এই খোরাকি উপহার বর্জন করুন মিঃ প্রেসিডেন্ট
ওবামা যখন পৃথিবীর সর্বাধিক শক্তিশালী মসনদটিতে আসীন হইয়াছিলেন, আমাদিগের ন্যায় বাদামী হইতে কালো চামড়ার জনসমুদয় আহ্লাদিত হৃদয়ে মহামানবকে গ্রহণ করিয়াছিলাম। সাদা রঙের আধিপত্য শেষ হইবার মহেন্দ্রক্ষন উপস্থিত -উপরি পাওনা, তিনি বিশ্বে শান্তি স্থাপন করিবার আপ্রান চেষ্ঠা চালাইবেন এবং আমেরিকা অর্থনৈতিক মন্দা হইতে উদ্ধার পাইয়া হাডসন নদীর সীলগুলির ন্যায় ডাও জোন্সে ওঠা-নামা করিবে এমন দিব্যভ্রমে দিন গুজরান হইতেছিল।

সহসা প্রত্যুষে খবর পাইলাম ওবামা নোবেল শান্তি প্রাইজে ভূষিত হইয়াছেন! ভিরমি খাই নাই। যে শান্তি প্রাইজ মহত্মা গান্ধীর ও অধরা এবং হেনরি কিসিঞ্জিরারের ন্যায় যুদ্ধাপরাধিদের শোভামাল্য-তাহা কে পাইবেন বা কে পাইবেন না, ইহা লইয়া ইহকালে মাথাব্যাথা করিব- মেগাপ্যাস্কেল মিডিয়া উর্দ্ধচাপেও এমন বৃহৎ আহাম্মকি অসম্ভব। আমি কূপিত হইতেছিলাম এই সনের পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজেতা চার্লস কাওএর দুর্ভাগ্যে। বেচারী ১৯৭৮ সালে অপটিক্যাল ফাইবার আবিস্কার করিয়াছিল-ইহার পর টানা ৩১ টি শরৎকাল অতিবাহিত করিয়া নোবেল কমিটি বুঝিলেন, অপটিক্যাল ফাইবার মানব সভ্যতার কল্যান সাধন করিতেছে! ব্যাবসায়ীরা অবশ্য বুঝিতে দেরী করেন নাই-১৯৯০ সন হইতেই টন টন ফাইবার ভুতলে গ্রথিত হইতেছিল-শুধু নোবেল কমিটির দক্ষুদোয় হইতে ৩১ বৎসর লাগিল! ইহাই প্রথা হইলে কূপিত হইতাম না-কিন্ত ছয় মাস ধরিয়া গোটা ছয়েক ভাষন প্রদান করিয়া যদি কেও নোবেল শান্তি প্রাইজ পাইতে থাকেন, তাহা অপেক্ষা আমাদের পাড়ার ক্লাবের শারদীয়া পুরস্কারের বিশ্বাসযোগ্যতা বেশী হইবে, ইহা লইয়া সন্দেহ নাই!

ওবামা শান্তির জন্যে চেষ্টা চালাইতেছেন-ইহা অস্বীকার করিতেছি না! প্রশ্ন হইতেছে আমিও লেখনীর মাধ্যমে শান্তি প্রচেষ্টা চালাইতেছি-তাহা হইলে আমি নোবেল প্রাইজ হইতে বঞ্চিত হইব কেন? সাফল্য নাই বলিয়া? ওবামা কি সাফল্য পাইয়াছেন? ইরান বা ইস্রায়েলের যুদ্ধংদেহী রূপ কমিয়াছে? হামাস রকেট হানা বন্ধ করিয়াছে? ইস্রায়েল নতুন সেটলমেন্ট স্থগিত করিয়াছে? জাতি সংগে বোমা মারিয়া তালিবানরা শান্তির পথে হাঁটিতেছে? ইরাক হইতে কবে আমেরিকা সম্পূর্ণরূপে পালাইবে?
জনাব যুদ্ধ-মন্ত্রী রবার্টগেটের মন্ত্রনাই উনি আফগানিস্থানে আমেরিকান সেনা উপস্থিতি বাড়াইতেছেন। পাছে চীন কূপিত হয়, তাই উনি দলাই লামার সাথে দেখা করিতে পর্যন্ত অস্বীকার করিলেন! বস্তুত ওবামা শান্তির প্রচেষ্টার নামে যাহা করিতেছেন, তাহা হইল বাক্য সাজাইয়া ডায়ালোগবাজি। ইহাতে তালিবান, ইরান, হামাস, ইস্রায়েল-কাহারও কিছু বদলাইতেছে না-বদলাইবেও না। মিডিয়া ম্যাজিকের দৌলতে, ডুগডুগি বাজাইয়া ওবামা নামক মহামানবটি শান্তিজল ছিটাইতেছেন-কিন্ত শান্তি শান্তি ও শান্তি বলিয়া মন্ত্র উচ্চারনেই যদি শান্তি আসিত, আপামর হিন্দু পুরোহিতকূল নোবেল হইতে বঞ্চিত হইবেন কেন?

আলফ্রেড নোবেল জানিতেন শান্তিপুরষ্কারে রাজনীতি হইবে। তৎকালে নরওয়ে এবং ডেনমার্ক একটিই রাষ্ট্র ছিল এবং ডেনমার্ক বিদেশনীতি দেখিত। নোবেল শান্তি প্রাইজ, বিদেশনীতির কালো গহ্ববরে গড়াইতে পারে-ইহা তিনি বিলক্ষন জানিতেন। তাই উইলে লিখিয়াছিলেন নরওয়ের পার্লামেন্ট শান্তি পুরস্কারের সিদ্ধান্ত লইবে। ইহাতেও তিনি নোবেল শান্তি তরীটি বাঁচাইতে পারেন নাই-গান্ধী চারবার মনোনীত হইয়াছিলেন। কিন্ত একবারও নোবেল শান্তি প্রাইজ পান নাই-কারন বৃটিশদের ভয়ে নরওয়ের পার্লামেন্ট চাপিয়াছিল। গান্ধীকে শান্তি নোবেল প্রাইজ হইতে বঞ্চিত করিয়া -প্রাইজটি এমনিতেই খোরাকে পরিনত হইয়াছিল। ইহার পর কিসিঞ্জার বা আরাফতের ন্যায় যুদ্ধব্যাবসায়ী ( আরাফত লইয়া আমার কোন ভ্রুম নাই। বাঙ্গালীদের অনেকেই তাহাকে বিপ্লবী যোদ্ধা বলিয়া সন্মান করে। আমি অক্ষম। কারন যে ব্যাক্তি বিপ্লব ও স্বাধীনতা যুদ্ধের নামে অস্ত্র স্মাগলিং করিয়া বিদেশে দুই বিলিয়ান ডলারের সম্পত্তি কামাইতে পারে-তাহার জন্যে যুদ্ধাপরাধীই সঠিক ্বিশেষন। ) যেদিন হইতে শান্তি প্রাইজ পাইতেছে, সেদিন হইতে নোবেল শান্তি পুরস্কার সম্পূর্ণ রূপে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাইয়াছে। ডঃ ইউনুস অর্থনীতিতে নোবেল পাইলেই খুশী হইতাম-কারন এই খোরাক প্রাইজ তাহার যথাযোগ্য সন্মান নহে।

আপাতত মনে হইতেছে ওবামা খোরাকি উপহারটি না গ্রহন করিলেই ভাল করিবেন। ওবামা ওবামাই থাকুন। নোবেল শান্তি পুরস্কারের ন্যায় খোরাকি না গ্রহন করিলেই তাহার মর্যাদা বাড়িবে।