তাহের এবং ৭ নভেম্বরের মূল প্রত্যয়
আবুল হোসেন খোকন
বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়েছে একটি স্বতঃস্ফূর্ত জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে। রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ জনযুদ্ধ সংগঠিত করেছে। রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ বা জনযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। ঠিক একইভাবে তার আগে বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যগত আন্দোলন-সংগ্রাম-বিজয়-অর্জন ইত্যাদি সবই হয়েছে রাজনৈতিক কর্তৃত্বে। ব্রিটিশ খেদিয়ে ভারত-পাকিস্তান জন্মের বিষযটিও রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফসল। এরপর ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৯ পর্যন্ত যে ইতিহাসÑ তাও রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফসল। ১৯৭০-এর নির্বাচন ও গণরায়ও ছিল রাজনৈতিক লড়াইয়ের ফল। আর ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল এর চূড়ান্ত পরিণতি। সুতরাং এখানে একটা বিষয় পরিস্কারÑ রাজনীতিই হলো দেশ, জাতি, রাষ্ট্র বা সমাজ পরিচালনা ব্যবস্থার মূল। এখানে রাজনীতিভিত্তিক লড়াই-সংগ্রাম-কর্মকাণ্ড মানেই গণমানুষের কর্মকাণ্ড। রাজনীতির লড়াইয়ে গণমানুষই মূল। কারণ এখানে এই মানুষই লড়াই্ করে, আন্দোলন করে এবং লড়াইয়ের মধ্যদিয়েই পরিণতি নিয়ে আসে। এই গণমানুষ কার বিরুদ্ধে লড়াই বা যুদ্ধ করে বা করতে সক্ষমÑ তা নতুন করে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই। আমরা সবাই জানি, রাজনীতি পরিচালিত গণমানুষের লড়াই সকল অগণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধেই লড়ে এবং লড়তে পারে। সবচেয়ে প্রশিক্ষত সামরিক বাহিনী বা যে কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই এ গণমানুষ লড়তে পারে। বিশ্বের ঘটনাবলীর দিকে তাকালে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের বা বাঙালি জাতির ইতিহাসও তার প্রমাণ। সুতরাং রাজনীতি মানেই গণমানুষ, আর সেই রাজনীতি বা গণমানুষ যখন বাংলাদেশের জন্য সশস্ত্র লড়াই করে, যুদ্ধ করেÑ তখন তা গণমানুষের মুক্তিযুদ্ধ বা জনযুদ্ধ নামেই খ্যাত হয়। অর্থাৎ ১৯৭১-এ বাঙালি জাতি ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই বা জনযুদ্ধ করে স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েম করেছে। এখানে গণমানুষের কাছে পরাজিত হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম সেরা প্রশিক্ষত সামরিক বাহিনী এবং তাদের প্রভূ পরাশক্তি পর্যন্ত। বলা যায় বাঙালির জনযুদ্ধ পৃথিবীতে আরেক অগ্রযাত্রার ইতিহাস রচনা করেছিল। কারণ জনযুদ্ধের বাংলাদেশ জনযুদ্ধের অর্জন অনুযায়ীই সামনে এগিয়ে নতুন ভবিষ্যৎ রচনা করবেÑ এটাই ছিল স্বাভাবিক। এজন্য স্বাধীন বাংলাদেশে প্রয়োজন ছিল সমস্ত কিছু গণমানুষের আকাক্সক্ষামতই দাঁড় করিয়ে ফেলা, বা সে-মতো সব গড়ে তোলা।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমরা আমাদের প্রত্যাশিত অগ্রযাত্রার ইতিহাসকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি। ’৭১-এ প্রবল প্রতাপশালী অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রধারী সামরিক বাহিনীকে পরাভূত করা সম্ভব হলেও, গণমানুষের আকাক্সক্ষামত দাঁড়িয়ে যাবার ঘটনাটি ঘটানো সম্ভব হয়নি। হয়নি, কারণÑ বাঙালি প্রস্তুত ছিল না শত্র“পক্ষের পরবর্তী আঘাতের ব্যাপারে। বাঙালি তার ’৭১-এর বিজয়কেই স্বতঃসিদ্ধ ধরে নিয়েছিল। এ বিজয়কে যে রক্ষা করার জন্য আরও যুদ্ধের প্রয়োজন আছেÑ তা ভুলে বসেছিল। এখানে রাজনৈতিক বা নেতৃত্বের ব্যর্থতা রয়েছে তো বটেই। বলা যায় দূরদর্শীতার এ অভাবÑ জনযুদ্ধের বিজয়কে নতুন করে বিপদগ্রস্ত করেছিল।
