সদা সত্য কথা বলিবে।
আতিক রাঢ়ী
একটি বিষয় নিয়ে আনেক দিন থেকেই লিখবো লিখবো ভাবছি, কিন্তু ঠিক এটে উঠছি না। মানে বেশী মোটা গাছে চড়তে গেলে যা হয় আরকি। আজকেও ঠিক মত পারবো কিনা জানিনা। তবে চেষ্টা করতে দোষ কি ? দেখা যাক……………
বিষয়ঃ মূল্যবোধ ও চিরন্তনতাঃ
আমার সাবেক বসের সাথে কথা হচ্ছিলো মূল্যবোধ নিয়ে। উনি বলছিলেন কিছু মূল্যবোধ আছে যা চিরন্তন। উদাহরন স্বরূপ বলেছিলেন, যত কথাই বলো “সদা সত্য কথা বলিবে।”এটা একটা চিরন্তন মুল্যবোধ। “যত কথাই বলো” এটা হচ্ছে উনার কথার মুদ্রা দোষ। আমার কলিগ আমার পাশেই বসা ছিলো। এই জ্ঞান বিতরনের উদ্দেশ্য আমাদের দুজনার মূল্যবোধকে আরো শনিত করে তোলা। আমার ছিদ্রান্বেসী স্বভাব এই মহান বাক্য খানির ছিদ্র বের করতে তৎপর হয়ে উঠলো। আমি বললাম স্যার, সত্য কথা, সদা- কি বলা যায় ? ধরুন একজন আসহায় বিপন্ন লোক একদল সন্ত্রাসীর তাড়া খেয়ে আমার ঘরে আশ্রয় নিলো। সন্ত্রাসীরা যদি আমার কাছে লোকটির ব্যাপারে জানতে চায়, আমর কি তখন সত্যি কথা বলা উচিৎ হবে?
বলে রাখি , প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমার স্যারের দক্ষতা সীমাহীন পর্যায়ের। তিনি বললেন, তা হলে সোন- একবার একদল বাংলাদেশী গিয়েছিলো নরওয়েতে। তাদেরকে প্রশ্নকরা হয়েছিলো, মানুষের কোন কোন বৈশিষ্ট অর্যন করা উচিৎ ? তারা অনেক কিছুই লিখেছিলো। তবে Commonly যেটা সবাই লিখেছিলো, তা হলো ‘ সততা’। এতে করে নরোয়েজিয়ান পন্ডিতরা যারপর নাই বিরক্ত হয়েছিলো। কারন, তাদের মতে, সততা- প্রকৃ্তিগত ব্যাপার। একে অর্যন করতে হবে কেন ? It is by Born. এই পর্যায়ে এসে, আমার স্যারের মুখের জ্যোতি প্রায় পূর্ন চন্দ্রের কাছাকাছি এসে গেল। এবং একটি সন্ত সূলভ হাসি ঠোটের কোনায় ঝুলিয়ে রেখে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন যে, এ বিষয়ে আর কোন কথা থাকতে পারে না।
বেরসিক আমি তারপরও প্রশ্নকরে বসলাম, স্যার নরোয়ের লোকেরা পরকিয়া করলে কি বউদেরকে সব বলে দেয় ? আমারতো মনে হয়না।
এর পরবর্তি বাক্যটি ছিলো, তুমি আসলে কি চাও? ক্রোধ চাপা দেয়ার কোন চেষ্টা ছাড়াই প্রশ্নটা আমকে করা হলো।
বলেছিলাম- শুধু বলতে চাই-কোন মূল্যবোধই চিরন্তন না।
– যেমন- স্যারের সমস্ত ব্যাক্তিত্ত্বের সমানুপাতিক হয়ে বেজে উঠলো অক্ষর তিনটা।
আমার পাশে বসা কলিগ ঘন ঘন ইসারা করছিলো – চেপে যাবার জন্য।
কিন্তু তখন আমার পক্ষে ফিরে আসার আর কোন সুযোগ ছিলোনা। চাকুরিটা বাজিরেখেই সিদ্ধান্ত নিলাম চালিয়ে যাবার।
বললাম, যেমন স্যার, আপন ভাই-বোনের মধ্যে বিয়েটাকে এখন আমরা আমাদের মূল্যবোধের বিপরীত মনেকরি।
– তাতে তোমার কি সমস্যা ?
