৩ মার্চ ’৭১ , এই দিনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়

নুরুজ্জামান মানিক

 

৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঢাকায় পার্লামেন্টারী পার্টিসমূহের নেতৃবৃন্দের এক গোল টেবিল বৈঠক আহ্বান করেন । কিন্তু শেখ মুজিব এই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন ।

এই দিন বিকেলে ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে পলটন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় এক বিশাল ছাত্র জনসভা। এই সভায় সিরাজপন্থী ছাত্রলীগ তথা স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াসের পক্ষে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ পাঠ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার । ঘোষণা আকারে প্রস্তাব পাঠ করা হয়েছিল -‘৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গ মাইল বিস্তৃত ভৌগলিক এলাকার সাত কোটি মানুষের জন্য আবাসভুমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাস্ট্রের নাম বাংলাদেশ । এই দেশ গঠন করে নিম্নলিখিত তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতে হবেঃ

১) স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ট বাঙালি জাতি সৃষ্টি ও বাঙালির ভাষা, সাহিত্য , কৃষ্টি , সংস্কৃতির বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে ।

২) স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে , ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসন কল্পে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষক শ্রমিক রাজনীতি কায়েম করতে হবে ।

৩) স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি , বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে ।

একই সাথে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা , আমি তোমায় ভালবাসি ’ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয় সেই সভায় ।

প্রচন্ড করতালির মধ্যে প্রস্তাব গৃহীত হলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পলটন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা । মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু নিজে তখনো এ ধরনের ঘোষণা থেকে বিরত ছিলেন ।

প্রস্তাবটি লিখেছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন দপ্তর সম্পাদক এম এ রশীদ । দুঃখজনক যে, খবরের কাগজ ছাড়া এই প্রস্তাবটির মূল কপি এখন নেই ।

ঐ একই সভায় শেখ মুজিব ডাক দেন অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের এবং অবিলম্বে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আহ্বান জানান ইয়াহিয়া সরকারের প্রতি । অসহযোগের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে খাজনা ট্যাক্স বন্ধ করে দিতে তিনি আহ্বান জানান । বললেন তাতেও পাকিস্তানী শাসক চক্রের মনোভাব পরিবর্তন না হলে ৭ মার্চ রেসকোর্সের ( বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ) জনসভায় পরবর্তী কর্মসুচি দেয়া হবে ।

অবস্থা আয়ত্বে আনার জন্য সরকার জারি করে সান্ধ্য আইন । কিন্তু তা উপেক্ষা করেই অব্যাহত থাকে জনতার বিক্ষোভ ও মিছিল ।