পূর্ব থেকে পশ্চিম
পরশপাথর
পর্বঃ ৫
ওয়াশিংটনের ‘Dulles’ বিমানবন্দরে বলতে গেলে খুব দ্রুতই ইমিগ্রেশান পার হয়ে গেলাম। সব জিনিসপত্র নিয়ে যখন চেক–ইন করতে গেলাম, সেখানে বসে থাকা ভদ্রমহিলা জিজ্ঞেস করল, ‘কোন দেশ থেকে এসেছি।’ আমি ‘বাংলাদেশ’ বলতেই চোখেমুখে এমন একটা উত্তেজনা নিয়ে ‘ওহ, বাংলাদেশ!!!’ বলল, মনে হলে তার শ্বশুরবাড়ী বাংলাদেশের কোন এক নাম না–জানা পাড়া–গাঁয়ে। আমি মনে মনে বলি, ‘আপনি ভুল লোকের কাছে উত্তেজনা প্রকাশ করেছেন ম্যাডাম। আপনাদের এইসব বাহারী এক্রপ্রেশানের সাথে লোকটা ভালো করেই পরিচিত।’ আমি ঠিকই জানি, আমি যদি বলতাম আমি ‘পাপুয়া নিউগিনি’ থেকে এসেছি, তাহলেও সে এই একইরকম উত্তেজনা দেখিয়ে বলত, ‘ওহ! পাপুয়া নিউগিনি, আই লাভ দ্যাট কান্ট্রি’।তারপর আমাকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘Do you have any mate with you?’ আমি ভাবলাম ‘mate’ বলতে আবার কি বুঝাচ্ছে। ‘সঙ্গী–সাথী’ মানে ‘বউ–টউ’ জাতীয় কিছু হবে মনে হয়। তাড়াতাড়ি বললাম, ‘No’। শুনেই খুশি মনে আমাকে যেতে বলে দিলেন, আমিও সামনে চলে গেলাম। পরপর অনেকজনকে যখন একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে তখন আমি বুঝতে পারলাম, আসলে ‘mate’ না, জিজ্ঞেস করছে সাথে ‘meat’ বা ‘মাংস’ জাতীয় কিছু আছে না কি? হায় খোদা! কোথায় ‘meat’ আর কোথায় ‘mate’। তবে মনে মনে এই ভেবে খুশি হলাম যে, ‘Yes’ আর ‘No’ এ–দুটো শব্দ দিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে দেয়া যাবে। যাই জিজ্ঞেস করুক, হয় বলব ‘Yes’, নয়তো বলবো ‘No’।
এত লম্বা একটা ভ্রমন দেব অথচ একবারও ঝামেলা পাকাবো না, এটা ভাবতে নিজের কাছেইতো খারাপ লাগে। মনে হয় এরকম বিরক্তিকর রকমের গোছালো মানুষ হলেতো জীবনটা একঘেঁয়ে হয়ে যাবে। অভ্যন্তরীণ ইউনাইটেড এয়ারয়েজের ফ্লাইট আরো পাঁচ ঘন্টা পরে। তাই মনের সুখে এয়ারপোর্টের আনাচে–কানাচে ঘুরতে লাগলাম।আসপাশে নানা–দেশীয় সাদা চামড়ার লোকজন। তাদের দেখে আমার ছোটবেলায় পড়া সেই কবিতার লাইন মনে পড়ে যাচ্ছিলো, ‘কালো আর ধলো বাহিরে কেবল ভিতরে সবার সমান রাঙ্গা’। আমি কালো সেই জন্য নিজেকে সান্তনা দিচ্ছিলাম না; বরং ওরা এমন বিশ্রী রকমের সাদা যে তাদের কে সান্তনা দিয়ে কবিতার লাইনগুলো ভাবছিলাম। মনে মনে বলছিলাম, ‘তোমরা দুঃখ পেয়োনা, তোমাদের চামড়া বিশ্রী রকমের সাদা হয়েছেতো কি হয়েছে, কপালগুণে আমরা হয়তো সাদা হয়নি, তাতে কি? আমাদের রক্তের রংতো একই রকমের লাল।’ নতুন নতুন যা দেখছি তাতেই অবাক অবাক লাগছে। তারপরও বারবার মনে মনে বলছি কই অবাক হবার মত কিছুইতো পাওয়া যাচ্ছেনা।আসলে নতুনের প্রতি মানুষের আকর্ষণতো চিরকালের।সে–আকরষণ এড়ানো অসম্ভব। এদিক–সেদিক ঘুরে ফিরে একঘন্টা আগে গিয়ে ইউনাইটেডের লাইনে দাঁড়ালাম। পাক্কা একঘন্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়েও কোনাভাবেই প্লেন ধরা সম্ভব হলো না। সবসময় যা হয় অর্থ্যাৎ মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য প্লেন মিস করলাম। কে জানতো এখানকার অবস্থা এতই খারাপ যে, একঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও কাজ হবে না। অতএব, চমৎকার একটা ঝামেলা করেই ফেললাম। আমি জানবার কথা নয় যে, এখানকার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট আমাদের ফার্মগেট রূটের ৮ নাম্বার গাড়ির মত, আর তাতে প্রতিনিয়ত হাজার লোক চলাচল করে।
