বিডিআর নৈরাজ্য: লাশের মাপকাঠিতে বিদ্রোহের পরিসীমা
দিনমজুর
প্রথম দিকে মিডিয়াতে বিডিআরের সদস্যদের বিভিন্ন বঞ্চনা,লাঞ্চনা আর অপমানের কথা শুনে,অপরেশন ডাল-ভাতে ৪০ টাকার সয়াবিন ১২০/১৩০ টাকায় বাজারে ছাড়া এবং এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি অধিক দামে বিক্রি করে সে লাভের টাকায় বিডিআরের উর্দ্ধতন সামরিক কর্তাদের গাড়ি বাড়ি বানানোর অভিযোগ দেখে, বেতন-ভাতা এবং রেশনে বৈষম্যের খবর জেনে পিলখানায় বিডিআর সপ্তাহ উপলক্ষে আগত সামিরক বাহিনীর উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিডিআরের জোয়ানদের সশস্ত্র আন্দোলনের যে ঘটনাটিকে আমাদের বিদ্রোহ বলে মনে হয়েছিল পরবর্তীতে গিয়ে যখন লাশের সংখ্যা বাড়তে লাগল, যখন একটার পর একটা গণকবর আবিষ্কার হতে থাকল কিংবা মিডিয়াতে ক্রমশ নিহতের স্বজনের আহাজারির দৃশ্য বাড়তে লাগল তখনই একটু একটু করে আমাদের মনে হতে লাগল না, ঘটনাটি মনে হয় স্রেফ ক্ষোভের ফসল নয়- এর পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা ষড়যন্ত্র রয়েছে। এই পরিবর্তনের পেছনে কান্না-আবেগ-বিভৱষতা-মিডিয়ার দোল খাওয়া-সামরিক ও বেসামরিক প্রচরণা ইত্যাদির ভূমিকা না হয় বোঝা গেল কিন্তু যুক্তির ব্যাপারটি ঠিক কি? ঠিক কোন যুক্তিতে লাশের সংখ্যা কিংবা হত্যাকান্ডের ধরণ কিংবা লাশের সতকারের(কবর দেওয়ার) পদ্ধতির ভয়াবহতা দেখে আমাদের মতামতের এই একেবারে উল্টো ঘুরে যাওয়া? লাশের সংখ্যা কিংবা হত্যাকান্ডের ধরণ কিংবা লাশের সতকারের পদ্ধতির ভয়াবহতার মাধ্যমে কি বঞ্চিত- লাঞ্ছিত-অপমানিতের বিদ্রোহ আর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ভেদরেখা টানা যায়?
নৈরাজ্য, না বিদ্রোহ, না ষড়যন্ত্র:
বঞ্চিত- লাঞ্ছিত- নির্যাতিত- অপমানিত হতে হতে কিছু মানুষ যখন বিদ্রোহ করে, সেটার মাঝে যদি কোন আদর্শ না থাকে, কোন সুনির্দিষ্ট দিক নির্দেশনা না থাকে, তখন সেটা স্রেফ নৈরাজ্যই(অ্যানার্কি) হয়- লাশের সংখ্যার মাপকাঠিতে একে পরিকল্পিত বা ষড়যন্ত্র বলার মানে হলো ঘটনার ভিত্তিতে যে সব বঞ্চনা-ক্ষোভ-বৈষম্য রয়েছে সেগুলোকে আড়াল করে ফেলা- যে চেষ্টাই এখন সর্বত্র হচেছ্।
আচ্ছা তর্কের খাতিরে ধরা যাক, কোন একটি দেশীয় বা বিদেশী শক্তি কোন এক বা একাধিক বিশেষ উদ্দেশ্যে একদল বিডিআর কে নিয়ে এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে। ইন্ধনদাতা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যও না হয় ধরে নিলাম- বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা কিংবা নবগঠিত সরকারকে অস্থিতিশীল করা কিংবা যুদ্ধপরাধীদের বিচারের বিষযটিকে ভন্ডুল করা ইত্যাদি ইত্যাদি কিন্তু হত্যাকান্ড যারা ঘটিয়েছে অর্থাৱ যারা সারাসরি গোলাগুলি করেছে সেই সব বিডিআররা কিসের আশায় এবং কিসের ভরসায় এই পরিকল্পনামত কাজ করতে রাজি হলো? তাদের তো খুব ভালো করেই জানার কথা অফিসার হত্যাকান্ডের পরিণতি কি! এই পরিণতি জেনেও তারা এই পরিকল্পনায় অংশ নিয়েছে?
