ডারউইনের বিবর্তনবাদী হয়ে ওঠাকালীন সময়ে ইউরোপের বৈজ্ঞানিক অবস্থা ও সামাজিক অগ্রগতি অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রগতি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা
সুশান্ত বর্মন
১৮০৯ সালের ১২ ফেব্র“য়ারি। ইংল্যান্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম শ্রুসবারির এক স্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চার্লস ডারউইন (Charles Darwin)। মাকে হারান আট বছর বয়সে। জীবনে চলার পথে কোন লক্ষ্যস্থির তার ছিল না। স্কুলের প্রচলিত পড়াশোনার চেয়ে মাঠে ঘাটে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগতো বেশি। পাঠ্যবইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকার চাইতে ঘন্টার পর ঘন্টা ফুল প্রজাপতি গাছ ইত্যাদির দিকে তাকিয়ে থাকতে বেশি আনন্দ লাগত। পোকামাকড়, লতাপাতা সংগ্রহ করে তার দিন কেটে যেত। প্রচলিত ধারার শিক্ষার প্রতি তার মধ্যে একটুও আগ্রহ ছিল না। ডাক্তারি পড়া সম্পূর্ণ না করে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে ধর্মতত্ত্বের পরীক্ষায় কোনরকমে টেনেটুনে পাস করে ডিগ্রীপ্রাপ্ত হন। কিন্তু পাদ্রী হওয়া তার হয়ে ওঠেনি।
ডারউইন ক্লাসের বইয়ের চাইতে প্রকৃতিপর্যবেক্ষণ বিষয়ের বই পড়তে বেশি পছন্দ করতেন। প্রকৃতিবিজ্ঞানের বিভিন্ন সংগঠনে যাতায়াতের সুবাদে পরিচিত হন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক ভূতাত্ত্বিক অ্যাডাম সেজউইক ও উদ্ভিদবিদ স্টিভেন্স হেন্স্লোর (John Stevens Henslow) সঙ্গে। ডারউইন শখের প্রকৃতিপ্রেমী থেকে প্রকৃতি বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন স্টিভেন্স হেন্স্লোর উৎসাহ ও সহযোগিতায়। প্রকৃতিবিদ্যা বিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তার ছিল না। তারপরও হেন্স্লোর সুপারিশে ডারউইন রাজকীয় বিগল জাহাজে নিসর্গী হিসেবে ভ্রমণের সুযোগ পান। নতুন নতুন জায়গা দেখা হবে, নানারকম প্রাণী ও উদ্ভিদের সাথে পরিচয় হবে, যা চোখে লাগবে তাকেই লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য সংগ্রহ করবেন, সারাদিন জাহাজে বসে বসে প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করবেন এরকম তার ভাবনা ছিল। এই ভ্রমণে নতুন কোন তত্ত্ব নিয়ে চিন্তা করবেন, পৃথিবী, প্রকৃতি, মানুষ, প্রাণীজগত সম্পর্কে নতুন মতবাদ উদ্ভাবন করবেন, এতকালের প্রচলিত বিশ্বাসকে একটানে উপড়ে ফেলবেন এরকম কোন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তার ছিলনা। প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দেখার আনন্দে তার দিন কেটে যাবে সেই আগ্রহ তার প্রবল ছিল। জাহাজের ক্যাপ্টেন রবার্ট ফিট্স্রয় (Robert Fitzroy) ছিলেন রাজকীয় কর্মকর্তা। তার সরকারি উদ্দেশ্য সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তিনি যুগের প্রয়োজনে সৃষ্টি হওয়া নতুন বাণিজ্যিক পথের নিখুঁত মানচিত্র একে নিয়েছেন। সমুদ্র উপকূলে যে জায়গাগুলোতে বন্দর তৈরি করা যেতে পারে সেইসব জায়গার বিশদ বর্ণনা, স্থানগুলোর অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ ইত্যাদি নির্ণয়ের দায়িত্ব রবার্ট ফিট্স্রয় সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। তিনি নৌদফতরের জন্য ৮২টি উপকূলীয় মানচিত্র, বন্দরের ৮০টি নকশা পরিকল্পনা, প্রত্যেকটি জায়গার সঠিক ভৌগলিক অবস্থান ও ৪০টি দৃকচিত্র নিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরেছিলেন। কিন্তু ডারউইন ফিরলেন অন্য এক চিন্তা নিয়ে, অন্য এক তত্ত্বের প্রাথমিক কল্পনা নিয়ে। বিশ্বাসী ডারউইন এতকালের সঞ্চিত সংস্কারকে অতিক্রম করতে দ্বিধা করছিলেন। নিজের উপলব্ধির যথার্থতা নিয়েও তার সংশয় ছিল। সামাজিক অনগ্রসরতা ডারউইনকে তার পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান প্রকাশ করার সাহস দেয়নি। অথচ ডারউইন নিজে “বিবর্তনবাদ” আবিষ্কার করেননি। তার আগে “জ্যাঁ লামার্ক (১৭৪৪-১৮১৯)” বিবর্তনবাদের জন্ম দেন। ডারউইন নিজের অজান্তে বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে বিপুল পরিমাণ স্বাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহ করেছিলেন। একটার সাথে অন্যটার সূত্র মেলাতে গিয়ে তিনি মানসিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিলেন। তার সুদীর্ঘ সামাজিক, পারিবারিক, ব্যক্তিগত সংস্কার, ধারণা এক বিগল জাহাজের ভ্রমণেই আমূল পাল্টে গিয়েছিল।
১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দে ভেসালিয়াস (Andreas Vesalius, ১৫১৪-১৫৬৭) তার বিখ্যাত বই “On the Fabrics of Human Body” প্রকাশ করেন। সে বইতে মানবশরীরের পেশী, স্নায়ু, রক্তনালী, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ইত্যাদির স্পষ্ট ছবি ছিল। ভেসালিয়াসের পদাঙ্ক অনুসরন করে পরবর্তীতে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রাণিবিজ্ঞান ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের বইতে নিখুঁত ও বিস্তারিত ছবি প্রদানের প্রথা হয়ে গিয়েছিল। বিভিন্ন ধরণের প্রাণীর ব্যবচ্ছেদ ও তাদের শরীরের প্রত্যাঙ্গের সূক্ষ্ম ছবিগুলি সাধারণ মানুষের চোখের সামনে এক নতুনজগতের দৃশ্য উন্মোচিত করল। মানবশরীর ও অন্যান্য মানবেতর প্রাণীদের শরীরের সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য সবাই জেনে গেল। পরবর্তীতে ডারউইনের তত্ত্ব বুঝতে এই জ্ঞান অনেক কাজে লেগেছে।
ভেসালিয়াস নিজে পুরাতন গ্যালেনীয় মতবাদকে বাতিল করতে পেরেছিলেন। মানব শরীর সম্পর্কে শত বৎসরের সংস্কারকে ভাঙতে পেরেছিলেন। কিন্তু সময়কাল, ভূতত্ত্ব সম্পর্কে তেমন কোন শক্তিশালী ভূতাত্ত্বিকের আগমন তখন পর্যন্ত ঘটেনি। মানুষ ও পৃথিবী সৃষ্টির কাল, পৃথিবীর গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্যের অভাব ডারউইনকে নিজ মতবাদ সম্পর্কে সংশয়ী করে তুলেছিল।
ডেনিস ডিড্যারো (Denish Diderot) (১৭১৩-১৭৮৪) আটাশ খন্ডে প্রকাশিত তাঁর এনসাইক্লোপিডি (Encyclopedie) (১৭৭২) গ্রন্থে প্রাণীর ক্রমবিকাশ সম্পর্কে লিখেছিলেন- “শারীরিক অভিযোজন বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের Adaptation প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।” ডারউইনের “অরিজিন অব স্পেসিস” বইটি প্রকাশের আগে ডিড্যারোর মতবাদ প্রমাণের স্বপক্ষে উপযুক্ত কোন স্বাক্ষ্য ছিলনা।
