথায় নাক গলানো উচিত হবে না, তার পর একটু দুঃসাহস করিতেছি । মুক্তমনায় আসলে দুই ফিলোসফির মধ্যে ঝগড়া হইতেছে , একদল আল-কোরান বেইজ ফিলোসফি , আরেকটি হচ্ছে সাধারণ ফিলোসফি । আপনি হয়ত লক্ষ করেছেন , আমি বা নিয়মিত যারা, তারা কমেন্ট না করলেও , মুক্তমনার পোষ্ট গুলিতে আল-কোরান বেইজ ফিলসফির কেউ না কেউ কমেন্ট করিতেছে । যুক্তির সংজ্ঞা আপনার কাছে একরকম, আমার কাছে এক রকম । আমি যেহেতু আল- কোরানের বাঊন্ডারির ভিতর চলি, সেহেতু আমার কথার মধ্যে সহজেই আল-কোরান এসে যাবে । কিন্তু আপনার কথায় কোন ক্রমে আসবে না । তারপর ও আমি চেষ্টা করিতেছি , আমার বক্তব্যগুলি যতদূর সম্ভব আপনাদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলাতে । এবং আপনি হয়ত লক্ষ করেছেন, বাংলা বানানের ক্ষেত্রে আমি এখন অনেক সতর্ক । প্রতিদিন মুক্তমনায় কে কি লিখল তা দেখা অভ্যাস হয়ে গেছে । তাই, আসতে হয় । তারপর ও, আমি কমেন্টের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করিতেছি । কিন্তু কি করব আপা, কিছু কিছু বিষয় আছে, যা একজন কোরান বেইজ ফিলসফির ব্যক্তি মাত্রঈ ভীত হবে , এবং এ বিষয় উত্তর দিবে । সমকামীতা তার মধ্যে একটি । আর আল কোরানের উপর প্রশ্ন করলে তো উত্তর দিতেই হবে । একটু আমাদের ফ্লেটফ্রম থেকে বিবেচনা করতে চেষ্টা করুন । আপনাকে ধন্যবাদ ।
বিপ্লব’দা
আপনি কারে কি বুঝাইবেন। যা হোক কথা হচ্ছে যে ধর্ম সংক্রান্ত ব্লগ না হলে সেখানে ধর্ম নিয়ে তর্ক না করা উচিৎ। এই জিনিসটা আমরা সবাই মেনে চলার চেষ্টা করি। না হলে আসলে এই গবেষনালব্ধ লেখা গুলোকে অপমান করা হয়। একজন অনেক গবেষনা করে, সময় ব্যয় করে একটি বিজ্ঞান বিষয়ক লকখা লিখলেন আর সেখানে যদি কেউ বিজ্ঞান বা রিসার্চ কিভাবে কাজ করে সেটা না বুঝে, শুধু কোরান, হাদিসের ফিলোসফি দিয়ে যাবে সেটা গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। যে সেটা না বুঝে সে করতে পারে কিন্তু আপনি তো বুঝেন কিভাবে অভিজিৎ’দা এই লেখা লিখেছে। আপনি কেন এই ধরণের লেখায় অন্য তর্কে যাবেন। বরং অন্য কেউ শুরু করলে তাকে আপনি নিরুৎসাহিত করবেন। সেটা না করে আপনি তার সাথে বিতর্কে অংশগ্রহন করে তাকে আর উৎসাহিত করেছেন। আমি বন্যা’দির সাথে সম্পূর্ণ সহমত প্রকাশ করে বলবো এই ব্যাপারে একটি নীতিমালা থাকা উচিৎ যেন মডারেটর’রা জানে এবং মুক্তমনার সদস্যরাও জানে সকলের দায়িত্ব কি। না হলে মুক্তমনার যে স্বকীয়তা রয়েছে সেটা হারিয়ে যাবে। মুক্তমান হারিয়ে যাবে, সেটাই আমার ভয়।
@বন্যা আহমেদ, আমি তোমার দৃষ্টিভংগীটা বুঝলাম। আসলে হয়েছে কি আমি ইদানিং মুক্তমনা ছাড়া আর কোন বাংলাদেশের দিকের ফোরামে ( যেমন সচল বা আমার ব্লগ) যাই না। রাজনৈতিক কারনে ভারতের দিকের কিছু ফোরামে বাকী সময় কাটায়। ফলে ধর্ম নিয়ে তর্ক করার জন্যে মুক্তমনার দিকেই তাকিয়ে থাকি। ইন্টারফেইথ ডায়ালোগ বলে ধর্মীয় বিতর্কের জন্যে ভারতের একটা ভাল ফোরাম আছে যেখানে প্রচুর পাকিস্থানি ও অংশ নিয়ে থাকে। সেখানে সমস্যা হচ্ছে বিজ্ঞান বনাম ধর্মর বদলে হিন্দু-বৌদ্ধ বনাম ইসলাম এইসব আবোল তাবোল চলতে থাকে ( যদিও ফোরামের মালিক নাস্তিক!) । বিজ্ঞান বনাম ধর্মের জন্যে মুক্তমনার চেয়ে ভাল আর ফোরাম নেই ( রিচার্ড ডকিন্স ফোরাম ছাড়া)। সেই জন্যেও প্রত্যাশা বেশী।
আসলে একেকটা ফোরাম একেকটি বৈশিষ্ট্য পাবে এই যুগে এটাই স্বাভাবিক। মুক্তমনা
যুক্তিবাদ এবং বিজ্ঞানের জন্যে সেরা ফোরাম-কারন এখানকার মেম্বাররা মূলত এই কারনেই আসেন। আবার রাজনীতির জন্যে পি আই ডব্লু বি বলে আমদের দিকের একটা ফোরাম আছে -যেটাতে ৯০% ফালতু আলোচনার মধ্যে ১০% খুবই ভাল আলোচনা বেড়িয়ে আসে। ওখানের মেম্বাররা পার্টির ছাত্রনেতা বা যুবনেতা-প্রায় সব কটি রাজনৈতিক পত্রিকার সম্পাদকরা ওখানে আসেন। ফলে ওখানে এই সব ধরনের আলোচনা একদমই চলে না। রাজনীতি নিয়েই অষ্টপ্রহর প্রবল বিতর্ক চলে। এবং গালি গালাজের পরিমান ও শতগুন। তারপরেও তা সৃজনশীল যেহেতু যেকোন রাজনৈতিক বিষয়ে লেখা ছাড়লে দুশো চারশো বিশ্লেষন এমনিতেই বেড়িয়ে আসবে।
আবার অনেক ফোরাম আছে যেখানে এরকম লেখা দিলে বলবে -নমস্কার-আমরা এখানে আড্ডা মারতে আসি। এসব ভারী লেখা এখানে দেবেন না। এরাই ভারী দলে। অর্কুটের হাজার হাজার ফোরামের মধ্যে, হাতে গোনা ৫-৬টা ফোরামে সিরিয়াস আলোচনা চালাতে দেবে-এই ত আমাদের অবস্থা!
আমার মনে হয় একটা ভাল সমাধান হচ্ছে -যিনি ব্লগের মালিক বা মালকিন, তিনি ব্লগের তলায় লিখে দিলেই হল-এই ব্লগে যেন কোন ধর্মগ্রন্থ বা ধর্ম না টানা হয়। ব্যাস তাহলেই ব্যাপারটা সবার জন্যে পরিস্কার থাকবে।
@বন্যা আহমেদ,
আপু থাকনা, সবাই থাকুক, কারন বিশ্বাস পরিবর্তনশীল।
ফুয়াদ ভাইও কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে মুক্ত মনায় এসে তার একদম উপকার হয় নি? ওনার ও বিজ্ঞান বিষয়ক ধারনাগুলো যে অনেক ডেভলাপ করেছে তা দিন দিন তার কমেন্টের উন্নতি দেখলেই বোঝা যায়। বিশ্বাসও পরিবর্তনশীল। আমরা আসুন ভবিষ্যতের দিকেই তাকিয়ে থাকি।
অভি ভাইয়া যেখানে ছেলে হয়েও এত ধৈর্য নিয়ে কোন আক্রমন ছাড়াই একটার পর একটা বিরতিহীন জবাব দিয়ে যাচ্ছেন,সেখানে আপনি এত অল্পতে রেগে গেলে বুঝতে হবে অভি ভাইয়া চরম অশান্তিতে দিন পার করছেন! 😀
@তানভী,
আপনি কোথায় দেখলেন বা বুঝলেন বন্যা রাগ করে কমেন্টস করেছে ??অথবা বুঝলেন ধৈর্যহারা হয়েছে?? ওনি শুধু একটি নীতিমালার কথা বলেছেন বলে মনে হয়।বিশ্বাস-অপবিশ্বাস কেন, জগতের ও মহাজগতের সব কনাই তো পরিবর্তনশীল একথা ফুয়াদরা দেখে বা বুঝেও না বুঝার ভান করেন,অথবা একবারের জন্যও উপল্বধি করতে চান না।সব কিছুতে কেবল যার কোনো কিছুতে অস্তিত্ত নাই তা দিয়ে বিচার-বিশ্লেষন করেন।যে লোকের এখন পর্যন্ত সামান্যতম সৌজন্যবোধটুকুর জ্ঞান হয় নি,অভিজত বার বার অনুরোধ করার পরেও সে আবারো ঘুরে ফিরে নিজের ফালতু অবস্হানে বিরাজ করে তাকে আপনি করবেন পরিবর্তন ,হা হা হা ।
আপনি বা আমরা ভবিষৎতের দিকে তাকিয়ে থেকে দিন গুনি আর ফুয়াদরা এই পৃথিবীতে রাজত্ত করে আমাদের অস্তিত্ত বিলীন করুক।গত পনেরশত,আড়াই বা তিন হাজার বছর রাজত্ত করার পরে আরও আরও,,,,,,,,আর না ।আর এ সব লোকদেরকে আপনি কোটি কোটি বছর জ্ঞান দিলেও এদের পরিবর্তন হয় না যতক্ষন পর্যন্ত না তারা নিজেদের থেকে নিজে পরিবর্তিত হয়।
ভালো থাকবেন।
@তানভী,
অভি ভাইয়া যেখানে ছেলে হয়েও এত ধৈর্য নিয়ে কোন আক্রমন ছাড়াই একটার পর একটা বিরতিহীন জবাব দিয়ে যাচ্ছেন :clap:
যেন কিসের কিসের জানি গ ন্ধ পাচ্ছি :panda:
বিপ্লব, আবারও তোমার সাথে পুরোপুরি দ্বিমত পোষন করছি। ধর্মের ভিত্তি অন্ধ বিশ্বাস, যুক্তি বা বিজ্ঞানের আলোচনায় কেউ যদি হাজারটা যৌক্তিক প্রশ্ন করে তার উত্তর দেওয়া যায়, কিন্তু কেউ যদি কোন যুক্তি ছাড়া ‘ধর্মগ্রন্থতে লেখা আছে তাই সেটাই ঠিক’ বলে গায়ের জোড়ে তর্ক করতে চায়, তার সাথে যুক্তি-তর্ক দিয়ে সময় নষ্ট করার কোন অর্থ হয় বলে আমি মনে করিনা। এ ধরণের ফালতু আলোচনার ফল কখনই ভালো হয়েছে বলে আমার জানা নেই, এতে করে মুক্তমনার মত ফোরাম ‘কোরানের আয়াতের পর্যালোচনার’ ফোরামে পরিণত হয়। আমার মতে সে আলোচনা করার জন্য মুক্তমনায় আসার দরকার নেই কারও, বাংলা আরো অনেক ফোরাম আছে যেখানে সারাক্ষণ কোরানে কি আছে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন কোন লেখক যদি কোরান, হাদিস বেদ বাইবেল নিয়ে লেখে এবং তা নিয়ে তর্ক করতে চায় সেখানে কিছু বলার নেই। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক লেখায় সেটা ভিষণরকম বিরক্তিকর, আলোচনা তখন যুক্তি, আধুনিক গবেষণা, তথ্য থেকে সরে যুক্তিহীন মারামারি কাটাকাটিতে গালাগালিতে পরিণত হয়। এটা যদি কারও কাম্য হয় তাহলে বলবো তার নিজস্ব ব্লগে বা লেখায় তা করতে, যারা এগুলো করতে চায় না তাদেরকে এধরণের সময় নষ্ট থেকে নিষ্কৃতি দেওয়া উচিত।
@বন্যা আহমেদ,
@বন্যা আহমেদ,
:yes:
@বন্যা আহমেদ,
একদম খাঁটি সত্য কথা ।বন্যার সাথে ১০০% সহমত পোষন করছি।যার দেখায় ও চিন্তায় লোহার মোটা তারের বেড়া দিয়ে বদ্ধ করে অন্ধকার কুঠির বানিয়ে রেখেছে তাকে হাজার বা লাখ বার বুঝালেও সে ঐ অন্ধকার কুঠির থেকে বের হয়ে আসতে পারবে না।এবার তাকে যত কোটিবার চোঁখে আংগুল দিয়ে বিজ্ঞানের তথ্য ও যুক্তি দেখানো হউক না কেন ?? এরা হলো জ্ঞান-পাপী,ভোগ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সকল মিষ্টি রসের ফল আর চিন্তা-চেতনায় বাস করে মধ্যযুগীয় অন্ধকার গুহায়। তাই মুক্ত মনার এমন টাইপের লোকদের পিছনে অযথা বাজে সময় নষ্ট করা কি সাজে বা সময় আছে??
অভিজিত,
আর্সেনিকের ব্যাপারটা দেখে চমকে গেছিলাম। ভাবছিলাম হলেও হতে পারে, হয়ত কোন ক্লিনিক্যান রিপোর্ট আছে। বলিঊডি ছবিতে মনে হয় না কোনদিন সমকামি কিছু দেখেছি বলে।
তবে এ ধনের ব্যাপারে আম জনতার State of Denial খুবই বিরক্তিকর লাগে। অত্যন্ত ছেলেমানুষী আচরন মনে হয়। সত্যকে কি এভাবে অস্বীকার করা যায়? একই মনোভাব দেখি আমাদের দেশের বেশ কিছু বুদ্ধিজীবি/কলমজীবি যখন পশ্চীমা সংস্কৃতির সাথে আমাদের তূলনা করেন। তাদের মতে পশ্চীম মানেই মদ নারী যথেচ্ছ যৌনাচারের লীলাভূমি আর আমাদের বাংলাদেশে এসব কিছুই নেই, সবাই গুহাবাসী সন্যাসী।
সমকামিদের অধিকার স্বীকার করে নেওয়া আর সমকামিতা পছন্দ করা বা সমকামিতায় উতসাহ দেওয়ার মাঝে কোন সম্পর্ক নেই এটা ফুয়াদ সাহেবেদের বুঝতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
ভালই লাগল আপনার ব্যাঙ্গাত্বক মন্তব্যটি। ভেবেছিলাম তর্কটা কিছুদিন ঘুরপাক খাবে দুটি নির্দিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে- সমকামিতার কারন ন্যাচারেল, না পারসোন্যাল চয়েস, আর সমকামিতায় তুলনামুলকভাবে পরিবেশ, না জিনের প্রভাব বেশী?
দুর্ভাগ্যবশত ‘নো এন্ট্রি’ দেখেও বরাবরের মতোই ঢুকে পড়লেন চির পরিচিত ধর্ম। সুতরাং পরিবেশ এখন বেশ উত্তপ্ত। বুঝার সুবিধের জন্যে ইচ্ছে করেই দু-একটি ইংরেজী শব্দ বাংলা বর্ণে লিখলাম। আমার দেহে মনে যা অনুভব করেছি, আপন দুটো নয়নে যা প্রত্যক্ষ করেছি, সমাজ ও পরিবেশ থেকে যে তথ্য-অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, এসব কিছু মিলিয়ে আমি আমার ফাইন্যাল মন্তব্যটি জানিয়ে দিতে চাই। তবে অবশ্যই এটা কোন বৈজ্ঞানিক রিসার্চ বা এনালাইজেসনের ফসল নয়, সম্পূর্ণই পারসোন্যাল অপিনিয়ন। স্থান, কাল, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল নর-নারী জন্মগতভাবে Bisexual. হাতেনাতে প্রমান যদি দেখতে চান, বাংলাদেশের সকল নারীকে অনির্দিষ্ট কালের জন্যে চাঁদে চালান করে দিন। আর হস্তমৈ্থুন ও সমকামিতা তুলনামুলকভাবে রক্ষনশীল এলাকা তথা ধর্মভিত্তিক সমাজে বেশী। বিশ্বাস না হয় আজই মাদ্রাসার হুজুরদের উপর গোপন সমীক্ষা শুরু করে দিন, ইনশাল্লাহ অতি শীঘ্রই রিজাল্ট পেয়ে যাবেন।
আর হ্যাঁ, জিন হলো সমকামিতার অংকুর, পরিবেশ তার বিকশিত হওয়ার উপাদান।
@আকাশ মালিক,
হস্তমৈথুন কে কি বাইসেক্সুয়াল বা সমকামির পর্যায়ে ধরা যায়?
আমাদের দেশের মাদ্রাসা গুলিতে প্রচুর পরিমানে সোডোমির ঘটনা ঘটে জানি। ক্যাডেত কলেজ গুলিতেও ঘটে জানি।
আমারো এখন পর্যন্ত এর কার্যকারন সম্পর্কে আপনার মতই ধারনাঃ
“জিন হলো সমকামিতার অংকুর, পরিবেশ তার বিকশিত হওয়ার উপাদান।” তবে কোনটার প্রভাব বেশী প্রকটা তা নিশ্চিত নই।
কারো জীনে থাকলে সে সমকামি অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও হয়, সে অপোজিট সেক্সের সাথে ম্যারেড হলেও হয়। আবার যার জিনে নেই সে হাজার অপোজিট সেক্স বিবর্জিত পরিবেশে গেলেও সমকামি হবে না।
ফুয়াদ ভাই,
কোনরকম ষড়যন্ত্র (সূক্ষ্ম বা স্থুল) তেই শরিক হবার মতন ইচ্ছা বা সময় কোনটাই আমার নাই।
ওসমানী সাহেব কত ভাল মোসলমান ছিলেন এটা প্রমানিত সত্য তা আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন জানি না, যদিও এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই। হতেও পারে তিনি ভাল মোসলমান ছিলেন। যদিও ভাল মোসলমানের কি সংজ্ঞা আমি নিশ্চিত নই। ভাল মোসলমান কিভাবে ৭৫ এর প্রসূতি নারী দুধের শিশুদের সাক্ষাত খুনীদের পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করেন সে প্রশ্ন আমার থেকেই যাবে।
আমি আসলেই অনেকটা আন্দাজে বলেছি, তবে ব্যক্তিগত কিছু সূত্রে শুনেছিলাম। উনি বিয়ে করেননি দেখেই সমকামি হবেন অমন যুক্তি কেউ দেয়নি। আমাদের দেশে এ জাতীয় ব্যাপার কেউ স্বীকার করে না তাই আপনার মনে হতে পারে যে সবাই ভাল মোসলমান। পাশ্চাত্যের সাথে হয়ত তূলনায় আপাত চোখে মনে হবে বাহ আমাদের দেশে হোমো নেইই। যদিও মনে হয় চিন্তা করেন না আমাদের দেশে যারা হোমো তারা ভয়ে লজ্জাতেই কোনদিন বলতে পারেন না। সামাজিক লজ্জা ছাড়াও আইনগত ভাবেও আমাদের দেশে সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ ধরা হয়, সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর জেল। কার ঠেকা পড়েছে সমকামি স্বীকার করে যেচে পড়ে জেলের ভাত খাবার? তবে প্রচলিত ধারনা মতে আমাদের দেশে ৫-১০% সমকামি। অনেকের মতে কমপক্ষে এককোটি। এদের মধে আমি নিশ্চিত অনেককে দেখলেই সাদা চোখে পাক্কা মোসলমান বলেই মনে হবে।
তবে জানেন কি না জানি না, মাদ্রাসার শিক্ষক, আলেম জাতীয় লোকদের বিরুদ্ধে প্রায়ই শিশু নির্যাতনের অভিযোগ শোনা যায়। সন ষড়যন্ত্র কিনা তা অবশ্য বলতে পারব না। অভিযুক্তদের মোসলমানিত্বের ভালত্ব নিয়েও ঢালাওভাবে কোন মন্তব্য করতে পারব না। প্রতি বছর কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, সুইডেন এসব দেশগুলিতে অসংখ্য মুসলিম সমকামি ছেলে নিজে দেশে ছেড়ে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। আপনি হয়ত তাদের মোসলমানিত্ব বাতিল করে দিতে পারেন, তবে এটা বাস্তব সত্য।
ওসমানী সাহেব সমকামি হলে বা নাহলে কারোই কিছু আসবে যাবে না। কেউ নিজের ছেলেকে বলবে না, বাবা তোমাকে জেনারেল ওসমানী সাহেবের মত সমকামি হতে হবে। যারা সমকামি তারা এমনিতেই তা, কোন আদর্শ ধরে তারা সমকামি হয় না। এর মধ্যে সমকামিতা হালাল করার কোন ষড়যন্ত্র নেই।
@আদিল মাহমুদ,
সাবাস! দুর্দান্ত মন্তব্য :yes:
ওসমানীর যৌনপ্রবৃত্তির ব্যাপারে কোন ডিটেল ইনফরমেশন পাওয়া যাবে কোথাও?
