‘সুজন’ সভাপতি দুর্জনের ভূমিকায়ঃ এত নৈতিকতা কোথায় রাখি?
সমরেশ বৈদ্য
অনেক ত্যাগ, সংগ্রামের পর গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৯ বাংলাদেশের নাগরিকরা নির্বিঘেœ নির্ভয়ে তাদের অন্যতম নাগরিক অধিকার অর্থাৎ নিজেদের পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার অধিকার ফিরে পেয়েছে। সুযোগ নয়, দেশি-বিদেশি অধিকাংশ সংগঠন ও মানুষের কাছে নির্বাচনটি হয়েছে নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট তিন চতুর্থাংশের চেয়ে বেশি আসন পেয়ে জয়ী হয়েছে এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। এর মধ্যে প্রধান ২ জোট নেত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তারেক-কোকো’র মা বেগম খালেদা জিয়ার নামেও মামলা রয়েছে। মামলাগুলো উচ্চতর আদালতে বিচারাধীন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যে সব মামলা দায়ের করা হয়েছিল এই দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে সেসব বাদীপক্ষ মামলা প্রত্যাহারের আবেদনও করেছেন ইতোমধ্যে। রাজনীতি করলে মামলা-হামলা থাকবেই এতেই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা অভ্যস্ত। কিন্তু প্রসঙ্গ অন্যত্র।
গত বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন গণ্যমান্য বুদ্ধিদীপ্ত সম্মানিত ব্যক্তিদের বেশ কয়েকটি ফোরাম কাজ করছে। আমরা অতি ক্ষুদ্র, সাধারণ অল্প শিক্ষিত নাগরিকরা তাদেরকে ‘সুশীল সমাজ’ বা ‘সিভিল সোসাইটি’ বলেই জানি। এই সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের মধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাবেক আমলা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, নারী নেত্রী, এনজিও কর্মকর্তা, পুলিশ, বিডিআর ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাও রয়েছেন। অর্থাৎ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। দেশ ও জাতির বিভিন্ন সংকটে এই ‘সুশীল সমাজ’ নানা সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, বিবৃতি ও উপদেশ দিয়ে থাকেন। দেশ-জাতি তাতে উপকৃত কতটুকু হয়েছে তা এদেশের সাধারণ মানুষই ভালো বলতে পারবেন।
দেশে সুশাসন কে না চায়? সবাই চায় দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ক্ষুধা, দারিদ্র্য; অশিক্ষামুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের। সেই সাথে অবশ্যই ধর্মনিরপেক্ষ ও রাজাকার-যুদ্ধাপরাধীমুক্ত বাংলাদেশÑ অল্প কিছু জনগোষ্ঠী ছাড়া। এই সুশাসনকে নিশ্চিত করার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে ‘সুজন’ অর্থাৎ ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ নামে একটি খ্যাতনামা সামাজিক সংগঠন। সাংগঠনিকভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই এদের কমিটি রয়েছে। সচেতনমূলক কাজের জন্য সংগঠনটি বেশ কিছু কাজ করছে। সমাজের বিশিষ্ট বিজ্ঞজনেরা রয়েছেন এই ‘সুজন’ এর সাথে। এর প্রধান নেতৃত্বে রয়েছেন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবাদী সংগঠক, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠন টিআইবি’র (ট্রান্সপারেন্সী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ) প্রধান শ্রদ্ধাভাজন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এই বয়সেও তিনি সমাজের বিভিন্ন অনিয়মের ব্যাপারে সোচ্চার কণ্ঠ হয়ে আমাদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। ভাবতেই ভালো লাগে বিষয়টি। সংসদ, রাজনীতি, দুর্নীতি, অর্থনীতি, পরিবেশ হেন কোন বিষয় নেই যে বিষয়ে ওঁনার পাণ্ডিত্ব নেই।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বাধীন ‘সুজন’ দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসের দায়ে অভিযুক্ত, ঋণখেলাপী, বিলখেলাপী, যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে এদেশের সাধারণ নাগরিকদের সোচ্চার ও সজাগ করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। এখনও করে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। নির্বাচনের পরেও ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দ সাংবাদিকদের কাছে বেশ কিছু তথ্য প্রকাশ করেছেন যাতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কার কার বিরুদ্ধে মামলা আছে, যুদ্ধাপরাধী কয়জন আছে ইত্যাদি। সম্ভবত: নির্বাচনের ২/৩ দিন পরেই অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক ‘টক শো’ তে বললেন… “যিনি আসামী তিনি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন?….. সর্বোচ্চ আদালত থেকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি নিয়ে শপথ নিন…” ইত্যাদি। তিনি যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে এসব মন্তব্য করেছেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এতে আইনের কোন বাধা নেই, অধ্যাপক মোজাফফর এক্ষেত্রে নৈতিকতার প্রশ্ন তুলেছেন। আমার শ্রবণেন্দ্রীয় যদি বিশ্বাসঘাতকতা না করে তাহলে বোধ হয় এ ধরনের তীর্যক মন্তব্য শুনেছিলাম আমি। সম্ভবত আমার মত আরো অনেক দর্শক শ্রোতাই এর সাক্ষী।
অপরদিকে ‘সুজন’ গত ১১ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে ‘গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল। এ ব্যাপারে সেদিন বেশ সুন্দর ও মূল্যবান বক্তব্য দিয়েছেন সেদিনের বৈঠকে উপস্থিত সজ্জন বিজ্ঞ নাগরিকবৃন্দ। সেই বৈঠকেই ‘সুজন’র সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ বললেন, “একটি দল তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি পেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়। তাই গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য এবং মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে নতুন ক্ষেত্র হিসেবে ‘জনতার সংসদ’ গড়ে তুলতে হবে।” (ভোরের কাগজ, ১২ জানু: ২০০৯)। গত ১২ জানুয়ারিতে বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকাতেই বা মিডিয়াতে প্রফেসর মোজাফফর আহমদের বক্তব্যটি প্রচারিত হয়েছে।
বেসরকারি চ্যানেলটিতে প্রথম যেদিন আমাদের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের বক্তব্য শুনছিলাম তখন ঠিক বুঝিনি যে আমি কি শুনেছি। আর গত ১২ জানুয়ারি পত্রিকাতে তাঁর বক্তব্য পড়েও বিষয়টি বোঝার ক্ষমতা হয়নি আমার মত নগণ্য সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি পারবেন না বা তাতে সত্যিকার অর্থে আইনগত বাধা আছে কিনা তার জবাব সেদিনই একজন খ্যাতনামা আইনজীবী আনিসুল হক ঐ বেসরকারি টেলিভিশনকে জানিয়েছেন। পরবর্তীতে দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিচারপতি গোলাম রব্বানী অত্যন্ত যৌক্তিকভাবে আমাদের পবিত্র সংবিধানের বাখ্যা দিয়ে একটি সুলিখিত অভিমত দিয়েছেন। তবে তিনি অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তি। কোন সংগঠনের প্রধানের নামোল্লেখ করেননি তাতে। এমনকি যেদিন টিভি টকশো’তে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শক শ্রোতারা তাদের কঠিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন ‘সুজন’ সভাপতির মন্তব্যের ব্যাপারে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে ক্ষুদ্র নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করি। অন্য অনেকের মত কথায়ও কাজে ‘কৌশলী’ হতে পারি নি। যা বলি সরাসরি বলতে আর লেখার চেষ্টা করি নগণ্য সামর্থে। তাতে অনেক বিপদও আছে। থাকিতো চট্টগ্রামে। যার নামের সাথে গ্রাম আছে। অর্থাৎ গ্রাম্য। গ্রামের সাধারণ মানুষ যেভাবে সরাসরি কথা বলে থাকেন কথিত ‘শহুরে’দের মত না ভেবেচিন্তে ঠিক তেমনি। এজন্য যদি ‘বেয়াদপি’ বা অসভ্য আচরণ হয়ে থাকে সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সম্ভবত ৪ দলীয় জোটনেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নবম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হচ্ছেন (লেখাটি যখন প্রকাশিত হবে তখন হয়ত তিনি তাই হয়ে যাবেন)। অর্থাৎ পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদাতো বটেই সংসদীয় রীতি-নীতি অনুযায়ী আরও অনেক মর্যাদার অধিকারী হবেন। তিনি গত ২ বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। শ্রদ্ধেয় ‘সুজন’ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের যুক্তিগত ও নৈতিক কারণে যদি মামলা থাকার জন্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ‘যোগ্য’ না হন তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কি সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হওয়ার ‘নৈতিক’ (অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এর ভাষায়) অধিকার রাখেন?