ডারউইন যে সময়ে তার মতবাদ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, সে সময়ে তিনি অর্থনীতিবিদ থমাস রবার্ট ম্যালথাসের (Thomas Robert Malthus, ১৭৬৬-১৮৩৪) বিখ্যাত রচনা “An Essay on the Principles of Population as it affects the Future Improbement of Society, with Remarks on the Speculation of M. Godwin, M. Condorcet and other Writers” পাঠ করেছিলেন। ডারউইন ম্যালথাসের ছোট্ট একটি কথাতে এক নতুন দিক নির্দেশনা পেয়ে গেলেন। ম্যালথাস বলেছিলেন “জনসংখ্যা বাড়ে জ্যামিতিক হারে, আর খাদ্যসম্ভার বাড়ে গাণিতিক হারে।” ফলে প্রাণীজগতে খাদ্যের অভাব কখনই দূর হবে না। সমাজে সব সময় একটা না একটা দ্বন্দ্ব সংঘাত লেগেই থাকবে। মানুষে মানুষে হানাহানি চলতে থাকবে। ডারউইনের মনে হয়েছে প্রাকৃতিক নির্বাচন, বা যোগ্যতমের টিকে থাকার কার্যকারণ রয়েছে ম্যালথাসের সূত্রে।
২৭ ডিসেম্বর ১৮৩১ সালে ডারউইন নতুন পৃথিবীর পথে যাত্রা শুরু করেন। ৫ বৎসর পর ১৮৩৬ সালের ২ অক্টোবর তারিখে ফিরে আসেন। বাইশ বছর বয়সী ডারউইন খোলা মনে, অনুসন্ধিৎসু চোখে পৃথিবীর নতুন নতুন জীবজগতকে পর্যবেক্ষণ করেন। কোনরকম প্রাথমিক তত্ত্ব বা পূর্বধারণা তার কাছে ছিল না। তাই বলে নতুন নতুন প্রাণী ও উদ্ভিদ আবিষ্কারের নেশায় তিনি আনমনা হয়ে যাননি। বরং সংগৃহীত নমুনাগুলোর বৈচিত্র্য তার মনে এক নতুন চিন্তার জন্ম দিয়েছিল। সভ্যজগত থেকে বহুদূরে বসে একা একা কোনরকম সিদ্ধান্ত নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পাঁচ বৎসর পর দেশে ফিরে তাৎক্ষণিকভাবে কোন নতুন কথা তিনি বলতে পারেননি। কারণ তার তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে আরও কয়েকটা বিষয়ে নতুন তত্ত্ব, প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্যপ্রমাণ আবিষ্কৃত হওয়া প্রয়োজন ছিল।
সংগৃহীত উপাত্ত ও নমুনাগুলো বিশ্লেষণের জন্য ডারউইন শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান। ২০ বৎসর ধরে নিভৃতে বিচার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন জনের সঙ্গে পরামর্শ-আলোচনা করে, নতুন নতুন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রাপ্ত তথ্যকে তুলনা করে, অন্যান্য বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারকে প্রামাণ্য ধরে তিনি একটি স্থির সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত পৌছাতে পারেন। ১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর প্রকাশিত হয়, তার বিখ্যাত বই “অরিজিন অব স্পিসিস”, সম্পূর্ণ নাম ” অন দি অরিজিন অব স্পিসিস বাই মিনস অফ ন্যাচারাল সিলেকশন, অর দি প্রিসার্ভেসন অফ ফেভারড রেসেস ইন দি স্ট্রাগল ফর লাইফ (On the Origin of Species by Means of Natural Selection, or the Preservation of Favored Races in the Struggle for Life)।” এই বইয়ে তিনি বলেছেন- জলবায়ু ও ভৌগলিক উপাদন প্রাণীকে টিকে থাকার লড়াইয়ে প্রেরণা যোগায়। আবহাওয়ার শীতলতা বা উষ্ণতা, ভৌগলিক উপাদান যেমন সমুদ্র, পর্বত, তৃণভূমি ইত্যাদি অবস্থায় যে