যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই  

অভিজি রায়

 

 

আজ এখানে দাড়িয়ে এই রক্ত গোধূলিতে
অভিশাপ দিচ্ছি।
আমাদের বুকের ভেতর যারা ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ
দিয়েছিলো সেঁটে,
মগজের কোষে কোষে যারা
পুতেছিলো আমাদেরই আপনজনের লাশ
দগ্ধ, রক্তাপ্লুত,

 

যারা গনহত্যা
করেছে শহরে গ্রামে টিলায় নদীতে ক্ষেত ও খামারে
আমি অভিশাপ দিচ্ছি নেকড়ের চেয়েও অধিক
পশু সেই সব পশুদের।


ফায়ারিং স্কোয়াডে ওদের
সারিবদ্ধ দাঁড়
করিয়ে নিমিষে ঝা ঝা বুলেটের বৃষ্টি
ঝরালেই সব চুকে বুকে যাবে তা আমি মানি না।


হত্যাকে উতসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে
ক্যাম্পাসে বাজারে
বিষাক্ত গ্যাসের মতো মৃত্যুর বীভ
স গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে,
আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না
কামনা।


আমাকে করেছে বাধ্য যারা
আমার জনক জননীর রক্তে পা ডুবিয়ে দ্রুত
সিড়ি ভেঙ্গে যেতে

ভা
সতে নদীতে আর বনবাদাড়ে শয্যা পেতে নিতে
অভিশাপ দিচ্ছি আজ সেই খানে দজ্জালদের।

– অভিশাপ দিচ্ছি
শামসুর রাহমান

 

যা বলার শিরোনামেই বলে দেয়া হয়েছে।  এ নিয়ে আর অনর্থক বাক্য ব্যয় বাহুল্যমাত্র।  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী দেশে বিদেশে আজ প্রত্যাশাকে অতিক্রম করে গেছে। অনর্থক কালক্ষেপণ না করে একশনে যাবার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়।  শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর থেকে আজ পর্যন্ত সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এ জনদাবী এমন পূর্ণতা পায়নি, এমন বিধ্বংসী হয়ে ওঠেনি।  আমরা এ কয়দিনে মুক্তমনায় প্রচুর লেখা পেয়েছি।   এম এম আর জালাল পাঠিয়েছেন জুলফিকার আলী মানিকের প্রবন্ধ – দ্য ট্রায়াল উই আর ওয়েটিং ফর (‘The Trial We are Waiting For‘)।  হোসাইন কবির লিখেছেন, গণমানুষের সরকার ও যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশের প্রত্যাশ। হাসান মোরশেদ লিখেছেন – গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষনা: জামাত এবার নিজেকে বাঁচাবে কি করে?  হাসান মোরশেদের লেখাটি থেকে কিছু চুম্বক অংশ –
 

৯ডিসেম্বর ১৯৪৮ জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের অধিবেশনে CONVENTION ON THE PREVENTION AND PUNISHMENT OF THE CRIME OF GENOCIDE নামে একটি রেজুলেশন পাশ হয় । লিংক আছে এখানেঃ-
গনহত্যা সংক্রান্ত জাতিসংঘ ঘোষনা

রেজুলেশনের ২৬০(৩) ধারার অনুচ্ছেদ ২ এ নির্ধারন করা হয়েছে , শুধু হত্যা নয় আরো কিছু অপরাধ গনহত্যা হিসেবে গন্য হবে —