যতটুকু শুনেছি বন্দুকের নলের মুখে সামরিক উর্দি পরা জিয়াউর রহমান সরকারের সামরিক সরকারের আমলে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’ এর প্রধান কর্তাব্যক্তি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সম্ভবত: অর্থ উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। রাতের অন্ধকারে অস্ত্রের জোরে সামরিক পোষাক গায়ে দিয়ে যিনি ক্ষমতা দখল করেন অবৈধভাবে সেই জিয়াউর রহমানের ক্ষমতার অংশীদার হওয়া অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ সেদিন কি ‘নৈতিক’ কাজটি সম্পন্ন করার জন্যই সামরিক সরকারের উপদেষ্টার পদটি অলংকৃত করেছিলেন? সত্যিই জানতে বড় ইচ্ছে হয়। এদেশের জনগণ নিশ্চয়ই ভুলে যাননি যে, ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ও বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে যুগান্তকারি রায় দিয়েছেন। রায়ে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সামরিক শাসনকালে জারিকৃত সকল সামরিক ফরমান অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি বলে ঘোষণা করা হয়। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে যে সরকার ব্যবস্থাকে সরকারি শাসককে অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে রায় দেয়া হয়েছে সেই সরকারের প্রধান ব্যক্তি লেঃ জেনারেল জিয়াউর রহমানের সরকারের উপদেষ্টার পদ ‘অলংকৃত’ করা বর্তমান বাংলাদেশের ‘সুশীল সমাজ’ এর অন্যতম প্রতিনিধি ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ তথা সুজন’র সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ কোন অবস্থানে রয়েছেন তা আমার মত ক্ষুদ্র ব্যক্তির মস্তিস্কে না ঢুকলেও সাধারণ জনগণ বুঝবেন নিশ্চয়।
ভাবতেই কষ্ট হয় প্রবীণ এই অভিজ্ঞ শ্রদ্ধেয় প্রফেসর অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের বক্তব্য ও অবস্থান অনুধাবন ও নির্ণয় করতে। ‘নৈতিকতা’র মানদণ্ড কি তাও জানতে খুব ইচ্ছে হয়। বাংলাদেশের কোটি কোটি ভোটার সহ সাধারণ জনগণ জানেন যে নির্বাচন কমিশনের বেধে দেয়া নির্বাচনী ব্যয়সীমা অধিকাংশ প্রার্থীই মানেননি। অনেক যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত হননি, আবার যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তারাতো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নিশ্চয়ই জনগণ সেসবের মূল্যায়ন করবেন।
গত ১১ জানুয়ারিতে অধ্যাপক আহমদ এর বক্তব্য ‘একটি দল তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি পেলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।’ মন্তব্যটির তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার বুদ্ধি-ক্ষমতা আমার নেই। শুধু বলতে চাই ভোট দিয়েছে জনগণ তথা দেশের সচেতন ভোটার। এসব নাগরিক ও ভোটারদের সচেতন করার জন্যই তো অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের নেতৃত্বে ‘সুজন’ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। নিশ্চয়ই সেই প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে একটি দলকে তিন-চতুর্থাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত করেছেন। তাহলে ভোটাররা কি ভুল করলেন তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে গত ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে? তাহলে তো বলতে