প্রসঙ্গঃ বাংলাদেশের শিক্ষা
১
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু শিক্ষা-ব্যবসায়ী ছাড়া আর কেউ সন্তুষ্ট আছেন বলে আমার মনে হয় না। স্বাধীনতার আগে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কেমন ছিল আমি জানি না। তবে মনে হয় গুণগত মান আজকের তুলনায় খুব একটা খারাপ ছিল না। কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁদের প্রায় সবাই তখনকার পূর্ব-পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফসল। অনেককেই বলতে শুনি – স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে জাতীয় পরীক্ষায় গণ-নকলের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষায় দুর্নীতির বীজ রোপিত হয়। তারপর আমরা পড়ছি তো পড়ছিই। এই ‘পড়া’ মানে পড়াশোনা নয়, এই ‘পড়া’ হলো পতন। আমি জানি এতটা জেনারালাইজড করে ফেলা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু শিক্ষার সামগ্রিক পতনের কাছে আমাদের অর্জন এতটাই সামান্য যে তাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানোর চেষ্টা করলে নিজেকেই ফাঁকি দেয়া হয়।
স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে নানারকম ব্যবস্থা-অব্যবস্থার কমিটি গঠিত হয়েছে। একটা গঠনমূলক পরিপূর্ণ শিক্ষানীতির লক্ষ্যে অনেকগুলো কমিশন গঠিত হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ এখনো কিছু হয়নি। শিক্ষায় আমাদের প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবকিছুরই সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু কমে গেছে গুণগত মান। একসময় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে পরিচিত ছিল – সে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান আজ বিশ্বের প্রথম পাঁচহাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একেবারে শেষের দিকে। আশ্চর্যের বিষয় হলো আমাদের বেশির ভাগেরই যেন তাতে কিছুই যায় আসে না।
সত্যি বলতে কী – বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ শুধুমাত্র সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সংগ্রামেই এত ব্যস্ত যে তাঁদের ওপর যখন যা চাপিয়ে দেয়া হয় তারা তা মেনে নিতে বাধ্য হন। যখন যাদের হাতে ক্ষমতা থাকে তখন তারা তাদের মত করে একটা কিছু পরিবর্তন করে – আর জনগণ তা বাধ্য হয়ে মেনে নেয়। ১৯৭৩ সাল থেকে ১৯৯৩ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১ম শ্রেণী থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। এই বিশ বছরের আমার বাংলাদেশী ছাত্রজীবনে নানারকম প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক আন্দোলন দেখেছি – কিন্তু একবারও অতি প্রয়োজনীয় শিক্ষা-আন্দোলন ঘটতে দেখিনি। ছাত্র-ইউনিয়ন সহ কয়েকটি বাম সংগঠন মাঝে মাঝে শিক্ষা-আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে – কিন্তু তাও সীমাবদ্ধ থেকেছে শিক্ষা-উপকরণের দাম কমানো, টিউশন ফি কমানোর স্লোগানে। শিক্ষকরাও নানারকম আন্দোলন করেছেন – তাদের বেশির ভাগই হলো রাজনৈতিক কারণে কিংবা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে। সুতরাং আমাদের সবার চোখের সামনে দিয়ে ধীরে ধীরে আমাদের শিক্ষাকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে।
তাই মুক্তমনায় কেশব অধিকারীর লেখা “এক চিলতে মেঘ” পড়তে পড়তে মনে হয়েছে মিঃ অধিকারী যেটাকে “এক চিলতে মেঘ” মনে করছেন সেটা আসলে ঝড়ের পূর্বাভাস। অন্যদের কথা জানি না, আমি নিজে কিন্তু দেশের বাইরে আসার আগে এরকম মেঘের ঘনঘটা অনুভব করিনি। তার প্রধান কারণ হলো – যে সিস্টেমের ভেতর দিয়ে লেখাপড়া করে এসেছি তার বাইরেও কোন সিস্টেম – বা অন্যরকম ভালো কোন সিস্টেম থাকতে পারে তা আমি জানতামই না।
২
মিঃ অধিকারীর লেখায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচিত হয়েছেঃ
* বিজ্ঞান শিক্ষায় আমাদের পশ্চাৎপদতা