১।পরিকল্পিত ভাবে একটি জাতি বা গোষ্ঠিকে নির্মুল করার জন্য
তাদের সদস্যদেরকে হত্যা বা নিশ্চিহ্নকরন
২।একই উদ্দেশ্যে শারীরিক বা মানসিক ক্ষতিসাধন
৩।একটি জাতি বা গোষ্ঠিকে নির্মুল করার উদ্দেশে এমন পরিবেশ
সৃষ্টি করা যাতে তারা সম্পুর্ন বা আংশিক ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে
যায়
৪।এমন পরিবেশ তৈরী করা যাতে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর
জীবনধারন কষ্টসাধ্য , সেই সংগে জন্মপ্রতিরোধ করে জীবনের
চাকা থামিয়ে দেয়া হয়
৫।একটি জাতি বা গোষ্ঠি শিশু সদস্যদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে
তাদের জন্ম পরিচয় ও জাতিস্বত্বা মুছে ফেলা ।

গনহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারনের পর ধারা ৩ এ গনহত্যা সংশ্লিষ্ট অপরাধ সমুহ ও চিহ্নিত করা হয়েছে

১। গনহত্যা চালানো
২।গনহত্যা চালানোর ষড়যন্ত্র/পরিকল্পনা করা
৩। প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে গনহত্যা উস্কে দেয়া
৪।গনহত্যা চালানোর চেষ্টা করা
৫।গনহত্যায় যে কোন প্রকারে সহযোগী হওয়া ও সমর্থন করা

ধারা ৩ এর পর ধারা ৪ এ বলা হয়েছে–
উপরোক্ত যে কোনো একটি অপরাধেই, অপরাধী যুদ্বাপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে- তা সে সাংবিধানিক সরকার, সরকারের আজ্ঞাবাহী কর্মচারী, কোন দল কিংবা একক কোনো ব্যক্তি ই হোক ।

ধারা ৭ এ আবার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে –
ধারা ৩ এ বর্নিত অপরাধ সমুহ কোনো ভাবেই রাজনৈতিক অপরাধ বলে গন্য হবেনা ।


বাকী সব কিছু বাদ দিচ্ছি, ধারা ৩ এর ৫ নম্বর উপধারা কি বলে? গনহত্যায় সহযোগীতা করা কিংবা যে কোনো ভাবে সমর্থন জানানো ও যুদ্ধাপরাধ ।

২৫ শে মার্চ রাত থেকে বাংলাদেশে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি কাজ করছিল? পাকিস্তান সেনাবাহিনী কি গনহত্যা চালাচ্ছিলোনা? ২৫ শে মার্চ রাতে শুধু মাত্র ঢাকাতেই কয় হাজার বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিলো পাকবাহিনী?

২৫ শে মার্চের পর থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে কারা পাকবাহিনীকে সমর্থন জানিয়েছিলো? পাকবাহিনীকে সমর্থন জানিয়ে গোলাম আজম-নিজামীদের শত শত বিবৃতি আছে । ১৯৭১ এর মে মাসে খুলনায় জামায়াতের ৯৬ সদস্য নিয়ে যে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় সেপ্টেম্বরের ৭ তারিখে সেই বাহিনী টিক্কা খানের সামরিক অধ্যাদেশ বলে নিয়মিত বাহিনীর সহযোগী হিসেবে নথিবদ্ধ হয় । এরা সেনাবাহিনীর মতোই বেতনভুক্ত ছিলো । রাজাকার ছাড়া আলবদর ও আলশামস নামে বাহিনীগুলো গঠিত হয় এগুলোর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে কারা ছিলো?
রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী তৈরী হয়েছিলো পাকবাহিনীর সহযোগীতা করার জন্য । পাকবাহিনী নয় মাস জুড়ে গনহত্যা চালিয়েছিলো । সুতরাং পাকবাহিনী যদি গনহত্যার জন্য দায়ী হয় তাহলে এদের সহযোগী বাহিনী সমুহ এবং এইসব বাহিনীতে যুক্ত জামাতের নেতৃবৃন্দ সেই দায় এড়াবে কি করে?