হয় ‘সুজন’ যে প্রচারণা চালিয়েছিল নির্বাচনের আগে ভোটারদের উদ্দেশ্যে তা ভোটাররা বোঝেননি। আর না বোঝার কারণেই একটি দলকে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জিতিয়ে দিলো। আহ্ অবুঝ ভোটাররা কেন যে এমন একটি কাজ করলো তার জন্য আমাদের সমাজের ‘চিন্তাপতি’দের ঘুম হারাম হয়ে গেলো। খুবই দুঃখজনক! সত্যিই তো যত দোষ ঐসব নাদান ভোটারদের। তারা এমন করে দাবার দানটি উল্টে দেবেন তা হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করেননি জিয়াউর রহমানের সাবেক উপদেষ্টা মহোদয়।
বিগত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জোট ও দুই তৃতয়াংশ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। আর সে নির্বাচনের আগেও পরে সেই জোটও তাদের সরকার সারা দেশে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘু ও নির্বাচনে পরাজিত আওয়ামী লীগের উপর কি অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েছিল তাতো এদেশবাসী ভুলে যায়নি। দুই-তৃতীয়াংশ মেজরিটি পেলে গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকি হয় না, ঝুঁকি হয় যদি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনে কোন দল তিন-চতুর্থাংশ মেজরিটি পেলে? হ্যাঁ অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এদেশের জনগণ, বর্তমান সরকার, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদেরকে যাতে সরকার জনগণের স্বার্থেই পরিচালিত হয়। কিন্তু সন্দেহ জাগে যখন ‘গণতন্ত্রের জন্য ঝুঁকি শব্দগুলো শুনি অবৈধ সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা টিআইবি, সুজন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা বিজ্ঞ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কাছ থেকে।
দুর্মুখেরা বলেন, এই প্রবীণ-বিজ্ঞ অধ্যাপক হয়তো মনে খুব কষ্ট পেয়েছেন আওয়ামী লীগ তিন-চতুর্থাংশ আসন পাওয়াতে। আরো বেশি কষ্ট হয়তো আছে তাঁর যে, তিনি যেই অবৈধ সামরিক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন (জিয়াউর রহমানের ) তার সুযোগ্য পুত্র তারেক-কোকো’র গর্বিত মা বেগম জিয়াউর রহমান অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট গো-হারাতে । আমরা দুখী বাংলাদেশের ব্রাত্যজনেরা কায়মনোবাক্যে কামনা করি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে ঝুঁকিপূর্ণ না হয়। পাশাপাশি অত্যন্ত বিনীতভাবে আশা করি ‘সুজন’ এর শ্রদ্ধাভাজন সভাপতির কাছ থেকে ‘দুর্জন’ সুলভ বক্তব্য শুনবো না। আমার দুর্বিনীত লেখায় হয়তো বাংলাদেশের সুশীল সমাজের অনেকেই অখুশী হবেন। করজোড় মিনতি, অভিনন্দন ভোটারদের —– যারা গনতন্ত্রকে রক্ষার জন্যে তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী করেছেন একটি দলকে #
১৪ জানুয়ারি ২০০৯, চট্টগ্রাম।
সমরেশ বৈদ্য, সংবাদকর্মী।
Email- [email protected]
লেখকের পয়েন্ট কিন্তু এটা ছিল বলে মনে হয় না। এটা তো বিতর্কের বাইরে, অস্বীকারের কোন উপায় নেই। brute majority কি ভয়াবহ হতে পারে আমরা সবাই গত গত জোট সরকারের আমলে দেখেছি।
লেখকের ক্ষোব মনে হয় ” যিনি আসামী তিনি কিভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন?” এখানে। মামলা হলেই কেউ সাজাপ্রাপ্ত আসামী হন না। তাই না? আর শুধু নৈতিকতার বিচারে আমাদের রাজনীনিকদের কয়জন সংসদে বসার অধিকার রাখেন? ঠক বাছতে গা উজাড় হবে না?