আমরা সবাই জানি যুদ্ধ করার দায়িত্ব সব সময়ই সামরিক বাহিনীর। এ জন্যই এ বাহিনী গড়া হয়। এই বাহিনী পেশাদার একটি সংস্থা। আর এ সংস্থা যুদ্ধের সময় যুদ্ধ করে। তাদের যে যুদ্ধ তাকে সামরিক ভাষায় বলা হয় ‘নিয়মতান্ত্রিক যুদ্ধ’ বা ‘নিয়মিত যুদ্ধ’। এতে কোন সিভিলিয়ানের অংশ নেওয়ার বিষয় থাকে না। কিন্তু একাত্তরের যুদ্ধ মোটেও নিয়মিত যুদ্ধ ছিল না, পেশাদারি সংস্থার যুদ্ধ ছিল না। এ যুদ্ধ সামরিক বাহিনীর যুদ্ধ ছিল না। আর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দায়িত্বও সামরিক বাহিনীর ওপর ছিল না। এ যুদ্ধ এবং যুদ্ধের দায়িত্ব ছিল গোটা সিভিলিয়ানদের ওপর, তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর। রাজনৈতিক নেতৃত্বই এর পরিচালক ছিল। এখানে একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয় যে, এই বিশাল জনযুদ্ধের জনবাহিনীতে সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর যে কয়েক হাজার সদস্য ছিলেনÑ তারা আসলে তাদের নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে জনগণের বাহিনীতে যুক্ত হয়েছিলেন।
এই দৃষ্টিকোন থেকেই ভবিষ্যত প্রত্যাশার দিকটি ছিল অন্যরকম। অর্থাৎ জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে জন্ম নেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য কাম্য ছিল সিভিলিয়ানিজম বা জনগণভিত্তিক সামরিক ব্যবস্থাপনা। কারণ জনগণের রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজন সবকিছুই জনগণভিত্তিক হওয়া। এই ব্যবস্থাপনার সামরিক সংস্থাকে বলা হয় ‘সিটিজেন আর্মি’।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে রেগুলার আর্মির বদলে ঠিক এরকম সামরিক ব্যবস্থাপনার কথাই ভেবেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। তিনি চিন্তা করেছিলেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সেনাবাহিনীকে কিভাবে উৎপাদনশীল কাজে ব্যবহার করা যায়, কীভাবে একে জনগণের বাহিনীতে পরিণত করা যায়। তিনি অন্যান্য দেশের রেগুলার আর্মিকে দেখেছিলেন এইভাবে যে, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সেনাবাহিনী মানেই একটি সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণি বা গ্র“প। দেশের মানুষ অভূক্ত থাকলেও, কিংবা অভাব-অনটনে মানুষ নি:শেষ হয়ে যেতে থাকলেও এই শ্রেণি বা গ্র“পটির বেলায় তার স্পর্শও লাগে না। বরং রাজকীয় সুবিধায় এরা থাকে বহাল তবিয়তে। দেখা গেছে, এই সুবিধাভোগী শ্রেণিটি পুরো একটি অনুৎপাদনশীল গোষ্ঠী এবং এরা সমাজের উন্নয়নে কোন কাজেই লাগে না। আবার এই সুবিধাভোগী গোষ্ঠীটি সুযোগ পেলেই রাষ্ট্র-রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনাকে ধ্বংস করে, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। দেখা গেছে, দুর্ভিক্ষ কিংবা দরিদ্রতায় তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়লেও এই বিশেষ গোষ্ঠী বা গ্র“পটি সর্বোচ্চ সুবিধা ভোগ করে। দরিদ্রতম দেশগুলোতে এই সুবিধাভোগী শ্রেণিটির জন্য রাষ্ট্রকে বরাদ্দ রাখতে হয় গোটা জনগণের বরাদ্দের চেয়ে অনেক বেশি।
কর্নেল তাহের দেখেছিলেন, জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এরকম সুবিধাভোগী শ্রেণি বা গোষ্ঠী থাকা বাঞ্ছণীয় নয়। এ কারণে তিনি দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি ‘গণবাহিনী’ বা সিটিজের আর্মি গড়ে তোলার কথা বলেছিলেন। কোন গণতান্ত্রিক, বিশেষ করে জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে জন্ম নেওয়া দেশে এ ধরণের বাহিনীই কেবল আর্থ-সামাজিক এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত। এ রকম বাহিনীর বদৌলতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়, যাতে যুদ্ধের সময় প্রতিটি নাগরিকই একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে লড়তে পারে। এদিক থেকে তখনকার সাত কোটি মানুষই হয়ে উঠতো দক্ষ সৈনিক। আর রেগুলার আর্মির মতো তাঁদের ক্যান্টনমেন্টে আবদ্ধ থাকার প্রশ্ন উঠতো না বলে সে গণবাহিনী হতো জনগণের ভেতরে থাকা বাহিনী। তারা যুদ্ধের সময় যুদ্ধ, প্রতিরক্ষার সময় প্রতিরক্ষা, দেশের কাজের সময় দেশের কাজ, সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড-উৎপাদনী কাজে তারা সর্বোতভাবে যুক্ত থাকতো। এতে দেশের জন্য বিশাল ব্যয়ই শুধু রক্ষা পেতো না, উৎপাদনমুখী গণবাহিনী হওয়ায় তাঁদের দ্বারা উল্টো বিশাল আয় অর্জন হতো। কর্নেল তাহের পরিবির্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে এরকম পরিবর্তিত সামরিক ব্যবস্থাপনার স্বপ্ন দেখেছিলেন।