সমস্যা হলো স্যার, আদমের ছেলে-মেয়েতে তো বিয়ে হতো।
– তখন ঐটাই ঠিক ছিলো।
– তারমানে স্যার আপনি বলতে চাচ্ছেন এখন ঠিক নাই। আমিও স্যার এই কথাটাই বলতে চাচ্ছি। তখন ঠিক ছিলো, এখন ঠিক নাই, মানে চিরন্তন না।
স্যার বললেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্যই তো কোরান নাজিল করা হয়েছে। কোরানেই বলেদেয়া হয়েছে চিরন্তন মূল্যবোধ কি হওয়া উচিত।
বললাম, কিন্তু স্যারঃ আপনার কি মনে হয় না, যুদ্ধবন্ধী প্রশ্নে কোরানের নির্দেশনার চাইতে এবিষয়ে জেনেভা কনভেনশন অনেক বেশী মানবিক ?
– কিভাবে ?
এই যেমন, কোরানে যুদ্ধবন্ধীদেরকে গনিমতের মালের সাথে একাকার করে ফেলা হয়েছে। তাদের জীবন, মৃত্যু, দাসত্ব বা স্বাধীনতা সবই বিজয়ী পক্ষের ইচ্ছাধীন করে দেয়া হয়েছে। যেখানে আমরা জেনেভা কনভেনশনে বলছি, নিরস্ত্র যুদ্ধবন্ধীদের উপর কোন প্রকার খারাপ আচরন করা যাবেনা এবং তাদেরকে রেডক্রসের কাছে সমর্পন করতে হবে।
উত্তর সেই চীরচেনা – তখন ঐটাই ঠিক ছিলো।
বললাম স্যার, তার মানে আপনি বলতে চাইছেন, এখন ঠিক নাই।
তার মানে স্যার, আপনি বলছেন- কোরানের উল্ল্যেখিত মূল্যবোধ গুলোও চিরন্তন না। সেগুলোও তখন ও এখনে বিভক্ত। তাহলে যা দাড়ালো, তা হলো- কোরান ও চিরন্তন না।
তারপরে যা ঘটেছিলো তা নাহয় নাই বা শুনলেন।
আল্লাহ আমাকে মার্জনা করুন।
আমিন।
দারুন লেখেন তো আপনি!! একটি জটিল সমস্যাকে এত সহজে সমাধান কে করতে পারে?
@সৈকত চৌধুরী,
ধন্যবাদ আপনাকে । আপনার মন্তব্য ও অনুপ্রেরনার জন্য।
লেখাটা যখন শুরুকরি তখন নীজেই ভাবতে পারিনি কিভাবে এটা শেষ করব।
কিন্তু প্রতিটা বাক্য লেখার সাথে সাথে পরের বাক্যটা আপনা আপনি চলে এসেছিল। খুব কম সময়ের মধ্যে লেখাটা শেষ হয়ে গিয়েছিল। পড়তে গিয়ে দেখি নীজেরই মজা লাগছে। এই আরকি…………… 🙂
@আতিক রাঢ়ী,
একটু বানান দেখি-(পণ্ডিতগীরি ফলালাম)
অনুপ্রেরনা> – অনুপ্রেরণা
শুরুকরি> – শুরু করি
নীজেই> – নিজেই
নীজেরই> – নিজেরই
@মাহফুজ,
মন্তব্যের বেলায় আইন শিথীল করা হোক।।
অন-লাইন বাংলা অভিধানের সাহায্য পেতে নেটের যে গতি দরকার তা কজনার আছে ? অভিধান বাসা থেকে প্রতিদিন অফিসে বয়ে আনা সম্ভব না।
আপনার মাধ্যমে মাননীয় মডুদের বরাবরে আবারো বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে অন্তত মন্তব্যের বেলায় বানান ভুলের জন্য ঝাড়ি ও লজ্জা না দেওয়া হয়।
বিশেষত ঃ শ, ষ, স /// ন, ণ /// ি, ী, ু,ূ /// ভুল ধরলে, এই ভয়ে মন্তব্য করা ৭৫% হ্রাস পাবার আশংকা করছি। সেই সাথে আরো আশংকা করছি বিশুদ্ধতা যেন বাতিকগ্রস্থতায় পরিনত না হয়, তবে সাবলীলতে হারিয়ে যেতে পারে।