নৈরাজ্যের ভিত্তি:
রাষ্ট্র একদিকে শাসন শোষণের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণীকে ক্রমাগত ক্ষেপিয়ে তোলার মত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ জারি রাখে এবং তার ক্রমাগত পুনরুৎপাদন করে চলে, অন্যদিকে তার প্রতিক্রিয়ায় সেই শোষিত মানুষেরা যখন এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নানান ধরনের ধ্বংসাত্বক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, তখন আবার তার কাছ থেকে মানবিক বিবেচনা প্রত্যাশা করার ভান করে এবং কেন তারা সেই মানবিক বিবেচনা প্রদর্শন করল না তার অযুহাতে তাকে বিচার করে (যদি আদৌ সেগুলোকে বিচার বলা যায়– অচিরেই আমরা দেখব অপারেশন রেবেল হান্ট এবং বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে সামরিক বিচার প্রক্রিয়া)।
গার্মেন্টস শ্রমিকরা যখন ক্রমাগত নিষ্পেষিত হতে হতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে রাস্তায় নামে, সামনে যা পাই তা-ই ভাঙচুর করতে থাকে তখন তাদের সেই জ্বালাও পোড়াওয়ের খবর যখন পত্রিকার পাতার শিরনাম হয়: “গার্মেন্টস শ্রমিকদের তান্ডব” নামে আর ভেতরে থাকে নিরীহ পথযাত্রিদের হয়রানির কাহিনী কিংবা থাকে কোন প্রাইভেট কার ভাংচুরের সময় অসহায় আরোহিনীর হাত জোড় করে থাকার ছবি, সেই সাথে সরকার-গার্মেন্টস মালিক-বুর্জোয়া রাজনৈতিক দল- সুশীতল সমাজের মুখে ক্রমাগত দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের জল্পনা-কল্পনা।
অবাক হওয়ার কিছু নেই, এবারে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায়ও আমরা তাই দেখব এবং দেখছি। ক্রমশ বিডিআর জোয়ানদের বঞ্চণা-দাবী দাওয়ার জায়গায় স্থান করে নিয়েছে নিহতের স্বজনদের অশ্রুসজল চোখ, নিখোজ পিতার খোজে আকুল সন্তানের ছবি, গণকবরের দৃশ্য, অফিসারদের কোয়ার্টার ভাঙচুরের ছবি, লুটকরা স্বর্লাংকার নিয়ে পলায়নপর বিডিআর এর গ্রেফতার কাহিনী। সেই সাথে মিডিয়া-রাষ্ট্রপ্রধান-সেনাপ্রধান-সামরিক-বেসামরিক আমলা-বুদ্ধিজীবী সবার মুখেই ষড়যন্ত্রের নানান জল্পনা। কেউ বলছে বিডিআররা মুখ বাধার জন্য এত রঙিন কাপড় কোথায় পেল, কেউ বলছে অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্রপাতি কিভাবে লুটকরল, অ্যাশ কালারের পিক-আপ কোত্থেকে এলো- গণকবর কেন হলো- এত বাধ্য জোয়ানরা কোন সাহসে অফিসার দের গায়ে হাত তুলল-অফিসার দের বাড়িঘর কেন লুটপাট হলো? এগুলো সবই ষড়যন্ত্রের প্রমাণ। এদের সবাই কে খুজে খুজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে, দৃষ্টান্তু স্থাপন করতে হবে যেন ভবিষ্যতে এরকম আর না ঘটে।