স্বাধীন দেশে তাহের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে একটি আধুনিক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই স্বপ্নের বিষয়কে শোষক শ্রেণি, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রধান শত্র“ পাকিস্তান, তাদের এদেশীয় দোসর, কট্টর দক্ষিণপন্থী মহল এবং তাদের আন্তর্জাতিক প্রভুরা মহাবিপদ হিসেবে দেখেছিল। ফলে তাহেরের এই উদ্যোগ ও পরিকল্পনা যাতে বাস্তবায়ন না হয় সেজন্য শুরু থেকেই তৎপর হয়ে উঠেছিল। এজন্য তারা অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় সর্বক্ষেত্রে নেটওয়ার্কও গড়ে তুলেছিল।
এদিকে কর্নেল তাহের জনযুদ্ধের মধ্যদিয়ে অর্জিত বাংলাদেশকে তার মূল প্রত্যয়ে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। এমন একটা সময় তিনি এ প্রস্তুতির প্রকাশ ঘটাতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যখন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সরকারকে এবং এরপর ৩ নভেম্বর জেলখানার ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের মূল চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে অপশক্তি তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্তÑ ঠিক তখনই ১৯৭৫-এর ৭ নভেম্বর কর্নেল তাহের তাঁর সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থান রচনার উদ্যোগ নেন। সে অনুযায়ী তিনি সামরিক বাহিনীর ভেতর বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা, বেসামরিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গড়ে তোলা বিপ্লবী গণবাহিনী এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলসহ সহযোগী গণসংগঠনগুলোর সহায়তায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। কিন্তু সুচতুর প্রতিপক্ষ শক্তি এ সবগুলো পর্যায়ে অন্তর্ঘাতি চক্রকে আগেই লেলিয়ে দিয়েছিল। ফলে ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের নামে অভ্যুত্থান ঘটলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অন্তর্ঘাতি ঘটনার শিকার হয়ে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। তাহেরের কাছ থেকে এই অভ্যুত্থানের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে যায়। কর্তৃত্ব দখল করে কট্টর দক্ষিণপন্থী ও তাদের আন্তর্জাতিক প্রভুদের ক্রিড়নক জেনারেল জিয়াউর রহমান। এর আগে জিয়া তাহেরের পক্ষে থাকার ভান করে আসলেও ঘটনা ঘটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রভূশক্তির নির্দেশে স্বমূর্তি ধারণ করেন এবং তাহেরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহেরকেই বন্দি করেন, পরে তাঁকে হত্যা করেন। এভাবেই জনযুদ্ধের প্রতিপক্ষ শক্তি তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলে। আর এর মধ্যদিয়ে ব্যর্থ হয়ে যায় জনযুদ্ধ, বিজয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমস্ত কিছু। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসে মুক্তিদ্ধের শত্র“ এবং তাদের প্রভু শক্তি। বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে তার মূল প্রত্যয়।
৭ নভেম্বরের এই ব্যর্থতার খেশারত দিতে হয়েছে দীর্ঘকাল ধরে। দীর্ঘ এ সময়ে সামরিক এবং বেসামরিক পর্যায়ে জেনারেল জিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষকে বেছে বেছে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। কতো হাজার গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে হত্যা করা হয়Ñ তার পুরো হিসাব আজও উদ্ধার হয়নি। কারণ যাদের হত্যা করা হয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের লাশ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস বা গুম করে দেয়া হয়েছে। এসব কারণে আজ কেও ৭ নভেম্বরভিত্তিক ঘটনাকে মুক্তিযোদ্ধা হত্যার ঘটনা হিসেবে দেখে থাকেন। আর কট্টর দক্ষিণপন্থী এবং জনযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিপক্ষরা একে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে মূল্যায়ন করেন। কারণ ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ব্যর্থ করে দেওয়ার মাধ্যমে মূলত রাজাকার-আলবদর-জামায়াত-মুসলিমলীগ-মৌলবাদীসহ মুক্তিযুদ্ধের মূল শত্র“দের সংহতি ও বিজয় সূচিত হয়েছিল।