দায় এড়াতে হলে তাদেরকে প্রমান করতে হবে- যে ২৫ মার্চ রাত থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিকৃত ভুখন্ডে পাকিস্তান আর্মি কোন গনহত্যা চালায়নি । সংখ্যাটা ৩০ লক্ষ না হয়ে ৩০ হাজার কিংবা ৩ হাজার ও যদি হয়- সেটা গনহত্যা হবে,গনহত্যা হলে যুদ্ধাপরাধ হবে,যুদ্ধাপরাধ হলে পাকিস্তান আর্মি ও তার সহযোগী ও সমর্থক জামাত ও যুদ্ধাপরাধী বলেই বিবেচিত হবে ।


এবার দেখা যাক, নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য জামায়াত যে সব যুক্তি দেখায় সেগুলোর অসারতাঃ

 

১। জামায়াত ইদানিং বলছে, শেখ মুজিব যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ১৯৫ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে হস্তান্তর করেছিলেন শিমলা চুক্তির আওতায় । সুতরাং ঐ ১৯৫ জন্য ছাড়া আর কেউ যুদ্ধাপরাধী নয় ।

হাস্যকর যুক্তি । ঐ ১৯৫জন পাকিস্তানী সৈন্য এতোবড় হত্যাকান্ড ঘটিয়েছিলো? ১৬ ডিসেম্বরে আত্নসমর্পন করা ৯৩,০০০ পাক আর্মি তাহলে নির্দোষ ছিলো?

বস্তুতঃ এই ১৯৫ ছিলো একটা স্মারক সংখ্যা মাত্র । ১৬ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তান সরকার তার সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নিলেও রাজাকার আল বদরদের ফিরিয়ে নেয়ার কোন চুক্তি হয়নি । সুতরাং ঐ চুক্তির আশ্রয়ে জামাতীদের বাঁচার সুযোগ নেই ।

এখানে আরো বলা যেতে পারে, শেখ মুজিবের সকল সিদ্ধান্তই ধ্রুবক নয় । শেখ মুজিব যদি দালালদের ক্ষমা করেও থাকেন তাহলে ও সেই সিদ্ধান্ত বাতিল হতে পারে, কারন ধর্মনিরপেক্ষতা,সমাজতন্ত্র,বাকশালের মতো সিদ্ধান্ত যদি বাতিল হতে পারে তাহলে দালাল সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাতিল হতে আপত্তি কেনো?
যে শেখ মুজিবের রাজনীতির চরম বিরোধী জামাত,নিজেদের জান বাঁচানোর সেই শেখ মুজিবের দোহাই দেয়া জামাতী রাজনীতির দৈন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয় ।

২। জামাতীরা বলে, তারা যদি আসলেই অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে গত ৩৬ বছরে কেনো কেউ তাদের বিচার করলোনা? এই বিচার না করাই নাকি তাদের নিরপরাধের প্রমান?

বিচার না হলেই কি অপরাধি নির্দোষ প্রমানিত হয়ে যায়? পৃথিবীতে বহু হত্যা,বহু অপ্রাধের বিচার হয়নি । কারবালার মর্মান্তিক হত্যাকান্ড ঘটালো যে ইয়াজিদ তার ও তো বিচার হয়নি,বিচার হয়নি চেংগিস,হালাকু খানদের,বিচার হয়নি জালিওয়ানোয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের । এইসব বিচার না হওয়ার পেছনে অনেক রাজনীতি আছে । বিচার হয়নি বলেই ইতিহাস ইয়াজিদকে নির্দোষ ঘোষনা করেনি,বিচার হয়নি বলেই জামাতীরা নিজেদের নির্দোষ দাবী করতে পারেনা ।

৩। গোলাম আজমের নাগরিকত্ব মামলার রায়কে উদাহরন হিসেবে টেনে জামাতীরা নিজদের নির্দোষ প্রমান করতে চায়

জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকার আইন অনুযায়ী(ধারা ১৩) জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব বাতিল কিংবা কাউকে জোর করে দেশ থেকে বের করে দেয়া বা দেশে ঢুকতে বাধা দেয়া যায়না । আদালতের রায়ে গোলাম আজম নাগরিকত্ব পেয়েছে কারন মামলা ছিলো নাগরিকত্বের,যুদ্ধাপরাধের নয় । এই মামলার রায় কোনভাবেই প্রমান করে না যে সে যুদ্ধাপরাধী নয় । বরং এই মামলার রায় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচার করাকে আরো সহজতর করেছে ,কারন এখন সে বাংলাদেশের নাগরিক । বাংলাদেশ রাষ্ট্র চাইলেই তার নাগরিকের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিচার কার্য সমাপদন করতে পারে -এর জন্য কোন কুটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই ।

 

 

শুধু বাঙ্গালী জাতির ইতিহাসে নয়, সারা মানব জাতির ইতিহাসেই সবচেয়ে নৃশংস এবং সংখ্যার হিসেবে সর্বাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে আমাদের মুক্তযুদ্ধের নয় মাসে।  ১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরেরা ত্রিশ লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে, ২ লক্ষ নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে, দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে ১ কোটি বিপন্ন মানুষকে।  স্বাধীনতার এই আটত্রিশ বছর পরেও পাকিস্তান তাদের কৃতকর্মের জন্য কোন সরকারের কাছে ক্ষমা চায়নি, (যদিও ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ত্রিপক্ষীয় এক আলোচনায় পাকিস্তান নিজেই এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, ’৭১-এর বর্বরতার জন্য বাংলাদেশের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে তারা)।  ক্ষমা তো চায়ইনি, ‘সূর্যের চেয়ে বালি গরম’ এই উপমার সার্থকতা প্রমাণ করে কিছুদিন আগেও জামায়াত নেতা মুজাহিদ, আব্দুল কাদের মোল্লা আর আমলা শাহ আব্দুল হান্নান হেরে গলায় চীকার করে উঠেছিল – একাত্তুরে নাকি  যুদ্ধাপরাধের মত কোন ঘটনা ঘটেনি। বেনামী এক জামাতী মুক্তিযোদ্ধা সংগঠণ দাঁড় করিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলী আমানের পেছনে লাথি কষিয়েছিলো এই বীর পুঙ্গবেরা। সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আজ তাদের কৃতকর্মের ঋণ কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দেবার সময় এসেছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতা চেয়েছেন শেখ হাসিনা । জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ইয়ান মার্টিন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া আওয়ামী লীগ প্রধানের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে শেখ হাসিনা এই সহযোগিতা চান (সূত্রঃ প্রথম আলো)।  তবে আমরা চাইনা সরকার শুধু শুধু জাতিসঙ্ঘের মুখ চেয়ে সরকার বসে থাকুক, আমরা চাই রাষ্ট্র নিজে বাদী হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচার করুক। বিশেষ ট্রাইবুনালে ঘাতক দালালদের বিচার হোক।

কাজ শুরু হয়ে গেছে এর মধ্যেই। নিজ উদ্যোগে  উদ্যমী ছেলেপিলেরা নিজেদের গাঁটের পয়সা খরচ করে পোস্টার আর স্টিকার বানাচ্ছে, লাগিয়ে দিচ্ছে ল্যাম্পোস্টে, দেওয়ালে, রিক্সার পেছেনে, চায়ের স্টলে- (পড়ুন সচলায়তনে এনকিদুর লেখা – স্টিকার : শুরু হয়েছে মাত্র)

কেউবা আবার গণসাক্ষর অভিযানে নেমেছেন। নিজেরাই প্যাড বানিয়ে চলে যাচ্ছেন মাঠে, ময়দানে, রেস্তরায় আর জনসমাবেশে। জেঁকে ধরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সাক্ষর সংগ্রহ করছেন জণগণের (পড়ুন আমার ব্লগে মাহমুদুল হাসানের লেখা – যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর : আগ্রহী ব্লগারদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি… )।

 

