রক্তে আমার রসুন বাগান
পরশপাথর
এইতো আর মাত্র ক’টা দিন। তারপর শেষ হয়ে যাবে আমার এই মরার জীবন। প্রকৃতির এক নিপুণ নিয়মে একদিন মায়ের গর্ভ থেকে চলে এসেছিলাম প্রকৃতির কোলে। প্রকৃতিই বড় করেছে কোলে-পিঠে করে । তার আদরে শৈশব গেল, কৈশর গেল। তারপর এল বয়স। লোকে বলে প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছ। হয়েছি হয়ত; কিন্তু সাথে সাথে নিজেকে যে হারিয়ে ফেলেছি কৃত্রিমতার কাছে। জীবন থেকে ছুটে যে পালিয়ে গেছে জীবন।
সপ্তায় সপ্তায় উইকএন্ড আসে; নভেম্বার, ডিসেম্বার গড়িয়ে থার্টি ফার্স্ট আসে। আমরা রুটিন করে রাখি, মুখস্ত করে রাখি। আনন্দ করতে হবে, নাচতে হবে, গাইতে হবে, আকণ্ঠ ডুবে থাকতে হবে, মগ্ন থাকতে হবে, মত্ত থাকতে হবে। মনকে বলি, রঞ্জিত হও, নেচে ওঠ। মন মুচকি হাসে, বলে, এই হলাম। আমাদের কর্পোরেট মন বুঝে ফেলেছে কর্পোরেট কালচার। কিন্তু হৃদয়ের গহীন গোপন কোণ, যেখানটাতে কোনো কালচার নেই, যেখানটাতে কোনো ভণিতা নেই, সেখানে কিসের এত ব্যাথা ? নিজ থেকে সে-যে আর নেচে উঠতে পারেনা, পারেনা নিজের মত করে শিহরিত হতে, আন্দোলিত হতে। নয়টা-পাঁচটার কারাগারে বন্দী হয়ে গেছে আমাদের অবুঝ অকৃত্রিম হৃদয়টাও।
কর্পোরেট পৃথিবী আমাদের জন্য নিয়ে আসে কাজ, নির্দিষ্ট করে দেয় টার্গেট। কিন্তু টার্গেটএ গিয়েও থামা নয়। ডলার টাকা আর প্রতিপত্তির লোভ দেখিয়ে ধরিয়ে দেয়া হয় আরো বড় টার্গেট। একটুও বসে থাকা নয়, একটুও স্বপ্ন দেখা নয়। দেয়া হয় গাড়ী, দেয়া হবে বাড়ী, অর্থ ,পজিশান। শুধু নিয়ে নেয়া হয় জীবন। উপরে উঠাতে উঠাতে নিয়ে যাওয় হয় ঠিক মৃত্যুর কাছাকাছি কোথাও, যেখান থেকে আর হারানো জীবনের দিকে ফিরে তাকানোর সময়টুকুও থাকেনা।
যখন বুঝতে পারি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায় জীবন, তখন তাকিয়ে থাকি পুরোনো জীবনের দিকে। মনে হতে থাকে সেই সমস্ত জীবনের কথা যখন আমাদের হৃদয়কে রুটিন করে দোলাতে হোতনা। সে নেচে উঠতো আপনা থেকেই। আমরাই কি দেখিনি সেই সমস্ত শীতের সকাল, জেলেরা যখন এক ডুবে পুকুরের মাঝখান থেকে তুলে আনত জলচর, লাফ দিয়ে জাল ছিঁড়ে পালানোর চেষ্টায় ব্যাকুল রুই কাতলা। দেখিনি কি কুয়াশার ভোরে লাঙ্গল কাঁধে হেঁটে যাওয়া কৃষকের মুখ, খেজুরের টপটপ করে ঝরে পড়া রসে মুখ রাখা দু’টো শালিক, অলস বিকেলে পল্লীমায়ের জুটি করে দেয়া কিশোরী বালিকা। আমরাই কি দেখিনি বাড়ীর পুকুরে বেড়ে উঠা কলমির লতা, কচুরিপানার বেগুনি-সাদা-হলুদ দাগের বাহারি ফুল, এখান থেকে ওখানে উড়ে উড়ে বেড়ানো দুষ্টু ফড়িংয়ের দল; লাল, নীল, কালো, ডোরাকাটা।
হলুদ সরষে ক্ষেতের কথা কি মনে আছে? মনে কি আছে জ্বোনাকীদের কথা? এত এত তারা আর অন্ধকার রাতের কথা? বাতাসে ভেসে আসা শিয়ালের ডাক, আশপাশ থেকে ডেকে উঠা ডাহুকের কথা, কালবোশেখীর কথা, কাঁচা আম, হাওয়ায় দুলতে থাকা তেঁতুলের কথা, জলের কথা, ঝিলের কথা, বিলের কথা, শাপলার কথা, শালুকের কথা, বাড়ির পিছনের গাছে বাসা বাঁধা টুনটুনি পাখিটির কথা, মাছরাঙ্গাটির কথা, দাদির যত্নে বেড়ে উঠা লাউ-কুমড়োর গাছের কথা?
