তিনি বৃদ্ধ হলেন
প্লেন থেকে নেমে এয়ার্পোরটের গেট দিয়ে বেরিয়েই দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন আমাকে রিসিভ করতে। বাবা, আমার চির পরিচিত বাবা।
বাবাকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে থেমে গেলাম একটু। চেহারায় বয়সের ছাপ এসেছে। এ ক’বছরেই বুড়িয়ে গেছেন অনেক। তা হবে নাই বা কেন। সত্তুর ছাড়িয়েছেন বেশ ক’বছর হল। মাথার কাশবন আরো ফিকে হয়ে এসেছে, কিন্তু চোখ দুটো আগের মতই প্রাণময়।
–‘তোমাকে বললাম এত ঝামেলা করে আসতে হবে না, আমি ট্যাকসি নিয়ে চলে যেতে পারতাম’। কৃত্রিম উষ্মা দেখানোর চেষ্টা করলাম ভারিক্কি ঢং এ।
বাবা হাসলেন, কিছু বললেন না। মনে মনে হয়তো বললেন, ‘তুই বললি আর আমি শুনলাম আর কি! আমার একটা ভাবনা আছে না!’। বাংলাদেশে কখনো পা দিলে বাবা আসবেনই আমাকে এয়ার্পোট থেকে তুলে নিতে। এটাই তার কাছে নিয়ম। ঝড়, ঝঞ্ঝা, বিপদ আপদ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, বন্যা, হরতাল …ঢাকা শহরে যাই থাকুক না কেন সেসময় তিনি আসবেন। আমার জন্য তার ‘একটা ভাবনা আছে না!’
এটা আমি জানি। কারো কথায় পরোয়া না করে নিজের বিবেক যা বলে তাই তিনি করেন। ছোটবেলা থেকে তাকে এভাবেই দেখে এসেছি। এই রোগটা আমার মধ্যেও আছে কিঞ্চিৎ। কারো কথায় পছন্দ না হলে এড়িয়ে যাই, কখনো বা মুখের উপরই বলে দেই সেটা। কারো ধার ধারতে ইচ্ছে হয় না। কোন কোন মহলে ‘অসামাজিক’ হিসবেও কুখ্যাতি আছে আমার। কিন্তু যারা আমার সত্যিকারের বন্ধু তারা আমার এই স্বভাবের জন্যই পছন্দ করে। তারা হয়ত আমার জন্য পারলে জানটাও দিয়ে দেবে। আমি অসামাজিক হতে পারি, কিন্তু তারপরও বন্ধুভাগ্য আমার দারুন ভাল – এ কথা বলতেই হবে। বাবারও বোধ হয় তাই।
কিন্তু বাবার এই ‘একগুঁয়ে’ স্বভাবটা আমার মার আবার পছন্দ ছিলো না কখনই। আমার মা খুব সাধাসিধে আটপৌরে জীবন যাপনে অভ্যস্ত। যত ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে সবার সাথে মানিয়ে শুনিয়ে থাকতে পারাতেই তার শান্তি। তার জীবনের উদ্দেশ্য সংসারটাকে ঠিক রাখা আর আমাদের দু-ভাইয়ের মঙ্গলেই সীমাবদ্ধ। ওই যে ছোটবেলায় কিছু প্রবচণ পড়েছিলাম না – ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ – আমার মা ছিলেন এই প্রবচণ বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টার সার্থক প্রতিভূ। ছোটবেলা থেকে তাইই দেখে এসেছি। তা না হয়ে উপায়ও ছিল না। আমার বাবাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বহির্মুখী স্বভাবের। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সারা দিন ল্যাব রিসার্চ, ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা নিয়েই কাটাতেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজমের সমস্যাগুলো তার ছাত্র-ছাত্রীদের এক নিমেষে বুঝিয়ে দিতে পারলেও সংসারের দৈনন্দিন জীবনের চাল ডালের হিসেবগুলো তার মাথায় কখনোই ঢুকতো না। হয়ত ঢুকানোর চেষ্টাও করতেন না। আমার মা তার নিপুন হাতে আমাদের অগোছালো সংসার গুছিয়ে রাখতেন। আমি জানতাম না বাবার এই ‘বৈরাগী’ স্বভাবটা আমিও পেয়েছি পুরোমাত্রায়। ব্যাপারটা ভাল করে বুঝেছি আমেরিকায় এসে বিয়ের পরে। দশ-টা পাঁচটা অফিস করে বাসায় এসেই কম্পিউটারে বসে পড়ি। অন্যদিকে সিঙ্কে স্তুপ হয়ে জমে থাকে দুই দিনের পুরোনো খাবারের থালা বাসন। আমি সেগুলো দেখতেই পাই না। বন্যার ধাতানি খেয়ে সম্বিত ফেরে কখনো সখনো। উইকেন্ডে আধা বেলা পার করে ঘুম থেকে উঠে লিখতে বসে যাই, কিংবা ম্যাট রীডলীর নতুন বই নিয়ে সোফায় বসে পড়ি- আর বাড়ির সামনে লনের ঘাস বড় হয়ে আগাছায় ছেয়ে যায়, দরজার ওপরের ঝুল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। আমার চোখেও পড়ে না সেগুলো। আমার স্ত্রী অবাক হয়ে ভাবে, এত দিকবিদিকশুন্য মানুষ হয় কিভাবে!
আমার বাবারা তিন ভাই ছিলো। বাবা তাদের মধ্যে মেজ। আমার অনেকটা বয়স হবার আগ পর্যন্ত জানিইনি বাবার আরো ভাই আছে। কারণ, তারা ছোটবেলায় ‘ইন্ডিয়া চলে গ্যাছে’। যেদিন এটা জানলাম সেদিন থেকেই আমার মনে প্রশ্ন, বাবা এ দেশে থেকে গেল কেন? একদিন ছোটবেলায় জিজ্ঞাসা করলাম – ‘বাবা তুমি ইন্ডিয়া যাওনি কেন, জ্যেঠু আর কাকুর মত?’ বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইন্ডিয়া তো আমার দেশ নয়, ওখানে যাব কেন?’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এমন উত্তরের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। ভেবেছিলাম বাবা বলবে, ‘আরে চেষ্টা করেছিলাম, যাওয়া হল না’। কিংবা বলবে, ‘চাকরি বাকরি নিয়ে এমন জড়িয়ে গেলাম যে যাওয়া হল না’ ইত্যাদি। কিন্তু বাবা সেদিকে একেবারেই গেলেন না। বললেন, ওদেশে কেন যাব?
