নীল নির্জনে
ফরিদ আহমেদ
নীল জলের টানে দিগন্তের দিকে ঝুঁকে পড়েছে সূর্য। একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে আছে কবিতা। সাগরের লোনাজল ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া মৃদুমন্দ বাতাসে উড়ছে চুল। পায়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রূপোলী বালু। অপূর্ব সুন্দর একটা দৃশ্য। অনন্ত সৌন্দর্যময় এই বেলাভূমি। এই সৌন্দর্যের সামনে এসে দাঁড়ালে যে কারোরই মন ভাল হয়ে যাবার কথা। কিন্তু, কবিতার বিষাদবোধ কিছুতেই কমছে না। বরং আরো বেড়েই যাচ্ছে ক্রমে ক্রমে। মন থেকে কিছুতেই সরাতে পারছে না যে, মাত্র তিন বছর আগেই এইখানে সে কাটিয়ে গেছে তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম কটা দিন।
নীলিম আর সে বিয়ের পরে এইখানে এই কক্সবাজারেই মধুচন্দ্রিমায় এসেছিল। কাটিয়ে গিয়েছিল গভীর আনন্দঘন বুনো সাতটি দিন। কী পাগলামিটাই না করতো নীলিম তাকে নিয়ে তখন। গলা জড়িয়ে ধরে নাকে নাক ঘষে নাকি সুরে এক ডজন ছেলেমেয়ে দিতে হবে বলে আব্দার জানাতো ছেলেমানুষের মতো । মাঝে মাঝে গলা মোটা করে হুমকিও দিতো দস্যু সাজার ভান করে। অদ্ভুত ছিল নীলিমের আদরের ধরন। একটু সুযোগ পেলেই কবিতার দীঘল চুলের মধ্যে নাক গলিয়ে দিত সে। ঘ্রান নিতো সারা মাথা জুড়ে। কখনো বা কানের লতি কামড়াতো কুটুস কুটুস করে। কখনো চোখের উপর চুমু খেয়ে চলতো ক্রমাগত। কখনো বা নাক টিপে দিত একগাল হাসি দিয়ে। কখনো বা গলা চেপে ধরে মেরে ফেলার মিথ্যা ভয় দেখাতো। আর ঠোট দুটো নিয়ে যা করতো না, সেটা ভাবতেই গাল লাল হয়ে যেতো কবিতার। তার ঠোটে যে কি মধু পেতো নীলিম কে জানে। কবিতা মাঝে মাঝে ভাবতো, তার বিবাহিত বান্ধবীদের জিজ্ঞেস করে দেখবে। তাদের স্বামীরাও কি তাদেরকে নিয়ে এরকম ছেলেমানুষি আদর আদর খেলা খেলে কিনা। লজ্জায় অবশ্য কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি কখনো। ভয়ও ছিল মনে কিছুটা। অন্যদের স্বামীরাও যদি একই কাণ্ড কারখানা করে তাহলে যে নীলিমের বিশেষত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। থাক না নীলিম তার কাছে বিশেষ একজন হয়ে। কারই বা ক্ষতি তাতে?