সিকিউওরিটি চেকিংয়ের পর এয়ারপোর্টের ভিতরে ইউনাইটেডের কাউন্টারের ভদ্রমহিলার কাছে এগিয়ে গেলাম। আমার সামনের লোকটাও প্লেন মিস করেছে। তাকে আবার নতুন করে টিকিট কাটতে হবে। নতুন করে টিকিট করার জন্য যে টাকাটা খরচ করতে হচ্ছে তার অর্ধেক পরিমাণও মন খারাপ করিয়ে দেবার জন যথেষ্ট। মনে মনে নিজেকে বুঝানোর চেষ্টা করলাম, ‘এটা আমার দোষ না’। মন বলে, ‘তোমার দোষ’। কাউন্টারে গিয়ে সব বুঝিয়ে বলতেই আমাকে বলা হল, এখন আর শিকাগোগামী কোন ফ্লাইট নেই। সকাল সাতটায় যেতে হবে। উল্লেখ্য, আমার গন্তব্য ‘ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট শিকাগো।’ দু’দিন পরেই আমার পিএইচডির ক্লাশ শুরু। তবে সবচেয়ে সুখের কথা হল, আমি ইন্টারন্যাশনাল এবং কাতার এয়ারওয়েজের যাত্রী হবার বদৌলতে আমাকে আবার টিকিট কাটতে হবে না। ওদিকে, সারারাত সোফায় ঘুমিয়ে ভিতরেই কাটিয়ে দেয়া যাবে অনায়াসে। টিকিট কাটতে হবেনা দেখে আমি এত খুশি হলাম, মনে হল প্লেনটা মিস করে খুব ভালো হয়েছে, না হলে এই আনন্দটা আমি পেতাম না। মনকে বলি, ‘দেখ আমি প্ল্যান করে প্লেনটা মিস করেছি’। মন মুচকি হাসে। বলে, ‘তাই বুঝি’?
শিকাগোর ও’হেয়ার এয়ারপোর্টে একসময়কার বুয়েটের ছাত্র বাংলাদেশী সিনিয়র ভাই আমাকে রিসিভ করতে আসবেন। তাকে ফ্লাইট মিস করার ব্যাপারটা জানাতে হবে। কয়েন–ফোন থেকে ফোন করতে যেতে না যেতেই, একটা মেয়ে নিজ থেকে এসেই ফোন দিয়ে বলল, ফোন করতে চাইলে তার ফোন থেকে করতে পারি। জিজ্ঞেস করলাম, পে’ করতে হবে না কি।’ হাসি মুখে বলল, ‘না।’ মনে মনে ভাবলাম, ‘বাহ! এখানকার মেয়েগুলোতো ভালোই।’ সিনিয়র ভাইকে ফোন করে বললাম, ‘আমি এই ফ্লাইটে আসতে পারছিনা, সকাল সাতটার ফ্লাইটে দিয়েছে।’ ভাইয়া বলে,‘ফাজলামি নাকি? ওদেরকে বল হোটেল দিতে। কোন ভাবেই ছেড়ে দিবা না।’ আমি মনে মনে বলি, ‘কে যে কাকে ছেড়ে দিচ্ছে, সেটা যদি আপনাকে বুঝাতে পারতাম।’ এবার আর কোন ভুল নয়, সকালে সব ঠিকঠাক করে প্লেনে উঠে সরাসরি ‘শিকাগো’র ‘ও’হেয়ার’ বিমানবন্দরে।এখানে আবার আরেক বিপত্তি। সব জায়গা খুঁজেও একটা লাগেজ খুঁজে পেলাম না। বিমানবন্দরের দু’জন কর্তব্যরত লোক আমার গতিবিধি সন্দেহজনক ভেবে কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘Can We help you Sir?’। আমার কি জানি কি হলো, আমি খুব ভাবসাব নিয়ে বললাম, ‘No’। এমনভাবে বললাম যেন, ‘আমার বাবা এ–শহরের মেয়র। তোরা আর আমাকে কি হেল্প করবি।’ তারপরই মনে হলো, আরে আমারতো আসলেই হেল্প দরকার। এবার কাচুমাচু করেই বললাম, এই এই অবস্থা। এই লোকগুলোর একটা আশ্চর্য রকমের অসুখ আছে; এরা সবকিছুই হাসিমেখে করে। বলতে না বলতেই হাসিমুখে আমার টোকেন স্ক্যান করে, ভিতরের রুম থেকে লাগেজ বের করে দিল। ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