সত্যিই তো ও দেশে কেন যাবেন! বাবার দেশপ্রেম যে আর দশটা মানুষের চেয়ে অনেক অনেক বেশি তা বুঝতে আমার অনেকটা সময় লেগেছিলো। ছোটবেলায় আমার বন্ধুদের অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করত, ‘ইন্ডিয়ায় তোদের জমি আছে কোথায়?’ আমি প্রথম প্রথম খুব অবাক হতাম। ইন্ডিয়ায় জমির প্রশ্ন আসে কেন? পরে বুঝেছিলাম – হিন্দু নামের কাউকে দেখলে অনেকটা স্বতঃসিদ্ধভাবে ধরেই নেওয়া হয় – ব্যাটা এক পা ভারতে দিয়ে বসে আছে। কাজেই ভারতে তো জমি থাকতেই হবে। অথচ কি করে তাদের বোঝাই – ভারতে জমি কেনা আমাদের জন্য অপশনই ছিলো কখনো। আমি কথা বাড়াইনা, মনে মনে কেবল হাসি। কারণ, ততদিনে বুঝে গেছি – বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেই নির্ঘাত উত্তর আসবে – ‘ওদেশে জমি কিনবো কেন?’
না জমি কেনা বাবার আর হয়নি। না ভারতে, না বাংলাদেশে। গাড়ি, বাড়ি, টাকা পয়সার পেছনে বাবাকে তাড়িত হতে দেখিনি কখনো। তার আশে পাশের অনেকেই যখন বিভিন্ন উপায়ে টাকা পয়সা বানিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন, বাবা তখন সেগুলো বাদ দিয়ে দেশের কথা ভেবেছেন, তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবেছেন, পরীক্ষার সিলেবাস কিভাবে আরো গঠনমূলক করা যায় তাই নিয়ে অহর্নিশি চিন্তা করে গেছেন। বাবার এ সমস্ত কোন কাজেই বাসায় বাড়তি অর্থ যোগান দেয়নি। বাবা এ সমস্ত ‘বাইক্যা কাজের’ পেছনে যত সময় দেয়, মার মেজাজ তত তিরিক্ষি হয়ে ওঠে। বলে, ‘দেশ দেশ করেই লোকটা গেল’। মার মুখে শুনি, ষাটের দশকে ইংল্যান্ডের লীডসে পিএইচডি করতে গিয়ে বাবা নাকি পাঁচ বছরের কাজ তিন বছরেই করে ফেলেছিলেন। তার কাজ নাকি এত ভাল হয়েছিলো যে তার সুপারভাইজার সে সময় তাকে ইংল্যান্ডেই থেকে যেতে বলেছিলেন। তার ল্যাবেই চাকরী পাকা করার কথা বলেছিলেন। বাবা থাকেননি। দেশের টানে চলে এসেছেন। দেশ তখন স্বাধীনতার জন্য উত্তাল। বাবা দেশে এসেই উনসত্তুরের অসহযোগ আন্দোলনে জড়ালেন, একাত্তুরে করলেন মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই আমার জন্মের খবর পেলেন। বাবা তখন কুমিল্লার বর্ডারে যুদ্ধ করতে করতে ভারতে গিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যানিং সেলের সদস্য হয়ছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেনেরাল সেক্রেটারীর কাজগুলোও তাকেই সামলাতে হচ্ছে। আমার জন্মের খবর পেলেও সময় মত আসতে পারলেন না। যখন আসলেন, অভিমানী মা তার সাথে কথা না বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলেন। বাবা তার প্রথম সন্তানকে কোলে তুলে নিলেন জন্মের চৌদ্দদিন পরে।
না বাবা আমাকে রাজপ্রাসাদে রাখতে পারেননি। পারেননি অঢেল বিত্তবৈভবের মধ্যে আমাদের দু ভাইকে বড় করতে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও যেরকম ভাবে মধ্যবিত্ত স্বচ্ছলতাটুকু ধরে রাখতে পারতেন সে সময়, আমাদের পরিবার সেটুকুও পারতো না কখনো সখনো। এর কারণ ছিলো। আমার দাদা-দাদী ছিলেন বয়োবৃদ্ধ, থাকতেন দিনাজপুরে। বাবার দু’ভাই ভারতে চলে যাওয়ায় বাবার একা তাদেরকে দেখতে হয়েছে বহুদিন। মাসে মাসে টাকা পাঠাতে হয়েছে। শুধু তাই না। দিনাজপুরের গরীব আত্মীয় স্বজনকে বাবা প্রায়ই লুকিয়ে ছাপিয়ে সাহায্য করতেন। মাকে ভয়ে বলতেন না। কারণ, মা রাগ করবেন। রাগ করারই কথা। এমনিতেই আমাদের বাসায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা – সেখানে আমার বাবা ‘দাতাকর্ণ’ সেজে বসে আছেন। এটা জানলে যে কেউই রাগে ফেটে পড়তে বাধ্য। কতদিন দেখেছি – দিনাজপুরের সুদূর গ্রাম থেকে গাছের একটা কাঁঠাল নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এসেছেন দিনাজপুর থেকে আমার কোন এক পিসেমশাই। তার মেয়ের বিয়ে। কিছু টাকা দিতে হবে। বাবার সাথে বৈঠকখানার দরজা বন্ধ করে পথা বলেন। চলে যাবার পরে মা বাবার দিকে কড়া চোখে তাকান-
– কে এসেছিলো?
– এই গোপাল আসলো …
– কি প্রয়োজন?
– এই বুলির বিয়ে। কিছু টাকা লাগবে …
– তুমি দিয়ে দিলে?
– না, না । আমার আর টাকা কই? বলেছি টাকা দিতে পারবো না। খুব দুঃখ পেয়ে চলে গেল বুঝলে।
বললেন বটে, তবে কিছুদিন পরেই কিভাবে যেনো বেরিয়ে যেত বাবা দশ-পনেরো হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় দশ হাজার টাকা অনেক টাকা। মা মাথার চুল ছিঁড়েন … আর আমাদের গাল পাড়েন – তোর বাপের জন্যই সংসারটার আজ এই দশা!