তিন বছর আগের সময়টাকে এখন অনেক যুগ আগের বলে মনে হচ্ছে কবিতার কাছে। মাত্র কয়েক বছরে কত কিছুই না বদলে যেতে পারে। তিন বছর পর আবার একই জায়গায় ফিরে এসেছে তারা দুজন। কালের চক্রে হয়তো। নাহ, দ্বিতীয়বার মধুচন্দ্রিমার জন্য নয়। বরং শোভনভাবে আলাদা হয়ে যাবার জন্য। ঢাকার ভয়াবহ ভীড়ভাট্টার মধ্যে তার এই কঠিন সিদ্ধান্তটা নীলিমকে জানাতে ইচ্ছা হয়নি কবিতার। তাই অনুরোধ করেছিল দুটো দিনের জন্য কক্সবাজারে যাবার জন্য। কি বুঝেছিল নীলিম কে জানে। কোন উচ্চবাচ্য করেনি সে। ছুটি নিয়ে নিয়েছিল অফিস থেকে।
বড় করে শ্বাস ফেললো কবিতা। কীইবা করার ছিল এছাড়া তার। নতুন জীবন এবং নতুন স্বপ্ন তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া। পুরনো জীবনটা যে বড্ড বেশি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। কোনভাবেই আর জোড়াতালি দেবার কোন সুযোগ নেই। সে যে যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে তাকে অনুভব করার কোন শক্তিতো কারো নাই। নেই এই অতলান্ত সাগরের, নেই এই দিগন্ত ছোঁয়া আকাশের, নেই এই চিক চিক করা বালুকাবেলার, কিংবা ওই অবারিত ঘন সবুজ বনানীর।
***************************
ঝাউ গাছের পাশে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে কবিতাকে দেখছে ছেলেটা। প্রায় ছয়ফুট লম্বা, একহারা গড়ন। নীল জিন্সের সাথে সাদা রঙ এর একটা টি-শার্ট পড়ে আছে। চোখে রিমলেস চশমা। কবিতার দিক থেকে কিছুতেই চোখ সরাতেই পারছে না সে। জলের দিকে কী অদ্ভুতভাবেই না তাকিয়ে আছে মেয়েটা। যেন প্রতীক্ষা করছে গভীর একাগ্রতা নিয়ে কারো বা কোন কিছুর জন্য। দৃষ্টি নিমগ্ন হয়ে আছে সুদূরের দিকে। নীল জল আর নীল আকাশের পটভূমিকায় শ্যামলা মেয়েটাকে কী অদ্ভুত সুন্দরই না লাগছে। নীল রঙ এর শাড়ী মিশে গেছে যেন সাগরের নীলের সাথে। অবাধ্য বাতাসের সাথে লড়াইয়ে হেরে গিয়ে রেশমি চুলগুলো উড়ে এসে ঢেকে দিচ্ছে মুখের উপরটা। কী আশ্চর্য সৌন্দর্য্য! কী অপূর্ব বিষাদ চিত্র! তবে সৌন্দর্য্য নয়, কবিতার একাকিত্ব এবং একাগ্রতাই তাকে আকৃষ্ট করলো বেশি। এর থেকেও অনেক সুন্দরী মেয়ে তার অফিসে গণ্ডা গণ্ডা আছে। তারপরও দূর থেকে অনুভব করতে পারছে আর দশটা মেয়ের চেয়ে এই মেয়েটা আলাদা কিছু।
না তাকিয়েও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে কবিতা টের পেলো কেউ একজন তাকে দেখছে। কোন ধরনের অস্থিরতা অবশ্য অনুভব করলো না সে। ঘাড় ঘুরিয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো কবিতা। অনেক দিন আগে যে রকম হয়েছিল হঠাৎ করেই সেই রকম ঝলাৎ করে উঠলো বুকের ভিতরটা। কবিতাকে তার দিকে তাকাতে দেখেই ধীরে ধীরে ছেলেটা এগিয়ে এলো তার দিকে। কাছে এসে চোখে চোখ রেখে তাকালো। গভীর মায়াময় শান্ত স্থির দুটো চোখ। কবিতার মনে হলো অচেনা কোন জায়গায় অচেনা কোন আগন্তুক নয়, অনেকদিন পর সে যেন তার হারানো কোন বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছে।