এদের কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে এই প্রথম সামরিক/ আধাসামিরক/ বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীতে বিদ্রোহ হয়েছে। গণ বিচ্ছিন্ন প্রতিটি বুর্জোয়া সরকারই ক্ষমতার মসনদ শক্ত রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে তোয়াজ করে আসছে। প্রতিবছরের বাজেটে সামরিক খাতে সরাসরি ও গোপন বরদ্দ দেখলেই বিষয়টা পরিস্কার হয়ে উঠে। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকায় লালিত পালিত সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে জনগণকে দাবীয়ে রাখার কাজে। এই গণবিচ্ছিন্ন সামরিক বাহিনীতে এই সব সুযোগ-সুবিধার ভাগাভাগি নিয়ে মারামারি কামড়া কামড়ি চলে আসছে একেবারে শুরু থেকেই। যেকারনে ‘৭৫ এর আগষ্ট-নভেম্বর থেকে শুরু থেকে এ পর্যন্ত ঘটে গেছে বেশ অনেকগুলো অভ্যুত্থান। এ সকল অভ্যুত্থান এবং এসব অভ্যুত্থান ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিদ্রোহ দমনের সময় অসংখ্য অফিসার ও সৈনিক এর খুন হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিমান বাহিনীর অফিসারদের বিদ্রোহ কিংবা বেসামরিক আনসার বাহিনীর বিদ্রোহের হত্যাযজ্ঞের কথা হয়তো অনেকেরই স্মরণে আছে। সামিরক বাহিনীর ভেতরের নানা অনিয়ম, লুটপাট, এলিটিসিজম, সামন্ততান্ত্রিক Rnak প্রথা, তথাকথিত চেইন অব কমান্ডের ধরণ, অফিসার-সৈনিকের বৈষম্য, কথায় কথায় মধ্যযুগীয় পানিশমেন্ট বা শাস্তি, ব্লাডি সিভিলিয়ান বা জনগণের সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা ইত্যাদি নানা সমস্যায় জর্জরিত আমাদের সামরিক তন্ত্র আর দশটা বুর্জোয়া দেশের সামরিক তন্ত্রের মতোই অসুস্থ। এই অসুস্থতার লক্ষণ নানান সময় নানান ভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে। এবারের এই বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনাও সেই অসুস্থতারই বিকট বহি:প্রকাশ। এসব সমস্যার সমাধান যদি করতে চাই, যদি মনে করি সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে এরকম ঘটনা যেন না ঘটে তার পাকাপাকি ব্যবস্থা আমরা করবো,তাহলে এই সব ফালতু ষড়যন্ত্রের থিওরী বাদ দিয়ে, সামরিক প্রতিহিংসায় উন্মাদ সামরিক এলিটিসিজমকে তুষ্ট করার ভয়ংকর আত্মবিধ্বংসী পরিকল্পনা বাদ দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান সামরিকতন্ত্রের একেবারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটানো দরকার।
কার বিচার, কিসের বিচার :
কাজেই বিচার যদি করতেই হয় তাহলে প্রথমেই বিচার করা দরকার বর্তমান রাষ্ট্রতন্ত্রের, এবং বিদ্যমান সামরিকতন্ত্রের। এ কেমন ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান সামাজিক বৈষম্যের মতই তথাকথিত অফিসার এবং সৈনিক এর মর্যাদার পার্থক্য করা হয়, যেখানে অফিসার সেই দাস যুগের দাস-প্রভুর মতই সৈনিক নামের দাসের সাথে প্রতিনিয়তই অন্যায়-অত্যাচার-জুলুম-নির্যাতন চালায়? এ সামরিক তন্ত্রে তো অফিসার শ্রেণী প্রতিদিনই সৈনিকের আত্নমর্যাদাকে হত্যা করতে থাকে। তাছাড়া কি শেখানো হয় মিলিটারিতে- সন্ত্রাসবাদ না মানবিকতা? যে শিক্ষাটা তারা পায়-তার সাথে মানবাধিকার বা সভ্যতার কি কোন সম্পর্ক আছে? তার ওপর চেইন অব কম্যান্ডের স্বার্থে শুরু থেকেই স্বাধীন চিন্তা বিকাশের সমস্ত পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয় সকলের- সার্কাসের পশুর মতই চাবুকের বাড়িতে নির্দিষ্ট ধরনের নড়াচড়া ছাড়া অন্য কোন কিছু করার কোন সুযোগ নেই এখানে। রাষ্ট্রিয় নিরপত্তা রক্ষার অযুহাতে তো এভাবে স্রেফ একদঙ্গল পশু তৈরীর কারখানা চালু রাখা হচ্ছে। তার ওপর আছে সুযোগ-সুবিধার বঞ্চনা, বৈষম্য। মানবেতর জীবন যাপন। এর ফলাফল স্বরুপ পাশবিকতা বা নৈরাজ্য না ঘটাই তো অস্বাভাবিক। কাজেই বিশেষ ট্রাইবুনালে নৈরাজ্যের বিচার করার চেয়ে যে সিস্টেম/প্রকৃয়া এর জন্য দায়ী সেটার বিচার করা এবং সেটাকে পাল্টানো বেশী জরুরী বলে মনে করি।
তা না হলে এ ধরণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক বাস্তবতা যত দিন বহাল থাকবে, ততদিনই এধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যাবে, আজকে বিডিআর করেছে, কালকে আর্মির ভেতরেই ঘটবে।
ফরহাদ মাজহার এখানে কিভাবে প্রাসঙ্গিক বুঝলাম না।
দিনমজুর (কল্লোল)কে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার বিশ্লেষণের জন্য।
একটা প্রশ্ন বারাবার মনে জাগছে, এই ঘটনা স্বতস্ফুর্ত বিদ্রোহ হলে ঘটনার দিন বিকালে মিডিয়াতে লাল কাপড় বাধা জওয়ানরা সমগ্র জাতির সামনে কেন মিথ্যাচার করল? কেন বললো সব অফিসারকে ওরা বেধে রেখেছে, তারা সুস্থ আছে, মৃতের সংখ্যা একজন!
“এক পক্ষ থেকে শুনলে তুমি অন্ধকারে থাকবে, দুই পক্ষ থেকে শুনলে তুমি আলোকিত হবে।”
প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য দুই পক্ষের কথাই শুনা উচিৎ, তবে যদি সেটা আমরা জানতে চাই।
এটা ঠিক যে, এই ধরনের দাবি দাওয়ার জন্য এত গুলো হত্যা কান্ড ঘটতে পারেনা। বিডিয়ারে ভর্তির জন্য এক লক্ষ টাকা ঘুস দিতে হয়। আমাদের আরো অন্যান্ন কিছু সংস্থার মত বিডিয়ারও বেতনের উপরে ভরসা করে চলে না। মুলত তাদের আন্দোলনটা ছিলো ডাল, ভাত কর্মসুচির লুটের ভাগ নিয়ে। দাবি-দাওয়া কোন নতুন বিষয় না। কিন্তু বাহিনীর মধ্যের ফিঊদাল কাঠামো, আন্দোলন প্রসমিত করার বদলে এতে কেবল ঘি ঢেলে দিতে পেরেছে।
আর আভিজিত দাকে বলছি-যেটা ক্লাস স্ত্রাগল সেটাকে ক্লাস স্ত্রাগল হিসাবে দেখতে না পারাটাও এক ধরনের গোরামি। জিম্মি এক আফিসারের বউকে এক সৈনিক বলেছিলো -দেখ্ তোদের বাথরুমের চেয়েও খারাপ জায়গায় আমরা থাকি। এটা মুক্তি পাওয়া এক আফিসারের বউ এর ভাস্য। আসলে শোষন থাকলে ক্লাস স্ত্রাগল থাকবে। আমাদের সেটা পছন্দ হোক বা না হোক।
দিনমজুরের সাথে আমি একমত যে আমাদের রেবেল হান্টের পাশাপাশি এই সংস্থা গুলোর কাঠামো নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।
@Atiq,