মা যাই বলুক না কেন, সংসারের দশা কিন্তু অতটা খারাপ ছিল না আমাদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক ছোট্ট বাড়ির নোনাধরা দেয়াল আর স্যাঁতস্যাঁতে ছাদের নীচে থেকে আমরা সেটাকেই আমরা দু-ভাই তাজমহল ভেবেছি। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেই ছিলো উদয়ন স্কুল। সেখানে পড়তে গেছি পায়ে হেটে। দূরে কোথাও যেতে হলে রিক্সাই ছিলো অবলম্বন। বাড়ীর পাশেই বিরাট মাঠে ফুটবল ক্রিকেট খেলে কাটিয়েছি। বাবার কাছে বায়না ছিলো ভাল একটা ক্রিকেট ব্যাট। আমার মনে আছে, প্রথম যখন একটা ভাল ক্রিকেট ব্যাট বাবা নিউমার্কেট থেকে কিনে দিয়েছিলেন, আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলেছিলাম। পরে শুনেছিলাম বাবাও নাকি ছাত্রজীবনে ক্রিকেট খেলতেন। বাবা আমাকে ‘রাজপুত্রে’র মত বড় করতে পারেননি বটে, কিন্তু বাবাই আমাকে যত রাজ্যের বইয়ের জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের শেলফে হাজারো বইয়ের পাশাপাশি ছিলো মুক্তধারার কিশোর –বিজ্ঞানের মজার মজার সমস্ত বই। জাফর ইকবালের ‘মহাকাশে মহাত্রাশ’ কিংবা স্বপন কুমার গায়েনের ‘স্বাতীর কীর্তি’ কিংবা ‘বার্ণাডের তারা’ এগুলো তার কল্যানেই পড়া। বাবাই আমাকে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সুকুমার রায়ের রচনা সমগ্র। হযবরল-এর বিড়াল, পাগলা দাশু আর হেশোরাম হুঁশিয়ারের ডায়রীর কথা জেনেছি তার কাছ থেকেই। বাবাই আমার মনে বপন করেছিলেন মুক্তবুদ্ধি আর সংশয়ের প্রথম বীজ। বাবাই আমাকে আবৃত্তি করতে শিখিয়েছিলেন রবিঠাকুরের প্রশ্ন কবিতা –
‘…আমি যে দেখেছি গোপন হিংসা, কপট রাত্রী ছায়ে
হেনেছে নিঃসহায়ে,
আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।
কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে
বাঁশি সঙ্গিত হারা
অমাবশ্যার কারা
লুপ্ত করেছে আমার ভূবণ
দুঃস্বপনের তলে
তাই তো তোমায় সুধাই অশ্রুজলে।
যাহারা তোমার বিষায়েছে বায়ু
নিভায়েছে তব আলো
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ
তুমি কি বেসেছ ভালো?’
সত্যি বলতে কি – বাবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ভালবাসা বৃদ্ধি পেয়ছে আমার দেশ ছাড়ার পর অনেক বেশি। এর কারণ আছে। বাবা বরাবরই ছিলেন অন্তর্মুখী চরিত্রের একজন মানুষ। বাবার কথা মনে হলেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠত সিগারেট হাতে ধরা গম্ভীর প্রকৃতির একজন রাগি রাগি মানুষের ছবি। বাবাকে আসলে আমি ভয় পেতাম। এই রাশভারি মানুষটির সাথে একটা অলিখিত দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিলো কোন কারণ ছাড়াই। এর বেশিকিছু ভাবার অবকাশ আসলে আমি কখনো তেমন করে পাইনি। তার ভেতরের মানুষটাকে বুঝতে আমার সময় লেগেছে। যতদিন দেশে ছিলাম ততদিন বাবাকে আর দশটা বাবার মত সাধারণই ভাবতাম। কিন্তু মানুষ হিসবে বাবা যে আসলে কত বড় তার নমুনা টের পেয়েছি দেশ ছাড়ার পর। একটামাত্র নমুনা দেই। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পরই দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়ছে। দেশের বাইরে ইন্টারনেটে পত্রিকা খুলে নানা ধরণের খবর পাই। আজ বজেন্দ্র দাসের বাড়ি আক্রমণ তো কাল সুহাসের। আজ পুর্ণিমা গণধর্ষনের শিকার, তো কাল মমতা। উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিদিনই বাসায় ফোন করি। জানলাম বাবা বাসায় নেই। বরিশালে চলে গেছেন। সাম্প্রদায়িক আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ একটি গ্রামে গিয়ে সাহায্য করেছেন। একটি গ্রুপের সাথে মিলে ভেঙ্গে যাওয়া বাড়িঘর তুলছেন, মানুষকে সংঘবদ্ধ করেছেন। এমন একটি সময় যখন মানুষ ঘর থেকেই বেরুচ্ছে না, বাবা তখন নিজ উদ্যোগে দু হাতে ‘জঞ্জাল সরানোর’ দায়িত্ব নিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামকে গ্রাম চষে ফিরছেন। বাবার হটকারিতায় উদ্বিগ্ন হই, চিন্তিত হয়ে পড়ি। ভাবি, বাবা যদি আর না ফেরেন? মার সাথে রাগারাগি করি – কেন যেতে দাও এ সমস্ত ছাই পাশে! কিছু যদি হয়? মাও উলটো ঝামটি দেন – তোর বাপ কি শুনে নাকি আমার কোন কথা!