@অভিজিৎ,
বেশীর ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই পাওয়া যাবে না , এর মানে এই না যে তিনি সমকামি ছিলেন , আর যে নিজেকে মসুলমান দাবী করে , সে সমকামী না ধরে নিতে পারি । (সমকামী হঈলে কেঊ মসুলমান থাকবে না, তা কিন্তু নয়, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেঈ মসুলমান সমকামীতার বিরোধী)
ধন্যবাদ ।
@ফুয়াদ,
আপনাকে প্রশ্নটি করিনি। কে নিজেকে ভাল মুসলমান দাবী করে, আর কে করেনা – সেটা নিয়ে আমার এই মূহূর্তে কোন আগ্রহই নেই। আমার স্পেসিফিক প্রশ্ন ছিলো আদিলকে – ওসমানীর যৌনপ্রবৃত্তির কোন উৎস তার জানা আছে কিনা। আমার বইয়ের জন্য আমি নিরপেক্ষ রিসার্চ করছি বিধায় সেটা দরকার। আপনার ‘ভাল মুসলমান/খারাপ মুসলমান’ কিংবা ‘ষড়যন্ত্র’ সম্বলিত মতামত আমি আগেই দেখেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেগুলো এ মুহূর্তে আমার কোন কাজে আসছে না। আপনার যদি আর কিছু বলার না থাকে তবে দয়া করে আদিলকে বলতে দিন।
@অভিজিৎ,
মানতেই হচ্ছে আমি অনেকটা আন্দাজে ঢিল মেরেছি। ব্যক্তিগত সূত্রে শোনা। কোন রেফারেন্স নেই। তবে আমাদের ফুয়াদ ভাই যে এভাবে খেপে যাবেন জানলে এই দূঃসাহস করতাম না। হতে পারে মোসলমান এবং সিলেট সব মিলিয়ে তিনি একটু বেশী ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন। তবে আমার কাছে তিনি সমকামি হন কি না হন তাতে এমন কিছু যায় আসে না, তার যৌন জীবনে আমি আগ্রহী নই, আগ্রহী তার রাজনৈতিক জীবনে। শুধু বিখ্যাত সমকামিদের নাম আসার সময় আমাদের দেশের একজন সম্ভাব্য হিসেবে ওনার কথা বলেছিলাম।
ফুয়াদ সাহেবের কথাও সত্য হতে পারে (ষড়যন্ত্র ছাড়া)। আসলেই হয়ত শুধু গুজব। আমি চেষ্টা করব ব্যক্তিগত সুত্রে আবার খবর নিতে, তেমন সলিড কিছু জানা যায় কিনা।
তবে আমাদের এসব ব্যাপার নিয়ে অতিরিক্ত টাচি হওয়াটা কেমন যেন ছেলেমানুষী উট পাখীর বালুর নীচে মাথা লুকানোর মতন লাগে। কবি নজরুলের ব্যক্তি চরিত্র কয়জনে পূর্ন মূল্যায়ন করতে সাহস করেন? ফুয়াদ সাহেব আশা করি ধরে নেবেন না আমি নজরুলকেও সমকামি বানাচ্ছি।
@আদিল মাহমুদ,
এটা বড় ধরনের মিথ্যাচার ছারা আর কিছুই নয় , কিন্তু আমার ধারনা হয় , এ ধরনের প্রচারের ফলে অদূর ভবিষতে তা সত্য হয়ে দেখা দিতে পারে । এটি খুব উন্নত ধরনের কৌশল । যদি কোন ভাবে প্রমান করা সম্ভব, সমকামীতায় সমকামীদের দোষ নেই , আর তার প্রচলন মসুলমান দেশে করা যায়, তাহলেই কেল্লা ফতে । মানে আল কোরানের এক আইন ভুল প্রমান করা , মানে আল-কোরাঙ্কেই ভুল প্রমান করা । এই কৌশল যদি, আপনি ধরতে না পারেন তাহলে আমার কিছু করার নাই ।
হালাল করার আপ্রান চেষ্টা ছড়া , আর কিছু নয় । এটা সেই পুরাতন যুক্তি । দুই এক জন সমকামী থাকতে পারে তার মানে তারা খুব বেশী নয় । এবং নির্দোষ নয় , দোষী বলতে পারি । ইসলাম আনুষারে, শাস্তির ব্যপারে ভিন্ন মত থাকতে পারে , শাস্তি নাও থাকতে পারে বা কম-বেশী থাকতে পারে । কিন্তু তারমানে এই নয় তারা নির্দোষ ।
সবার শেষে, আমি একটি কথা বলে রাখতে চাই, আমার যে কোন ধারনা, পর্যবেক্ষন বা কথা ভুল হতে পারে । যেহেতু আমি মানুষ । I said What I need to say .
আল্লাহ পাক সবচেয়ে ভাল জানেন । তিনি আমাকে ক্ষমা করুন ।
@ফুয়াদ,
আপনি মনে হয় কোরান হাদিসের রেফারেন্স ছাড়া আর কিছু লিখতে পারেন না, না? আপনি কিন্তু আবারো আমার অনুরোধ ভাংগলেন। আপনি যেহেতু আদিলকে উত্তর দিতে গিয়ে এগুলো লিখছেন, সেহেতু আমার কিছু বলার নেই। আমি বলেইছিলাম এখানে জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে সমকামিতাকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব। কেবল আপনিই ঘুরিয়ে পেছিয়ে বার বার শুধু কোরান আর হাদিস নিয়ে আসছেন। আপনি যে কাজ বার বার করেন সেজন্য বিবর্তনবাদীদের দোষ দিয়ে কোন লাভ আছে? ভবিষ্যতে কথাটি মনে রাখবেন। কেউ যদি বিবর্তন লিখতে গিয়ে ধর্ম টেনে আনলে যদি আপনার গায়ে লাগে, তখন এই পোস্টের রেফারেন্স হাজির করা হবে।
একটা কথা বলি। সমকামীদের সংখ্যা কত এ নিয়ে সাড়া পৃথিবীতেই গবেষণা হচ্ছে। সার্ভে হয়েছে। মোটামুটি আদিল যা বলেছে – জনপুঞ্জের শতকরা ৫- থেকে ১২ ভাগ লোক সমকামী মনোবৃত্তির হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশেই সার্ভে করে এর পক্ষে জোরালো প্রমান পাওয়া গেছে। কাজেই এটা পরীক্ষিত সত্য। আপনি যদি ডেটা দেখতে চান দিতে পারি। সার্ভের নাম সহ সেগুলো হাজির করব। কাজেই আদিল যা বলেছে তাতে ভুল নেই। দয়া করে ‘কোরানে কি আছে’, ‘এক লাইন কোরান ভুল প্রমাণ করলেই কেল্লা ফতে’ জাতীয় কথা বলে খন্ডন করার চেষ্টা করবেন না । আপনার কাছে সামাজিক কোন স্ট্যাট থাকলে দিতে পারেন। বাট নো কোরান এন্ড হাদিস। প্লিজ ফলো মাই লিপ্স – রিফিউট দ্য ক্লেইম উইদাউট এনি স্ক্রিপচারাল রেফারেন্স, প্লিজ। আপনি আবারো অপ্রাসঙ্গিক ভাবে এই থ্রেডে আল্লাহ এবং কোরান নিয়ে আসলে আপনার একাউন্টের ব্যাপারে একশন নেয়া হবে।
@অভিজিৎ,
আসলে আদিল ভাইকে লিখে ছিলাম , প্রসঙ্গক্রমে এসেছিল , আপনার লেখার উপর মন্তব্য ছিল না । তারপর ও আমি দুঃখিত । প্রসঙ্গক্রমে কোন বিষয় এসে গেলে বলা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি ।
যাইহোক, বাংলাদেশ শব্দ উল্লেক পূর্বক কোন গবেষণা আছে কি যা বাংলাদেশের সকল মানুষকে সম্বোধন করে এবং তা আদিল ভাইয়ের স্টেঈট্মেন্টকে সমর্থন করে ?
@অভিজিৎ, ফুয়াদ ভাই কোরান নিয়েই বেঁচে আছেন-এটাকে আমরা ধর্মীয় অস্তিত্বতাবাদ বলি। আরো অনেক মুসলমানইত এই রকম আছেন তাই না। তাদের ধারনা তারা ওই ভাবেই ভাল বেঁচে আছেন-এতে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই-কিন্ত তারা যদ্দিন এটা উপলদ্ধি না করবেন, তর্কে জিতে ত কোন লাভ হবে না। তাই আমার ধারনা উনি কোরান নিয়ে যা কিছু বলতে চান, উনাকে বলতে দেওয়া হোক। কারন আর পাঁচজন মুসলমানও গে নিয়ে কিন্ত ফুয়াদ ভাই এর মতনই ভাবে। আমরা কি চাইব না, তাদের মনোভাব, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ, তা মুক্তমনাতে প্রতিফলিত হৌক? তাদের যুক্তি গুলো খন্ডালেই ত লাভ বেশী। তাই সেই দিন এই ব্যাপারে আমি বন্যার সাথে একমত হই নি।
@বিপ্লব,
তোমার কথার সাথে একমত। ফুয়াদ সাহেবকে অন্য যে কোন পোস্টে কোরান নিয়ে ডিবেট করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কেবল এই পোস্টে আমি চাইছিলাম শুধু বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে বিতর্ক করা হোক। যখন আদিল বা অন্য কেউ সমকামিতার সামাজিক পরিসংখ্যান হাজির করেন, আর তার বিপরীতে কেউ ‘ষড়যন্ত্র’ কিংবা ‘এক লাইন কোরান ভুল করার চেষ্টা’ বলে জিকির করা শুরু করে, সেটা দেখা সত্যই বিরক্তিকর। মুক্তমনার উদ্দেশ্য শুধু পঙ্গপালের মত মত মন্তব্য প্রকাশ করার সুযোগ করে দেয়া নয়, সেই সাথে দায়িত্ববোধ এবং যৌক্তিক মনন জাগানোর চেষ্টা করাও বটে। কেউ যদি সামাজিক পরিসংখ্যানের বিপরীতে কেবল ‘আল্লাহ কি বলেছেন’ আর ‘ ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ ছাড়া অন্য পয়েন্ট না আনতে পারেন, তবে তার থেমে যাওয়াই উচিৎ। তা না করে একই কুমিরের ছানা যদি প্রতিবার দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন, তবে ধরে নিতে হবে মুক্তমনার প্ল্যাটফর্ম তার জন্য উপযুক্ত নয়।
খুব হাস্যকরা ব্যাপার হলো, এই ফুয়াদ সাহেবই এর আগে অভিযোগ করেছিলেন যে, বিবর্তন লিখতে গিয়ে নাকি আমরা সবাই ধর্ম নিয়ে আসি। সেটাই আমি পরীক্ষা করার চেষ্টা করছিলাম এবারে। সম্পূর্ণ বিজ্ঞান নির্ভর এই পোস্টে আমি ধর্ম সম্বন্ধে একটা কথাও বলিনি, এমনকি লেখার শেষে অনুরোধও করেছিলাম – আমি ধর্মে কি আছে এই বিষয়ে এই পোস্টে মোটেই আগ্রহী নই। পরে আমি এ নিয়ে একটি পর্ব লিখব। তখন আলোচনা করা যেতে পারে। অথচ ফুয়াদ সাহেব এসেই কোরান আর লুত নিয়ে হামলে পড়লেন। শুধু এক বার নয়, দু বার। এগুলো করলে নিজেকে যেমন খেলো করা হয়, তেমনি ব্লগের মানও নেমে যায়। এই ব্যাপারটাও ভাবা উচিৎ।
যা হোক ফুয়াদ সাহেব যখন এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেনই, তখন আর আমার তাকে ধন্যবাদ জানানো ছাড়া আর কিছু বলার নেই।
@অভিজিৎ,
ওসমানীর সমকামিতা বিষয়ে আরেকটি টেষ্টামেন্ট পেলাম। এখানে।
কমেন্ট ৫০.২
এই অমি পিয়ালের মুক্তিযুদ্ব নিয়ে ভাল পড়াশুনা আছে।
@ফুয়াদ,
ফুয়াদ ভাই,
আপনাকে মনে হয় কোন তথ্য উপাত্ত দিয়ে সন্তুষ্ট করা যাবে না যেখানে আগেই সব ষড়যন্ত্র বলে রায় দিয়ে ফেলেছেন। তবুও জানতে যখন চাইছেন তো বলছি। প্রথমত, হোমোদের সঠিক সংখ্যা বের করা সব দেশেই খুব কঠিন, সংস্কার, লাজ লজ্জা এমনকি পশ্চীমা দেশেও কাজ করে, আমাদের দেশে তো কথাই নেই। আমেরিকাতেই দেখা গেছে ৪৯% লোকে সমকামিতাকে খারাপ চোখে দেখে আর তো বাংলাদেশ। আপনার কি মনে হয় সমকামিরা আমি সমকামি স্বীকার করে ১০ বছর জেলে যাবার ঝুকি নেবে? উদাহরন দেখতে পারেন কতজন বাংলাদেশী সমকামি পশ্চীমা দেশগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছে। সাধ করে তারা দেশে ছেড়ে পালাচ্ছে? ইরানে দেখলাম শুধু ৭৯ সালের পর থেকে ৪০০০ লোককে হত্যা করা হয়েছে শুধুমাত্র সমকামি বলে। কার ঘাড়ে কয়টা মাথা এসব দেশে নিজেকে সমকামি ভুক্ত করে প্রান হারাবে? তাই বলে কি ইসলামী ইরানে সমকামি নেই দাবী করে উল্লসিত হয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করা যাবে? মুসলিম দেশগুলির মধ্যে কেবল ইন্দোনেশীয়ায় সমকামিতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন আইন নেই, লেবানন চেষ্টা করছে শাস্তি তুলে দিতে।
উট পাখীর মতন বালুর নীচে ঘাড় গুজলেই বাস্তবতা এড়ানো যায় না।
মালয়েশিয়াতেও প্রচুর সমকামি আছে, আমাদের মতই অবস্থা, সবাই ভান করতে চায় দেশ সমকামি মুক্ত। এ ধারনের ভন্ডামির মানে আছে? অথচ অই দেশের খোদ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম পর্যন্ত এ অভিযোগে অভিযুক্ত। আরো দেখুন ইন্দোনেশীয়া মালয়েশিয়ায় সমকামি বান্ধব হোটেলের তালিকা আছে। আপনার ধারনা সে সব দেশের ঈমান্দার মুসলমানরা এসবের হদিস জানে না?
http://www.wotif.com/hotels/malaysia-gay-hotels.html
তবে মালয়েশিয়াতেও আজকাল পরিবর্তনের হাওয়া আসছে। যে দেশে একসময় বলা হত সমকামিতা মানুষ খুনের চেয়েও বড় অপরাধ সে দেশেও মানুষ সমকামিদের প্রতি দৃষ্টিভংগী পাল্টাচ্ছে।
http://www.time.com/time/asia/magazine/2000/1002/malaysia_gay.html
এবার বাংলাদেশের কিছু তথ্য দেখেন।
“between 5 to 10 percent of the population is homosexual. That would mean at least 6 to 12 million Bangladeshis, more than the total population of many countries, prefer the same sex.”
http://www.sodomylaws.org/world/bangladesh/bgnews001.htm
আরেকটি রিপোর্ট দেখেছিলাম যেখানে ১ কোটি বলা আছে। এ মুহুর্তে সেটা পাচ্ছি না, তবুও তারপরেও আপনার জন্য মনে হয় নিদারুন দূ;সংবাদই আছে। আরো দেখুনঃ
“If truckdrivers and rickshaw pullers are typical of the general male population, then between 7% and 15% of men over 15 (2.5 million to 5.25 million) have sex with another male at least once a month (Foreman, 2003). But in a study conducted by ICDDR,B in 2003, 22% of rickshaw drivers in Central Bangladesh (i.e.
Dhaka) admitted to have sex with another male in the previous year”
http://www.nfi.net/downloads/knowledge_centre/NFI%20publications/articles%20and%20essays/2005_Summary%20MSM%20and%20HIV%20in%20Bangladesh.pdf
শুধু সককামি যে আছে তা না, মনে করার যথেষ্ট কারন আছে যে এ সংখ্যা আরো বাড়ছে।
“A recent article in the Dhaka Daily Star noted, “We have a much higher percentage of gays and lesbians in our society than we had five years ago
“Dr Safiul Azam, associate professor of Sociology at Dhaka University, went on to say homosexuality was increasing at the rate of 3.5 percent a year”
http://www.ect.org/news/2003-4-16_sydneygay.html
এখানে একটা ইন্টারেষ্টিং তথ্য আছে যা হয়ত অভিজিত বা অন্য কেউ যারা এ বিষয়ে গবেষনা করতে চান তাদের লাগতে পারে। এই অধ্যাপক সাহেবের মতে সমকামিতা বাড়ার কারন আর্সেনিক যুক্ত পানি। এর শেষে দেখতে পারেন সমকামিদের আমাদের সমাজ থেকে কি ট্রীটমেন্ট দেওয়া হতে পারে তার একটা উদাহরন।
এবার একটু আপনার যুক্তিবোধ নিয়ে কথা বলি। কোন দেশে সমকামি আছে মানেই সে দেশের মানুষ কোরান ভুল বলে প্রমান করে দিয়েছে এই অদ্ভুতুড়ে যুক্তি কেমন করে ভাবলেন? আপনি কি মনে করেন সমকামিতা আইন ছাড়া বাংলাদেশ বা অন্য সব মোসলমান দেশের মানুষে কোরানের বাকি সব আইন কানুন কঠোরভাবে মেনে চলছে? তাই সমকামি আছে প্রমান করতে পারলেই, ব্যাস, কেল্লা ফতেহ? কোরানে তো চুরি দূর্নীতি এগুলিও কঠিনভাবে নিষিদ্ধ, তো এখন আমাদের দেশের/পাকিস্তানের বেশিরভাগ লোকে তো তাহলে বহু আগেই আপনার যুক্তিতে কোরান ভুল প্রমান করে দিয়েছে, কি বলেন? এসব দেশের বেশীরভাগ লোকে যে দূর্নীতিপরায়ন তাতো স্বীকার করবেন, নাকি?
আর দূয়েকজন থাকলে কোরান ভুল হবে না, কিন্তু ৫% থাকলে ভুল হবে এই গাইড লাইন কোথা থেকে পেলেন? জানতে চাচ্ছি যে নিখুত বায়ন্ডারিটা কত? ১ %, নাকি, ২%?
ফুয়াদ ভাই, একটু বাস্তবের জগতে আসুন এই আমার অনুরোধ। ধর্মকর্ম পালন করা মানে নির্জলা সত্যকে অস্বীকার করা নয়। আপনি সমকামিদের শাস্তি দাবী করেন তাতে আমার আপত্তি নেই, সে আপনার ব্যক্তিগত মত। তার মানে এই না যে আপনি বাংলাদেশে বা মোসলমান দেশগুলিতে সমকামি নেই বা মাত্র দুয়েকজন আছে এই জাতীয় উদ্ভট অবাস্তব দাবী করবেন।
@আদিল মাহমুদ,
বরাবরের মত সুন্দর মন্তব্য। আফসান চৌধুরীর এই পরসংখ্যানের সাথে আমি পরিচিত। হিমেল ম্যাগাজিনে তার আরেকটি প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন –
Being gay in Bangladesh isn’t easy because society responds differently to sexuality in public and in private … People involved with gay issues say that between 5 to 10 percent of the population is homosexual. That would mean at least 6 to 12 million Bangladeshis, more than the total population of many countries, prefer the same sex. Even if that estimate is considered to be on the higher side and is reduced by half, the number left would still be significant … One of the reasons that homosexuality is treated so gingerly is that the country’s Criminal Code decrees sodomy (homosexuality or advocacy of the same) a crime which is punishable with a jail sentence … Demonstration of homosexual tendencies for short periods is quite common in Bangladeshi society. Those practising it are not ostracised, although if caught, are ridiculed … Male homosexuality is tolerated despite religious sanction. Yet divorce citing gay behaviour by any partner is not known.
তার অন্য প্রবন্ধটি মুক্তমনাতেও প্রকাশিত হয়েছিলো। এটা পড়া যাবে এখান থেকে।
এই ভদ্রলোক ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার এক গে ভদ্রলোক এ নিয়ে ছোট একটা সার্ভে করেছিলেন, সেটা যদিও মূলতঃ সমকামী যৌনকর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো।
তবে বাংলাদেশে সমকামিতার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া আসলেই দুস্কর। কারণ বাংলাদেশী আইনে এটাকে ‘অপরাধ’ হিসেবে গন্য করা হয়, এই অপরাধের শাস্তি ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড। কাজেই অধিকাংশ সমকামীদের আসলে লুকিয়ে থাকতে হয়, কিংবা অন্য সবার মত বিবাহিত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হতে হয়। যারা এটা পারেন না, তারা অনেকে অবিবাহিতই থেকে যান। আমি বুঝতে পারি কেন ওসমানীর ব্যাপারটা আপনার লেখায় উঠে এসেছে। আমাদের সাইটে পিঙ্কু নামে এক ভদ্রলোকের একটা ইন্টারেস্টিং লেখা আছে, তার নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে –
http://www.mukto-mona.com/Articles/pinku/gay_bd.htm
সেখানে তিন তার প্রবন্ধ শেষ করেছিলেন এই বলে –
I do know many gay men who are married with children. For the most part they live a very secretive life, hiding their innermost feelings from those who are supposed to be the closest to them; their wives, their best friends, their parents, their children. Surrounded by their families and their straight friends they are completely isolated. Nobody knows them, though they are seen by everybody. At least, that is what everyone wants to believe.
এ ছাড়া ডেইলি স্টারে প্রকাশিত ‘Pushing Boundaries’ নামে ফীচার করা প্রবন্ধটিও সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
তবে সমকামিতা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আর্সেনিক এবং বলিউড ছবিকে দায়ী করে অধ্যাপক আজমের যে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছিলো, সেই গবেষণার সাথে আমি একদমই একমত নই। তপন রবি নামে এক সমকামী ভদ্রলোক এককসময় মুক্তমনায় কিছু লেখা পোস্ট করেছিলেন। তিনি এ ব্যাপারে ২০০৬ সালে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আমাদের একটা প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়। এটা দেখা যাবে এখানে।
@আদিল মাহমুদ,
People involved with gay issues say that between 5 to 10 percent of the population is homosexual. That would mean at least 6 to 12 million Bangladeshis, more than the total population of many countries, prefer the same sex.
লিংক গুলি আমার শর্ত গুলিকে ফিলাপ করে না , এক জন মানুষ কি বলছে না বলছে সেটা তো সবার বক্তব্য না । এগুলো কোন সেটিক্টিটিটিস না । একটা জিনিসকে জায়েজ করার জন্য একটি প্রক্রিয়া । প্রথমে বলবে , আছে ধারণা কইরা ১০০ দেড় তারপর বাড়তেছে দেখাবে । আমার কথার প্রমান দেখেন, আপনাদের বিশেষ কৌশল আর টিভি সিরিয়ালে আসায় ।
A recent article in the Dhaka Daily Star noted, “We have a much higher percentage of gays and lesbians in our society than we had five years ago.”
