প্রবীর ঘোষের ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাথে মুক্তমনার সুসম্পর্ক বহুদিনের। কোটিতে গুটিকতক মানুষ থাকেন যারা বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, অনুসন্ধিৎসু এবং স্বভাবতই সনাতনী অন্ধবিশ্বাসে শ্রদ্ধাহীন, নির্ভিক, বেপরোয়া, ফলে যুগে যুগে এরা ধর্মান্ধদের হাতে অত্যাচারিত। এমনই একজন আজীবন সংগ্রামী ও যুক্তিবাদী মানুষ হচ্ছেন প্রবীর ঘোষ। তার ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ গ্রন্থটি আক্ষরিক অর্থেই অন্ধকার থেকে আলোতে উত্তোরণের দর্শন। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমলব্ধ গবেষণায় এবং অসাধারণ মননশীলতায় প্রবীর ঘোষ দেখিয়েছেন, পৃথিবীর আপাত অলৌকিক বলে কথিত ঘটনাগুলো আসলে লৌকিক। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হিউম্যানিস্টস অ্যাসোসিয়েশন । সেই হিউম্যানিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি সুমিত্রা পদ্মনাভন, তাদের মুখপত্র ‘আমরা যুক্তিবাদী‘র শেষ চারটি সংখ্যা পিডিএফ আকারে মুক্তমনায় প্রকাশের জন্য পাঠিয়েছেন। ইবুক আকারে যুক্তিবাদীর সংখ্যা চারটি মুক্তমনায় প্রকাশ করা হল-
‘আমরা যুক্তিবাদী‘র সংখ্যা চারটি মুক্তমনায় প্রেরণ করার জন্য আমরা পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক সুমিত্রা পদ্মনাভনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
মুক্তমনা মডারেটর
জুলাই ১৫, ২০০৯
চমৎকার….! (Y)
সমস্ত ব্যপারেই একটু মতানৈক্য থাকবেই। তবে লেখক কিন্তু চমৎকার লিখেছেন। সবার দৃষ্টিকোন এক হবে না, যার যার দৃষ্টি কোন থেকে সে সেইরকম ব্যাখ্যা ই দিবেন, এটাই স্বাভাবিক। মানুষের একটা লিমিটেশন হল সে কখনও তার বিশ্বাসের বাইরে যেতে পারেনা; যারা পারে, তারা অতিমানব।
তাসলিমা নাসরিনের আত্মবিশ্বাস প্রচন্ড বেশী, উনি যা মনে আসে, তাই লিখতে পারেন, আমার মনে হয় উনি অনেক জিনিস বাড়েয়ে লিখেন, আর যত বিতর্কিত লেখা উপহার দিবেন, অত আলোচনায় থাকবেন এরকম কিছুতে বিশ্বাস করেন। উনি কোন রেফারেন্স এর ধার ধারবেন না এটাই স্বাভাবিক। আর ধর্ম ও মৌলবাদের ব্যপারটার একটা দিক স্বাভাবিক, মৌলবাদকে আক্রমন করতে হলে ধর্মও আক্রমনের মধ্যে চলে আসবে। কিন্তু একটা বিষয় হল মৌলবাদ মূলত একটা ব্যবসা। এর আড়ালে থেকে গুটিকয়েক কিছু মানুষই শুধু লাভবান হয়, আর বাকি পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি শুধুমাত্র পেরেশানীতেই থাকে। আর মৌলবাদ একটা রাক্ষসের মাথার মত, উপড়ে ফেলা সম্ভব না, কারন জিনিসটা যত ল্যাম-লাইটে আনা হবে, মূর্খের দল তত আকৃষ্টই হবে।