কিন্তু কিছুই হয় না বাবার। বাবা ফেরেন। ‘জঞ্জাল সাফ’ করেই ফেরেন, তার পক্ষে যতদূর সম্ভব। শুধু তাই নয় – ভবিষ্যত জঞ্জালে যেন দেশ ছেয়ে না যায় সেজন্য জড়িত হন সম্প্রীতি মঞ্চ, শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের কাজের সাথে। সংগঠিত করেন মানুষজনকে মানব বন্ধনে আসতে। এ সবই আমি দেখি পত্রপত্রিকার খবরে। পত্রিকার খবর থেকেই পাই বাবা শুধু সংখ্যালঘু হিন্দু নয়, পাহাড়ি জনগনের জন্যও কাজ শুরু করছেন। তাদের সংস্কৃতি আর অধিকার রক্ষায় উদ্যোগ নিচ্ছেন, ব্রহ্মপুত্রের বন্যাবিদ্ধস্ত চরে স্কুল পুননির্মাণ করেছেন, কখনোবা সাংবাদিক মানিক সাহার পরিবারের পাশে এসে দাড়াচ্ছেন। এ সব খবরই পাই পত্র-পত্রিকা থেকে। মনটা উদাস হয়, সেই সাথে বাড়ে বাবার জন্য গর্ব।
এর মধ্যে ২০০৫ সালে আমি একটা বই লিখি – ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’। মুলতঃ মহাবিশ্বের উৎপত্তির সাম্প্রতিক ধ্যান ধারণাগুলো নিয়ে বই। বইটার লেখাগুলো সিরিজ আকারে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়েছিলো। অনেকেই লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে আমাকে পরামর্শ দেন। কিন্তু পরামর্শ দিলে কি হবে আমার কোন প্রকাশকের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না। আমার বই ছাপাবে কে? এক্ষেত্রেও বাবাই হলেন আমার ভরসা। তিনি আমাকে অংকুরের মেসবাহউদ্দিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মেসবাহউদ্দিন পান্ডুলিপি পড়ে তা ছাপাতে মনস্থ করলেন। কিন্তু প্রকাশক চাইলে কি হবে? বাবা আমার পান্ডুলিপি নিয়ে বসলেন এবারে। নির্দয়ভাবে কলম আর কাঁচি চালালেন। যেখানে পছন্দ হল না বাদ দিলেন। যেখানে সন্দেহ, সেখানে হাজার জায়গায় রেফেরেন্স চাইলেন। বাবার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমার অবস্থা আক্ষরিক অর্থেই ত্রাহি ত্রাহি। আমি দিব্য দৃষ্টিতে বুঝে গিয়েছিলাম বাবার ছাত্রদের থিসিস লিখতে গিয়ে কি করুণ দশা হত। বইটা বেরুনোর পর বইটা বহু বিদগ্ধজনের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছিল, কেউ কেউ একে বাংলাভাষায় লেখা বিজ্ঞানের অন্যতম ‘ক্লাসিক গ্রন্থ’ হিসবেও অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু কেউ হয়তো জানবে না যে, বইটার সাফল্যের পেছনে অনেকখানি কৃতিত্বই বাবার। এ বইটা প্রকাশের পর বাবা আমাদের অনেকগুলো বইয়েরই এডিটর হিসবে কাজ করেছেন। আমাদের বইগুলো ঠিকঠাক করে দেন, আমাদের সকলের ছাইপাশ লেখা সংকলিত করে তিন মাস পর পর ‘মুক্তান্বেষা’ বের করেন, কিন্তু নিজের হাজারো লেখাগুলো সংকলিত করে বই ছাপানো আর তার হয়ে ওঠে না। আর আমি তার সু্যোগ্য পুত্র – কখনোই সেকথা মনে করিয়ে দেবার ফুরসতটুকুও পাইনা।
আমার আর বন্যার বিয়ের পর আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন তো বটেই আমার মা বা বন্যার বাবার জন্যও মেনে নেওয়া কষ্টকর ছিলো। আমরা দুজন কেউই ধর্ম কর্মের ধার না ধারলেও ‘রাফিদা আহমেদ বন্যা’ আর ‘অভিজিৎ রায়’-এর মধ্যকার বিয়ে শুনলেই এর মধ্যকার তাৎপর্যটুকু অনেকে উপলব্ধি করতে পারবেন। বিয়ের পর বুঝেছি বাবা ছিলেন মনে প্রাণে কত আধুনিক একটা মানুষ। বন্যা আর আমার সম্পর্ক কখনো তাকে উদ্বিগ্ন করেনি। চারপাশের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে তার সবটুকু নিয়ে সব সময়ই দাঁড়িয়েছেন আমাদের পাশে। বন্যার সাথে তার সম্পর্ক দেখলে আবাক হই। যে মানুষটিকে রাগি রাগি অন্তর্মুখী চরিত্রের ভাবতাম – তার মুখ দিয়ে কথার খই ফোটে। আর আমি মনে মনে ভাবি- এ বাবাকে তো আমি চিনতাম না !