Dr Safiul Azam, associate professor of Sociology at Dhaka University, went on to say homosexuality was increasing at the rate of 3.5 percent a year
যাইহোক, আসল বিষয়টীতে আসি , কয়জন আছে না আছে, তাতে কোরান ভুল প্রমানিত হয় না । কিন্তু আপনি যদি বলেন যে কোন “দোষ” দোষ না আর কোরান যদি বলে দোষ তাইলে ? চুরির উদাহারন যে টনলেন , এখন যদি মনে করা হয় চুরি করা খারাপ কাজ না তাহলে ? ঐ অবস্তায় ঐ কন্ডিশনে আল কোরান যদি মনে করে খারাপ কাজ । তাহলেই, কোরান কে ভুল প্রমান করতেছেন।
দেশের সব মানুষ গে হঈলেও আল কোরান ভুল প্রমান হবে না । কিন্তু কোরান যে বিষয় দোষ বলছে তা যদি ভাল বলে প্রচার করতে পারেন অথবা তা যদি খারাপ না বলে প্রচার করতে পারেন, তাহলেই তো আপনি মানুষের মধ্যে প্রচার করতেছেন কোরান ভুল । মাথা, দয়া করে খাটান ।
আল কোরান যদি আল্লাহ পাকের বানী হয় , আর সে যাকে খারাপ মনে করে প্রকৃত পক্ষে সে যদি খারাপ না হয় , তাহলে , আল কোরান অবশ্যঈ আল্লাহর বানী নয় । আল কোরান যাকে ভাল মনে করে, আর সেটা যদি ভাল কাজ না হয়, তাহলে আল-কোরান অবশ্যি আল্লাহ পাকের বানী নয় ।
গোইসম-টিইসম জেনেটিক বলে নির্দোষ প্রমান করা হবে , তারপর সংখ্যা বাড়িয়ে বিষয়কে শক্ত করা হবে । তারপর জোর দিয়ে বলা হবে গেইসম দোষের কিছু নয় । এভাবে, যারা এ গুলো বিশ্বাস করবে , তারাও ধিরে ধিরে নাস্তিকতার দিকে চলে যাবে । যারা তাদের প্রচারনায় গে হবে , তারাও নাস্তিকতার দিকে চলে যাবে ।
@ অভিজিত,
আপনার এক নম্বর কমেন্টের দিকে আমি ফিরেও তাকাই নাই । কারন আমি আপনার আরটিক্যলের বক্তব্য পড়েছি , কমেন্টে কি লেখছেন তা চেয়েও দেখি নাই । তারপর ও আমি ক্ষমা চেয়েছি ।
তারপর, আপনার মুখে এসব কথা মানায় না । আপনি বিরাট বড় আরটিক্যল লেখলেন আর কমেন্টে ছোট কইরা লিখলেন শুধু বিজ্ঞান বিষয়ে আলোচনা হবে । মানে বড় বড় কম্পানি যেমন তাদের অফার বড় কইরা প্রকাশ করে , আর ছোট একটি লেখাতে বলে শর্ত প্রযোয্য এই রকম । আপনার আরটিক্যল পড়ে , আমি আপনার ১ নম্বর মম্বর কমেন্ট দেখি ই নাই । আপনার উচিত ছিল উপরে দেওয়া । এখন, পুরা তাজ্জব হওয়া ছাড়া , আমার আর কিছুই করার নাই । আদিলে ভাইকে এখন যে কমেন্ট করলাম তা প্রসঙ্গক্রমে আসছে, আমায় মাফ করবেন । আমি বহুত বড় অন্যায় করে ফেলেছি । 🙂 🙂 🙂 দুঃখিত 😥 😥 😥 😥 😥 😥 😥
@ফুয়াদ,
আমার মনে হয় আপনি এবার কি বলতে চাচ্ছেন তার আমি তেমন কিছুই বুঝিনি। অভিজিতের বিরুদ্ধেও কি জানি অভিযোগ করছেন মনে হল, দোয়া করি উনি যেন তা বুঝতে পারেন।
আপনার যুক্তিতে ষড়যন্ত্রের কারন ছিল হল দেশে সমকামি আছে প্রমান করা গেলে কোরান ভুল প্রমান করা যাবে, কারন কোরানে সমকামিতা নিষেধ আছে। মোসলমানরা সমকামিতায় লিপ্ত তার মানেই কোরান ভুল। আমি শুধু বলেছিলাম আপআর একই যুক্তিতে কোরানের বলা অনেক নিষিদ্ধ কাজকর্মই মানুষে দিনের আলোয় বুক ফুলিয়ে করে যাচ্ছে। সেসবে কোরান ভুলের কোন ষড়যন্ত্র আপনি দেখতে পান না। আমার মাথা আমি ঠিকই খাটিয়েছি। মাথা আছে বলেই কোন বই এ কি বলা আছে বা কোন আলেমে কি বলেছে তা ধ্রুব সত্য বলে ধরে বসে থাকিনি। সমকামি বাদেও কোরানের আরো কিছু নির্দেশনা আছে যে এই যুগে পুরোপুরি খাটে না। চোখে আংগুল দিয়ে দেখাতে পারি। তার মানেই এই না যে এই জন্যই কোরান বাতিল বা ভুল। ঘাড়ের উপর খাজা কাঠাল না থাকলে যে কারোই বোঝার কথা কোরানের অনেক নির্দেশনা মূল্যবোধ সেকালের আরব সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে। এমনক খোদ কোরানেই এ সম্পর্কিত আয়াত আছে। যাহোক, সেগুলি আলাপের যায়গা এটা নয়। এমনিই আমার ধারনা এই আলোচনা দ্রুতই বন্ধ করতে হবে।
তবে মনে হল এইবার আপনি আপনার নিজের পূর্বের কথার বিরোধীতা করলেন। এবার বললেন যে দেশের সব মানুষ গে হলেও কোরানের কিছু যাবে আসবে না। আমি আপনাকে ঠিক এই কথাটিই বুঝাতে চেয়েছিলাম। দেশের কতভাগ মানুষ সমকামি বা পরস্ত্রী/পরপুরুষের আসক্ত তার সাথে কোরান ভুল কি নির্ভুল তার কোন সম্পর্ক নেই। যৌন তাড়না হল ক্ষিদে, তৃষনার মতই জৈবিক তাড়না। ধর্মগ্রন্থে কি বলা আছে তা দিয়ে কি একে নিয়ন্ত্রন করা যায়? আপনার কাছে অত্যন্ত অস্বাভাবিক ঠেকলেও সমকামিতা অনেকটাই ন্যাচারাল ইংস্টীংট। শখ করে সমকামি হবার থেকে জৈব তাড়না বশতঃ সমকামি হবার সম্ভাবনাই বেশী।
আপনার ভাবনার মধ্যে এটা কিছুতেই আসছে না যে এখানে কেউ সমকামিতার উপকারিতা বা একে প্রমোট করার চেষ্টা চালাচ্ছে না। যেটা বলা হচ্চে সেটা হচ্ছে এই যে সমকামিতা অনেকটাই প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার যা জীব জগতের অনেকের মাঝেই দেখা যায়। মানুষও তার ব্যাতিক্রম নয়। সমকামিতার কি উপকারিতা বা অপকারিতা এখানে আলোচনা হচ্ছে না। অভিজিত বা কেউ মনে হয় না জোর গলায় দাবী করবে যে সমকামিতার কোন খারাপ দিক নেই।
আগেই বলেছিলাম আপনাকে কোনরকম রেফারেন্স দিয়ে লাভ নেই। সবই ষড়যন্ত্র বলে আগেই এডভান্সড রায় দিয়ে দিয়েছেন। আমারই বোকামি হয়েছে আপনার আহবানে সাড়া দিয়ে সময় নষ্ট করা। না দিলে তখন আবার ধরে নিতেন কেমন জব্দ, পারো নি তো কোন রেফারেন্স দিতে। আমি রেফারেন্সে দিয়েছি, পারলে আপনি পালটা রেফারেন্স দিয়ে ভুল প্রমান করেন। আর দুনিয়ার কোন ষ্ট্যাটিস্টিক্সই নির্ভুল হয় না। আমাদের দেশে এমনকি সরকারী ভাবে যে আদম শুমারি হয় তাও অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ন। ভোটার তালিকা নিয়ে কি তেলেসমাতি হয় তো সবাই জানি। সেখানে সমকামিদের নিখুত ষ্ট্যাট। কোন দেশ সরকারী ভাবে নিখুত সমকামির সংখ্যা বের করে বলে জানা নেই। অবশ্য করলেই বা কি? আপনার বক্তব্য তো রেডি আছে। এহেন যুক্তির সাথে পারে কার সাধ্য?
সত্যি বলতে কি ধর্ম বেইজ়ড ফিলোসপির সাথে যেকোন তর্ক বিতর্ক দ্রুত এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বের দিকে মোড় নেয়। যেখানেই যুক্তি প্রমান চলে না সোজাসুজি ষড়যন্ত্র। মোসলমানদের বিরুদ্ধে উগ্রবাদী অভিযোগ কেন, ষড়যন্ত্র। বিবর্তন তত্ত্বের ভিত্তি কি, ষড়যন্ত্র। হাদীসে নবী রসুলদের নামে আজে বাজে কথা কিভাবে আসে, ষড়যন্ত্র।
আপনিও যে এই পথ ধরবেন সেটা বুঝিনি। আগে দেখতাম আপনার দৃষ্টিভংগী যুক্তিবোধ ভিন্ন হলেও অন্তত শক্ত যুক্তির বিরুদ্ধে এ জাতীয় বায়বীয় ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খাড়া করেন না। এটা অত্যন্ত বিরক্তিকর লাগে। এসব নিয়ে কেউ আলোচনা করতে চাইলে সেটাও ষড়যন্ত্র, সমালোচনাকারীরা বিশেষ মহলের এজেন্ট। পাগলামীর সীমা থাকা উচিত।
ষড়যন্ত্র হলেও সেটা প্রমান করার দায় আপনার। আপনি কোনরকম কাল্পনিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছাড়া প্রমান করে দিন যে আপনার দাবীমত দেশে দূয়েকজনের বেশী সমকামি নেই, তাহলে আমি নাকে খত দিয়ে মুক্তমনায় লেখা ছেড়ে দেব। আগেই বলেছি যে সমকামিদের সম্পর্কে আপনার কি দৃষ্টিভংগী কি তাতে আমার আপত্তি নেই, শাস্তি দিতে চান কি মাটিতে পুতে পাথর মারতে চান মারুন। তবে দেশে অনেক সমকামি আছে এধরনের তথ্য ভুল প্রমান করতে হলে তা যুক্তি প্রমানের ভিত্তিতেই করতে হবে।
@আদিল মাহমুদ,
আসলে আমার বিষয়টি ছিল দোষী-নির্দোষী বিষয়ে । জৈবিক জেনেটিক হলে, নির্দোষ প্রসঙ্গ এসে যায় । আর কিছু নয় । উপরে বিপ্লব দা কে লিখা অভিজিত দা এর লেখা টি পড়লে আমার প্রসঙ্গ পাবেন । ঐ প্রসঙ্গ পড়ে নেন । তাহলে, আশাকরি অভিজিত দা কে করা প্রশ্ন বুঝতে পারবেন । এই পোষ্টে আর কমেন্ট না দিলেই ভাল, আলোচনা ব্যক্তিগত মোড় নিতেছে । সবাইকে ধন্যবাদ । আমি অন্য পোষ্টে আছি । এখানে বিরত হলাম ।
সেই ৮৫ সালে যখন এইডসের কথা প্রথম শুনি তখন কিন্তু শুনেছিলাম যে সমকামি হল এইডসের বড় কারন।
এমন কি কোন ষ্টাডি আছে যা এধরনের তত্ত্বকে সমর্থন বা বাতিল করে? বা উল্লেখযোগ্য সম্পর্ক নাই বলে প্রমান হয়েছে?
আল মুর্শেদ,
সমকামিতার সবচেয়ে বড় সম্ভাব্য বিপদ মনে হয় সমকামিদের সংখ্যা যদি ৫০% ও হয় তাহলেও পৃথিবীর জনসংখ্যা মারাত্মক হুকমির মুখে পড়বে। তবে আজকাল বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে স্বামী স্ত্রীর সরাসরি মিলন ছাড়াই সন্তান বলতে গেলে উতপাদন জলভাত। তাই এই আশংকাও মনে হয় এখন পুরোপুরি অমূলক।
তবে আমার মনে হয় নাস্তিকরা প্রকৃতি বলুন আর আস্তিকরা গড বলুন; এনারা জীব জগতে এ ধরনের বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা (বলার খাতিরে বলছি, আসলে অস্বাভাবিক কিছু না) দেন যেগুলি আবার মোটামুটি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রাখেন। এগউলইর ক্ষতিকর দিক কিছু থাকবেই, তবে এনারাই হয়ত এই সংখ্যা একটা নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে যেতে দেন না।
সমকামিতা সহজভাবে মেনে নেওয়া আর উতসাহ দেবার মাঝে আকাশ পাতাল পার্থক্য আছে এইটুকু মনে রাখবেন। হতে পারে সমকামিতার খারাপ দিক কিছু আছে, এই মুহুর্তে নিশ্চিত না। তবে এটা নিশ্চিত যে সমকামিতা জীব জগতে একটা স্বাভাবিক ঘটনা। তাই কাউকে যেমন সমকামি হতে উতসাহ দেওয়া ঠিক না তেমনি ঘৃণা করাও অত্যন্ত অন্যায়। ষ্টাডি ডাক্তার মনোবিজ্ঞানীদের কথা বাদ দেন, আমি নিজে যেকয়জন সমর সংস্পর্ষে এসেছি তারা সবাই বলেছেন যে তারা বিপরীত লিংগের প্রতি কোন আকর্ষনই বোধ করেন না, বোধ করেন নিজ লিংগের প্রতি। এদেরকে কি বলপূর্বক বিষকামী বানানো যাবে? এদের কেউ সম হতে উতসাহিত করেনি। দুজন ছিল বাংলাদেশের খুব রক্ষনশীল পরিবেশে বড় হওয়া, কৈশোর বয়স থেকেই এরা অন্য মেয়েদের প্রতি কোন আকর্ষন বোধ না করে সমবয়সী এমনকি বেশী বয়সের ছেলেদের প্রতি আকর্ষন বোধ করত।
এদেরকে জোর করে বিষকামী বানাবার ফল হতে পারে আরো খারাপ। আমি মন্ট্রিয়লে এক বাংগালী ভদ্রলোককে চিনি যাকে পরিবার থেকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল কারন কেউ জানত না যে উনি সমকামি। খুব সুন্দরী স্ত্রী, কিন্তু যা হবার তাই হল। বিয়ে এক বছরও টিকল না। কাকে দোষ দেবেন? এধরনের জোরাজুরিতে কি কারো কোন লাভ হল? পাশ্চাত্য দেশে হলে মনে হয় না এমন ঘটত। ভদ্রলোক নিজেই ঘোষনা করতেন যে তিনি সম, তাই আরেক মেয়ের জীবন নষ্ট করার কোন মানে হয় না। যা তিনি বাংগালী ছেলে বলে সংস্কার লোক লজ্জার ভয়ে মুখ ফুটে বলতে পারেননি।
কোনদিন যদি কোনভাবেই সমকামিরাই মেজরিটী হয় তাহলে আমরাই হয়ে যাব তাদের চোখে অস্বাভাবিক, বিকৃত। তাই না? শুনতে অবাস্তব মনে হলেও কে বলতে পারে?
অভিজিতের কড়া ধাতানির পরেও বলছি; কোরানে যেমন বালক সেবাদাসের সাথে সংগমের কথা বলা নেই; তেমনি কিন্তু সুন্দরী অনাঘ্রাতা রমনী্র কথাও আছে, তাদের সাথে সংগম না কি করতে হবে বা তাদের কি পারপাস তাও কিন্তু বলা নেই। সেবাদাস হিসেবে চীরযৌবন বালক কেন উল্লেখ করা আছে সে প্রশ্ন উঠবেই। শুধু দাস থাকলে প্রশ্ন হয়ত উঠত না। আমাকে আশা করি কোরান অবমাননাকারী বা বিদ্বেষী বলবেন না, আমি স্রেফ যুক্তির কথা বলছি। তবে মূল লেখককে সম্মান করার জন্য এ প্রসংগ ভবিষ্যতের জন্য তোলা রাখাই ভাল, উপযুক্ত থ্রেডে আলোচনা করা যাবে।
Avijit,সমকামিদের প্রতি আমার ব্যক্তিগত কোনো বিদ্বেষ নেই যদিও একটি পুরুষ আরেকটি পুরুষকে বা একটি নারী আরেকটি নারীকে জড়িয়ে ধরে কীভাবে কামাবেগে আপ্লুত হয় তা আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।জ্বী,কর্মক্ষেত্রে সমকামি মানুষের সাথে কাজ করেছি তারা অন্যদের মতোই ভদ্র মানুষ হতে পারেন।আর লিওনার্দো ডা ভিঞ্চি এবং প্রখ্যাত নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ড যে সমকামি ছিলেন এটা তো প্রতিষ্ঠিত সত্য।
@আল মুর্শেদ,
ভাল লাগলো আপনার শেষ মন্তব্যটি পড়ে। আসলে সত্যি বলতে কি আমিও বছর কয়েক আগে আপনার মতই চিন্তা করতাম। আমার কাছেও তাদের এই যৌনপ্রবৃত্তি ‘অস্বাভাবিক’ মনে হত। বুঝতে পারতাম না কিভাবে এরা সমপ্রেমে আসক্ত হয়। পরে আমার আগ্রহ থেকেই ইতিহাস পাঠ করেছি। আপনি শুনে অবাক হবেন, শুধু লিওনার্দো ডা ভিঞ্চি এবং প্রখ্যাত নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ড যে সমকামি ছিলেন তা নয়, আপনি জেনে অবাক হবেন, আব্রাহাম লিঙ্কন, জোয়ান ক্রাফোর্ড থেকে শুরু করে মেরিলিন মনেরো, সুসান বি এন্থোনি, হ্যান্স ক্রিশ্চান এন্ডার্সন, জিন আর্থার, মাইকেল এঞ্জেলো সহ অনেকেই হয় নিভৃত সমকামী ছিলেন নয়ত ছিলেন বাই সেক্সুয়াল।
কিভাবে সমকামীদের উপর একটা সময় অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ছিলো ‘অরুচি বা বমি চিকিৎসা’(Aversion therapy)নামক চিকিৎসায় সমকামী পুরুষকে চেয়ারে বসিয়ে নানা ধরণের যৌনকামনা উদ্রেককারী সমকাম-নির্ভর ছবি দেখানো হত, আবার সেই সাথে তার পুরুষাঙ্গে বৈদ্যুতিক শক প্রয়োগ করে বমি করানোর চেষ্টা করা হত। জার্মানীতে আবার একটি চিকিৎসায় কবর থেকে মরা লাশ তুলে নিয়ে পুরুষাংগ ছেদন করে সমকামী রোগীর দেহের অভ্যন্তরে স্থাপন করা হত টেস্টোস্টেরন লেভেল বাড়ানোর জন্য,এবং এটি করা হত রোগীকে না জানিয়েই । একবার ক্যাপ্টেন বিলি ক্লেগ হিল নামের ২৯ বছরের এক রোগীকে ১৯৬২ সালে এই বমি চিকিৎসার নামে এমন অত্যাচার করা হয় যে রোগী রীতিমত কোমাতে চলে যান এবং হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার লক্ষ্য এটাকে তখন ‘স্বাভাবিক কারণে মৃত্যু’ হিসেবে উপস্থাপন করে। প্রায় ত্রিশ বছর পরে পুনঃ তদন্তে বের হয়ে আসে যে সে সময় বমি চিকিৎসায় ব্যবহৃত এপোমরফিনের প্রভাবে বিলি সে সময় অচেতন হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন।
পিটার প্রাইস নামের এক ব্যক্তিকে সমকামিতা থেকে মুক্ত করার জন্য একটি জানালাবিহীন ছোট্ট খুপড়িতে তিনদিন ধরে আটকে রাখা হয়। তাকে বাইরে থেকে গালিগালাজ সমৃদ্ধ টেপ শোনানো হয়, আর ঘন্টায় ঘন্টায় ইঞ্জেকশন দিয়ে বমি করানো হয়। সেই বমি, প্রশ্রাব আর নিজের বিষ্ঠার মধ্যেই থাকে থাকতে বাধ্য করা হয়। তার এই অত্যাচারের কাহিনী হয়তো আজ নাৎসী বাহিনীর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের সাথে তুলনীয় মনে হবে, কিন্তু পার্থক্য একটাই – ব্যাপারটি ঘটেছিলো ব্রিটেনের সম্ভ্রান্ত এনএইচএস হাসপাতালে । এ ধরণের বহু নৈরাজ্যজনক ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে সমকামিতার কৃষ্ণ ইতিহাস। সমাজের এই ধরণের ট্যাবু ভাংগতে ভাংগতেই প্রতিনিয়ত এগুতে হয়েছে সমকামীদের। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন স্বীকার করে নেয় সে সমকামিতা কোন রোগ নয়, এটি যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এটি সমকামিতার আইনী অধিকার এবং সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের লড়াইয়ে এক বিরাট মাইলফলক, এক ঐতিহাসিক বিজয়। আজ ২০০৯ সালে দাঁড়িয়ে এ কথা বলা যায় সমকামিতা যে যৌনতার একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি এ ব্যাপারে প্রায় সকল চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরাই একমত পোষণ করেন।
যে Alan Turing তার আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ‘তুরিন টেস্টের’ জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন, তাকে সমকামীতার জন্য দোষী প্রমাণ করে সায়ানাইড খাইয়ে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়া হয়। চিন্তা করুণ এতদিন পরে তারা এ ব্যাপারে ক্ষমা চাইছে।। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র চল্লিশ। কিভাবে তার প্রতিভাকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করা হয়েছে ভাবুন! আর অস্কার ওয়াইল্ডকে তো জেলেই পুরে দেয়া হয়েছিলো। বুঝতে নিশ্চয়ই পারছেন কি দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাদের যেতে হয়েছে। কাজেই এদের প্রতি সহমর্মিতার হাত না বারালে আমাদের মনুষ্যত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে যে!