অপেক্ষা করা ছাড়া কিছুই করার নেই আমাদের, মানুষ জেগে উঠবেই একদিন। বিজ্ঞান যত উন্নত হবে, অপবিজ্ঞানগুলো তত সংকুচিত। চিন্তা করেই দেখুন, বিপদে পড়া ছাড়া আল্লাহ-ঈশ্বর ইত্যাদি এদেরকে কেউ মনে রাখে না কিন্তু। বিপদ পড়া ছাড়া মানুষ যে মনে করে, তা ভবিষ্যত বিপদ এড়ানো জন্যই।
@শ্রাবন মনজুর,আপনার জবাবে যুক্তি আছে কিন্তু একটা লাইনে হোচট খেতে হল,আপনি বলছেন “মানুষের একটা লিমিটেশন হল সে কখনও তার বিশ্বাসের বাইরে যেতে পারেনা, যারা পারে, তারা অতিমানব ।”আমি বলতে চাই,বিশ্বাসের বাইরে যেতে খুব বেশী যুক্তি-বুদ্ধির প্রয়োজন পরে না,অতিমানবও হতে হয় না ।সাধারন যুক্তিবোধ থাকলেই হয় ।
বিরোধিতা করার জন্য বিপ্লব পাল অত্যন্ত সরলিকৃত ও কাটছাঁট করে প্রবীর ঘোষের বক্তব্যকে হাজির করেছেন। ‘আমরা যুক্তিবাদী’ মে ২০০৯ সংখ্যাতে প্রবীরবাবুর সাক্ষাৎকারটি পড়লেই তা বোঝা যায়।
বিপ্লববাবু লিখেছেন, “ভারতে ইসলামিক মৌলবাদের উত্থানের পেছনে আমেরিকার ভূমিকা?…” অথচ, সাক্ষাৎকারে প্রবীরবাবু ভারতে ইসলামিক মৌলবাদ বা আমেরিকা – কোনটির কথাই বলেননি। বিপ্লববাবুর কথায় বুঝলাম, সিপিএম-এর মতো উনিও মনে করেন সাম্রাজ্যবাদ = আমেরিকা।
বিপ্লববাবু এও লিখেছেন, “মৌলবাদকে আক্রমন করতে হলে ধর্মকে আক্রমন করতেই হবে।” যে প্রবীরবাবু বহু লেখায় ধর্মকে আক্রমন করে লিখেছেন, এমনকি তন্ত্রের গুরুগম্ভীর মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার রূপটি প্রকাশ করেছেন রামকৃষ্ণ মিশন (উদ্বোধন কার্যালয়) প্রকাশিত গ্রন্থ ও বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে তথ্য নিয়ে; তাঁর বিরুদ্ধে এ কথা বলা অর্থহীন নয়কি, বিপ্লববাবু? সিপিএম-এর বিজ্ঞান শাখা যখন লিখিতভাবে ঘোষনা করেছিল ধর্ম ও জ্যোতিষের বিরুদ্ধে তারা কোন কথা বলবে না, প্রবীরবাবু-ই তখন তাঁর বইতে লিখেছিলেন, ধর্মকে আক্রমন না করে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, কোন কাজ করতে হলে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক এগোতে হয়। নাহলে কাজটি তো হয়-ই না, উপরন্তু হিতে বিপরীত পর্যন্ত হতে পারে। (যেমন- বাড়ি তৈরি করতে হলে তাই ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে প্ল্যান করিয়ে নিতে হয়।) ধর্মকে আক্রমন করার মতো সংবেদনশীল কাজ করতে হলে ভেবে নিতে হয়, কিভাবে এগোলে সাধারণ মানুষ ক্ষেপে যাবেন না এবং ধর্মগুরু বা মৌলবিরা হাতে বাড়তি সুযোগ পেয়ে যাবেন না।