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার অবস্থা খুব খারাপ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন কার্যকরী ব্যবস্থা এখনো নেয়া হচ্ছে না। শহর পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখনো হতাশাজনক না হলেও গ্রাম-পর্যায়ের স্কুল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশংকাজনক হারে কমে যাচ্ছে। তার মানে আগামী দশ বছর পরে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকেরও অভাব দেখা দেবে। ইউনিভার্সিটি পর্যায়েও এখন মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ের কোন কদর নেই।
* নামী-দামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য অভিভাবকদের প্রাণান্তকর চেষ্টা
শহরের নামী স্কুলে ভর্তি করানোর জন্য কত হাজার টাকার ব্যবসা চলছে তার যদি সঠিক পরিসংখ্যান থাকতো – আমরা দেখতে পেতাম – ভর্তি বাণিজ্যে এখন কত লাভ! অভিভাবকরা ভর্তি-বণিকদের হাতে জিম্মি। ভালো স্কুলে ভর্তি করাতে পারলে ছেলে-মেয়ে ভাল পড়াশোনা শিখবে – এটাই যে প্রধান লক্ষ্য তা বলা যাবে না। তথাকথিত ভালো স্কুলগুলো ঠিক কোন মাপকাঠিতে ভাল তার কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম আমাদের জানা নেই। হয়তো বিশাল বিশাল বিজ্ঞাপন আর প্রচারের কল্যাণে।
* বিভিন্ন ধরণের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শহর ও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য
বছর দশেক আগেও দেখা যেতো একদম প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুল কলেজ থেকেও কোন না কোন শিক্ষার্থী জাতীয় পর্যায়ের মেধাতালিকায় স্থান পাচ্ছে। এখন সে সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে শূন্যের কোঠায় এসে পৌছেছে। এখন গ্রামের স্কুল-কলেজগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। গ্রামেও যাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সামান্য ভালো – তারা তাদের ছেলেমেয়েদের শহরের স্কুলে লেখাপড়া করানোর চেষ্টা করেন। আর শহরের অলিতে গলিতে এখন ইংরেজি বাংলা মেশানো নানারকম নামের নানারকম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একই বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়, কমিউনিটি সেন্টার, সেলুন, সুপারমার্কেট সব একসাথে দেখা যায়। প্রচুর উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়ে এখন সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হচ্ছেন – কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষার মান একটুও বাড়ছে না।
* গ্রেডিং পদ্ধতি
গ্রেডিং পদ্ধতিকে আমি ভালো পদ্ধতি বলে মনে করি। আগের মেধাতালিকার যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ছিল তার চেয়ে গ্রেডিং পদ্ধতি অনেক ভালো। এ পদ্ধতির ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো আস্তে আস্তে কমে আসছে। কিন্তু রেজাল্টের পদ্ধতির চেয়েও বেশি জরুরি হলো আমাদের পরীক্ষা পদ্ধতির উন্নয়ন করা। সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু হলে একটা বিরাট গুণগত উত্তরণ ঘটবে বলে আমি মনে করি।
* এক্সট্রা-কারিকুলার এক্টিভিটিজের অভাব
বাংলাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের – বিশেষ করে শহর অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার পেছনে যত সময় ব্যয় করে তা উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের শিক্ষার্থীর চেয়ে অনেক বেশি। একবার স্কুল-কলেজের ক্লাস করে প্রায় প্রত্যেকেই আবার কোচিং সেন্টারে যায়। সেখানে এক্সট্রা -কারিকুলার কিছু করার সময় কোথায়? তারপরও যে শিক্ষার্থীরা যে সাংস্কৃতিক চর্চা করে, ছবি আঁকে তাতেই তো অবাক হতে হয়।
* শিক্ষক সমাজের মধ্যে পেশার প্রতি অনীহা
বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন খুব কম। গ্রামের শিক্ষকদের অবস্থা আসলেই খুব খারাপ। কিন্তু শহরের নামী কোন স্কুল-কলেজের শিক্ষক হতে পারলে – এবং নীতি বিসর্জন দিয়ে সুযোগের সদ্ব্যাবহার করতে জানলে শিক্ষকদের পক্ষে মাসে লাখ টাকা উপার্জন করা এখন কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু তারপরও শিক্ষকতা পেশায় কেউ আসতে চান না। সে কারণেই দেখা যায় – বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষকতার অপশানের চেয়ে পুলিশের বা কাস্টমসের চাহিদা কয়েকশ গুণ বেশি। এর কারণ বাংলাদেশের নিরিখে আমরা সবাই জানি।
* শিক্ষায় ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার
[মিঃ অধিকারী তাঁর ছোটবেলার প্রধান শিক্ষক জনাব রুস্তম আলী খানের অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের আশ্চর্য উদাহরণ দিয়েছেন। সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেয়া কোন ধার্মিকের পক্ষেই সম্ভব নয়। উপাসনা ধর্মে বিশ্বাসী যে কোন মানুষের কাছেই নিজের ধর্ম অন্যের ধর্মের চেয়ে বড়। সে হিসেবে জনাব রুস্তম আলী খান ব্যতিক্রম। অসাবধানতা বশতঃ এখানে একটা তথ্যগত ভুল আছে। গীতার প্রথম শ্লোক কিন্তু ‘ওম্ ভূবুর্বষ— নয়। গীতার প্রথম শ্লোক হলো “ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুৎসব—“]
স্কুলে এখন ধরতে গেলে ক্লাস ওয়ান থেকেই ধর্ম পড়ানো হয়। আর ধর্ম মানেই বিভাজনের শিক্ষা দেয়া। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রিস্টান এই আলাদা পরিচয় ঢুকিয়ে দেয়া হয় শিশুদের মনে। যে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় স্কুল পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক সেদেশে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হবে এটাই স্বাভাবিক।
* বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি
ব্যবসায়ীরা যখন স্কুল-কলেজ খোলেন তখন তা তাদের অন্য ব্যবসার মত হবে এটাই তো স্বাভাবিক। তবে আমরা তাদের গালাগালি করি ঠিকই- আবার আমরাই টাকার লোভে ছুটে যাই সেসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিছু দাক্ষিণ্য পেতে। বাংলাদেশে এখন অনেক বেসরকারী মেডিকেল কলেজ। সেখানে সরকারী মেডিকেল কলেজের অধ্যাপকরা ঘন্টায় দশহাজার টাকা সম্মানী (আসলে পারিশ্রমিক) নিয়ে ক্লাস নিতে যান। তো এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতি এক ধরণের মমত্ববোধ তো তৈরি হয়েই যায়। এখন বেসরকারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে শুরু করে কী নেই! কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই তো টাকার বিনিময়ে ডিগ্রি বেচে।
* বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম আর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য
তিন মিডিয়ার বৈষম্য আছে এটা সবাই জানেন। ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসাও আছে এখন। মিঃ অধিকারী ‘ও লেভেল’ ‘এ লেভেল’ বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে, আবার দেশীয় সিলেবাসের ইংরেজি মিডিয়াম রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। এ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না আমি। আরো একটি পদ্ধতি আমাদের দেশে চালু আছে – ক্যাডেট কলেজ পদ্ধতি। কয়েক বছর আগেও সেখানে বাংলা মিডিয়াম চলতো। এখন ক্যাডেট কলেজগুলোতে নাকি বাংলায় কথা বলতেও নিরুৎসাহিত করা হয়। আমি ঠিক জানি না এভাবে ইংরেজি শেখা যায় কিনা, বা গেলেও সেটা কী কাজে লাগে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা আমাদের মত দেশের কোন উৎপাদনশীল খাতকে উন্নত করছে কি না। আমাদের দরকার প্রচুর কারিগরী শিক্ষা, দক্ষ প্রযুক্তির শ্রমিক তৈরির প্রতিষ্ঠান।
* শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতি
আমাদের দেশের কোন নিয়োগ পদ্ধতিই প্রশ্নাতীত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের যে পদ্ধতি প্রচলিত আছে তা লজ্জাজনক। এই সিস্টেমের যারা শিকার হয়েছেন তারা জানেন কতটা অপমানজনক অসমপ্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয় অনেক যোগ্য ও মেধাবী মানুষকে যাদের মেধা ছাড়া আর কোন সম্বল নেই। বিসিএস পরীক্ষায় দুর্নীতি তো ওপেন সিক্রেট। দেখা যায় দুর্নীতি যারা করেন তাদের কিছুই হয় না – অথচ দুর্নীতির যারা শিকার তাদেরই কষ্ট পেতে হয় পদে পদে। ২৭ তম বিসিএস এর দুর্নীতির রেশ এখনো পুরোপুরি কাটেনি।
উল্লেখিত সবগুলো বিষয়ই আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনার দাবী রাখে। কখনো সুযোগ পেলে আলোচনা করা যাবে। তার আগে অন্য একটা বিষয় এখানে আলোচনা করছি। মিঃ অধিকারীর কাছে প্রশ্ন করে জেনেছি যে তিনি ১৯৯১ সালে মাস্টার্স পাস করে বেরিয়েছেন – যা কিনা ১৯৮৭ সালে শেষ হবার কথা। তার মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর চারটি শিক্ষাবর্ষের কোন হিসেব নেই। আমার নিজেরও একই অবস্থা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি মাস্টার্স পাস করে বেরিয়েছি ১৯৯৩ সালে। যা শেষ হবার কথা ছিল ১৯৮৯ সালে। ইউনিভার্সিটি যে সার্টিফিকেট দিয়েছে তাতে লেখা আছে ১৯৮৯ সালের এম-এস-সি পাস। চারটি বছরের হিসেব কোনভাবেই মেলেনা। দেশের বাইরে পড়তে এসে কাউকে বোঝাতে পারিনি সেশান জট জিনিসটা কী। মিঃ অধিকারীর সহ বাংলাদেশ থেকে পাস করা অনেকেরই নিশ্চয় এ অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আমাদের দেশে স্কুল কলেজ পর্যায়ে কোন সেশান জট নেই। সেশান জটের শুরু হয় ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির শুরু থেকেই। সেশান জট কমানোর কোন চেষ্টা যে করা হয়নি তা নয় – কোন চেষ্টাই কাজ করেনি। ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তির একটা সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে এটা কিছুটা দূর করা যায় – তবে প্রধান যে উপসর্গ – শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ – তা বন্ধ না হলে কোন উদ্যোগই সফল হবে না।
৩
আমার মনে হয় – দেশের বাইরে এসে আমরা যারা অন্যদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে কিছুটা পরিচিত হই – তখন মনে হয় – আহা যদি আমাদের দেশেও এরকম হতো! সে তাড়না থেকেই আমরা আমাদের মনের কথা লিখে জানাই। জানি আমাদের কথায় কেউ কান দেবে না। দেশের কোন পরিবর্তন আমরা করতে পারবো না। তবুও নিজের কাছে একটা সান্ত্বনা থাকবে – আমরা যেটুকু জানি বা জেনেছি তা জানাতে চেয়েছিলাম। ডঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন – দেশের বাইরে থাকতে তিনি একবারও দেশের কোন ব্যবস্থার সমালোচনা করে কিছু লেখেন নি। তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়েছে দেশে ফিরে গিয়ে একটা শক্তিশালী অবস্থানে আসা। যেটা আমাদের অনেকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দেশের প্রতি আমাদের ভালবাসার প্রকাশ হলো দেশের জন্য উদ্বেগ। তাই আমাদের লেখায় দেশের অনেক ব্যবস্থার সমালোচনা থাকে। সেটা দেশকে ছোট করার জন্য নয় – বরং দেশের উন্নতিতে যদি সামান্যও কোন কাজে আসি সে আশায়।
৪
আমরা যারা বিভিন্ন দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে কিছুনা কিছু জানি – তারা যদি শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করি – আমার মনে হয় কারো না কারো কাজে লাগবে সে অভিজ্ঞতা। মুক্তমনার পাতাতেই শুরু হতে পারে তা। আমার একটা সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতার কথা বলি।
রয়েল মেলবোর্ন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আর-এম-আই-টি) ইউনিভার্সিটিতে অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার জুলিয়া গিলার্ড এসেছিলেন কয়েকদিন আগে। আমরা ইউনিভার্সিটির টিচাররাও জানতে পারিনি তাঁর এ সফরের কথা। তিনি ভিসির অফিসে এসেছেন। ভিসি তাঁকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরেছেন। বিচ্ছিন্নভাবে ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলেছেন। একটা ডিপার্টমেন্টের একটা প্রজেক্ট ঘুরে দেখেছেন। অর্থাৎ তাঁর যা যা করার কথা ছিল – সব করেছেন। কিন্তু ইউনিভার্সিটির কোন কাজেরই কোন হেরফের হয়নি। আমরা এটা জানতে পেরেছি পরে ভিসির ইমেইল থেকে। এটা অস্ট্রেলিয়ার প্রেক্ষিতে খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। কিন্তু এ ঘটনা এখানে উল্লেখ করার কারণ হলো বাংলাদেশের একটি ঘটনা।