নাহ! জীবন আজ আর সেখানে যায়না। যেতে চায়, ফিরে যেতে চায়, কিন্তু যাওয়া হয়না। তৈরী হয় অজুহাত। আমাদের কর্পোরেট জীবনকে বৈধতা দেবার জন্য আমরাই খুঁজে আনি অজুহাত। উন্নত জীবনের লোভে শরীরকে টেনে নিয়ে যাই অন্য ভূখণ্ডে। মন পড়ে থাকে মনের জায়গায়। তারপর মিছেই সান্ত্বনা খুঁজি। মনকে বুঝানোর চেষ্টা করি, কেন ফিরে যাওয়া যাবেনা যেখানে মন যেতে চায় সেখানে। সবচেয়ে বড় অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাই নিজের সন্তান আর তার ভবিষ্যতকে। বলি সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মনের বিরুদ্ধে হলেও আমাকে বেছে নিতে হবে এই জীবন।
কিন্তু ভিতরে ভিতরে মন যে দেখে ফেলে আমার ভণ্ড, কপট চেহারাটা । তাই যখন বলি, আজ থার্টি ফার্স্ট, আজ উইকএন্ড, নাচো মন নাচো। মন আমার মুচকি হাসে। বলে এইতো আমি নেচে বেড়াচ্ছি। নেচে যায় কৃত্রিমতার উদ্দাম নাচ। শুধু গোপনে আমার চোখে ভেসে উঠে বাড়ীর পাশের বিশাল এক রসুনের ক্ষেত, রসুনের বাগান। মাটির উপরে বেড়ে উঠা এই কোমল, নিষ্পাপ গাছগুলোই মাটির নিচে ধরে রাখে সাদা সাদা রসুন, রসুন আর রসুন, যে রসুনের মসলায় রান্না তরকারি আমার মা আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিতেন খুব ছোটবেলায়। অবচেতন হলে বুঝে যাই আমার রক্তের মাঝে আজও সেই রসুনের বাগান, যেখানটাতে গেলে ফিরে পাবো হারানো জীবন।
পারিনা, ফিরে যেতে পারিনা, নিজের মত করে যাপন করার জন্য একটা জীবন। ফিরে আর যাওয়া হয়না। নিজের কুৎসিত, কপট চরিত্রের কথা ভেবে ঘেন্না ধরে যায়। আরো জাগতিক আরো কর্পোরেট হয়ে উঠি দিনের পর দিন। উপরে উপরে, উপরে ঊঠি; ভিতরে ভিতরে, ডুবে যাই। সান্ত্বনার ভাবনায় ভাবতে থাকি, এইতো আর মাত্র ক’টা দিন, তারপর শেষ হয়ে যাবে আমার এই মরার জীবন।
January 09, 2009
আপনার লিখা পড়ে বুঝতে পারলাম স্মৃতি নিয়ে আপনার ভিতরে অনেক জ্বালা আছে। আমি বিশ্বাস করি এই স্মৃতির পাখিরাই একদিন আপনাকে আপনার জন্মভূমি মায়ের কাছে টেনে নিয়ে আসবে
জ্বী না ভাইজান,আপনার অনুমান ঠিক না।প্রেম-ট্রেম করে সাদী হয়েছিল,নাকাল হওয়ার আগে-ই দুজনের