কেউ বা আঁকছে কার্টুন

(ছবিঃ সৌজন্যে সচলায়তন, এবং আমার ব্লগ)

এ এক অভূতপূর্ব গণজাগরণ। এ এক নতুন উদ্দীপ্ত তরুন সমাজ। যে তরুণ সমাজকে আগে বিশেষিত করা হত – মুক্তিযূদ্ধ সম্বন্ধে অজ্ঞ, গাজা ভাং চরশ খেয়ে পড়ে থাকা নষ্টগ্রুপ হিসেবে, যারা দিনে শুধু টাংকিবাজি মারে আর রাতে দেখে পর্নো সাইট, সেই বিশেষণের বৃত্ত ভেঙ্গে বেরুনো তরুণ সমাজ আজ ঐক্যবদ্ধ। তাদের সকলের প্রতীজ্ঞা একটাই – এইবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতেই হবে।  এবারের নির্বাচনে জামাত-শিবির গং দের ভরাডুবীর পেছনেও ছিলো এই তরুণ সমাজ; শুধু ভরাডুবী ঘটিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, ভার্চুয়াল পরিচয় থেকে সামনে এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে সমাবেশ করেছে; দু হাত তুলে প্রতীজ্ঞা করেছে  যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে ছাড়ব এবার – হয় এবার,  নয় নেভার!  বাস্তবিকই তারা পূর্ণতা দিতে চলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচীকে, মহান একুশে ফেব্রুয়ারীর আগেই

 

২০০১ সালে আমি যখন উদ্যোগ নিয়ে মুক্তমনার মত সাইট গড়ে তুলেছিলাম মুক্তবুদ্ধি আর মুক্তিযূদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেবার মানসে, তখন আক্ষরিক অর্থেই ইন্টারনেটে এগুলোর স্বপক্ষে এত দলিল-প্রমাণ ছিলো না।  ত্রিশ লক্ষ লোকের শহীদের সংখ্যা নিয়ে জামাতীরা সহজেই জল ঘোলা করতে পারত, কিংবা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে করতে পারত নানা ব্যঙ্গ-রসিকতা। The Mathematics of a Genocide  কিংবা Homage to my martyr colleagues এর মত প্রবন্ধের পর জামাতীদের পক্ষে আর তা সম্ভব হয়না।  সম্ভব হয় না এম এম আর জালালের মহামূল্যবান ‘রোড টু সেভেন্টিওয়ান’ সিরিজের আবির্ভাবের পর।  তারপরও প্রবন্ধগুলো সাইটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। সময়ের অভাবে য়ামার পক্ষে একত্রিত করা সম্ভব হয়ে উঠছিলো না মোটেই। আমার সহকর্মী জাহেদ একসময় থাকতে না পেরে নিজের উদ্যোগেই প্রবন্ধগুলো একত্রিত করে গড়ে তুলে মুক্তমনা মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ।  তারপর থেকে এ আর্কাইভের লেখাগুলো ছড়িয়ে পড়লো বিভিন্ন সাইটে।  প্রথম আলো সহ অনেক পত্রিকায় আর্কাইভের চমকার কিছু রিভিউ হলো।  আজ আমার গর্ব হয় এই দেখে যে কীন ইউনিভার্সিটি থেকে কনফারেন্সের ব্যাপারে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়;  genocidebangladesh.org সহ বহু সাইট আমাদের এই মুক্তমনা আর্কাইভের প্রবন্ধগুলো প্রামান্য দলিল হিসেবে নিজেদের সাইটে ব্যবহার করে।  এ ব্যাপারগুলো একদিনে গড়ে ওঠেনি। এর পেছনে রয়েছে আমাদের দীর্ঘদিনের লড়াকু মনোভাব, স্পৃহা, শ্রম আর সদিচ্ছা। আর সেজন্যই মুক্তমনা তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একসময় পেয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক, যা আর কোন ইন্টারনেট ফোরাম বা সাইট এখনো অর্জন করতে পারেনি। 