আমার সেই সিনিয়র ভাই, আগে থেকেই আমার থাকবার সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। এবার বাসায় যাবার পালা। বিমানবন্দর থেকে বাসার পথে যেতে যেতে নতুন দৃষ্টিতে দেখতে থাকলাম নতুন এক শহর। প্রথম দিন হয়তো অন্য আর সব দিনের থেকে অন্যরকম, কিছুই যেন দেখা থেকে বাদ দিতে চাইলাম না। রাস্তার দু’ধার, ট্রাফিক সিগন্যাল, বাহারী গাড়ী, দোতলা বাড়ী, সকালের আকাশ, বাস, ট্রেন, সব, সব, সবকিছু। শিকাগোর ডাউনটাউনের উঁচু উঁচু সব ভবনগুলোতো যেন একটা আরেকটার সাথে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। শহরের মাঝে ছোট্ট একটা নদীর মতো দেখলাম, নাম জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, ‘রিভার শিকাগো’। রাস্তাঘাট অনেক পরিচ্ছন্ন, সবকিছু গোছানো, পরিকল্পনামাফিক। সব দেখলাম একে একে, আর দেখলাম মানুষ। যে জিনিস আমাকে সবচেয়ে অবাক করে। হাজার রকমের মানুষ,তাদের আছে হাজার রকমের গল্প। হাজার রকমের ইতিহাস। ইচ্ছে করে সব ইতিহাস আমি জেনে ফেলি।
নিজের বাসাটা সবার আগে দেখে নিলাম। আমার ইউনিভার্সিটির পাশেই। খুবই পছন্দ হলো। পছন্দ হবার খেসারত হিসেবে মোটামুটি ডাবল ভাড়াই আমাকে গুণতে হবে। সাথে সাথে হিসেব করে দেখলাম ঠিক কয়মাস পর দেশে ফিরতে পারব। নাহ! মাস নয়, বছর। যে টাকা পাব, তা দিয়ে কোনভাবে থাকা খাওয়া যেতে পারে। প্রিয় মাতৃভূমিতে যেতে পারবো হয়ত কয়েক বছর পর; যখন বিমানের টিকিট কাটার টাকা জমবে।সেটা ভেবে হঠাৎ মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।বাসা থেকে বের হয়ে সিনিয়র সেই ভাইয়ের বাসায় নাস্তা সেরে চলে গেলাম কেনাকাটায়। সরাসরি ‘ডেভন’ এলাকায়; বাংলাদেশি, পাকিস্তানি আর ইন্ডিয়ানদের নিজস্ব ভুবন। ‘ফিস মার্কেট’ আর ‘ফিস কর্নার’। কি চান আপনি? ইলিশ, রুই, কাতলা, টেংরা, বাটা, বোয়াল, কোরাল, মলা, চিংড়ী, রাঁধুনী গুঁড়া মশলা, পান, সুপুরি, ইস্পাহানি মির্জাপুর চা– অনেক কিছুই আছে। মুড়ির দামই দেখি বেশি, মুড়ি আর কচুর লতি। তিন ডলার দাম প্রতি প্যাকেটের। মুড়ি আর কচুর লতির দাম দেখে তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বেড়ে গেল; কত অবহেলাই না করেছি বাংলাদেশে।‘ডেভন’ এসে কিন্তু মনটাই ভালো হয়ে যায়। সবদিকে যেন নিজেদের লোকজন, নিজেদের কালচার। কালচারের টান যে বড় টান।
দেশ নয়, এখানে আমাদের পরিচয় হয়ে উঠেছে একটা মহাদেশ। ভারতীয় উপমহাদেশ। আমরা সেখানকার, অতএব আমরা আপনজন। পাকিস্তানী হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসার জন্য সব বাজার করে ফিরে আসলাম। বাজারতো বাজার– খালি রান্না করবার এত রকমের যন্ত্রপাতি কিনতে কিনতেই অস্থির হয়ে গেলাম। তবে কিছু জিনিস বাসার পাশের সুপার শপ থেকে কিনতে পারবো বলে ‘ডেভন’ থেকে নিয়ে আসলাম না। ‘ডেভন’ থেকে ফিরে এসে সেই সুপার শপেই গেলাম। সিনিয়র সেই ভাইও একসাথে সব কিনে দিচ্ছেন, উনার সাথে গাড়ি আছে। পরে উনি না থাকলে কিনবো কি করে? এখানেতো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাহন ‘রিক্সা’ নেই। এই সুপার শপের আবার নিজস্ব কার্ড টাইপ আছে, যেটা দিয়ে ভালোই মূল্যছাড় পাওয়া যায়। আমি যথারীতি কাউন্টারের মেয়াটাকে জিজ্ঞেস করলাম,‘May I have card from here?’। উত্তরও আসলো, ‘Sorry Sir, We don’t sell car here.’ হায় কপাল, আমি বলি কি? আর সে বুঝে কি? ভাবলাম, কখন আসবে সেই দিন, যেদিন এরা আমার কথা বুঝতে পারবে, আমিও তাদের কথা বুঝতে পারবো?