ছাড়াছাড়ি সে-ই প্রায় এক যুগ আগের কথা।এখানকার বাংগালী বন্ধুরা সহ দেশের বন্ধুরা বলে আমি নাকি তাদের সবার থেকে ভালো জীবন কাটাছছি।কিনতু আমি জানি সুখ কাকে বলে????? হেসে খেলে জীবনটা যদি চলে যায়,কিনতু যায় না,শুধু জ্বালাইয়া মারে।
আপনি ভাই তো পেটুক লোক,লোভ দেখাইয়া নিজে খাইয়া ফেললেন ??বউ যখন শুধু রান্ধে তখন ভাবী কে বলবো ” হুমায়ন আজাদের” নারী যেন তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলে। হা হা হা……
মামুন।
কোথায় আবার ? আজিজ ভাই আর এরশাদ দাদুর কাছে যায়। দুঃখিত ফরিদ ভাই। আজিজ ভাই আর এরশাদ দাদুর আপনাকে দরকার আছে বলে মনে হয়না। অতএব, আপনি চাইলেও সেখানে যেতে পারবেন না।
জীবনে এই প্রথম ফরিদ ভাই কোন ‘ভাই’য়ের সাথে কোলাকুলি আর গলাগলি করতে চাইল। তরুনী সব গেল কোথায়?
ফরিদ ভাই এই লাইনগুলো লেখার পর সমানে তসবিহ্ গুনতে শুরু করেছেন। মাথায় টুপিও আছে আমি নিশ্চিত। প্রার্থনা করে মনে মনে বলছেন, খোদা না করুক, মুক্তমনার কোন নারী লেখক যেন জিন্দেগীতেও এই লেখাটা না দেখে। আর আন্না ভাবী দেখলেতো কথাই নেই, এখনই এক হাজার মাইল দূরে বনবাসে পাঠিয়ে দিবেন।
জ্বী ভাইজান। পুরুষের বিয়া করা আর পলাশীর প্রান্তরে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়া একই জিনিষ। ফাঁদ যেহেতু চেনেন না তাই বুঝতেই পারতাছি শাদী মোবারক অহনো হয় নাই আপনের। ব্যাখ্যা বুখ্যার কোন দরকার নাই। গরীবের একখান কথা বাসী হইবার আগেই শুইনা রাখেন। আখেরে কামে দিবো। পারলে এই ফাঁদের থেইকা একশ মাইল দূরে থাকেন। আমি আপনেরে এই বিতলামি বুদ্ধি দিছি এইডা আবার আপনের হব হব হবু বউরে কইয়েন না যেন।
আমি পরকীয়া করতে যাবো কোন দুঃখে? আমিতো করি আপন মনে আপনকীয়া। 😉
হবে হবে সব হবে। একটু সবুর করেন খালি। আপাতত জিহবার পানিটা একটু সামলাইয়া সুমলাইয়া রাখেন। বউ ঘিয়ে ভাজা পরোটা বানাইছে আর খাসির গোস্ত রানছে। আমি আগে ভরপেট খাইয়া টাইয়া নেই। তারপর আপনেরে খাওয়ামুনে। 😆
বিয়ে করা সব বাংগালীর কি তাহলে একই অবস্হা, সবাই বলে কেন যে বিয়ে করলাম,বিয়ের আগে-ই তো দারূন স্বাধীন ছিলাম, বউ আইলে সবাই কি এক ফানদে বন্দী হয়ে পড়ে? ।ফরিদ ভাই এর কাছে এর একটি যুক্তিপুর্ন ব্যাখা কি চাইতে পারি ?