ভাল লাগল আপনার সাথে আলোচনা করে, আল মুর্সেদ।
@অভিজিৎ,
আমাদের জেনারেক ওসমানী সাহেবও সমকামি ছিলেন বলে জোর গুজব শুনেছি। শেক্সপীয়ার সাহেবও নাকি তাই ছিলেন, অনেকে সন্দেহ করে তার পার্টনারই (নামটা মনে পড়ছে না এখন) নাকি আসলে সব সাহিত্য কর্ম রচণা করেছিলেন, তিনি নন।
অভিজিতের তালিকায় জোডি ফস্টার, এলটন জন, জর্জ মাইকেল, এমন আরো অনেকেই আছেন। অনেকে আছেন যারা গোপন করেন।
যদিও এই তালিকার কোন মানে নেই, কিন্তু কথা প্রসংগে উঠল বলেই যোগ করলাম।
@আদিল মাহমুদ,
তিনি ভাল মসুলমান ছিলেন তা প্রমানিত সত্য । তিনি বিবাহ করন নি বলে , ঊনার বিরুদ্ধে সুযোগ নেওয়া হইতেছে । এটা সমকামিতা জায়েজ করার এক সূক্ষ ষড়যন্ত্র । আমার তো মনে হইতেছে , যে সব পীর আর ইমাম বিবাহ করেন নি , তাদের নামেও এই ষড়যন্ত্র করা হবে ।
আপনার ভাল করে জানা উচিত বিবাহ না করলেই কেউ সমকামি হয় না । এখানে কোন যুক্তি অবকাশ নাই । যুক্তি দিয়া তিলরে তাল, আর তালরে তিল বানা নো যায় ।
আশা করি, আপনি সূক্ষ বিষয় গুলি বুঝতে পারবেন , আর ষড়যন্ত্রের সহায়তাকারী হবেন না ।
Avijit,আমি লিখেছি পায়ুমৈথুন AIDS ভাইরাস ছড়ানোর পক্ষে অধিকতর সহায়ক।সমকাম করলে এইডস হয় বা সমকাম থেকে এইডস ভাইরাস জন্ম নেয় তা কিন্তু আমি বলি নি।ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অবশ্য-ই যৌন সংগীদের একজনের দেহে ভাইরাস থাকতে হবে তা না হলে তো ছড়ানোর প্রশ্ন উঠে না।আর কারো দেহে এইডস ভাইরাস প্রবেশ করলেই তার এইডস হয়েছে বলা যাবে না।ভাইরাস দেহে প্রবেশের পরও বছরখানেক বা তার ও বেশি সময় তা সুপ্ত থাকতে পারে।রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অথবা ভাইরাস এর সংখ্যা বেড়ে গেলে তার এইডস হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।আর পায়ুকামিতার কারণে এইডস ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি এ কারণে যে মানুষের পায়ুপথের ভেতরের আবরণী যে ধরণের কোষ-কলা দিয়ে তৈরি তা ভাইরাস অনুপ্রবেশের পক্ষে সহায়ক।অথচ যোনিপথের আবরনী এক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রতিরক্ষা দেয়।এবং এভাবে ভাইরাস ছড়াবে যদি কেউ কনডোম/ফেমিডোম ইত্যাদি ব্যবহার না করে অথবা তা যৌন মিলনের সময় স্থান চ্যূত হয় বা ছিঁড়ে যায় যা পায়ূকামিতার বেলায় যার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি।
@আল মুর্শেদ,
‘ভাইরাস ছড়ানোর জন্য অবশ্য-ই যৌন সংগীদের একজনের দেহে ভাইরাস থাকতে হবে তা না হলে তো ছড়ানোর প্রশ্ন উঠে না’। এই ব্যাপারটিই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই সমকামীদের অহেতুক দোষারোপ করে লাভ নেই। আমি তো উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছিই আফ্রিকার মত হতদরিদ্র মহাদেশে সমকামিতার কারণে রোগ ছড়ায়নি। কাজেই এ নিয়ে বিতর্ক করাটা অর্থহীন। আপনি ‘পায়ুপথের ভেতরের আবরণী’র কথা বলছেন সেটা নিয়ে আমি আপনার সাথে বিতর্ক করতে চাই না (আর সমকামীদের সবাই এটি যে করেন এমনো নয়)। আমি আমেরিকার ডাক্তারদের রেগুলার প্রেক্টিস থেকেই রেফারেন্স দিতে পারি যে, এগুলো আসলে সমকামীদের জন্য কোন সমস্যা নয়। আমার কথা হল – তারা যদি তাদের এই সম্পর্ক নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারে, তা হলে অযথা তাদের পায়ুতে কি হয় না হয়, তা নিয়ে আপনার অর্থহীন অনুমানের কি দরকার, যেখানে আধুনিক ডাক্তারেরা সেরকম ভাবছেন না (আপনি এ প্রসঙ্গে আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশনের অফিশিয়াল স্টেটমেন্ট দেখে নিতে পারেন) ? । আমি তো বলেছিই নারী পুরুষে স্বাভাবিক যৌনসঙ্গমের সময়েও ভ্যাজিনাল ইনফেকশন, সিফিলস, গনোরিয়া সহ হাজারো রোগে লোকে রোগাক্রান্ত হয়। আর পতিতাপল্লিতে গিয়ে যে এইডস সক্রমন নিয়ে বহু বাহক ফিরে আসে তা তো জানা কথাই। কাজেই দরকার আসলে সুরক্ষিত যৌন জীবন, কার যৌনপ্রবৃত্তি কি – সেটা বিচার্য নয়।
যেটা দরকার অযথা বিদ্বেষ না ছড়িয়ে তারা যেন স্বাস্থ্যকর এবং সুন্দর জীবন যাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করা। এটা সবার জন্যই আমি চাই, মানুষ মাত্রই।
Avijit,সমকামিদের আমি মানসিক রোগী বলি নি।তবে পায়ুকামিতার(Anal sex) এর কারণে উল্লেখিত রোগগুলো সমকামীদের বেশি হয় কি না তা একজন সার্জন-কে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে।এটা সাইকিয়াট্রিস্টদের বিষয় নয়।
@আল মুর্শেদ,
@আল মুর্শেদ,
আমি ডাক্তারদের সাথে কথা বলেই আমার প্রবন্ধ লিখেছি। এর জন্য আমি অজস্র রিসার্চ পেপার পড়েছি এবং আধুনিক চিকিৎসাবিদেরা এটা সম্বন্ধে কি ভাবেন সেটাও খতিয়ে দেখেছি। আপনার এইডসের ব্যাপারতার মত অনেক কিছুই ভুল ধারনার উপর প্রতিষ্ঠিত।
আরেকটা জিনিস – সমকামিতা মানেই কিন্তু পায়ু কাম নয়। নারী সমকামীরা কখনোই পায়ু কামে প্রবৃত্ত হয় না। আবার অনেক পুরুষ সমকামীরাও তাদের ব্যক্তিগত অভিরুচির কারণে এটা এড়িয়ে চলেন। এগুলো নিয়ে বলতে গেলে ডিটেল অনেক কিছুই বলতে হবে। আবার স্বাভাবিক মহিলারাও সাধারণ যৌনসংসর্গের কারণে ভ্যাজিনাল ইনফেকশন সহ বহু রোগে আক্রান্ত হন। তাতে কি হল? এটা আসলে এগুলো অর্থহীন পয়েন্ট।
আর সাইকোলজির ব্যাপার না বলে যে মত দিয়েছেন সেটা আপনার কথা মাথায় রেখে বলিনি। এটা একটা সাদারণ তথ্য অনেকেই জানেন না। একসময় সামকামিতাকে মনোরোগ হিসেবেও চিহ্নিত করা হত। লাইসেন্সধারী ডাক্তাররা সমকামিতাকে একটা সময় ‘রোগ’ হিসেবে চিহিত করে তা ‘সারানর’ চেষ্টা করেছিলেন এবং সমকামিতা-চিকিৎসার যে সমস্ত দাওয়াই তারা বাৎলে দিয়েছিলেন তা কেবল ‘পিচাশ কাহিনী’ আর ‘হরর মুভি’ গুলোতেই দেখা যায়।তারা চিকিৎসার নামে কখনো রোগীদের ইলেক্ট্রিক শক দিতেন, কখনো মস্তিষ্কে সার্জারি করে একটা অংশকে অকেজো করে দিতেন, কখনোবা দেহে ইচ্ছেমতন হরমোন প্রবেশ করাতেন এমনকি খোঁজা পর্যন্ত করে দিতেন । তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিটি ছিলো ‘অরুচি বা বমি চিকিৎসা’(Aversion therapy)। সে সমস্ত পিচাশ কাহিনী থেকে যে সরে এসে আধুনিক সাইকোলজিস্টরা যে এটাকে ‘স্বাভাবিক যোউনপ্রবৃতি’ হিসেবে মত দিচ্ছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি, তা আপনি যাই ভাবুন।
ফুয়াদ,সমকামিতা তথা পায়ুকামিতার কারণে মানুষ নানাবিধ রোগ যেমন,পাইলস(Piles),পায়ুপথ ছিঁড়ে যাওয়া(Anal fissure),ভগন্দর(Anal fistula),পায়ুপথ অকেজো হয়ে যাওয়া(Anal incontinence),পায়ুপথ দেহের বাইরে বেড়িয়ে আসা(Rectal prolapse) ইত্যাদি নানা বিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে অশেষ যন্ত্রণা এবং কষ্ট ভোগ করে থাকে। পায়ুমৈথুন AIDS ভাইরাস ছড়ানোর পক্ষে অধিকতর সহায়ক।এছাড়া অন্যান্য যৌন রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি তো রয়েছে-ই।কাজেই বুঝতেই পারছেন ইসলামের যৌনবিষয়ক বিধিবিধানগুলো কতো টুকু স্বাস্থ্য বিজ্ঞান সম্মত।
আমি অনুরোধ করেছিলাম এই থ্রেড সম্পুর্ণ বিজ্ঞান বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে। প্রথমে ফুয়াদ তারপর আল মুর্শেদ এসে এটাকে অযথা ধর্মের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আসলে ফুয়াদ যদি কোরাণে কি আছে আর লুতের কি হয়েছিলো বলে মন্তব্য না করতেন, আমিও এ নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত থাকতাম। আমি বেহেস্তে যে কিশোর বালকদের সেবা পাওয়ার কথা আল্লাহ বলেছেন সেটা বাস্তবতা। কি ধরণের ‘সেবা’ সেটা নিয়ে মুর্শেদ সাহেব বিতর্ক করতেই পারেন, কিন্তু আণুষঙ্গিক আয়াত গুলো বদলে যাচ্ছে না। আর সে সময়কার আরবের সংস্কৃতি এবং সমকামী কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্য গুলো পড়লেই বোঝা যাবে আমি সঠিক বলছি নাকি ভুল। তারপরেও আমি এ ধরনের বিতর্ক আসলে এরাতেই চাচ্ছিলাম। আমি আবারো অনুরোধ করছি আমার লেখাটাকে শুধু জৈববৈজ্ঞানিক দিকে সীমাবদ্ধ রাখতে। শুধু একটা মিথ এখানে খন্ডন করে ছেড়ে দেব –
একটি বহুল প্রচারিত প্রপাগান্ডা। এগুলোওই আসলে ‘হোমোফোবিয়া’কে উস্কে দেয়। এইডস ছড়ায় এইডস ভাইরাস থেকে। বাহক এবং তার যৌনসংগীর দেহে এইডস ভাইরাস না থাকলে বাহক সমকামি হোক আর বিষমকামী হোক, এইডস ছড়াবে না। সমকামিতার কারণে, কারো দেহে ‘এইডস’-এর জীবানু গজায় না। কাজেই সমকানিতাকে অহেতুক দোষারোপ করার কোন কারণ নেই। আর সুরক্ষিত যৌন জীবন না থাকলে সমকামী এবং বিষমকামী -যে কেউই এইডসে আক্রান্ত হতে পারে। সেজন্যই পতিতাপল্লিতে এইডসের সংক্রমন বেশী, যদিও সেখানে খুব কম বাহকই সমকামী।
আফ্রিকা মহাদেশটির কথা ভাবুন। হত দরিদ্র মহাদেশ – অথচ এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ওখানে সমকামিতার জন্য এইডস ছড়ায়নি। বতসোয়ানার প্রায় ১৫ ভাগ যুবক-যুবতী এখন এইডস আক্রান্ত। সাউথ আফ্রিকায় প্রায় ১৯ ভাগ। তাঞ্জানিয়ায় এমন গ্রাম-ও আছে যেখানে গ্রামের প্রায় সবাই এইডস-এ আক্রান্ত। সেই হতভাগ্য শিশুটির কথা ভাবুন, যে কিনা এইচ আই ভি জীবানু নিয়ে জন্মেছে, স্রেফ তার বাবা মায়ের এইডস সংক্রমনের কারণে।
আমি কি সেই শিশুগুলোর ভাগ্যহীনতার জন্য বাবা-মা’র বিষম কামকে দায়ী করব? সেই এইডস আক্রান্ত হতভাগ্য শিশুগুলোর বাবা মা তো সমকামী ছিলো না। তাহলে গ্রাম কে গ্রাম এইডসে উজার হয়ে যাচ্ছে কেন? আপনার যুক্তি মানতে গেলে আফ্রিকার এইডসের বিস্তারের পেছনে তাহলে বিষমকামকে দায়ী করা উচিৎ। কারন আফ্রিকায় বিষমকামীদের মধ্যেই এইডস সংক্রমন অনেক বেশি। আসলে এভাবে দেখা কি ঠিক হবে?
আমি আগেই বলেছি, এইডস সংক্রমনের কারন এইচ আই ভি ভাইরাস। আপনার বা যৌনসংগীর দেহে এই জীবানু না থাকলে এইডস আপনার মাধ্যমে ছড়াবে না, তা আপনি সমকামীই হোন, আর বিষমকামীই হোন।
আর সমকামীরা যে সমস্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন বলে আল মুর্শেদ ভাবছেন সেটা তার ব্যক্তিগত অভিমত। আধুনিক চিকিৎসকেরা এবং মনোবিজ্ঞানীরা তা মনে করেন না। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর American Psychiatric Association (বহু চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন) বিজ্ঞান্সম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association একইরকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। সকল আধুনিক চিকিৎসকই আজ এ বিষয়ে একমত। পরে ১৯৯৯ সালে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স, আমেরিকান কাউন্সিলিং এসোসিয়েশন, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব স্কুল এডমিনিস্ট্রেটরস, আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স, আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন, আমেরিকান স্কুল হেলথ এসোসিয়েশন, ইন্টারফেইথ এলায়েন্স ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশাল ওয়ার্কার এবং ন্যাশনাল এডুকেশন এসোসিয়েশন একটি যৌথ বিবৃতিতে সমাকামিতাকে একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উপর যে কোন ধরণের আক্রমণ, আগ্রাসন এবং বৈষম্যের নিন্দা করেন। পশ্চিমা বিশ্বে কোন আধুনিক চিকিৎসকই সমকামিতাকে এখন আর ‘রোগ’ বা বিকৃতি বলে আর চিহ্নিত করেন না।
সবাইকে ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,ধর্ম বিষয়ে এ থ্রেড-এ আলাপ করার কোনো ইচ্ছে আমারও ছিলো না।কিন্তু ফুয়াদ যেহেতু করে-ই ফেলেছেন এবং তার উত্তরে আপনি যা লিখেছেন তা খতিয়ে দেখার পরিপ্রেক্ষিতেই আমার এই মন্তব্য যাতে মুসলমান পাঠকগণ অহেতুক বিভ্রান্ত না হন। মুহম্মদ(সঃ) সমকামি ছিলেন না এবং কাউকে এ বিষয়ে উতসাহিত করেছেন বলেও শুনিনি।
Avijit,সমকামিতা,পায়ূকামিতা ইত্যাদি বিষয়ে লিখতে যেয়ে আমি আসলে পুরুষদের কথাই বলতে চেয়েছি।মহিলা সমকামিরা শুনেছি Cunnilingus করে থাকেন এবং কখনো তাদের একজন পুরুষ সেজে অপর সংগীর উপর Dildo ব্যবহার করে থাকেন।তবে তা শুধুই যোনি পথে ব্যবহার করেন এবং পায়ূপথে ব্যবহার করেন কি না তা সম্ভবত তাদের নিজস্ব রুচির ব্যাপার।
@অভিজিৎ,
পায়ুমৈথুন AIDS ভাইরাস ছড়ানোর পক্ষে অধিকতর সহায়ক।
পুরোটা প্রপাগান্ডা ঠিক না। তোমার যুক্তির ভিত্তি দুটি অনুমান
(১) আনপ্রোটেক্টেড এনাল এবং ভ্যাজাইনাল সেক্স সমান ভাবে ভাইরাস ছড়ায়
(২) প্রেটোটেক্টেড সেক্স করলে, ভাইরাস ছড়ায় না
(২) নিয়ে বলি। ১০০% সেফ সেক্স বলে কিছু হয় না।কন্ডোম থাকা সত্ত্বেও ১-২% কেসে, সেক্স সেফ নাও হতে পারে।
এনাল সেক্স এস টিডির জন্যে অনেক বেশী ক্ষতিকারক কারন সব এনাল সেক্সেই সামান্য রক্ত ক্ষরন হয় -ব্লাড ভেসেল গুলো ওখানে খুবই এক্সপোজড।
তাই ওই ১-২% কেসে ফেঁসে গেলে গে দের এইডস হবেই। বাকীদের চান্স কিছুটা কম। তবে হ্যাঁ গণিতের দিক থেকে দেখতে গেলে পার্থক্যটা হয়ত তেমন কিছু না।
তবে হু কিন্ত সমকামিদের এনাল সেক্স করতে বারন করে-ড্রাই সেক্স করতে বলে এই কারনে।
আরো কিছু রোগ হতে পারে। যেমন ফিসচুলা টাইপের।
এরকম ১৫টা রোগের তালিকা চার্চ বানিয়েছিল। আমি ডিবেটে গিয়ে দেখেছি-এবং তাতে বেশ কিছু ইংল্যান্ডের প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার ও ছিলেন, এর মধ্যে আড়াই খানার ক্ষেত্রে কিছুটা ভালিড যুক্তি আছ।
গেদের বিরুদ্ধে বিরাট প্রপাগান্ডা আছে। এটা সত্য। কিন্ত সেই প্রপাগাণ্ডার মধ্যে কিছুটা সত্যও আছে। কারন চার্চের ডাক্তার হলেও ত ডাক্তার।
ফুয়াদ,আমি ৪টি ইংরেজি কোরান(অক্সফোর্ড ওয়ার্ল্ড ক্লাসিক সহ) এবং ২ টি বাংলা কোরান(ভাই গিরিশ চন্দ্রের অনুবাদ সহ) শরীফে বেহেশতে কিশোর-বালক পানীয় পরিবেশনকারীদের সম্পর্কে অভিজিত রায়ের উল্লেখিত বাক্যগুলো(৫২;২৪,৫৬;১৭ এবং ৭৬;১৯) এবং সেসবের ব্যাখ্যা পড়ে ও পরীক্ষা করে দেখেছি।কোথাও বেহেশত বাসী পুরুষরা এদের সাথে সমকামে লিপ্ত হবে এধরণের সামান্যতম কোনো ইংগিত নেই।আর আপনি তো ভালো করে-ই জানেন সমকামিতা,পায়ুকামিতা,পশুকামিতা ইত্যাদি ইসলামে ভয়ানক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।মুসলমানদের জন্য দুনিয়া এবং বেহেশতে কোথাও এসব জায়েজ করা হয় নি।
বন্যা,
অসংখ্য ধণ্যবাদ পরিবেশ সাথে সুপ্ত জীনকে কিভাবে ট্রীগার করে এ ব্যাপারটি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।
আমি সেই এন্টি-বায়োটিকের উদাহরন আপনার বই থেকেই পড়েছিলাম, তবে ব্যাখ্যা মনে হয় ঠিকভাবে ধরতে পারিনি। এখন মনে হচ্ছে যে যে কোন কোন বৈশিষ্ট্য এমনকি বাবা মার মধ্যে দেখা নাও যেতে পারে, কিন্তু পরের জেনারেশনে সেটা প্রকট হয়ে দেখা যেতে পারে। উপযুক্ত ট্রিগারিং পরিবেশের অভাবে তা হয়ত বাবা মার মাঝে বিকশিত হয়নি, সুপ্ত অবস্থায় চলে গেছে ছেলেমেয়ের কোষে।
আরো ধণ্যবাদ Evolutionary developmental biology র ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করায়। এটাও আমাকে প্রায়ই বাহবাতো যে একটা প্রানীর অতগুলো বৈশিষ্ট্য কিভাবে তূলনামূলকভাবে মাত্র অল্প কিছু জীন নিয়ন্ত্রন করে। আ আমার ধারনা ছিল প্রতিটা বৈশিষ্ট্যের জন্য এক একটি জীনই দায়ী। তাই প্রতিটা বৈশিষ্ট্যের জন্যই ততগুলি জীন দরকার। আশা করি এ নিয়ে একটা পূর্নাংগ লেখা লিখবেন।
এখন কিছুটা বুঝতে পারছি জেনেটিক্স আর বিবর্তন কিভাবে একে অপরকে ব্যখ্যা করছে।
বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে দুই বাংলায় অভির মানের আর কেউ আছে কিনা সে বিষয়ে এখন আর কোন সন্দেহই নেই আমার। নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায়, কেউই নেই। :clover: :rose:
১০০% সহমত।শুধু কি তাই ? আমার তো মনে হয় এ সময়ে পৃথিবীর হাতে গোনা যে ক`জন লোক মানব সভ্যতার জন্য কাজ করে যাচ্ছে যেমন রিকার্ড ডকিন্স তাঁর আর এক ইস্পাত কঠিন উত্তরসূরী আমাদের অভিজিত।১৫০০/১৬০০ শতকে যেমন ইউরোপের ভাগ্যাকাশে কোপার্নিকাস,জিওর দানো ব্রনো ও গ্যালিলিও গ্যালিলির জন্ম হয়েছিল তেমনি বিংশ শতকের বাংলাদেশ সহ পুরো ভারতবর্ষের আরেক সূর্য সৈনিকের জন্ম যার চিন্তা,মেধা,কাজ এর ফল প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম , শত বছর থেকে শত বছর বাংলাদেশের সহ পৃথিবীর অনেক অনেক মানুষ ভোগ করবে।যদিও আজকের অসংখ কোটি লোক জানে না বা যারা জানে অনেকেই তাকে ঘৃনা করে।এতে কিছু ই আসে যায় না,কারন গূনী লোকদের কপালে এটাই জোটে।ভোগ করে অন্যরা ।
আসলে বন্যা ছাড়া যেমন অভিজিত বিকল তেমনি অভিজিত ছাড়া বন্যাও বিকল।কারন ঘর-সংসার,বন্ধু-বান্ধব ও অফিসের কাজ সব কিছুর পরে দুজনের নিকট পারস্পারিক সহযোগিতা না থাকলে এমন বড় বড় মহান কাজ আমরা তাদের কাছ থেকে আশা করতে পারতাম না।সব কিছুর পরে এটা একটা ধাঁধাঁ-ই এতো বই অভিজিত কখন পড়ে ?শু ধু কি পড়া,একজন মানুষের এতো চতুরমূখী গূন কিভাবে হয় ?????????? ভবিতস্ৎ এ বন্যার সাথে দেখা হলে এ প্রশ্নটি-ই ওকে করবো,দেখা যাক কখন দেখা হয় ???
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
মামুন ভাই, ভুলেও এই কাজটা করতে যেয়েন না। উপরে দেখেন সহানুভূতি জানাতে গিয়ে উলটো বন্যার কাছ থেকে পুরুষবাদী মানসিকতা সম্পন্ন বলে গাল খেয়েছি আমি। আপনি এই প্রশ্ন বন্যাকে করলে আপনার যে কি দশা হবে সেটাই ভাবছি আমি। :evilgrin:
@ফরিদ আহমেদ,
দশা হওয়ার সময় পুরুষ হওয়ার কারনে যদি পুরুষবাদী আমরা হই তাহলে সব পুরুষরা একজোট হয়ে নারীবাদীদের বিরু্দ্ধে লড়াই করবো।লড়াই লড়াই লড়াই চাই নারীর বিরুদ্ধে পুরুষের লড়াই চাই।সাম্য নয় অসাম্য চাই। কি বলেন ??