গনতন্তের বিকাশ ও প্রসার এর জন্য দেশে দেশে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এক অনন্য
ভুমিকা পালন করে থাকেন। আমি মনে করি এরা গনতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তাই আমরা
দেখতে পাই যে দেশে এই সুশীল সমাজ বা institution of civil society
যত বেশী মজবুত সে দেশে গনতন্ত্রের ভিত তত শক্তিশালী। আমরা দেখেছি পশ্চিমবংগে
শাসক কমুনিস্টদের নন্দিগ্রামের চাষিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন জুলুমের বিরুদ্ধে সেখানকার
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা রাস্তায় নেমে এসে প্রতিরোধের প্রাচির গড়ে তুলেছিল। রাস্তায়
প্রতিবাদি মিছিলে শামিল হয়েছিল লাখো জনতার ঢল। সে সময় বিপ্লব খুব নিখুত ভাবে
তুলে ধরেছিল এই সুশিল সমাজের ভুমিকা।
এবার আসি অন্য কথায়। অধ্যাপক মুজাফর আহমেদ যা বলেছেন তা হল যে brute
majority in parliament অনেক সময় গনতন্ত্রের পক্ষে শঙ্কার কারন হতে
পারে। তার এই সহজ মন্তবে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হল তা আমার মাথায় আসছেনা।
কথায় বলে যারে দেখতে নারি তার চরন বাঁকা।
বাংলাদেশের সুশিল সমাজএর উত্তরোত্তর শ্রীবৃ্দ্বি কামনা করি।
যাক এসব কথা। এবার বলুন কে হবে বাংলাদেশের “ক্ষুদে গান রাজ”। পড়শি, স্বরন,
ঝুমা, আশা, উদয় না ইমরান ? অনুসঠানটা আই-চেনেল এ দেখেন কি কেউ ?
না দেখলে দারুন miss করছেন।
সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আমাদের বুদ্ধিজীবিরা সবসময়ই বক্তব্য বিবৃতি দিতে পছন্দ করেন। তাদের প্রায় অনেকেরই দলীয় মার্কা আছে। দেশের মানুষ তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনে, আবার ভুলেও যায়। অনেকেই হয়ত জানেন যা ৭১ এর ডিসেম্বর এও অনেক বুদ্ধিজীবি যারা বদর বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিলেন তাদের অনেকেই মার্চ মাসে পাক বাহিনীর হয়ে বির্বতি দিয়েছিলেন। পরে জীবিতদের অনেকে অবশ্য কেউ কেউ দাবী করেছিলেন যে জোর করে নেওয়া হইয়েছিল। সেটা বিতর্কের বিষয়।
যারা আবার বেশী স্মার্ট তারা নির্দলীয় পরিচয়ে থাকেন। কোন দলের প্রতি বাইরে সাপোর্ট দেখান না। মাঝে মাঝে চমক সৃষ্টি করতে একটু ব্যতিক্রমি কথাবার্তা বলেন। তারা সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে চান। এদের নিয়ে খুব চিন্তিত হবার কিছু নেই। এটাও ঠিক যে তারা অনেক ভাল ভাল কথাও বলেন।
মোজাফফ্রর সাহেবের কথানুযায়ী আমাদের দেশে কেঊই প্রধানমন্ত্রী, এমপি হতে পারবেন না। এটা তো কোন সমাধান নয়। আইনী ব্যাখাও আমরা পেয়েছি। তবে হ্যা, আদালতে কেউ যদি দোষী চুড়ান্তভাবে প্রমানিত হন তবে তার তো পদে থাকার কোন রাইট নেই।
আমি saki র সাথে একমত। গোল টেবিলের বৈঠকে আর লম্বালম্বা ভাষনে এরা যা বলছে তার সবই যে খারাপ তা ত না। কারো অতিত ঘেটে সমালোচনা করা যতটা সহজ, দেশের জন্য কিছু করা তত সহজ না। দেশের জন্য আমরা কে কি করেছি?
মুক্তমনা, ফ্রীথিঙ্কার, নাস্তিক এই নাম গু্লোর উপরও দেশের ৯৯% মানুষের এলার্জি আছে, তো আমরা এখন কি করব?