এসবের ভিতর দিয়ে, এভাবেই কেটে গেলে হাজার মাইল দূরের এক শহরে আমার প্রথম দিন। প্রকৃতির চিরন্তন নিয়ম মেনে নেমে আসে রাত। রাতের নির্জনতায় জেগে থেকে ভাবি কতদূরে চলে এসেছি। কোথায় বাড়ি, কোথায় ঘর, কত পরিচিতজন, আত্মীয়–স্বজন, আপনজন, কেউতো নেই এখানে, কেউ নেই। আবারো মনে হল, এতবড় পৃথিবীতে আসলে সব মানুষই একা। আর একদিন পরেই আমার ইউনিভার্সিটির ওরিয়েন্টেশান, অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস–এ রিপোর্ট করে যোগ দিতে হবে সেখানে। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরও পাইনি।(…চলবে)
পরশপাথর
অক্টোবার ৩০, ২০০৯
এমনিতেই পরশের পকপকানিতে পেরেশানি দশা আমার। এর মধ্যে কোথা থেকে আবার ক্যাথি এসে কুটমুট করছে। :weep:
ভাল লাগে বলে নেইনিগো ভইন। পুলিশ হলে মাগনায় সিনেমা দেখা যায় যে। :giggle:
আমার প্রিয় সিনেমা হচ্ছে মেয়েরাও মানুষ। মেয়েদের দুঃখ কষ্টে ব্যথিত হয়ে, তাদের অবমাননায় ক্ষুব্ধ হয়ে ঢালিউডের এক বিপ্লবী পরিচালক এই সিনেমা বানিয়েছিলেন। পরশ যেভাবে পুলিশদেরকে মানুষের কাতার থেকে বের করে দিচ্ছে তাতে আমিও ক্ষুব্ধ বিক্ষুব্ধ চিত্তে ‘পুলিশরাও মানুষ’ এই নামে একটা সিনেমা বানাবো বলে ঠিক করে ফেলেছি। আর ওই সিনেমায় ভাম্প গার্লের চরিত্রটা করবে লাস্যময়ী, হাস্যময়ী, সুন্দরী শ্রেষ্ঠা প্রিন্সেস পরশি খান। :laugh:
@ফরিদ আহমেদ,
পুরোনো দিনের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছেনতো। ‘মেয়েরাও মানুষ’ দেখেছিলাম জোনাকী সিনেমা হলে।’ঋতুপর্ণা’কে দেখতে গিয়েছিলাম। আমি আর পল্টন এলাকার সব রিক্সাওয়ালা মিলে ব্যাপক দেখলাম। ভাবছি ওসব কিছু নিয়ে একটা লিখবো। আপনি কি বলেন? 🙂
দাঁড়ান পূর্ব থেকে পশ্চিম না বাড়িয়ে ওটা নিয়ে সিরিজ শুরু করে দিচ্ছি।
আপনার আপত্তি না থাকলে নতুন সিরিজে মেইন চরিত্র আপনার নামে রাখতে চাই। :laugh:
@পরশ পাথর,
তাইতো বলি! আপনাকে আমার এতো চেনা চেনা লাগছে কেন? আমিওতো জোনাকীতেই দেখেছি ছবিটা। দুনিয়াটা মস্ত ছোট। 😕
নাকি চাংকি পাণ্ডেরে দেখতে গেছিলেন? ঠিক কইরা কন। লইজ্জ্বার কিছু নাই।
হে, হে, হে, এতো করে যখন বলছেন আপত্তি করি কেমনে? 😀 তয় খালি নামের শেষে আলী টা লাগাইয়েন না। 😛
পরশকাতর (পরশের জন্য কাতর – কি সমাস যেন হবে এটা? ভাষা-পুলিশ ফরিদ আহমেদের সাহায্য চাই।) পরশপাথরের জন্য সহানুভুতি। পশ্চিমে স্বাগতম। লেখাটা খুবই উপভোগ করছি। চমতকার পর্যবেক্ষণ, দারুণ বর্ণনা!