প্রানী যত কার্যকরীভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে সে ততো ভালোভাবে প্রকৃতির লড়াইয়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারে। আর যে সব প্রানী আবহাওয়া ভৌগলিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না, তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বিগলের সাথে সমুদ্রপৃষ্ঠে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে বিভিন্নরকম ভূপ্রকৃতি ও তার নানারকম প্রানীর বৈশিষ্ট্য চিন্তা করতে করতে ডারউইন পরিবেশ বদলের সঙ্গে প্রানীর মানিয়ে চলার তত্ত্বটি বুঝতে পারেন। তিনি দেখতে পান যে, ক্রমবিকাশের সাথে প্রাকৃতিক নির্বাচনের একটা ঘনিষ্ঠ সূত্র আছে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বটি বুঝতে হলে সময়ের পরিসীমার সাথে তার পরিবর্তনটিকেও বুঝতে হবে। অতীতে ফেলে আসা বিশাল সময়ের দূরত্বকে ডারউইনের কালে বোঝা কঠিন ছিল। পুরাতন বিশ্বাস অতীতের দিকে কল্পনার বিস্তারকে কঠোরভাবে বাধা দিত। এছাড়া শত শত কোটি বছরের সীমাকে প্রমাণ করবার মতো প্রযুক্তিও সেসময়ে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়নি। ফলে মানুষ প্রকৃতিকে মাত্র কয়েকহাজার বৎসরের পুরনো মনে করতো। সঠিক তথ্যের অভাবে ডারউইন তাই প্রাথমিকভাবে বুঝতেই পারেন নি যে তার আবিষ্কার কোন মহাকালকে চিত্রিত করতে চায়।
প্রকৃতির পরিবর্তনকে বোঝার জন্য সময়ের পরিবর্তনকে বোঝার প্রয়োজন ছিল। ডারউইনের আগে জেমস হাটন, (James Hutton, ১৭২৬-১৭৯৭) বিভিন্ন রকম শিলার বয়স লক্ষকোটি বছর হতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন। কিন্তু প্রচলিত ‘ছয় হাজার বছরের পুরনো পৃথিবী’র ধারণাকে হাটনের মন্তব্য বাতিল করে বলে অভিযুক্ত হয়েছিল। হাটনের পর্যবেক্ষণ কেউ গ্রহণ করেনি। লায়েল নিজেও পৃথিবীপৃষ্ঠে দেখা যাওয়া বিভিন্ন প্রাচীনতম খাদগুলি সম্পর্কে উৎসাহী ছিলেন। সেগুলো তৈরির সময়কালকে কল্পনা করার চেষ্টা করতেন। ডারউইনসহ পরবর্তীকালের সকল প্রকৃতিবিজ্ঞানী পৃথিবীপৃষ্ঠে লক্ষ কোটি বৎসরের পুরনো পাথর পেয়েছেন, পাহাড়ের গায়ে লক্ষ কোটি বৎসরের পুরনো শিলার স্তর পেয়েছেন। পাহাড় তৈরির প্রধান উপাদান আগ্নেয়শিলা ‘ব্যসল্ট’ পাথরের বয়স নিয়ে ভূতাত্ত্বিকরা প্রথম প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেন। তারা স্পষ্টভাবে জানতে চান ‘ব্যসল্ট’ পাথরের বয়স কত ছিল? শেক্সপীয়রের এক রচনাতে পৃথিবীর বয়স ছয় হাজার বৎসর বলা হয়েছে। সেই সময়ের বিজ্ঞানীরা পাহাড়ের ফাটল, খাঁজ, গভীর গুহা, খাদ, নদী ইত্যাদির স্তরে স্তরে ভূত্বকের সাজিয়ে থাকার কারণ জানতে চেয়েছেন, সেগুলির উৎপত্তির উৎস অন্বেষণ করেছেন। ডারউইনের সময়ে রীতিমাফিক পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ের চেষ্টা মাত্র শুরু হয়েছে। ভূবিজ্ঞানীরা পৃথিবীর শরীরে কত পরিমাণ পলিস্তর জমেছে এবং কী হারে প্রতি বছর জমতে পারে তা অনুমান করে প্রকৃতির বয়স মাপার এক মানদণ্ড তৈরি করার চেষ্টা করেন। ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিকরা মনে করতেন পৃথিবীর বয়স তিন কোটি থেকে ত্রিশ কোটি কিংবা সর্বচ্চো একশো পঞ্চাশ কোটি বছর পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ভারতীয় চিন্তায় পৃথিবীর বয়স একশো সাতানব্বই কোটি বছর বলে বলা হয়েছে।