বিবর্তন জ়েনেটিক্সের অতি প্রাথমিক কিছু প্রশ্নের মধ্যে একটি বিষয় প্রায়ই আমাকে ভাবায়। ফুয়াদ সাহেবের প্রশ্ন শুনে আবারো মনে হল।
বুঝতে পারি যে পরিবেশের প্রভাবে জীব জগতের বিবর্তন বা অভিযোজন ঘটে। অর্থাত, তাদের জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে। এখন এ ব্যাপারটি জেনেটিক লেভেলে কিভাবে ঘটে তা মন হল ওই প্রানীকুলের জিনে পরিবর্তিত বৈশিষ্ট্য আগে থেকেই থাকে যা নাকি মিউটেশনের ফলে প্রকাশিত হয়? ভুল বুঝলে কেউ দয়া করে সংশোধন করে দেবেন।
এ লেখায় জানতে পারলাম যে জীনের বৈশিষ্ট্য এক্টীভেট হতে পরিবেশের প্রভাব লাগে। নাহলে সুপ্ত বৈশিষ্ট্য সুপ্তই থাকে।
এখন প্রশ্ন হল, জীনের সেই সুপ্ত বৈশিষ্ট্য কোন নিয়ম অনুসরন করে? সেই সুপ্ত বৈশিষ্ট্য কিভাবে প্রথম আবির্ভুত হয়? নাকি পরিবেশের প্রভাবে দৈহিক পরিবর্তনের সাথে সাথে জ়ীন বৈশিষ্ট্যেরও ধারাবাহিক ভাবে পরিবর্তন হয়? জীনে যদি আগে থেকেই পরিবর্তনের ছাপ না থাকে তাহলে কি পরিবেশের যতই প্রভাব থাক বিবর্তন হবে না? বিলুপ্তি?
আমার সাদা চোখে মনে হয় সমকামিতার উপর জীন ও পরিবেশ দুয়েরই প্রভাব আছে। কারো রক্তে (জীন) না থাকলে সে যতই অপোজিট সেক্সের অভাব বোধ করুক মনে হয় না সমকামি হবে। আবার অনেকে হয়ত কিছুদিন সমকামি আবার কিছুদিন পরে সমকামি না, এই গ্রুপ মনে হয় ট্রেন্ডটা বোঝা অনেকটা কঠিক করে দিয়েছে।
@আদিল মাহমুদ,
আমার জানা মতে দুইটি প্রকট বৈশিষ্টের জীন থাকলে প্রকট বৈশিষ্ট প্রকাষ পাবে । আবার একটি প্রকট আরেকটি প্রকট-না বৈশিষ্ট থাকলে প্রকট বৈশিষ্ট প্রকাশ পাবে । কিন্তু আরেকটি বৈশিষ্ট সুপ্ত থাকবে পরিবর্তি প্রজন্মে যাবে । দুঈটি একই ধরনের অপ্রকট জিন হলে , অপ্রকট বৈশিষ্ট প্রকাশ পাবে । ধরুন Tপ্রকট কালো চুল, t প্রকট সোনালী চুল । তাহলে TT হলে কালো চুল হবে, Tt= কালো চুল হবে কিন্তু সোনালি সুপ্ত থাকবে , tt হলে সোনালী চুল হবে । তবে এর বহু বহু ব্যতীক্রম আছে । তাই জেনেটিক্স এখন সব বিষয় ক্লিয়ার করতে পারতেছে না । পারতে বহু বছর লাগবে হয়ত । আমি ভুল ও করতে পারি ।
@অভিজিত,
আমি দুঃখিত , আমি কথা গুলির তাত্পর্য বুঝতে পারি নি । আমার আগের কমেন্টের ধর্মের কথা সরিয়ে ফেলার জন্য কি আমি তা এডিট করতে পারি । তাহলে ধর্মের বিষয় সরিয়ে নিতাম ।
@ফুয়াদ,
ধণ্যবাদ। হ্যা, অমন কিছুই আমরা স্কুলে পড়েছিলাম। আমি এখন জানতে চাচ্ছি পরিবেশের প্রভাবে এই প্রকট বৈশিষ্ট্য কিভাবে বিকশিত হয়। আর পরিবেশের প্রভাবে কি জীনের আরো বৈশিষ্ট্যগত পরিবর্তন হতে পারে কিনা।
যেমন, রোগ জীবান্য এন্টি-বায়োটিকের মাত্রা কম হলে আরো শক্তিশালী হয়ে যায়,; এর ব্যাখায় হল বিবর্তনের মাধ্যমে এদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় ফলে মিউটেশনের ফলে নুতন শক্তিশালী প্রজাতির সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই মিউটেশনের জন্য তো আগে থেকেই প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে।
পরিবেশের প্রভাবে কি জীনের ভবিষ্যতে আরো পরিবর্তন হতে পারে? যেমন আপনার Tt র অতিরিক্ত কিছু সৃষ্টি হতে পারে কিনা।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার উত্তরটা দেখে প্রাসঙ্গিক কিছু কথা লিখবার ইচ্ছে হল। এন্টিবায়োটিকের উদাহরণ আপনি যেটা দিয়েছেন সেটার সূত্র ধরেই বলি –
ব্যাপারটা আমার মতে, একটু অন্যভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে। পরিবেশের কারণে যে ব্যাক্টেরিয়া বদলে গিয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় বলে ভাবা হয় তা কিন্তু ঠিক নয়। হ্যা পরিবেশ বদলের ফলে মিউটেশন হতে পারে, তবে সেটা বিরল ঘটনা। আসলে ঐ এন্টিবায়োটিকের প্রতি বেশ শক্তিশালী প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন কিছু ব্যাকটেরিয়া জনপুঞ্জে ছিলোই। এখন এন্টিবায়োটিকের প্রভাবে অন্য ব্যাক্টেরিয়াগুলো মরে গেলেও এরা মরেনা। দেখা গেল যে অন্য ব্যাকটেরিয়া গুলো মরে গেলেও এই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াগুলো কিন্তু টিকে থাকে এবং দেদারসে বংশবৃদ্ধি করে এরাই একটা সময় পরে সাধারণ ব্যাক্টেরিয়ায় পরিণত হয়। তৈরি হয় এন্টিবায়োটিকপ্রতিরোধী ব্যাক্টেরিয়ার এক নতুন জনপুঞ্জ যা আগে ছিলো না। জানিনা পুরো ব্যাপারটা বোঝাতে পারলাম কিনা। আমি আমার বিবর্তনের পথ ধরে বইটায় ব্যাপারটা বঝাতে একটা ছবি ব্যবহার করেছিলাম এখানে সেটা দিচ্ছি-
http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2009/11/bactaria.jpg
তবে, একটি জিনিস আপনি ঠিকই বলেছেন আদিল। এর জিনগুলো কিন্তু জনপুঞ্জে থাকতেই হবে। এখন জিনের মধ্যে ঘটা মিউটেশন (যদি কখনো ঘটে) গুলো এক প্রজন্মেই হারিয়ে গেলে তাকে কিন্তু বিবর্তন বলা যাবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই পরিবর্তনগুলো সঞ্চারিত হতে হবে জনপুঞ্জে, তাহলেই কেবল তাকে বিবর্তন বলা যেতে পারে।
এবারে পরিবেশ কিভাবে কোন জিনের ‘সুইচ অন’ বা ‘অফ’ করতে পারে তা দেখা যাক। একটা ব্যক্তিগত উদাহরণ দেই। আমার বাবাকে ছোটবেলা থেকেই দেখতাম মাইগ্রেনে ভুগতেন। অপরদিকে আমার মার সেটা ছিলো না। আমার ভাই বোনদের মধ্যে শুধু আমার এই সমস্যাটি ছোটবেলা থেকেই ছিলো। আমার অন্য বোনদের মধ্যে কিন্তু দেখা যায়নি। এখানে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, মাইগ্রেনের এই জিনটি বাবার কাছ থেকে আমি পেলেও অন্য বোনদের মধ্যে নেই, কিংবা থাকলেও হয়ত সুপ্ত অবস্থায় আছে। ও হ্যা, এ প্রসঙ্গে বলে নেই – মাইগ্রেন কিন্তু জেনেটিক – এটা এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত (যতদূর মনে পড়ে ক্রোমোজম ১৯ এর মধ্যে এই জিনটা পাওয়া গেছে)। কিন্তু সম্প্রতি বাচ্চা হবার পর থেকেই এই রোগটি আমার মেজবোনের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে। আমার নিউরোলজিস্ট এর ব্যাখ্যা দিয়ে আমাকে সেদিন বললেন, ব্যাপারটা কিন্তু অস্বাভাবিক নয়, বরং এ ধরণের ঘটনা প্রায়শঃই ঘটে। আসলে বাচ্চা হবার সময় মায়ের শরীরে হরমোনের যে তারতম্য ঘটে তার ফলশ্রুতিতে সুপ্ত মাইগ্রেনের জিনগুলো জেগে উঠতে পারে। কাজেই এটা একটা উদাহরণ – কিভাবে একটি জিন ভিন্ন পরিবেশে ভিন্নরকম আচরণ করে, কিংবা সুপ্ত অবস্থা থেকে ‘জেগে’ উঠতে পারে।
আসলে এখন জীববিজ্ঞান জেনেটিক্সের সীমানা ছাড়িয়ে Evolutionary developmental biology নামের এক নতুন শাখায় পদার্পন করেছে। এ শাখাটি তৈরি করেছে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার। বলা বাহুল্য এটা একেবারেই ‘কাটিং এজ’ বিজ্ঞান। একটা সময় বিজ্ঞানীরা ভাবতেন যে, নতুন নতুন বৈশিষ্ট এবং প্রোটিনের জন্য নতুন নতুন জিনের প্রয়োজন। তাই তারা ভেবে নিয়েছিলেন যে, মানুষের মত এত জটিল এবং বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণির জন্য কমপক্ষে একলক্ষ জিন থাকতে হবে। কিন্তু মানব জিনোম প্রজেক্টে মানুষের জিনোম সংশ্লেষন করে কিন্তু পচিশ হাজারের বেশি জিন পাওয়া গেল না – যা কিনা সংখ্যায় একটি ইঁদুরের জিনের সমান। তা হলে এত কম জিন থাকা সত্ত্বেও মানুষের মত জটিল জীবের উদ্ভব হল কিভাবে? এর ব্যাখ্যা কেবল Evolutionary developmental biology বা সংক্ষেপে Evo Devo দিয়েই দেয়া সম্ভব। আসলে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে প্রমাণ করেছেন, একই জিনকে একটু এদিক ওদিক করলেই সেখান থেকে পায়ের বদলে শুড়, বা শুড়ের বদলে পাখা তৈরি করে ফেলা সম্ভব। অর্থাৎ, পা, শুড়, পাখা কিংবা মাছের ফিনের জন্য আলাদা আলাদা জিনের দরকার নেই। জিনের মধ্যকার সামান্য রদবদল করেই তা করে ফেলা যাচ্ছে। ব্যাপারটা যদি তাই হয়, তবে ভেবে দেখুন – বিবর্তনের ব্যাখ্যা কিন্তু খুব সহজ হয়ে যাচ্ছে। মাছ থেকে উভচর কিংবা সরিসৃপের বিবর্তন হতে খুব বেশি নতুন জিনের প্রয়োজন হচ্ছে না। মিউটেশনের সামান্য হের ফেরেই বর বড় পরিবর্তনগুলো হওয়া সম্ভবপর ছিলো, এবং তাই হয়তো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের চোখের জিন নিয়ে ফ্রুটফ্লাইয়ে বসিয়ে দিয়ে দেখেন সেখান থেকে দিব্যি ফ্রুট ফ্লাইয়ের চোখ গজিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ, একই ‘মাস্টার জিন’ বিভিন্ন প্রজাতিতে আছে, আর ভিন্ন ভিন্ন ভাবে কাজ করছে।
তবে এই এভু ডেভু খুবই নতুন একটা শাখা। এ শাখায় ইদানিং খুব জোরে সোরে গবেষণা হচ্ছে। আগামীতে এ নিয়ে লেখা শুরু করার ইচ্ছে আছে আমার। এত সূক্ষ ব্যাপার স্যাপার নিয়ে এখানে আলোচনা করাটা বোধ হয় অর্থহীন – তবু আপনার প্রশ্নের উত্তরে এত কথার অবতারণা করার লোভটা সামলাতে পারলাম না।
আচ্ছা অভিজিত দা, এমন ও তো হতে পারে রয় আর সিলো ভুলক্রমে এক সাথে রাখায় তাদের মধ্যে সমকামিতার অভ্যাস গড়ে উঠে , পরে যখন তাদের কাছে মেয়ে পেংগুয়িন আনা হয় , তাদের অভ্যাস আর চেঞ্জ হয় নি । আর ট্যাঙ্গো ও তাদের অভ্যাস দ্বারা প্রভাবিত । তাহলে, সমকামিতা কোন জেনেটিকের বিষয় না ।
আবার এমন ও তো হতে পারে, সমকামিতার অভ্যাস অনেক প্রজম্ন ধরে চলতে চলতে জেনেটিক্সে ঢুকে গেল । কিন্তু চেষ্টার দ্বারা পরিবর্তন যোগ্য । আবার মুক্তমনাতেই পরেছিলাম , জমজ সন্তানদের মধ্যে পরিক্ষায়, সমকামিতা ; জেনেটিক না প্রমান হয় । আবার অনেক মানুষ আগে সমকামি ছিল পরে ভাল হয়েগেছে । আবার অনেকে ছিলনা বহু বছর পর হটাত্ কোন কারনে সমকামি হয়ে গেল । সব ঘটনা মিলিয়ে আমরা কি বলতে পারিনা , এটি একটি কু-আভ্যাস ।
যেহেতু, সমকামিতা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি সেহেতু বাংলাদেশী আইন বিদরা ঠিকঈ আছেন বলে আমি মনে করি । আর আল-কোরান নিশ্চিত করে হযরত লুত আঃ জাতি সমাকামিতা করত, এই পাপ আর আল্লাহর অবাধ্যতার পাপের কারনে আল্লাহ পাক তাদের ধংশ করে দিয়েছিলেন । সমকামিতায় মানুষের হাত না থাকলে আল-কোরান একে বড় গুনাহ এর মধ্যে লিপিবদ্ধ করত না । অতএব, আমরা মসুলমানরা বলতে পারি এটি কু-অভ্যাস , এর মধ্যে কোন জেনেটিক কারন নাই । জেনেটিক হলেও তা মানুষ ঈচ্ছে করলেই মনে নিয়ন্ত্রন রাখতে পারে, না হলে; কোরান এরূপ আইন দিত না ।
যাইহোক, প্রতিটি মানুষ পরিবার দ্বারা প্রভাবিত হয় , ভাই সমকামি হলে , আরেক ভাই সমকামি হওয়ার প্রভাব এমনিতেই বেশী থাকবে , এখানে কোন জেনেটিক কারন না থাকলেও হবে । বিষয় হচ্ছে এক ভাই সমকামি হলে , আরেক ভাই এটি হবার চারটিফিকেঈট পেয়ে যায় । এভাবেই পরিবারে ভিন্ন সদস্যদের মধ্যে গড়ায় । ধরেন চাচা থেকে ভাতিজা ইত্যাদি । তাই, এতেও প্রমান হয় না , সমোকামিতা জেনেটিক । ধরেন, পরিবারের অনেক সদস্য একে অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সমকামি হয়ে গেল। তারা নিজেরেই ধরে নিল এটি জেনেটিক । এখন কোন গবেষক গেলে সে ও তো ভাবতে পারে এটি জেনেটিক । আসলে এটি জেনিটিক নয় ।
আবার বহু বছর পরিবারে সমকামিতা থাকার ফলে, তাদের জেনেটিক্সে তা ঢুকে গেলে , কিন্তু আগে তাদের জিনে এই সমকামিতা ছিল না । আবার চেষ্টা করলে চলেও যেতে পারে ।
আবার ধরুন,
।
আপনার লেখা থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম । আপনাকে ধন্যবাদ
@ফুয়াদ,
আমার এ বিষয়ে জ্ঞান নিতান্তই শূন্য, এখনো হজম করার চেষ্টা করছি। তবে যা বুঝেছি তাতে মনে হচ্ছে সমকামিতায় জ়িন আর পরিবেশ কার কতটা প্রবাভ তা এখনো নিশ্চিতভাবে প্রমান হয়নি।
আর এক ভাই সমকামি হলে আরেক ভাই সমকামি শুধু ভাই এর বাহ্যিক প্রভাবেই হতে পারে এটা মনে হয় ঠিক নাও হতে পারে। এটা নিশ্চিতভাবে জানতে এমন ভাইদের উপর পরীক্ষা চালাতে হবে যারা একসাথে বড় হয়নি। যদিও আমার মনে হয় না যে শুধু ভাই সমকামি দেখে যা জেনে আরেক ভাই শখ করে সমকামি হবে। আর সমকামিরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা চেপে রাখে। ভাইদের জানার সম্ভাবনা অনেকটা কম।
সমকামিতা মনে হয় না কেউ টেষ্ট করার খাতিরে করতে যাবে। আমার এ বিষয়ে এখন আর কোন সূচিবাঈ নেই, কিন্তু তা বলে কি আমি শখ করে সমকানি হতে যাবে নাকি? মানুষ সমকামি হতে পারে টেষ্ট নয়, অপোজ়িট সেকস পার্টনারের অভাবে। যেমন জেলে, যুদ্ধক্ষেত্রে হয়।
@ফুয়াদ,
ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য।
ব্যাপারটা রয় এবং সিলোর ক্ষেত্রে হতে পারে। ভুলক্রমে এক সাথে রাখায় কিংবা বন্দি পরিবেশে তাদের মধ্যে সমকামী প্রবৃত্তি দেখা দিতে পারে। কিন্তু মুশকিল হল, বিজ্ঞানীরা কিন্তু বন্য বা মুক্ত পরিবেশেও প্রানী জগতে সমকামী প্রবৃত্তি লক্ষ্য করেছেন। পেঙ্গুইনদের মধ্যে সমকামীপ্রবণতা এমনিতেই প্রবল। দেখা গেছে তাদের ভুলক্রমে এক সাথে না রাখার পরেও অনেকের মধ্যে সমকামী প্রবণতা তৈরি হয়, স্বতস্ফুর্ত ভাবেই। আমি অন্য যে উদাহরণগুলো দিয়েছি সেগুলো আরো একবার পড়ে দেখতে পারেন। লিন্ডা উলফি ল্যাবরেটরীতে জাপানী ম্যাকুয়ি প্রজাতিতে সমকামী প্রবণতা লক্ষ্য করে আপনার মতই ভেবেছিলেন ‘ভুল করে ল্যাবরেটরিতে’ এটা হয়ছে। কিন্তু পরে জাপানে গিয়ে জঙ্গলে গিয়েও একই প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলেন। বনোবো শিম্পাজীদের মধ্যে সমকামিতা বিষমকামিতার মতই সাধারণ এবং ব্যাপক। এই বিষয়টি ব্যাখ্যার দাবী রাখে। আপনি কম সময়ে আরো জানতে চাইলে আমি আমার মূল লেখায় ইউটিউব থেকে ন্যাশনাম জিওগ্রাফিকের Out in Nature: Homosexual Behavior in the Animal Kingdom’ যে ডকুমেন্টরিটা দিয়েছি, সেটার পর্বগুলো দেখে নিতে পারেন।
আসলে কোন কিছুই যে, অনেক প্রজম্ন ধরে চলতে চলতে জেনেটিক্সে ঢুকে যায় না – তা আমি স্পষ্ট করেছি আতিক রাঢ়ীকে উত্তর দিতে গিয়ে। আপনি পড়ে দেখতে পারেন। আর এটা যদি অভ্যাসও হয়, সেটা এত সহজে পরিবর্তন করা যায় না। আপনাকে কেউ চাইলেই ধরে সমকামী বানিয়ে দিতে পারবেন না, তেমনি আবার উলটোটাও সত্যি। অনেক সমকামী বহু উপায়ে চিকিৎসা করার পরেও নিজের প্রবৃত্তি বদল করতে পারেননি – এমন উদাহরণও আছে। অনেকে আবার হতাশায় আত্মহত্যাও করেছেন। যে কোন কিছুকেই খুব সহজে ‘কু-অভ্যাস’ এর ট্যাগ লাগিয়ে দেয়া যায়, বলা যায় মানসিক রোগ। কিন্তু এতে সমস্যার কোন সমাধান হয় না। যেটা বাড়ে সেটা হল বিদ্বেষ।
ফুয়াদ, আপনার মন্তব্যের এই অংশটির উত্তর আমি এখানে দিতে চাচ্ছিলাম না। দেখুন আমার প্রবন্ধের নীচে প্রথম মন্তব্যেই স্পষ্ট করে লিখেছিলাম, ‘সম্পুর্ণ বিজ্ঞান-নির্ভর পোস্ট হিসেবে লেখার চেষ্টা করা হল। আলোচনা শুধু বিজ্ঞানের বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেই আমি খুশি হব। সমকামিতা পাপ না পূন্য কিংবা কোন ধর্মগ্রন্থের কোন আয়াতে এ সম্বন্ধে কি বলা আছে, কিংবা বাংলাদেশের সমাজে এটা পশ্চিমা বিকৃতি কিনা কিংবা অপরাধ কিনা – এগুলো এই থ্রেডে আলোচনা না করতে আহবান জানাচ্ছি।‘ আপনি কি আমার অনুরোধটা দেখেননি? নাকি দেখেও না বোঝার ভান করলেন? আপনি প্রায়ই অভিযোগ করেন যে বিবর্তন নিয়ে লিখতে গিয়ে মুক্তমনারা ধর্মকে টেনে আনেন। সেটাই আমি এবার পরীক্ষা করে দেখতে চাইলাম। আমি আমার প্রবন্ধে ধর্মের কিছুই উল্লেখ করিনি। এমনকি প্রবন্ধের শেষ পরিস্কার করে বলে দিলাম – ধর্মে কি আছে আর নেই সেটা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। আপনি ঠিকই কোরানে সেঁদিয়ে গেলেন। অনুরোধ করার পরেও সেটা রাখবার মত সৌজন্যটকু দেখালেন না। দোষ কি শুধু যারা বিবর্তন নিয়ে লেখেন তাদেরই?