২৭ এপ্রিল সাভারের অধর চন্দ্র মডেল হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের প্রচন্ড রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কয়েকঘন্টা এলাকার সাংসদ তৌহিদ জং মুরাদকে সম্বর্ধনা দেয়ার জন্য। এজন্য স্কুলের পূর্ব নির্ধারিত পরীক্ষাও বাতিল করা হয়। এই সাংসদদের হাতেই আইন তৈরি হয়, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করার আইনগত অধিকার আমরা এদের হাতেই দিয়েছি।
পুরো খবরটা প্রথম আলোর পাতা থেকেই পড়ে নিন।
__________________
০১ মে ২০০৯
মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া
বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে সাম্প্রতিক ওয়েব আলোচনা খুঁজতে গিয়ে আপনার লেখাটি চোখে পড়লো। আমি শিক্ষা নিয়ে পড়ছি NSW এর নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটি-তে।
শুভকামনা।
ধন্যবাদ ডঃ প্রদীপ দেব আপনার স্বচ্ছ প্রবন্ধটির জন্য। যথার্থই বলেছেন এই ‘পড়া’ আসলে ‘পতন’। আসলেই আমরা ক্রমাগত পতিত হচ্ছি! প্রায় সব ক্ষেত্রেই এই পতন এক অবশ্যম্ভাবী এবং অবধারিত নিয়তি হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে, দুটি ঐতিহাসিক অসভ্য ও পাশবিক গুন ছাড়া। একটি হলো গোষ্ঠীগত রাজনৈতিক বা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের প্রবনতা আর অপরটি হলো, দূর্নীতি। আর এই দুটি প্রবনতাই একটি অপরটির পরিপুরক। যথাযথ শিক্ষাহীনতাই এর অন্তর্নিহীত কারণ। ঐতিহাসিক ভাবে কখনো কখনো দেশ, জাতি বা সভ্যতার পতনের নিয়ামক। একটি জাতির ধ্বংসকে কিভাবে অনিবার্য করে তুলে, তার ভূঁড়ি ভূঁড়ি উদাহরণ আমাদের সামনে রয়েছে। সাম্প্রতিক কালের আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং আফ্রিকার কয়েকটি অধঃপতিত রাষ্ট্রই এ অবস্থার সব চেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে। সুতরাং ব্যাপারটাকে লঘু করে দেখা কিংবা ভাবার কোন সুযোগ নেই।
শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার। এই সরল সত্যটাকে বার বার উপেক্ষা করা হয়েছে। আর তাই ব্যবস্থাটিকে এমন ভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে যাতে বৈষম্যটি টিকে থাকে। কারণ আপনার প্রবন্ধ থেকেই স্পষ্ট। ছোটবেলা থেকেই যেদেশের শিশুরা জাত-বিজাতের বিচার করতে শেখে, সেখানে আর যাই হোক মুক্তবুদ্ধি চর্চার সুযোগ সীমিত হতে বাধ্য। আর তাই গত ৩৮ বছরে আমাদের আপেক্ষিক অগ্রগতি পশ্চাদ্মুখীনতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর। বৈষম্যপীড়িত সমাজে আমরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানসিক ও সামাজিক ভাবেও বিভাজিত। তার উপরে অর্থনৈতিক বৈষম্যতো থাকছেই! এপ্রসঙ্গে জনাব রঞ্জন এর মহামতি লেনিনের দেয়া উপমাটি দারুন! এবার এর সাথে দূর্নীতিকে যোগ করে দিন। ব্যবস্থাটিকে পাকা করার জন্যে ষড়যন্ত্র নামের কালোচাদরে ঢেকে দিলেই যেকোন জাতির ভাগ্যাকাশে অন্ধকার নামিয়ে দেয়া কি কোন কঠিন ব্যাপার? আমরা বোধ করি এই পর্যায়টিতেই এখন রয়েছি। তানইলে বিপুল জনসমর্থন পুষ্ট বর্তমান সরকার কি বিপুল বিতর্কিত মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গনশিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয় (দৈনিক জনকন্ঠ, ২৯শে এপ্রিল, ২০০৯ দেখুন)? একদিকে শিক্ষানীতির বৈঠক-ই বসতে পারছেনা (যদিও গত ৩রা মে বৈঠক হয়েছে বলে পত্রিকায় দেখেছিলাম, ফলাফল বিস্তারিত জানিনে) আর অন্যদিকে বিতর্কিত ইস্যু গুলো কিভাবে অসাধারন গতিতে এগোয় দেখুন! বিভাজিত জতির প্রজাকূলের চৌচির কপাল বোধহয় একেই বলে!