তবে এতো কিছুর পরেও জনযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে সিপাহী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মূল প্রত্যয় অনস্বীকার্য। কারণ এদেশের জন্য এই প্রত্যয়ই ছিল সত্যিকারের গণমুক্তির উপায়।
[ঢাকা, বাংলাদেশ]
আবুল হোসেন খোকন : সাংবাদিক, লেখক ও কলামিস্ট।
”কিন্তু একটা সময়ে এ সুযোগ ছিল। তখন সমাজতান্ত্রিক অনেক দেশসহ সুইজারল্যান্ড এবং ইসরাইলে পর্যন্ত সিটিজেন আর্মি গড়ে তোলা হয়েছিল। এ আর্মির কারণে বিপূল সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। ”
এই ত থ্যের জন্য ধন্যবাদ। আ মি যতটুকু জানি ক ন্ েল তাহের যুদ্ধে এক টি পা হারান। এবং এক পা য়ে দাড়ি য়ে দাড়ি য়ে তি নি যুদ্ধ ক রে ছে ন। দে শে র প্র তি ক তো গভীর প্রেম ! আবারো কৃতজ্ঞতা আবুল হোসেন খোকন আপনার প্র তি ক নেল তাহের সম্পকের্ লেখার জন্য ।
@opu,
ধন্যবাদ
জনাব আবুল কাশেম,
আপনার শেষটা দিয়েই শুরু করা যাক। আমি রাজনীতিতে বা রাজনৈতিক পর্যালোচনায় খুব একটা উৎসাহ বোধ না করলেও আপনার প্রবন্ধের কিয়দংশে কিছু আলোচনার ইচ্ছে রাখি।
আমি ঠিক উল্টোটা ভাবি। একটি শিশু ভুমিষ্ঠের পড়ে ১/২ দিন উপোস করে। তার পড়ে শুরু হয় মাতৃস্তন পান। দীর্ঘ প্রায় সাত মাস! তার পড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ে (মুসলিম সম্প্রদায়ের বিষয়টি আমি স্পষ্ট জানিনে) অন্নপ্রাশন নামে একটি আনুষ্ঠানিকতায় শিশুটির মুখে আতপচালের নরম ভাত পিসে মিহিকরে ছোঁয়ানো হয়, পরবর্তীতে মায়েরা একটু একটু করে খাওয়ানোর চেষ্টা করেন! ১৯৭৫ সালে আমাদের সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের তো অন্নপ্রাশন-ই সম্পন্ন হয়নি! ঐ সময়ে এই শিশুটিকে যুদ্ধের প্রস্তুতি! গনবাহিনী গঠন করে! একটু কেমন এলো মেলো ভাবনা মনে হচ্ছেনা! অনেকটা হুযুগে ব্যাপার বলে! রেগুলার আর্মি ঠিক কি হবে কেমন হবে সেটাও বোধ করি স্থায়ী কাঠামো পায়নি। রক্ষীবাহিনী গঠন হয়েছিলো ফলাফল আমরা জানি দেখেছি। গনবাহিনীর ধারনাটা আরো ভয়াবহ হতো নাকি? যুদ্ধকালীন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অস্ত্রইতো তখনো সংগ্রহ পুরোটা শেষ হয়নি। অনেকে অস্ত্র জমা দেয়নি।
অবশ্যই কথাটা সত্যি, কিন্তু তখন কর্নেল তাহের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব করার জন্যে উঠে পড়ে লাগলেন, দল গঠন করলেন, আন্ডারগ্রাউন্ড গনবাহিনী গঠিত হলো, সেখানে ঢুকে পড়েছিলো বেশ কিছু অস্ত্র জমা না দেওয়া সমাজ-বিরোধীরা (অবশ্য অনেকে এদের প্রতি বিব্লবী বলে থাকেন)। কি ছিলো কাজ, সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকায়েমের জন্যে দেশের আনাচে কানাচে যতো ব্যবসায়ী শ্রেণী ছিলেন, ভূমি মালিক ছিলেন, সম্পন্ন কৃষক ছিলেন তাদের ধরে ধরে হত্যা লুন্ঠন চলছিলো দেদারচে। দেশ পুনর্গঠিত হয়নি! মানুষ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তে, অভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে! ঠিক সেই সময়ের প্রসঙ্গ এটি।
তখনকার এই পরিস্থিতির স্বরূপ হতে পারে দুটি,
. অভাবী মানুষ বাঁচার তাগিদে শুরু করেছে লুন্ঠন। অবস্থা সম্পন্নরা এহেনো ডামাডোলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন অনেকে। তখনকার গনবাহিনীর প্রায় সবাই এহেনো কার্যকলাপে ছিলো লিপ্ত। অস্ত্র হাতে থাকলে যে ক্ষমতা বেড়ে যায় এছিলো তারই বহিঃপ্রকাশ।
. যারা ক্ষমতার কাছাকাছি ছিলো তারা ক্ষমতাকে করতে চেয়েছিলো পাকাপোক্ত! সেও অস্ত্রের জোড়েই! যেহেতু সমাজতন্ত্রের একটা জোয়ার ভাটা বইছিলো তখন সেটিকে কেবল ব্যবহার করা হযেছে মাত্র!
কেনো উপরোক্ত কথাগুলো বললাম,
ক. কর্ণেল তাহেরের গনবাহিনীর বা সমাজতান্ত্রিক দলের সাথে গন সম্পৃক্ততা তখন কতটুকু ছিলো?