@ইরতিশাদ,
শেষ পর্যন্ত ইরতিশাদ ভাইও আমাকে পুলিশ বলে গালাগাল করলেন। 🙁
পরশপাথর মোটেও পরশকাতর নয়। পরশকাতর যদি কেউ থেকে থাকে তবে সে আমি নিজেই। :inlove:
@ইরতিশাদ,
ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লার পর বহুভাষাবিদ বলতে আমি এখন আর একজনকেই চিনি। তিনি আমাদের ‘ভাষা-পুলিশ’ ফরিদ ভাই।
বাংলার সাথে সাথে তিনি এখন ইংলিশেও সমান পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন। উপরে গিয়ে দেখেন না আমাকে কি সুন্দর করে ‘straight’ শব্দের বাঁকা অর্থ শেখালো। পুলিশের যন্ত্রণায় আর ভালো থাকতে পারলমা না।
আপনারা শুধু ফরিদের রুক্ষ কঠিন পুলিশত্বটাই দেখলেন? অসাধারণ সঙ্গীত প্রতিভাটা দেখলেন না? গানে গানে নিজের পরিবারের কত অজানা কথা জানিয়ে দিলো সে। কিছুতো ক্রেডিট দিন বেচারাকে।
@কেয়া,
শুধু কি সঙ্গীত! বাংলা সিনেমাওতো মনে হয় না তিনি একটাও বাদ দেন। তাছাড়া আমার মনে হয় ক্রেডিটের জন্য ফরিদ ভাই কোনো কাজ করেন না। এই যে দেখেন না, ভালো লাগে বলেইতো তিনি পুলিশের চাকুরীটা নিলেন।
সারা দিন পুলিশি করে সারারাত বাংলা সিনেমা দেখা, কি সাজানো জীবন। মানুষের এইসব সুখের জীবন-যাপন দেখে নিজের কাছেই ভালো লাগে। সরি, মানুষ বলছি কেন? পুলিশের এইসব সুখের জীবন-যাপন দেখে নিজের কাছেই ভালো লাগে।
বাহ! বেশ সুন্দর লেখেন তো আপনি। ভাষা দারুন ঝরঝরে। আমনার জীবনের গল্প শুনতে ভালোই লাগছে।
@নীরব পাঠক,
অনেক ধন্যবাদ, নীরবতা ভেঙ্গে মন্তব্য করবার জন্য।
ভালো থাকবেন।
লস এঞ্জেলেসের বাঙালী পট্টি ( এই বছর থেকে যার নাম হচ্ছে লিটল বাংলাদেশ) এবং নিউইয়ার্কের জ্যাকসান হাইড বাঙালীদের জন্যে বেশ ভাল যায়গা। আমি ওরেঞ্জ কাউন্টিতে লিটল ঢাকায় প্রায় খেতে যেতাম। ওখানে যে ভদ্রমহিলাটি রান্না করত, তার হাত ছিল চমৎকার।
আমি মুড়ির খুব ভক্ত! কচুর লতির ও! তবে কচুর লতি ,্মান কচু-এগুলো চাইনিজ (এশিয়ান) দোকানেই আরো সস্তায় পাওয়া যায়। বাংলাদেশ থাকা আসা মাছের দাম কিন্ত এখানে খুব বেশী না-একটা পাঁচ পাউন্ডের ইলিশ এখানে ৮-১০ ডলার দাম। ব্যাঙ্গালোরেই এর দাম ছিল অনেক বেশী। তবে টাটকা মাছ পেতে হলে চাইনিজ দোকানে যান। কাঁকড়া খাওয়া অভ্যেস থাকলে ওখান থেকেই কেনা ভাল।
@বিপ্লব পাল,
আমি বাংলাদেশের আরেকজন পিএইচডি স্টুডেন্টসহ একসাথে একটা ফ্ল্যাটে থাকি। উনি আবার ‘হালাল’ শব্দটা শুনতে খুব পছন্দ করেন, তাই বাংলাদেশী দোকান ছাড়া কোথাও যেতে চান না। আর বাংলাদেশের দোকানদাররা এই শব্দটার বিনিময়ে মাসে কয়েকহাজার ডলারের ব্যবসা করেন।
এখানেও ‘চায়না টাউন’ আছে।ঠিকই বলেছেন, সেখানে বেশ কিছু টাটকা এবং সস্তায় জিনিস পাওয়া যায়।