বিপ্লববাবু তসলিমার যৌন উচ্ছৃঙ্খলতাকে সোচ্চারে সমর্থন করেছেন। আবার পুরুষদের যৌন উচ্ছৃঙ্খলতাকে অসমর্থন করেছেন। যা খারাপ তা সবার ক্ষেত্রে-ই খারাপ। তাই নয়কি, বিপ্লববাবু? আর পুরুষের হিপোক্রেসি এক্সপোজ করার কথা বলছেন? তাহলে একটিমাত্র ঘটনার উল্লেখ-ই যথেষ্ট। কয়েক বছর আগে ঝাড়খণ্ড পুলিশের এক ডিজি (Director General of Police) একজন আদিবাসী মহিলাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছিল। একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সহযোগিতায় শিক্ষার সুযোগ না পাওয়া মহিলা স্টিং অপারেশনে অংশগ্রহন করে ঐ ডিজিকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। না, ঐ মহিলা পালটা ধর্ষণ শুরু করেননি।
আমার কিন্তু প্রবীর ঘোষের মন্তব্য পড়ে খুব বেশি ‘আপত্তিকর’ কিছু মনে হয়নি। প্রবীর ঘোষের কথার সারমর্ম হচ্ছে (আমি যদি তা ঠিক বুঝে থাকি) – তসলিমা যখন ধর্ম বা মহানবী নিয়ে কিছু লিখেন সেখানে কোন রেফারেন্স ব্যবহার করেন না। তিনি সঠিক বলছেন নাকি ভুল – তা ব্যাক আপ করার কোন উপায় থাকে না তসলিমার জন্য। সবাই ভাবেন তসলিমা ধর্মগ্রন্থ না পড়েই আজে বাজে কথা লিখে দিয়েছেন। ফলে বই ব্যান হয়, কিংবা আপত্তিকর অংশ তুলে নিতে হয়। প্রবীর নিজের বইয়ের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন যে তিনি ভারতের বড় বড় সাধু বাবা, সাই বাবাদের নিয়ে লিখেছেন, কিন্তু সব জায়গায় রেফারেন্স থাকায় উনার এ ধরনের ঝামেলা হয়নি।
আমার কিন্তু প্রবীর ঘোষের অভিযোগ অনেকাংশেই সত্য বলে মনে হয়েছে। আমি বরাবরই ধর্মগ্রন্থ নিয়ে স্পর্শকাতর লেখায় রেফারেন্স থাকার পক্ষে। নইলে হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সেই অভিযোগগুলো ডিফেন্ড করতে না পারলে নিজেকেই লজ্জায় পড়তে হয় পরে। কিন্তু এ ব্যাপারে তসলিমারও পয়েন্ট আছে নিঃসন্দেহে। তসলিমা কোন গবেষণাগ্রন্থ লেখেননি, লিখেছেন মূলতঃ আত্মজৈবনিক উপন্যাস। এধরনের লেখায় আসলে কেউ রেফারেন্স বড় একটা ব্যবহার করেন না।
আরেকটা ব্যাআর – তসলিমার শোয়াশুয়ির ব্যাপারটা আমি প্রবীরের সাক্ষাৎকারে পেলাম না। যদি তিনি সেটা না বলে থাকেন তাহলে সেটার জন্য তাকে দায়ী করা বোধ হয় ঠিক হবে না। যা হোক, এই ব্লগে যুক্তিবাদী সমিতির অনেকেই আছেন, তারাই হয়ত এ ব্যাপারে আরো ভাল বলতে পারবেন।
তসলিমা প্রযঙ্গে প্রবীর ঘোষের ইন্টারভিউ এর তীব্র বিরোধিতা করছি।
প্রবীর ঘোষের বক্তব্য তসলিমা
[১] রেফারেন্স ছাড়াই মহম্মদকে আক্রমন করেছেন-ফলে মৌলবাদিদের এককাট্টা করেছেন
[২] মৌলবাদিদের উস্কিয়ে উনি সাম্রাজ্যবাদের হাত শক্ত করেছেন
[৩] এবং তসলিমা একজন নষ্ট মেয়ে
[১] টি ফ্যাকচুয়াল মিসটেক [২] টি লজ্যিক্যাল মিসটেক। ভারতে ইসলামিক মৌলবাদের উত্থানের পেছনে আমেরিকার ভূমিকা? এগুলো সিপিএম মার্কা কথাবার্তা হল না?