@আতিক রাঢ়ী,
দেখছেন না, ‘বানান নিয়ে আরো কিছু বকরবকর’ চলছে।
এইবার দেখে যান– ধতুরার চয়ন খায়রুলের সাথে ফরিদ ভাইয়ের ক্যামন ডিবেট চলে! ঝড়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
@মাহফুজ,
আমি একজন ভুক্তভোগী। শৈশব থেকে এত বেতের আঘাত এই বানানের জন্য খেয়েছি যা আমার কাছে এখনও অনর্থক মনে হয়।
ইংরেজি লিখতে গেলে স্পেল চেকারের সাহায্য পাই। বাংলায় এটা হচ্ছে না কেন ? আমাদের প্রগ্রামাররা এই কাজটা করে দিলে যন্ত্রনার একটা অধ্যায়ের শেষ হয়।
আগেই বলে রাখি, এই ডিবেটে আমার পক্ষ চয়ন খায়রুল। আপনিতো মনে হয় ফরিদ ভাইয়ের পক্ষের লোক, পুলিস বাহিনির সদস্য হবার সকল গুন আপনার মধ্যে দেখা যাচ্ছে। অন্তত আমি দেখছি আরকি…… 😀
@আতিক রাঢ়ী,
আপনিও আমাকে পরিত্যাগ করলেন শেষমেষ? আমার ধারণা ছিল যে আর কেউ থাকুক বা না থাকুক আপনি আছেন আমার পাশে। এখন দেখছি সেই ধারণাটাও ভুল। হায়!! এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা আছে তার সবই কি ভুল? 🙁
@ফরিদ আহমেদ,
কই, আমিতো দেখছি আপনার দলই ভারি। নিশ্চিৎ পরাজয় জেনেও চয়ন খায়রুলের পক্ষ নিলাম, এই আশায় যে যা ২০০ বছরে হয়নি তা বিশ বছরে হওয়া এখন খুবই সম্ভব। হেরে গিয়েও দাবিটা জানিয়ে যাবার সুযোগ কাজে লাগাতে চাই।
“বানান নিয়ে কষ্টে আছি” -আতিক রাঢ়ী 🙁
@আতিক রাঢ়ী,
বড়ই দুর্ভাগ্য আমার বিষয়টা সরকার বুঝলো না। আজ যদি আপনি রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে থাকতেন তাহলে নিশ্চিত পুলিশ হতাম, কারণ একমাত্র আপনিই আমাকে চিনতে পারলেন।
আমি ভাই কারো পক্ষেও নাই বিপক্ষেও নাই। একেবারে নিউট্র্যাল। তারপরও কানে কানে বলি, চয়নের পক্ষে। কথাটা কিন্তু ফরিদ ভাইকে জানায়েন না।
@মাহফুজ,
একমাত্র পাগল আর শিশু ছাড়া কারো পক্ষে নিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব না।
চয়ন খায়রুলের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য কানে কানে নয় আমাদের উচিৎ
প্রকাশ্যভাবে পক্ষাবলম্বন। :guli:
@আতিক রাঢ়ী,
তাতেও কোন ফায়দা হবে বলে মনে হয় না। প্রকাশ্য পক্ষাবলম্বনে শেষ পর্যন্ত হাসির খোরাক হতে হবে? প্রকাশ্যে ধতুরার বিষে আক্রান্ত হতে চাই না।
Rony’r kotha ta valo laglo,kichu bepar ache ja chirontan.prottek kaje shomoyer chap thake,shomoyer poribartaner shate shate chirontan abong apekkik bishoy gulur poribartan gote..