(আসেন কোলাকুলি আর গলাগলি করি একটু।)..ফরিদ ভাই তাইলে তলে তলে প-র-কী-য়া :::: চালাইয়া যান,যত পারেন তত ।
ইস কতদিন পরোটা-গোস্ত খাওয়া হয় না,একেবারে জিব্বাহ পানি চলে এসেছে।
ভাই, আসেন কোলাকুলি আর গলাগলি করি একটু। আপনেরে আমি পরোটা গোস্ত খাওয়াবো। আমার গুরু এরশাদ দাদুর কসম! 😆
তাতো বটেই তাতো বটেই। হোল লাইফটাই যে হোলে ভরা। ক্রাইসিসের শুভাশীষতো থাকবেই সেখানে।
হয়রান কি আর সাধে হয়েছি রে ভাই! দুই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীর পাল্লায় পড়েছিলাম যে তাই। একজন হচ্ছেন এরশাদ দাদু আর আরেকজন হচ্ছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দুইজনেরই চক্ষু লজ্জা বলে কিছু নাই। মণি মানিক্য সব কুড়িয়েছেন তারা, আমাদের ভাগ্যে যে কিছু জোটে নাই। 🙁
চালাক চতুর তরুণীরা সব কো্থায় যায় মরতে? জানলে না হয় সেইখানেই যেতাম আমি। 😉
বউ হয়ে ওর কপাল পোড়েনি মোটেই, বরং স্বামী হয়ে কপাল পুরোটাই পুড়ছে আমার। একটু যে ইতিউতি তাকাবো তারও উপায় নাই। খ্যাক করে ঘাড়টা চেপে ধরে। এই যে পরশের আশায় পরশের দিকে একটু পুলকিত হয়ে পেলব নেত্রে তাকালুম। আর অমনি লোকজন সব তেড়েফুড়ে হুমকি দিল আন্নারে সব বলে দেবে বলে। বলেন দেখি, কেমন ডর লাগে না। এমনিতেই যে ভীতু মানুষ আমি। দুঃখটাতো তাই আমার জনেই প্রকাশ করা দরকার সবার। আহা! বেচারা আমি! বিয়ে করে জীবনটাই বরবাদ! সাধ আহলাদ বলে আর কিছু রইলো না আমার! 🙁
পরশ ভাই, ফরিদ ভাই-এর বউ এর নাম আন্না , জিগগেস করে দেখুন বউ টি কি বাংগালি নাকি বিদেশীনি ??আর মাঝেমাঝে একটু-আধটু পরকীয়া প্রেম-ট্রেম করলে এমন আর ক্ষতি কি ?? হা- হা- হা- হা ……..
মামুন।
সটকহোলম।
ইরতিশাদ ভাই,
ফরিদ ভাই কিন্তু মিডলাইফ, ওল্ডলাইফ না; একেবারে হোল্ লাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন।
সারাটা জীবন তরুনী খুঁজে খুঁজে হয়রান। উনার কাছে স্বল্পবয়েসী কি আর মাঝবয়সী তরুনী কি? তরুনী হলেই হোল, শুরু হয়ে যায় উনার মধুবাক্য। কিন্তু তরুনীরা কি আর কম চালাক? তারা কেন খালি খালি ফরিদ ভাইয়ের কাছে মরতে যাবে। সারাহ পেলিনকে নিয়ে লেখা উনার “প্রিয়দর্শিনী পেলিনের জন্য প্রেমগাঁথা” থেকে নিচের লাইনগুলো একটু দেখেন।
“কাজেই, ঘরে বউ থাকতেও এরকম দুর্দান্ত জ্ঞানী-গুণী অপরূপার প্রেমে ঝপাস করে পড়ে যেতে বিন্দুমাত্রও সময় লাগেনি আমার। তৃষিত প্রেমিকের মত এখন আমি প্রতিদিন টেলিভিশনে আতিপাতি করে পেলিনকে খুঁজি। তাকে না দেখলে রাতের ঘুম এবং আরাম দুটোই হারাম হয়ে যায় আমার। মায়াবতীও কখনো নিরাশ করেন না আমাকে। “