গ্রেডিং পদ্ধতির বিকল্প আপাততঃ নেই একথা সত্যি তবে নগ্ন ব্যবহারে বিকাশের ক্ষেত্রে যে ব্যাত্যয় ঘটে তার পরিপূরক ব্যবস্থা দরকার। সেই জন্যেই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দূরদর্শীতা, শিক্ষক সমাজের সৃজনশীলতা এবং সমগ্র জাতির জন্যে সাধারন, বহুমুখী, গতিশীল ও সেকুলার শিক্ষাব্যবস্থা জরুরী।
আসলে যে ডঃ দেব এবং অন্যেরা সামপ্রতিক কালের শিক্ষা আন্দোলন সম্পর্কে খেয়াল করেননি তা নয়, যেমনটি জনাব রঞ্জন বলতে চেষ্টা করেছেন। স্বাধীনতা পূর্বকাল থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের এসংক্রান্ত ভুমিকার কারনেই হয়তো তাঁর লেখায় উদাহরণ স্বরূপ নামটি এসে থাকতে পারে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এর বড় আকারে শিক্ষা সন্মেলন ছাড়াও অন্যান্য সংগঠন, শিক্ষাবিদ বুদ্ধিজীবিরাও কাজ করেছেন। এব্যপারে সাম্প্রতিক কালে অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের কয়েকটি লেখাও আমি জনকন্ঠে দেখেছি। আসলে আগেই বলেছি, ডঃ দেব-ও বলেছেন, তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-পর্যালোচনা, নীতি তো আমরা কম করিনি, কিন্তু তার বাস্তবায়ন বা বাস্তবায়নের উদ্যোগ দেখা যায়নি। কারন কখনোই সৃষ্ট নীতিটি জাতির কাছে প্রত্যাশিত ভাবে হয়নি। বিতর্ক, বৈষম্য বিভাজন জিইয়ে রাখা হয়েছে।
আমি আমার মূল প্রবন্ধে ইংরেজী মাধ্যম নিয়ে যে কথা বলেছি, ডঃ দেবের প্রাসঙ্গিক দুর্বোধ্যতার ব্যপারে একটু আলোকপাত জরুরী মনে করছি। প্রকৃতপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইংরেজী ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব অস্বীকারের উপায় নেই। বর্তমান বিশ্বায়নের কালে ভাষাটির গুরুত্ব আরোও বেশী। জীবনের প্রায় ১২টি বছর এই ভাষাটি চর্চা করার পরও আমাদের অনেকের পক্ষে এর স্বাভাবিক ব্যবহার দূরহ, এ ব্যপারে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমি অনেককেই দেখেছি, ছুটি চেয়ে একটা আ্যপ্লিকেশন নির্ভূল ভাবে ইংরেজীতে লিখতে অনেকেই অপারগ। ইদানিং এটি আরো প্রকট। আবার যারা সক্ষম তাদের বেশীরভাগ-ই পড়তে লিখতে পারঙ্গম হলেও বলার সময় তা ব্যংলিশ! ইংলিশ আর হয়না। আমার নিজের-ও এই সমস্যা। তহলে ত্রুটিটা কোথায়? ব্যতিক্রম হিসেবে আমাদের অনেক অবিভাবক ইদানিং তাদের সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলোতে পাঠাচ্ছেন। এই স্কুল গুলোর পাঠ্যসুচী আধুনিক কিন্তু দর্শনটি পাশ্চাত্যের। ফলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক বিষয়ে জোড়াতালীর জ্ঞ্যন আহরণ করছে পাশ্চাত্য ভাবধারায়। শুধুমাত্র কাঁধ ঝাকিয়ে, আধুনিক ঢং-এ মেকি ইংরেজী বলা ছাড়া কি কিছু হচ্ছে? ওদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, যেখানে তারা এদেশীয় রীতিনীতির তোয়াক্কা করেনা, ঐতিয্যের স্পর্শ সেখানে নেই, নেই স্বজাত্যবোধের লেশ মাত্র ছোঁয়া! ওরা বৃটেন, আমেরিকা