এর উত্তর আমি আগে অনেকভাবে দিয়েছি। যেটাকে স্ট্রাগল সেটাকে স্ট্রাগল বলতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তাই বলে আফিসারের বউকে বা মেয়েকে আটকে রেখে ধর্ষণ বা নিপীড়ন করা কখনোই বৈধ হতে পারে না। তা হলে তো যে কোন দস্যুবৃত্তিকেই ক্লাস স্ট্রাগল বলা যেতে পারে, ক্লাস স্ট্রাগল বলে বৈধতা দেয়া যেতে পারে বিন লাদেন আর বাংলা ভাইয়ের কাজকর্মকেও। সাম্রাজ্যবাদী শোষণ আছে, অতএব কেউ যদি বলেন ৯/১১ থাকবে, থাকবে প্রতিটি জেলায়, সিনেমা হলে, আদালতে বোমাবাজি, রমনা বটমূলে হত্যা আর উদীচীর উপর আক্রমণ – তা হলে আমি সেই পদ্ধতির সাথে দ্বিমত করব। ঠিক যে কারণে আমি ফরহাদ মজহারের ‘ক্লাসীয় বিশ্লেষণ’ দিয়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে কে জায়েজ করা সঠিক মনে করি না, ঠিক সে কারণেই আমি কানসাট বা ফুলবাড়ির নিপীড়িত কৃষক-শ্রমিকদের সত্যিকার ক্লাস স্ট্রাগলের সাথে বিডিআর কিংবা আর্মিদের নৈরাজ্যতার আমি পার্থক্য দেখি। বিডিআর জওয়ানদের প্রতিটি দাবীর প্রতি আমি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল, আমার আপত্তি তাদের নৃশংস পদ্ধতির উপর। কোন সুস্থ মস্তিস্কের মানুষই এই রকম নারী এবং শিশুর উপর নির্যাতন আর গণকবর দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা গলিত দলিত মৃতদেহ দেখে শিউরে উঠবে। স্ট্রাগলের নামে আমি মানবিকতা বিসর্জন দিতে আমি পারব না। আমায় ক্ষমা করবেন।
@অভিজিৎ, ক্লাস স্ট্রাগলের নামে করলেই মানবতার বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ হালাল হয়ে যায় না, এব্যাপারে আমার কোন দ্বিমত নেই। আমি বলতে চেয়েছি, এখানে ক্লাস স্ট্রাগলের উপাদান ছিলো। কিন্তু ষড়যন্ত্র খুঁজতে গিয়ে, ঐ সত্যটাকে একেবারে আড়াল করে ফেলা হচ্ছে সেটাকি আপনি খেয়েল কেরেছেন ?
@Atiq, আতিক ভাই এর সাথে আমি পুরোপুরি একমত, অবশ্যই ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকে আমরা সমর্থন করিনা কোনক্রমেই। কিন্তু, এটাও অবশ্যই লক্ষ্যনীয়, জওয়ানদের উত্তেজিত হওয়ার মত বিষয়ও নিশ্চয় ছিলো যেটার প্রতি লক্ষ্য না দেওয়া হবে পরবর্তী বিদ্রোহের কারণ।
দিনমজুর সাহেব,বিডিআর ঘটনার প্রথম থেকে আমি আপনার সাথে একমত, সবাই শুধু উল্টোটাই চিন্তা করে, কিন্তু আমি ভেবেছি, বিষয়টা এভাবেও দেখা উচিত।
@অভিজিৎ,
পুরো বক্তব্যের সাথে একমত । ক্লাস স্ট্রাগল কম বেশী সব জায়গায় আছে, থাকবে…যথার্থ ক্লাস স্ট্রাগল এর প্রতি অবশ্যই সহানুভুতি আছে,যেমন সবার মতো আমার প্রথম দিকে বিডিআর এর দিকেই পূর্ন সমর্থন ছিল – কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা দেখে হতবাক শুধু নয়, ক্ষোভে, দুঃখে ভাবতে বাধ্য হয়েছি, যারা একে ‘বিপ্লব’ বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন, তারা কোন বিচারেই সঠিক কাজটি করছেন না । ব্যক্তিগত ভাবে এক বন্ধুকে হারিয়েছি, সাহিত্য থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ে যার জ্ঞান , মেধা ছিলো সত্যি ঈর্ষা করার মতো…
আর হ্যা, ফরহাদ মজহারদের বস্তাপচা থিওরী এখন অচলের খাতায়, এদের যতো পাত্তা কম দেওয়া যায় ততই ভালো…
@নন্দিনী,
ফরহাদ মজহার এর বড় শাস্তি হচ্ছে, তাকে এখন নতুন দিগন্ত আর দিনকাল এ লিখতে হয়। এর চেয়ে অধঃপতন আর কি হতে পারে। এক সময় তার লেখা প্রথম আলো তে পড়তাম।