খ. তখন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ন্যাপ ইত্যাদি কাজ করে যাচ্ছিলো সদ্যগঠিত সরকারের সাথে, সেই সময়ের এই বাম ধারার দলগুলোর সাথেও যদি তাহেরের কিছুমাত্র সম্পর্ক থাকতো তাহলেও কিন্তু বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিকোনে বিবেচনার সুযোগ ছিলো, যা ছিলো না।
গ. কর্নেল তাহের যদি এমনি এক ধরনের অবকাঠামো চানই তবে তৎকালীন সরকারের সাথে এমনকি প্রস্তাবিত বাকশালেও কিন্তু বিষয়টি নিয়ে যুগপৎ দাবী জোড়দার করা যেতো, সে প্রকৃয়ার মধ্যে না গিয়ে বিপ্লবী চিন্তাটি কি আত্মধ্বংসী ছিলোনা?
ঘ. সেসময়ে এই বিপ্লবী বাহিনী এবং নক্সালপন্থী বলে খ্যাতরা সব একিভূত হয়ে পড়েছিলো, অর্থাৎ যারাই সমাজতন্ত্রের কথাবলে সামাজিক অস্থিরতায় শক্তি নিয়োগ করেছিলো তারাই ছিলো আসলে সহায়ক শক্তি! বিষয়টিকি স্ববিরোধিতা নয়?
ঙ. কর্নেল তাহের এই সময়টিকে কোন বিবেচনায় সমাজতন্ত্রের উপোযোগী বলে মনে করলেন! একদিকে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে, অন্যদিকে দেশের আপামর জনগনের সাথে তার রাজনৈতিক দর্শনের কোন পরিচয় নেই! কিসের বেসিসে?
চ. যে গনতন্ত্রের কথা এতক্ষন বলে এলেন, যেখানে জনসম্পৃক্তা গনতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অঙ্গ, সেটিকে বাদ দিয়েই বিপ্লব! এ কেমন স্ববিরোধিতা!
ছ. সব শেষে, কর্ণেল তাহের একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামো চাইতেন, অথচ তিনি সমাজতন্ত্রের শত্রু-মিত্র চিনতেন না! তিনি জেনারেল জিয়াকে সহায়ক শক্তি মনে করলেন! মনে করলেন এই লোকটির কাঁধে ভর করেই তিনি সেনা বাহিনীকে সিটিজেন আর্মীতে রূপ দেবেন, যেটি কিনা সমাজতান্ত্রিক আদর্শনির্ভর একটি সেনা কনসেপ্ট! অথচ জেনারেল জিয়া কিন্তু প্রতিপক্ষ চিনতেন, এবং সুচতুর জিয়া কিন্তু প্রথম সুযোগটি মিস করেন নাই! একটু খারাপ শোনালেও আমার কাছে ব্যপারটি দুই শৃগালের শিকার কাড়াকাড়ি ছাড়া আর কিছুই মনে হয়নি।
আর এই জন্যেই আপনার উপড়ের হতাশাটি আজ আমাদের জাতীয় হতাশা!
একদম ঠিক! তখনকার সরকার মুলতঃ চেয়েছিলো এতো ত্যাগ তিতীক্ষায় পাওয়া স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে, দেশের সমস্ত বিবেককে একত্রিত করে দেশ পুনর্গঠনের কাজে সর্বশক্তি নিয়োজিত করতে, চেয়েছিলো যতো ধরনের দেশী-বিদেশী চক্রান্ত আছে সেগুলোকে প্রতিহত করতে। সে জন্যেতো কারো না কারো উপড়ে সরকারকে বা তার প্রধান চালককে নির্ভর করতে হবে! সেই নির্ভরতার জায়গাটি সঠিক ভাবে নিধারিত হয় নি বা নির্ধারন করা যায়নি। শর্সেতেই ছিলো ভূত! বাকশাল মূলতঃ সেই কারণেই গঠিত হয়েছিলো সাময়িক লক্ষ্যে! কিন্তু তার বাস্তবায়ন করা যায়নি। কারন দেশীয় প্রতিক্রিয়াশীল আর তদীয় আন্তর্জাতিক মুরুব্বীরা তো তা চাইতে পারেন না! বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রেখে এই অগ্রযাত্রাকে রোধ করা ছিলো একেবারেই অসম্ভব। এটাই বাস্তবতা এটাই সত্য।