আর উনি রামকৃষ্ণ মিশনের বিরুদ্ধে রেফারেন্স দিয়ে লেখায়, কেও উনাকে আক্রমন করে নি, তাই ইসলামের বিরুদ্ধে রেফারেন্স দিয়ে লিখলে কেও তাকে আক্রমন করবে না-এই ধরনের বালখিল্য মন্তব্য যুক্তিহীন।
মৌলবাদকে আক্রমন করতে হলে ধর্মকে আক্রমন করতেই হবে।
[৩] প্রসঙ্গে বলি-মানুষ, নর বা নারী সদা পবিত্র। কেও নষ্ট না। তসলীমা পুরুষদের হিপোক্রাসি এস্কপোজ করেছেন। দরকার ছিল। ভীষন ভাবে দরকার ছিল এই কাজ। এই মহান কাজের জন্যে যদি তাকে অনেক পুরুষের সাথে শুতে হয়ে থাকে, আমি নষ্টামোর কিছুই দেখছি না।
@Biplab Pal,
অনেক ধন্যবাদ আপনার কমেনটস টি করার জন্য এবং ভীষন লজজা লাগছে যখন প্রবীর ঘোষ এর মতো জ্ঞানী লোক ধর্ম ও তসলিমা কে নিয়ে এমন কু্ৎসিত কথা বলে।এই যদি হয় ওনাদের অবস্হা তাহলে আমাদের মতো সাধারন মানুষের অবস্হান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় ??
মামুন।
@মামুন, প্রবীর দার মতো মানুষদের নিয়ে কিছু বলার আগে ভালকরে জেনে-বুঝে বলাটই উচৎ ।নয়তো নিজেকেই লজ্জিত হতে হবে ।এতো সুন্দর যৌকতিক বক্তব্যে যারা অযৌক্তিকতা খুজে পায় তাদের যুক্তিবোধ নিয়ে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করতেই পারি । :guli:
@Biplab Pal,
প্রবীর ঘোষের তসলিমা বিষয়ক এসব উক্তি কোথায় আছে একটু জানাবেন?
আপনার প্রথম ২ যুক্তির বিরুদ্ধে কিছুই বলার নেই। দ্বিমতের অবকাশ খুব সামান্য।
তবে ৩ নং প্রসংগে বলতে হয় যে, আপনি কি বিশ্বাস করেন যে তিনি শুধু পুরুষের হিপোক্রেসী একস্পোজ করার জন্যই বহুগামী হয়েছিলেন? মানে তিনি ব্যক্তিগত রুচি বা যৌন তাড়না এসবের তাড়নায় ব্যাপারগুলি করেননি, তার বহুগামীতার মূল উদ্দেশ্য ছিল অনেকটা রিসার্চ বা সত্যসন্ধান?
আমার এ ব্যাপারে মত তার ব্যক্তিজীবন তার নিজের। তসলিমার লেখার সমালোচনা করতে তার ব্যক্তিজীবন টেনে আনার মানে নেই। সেহিসেবে অনেক বিখ্যাত মানুষের লাগামহীন জীবনের খোজ আমরা কয়জন রাখি? আমাদের জাতীয় কবি নজরূলের ব্যক্তিজীবন কেমন ছিল তা কয়জনে জানি?
তবে তসলিমার ব্যক্তিজীবনের যে কোনই ভূমিকা নেই তা বলা যায় না, আমার পরিষ্কার মনে হয়েছে যে তিনি বহু বিয়ের পরেও দূঃখজনকভাবে সুখী হতে পারেননি। হতে পারে দোষ সবসময়ই অন্যপক্ষের, নাও হতে পারে। এসব একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে দুপক্ষের কথা আমরা না জেনে কিছু বলতে পারি না। তবে এর ভিত্তিতেই মনে হয় তিনি সমগ্র পুরুষ জাতিকেই ভন্ড কামুক ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেন না। তার চোখে পুরুষ মানেই সবাই ভয়াবহ সেক্স ম্যানিয়াক। এটাতো আসলে মানসিক বিকার ছাড়া কিছু না। হতে পারে একটা বড় অংশ পুরুষ মানুষ সে শ্রেনীর, কিন্তু তারপর ও অনেক পুরুষ আছে সতচরিত্রের। নারী জাতি চিরন্তভাবেই সব দেশেই পুরুষ শাসিত, অত্যাচারিত, ঠিক আছে। তবে তাই বলে সব পুরুষ ভন্ড কামুক এধরনের থিয়োরী বাস্তব সম্মত নয়, অনেকটাই ব্যক্তি অভিজ্ঞতার আলোকে আবেগ তাড়িত।
তার ধর্মবিষয়ক লেখার মূল্যায়নে মনে হয় না তার ব্যক্তিজীবন টেনে আনার কোন মানে আছে।
Thanks. I will share it in my blog.