মানুষটার ভিতরের মানবিকতাটুকু যে আসলে আকাশের চেয়েও বিশাল তা আমি বুঝিনি। আমি টের পাইনি – ছোটখাট গড়নের এ মানুষটির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে একদিন আকাশ ছুঁয়েছে। আমি জানতাম না আমার এত মানুষজনের সাথে পরিচিতি থাকার পরও কি করে বাবাই যেন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। না সে কথা আমি তাকে কখনো বলিনি। বলা আর হয়ে ওঠেনি। আমি প্রতিদিনই আমার পাশে তার বিশাল অস্তিত্ব টের পাই। তিনি আছেন, পৃথিবীর অর্ধগোলার্ধ দূরে অবস্থান করেও তিনি আমার পাশে থাকেন। বাবাও কি সেরকম করে আমার অস্তিত্ব টের পান? হয়তো বা পান। কারণ শেষবার দেশে গিয়েছিলাম, আমার মামাতো ভাই আমার কানে কানে বলে উঠেছিলো –‘তুমি দেশে আসলেই তোমার বাবার শক্তি আর উদ্যম যেন তিনগুন বেড়ে যায়’। আমি টের পাইনা। বাবাকে আমি আগের মতই একই রকম ভাবে দেখি- শান্ত, সৌম, কোথায় যেন একটু রাগি রাগি, অন্তর্মুখী, নিজের কাজ নিয়ে সদা ব্যস্ত।
দেশ থেকে ফিরে আমিও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। বাবাও তার আপন জগৎ নিয়ে দেশে ব্যস্ত সময় কাটান। এত দূরে থেকেও ‘কোয়ান্টাম এন্টাংগেলমেন্ট’-এর মত কোথায় যেন এক অদৃশ্য বন্ধন থেকেই যায়। কোন এক নিঝুম রাতে বাইরে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ইদানিং আনমনা হয়ে যাই। সুমনের গানটা মনে পড়ে যায় বড্ড বেশী করে –
তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন, বনস্পতির ছায়া দিলেন সারা জীবন।
এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়, সবুজ কিন্তু আজো মাতায়, সুঠাম ডালে …
বাবার সাথে ফোনে কথা বললেই ইদানিং নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়। মাঝে মধ্যে এই ছোট মনে হওয়াটা বোধহয় জরুরী।
শ্রদ্ধা এমন বাবাকে
আমি আপনার বাবা ওহ আপনার(অভিজিৎ রায়) আদর্শ ধারন করি।
❤
বিনম্র শ্রদ্ধা অজয় স্যার। বাংলাদেশ আপনাকে আজীবন মনে রাখবে।
অভিজিৎ চেতনার মৃত্যু নাই। #iamavijit
আপনার সাথে দেখি আমার ভালোই মিল এ দিক থেকে :-)। আমার বাবাও এরকম, নিজে কিছু ভালো মনে করলে কারো কথা শুনেনা। এটার ভালো খারাপ দুটি দিকই আছে। অনেকসময় কেও ভালো মতামত দিলেও সেটা শুনেনা,আবার সুবিধা হলো ১০জনে ১০ কথা শুনলে যে যন্ত্রটা হয় সেটা এড়ানো যায়।
ভালো লাগল লেখাটি,আগে কেন চোখে পড়েনি জানিনা। সুযোগ পেলে একবার স্যারের সাথে দেখা করার ইচ্ছা আছে। এবার সুযোগ ছিল মামুন ভাই দেশে আসার পর কিন্তু প্রোগ্রামিং কনটেস্টের জন্য পারিনি।
@ অভিজিৎ রায়।
আমার ডায়েরীর পাতা থেকে তুলে দিচ্ছি:
২৭ ডিসেম্বর ২০০৯ রবিবার:
জন্মদিন আমার। মুক্তমনায় বিচরণ করছি। মাত্র কয়েকদিন আগে এই মুক্তমনা ব্লগের সন্ধান পেয়েছি।
আজ অভিজিৎ-এর একটি লেখা পড়ে আমার চোখ ভিজে গেছে, হৃদয় ছোঁয়া লেখা, অসাধারণ বাকভঙ্গী। অর্গলবদ্ধ করে একাকী চিৎকার করে কেঁদেছি। অঝরে ঝরেছে অশ্রু। একজন বিবর্তনবাদী মানুষও আবেগ তৈরী করতে পারে লেখনীর মারফত, কী আশ্চর্য্যের ব্যাপার! বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা জানাই …।
———-
সাম্যবাদের ভূমিকার লেখক অনিল মুখার্জীর মৃত্যুর সংবাদটি ড. অজয় রায় ফোন করে জানিয়েছিলেন সরদার ফজলুল করিমকে। এমন তথ্য পেয়েছিলাম কোনো এক বই পড়ে। তখন থেকেই নামে পরিচয়। এর পর বিভিন্ন পত্রিকায় মাঝে মাঝে তাঁর লেখা আর্টিকেল চোখে পড়ত। মানবতাবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি বিখ্যাত। তাঁকে কখনও চোখে দেখিনি। কিন্তু নামটি মনে এলেই মনের মধ্যে স্যার শব্দটি আগে চলে আসে। কোনোদিন তাঁর সাক্ষাত পেলে নত মস্তকে একটি বারের জন্যে হলেও চরণ স্পর্শ করতে চাই।
খুবই হৃদয়স্পর্শী লেখা। পড়ব পড়ব করে অনেকদিন পর লেখাটা পড়লাম। স্যারের প্রতি জ্ঞাপন করছি আমার বিনম্র শ্রদ্ধা। বহু ব্যাপারে নিজের পরিবারের সাথে মিল পেলাম। সেগুলো ইমেইলে আলোচনা করব। শুধু একটা ব্যাপার শেয়ার করি…ক্রিকেট ব্যাট। আমার ভালো ব্যাটের খুব শখ ছিল। স্ল্যাজেঞ্জার, গ্রেনিকলস,গান এন্ড মুর, স্টুয়ার্ট সারিডস…এই ব্যাটগুলো ছিল আমার দিনরাতের স্বপ্ন। প্রকৃতি আমাকে যে গুটিকয় ক্ষমতা দিয়েছিল তার মধ্যে একটা ছিল ক্রিকেট খেলার সহজাত ক্ষমতা। কিন্তু বাংলাদেশে অনীল কুম্বলে, সিধু ,জহির খান, দ্রাবিড় বা ভি,ভি,এস লক্ষণ হওয়া যায় না। ক্লাস এইটে একটা বড় অর্জনের পর একাডেমিক কারণে আমার খেলা ছাড়তে হোল। কারণ ক্লাস বাদ দিয়ে প্র্যাক্টিস করতে হোত। ওই বছরই আমার একটা দ্বিতীয় বিভাগের দলে যোগ দেবার কথা ছিল। যাই হোক, ফাইভ বৃত্তিতে জেলায় প্রথম হবার পর বাবা আমাকে একটা মারুতি ব্যাট কিনে দিয়েছিলেন। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার। ব্যাটটা দিয়ে খুব বেশি খেলতে পারি নি স্কুলের বা পাড়ার বড় ম্যাচগুলোতে। তবে ঐ অনুপ্রেরণার জন্যেই হয়ত, ওই ব্যাটটা হাতে থাকতে প্রায় সবগুলো ইনিং এ অপরাজিত ছিলাম।
না, ডঃ অজয় রায়ের মত উদ্যমী একজন মানুষ বৃদ্ধ হতে পারেন না । আমি তাকে কাছ থেকে দেখেছি। তার মধ্যে আমি শৈশব দেখেছি, দেখেছি কৈশোর, দেখেছি যৌবন।
There is an important mirroring relationship established between sons and their fathers that can work either to both men’s benefit or their detriment, as the father begets the son, so the son begets the father. Much has been written about the cherished power and challenges of father-son relationships in literature, cinema and psychology, and also in phenotype and behavioural biology. However, Avijit has given a new dimension to a father-son story in a more complex set up in Bangaldesh that demands much more. His story telling is more apealing to us as we commoner can relate more to this story than the stories of other luminary Bengali father-son stories such as Shyamaprasad-Ashustosh Mukherjee, Upendrakishore-Sukumar-Satyjit, Ustad Allauddin Khan- Ali Akbar Khan.