আমি জানি, আপনি এখন আস্তাগফেরুল্লাহ বলতে বলতে অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। কি আর করবেন, সমাজে এরকম কিছু লোক থাকে যাদের পাপের ফল সবাইকে ভোগ করতে হয়। আহারে! কে জানে কোন দুর্ভাগা বাঙ্গালী ভদ্রমহিলা উনার ঘরের বউ হয়ে কপাল পুড়িয়েছেন । আসুন আমরা তার জন্য একটু দুঃখ প্রকাশ করি।
সন্মানিত মামুন, ডঃ কেশব অধিকারী, কেয়া, গীতা দাস,
আপনাদের সবার লেখাগুলো প’ড়ে খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে নিতান্তই অর্থহীন ভাবনা ভাবছি না আমি, অন্যদের মাঝেও একইরকম অনুভূতি কাজ করে। কেয়া ম্যাডাম যেভাবে বলেছেন, অর্ধেক খালি গ্লাস না দেখে, অর্ধেক পূর্ণ গ্লাস দেখতে চেষ্টা করার মত কিছুটা। কিন্তু গ্লাসটা যে অর্ধেক খালি শত যুক্তি দিয়েও সেটা অস্বীকার করানো যাবেনা। তবুও, সামনে যেহেতু আমাদের যেতেই হবে, আমরা যেহেতু না থেমে পারবোনা, তাই কেয়া ম্যাডামের মত করে ভাবতে পারলে হয়তো আমরা আসলেই ভেসে যাবোনা। জিততে না পারলেও একেবারে হেরে যাবোনা।
তবে সবচেয়ে কষ্ট লাগে যখন নিজের দেশ ছেড়ে আমাদের চলে যেতে হয়। বহু দিনের সাজানো শৈশব, কৈশর, যৌবন, বহু দিনের পরিচিত পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে দিয়ে একটু উন্নত জীবনের লক্ষ্যে, আরো একটু নিশ্চিত, নিরাপদ জীবনের লক্ষ্যে আমাদের ছেড়ে যেতে হয় আমাদেরই স্নেহের মাতৃভূমি। মাঝবয়সে এসে আবার জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয় অন্যদেশের,অন্য পরিবেশের তুলনামুলকভাবে এগিয়ে থাকা নেটিভদের সাথে। আমার দেশের কিংবা অন্যদেশেরও, যারা উন্নত জীবনের লক্ষ্যে, জীবনকে আরেকটু সাজানোর লক্ষ্যে পরবাসী হয়েছেন তাদের সবার জন্য থাকলো শুভকামনা। সত্যিকার অর্থেই যেন সুন্দর হয়ে উঠে তাদের জীবন, পরিবার, সংসার।
ফরিদের অপূর্ব স্বীকারোক্তি ভালো লাগলো। লিঙ্কটা ধরে পুরোন পোস্টিং গুলো পড়লাম। ফরিদের পরশ পাবার আকুলতার গল্প আমাদের মত নতুন পাঠকদের দেরীতে হলেও আনন্দ দিলো।
কেউ বয়সের ভারে নুজ্জ্ব হয়, কেউ হয় অহংকারে। হলোই না হয় পরশপাথর বয়সের ভারে নুজ্জ্ব, লেখা পড়ে মনে তো হয় না অহংকারে।
কেয়া কে অনেক ধন্যবাদ রলো আমাকে পরশপাথরের লেখার মন্তব্যে ঢুকানোর জন্য। আহারে, যদি জীবনের বেলায় আপনার মতো এমন পজেটিভ মনের ও গুনের অধিকারী হতে পারতাম। কিন্তু আমার মাথার কোটি কোটি নষ্ট কীট-পতংগের চিন্তার গতি কেবল আমাকে নেগেটিভ করে আর শুধু পেছনের অনন্ত অতীতে নিয়ে যায়। কি আর করব বলুন !!আপনার লেখার সব মর্ম বুঝার পরও আমার শুধু গ্রামে যেতে ইছেছ হয়,যদিও সময়,কাল,বায়ু,গতি ও প্রকৃতির সবকিছু বদলায় প্রতিমুহূর্তে বিবর্তনের ধারায়,যা একবার গত হয়ে যায় তা আর এ ভংগুর জীবনে ফিরে আসে না যেনেও। পোড়া কপাল নিয়ে কি আর করা।