আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল
সোহেল সুমন
২০০৪ সালের ঘটনা, তখন আমি সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। একজনকে মনের মধ্যে লালন করছি, তাকে নিয়ে ঘর বাধছি, স্বপ্ন দেখছি কারনে অকারনে। বেশ বুঝতে পারছি, হয় আমি প্রেমে পড়েছি নতুবা প্রেম আমার উপরে। বলি বলবো বলবো করে বলা হয়ে উঠেনি, আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল, শুধাইলোনা কেহ। নাহ! উচাটন মন নিয়ে আর কত, সিধান্ত নিলাম এবার ভালোবাসা দিবসে বলব তারে মনের কথা। কিন্তু সে থাকে ঠাকুরগাঁতে। আগেই বলে নিই শুভকাজে অহেতুক বাধা বলতে পারেন আমার নিয়তি নির্দিষ্ট(?)। এসব গুরুতর কথাতো আর চিঠি লিখে জানানো যায়না, ধরা পড়লে আমও যাবে যাবে ছালাও। বিদ্রঃ মোবাইল তখনো অতটা সহজলভ্য ছিলনা। স্থির হল, আগের দিন মানে ১৩ ফেব্রুয়ারি আমি সৈয়দপুরে মামার বাসায় রাত থাকব। পরদিন খুব সকালে ফ্রেশ হয়ে ঠাকুরগাঁর উদ্দেশ্যে রওনা দেব। সৈয়দপুর থেকে ঠাকুরগাঁ এক ঘন্টার পথ। অনেক আশা এবং স্বপ্ন বুকে নিয়ে পরিকল্পনামত ১২ তারিখ রাতের কোচে সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ঢাকা হয়ে সৈয়দপুর পৌছলাম ১৩ তারিখ বিকালে যদিও রাস্তায় মাত্র তিনবার টায়ার পাঙ্কচার হয়েছিল। ফ্রেশ হয়ে বিকালের নাস্তা সেরেই বেড়িয়ে পড়লাম ফুলের ব্যাবস্থা করতে। চৌদ্দটা গোলাপের অর্ডার দিয়ে বললাম কাল সকালে এসে নিয়ে যাব। এই পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকি ছিল, ফেরার পথে রেলগেটে দেখি ভীষণ জটলা। কি হয়েছে! শ্রমিক ইউনিয়নের কাকে যেন পেটানো হয়েছে। রাতে যখন ঘুমুতে যাব, হঠাত ব্জ্রপাতের মত মাইকিং- আগামীকাল সৈয়দপুরে সকাল সন্ধ্যা হরতাল। সারারাত এক ফোটা ঘুমও হয়নি। খুব সকালে দ্বিধা সত্বেও ভালোবাসার দেবী ভেনাসের নাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম এই আশায় যদি রিকশা নিয়ে দশমাইল যাওয়া যায় তবে ব্যাবস্থা একটা হবেই (বিঃদ্রঃ দশমাইল সৈয়দপুরের পাশের থানা)। আমার এই প্রেম সামান্য হরতালের কাছে পরাস্ত হবে এও কি মেনে নেয়া যায়! বেশ খানিকটা হেটে শহরের বাইরে গিয়ে অনেক অনুনয় বিনয় করে বেশ চড়া দামে একটা রিকশা ঠিক করলাম। রিকশা চলতে শুরু করেছে, মিষ্টি রোদ আর ঝিরি ঝিরি বাতাস লাগছে গায়, হাতে চৌদ্দটি গোলাপ আর হৃদয় উপচে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে ভালোবাসা। কিছুদুর যেতে না যেতে আমাদের পথরোধ করলো ষন্ডামার্কা কয়েকটা লোক(পিকেটার)। রিকশাওয়ালার অনেক অনুনয় বিনয়ের ফল দাড়ালো পাম্পবিহীন টায়ার ও কয়েকটি ছেড়া স্পোক। না, ঠাকুরগাঁ সেদিন আর যেতে পারিনি, প্রেয়শীকে বলতে পারিনি হৃদয়ের কথা। কিন্তু তাই বলে আমার ভালোবাসা থেমে যায়নি, সত্যিকারের ভালোবাসা কখনো থেমে যায়না। এমন কি ধর্মও পারেনি আমাদের মাঝে দেয়াল তুলতে। আজ আমাদের দাম্পত্যে তৃতীয় ভালোবাসা দিবস। ভালোবাসাবাসির এই দিনে শুভেচ্ছা সবাইকে (HAPPY VALENTINES DAY)। সভ্যতাকে বাঁচাতে জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে ভালোবাসাবাসির কোনো বিকল্প দেখিনা।
সোহেল সুমন,
নিউক্যাসল, ইংল্যান্ড।
এই সত্য ঘটনা দি য়্ে ভালবাসার বশিেষ টি ভি নাটক হ তে পারে ! ধন্যবাদ !
@opu,
হুম! আইডিয়াটা মন্দনা! আপনি :tv: নাটক বানাতে চাচ্ছেন আপত্তি করি কেমনে! :-)) ধন্যবাদ!
‘এমন কি ধর্মও পারেনি আমাদের মাঝে দেয়াল তুলতে’।
দেয়ালটা মানব জীবনের সর্বস্তরে বিস্তৃত কি-না এ নিয়ে আরো লেখা মুক্ত-মনায় দেখতে চাই। ই-মেইল ঠিকানাটা দিলে ভাল হয়। আর হ্যাঁ, ধর্ম নিয়ে বিশেষ করে ইসলামের সমালোচনায় কিছু লিখলে সঠিক নাম ঠিকানা উল্লেখ করতে সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ রইলো।
আকাশ মালিক
ইংল্যান্ড
@Akash Malik,
মালিক ভাই, পরামর্শের জন্যে ধন্যবাদ। আমার e-mail address: [email protected]. ইচ্ছে আছে তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করার। ভালো থাকবেন।
মন্তব্যের সাঁকো পেরিয়ে লেখালেখির জগতে পদার্পনের জন্য সুমনকে অভিনন্দন। মুক্তমনায় আমরা নিয়মিত আরেকজন লেখক হিসেবে মুক্ত সুমনকে পাবো সেই আশা করছি।
লেখা ভাল হয়েছে। দাম্পত্যের তৃতীয় ভালবাসা বার্ষিকীতে শুভেচ্ছা রইলো দুজনের জন্যই। :rose: :rose: :rose:
ডারউইন ডের পেজের কারণে লেখাটি ভালবাসা দিবসে প্রকাশ করতে না পারায় মুক্তমনার পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
@ফরিদ,
ধন্যবাদ ফরিদ ভাইকে, মুক্তমনায় এই অধমের লেখাটুকুকে জায়গা করে দেবার জন্য। মুক্তমনার কাছে, ধীরে ধীরে বহু জমিয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋন।
কৃতজ্ঞতায়,
সুমন
সুমনকে অভিনন্দন মুক্তমনায় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার জন্য।
আর দু’জনের জন্যই রইলো ভ্যালেন্টাইন ডের শুভেচ্ছা।
ডারউইন ডে’র কারণে দেবী ভেনাসকে না হয় দুটো দিন বেশি অপেক্ষা করতে হয়েছে, তা’তে কি? সত্যিকারের ভালোবাসা তো থেমে থাকে না। হরতাল, ডারউইন, ধর্ম – এসবের কোনটাই বাধা নয়। যেন না হয়!