আজ মুক্তমনার দায়িত্ব হয়েছে তার কর্মসূচীকে আরো বিস্তৃত করার। আমি ব্লগারদের গণসাক্ষর কর্মসূচীর ক্যাম্পেইনের পুরোধাদের কাছ থেকে ([email protected]) গতকাল একটি ইমেইল পেয়েছি। ইমেইলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য তাদের গণসাক্ষর অভিযানের সাথে সংহতি প্রকাশ করার আহবান জানানো হয়েছে  এই বলে –

‘Few bloggers of different bangla blog platform have recently started a signature collection campaign demanding punishment of war criminals. Objective of the campaign is to remain active with the demand. Other than individual effort, the campaign is being carried out in fair, mall, institutes and other areas. Bangla bloggers community is actively participating in those events. The petition form is attached herewith. Physical signature on the form may have a great impact in communicating views to others and preservation as evidence of demand. If you have any website under your control, you can put a copy of the form there and request your viewers to enroll in the campaign by signing and sending hardcopy to the given address. The more people will be concerned, the more we will be ahead towards the goal. Please forward the mail to your contact list. Please print the form and try to collect signature as much as possible and post it to the written address of the form by 21st February’2009

 

আমি তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এই ক্যাম্পেইনের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। আমি মুক্তমনার সকল সসস্যদের অনুরোধ করছি নীচের লিঙ্ক থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে নিন, প্রিন্ট করুন এবং ২১ এ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ডাক বা বাহকযোগে কিংবদন্তীর ঠিকানায় (আজিজ সুপার মার্কেটের ঠিকানা, যা ফর্মে দেয়া আছে) পাঠিয়ে দিন।  নিজে সাক্ষর করুন, অপরকেও সাক্ষর করতে উদ্বুদ্ধ করুন।

পিটিশন ফরম ডাউনলোড

পিডিএফ ফাইল খুলতে কারো অসুবিধা হলে মুক্তমনায় রাখা এই জেপেগ ফাইল থেকে ফর্মটি ডাউনলোড করা যাবে। ডাউনলোড করে নিজে সহ অন্যদের সাক্ষর নিয়ে কিংবদন্তীর ঠিকানায় পাঠিয়ে দিন। শুধু সাক্ষর নয়, আপনারা ছড়িয়ে পড়ুন বাংলার পথে প্রান্তরে। পোস্টার আর স্টিকারে দেওয়াল, বাড়ি, ল্যাম্পোস্ট, টুল টেবিল সয়লাব করে দিন। সয়লাব করে দিন, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। সয়লাব করে নিন রেস্তরা, চায়ের স্টল আর সুপার মার্কেট। সয়লাব করে দিন ট্রাম, বাস, রিক্সা, ঠেলাগাড়ি আর সাইকেল।   থাকবে একটাই দাবী –

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই!

প্রতীকী হলেও অন্ততঃ একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার আমি মৃত্যুর আগে দেখে যেতে চাই।  একাত্তর পরবর্তী আমাদের এই স্পর্ধিত প্রজন্মই পারবে আপোষকামী সরকারের চোখ খুলে দিতে, পারবে ঘাতক দালালদের গলায় দড়ি পরাতে – পুনর্বার।

 

আপডেট:

আপনাদের সাক্ষর করার জন্য কয়েকটি অন-লাইন পিটিশন


. অভিজি রায়, মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক; ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ ও ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজগ্রন্থের লেখক সর্বশেষ প্রকাশিত সম্পাদিত গ্রন্থ – ‘স্বতন্ত্র ভাবনা’। সম্প্রতি বিজ্ঞান ও ধর্ম : সংঘাত নাকি সমন্বয়? শীর্ষক গ্রন্থ সম্পাদনার কাজে নিয়োজিত।  ইমেইল : [email protected]