অনেক সদস্যই আপনার এহেন গোয়ার্তুমি নিয়ে অতীতে আপত্তি জানিয়েছিলেন। তারপরেও মডারেটরের পক্ষ থেকে আপনাকে সদস্যপদ দেয়া হয়েছে। মনে হচ্ছে আপনি যেটা না করা হয় সেটাই করে দেখাতে চান। আমি আশা করব আপনি একখন থেকে কেউ কোন অনুরোধ করলে সেটা রাখবার চেষ্টা করবেন।
এবারে আপনি যে কথাগুলো বছেন সে প্রসঙ্গে হাল্কা কিছু বক্তব্য দেই। আপনি যদি সমকামিতার ইতিহাস দেখেন তবে দেখবেন সমকামিতা ইতিহাসের প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি জাতিতে প্রথম থেকেই ছিলো। আপনি বলতে পারেন যে, ‘আমরা মসুলমানরা বলতে পারি এটি কু-অভ্যাস’ কিন্তু একটু ইতিহাস বই খুলে দেখুন – আরবে বহু মুসলমান কবিই সমকামী ছিলেন। একজন প্রখ্যাত মুসলিম সমকামী কবি ছিলেন আবু নুহাস। সমকামিতা উদযাপন করে তিনি কবিতাও লিখেছিলেন। এমনি একটি কবিতা এরকম –
O the joy of sodomy!
So now be sodomites, you Arabs.
Turn not away from it–
therein is wondrous pleasure.
Take some coy lad with kiss-curls
twisting on his temple
and ride as he stands like some gazelle
standing to her mate.
A lad whom all can see girt with sword
and belt not like your whore who has
to go veiled.
পারস্য সাহিত্যে অনেক কবি তাদের প্রেমিকাকে পুরুষ নামে ডাকতেন। আরব সমাজে বয়ষ্ক পুরুষ এবং বালকের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গ্রহনযোগ্য তো বটেই মধ্যযুগে (ইসলামের বিস্তৃতির সময়) বহুল প্রচলিতও ছিল। সাকী বলতে এখন আমাদের চোখের সামনে সুরাপাত্র হাতে যে মোহনীয় লাস্যময়ী নারীর ছবি ভেসে উঠে, প্রাচীন আরবে সাকী বলতে তা বোঝানো হত না। গবেষকরা বলেন, সাকী বলতে আরবে নারীর পাশাপাশি সুদর্শন কিশোরও বোঝানো হত। তারা শুধু পানপাত্রে দ্রাক্ষারসই পরিবেশন করতো না, পাশাপাশি অন্যান্য পার্থিব সেবাও পরিবেশন করতো। এর উল্লেখ পাওয়া যায় আরবের বহু সমকামী কবিদের রচনায় । এমনকি কোরানের কিছু আয়াতে (৫২:২৪, ৫৬:১৭, ৭৬:১৯) বেহেস্তে উদ্ভিন্নযৌবনা হুরীর পাশাপাশি ‘মুক্তা-সদৃশ’ কিশোর বালকের সেবা পাওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটা বোধ হয় আপনিও জানেন।
যা হোক এগুলো নিয়ে আলোচনা করার এটা সঠিক থ্রেড নয়। আমি এ নিয়ে ভবিষ্যতে একটি লেখা লিখব। তখন আপনি যত ইচ্ছা আলোচনা করেন। আপাততঃ আমার করা অনুরোধটি রেখে শুধু জীববিজ্ঞানে আপনার কৌতুহল সীমাবদ্ধ রাখলে বাধিত হই।
জেনেটিক্সের পরীক্ষা আসলে আপনি যেমন সরল ভাবছেন সেরকম নয়। কার অভ্যাস কিরকম সেটা দিয়ে জেনেটিক্সের মাথা ব্যাথা নেই। আপনি যদি ডিন হ্যামারের গবেষণাটি ঠিকমত পড়ার চেষ্টা করেন, তাহলে দেখবেন, তারা ‘অভ্যাস’ সনাক্ত করার চেষ্টা করেননি। সনাক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন ক্রোমজোমের মার্কার। এই মার্কার পাওয়ার কারণেই তিনি দেখলেন, সমকামী ছেলের মামাদের মধ্যে শতকরা ৭ ভাগ এবং ফুতাতো ভাইদের মধ্যে শতকরা ৮ ভাগ সমকামী প্রবণতা সম্পন্ন পাওয়া ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু বাবার দিকে অর্থাৎ চাচা কিংবা চাচাতো ভাইদের মধ্যে সেরকম কোন প্যাটার্ণ পাওয়া যায় নি। সেজন্যই ভাবা হয়েছে, সমকামী প্রবণতা কি তাহলে মায়ের দিক থেকেই জেনেটিক ভাবে প্রবাহিত হয়। আপনার চাচা ভাতিজা ব্যাপারটা সামাজিক ভাবে কততুকু ঠিক জানি না, কিন্তু জেনেটিক গবেষনায় এর প্রামাণ পাওয়া যায়নি। আর তা ছাড়া চাচা সমকামি হলে ভাতিজাও দেখে দেখে সমকামি হয়ে যায় নাকি? ভাতিজার ইডেনের সামনে গিয়ে মেয়ে দেখা কিংবা সুন্দরী মেয়ে দেখে ভাল লাগার ব্যাপারটি রাতারাতি বদলে যাবে, চাচা সমকামী বলেই? যৌনপ্রবৃত্তি এত সহজে বদলে যায় নারে ভাই। বদলালে পৃথিবীতে সমকামী ব্যক্তি আর খুঁজেই পাওয়া যেত না। কারণ বদলের চেষ্টা আর স্টিমরোলার তাদের উপরেই চালানো হয়েছে শতাব্দী ধরে।
আপনাকে আবারো বলি – বহু বছর ধরে কোন কিছু থাকলেই সেটা ‘জেনেটিক্সে ঢুকে যায়’ না। আগেই বলেছি জিন ভবিষ্যত প্রজন্মে প্রবাহিত হয় ইউনিট ক্যারেক্টার হিসবে। কত আগে ‘সমকামিতা ছিলো না’ সেটাও আপনাকে বলতে হবে। প্রাচীন যে কোন সভ্যতা বিশ্লেষণ করলেই দেখবেন সেখানে সমকামিতা ছিল। প্রাচীন গ্রীসের ধর্মশাস্ত্র ও পুরাণে সমকামীতার স্পৃহার কথা জানা যায়। ধর্মীয়ভাবে সমপ্রেম এখানে স্বীকৃত ছিল। ‘ভেনাস’ ছিলেন তাদের কামনার দেবী। এই দেবীই আবার সমকামীদের উপাস্য ছিলেন। এছাড়া ‘প্রিয়াপ্রাস’ নামেও আরেক দেবীকেও সমকামীরা আরাধনা করত বলে শোনা যায়। তাহিতির বিভিন্ন জায়গায় সমকামে আসক্ত ব্যক্তিদের আরাধ্য দেবতার মূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। আনাতেলিয়া, গ্রীস এবং রোমার বিভিন্ন মন্দিরে ‘সিবিলি’ এবং ‘ডাইওনীসস’ এর পুজো ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল। সিবিলির পুরোহিতেরা গাল্লি নামে পরিচিত ছিলেন। এরা নারীবেশ ধারণ করতেন। মাথায় নারীর মত দীর্ঘ কেশ রাখতে পছন্দ করতেন। এরা সমকামী ছিলেন বলেও অনুমিত হয়। পরে এশিয়া মাইনর থেকে সিবিলি পুজো পারস্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। পারস্য সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলে এ সমস্ত প্রথা পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়। সত্যি বলতে কি – এমন কোন সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি, যেখানে সমকামিতা নেই, কিংবা ছিলো না। সমকামিতা পৃথিবীর কোন নির্দিষ্ট দেশ বা জনগোষ্ঠির মধ্যে সমকামিতা আবদ্ধ ছিলো না, আজও নেই। সমকামীদের সন্ধান মিলবে পৃথিবীর সর্বত্র, কথাও কম বা কোথাও বেশি। বাংলাদেশে ‘ইসলামের কারণে’ যদি সমকামিতা নেই বলে যদি ভেবে থাকেন সেটাও আপনার ভুল ধারণা। সমকামিতা বাংলাদেশে আছে এমনকি তাদের নিজস্ব ব্লগসাইটও আছে (ইন্টারনেটে খুঁজে পেলাম)-
http://lgbtbangladesh.wordpress.com/
http://www.globalgayz.com/country/Bangladesh/view/BGD/gay-bangladesh-by-globalgayz
ইত্যাদি। এরা সবাই ‘কু অভ্যাসের’ কারণে সমকামী হয়েছে – এটা ভাবা বোধ হয় ভুল হবে।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ আলোচনায় অংশগ্রণ করার জন্য।
@ফুয়াদ,
সমকামিতা যদি জেনেটিক হয়, তাহলে আমার মনে হয় সমকামিতা কখনওই প্রসার পাবে না। জ্বীনরা সবসময় প্রজন্মের পর প্রজন্মে নিজেদের উপস্থিতিকে নিশ্চিত রাখতে চাইবে। সমকামীতা জ্বীনের প্রবাহ নিশ্চিত করে না, তাই প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় সমকামীতার অগ্রাধিকার না পাওয়ারই কথা। সমকামীতা যদি কোন কিছুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয়, তবুও আমার মনে হয় না সমকামীতা কখনও বিষমকামীতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে।
সমকামিতা যদি পরিবেশগত হয়, তাহলেও দুঃচিন্তা করার কিছু নেই। যৌন প্রবৃত্তি তো আর ইচ্ছের উপর নির্ভর করে না। আর তাছাড়া রাষ্ট্র সবসময়ই আইন প্রনয়ন করে সমকামীদেরকে হেটেরোসেক্সুয়াল প্রজননের মাধ্যমে বাচ্চা নিতে উৎসাহিত বা বাধ্য করতে পারে। সুযোগ্য নাগরিক পেলেই রাষ্ট্রের খুশি হওয়া উচিত, নাগরিকদের শয়নকক্ষে রাষ্ট্রের নাক না গলানোই উত্তম।
@পৃথিবী,
সহমত। চরম সত্য।
@পৃথিবী,
খুবই ঠিক কথা পৃথিবী। আমি আসলে তোমার লেখা যতই দেখি ততই অবাক হই। একজন স্কুলের ছেলে, যে কিনা এবারে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিচ্ছে, তার এমন গঠনমূলক চিন্তা আসে কি করে। আর তুমি যে লেভেলের বই-পত্র পড়ছ (যেমন রিচার্ড ডকিন্সের গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ ইত্যাদি) আমরা সেগুলো পড়া শুরু করেচ্ছি এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা্রো পরে। তোমাকে দেখে আমরা আশা পাই, যে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ একেবারে অন্ধকার নয়।
শুধু একটা সংশোধনী। তুমি বোধ হয় এখানে ‘জিন’ এর কথা বলতে চেয়েছ, ‘জ্বীন’ নয়। জ্বীন হচ্ছে ওই জ্বীন ভুত। আর জিন হচ্ছে বায়োলজিকাল রেপ্লিকেটর।
@অভিজিৎ, কে জানি একজন ব্লগে প্রশ্ন করেছিল ক্লাস টেনে পড়া একজনের এ রকম লেখা হতেই পারে না !!!!!! এবার পৃথিবীর উচিত তা খন্ডানো————– না-কি ???????
ব্লগের সবাইকে আহবান জানাচ্ছি বাংলা বাক্যের মধ্যে ইংরেজী শব্দ যথাসম্ভব পরিহার করতে। না হলে বাক্যের গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। ইংরেজী শব্দের পরিবর্তে বাংলা শব্দ ব্যবহার করলে সকল স্তরের পাঠকের কাছে লেখাটা পৌছায়। আমরা যদি সবাই কে নাই বোঝাতে পারি তাহলে বাংলায় লিখে লাভ কি হল? কারণ, অনেক পাঠকই আছেন যারা সব ইংরেজী শব্দ এর মানে বোঝেন না। তারা বাংলা বাক্যে ইংরেজী শব্দ পড়ে নিরাশ হয়। এ ব্যাপারে সবার দৃশHটি আকর্শHন করছি। ধন্যবাদ।
এই থ্রেডে মন্তব্য করতে যে যোগ্যতা দরকার তা আমার নেই। তবুও করছি, সে জন্য সবার কাছে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, জিন কোড নিয়ে। জিন কোড একটা চলমান প্রক্রিয়া। পূর্ব পুরুষের অভ্যাস, আচরন, বৈশিষ্ট এসব জিন কোডের মাধ্যমে পর পুরুষে বর্তায়। বর্তমান প্রজন্ম তার পেশা, জীবন আচারের আধুনিক ধরনের কারনে প্রায়ই পুর্বপুরুষের জীবন-যাপন পদ্ধতি থেকে কিছুটা আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আনেকটা সরে আসে। এই সরে আসার প্রভাব কয়েক পুরুষ পরে লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠে।
আমি দেখেছি একটা জেলে পাড়ার ছোট শিশু যতক্ষন পানিতে থাকতে পারে তার চার ভাগের একভাগ সময়ও আমি থাকতে পারি না।
আমি আসলে যেটা বলার চেষ্টা করছি, জিন কোডিংটা পরিবেশের সাথে আমাদের সংগ্রামের বা অভিজোযনের ফলস্বরূপ। অভিজিৎ দার প্রতি অনুরোধ ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন। তাহলে সমকামি জিন খুঁজে পাবার অর্থটা কি দাঁড়াবে না যে পরিবেশের প্রভাবেই যেমন সেটা বিপরীত লিংগের অভাব বা সামাজিক চাপ বা ভোগবাদের কুফল থেকে আসা অণীহা এসবের কোন কারনেই কোন এক পূর্ব পুরুষে উদ্ভূত।
রয়, সিলোর ক্ষেত্রে দেখছি বিপরীত লিংগের আভাব আর ট্যাঙ্গো পারিবারিক উত্তরাধিকারের উদাহরন হতে পারে। অন্য প্রানীদের ইতিহাস নিয়ে আরো গবেষনার প্রয়জন আছে। এমন তো হতে পারে বিপরীত লিংগের কামের আহভানে সারা দেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ সব সময় সমান ভাবে থাকে না। বা মাতৃ্ত্ত্বকালীন শারিরীক অবস্থা যা কামের আহভানে সারা দেয়ার ক্ষেত্রে অনীহা প্রকাশ করে থাকে।
আমার মূলপ্রশ্নটা আসলে, জেনেটিক কোড নিয়েইঃ নীচের বাক্যটা সব ধরনের জিনের ক্ষেত্রেই প্রযজ্য-
>>কিন্তু এটা কি জেনেটিক তথ্য হিসেবে পরিবারের ধারায় বয়ে চলে, নাকি পরিবেশ থেকে শেখা বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ? >>
জেনেটিক তথ্য, এই জেনেটিক তথ্যে পরিনত হয় অতীত পরিবেশের প্রভাবে নয় কি ? যাদি অন্য কিছুর প্রভাব থাকে তবে সেটা কি ?
আতিক,
আপনার প্রশ্নগুলো খুবই চমৎকার। প্রশ্নগুলো করার জন্য ধন্যবাদ। আমি যতটুকু জানি তার নিরিখে প্রশ্নগুলোর একটা জবাব দেয়ার চেষ্টা করছি।
আপনার প্রশ্নগুলোর প্রথম অংশটির মধ্যে ল্যামার্কিজমের প্রভাব লক্ষনীয়। আপনি বলেছেন,
আসলে পূর্ব পুরুষের অভ্যাস, আচরন, বৈশিষ্ট এসব জিন কোডের মাধ্যমে পর পুরুষে বর্তায় – এ ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক নয়। আপনি যদি মেন্ডেলের বংশগতিবিদ্যা সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হন, তাহলে জানবেন যে, মেন্ডেল খুব স্পষ্টভাবেই দেখিয়েছিলেন, জিন কোডের বৈশিষ্ট্যগুলো পূর্বপূরুষের অভ্যাসের ফলে ‘পরিবর্তিত’ হয়ে যায় না, বরং তারা অবিকৃত ভাবে ‘ইউনিট ক্যারেক্টার’ হিসবে পরবর্তী প্রজন্মে পৌছায়। ছেলে মেয়ের প্রত্যেকটা বংশগত বৈশিষ্ট্য মা বাবার কোন না কোন ‘ইউনিট ক্যারেক্টর’ দিয়ে নির্ধারিত হয়। বাবা মার কোষের ভিতরের এই ফ্যাকটর বা জিনগুলো একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তাদের সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত হয়। জিন হচ্ছে ডিএনএ দিয়ে তৈরি বংশগতির একক, যার মধ্যে কোষের বিভিন্ন রকমের তথ্য বা কোড জমা থাকে। বাবা এবং মার যৌন কোষে এই জিনগুলো থাকে, তাদের ছেলে মেয়েরা নিজেদের প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যের জন্য দুজনের থেকে একটা করে জিন পেয়ে থাকে। এই জিনগুলোর মধ্যে কোনরকম কোন মিশ্রণ ঘটে না এবং একটা বৈশিষ্ট্যের জিন আরেকটার উপর কোনভাবে নির্ভরশীল নয়। অর্থাৎ, আমার চোখের রং-এর বৈশিষ্ট্যের সাথে নাকের আকারের বৈশিষ্ট্যের কোন সম্পর্ক নেই, প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্যের জিন আলাদা আলাদা – স্বতন্ত্রভাবে কাজ করে। উত্তরাধিকার সুত্রে আমি আমার বাবা বা মার কাছ থেকে কোন একটা জিন পেলে পাবো, নয়ত পাবো না – এর মাঝামাঝি কোন ব্যবস্থা এখানে নেই। এভাবেই, জিনগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ‘ইউনিট ক্যারেক্টার’ হিসেবে প্রবাহিত হয়ে আসছে বিভিন্ন জীবের মাঝে – মিশ্রিত না হয়েই। ডঃ রিচার্ড ডকিন্স খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন এই ব্যাপারটাকে –
‘একেকটি বিচ্ছিন্ন জিন একে অপরের সাথে ‘পুডিং-এর উপাদানগুলোর’ মত ভর্তা হয়ে না মিশে বরং তাসের প্যাকেটে রাখা তাসের মত ‘সাফল্’ করে করে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে পড়ে।‘
আসলে বিবর্তন কিভাবে কাজ করে সেটা ভাবতে গিয়ে ল্যামার্ক অনেকটা আপনার মত চিন্তা করেছিলেন – এবং ভেবেছিলেন পরিবেশের প্রভাবে জিরাফের গলাটা লম্বা হয়ে গিয়েছে। এটা কিন্তু ভুল ব্যাখ্যা। ডারউইনীয় বিবর্তন ব্যাপারটাকে সেরকমভাবে ব্যাখ্যা করে না। সঠিক বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা হল, জিরাফের জনপুঞ্জে লম্বা গলা, মাঝারি গলা, বেঁটে গলা – সব ধরণের ট্রেইটই হয়ত ছিলো। কিন্তু খাদ্য স্বল্পতা কিংবা অন্য কোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লম্বা গলার জিরাফেরা হয়ত কোন বাড়তি সুবিধা পেয়েছিলো (যেমন উঁচু গাছের পাতার নাগাল পাওয়া ইত্যাদি) ফলে তারা অধিক হারে বংশ বৃদ্ধি করে সেই লম্বা গলার ট্রেইটটিকে জনপুঞ্জে টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলো, বেঁটে গলাওয়ালারা তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হয়ত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেজন্যই জিরাফের জনপুঞ্জে আজ লম্বা গলাওয়ালারাই রাজত্ব করছে। ব্যাপারটা আসলে এক দুই দিনে হয়নি, এতে সময় লেগেছে হাজার কিংবা লছর বছর। তাই এটাকে সহযে বুঝতে পারা যায় না।
আসলে, জীবদেহে পরিবেশ দ্বারা উৎপন্ন প্রভাব যে বংশানুসৃত হয় না, সেটা ভাইজম্যান অনেক আগেই প্রমাণ করে দিয়েছিলেন। তিনি জন্মের সাথে সাথে সাদা রঙের ছোট জাতের ইদুর ছানার লেজ কেটে দিয়ে বাইশটি প্রজন্মে সদ্য-ভূমিষ্ট ছানার লেজের দৈর্ঘ্য কমে কিনা তা মেপে দেখলেন। দেখা দেল, সদ্যভূমিষ্ট ছানার লেজের দৈর্ঘ্য কমেনি বা বাড়েনি। এ পরিক্ষা থেকে ভাইজমান পরিস্কারভাবে দেখালেন, জীবদেহে পরিবেশ দ্বারা উৎপন্ন প্রভাব বংশানুসৃত হয় না। এভাবে তিনি ল্যামার্কবাদের মূল-ভিত্তিটি ধ্বসিয়ে দেন। আসলে এরকম পরীক্ষা কিন্তু মানুষ বহুকাল ধরেই করে এসেছে। যেমন, ডোবারম্যান কুকুরের লেজ কেটে ফেলা, ইহুদী এবং মুসলমান বালকদের খৎনা করা, চীনদেশে একসময় প্রচলিত প্রথা অনু্যায়ী মেয়েদের পা ছোট রাখার জন্য লোহার জুতো পড়ানো, অনেক আফ্রিকান দেশে মেয়েদের ভগাঙ্গুর কেটে ফেলা, উপমহাদেশে মেয়েদের নাকে এবং কানে ছিদ্র করা ইত্যাদি। কিন্তু এর ফলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে আকাংকিত লক্ষণটির আবির্ভাব হয় নি। দেখুন মুসলমানরা জন্মানোর পরেই ছেলেদের খৎনা করে। এটা কিন্তু একদিন দুদিন ধরে করছে না, করছে কয়েকশ বছর ধরেই। তাহলে এখন মুসলমান শিশুদের পুরুষাংগ ত্বকচ্ছেদিত হয়ে জন্মাচ্ছে না কেন? ল্যামার্কের তত্ত্ব সঠিক হলে তাই ঘটার কথা ছিলো।
আপনি জেলে কলোনির যে শিশুটির উদাহরণ হাজির করেছেন সেটা আসলে অভিযোজনের উদাহরণ। জিনগত পরিবর্তনের উদাহরণ নয়। আসলে আমরা পরিবেশ বদলে দিয়ে কিংবা আরো বিভিন্ন উপায়ে আমাদের দক্ষতা, শারিরীক উৎকর্ষতা বহুগুন বাড়িয়ে নিতে পারি – কিন্তু জিনকে রাতারাতি বদলে দিতে পারি না। তাই যদি হত, সাড়া জীবন ধরে লোহার হাতুরী শাবল নিয়ে কাজ করা কামারের ছেলে কিন্তু পেশীবহুল হয়ে জন্ম নিতো। একটা সময় আমাদের দেশে কামারের ছেলে কামারই হত, কুমারের ছেলে কুমার। প্রজন্মের পর প্রজন্ম লক্ষ্য করেও তাদের পেশীতে লক্ষ্যনীয় কোন পরিবর্তন পাওয়া যায় নি। আপনি জেলে কলোনির ওই ছেলেটাকে শহরে নিয়ে বড় করলে দেখবেন, একটা সময় পরে দেখবেন তার শ্বাস ধারণ ক্ষমতা একটা সময় পরে আপনার মত হয়ে গেছে। তারমানে গ্রামের উপযুক্ত পরিবেশে সে তার পানির নীচেকার দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে নিতে পেরেছে। এইটুকুই। এমন নয় যে, সেই দক্ষতা সে জিনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে পারবে, কিংবা তার ফুসফুস পরিবর্তিত হয়ে ফুলকার মত কোন কিছু হয়ে যাবে। সেরকম কিছু হলে আমরা জেনেটিক চেঞ্জ বলতে পারতাম।
সেরকম পরিবর্তন যে কখনো সখনো হয় না তা নয়। এবং এটা হয় মিউটেশনের মাধ্যমে। একটা ভাল উদাহরণ হচ্ছে, হিরোশিমা আর নাগাসাকির উপর যখন মার্কিন বোমা নিক্ষিপ্ত হল, তখন তার প্রভাব প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিদ্যমান ছিলো। বহু প্রজন্ম পরেও বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম লক্ষ্য করা গেছে। তার মানে, রেডিয়েশনের প্রভাবে জিনপুলে মিউটেশন তৈরি হয়েছিলো এবং তার প্রভাব পড়েছিলো পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে। অনেক সময় গর্ভকালীন সময়ে ঔষধের প্রভাবেও এটা হয়। যেমন, ষাটের দশকে জার্মানী এবং যুক্তরাজ্যে থ্যালিডোমাইড নামক একটি ঘুমের বড়ির ক্ষতিকর প্রভাবে অস্বাভাবিক শিশুর জন্ম লক্ষ্য করা গিয়েছিলো। পরে সেই ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়া হয়। কাজেই জেনোটাইপের উপর পরিবেশের এ ধরণের প্রভাব আছেই।
এখন সমকামিতার ব্যাপারটি কি পরিবেশের প্রভাব বলবো নাকি জৈবিক? এটার এক কথায় জবাব দেয়া মুশকিল। কারো কারো মধ্যে পরিবেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর সন্দেহ নেই। পরিবেশের প্রভাব আছে বলেই জেলখানায় কিংবা বন্দি পরিবেশে অনেকে সমকামী প্রবৃত্তি প্রদর্শন করলেও জেল থেকে ছাড়া পেলে তাদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে। শুধু মানুষ নয়, চিড়িয়াখানায় কিংবা বন্দি পরিবেশে বহু প্রজাতি মুক্ত অবস্থার চেয়ে অনেক বেশি সমকামী আচরণ করে থাকে বলে প্রমাণ পেয়েছেন। কাজেই সমকামী আচরণ নির্মাণে পরিবেশ অনেকের মধ্যেই একটা খুব বড় নিয়ামক।
কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই যে পরিবেশ বদলে দিয়ে যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ভেবে নিলে ভুল হবে। সমকামিতার ব্যাপারটা আসলে একেকজনের কাছে একেক রকম। সমকামীদের সাথে কথা বললেই দেখা যাবে, এদের অনেকেই ছোটবেলা থেকেই তারা বিপরীতধর্মী লোকজনের প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব করতো না। এদের অনেকেই চেষ্টা করেও যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তন করতে পারেনি। অনেকে আবার হতাশায় আত্মহত্যাও করেছে এমন উদাহরণও আছে অনেক । তাদের কাছে পছন্দের দিকগুলো অনেক ছোটবেলাতেই ‘স্থায়ী’ হয়ে যায়। এদের অনেকে বড় হয়ে সেটা পরিবর্তন করতে পারে খুব সামান্যই। কেউ এ ব্যাপারটায় বেশি ফ্লেক্সিবল, কেউ বা কম। আমি সেজন্যই এনালজি হিসবে আমাদের এক্সেন্টের উদাহরণটা হাজির করেছিলাম।
আরেকটা জিনিসও মাথায় রাখতে হবে এপ্রসঙ্গে। সামাজিক একটা চাপ সবসময়ই থেকে যায় সমকামিতাকে নিরুৎসাহিত করে বিষমকামিতাকে উৎসাহিত করার। অনগ্রসর সমাজে এই চাপ আরো প্রবল। এই চাপ অতিক্রম করেও যারা নিজেদের সমকামী হিসেবে নিজেদের পরিবিত করতে পারেন, তাদের ব্যাপারটা জৈবিক হবার সম্ভাবনাই বেশি। সায়েন্টিফিক আমেরিকানের ‘ডু গেস হ্যাভ এ চয়েস’ প্রবন্ধে সেজন্যই বলা হয়েছে –
Do gays have a choice? Because of the enormous pressures pushing all of us toward the straight end of the Sexual Orientation Continuum from the time we are very young, it is reasonable to assume that most of the people who currently live as homosexuals were probably close to the gay end of the continuum to begin with; in other words, they probably have strong genetic tendencies toward homosexuality. Even though the evidence is clear that some gays can switch their sexual orientation, the vast majority probably cannot—or at least not comfortably.