লাশের সংখ্যার মাপকাঠিতে বিদ্রোহের পরিসীমা করা যেমন নৈরাজ্যকর, তেমনি আবার, তেমনি আবার ফরহাদ মাজহারীয় কায়দায় সবকিছু ক্লাস স্ট্রাগলের ছাঁচে ফেলে যে কোন নৈরাজ্য এবং সন্ত্রাসের বৈধতা দেয়ার চেষ্টাও বোকামি। দুই লাইনই অতি সরলীকরণ দোষে দুষ্ট বলে মনে হতে পারে। এটা ঠিক এখন শয়ে শয়ে সেনার মৃত্যু কিংবা গণকবরের সন্ধান পেয়ে যেমন প্রাথমিকভাবে বেরিয়ে আসা আর্মির দুর্নীতি এবং বৈষম্যের কথা এখন যেমন চাপা পড়ে যাচ্ছে, তেমনি আবার অন্য দিকে বিদ্রোহের নামে শ খানেক লোককে গুলি করে হত্যা, বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা কিংবা সেনাদের বউ মেয়ে এমকি কাজের মেয়েদের আটকে রেখে ধর্ষন, নির্যাতনের চিহ্নও আছে। কোন বিদ্রোহ বা যুদ্ধের এথিক্সেই এগুলো জায়েজ হয় না। ভুলে গেলে চলবে না জনগণ এমনকি মিডিয়া পর্যন্ত প্রথম দিকে বিডিআর-এর প্রতিই অধিক সহানুভূতিশীল ছিলো। এমনকি বিডিআর গেটের বাইরে জনগন বিডিআর-এর সাথে মিলে মিছিল পর্যন্ত করেছিলো। কিন্তু আজ ঘটনার নৃশংসতায় যখন কেউ হতভম্ব হয় – তখন বুঝতে হবে এর পেছনে ষড়যন্ত্রের চেয়েও আসলে বেশি কিছু ছিলো। সেই সত্যটিই বেরিয়ে আসুক।
Thanks Avijit for your comments with which I agree.
May I also request everyone that we do not use these terms explicitly to describe what happened to our mothers and sisters that day (or any other day). It is more than painful.
@অভিজিৎ,
এ লেখার কোথাও ঘটনাটিকে ক্লাস স্ট্রাগল বলে হত্যাকান্ডকে জায়েজ করার কোন চেষ্টা করা হয়নি। আবার ক্লাস স্ট্রাগলের ছাচ শুধু ফরহাদ মজহারের কপিরাইট নয়, মজহারের বাপ দাদার ও আগের আমল থেকে লোকে ক্লাস স্ট্রাগল দিয়ে ঘটনা-রটনা ব্যখ্যা বিশ্লেষণ করে আসছে। তাহলে লেখাটির শ্রেণী গত ভিত্তির সাথে “ফরহাদ মাজহারীয় কায়দায় সবকিছু ক্লাস স্ট্রাগলের ছাঁচে“র সাথে তুলনা করার উদ্দেশ্য কি?
ক্লাস কনফ্লিক্ট বা শ্রেনী দ্বন্দ্ব আর ক্লাস স্ট্রাগল বা শ্রেণী সংগ্রাম দুটো এক জিনিস নয়। ‘৭৫ এ কর্ণেল তাহেরের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার নেতৃত্বে সে সিপাহী বিদ্রোহ হয়েছিল সেটা ছিল একটা সুনির্দিষ্ট ক্লাস স্ট্রাগলের ফলফল। আর এই পিলখানায় এবারে যে ঘটনা ঘটল তা হলো শ্রেণীগত দ্বন্দ্ব সংঘাত থেকে ঘটা নৈরাজ্যের উদাহরণ। দুটোকে গুলিয়ে না ফেলার অনুরোধ করছি।
কোন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাতে ষড়যন্ত্র আছে কি নাই নাই এ কথা হলফ করে কেউ ই বলতে পারে না। আমরাও এখানে কোন হলফ করছি না। আমরা যা বলতে চাইছি তা হলো যে ধরণের ঘটনা ঘটেছে সেরকম নৈরাজ্য ঘটবার জন্য ষড়যন্ত্র থাকতেই হবে- এ ধরনের ধারনার/প্রচারণা/বক্তব্যের একটা রাজনৈতিকতা আছে যা শোষণ-বঞ্চণা-বৈষম্যের পরিবেশকে আড়াল করতে চায়। আমরা বলতে চাইছি শোষণ-নির্যাতন-বঞ্চণার পরিবেশ বজায় থাকলে কোন ষড়যন্ত্র ছাড়াই এধরণের কিংবা এর চেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটাটা অস্বাভাবিক নয়।
আশা করি আমাদের অবস্থান পরিস্কার করতে পেরেছি।