২ মার্চ ‘৭১ , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলিত হয় প্রথম স্বাধীন বাংলার পাতাকা 

নুরুজ্জামান মানিক

 

১ মার্চ ইয়াহিয়া খান অনির্দিস্টকালের জন্য পরিষদ অধিবেষন স্থগিত ঘোষণা করেন । প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ১ মার্চের ঘোষণার ফলে পুর্ব পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টির সাথে আলোচনা করে গান্ধীজীর কায়দায় অর্থাৎ অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলনের মাধ্যমে স্বায়ত্বশাসন আদায়ে বদ্ধপরিকর হলেন । তিন ৬ দিনব্যাপী এক কর্মসুচি ঘোষণা করলেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , ইয়াহিয়া খানের ঘোষণার পরপরই ছাত্রলীগ সভাপতি নুরে আলম সিদ্দিকী , সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ, ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব ও জি এস আবদুল কুদ্দুসের মাখনের সমন্নয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয় এবং ফলে ১১ দফাভিত্তিক সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ পরিষদের কার্যত বিলুপ্তি ঘটে । ছাত্রলীগের রেডিক্যাল অংশ ( যারা ১৯৬৪ সালে জাস্টিস ইব্রাহিম সূচিত এবং সিরাজুল আলম খান প্রমুখের নেতৃত্বাধীন নিউক্লিয়াসের সাথে জড়িত ছিলেন ) শেখ মুজিবের গান্ধীবাদী কর্মসূচিতে সন্তষ্ট হল না। তারা সিদ্ধান্ত নিল ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসমাবেশ অনুষ্ঠানের এবং রব-সিরাজ -ইনু প্রমুখ কর্তৃক পরিকল্পিত ও শিবনারায়ণ দাস কর্তৃক অংকিত গাঢ সবুজের মাঝে উজ্জল সূর্যের প্রতিক লাল রংয়ের মাঝে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলনের ।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক , চারদিক থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিল এসে জমায়েত হয় ঢাবি কলাভবন চত্বরে । নতুন স্লোগান তৈরি হল-জাগো জাগো বাঙালী জাগো , বীর বাঙালী অস্ত্র ধর , বাংলাদেশ স্বাধীন কর এবং তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা । নদীর ঢেউয়ের মতই আন্দোলিত হচ্ছিল কলাভবন চত্বরের কালো মাথাগুলো । হঠাৎ করে একটু চঞ্চল হয়ে উঠে সমবেত সবাই । হ্যা , ধীরে ধীরে বাশের মাথায় স্বাধীনতা পতাকা উত্তোলন করলেন ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব । চারদিক মুখরিত হল ‘জয় বাংলা ’স্লোগান। রচনা হয়ে গেল ইতিহাসের আরেক অধ্যায় । ঐ তারিখেই ইয়াহিয়া সরকার কারফিউ জারি করে । কিন্তু ছাত্র শ্রমিক জনতা কারফিউর কোন তোয়াক্কা না করেই মিছিল অব্যাহত রাখে ।

(এই লেখাটি এবারের বইমেলায় শুদ্ধস্বর থেকে প্রকাশিত আমার ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের অপর নায়কেরা’ গ্রন্থ থেকে নেয়া হয়েছে ।)