আর নিউইয়র্কের কথা কি বলব। ওটাতে আমার ফ্রেন্ডদের ফোন করলে বলে, আমরাতো ইউ,এস,এ থাকি না; আমরা থাকি, নিউইয়র্কে। ওটা নাকি ইউ,এস,এ না, ওটা বাংলাদেশের উপনিবেশ। দেখি, ডিসেম্বার-এ সেমিস্টার ব্রেক এ যেতে পারলে একটা পর্ব নিউওইয়র্ক নিয়ে রাখব।
ভালো থাকবেন।
@ পরশপাথর,
যাক, শেষ পর্যন্ত সত্যিটা স্বীকার করলেন। :heh:
@ফরিদ আহমেদ,
এইটুকু মিথ্যেকে সত্যি বানানোর বিনিময়ে যদি রাজকন্যা, না থুক্কু, রাজবধূ নিয়ে পালানো যায়, তাতে আমার আপত্তি থাকবে কেন।
রাজামশাইও খুশী, আমি খুশী। জানিনা মুক্তমনার আর সব পাঠকদের কি অবস্থা, তারাও নিশ্চয় খুশী।
@পরশ পাথর,
পরশাপ্পু, আপনারে নিয়েতো বড়ই পেরেশানিতে আছি। কঠিন চুরনী (ময়মনসিংহের ভাষা বললাম) আপনি। রাজবধু চুরি করার আগেই কমেন্টে যে চুরিটা করলেন তার বিচারতো আগে হওয়া দরকার। এডিটে গিয়ে আগের মন্তব্যে কিছু যোগ করা সম্পূর্ণ বে-আইনি এবং বে-শরিয়তি কায়-কারবার।
শরিয়ত মোতাবেক আপনাকে এখন পারশ্যের ময়দানে পাথর ছুড়ে মারা হবে।
@ফরিদ আহমেদ,
নাহ! আগের মন্তব্য লিখার আগে চলে গিয়েছিলো, তাই আবার লিখেছিলাম।কিছুক্ষণ পর দেখি আগেরটাও আছে। তাই ডিলিট করে দিলাম।আচ্ছা, আর হবে না ওরকম।এডিট করার মহা-দায়িত্বটা আপনার কাছেই থাকবে।
তবে রাজবধূ অথবা রাজকন্যা চুরির স্বভাব আমার বহুদিনের, সে-স্বভাব অত সহজে দূর হচ্ছে না।
আচ্ছা, আপু টাইপ কাউকে দেখলে আপনার হয়টা কি? এত পেরেশান হয়ে যান কেন? আপনি আমাকে এই ব্লগে একা পেয়ে যা করলেন।তারও কিন্তু বিচার হবে। মুক্তমনার প্রতিবাদী মানুষজন সব গেলো কোথায়?
@ পরশপাথর,
আপনার ভাবী ইদানিং একটা গান খুব ভালভাবে শিখেছে। প্রতিদিনই গেয়ে শোনায় আমাকে। তার প্রথম দু’লাইন এরকমঃ
আমি তোমার বধু, তুমি আমার স্বামী
খোদার পরে তোমায় আমি বড় বলে জানি। 😉
@ফরিদ আহমেদ,
ব্যাপার না। সময় মত আপনাকে ফেলে রেখে ঠিকই গেয়ে উঠবে, “একই রঙ-এ হোকনা রঙ্গিণ দু’জনারই স্বপ্ন রেখা, তুমি কেন আগে আসনি, আগে কেন দাওনি দেখা।”
@পরশ,
হুঁ, ততদিনে আমার সেই অজানা ভগ্নিপতির ঘরনী হয়ে গেছেন আপনি। তার গলা জড়িয়ে ধরে নেচে নেচে রোমান্টিক সুরে গান গাইছেনঃ
একটুসখানি দেখো, একখান কথা রাখো
ভালবাইসা একবার আমায় বউ বইলা ডাকো,
বউ বইলা ডাকো। :heart:
@ফরিদ আহমেদ,
কিন্তু খাটের নীচ থেকে আপনিও যে সে গান শুনছিলেন তাতো টের পাইনি। :laugh:
তাহলে আপনার ভালোবাসার ভগ্নিপতির কাছে আপনাকে রেখে আমরা দুইজন ঠিকই পালাতাম।
@পরশপাথর,
তা সত্যি কথা। সজ্জ্বন ব্যক্তি আমি। পুরানকালের মানুষ, পুরাতন ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী। :smug:
কেন যেন মনে হচ্ছে পরশ পাওয়া আমার অজানা ভগ্নিপতিটাও আমার মতই সজ্জ্বন ব্যক্তি হবে। :rotfl:
@ফরিদ আহমেদ,
ওকে, ফাইন!!!