অন্যদিকে পোড়া,হতভাগিনী দেশের কথা তো আপনার লেখায়-ই চমৎকার বর্ননা আছে। যেখানে আছি সেখানে আজ অনেক অনেক বছর থাকার পরও এখানকার মাটি,গাছ-পালা,নদ-নদী,সাগর,বরফ কোনোকিছুকেই কেন জানি আজও আপন মনে হয় নি ,আপন করে নিতে যেয়ো না,এমন কি এর সব কিছু নিখুত সুন্দরের পরও না এবং এ সংস্কৃতির অনেক কিছুর সাথে জড়িত থাকার পরেও হয় নি। আমার মনের এ আকুতি মনে হয় `জায়েদ আহমেদ` কয়দিন আগে তার “দুরন্ত পরবাস ও প্যাসিফিক স্যামনের ” গল্পে খুব সুন্দরভাবে লিখেছিল। কথায় বলে না ” না হলাম ঘরকা , না হলাম ঘাটকা “।
ভালো থাকবেন এবং আপনার আরো অনেক অনেক লেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।
মামুন।
ইরতিশাদ ভাই,
একটু ভুল করে ফেলেছেন আপনি। পরশপাথরের মিডলাইফ ক্রাইসিস হয়নি। আসলে ওল্ডলাইফ ক্রাইসিসে ভুগছেন তিনি। আপনার মত আমিও একবার ভুল করেছিলাম। বেশ বড়সড় ভুল। পরশ নাম দেখে ভেবেছিলাম উনি বোধহয় স্বল্পবয়েসি সুদর্শনা তরুণী কেউ হবেন। ফলে মেয়ে পটানো কোমল কিছু মিষ্টি কথাবার্তাও বলে ফেলেছিলাম উনাকে। 😆 পরে অবশ্য উনি নিজেই জানালেন যে, তিনি আসলে বয়সের ভারে নুজ্জ্ব একজন প্রবীণ ব্যক্তি, শান্তিতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার প্রহর গুনছেন এখন। 🙁
বিশ্বাস না হলে এই লিংকটাতে ক্লিক করে দেখতে পারেন।
http://blog.mukto-mona.com/?p=309
মুক্তমনাদের মনে হচ্চ্ছে মিড-লাইফ ক্রাইসিসে পেয়ে বসেছে। প্রথমে জাহেদ শোনালেন প্যাসিফিক স্যামনের গল্প, এবারে পরশপাথর রসুন বাগানের। (আচ্ছা, রসুন দিয়ে প্যাসিফিক স্যামন রান্না করলে কেমন হবে খেতে? মন্দ হবে না মনে হয়।) আমি এই সুযোগে একটু ওমর খৈয়াম শুনিয়ে দেই,
লাভ কি শুনে দূরের বাদ্য
মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক
নগদ যা পাও, হাত পেতে নাও
বাকীর খাতায় শূন্য থাক।
প্রবাসে বলেই শুধু নয় —আমরা যারা বাংলাদেশে থকি তারাও কিন্তু হারিয়ে ফেলেছি শৈশবের সেই পরিবেশ। “যে হ্লুদ পাখির কাছে আমার ঋণ” ছিল তাকে এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বাড়ি যাই, কিন্তু পুরাণো সেই দিনের কথা বলার ও শুনার সময়, সুযোগ ও লোক নেই।পরিবেশও বদলে গেছে। মেঠো পথ নেই। যে সরষে ফুলের বরা খেতাম শীতে সে সরষে ক্ষেতে এখন পাওয়ার লুমের কারখানা। বিকেলে অবারিত মাঠের হাওয়ায় ভাসতাম। এখন বৈদ্যুতিক পাখার নীচে বসে কাটাই। মুক্তবাজার অর্থনীতি —- বিশ্বায়ণ — এমনি শত ইজম আমাদের সব কিছু দখল করে রেখেছে। অযুত গোপন দুঃখবোধ পোষে রেখেই চলছে যাপিত জীবন। তবুও চালাতেই যে হচ্ছে এবং হবে!