কোন কথা না বলে তার সাথে যাবার জন্য হালকা করে ইশারা করে ছেলেটা কবিতাকে। কয়েক মুহুর্তের দ্বিধা ঝেড়ে কবিতাও উঠে পড়ে কোন কথা না বলে। পাশেই একটা রেষ্টুরেন্ট গিয়ে বসে তারা। শুরুটা হয় টুক টাক দ্বিধাগ্রস্থ কথাবার্তা দিয়ে। তারপর আস্তে আস্তে ভেঙ্গে যেতে থাকে সমস্ত অর্গল। গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে কথাবার্তা। দুজনেই ব্যাখ্যা করে কেন তারা এসেছে কক্সবাজারে। ছেলেটার চোখের আশ্বস্ততায় নিজের অজান্তেই কবিতা মুক্ত করে তার দুঃসহ যন্ত্রণার কথা, তার সুতীব্র বেদনার কথা। গত ক’বছরের সুগভীর দীর্ঘশ্বাসের কথা। কীভাবে তার স্বপ্নের শুরু এখানে আর কীভাবে তা শেষ হতে চলেছে এইখানেই। এই পৃথিবীতে যাকে সবচেয়ে বিশ্বাস করতো, সবচেয়ে বেশি ভালবাসতো, তাকেই স্বামী হিসাবে বেছে নিয়েছিল সে। আর আজ তাকেই ছেড়ে দেবার জন্য এত আয়োজন তার। মনের গভীরে লুকিয়ে রাখা অব্যক্ত কষ্টের কথাও বলতে থাকে কবিতা। এ কষ্টের কথা অন্য কাউকে বলেনি সে কখনো। গর্ভপাত হওয়ার পরের দুঃসহ সময়গুলোর কথা হুড়হুড় করে বেরিয়ে আসতে থাকে।
বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে তার যখন গর্ভপাত হয় নীলিম তখন দুই মাসের জন্য বিদেশে। গর্ভপাতের জন্য শ্বাশুড়ী এবং ননদরা সম্পূর্ণভাবে দায়ী করেছিল তাকে। তার অসতর্কতাকে, তার অবহেলাকে। শ্বাশুড়ী নাতির মুখ দেখার জন্য অধীর হয়ে ছিল। সেই সাধ পূর্ণ না হওয়ায় তার জীবনটাকে দূর্বিসহ করে দিয়েছিল তারা তখন। নীলিম বিদেশ থেকে এসে কোন প্রতিকারই করেনি। বরং নিজেও ঘাড় গুজে গম্ভীর হয়ে ছিল বেশ কিছুদিন। যেন সেও বিশ্বাস করে ওই দূর্ঘটনার জন্য কবিতাই দায়ী। ডাক্তার যদিও বলেছিল যে কবিতার সন্তান ধারণের কোন সমস্যা নেই। তারা ইচ্ছা করলেই আবার সন্তানের জন্য চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু, কবিতা আর রাজী হয়নি। আসলে নীলিমকে আর সহ্যই করতে পারছিলো না সে। কিছুদিনের মধ্যেই এক বস্ত্রে মায়ের বাড়ীতে এসে উঠেছিল কবিতা। অসংখ্যবার নীলিম তাকে নিয়ে যেতে এলেও আর ফিরে যায়নি সে। ততদিনে তীব্র ঘৃণা জন্মে গেছে তার নীলিমের জন্য।
গভীর মনযোগ দিয়ে কবিতার গল্প শুনছে ছেলেটা। ছেলেটির চোখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল কবিতা। তার নিজের যন্ত্রণার ছায়া পরিষ্কারভাবে পড়েছে ছেলেটার খয়েরি চোখে। দীর্ঘ কয়েকটা বছর পর এই প্রথম সে অনুভব করলো নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে সে একা নয়। চেপে বসা অনড় বোঝাটা সরে যেতে থাকলো কবিতার ঘাড় থেকে। মাত্র শুরু, কিন্তু শুরুতো। এই প্রথম তার বিশ্বাস হচ্ছে যে হয়তো তার জন্য সত্যিই কোন আনন্দময় ভবিষ্যত অপেক্ষা করে আছে কোথাও। আর সেই ভবিষ্যত হয়তো এই গভীর মমতামাখানো কোমল চোখের ছেলেটার সাথেই।
এখানে তারা এসেছিল চিরদিনের জন্য আলাদা হতে। তার হয়তো আর প্রয়োজন হবে না। হয়তো এখনো আশা আছে। কবিতা উঠে দাঁড়িয়ে নীলিমের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। হাত ধরাধরি করে পুরনো দিনের মত তারা দুজনে হেটে যায় নীল সমুদ্রের কাছে। এক বুক ভালবাসা নিয়ে সূর্য ডুব দিচ্ছে সাগরের নরম বুকে। একই রকম ভালবাসা নিয়ে নীলিম বুকে টেনে নেয় কবিতাকে। আগের মত দুহাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে কবিতার। নাক ডুবিয়ে দেয় কবিতার রেশম কোমল ঝরঝরে চুলের মধ্যে। ঘ্রান নেয় দীর্ঘ করে। চুল থেকে নাক উঠিয়ে নাকে নাক ঘষে কিছুক্ষণ। তারপর কবিতার চোখে চোখ রেখে গাঢ় স্বরে জিজ্ঞেস করে, ‘আমাকে ফেলে সত্যি সত্যি চলে যাবার কথা তুমি ভাবতে পারলে পঁচুমনি?’