@Md Naser,& Rony
aj ja chironton(surjo otha) 500 koti bochor por ta to ar chironton thakbe na.. karon… toto dine surjer jalani sesh hoye jabe..ar tokhon surjo ar uthbei na..tai dik nirdharoner o dorkar hobe na….eta promanito totto. tai bolbo kono kichui chironton na…… soboi apekkhik… karon, somoyer sathe soboi poribortito hocche…
khudro somoy chinta na kore brihot somoy o jogot nie chinta korun ….. tokhon ar kichui chironton mone hobe na….
@tanvy, Md Naser,& Rony,
রোমান হরফে বাংলায় লেখার ব্যাপারে আপনাদের সতর্ক করা হচ্ছে। মুক্তমনা নীতিমালা দ্রষ্টব্য-
২.৪। পোস্ট এবং মন্তব্যের ভাষা হওয়া উচিত (মূলত) বাংলা — অবশ্যই বাংলা হরফে; আর ভাষারীতি লেখ্যভাষা হিসেবে প্রচলিত প্রমিত বাংলা হওয়াই শ্রেয়। মডারেটরের কাছে লেখা পাঠাতে হলে, বাংলা ইউনিকোডে লেখা জমা দিতে হবে। যে কোন সময় বাংলায় লেখার জন্য অভ্র বাংলা কিবোর্ড টুল ব্যবহার করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। অভ্র বাংলা কিবোর্ড টুল ডাউনলোড করুন এখান থেকে। এছাড়া বিজয়, বর্ণসফট কিংবা অন্য পুরোনো বাংলা থেকে আপনার লেখা ইউনিকোডে কনভার্টের জন্য অনলাইন লেখনী ও কনভার্টার পাবেন এখান থেকে।
২.৫। বাংলা ব্লগে ইংরেজীতে লেখা মন্তব্য কিংবা রোমান হরফে বাংলায় লেখা মন্তব্য কর্তৃপক্ষ প্রকাশ নাও করতে পারে। এমনকি এ ধরণের মন্তব্য মুছে দেওয়ার অধিকারও মুক্তমনা সংরক্ষণ করে।
@আতিক রাঢ়ী,
‘সদা সত্য কথা বলিবে’ আপনার এই লেখাটি আমার প্রিয়। এই লেখার শেষে আপনি লিখেছিলেন- আল্লাহ আমাকে মার্জনা করুন। আমিন।
আবার অন্য একটি লেখায় (ফানুস- আফরোজ আলম) মন্তব্য করতে গিয়ে আলসেমীর কারণে বানান ভুল হওয়াতে আপনি ক্ষমাপ্রার্থী।
ক্ষমা চাওয়ার গুণটি আপনার মধ্যে ভালোই রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে – ক্ষমা চাওয়া বা ক্ষমা করাটা কি চিরন্তন নাকি পরিস্থিতি নির্ভর?