অষ্ট্রেলিয়ার ছেলেমেয়েদের লেটেস্ট ইয়ার্কিটা পর্যন্ত জানে কিন্তু আমার দেশের শ্রমক্লান্ত শিশুটার আর্তি ওদের হৃদয়কে স্পর্শ করেনা! প্রথিতযশা যাঁরা, আমাদের জাত্যাভিমানকে বিশ্বসভায় তুলে ধরেছেন, ওঁদের গায়ে এখনো এমাটির গন্ধ খুঁজে পাই। ওঁরা আমাদের চিরচেনা ‘আদর্শ লীপি’র বংশধর। তাই বলেছিলাম, ত্রুটিটাতো কথ্যে, বিদ্যাভূষনেতো নয়। আমাদের ইংরেজী ভার্সন যেটা আছে, ওটাকেই যুগোপযোগী করা হোক। বাতিল করা হোক বিদেশী সিলেবাস নির্ভর এ-লেভেল, ও-লেভেল ইথ্যাদি। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল গুলো আমাদের ইংলিশ ভার্সনের জন্যে প্রযোয্য হোক। আমাদের ভবিষ্যতের ঐক্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত হোক।
সবশেষে ডঃ প্রদীপ দেব যে সচিত্র উদাহরণটি দিয়েছেন, আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের এটি একটি উৎকৃষ্ট প্রতিভূ! ডিগ্রী হয়েছে কিন্তু মগজে গেঁথে যাওয়া সামন্ততান্ত্রিক ধ্যান ধারণা তো বদলায়নি। কারন ব্যবস্থাই তো আমাদের শিখিয়ে দেয় শিশুকালে, রাজা-বাদশাকে তোয়াজ কিকরে করতে হয়। আর বাদশা বনে গেলে প্রজাকূলের সর্বনাশের আগুনে নিজের তখ্ওয়াৎ কিকরে গরম রাখতে হয়! ব্যক্তিগত ভাবে সংশ্লিষ্ট এম. পি আমার পরিচিত, ছাত্রীর আত্মীয়। তার এরূপ মানসিকতা আমার কাছে প্রত্যাশিততো নয়ই বরং আতিশয় নিন্দনীয়। পাশা পাশি স্কুল কর্তৃপক্ষের তোয়াজ প্রকৃয়াটি কি আমাদের চিরায়ত শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেই নেওয়া? এর প্রায়োগিক রূপকল্প!
ডঃ অভিজিৎ এঁর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এব্যপারে পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। সেই সাথে আমার সংশ্লিষ্ট লেখাটির ভুল গুলো সংশোধন সাপেক্ষে মুক্তান্বেষায় পাঠাবার ইচ্ছে রইলো।
আবারও ধন্যবাদ ডঃ প্রদীপ দেব সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টিতে আলোকপাতের জন্যে।
-কেশব অধিকারী
শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে গঠনমুলক আলোচনা ফোরাম এবং ব্লগগুলোতে হয় না বললেই চলে। সে দিক দিয়ে কেশব অধিকারী এবং প্রদীপ দেবের লেখা দুটো খুবই ব্যতিক্রম। আমি লেখকদ্বয়কে অনুরোধ করব, তারা যেন লেখাগুলো মুক্তান্বেষা ম্যাগাজিনটির জন্যও পাঠান। পরবর্তী সংখ্যার জন্য লেখা চেয়ে ইতোমধ্যেই আবেদন জানানো হয়েছে।
লেখকের লেখা থেকে অন্তত: এটা স্পষ্ট যে আমাদের বর্তমান শিক্ষা অবস্থা ও পদ্ধতি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। এ জন্য তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই। তিনি এ জন্য অবশ্য মুক্তমনায় কেশব অধিকারীর লেখা “এক চিলতে মেঘ” লেখাটির রেফারেন্স দিয়েছেন। লেখাটি আমার পড়া হয়ে উঠেনি তারপরেও এখান থেকে তার সারমর্ম বুঝতে পারলাম যে তিনি আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। কিন্তু আমাদের মনেরাখা দরকার যে