অতি পরিচিত সেই আদর আর গভীর ভালবাসাময় ডাক শুনে সারা শরীরে অদম্য কাঁপন জাগে কবিতার। দুহাতে সজোরে আঁকড়ে ধরে নীলিমকে সে। মুখ গুঁজে দেয় নীলিমের বুকে। কবিতার চুলের মধ্যে আদরের হাত বুলোতে বুলোতে গভীর ভালবাসায় কানের কাছে ফিসফিস করে নীলিম বলে ‘পাগলী আমার’।
কবিতার চোখের শ্রাবণ ধারায় ভিজে যেতে থাকে নীলিমের বুক।
ওহ্!
গল্পটা সুন্দর, মন্তব্যগুলি সমান সুন্দর। মুক্তমনার সাইটটাই সুন্দর হয়ে উঠেছে।
ভাল লাগছে। ধন্যবাদ ফরিদ ভাইকে।
ওরে বাবা, ভয়াবহ রোমান্টিক গল্প! ভাল লিখেছেন।
ভালবাসা কি সত্যিকার অর্থে কখনো ঘৃণায় বদলাতে পারে?কিজানি,মনে হয় নাতো!
যেটাকে ঘৃণা বলে মনে হয় সেটা বোধ হয় অন্যকিছু,হতে পারে বিরাগের চুড়ান্ত রূপ…তাই হয়ত পঁচুমনিরা অভিমান ভুলে ফিরে যায়… 🙂
বিজ্ঞ নই, কাজেই ভুল বলতেই পারি। :-))
@নিবেদিতা,
আমি নিতান্তই বেরসিক লোক, তবে শুনেছি যে মানুষ নাকি ভালবাসার মানুষকে কষ্ট দিতে পছন্দ করে।
আমার ধারনা এটা সত্য, বিয়ের পর হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
@আদিল মাহমুদ,
🙂 :reallyangry: 😀 :doctor: :pissedoff:
ভাইরে আইজো আপনার হাড্ডি মাংস যে অবশিস্ট আছে, হজম হয়া যায় নাই তাইতো অনেক ভালো।(এখনো তো তাও হাড়ে হাড়ে টের পান, পরে টের পাবার জন্য হাড়ও থাকবে না)
(বিঃদ্রঃ বিয়া ই করুম না 😀 )
সুন্দর একটা রোমান্টিক গল্প।নিরেট বাস্তবতার কংক্রিটের ভিড়ে ভালোবাসার বুনোফুলের সৌরভ তাহলে পুরোপুরি হারিয়ে যায় নি?অজানা তরুনটিই যে নীলিম এটা লেখক না বললেও বোঝা গেল।যদিও আজকাল বোধহয় সচরাচর এমন হয় না।চারদিকে তো শুধু নানারকম ব্রেক-আপের কাহিনীই শুনি!ভালোবাসা একবার ঘৃণায় বদলালে তা ফিরে আসা সহজ বলে তো মনে হয় না।
অত কাঠখোট্টা বাস্তবের বিচারে গিয়ে কাজ কি?ভালো লাগল কাব্যিক,নিটোল গল্পটি।সবাই যদি হলক তান নিতে শুরু করে তাহলে তো ঠুমরীর মিঠে ফিরৎগুলো মারা পড়বে! 🙂
Thanks Farid Bhai for a Wonderful Short Story…You inspired me to write something from my own life….Scared …….will try soon….