I must say I always read Avijit’s blog whenever I get opportunity. I share his emotions expressed in this very touchy article.
Professor Asim K. Duttaroy
Faculty of Medicine,
University of Oslo,
Norway
……….salute to Dr. Ajoy Roy.
it will inspire others.
regards
আপনার “গৃহী বাউল” বাবাকে যে আপনি বোঝেন এটাও বেশ আনন্দের বিষয়।
I have been cherishing a long desire to meet and feel this tall man, Dr. Ajoy Roy of superb intellect who is much ahead of our time.
I am familiar with a few of Dr. Avijit Roy’s writings on scientific materials. He is very powerful to present a complex subject in a simple way. He could do very well like many others who are engaged with literature. Instead he is volunteering to one highly critical and difficult discipline in which not enough qualified people is dedicated like him. His Muto-mona is a unique and successful platform to educate the so-called literate people to understand, realize and assimilate the truth of the nature in their belief.
He has been engaged with his great mission to serve the humanity to take to a new height. Dr. Ajoy Roy has produced this bright son. Who am I to judge this duo? However, to my own satisfaction, in a scale of 0 to 10, I give 10 to Dr. Ajoy Roy and 100 to Dr. Avijit Roy as he has already surpassed his great father. Then I give 200 to Dr. Ajoy Roy for his contribution to the scientific world, humanity and for producing such a bright son for the world.
I know my eyes are always dry. But Avijit made me tearful. My regards to both of them. It is wonderful. I bow my head with respect.
(Note the moderator: Sorry, previously I did not notice the button, “মন্তব্য করুন”. I was only looking for the “Submit” button)
A touchy, inspiring and well written piece!
বাপকা বেটা। স্যার যে আপনার বাবা জানা ছিল না। আপনার লেখাটি আসলেই খুব ভাল হয়েছে।আপনার লেখায় স্যারের নাম নেই কেন? সেটা কি ইচ্ছাকৃত। পাঠককে……..?
<“Bhul Avijiter sab uchu darer ba uchagger lekha”. Ei line ti diye ami bolte cheyechi Avijiter uchanger lekha amake bhul bujte sahajyo koreche je tar anek bayos.
Sentu Tikadar
A
<Besh deri hoye gelo amar montobbo korte.Jakhon prothom Mukto- Mona site dekhechilam , takhon Avijit ke mone korechnilam besh bayosko. Eta amar bhukl na. Bhul Avijiter sab uchu darer ba uchagger lekha.Tar par jakhon tar bayos jante parlam takhon abak hoye bhebechilam Avijit protivar ek anobaddo udaharon.
DDhaka te jabo.Anek Gyani Gunider sathe dekha korbo. Proff. Ajay Roy er sathe dekha korbo amar binto shroddha janie nijeke dhonno korbo.
Sentu Tikadar
আসলেই মা বাবার পক্ষ থেকে সাপোট পাওয়া অনেক ভগ্যের ব্যাপার। সবার সেটা জোটেনা। আমি সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝি। এখন বুঝি ব্রতীর মায়ের মহত্ত কোথায়। আগে বুঝতামনা। অভিজিৎদাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
অভিজিৎদা, আপনার বাবা যে আজয় স্যার আগে জানাতাম না। আপনাদের দুজনের লেখাই ভালো লাগে। ধন্যবাদ।
ডঃ অভিজিত রায়,
ঘুনেধরা এ সমাজে খুব বেশি মানুষ নেই যারা সত্যিকারভাবেই মানব দরদি । স্যারেকে নিয়ে এ প্রান ছোঁয়া লেখা সত্যিই অনন্য । একজন মহান মানুষকে নিয়ে পুত্রের বাক্তিগত কথামালা আমাদের, যারা অজয় স্যারেকে কিছুটা হলেও জানি, খুব ভাল লাগল ।
আজয় স্যার, হে মহান পিতা আমার প্রনতি আপনার প্রতি।
বিনীত-
কবীর
বাংলাদেশ ।
I have never met Prof. ajoy Roy or had much personal communiction with him. Nevertheless, he had always been an example to me for selfless, indominating, impartial and a fair humanist. I always remember how he had constantly labored to keep aflame the memory of late Professor Humayun Azad. Professor Ajoy’s contribution to reconstruct the Roumari primary school is unforgettable.
It is very heartening that his able son Dr Avijit Roy candidly pays tribute to his father. Avijit reminds us how much we owe to our parents for what we are today.
প্রিয় অভিজিত দা,
প্রবাদগুলো যে বানাইছে এমনি এমনিতো আর বানায়নাই তাইনা! Like father like son.
আমাদের প্রিয় অজয় স্যার…।
আমার বাবা-মা খুবই উদার। আমি এদিক দিয়ে ধন্য। কিন্তু আমার বাবার কিছু চারিত্রিক ক্রুটি আছে, যার কারণে “পিতৃপ্রেম” শব্দটির অর্থ হয়ত কখনওই আমি বুঝতে পারব না।
যাই হোক, আপনার পরিবারটি সত্যই অনন্য। বাপ-বেটা-বউ তিনজনই বিজ্ঞানী!আপনাদের প্রতি শুভকামনা রইল।
অভিজিত দা,
আমি জানতাম না যে শ্রদ্ধেয় অজয় রায় আপনার বাবা; প্রদীপ দেবের শেষ প্যারার সাথে একমত হতে হচ্ছে।
আপনার ব্যক্তিগত কিছু কথা কিছু প্রশ্ন এলো, ব্যক্তিগত; অবশ্যই উত্তর দেওয়া আপনার ইচ্ছা।
আমি এক অভিজিত রায় কে কলেজ থেকে চিনতাম, ঢাকা কলেজ; সেও উদয়ন, দুজনেই পরে বুয়েট এ যাই তবে দুই ডিপার্টমেন্ট এ। সে মেকানিক্যাল আমি সিভিল (HSC 90 batch) । শুনেছিলাম সে পরে বেশ লেখালেখি করছে, তবে তখন ডিটেইলস জানতাম না। তার ডাক নাম ছিল গুল্লু। এখন প্রশ্ন কি তো বুঝতেই পারছেন? আপনি কি সেই?