@মাহফুজ,
পরিস্থিতি নির্ভর।। ধরুন আমার এই লেখায় আমি আবার একটা বাবান ভুল করব, নিশ্চিৎ ভাবেই করব, কারন এখন আমি অফিসে, এখানে অভিধান নেই। আমি আবার ক্ষমা চাইব, এভাবে আমি যদি ক্ষমা চাইতেই থাকি, তাহলে অচিরেই দেখা যাবে, আমি ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছি। আর পঠকরা ক্ষমা করার যোগ্যতা হারিয়েছেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এটা পরিস্থিতি নির্ভর।
সবকিছুই যেহেতু অপেক্ষিক, তাহলে একমাত্র অনাপেক্ষিক বা ধ্রুব হচ্ছে শুধু আপেক্ষিকতার নিয়মটি সয়ং।
@আতিক রাঢ়ী,
নিশ্চিতভাবেই আরেকটি ভুল করেছেন, ‘পাঠকরা’ লিখতে গিয়ে ‘পঠকরা’ লিখেছেন।
এই আকার না দেয়াটা ইচ্ছাকৃত নাকি অনিচ্ছাকৃত সেটা আপনিই জানেন। হতে পারে টাইপো। এক্ষেত্রে- এখন আমি অফিসে, ডিকশনারী নাই কাছে এসব অজুহাত খাটবে না। তারপরও মেনে নিলাম। বার বার ভুল করলে বার বার ক্ষমা করা যেতে পারে। যিনি ক্ষমা করবেন তার মহত্ব বাড়বে। খ্রিস্ট ধর্মের যিশু বলেন- কেউ যদি ক্ষমা চায়, তাহলে তাকে সাত গুণ সত্তর বার ক্ষমা করো।
খ্রিস্ট ধর্মের কাছে বিষয়টি মনে হচ্ছে চিরন্তন।
@মাহফুজ,
শর্ত দিলে সেটা আর চিরন্তন থাকেনা। যা কেবল খ্রিস্ট ধর্মের ব্যাপার সেটা আর চিরন্তন হয় কি করে ?
তাছাড়া শেষ বিচারের দিনের কথা থাকলে আর ক্ষমা হয় না। হেল/নরক -যদি কেবল ভয় দেখানোর জন্যও হয়ে থাকে তবু তা একধরনের মানসিক চাপ।
ইচ্ছাকৃত ছিল না। 🙁
kono kiso jodi chironton na hoy tahole to shorjo uttor dika uthar o shomvhobona acha. kiso kiso baper kinto chironton hote pare.
@rony,
kono kiso jodi chironton na hoy tahole to shorjo uttor dika uthar o shomvhobona acha. kiso kiso baper kinto chironton hote pare.
সূর্য যে পূর্ব দিকে উঠে না বরং পৃথিবীই যে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে তা তো আপনার জানার কথা। আর মহাশূন্যে দিক বলতে কিছু নেই। তবে সবকিছুই আপেক্ষিক, কোনো কিছুই চিরন্তন না- কথাটা আমি নিজেও পু্রো বুঝতে পারি নি। কিছু কিছু বিষয় কি এমন থাকতে পারে না যা মহাবিশ্বের উদ্ভবের পর থেকে মহাবিশ্বের ধ্বংশ পর্যন্ত একই থাকবে?(যদিও হয়ত তাকে চিরন্তন বলা যায় না)।
অবশ্য নৈতিকতার বিষয়টি ভিন্ন জিনিস।
আপনার লেখাটি ভাল লাগলো
দারুণ!! এক কথায় দারুণ।যুদ্ধবন্দীদের অধিকার নিয়ে কুরআনে যা আছে তা আসলে মোটেও মানবিক নয়। এবং আমার মতে উক্ত বিচার ব্যবস্থা একটি ভ্রান্ত ব্যবস্থা , যা যেকোন স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে। যার প্রধানতম নিদর্শন আমাদের মুক্তিযুদ্ধে রাজাকারদের দেয়া ফতোয়া। তারা আমাদের মা বোনদের গনিমতের মাল রূপে ফতোয়া দেয়ার সাহস তো পায় ঐ কোরআনের ভ্রান্ত বাণী থেকেই, যা তাদের অসীম ভন্ডামীর প্রধানতম শক্তি।
তাই এমন একটি প্রবন্ধ লেখার জন্য আতীক রাঢ়ীকে অভিনন্দন।