পৃথিবীপৃষ্ঠেই ডাইনোসরদের বিভিন্নরকম হাড়গোড় পাওয়া যেত। কিন্তু মানুষ এগুলোকে চিনতো না। ১৮২২ সালে Iguanadon এবং ১৮২৪ সালে একটি Megalosaurus এর হাড় পাওয়া গিয়েছিল। মানুষ জানতো যে এগুলো মরে যাওয়া, বিলুপ্ত হওয়া কোন প্রানীর হাড়। কিন্তু এগুলোর পরিচয় কি, কিভাবে এই বিশালাকার প্রানীগুলো মারা গেছে, সে সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণা তাদের ছিল না। জীবাশ্মবিদ্যার উৎপত্তি এই হাড়গুলো সম্পর্কে মানুষের অনুসন্ধিৎসাকে তৃপ্ত করেছে। ডারউইনও জীবাশ্মবিদ্যার কাছে জীবনের পর্যায়গুলো উন্মোচন করার জন্য ঋণী হয়ে আছেন।
বিবর্তনবাদকে বুঝতে গিয়ে প্রানীবিজ্ঞানীদেরকে বিভিন্ন প্রানীর শ্রেণীবিভাজন করতে হয়েছে। কুভিয়ে, সাঁতিলায়ের প্রমুখ বিজ্ঞানী প্রাণিবিদ্যার বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা, ইতিহাস নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রকাশ করেছেন। তাদের মতবাদ, বিভিন্ন প্রামান্য উপাদান ডারউইনের তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে যথেষ্ঠ সাহায্য করেছে।
লায়েলের (১৭৯৭-১৮৭৫) “ভূবিদ্যার মূলমন্ত্র, পৃথিবীপৃষ্ঠের পূর্বকালের বদলসমূহের আজকের সক্রিয় কারণের প্রেক্ষিতে ব্যাখ্যার চেষ্টা (Principles of Geology, Being an Attempt to Explain the Former Changes of the Earth’s Surface by Reference to Causes now in Operation)” বইটি ডারউইনের মনে জেগে ওঠা অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। ভূগোলের বিভিন্ন সমস্যা ও বৈচিত্র্য যদি ডারউইন নিজের চোখে না দেখতেন তাহলে ইতিহাস হয়তো অন্যরকম হতো। বিগল জাহাজে দেশ দেশান্তরে, দ্বীপ-দ্বীপান্তরে ভ্রমণকালে ডারউইন নতুন জায়গার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের দিকে বিশেষ নজর দিতেন। প্রাণীবৈচিত্র্যকে পর্যবেক্ষণ ও সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাদের বাসস্থানের ভৌগলিক পরিবেশকে বুঝতে ডারউইনকে ভূগোলবিদ্যার নতুন আবিষ্কারগুলোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে।
হিউয়েন সাঙ ১৪ বছর ধরে ভারত ভ্রমণ শেষে যা সাথে নিয়েছিলেন তার তালিকা নিম্নরূপ:-
· গৌতম বুদ্ধের দেহভষ্ম – ৫০০ গ্রেন
· স্বচ্ছ স্তম্ভের উপর বসানো সোনার বুদ্ধমূর্তি – ২টি
· স্বচ্ছ বেদীর উপর বসানো রূপার তৈরি বুদ্ধমূর্তি – ১টি
· স্বচ্ছ বেদীর উপর থাকা চন্দন কাঠের তৈরি বুদ্ধমূর্তি – ৩টি
· মহাযান শাখার ১২৪টি সূত্রের পুঁথি এবং
· ৫২০ বোঝা বিভিন্ন শাস্ত্রের গ্রন্থ (বয়ে নিয়ে যেতে ২২টি ঘোড়া লেগেছিল)।
আর পাঁচ বৎসর ধরে সমুদ্রপথে দক্ষিণ পৃথিবী ঘুরে ডারউইন নিয়ে এসেছিলেন:
· তার প্রাণিবিজ্ঞান বিষয়ক নিজস্ব ভাবনাচিন্তার বর্ণনা- ৩৬৮ পৃষ্ঠা
· ব্যক্তিগত ডায়রি (১টি)- ৭৭০ পৃষ্ঠা
· অ্যালকোহলের বোতলে সংরক্ষিত ১,৫২৯টি প্রজাতির নমুনা
· শুকনো নমুনা-৩,৯০৭টি
· গ্যালাপাগোস দ্বীপ থেকে ধরে আনা ৩টি জীবন্ত কচ্ছপ