আমার তো মনে হয় প্রকৃত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা একমাত্র সাম্যবাদেই সম্ভব। সে ব্যবস্থার কোন নজির যেহেতু নেই একমাত্র আদীম সমাজের রূপ ভিন্ন, সুতরাং এবিষয়ে তর্ক বাড়িয়ে লাভ নেই। এখন এই জনগনের রাষ্ট্রব্যবস্থা তো খোদ সোভিয়েতেই ছিলো! কিন্তু সিটিজেন আর্মি ছিলোকি? ছিলো বা আছে চীনে। এখন চীনের গনতন্ত্রকেই কি আপনি বলতে চাইছেন জনগনতান্ত্রিকতার প্রকৃত রূপ? চীনও সম্প্রতি এই ধারা থেকে বেশ সরে এসেছে। জনাব অপুর প্রশ্নের উত্তরে আপনি যা বলেছেন, তা আংশিক। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার পরেই কোন দেশে সিটিজেন আর্মি গড়ে তোলা বা সফলতার কোন নজির আসলে নেই। আমার ধারনা আজকাল সমাজতন্ত্রী বলে খ্যাত কিছু কিছু রাজনৈতিক দল এবং মতাদর্শের মানুষেরা কর্ণেল তাহেরের তখনকার কৃত হটকারী সিদ্ধান্তকে যৌক্তিকতা দিতে এই কথাগুলো বলে থাকেন। আমার বুঝায় ভুল থাকলে দয়া করে জানাবেন। আর সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতেই সিটিজেন আর্মির দরকার, কথাটা বোধ হয় ঠিক নয়। উদাহরণ আপনিই দিয়েছেন, ওসব দেশ (সুইজারল্যান্ড, ইসরাইল) ছাড়াও আছে, যেমন দক্ষিন কোরিয়া। এরা একে সিটিজেন আর্মি বলেনা তবে, এদেশের প্রতিটি নাগরিক কেই গ্রাজুয়েশনের আগে দুই বছরের রেগুলার আর্মি ট্রেনিং আর TOEC স্কোর জমা দিতে হয়। দৈব দুর্বিপাকে যারা এই নিয়মিত বাহিনীর সাথে কাজ করে দুর্গত এলাকায়। আসলে এই ব্যবসথাটিও তারা নিয়েছে উত্তর-দক্ষিনের জিইয়েরাখা দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে।
আমি জানিনা ঠিক কবে থেকে কর্ণেল তাহের তার এই মতাদর্শের জন্যে লড়ছেন। তবে স্বাধীনতা পূর্বকালে সম্ভবতঃ নয়। দেশের অপরাপর বাম ধারার দল গুলো ৪৮ সাল বা তার আগে থেকেই এই লড়াই আন্দোলনে রত। সেখানেও তাদের গ্রহনযোগ্য ভুমিকা জনসাধারনে নেই কিংবা ছিলোনা তেমন। সেখানে কর্ণেল তাহেরের উদ্যোগ কে কি সদ্য স্বাধীন দেশে এক ধরনের প্রতিক্রিয়াশীল প্রতিবিপ্লব বলে আক্ষায়িত করা যায় না? আমার যতদূর মনে পড়ে অনেক দিন আগে আমি কিউবার ফিদেল ক্যষ্ট্রোর এক সাবধানবাণী (বঙ্গবন্ধুকে উদ্দ্যেশ্য করে দেওয়া) পড়েছিলাম।তথ্য সূত্রটি আমার এই মুহুর্তে মনে নেই দিতে পারবোনা তবে খোঁজ নিলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে। সেখানে তিনি যে প্রতিবিপ্লবের ধরনের চিত্র এঁকেছিলেন তার সাথে কর্নেল তাহেরের উদ্যোগের মিল আছে বলে মনে করি।
আমার ধারনা কর্নেল তাহের স্বঞ্জ্যানে হোক কিংবা অজান্তেই হোক উপরোক্ত স্বাধীনতা বিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তির প্রভাব বলয়ে পড়েছিলেন এবং তাদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছেন এবং নিজের পতন অনিবার্য করে তুলেছিলেন।
উপড়ের আলোচনা থেকে কি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়না যে কর্নেল তাহের জনগনতান্ত্রিক আদর্শনির্ভর দেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অতি শিশু সুলভ চিন্তা-ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন? আমি কিন্তু তাঁকে শিশু মনেকরি না। তাহলে বলুন, ওনার এহেনো জ্বলে ওঠার পেছনের অভিপ্রায় কি ছিলো? এটি আমার কাছে এক মহা রহস্য!