দেশে একটা সময় ছিল যখন হাতেগোনা কয়েকজন রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই শেখ মুজিবের পক্ষে ছিল। আজকে দেশের জনগনের বিরাট একটা অংশই আ.লীগ বিদ্বেষী। একাত্তুর পরবর্তি শেখ সরকারের কর্মকান্ডের কারনে অনেক মানুষ এখনো পর্যন্ত আ.লীগকে ভয় পায়,আ.লীগের বিপক্ষে ভোট দেয়। দেশের এই আ.লীগ বিদ্বেষী গনজোয়ার, এর দায় জনগনের না, আ.লীগের।
আমি একাত্তুর পরবর্তি শেখ সাহেবের সরকার দেখিনাই। আমার দেখা আ.লীগ হচ্ছে শেখ হাছিনার
আ.লীগ। এরশাদের সাথে পাতানো নির্বাচনে অংশ নেয়া, কথা দিয়ে কথা না রাখা, প্রত্যেকবার নির্বাচনে হারার পর সুক্ষকারচুপির অভিযোগ তোলা, দেশের মানুষের ভালোমন্দের তোয়াক্কা না করে লাগাতার অসহযোগ আন্দোলন, হরতাল আর ভাংচুর, ঘা.দা.নির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা, দুর্নীতিবাজ আর গডফাদারদের প্রতি সমর্থন, বংগভবন ও গনভবন দখল করা, জামায়েত এর সাথে ঘাটি বাধা, এরশাদের সাথে জোট করা, ওলামাদের সাথে চুক্তি……… এত কিছুর পর কেউ শেখ হাছিনা বা আ.লীগকে অপছন্দ করলে তাকে দোষ দেয়া যায় না। বরং কেউ যখন তোষামুদি করে, তখন তার মান নিয়ে, যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।
একই ভাবে বি.এন.পি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত… এদের কারো অপকর্মের তালিকা ছোট না। আমি মনে করি একজন সচেতন নিরপেক্ষ মানুষ কখনোই এদের কাউকে সমর্থন করতে পারে না।
ভাল থাকবেন সবাই।
somoresh babu,
apnake salam.sujon aushole the hunger project name ekta us base org. er sahajje porichalito committee. er country director hochen dr bodiul alam mojumdar tini ekjon american bangali tini sujoner secretary.aisob doctorate ra sara jobon romanchokor joboner ashad nea ekhon jibon shaynne ashe manushke shushashoner bani sunachen. eta ader ek dhoroner shokh bolte paren. tai bolchilam je eder kotha joto kom alochona hobe totoi jatir jonno mongol hobe. apner likhar jonno thanks.
Mr.Partho Dev,
Please Don’t forget , without our “Susil Somaj” and the exertion of civil society’s two years efforts and instigation, we would not get such a democratic new start at all!
My suggestion is to see all side and not to be one sided.
এই তথাকথিত সুজন ও সুশীল সমাজ তথা কথিত গোল টেবিল বৈঠক আর লম্বা লম্বা বক্তৃতা ছাড়া জাতিকে কি কিছু দিয়েছে? এবং এরা কাদের হয়ে কাজ করে একটু খোঁজ নিলেই বোঝা যায়।
@পার্থ দেব,
ধন্যবাদ, চমতকার মন্তব্যের জন্যে । এদেশে ‘সুজন’ ‘সুশীল’ নামক তথাকথিত ‘মাল্টিন্যাশনাল নাগরিক’ রা আসলে কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়??
নিচের লিঙ্ক এ ক্লিক করুন। প্রফেরর ডঃ মুজ্জাফফর আহমদের সিভি পাবেন। ওখানে লেখা আছে তিনি কাউন্সিল অব আডভাইজরসের মেম্বার (মন্ত্রী) ছিলেন ১৯৭৮ সালের জুন মাস থেকে ১৯৭৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত । জিয়া সরকারের উল্লেখ অবশ্য করেন নাই। কিন্তু আমরা সবাই জানি ওটা জিয়া সরকারের আমল, তাই না?
http://www.saneinetwork.net/pdf/researchers/MuzafferAhmed.pdf
এতেও সন্তুষ্ট না হলে টিআইবির ওয়েব সাইটের এই লিংক এ ক্লিক করে দেখতে পারেন।
http://www.ti-bangladesh.org/about/RegisterOfInterests1.pdf
উনার সম্পর্কে বলা আছে Was member of Council of Advisors to the President of Bangladesh. অবশ্য, কোন এক অজ্ঞাত কারণে কোন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বা কোন সময়ে উপদেষ্টা ছিলেন সে বিষয়টি উহ্য রাখা হয়েছে।
সুশীল হলেও লাজ লজ্জা একেবারে যায়নি মনে হয়।
আমি মুক্তমনা অথরিটির কাহে জানতে চাব অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদের জিয়ার আমলে উপদেষ্টা হবার ঘটনাটি কতটুকু সত্য। আর আমরা অপেক্ষায় রইলাম ৩/৪ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে
আওয়ামী লীগ সমরেশ বাবুদের চেয়েও সাধারণ মানুষের জন্য কি করে?