নিঃসন্দেহে ভাল লেগেছে লেখা টি। পরশ পাথর , মামুন এই হৃদয় খুড়েঁ বেদনা জাগানোর গল্প আর নাই বা করলাম। সময়ও তো পালটে গেছে , সেই সব স্মৃতির উঠোনে ফিরে গেলে দেখবেন সময় কেড়ে নিয়েছে তার অনেক কিছুই। দেশে থাকলেও স্মৃতির কাছে ফেরা হতো না। স্মৃতি রোমন্থন করা যায়, স্মৃতিতে বাস করা যায় না।
আমি বলছি না প্রবাসের গডডালিকা প্রবাহে মিলতেই হবে । আমরা যখন দেশান্তরি হয়েছি তখন কিন্তু সেটাই ছিল সব চাইতে বড় সত্য আর কাম্য। তাই সেটা ভুল ছিল এটা ভাবা নিজেকে কষট দেয়া।
আসুন না এই না পাওয়ার মধ্যে যতোটুকু পাছছি তা নিয়ে ভাবি।
আমাদের মাচায় পুইঁএর লতা বাইয়ে দিতে পারব না তাই বলে একটা জীবন ভাল ভাবে বাচঁবো না তাও কি হয়? না হয় পড়ে রইল স্মৃতির রোদেলা দুপুর কিন্তু তাই বলে প্রবাসের দুপুরে সকালে বিকেলে গাছে নদীতে আনন্দ খুজেঁ নেব না তাই কি হয়? না হয় আজ ফিরছি না তাই বলে আগামি কাল ফিরব না , এটাই বা বলি কি করে ?
আসলে কি জানেন? যা হারিয়েছি বা হারাছছি তা হল- সময়। একটা টেবিল ঘড়িতে ওকে আটকে আমরা ভাবছি ওকে জয় করেছি। আসলে সময় জয় করে নিছছে আমাদের সব টুকু।, আমাদের ফিরিয়ে নিছছে কষটের অতীতে, ব্যাস্ত রাখছে বরতমানে।
আসুন না সময়কে বশ মানাই। না হয় নটা পাচঁটা ঘড়ির বড় কাটাঁয় ডলার গুলো বাধাঁ রইল তা বলে বাকি কটা ঘন্টার জন্ন্যে নিরমল আনন্দের খোড়াক খুজেঁ পাওয়া কি খুবই দুষকর?
দূঃখ ভাগ করতে নেই- আসুন সুখ গুলো ভাগ করে নেই। দূঃখ গুলো চন্দন বাক্সে তুলে রাখি-ওর প্রছছায়া থাকুক-মুখছছবি নয়।
ভাবুন- আমরা মরে যাবো না, আমরা হেরে যাবো না, আমরা ভেসে যাবো না।
সত্যি, দারুন লিখেছেন পরশপাথর। আমার চোখের সামনে বাবুই পাখির ঝুলে থাকা বাসা এখনো ভাসে! বলুনতো কবে ফিরে পাবো সেই পেছনে ফেলে আসা দিন গুলো? কেউ কেউ হয়তো বলবেন আপনার এই সাহিত্য সৃষ্টির নষ্টালজিয়ার কথা, কিন্তু আমি বলি কি, বেঁচে থাকুক আপনার এই ছোট্ট প্রয়াশ যা আমার হারিয়ে যাওয়াকে আ্যব্স্ট্রাক্ট হিসেবে হলেও তো স্পর্শের অনুভূতিতে এনেছে।
পরশপাথর, একেবারে আমার মনের গহীনের কথাগুলো আপনার লেখায় পড়ে একবুক বেদনার,কষ্টের লাঘব হলো।মরার জীবন নিয়ে বাঁচতে বাঁচতে জীবনের আর বাঁচা হলো না এই কর্পোরেট মনুষ্য জগতে। তবে একদিন না একদিন ফিরে যাবো সে-ই বক-শালিক,সবুজ ধান,মাঠ,গাছ-গাছালীর তীরে যেখানে আমার সকল আশা-ভালবাসার স্বপ্ন মুখরিত ছিল।
ভালো থাকুন।
মামুন,
স্টকহোলম।