কানের লতি যে ‘কুটুস কুটুস’ করে কামড়াতে হয় এটা আমার জানা ছিলো না। আসলে মহান লেখকদের লেখা পড়লে নতুন অনেক কিছু শেখা যায়। লেখা পড়ে ব্যাপক পরিমাণ প্রেম করতে ইচ্ছে করছে।
@পরশ,
একেবারেই খেয়াল ছিল না যে, ইদানিং বাচ্চা-কাচ্চারাও মুক্তমনায় পরিভ্রমণ করছে। গল্পটাতে “শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য” এই ট্যাগটা লাগানো উচিত ছিল আমার।
@ফরিদ,
বাচ্চা না কি দেখাচ্ছি… আমার পরের সিরিজটারই নাম হবে ‘লতি কামড়ানো প্রেমের গতি’। তখন কিন্তু অশ্লীলতার দোহাই দিবেন না, মনে থাকে যেন।
@পরশ,
কলির যুগে শুধুমাত্র কানের লতি আর ঠোঁট কামড়ায়ে প্রেমের সাধ পাবেন না, জিহ্ববা সংস্কৃতিও জানতে হবে। ওটা প্রেমের থিওরী টেস্ট। নতুন প্রেমিক হলে বাৎস্যায়নের পরামর্শ নিতে পারেণ।
@আকাশ মালিক,
এই কামড়া-কামড়ির মধ্যে প্রেমটা হয় কখন ?? না কি কামড়া-কামড়িটাই প্রেম ?? …বড়দের বলতে শুনেছি, প্রেমের আগুনে নাকি জ্বলে পুড়ে মরে…প্রেমের প্র্যাকটিক্যাল টেস্ট করতে গেলে আবার কি না কি হয়…ভয় হয়। বাৎস্যায়নের কথা বলছেন ? সেটা কি এখনো বাকী রেখেছি?? এখনকার যুগে বাৎস্যায়নে আর কাজ হবে না।পরামর্শের জন্য এখন আপনাকে যেতে হবে ফরিদ ভাইয়ের কাছে।
@পরশ পাথর,
একটি কমেন্টে ভুল বশতঃ আপনার যায়গায় ফরিদ সাহেবের নাম বলে ফেলেছি, বাক্যটি হওয়ার কথা ছিল এরকম – ওদিকে পরশ সাহেব ঘোষনা দিয়েই রেখেছেন— সে জন্যে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
কি যে বলেন স্যার। কোন প্রেমিকাকে ওসব শুনাতে নেই, বলতে নেই। মায়ের কাছে মামার বাড়ির গল্প কি আর ভাল শুনায়? প্রেমের পাঠশালায় ছেলেরা যে বয়সে যৌবনের ঢেউ, কামসুত্র পড়ে, মেয়েরা সেই বয়সে ঐ সাব্জেক্টে পি এইচ ডি পাশ। ছেলেরা বই থেকে শেখে, মেয়েরা স্বশিক্ষিত হয়ে জন্মায়।
দেখেছেন, ফরিদ সাহেবের গল্পের নায়ক নীলিম গলা জড়িয়ে ধরে, নাকে নাক ঘষে আব্দার জানায়- এক ডজন ছেলেমেয়ে দিতে হবে। নীলিম একটা কথা এখানে সন্তর্পনে গোপন রেখেছে, আর তা হলো- সবগুলো সন্তান হবে অবিকল ঠিক আমারই মতো আমারই চেহারার। বিশুদ্ধ প্রেমের পরীক্ষা তখনই হয়ে যেত যদি কবিতা বলতো- ১১টা সন্তান আমি দেবো নেচারেল পদ্ধতিতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে, আর একটা দেবে তুমি পরম সুখ-নিদ্রায় আনেস্থ্যাটিক ইংজেক্সন নিয়ে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে। জগতের সকল নীলিমরা প্রেম শব্দ আর কোনদিন মুখেই আনতনা। বাথরুম সম্বল করে জীবনটা কাটিয়ে দিত, ফলশ্রুতিতে তেল সাবানের বাজারে আগুন লাগতো তা আর বলার অপেক্ষাই রাখেনা।