এই সব স্বঘোশিত সুশীল ব্যক্তিদের যত রাজ্যের এলার্জি সব মাঠে ময়দানে যারা রাজনীতি করে তাদের বিরুদ্ধে। রাজনীতিবিদ মানেই মূর্খ, খারাপ আর দুর্নীতিবাজ। গায়ে নর্দমার কাদা লাগানো নোংরামানুষ তারা। আর উনারা হচ্ছেন সব সার্ফ এক্সেল দিয়ে ধোয়া ফকফকা সাদা কাপড়। এই সুশীল বাবুদের কাজ কারবার বড়ই বিচিত্র। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়েন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাড়ীতে অফিস করেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলে শীতল পানীয় যোগে সেমিনার করেন আর রেডিও, টেলিভিশন এবং চরিত্র বিকানো পত্রিকায় পুঁতিগন্ধময় প্রবন্ধ লেখেন। রাজ্যের সব সাধু সাধু উপায় বাতলে দেন দেশোদ্ধারের।
আমাদের দেশের সাধারণ লোকজন যথেষ্ট বুদ্ধিমান এবং সচেতন বলেই এই সব ভণ্ডরা কল্কে পায়নি কখনো। আর সে কারনেই কিনা জানি না। শর্টকার্ট রাস্তার প্রতি এদের অসীম আগ্রহ। জলপাই পোষাক পরা জেনারেলদের দেখলেই তাদের পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার জন্য উঠে পড়ে লাগেন তারা। জেনারেলরা যে দুর্নীতি করতে পারে এই রকম কথা কোন সূশীলের মুখ দিয়ে যে জীবনেও বের হবে না সে ব্যাপারে বাজি ধরতেও কোন আপত্তি নেই আমার। ছদ্মবেশী জলপাই সরকার বিদায় নেয়াতে অনেকেরই যে হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে সে কথা বলাই বাহুল্য।
Like to add little bit more.
Some of our leftist intellectuals hated Bangabandhu for leading the liberation movement. Their idea was that the leftists had the birth-right to lead any mass movement, why Sheikh Mujib, an ordinary BA from Islamia college would do so. They could not forgive Mujib even after his death for this reason. Now Hasina is even a bigger problem. She started showing the qualities of a great statesman – indomitable courage, magnanimity, vision into future. So Mr. Ahmed et. all. can not bear the ‘joluni’ at all. Zia was appropriate for these people – they thought they can influence a dictator despot to do ‘good things’, Zia has shown what he was.
এই ‘সুশীল’, ‘সুজন’ এইগুলা নামের প্রতি এলার্জি আছে আমার।
কয়েকটা হোদল কুতকুত লোক নিজেদের ‘সুশীল’ ঘোষণা করে খালি পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে গোলটেবিল বৈঠক করে। এ ছাড়া আর এদের কন্ট্রিবিউশন কি?
আমার মনে হয় সুশীলদের কাজকর্ম দেখে মানুষ এতই বিরিক্ত যে অচিরেই ‘সুশীল মুক্ত বাংলাদেশ’-এর জন্য আন্দোলনে যাবে তারা !
Thanks for the bitter truth.
Many of our so-called intellects are allergic to Sheikh Hasina and Awami League. Dr. Mujaffar Ahmed was my direct teacher in MBA, in fact I was his favourite student in Macroeconomics class. He is honest and quite courageous (many people know his encounter with Golam Farooque Ovi), however at the same time he is extremely proud (I found him boasting about himself but he was always reluctant to admit other people’s contribution). His senility might have turned him into a jelaous (as Gaffar Choudhury has pointed out) and vain person.