আমাদের সেই সময়ের অনেক কিছুই আসলে আমরা এখনো জানিনা, তাই আরো কিছুকাল আমাদের অপেক্ষা করতে হবে বাঙ্গালীর ভাগ্য বিপর্যয়ের কুশিলবরা কে কিভাবে খেলেছিলেন তার রহস্য উন্মোচনে। সুতরাং জনগনের রাষ্ট্রে জনকল্যানে অর্থবহ সিটিজেন আর্মিগঠন যে কর্ণেল তাহেরের লক্ষ্য ছিলো, এটি বিবেচনায় নিতে আমার একটু সন্দেহ আছে। এবিষয়টি আমি আরো অবিতর্কিত তথ্য থেকে নিশ্চিত হতে চাই।
আপনার লেখার জন্যে ধন্যবাদ।
@Keshab K. Adhikary,
শ্রদ্ধা জানবেন। আপনার বক্তব্য নিঃসন্দেহে রাজনৈতিকভাবে সুচিন্তিত এবং যুক্তিনির্ভর। আমার মনে হয়, ৭ নভেম্বর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নেতৃত্বই আপনার অনেক প্রশ্নের সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেন। যেহেতু আমি তা নই, এবং রাজনৈতিকভাবেও বিশেষজ্ঞ নইÑ সেহেতু আমার ব্যাখ্যায় ভুল-ত্রুটি এসে যেতে পারে। আমি আপনার অনেক যুক্তির সঙ্গে একমত, আবার কিছুক্ষেত্রে দ্বিমত থাকলেও ব্যাখ্যার দায়িত্বে যেতে চাই না। তবে যে প্রশ্নগুলো এসেছে, তা ওই অভ্যুত্থানের সঙ্গে যুক্তদের মধ্যেও ছিল বা রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে আমি “অর্ন্ঘাত” নামে একটা ধারাবাহিক উপন্যাসও লিখেছি। মুক্তমনাতেই তা প্রকাশ হয়েছে। ঠিকানা হলো :
http://www.mukto-mona.com/Articles/Abul_Hossain_Khokon/
পড়লে এ ধরণের অনেক প্রশ্নÑ ওই উদ্যোক্তা সংগঠনের ভেতরও পাওয়া যাবে।
আমাদের দেশের কলুষিত পরিবেশে সঠিক ইতিহাস জানাটা হয়েছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ইতিহাস বিকৃতি এতই নগ্নভাবে ঘটে যে তাতে মনে হয় মানুষের ইতিহাস জানারই আগ্রহ চলে যাচ্ছে। গত জোট সরকার তো এ আর্টে রীতিমত গোল্ড মেডেল পেতে পারে।
কর্ণেল তাহেরের রাজনৈতিক দর্শন মনে হয় বেশ উন্নত ছিল। যতদুর মনে হয় তিনি চীনা কায়দার পিপলস আর্মি টাইপ কিছু করতে চেয়েছিলেন। সেনা সদস্যদের বেহুদা দেশের পয়সায় শ্বেতহস্তী না পুষে উতপাদনমূখি কাজেও লাগাতে স্বপ্ন দেখতেন।। একজন সেনা অফিসারের এ ধরনের চিন্তাভাবনা খুবই ইউনিক।
তবে কর্ণেল হামিদের বই পড়ে জানতে পেরেছি যে ৭৫ এর শূণ্যতায় ক্ষমতা দখলের লড়াইতে জিয়া, তাহের, খালেদ কেউই কম লালায়িত ছিলেন না। জিয়াই তাতে চুড়ান্ত জয়লাভ করেন। ৭ই নভেম্বর এর পর বিপ্লবী সেনাসদস্যদের হাতে যেভাবে নির্বিচারে বেশ কিছু সেনা অফিসারদের পরিবার পরিজন প্রান হারিয়েছে তার দায় তাহের কি পুরো এড়াতে পারেন?
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয় কোন ঘটনার দায়ই নেতৃত্বের পক্ষে এড়ানো সম্ভব নয়। আর, এই ঘটনার দায় এড়ানোর ব্যাপারটি শুধু কিছু সেনা অফিসার হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, অভ্যুত্থানে ব্যর্থ হওয়ার দায় এখানে প্রধান। যার খেশারত তাহেরকে দিতে হয়েছে নিজের জীবন দিয়ে।
জনাব আদিল মাহমুদ চীনা পিপলস আর্মির কথা বলেছেন। এ ধরণের ব্যবস্থা বা আর্মির জন্য ক্ষমতার প্রশ্নটিও এসে যায়। চীনে কমিউনিস্ট পার্টি বা জনগণের শক্তি ক্ষমতায় ছিল বলেই ওই আর্মি সম্ভব ছিল। তাই এখানেও ক্ষমতা দখল অপরিহার্য ছিল। কিন্তু তাতেই ঘটেছে ব্যর্থতা।
@আবুল হোসেন খোকন,
আমি একমত। মোদ্দা কথা, আমাদের বিশাল সেনাবাহিনী যারা নিজেদের একমাত্র দেশসেবক বলে উন্নাসিক মানসিকতায় ভোগে তাদের পেছনে একটি গরীব দেশের বাজ়েটের মোটা অংশ অযৌক্তিকভাবে ব্যায় হওয়া কোনভাবেই মানতে পারি না। এই ব্যাবস্থার পরিবর্তন দরকার।
আমেরিকার বা ভারতের সেনাবাহিনী কি করে বা কত বাজেট খায় তার সাথে আমাদের কিভাবে তূলনা হয়?
তবে বেড়ালের গলায় ঘন্টা পরাবার মত কেউ নেই।
সি টিজেন আ মি কোন দেশে বতমানে প্রচ লিত ? সেই দেশটি কী স্বাধীনতা লাভ করার পর এই ব্যবস্থা সফল কাযর্ কর ক রে ছে ? জানাবেন কি ? প্লিজ !