হ্ললে আপনিও আমাকে এই নামে চিনবেন না, কারন সংগত কারনে এটি আমার ছদ্মনাম। অনুগ্রহ করে জানালে খুব খুশী হব।
ধণ্যবাদ।
@Adil Mahmood,
আসলে এ ধরণের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণমূলক লেখার একটা অসুবিধা হল, অনেক ব্যক্তিগত বিষয়ে আশয় চলে আসে। ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে থাকলে পাঠকদের বিরক্তি এক সময় বাড়ে বলে আমার ধারণা। আমি তাই আমার বেশিরভাগ লেখায় ব্যক্তিগত বিশয় আশয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে কিছুটা নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়ানুগভাবে লেখার চেষ্টা করি। এ লেখাটে পারা গেল না একেবারেই। তবে আমার পরিচিতি নিয়ে আপনার কৌতুহলের জন্য ধন্যবাদ। পাঠকদের বিরক্ত না করে আমরা ব্যক্তিগত ইমেইলে সেগুলো আলোচনা করতে পারি। আপনি আমার ইমেইলে মেল পাঠাতে পারেন। এখানে সবার জন্য এটুকু বলা যায় যে, ‘অভিজিৎ রায়’ -ই আমার আসল নাম। কোন ছদ্মনাম নয়। এর বাইরে আরো বেশি কিছু জানতে হলে আপনাকে ইমেইল করতে হবে। তবে আপনার পরিচিতি সেখানে থাকলে ভাল হয়। আমার পরিচয় আপনাকে জানাতে আমার আপত্তি নেই, যদি আপনারটাও আমার জানা থাকে। আর আপনি যখন এখানে ছদ্মনামে লিখছেন, তখন এখানে আলোচনা করা বোধহয় আপনার জন্যও সমীচীন হবে না। আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
‘আদিল মাহমুদ’ নামে আপনার জন্য ব্লগ একাউন্ট তৈরি করা হয়েছে। ওটা ঠিক আছে কিনা জানাবেন। আগেই ওটা করার দরকার ছিলো। সমায়াভাবে নজর দিতে না পারাতেই এই অহেতুক বিলম্ব।
@অভিজিৎ,
ধণ্যবাদ আপনার উত্তরের জন্য। আমিও একমত আপনার সাথে, ব্যক্তিগত বিষয়ে এখানে কারো বিরক্তি উতপাদন উচিত নয়। আমি একটু বেশী উচ্ছসিত হয়েছিলাম আপনার বাল্যকালের স্মৃতিচারণে আমার পুরোনো পরিচিত কারো সাথে মিল দেখে।
ব্লগ দেখেছি, আপনাকে পরশূ মেইল করেছিলাম দেখে। মনে হয় পাননি। অসংখ্য ধণ্যবাদ।
হৃদয় ছোঁয়া লেখা। এটা বাংলা সাহিত্যে দলিল হয়ে থাকবে।
অন্তর পুঁড়ে বাঁধ ভাংগা জোয়ারের মতো হু হু করে বার বার কাঁদলাম। যতবার পড়ি ততবার শুধু চিৎকার করে একা একা ঘরে বসে কেঁদেছি। কারন প্রথমতঃ আমার বাবার (মৃত) কথা মনে পড়ায় দিতীয়তঃ অজয় স্যার কে আমি এত কাছ থেকে চিনি ও জানি যার তুল্য ওনি নিজে একাই এবং যার সাথে কারো তুলনা চলে না।এবার দেশে স্যার এর বাসায় গিয়ে বুঝতে পেরেছি ওনি কত সাদামাটা সারাটা জীবন কাটালেন তা আমি সহ আমার বন্ধুদের চোখে ও মনে এক জলন্ত উদাহরন হয়ে থাকল ।
ওনার সুযোগ্য পুএ অভিজিতের “বাবা দিবসের” এমন অন্তর ছোঁয়া লেখা আমাদের অনেক-কে কাঁদাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাবা দিবসের দিনে সবাই কে শুভেছছা রলো।
মাহবুব সাঈদ মামুন
ষ্টকহোম
২২।০৬।২০০৯
ডঃ অভিজিৎ রায়,
প্রাণস্পর্শী লেখাটা পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম আমার বাবার মত কোন কোন ক্ষেত্রে একই চরিত্রের মানুষ আর আমি কোথায় দেখেছিলাম। চকিতে দুজন শিক্ষকের মুখাবয়ব মানসপটে ভেসে উঠলো। অধ্যাপক অজয় রায় আর অধ্যাপক সৈয়দ নুরুন নবী। একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিঞ্জানের অন্যজন আমার রসায়ন বিভাগের। ইতোপূর্বে আমি অধ্যাপক অজয় রায় স্যারের লেখা “আমার স্মৃতিতে ডঃ ওয়াজেদ মিয়া” শিরঃনামের একটি অনবদ্য স্মৃতিরোমন্থনের মন্তব্যের সারনীতে তাঁকে উদ্দ্যেশ্য করে দু-একটি স্মৃতি স্মরন করে নিজের প্রতি আরেকটু বাড়তি যত্নের মিনতি করেছিলাম। জানিনা তিনি কত টুকু ভালো আছেন, আমি আজীবন তাঁর সেই সুস্থতা, সেই ক্রম বিকশিত জীবনদায়ী, অনুপ্রেরণাদায়ী শক্তির অটুটতা প্রত্যাশা করি। আমি ভাবতে পারিনা “তিনি বৃদ্ধ হলেন”। যাঁর ভেতর হতে তারুণ্যের উচ্ছাস নির্গলিতার্থ ধারার মত প্রবাহিত হয়, যাঁর দৃষ্টিপাতে অদেখারে দেখার তৃষ্না বাড়ে, অজানা হাতছানি দেয় তিনি কি করে বৃদ্ধ হবেন? মনটাতো ওখানেই আছে শেকড়ের গভীরতম দেশে। যেখানে তিনি পৌঁছেছেন অভিযানে অভিযানে। পথ তাঁকে চলতে হবেই দিয়ে নির্দ্দেশনা, যতক্ষন না গন্তব্য জানান দেয় জ্বালিয়ে আলো। তাই তিনি থাকুন না যেমন দেখেছি তাঁরে।