প্রতিটি বিষয়ে দু’টি বিষয় কাজ করে, একটা নীতিগত আর একটা পদ্ধতিগত। এর মধ্যে প্রথমটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার ক্ষেত্রেও তাই। আমাদের দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে নীতিগত দিকটাই গোলমেলে অর্থাৎ শিক্ষার উদ্দেশ্য কি, কারদের জন্য শিক্ষা, এর ব্যয়ভার কে বহন করবে ইত্যাদি। বলাবাহুল্য আমাদের মত পুজিঁবাদি দেশে শাসক শ্রেণী কখনই মানুষকে সত্যিকার অর্থে শিক্ষিত করতে চায় না। এসম্পর্কে লেনিন বলেছিলেন, ‘মন্ত্রী মহোদয় জনগণকে মনেকরে বারুদ আর শিক্ষা হচ্ছে বিদ্যুৎ স্ফুলিঙ্গ। বারুদ যদি স্ফুলিঙ্গের সংর্স্পশে আসে তাহলে তা বিস্ফোরিত হবে অবশ্যই তা মন্ত্রী মহোদয়ের বিরুদ্ধেই।’ একথা মাথায় রেখেই বর্তমান শিক্ষানীতি সাজানো হয়েছে। তারা ততটুকুই শিক্ষা মানুষকে দিতে চায় যতটুকু দিলে মানুষ বর্তমান পুজিঁবাদি সমাজের শোষনের ধরন ও এখান থেকে মুক্তির উপায় জানতে পারবে না বরং ধনীদের দাসত্ব করার জন্য দেহমনে প্রস্তুত হবে। এথেকে মুক্তির জন্য দরকার ‘সাবর্জনীন, বিজ্ঞান ভিত্তিক একই পদ্ধতির সেক্যুলার গণতান্ত্রিক’ শিক্ষানীতির জন্য কার্যকর গণ-আন্দোলন। লেখক খানিকটা হতাশা প্রকাশ করেছেন য়ে সংকট নিয়ে আন্দোলন করার জন্য সক্রিয় কোন ছাত্র সংগঠন নেই। অবশ্য তিনি বাম সংগঠনদের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন য়ে তাদের আন্দোলন শুধুমাত্র শিক্ষা উপকরনের দাম কমানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এটা ঠিক য়ে বর্তমান শিক্ষার সংকট থেকে উত্তরনের জন্য এটাই একমাত্র পথ হতে পারে না তবে অপ্রয়োজনীয়ও নয়। এজন্য লেখককে আর একটি ছাত্র সংগঠন সর্ম্পকে একটু খোজ রাখতে অনুরোধ করব তা হচ্ছে ‘সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট’। বর্তমানে এ সংগঠনটি সমগ্র শিক্ষানীতি নিয়েই ধারাবাহিক আন্দোল করছে। এর আগে তারা ১৯৯৯ সালে ঢাকায় ৭ দিনব্যপী শিক্ষা সম্মেলন করেছে যেখানে দেশ বিদেশের ১২৯ জন ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক-বুদ্ধিজীবি-রাজনীতিক সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ শিক্ষানীতির বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। সম্ভ্যবত স্বাধীনতা উত্তর আমাদের দেশে এটাই একমাত্র এবং বৃহত্তম শিক্ষা সম্মেলন। সবার বক্তব্য সহ একটি বই বের করেছে যার নাম ‘শিক্ষা সম্মেলন স্মারক গ্রন্থ’। পরবর্তিতে তার আলোকে ‘শিক্ষানীতি ও শিক্ষা সংকট প্রসঙ্গে’ নামে একটি খসড়া শিক্ষানীতি প্রকাশ করেছে। এ ছাড়াও ছাত্র রাজনীতির দিকনির্দেশনা স্বরূপ ‘কেন ছাত্রসমাজ রাজনীতি করবে?’ নামে একটা পুস্তিকাও প্রকাশ করেছে। অন্তত এই তিনটি বই পড়ার জন্য লেখককে বিনীত অনু্রোধ করছি। যে কোন বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য ([email protected]) অনুরোধ করে, পরিশেষে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।