খুব ভালো লাগ লো লেখাটি প ড়ে । প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আজাদের একটা ক মেন্ট ম নে পড় ছে। ” আজ যা বিশ্বাস কাল তা অ-বিশ্বাস। , তাই বিশ্বাস বল তে কিচ্ছু নেই । ” তাই চিরন্তন বিষয় ট্ িআমার কাছে ওই রকম ই ম নে হয়।
ভালই লিখেছেন
আসলে চিরন্তন বলে কোন কিছু নেই সব কিছুই আপেক্ষিক। কিন্তু অনেকেই তা মানতে নারাজ। এট যে শুধু মাত্র ধর্ম বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেই নয় যারা মোটামুটি বিজ্ঞান বিশ্বাস করেন তাদের মধ্যেও চিরন্তনতার এধারণা ক্রিয়াশীল। যেমন এ বিশয়ে একদিন একজনের সঙ্গে কথা উঠেতই সে বলে বসল, ’এক আর একে দুই হয় এটা কি চিরন্তন নয়?’ আমি তাকে সোজা বলে দিলাম যে এটাও চিরন্তন নয়। কারণ এক ফোটা পানি আর এক ফোটা পানির সঙ্গে যোগ করলে বড় এক ফোটা পানিই হয়। তাই সত্য স্থান, কাল ,পাত্র ভেদে পরিবর্তনশীল। তবে একটি নিদিষ্ট সময়ে সত্র একটাই থাকে। Plurality of truth-এর ধারণা বিজ্ঞান বিরোধী। সততা বা নৈতিকতার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এসব ধারনাও পরিবর্তন হয়। কিনতু তার মানে এই নয় যে, যে যেমন ভাবে সত্য তার কাছে তেমন। এর একটা মাপকাঠি আছে, তা হল সমাজ বিকাশের ধারা।সমাজ বিকাশের সাথে সাথে মানুষের রুচি সংস্কৃতি আচরনের পরিবর্তন ঘটে তা অবশ্যই ঊর্ধ্বমূখী। তাই সমাজ বিকাশের ধারার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরন বা চিন্তা প্রিক্রয়াই প্রতিক্রিয়াশীলতা বা অন্যায়।
বেশ চমকপ্রদ এবং উপভোগ্য একটি লেখা। আসলে যুক্তি দিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে কোরানের বহু অসংগতি এবং অসারতা প্রমান করা যায়। কিন্তু কোরানের অনুসারীরা তখন তাদের পরাজয় আসন্ন উপলব্ধি করে হয় প্রসংগ পাল্টানোর চেষ্টা করবে, নতুবা গলা চেপে ধরবে, অথবা বলবে ” কোরান সম্পর্কে ভালভাবে study না করে মন্তব্য করা উচিৎ নয়। আমরা সাধারণ মানুষ, অনেক বড় আলেম ওলামা, হুজুর রয়েছেন । উনাদের মতামত নেয়া উচিত।” অথচ বাস্তব জীবনেই তারা বহু ক্ষেত্রে কোরান ও হাদিসের অজুহাত দিয়ে অনুশাসন চাপিয়ে দিতে চায়। যেমন, পর্দা প্রথা। তারা কোন কিছুর গভীরে প্রবেশ করতে চায় না। উপর থেকে ভাষা ভাষা জ্ঞান নিয়ে একটা জিনিষ চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু যুক্তি দিয়ে ব্যাপারটির গভীরে প্রবেশ করলে তখন বলা হ্য় যে কোরান সম্পর্কে স্টাডি না করে মন্তব্য করা উচিত নয়। তারা এক প্রকারে এড়িয়ে যেতে চায়। কোরানের অসংগতি গুলো তারা দেখেও না দেখার ভান করে। কোরানকে তারা ডিপ ফ্রিজে রেখে দিতে চায়।
খুব চমতকার গল্প। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে আমাদের মুল্যবোধের ও পরিবর্তন হয়। এটাই চিরন্তন।