বাদ বাকী বিশ্লেষণ আপনার উপর ছেড়ে দিচ্ছি।
@অভিজিৎ,
>>আসলে পূর্ব পুরুষের অভ্যাস, আচরন, বৈশিষ্ট এসব জিন কোডের মাধ্যমে পর পুরুষে বর্তায় – এ ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক নয়।>>
আমর নিজের একটা উদাহরন দেই, আমরা দুই ভাই, দুই বোন, একদিন খাবার টেবিলে মা আমাকে খুব করে ধমকে দিলেন, কারন আমি প্লেটের সবভাত একবারে মাখি বলে।আমি খেয়াল করলাম আমর অন্য ভাই বোন রা এবং মা সবাই প্লেটের একপাশ থেকে ভাত মাখে। বাবা সেদিন আমাদের সাথে খাবার টেবিলে ছিলোনা। বিষয়টা আমার মাথায় থেকে যায়। একদিন হঠাৎ খেয়াল করলাম বাবাও আমার মত প্রথমেই সবভাত মেখে তারপর খাওয়া শুরু করছেন।
এটার কি ব্যাখ্যা হতে পারে। এটাতো একটা অভ্যাস যা বাবা থেকে অবিকল ভাবে আমার মাঝে এসেছে ।
বিবর্তন ধারার যত পিছনেই আমরা যাই না কেন, প্রশ্ন ছিলো এই জিন এর কোডিং এর উদ্ভবে পরিবেশ ছাড়া অন্য কিসের ভুমিকা ছিলো ? অকর্ষিক শব্দটার প্রতি আমার ঘোরতর আপত্তি আছে। এটাকে আমার ফাঁকিবাজী মনে হয়। যে ফাঁক গলে বার বার স্বর্গীয় প্রেরনার অনুপ্রবেশ ঘটে।
আভিজিৎ দার প্রতি অনুরোধ, জিন কোডে কি ভাবে কাজ করে সেটা মোটামুটি পরিস্কার হয়েছে কিন্তু এটার উদ্ভব কি ভাবে, যদি সেটা একটু বিস্তারিত ভাবে বলতেন তবে উপকৃ্ত হতাম।
@আতিক রাঢ়ী,
হ্যা, এক্ষেত্রে অভ্যাসটা অবিকল ভাবে আপনার মাঝে এসেছে, কিন্তু সেটা জেনেটিকভাবে হয়েছে ভুল হবে। আপনি পরীক্ষা করলেই দেখবেন, বাবার বহু অভ্যাস যেমন আপনি পেয়েছেন, আবার অনেক অভ্যাস আপননি পানওনি। আমি মনে করি এই অভ্যাস, দেখে শেখা, রীতি- নীতি, আচার – এ সমস্ত ব্যাপারগুলো জেনেটিক নয়। কিন্তু এগুলোও সমাজে প্রতিলিপি তৈরি করে। কিন্তু এই প্রতিলিপি আসলে জিনের মাধ্যমে হয় না। কিন্তু তাহলে হয় কিভাবে? অনেক বিজ্ঞানী বলেন এরা পুনরাবৃত্তি করে ‘মিম’ এর মাধ্যমে। জিন হচ্ছে বায়োলজিকাল রেপ্লিকেটর আর মিম হচ্ছে সাংস্কৃতিক রেপ্লিকেটর। মিম কাজ করে বলেই আমরা যে কোন রীতি বা ঐতিহ্য বংশ পরম্পরায় বহন করে নিয়ে যেতে পারি। মুসলমান ছেলেরা তার পরিবারে নামাজ পরা দেখে নিজেও নামাজ পড়া শেখে, অন্যদেরও শেখায়। মা ভাল বাঁধতে পারলে, সেই রেসিপি মেয়েকেও বাৎলে দেয়…। এভাবেই সাংস্কৃতিক রেপ্লিকেটরও অনেকটা জিনের মতই কাজ করতে করতে এগিয়ে যায়। আমি আগে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামে একটি লেখায় হাল্কা ভাবে এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলেম। আপনি পড়ে দেখতে পারেন।
@আতিক রাঢ়ী,
অভিজিত বলেছেঃ
“বন্যাদির নামটা টাইপের ভুলে বন্যদি হয়ে গেছে।
খারাপ না, কিন্তু । ভুলে সত্য কথাটাই বলে ফেলেছেন মনে হয় (কপালে যে এবার কি আছে কে জানে!)”
অভিজিতকে ব্যক্তিগত আক্রমনের দায়ে এই সাইট থেকে বহিষ্কারের জোর সুপারিশ করা হল। আপনারা কি বলেন?
@আদিল মাহমুদ,
ভাই আপনার দিল কি দয়া হয়না ? আবার আমারে জিগান। আপনি দেখতেছেন না, আমি সেদিন থেকে হাওয়া ?
@অভিজিৎ,
ন্যশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে একটা পর্বে দেখলাম, নামটা মনে নেই, এক প্রজাতির পাখি যেগুলির গায়ের রং ছিলো সাদা। UK তে ঐ অঞ্চলের বাড়ী গুলোর দেয়াল ছিলো ধব ধবে সাদা। পাখি গুলো বাড়ির দেয়ালে সেটে থাকতো। তাদের গায়ের সাদা রং সিকারী পাখির ছোখ ফাঁকি দিতে তাদের সাহায্যা করতো। পরবর্তিতে ঐ অঞ্চলে ব্যাপক ভাবে শিল্প স্থাপনের ফলে, কারখানার কালো ধোয়ায় বাড়ির দেয়াল গুলো ধীরে ধীরে বিবর্ন হতে হতে এখন প্রায় ছাই বর্ন। পাখিদের মধ্যে কিছু পাখির পালকের বর্ন বিবর্ন হতে থাকে। এখন সাদা পালকের পাখিই সেখানে সংখ্যা লঘু।
খুব কম সময়ের মধ্যেই পরিবেশের প্রভাবে পখির জিন কোডের পরিবর্তন ঘটে গেল। জিরাফের ক্ষেত্রেও তাই। কখনো সময় বেশী লাগে কখনো কম। আমার মনে হয়, পরিবেশ থেকেই সিগনাল আসে প্রথমে। কিছু প্রানী সেই সিগনালে সাড়া দিতে পারে যেমন লম্বাগলা জিরাফ বা পালকের রং বদলান পাখি। তারাই টিকে থাকে। কিন্তু সিগনাল অবশ্যই পরিবেশ থেকে আসে।
সবাই দেখছি আলোচনাতে দুটি জিনিষের উল্ল্যেখ করছে, জেনেটিক প্রভাব ও পরিবেশের প্রভাব। জেনেটিকের প্রভাব বলতে আসলে পরিবেশের পূর্ব প্রভাবের রেকর্ড ছাড়া আর কি বোঝান হয় তা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার না।
@আতিক রাঢ়ী,
ভাইয়া আপনি বন্যাপুর বইটা পড়ুন।তাহলে অনেক কিছুর জবাব পাবেন। ব্যাপার গুলো আমার কাছেও উল্টা পাল্টা ছিল,আমি আমার জবাব ওই বইতেই পেয়ে গেছি।
ল্যমার্কীয় তত্ত্ব আর হার্বার্ট স্পেন্সারের থিওরী আমাদের মনের ভেতর পুরোপুরি রয়ে গেছে। তাই চিন্তা করার শুরুতেই ওই চিন্তা আসে।
মন্তব্য অংশে প্রশ্ন থেকে জবাব দেয়াটা একটু কঠিন কাজ, এখানে প্রশ্ন আর উত্তরে স্বাভাবিক ভাবেই কিছু ছোট খাট ফাক থেকে যায়।
তাই আপনি বন্যাপুর ই-বুক টা পড়ুন,ওখানেই সব প্রশ্নের জবাব একত্রে পাবেন।
আর আপনি যদি আগেই ওই বইটা পড়ে থাকেন,তাহলে এত সব মন্তব্যের জন্য এই অধমকে ক্ষমা করবেন।
তানভী,
ভাল কথা মনে করেছেন। বন্যাদির বইটা আমার কাছে আছে কিন্তু পড়া হয়নি।
অনেক ধন্যবাদ সহজ রাস্তা বাতলে দেবার জন্য। আসলে আরো সর্ট-কাট মারার তালে ছিলাম। মানে অভিজিৎ দার কাছ থেকে যদি দু -এক ছত্রে উত্তরটা পেয়ে যাই তাহলে
অত বড় একটা বই পড়ার সময়, শ্রম দুইটাই বাঁচে আরকি। তা আপনাদের জ্বালায় ফাঁকি দেবার কি আর উপায় আছে। আজ থেকেই শুরু করবো। 😀
বন্যাদির নামটা টাইপের ভুলে বন্যদি হয়ে গেছে। এই ক্ষমাহীন ভুলের প্রতিকারের সব চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে এখানে এযেছি কৈফিয়ত দিতে। আমার Edit option কাজ করছে না।
@আতিক রাঢ়ী,
ভাইয়া আপনার কৈফিয়ত গায়েব হয়ে গেছে। আরেক বার লিখে দেন।
@আতিক রাঢ়ী,
খারাপ না, কিন্তু 🙂 । ভুলে সত্য কথাটাই বলে ফেলেছেন মনে হয় (কপালে যে এবার কি আছে কে জানে!)
আপনার বানান কারেক্ট হয়েছিলো, কিন্তু আপনার মন্তব্য পেন্ডিং এ জমাছিলো। এডিট করলে মন্তব্য পেন্ডিং অবস্থায় জমা থাকে। রিফ্রশ করলে সেটা দেখা যায়। এটা ঠিক করতে হবে।
আর হ্যা – বন্যার বইটা পড়ে দেখতে পারেন। আপনি যে প্রশ্নগুলো করছেন সেটা সম্ভবতঃ বইটার তৃতীয় অধ্যায়ে পেয়ে যাবেন।
বরাবরের মত সুন্দর এবং তথ্যবহুল লেখা। অনেক কিছুই জানলাম। ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা কে।
অভিজিৎ
লেখাটাই ২০০৫ সালের পরে, জেনোম প্রজেক্ট যেসব নতুন মার্কার নিয়ে কাজ করেছে, সেই কাজগুলো বাদ গেছে।
আমার আগের একটা লেখা থেকেঃ
সব থেকে বড় কথা জেনেটিক মার্কারের সাথে ব্যাবহার কতটা করিলেট করে, সেটাই প্রশ্ন বিদ্ধ। এই নিয়ে আমার আগের লেখাটা দিলাম
INAH3 নিয়ে সিমন লাভের পরীক্ষা অনেক দিন আগে থেকেই বাতিল-কারন সাম্পল সাইজ খুব ছোট ছিল। বড় স্যাম্পলে রেজাল্ট রিপিট করা যায় নি।
জেনোম প্রজেক্টের ওপর প্রকাশিত ফলগুলো দেখে আমার মনে হয়েছে
(১) সমকামিতা স্বাভাবিক এবং সমকামিতার জেনেটিক মার্কার আমাদের সবার মধ্যেই আছে। গে হয়ে জন্মেছে কথাটা ফালতু। তাহলে বলতে হয় সবাই গে হয়ে জন্মেছে! বাস্তব হল সবাই বাইসেক্সুয়াল হয়েই জন্মেছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটা আরো বেশী প্রকট। কিন্ত সমাজে গে এবং লেসবিয়ানদের বিরুদ্ধে যে তুমুল ঘৃণা এবং পাপবোধ ছড়ানো আছে, তার জন্যে আমাদের অবচেতন মনথেকেই আমরা গে বা লেসবিয়ান আচরন করি না। এটাও অনেকটা ধর্মের মতন ছোটবেলা থেকে ব্রেইন কন্ডিশনিং এর ফল।
(২) কিন্ত প্রকৃতি এবং পরিবেশের কারনে, তা কখনো ট্রিগার করে, কখনো করে না। যেমন অধিকাংশ গে ই গে হয়েছে, অন্য গে দের প্রভাবে। আগে গে ছিল এখন নেই-এমন অনেক পুরুষ আছে। রোমানরা সেনা বাহিনীতে গে হয়ে যেত আবার দেশে ফিরে ফ্যামিলি জীবনে ফিরত।
ফলে আমার যেটা ম নে হচ্ছে ( এগুলো এখনো প্রমানিত কিছু না) আমাদের বাইসেক্সুয়াল নেচারের ওপর সমাজ এবং ব্যাক্তির প্রভাবটাই আসল।
@বিপ্লব,
আসলে বাদ যায়নি। কাজের ফলাফল তেমন সিগনিফিকেন্ট না মনে হওয়ায় উল্লেখ করিনি। তারপরেও জেনেটিক একটা ফ্যাকটর থাকতে পারে, সেটা বোধ হয় অস্বীকার করা হচ্ছে না। উইকিতে লিখেছে – ‘With the larger sample set and complete genome scan, the study found somewhat reduced linkage for Xq28 than reported by Hamer et al. However, they did find other markers with significant likelihood scores at 8p12, 7q36 and 10q26. Interestingly, one of the links showed highly significant maternal loading, thus further confirming the previous family studies.’ কিন্তু আমার মতে এটা উল্লেখ করার মত সিগনিফিকেন্ট কিছু না।
পরিবেশের প্রভাব তো আছেই । সেজন্যই আমিও কিন্তু স্পষ্ট করেই লিখেছি – জেনেটিক ফ্যাকটরের পাশাপাশি পরিবেশের প্রভাবটিও থেকে যাচ্ছে পুরোমাত্রায়। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে মুখ্য কারণ হিসেবে প্রতিপন্ন করাটা এই মুহূর্তে আসলে সরলীকরণই হবে । আমার মনে হয় এপিজেনেটিক্সের পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে ভাল পথ দেখাবে। শুধু একটি জিনের টার্ণ অন বা অফের মাধ্যমেই যে জীবদেহে খুব বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে এটা কিন্তু আজ পরীক্ষিত সত্য। নোভাতে একটা ডকুমেন্টরী দেখেছিলাম – ‘গোস্ট ইন ইয়োর জিনস’
ইউটিউব থেকেও দেখে নিতে পারো (আমার অফিস থেকে এক্সেস নেই, কাজেই জানিনা ঠিক লিঙ্ক দিলাম কিনা)।
httpv://www.youtube.com/watch?v=YVwhJXqIG9c
সেই ডকুমেন্টরীতে সদৃশ যমজদের একটা কেস দেখানো হয়েছিলো – একই আইডেন্টিকাল টুইন (যারা ১০০% সদৃশ জিন দেহে বহন করে) হওয়া সত্ত্বেও , তাদের মধ্যে একজন খুব স্বাভাবিক, অন্যজন হয়েছে অটিস্টিক। সব কিছুই যদি জিনকেন্দ্রিক হত, তবে এটার আসলেই কোন ব্যাখ্যা নেই। সব কিছু আসলে জিনকেন্দ্রিক নয়, আসলে ঠিক করে বললে – একই জিন হয়ত একেক জনের দেহে একেক ভাবে ক্রিয়া করে – পরিবেশ থেকে পাওয়া সিগন্যালের উপর ভিত্তি করে। এপিসেনেটিক্স সেই রহস্যের দুয়ারই উন্মচন করছে ধীরে ধীরে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে – সদৃশ যমজ দুই ভাইয়ের ক্ষেত্রে কেনো একজন স্ট্রেট, আর অন্যজন আবার গে – এপিজেনেটিক্সের পরীক্ষাগুলো গোনায় না ধরলে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না।
আমি ঠিক ফালতু মনে করি না। সমকামিতার ব্যাপারটা একেকজনের কাছে একেক রকম। আমি আসলে অনেক গে দের সাথেই কথা বলে দেখেছি যে, এদের অনেকেই ছোটবেলা থেকেই তারা বিপরীতধর্মী লোকজনের প্রতি কোন আকর্ষণ অনুভব করতো না। কারো কারো ক্ষেত্রে পরিবেশ ফ্যাক্টর আছে, তবে, সবার ক্ষত্রেই ‘স্রেফ ছোটবেলা থেকে ব্রেইন কন্ডিশনিং এর ফল’ বলাটা হয়তো সরলীকরণ হয়ে যাবে। এদের অনেকেই চেষ্টা করেও যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তন করতে পারেনি। অনেকে আবার হতাশায় আত্মহত্যাও করেছে এমন উদাহরণও আছে অনেক (আমার কাছের এক পরিচিত ব্যক্তির ক্ষত্রেই এটা ঘটেছে) । কাজেই সবাই যে স্রেফ ব্রেন ওয়াশিং এর ফল তা নয়। বাইসেক্সুয়ালিটি যেমন আছে, তেমনি আছে তোমার আমার মত পরিপূর্ণ বিষমকামী, আবার আছে পরিপূর্ণ সমকামীও। কিন্সে তার গবেষনায় সেটা অনেক আগেই দেখিয়েছিলেন।
আমাদের মধ্যে অধিকাংশই ডানহতি, তাই না? এটাকে তুমি স্বাভাবিক বলতে পার। কিন্তু যারা ছোটবেলা থেকেই বা হাতে লেখে বা কাজকর্ম করে, তারাও কি স্বাভাবিক নয়? তাদের এই বা হাতে লেখার প্রবৃত্তি কি জন্মগত নাকি পরিবেশের ফল বলবে? সচীন ডানহাতে ব্যাট করে ভাল ফল পেয়েছে বলেই ব্রায়ান লারাকেও ডান হাতে ব্যাট করতে হবে, এমন তো কোন কথা নেই। যৌনপ্রবৃত্তির ব্যাপারটাও অনেকেই ডান হাতি- বা হাতির মত প্রবৃত্তির ব্যাপার মনে করেন।
আর যদি জেনেটিক ফ্যাক্টর থাকেও, তবে এমনো হতে পারে যে, যৌনপ্রবৃতির জিনগুলো অনেক ছোটবেলাতেই (অনেকের মধ্যে) ফিক্সড হয়ে যায়, অনেকটা আমাদের চোখের রঙ এর মত। আমরা চেষ্টা করলেও তা পরে বদলাতে পারি না। যারা পরে চেষ্টা করেও যৌনপ্রবৃত্তির পরিবর্তন ঘটাতে পারেন না তাদেরটা হয়ত এজন্যই। আরো একটা উদাহরণ হল – তোমার আমার ইন্ডিয়ান এক্সেন্ট। যারা ব্রাজিলে বড় হয়, তাদের আছে ব্রাজিলিয়ান একসন্ট। এখন পরবর্তী জীবনে আমরা সবাই আমেরিকায় এসেও আমাদের একসেন্ট খুব বেশি পরিবর্তন করতে পারি কি? ব্রাজিলিয়ানের সেই স্প্যানিশ-ব্রাজিলান একসেন্টের টান রয়েই যায়, আমাদের মধ্যে ইন্ডিয়ান এক্সেন্টের প্রভাব। তবে এটা ঠিক যে, আমাদের মধ্যে কেউ হয়ত দেখবে এদিক দিয়ে একে অন্যের চেয়ে ফ্লেক্সিবল – অনেকটাই মাতৃভাষার এক্সেন্ট অতিক্রম করে পরদেশী ভাষাটা ভালই রপ্ত করতে পারেন – তারপরেও একটু কথা বললেই দেখবে – পুরোপুরি আমেরিকান এক্সেন্ট হয়ে ওঠে না। আবার অনেকের একদমই হয় না – একটা শব্দ উচ্চারণ করলেও তা নিজের টিপিকাল মাতৃভাষার এক্সেন্ট নিয়ে বেড়িয়ে আসে। যৌনপ্রবৃত্তির ব্যাপারটাও হয়তো সেরকম।
@অভিজিৎ,
এই উদাহরন টানা ঠিক না। কারন ল্যাঙ্গুয়েজ জীন এবং তার ওপর উচ্চারনের প্রভাব বেশ প্রমানিত সাবজেক্ট। গে এর সাথে জেনেটিক ফেনোটাইপের প্রমান একদমই সেরকম কিছু প্রমানিত না।
এপিজেনেটিক্স দিয়ে গে ব্যাখ্যা করা যাবে বলে আমি মনে
করি না। কারন গে একটি ডেটারমিনিস্টিক ফেনোটাইপ-এপিজেনেটি্কস
জিনের্ রান্ডম পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে পারে (যেমন ক্যান্সার)।
আরো গবেষনার ফল না দেখে, মনে হয় এখুনি এইসব ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তবে গে দের প্রতি সহমর্মিতা থাকা উচিত।
@বিপ্লব,
এটা একটা এনালজি। আমি এটা বহু বইয়েই দেখেছি। উদাহরণ হিসেবে রাফগার্ডেনের ‘ইভলুশন রেইনবো’ বইটা দেখতে পার। ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যাপারটা নিয়েও অনেক মতবিরোধ আছে। পিঙ্কারের মডেল আর চমস্কির মডেল সম্পূর্ণই আলাদা, ব্যাপারটা ইনেট কিনা সে নিয়ে বিতর্ক আছেই।
এটাও তোমার অভিমত। আমার মত হল, এপিজেনেটিক্স আর সমকামিতার সম্পর্ক নিয়ে বরঙ খুব ভাল কাজ হচ্ছে। Bocklandt এর এই পেপারটা এপিজেনেটিক্সের কাজের উপরই –
Bocklandt S, Horvath S, Vilain E, Hamer DH (February 2006). “Extreme skewing of X chromosome inactivation in mothers of homosexual men”. Hum. Genet. 118 (6): 691–4.