কিন্তু দিন বদলে গেছে না। সে-ই দিন কি আর আছে?আপনাদের মত সজ্জ্বনদের আমাদের আর দরকার নাই।আমি আর আমার ভাবী, জনমদুঃখী আমরা দু’জন, এবার একসাথে পালিয়ে যাবো। লোকে যখন বলবে অমুক-তমুকের সাথে পালিয়ে গেছে, তখন আমি কিন্তু কিচ্ছু জানি না। :rotfl:
@পরশ পাথর,
দিন বদলাইছে, তবে আপনার সহজ সরল ভাবী একটুও বদলায় নাই। আমার মতই পুরানা জমানার মানুষতো। straight রাস্তাতেই হাটতে পছন্দ করে (আপনিতো আবার আমেরিকান ইংরেজী নিয়ে মহা ক্যাঁচালে আছেন। কাউরে জিজ্ঞেস করে নিয়েন straight মানে কি? এর মানে কিন্তু সোজা না, এইটুকু খালি বলে দিলাম আমি।)। উত্তরাধুনিক নারী হয় নাই এখনো। পালালেও কোন ছেলের সাথে পালাবে, আপনার মত লাস্যময়ী কোন তরুণীর সাথে নয়।
@ফরিদ আহমেদ,
শুনলাম ভাবী নাকি আপনাকে গেয়ে শোনাতে হবে বলে একটা গান মুখস্ত করছে। ঐ-যে ঐ গানটা-‘আমায় ডেকোনা, ফেরানো যাবেনা, ফেরারী পাখিরা, কূলায় ফেরে না…’
আমি বলি কি…আপনিও অবসর সময়ে বসে একটা গান শিখে নিতে পারেন। ঐ-যে ঐ গানটা…’যেওনা সাথী, ও ও যেওনা সাথী, চলেছ একেলা কোথায়? পথ খুঁজে পাবেনাগো, শুধু একা।’
🙂
কে জানে? দেশে তেমনি ধারনা ছিল, এখন তো দখে মনে হয় বেশীরভাগ বড় শেফ পুরুষ।
আমেরিকান এক্সেন্ট বোঝা মনে হয় আমার এই ১০ বছরেও পুরো হয়নি। এখনো অনেক সময় এদের কথা পুরো বুঝি না। এক্সেন্ট সমস্যা ছাড়াঅ এরা কথ্য ভাষায় বেশ কিছু বাগধারা জাতীয় ফ্রেইজ় ব্যাবহার করে যা আমরা জানি না।
প্রথম কয়েকমাস তো ভয়াবহ কেটেছিল। একে কথা বুঝি না, তায় আবার একটা ক্লাস নিতেন এক ৬৫ বছরের জড়ানো গলার প্রফেসর। ফলাফল হল ভয়েস রেকর্ডার কিনে ফেলা।
পাথর সাহেবের রান্নাবান্না পর্ব মনে হচ্ছে সহসাই শুরু হবে।
@আদিল মাহমুদ,
এক্সেন্টের তামাশা কিছুটা দেখবেন পরের পর্বে। কি যে করেছি, ভাবতেই পারা যায় না।
আর রান্না-বান্না? আমি যে এত ভালো রান্না করতে পারি এটা জানা ছিলো না। নিজের রান্না খেয়ে নিজেই মুগ্ধ।
ভালো থাকুন।
@পরশ পাথর,
কিছুদিন এক্সেন্ট নিয়ে চিন্তিত ছিলাম, আমেরিকানদের নকলের চেষ্টা করতাম। সহসাই বুঝতে পেরেছি যে কোন লাভ নেই। এ বয়সে আর সে হওয়ার নয়, বরং আরো হাস্যকর শোনায়। তাই অচিরেই বাদ দিয়েছি।
আমার রান্না বান্নার শুরুতে একজন শক্ত গুরু ছিলেন, বেশ সিনিয়র ভাই, মোটামুটি প্রফেশনাল কুক বলা যায়। ট্রেনিং ছিল ভাল, তবে পান থেকে চুন খসলে অনর্থ বাধাতেন। সেও এক তামাশা বটে। ওনার ভয়েই রান্না শিখতে হয়েছিল মন দিয়ে।
আমি থাকতাম ২৬ হাজার লোকের এক শহরে। সেখানে এমনকি ডালও পাওয়া যেত না। কেউ বড় শহরে গেলে তাকে লিষ্টি করে দিত হত বাজার আনার জন্য। আপনার তো অন্তত সেই সমস্যা নেই।
@আদিল মাহমুদ,
আমি নিজেও এক্সেন্ট নিয়ে আসলে চিন্তা করিনা। কারণ আমি ঠিকমতো বাংলাই বলতে পারি না।
আমার বাজারও খুব একটা কাছে না। বাসে ৪৫ মিনিট লাগে। সত্যি কথা বলতে কি এইমাত্র ‘ডেভন’ থেকে বাজার করে ফিরলাম।