ভাগ্যিস আপনাদের যুগে আমাদের জন্ম হয় নাই। পরীক্ষায় নির্ঘাৎ ফেল মারতাম। আমাদের যুগে প্রেমিকার গালের মর্যাদা ছিল অপরিসীম। পারসীয়ান কবি সিরাজির প্রেমিকার গালের একটি তিলের মুল্য ছিল সমরখন্দ আর বুখারা দুটি শহর। আমাদের যুগে গাল থেকে ঠোঁটের দুরত্ব ছিল বহু দূর, জিহ্ববা তো সপ্নাতীত। প্রেমিকার প্রসাধনহীন গালে, আস্ত করে নরম দুটো আঙ্গুল বুলিয়ে দিলে দেবীতুষ্টি অর্জন করা যেতো। আর সদ্যফোটা কদম ফুলের রেণু ঘষে দিলে তো সোনায় সোহাগা। শুনেছি আজিকার যুগের প্রেমিক প্রেমিকারা ভজনালয়ের গ্রাউন্ড রুল চেইঞ্জ করে ফেলেছেন। গাল, নাক, কান পর্বের এক পর্যায়ে উপাসনার দেবী তার দুই যুগের সঞ্চিত মহান স্বর্ণপাত্রদ্বয়ের সবটুকু প্রসাদ নিজ হাতে সাধুর মুখে তোলে দেন। আর ধীরেধীরে কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরুপ জিহবা পর্বের শেষ প্রান্থে বীর ডুবুরী সাধু, সিন্ধু সেচে মুক্তা আনতে প্রবৃত্ত হন। যেন মাটি খুঁড়ে লুসী আর হার্ডির ফসিল সন্ধান। তা কালের পরিক্রমায় তারা করতেই পারেণ। এখানেও উপাসনালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘন হচ্ছেনা, যদি সাধুর- ইন্নামাল আ’মালু বিন্নিয়াত ঠিক থাকে। সিন্ধু সেচে মুক্তা আনার খেলাটা মানব ইতিহাসের ঠিক কোন পর্যায়ে কারা শুরু করেছিলেন তা আমার জানা নেই, তবে বলে রাখা ভাল, ইবাদত পদ্ধতিটা অনেক পুরাতন, যদিও আমাদের যুগে আমাদের এলাকায় এর প্রকাশ ও প্রচার তেমন ছিলনা।
কেন দাদা, প্রেম তো পবিত্র জিনিষ। অশ্লীল ভাষা দিয়ে তাকে অপবিত্র করবেন কেন? শয়ন কক্ষের ফুলশয্যায় যৌনমিলনক্ষণে ছেলেরা যখন স্বার্থের বন্দনা গায়, মেয়েরা তখন চোখ দুটি বন্ধ করে পুজোয় মত্ত হয়। নারীর দেহ-বীণার সবগুলো তার একসাথে গেয়ে উঠে- রজনী তুই হইসনারে প্রভাত। অ-প্রেমিকেরা সেই সুর শুনতে পায়না, অতি অল্প সময়ে ক্লান্ত অবশ দেহে ছেলেরা মুখ ফিরিয়ে যখন নিদ্রায় বিভোর, মেয়েরা তখনও ধ্যানে মগ্ন। বিশুদ্ধ প্রেমের অপর নাম উপাসনা।
লাইনটি খুব সুন্দর লেগেছে। কোথায় পেলেন?
@সামির মানবাদী,
নিজেইতো লিখেছি বলেই মনে হচ্ছে। ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম।
জীবন পটে এত সহজ সমাধান সচরাচর দেখা যায় না। আর ফরিদের কবিতা বড্ডো রোমান্টিক চরিত্র। নীলিমের সাথে সম্পর্ক ছেদ করতেও কক্সবাজারের মতো স্থান বেছে নেয়ার মতো ইচ্ছে রাখে।
যাহোক, অনেকদিন পরে ফরিদের গল্প পেলাম।
ধন্যবাদ ফরিদ।
@গীতাদি,
জীবন পটের সবকিছুইতো শুধু লতা-পাতার মত পেঁচানো এবং জটিল নয়, কবিতার মত স্নিগ্ধতাও আছে নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও।
কবিতা শুধু রোমান্টিকই নয়, বড্ড অভিমানীও।