কুদরতি মন্ত্রণালয়

ছগীর আলী খাঁন

 

বিগত ১০ই জানুয়ারী সংখ্যার যুগান্তরে জ্বনাব নুরুল ইসলাম বিএসসির একটি লেখা প্রকাশিত হয় যার শিরোনাম ছিল- মহাজাগতিক শক্তি জননেত্রীর পক্ষেমহাজাগতিক শক্তি কী জিনিস সাধারণ লোকের পক্ষে তা বুঝে উঠা কঠিন, তা বুঝতে হলে বিএসসি স্যারের মতো প্রজ্ঞাবান লোকের প্রয়োজনউনার লেখা হতে এটুকু বুঝা গেল- মহাজাগতিক শক্তি হচ্ছে কুদরতি শক্তি যা স্বর্গ হতে নেমে আসেএ এমন এক শক্তি যার প্রভাবে ধানের শীষে ভোট দিতে আসা বাঘা বাঘা জাতীয়তাবাদী নেতার মাথাও ঘুলিয়ে যায় এবং তাদেরকে নৌকায় ভোট দিতে প্রভাবিত করেএই কুদরতি শক্তির প্রভাবেই জননেত্রী ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে দ্রব্যমূল্য কমতে শুরু করেছেপ্রসঙ্গত উল্লেখ থাকে যে ম্যাডাম জিয়া মহাজোটের মহাবিজয়ের পেছনে ভানুমতির খেল্ আছে বলে ঘোষণা করেছেনএই ভানুমতি অবশ্য স্বর্গ হতে নাজেল হওয়া কোন শক্তি নয়,  সেটি আমাদের নির্বাচন কমিশনপাঁচ বছরব্যপী অপশাসনে অতিষ্ঠ জনগণ প্রথম সুযোগেই বিএনপি-জামাত জোটকে একযোগে প্রত্যাখ্যান করেছে- এই নিখাত সত্য কথাটি ম্যাডাম তার ভানুমতির শক্তি প্রপজিশন দ্বারা এবং বিএসসি স্যার মহাজাগতিক শক্তি প্রপজিশন দ্বারা ঢাকা দিয়েছেন বলে আমাদের ধারণা

 

মহাজাগতিক শক্তি তথা কুদরতি শক্তি সত্যযুগে খুবই কার্য্যকরী ছিলএকটু এদিক ওদিক হলেই সে ঝড়-ঝঞ্জা-ভূমিকম্প-বন্যা কিংবা আবাবিল পঙ্খীর রূপ ধরে নেমে আসতো এবং অন্যায় অবিচারের দফারফা করতোএমনও দেখা গেছে যে আসমানী সেনাবাহিনী সত্যের পক্ষ নিয়ে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। (উদাহরণ- বদরের যুদ্ধ এবং হোনায়েনের যুদ্ধএই যুদ্ধগুলিতে আসমানী ফেরেশতারা মুসলিম বাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল – দলিলে তার অকাট্য প্রমান আছে )বড়োই দূঃখের বিষয়- এই কুদরতি শক্তি বহুযুগ ধরে একেবারে নিস্ক্রিয় হয়ে বসে আছে; পর্বতপ্রমান অনাচার অবিচার দেখলেও তার মনে আজ আর বিন্দুমাত্র দাগ কাটে নাকুদরতি শক্তি জাগ্রত থাকলে কারবালার নৃশংস হত্যাকান্ড ঘটতে পারতো না, পনেরই আগষ্টের সুব্হে সাদিকে ছয় বছরের নিস্পাপ শিশু কিংবা সাত মাসের অন্তসত্ত্বা গৃহবধূ বেয়নেটের খোঁচায় ছিন্নভিন্ন হতো না, বুশব্লেয়াররূপী দানবদের পদতলে সভ্যতা পিষ্ট হতো না, আমেরিকার উপকুল ছেড়ে সুনামি গিয়ে ইন্দোনেশিয়া উপকুলে আঘাত হানতো না কিংবা অত্যাচারী ইসরায়েলকে বাদ দিয়ে ভূমিকম্প যেয়ে ইরান-কাশ্মীরে আঘাত হানতো না

 

এতসব দেখেশুনে তাই মহাজাগতিক শক্তির উপর থেকে মন উঠেই গিয়েছিলবিএসসি স্যারের নুতন প্রপজিশন মনে আবার কিছু আশার সঞ্চার করেছেকি জানি বাবা, হলে হতেও পারেকথায় আছে- ঠাকে ঠিকে দুনিয়াহয়তো এতদিন পরে খেয়ালী কুদরতি শক্তিটির কুম্ভকর্ণের ঘুম ভেঙেছে এবং বিএনপি-জামাতকে ত্যাগ করে আমাদের ফেভারে এসে গেছে সেশক্তিটি যাতে আমাদের পক্ষে স্থায়ীভাবে বিরাজমান থাকে সে চেষ্টা করা দরকারজননেত্রী বিষয়টি সিরিয়াসলি বিবেচনা করে দেখতে পারেনধর্ম মন্ত্রণালয়ের প্যারালাল আরেকটি মন্ত্রণালয় গঠন করা যেতে পারে যার নাম হবে কুদরতি মন্ত্রণালয়এই মন্ত্রণালয়ের কাজ হবে- কুদরতি শক্তি কীভাবে পার্মানেন্টলি মহাজোট সরকারের বশে থাকবে তার উপায় খুঁজে বার করা এবং সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ার জন্যে সরকারকে সুপারিশ করাশুধুমাত্র জনগণের ভোটের দিকে তাঁকিয়ে বসে থাকা কোন কাজের কথা নয়বিএসসি স্যার যেহেতু এই নুতন শক্তির আবিস্কর্তা, তাকে মন্ত্রণালয়ের প্রধান করা হলে তা হবে সোনায় সোহাগা 

 

আগের দিনে প্রতি বছর কলেরা-বসন্ত মহামারী আকারে দেখা দিতকলেরা বসন্তের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার খুব একটা উপায় মানুষ জানতো না, তাদের নাম দিয়েছিল আসমানী বালাআসমানী বালা যাতে গ্রামে ঢুকতে না পারে, সেজন্যে লোকেরা দল বেধে পাহারা দিত আর সমবেত কন্ঠে দোহাই পাড়তো – আলীর হাতে জুলফিক্কার মা ফাতেমার হাতে তীর, যেদিক থেইকা আইছরে বালা সেই দিকেতে ফিরদলবদ্ধ সেই দোহাই শুনে কলেরারা ভয় পেত কিনা তা ভিন্ন কথা, তবে আসমানী শক্তিকে বশ করতে হলে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করতেই হয়মতিয়া চৌধুরির মতো বস্তুবাদী মন্ত্রীরা সফল ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হয়তো ফলন বাড়াতে পারেন, কিন্তু বন্যা-সিডর-শিলাবৃষ্টি রুখবেন কীভাবে? এর জন্যে দরকার একটি মহাজাগতিক কেন্দ্র ওরফে কুদরতি মন্ত্রণালয়

একটি অভিনব দর্শন উপহার দেয়ার জন্যে বিএসসি স্যারকে ধন্যবাদ 

ছগীর আলী খাঁন

গ্রাম-ভাটপাড়া, পোষ্ট-পিএটিসি

সাভার-ঢাকা

তারিখ-১২ই জানুয়ারী, ২০০৯