@পরশ পাথর,
মেয়ে মানুষ, রান্নাতো একটু ভাল হবেই। এতে এতো বড়াই করার কি হলো? 😛
@ফরিদ আহমেদ,
কেন? খালি বুঝি যারা কুটুস কুটুস করে কানের লতিতে কামড় দেয় তারা বড়াই করবে! 🙂
আর মনে রাখবেন, এখনকার মেয়েরা রান্না করে না; যার রান্না তাকেই করতে হয়। আমার সহজ সরল ভাবীটাকে দিয়ে কি জানি কত রান্নাই না আপনি করাচ্ছেন।
@পরশ পাথর,
আরো কিছুদিন পর সেই কার্ডের জন্যে দোকানের ঐ মহিলার কাছে যান, (স্থায়ী ঠিকানা, পরিচয়পত্র নিতে ভুলবেন না) আমার বিশ্বাস তখন আপনি বলবেন না- May I have card from here? পুওর আমেরিকান লেডী হয়তো বাক্যে একটি A (কুয়ানটিটি অব অবজেক্ট) এবং Discount (ডেফিনেশন অব অবজেক্ট) আশা করেছিল। মহিলার উত্তরটি বোধ হয় ফিকশন। ইংল্যান্ডে কাস্টমারের কথা না বুঝে এরকম উত্তর মহিলাকে বিপদে ফেলে দিত। ইংল্যান্ডে আমরা সাধারণত May I have এর যায়গায় Can I have– Can I get বলি, এবং এ রকম বাক্যের শেষে সব সময়ই Please শব্দ ব্যবহার করি। যেমন Can I get a অথবা Can I apply for a Discount Card—–.
ভ্রমন কাহিনীতে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বিষয়াদির চিত্র দেখার আশায় রইলাম।
@আকাশ মালিক,
আসলে ‘A’ বলেছিলাম, কিন্তু লেখার সময় দিতে ভুলে গেছি। পরে আর এডিটও করিনি। ভাবলাম ভুল জিনিসে ভুল থাকলেতো সমস্যা নেই।
তবে হ্যাঁ, Can I get হলে মনে হচ্ছে বেশি appropriate হতো, আর please ও লাগানো উচিৎ ছিলো।
তবে সে-যাই হোক, মহিলার কাছে আবার কিন্তু যেতে হবেনা। কারণ আমি ঠিকই সেদিন ডিসকাউন্ট কার্ড নিয়েছিলাম।
এ পর্বটাও ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ সৈকত চৌধুরী, ভালো থাকবেন।
ভ্রমন কাহিনী চিরকালই আমার কাছে অত্যন্ত সুস্বাদু ও উপাদেয়। আর তা যদি বিদেশের কাহিনী হয় তাহলে তো কথাই নেই। গোগ্রাসে গিলতে থাকি। মুক্তমনা খুলেই এই কাহিনীর ৫ম পর্ব দেখে এক নিশ্বাসে পুরোটা পড়ে ফেললাম!
মনে পরে গেল আমার আব্বু আম্মুও এই মুহুর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমনরত। বাড়িতে আমি দু’মাসের জন্য একা। পরশপাথর আর আমি – উভয়ই নিকটজ়ন থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে দুনিয়ার দুই বিপরীত প্রান্তে। পার্থক্য শুধু এই যে পরশ পাথর বিদেশে তার স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন আর আমি আমার স্বদেশেই আমার স্বজন থেকে বিচ্ছিন্ন। অবশ্য পরশপাথরের একাকিত্ব মনে হয় আরো বেশী নির্মম যেহেতু তিনি বিদেশ বিভুঁইয়ে, ভিন্ন পরিবেশে স্বজন হতে বিচ্ছিন্ন। আর আমি আমার পরিচিত পরিবেশেই রয়েছি, শুধু স্বজন হতে দূরে।
@তৃতীয় নয়ন,
কি আর বলব, কি নির্মম যাতনা বুঝেনইতো।স্বজন-সাজন কেউই নেই এখানে।
আজকাল আমি ভাল থাকবার চেষ্টা করছি, আপনিও করুন।