আসলে এ ব্যাপারে এপিজেনেটিক্স যে পথ দেখাতে পারে তা কিন্তু বৈজ্ঞানিক সাময়িকীগুলোতেও লেখা হচ্ছে। তুমি ডিস্কোভারি ম্যাগাজিনের The Real Story on Gay Genes পড়ে দেখতে পার।
কিছু প্রাসঙ্গিক প্যারাগ্রাফ উল্লেখ করি –
The solution to that question is exactly what Bocklandt is trying to find. By looking not at DNA but at where DNA is switched off, he hopes to find the true genetic seat of homosexuality. …।।.
Bocklandt has collected DNA from two groups of 15 pairs of identical twins. In one group, both twins are gay. In the second, one twin is gay, and the other is straight. Identical twins have the same DNA, but the activity of their genes isn’t necessarily the same. The reason is something called methylation.
Methylation turns off certain sections of genetic code. So even though we inherit two copies of every gene—one from our mother, one from our father—whether the gene is methylated often determines which of the two genes will be turned on. Methylation is inherited, just as DNA is. But unlike DNA, which has an enzyme that proofreads both the original and the copy to minimize errors, methylation has no built-in checks. It can change from one generation to the next and may be influenced by diet or environment. It’s in this mutability that Bocklandt hopes to find the secret, by seeing which flipped genetic switches correlate with homosexuality.
দেখা যাক।
সেটাই।
আলোচনা করে ভাল লাগলো।
@অভিজিত
আমি এনালজিটার সাথে একদমই একমত্ না। যেকোন বিজ্ঞানের গবেষনাতেই বিতর্ক থাকে। কিন্ত FOXP2 এর সাথে ভাষার সম্পর্ক একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। ম্যাক্রো এবং মাইক্রোলেভেলেও। সেই তুলনায় এখনো গে এর সাথে কোন মার্কারের প্রতিষ্ঠিত করিলেশন নেই।
এপিজেনেটিক্সের ব্যাপারে আমি একমত না। তুমি যে পেপারটা দিলে, সেটা একটা বিতর্কের কারনেই পড়েছিলাম। এপিজেনেটিক্স দিয়ে টুইন স্টাডিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টার সাথে, তাই দিয়ে গে ব্যাপারটা সলভ করা যাবে কি না, দুটো আলাদা ব্যাপার। কারন সেটা করতে গেলেও গে এর সাথে জেনেটিক্সের আগে মাইক্রোবায়োলজিটা জানতে হবে। গে ব্যাবহারের পেছনে যখন কোন মাইক্রোবায়োলজির ই সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না জেনোম প্রজেক্টের পরেও, তখন সেটা না হওয়া পর্যন্ত এপিজেনেটিক্স দিয়ে সেই এম্পিরিক্যাল স্টাডই হয়ত কছু হবে, কনক্লুসিভ কিছুই জানা যাবে না।
গে ব্যাপারটার মাইক্রোবায়োলজি যদ্দিন আমরা না জানব, তদ্দিন, আসলেই গে নিয়ে আমরা কিছুই জানি নি। অতীতের সব গবেষনা থেকে কিছু এম্পিরিক্যাল সত্য বেড়িয়ে এসেছে-যার থেকে আসলেই কোন সিদ্ধান্তে পৌছানো সম্ভব না। সুতরাং আমার মনে হয় আরো ১০-২০ বছর বাদে আমরা গে এবং বিজ্ঞান নিয়ে কিছু বলতে পারব। ১৯৯১ থেকে আজ পর্যন্ত গে নিয়ে যা কাজ হয়েছে, কোন কিছুই ফাইনালি টেকে নি। এই ভাবেই বিজ্ঞান এগোতে থাকে। কিন্ত যে ব্যাপারের ওপর বিজ্ঞান এখনো কোন কনক্লুসিভ কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না, সেখানে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার করা কাজের কাজ।
আমি এই কথাটা লিখছি কারন অন্য একটি ফোরামে গে নিয়ে আমাকে ্জীবনের সব থেকে বড় বিতর্ক লড়তে হয়েছে-যেখানে প্রায় ৪০০০ পোস্টিং ছিল-এবং আমার বিরুদ্ধে ছিল কিছু গে -যারা গবেষক ও বটে। সেই দীর্ঘ একমাস কালীন বিতর্কে আমি অনেক কিছু শিখি-কিন্ত যেটা আমার বিরোধি পক্ষে শেখে এবং হতাশ হয়, আসলেই বিজ্ঞান গে নিয়ে মাইক্ত্রোবায়োলজি লেভেলে কিছুই জানে নি-প্রায় সব চেষ্টাই এক ধরনের ব্যার্থ হয়েছে বলা যায়। অথচ তাদের ধারনা ছিল, গে কেন হয় বিজ্ঞান ভাল ভাবেই জেনে গেছে, এবং তারা প্রতিষ্টিত সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে। এই ধারনাটা অধিকাংশ গে এবং লেসবিয়ান এক্টিভিস্টরাই মনে করেন। সেটাও এক ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ায়। কারন আমরা সত্যই জানি ন, কেও গে হলে, আবার ফামিলি লাইফে ফিরতে পারবে কি না। এর পক্ষে বিপক্ষে দুদিকেই জোরালো প্রমান আছে।
@বিপ্লব,
দেখো আমি কিন্তু মানুষের উচ্চারনের নমনীয়তা (ফ্লেক্সিবিলিটি) নিয়ে কথা বলেছি, সার্বিক ভাবে FOXP2 নিয়ে নয়। তুমি যদি FOXP2 র কথাও ধর, তাহলেও দেখবে এটা পাখি, মাছ, কুমির ইত্যাদিদের মধ্যেও এ জিনটা আছে। কিন্তু মানুষ ছাড়া আর কেউ কথা বলতে পারেনা। কিছু গবেষক শিম্পাঞ্জির জিনের দুটো এমিনো এসিডের বদলের ফলে মানুষের মধ্যে ভাষার উদ্ভব ঘটেছে বলে যে মত দিয়েছেন, সেটাও সার্বিকভাবে প্রমাণিত নয়। অনেকেই আবার এর মধ্যে কোন সম্পর্ক খুঁজে পাননি। যা হোক এটা বলছি এ কারনেই যে, বিজ্ঞানে সব সময়ই কিছু রহস্য থাকবে, সেটা সমাধানের চেষ্টাটাই লক্ষ্য।
যা হোক আমি মানুষের একসেন্টের সাথে যৌনপ্রবৃত্তির ভাল এনালজি পাই কারণ – দেখা গেছে এক্সেন্টের প্রতিবন্ধকতা কেউ পরবর্তীতে অতিক্রম করতে পারেন, কেউ পারেন না। যৌনপ্রবৃত্তিটাও অনেকটা ওরকমই। সেজন্যই সায়েন্টিফিক আমেরিকান মাইন্ডের ‘ডু গেস হ্যাভ এ চয়েস’ প্রবন্ধে (২০০৬) একটি তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে –
‘যেহেতু ছোটবেলা থেকেই বিষমকামী সমাজের সদস্যদের কাছ থেকে আসা অব্যাহত চাপ সহ্য করে সমকামীদের বড় হতে হয়, এদের মধ্যে যারা শেষ পর্যন্ত সমকামী হিসেবে টিকে থাকেন, এবং নিজেদের সমকামী হিসবেই সমাজে পরিচিত করেন তারা যে সমকামের প্রতি একটা জিনগত তাড়না থেকেই এটি করেন তা বোধ হয় বোঝা যায়। যদিও সমকামীদের একটা অংশ তাদের যৌনপ্রবৃত্তি পরিবর্তন করতে পারেন বলে জোরালো প্রমাণ পাওয়া গেছে, তারপরেও সমকামীদের একটা বড় অংশই তা পারেন না, কিংবা পারলেও স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নয়।‘
আর আমি আগেই বলেছি, এই এনালজিটা আমি বিবর্তনের বইয়েই পেয়েছে। আমি ‘Evolution’s Rainbow’ থেকে হবহু উদ্ধৃত করছি (পৃঃ ২৫৭-২৫৮)-
I believe sexual orientation develops analogously to an accent in speech, which also develops early in childhood. Some people don’t deviate even slightly from the accent they learned as a child, although thick Russian accent is not genetic. Other people easily acquire a new accent – I can change mine in hours. Some people’s sexual orientation is imutable, whereas other people’s shifts…
আমি তোমাকে ডিস্কোভারি ম্যাগাজিন থেকেও অংশবিশেষ কোট করেছিলাম এটুকু জানাতে যে বিজ্ঞানীরা কিন্তু ভাবছেন যে এপিজেনেটিক্স দিয়ে ভবিষ্যতে সমকামিতা্র রহস্যকে ব্যাখ্যা করা যাবে। কেন শতভাগ সদৃশ জিন শেয়ার করার পরও একজন যমজ সন্তানের যৌনপ্রবৃত্তি বিষমকামী হল, আর অন্য জনের সমকামী – ব্যাপারটা কৌতুহল-উদ্দীপক। দেখা গেছে একই জিন শেয়ার করলেও তাদের ফাংশন এক হয় না। আর এখানেই এপিজেনেটিক্স বেশ ভাল একটা পথ বাৎলে দিচ্ছে। কারণ আমরা জানতে পারছি কিভাবে এপিজিনোমগুলো সুইচ অন বা অফ করে জিনের ফাংশন বদল করে দিতে পারে। সেজন্যই এক যমজভাই রোগাক্রান্ত হলেও অন্যজন নাও হতে পারে, কিংবা একজন স্ট্রেট হলেও অন্যজন হতে পারে গে। জিনের এই এপিজেনেটিক নিরোধন (supression) বা সক্রিয়করণ (activation) হয়ত ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ব্যক্তিবিশেষের উপর কাজ করে তাদের সেক্সুয়াল প্রেফারেন্সকে ডিক্টেট করে। এটা যে গবেষণার এক সজীব বিষয় তা কিন্তু যে কেউ স্বীকার করেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকেও এটা নিয়ে ফীচার করা হয়েছিলো। তুমি দেখে নিতে পার –
httpv://www.youtube.com/watch?v=saO_RFWWVVA
ভিডিওটার শেষ দিকে আমি যা বলছি সেটারই প্রতিধ্বনি পাবে। তারপরেও বেশ কিছু জায়গায় রহস্য আছেই। তা তো থাকবেই, সেটা সমাধান করাই হবে আগামী দিনের গবেষকদের কাজ।
আমি আমার লেখায় এখন পর্যন্ত গবেষণার একটা ধারাবাহিক ছবি আঁকতে চেয়েছি। এটা ঠিক হয়ত এখনো কোন কিছুই কনক্লুসিভ নয়, কিন্তু প্রান্তিক গবেষণাগুলো জানতে তো দোষের কিছু নেই। বিশেষতঃ বাংলায় এগুলো খুঁজে পাওয়াই দুর্লভ। সেই চেষ্টা থেকেই লেখা, আর মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রসার করার ব্যাপারটায় বোধ হয় আমরা দুজনেই একমত।
আমরা বোধ হয় দুজনেই দুজনের কথা বলে ফেলেছি। এখন যে লেভেলে আমাদের দ্বিমত বা বিতর্কটা হচ্ছে সেটা বিষয়ের খুব ইন্ট্রিকেট ডিটেলে। ওইটুকু বরং বাদ থাকুক। পাঠকদের বিরক্তি বেশি না বাড়িয়ে আমরা বরং সামনে এগোই। সামনে এ নিয়ে আরো আলোচনা তো হবেই…।
পূর্ন সহমত পোষন করছি।ভয়-ই হলো মূল কারন।আর সেটা আসে অজ্ঞতা থেকে।না জানাই অজ্ঞতার মূল কারন।যা আসে মূলতঃ পরিবার,সমাজ ও রাষ্টীয় এবং ধর্মীয় ক্ষমতা থেকে।রাষ্টীয় ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজই তো হলো মানব জাতির জৈবিকতাকে নিয়ন্ত্রন করা ।
বাংলাদেশের এক গে কাপ ল কে খুব কাছ থেকে জানতাম।একসাথে ১০ বছর জীবন কাটানোর পর পরিবার ও সমাজের ভয়ে পরে দুজনেই বিয়ে করে।
অভিজিত এর অন্য পর্ব গুলি পড়ার জন্য অপেক্ষায় আছি।
আমি যখন দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়তাম তখন আমার এক ছেলে বন্ধু অপর এক সমবয়সী ছেলের সাথে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে যাকে প্রেমের চেয়েও বেশি কিছু বলতে হয়। পারিবারিকভাবে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর তারা যাতে একত্রিত হতে না পারে তার ব্যবস্থা করা হয়। এতে আমার বন্ধুটি খুব মুষড়ে পড়ে। আমাকে তার বিচ্ছেদের কাহিনী বলে উচ্চস্বরে কাঁদতে শুরু করতো। দীর্ঘদিন তাকে সান্তনা দেয়ার দায়িত্ব আমাকে পালন করতে হয়েছে। ওর আরেকটি ব্যাপার ছিলো –সে কখনো মেয়েদের প্রতি কোনো আকর্ষণ অনুভব করতো না। ওর সরল প্রশ্ন ছিলো –‘কেন আমার এমনটি হলো’।
এ ব্যাখ্যাকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে আরো গবেষণার প্রয়োজন।
হ্যা, আমারো তাই মনে হয়। প্রাণীকে টিকিয়ে রাখার জন্য যৌনতা নয় বরং যৌনতার জন্যই প্রাণীরা এমনভাবে বিকশিত হয়েছে ও টিকে রয়েছে।
অভিজিৎ দাকে আমি কোনো লেখার জন্য ধন্যবাদ দেই না কেনো জানেন? কারণ এগুলো এত ভালো ও মনোমুগ্ধকর হয় যে ধন্যবাদ দেয়াকে আমার কাছে একধরণের বাতুলতা বলে মনে হয়।
@সৈকত চৌধুরী,
অভির লেখার সাথে আমার পরিচয় ওর লেখালেখির শুরু থেকেই। ওর কোন লেখাই মনে হয় না আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। তারপরও অভির প্রতিটা নতুন লেখাই আমার কাছে অনন্ত বিস্ময় হয়ে আসে। বুকের মধ্যে আদিম একটা অনুভূতি ভয়ানকভাবে কিলবিল করে উঠে। আদিম সেই অনুভুতির নাম ঈর্ষা।
বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিতে দুই বাংলায় অভির মানের আর কেউ আছে কিনা সে বিষয়ে এখন আর কোন সন্দেহই নেই আমার। নির্দ্বিধায় বলে দেয়া যায়, কেউই নেই। উসাইন বোল্টের মত ঝড়ের গতিতে অভি সবাইকে পিছনে ফেলে এতোখানিই সামনে চলে গেছে যে পিছন থেকে আর কারো পক্ষে তাকে ছোঁয়াটাই এখন অসম্ভব কাজ।
শুধু বিজ্ঞান বিষয়েই নয়, নানান ধরনের বৈচিত্র্যময় এবং দুঃসাহসী বিষয় নিয়ে লিখে চলেছে অভি ক্রমাগত। যে সব বিষয় বাঙালির মননে এখনো আসেনি বা আসার সাহসই পায়নি, সেই বিষয়গুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিজ্ঞান এবং যুক্তির মোড়কে পরিবেশন করে চলেছে সে। আধুনিক চিন্তা-চেতনাতে গড়পড়তা বাঙালির তুলনায় শতবর্ষ এগিয়ে আছে অভি।
ব্যতিক্রমী চিন্তা-চেতনা এবং লেখালেখির কারণে আজ হয়তো অনেকেই অভিকে বাপ মা তুলেও গালি দিচ্ছে, সমালোচনা করছে অযৌক্তিকভাবে, কিন্তু এমন একদিন আসবে যখন এই অভিজিৎ রায় এবং মুক্তমনাই যুক্তিবাদী চিন্তার ইতিহাসে জ্বলজ্বল করে জ্বলে থাকবে।
আমার অবশ্য অতো কিছু নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই বিন্দুমাত্রও। অভি ইতিহাস হলেই কী বা না হলেই কী। আমার খালি একটাই চিন্তা ঘুরপাক খায় মনের মধ্যে সারাক্ষণ। এই ছোকরা এত্তো এত্তো বই পড়ার সময়টা পায় কই? :-X
বন্যার জন্য বড়ই দুষ্কু পাই মনে। 😀
@ফরিদ আহমেদ,
হায়রে ফরিদ ভাই, কয়লার ময়লা, এত সহজে কি আর যায়? সময় তো লাগবেই, আপনার জন্য পূর্ন সহানুভূতি রইলো। কমেন্টটা এরকম শোনাচ্ছে, (ফরিদ ভাই বলে, ধরে নিচ্ছি প্রচ্ছন্ন সেক্সিষ্ট মনোভাবটা নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত 🙂 ) …… ‘ আহহারে, বাড়ির কর্তাটা পন্ডিত ব্যক্তি, সারাদিন ধরে বই পড়ে জ্ঞানচর্চা করছে, আর মেয়েমানুষগুলো আহাজারি করে ঘুরে ফিরছে ’ । ধরেন, এমন যদি হয় যে, বাড়ির ছোট বড় সবাইই একইরকমভাবে বই পড়ে, তাই অভিজিতের পড়ালেখাটাকে এক ধরণের আশীর্বাদ হিসেবেই ধরে নেওয়া হয়, তখনো কি একইভাবে দুষ্ক পাবেন?
@বন্যা আহমেদ,
মোটেই অনিচ্ছাকৃত না। নারীদের নারীবাদী হওয়াটা যদি প্রগতিশীলতা হয়, তবে পুরুষদের পুরুষবাদী হওয়াটা দোষের কি হলো? :laugh:
দুষ্ক কেন পাবো? অভির এতো বড় ঈদের আনন্দে দুষ্ক পাই কেমনে? 😀
আমার বাসায়তো প্রতিদিনই আমার ল্যাপটপটা পুড়িয়ে দেবার হুমকি ধামকি শুনি। ওই রকম বই হাতে বউকে বসিয়ে দিতে পারলে কী যে ভালটাই না হতো। 😉
ফরিদ ভাই,
হাঃ হাঃ এইবার নারীবাদীরে সামলান, আমি ভাগি 😎
@অভিজিৎ,
আরে মিয়া ডরের কিছু নাই। আমরা পুরুষবাদীরা সব আছি কি করতে? :smug:
চমতকার এবং ফাটাফাটি একটা লেখা।
এধরনের লেখা এর আগে পড়ার সুযোগ পাইনি অবস্থানগত কারনে। এ সুযোগ করে দেয়ায় লেখক তথা ব্লগ কর্তৃপক্ষকে দন্যবাদ জানাচ্ছি।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম…
সম্পুর্ণ বিজ্ঞান-নির্ভর পোস্ট হিসেবে লেখার চেষ্টা করা হল। আলোচনা শুধু বিজ্ঞানের বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকলেই আমি খুশি হব। সমকামিতা পাপ না পূন্য কিংবা কোন ধর্মগ্রন্থের কোন আয়াতে এ সম্বন্ধে কি বলা আছে, কিংবা বাংলাদেশের সমাজে এটা পশ্চিমা বিকৃতি কিনা কিংবা অপরাধ কিনা – এগুলো এই থ্রেডে আলোচনা না করতে আহবান জানাচ্ছি। সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পরে একটি পর্ব লেখার ইচ্ছে আছে। এই পর্বের আলোচনা শুধুই বায়োলজিকাল দৃষ্টিকোন থেকে, তা বলাই বাহুল্য।