‘সদা সত্য কথা বলিবে’ শুধু নৈতিকতাই না, এমনকি যুক্তির বিচারেও সবসময় খাটে না। নাসিরুদ্দিন হোজ্জার এ সম্পর্কে সুন্দর একটি গ্ল্প আছে, অনেকেই হয়ত পড়েছেন। যারা পড়েননি তাদের জন্য ছোট করে বলছি।
একবার বাদশাহ রাজধানীতে ঢোকার মুখে একটা পুল বানলেন, আর ঘোষনা করে দিলেন যে সত্য কথা বলবে শুধু সেই পুল পার হতে পারবে, আর যে মিথ্যা বলবে সে ফাসীতে ঝুলবে। হোজ্জা এ নিয়ম শুনেই বলল যে এ নিয়মটি ঠিক হয়নি, সে প্রমান করে দিবে অনেক সময়ই সত্য মিথ্যা কে আলাদা করা যায় না।
পরদিন সকালে হোজ্জা পুল পার হতে উপস্থিত হল। পাহারারত রক্ষী তাকে জিজ্ঞাসা করল; সে কেন পুল পার হতে চাচ্ছে। হোজ্জার তড়িত জবাব, তোমাদের ওই ফাসী কাঠে ঝুলতে। রক্ষী বলল, আপনি মিথ্যা বলছেন। হোজ্জার জবাব তাহলে আমাকে ফাসীতেই ঝোলাও। রক্ষী এবার পড়ল বিপদে, তাহলে তো আপনার কথাই সত্য হয়। হোজ্জা বলল, এবার বুঝলে তো সত্য কথা সবময়ই খাটে না?
অভিজিৎ দা। ন্যায় এবং অন্যায় আছে, থাকবে। প্রশ্নটা চিরন্তনতা নিয়ে। বাল্য বিবাহতো আমাদের উপমহাদেশের খুব বেশীদিন আগের ঘটনা না। এখন আমরা সে গুলোকে লাগাতার শিশু নির্যাতনের ঘটনা বলতে পারি। কিন্তু তৎকালীন বিবেকবান মানূষদেরকেও এব্যাপারে খুববেশি সোচ্চার ভূমিকায় দেখা যায়নি। আমদের পাঠ্য পুস্তকে ছিলো – বনভূমী সাফ করে মানূষের জন্য বসতি স্থাপনের গল্প। এটিযে কতটা প্রয়োজনীয় এবং মহান একটা ব্যাপার সেটা বলাই ছিলো গল্পটার উদ্দেশ্য। আর এখন আমরা বনের একটা পাতা ছেড়াকেও আন্যায় মনে করি। আসলে সময়টাই ফ্যাক্টর। আজকের প্রগতিশীলতা আগামীকালের প্রতিক্রিয়াশীলতা।
স্থান, কাল, পাত্র ভেদে কোন ব্যাতিক্রম ছাড়াই অপরিবর্তনীয় যা তাই চিরন্তন।এটা প্রকৃ্তির নিয়মের বেলায় খাটে সত্য কিন্তু মূল্যবোধের বেলায় খাটেনা। কেবল মাত্র ধর্ষক নিজেও যদি মনে করে, যে পরিস্থিতীতে সে কাজটা করেছে তাতে সে কোন অন্যায় করেনি। তাহলেও মূল্যবোধের চিরন্তনতার দাবিটা টেকেনা। সুতরাং ওই ধর্ষকের বিচার আপেক্ষিক ভাবেই করতে হবে আর আমরা বাস্তবে সেটা করছিও।
লেখাটা পড়ে খুব মজা পেলাম। আপনার লেখা, আপনার লেখার ভঙ্গী আপনার মতামতকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে নিঃসন্দেহে।
আমাদের নৈতিকতা এবং মূল্যবোধের বিষয়গুলো চিরন্তন নাকি পরিস্থিতি নির্ভর (আপেক্ষিক) তা দর্শনের কেন্দ্রীয় আলোচনার বিষয় অনেকদিন ধরেই। নিঃসন্দেহে যারা ধার্মিক, তারা মনে করেন মূল্যবোধ গুলো চিরন্তন এবং ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে আগত কিংবা ঈশ্বর প্রেরিত। এখন এ বিষয়টি যে বহুক্ষেত্রেই ঠিক নয়, তা অনেকভাবেই দেখানো যায়। মুক্তমনা লেখকেরা এ নিয়ে বেশ কিছু লেখা অতীতে লিখেছেনও। কিছু লেখা সংকলিত হয়েছে আমাদের ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম : সঙ্ঘাত নাকি সমন্বয়’ গ্রন্থেও। এলেখাগুলো এ প্রসঙ্গে পড়া যেতে পারে –
নৈতিকতা কি শুধুই বেহেস্তে যাওয়ার পাসপোর্ট?