এই বিপুল পরিমাণ তথ্যভান্ডারকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা অল্প সময়ের কাজ নয়। সমসাময়িক সময়ের সামাজিক পরিবেশ ছিল পুরনোবাদী, পশ্চাদমুখী। নতুন তথ্য, নতুন মন্তব্য গ্রহণ করার মতো উপযোগী নয়। এছাড়া আশৈশব লালিত সংস্কার ভেঙে দেওয়াও সহজ নয়। ডারউইনের নিজের মনের প্রশ্নগুলোর উত্তর আগে পেতে হয়েছে। নিজের কাছে বিশ্লেষণে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তটিকে গ্রহণযোগ্য হতে হয়েছে। হেনস্লো লায়েলের “ভূবিদ্যার মূলমন্ত্র” বইটির প্রথম খণ্ড ডারউইনের কাছে পাঠানোর সাথে সাথে বলে দিয়েছিলেন যেন এই বইয়ের বক্তব্য তিনি বিশ্বাস না করেন। হেনস্লো নিজেও লায়েলের সিদ্ধান্তকে অতোটা গ্রহণযোগ্য মনে করেননা। কিন্তু ডারউইন নিজে যা সংগ্রহ করেছেন, তার সংগ্রহগুলি যে সমাধানকে সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করে তাকে প্রমাণ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না। পরবর্তীতে ডারউইন লায়েলের বক্তব্যকে শুধু বিশ্বাস করেননি, তার ত্রুটিগুলোকেও সংশোধন করে দিয়েছেন।
লায়েলের হাতে আসলে ডারউইনের মতো অতো বেশি তথ্য প্রমাণ ছিল না। তার চিন্তার পথ ক্রমবিকাশের পথেই ছিল। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ অনুযায়ী প্রজাতির উৎপত্তির বৈচিত্র্য তিনি দেখেননি। তাই প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ বিষয়ে তিনি সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারলেও প্রজাতির উৎপত্তির কারণ তিনি জানতেন না। লায়েল বলেছেন প্রজাতির বিকাশের কালে কোন একটি প্রজাতি যদি প্রাকৃতিক কোন কারণে বিলুপ্ত হয়ে যায়, তাহলে সেই শূন্যস্থান ফাঁকা থাকে না। কাছাকাছি প্রজাতির প্রাণী এসে সেই শূন্যস্থানটিকে পূরণ করে ফেলে। প্রাকৃতিক প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযোজিত হয়। লায়েল জীবনের জালের (Web of lifes) এই শূন্যস্থান দেখতে পাননি। কিন্তু গালাপাগোস দ্বীপে ডারউইন প্রকৃতির সেই শূন্যতাকে দেখতে পেরেছিলেন।
পচিশ বৎসর বয়সের প্রাণীবিদ লায়েলের অনুসারী এডওয়ার্ড ব্লাইথ (Edward Blyth) এর একটি লেখা ১৮৩৫ সালের Magazine of Natural History পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়। তিনি প্রথমদিকে ভেবেছিলেন ‘বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শক্তিমানের বেঁচে থাকাটা নিয়তি নির্দিষ্ট।‘ কিন্তু পরে নিজের মনেই একটি প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। প্রশ্নটি করে তিনি নিজেই চমকে গিয়েছিলেন, ডারউইনও তার ভাবনাকে নতুন প্রশ্নের আলোকে খুঁটিয়ে দেখতে পেরেছিলেন। ব্লাইথ বলেছিলেন “মানুষ বিভিন্ন গৃহপালিত প্রজাতিকে তাদের নিজস্ব বাসস্থান থেকে সরিয়ে শারীরিক গঠন ও অভিযোজন বদলে দিতে পারে। তাহলে বন্যপ্রকৃতির পরিবেশে অনুরূপ কারণেই, কয়েক প্রজন্ম পরে বিশেষ পার্থক্যের সৃষ্টি হবে না কেন?” ডারউইন বুঝতে পেরেছিলেন যে প্রশ্নটি বেশ পরিষ্কার। মানুষ যেহেতু গৃহপালিত প্রাণী ও উদ্ভিদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে বদলাতে পেরেছে, তাহলে প্রাকৃতিক পরিবেশে তা কেন হবে না?