যদিও জনাব ইরতিশাদ আহমদ, প্রদীপ দেব আর গৌতম রায়ের মন্তব্যের আগে ঠিক বুঝিনি যে ইনিই আপনার পিতা এবং অহংকার! নিশ্চিতান্তে ডঃ প্রদীপ দেবের মতোই ঈর্শ্বান্বিত আমি এবং আমরাও, তাঁর (ডঃ প্রদীপ দেবের) শেষ অনুচ্ছেদের অনুরূপ উচ্চারণে! আপনি সততঃ আলোয় দীপ্যমান তো আমরাও বঞ্চিত হইনি এতোটুকুও, গোটা দেশ ও তার তারুন্য। আপনি সুস্থিত হয়েছেন তাঁর বটবৃক্ষসম সুশীতল আলয়ে, আমরাও হয়েছি ধন্য ঐ শীতল মলয়ে। ছিন্নভিন্ন হয়েছে সব কুপমুন্ডুকতা, অন্ধসংস্কার যত প্রক্ষিপ্ত আলোক বাণে। মানবের যত মর্মপীড়া, মনের কোনে লুকিয়ে থাকা অন্ধকার, যুক্তি-বুদ্ধিলুপ্ত অসার বিশ্বাস মুক্ত সমাজ বিনির্মানে ছত্রখান হোক সমুদয় উন্মিলিত চেতনার যুক্তিগ্রাহ্য অনুরননে। বইতে যেন পারি এভাড় তাঁর গাঁইতি-কুড়াল সহ বিনির্মানে নতুন সভ্য আলো, আমরা যারা আছি, আমাদের উত্তর, তারপর, তারপর……….।
– কেশব কুমার অধিকারী
আপনার লেখাটি ছুঁয়ে গেলো।
বাবার প্রতি নীরব অভিবাদন।
আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে, স্যার এর সাথে কিছুটা হলেও সময় কাটানোর সুযোগ আমার হ’য়ে থাকে। শিক্ষক হলেও এই ভদ্রলোক তার শত-সহস্র ছাত্র-ছাত্রীদেরকে আপন করে নিয়েছেন নিজের সন্তানের মত ক’রে।
তাঁর সুপারভিশনে পিএইচডি অর্জনকারী অনেকেই আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রফেসর। মাঝে মাঝে তাঁদের দেখি উদ্গ্রীব হয়ে, মন খারাপ করে ব’সে আছেন। জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাই ‘স্যার এর শরীর খারাপ’। বুঝতে বাকী থাকেনা এই শিক্ষক শিক্ষকতার সীমানা পেরিয়ে অনেক উপরে উঠে গেছেন, তাঁর স্নেহ আর আন্তরিকতা দিয়ে স্থান করে নিয়েছেন মানুষের মনে।
তাঁর জন্য শ্রদ্ধা ছাড়া কী বা আর দিতে পারি আমরা…
ভাইয়ারে সবার বাবা যদি আপনার বাবার মতন হত! আমার বাবাও খুব একটা খারাপ না।
যদি খারাপই হত তবে তার সাথে মহাজাগতিক বিষয়(!!) নিয়ে বেহুদা যে ঝগড়া গুলো করেছি তারপর সে আমাকে চাইলে পিটায়ে তক্তা বানায়ে ফেলতে পারতো(যদিও মাইর না খাওয়ার পেছনে আমার মায়ের অবদানই বেশি,তবুও মাইরতো দেয় নাই!!)। আরজ আলি পড়তে দেয়ার পর কাইট্টা পানিতে ভাসায়ে দিতে পারতো(যদিও বইটা পড়ার পরে সে অস্বাভাবিক রকম নিরব ছিলো, সামান্য বকাতো দেয়ই নি,কে আমাকে নষ্ট করেছে টাইপের উলটা পালটা প্রশ্নও করেনি!!)নামাজ পড়ি না দেখে হুজুর দিয়া হেদায়েত করতে পারত!!
না, এসবের কিছুই সে করে নি। তাহলে আমার বাপ খারাপ কিসে!!(যদিও পিছনে মা আছে!! 😉 )
আমি তখন কাজ করতাম সাপ্তাহিক মৃদুভাষণে। সেসময় একবার আপনার বাবার সাথে কথা হয়েছিলো, আপনার বইয়ের সুবাদেই। মৃদুভাষণে আপনার বইটির একটি রিভিউ বেরিয়েছিলো। ওটা আমার হাত দিয়েই গিয়েছিলো। আপনার লেখাটি পড়ে সেদিনের কথাগুলো আবার মনে পড়লো।
এমন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ আমাদের সমাজে আরো দরকার।
Avijit,
I was waiting for this article for a long time. I havn’t got a chance yet to meet your father – Prof. Ajoy Roy – my unseen hero. I have known of him since I was a first year Physics student in Chittagong University. In those days I used to read his articles in Sangbad.
You are right that sometimes we don’t see the obvious when we are living very close to each other. But now the geographic distance makes you feel that how much you miss your parents – specially your father.
I don’t believe in luck – but still can’t refrain myself of saying that – you are “lucky” to be Prof. Ajoy Roy’s son. But it is also true that if I seek for any intelectual help from him there will be no difference between Avijit Roy and Pradip Deb. In that sense – I am also “lucky” to have a fatherly figure like Prof Ajoy Roy; yes – we all are.
Thanks for this article Avijit. Please share more with us.
অভিজিৎ, একজন মহৎপ্রাণ মানুষের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, প্রগতিশীল চিন্তাবিদ এবং সাহসী সংগঠক ডঃ অজয় রায় বাংলাদেশের গৌরব। তিনি যে একজন স্নেহশীল,দায়িত্বপরায়ন এবং গর্বিত পিতাও জানলাম আপনার লেখা থেকে। আজকের এই বিশেষ দিনে ডঃ অজয় রায়কে অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে অভিনন্দন আপনাকে আর বন্যাকেও।