ধর্মই কি নৈতিকতার উৎস?
আমাদের মূল্যবোধ কি ঈশ্বর হতে আগত?
তবে, এর মধে পুরুজিত সাহা একটি ব্যতিক্রমধর্মী লেখা লিখেছিলেন, যেতা হয়ত আপনাকে ভাবাবে। লেখক বলেছেন, কিছু কিছু বক্তব্যের সরাসরি সত্য মিথ্যা সরাসরি নির্নয় করা যায় না। যেমন, ‘প্রোটন ইলেকট্রনের চেয়ে ভারি’। – এই বাক্যটি সত্য না মিথ্যা আমরা পরীক্ষা করে নির্ণয় করতে পারি। কিন্তু যদি বলি – ‘প্রতিশ্রুতি ভংগ করা অনৈতিক’ – ব্যাপারটিতে হয়ত সবাই একমত হবেন না। কেউ বলবেন, এটা ধ্রুবতারার মতোই সত্য, আবার কেউ বলে পরিস্থিতি নির্ভর।
যারা বলবেন ‘প্রতিশ্রুতি ভংগ করা অনৈতিক’ ব্যাপারটা চিরন্তন, তাদেরকে অনেক উদাহরণ হাজির করে দেখানো যাবে যে, পরিস্থিতিতে পড়ে মানুষ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারে। যুধিষ্ঠিরের রথের চাকাও মাটি ছূঁয়েছিলো – এ আমরা ধর্মগ্রন্থেই পাই।
এর বিপরীতে অনেকেই নৈতিকতা জিনিসটাকে পুরোপুরি পরিস্থিতি নির্ভর মনে করেন। যেমন, চুরি করা অন্যায়, কিন্তু রবিনহুডের মত চুরি করে সম্পদ দরিদ্রদের মাঝে বিলিয়ে দেয়াকে হয়ত অনেকেই অন্যায় ভাববেন না। ‘মানুষ মারা অন্যায়’ এ ব্যাপারটাও পরম কিছু নয়। যেমন, যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রু নিধন করা নৈতিকতার বরখেলাফ নয়। কিন্তু এদের নিয়ে সমস্যা হল, এই দলে থাকতে হলে ২টা অপশন –
১। সব নৈতিকতাকেই পরিস্থিতিনির্ভর বলতে হবে অথবা
২। খুব যত্ন করে নৈতিকতাকে ২ ভাগে ভাংতে হবে – একভাগ চিরন্তন আর আরেক ভাগ পরিস্থিতিনির্ভর।
প্রথম অপশনের দুর্বলতা হল, ধর্ষন বা শিশু নির্যাতনের মত অনৈতিক কাজগুলোকে পরিস্থিতিনির্ভর ভাবা কষ্টকর, অনেকের জন্যই (যদিও এ নিয়ে বিতর্ক করা যাবে নিঃসন্দেহে)। অতএব মেনে নিতেই হয় সবকিছু আমরা পরিস্থিতিনির্ভর মনে করি না। দ্বিতীয় অপশনটাও ঝামেলার – চুরি করা আর ধর্ষন ভিন্ন মাত্রার অপরাধ, কিন্তু কেন?
পুরুজিতের লেখাটা আছে এখানে –
প্রসংগ – নৈতিকতা : পুরুজিত সাহা