নিভৃত গ্রামে বসে চিন্তা করতে করতে ডারউইন বুঝতে পেরেছিলেন যে জীবাশ্মবিদ্যা তার মতের স্বপক্ষে অনেক প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী সহ সকল প্রজাতির প্রানীর জীবনচক্রের ধারাবাহিকতা জীবাশ্মবিদ্যাই স্পষ্ট করেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিমাণের ফসিল সংগ্রহ করা দুষ্কর। এছাড়াও কালপরিক্রমা ধারাবাহিকতা অনযায়ী সবকটি ফসিল এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে উপস্থাপিত তত্ত্বে বেশ কিছু দুর্বলতা থেকে যায়। এই দুর্বলতা ঢাকতে তিনি শারীরবিদ্যা ও ভ্রূণবিদ্যার সাহায্য নিয়েছেন। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে কঙ্কালের কাঠামোয় অনেক মিল আছে। বাদুড়, কচ্ছপ, ঘোড়া, পাখি, মানুষ ইত্যাদি প্রাণীর হাতের কাঠামো প্রাণীভেদে বিভিন্নরকম কাজ করলেও তাদের গড়ন মোটেও ভিন্ন নয়। লক্ষ লক্ষ বৎসর পরিক্রমায় এই পরিবর্তন প্রাণীর বেঁচে থাকবার আয়োজনকে মিটিয়েছে। ভ্রূণবিদ্যার মাধ্যমে ডারউইন এক অদ্ভূত বিষয় প্রত্যক্ষ করলেন। তিনি দেখলেন সব মেরুদণ্ডী প্রাণীর ভ্রণবিকাশের সময় প্রথম পর্যায়ের গঠনরূপ প্রায় একই রকম থাকে। হাঙর, তিমি, হাতি, পাখি, বাদুড়, মানুষ, গরু, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণীর ভ্রণের প্রাথমিক চেহারায় এক আশ্চর্যরকমের মিল রয়েছে। ভ্রূণের বয়স যতো বাড়তে থাকে পার্থক্য ততোই দৃশ্যমান হয়। যে প্রাণীদের মধ্যে প্রজাতিগত মিল রয়েছে, তাদের ভ্রূণের সাদৃশ্য ততো বেশি সময় পর্যন্ত থাকে। হাঙর মানুষের দূরতম সম্পর্কীয় তাই শুধুমাত্র ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থায় সাদৃশ্য চোখে পরে। কিন্তু বানরের সাথে প্রজাতিগত মিল বেশি রয়েছে বলে ভ্রণের চেহারায় সাদৃশ্য বহুদিন পর্যন্ত দেখা যায়। অধঃপতন নয় বিকাশই যে প্রাণীর উৎপত্তির কারণ, তা বুঝতে ডারউইনের বেশি অসুবিধা হয়নি।
ডারউইন যে বৎসর গ্রামে চলে যান, তার পরের বৎসরে গবেষণার একটি খসড়া পাণ্ডুলিপি দাঁড় করান। তারও দুই বৎসর পর একটি পরিবর্ধিত ভাষ্য অন্তরঙ্গ বন্ধু হুকারকে পড়তে দেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে লেখাটি তখন প্রকাশ করেননি। ১৮৫৮ সালে আর একজন উৎসাহী গবেষক আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (Alfred Russel Wallace, ১৮২৩-১৯১৩) নিজস্ব তথ্যপ্রমাণ ঘেঁটে প্রায় একইরকম মতবাদ প্রকাশ করেন। ডারউইন নতুন বিজ্ঞানীকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য নিজের লেখা পাণ্ডুলিপিগুলিকে পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বন্ধু হুকার ও লায়েল তাকে আস্বস্থ করেছিলেন। নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ওয়ালেস ও ডারউইন উভয়ের বক্তব্য একসঙ্গে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করেন। ১৮৫৮ সালের ১ জুলাই তারিখে তারা দুজনে লিলিয়ান সোসাইটির মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজ নিজ মতবাদ প্রকাশ করেন। এই স্মরণীয় তারিখটিতে ডারউইন ও ওয়ালেস প্রাণীদের বিকাশ সম্পর্কে যে তথ্য ও ধারণা প্রকাশ করেন, তাকে ততোটা উষ্ণতার সাথে বিজ্ঞানীরা স্বাগত জানাননি। কিন্তু ১৮৫৯ সালের ২৪ নভেম্বর যখন ডারউইনের ‘প্রজাতির উদ্ভব (Origin of Species)’ বইটি প্রকাশিত হল, তখন প্রথম দিনই তার সব কপি বিক্রি হয়ে যায়।