@opu,
জনাব অপু, আপনাকে অনেক অভিনন্দন।
আপনার প্রশ্নের সারসংক্ষেপ উত্তরে সময়ের একটা বিষয় এসে যাচ্ছে। আমার জানামতে, সত্তর দশকের একটা পর্যায় পর্যন্ত বিশ্বে বিপ্লবী জোয়ার ছিল। তখন সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ বা ঔপনিবেশিক শোষণ-শাসনের কবল থেকে বেরিয়ে ্এসে সমাজতান্ত্রিক বা জনগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে যাবার প্রবণতা ছিল। বাংলাদেশ সৃষ্টির ব্যাপারটিও এরই অংশ। ওই সময় জনগণের সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে জন্ম নেওয়া কোন নতুন ব্যবস্থার টিকে থাকার জন্য রেগুলার আর্মির বদলে সিটিজেন আর্মির দর্শনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এখানে এটা পরিস্কার ছিল যে, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে সিটিজেন আর্মি করতে হবে, লড়াইয়ের জন্য জোটবদ্ধ থাকতে হবে, একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর তা না হলে বিপর্যস্ত হয়ে সাম্রাজ্যবাদের পেটে বা পায়ের নীচে চলে (ক্রিড়নক হয়ে) যেতে হবে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, শেষটাই হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ও জনগণের লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে অর্জিত দেশগুলোর প্রত্যাশার পতন ঘটেছে, আর বিশ্ব চলে গেছে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের কড়াল গ্রাসে। ফলে আজকে কোথাও সিটিজেন আর্মির কথা ভাবার কোন সুযোগই নেই। সাম্রাজ্যবাদ-পুঁজিবাদ কোথাও এটা হতে দেবে না। কিন্তু একটা সময়ে এ সুযোগ ছিল। তখন সমাজতান্ত্রিক অনেক দেশসহ সুইজারল্যান্ড এবং ইসরাইলে পর্যন্ত সিটিজেন আর্মি গড়ে তোলা হয়েছিল। এ আর্মির কারণে বিপূল সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আগেই বলেছি, সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত সব দেশেইÑ বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশগুলোর জন্যই সিটিজেন আর্মি দরকার ছিল। সেইসঙ্গে জোটবদ্ধ থাকারও প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি। হয়নি বলেই এ সবগুলো জায়গায় আজ সাম্রাজ্যবাদের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
@আবুল হোসেন খোকন , আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকবেন। 🙂
কর্নেল তাহেরের মানব কল্যাণব্রত সম্পর্কে জানতে পেরে খুবই খুশী হলাম।
আসলে আমাদের নতুন প্রজন্ম এভাবে বিষয়গুলোকে না জানলে অপশক্তি সব সময় নাকে দড়ি দিয়ে আমাদেরকে রাজনীতির মারপ্যাচে দিকভ্রান্ত করবে। নতুন প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানাবার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আর গণ বাহিনীর ধারণাটা আমার মনে খুবই ধরেছে , আসলে কল্যাণমুখী প্রতিরক্ষা বাহিনীকে এরকমই হওয়া উচিত। আমাদের দেশের সেনাবাহিনী হল রাজতন্ত্রের একটি ছোট্ট প্রতিরূপ। আমাদের দেশেও গনবাহিনীর বিকল্প নেই; নইলে সব সময়ই ২৫শে ফেব্রুয়ারীর মত ঘটনা ঘটবে। আর আমাদের কাছে জেনারেল জিয়ার মুখোশ উন্মোচনের জন্য ধন্যবাদ।
নতুন প্রজন্মের স্বাধীনতা ও তার পরবর্তী সঠিক ইতিহাস জানাটা খুবই জরুরী, নইলে তারা রাজনীতির কুটচালে সব সময়ই ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকবে। আর আপনাদের মত ইতিহাস জানা ব্যক্তিরা এ ব্যপারে নতুন প্রজন্মকে অসাধারণ সহযোগিতা করতে পারেন। আপনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা। :deadrose: :rose:
@মুহাইমীন,
আপনাকেও অনেক অনেক আন্তরিকতা ও ধন্যবাদ। আমি আমার ক্ষুদ্র ধারণা ও অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টি নিয়ে বলেছি। আপনার মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। ভাল থাকবেন।
খোকন ভাই,
লেখা পোষ্ট করার সময় টাইটল উইন্ডো খালি থাকলে ব্লগে লেখার শিরোনাম আসে না। ঠিক করে দিয়েছি এবারেরটা। একটু খেয়াল রাখবেন পরবর্তী প্রবন্ধ পোষ্ট করার সময়।
@ফরিদ আহমেদ,
অনেক ধন্যবাদ ফরিদভাই। প্রথম এভাবে পাঠালাম তো, তাই এ সমস্যাটা হয়ে গেছে। ভাল থাকবেন।