ওয়ালেসের প্রবন্ধটির নাম ছিল “আদি জাতিরূপের বিভিন্ন প্রকারে বদলে যাওয়ার দিকে লাগাতার প্রবণতা” (On the Tendency of Varieties to Depart Indefinitely from the Original Type)। এই বইতে ওয়ালেস ধারাবাহিকভাবে প্রাণীবৃদ্ধির হার, খাদ্যের সরবরাহের উপরে গড়সংখ্যক প্রাণদের নির্ভরতা, বাঁচার লড়াই ইত্যাদির কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন কোন প্রজাতির একটিমাত্র প্রাণী যদি সুস্বাস্থ্য ও শক্তিশালী হয়, তাহলে সে ও তার মতো অন্য শক্তিশালীরা জন্মানুক্রমে উন্নতমানের ভবিষ্যৎপ্রজন্মের জন্ম দেবে। যারা দুর্বল ও শক্তিহীন তারা প্রকৃতির লড়াইয়ে টিকে থাকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ওয়ালেস তার মতবাদে বলেছেন, উন্নতমানের প্রাণীরাই নতুন প্রজাতির উৎস। ডারউইনের মতো একই তত্ত্ব আবিষ্কার করার পরেও ওয়ালেস তার সাথে কোনরকম বিতর্কে যাননি। বরং ‘ডারউইনিজম’ শব্দবন্ধের জন্ম দিয়ে মহত্ত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
বলা হয়ে থাকে যে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিনয় ও ভদ্রতার কারণেই ডারউইন তার মতবাদ প্রকাশের আগে বিশ বৎসরের মতো সময় নিয়েছিলেন। ব্রাজিল ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোতে ভ্রমণকালীন সময়ে তিনি প্রকৃতির নির্বাচনের ও বিনির্মাণের বাস্তব চিত্র দেখতে পেয়েছিলেন। বাকী পৃথিবী ভ্রমণ করতে গিয়ে তিনি বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে আরও বেশি প্রমাণ সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু আরও বেশি প্রমাণ তার প্রয়োজন ছিল। শুধুমাত্র বিনয় নয়, নিজের আবিষ্কারকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর জন্য তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা থেকে তথ্য উপাত্তের জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। এই অপেক্ষা তার মতবাদকে শক্তি যুগিয়েছে, তত্ত্বের বিভিন্ন ভ্রান্তিগুলোকে সংশোধন করেছে।
ডারউইনের মতকে পরবর্তীকালে আরও শক্তি যুগিয়েছে কোষবিজ্ঞান, মেণ্ডেলের বংশগতিবিদ্যার সূত্র, জীবাণুবিজ্ঞান, জৈবরসায়ন, পদার্থবিজ্ঞানসহ বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা। ডিএনএ সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান, নৃতত্ত্বের ধারাবাহিক ইতিহাস ডারউইনিজমকে বিকশিত হতে সাহায্য করেছে। তারপরও যতদিন পর্যন্ত না মাদাম কুরি তেজস্ক্রিয় পদার্থ আবিষ্কার করেননি, ততোদিন পর্যন্ত পৃথিবীর সঠিক বয়স নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। ১৮৯৮ সালে তেজস্ক্রিয় কণার আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর বিভিন্নরকম শিলা ও জীবাশ্মের সঠিক বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। লক্ষ কোটি বৎসরের বিবর্তনকে বিশ্লেষণ করা সহজ হয়ে গেছে।
যুগে যুগে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার উন্নতি এবং নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার হবার ফলে ডারউইনিজম আরও বেশি প্রামাণ্য হয়ে উঠেছে। ডারউইন তার জীবনকালে অনেক সমস্যার সমাধান দেখে যেতে পারেননি। তার মনের গভীরে ভেসে ওঠা অনেক প্রশ্নের উত্তর খুজে পাননি। তিনি ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীদের হাতে তার তত্ত্ব প্রমাণের ভার ছেড়ে দিয়ে গেছেন। এখনও অনেক রকমের ফসিল আবিষ্কার করা যায়নি। আবার প্রত্যেক বৎসরে নিত্য নতুন প্রজাতির ফসিলের আবিষ্কার ডারউইনিজমকে ভিন্ন আলোয় নতুন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করে। ডারউইনিজম হয়ে উঠেছে মানুষ, প্রকৃতি ও প্রাণীজগতের উৎপত্তি ও বিকাশের একমাত্র যৌক্তিক বর্ণনা।
(এই নিবন্ধের দীর্ঘ নামের ধারণা নেয়া হয়েছে ডারউইনের সময়কালীন দীর্ঘ নাম রাখার প্রথা থেকে।)
so much inspire to read the article. congratulate for good article. thanks.
ভাল লাগল। অনেক তথ্য সহজভাষায় লেখা হয়েছে। তবে আরও বিশদভাবে তথ্যগুলো উপস্থাপিত হলে আরও ভাল হত।